Tuesday, December 4, 2012

দ্বিতীয় দফার আর্থিক সংস্কারের জন্য কর্তৃত্বের চরম লক্ষ্য তাই উগ্রতম ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদ । এবং তার জন্য গণসংহারের সংস্কৃতি অব্যাহত থাকা চাই,জনগণের বিরুদ্ধে একচেটিয়া আগ্রাসন জারী রাখা অত্যাবশ্যক এবং যুদ্ধোন্মাদও চাই। পলাশ বিশ্বাস

 দ্বিতীয় দফার আর্থিক সংস্কারের জন্য কর্তৃত্বের চরম লক্ষ্য তাই উগ্রতম ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদ   এবং তার জন্য গণসংহারের সংস্কৃতি অব্যাহত থাকা চাই,জনগণের বিরুদ্ধে একচেটিয়া আগ্রাসন জারী রাখা অত্যাবশ্যক এবং যুদ্ধোন্মাদও চাই 

পলাশ বিশ্বাস

ভারতীয় নৌবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডার অ্যাডমিরাল ডি কে যোশি বলেছেন, তার দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য তার দক্ষিণ চীন সাগর রক্ষায় কাজ করবে।

আজ নয়া দিল্লিতে অ্যাডমিরাল যোশি বলেন, 'আমাদের দেশের স্বার্থ যেখানেই আছে, আমরা তা অবশ্যই রক্ষা করব এবং আমরা অবশ্যই হস্তক্ষেপ করব।'

চীন দক্ষিণ চীন সাগরে নৌযান তল্লাসিতে তার পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করার কথা ঘোষণা করার পর ভারতীয় পক্ষ থেকে এই হুঁশিয়ারি এলো।

চীনা সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও ভারত।

ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে তিনটি স্টিলথ ফ্রিগেট, পরমাণু পরিচালিত সাবমেরিন, উভচর যান, বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে।

ইউপিএ সরকার 
 এবার পেনশন বিল আনবে, তারপর জীবনবীমা বিদেশিদের কাছে বিক্রি করবে। 

সম্প্রতি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সংস্কার কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগী হতে বলা হয়। সে লক্ষ্যে  কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ও বিল অনুমোদনের জন্য পেশ করার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তা তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তির জন্য স্থগিত করে দিতে হয়েছে।এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তিতেই আটকে গিয়েছে খুচরা ব্যবসায় বিদেশী বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীমা ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগেরও সম্পূর্ণ বিরোধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে অনেকেই তাই পুরোপুরি বামপন্থি বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের আর্থিক হাল ফেরাতে হলে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য দরজা খুলে দিতেই হবে। এটাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।  আর এখানেই প্রবল আপত্তি জানিয়ে আসছে বামপন্থি দলগুলো বহুদিন ধরেই। এবার ইউপিএ-র শরিক হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসও বামপন্থিদের মতোই প্রবল আপিত্তি জানাচ্ছেন বিদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে। ভারতের ২০০ কোটি ডলারের পেনশন তহবিলের দরজা বিদেশে বিনিয়োগের জন্য খুলে দেয়ার দরবার করে আসছে বিদেশি সংস্থাগুলো অনেক দিন ধরেই। ভারতের ২৩টি জীবনবীমা সংস্থা (যাদের প্রায় সব ক'টিতে ২৬ শতাংশ বিদেশি পুঁজি রয়েছে) পেনশন তহবিলের বিরাট বাজার ধরতে চাইছে। ভারতের অর্থনৈতিক  বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেনশন তহবিলে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ ঘটলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত হবে। কিন্তু ভারত সরকার কোনও সাহসী পদক্ষেপই নিতে পারছেন না শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তির ফলে। 

মমতার ইউপিএ জোট ছাড়ার পরও সংস্কার সন্ক্রান্ত যাবতীয় বিল খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতায়সংসদ অচল হয়ে যাওয়ায় আটকে যায় ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সমাজবাদী ও আম্বেডকরবাদীদের প্রতক্ষ ও বামপন্থীদের অপ্রতক্ষ সমর্থন আদায় করে সংখ্যাতত্বে বহুমত সুনিশ্চিত করে এফডিআই নিয়ে ভোটাভোটিতে রাজি হওয়ার মূল এজন্ডা হল দ্বিতীয় দফার আর্থিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অশ্বমেধ অভিযান, সার্বিক বৈদিকী শুদ্রায়ন ইতিমধ্যে কর্তৃত্বের, হেজেমনির ক্ষমতাপক্ষ ও বিপক্ষ, দুপক্ষই উগ্রতম হিন্দুত্বের রাস্তা অবলম্বন করে জায়নবাদী অর্থনৈতিক সংসকারে একজোট কসাবকে ফাঁসি দিয়ে বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নিয়ে কংগ্রেসের স্বস্তি হল না যে হেতু গুজরাত গণসংহারের  হিন্দুত্ব অধিনায়ক নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রত্যাশী একরকম চুড়ান্ত করে ফেলেছে বিজেপি শুধু তাই নয়, হিন্দুত্বের সর্বাধিনায়ক হিসাবে কীর্মাহারের ব্রাহ্মণ সন্তান চন্ডীভক্ত প্রণব মুখার্জীকে রাষ্ট্রপতি করে চিদম্বরমকে অর্থ মন্ত্রী করে সংস্কারের রথ বেপরোয়া ভাবে ছোটাবার কারণ চিদম্বরমই বাজারের একনম্বর প্রত্যাশী প্রধানমন্ত্রিত্বের  রাহুল গান্ধী ও মনমোহনকে ডিঙিয়ে  আন্তর্জাতিক ইকোনামিস্ট কাগজ এই রহস্য ফাঁস করেছে  যথারীতি উগ্রতম ধর্মোন্মাদী জাতীয়তাবাদের অন্ধ অভিযানে নুতনতম সংযোজন চিনের বিরুদ্ধে রণহুন্কার ভারতীয় স্বার্থরক্ষায় নৌবাহিনী দক্ষিন চিনসাগর অভিযানে যাবে, এই ঘোষণা করেছেন নৌবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ  যেমনটি করে বাংলাদেশ যুদ্ধজয়ে বিরোধীদের কুপোকাত করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী  অটল বিহারী বাজপেয়ী ও ক্ষমতা ধরে রাখতে কারগিল যুদ্ধ করেছিলেন  কারগিলে জয় এসেছিল অবশ্যই, কিন্তু তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকা হয়নি  উগ্রতম ধর্মোন্মাদি জীতীয়তাবাদ মুক্ত জায়নবাদী বাজার অর্থনীতির সবচেয়ে সহায়ক পরিবেশ অপারেশন ব্লু স্টার সেই আবহ তৈরি করেছিল শিখ নিধন যজ্ঞে পূর্ণ আহুতি দিয়ে  বাবরি ধ্বংস মুক্ত বাজার ও অবাধ পুঁজি সন্চলনকে সুনিশ্টিত করে  গুজরাত গণসংহারে সেই ধারাকে অব্যাহত ও সংহত করে দ্বিতীয় দফার আর্থিক সংস্কারের জন্য কর্তৃত্বের চরম লক্ষ্য তাই উগ্রতম ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদ   এবং তার জন্য গণসংহারের সংস্কৃতি অব্যাহত থাকা চাই,জনগণের বিরুদ্ধে একচেটিয়া আগ্রাসন জারী রাখা অত্যাবশ্যক এবং যুদ্দোন্মাদও চাই


05 Oct 2012   01:22:33 AM   Friday BdST
  Print this E-mail this

ভারতে পেনশন ও ইনস্যুরেন্সে ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি


নয়াদিল্লি করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নয়াদিল্লিঃ  দ্বিতীয় দফার সংস্কারের পথে এগোলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ৷ ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সংখ্যা বেঁধে দেওয়া, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বহু পণ্যের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই)-এর  অনুমোদনের পর এবার পেনশন তহবিলেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে। বৃহম্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়। 

এদিন পেনশনে ২৬ শতাংশ এফডিআইয়ের অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতদিন পেনশনে এফডিআই-এর মঞ্জুরি ছিল না। পাশাপাশি  ইনস্যুরেন্স ক্ষেত্রে  বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার বিষয়ে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়৷ 

জানাগেছে, এরপর সংসদে সরকারকে এই দু'টি বিল পাস করাতে হবে৷ কারণ, এই দুটি বিষয়ই বিধিবদ্ধ আইন অনুসারেই পরিচালিত হয়। খুচরো পণ্যে এফডিআই-এর মতো এক্ষেত্রে প্রশাসনিকস্তরে  সিদ্ধান্ত  কার্যকর করা যায় না।

এদিনের বৈঠকে কোম্পানি আইন ২০১১-র পরিবর্তনগুলিও মঞ্জুর করেছে। ইনস্যুরেন্স ক্ষেত্র মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

এদিকে, আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সদ্য ইউপিএ সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসা তৃণমূল মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। দলের সাসংদ সৌগত রায় বলেছেন, তৃণমূল সংসদে এর বিরোধিতা করবে।

বামদলগুলিও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয়েছে। সিপিআই নেতা ডি রাজা এই সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সরকার দক্ষিণপন্থী আর্থিক নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে  নির্লজ্জও বলতেও পিছপা হননি তিনি।

সমাজবাদী পার্টি(এসপি) এবং বিএসপি, বিজেডিও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। সংসদে পেনশন ও বিমায় এফডিআই সংক্রান্ত বিল পাশ করাতে লোকসভায় ভোটাভুটির সময় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে  সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ইউপিএ-র এসপি, বিএসপি-র সমর্থন প্রয়োজন।

প্রণব মুখার্জি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনই পেনশনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ সেই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হলেও, তা পিছিয়ে যায়৷ 

কিন্তু পি চিদম্বরম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরই এই দু'টি বিষয়ে ছাড়পত্রের জন্য উদ্যোগী হন৷ তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দিলেও বিমা ও পেনশনে এফডিআই সংক্রান্ত দু'টি বিলই সংসদে পেশ করতে হবে এবং তা পাশ করাতে হবে৷ 

এর প্রতিক্রিয়ায় এদিনই ফেসবুকে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছেন মুখ্যমন্ত্রী  মমতা ব্যানার্জ ৷ 

তিনি মনমোহন সিং সরকারকে হটানোর ডাক দিয়ে বলেছেন, দেশ বাঁচানোর জন্য এই সরকারের যাওয়া দরকার।

মমতা লিখেছেন, বিমা ক্ষেত্রে এফডিআইয়ের মাত্রা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা এবং পেনশনে এফডিআই চালু করার সিদ্ধান্তে মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয় অসুরক্ষিত হয়ে পড়বে৷ সরকার কি দেশকে বিক্রি করে দিতে চাইছে? আমাদের একজোট হয়ে এর বিরোধিতা করতে হবে৷ জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারকে পার পেতে দেওয়া যাবে না৷ এই সংখ্যালঘু সরকার বারবার অনৈতিক কাজ করতে পারে না৷ অনাস্থা প্রস্তাব আনা হোক৷ 

তিনি লিখেছেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ মানুষের স্বার্থে আমি সরকারের অন্যান্য সহযোগী দলগুলিকেও বেরিয়ে এসে এর বিরোধিতা করতে অনুরোধ করব৷ মানুষ আপনাদের দেখছে৷দেশকে বাঁচানোর জন্য এই সরকারের যাওয়া দরকার।

এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপিও। বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, এনডিএ আমলে বিমায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করে এখন সেই কাজটাই করল কংগ্রেস।  

তার দাবি, যে সব শ্রমিক পেনশন পান, তাঁদের অধিকার এবং পেনশনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগ হলে সেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে এনডিএ আমলে এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বটে কিন্তু সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। এখন যদি পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগে ছাড় দেওয়া হয়, তা হলে সরকারকে তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাভড়েকর।

অন্যদিকে জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদবের দাবি, একের পর এক এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি পুঁজির কাছে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র। পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, অবসরকালীন ভাতা কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরাও।


কর্পোরেট আমেরিকা চেয়েছে তাই  সাতটি নতুন আইন করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে -
আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজিকে সন্তুষ্ট করা আমাদের সম্পদের বিপুল অংশ বিদেশে পাচার করার পথ প্রশস্ত করা
বীমা আইন (সংশোধনীবিল ২০০৮ বীমাক্ষেত্রে বিদেশী পুঁজির অংশীদারিত্ব ২৬শতাংশ থেকে বাড়াতে
জীবনবীমা কর্পোরেশন (সংশোধনীবিল ২০০৯
ব্যাঙ্কিং আইন সংশোধনী বিল ২০১১
পেনশন তহবিল নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল ২০০৫ -ফাটকাবাজারে বিনিয়োগের লক্ষ্যে সংশোধিত হবে
ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে বেসরকারী সংস্থার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অতিস্বত্ত্বর একটি বিধি আনবে তেমনই এ-সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ বিলের দিকেও যাচ্ছে সরকার।
প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফ ডি আইনীতির আরও উদারীকরণ করার লক্ষ্যর অতীতের সমস্ত নিয়মবিধিগুলিকে এক করে তৈরি করা হবে একটি পূর্ণাঙ্গ দলিলযাতে এফ ডি আই নীতি হয় আরও 'বিনিয়োগ-বান্ধব'।
সেবি' নথিভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ইক্যুইটি খাতে বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারবে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কর্পোরেট বন্ডে বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বিনিয়োগের সীমা ৫০০কোটি ডলার। থেকে এক ধাক্কায় ২০০০কোটি ডলার করা হয়েছে।
বামপন্থীদের চাপের ফলে প্রথম ইউ পি এ সরকার এই ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিশ্ব মন্দার বিপর্যয়কর ধাক্কা ভারত সামলাতে পেরেছিলো। এখন আন্তর্জাতিক লগ্নীপুঁজিকে আরও তুষ্ট করার জন্য ভারত আন্তর্জাতিক ফাটকাবাজির ধাক্কার সামনে নিজেকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে তুললো।
কি হবো সামনের দিনগুলিতে ?

ভারতের চলতি খাতে ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে আর বৃহৎ মাত্রায় ফাটকা লগ্নীর এই ধরনের অনুপ্রবেশ অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়ের কারণ হবে। 

সারা দেশে কৃষিজমি কমেছে


২০০৩-০৪ সালে সারা দেশের কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ১৮কোটি ৩১লক্ষ ৯০হাজার হেক্টর।
২০০৮-০৯ এ কৃষি জমির পরিমাণ কমে দাড়িয়েছে ১৮কোটি ২৩লক্ষ ৯০হাজার হেক্টর। অর্থ্যাৎ কমেছে ০.৪৩%। ভবন-আবাসন রেলের কাজ,সড়ক নির্মাণ করতে এই কৃষিজমি ব্যবহৃত হয়েছে।
রাজ্য ভিত্তিক হিসাবটা এই রকমের -
পাঞ্জাব ২০০৬-০৭ ৪কোটি ২২লক্ষ ৯০হাজার হেক্টর ।
২০০৮-০৯ ৪কোটি ২১লক্ষ ৫০হাজার হেক্টর। মোট হ্রাস .৩৩%
পশ্চমবঙ্গে ২০০৬-০৭ থেকে কৃষিজমি কমেছে ৬২০০০ হেক্টর।
বিহারে এই সময়ে কমেছে ১০০০ হেক্টর ।
কেরলে এই সময়ে কমেছে ২৪০০০ হেক্টর।
এই সময়কালে গুজরাটওড়িশাত্রিপুরায় কোন কৃষি জমিতে হাত পরে নি।
আজকাল – ২৭/০৩/২০১১

কংগ্রেস-তৃণমূল-বি জে পি একজোট হয়ে সংসদে জীবনবীমা আইন (সংশোধনী) বিল, ২০০৯ অনুমোদন করে জীবনবীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সঙ্কুচিত করেছে। সংসদে এই বিলটি পেশ করে কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার। বিল পেশ করার সময় এই বিলের ক্ষেত্রে স্ট‌্যান্ডিং কমিটির অধিকাংশ সুপারিশ সরকার মেনে নিলেও কেন্দ্রের তহবিল বৃদ্ধির লক্ষ্যে জীবনবীমা গ্রাহকদের কিছুটা স্বার্থ ক্ষুন্ন করার ধারাটি তারা বহাল রাখে। সংসদে বামপন্থীরা এবিষয়ে সংশোধনী এনে ভোটাভুটি চাইলে কংগ্রেস-তৃণমূল-বি জে পি একজোট হয়ে সংশোধনীর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। জীবনবীমা গ্রাহকদের স্বার্থহানি হচ্ছে এই বিলে 

 সারা ভারত বীমা কর্মচারী সমিতি প্রধানত যে ৪টি প্রশ্নে এই বিলের বিরোধিতা করেছিল, সেগুলি হলো- প্রথমত, এল আই সি-র বর্তমান মূলধন ৫কোটি টাকা থেকে ১০০কোটি টাকা করা এবং পরবর্তীকালে সংসদের অনুমোদন ছাড়াই মূলধন বৃদ্ধি করার বিরোধিতা। দ্বিতীয়ত, এল আই সি-র সব পলিসির ক্ষেত্রেই যে সরকারী নিশ্চয়তা চালু আছে, তা তুলে দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পলিসির ক্ষেত্রে তা করার বিরোধিতা। তৃতীয়ত, নতুন শাখা বা বিভাগীয় অফিস খোলার ক্ষেত্রে জোনাল ম‌্যানেজারদের অধিকার তুলে দেওয়ার বিরোধিতা। চতুর্থত, বর্তমানে এল আই সি তার উদ্বৃত্তের ৯৫ শতাংশ অর্থ পলিসি গ্রাহকদের বোনাস হিসাবে প্রদান করে। বাকি ৫শতাংশ সরকারকে ডিভিডেন্ড হিসাবে ফেরত দেয়। বিলে পলিসি গ্রাহকদের স্বার্থ সঙ্কুচিত করে তাঁদের ৯০ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে লভ‌্যাংশ ১০ শতাংশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার বিরোধিতা করেছে সমিতি। অর্থসংক্রান্ত সংসদীয় স্ট‌্যান্ডিং কমিটি সর্বসম্মতভাবে জীবন বীমা আইন (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধে সমিতির এই চারটি যুক্তিই গ্রহণ করে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার প্রথম তিনটি দাবি মেনে নিলেও চতুর্থ দাবিটি বহাল রেখে বিল পেশ করে, যা সংসদে অনুমোদিত হয়েছে। 

আর্থিক সংকটের বোঝা দরিদ্রদের ওপর না চাপানোর জন্য বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন।

সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি অর্জনের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে গঠিত টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদন ২০১২ প্রকাশের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
উন্নয়ন অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পাঁচ বছর আগে এই টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছিলো।

২০০০ সালে বিশ্বনেতারা যে আটটি বিষয়ে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিলো দারিদ্র, রোগ এবং নারী-পুরুষের বৈষম্য মোকাবেলার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

মহাসচিব স্মরণ করেন যে গত মার্চে তিনি এক্ষত্রে বড়ধরণের অগ্রগতি অর্জনের কথা জানিয়েছিলেন।

মি বান বলেন যে দারিদ্র, পানি, বস্তি এবং প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে সাম্যের মত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যঅর্জিত হয়েছে। কিন্তু, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বা সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি দূর্বল। বহুবছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গতবছর উন্নয়ন সহায়তা কমেছে।

মি বান বলেন যে আর্থিক কৃচ্ছতার বোঝা দেশে অথবা বিদেশে দরিদ্রদের ওপর না চাপানোর জন্য আমি আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই।
যেসব দাতা সার্বিক বাজেটে কাটছাট করা সত্ত্বেও সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়েছে অথবা অপরিবর্তিত রেখেছে তিনি তাঁদের প্রশংসা করেন।


বীমায় বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে
প্রশাসনিক পথ খুঁজছে কেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিনিধি

নয়াদিল্লি, ২৩শে সেপ্টেম্বর— তথাকথিত সংস্কারের পথে আরো কয়েকটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। তালিকায় আছে বীমা, পেনশন এবং ওষুধ শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো। সরকারী সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে বীমাই এক নম্বর অগ্রাধিকার। 

বীমা ক্ষেত্রে কেন্দ্র দুটি বিল এনেও এখনও তা পাস করাতে পারেনি। একটি বিলের লক্ষ্য দেশের বীমাক্ষেত্রে বিদেশী পুঁজির ঊর্ধ্বসীমা ২৬শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯শতাংশ করার মাধ্যমে দেশের বীমাক্ষেত্রে বিদেশী পুঁজির বিনিয়োগের পথ আরও সুগম করা। দ্বিতীয় বিলটির মুখ্য উদ্দেশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা নিগম ও সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলির বিলগ্নীকরণের পথ প্রশস্ত করা। এই দুই ক্ষেত্রেই এখন যে করে হোক এগোতে চায় সরকার। গত দু'সপ্তাহ অর্থ মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (‌আই আর ডি এ) দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা সংস্থা ও বেসরকারী বীমা কোম্পানিগুলির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীও বৈঠকে বসেছিলেন। ২৬শে সেপ্টেম্বর আই আর ডি এ প্রধানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রক সূত্রের খবর, বীমা ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এখনকার ২৬শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯শতাংশ করার একটি প্রস্তাব তৈরি করে ফেলেছেন চিদাম্বরম। তা আইন মন্ত্রকের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। বীমা বিলে কিছু সংশোধনী এনে তা পেশ করা যায় কিনা, সেই পথ খোঁজা হচ্ছে। এমনকি সংসদে না গিয়ে বেসরকারী বীমা ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প পথও খোঁজা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রকের খবর, তেমন বিকল্পও প্রস্তুত করেছেন চিদাম্বরম। 

বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর বিল সংসদে পাস করানো কঠিন আছে। এই বিল সম্পর্কে সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিরও বক্তব্য 'উদারনীতির পরে বীমাক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতির কোনো বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ না করেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে'। কমিটির আরও বক্তব্য, এর ফলে বিদেশী পুঁজি আসবে এই ধারণাও তেমন ঠিক নয়। উলটে বিশ্ব বাজারের অস্থিরতার মুখে ঠেলে দেওয়া হবে দেশের বীমা শিল্পকে। পুঁজির বাইরে চলে যাওয়াও ঘটতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা সংস্থা বিলগ্নীকরণের লক্ষ্যে আনা জীবন বীমা আইন (সংশোধনী) বিলের বিরুদ্ধেও অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সর্বসম্মতভাবে সুপারিশ করেছে। খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদ এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার কারণে সংসদে বীমা বিল পাস করানো কঠিন হবে বুঝেই প্রশাসনিক পথ নেওয়ার চেষ্টা করছে অর্থমন্ত্রক। তেমনই পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। 

অর্থমন্ত্রকের সূত্রে জানানো হয়েছে, বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধি অগ্রাধিকার হলেও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়েও এগোনো হবে। বীমা কোম্পানিগুলির বিনিয়োগের নিয়মবিধি শিথিল করা হবে। চলতি নিয়ম অনুযায়ী বীমা কোম্পানিগুলি ৫০শতাংশ পর্যন্ত সরকারী সিকিউরিটিস, ১৫শতাংশ পর্যন্ত পরিকাঠামো ক্ষেত্রের বন্ড এবং ৩৫শতাংশ কর্পোরেট বন্ড ও ইকুইটিতে বিনিয়োগ করতে পারে। একই কোম্পানির ইকুইটি বা ঋণপত্রে ২০শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যায় না। যে-কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ আছে। রেটিংয়ে 'এএএ' অথবা 'এএ' হলেই তবে বিনিয়োগের অনুমোদন মেলে। এই নিয়মে শিথিলতা চাইছে বেসরকারী বীমা সংস্থাগুলি। চাইছে কর্পোরেট ক্ষেত্রও। বিনিয়োগের পরিসর ও আয়তন বৃদ্ধি পেলে বীমার অর্থ কর্পোরেট ক্ষেত্রের হাতে যেতে পারে। সেই লক্ষ্যেই অর্থমন্ত্রক নীতি পরিবর্তন এবং নতুন 'প্রোডাক্টের' ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমোদনের পদক্ষেপ নিতে চলেছে। অর্থমন্ত্রকের যুক্তি বীমা ক্ষেত্রের মোট বিনিয়োগের তহবিল ১৩লক্ষ কোটি টাকা। অথচ তার মাত্র ১৬শতাংশ যায় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে। উল্লেখ্য, বেসরকারী বিনিয়োগ নির্ভর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বারংবার বলে চলেছেন মনমোহন সিং। এছাড়াও ইউনিট সংযুক্ত বীমা পলিসির ক্ষেত্রে আরো কমিশন ও ছাড় চাইছে বেসরকারী সংস্থাগুলি, অর্থমন্ত্রক তা দিতেও উদ্যোগ নেবে। 

তবে বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধিই আসল। চিদাম্বরমের বক্তব্য, বিদেশী বীমা কোম্পানিগুলি এবং ভারতীয় কোম্পানির বিদেশী শরিকরা বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। ঊর্ধ্বসীমা বাড়ালেই তারা ভারতের বাজারে বিপুলভাবে টাকা খাটাবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন এখন তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার বিদেশী বিনিয়োগের বাতাবরণ তৈরি করা। এই অবস্থায় বীমা ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করতে পারলে লাভ হবে বলে সরকারের ধারণা। 

সরকারী হিসেব অনুযায়ী দেশে জীবন বীমার পরিধির মধ্যে আছেন মাত্র পাঁচ শতাংশ। গত দু'বছর ধরে বীমা ক্ষেত্রে মন্দা চলছে। ২০১১-১২-তে পলিসি করার পরিমাণ ৮শতাংশ কমে গিয়েছিল। চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত ফের ঊর্ধ্বমুখী হলেও তার প্রায় গোটাটাই হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমার জন্য। এই পর্বে তাদের বৃদ্ধির পরিমাণ ২৩শতাংশ। বেসরকারী ক্ষেত্রের মাত্র ০.১শতাংশ। 

২০১০-১১ অর্থবর্ষেও জীবন বীমা নিগম ২২৭১৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তৈরি করেছিল, যেখানে বেসরকারী জীবন বীমা কোম্পানিগুলির ক্ষেত্রে পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৬০০০ কোটি টাকা। বীমাক্ষেত্রে উন্মুক্তকরণের এক দশকের বেশি সময় পরেও দেশের জীবন বীমা বাজারে জীবন বীমা নিগমের আধিপত্য প্রশ্নাতীতভাবে বজায় রয়েছে। নতুন পলিসির সংখ্যার বিচারেও বাজারের প্রায় ৭৮শতাংশ জীবন বীমা নিগমের অধীনে রয়েছে।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=30405


বিতর্ক আর হট্টোগোলে শুরু হল খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা। বিতর্কের শুরুতেই লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ এফডিআই বিল পাশের জন্য ইউপিএ সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। বিজেপির তরফে সুষমা স্বরাজ অভিযোগ করেন, এফডিআই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। লোকসাভায় বিজেপি দলনেত্রী কটাক্ষের সুরে বলেন, "গত শীতকালীন অধিবেশনে সরকার আশ্বস্ত করছিল এফডিআই নিয়ে সব দলের মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হবে।" 

সংসদ কক্ষে উপস্থিত কংগ্রেস নেতৃত্বদের উদ্দেশ্যে সুষমা বলেন, "তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি আশ্বাস দেন এফডিআই বিল নিয়ে ঐক্যমত স্থাপন করা হবে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারও সঙ্গেই কথা বলা হয়নি।" দেশের অর্থনীতির চরম ক্ষতির আশঙ্কা জাহির করে বিরোধী দলনেত্রী আরও বলেন, "এফডিআই চালু হলে তাতে মনোপলি শুরু হয়ে যাবে।" তাতে আখেরে কৃষকদের ক্ষতি হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। 

এফডিআই ইস্যুতে সংসদে ভোটাভুটির আগে কংগ্রেস শিবিরকে কিছুটা স্বস্তি দিলেন বিএসপি প্রধান মায়াবতী। নীতিগতভাবে এফডিআই নিয়ে আপত্তি থাকলেও, কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া কতটা সঙ্গত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসপি সুপ্রিমো। 

গতকাল মায়াবতীর সাংবাদিক সম্মেলনের পর সংসদে ভোটাভুটি নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত কংগ্রেস। তবে সভায় ভোটাভুটির সময় বিএসপি সাংসদরা সরকারের পক্ষে ভোট দেবে, নাকি ভোটদানে বিরত থাকবে, তা খোলসা করেননি মায়াবতী। একই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে পদোন্নতিতে সংরক্ষণ চালু করার বিল পাশ করানো নিয়ে সরকারের ওপর চাপও বজায় রেখেছেন বিএসপি সুপ্রিমো। মায়াবতীর বক্তব্য কিছুটা ভরসা পেলেও, কংগ্রেস শিবিরকে চাপে রেখে দিয়েছেন মুয়ালম সিং যাদব। সরকারকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে তিনি জানিয়েছেন এফডিআই ইস্যুতে সংসদেই তাদের অবস্থান জানাবে সপা।

পরিষেবা ক্ষেত্রের বিকাশ যে কোনো আধুনিক অর্থনীতির প্রবণতা।বিশেষজ্ঞদের মতামত পরিষেবা ক্ষেত্রই ভারতে আগামী বিকাশের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।ভারতে গত কয়েক বছরে পরিষেবা ক্ষেত্রের দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এ ক্ষেত্রেও সামনের সারিতে চলে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ।
           সর্বভারতীয় সমীক্ষা জানাচ্ছে সমস্ত ধরনের পরিষেবা ক্ষেত্রের মধ্যে পরিবহনস্টোরেজ ও যোগাযোগের সংস্থাই সবচেয়ে বেশি। মোট সংস্থার প্রায় ৩৮শতাংশই এই ক্ষেত্রের। এরপর বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও ব্যক্তিগত পরিষেবা। হোটেল-রেস্তোরাঁ তৃতীয় বৃহত্তম। আর্থিক পরিষেবা এখনও মোট ৯শতাংশের বেশি নয়তবে তা বাড়ছে।
          এটা অনস্বীকার্যকৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কমছেমোট উৎপাদনের অংশ হিসেবে এখনও কৃষির ভাগ বেশ বেশি হলেও তা কমার দিকে। এটাই স্বাভাবিক প্রবণতা।কিন্তু সাথেসাথে দেশে শিল্পের অংশ বাড়লেও শিল্পবিকাশের হার মোটেই সন্তোষজনক নয়। শিল্পে কর্মসংস্থান আশানুরূপ নয়। পরিষেবা ক্ষেত্র কর্মসংস্থানেরও অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
           জাতীয় নমুনা সমীক্ষার ৬৩তম পর্বে দেশজুড়ে পরিষেবা ক্ষেত্রের সর্বশেষ সমীক্ষা হয়েছে। ২০০৬-০৭—এ করা এই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুমোদিত হয়ে প্রকাশ হয় ২০০৯-এ। এই সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে শহর-গ্রাম মিলে ১কোটি ৬৫লক্ষ ১২হাজারের কিছু বেশি পরিষেবা সংস্থা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে কাজ করছেন মোট ৩কোটি ৩৫লক্ষ মানুষ। এই শ্রমশক্তির ৫৪শতাংশই গ্রামে।
           সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছেদেশের মোট পরিষেবা ক্ষেত্রের সংস্থার সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি অংশ উত্তর প্রদেশের (১৪শতাংশ)। এর পরেই পশ্চিমবঙ্গ (১৩শতাংশ)। প্রথম পাঁচে এরপরে আছে অন্ধ্রপ্রদেশ(১০শতাংশ), মহারাষ্ট্র (৯শতাংশ), তামিলনাডু (৭শতাংশ)। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে পরিষেবা সংস্থার সংখ্যা বেড়েছে খুব দ্রুত। ২০০১-০২ সালে রাজ্য পরিষেবা সংস্থার সংখ্যা ছিলো ২৩.২৫লক্ষতা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৬-০৭সালে হয়েছে ৩৩.৫৪লক্ষ।
           একইভাবেপূর্ণ সময় এবং আংশিক সময়ের কর্মনিযুক্তির বিচারেও পশ্চিমবঙ্গ এগিয়েই। শ্রমনিযুক্তিতেও উত্তর প্রদেশের ভাগই সবচেয়ে বেশি (১২শতাংশ)। দ্বিতীয় স্থানে আছে অন্ধ্রপ্রদেশ (১১শতাংশ),পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় স্থানে ১০শতাংশ)। মহারাষ্ট্রও একইসঙ্গে তৃতীয় স্থানেই (১০শতাংশ)। তামিলনাডু আরেকটু পিছনে (৯শতাংশ)
           নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ২০০৬-০৭—এ পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মরতদের সংখ্যা ছিলো ৩৩লক্ষ ২০হাজার। রাজ্য সরকারের হিসেব প্রতি বছর গড়ে এই ক্ষেত্রে ১লক্ষ ৮০হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
            দেশের পরিষেবা সংস্থার ৫৩শতাংশ যেমন এই পাঁচ রাজ্যে,তেমনই এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত শ্রমশক্তিরও ৫২শতাংশ এই পাঁচ রাজ্যেই।
            পরিষেবা ক্ষেত্রের বিকাশের বৃদ্ধির পিছনে গ্রামীণ ও শহরের অর্থনীতির উন্নয়ন বড় কারণ বলে অর্থনীতিবিদদের অভিমত। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ করে লক্ষণীয় নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০৬-০৭—এই রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ২২লক্ষ ৩২হাজার মানুষ পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন। গ্রামীণ অর্থনীতির বহুমুখী বিকাশের কারণে নতুন নতুন পরিষেবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সমীক্ষায় জানানো হয়েছেসারা ভারতের ক্ষেত্রেই গ্রামীণ ও শহর উভয় এলাকায় পরিষেবা ক্ষেত্রের সঙ্গে পূর্ণ সময়ে যুক্ত শ্রমশক্তির সবচেয়ে বেশি অংশই কাজ করেন পরিবহনে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ এলাকায় নিযুক্ত শ্রমশক্তির পরিমাণই বলে দিচ্ছে সড়ক ও যোগাযোগের বিস্তারের ফলে এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

 একসময়ের দাঙ্গার স্মৃতিকে দূরে সরিয়ে রেখে উন্নয়নকে সঙ্গী করেছে। ২০০২ আর ২০১২, এই ১০ বছরে সবরমতীর জল যেমন ঘোলাটে হয়েছে, গুজরাত রূপকার নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্র করে খানিকটা বিবর্তিতও হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। সাধারণ নির্বাচন আবার দরজায় কড়া নাড়ছে। চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনের যখন আর ১৮ মাসও বাকি নেই, তখন খোদ সুষমা স্বরাজের মতো বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের চোখে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখা নিঃসন্দেহে অনেকগুলো রাজনৈতিক সমীকরণকে মিলিয়ে দেয়।

ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বর তরফে এটাই সম্ভবত প্রথম ও ইঙ্গিতবাহি পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীই যে বিজেপির তুরুপের তাস তা স্পষ্ট সুষমা স্বরাজের কথাতেই। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বদোদরায় এসে সুষমা স্বরাজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, "দ্বিতীয় কেউ নন, মোদীই যোগ্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।" তবে কি দেশের শীর্ষ ক্ষমতায় বসার দৌড়ে গুজরাত মুখ্যমন্ত্রীকেই এগিয়ে রাখছে তাঁর দল? সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সুষমা বলেন, "সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।" মোদীর তারিফ করতে গুজরাটের উন্নয়নের খতিয়ানকেই তুলে ধরেছেন লোকসাভার বিরোধী দলনেত্রী। গুজরাতের উন্নয়নকে বরাবর প্রাধান্য দিয়ে আসা মোদী তাঁর নির্বাচনী প্রচারে এনেছেন থ্রি-ডি চমক। একটি স্টুডিও থেকে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে মোদীর ভাষণ। একই সময়ে সেই প্রচার দেখানো হচ্ছে একাধিক জনসভায়। এক ব্রিটিশ সংস্থার সঙ্গে এই থ্রিডি প্রচারের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ অবধি ওই সংস্থাটি আর কোনও সর্বভারতীয় নেতার প্রচার করতে পারবে না। থ্রিডি অবয়বে মোদী হাততালিও কুড়োচ্ছেন ভালই। এমনই একটি জনসভার হোর্ডিংয়ে রাজ্যবাসীর কাছে আরও ৫ বছর সময় চেয়েছেন মোদী। অন্যদিকে, প্রত্যেকটি প্রচার কর্মসূচীতে মোদীর নিশানা এড়াতে পারেনি দিল্লি। মোদীর ভাষায়, "গত ১১ বছর ধরে গুজরাট ও গুজরাটবাসীদের সম্মানহানির চেষ্টায় লাগাতার প্রচার চলছে। গোটা বিশ্ব যখন গুজরাট প্রসঙ্গে কথা বলে, তখন তার বিষয় থাকে শুধুই উন্নয়ন। কিন্তু দিল্লির প্রসঙ্গ এলেই, বিষয় হয় দুর্নীতি।"

বিজেপির তারকা নেতা নভজ্যোত সিং সিধুর ঝাঁঝাল বক্তব্য একদিকে যেমন উন্মাদনা এনেছে দলীয় কর্মীদের মধ্যে, তেমনই মোদী বিরোধীদেরও কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। গুজরাটে বিজেপির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেলকে 'দেশদ্রোহী' বলে কটাক্ষ করেছেন সিধু। প্যাটেলের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রচারে গিয়েই জন সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন সিধু। এসবের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে পারদ চড়ছে মোদীগড়ে। রাজনৈতিক দূরদর্শীরা বলছেন, মোদীর পা গুজরাতের মাটিতে থাকলেও, চোখ দিল্লিতে। সুষমার ইঙ্গিত যদি সত্যি হয়, সেক্ষেত্রে গুজরাতের ভোট মোদীর কাছে মক-টেস্ট। উন্নয়েনের পরীক্ষায় গুজরাটের মানুষ তাঁকে কত নম্বর দেয় সেটা যেমন দেখার, তেমনই নজর রাখতে হবে ভাটনগরের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষটিকে কেন্দ্র করে দিল্লির রাজনীতি কতটা বিবর্তিত হয় সেই দিকেও।

আবার অর্থমন্ত্রী
চিদাম্বরম কি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত?
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ডাক পড়ে পি চিদাম্বরমের— এমন জনশ্রুতি রয়েছে ভারতে। তাই বলে ভড়কে যাওয়ার লোক তিনি নন। বলা হয়ে থাকে, কঠিন কাজ সামাল দেয়ার ওস্তাদ তিনি। ভেবে নিতে পারেন সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশ্লেষকরা এবার তার ব্যাপারে আগাম মন্তব্য করার সাহস পাচ্ছেন না খুব একটা, রয়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। এরই মধ্যে একটা প্রশ্ন জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে, নতুন অর্থমন্ত্রী কি পারবেন ভারতীয় অর্থনীতিকে আগের ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে? এর উত্তরটা মোটেই সহজ নয়। পি চিদাম্বরমকে মোকাবেলা করতে হবে অনেক কিছুই। মন্থর অর্থনীতি, দুঃসহ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক সেক্টরের দুর্বল সংস্কারের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের রয়েছে নীতি-পক্ষাঘাতগ্রস্ততার ইমেজ। এ অবস্থায়ই তাকে ফের দেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
মাত্রাতিরিক্ত চলতি হিসাব ও আর্থিক ঘাটতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে রুপির অবমূল্যায়ন ঘটেছে রেকর্ড পরিমাণ। এ ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে চিদাম্বরমকে। বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বেঁধেছেন, সদ্য নিযুক্ত অর্থমন্ত্রী কিছু জটিল আইন প্রণয়নের ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন। এর মধ্যে রয়েছে খুচরা পণ্য বিক্রি ও বীমাক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের প্রশ্ন। কিন্তু এ দুটির বিরুদ্ধেই বিরোধী জোট খুব সক্রিয়। এমনকি সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা বা ইউপিএ সরকারের একটা অংশও এসব বিষয়ে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে তিনি হয়তো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের খুশি করার চেষ্টা চালাতে পারেন, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাকে ঘরে-বাইরে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হবে। নতুন পেনশন, বীমা ও করায়ন বিল কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে। এসব নিয়ে এখন থেকেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে গেছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে পি চিদাম্বরমের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মহামন্দা শুরুর আগে তিনি ভারতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উন্নীত করেছিলেন ৯ শতাংশে। তবে ফিরে এসেছেন এমন একটা সময়ে, যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। গত বছর তা ছিল ঠিক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। হার্ভার্ডের ল' গ্র্যাজুয়েট ১ আগস্ট অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তৃতীয়বারের মতো। বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডাররা তাকে নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ আশাবাদী এবং তার সাফল্য-ব্যর্থতার ওপরই নির্ভর করছে ইউপিএ সরকারের ভবিষ্যৎ। আগামী লোকসভা নির্বাচনের দুই বছরও বাকি নেই। এই কম সময়ের মধ্যেই সংকুলতার বাইরে এসে কীভাবে ফের চাঙ্গা করবেন ভারতীয় অর্থনীতিকে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
প্রথম দফায় অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে স্বপ্নের বাজেট উপস্থাপন করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন চিদাম্বরম। করের হার পুনঃসংশোধনসহ বেশকিছু উপহার দিয়ে করপোরেট সেক্টরের মন কেড়েছিলেন তিনি। যে কারণে ভারতের অর্থমন্ত্রী হিসেবে করপোরেট বিশ্বের সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তিই হচ্ছেন চিদাম্বরম। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলতে শুরু করেছেন, ধীরগতির অর্থনীতি ও অপর্যাপ্ত প্রবৃদ্ধির এ সময়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী যদি আগের নীতিই অনুসরণ করেন, তাহলে নির্ঘাত বিপদে পড়বেন। এত কিছুর পরও তার এজেন্ডার উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। বিশেষ করে টুজি স্ক্যাম মামলা নিয়ে সরকারকে পড়তে হয়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। কেন্দ্র কর্তৃক লাইসেন্স ইস্যু করার পরও তা বাতিল করা হয়। এটা ঠিক যে, আস্থা ফিরিয়ে আনার সব ধরনের চেষ্টাই করবেন প্রণব মুখার্জির উত্তরসূরি। ভারতের অর্থনীতি অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর ক্রমেই আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ অনুভূতি থেকেই পুরো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালাবেন চিদাম্বরম। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি যে খুব একটা সুখকর নয়, তা অ্যাপলের সিইও টিম কুকের কথাতেই পরিষ্কার, 'আমি ভালোবাসি ভারতকে, কিন্তু ভারতের চেয়ে চীনে ব্যবসা করা অনেক সহজ। অনেক বিদেশী বিনিয়োগ চাইলে নীতি ব্যবস্থাপনা ও আইন কাঠামোর বৈপ্লবিক সংস্কার প্রয়োজন।'
চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোর তথ্য অনুসারে তা কিছুতেই ৬ দশমিক ৫ শতাংশ অতিক্রম করবে না। খরার এ মৌসুমে খাদ্য, সার ও জ্বালানির ভর্তুকি বাজেট ঘাটতিকে প্রাক্কলনের চেয়ে বাড়িয়ে দেবে। রফতানি থেকে কী পরিমাণ আয় হতে পারে, শেষ পর্যন্ত এ সম্পর্কে একেবারে সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারছেন না। বিদ্যুৎ সমস্যাও তীব্র। বড় কথা হলো, বিশ্বমন্দার প্রভাব দেরিতে হলেও ভারতে পড়তে শুরু করেছে। সব প্রতিবন্ধকতা
ডিঙিয়ে চিদাম্বরম ফের চমক দেখাবেন, এমন প্রত্যাশা অনেকের। তবে অনেক নিন্দুকই বলছেন, এ মুহূর্তে সত্যিকারের অর্থনীতিবিদকেই অর্থমন্ত্রী করা প্রয়োজন ছিল। এ যুক্তি অবশ্য ধোপে টেকে না। আইনের ছাত্র হয়েও এর আগে সাফল্য দেখিয়েছেন তিনি। আর বিশ্বব্যাংকের সভাপতি পদটিও দখল করে রেখেছেন যে এক চিকিত্সক।
পি চিদাম্বরম তার দৃঢ় মনোবলের বিষয়টি গোড়ায়ই বুঝিয়ে দিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম দিন এসেই জানিয়ে দেন তার পরিকল্পনার কথা, 'খুব শিগগির আমরা আরও বেশি রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা পেশ করব। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, বিভিন্ন শ্রেণীর সুবিধাভোগীদের অবশ্যই রাজস্ব সংশোধনের হার যৌক্তিকভাবে বহন করতে হবে। গরিবদের সুরক্ষা দেয়া হবে। বাকিদের যার যার অংশের ভার বহন করতে হবে।' তার মতে, রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় করা উচিত। তিনি এরই মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছেন, যাতে রয়েছেন বিজয় কেলকার, ইন্দ্র রাজরমণ ও সঞ্জীব মিশ্র। দ্রুতই তারা অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন।
চলতি বছরের মার্চে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেন, তাতে রাজস্ব ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজার কোটি রুপি। এটি চলতি অর্থবছরের জিডিপির ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। ভারত সরকার মোট দেশজ উত্পাদনে বিনিয়োগের হার ৩৮ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। সঞ্চয় হার বাড়াতেও একই ধরনের গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। এ প্রসঙ্গে চিদাম্বরম বলেন, 'আগামী কয়েক সপ্তাহে আমরা একাধিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব, যেন বেশিসংখ্যক মানুষ মিউচুয়াল ফান্ড, বীমা পলিসি ও অন্যান্য ভালো বিনিয়োগের উপাদানে আকৃষ্ট হয়।' মধ্যমেয়াদে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় করা যাবে বলেও তিনি আশাবাদী। এ জন্য সরকার রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করবে।
 
শফিকুর রহমান রয়েল
দি ইকোনমিস্ট, টাইমস, দ্য হিন্দু ও

ডেকান হেরাল্ড অবলম্বনে

http://www.bonikbarta.com/print_news.php?pub_no=58&cat_id=1&menu_id=3&news_type_id=1&news_id=6261


18 Jan 2012   01:50:02 PM   Wednesday BdST
  Print this E-mail this

'বিশ্বজুড়ে বাতিল হচ্ছে, এ দেশের শাসকরা আঁকড়ে ধরছেন নয়া উদারনীতি'


রক্তিম দাশ. ব্যুরো চিফ. কলকাতা
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: দুনিয়াজুড়ে মানুষ যখন নয়া-উদারবাদকে বাতিল করতে চাইছেন, তখন সেই নীতিকেই আঁকড়ে ধরছেন ভারতের শাসকরা। এই নীতির ফলে গত দুই দশকে ভারতে যেমন বিলিওনিয়ার বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে শোষণের হারও। দেশের সমস্ত অংশের শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে এই নীতিকে প্রতিহত করাই আজকের দিনে বামপন্থীদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিপিএম'র সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত একথা বলেন।

এদিন বিধাননগরে উন্নয়ন ভবনের প্রেক্ষাগৃহে সিপিআই (এম) উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে 'সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জ ও বামপন্থীদের সামনে কর্তব্য' বিষয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কারাত।

প্রকাশ কারাত নয়া-উদারবাদী নীতির বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র মানুষের বিক্ষোভের উদাহরণ দিয়ে বলেন, দু'দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়ের পর উল্লাসের সঙ্গে বলা হচ্ছিলো যে, একমাত্র পুঁজিবাদই মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ। আজ আমেরিকাসহ ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে সেই উচ্ছ্বাস হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। মানুষ পুঁজিবাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই আজ প্রশ্ন তুলছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কার্ল মার্কস পুঁজিবাদ সম্পর্কে যা বলে গিয়েছিলেন, আজ তা বাস্তবে দেখছেন মানুষ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভয়াবহ সঙ্কট, অর্থনৈতিক মন্দা, পরিসেবাখাতে সরকারি ব্যয় সঙ্কোচন ইত্যাদি ঘটনা ঘটছে প্রতিটি দেশে।

প্রকাশ কারাত বলেন, লগ্নিপুঁজি পরিচালিত বিশ্বায়নের নীতি অনুসরণকারী দেশগুলো ২০০৭ সাল থেকেই তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন, মজুরি কমছে, জনকল্যাণকর খাতে ব্যয় কমছে। স্পেন, গ্রিসসহ ইউরোপের দেশে দেশে ছাত্র-যুবরা পথে নামছেন। এমনকি আমেরিকার মতো দেশে, যেখানে বামপন্থী আন্দোলন দুর্বল, সেখানেও 'অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট' আন্দোলন তীব্র আকার নিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ভারতের পরিস্থিতি উল্লেখ করে প্রকাশ কারাত বলেন, নয়া-উদারবাদী নীতি নিয়ে চললেও বিশ্বজুড়ে এই সঙ্কটের প্রভাব ভারতে তেমন একটা পড়লো না কেন? কারণ, বিশেষ করে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে বামপন্থীদের প্রতিরোধের ফলেই ভারতের আর্থিক ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করতে পারেনি। বামপন্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বলেই বিদেশী ব্যাংকগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শেয়ার কিনতে পারেনি, বীমাক্ষেত্রে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো যায়নি। ফলে পেনশন তহবিলের টাকা শেয়ার বাজারের কাছে ছেড়ে দিতে পারেনি প্রথম ইউপিএ সরকার। সে কারণেই আমেরিকা বা ইউরোপের মতো ভারতের কোনো ব্যাংক উঠে যায়নি, সঙ্কটের চাপ এসে পড়েনি।

কারাত বর্তমান সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, লগ্নিপুঁজি পরিচালিত বিশ্বায়নের নয়া-উদারবাদী নীতির এই সঙ্কট থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি ভারতের শাসকরা। আজ যখন সারা পৃথিবীতে এই নীতিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করছেন, তখন মনমোহন সিং অ্যান্ড কোম্পানি চাইছেন নয়া-উদারবাদের নীতিকেই কার্যকর করতে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি এর পক্ষে সওয়াল করছেন।

গত দুই দশকে এই নীতিকে অনুসরণ করে ভারতের কী হাল হয়েছে, তা তুলে ধরে প্রকাশ কারাত বলেন, এই নীতির ফলে দেশের সবচেয়ে বড় পুঁজিপতিরাই উপকৃত হয়েছেন। গরিব মানুষের ওপর শোষণের মাত্রা আরো তীব্র হয়েছে। এই সময়ে ভারতের বিলিওনিয়ারের (৫শ' কোটি রুপির বেশি মালিক) সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে, আটের দশকে যেখানে মূলধনের তুলনায় লাভের অংশ ছিল ২০ শতাংশ, তা নয়ের দশকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশে। আটের দশকে লাভের শতাংশের হার ছিল মজুরির হারের চেয়ে কম। কিন্তু নয়ের দশকে তা অতিক্রম করে যায়। আবার গত এক দশকে লাভের হার দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে।

কারাত বলেন, আসলে শ্রমজীবী মানুষের ওপর শোষণের হার বাড়ছে বলেই মুনাফার হারও ক্রমশ বাড়ছে। এই নীতির ফলে বড়লোক ও গরিবের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়েছে।

নয়া-উদারবাদী নীতির ফলে সবচেয়ে আক্রান্ত অংশের কথা তুলে ধরে প্রকাশ কারাত বলেন, দেশের শ্রমিকদের মধ্যে ৮৬ শতাংশই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন। সংগঠিত ক্ষেত্রের মত এদের কোনো চাকরির নিরাপত্তা, আয়ের নিরাপত্তা বা সামাজিক নিরাপত্তা নেই। কোনরকম সামাজিক নিরাপত্তা এরা পান না। নয়া-উদারবাদী নীতির সবচেয়ে নির্মম আক্রমণের শিকার এই অংশের শ্রমজীবীরা। আবার দেশের শ্রমজীবী মানুষের ৫০ শতাংশই কাজ করেন কৃষিক্ষেত্রে। কৃষকদের অবস্থাও খুবই সঙ্কটজনক।

কারাত বলেন, আশার কথা, দেশের সংগঠিত ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো এই প্রথম ঐক্যবদ্ধভাবে অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট ডাকার কথা তিনি উল্লেখ করেন। কারাত বলেন, বামপন্থীদের দায়িত্ব হলো, নয়া-উদারবাদী নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলা।

সঙ্কটের বিপদ থাকা সত্ত্বেও কেন ইউপিএ অথবা এনডিএ নেতৃত্ব এই নীতিকেই অাঁকড়ে ধরে থাকছে, তা ব্যাখ্যা করে প্রকাশ কারাত আরো বলেন, কারণ যাদের এরা প্রতিনিধিত্ব করছে, ভারতের সেই বৃহৎ পুঁজিপতিরা এখন আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের অন্যতম অঙ্গে পরিণত হয়েছেন। আম্বানি, মিত্তাল, টাটাদের মতো পুঁজিপতিরা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম। এরা চাইছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই ভারতের নীতি পরিচালিত করতে। আর অভ্যন্তরীণ এই নীতির প্রতিফলন ঘটতে দেখা যাচ্ছে বিদেশ নীতির ক্ষেত্রেও। সেজন্যই প্রায় ১২ শতাংশ অপরিশোধিত তেল এতোদিন ইরান থেকে আমদানি করা হলেও এখন মার্কিন চাপে তা বন্ধ করে আলাদা পাইপলাইন তৈরি করা হচ্ছে। পরমাণুচুক্তিও এর ফলেই।


তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যেটা অগ্রাধিকার, সেটা ভারতের শাসককুলের কাছে অগ্রাধিকারযোগ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্যই খুচরো বাণিজ্যে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আনতে এতো তৎপরতা, কারণ হিলারি ক্লিনটন বা বারাক ওবামা যেই ভারতে আসুন তাদের মাথাব্যথা ওয়ালমার্টকে এদেশের বাজারে ঢুকতে দেওয়া নিয়ে। শুধু খুচরো বাজারেই নয়, কৃষি, শিক্ষা, ব্যাংকিং প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই মার্কিন স্বার্থে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আনতে চাইছে সরকার।


কারাত বলেন, '২০০৫ সালে আমাদের প্রতিরোধের কারণে খুচরো বাজারে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ হতে পারেনি। মমতা ব্যানার্জি এখন বিরোধিতা করছেন, দেখলাম। ভালো কথা, তবে উনি এতদিন ঘুমিয়ে ছিলেন কেন, সেটা বোঝা গেলো না।'

প্রকাশ কারাত এই প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনকেও আরো তীব্র করার আহ্বান জানান।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পরিচিতিসত্তার আন্দোলন মাথাচাড়া দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে কারাত বলেন, বামপন্থীদের সামনে এটাও একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি-উপজাতি প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে তাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভকে হাতিয়ার করে সংগঠন, রাজনৈতিক দলের জন্ম হচ্ছে। নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদেশী আর্থিক সাহায্যপুষ্ট হয়ে এই সব আন্দোলনে মদত দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও উত্তর-আধুনিকতার মতবাদের নামে একে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কারাত বলেন, প্রধানত গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিভাজন ও দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই শাসকশ্রেণী একে ব্যবহার করছে। শ্রেণী আন্দোলন, শ্রেণী সংহতি ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে পরিচিতিসত্তার আন্দোলনকে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'বামপন্থী আন্দোলনকে ধৈর্যের সঙ্গে এই বিষয়কে মোকাবেলা করতে হবে। বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে সমস্ত ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভ পুঞ্জীভূত রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে বামপন্থীদেরই সেই সব দাবিকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শ্রেণী ও সামাজিক শোষণের বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি এ কাজ না করতে পারি, তবে তা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে চলে যাবে।'

তিনি আরো বলেন, পুরোনো রাজনৈতিক স্লোগান যেখানে মানুষের চাহিদাকে পূরণ করতে পারছে না, সেখানে নতুনভাবে স্লোগান দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।

নয়া-উদারবাদী নীতির এই বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বামপন্থীদের সামনে বিকল্প কী, সেই প্রশ্নকে ব্যাখ্যা করে প্রকাশ কারাত বলেন, সমাজতন্ত্রই পুঁজিবাদের এখনও এবং একমাত্র বিকল্প।


পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ বিভিন্ন দেশে বিশ শতকে সমাজতন্ত্র গঠনের অভিজ্ঞতা থেকে একবিংশ শতাব্দীতে সমাজতন্ত্র গঠনের কাজ যে ভিন্ন হবে তা ব্যাখ্যা করে কারাত বলেন, বিশ শতকে সমাজতন্ত্রের ইতিহাসকে কখনই মোছা যাবে না। সেখানে যেরকম অজস্র সাফল্য আছে, তেমনি কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতিও রয়েছে। আমরা সাফল্য থেকে শিক্ষা নিলেও নিশ্চয়ই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবো না। লাতিন আমেরিকায় দেশের পর দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জয়ী হয়ে সরকারগুলো নয়া-উদারবাদী নীতিকে খারিজ করে বিকল্পের পথে হাঁটছে। সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যকে হটিয়ে তাঁরা একুশ শতকের সমাজতন্ত্র গড়ার কথা বলছেন। চীনও দ্রুত বিকাশের পথে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৫ সালে চীন অর্থনীতির আয়তনে আমেরিকাকেও ছাপিয়ে যাবে।

কারাত বলেন, এই সময়ে মৌলিক সামাজিক দ্বন্দ্বগুলোকেও তীব্র হতে দেখা যাচ্ছে। বিপ্লবী আন্দোলনের বিকাশের ক্ষেত্রে এটা একটা উর্বর সময়। বামপন্থীদের এই সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে হবে।

http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=f2ee6c087d71583108683ce542268cc8&nttl=82283


মধ্যবিত্তের পিঠে আগুন : পাশ ফিরে শোবেন না নেভাবেন ? 



চাল,ডাল, পেঁয়াজের পর ডিজেল, পেট্রল, রান্নার গ্যাসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে বহুদিন। শিক্ষার খরচ থেকে অটো-বাসভাড়া - বাজারে হাত বাড়ালে হাতে ছ্যাঁকা লাগছে। এরই মধ্যে বাজার সরগরম  বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগের লাভক্ষতির হিসেব নিয়ে। কিন্তু কি এই FDI ?

ভারতবর্ষে বিদেশী পুঁজি অনুপ্রবেশের ইতিহাস বহুদিনের। 'স্বাধীনতা'র আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরূপে বিদেশী পুঁজির অবাধ প্রবেশ ঘটেছে। প্রথমে দেশ থেকে কম দামে কাঁচামাল লুঠ করে বাজারজাত করা থেকে শুরু করে  'স্বাধীনতা'র পর বিভিন্ন সময়ে শর্তসাপেক্ষে বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ, আমেরিকাসহ নানা উন্নত দেশের বহুজাতিক কোম্পানির সাথে ভারতীয় কোম্পানি ও সরকারের ''বোঝাপড়ার চুক্তিপত্র'' [memorandum of understanding] -এর মধ্য দিয়ে বিদেশী পুঁজির আসা যাওয়া থেকেছে; যার নবতম সংযোজন বর্তমান সরকারের বিদেশী বিনিয়োগ তথা FDI নীতি। 

এই নীতি অনুসারে খুচরো ব্যবসায় ৫১% বিদেশী বিনিয়োগ,সাথে পেনশন ও বীমাক্ষেত্রে ৪৯% এফডিআই মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪-এর গ্যাটচুক্তির সময় থেকে একে একে কৃষি,খনিজসম্পদ, শিক্ষার পর এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারনিয়ন্ত্রনের ও মানুষের সারাজীবনের সঞ্চয়কেও খোলাবাজারে লুঠ করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হলো, আইন করে প্রতিষ্ঠিত করা হলো বিদেশী পুঁজিপতিদের মালিকানাকে । এতদিন যে লুঠ হত চুক্তির আড়ালে এখন তা দিনের আলোয় চোখের সামনে হতে চলেছে। যে নীতির ফলে দেশের প্রতিদিন ১১ জন কৃষক দেনার দায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন, সেই একই পরিনতি হতে চলছে দেশের ৩২ কোটি খুচরো ব্যবসায়ীদের। ওয়ালমার্ট,মন্তেগোমারি,মেট্রো-ক্যাশ ও ক্যারির মত বৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানির বিশাল পুঁজির সাথে প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা ভারতীয় খুচরো ব্যবসায়ীদের নেই, ফলে এই বহুজাতিকগুলো যে দামে জিনিস বেচতে পারবে তা সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে যে এতে মধ্যবিত্ত কমদামে জিনিস কিনতে সক্ষম হবে ও উপকৃত হবে ;কিন্তু আদতে একবার বাজারের ওপর বহুজাতিকের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে দাম নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় থাকবেনা, পুরোটাই বহুজাতিকগুলির আওতায় চলে যাবে। দোকানের ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হবেন খুচরো ব্যবসায়ীরা আর এই ৩২ কোটি খুচরো ব্যবসায়ীর জীবিকাহরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাবে আরো কত কোটি মানুষ নিজেদের জীবিকা হারাবেন তার হিসেব নেই। এর সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রেও সংকট আরো ঘনীভূত হবে কারণ কৃষকরা একচেটিয়া বাজারে বিদেশী বহুজাতিকের ইচ্ছেমত কমদামে ফসল বেচতে বাধ্য হবে ও অচিরেই মহাজনের ধারের ভারে বা চুক্তিচাষের আওতায় জমি তুলে দিতে বাধ্য হবে মহাজন বা বিদেশ বহুজাতিকের হাতে, যেগুলোকে দখল করে ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলো রিয়েল এস্টেটের ব্যবসায় লাগবে আর জমিহারা হবেন কোটি কোটি কৃষক। ইতিহাস বলে যে এই একই নীতির ফলে লাতিন আমেরিকা বিশেষত মেক্সিকোতে ৯৪% যুবক-যুবতী আজ কর্মহীন। ১৯৯২ এর আর্থিক সংস্কারের পর থেকে এই ঘটনা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নির্মমতম আক্রমন- নগ্ন লুঠতরাজ। 

কিভাবে হয় এই লুঠ? ভারতে ব্রিটিশ শাসক সরাসরি যেভাবে লুঠ করত, লোকদেখানো স্বাধীনতার পর সেটা তার মোড়কের পরিবর্তন করে। স্বাধীনতার শর্ত হিসেবে আমরা পাই টাকার অবমূল্যায়নের ধারাবাহিকতা। ১৯৫২ সালে, ১ ডলার = ৫ টাকা হলেও এখন সেটা নেমে গড়ে ১ ডলার = ৫৫ টাকায় (গড়ে) এসে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসার শর্ত হিসেবেই এই বিদেশী বিনিয়োগের উদ্দেশ্যই হলো যত বেশি অর্থ পারা যায় লাভ করা। ধরা যাক, কোনো একটি ক্ষেত্রে ৬০ ডলার বিদেশী বিনিয়োগ করতে দেওয়া হয়েছে,দেশের মানুষ রক্ত জল করা পরিশ্রম করে ওই ক্ষেত্রে ৫০০০ টাকা আয় করলো। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগের শর্ত হিসেবেই, ওই আয় করা ৫০০০ টাকা থেকে ৬০*৫৫ = ৩৩০০ টাকাসহ সুদের হিসেব ধরে বেশিরভাগটাই চলে যাবে বিদেশী বহুজাতিক ও পুঁজি বিনিয়োগকারীদের হাতে আর আমাদের ভাগে পড়ে থাকবে ভিক্ষের ঝুলি। মালিকের চামড়ার রং সাদা থেকে কালো হলেও লাভের গুড় খাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এই বংশধরেরাই আর দালালির পুরস্কার হিসেবে অর্থ পেয়ে আরো ধনী হবে টাটা- বিড়লা- আম্বানি। কারণ, প্রাথমিকভাবে এই বিদেশী বিনিয়োগ কার্যকর হচ্ছে এইসমস্ত কোম্পানির মধ্যে দিয়েই। তাই আমরা দেখতে পাই, যখন আমার দেশের শিল্প ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মুখে, দেশের সম্পদ দিনে রাতে লুঠ হয়ে যাচ্ছে তখন মীরজাফরের মতই দু'হাত তুলে FDI -এর গুণকীর্তন করছে ভারতীয় বানিজ্যসভা ও নির্বাচিত সরকার। বিভিন্ন সময়ে FDI -কে সমর্থন করে বা কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করেও এখন নির্লজ্জের মত শুধু ভোটের খাতিরে লোকদেখানো প্রতিবাদ করছে বিরোধী দলগুলো আর আমাদের 'টুপি পরাতে' হাজির 'আনন্দের বাজার'।

তাহলে ফলাফল ? ফসলের দাম থেকে রান্নার গ্যাস; শিক্ষার খরচ থেকে মাসের মাইনে; এরপর হয়ত পেনশনের টাকা থেকে ব্যাঙ্কের সুদ - নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশী মালিকেরা আর পার্লামেন্টে বসে তা প্রয়োগ করছে নির্বাচিত সরকার আর দালাল শিল্পপতিরা। যে আর্থিক নীতির হাত ধরে ভারত ক্ষুধার্ত দেশগুলোর মধ্যে ৬৬তম, সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিশু অপুষ্টিতে মারা যায় ও দেশের ৭৭% মানুষের দৈনিক আয় ২০ টাকার কম; যে মডেলে উন্নয়নের নামে ভেঙ্গে ফেলা হয় মানুষের বাড়িঘর,লাঠি-গুলির মুখে মানুষকে উচ্ছেদ করা হয় শুধু শপিংমল,প্রমোদনগরী, খনি তৈরির জন্য; যে আর্থিক নীতির কারণে দেশের ২৫% অর্থসম্পদ মাত্র ১০০ জন ধনীর হাতে করায়ত্ত, M.A.পাশ করা ছেলেমেয়েরা চাকরির খোঁজে জুতোর শুকতলা ক্ষইয়ে ফেলে আর প্রথম হাজারজন ধনী কর্পোরেটকর্তা বছরে এককোটি টাকা কামায়  কালো টাকার হিসেব বাদে (কালো টাকার পরিমান দেশের মোট অর্থসম্পদের ৪০-৫০%). 

যেখানে পলিসি ফর অল্টারনেটিভ,দিল্লি জানাচ্ছে যে এই FDI নীতির ফলে দেশের ৩৫টি বড় শহরে ওয়ালমার্টের শপিংমল খোলার কারণে চাকরি পাবে ১০,১৯৫ জন কিন্তু সেখানেই জীবিকা হারাবে ৪লাখ ৩২হাজার মানুষ অর্থাৎ একজন মানুষের চাকরিপিছু ৪৩ জনের জীবিকাহরণ করা হবে; আর এই আর্থিক নীতিকেই কর্মসংস্থানের মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে আরো তীব্র করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদি এখনো আমরা এর বিরোধিতা না করি, যদি সঙ্গবদ্ধ হয়ে রুখে না দাঁড়াই; যদি এখনো ভাবি পাশ ফিরে শুলেই পিঠের আগুন নিভে যাবে তাহলে হয়ত পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া আটকানোর সময় আমরা পাবোনা বন্ধুরা, আরো বেশি করে বাধা পড়ব পরাধীনতার শৃঙ্খলে।



   ''বিরুদ্ধতার চাবুক ওঠাও হাতে, আমার স্বদেশ লুঠ হয়ে যায় প্রতিদিন-প্রতিরাতে''       



নর্দান লাইট ম্যাগাজিন, শিলিগুড়ি - একটি ছাত্রছাত্রী উদ্যোগের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত



৬ ডিসেম্বর ১৯৯২। ধর্মের জিগির তুলে অযোধ্যায় বহু শতাব্দী প্রাচীন এক ধর্মীয় স্থাপত্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল কিছু উন্মাদ। আর সেই সঙ্গে ধুলোয় মিশেছিল গণতান্ত্রিক ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার অহংকার। ধর্মীয় আবেগকে কেন্দ্র করে জ্বলে ওঠা সেই আগুনে পুড়েছিল গোটা দেশ। তারপর কেটে গিয়েছে দু-দুটো দশক। পায়ে পায়ে হাজির আরেকটা ৬ ডিসেম্বর। রক্তস্নানের ২০ বছর পর কেমন আছে অযোধ্যা? স্বজনহারার ব্যথা বুকে নিয়ে সেই ধর্মনগরীতে কেমন আছেন সংখ্যালঘুরা? 

অযোধ্যা আজ শান্ত। ২০ বছর আগের সেই রক্তস্নানের লেশমাত্র চিহ্ন নেই কোথাও। কিন্তু স্বজনহারাদের স্মৃতিতে এখনও টাটকা সেই ক্ষত। সেদিন গোষ্ঠী হিংসায় নিজের বাবা-কাকাকে হারিয়েছিলেন মহম্মদ সাজিদ। ভেসে গিয়েছিল এক বর্ধিষ্ণু পরিবার। 

অযোধ্যায় বহু শতাব্দী ধরে পাশাপাশি শান্তিতে বাস করেছিল দুই সম্প্রদায়। কোনওরকম বিরোধ ছাড়াই। সেই কালো শুক্রবারেও সম্প্রীতির বন্ধন ছিল অটুট। তাহলে কী করে রাতারাতি বদলে গেল সেই শান্তির পরিবেশ? অযোধ্যাবাসীর ধারণা, এর পিছনে কাজ করেছিল গভীর কোনও ষড়যন্ত্র। 

তবে কুড়ি বছর আগের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি আর নেই। ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে শান্তি। ফিরেছে সম্প্রীতি। মসজিদের দাবি ছাড়েননি মুসলিমরা। হিন্দুরাও অনড় তাঁদের মন্দিদের দাবিতে। তবে এই সমস্যার এখন আইনি সমাধানই চায় দুই সম্প্রদায়। বিশ বছর পেরিয়ে আরেকটা কালো শুক্রবার চান না অযোধ্যাবাসী। 

ভারত রাজনীতি : বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্ক ও সাম্প্রদায়িকতা

প্রথম পর্ব

ছোট অযোধ্যা শহরে এসে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের প্রধান সাধু নিত্যগোপাল দাসের 'নির্মোহী আখড়া'য় ঢুকে শুনলাম তিনি উজ্জয়িনীতে কুম্ভমেলায় গেছেন। ভোট দিতেও অযোধ্যায় ফেরেননি। ফেরেননি আরো কয়েক শ সাধু-সন্ন্যাসী। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতারা বারবার অনুরোধ জানালেও নিত্যগোপাল দাস ফেরেননি। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এবার ভোট দেবেন না।

আখড়ারই একজন জানালেন, কথা বলতে হলে ফৈজাবাদ 'নাকা হনুমান গড়ি মন্দিরে' যেতে হবে। ফোন করে যোগাযোগ করে সেখানে পৌঁছুতেই মন্দিরের বাইরে উৎসাহী পুজারি রাম দাস স্বাগত জানালেন। ভেতরে নিয়ে নিজের ছোট্ট 'ছাপড়ায়' বসিয়ে জানালেন, কিছুক্ষণ আগে ভোট দিয়ে এসেছেন। স্বীকারও করলেন ভোট দিয়েছেন কংগ্রেসকে। কেন? সাম্প্রদায়িক ভিএইচপি তাদের শান্তিপূর্ণ "রাম জন্মভূমি আন্দোলন" ছিনতাই করেছে। বিজেপি এ নিয়ে রাজনীতি করছে- জানালেন রাম দাস।

তিনি আরো বললেন, এবার নির্বাচন কঠিন হবে। বিজেপির জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা 'রাম মন্দির'-এর এই ফৈজাবাদ আসনে লড়াই হবে চতুর্মুখী। বিজেপি প্রার্থী লালু সিং, কংগ্রেস প্রার্থী নির্মল ক্ষেত্রি, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) প্রার্থী মিত্র সেন যাদব আর সমাজবাদী পার্টির (এসপি) অশোক সিং- যে কেউ জিততে পারেন।

গত লোকসভা নির্বাচনেও আসনটি বিজেপির ছিল। তাদের প্রার্থী বিনয় কাটিয়ার বিএসপি প্রার্থীর তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার কেন সমস্যা হলো? ফৈজাবাদের সাংবাদিকরা জানালেন, অযোধ্যার সাধুরা বিজেপির ভোট ব্যাংক। এবার তাদের বেশির ভাগই ভোট দেননি। সামান্য যারাও এলাকায় আছেন, ভোট দিচ্ছেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। রাম জন্মভূমি আন্দোলন এবার বিজেপি থেকে একেবারে আলাদা হতে চাইছে। কারণ এই সাধুদের কথা বলে ভিএইচপি সারা দেশ থেকে অনেক টাকা তুললেও তার কোনো অংশ রাম জন্মভূমি আন্দোলন পায়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ভালোই বেড়েছে।

উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদসহ ৩২টি লোকসভা আসনে গতকাল সোমবার তৃতীয় পর্বে ভোট হয়। রাজ্যের রাজধানী লক্ষ্ণৌ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে ফৈজাবাদে যেতে খুব সময় লাগেনি। ঝকঝকে প্রশস্ত মহাসড়ক গতকাল ভোটের কারণে একরকম সুনসান ছিল। নির্বাচনী এলাকাগুলোয় সাধারণ সব যানবাহন চলাচল ছিল বন্ধ। শুধু নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন চলাচল করেছে। বারবার পুলিশ চেকপোস্টে দিল্লি থেকে সংগ্রহ করা নির্বাচন কমিশনের পাশ দেখাতে হলেও চালক মনোজ মাত্র ২ ঘণ্টাতেই লক্ষ্ণৌ থেকে একরকম উড়িয়ে নিয়ে এলেন অযোধ্যায়।

মন্দিরের শহর অযোধ্যা। ঘরে ঘরে মন্দির। দিল্লির বন্ধু সাংবাদিক শুভ্রাংশু রাম জন্মভূমি আন্দোলন আর বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণ আন্দোলনের নেতাদের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন কাজে লাগতে পারে ভেবে। সেসব ফোন নম্বরই গতকাল সংবাদের প্রধান সহযোগী হয়ে গেল।

কিন্তু প্রথমেই বাবরি মসজিদ দেখা দরকার। চালক মনোজ মসজিদের কিছু জানেন না। স্মরণ করে তিনি বললেন, 'ওহ্‌ রাম জন্মভূমি। চলুন।' আলোচিত, খ্যাত- যাই বলা যাক, উপমহাদেশের সোয়া শ কোটিরও বেশি হিন্দু-মুসলমানের 'মন্দির-মসজিদ'-এর কাছেই মনোজ গাড়ি নিয়ে গেল পুরনো ঢাকার মতো 'চিপা অলি-গলি' দিয়ে। সেখানে আধা সামরিক বাহিনীর এক সদস্যের কাছে জেনে 'রাম জন্মভূমি' দেখার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম ধর্মপ্রাণ হিন্দু নারী-পুরুষদের সঙ্গে। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের একের পর এক তল্লাশি (গুনে দেখলাম চার বার) পেরিয়ে শেষে নোট বইটি পর্যন্ত জমা দিয়ে করিডরের মতো লোহার খাঁচার ভেতর দিয়ে অনেকটা হাঁটতে হলো। চারপাশে তাকিয়ে কোথাও মসজিদ বা মন্দির কিছু চোখে পড়ে না। তবে আশপাশে রামের সেবক হনুমানের দল ঘুরে ফিরে রাম ভক্তদের নিরীক্ষা করছে! এভাবে পথ চলতে চলতে তাঁবু খাটানো এক জায়গায় পৌঁছালাম। চারিদিকে শুধু মাটি খোঁড়াখুঁড়ির চিহ্ন।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এখানে মাটি খুঁড়ে বের করার চেষ্টা করেছে আসলে নিচে কী আছে- মসজিদ না মন্দির? তবে তারা শেষ পর্যন্ত কিছু পায়নি। সেই '৮৬ সাল থেকে মসজিদ-মন্দির নিয়ে সাধুদের সঙ্গে বাবরি মসজিদ প্রথমে রক্ষা ও পরে পুনর্নির্মাণ নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা, আন্দোলন চলছে। এখনো এর ফয়সালা হয়নি।

তাঁবুর ভেতর দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছি দেখে এক পুলিশ কর্মী ডেকে বললেন, রাম জন্মভূমি ডানে দেখুন। ঢাকায় বসে হিন্দি টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে দেখতে ভাঙা ভাঙা হিন্দি বলা ও বোঝার ক্ষমতা হয়েছে। ডানে ঘুরে দেখলাম দূরে খাঁচার বাইরে একটি ছোট্ট মন্দিরে রামের শুভ্র মূর্তি। সেবকের হাত থেকে 'পানি' আর প্রসাদও মিলল।

কিন্তু বাবরি মসজিদ কোথায়? সেটা তো দেখতে পেলাম না। সামনে আরেক নিরাপত্তা কর্মীকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, 'তাঁবুর ওপারে। দেখা যায় না।' খাঁচার করিডরের বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তার ওপর চারপাশে শুধু পুলিশ আর আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যে গিজগিজ করছে। মসজিদ-মন্দিরকে কেন্দ্র করে চারিদিকে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার জুড়ে এরকমই নিরাপত্তা বেষ্টনী।

১৯৯০ সালে রথযাত্রা করে বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানির নেতৃত্বে ভিএইচপির করসেবকরা বাবরি মসজিদে প্রথমবার ও পরে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর আবার হামলা চালালে ভারতের মতো বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘু মুসলমানরা, আর বাংলাদেশে হিন্দুরা। বড় অমানবিক সে সহিংসতা।

অনেক খুঁজে বাবরি মসজিদ রক্ষা মামলার বাদী ও মসজিদ পুনর্নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক হাশেম আনসারির দেখা মিলল। ৮৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, ৫৩০ বছর ধরে বাবরি মসজিদ আছে, থাকবে। সেখানে আমরা '৯০ সালেও নামাজ পড়তাম। এখন আর পড়তে পারি না।

ধর্মকাটার পেছনে তার ছোট্ট ঘরে বসে যখন কথা বলছিলাম তখন এক ফরাসি সাংবাদিকও সেখানে ছিলেন। নির্বাচনের কথা জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন এই বৃদ্ধ। জানালেন, সাড়ে ৪ হাজার মুসলমান আছে অযোধ্যায়, যার আড়াই হাজারই ভোটার। কিন্তু ভোটার তালিকায় তাদের অনেকের নাম নেই। এমনকি তার নামও নেই। তিনি ভোট দিতে পারেননি।

হাশেম আনসারি জানালেন, দোহারা কুয়া, মোটাউটি, বেগমপুরা, বক্সারিয়া, তোলা, কাটিয়া পাঞ্জিটোলারও অনেক মুসলমানের নাম ভোটার তালিকায় নেই। বিজেপি এ কাজ করেছে।

রামকোটা নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে কংগ্রেস কর্মী সুরপ্রকাশ মিশ্র জানালেন, বিজেপি ভোটে জিততে এখানে লিফলেট ছেড়ে বলেছে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি হচ্ছেন পণ্ডিত। তারা জাতপাতের বিষয় তুলে ভোট নিশ্চিত করতে চাইছে।

এখানে উপস্থিত অন্যরা যা বললেন, তার মর্মার্থ হলো : বিজেপি প্রার্থী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণদের ভোট নিশ্চিত করতে এই লিফলেট ছেড়েছেন। গত নির্বাচনে তিনি সহজে পার পেলেও এবার তা হচ্ছে না।

রাম মন্দির যে নির্বাচনী এলাকায়, সেই ফৈজাবাদে গত ৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী মি. বাজপেয়ি এক জনসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছরের অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করবেন। তার সেই নির্বাচনী অঙ্গীকার কি ভোটে সুবিধা দিচ্ছে না?

পুজারি রাম দাস বলছিলেন, বিজেপি রাজনীতির জন্য মসজিদ ভাঙে, মুসলমানদের ঘর জ্বালায়। সে রাজনীতির সঙ্গে তারা, সাধুরা নেই। এই রাজনীতির সঙ্গে নেই রঙ্গেশ আচারিয়াও। ২৭ বছর বয়সী এই যুবক জানালেন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যখন উগ্র কর সেবকরা বাবরি মসজিদ ভাঙছিল, তিনিও তাদের সঙ্গে মিলে মসজিদে পাথর ছুড়েছিলেন। তার বয়স ছিল তখন মাত্র ১৬। ভিএইচপির প্রচারে উজ্জীবিত হয়ে কর সেবক হয়েছিলেন তিনি।

আজ ১১ বছর পর রঙ্গেশ ও তার বন্ধু ভেরু তিওয়ারি মিলে 'অযোধ্যা কি আওয়াজ' নামে সংগঠন গড়ে তুলেছেন। বেশ কজন সদস্যও হয়েছে সংগঠনটির। রাম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধে গত বছর অনশন করে তারা সাত দিন জেলও খেটেছেন। জেলেই এই সংগঠনের জন্ম। অযোধ্যায় মুসলমানদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছেন নতুন প্রত্যয়ে উদীপ্ত এই যুবকরা। এই তরুণ-যুবকরাই একদিন ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পায়ের নিচের মাটি কেড়ে নেবেন।

অযোধ্যা, উত্তর প্রদেশ
এপ্রিল ২৬, ২০০৪

[পাদটিকা : ভারতের রাজনীতি নিয়ে সিসিবি সদস্যদের আগ্রহে আমি মুগ্ধ। আর এ কারণেই ২০০৫ সালে "ঐতিহ্য" থেকে প্রকাশিত আমার একমাত্র বই "ভারতের ভোটের রাজনীতি" থেকে কিছু কিছু লেখা এখানে দিচ্ছি। ২০০৪ সালে প্রথম আলো থেকে ভারতের লোকসভা নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে যা লিখেছিলাম তা দিয়েই ১২৯ পৃষ্ঠার এই বইটি হয়েছিল। একটি বাড়তি তথ্য জানানোর লোভ সামলাতে পারছি না। ৪০ দিন ভারত ঘুরে আমি নির্বাচনে কংগ্রেস জোটের জয়ের সম্ভাবনার কথা লিখেছিলাম। আমার সে ধারণা সত্য হয়েছিল। পাঠকের আগ্রহের উপর পরের লেখাগুলোর ভবিষ্যত নির্ভর করবে!]

http://www.cadetcollegeblog.com/999/22989


গুজরাত দাঙ্গা সম্পর্কিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বেআব্রু গুজরাত সরকার

সুপ্রিম কোর্টের বানানো 'স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম' বা সংক্ষেপে 'সিট' গুজরাটের ২০০২ সালের দাঙ্গার ওপর তার রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে পেশ করে ১২ মে ২০১০। সেই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আনেনি, কিন্তু ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে এই রিপোর্টে কী আছে তা নিয়ে বড়ো কর্পোরেট মিডিয়ায় জল্পনা শুরু হয়। ইংরেজি সাপ্তাহিক 'তহলকা'-র '১২ ফেব্রুয়ারি' সংখ্যায় এই রিপোর্টের কিছু অংশবিশেষ হুবহু তুলে দেওয়া হয়। এখানে তার কিছু অংশ, সম্পাদনা শমীক সরকার

'... মুখ্যমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) গুলবার্গ সোসাইটি, নারোদা পাটিয়া এবং অন্যান্য জায়গার ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলিকে মামুলি হিসেবে দেখিয়েছেন, বলেছেন, প্রতি ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আছে' (রিপোর্টের ৬৯ পাতা)।  
   গুজরাট সরকার দু'জন বরিষ্ঠ মন্ত্রী অশোক ভাট এবং আই কে জাদেজাকে যথাক্রমে আহমেদাবাদ সিটি পুলিশ রুম এবং রাজ্য পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসিয়ে রেখেছিল, কোনও নির্দিষ্ট নির্দেশ না দিয়েই। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য এদেরকে সেখানে রাখা হয়েছিল। 
  (রিপোর্টে চেয়ারম্যানের মন্তব্যের ১২ নম্বর পাতা)। অশোক ভাটের সেল ফোন ঘেঁটে দেখা যায়, তাঁর সঙ্গে ওইসময় যোগাযোগ ছিল ভিএইচপি নেতা জয়দীপ পটেলের, তিনি নরোদা গাঁও এবং নরোদা পাটিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী।  
রিপোর্ট জানিয়েছে, গুজরাত দাঙ্গার সময় যেসব পুলিশ অফিসার নিরপেক্ষ থেকে হত্যাকাণ্ড আটকেছিল তাদের দাঙ্গার পরপরই অগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং দিয়েছিল গুজরাত সরকার। 'সিট' চেয়ারম্যান এই ট্র্যান্সফারগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।  
 রিপোর্ট বলছে, 'গুজরাত সরকার সেই সময়ে পুলিশের দাঙ্গা বিষয়ক ওয়্যারলেস কথোপকথন রেকর্ড নষ্ট করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।' রিপোর্ট আরও বলছে, 'দাঙ্গার সময়কার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আইনকানুন লাগু করা সংক্রান্ত মিটিং-এর কোনও রেকর্ডিং, কোনও নথি বা মিনিটস পাওয়া যায়নি।'  
 রিপোর্ট বলছে, 'মুখ্যমন্ত্রী ৩০০ কিমি পাড়ি দিয়ে যেদিন গোধরায় চলে গিয়েছিলেন, দাঙ্গার ফলে আহমেদাবাদে এক বিশাল সংখ্যক মুসলিম সেদিন মারা গেলেও দাঙ্গাবিধ্বস্ত সেইসব এলাকায় যাননি। এটা পক্ষপাতমূলক আচরণ।' (৬৭ পাতা) 
 সিট-এর রিপোর্ট স্বীকার করেছে, গুজরাত সরকার দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে কোর্টে যখন দাঙ্গা বিষয়ক মামলাগুলো চলছিল, তখন দাঙ্গাকারী শক্তি ভিএইচপি এবং আরএসএস-এর উকিলদের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ করেছিল।  
 রিপোর্ট অনুসারে, প্রশাসন ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা বেআইনি বনধ বানচাল করতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। নারোদায় বেলা ১২টা এবং মেঘানি নগরে দুপুর দুটোয় কার্ফু জারি করা হয়, ততক্ষণে বিজেপি এবং ভিএইচপি সমর্থকরা ব্যাপক ধ্বংস এবং হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। 
 রিপোর্ট বলছে, রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা বারবার রিপোর্ট দেওয়া সত্ত্বেও সরকার যেসব খবরের কাগজ দাঙ্গায় উস্কানি মূলক রিপোর্ট ছাপাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। 
 এই তদন্ত কমিটি বা 'সিট'-এর এক্তিয়ারে আছে কেবলমাত্র কিছু প্রাথমিক খোঁজখবর নেওয়ার। এই কমিটির এক্তিয়ার ছিল না তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ বা সরকারকে নথি দেখাতে বাধ্য করার। 'সিট' তদন্তে কিছুদূর এগোনোর পরই বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করতে থাকে, এই কমিটি দাঙ্গার আসল চিত্র তুলে আনতে পারবে না। তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত, 'প্রায় ৩২টি অভিযোগ এই প্রাথমিক তদন্তে খতিয়ে দেখা হয়েছে। এগুলো সবই মুখ্যমন্ত্রী সহ গুজরাট রাজ্য সরকারের তরফে ভুলভ্রান্তি সংক্রান্ত। এর কয়েকটি মাত্র এখানে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।' 
 সুপ্রিম কোর্ট ৩ মার্চ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। 

"মোদীই গুজরাত দাঙ্গার মূল কান্ডারী"

Author: 
 বাংলাবাজার ব্যুরো

গুজরাত, ১৩ জানুয়ারি: মোদীর বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দাঙ্গা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন গুজরাত পুলিসের আরও এক শীর্ষ কর্তা। নানাবতী কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে গুজরাত পুলিসের প্রাক্তন অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারাল আর বি শ্রীকুমার মোদীকেই গুজরাত দাঙ্গার মুল কাণ্ডারি বলে অভিযোগ করলেন। 

শ্রীকুমার নিজের এফিডেফিটে জানিয়েছেন, তৎকালীন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অশোক নারায়ণ মুখ্যমন্ত্রী মোদীর নির্দেশে দাঙ্গায় গ্রেফতার হওয়া হিন্দুদের সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিতে বলেন। নারায়ণের সঙ্গে কথোপকথনের গোপন রেকর্ডও পেশ করেছেন তিনি। তবে মোদী ওই নির্দেশ মৌখিক ভাবে দেওয়ায় নিজের বক্তব্যের প্রমাণ দিতে পারবেন না বলে নারায়ণ নানাবতী কমিশনের কাছে এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হন নি বলেও মন্তব্য করেন শ্রীকুমার।

গুজরাতে দাঙ্গার সময়কার অপরাধের বিচারও যে নিরপেক্ষ ভাবে হয়নি, এই কথোপকথনই তার জলজ্যান্ত উদাহরণ বলে মনে করেন শ্রীকুমার। কমিশনের কাছে এই নিয়ে গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত  নয়টি এফিডেফিট পেশ করলেন প্রাক্তন অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারাল আর বি শ্রীকুমার।   

http://www.banglabazar.co.in/node/2237 


দোষী হলে ফাঁসি দিন, উর্দু দৈনিকে বললেন মোদী

গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং যদি দোষ প্রমাণ হয়, নরেন্দ্র মোদী চান, তাঁকে প্রকাশ্য রাস্তায় ফাঁসিতে লটকানো হোক, যাতে একশো বছর পরেও লোকে তা না ভুলতে পারে। একটি উর্দু দৈনিকে মোদীর এই সাক্ষাৎকারকে ভোটের কৌশল বলেই বর্ণনা করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। ছ'মাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ফের সেই দাঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়েই রাজনৈতিক তরজায় জড়ালেন মোদী এবং কংগ্রেস। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার ঘটনায় তিনি যে নির্দোষ, তা এর আগেও একাধিক বার দাবি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি লক্ষণীয় ভাবে সেই একই কথা তিনি বলেছেন একটি উর্দু দৈনিকের সাক্ষাৎকারে। দৈনিকটির সম্পাদক প্রাক্তন সাংসদ, সমাজ পার্টির সদস্য শাহিদ সিদ্দিকি। সিদ্দিকি জানিয়েছেন, মোদীর সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই কথা হয়ে গিয়েছিল যে দাঙ্গা নিয়ে যথেচ্ছ প্রশ্ন তাঁকে করা হবে এবং মোদী মাঝপথে কথা থামিয়ে দিতে পারবেন না। মোদী সেই শর্তে রাজি হয়েই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গায় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে মনমোহন সিংহ বা সনিয়া গাঁধীরা ক্ষমা চাইলেও গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে তিনি ক্ষমা চাইবেন না বলে জানিয়েছেন মোদী। কেন? মোদী বলেছেন, "আমি কোনও ভাবেই ক্ষমা চাইতে রাজি নই। কারণ আমি নির্দোষ। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমায় যেন ফাঁসি দেওয়া হয়।" মোদীর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজনৈতিক সূত্র বলছে, আসলে এ হল মোদীর পেশি প্রদর্শনের রাজনীতি। তিনি এই কথা বলে কার্যত কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। গত দশ বছর ধরে কংগ্রেস তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনলেও একের পর এক অভিযোগ আদালতে খারিজ হয়ে গিয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই মোদী এই মন্তব্য করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

একই কথা মোদী এর আগেও বলেছেন ঠিকই। কিন্তু ভোটের আগে যে ভাবে একটি উর্দু দৈনিকে ওই সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হল, তার মধ্যে একটি পরিকল্পনার ছাপ রয়েছে বলে মনে করছে কংগ্রেস শিবির। দলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেন, "বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই মোদী এই মন্তব্য করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি থানা অভিযোগ নিতে না চায়, তা হলে মামলা হবে কী করে? মোদীর বিরুদ্ধে এখনও কিছু মামলা চলছে। সেগুলির নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই কী ভাবে এক জন অভিযুক্ত নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে?"

কংগ্রেস মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খোলায় জবাব দিয়েছে বিজেপি শিবিরও। আজ রাজনাথ সিংহ বলেন, "মোদীর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তা সত্ত্বেও গত দশ বছর ধরে টানা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। আসলে গুজরাত-সহ অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সার্বিক উন্নতি কংগ্রেস সহ্য করতে পারছে না।" গুজরাত দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা নিরপেক্ষ ছিল না বিভিন্ন মহল থেকে এই অভিযোগ আসায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সম্প্রতি ওই দল দাঙ্গা সংক্রান্ত একটি মামলায় মোদীকে ক্লিনচিট দিয়েছে। রাজনৈতিক সূত্র মনে করছে, রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শেষ হতেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চান মোদী। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রী পদে দাঁড়াতে চান, এমন বার্তা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও সঙ্ঘ পরিবারকে ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছেন তিনি। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের একটি বড় অংশের এখনও মোদীর নামে আপত্তি রয়েছে। তাই নিজেকে উচ্চগ্রামে নির্দোষ দাবি করে মোদী ধর্মনিরপেক্ষ ভোটব্যাঙ্ককে বার্তা দিলেন। দলের সেই নিচুতলাকেও উজ্জীবিত করলেন, যাদের একটি বড় অংশ মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান।

 

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%A6-%E0%A6%B7-%E0%A6%B9%E0%A6%B2-%E0%A6%AB-%E0%A6%B8-081925864.html


!!! ভারতে মুসলিম নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা নেই !!! JUSTICE DELAYED IS JUSTICE DENIED গুজরাতের দাঙ্গায় মোদী সরকার হাত গুটিয়ে বসে ছিল। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে ভারতে বিজেপি সরকার এলে মুসলিমরা নিরাপদ থাকবেন না।

লিখেছেন লুনিক ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১২, দুপুর ১২:৫২

ক্ষতিপূরণের নির্দেশ 
দাঙ্গায় নিষ্ক্রিয় ছিলেন মোদী, রায় হাইকোর্টে 
সংবাদসংস্থা • আমদাবাদ 
গোধরা পরবর্তী দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তার নিষ্ক্রিয়তার জন্য আজ সরাসরি দুষল গুজরাত হাইকোর্ট। রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে আদালত জানিয়েছে, ২০০২ সালের দাঙ্গা মোকাবিলায় কার্যত হাত গুটিয়ে বসেছিল বিজেপি সরকার। আর সেই জন্যই গোটা গুজরাত জুড়ে নৈরাজ্য চলেছে। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় পাঁচশোটি ধর্মীয় কাঠামো সারানোর জন্য গুজরাত সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। 
গুজরাত হাইকোর্টে 'ইসলামিক রিলিফ কমিটি অফ গুজরাত' (আইআরসিজি)-এর করা একটি আবেদনের শুনানি ছিল আজ। সেখানেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য ও বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চ এক হাত নিয়েছে মোদী সরকারকে। আদালত বলেছে, "দাঙ্গা মোকাবিলায় গুজরাত সরকারের সক্রিয়তার যথেষ্ট অভাব ছিল। সেই জন্য গুজরাত জুড়ে সেই সময় নৈরাজ্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এবং তা চলেওছিল বেশ কিছু দিন।" রাজ্য সরকার কখনওই তার দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারে না, রায় দিতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছে হাইকোর্ট। বিজেপি সরকার যে সেই সময় দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি, আজকের রায়ে সে কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আইআরসিজি-র আইনজীবী এম টি এম হাকিম এই রায়কে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে বলেছেন, "সম্ভবত এই প্রথম কোনও আদালত গোধরা পরবর্তী গুজরাত দাঙ্গা মোকাবিলায় মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সরাসরি মুখ খুলল। সরকারকে দায়িত্বজ্ঞানহীনও বলল।" 
এর আগে গুজরাত হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল মোদীর বিরুদ্ধে। যেখানে আবেদন করা হয়েছিল, গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তে নিয়োজিত নানাবতী কমিশন যেন মোদীকে সমন পাঠায়, তেমনই নির্দেশ দিক আদালত। কিন্তু আদালত সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। গত বছর গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টও শেষ পর্যন্ত নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখারই সিদ্ধান্ত নেয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ওই মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছিল। তারা মোদীর সাক্ষ্যও নিয়েছিল। কিন্তু তাদের রিপোর্ট জমা পড়ার পরে নিজের রায়ে শীর্ষ আদালত বলে যে, তারা এর মধ্যে ঢুকতে চায় না। মামলার বিচারের ভার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপরেই থাকবে। গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত পরপর এই দু'টি রায়ে মোদী কিছুটা অব্যাহতি পাওয়ায় স্বভাবতই উৎফুল্ল ছিল বিজেপি শিবির। উপরন্তু ২০০৮ সালে গোধরায় সাবরমতী এক্সপ্রেসের কামরায় অগ্নিকাণ্ড নিয়ে নানাবতী কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। সেখানেও রেল মন্ত্রকের কাছে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশন যে রিপোর্ট দাখিল করেছিল, তার সম্পূর্ণ উল্টো তথ্য পেশ করা হয়েছে। নানাবতী কমিশন গোধরার ঘটনায় পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কথাই বলেছে। সেটাও মোদীকে রাজনৈতিক সুবিধা দিয়েছে। 
কিন্তু গুজরাত হাইকোর্টে আজকের রায় প্রত্যক্ষ ভাবে দাঙ্গায় মোদীর নিষ্ক্রিয়তার কথা বলল। আদালত জানিয়েছে, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে ভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে, ধর্মীয় কাঠামোর ক্ষেত্রেও ঠিক একই নিয়ম কার্যকর করতে হবে। এর জন্য গুজরাতের ২৬টি জেলার মুখ্য দায়রা বিচারকের কাছে আবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কোন কোন ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের দায়িত্ব মুখ্য দায়রা বিচারকদের উপরই ছেড়ে দিয়েছে আদালত। আগামী ছ'মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে হাইকোর্টের নির্দেশ। 
দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় কাঠামোগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২০০৩ সালেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল আইআরসিজি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও সেই সময় আইআরসিজি-র ওই আবেদনকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বেঁকে বসে বিজেপি সরকার। আবেদনের বিরোধিতা করে মোদী সরকার তখন বলেছিল, কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কর চাপানো মানে ভারতীয় সংবিধান লঙ্ঘন করা। কিন্তু রাজ্য সরকারের সেই বিরোধিতাকে হাইকোর্ট আমল দেয়নি। 
এই রায় শোনার পরে স্বভাবতই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। দিল্লিতে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বি কে হরিপ্রসাদ বলেছেন, "সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে যে কোনও আদালত, দাঙ্গা হোক বা ভুয়ো সংঘর্ষ, মোদীকেই প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত করেছে।" তবে বিজেপির তরফ থেকে এই রায় নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। দলের মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডি শুধু বললেন, "আগে হাইকোর্টের রায় পুরোপুরি জানি। তার পরেই এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলব।" 
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা - ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১২ 

http://sonarbangladesh.com/blog/Lunik1/91923


অর্থনীতির যে সমস্যা অর্থনীতিবিদরা দেখতে পান না

আমি পেশায় অর্থনীতিবিদ। কিন্তু এখন অর্থনীতিতে ঠিক কী গণ্ডগোল চলছে, সেটা কোনও অর্থনীতিবিদই স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছেন কি না, তা নিয়ে আমার রীতিমত সংশয় রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন করে দেখুন, তাঁরা সংস্কারের অভাবের কথা বলবেন (পেনশন, বিমা, অসামরিক বিমান পরিবহণ, রিটেল ইত্যাদিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে এখনও প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি, পেট্রোলিয়াম পণ্যের দামও সংস্কারের অপেক্ষায় রয়েছে, ভর্তুকিও), বিপুল সরকারি খরচ ও ক্রমবর্ধমান রাজকোষ ঘাটতির কথা বলবেন, কর ব্যবস্থার সংস্কার অর্থাৎ ডিরেক্ট ট্যাক্স কোড (ডি টি সি) এবং গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জি এস টি) চালু করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের প্রসঙ্গ তুলবেন। অর্থনীতিবিদরা ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের ওঠা-পড়ার কথাও বলবেন। তাঁরা আর যে কথাগুলো বলবেন, সেগুলো আসলে রোগ নয়, রোগের উপসর্গমাত্র যেমন, অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়েছে, দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতের বাজার থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন। আমি বলছি না যে এই কথাগুলো ভুল। কিন্তু, শুধু এইটুকু দিয়েই অর্থনীতির সমস্যাকে ব্যাখ্যা করায় মুশকিল আছে। জোট রাজনীতি যে সংস্কারের পথে হাজার বাধা সৃষ্টি করে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু, কংগ্রেসের মধ্যেও আর্থিক সংস্কার নিয়ে প্রচুর বাধা রয়েছে। কাজেই, শুধুমাত্র ডি এম কে, তৃণমূল কংগ্রেস বা সমাজবাদী পার্টির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে মানুষকে ভুল বোঝানোর একটা চেষ্টা রয়েছে। যেমন, গ্রিসের পরিস্থিতির জন্যই ভারতীয় অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থা, এই কথাটাও ভুল বোঝানোর চেষ্টামাত্র।

সব সংস্কারই যে দিল্লিতে হয়, তা তো নয়। বহু সংস্কার রাজ্যগুলিতেও হয়। কিন্তু, আপাতত কেন্দ্রের দিকেই তাকানো যাক। জোটের জটে নাকি অনেক আইন আটকে যায়। ১৯৯১ সাল থেকে কেন্দ্রে অনেকগুলি জোট (এবং সংখ্যালঘু) সরকার ক্ষমতায় থেকেছে। কিন্তু তাতে তো সংস্কার থমকে যায়নি। জোটের প্রধান শরিকের কর্তব্য ছোট শরিকদের সঙ্গে কথা বলা। তাকে বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে, এমনকি বিরোধীদের সঙ্গেও আলোচনার পরিসর খুলে রাখতে হবে। সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউ পি এ) দ্বিতীয় দফায় কংগ্রেস এই জায়গাটাতেই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যে ভদ্রলোক আর কয়েক দিনের মধ্যেই রাজনীতির পাট চুকিয়ে রাইসিনা হিলস-এর বাসিন্দা চলেছেন, তিনি ছাড়া আর ক'জন কংগ্রেস নেতার বিভিন্ন দলের সঙ্গে এমন ভাবে আলোচনা করার মতো গ্রহণযোগ্যতা আছে? দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার যে কোনও কাজ করতে পারেনি, তার এটাই কারণ দলের মন্ত্রীরা জনসমক্ষে বিসম্বাদ করেছেন, এবং সব মিলিয়ে মোট ১৮৩টি এমপাওয়ার্ড গ্রুপ অব মিনিস্টারস রয়েছে।

প্রথম দফাতেই বা ইউ পি এ সরকার সংস্কারের পথে কতখানি হাঁটতে পেরেছিল? তথ্যের অধিকার আইন এবং জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনকে যদি সংস্কারের পর্যায়ভুক্ত করেন, তবে সংস্কারের তালিকায় ওই দুটি নামই আছে। ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স এবং বিভিন্ন সড়ক যোজনা এই সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিল। আসল ফারাক অন্যত্র সরকার নীতিপঙ্গুত্বে ভুগছে, এই কথাটি ইউ পি এ সরকারের প্রথম দফায় সর্ব ক্ষণ বোধ হয়নি। দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের ব্যর্থতা যে শুধু আইন প্রণয়নে, তা নয়। জোট রাজনীতি ও আইন প্রণয়নের অন্তর্নিহিত বিরোধেই আটকে পড়ে আমরা একটা ভুল করছি। এই সরকার প্রশাসনিক ভাবে ব্যর্থ, প্রায়োগিক ভাবে ব্যর্থ। ইউ পি এ সরকারে যে ক্ষমতার স্পষ্ট দুটি পৃথক কেন্দ্র রয়েছে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দফতরের হাতে যে চূড়ান্ত ক্ষমতা নেই তা এই ব্যর্থতার জন্য আংশিক ভাবে দায়ী।

সরকারি কর্তা, আমলাদের দিকে যদিও তাকানো প্রয়োজন। তাঁরা যত সিদ্ধান্ত করেন, তার সব তো আর বস্তুনিরপেক্ষ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের নিজস্ব মতামত, সিদ্ধান্তের অবকাশ থেকে যায়। দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই আমলারা ভুল, দেশের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত করেছেন। যেমন, যে সব প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর একমাত্র অধিকার থাকা উচিত ছিল দেশের মানুষের, সেই সম্পদ, আমলাদের সিদ্ধান্তে, বেসরকারি হাতে চলে গিয়েছে, যাচ্ছে। তথ্যের অধিকার আইন ঠিক এই জায়গাটাতেই অত্যন্ত জরুরি। এই আইনটি তৈরি হওয়ায় অনেক সিদ্ধান্তই আগের চেয়ে ঢের স্বচ্ছ হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত যদি জনস্বার্থে, সৎ উদ্দেশ্যে, স্বচ্ছ ভাবে গৃহীত হয়, তা হলে এই আইনকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

কিন্তু, সব সিদ্ধান্তই কি একেবারে নৈর্ব্যক্তিক ভাবে, বিষয়-নিরপেক্ষ ভাবে করা সম্ভব? আদৌ না। যদি তাই হত, তা হলে অভিজ্ঞ আমলাদের কোনও প্রয়োজনই থাকত না। কম্পিউটারে তথ্য ভরে দিলে কম্পিউটারই সিদ্ধান্ত করতে পারত! কাজেই, অভিজ্ঞ আমলাদের প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই হবে। আমার মতে, আমাদের প্রত্যেকের ১৯৮৮ সালের প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট পড়া উচিত। এই আইনটি মুখ্যত অসৎ উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই তৈরি যে সব ক্ষেত্রে কোনও আমলা তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেন চলতি ভাবে আমরা যাকে দুর্নীতি বলে জানি। কিন্তু, এই আইনের একটি বিশেষ ধারা রয়েছে ধারা ১৩ (ঘ)(৩) যে ধারাটি ব্যক্তিগত দুর্নীতির বিষয়ে নয়। এক জন সরকারি কর্তা হিসেবে আমি যদি এমন কোনও সিদ্ধান্ত করি যার ফলে কোনও তৃতীয় পক্ষ লাভবান হবে, তবে আমার কাজটি অপরাধের পর্যায়ভুক্ত (ক্রিমিনাল মিসকন্ডাক্ট) হবে। এক জন আমলা যে সিদ্ধান্তই করুন না কেন, তাতে কারও না কারও লাভ অবশ্যই হবে। মুশকিল হল, কোনও আমলা যদি একেবারে সৎ উদ্দেশ্যে, সব কিছু বিবেচনা করেও কোনও সিদ্ধান্ত করেন, সেই সিদ্ধান্তটি ভবিষ্যতে কার জন্য কী ভাবে লাভজনক হবে, সিদ্ধান্ত করার সময় তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কাজেই, কোনও সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ তাৎপর্য যাতে কোনও সরকারি কর্তাকে বিপাকে না ফেলে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যুগ্ম সচিব বা তার চেয়ে উঁচু পদে কর্মরত, এমন ১২২ জন আই এ এস অফিসারের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে সি বি আই ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। অসৎ উদ্দেশ্যে কোনও সিদ্ধান্ত করেছেন, এমন সরকারি কর্তাদের শায়েস্তা করতে গিয়ে সৎ আমলাদেরও জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এখন ভারতের ক্ষমতার অলিন্দে দুর্নীতির হাওয়া বইছে এই অবস্থায় কোনও আমলারই আর রক্ষাকবচ নেই। কারও বিরুদ্ধে এক বার মামলা হল মানে কত ভাবে যে নাজেহাল হতে হবে, তার ইয়ত্তা নেই। সেই আমলা যদি শেষ পর্যন্ত বেকসুর খালাসও পান, তার আগে অবধি আইনজীবীর দক্ষিণা জোগাতে হবে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা মামলায় বার বার হাজিরা দিতে হবে। ভুললে চলবে না, এই আমলারা দেখছেন যে মন্ত্রীরাও কোনও সিদ্ধান্ত করতে সাহস করছেন না খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই সিদ্ধান্তহীনতার রোগ ছড়াচ্ছে। এক সময় ভারতের সিভিল সার্ভিসকে ইস্পাতের কাঠামো বলা হত। সেই কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ কমিয়ে আনা তুলনায় অনেক সহজ কাজ পাঁচ বছরেই সেই কাজটি করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু, সিভিল সার্ভিসে যে ঘাটতি তৈরি হল, তা পুষিয়ে নিতে হয়তো ২০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে।

এর পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ, অরণ্য এবং পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্রের কথাও বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই আইনগুলি এবং তার সম্ভাব্য সংশোধনী বিষয়ে (খনি সংক্রান্ত আইন ও সংশোধনী সমেত) আমি ব্যক্তিগত ভাবে কী মনে করি, সেই প্রশ্নটা আপাতত উহ্য থাক। কথা হল, ছাড়পত্র নেওয়া যদি বাধ্যতামূলকই হয়, তবে দুটো জিনিস একেবারে বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। প্রথমটি হল, ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধরা যাক ৩০০ দিন সিদ্ধান্ত করতে হবে। সরকার যদি ৩০০ দিনের মধ্যে কোনও একটি বিশেষ প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়া বা না দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত না করতে পারে, তবে ধরে নিতে হবে যে সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে। দ্বিতীয়টি হল, এক বার কোনও প্রকল্পকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আর সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা চলবে না। আইনের স্বচ্ছতার অভাবের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই আদালতের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

ইউ পি এ সরকারের প্রথম দফা এবং দ্বিতীয় দফার মধ্যে পার্থক্য কী? আমার মতে, মূল পার্থক্য দুটো এক, সিভিল সার্ভিস-এর ব্যবস্থাটি কার্যত ভেঙে পড়া; এবং দুই, বিভিন্ন ছাড়পত্রের বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব। তথাকথিত 'সর্বজনীন বৃদ্ধি'-র গল্প নিয়ে আমার আপত্তি থাকতে পারে, কিন্তু সেই সমস্যাটি সরকারের প্রথম দফাতেও ছিল। সরকারের দ্বিতীয় দফায় এই দুটি সমস্যা যুক্ত হয়েছে এবং কার্যত তার থেকেই সরকারের নীতিপঙ্গুত্ব, প্রশাসন-ঘাটতি, প্রায়োগিক-ঘাটতি আরম্ভ হয়েছে। এই সরকারের সম্বন্ধে আমাদের মনোভাব যে নেতিবাচক, তার কারণ এগুলোই। লেখার গোড়াতেই বলেছিলাম, পেশাদার অর্থনীতিবিদরা এই কারণগুলো সহজে বুঝতে পারেন না। ফলে, অর্থনৈতিক সমীক্ষাগুলোতে এই কারণগুলি উঠে আসে না। কিন্তু, কোনও অভিজ্ঞ আই এ এস অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, তিনি আমার সঙ্গে একমত হবেন। এই সমস্যাগুলো মেটানো অনেক বেশি কঠিন। তাই, অন্য অর্থনীতিবিদদের তুলনায় ভারত নিয়ে আমি ঢের কম আশাবাদী। অর্থনীতিবিদ। দিল্লির সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর সঙ্গে যুক্ত। মতামত ব্যক্তিগত।

 

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%85-%E0%A6%A5%E0%A6%A8-%E0%A6%A4-%E0%A6%AF-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B8-070800134.html


ভারতে বিদেশী বিনিয়োগ

ভারতে বিদেশী বিনিয়োগ

১। বিদেশের সরাসরি বিনিয়োগ

১. কি কি প্রকার নিয়মাবলীর সাহায্যে বিদেশী কোম্পানী ভারতে ব্যাবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে ?

·        একটি বিদেশী কোম্পানী ভারতে তাদের ব্যাবসা-বাণিজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা করলে তারা নিম্নলিখিত নিয়মগুলির যে কোনোটি নির্বাচন করতে পারেন :

·        ১৯৫৬ সালের কোম্পানীজ্ আ্যাক্টের অন্তর্গত আইনের দ্বারা, একটি বিদ্যমান সংস্থা হিসাবে আর একটি কোম্পানীকে  নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমসংস্থাভুক্ত করতে পারে

o        যুগ্ম কর্মপরিকল্পনা(জয়েন্ট ভেঞ্চার)-এর সাহায্যে ; অথবা

o        সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব মালিকানার অধীনে

·        একটি বিদ্যমান অসমসংস্থা হিসাবে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে

o        লিযাজঁ অফিস (সংযোগ অফিস) / রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস (প্রতিনিধিত্বকারী অফিস)

o        প্রোজেক্ট অফিস (কর্ম-পরিকল্পনার অফিস)

o        ব্রাঞ্চ অফিস (শাখা অফিস)

ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট (অন্য স্থানের ব্যাবসা-বাণিজ্যের ভারতে শাখা অফিসের প্রতিষ্ঠান) রেগুলেশন ,২০০০ -এর অন্তর্গত নিয়মের দ্বারা অনুমতিপ্রাপ্ত এই ধরণের অফিসগুলি সক্রিয় কার্যকলাপের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করতে পারে 

২. একটি বিদেশী কোম্পানী ভারতে কিভাবে বিনিয়োগ করবে ? ভারতীয় কোম্পানী দ্বারা বিদেশী সহযোগী কোম্পানী/বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রচলনের আইনি প্রবিধানের কি অধিকার আছে ?

অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয় পথ)

·        অটোমেটিক রুট(স্বয়ংক্রিয় পথ)-এর অন্তর্গত ১০০ % এফ.ডি.আইসমস্তকার্যকলাপে/ বিভাগে (সেক্টরে) অনুমোদিত, কেবলমাত্র নিম্নলিখিত বিভাগ/বিষয় ছাড়া, যাদের সরকারের কাছ থেকে পূর্ব্ব অনুমোদন গ্রহণ আবশ্যক :

    • যে সমস্ত কার্যকলাপ/স্বতন্ত্র বস্তুর ইণ্ডাস্ট্রিয়াল লাইসেন্স (শিল্পসংক্রান্ত অনুমতিপত্রের) প্রয়োজন ;
    • যে সমস্ত প্রস্তাবে বিদেশী সহযোগী কোম্পানীর ভারতে "একই " ক্ষেত্রে একটি অর্থনৈতিক / প্রাযুক্তিক সহযোগ বর্তমানে বিদ্যমান আছে,

o       একটি বিদ্যমান ভারতীয় কোম্পানীতে শেয়ার অর্জনের প্রস্তাব :আর্থিক পরিষেবা বিভাগ এবং যেখানে ১৯৯৭ সালের, সিকিউরিটি আ্যাণ্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইণ্ডিয়া (প্রচুর পরিমাণ শেয়ার অর্জন এবং অধিগ্রহণ) রেগুলেশনস্(প্রবিধান)-এ আকর্ষিত ;

o       সমস্ত প্রস্তাবগুলি আউটসাইড নোটিফায়েড সেক্টোরাল পলিসি/ক্যাপস্ অথবা এফ.ডি.আইযেখানে অনুমোদিত নয় সেই বিভাগে পড়ছে

·        অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয় পথ)-এর অন্তর্গত বিভিন্ন বিভাগে/ বিস্তৃতকার্যকলাপে এফ.ডি.আই. অনুমোদিত , এর সরকার অথবা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কারোর দ্বারাই কোনো পূর্ব্ব অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেইবিনিয়োগকারীদের কেবলমাত্র ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে আভ্যন্তরীণ প্রেরিত টাকা কড়ির প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া প্রয়োজন এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রদানের (ইস্যুর) ৩০ দিনের মধ্যে ওই অফিসে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা করা প্রয়োজন

গভর্নমেন্ট রুট (সরকারী পথ)

·        এফ.ডি.আই. -এর যে কার্যকলাপগুলি অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয়পথ)-এর অন্তর্গত নয় সেগুলির পূর্ব্ব অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আছে এবং সেগুলি ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ড এফ.আই.পি.বি., রাজস্ব-বিভাগ দ্বারা বিবেচিত হয়http://www.dipp.gov.in/. থেকে ডাউনলোড করে ফর্ম এফ.সি.-আই.এল. (FC-IL)-এ আবেদন করা যেতে পারে সাদা কাগজে বিস্তারিতভাবে লিখিত সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্বলিত আবেদনপত্রও গ্রহণযোগ্য । এর জন্য কোনো ফি জমা করতে হয় না

এফ.ই.এম.এ.-র অন্তর্গত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর সাধারণ অনুমতি

·        যে সব ভারতীয় কোম্পানীগুলির এফ.আই.পি.বি. রুটের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের অনুমোদন আছে তাদের আভ্যন্তরীণ টাকা কড়ি প্রেরণের জন্য এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রদানের(ইস্যু) জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর আর কোনো অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হয় না  ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসেআভ্যন্তরীণ টাকা কড়ির প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারী অথবা এন.আর.আই.-দের শেয়ার প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে কোম্পানীগুলির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া প্রয়োজন

৩. ভারতে অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয় পথ)-র সাথে সাথে গভর্নমেন্ট রুট(সরকারী পথ)-র অন্তর্গত কোন্ বিভাগগুলিতে এফ.ডি.আই. অনুমোদিত নয় ?

এফ.ডি.আইগভর্নমেন্ট রুট (সরকারী পথ)-এর সাথে সাথে অটোমেটিক রুট(স্বয়ংক্রিয় পথ)-এর অন্তর্গত নিম্নলিখিত বিভাগগুলিতে নিষিদ্ধ:

ক) খুচরো ব্যবসা

খ) আণবিক শক্তি

গ) লটারীর ব্যবসা

ঘ) জুয়া এবং বাজি ধরা

ঙ) নির্মাণ প্রকল্প এবং ভূসম্পত্তির ব্যবসা

চ) কৃষি (পুষ্পোত্পাদনউদ্যানপালনবীজ উত্পাদনপশু পালন, মত্স পালন এবং সবজি, মাশরুম ইত্যাদির চাষ - আয়ত্তাধীন অবস্থার অধীনে এবং কৃষি ও তত্সম্বন্ধিত বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিষেবা বাদ দিয়ে) এবং চাষ-আবাদ (চা চাষ-আবাদ ছাড়া অন্য কিছু)

৪.  অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয় পথ)-এর অধীনে অথবা সরকারী অনুমোদনের সাথে বিনিয়োগ করার পরে কি করা যেতে পারে ?

·        এই অভিপ্রায়ে একটি দ্বি-পর্যায়িক রিপোর্টিং প্রক্রিয়া (বিবৃতি প্রক্রিয়া)চালু করা হয়েছে

·        বিনিয়োগের জন্য অর্থ প্রাপ্তির বিষয়ে

o       বিদেশী বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে ভারতীয় কোম্পানী ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর অন্তর্গত আঞ্চলিক অফিস, যার এক্তিয়ারে এর রেজিস্ট্রিকৃত অফিস অবস্থিত, সেখানে নিম্নলিখিত বিস্তৃত বিষয়ের বিবরণ সম্বলিত একটি রিপোর্ট পেশ করবে, যেমন :

o       বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নাম এবং ঠিকানা

o       ফাণ্ড (তহবিল)প্রাপ্তির তারিখ এবং তাদের সমতুল্য টাকা

o       অনুমোদিত ব্যবসায়ীর নাম এবং ঠিকানা যার মাধ্যমে ফাণ্ড(তহবিল)গৃহীত হয়েছে, এবং

o       সরকারী অনুমোদনের বিস্তারিত বিবরণ, যদি কিছু থাকে ;

·        বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রচারের (ইস্যু)বিষয়ে :

·        শেয়ার প্রচারের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে, এফ.সি.-জি.পি.আর. ফর্মে একসঙ্গে একটি রিপোর্ট তৈরী করে নিম্নলিখিত নথিপত্রের সঙ্গে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর আঞ্চলিক অফিসে দাখিল করতে হবে :

·        কোম্পানী ভারতের বাইরে বসবাসকারীদের থেকে যে বিনিয়োগ গ্রহণ করছে, কোম্পানী সেক্রেটারীর থেকে গৃহীত সার্টিফিকেট এই স্বীকৃতির সাক্ষ্য দেয় যে

o       ১৯৫৬ সালের কোম্পানী আ্যাক্টের সমস্ত অবশ্যপূরণীয় শর্ত মেনে নেওয়া হয়েছে ;

o       যদি সরকারী অনুমোদনের কোনো স্থিতিকাল এবং শর্ত থাকে, সেগুলি মেনে নেওয়া হয়েছে ;

o       কোম্পানী নিম্নলিখিত এই প্রবিধানগুলির অধীনে শেয়ার প্রচলনে (ইস্যুতে) আইনতঃ যোগ্যতাসম্পন্ন ; এবং

o       কোম্পানীর কাছে ভারতে অনুমোদিত ব্যবসায়ীর দ্বারা প্রচারিত (ইস্যু) সমস্ত অরিজিন্যাল (মৌলিক)সার্টিফিকেট থাকলে তা অর্থ প্রাপ্তির বিবেচনার সাক্ষ্য দিচ্ছে ;

·        ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিদের যে শেয়ার প্রচলিত করা হয়, সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক (স্ট্যাট্যুটরী অডিটর) অথবা হিসাব নিরীক্ষকের (চাটার্ড আ্যকাউনটেন্ট) দেওয়া সার্টিফিকেট সেই শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির পদ্ধতিকে নির্দেশিত করছে

৫. বর্তমানে বিদ্যমান শেয়ারগুলি দেশে বসবাসকারীদের থেকে অনাবাসীদের কাছে অথবা অনাবাসীদের থেকে দেশে বসবাসকারীদের কাছে হস্তান্তরিত করার জন্য কি কি নীতি নির্দেশিত হয়েছে?

অনাবাসীদের কাছ থেকে অনাবাসীদের কাছে হস্তান্তরণ :

ক :  বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরণ :

·        ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তি শেয়ার/পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র (কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার) অবাধে ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তিকে বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারে নিম্নলিখিত বিষয়ের অধীনে :

o       ভারতের বাইরে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তি,(অনাবাসী ভারতীয় হিসাবে নয় অথবা বিদেশী যৌথ সংস্থা হিসাবে নয়), ভারতের বাইরে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তিকে শেয়ার/ পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র (কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার) বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারেন ;এই শর্তে যে সংগ্রহকারীর অথবা হস্তান্তরকারীর ভারতে একই ক্ষেত্রে অথবা একই বিভাগে কোনো পূর্ব্ববর্তী ভেঞ্চার (কর্মপ্রচেষ্টা) অথবা অংশীদারী নেই

o       একজন অনাবাসী ভারতীয়ের কাছে (আনাবাসী ভারতীয়NRIযে শেয়ার/ পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র (কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার) আছে,কেবলমাত্র আর একজন অনাবাসী ভারতীয়কেই তিনি বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারেন ;

o       ভারতের বাইরে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তি এফ.ই.এম.এ.(FEMA)প্রবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বোপার্জিত শেয়ার/ পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র (কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার), ভারতে একটি স্বীকৃত স্টক এক্সচেঞ্জ(সংভার বিনিময় কেন্দ্র)-এ একজন রেজিস্ট্রীকৃত দালালের মাধ্যমে বিক্রয় করতে পারে

o       একজন অনাবাসী ভারতীয় অথবা বিদেশী যৌথ সংস্থা, কেবলমাত্র আর একজন অনাবাসী ভারতীয়কেই বিক্রয়ের মাধ্যমে শেয়ার হস্তান্তরিত করতে পারেন ;

খ : উপহার দানের মাধ্যমে হস্তান্তরণ :

·        ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তি শেয়ার/ কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার (পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র) অবাধে ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তিকে উপহার দানের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারেন নিম্নলিখিত বিষয়ের অধীনে :

o       ভারতের বাইরে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তি,(অনাবাসী ভারতীয় হিসাবে অথবা বিদেশী যৌথ সংস্থা হিসাবে নয়), ভারতের বাইরে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তিকে শেয়ার/ কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার (পরিবর্তনীয় ঋণ পত্র) উপহার দানের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারেনএই শর্তে যে সংগ্রহকারীর অথবা হস্তান্তরকারীর ভারতে একই ক্ষেত্রে অথবা একই বিভাগে কোনো পূর্ব্ববর্তী কর্মপ্রচেষ্টা (ভেঞ্চার) অথবা অংশীদারী নেই

o       একজন অনাবাসী ভারতীয়ের কাছে যে শেয়ার/ কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার (পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র)ধরে রাখা আছে, তা কেবলমাত্র আর একজন অনাবাসী ভারতীয়কেই উপহার দানের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারেন ;

o       ভারতের বাইরে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তি ভারতে বসবাসকারী যে কোনো ব্যক্তিকে শেয়ার/ কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার (পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র) উপহার দানের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারেন ;

ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তির থেকে অনাবাসী ভারতীয়কে হস্তান্তরণ :

ক : বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরণ  মে ৩,২০০০ তারিখে প্রকাশিত আইন নম্বর ১০-এর নোটিফিকেশন নম্বর. FEMA 20/2000-RB র অন্তর্ভূক্ত সাধারণ অনুমতি .

·        যে ভারতীয় কোম্পানীর কার্যকলাপ বিভাগীয় সীমার শর্তাধীন এফ.ডি.আই.-এর জন্য অটোমেটিক রুটের (স্বয়ংক্রিয় পথের) অন্তর্ভুক্ত, ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তি সেই কোম্পানীর যে কোনো শেয়ার/ কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার (পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র) ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিকে বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত করতে পারে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে :

·        যে ভারতীয় কোম্পানীর শেয়ার অথবা পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র (কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার) হস্তান্তরণের জন্য প্রস্তাবিত হয়েছে সেই কোম্পানী কোনো রকম অর্থনৈতিক পরিষেবার প্রদানে নিযুক্ত হবে না ; (অর্থনৈতিক পরিষেবার মানে রিজার্ভ ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং কোম্পানীগুলি দ্বারা পরিষেবা প্রদান, ইনসিওরেন্স, ইনসিওরেন্স রেগুলেটারী আ্যাণ্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি (আই.আর.ডি.এ.) দ্বারা পরিচালিত কোম্পানী এবং অন্য কোম্পানী যেগুলি হয়তো অন্য যে কোনো অর্থনৈতিক পরিচালক দ্বারা কেস হিসাবে পরিচালিত হতে পারে) 

·        হস্তান্তরণটি ১৯৯৭ সালের এস. ই.বি.আই. (সাবস্ট্যানশিয়াল আ্যাকুইজিশন অফ শেয়ারস্ আ্যাণ্ড  টেকওভার) প্রবিধানের আওতায় পড়বে না ; এবং

·        সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মূল্যনির্ধারক নির্দেশাবলী(প্রাইসিং গাইডলাইনস্), দলিল ব্যবহারে(ডকুমেন্টেশন) এবং প্রতিবেদনে (রিপোর্টিং)অনুগত থাকবে, যেগুলি এই ধরণের হস্তান্তরণের প্রয়োজনে হয়ত রিজার্ভ ব্যাংক দ্বারা সময় সময় স্বতন্ত্র্যভাবে উল্লিখিত হতে পারে

খ : উপহার দানের মাধ্যমে হস্তান্তরণ :

·        নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে একজন ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তি ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিকে শেয়ার হস্তান্তরিত করতে পারে :

·        ভারতে বসবাসকারী একজন ব্যক্তি যে ভারতের বাইরে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তিকে শেয়ার হস্তান্তরিত করার প্রস্তাব করেছে (পূর্ব্বকালীন ও.সি.বি.এস.OCBs ছাড়া) যে কোনো সিকিউরিটি, উপহারের মাধ্যমে , দি সেন্ট্রাল অফিস অফ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্টে একটি আবেদন করতে পারে, রিজার্ভ ব্যাংক নিম্নলিখিত তথ্যগুলি সরবরাহ করবে, যেমন :

·        হস্তান্তরকারীর এবং  প্রস্তাবিত হস্তান্তরিত ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা

·        হস্তান্তরকারীর এবং প্রস্তাবিত হস্তান্তরিত ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক

·        উপহার দেবার কারণ;

৬. যদি দেশে বসবাসকারী ব্যক্তির থেকে অনাবাসী ব্যক্তিকে হস্তান্তরণটি উপরিউক্ত সুবিধার আওতায় না পড়ে তাহলে কি হবে ?

·        কোনো কারণে যদি উপরোক্ত কোনো একটিতেও হস্তান্তরণটি উপযুক্ত মানানসই না হয়, তাহলে হয় হস্তান্তরকারী (বসবাসকারী) অথবা হস্তান্তরিত ব্যক্তি (অনাবাসী) হস্তান্তরণের জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইণ্ডিয়ার অনুমোদন প্রাপ্তির জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-তে একটি আবেদন করতে পারে

·        এফ.আই.পি,বি.-র অনুমোদনের একটি অনুলিপি (কপি)

·        হস্তান্তরকারী এবং হস্তান্তরিত ব্যক্তির কাছ থেকে সম্মতিপত্র যাতে শেয়ারের সংখ্যা, বিনিয়োগী কোম্পানীর নাম এবং যে মূল্যে হস্তান্তরণ বলবত্ হবার প্রস্তাব আছে, তা স্পষ্ট করে নির্দেশিত আছে

·        ভারতীয় বিনিয়োগকারী কোম্পানীর বর্ত্তমান/পূর্ব্ব হস্তান্তরিত শেয়ারধারণের নমুনা ভারতে বসবাসকারী এবং অনাবাসীদের বর্গ-অনুযায়ী নিরপেক্ষ অংশগ্রহণকে প্রদর্শন করে

·        অনাবাসীদের কাছে বর্তমানে বিদ্যমান ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর অনুমোদনপত্রের অনুলিপি (কপি)/এফ.সি.-জি আর.পি.-র স্বীকৃত অনুলিপি (কপি)তাদের শেয়ার ধারণের প্রমাণ দিচ্ছে

·        যদি বিক্রয়কারী/হস্তাম্তরকারী (অনাবাসী ভারতীয়) এন.আর.আই./ও.সি.বি.এস. হন, তাহলে  ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর অনুমোদনপত্রের অনুলিপি(কপি) স্বদেশে তাদের পুনঃপ্রেরণের/ প্রত্যাগমণের ভিত্তিতে ধরে রাখা শেয়ারগুলির সাক্ষ্য দেয়

·        যদি অনাবাসীদের দ্বারা স্বোপার্জিত শেয়ারগুলি এস.ই.বি.আই. টেকওভার রেগুলেশন -এর অন্তর্গত হয় তাহলে উন্মুক্ত প্রস্তাবের দলিল বা নথিপত্র এস.ই.বি.আই.-তে দায়ের করতে হবে

·        হিসাব নিরীক্ষকের(চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট) কাছ থেকে প্রাপ্ত ফেয়ার ভ্যালুয়েশন সার্টিফিকেট, নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী (গাইডলাইন) অনুযায়ী শেয়ারের মুল্য নির্দেশিত করে :

·        তালিকা বহির্ভূত শেয়ারের ক্ষেত্রে পূর্ব্বকালীন কন্ট্রোলার অফ ক্যাপিটাল ইস্যু (মূলধন প্রচারের নিয়ামক) -এর মতামত অনুযায়ী ন্যায্য মূল্য হিসেব করা হবে

·        তালিকাভুক্ত শেয়ারের ক্ষেত্রে, যে ন্যায্য মূল্য হিসেব করা হয় সেটি ৬ মাসের জন্য সর্ব্বোচ্চ এবং সর্ব্বনিম্ন সাপ্তাহিক কোটেশন-এর সর্ব্বোচ্চ গড় হিসাবের চেয়ে কম নয় এবং প্রাত্যহিক সর্ব্বোচ্চ এবং সর্ব্বনিম্ন কোটেশনের গড় হিসাবের অথবা এফ.আই.পি.বি.-তে আবেদন করার দিন থেকে ৩০ দিনের অব্যবহিত পূর্ববর্তী দুই সপ্তাহের আগের চেয়ে কম নয়

৭. ভারতে যে বিনিয়োগ এবং লাভ অর্জিত হয় তা কি পুনঃপ্রেরণযোগ্য ?

·        যেখানে অনাবাসী ভারতীয়রা বিশেষভাবে নন-রিপ্যারটিয়েবেল স্কীমে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন, সেই ক্ষেত্র ছাড়া সমস্ত বিদেশী বিনিয়োগ অবাধে পুনঃপ্রেরণযোগ্য একজন অনুমোদিত ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের ওপর ঘোষিত লভ্যাংশ অবাধে পুনঃপ্রেরণ বা পুণঃস্থাপন করা যেতে পারে

৮. বর্তমানে বিদ্যমান কোম্পানীর ক্ষেত্রে শেয়ারের প্রচলন (ইস্যু) এবং মূল্যায়নের ওপর কি নির্দেশাবলী আছে?

·        ১৯৫৬ সালের কোম্পানী আ্যক্টের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিশেষভাবে পছন্দের ভিত্তিতে শেয়ারের বন্টন হবে, একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী -র ক্ষেত্রে যেটির স্বতন্ত্র্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন

·        তালিকাভূক্ত কোম্পানীর ক্ষেত্রে , ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক/ এস.ই.বি.আই. এর নির্দেশিকা (গাইডলাইন) অনুযায়ী মূল্যায়ণ হবে এইভাবে :

প্রচলনের মূল্য (ইস্যু প্রাইস) হয়তো হবে এইভাবে  :

(এ) ছয় মাসের অব্যবহিত পূর্ব্ববর্তী প্রাসঙ্গিক তারিখের স্থিতিকালে স্টক এক্সচেঞ্জ-এ উল্লিখিত সম্বন্ধিত শেয়ারের সমাপ্তি মূল্যের সাপ্তাহিক সর্ব্বোচ্চ এবং সর্ব্বনিম্ন গড় , অথবা

 (বি) দুই সপ্তাহের অব্যবহিত পূর্ব্ববর্তী প্রাসঙ্গিক তারিখের স্থিতিকালে স্টক এক্সচেঞ্জ-এ উল্লিখিত সম্বন্ধিত শেয়ারের সমাপ্তি মূল্যের সাপ্তাহিক সর্ব্বোচ্চ এবং সর্ব্বনিম্ন গড় 

·        তালিকা বহির্ভুত কোম্পানীর ক্ষেত্রে, মূলধন প্রচারের পূর্ব্বকালীন নিয়ামক (কন্ট্রোলার)-এর দ্বারা প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুসারে মূল্যায়ন করা হবে

৯. ভারতীয় কোম্পানীর দ্বারা প্রকাশিত এ.ডি.আর.এস./ জি.ডি.আর.এস. সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কি কি প্রবিধান আছে ?

·        ভারতীয় কোম্পানী এ.ডি.আর.এস./ জি.ডি.আর.এস প্রচার(ইস্যু)-এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে মূলধন বাড়াতে অনুমতি প্রাপ্ত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর পূর্ব্ববর্তী অনুমোদন লাভ ছাড়াও তারা এ.ডি.আর.এস./ জি.ডি.আর.এস. প্রচার (ইস্যু) করতে পারে, যদি এটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ইস্যু অফ ফরেন কারেন্সি করভার্টেবেল বণ্ড আ্যাণ্ড অর্ডিন্যারি শেয়ার (ডিপোজিটারী রিসিপ্ট মেকানিজমের মাধ্যমে) স্কীম অনুসারে এবং ভারত সরকারের রাজস্ব-মন্ত্রক দ্বারা প্রচারিত উত্তরকালীন নির্দেশিকা অনুসারে এ.ডি.আর.এস./জি.ডি.আর.এস. প্রচার করতে উপযুক্ত হয়

·        এ.ডি.আর.এস./ জি.ডি.আর.এস. প্রকাশ করার পরে , ২০০০ সালের ৩রা মে প্রকাশিত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক  নোটিফিকেশন নম্বর এফ.ই.এম.এ.২০/ ২০০০-আর.বি. সংযোজিত তালিকা " সি "-তে দেওয়া প্রোফর্মাতে কোম্পানীকে রিটার্ন ফাইল করতে হবে কোম্পানীকে একই প্রবিধানের অন্তর্গত সংযোজিত তালিকা "ডি"-তে স্বতন্ত্রভাবে উল্লিখিত একটি ফর্মে আরও একটি ত্রৈমাসিক রিটার্ন ফাইল করতে হবে 

·        জি.ডি.আর/এ.ডি.আর প্রচারের পুণরারম্ভে, ভূ-সম্পত্তি( রিয়েল এস্টেট) এবং শেয়ার বাজারে(স্টক মার্কেটে) নিবেশের ওপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কোনো চূড়ান্ত ব্যবহারের বাধা নেই 

১০. স্পনসরড এ.ডি.আর. এবং এ.ডি.আর./জি.আর.ডি.-এর দ্বি-পর্যায়িক ফানজিবিলিটি স্কীম বলতে কি বোঝায়?

·        স্পনসরড এ.ডি.আর./জি.আর.ডি: একটি ভারতীয় কোম্পানী প্রধান নেতৃত্বকারী ম্যনেজার দ্বারা স্থিরকৃত মূল্যে একটি বিদেশী আমানতকারীর সঙ্গে তার অংশীদারদের দ্বারা আটকে রাখা শেয়ারের বদলে এ.ডি.আর. / জি.আর.ডি. -র প্রচার করার বিধিমত প্রতিশ্রুতি দিতে পারে (স্পনসর করতে পারে) এটি পরিচালনার জন্য ২০০২ সালের ২৩ শে নভেম্বরে তারিখের নির্দেশিকা এ.পি.(ডি.আই.আর.সিরিজ) সার্কুলার নম্বর ৫২.তে প্রকাশিত হয়েছে 

·        টু-ওয়ে (দুই-ধরণের) ফানজিবিলিটি স্কীম : লিমিটেড টু-ওয়ে ফানজিবিলিটি স্কীমের অন্তর্গত, ভারতের একজন নথিভূক্ত দালাল  ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তির তরফ থেকে এ.ডি.আর.এস./ জি.আর.ডি. এস.-এ কেনা শেয়ার পরিবর্তিত করার উদ্দ্যেশ্যে একটি ভারতীয় কোম্পানীর শেয়ার কিনতে পারে । এটি পরিচালনার জন্য ২০০২ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী তারিখে নির্দেশিকা এ.পি. (ডি.আই.আর.সিরিজ) সার্কুলার নম্বর ২১-এ প্রকাশিত হয়েছে 

·        এই স্কীমটি চালু করা হয়েছে কেবলমাত্র এ.ডি.আর.এস./ জি.আর.ডি.এস.-এর সর্বাধিক সংখ্যক শেয়ার কেনার জন্য এবং পুণঃ-পরিবর্তনের জন্য, যেগুলি প্রকৃতপক্ষে বাজারে বিক্রী হয়ে গেছে  এগুলি এ.ডি.আর.এস./ জি.আর.ডি.এস.-র যত সংখ্যক শেয়ার প্রত্যাহার করো নেওয়ায় বেরিয়ে যাচ্ছে সেগুলির সমান অথবা কম সেইজন্য, এটি কেবলমাত্র একটিলিমিটেড টু-ওয়ে ফানজিবিলিটি, যেখানে ঘরোয়া বাজার থেকে নতুন শেয়ার কেনার জন্য খোলা জায়গা পাওয়া যায়  অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের দ্বারা ঘরোয়া বাজারে বিক্রী হওয়া পরিবর্তিত শেয়ারগুলি সীমিত সংখ্যক । যতক্ষণ পর্য্যন্ত এ.ডি.আর.এস./ জি.আর.ডি.এস. ঘরোয়া বাজারে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের জন্য ন্যূনতমমূল্যে শেয়ারের মূল্যায়ণ না করে, একজন বিনিয়োগকারী এ.ডি.আর.এস./ জি.আর.ডি.এস.-কে আণ্ডারলাইং শেয়ারে পরিবর্তিত করে এবং ঘরোয়া বাজারে সেগুলি বিক্রী করে মুনাফা অর্জন করবে কোনো কারণে যদি এ.ডি.আর.এস./  জি.আর.ডি.এস. মূল মূল্যের অধিক মূল্যে মূল্যায়িত হয়, সেক্ষেত্রে রিভার্স ফানজিবিলিটির জন্য একটা চাহিদা তৈরী হবে, সেটি হল, ঘরোয়া বাজারে শেয়ার কিনে এ.ডি.আর.এস. / জি.আর.ডি.এস.-তে পুণরায় পরিবর্তন করা । এস.ই.বি.আই.-এর অন্তর্গত শেয়ারের দালাল এবং সিকিউরিটি (নিরাপত্তা) বাহিনীর তত্বাবধানের মাধ্যমে এই স্কীমটি সক্রিয়ভাবে কার্যকর হয় 

১১. ভারতীয় কোম্পানীগুলি ফরেন কারেন্সি কনভার্টেবেল বণ্ড ( এফ.সি.সি.বি.) প্রচার (ইস্যু) করতে পারে ?

·        ভারতীয় কোম্পানীগুলি বিদেশের বাজারে ফরেন কারেন্সি কনভার্টেবেল বণ্ড প্রচার (ইস্যু) এবং ১৯৯৩ সালের অর্ডিন্যারি শেয়ার (জিপোজিটরী রিসিপ্ট মেকানিজম/ডি.আর.এম.-এর মাধ্যমে) স্কীম অনুসারে এফ.সি.সি.বি.এস. ইস্যু করতে পারে

·        এফ.সি.সি.বি.এস. ইস্যু-টির ২০০০ সালের ৩রা মে তারিখে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক দ্বারা প্রকাশিত সময়ে-সময়ে সংশোধিত নোটিফিকেশন নম্বর এফ.ই.এম.এ.৩/২০০০-আর.বি.-অনুযায়ী এক্সটার্নাল কমারশিয়াল বরোয়িং গাইডলাইনস্ (বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণ নির্দেশিকা) মেনে চলার প্রয়োজন আছে

১২. প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে আমি কি বিনিয়োগ করতে পারি ? এই ধরণের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি কি প্রবিধান প্রযোজ্য ?

·        প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগ করলে তা বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগের মত করেই দেখা হবে প্রস্তাবগুলি হয় অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয় পথ) অথবা হয়তো এফ.আই.পি.বি.-র মাধ্যমে কেস হিসাবে জারি করা হয়প্রেফারেন্স শেয়ারে বিদেশী বিনিয়োগকে শেয়ার মূলধনের একটি অংশ হিসাবে গণ্য করা হয় এবং এটি এক্সটার্নাল কমারশিয়াল বরোয়িং গাইডলাইনস্/ ক্যাপের আওতার বাইরে পড়ে প্রেফারেন্স শেয়ার বিদেশী ইক্যুইটি (সাধারণ শেয়ার)-র ওপর বিভাগীয় অর্থের সীমাবদ্ধতা (সেক্টোরাল ক্যাপ)-এর নিমিত্তে ফরেন ডাইরেক্ট ইক্যুইটি হিসাবে আচরিত হবে, যেখানে এই ধরণের আর্থিক সীমাবদ্ধতা (ক্যাপ) নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই শর্তে তারা একটি শেয়ার থেকে অন্য যে কোনো রকম শেয়ারে পরিবর্তন সাধন মনোনয়ন করেযদি প্রেফারেন্স শেয়ার এই ধরণের কোনো শেয়ার থেকে অন্য যে কোনো রকম শেয়ারে পরিবর্তন সাধন মনোনয়ন ছাড়াই নির্মিত হয়, তাহলে তারা ফরেন ডাইরেক্ট ইক্যুইটি ক্যাপের আওতার বাইরে পড়বে

১৩. ফি হিসাবে এককালীন থোক টাকা, রয়্যালটি (কোনো স্বত্ব ব্যবহারের জন্য শতকরা হিসাবে যে মূল্য দেওয়া হয়) এবং ই.সি.বি.-এর বিনিময়ে কি শেয়ার ইস্যু (প্রচার) করা যেতে পারে ?

·        প্রযোজ্য সমস্ত রকম করের দায় পূরণ এবং বিশেষভাবে নির্দিষ্ট বিভাগীয় গাইডলাইনস্ (নির্দেশিকা)-র আনুগত্য স্বীকার করে ফি হিসাবে এককালীন থোক টাকা, রয়্যালটি (কোনো স্বত্ব ব্যবহারের জন্য শতকরা হিসাবে যে মূল্য দেওয়া হয়) এবং এক্সটার্নাল কমারশিয়াল বরোয়িং (বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণগ্রহণ / ই.সি.বি.), যেগুলি বিদেশী মুদ্রায় পরিবর্তনীয়, সেগুলির বিনিময়ে ইক্যুইটি শেয়ার (সাধারণ শেয়ার বা লগ্নীপত্র যেগুলির সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে না)-রের ইস্যু (প্রচার) করার অনুমোদন আছে

১৪. অটোমেটিক রুট (স্বয়ংক্রিয় পথ)/গভর্নমেন্ট রুট (সরকারী পথ)-এর অন্তর্গত শেয়ারের প্রচার (ইস্যু) ছাড়া মে ৩২০০০০ তারিখে প্রকাশিত ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক নোটিফিকেশন নম্বর. FEMA-20 র অন্তর্গত অন্য কি কি সাধারণ অনুমতি গ্রহণযোগ্য ?

·        ভারতীয় কোম্পানীগুলির দ্বারা এর কর্মচারীরা অথবা এর জয়েন্ট ভেঞ্চারের (যুগ্ম কর্মপ্রচেষ্টার) কর্মচারীরা অথবা বিদেশে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব স্বত্বাধীন ভারতের বাইরে বসবাসকারীরা, সরাসরিভাবে অথবা একটি ট্রাস্ট (অছি-ব্যবস্থা)-এর মাধ্যমে কোম্পানীর মিটিয়ে দেওয়া মূলধনের ৫ % পর্যন্ত ,ই.এস.ও.পি.-এর অন্তর্গত শেয়ার প্রচার

·        অনাবাসীদের দ্বারা ভারতীয় কোম্পানীগুলির একত্রীকরণ বা পৃথকীকরণ অথবা সংযোজনের পরে শেয়ারের  প্রচার, প্রদান এবং অর্জন

·        একটি ভারতীয় কোম্পানী দ্বারা ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিকে সঠিক ভিত্তিতে শেয়ার অথবা প্রেফারেন্স শেয়ার বা কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার (পরিবর্তনীয় ঋণস্বীকার পত্র) প্রচার প্রদান করা যায় 

১৫.  আমি কি ভারতে একটি কোম্পানীর দ্বারা প্রচারিত তালিকাবহির্ভূত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারি?

হ্যাঁ  ভারত সরকার/ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক দ্বারা প্রকাশিত নিয়ম/ নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভারতীয় কোম্পানীর তালিকাবহির্ভূত শেয়ারে বিনিয়োগ করা যেতে পারে

১৬. একজন বিদেশী ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীদারী/ মালিকানা-সংক্রান্ত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে?

না কেবলমাত্র এন.আর.আই.এস/ভারতীয় বংশোদ্ভূতএস.-রা ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীদারী/ মালিকানা-সংক্রান্ত সম্পর্ক স্থাপন করতে অনুমোদিত এমন কি এন.আর.আই.এস/ভারতীয় বংশোদ্ভূতএস.-দের জন্য কেবলমাত্র প্রত্যাগমণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ অনুমোদিত

১৭.  আমি কি একটি ভারতীয় কোম্পানী দ্বারা ন্যূনতম মূল্যে প্রচারিত রাইট (সঠিক) শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারি ?  

ন্যূনতম মূল্যে প্রচারিত রাইট(সঠিক) শেয়ারে বিনিয়োগ করতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই, যদি রাইট(সঠিক) শেয়ার, যেগুলি প্রচার করা হবে সেগুলি , আবাসিক এবং অনাবাসীদের একই মূল্যে  প্রদান করা হয় তবেই

- বিদেশী প্রযুক্তিগত সহযোগিতা

১. ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর অটোমেটিক রুটের অন্তর্গত বিদেশী প্রযুক্তিবিদ্যা স্থানান্তরিত করার জন্য প্রদত্ত অর্থের প্যারামিটার (স্থিতিমাপ) কি ? রয়্যালটি (কোনো স্বত্ব ব্যবহারের জন্য শতকরা হিসাবে যে মূল্য দেওয়া হয়) কি ভাবে হিসাব করা হবে ?

·        ভারতীয় কোম্পানীগুলি দ্বারা বিদেশী প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য প্রদত্ত অর্থ অনুমোদিত অটোমেটিক রুটের অন্তর্গত নিম্নলিখিত বিষয়ে সীমাবদ্ধ  :   

·        প্রদত্ত এককালীন থোক টাকা যেন মার্কিন ডলার২ মিলিয়ন অতিক্রম না করে ;

·        রয়্যালটি (কোনো স্বত্ব ব্যবহারের জন্য শতকরা হিসাবে যে মূল্য দেওয়া হয়) প্রদানের সময় কালে কোনা বাধা ছাড়াই, স্বদেশে বিক্রীর ক্ষেত্রে রয়্যালটি ৫%এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ৮%-এ সীমিত থাকবে 

·        রয়্যালটির (কোনো স্বত্ব ব্যবহারের জন্য শতকরা হিসাবে যে মূল্য দেওয়া হয়) সীমা কর থেকে বাদ দিয়ে যা থাকে তা এবং প্রচলিত অবস্থা অনুযায়ী হিসাব করা হবে

·        পুরানো কারখানার উত্পাদিত বস্তুর বিক্রয়মূল্য বাদ দিয়ে যা থাকে, আবগারী শুল্কসংক্রান্ত সংরক্ষণ, ত্যাজ্য উপাদানের মাণের মূল্য বাদ দিয়ে এবং বিদেশী উপাদানের ভূমিসম্বন্ধীয় মূল্য, সমুদ্রে মাল বহণের জন্য জাহাজের ভাড়া, বীমাকরণ, আমদানী-রপ্তানীর শুল্ক ইত্যাদি সহ নির্বিচারে আসাদনের উত্পত্তি স্থানের ওপর ভিত্তি করে রয়্যালটি (কোনো স্বত্ব ব্যবহারের জন্য শতকরা হিসাবে যে মূল্য দেওয়া হয়) হিসাব করা হবে

·        এই ধরণের চুক্তির অন্তর্গত রয়্যালটির প্রদত্ত অর্থ প্রদানের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকতার কর্তৃত্ব এ.ডি.-কে বিশ্বাস করে অর্পণ করেছে  ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর রিজিওনাল অফিস (আঞ্চলিক অফিসের)-এর সঙ্গে চুক্তির রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজনীয়তা দূর হয়েছে

২. যদি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর অটোমেটিক রুট প্রযুক্তিবিদ্যা স্থানান্তরণের জন্য না পাওয়া য়ায় তাহলে কি করতে হবে ?

·        ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর অটোমেটিক রুটের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্যারামিটারকে যে প্রস্তাবগুলি সন্তুষ্ট করতে পারে না,  সেগুলির বাণিজ্যিক মণ্ত্রক, ডিপার্টমেন্ট অফ ইণ্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি আ্যণ্ড প্রোমোশন, ভারত সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র বা অনুমতিপত্রের প্রয়োজন

- পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট

১.বিদেশী প্রতিষ্ঠানগত বিনিয়োগকারী (এফ.আই.আই.)- দের দ্বারা পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্টের বিষয়ে কি প্রবিধান আছে ?

·        এফ.আই.আই. দ্বারা বিনিয়োগ, ১৯৯৫ সালের এস.ই.বি.আই.(এফ.আই.আই.)-এর  অন্তর্ভুক্ত প্রবিধানের দ্বারা এবং ২০০০ সালের ৩রা মে তারিখের এফ.ই.এম.এ নোটিফিকেশন নম্বর.২০-র রেগুলেশন(প্রবিধান) ৫(২) দ্বারা পরিচালিত হয় আ্যসেট ম্যনেজমেন্ট কোম্পানী (মূল্যবাল সম্পত্তি নির্বাহ কোম্পানী), পেনশন ফাণ্ড (অবসরবৃত্তির ভাণ্ডার), মিউচুয়িযাল ফাণ্ড, বিনিয়োগী ট্রাস্ট (অছি-ব্যবস্থা)-যেমন মনোনীত কোম্পানী, সমসংস্থাভূক্ত/প্রতিষ্ঠানগত পোর্টফোলিও ম্যনেজার অথবা তাদের ওকালতনামাধারী, ইউনিভার্সিটি ফাণ্ড (বিশ্ববিদ্যালয় ফাণ্ড), বৃত্তিদান প্রতিষ্ঠান, চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট এবং চ্যারিটেবল সোসাইটি এফ.আই.আই. -এর অন্তর্ভূক্ত

·        এফ.আই.আই.এস -এর রেজিস্ট্রেশনে এস.ই.বি.আই.  কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে কাজ করে এস.ই.বি.আই. -এ রেজিস্ট্রিকৃত এফ.আই.আই.এস -কে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট স্কীমের অধীনে ভারতে বিনিয়োগের সাধারণ অনুমতি প্রদান করেছে 

·        সমস্ত এফ.আই.আই.এস এবং তাদের সহ-আ্যাকাউন্ট ( আমানত)-গুলি একসঙ্গে নিয়েও একটি ভারতীয় কোম্পানীর প্রদত্ত মূল্যের ২৪%-এর বেশী অর্জন করতে পারে না  ভারতীয় কোম্পানীগুলি উপরিউক্ত ২৪%সিলিং(সর্ব্বোচ্চ স্তর) সেক্টোরাল (বিভাগীয়) ক্যাপ/ স্ট্যাট্যুটরী(সংবিধিবদ্ধ) সিলিং-এ  বৃদ্ধি করতে পারে, যেগুলি এর বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের দ্বারা সভায় গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যে সিদ্ধান্তটি এর জেনারেল বডির দ্বারা ওই মর্মে সভায় গৃহীত একটি বিশেষ সিদ্ধান্তের দ্বারা অনুসৃত । 

২.ফরেন ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল ইনভেস্টমেন্ট (বিদেশী যুগ্ম কর্মপ্রচেষ্টায় মূলধন বিনিয়োগ)-এর জন্য কি কি প্রবিধান আছে?

·        এস.ই.বি.আই.-এ রেজিস্ট্রিকৃত ফরেন ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল ইনভেস্টর (বিদেশী যুগ্ম কর্মপ্রচেষ্টায় মূলধন বিনিয়োগকারী) একটি ভারতীয় ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল আণ্ডারটেকিং (যুগ্ম কর্মপ্রচেষ্টার মূলধন উদ্যোগের)-এর জন্য একটি ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল ফাণ্ডে এক অর্থে বিনিয়োগ করতে পারে এবং সময়ে সময়ে সংশোধিত, ৩-৫-২০০০ তারিখের  ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক নোটিফিকেশন নম্বর. FEMA 20/2000-RB -র তালিকা ৬-তে স্বতন্ত্র্যভাবে উল্লিখিত শর্তাবলীর এবং চুক্তির আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য থাকে

৩. অনাবাসী ভারতীয়./ভারতীয় বংশোদ্ভূত দ্বারা পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্টের বিষয়ে কি প্রবিধান আছে ?

·        অনাবাসী ভারতীয় এবং ভারতে বংশোদ্ভুত ব্যক্তি পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট স্কীমের অধীনে ভারতীয় কোম্পানীর শেয়ার/কনভার্টেবেল ডিবেঞ্চার স্টক এক্সচেঞ্জে কিনতে/বিক্রী করতে পারে এর জন্য, আনাবাসী ভারতীয়/ ভারতীয় বংশোদ্ভূত-কে পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে কারবার করে এমন একটি ব্যাংকের মনোনীত শাখায় আবেদন করতে হবে সমস্ত ক্রয়/বিক্রয় সংব্যবহার পরিচালনা ব্যাংকের মনোনীত শাখার দ্বারা চালিত হবে

·        একজন আনাবাসী ভারতীয় অথবা একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত একটি ভারতীয় কোম্পানীর প্রদত্ত মূলধনের ৫ % পর্যন্ত শেয়ার কিনতে পারে সমস্তআনাবাসী ভারতীয়(NRI)/ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের একসঙ্গে নিয়েও কোম্পানীর প্রদত্ত মূল্যের ১০ % -এর বেশী কিনতে পারে না (এই সীমা ভারতীয় কোম্পানীর জেনারেল বডির গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের দ্বারা ২৪%পর্যন্ত বাড়তে পারে)

·        রিপার্টিয়েবেল ইনভেস্টমেন্ট (পুণঃপ্রেরণযোগ্য বিনিয়োগ)-এর বিক্রয়ের আয় বা লাভ এন.আর.ই. / এন.আর.ও. ইত্যাদিতে আনাবাসী ভারতীয়/ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের  আ্যাকাউন্টে জমা হতে পারে  অথচ নন-রিপার্টিয়েবেল ইনভেস্টমেন্ট (প্রত্যাবাসনযোগ্য বিনিয়োগ)-এর বিক্রয়ের আয় বা লাভ কেবলমাত্র এন.আর.ও.-র আ্যাকাউন্টে জমা হতে পারে

·        শেয়ারের বিক্রী প্রযোজ্য করের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য থাকবে

: শাখা/প্রজেক্ট/ লিয়াজঁ(সংযোগকারী)অফিস আরম্ভ করার পদ্ধতি

১. বিদেশী কোম্পানী ভারতে কিভাবে লিয়েইজন(সংযোগকারী)/ প্রজেক্ট(কর্ম-পরিকল্পনা)/ব্রাঞ্চ(শাখা)    অফিস আরম্ভ করতে পারে ?

·        ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক -এর খেকে অনুমোদন গ্রহণ করার পরে বিদেশী কোম্পানী ভারতে লিয়েইজন (সংযোগকারী)/ প্রজেক্ট(কর্ম-পরিকল্পনা)/ব্রাঞ্চ(শাখা)অফিস স্থাপন করতে পারে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক বিদেশী কোম্পানীগুলিকে ভারতে প্রজেক্ট অফিস স্থাপন করার জন্য নিশ্চিত কোনো শর্তে সাধারণ অনুমতি দান করেছে 

২. লিয়েইজন অফিস / রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস আরম্ভ করার জন্য রিজার্ভ ব্যাংকের অনুমতি লাভ করার জন্য কি ধরণের কার্য-প্রণালী অনুসরণ করা হবে ?

·        একটি লিয়েইজন (সংযোগকারী) অফিস কেবলমাত্র সংযোগকারী ক্রিয়া কলাপ চালাতে পারে, যেমন, এটি বিদেশের হেড অফিস এবং ভারতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে একটি যোগাযোগ স্থাপনের প্রণালী হিসাবে কাজ করতে পারে এটি কোনো ব্যাবসায়িক ক্রিয়াকলাপের কর্মভার গ্রহণের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত নয় এবং ভারতে কোনো আয় উপার্জন করতে পারে না এই ধরণের অফিসের ব্যায় বিদেশের হেড অফিস থেকে সম্পূর্ণভাবে বিদেশী মুদ্রার আভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের মাধ্যমে বহন করা হয় সেইজন্য, বাজারের সম্ভাব্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে এবং কোম্পানীর ও তার উত্পাদনের বিষয়ে ভারতীয় গ্রাহকের প্রত্যাশিত তথ্য প্রদানে এই ধরণের অফিসের ভূমিকা খুবই সীমিত

·         ভারতে একটি লিয়েইজন (সংযোগকারী) অফিস আরম্ভ করতে ইচ্ছুক কোম্পানী FNC-1 ফর্মের সঙ্গে তাতে উল্লিখিত নথিপত্র সহ ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ডিভিশন, ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্ট, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, কেন্দ্রীয় কার্যালয়, মুম্বাইতে একটি আবেদন করতে পারে  এই ফর্মটিhttp://www.rbi.org.in/. ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়

·        এই ধরণের অফিস প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ বছর সময়কালের জন্য অনুমতি প্রদান করা হয় এবং যে রিজিওনাল(আঞ্চলিক) অফিসের এক্তিয়ারে এই অফিসটি প্রতিষ্ঠিত সেই অফিস দ্বারা সময়ে সময়ে এই সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে লিয়েইজন/ রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিসকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক-এর সংশ্লিষ্ট রিজিওনাল(আঞ্চলিক)অফিসে একজন চার্টার্ড আ্যকাউনটেন্ট-এর কাছ থেকে বার্ষিক ভিত্তিতে নেওয়া একটি আ্যাকটিভিটি সার্টিফিকেট নথিভুক্ত করতে হবে, এই বিবৃতি দিয়ে যে লিয়েইজন(সংযোগকারী) অফিস কেবলমাত্র ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক -এর অনুমতি প্রদত্ত কার্যকলাপের কর্মভারই গ্রহণ করেছে  

৩. প্রজেক্ট (কর্ম-পরিকল্পনা) অফিস স্থাপনের জন্য কার্য-প্রণালী কি আছে ?

·        বিদেশী কোম্পানী ভারতের ভারতীয় এনটাইটি দ্বারা প্রজেক্ট প্রদান করে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এর প্রকাশিত ২রা জুলাই, ২০০৩ তারিখের নোটিফিকেশন নম্বর. FEMA 95/2003-RB -তে  বিদেশী কোম্পানীদের ভারতে প্রজেক্ট অফিস আরম্ভ করার সাধারণ অনুমতি প্রদান করা হয়েছে এই শর্তে যে তারা ভারতীয় কোম্পানীর থেকে ভারতে একটি প্রজেক্ট চালু করার একটি চুক্তি হস্তগত করেছে, এবং 

·        প্রজেক্টটি সরাসরিভাবে বিদেশ থেকে পুঁজি প্রাপ্ত করেছে আভ্যন্তরীণরেমিটেন্স-এর মাধ্যমে; অথবা

·        প্রজেক্টটি একটি দ্বিপার্শ্বিক অথবা বহুপার্শ্বিক আন্তর্জাতিক মূলধন বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা থেকে পুঁজি প্রাপ্ত করেছে ; অথবা

·        প্রজেক্টটি একটি উপযোগী কর্তৃপক্ষ দ্বারা পাশ হয়েছে ; অথবা

·        এই প্রজেক্টের জন্য ভারতের একটি কোম্পানী অথবা এনটাইটি চুক্তিটি প্রদান করছে, তারা পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন দ্বারা অথবা ভারতীয় ব্যাংকের দ্বারা সীমিত কালীন ঋণ দিতে রাজী হয়েছে

·        যাই হোক, যদি উপরিউক্ত নীতি পূরণ না হয়, অথবা যদি অভিভাবক এনটাইটি (অস্তিত্বশীল অভিভাবক সত্ত্বা) পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ইরাণ অথবা চীনে প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে সেই ধরণের আবেদনপত্র মুম্বাইতে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইণ্ডিয়ার ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্টের সেন্ট্রাল (কেন্দ্রীয়)অফিসে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হবে

৪. ব্রাঞ্চ(শাখা)অফিস স্থাপনের জন্য কার্য-প্রণালী কি অছে ?

·        নিম্নলিখিত অভিপ্রায়ে রিজার্ভ ব্যাংক বিদেশী উত্পাদন এবং বাণিজ্যিক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত কোম্পানীগুলিকে ভারতে শাখা অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয় :

·        ভারতে অভিভাবক কোম্পানী/ অন্য বিদেশী কোম্পানীদের বিভিন্ন বিষয় বিবৃত করার জন্য যেমন.ভারতে ক্রয়/বিক্রয় এজেন্ট হিসাবে কার্যরত

·         যে অঞ্চলে অভিভাবক কোম্পানী কর্মরত সেইখানে গবেষণা কর্ম পরিচালনা করা

·        রপ্তানী এবং আমদানী ক্রিয়াকর্মের এবং পাইকারী ভিত্তিতে ব্যাবসার দায়িত্বভার গ্রহণ করা

·        ভারতীয় কোম্পানী এবং বিদেশী কোম্পানীদের মধ্যে সম্ভব্য প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার উন্নতি বর্ধন করা

·        পেশাদারী অথবা উপদেশ প্রদানকারী পরিষেবা সম্পাদন করা 

·        তথ্য প্রযুক্তি সেবা এবং ভারতে সফ্টওয়্যারের বৃদ্ধি প্রদান করানো

·        অভিভাবক/দলবদ্ধ কোম্পানীর দ্বারা সরবরাহকৃত উত্পাদিত বস্তুর প্রায়োগিক সহায়তা প্রদান করা

·        সরাসরি/পরোক্ষভাবে একটি শাখা অফিস উত্পাদন, কার্যকলাপ চালু করতে অনুমোদন প্রাপ্ত নয় কোনো অবস্থাতেই একটি শাখা অফিস ভারতে খুচরো ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের দায়িত্বভার গ্রহণেও অনুমোদন প্রাপ্ত নয় শাখা অফিসকে সেন্ট্রাল অফিস অফ এফ.ই.ডি.-এ একজন চার্টার্ড আ্যকাউনটেন্ট-এর কাছ থেকে বার্ষিক ভিত্তিতে নেওয়া একটি আ্যাকটিভিটি সার্টিফিকেট জমা করতে হবে বাত্‍সরিক রেমিটেন্স-এর জন্য শাখা অফিসকে হয়তো একটি অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীর কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা করতে হতে পারে

·        শাখা অফিস স্থাপনের অনুমতি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইণ্ডিয়ার দ্বারা প্রদান করা হয় ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক আবেদক কোম্পানীর ট্র্যাক রেকর্ড (গতিবিধির নথিপত্র), ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং কোম্পানীর অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়ে আবেদনপত্র গভীর সতর্কতার সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে বিচার বিবেচনা করে

http://www.rbi.org.in/commonman/Bengali/scripts/faqs.aspx?id=15

No comments:

Post a Comment