দফায় দফায় দাম বেড়েছে পেট্রোল, ডিজেলের। ভর্তুকি কমেছে রান্নার গ্যাসের ওপর থেকে। যার জেরে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠলেও, স্বস্তি দিয়েছিল কেরোসিন। গত বছর জুন মাস থেকে কেরোসিনের দাম আর বাড়েনি। এবারে সেই কেরোসিনও আম আদমির বাজেটে টান ফেলতে চলেছে। লিটার প্রতি কেরোসিনে দাম বাড়বে দশ টাকা। কেলকর কমিটির এই প্রস্তাবে ইতিমধ্যেই সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। আগামী দু`বছরে ধাপে ধাপে এই দাম বাড়ানো হতে পারে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর।
একইসঙ্গে প্রতি লিটারে দশ টাকা বাড়তে পারে ডিজেলের দামও। দশমাস ধরে এই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি, দফায় দফায় দাম বাড়ানোর পরও রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে প্রতিদিনই লোকসানে চলতে হচ্ছে। ফলে ঘাটতির পরিমাণ পৌঁছেছে এক লক্ষ ষাট হাজার কোটি টাকায়। ঘাটতি মেটাতেই সরকার দাম বাড়ানোর পথে হাঁটছে বলে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রে দাবি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত সিলমোহরের জন্য এই প্রস্তাব কেবিনেটে পাঠানোর তোড়জোর শুরু হয়েছে। তবে তার আগে বিষয়টি প্রয়োজনে রাজনীতি বিষয়ক কেবিনেট কমিটিতে তোলা হতে পারে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মস্তিষ্কে তীব্র আঘাত থাকায় এখনও অত্যন্ত সংকটজনক দিল্লির গণধর্ষণের শিকার ২৩ বছরের তরুণী। তবে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এখনও লড়ে যাচ্ছেন তিনি। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সিইও কেভিন লো শুক্রবার একথা জানান।
আজকের মেডিক্যাল বুলেটিনে লো জানান হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে ফুসফুস ও অন্ত্রে সংক্রমণ ছাড়াও ওই তরুণীর মস্তিষ্কে তীব্র আঘাত ছিল।
সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার আগেই দিল্লিতে নির্যাতিতার শরীরে তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনি একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন হাসপাতালের সিইও।
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের একটি দল তরুণীর দেখভালের দায়িত্বের রয়েছেন। তাঁরা তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে শারীরিক পরিস্থিতির অত্যন্ত দ্রুত অবনতি হওয়ায়, গত পরশুই নির্যাতিতাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তরুণীর সঙ্গে তাঁর পরিবারও এখন সিঙ্গাপুরে। তাঁদের সাহায্য করতে ও সবরকম গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে ভারতীয় দূতাবাসের একজন অফিসারকে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিযুক্ত করেছে বিদেশমন্ত্রক।
কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নয়, চিকিত্সকদের পরামর্শেই নির্যাতিতা তরুণীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ।
তিনি আরও জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে নির্যাতিতা কিশোরীর সমস্ত চিকিত্সার ভার ও তাঁর অভিভাবকদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার খরচ ও বিদেশে যাওয়ার পাশপোর্ট করানোর দায়িত্ব বহণ করছে সরকার। কিশোরীর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য চিকিত্সার কোন খামতি রাখবে না সরকার। তাঁকে তড়িঘড়ি সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য কোনো রাজনৈতিক হাত নেই। এটা পুরোটাই অভিঞ্জ চিকিত্সকদের পরামর্শ নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তাঁর চিকিত্সার জন্য আমেরিকা, লন্ডন অথবা জার্মানির মতো অত্যাধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিকিত্সকেরা চিন্তা ভাবনা করেছিলেন। তবে, কিশোরীর শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত হয়।
যে ভাবে কিশোরীর ইচ্ছাশক্তি সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে উঠতে পেরেছে, তাতে সে খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গত ২৬ ডিসেম্বর, দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের দ্রুত ব্যবস্থা করে সঙ্কটজনক অবস্থায় নির্যাতিতা কিশোরীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেশজোড়া দু'দিনের
ধর্মঘটে চলবে না বাস, অটো, ট্যাক্সি
সংবাদ সংস্থা
আই এন এন, ২৭শে ডিসেম্বর — ফেব্রুয়ারিতে দু'দিনের দেশজোড়া সাধারণ ধর্মঘটে চলবে না সরকারী-বেসরকারী বাস থেকে ট্যাক্সি অটো-ও। সর্বভারতীয় স্তরে রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এবং রাজ্যে অটো, ট্যাক্সি মিনিবাস, বেসরকারী বাস-সহ পণ্যবাহী পরিবহন — বেসরকারী ক্ষেত্রে রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের এক যৌথ বৈঠক থেকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সি আই টি ইউ, এ আই টি ইউ সি, আই এন টি ইউ সি, বি এম এস, এইচ এম এস, এ আই সি সি টি ইউ ছাড়াও এই যৌথ বৈঠকের আয়োজক ছিল তামিলনাডু সরকারী পরিবহন নিগমের প্রগ্রেসিভ ইউনিয়নস ফেডারেশন (এল পি এফ), ইউ পি রোডওয়েজ, কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ এবং গুজরাট স্টেট ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন। জম্মু কাশ্মীর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নও ধর্মঘটে অংশ নেবে। এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছেন সি আই টি ইউ সম্পাদক এবং অল ইন্ডিয়া রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (এ আই আর টি ডব্লিউ এফ) কে কে দিবাকরণ।
কর্ণাটকে জাতিভেদ বিরোধী
বিক্ষোভ পার্টির, লাঠি
পুলিসের, আহত ১৫
সংবাদ সংস্থা
উডুপি (কর্ণাটক), ২৭শে ডিসেম্বর— মন্দিরে পংক্তিভেদ প্রথা চলবে না। সেই দাবিতেই শ্রীকৃষ্ণ মঠ মন্দিরের সামনে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। সি পি আই (এম)-র ডাকে জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভেই লাঠি চালালো কর্ণাটক পুলিস। মাথায় আঘাত নিয়ে গুরুতর আহত আটজন।
বৃহস্পতিবার উডুপি জেলায় এই বিক্ষোভে অংশ নেন বহু মহিলা। অংশ নেন ছাত্ররা। পুলিসের লাঠি পরোয়া করেনি তাঁদেরও। সব মিলিয়ে তিনশোজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। তার মধ্যে রয়েছেন এস এফ আই নেতা হুল্লি উমেশসহ চল্লিশজন কর্মী। আহতদের মধ্যে রয়েছেন এস এফ আই কর্মীরাও। পুলিসের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছে এস এফ আই।
বিভিন্ন মন্দিরেই খাওয়ার বিতরণের চালু প্রথা হলো ব্রাহ্মণদের এক পংক্তিতে বসানো। অ-ব্রাহ্মণদের জন্য আলাদা পংক্তি। যে প্রথার প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্টি। বৃহস্পতিবার এই বিক্ষোভ আটকাতে কড়া ব্যারিকেড করে পুলিস। কর্মসূচীর সূচনা করেন পার্টি পলিট ব্যুরো সদস্য এম এ বেবি, পার্টি কর্ণাটক রাজ সম্পাদক জি বি শ্রীরাম রেড্ডি। বিক্ষোভকারীরা এগনোর চেষ্টা করতেই লাঠি চালায় পুলিস।
পংক্তিভেদ প্রথার পাশাপাশি 'মদে স্নানা' প্রথারও বিরোধিতা করা হয়। যে প্রথা অনুযায়ী ব্রাহ্মণদের খেয়ে ওঠা এঁটো কলাপাতায় গড়াগড়ি দিতে হয় দলিতদের। এই প্রথার সমর্থনে টিকিয়ে রাখা হয় কুসংস্কার— চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাবেন দলিতরা! আসলে জমি ও সম্পদভিত্তিক তীব্র অসাম্য টিকিয়ে রাখতেই এই আয়োজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সরব হয়েছে নানা মহল। কর্ণাটকের বি জে পি সরকারের পুলিস অবশ্য সেই প্রথায় বাধা দেওয়ার বদলে আন্দোলনেই হামলা চালিয়েছে।
এস এফ আই সর্বভারতীয় সভাপতি ভি শিবদাসন এবং সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত ব্যানার্জি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, অযৌক্তিক এই বৈষম্যমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। লাঠিচালনায় যুক্ত পুলিসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মনের কথা
মুখ্যমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী এক তৃণমূলপন্থী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো মমতা ব্যানার্জির মনের কথা। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর 'সাজানো' তত্ত্ব আবার উঠে এলো ঐ তৃণমূলীর মুখে। দিল্লিতে চলন্ত বাসে ছাত্রীর ওপর পাশবিক অত্যাচারের ঘটনায় আলোড়িত এখন সারা দেশ। সমাজের সমস্ত অংশের মানুষের দাবি, দিল্লি ধর্ষণে অভিযুক্ত অপরাধীদের ফাস্ট ট্রাক কোর্টে বিচার হোক। দ্রুততার সঙ্গে বিচার করে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হোক ধর্ষকদের। এই দাবি ওঠার সাথে সাথেই কলকাতায় আলোচিত হচ্ছে পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ড। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ঐ ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। কেননা ঐ ধর্ষণ কাণ্ডের পর ১১ মাস কেটে গেছে, এখনও মামলার চার্জ গঠন করতে পারেনি পুলিস। এখনও ধরা পড়েনি প্রধান অভিযুক্ত। বাকি ৩জন অভিযুক্ত পুলিসী নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে আইনের ফাঁক দিয়ে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করছে। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকে যে শাসকদল আড়াল করতে চাইছে তা আবার বোঝা গেল ঐ তৃণমূলপন্থী 'বুদ্ধিজীবী'র মন্তব্যে। তিনি (যার নাম উল্লেখ করতেও লজ্জিত হতে হয়) বলেছেন, ''আঙুল তুলতে হলে অভিযোগকারিণীর দিকে তুলতে হবে। কারণ উনি একজন ভুল লোককে শনাক্ত করেছিলেন। ''এখানেই শেষ নয়। দিল্লি এবং পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের প্রেক্ষিত এবং গতি প্রকৃতির মধ্যে যে ফারাক রয়েছে তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন মমতার ছায়াসঙ্গী। তিনি বলেছেন, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে অভিযোগকারিণী মহিলা মধ্যরাতে স্বেচ্ছায় একটি গাড়িতে উঠেছিলেন। আর দিল্লিতে অভিযোগকারিণী রাত সাড়ে নটায় একটি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করে যাচ্ছিলেন।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কী বলতে চাইছেন তৃণমূলী 'বুদ্ধিজীবী'? তিনি কি পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকে লঘু করে দেখাতে চাইছেন? তাঁর কথানুসারে মধ্যরাতে একটি গাড়িতে ওঠা অপরাধ। ধর্ষণ অপরাধ নয়। পাশবিক অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু পর। সেটাই নাকি বড় অপরাধ। অথচ অপরাধীকে চিহ্নিত করার পরেও এই এগারো মাসের মধ্যে প্রধান অভিযুক্তকে না ধরতে পারা মমতা ব্যানার্জির পুলিস বিভাগের অপরাধ নয়? তিনি কি ধর্ষণের অপরাধের গুরুত্ব কমিয়ে বন্দী অপরাধীদের মুক্তি পেতে সাহায্য করতে চাইছেন? পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে তদন্তকারী গোয়েন্দা প্রধানকে আচমকাই বদলি করে তদন্তের গতিকে থমকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকার কি সাজানো ঘটনার তত্ত্বকেই অটুট রাখতে চাইছেন? মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে অপছন্দের এবং অস্বস্তিকর হলেও গোয়েন্দা প্রধান ধরে ফেলেছিলেন পার্ক স্ট্রিট অপরাধীদের। প্রমাণিত হয়েছিলো অভিযোগকারিণীর বক্তব্যের সত্যতা। এখনও তথ্য প্রমাণ হাজির না করে অপরাধীদের বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে ঘটনাটি আসলে সাজানো। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর ছায়াসঙ্গী সাজানো ঘটনার পক্ষে ওকালতি করছেন। কাটোয়ার ঘটনাকেও সাজানো এবং সি পি এম'র চক্রান্ত বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। গত ২১শে ফেব্রুয়ারি কাটোয়ায় ট্রেন থেকে নামিয়ে মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে এক বিধবাকে ধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। মুখ্যমন্ত্রী ঐ ঘটনা সম্পর্কে বলেছিলেন তৃণমূলকে হেনস্তা করতে সি পি এম এসব করছে। বিধবার স্বামী, নাকি সি পি এম করেন। কিন্তু পরে জানা যায়, ঐ মহিলার স্বামী কংগ্রেস করতেন এবং তিনি বেশ কয়েক বছর হলো মারা গেছেন। এখনও এই ১১ মাসে চার্জ গঠন হয়নি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রেক্ষিত নিয়ে কি বলবেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখপাত্র? এরাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এবং তার সঙ্গীর বোঝা উচিত ধর্ষণকে আড়াল করা ধর্ষণের থেকে কম অপরাধ নয়। শাসকদলের প্রধান এবং তার অনুগামীরা ধর্ষিতাদের অভিযুক্ত করা এবং অপরাধীদের আড়াল করার যে মনোভাব নিয়েছেন এই রাজ্যের পক্ষে প্রতিদিনই তা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33895
রাজ্যজুড়ে ব্যাপক হামলা রুখে
ডাককর্মীদের সর্বাত্মক সফল ধর্মঘট
জনার্দন মজুমদার
কনফেডারেশন অব সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্সের আহ্বানে গত ১২ ডিসেম্বর ১৫ দফা দাবিতে দেশব্যাপী প্রতীক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন রেল ও প্রতিরক্ষা দপ্তর বাদে অবশিষ্ট কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা। সারা দেশে কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তরগুলিতে এই ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আমাদের রাজ্যেও ডাক দপ্তরসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তরে এই ধর্মঘট ছিল প্রায় সর্বাত্মক, অভূতপূর্ব। ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তো বটেই, সর্বোপরি বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আপসহীন লড়াই চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে ও প্রেরণা জোগাবে এই ধর্মঘট। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ধর্মঘটের দাবিসনদে সপ্তম বেতন কমিশন গঠন, ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা মূল বেতনের সাথে সংযুক্তিকরণ, গ্রামীণ ডাক সেবক ও ক্যাজুয়াল কর্মীদের বিভাগীয়করণ ও ন্যায্য মজুরি অনুমোদনের মতো বিষয়গুলি তো ছিলই। তার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তরে বেসরকারীকরণ, আউটসোর্সিং ও কন্ট্রাক্টারাইজেশন বন্ধ করা, লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ, নয়া পেনশন বিল প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ ও সুসংহত গণবণ্টন ব্যবস্থা এবং ধর্মঘটের অধিকার রক্ষার মতো দেশের আপামর মানুষের সাধারণ দাবিগুলিও বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে।
ডাক দপ্তরে ১২ ডিসেম্বরের ধর্মঘটের সাফল্য হচ্ছে প্রশ্নাতীত, প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে। রাজ্যজুড়ে বেশিরভাগ ডাকঘর বন্ধ ছিল এবং সিংহভাগ কর্মচারী কাজে যোগ দেয়নি। সার্কেল হেড কোয়ার্টার যোগাযোগ ভবন খোলা থাকলেও উচ্চপদস্থ অফিসার ও গুটিকয়েক কর্মচারী ছাড়া অফিস ছিল শুনশান। ডাক পরিষেবা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু খুব সহজে এই সাফল্য অর্জিত হয়নি। প্রায় দু'মাস ধরে ধর্মঘটের সপক্ষে নিবিড় প্রচার এবং পাশাপাশি দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ পথ আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। ধর্মঘটের দিন ঘোষণার আগে-পরে আমাদের প্রিয় ফেডারেশন ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পোস্টাল এমপ্লয়িজ, (সংক্ষেপে এন এফ পি ই) আন্তরিক উদ্যোগ নিয়েছিল যাতে আই এন টি ইউ সি অনুমোদিত ডাক দপ্তরের অপর স্বীকৃত সংগঠন (এফ এন পি ও) এই ধর্মঘটে অংশ নেয়। সংগঠন নির্বিশেষে সর্বস্তরের ডাক কর্মচারীদের ব্যাপক ঐক্য গড়ে উঠলে তা হতো পরিস্থিতির চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ঠিক যেমন, দেশজুড়ে পোস্টাল জে সি এ'র নেতৃত্বে সর্বস্তরের ডাক কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলে ৯৭৯৭টি ডাকঘর বন্ধ করার পরিকল্পনা থেকে ডাক দপ্তরকে (আপাতত হলেও) নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়েছে। কিংবা কলকাতা এয়ারপোর্ট সর্টিং অফিসে আধুনিকীকরণের নামে ডাক দপ্তরে কন্ট্রাক্টারাইজেশন আমরা রুখে দিয়েছি। ফলে ঐক্যবদ্ধভাবে ১২ ডিসেম্বরের ধর্মঘটে লড়াই করলে জনস্বার্থে ডাক ব্যবস্থাকে রক্ষা করা, ডাক দপ্তরের কয়েক লক্ষ শূন্যপদ পূরণ করা, পার্টটাইম, জি ডি এস সহ সর্বস্তরের ডাক কর্মচারীদের অর্থনৈতিক দাবি আদায়ের পথ যে আরো সুগম হতো এই সত্য এফ এন পি ও তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও কায়েমী স্বার্থ বুঝতে চায়নি। তাই আমরা দেখলাম গত ২২শে নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত যুক্ত কনভেনশনে সি আই টি ইউ, আই এন টি ইউ সি, বি এম এসসহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলি এই ধর্মঘটের সপক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করলেও ডাকঘরের অভ্যন্তরে আই এন টি ইউ সি অনুমোদিত এফ এন পি ও এই ধর্মঘটকে কখনও 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' কখনও আবার 'আলোচনার টেবিলে দাবিগুলি মীমাংসার অপেক্ষায় আছে' এমন নানান বিভ্রান্তি ও অছিলায় ধর্মঘটের বিরোধিতা করে, তাদের সদস্য/সদস্যাদের ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে কাজে যোগ দিতে প্ররোচিত করে। যদিও একাজে তারা পুরোপুরি সফল হয়নি। যাইহোক, এই প্রসঙ্গইই ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনায় আনা জরুরী।
কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা হঠাৎ করেই এই ধর্মঘট ডেকেছেন বিষয়টি কখনই এমন নয়। দীর্ঘকাল পরে বস্তুতপক্ষে ১৯৯৬ সালের পর এ ধরনের ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে একপ্রকার বাধ্য হয়েই। ভারত সরকার ও তার কর্মচারীদের মধ্যকার শ্রমবিরোধের মীমাংসায় গঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ফোরাম তথা জয়েন্ট কনসালটেটিভ মেশিনারি (জে সি এম)-র সভা হয়নি গত ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে। জে সি এম-র যে স্তরে নীতিগত ও কর্মচারীদের সাধারণ সমস্যা আলোচিত হতে পারে সেই ন্যাশনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হলেন ক্যাবিনেট সেক্রেটারি। তাঁর নির্দেশেই সভা ডাকা হয়। কিন্তু সভা ডাকা হচ্ছে না এটাই বাস্তব। দাবি সনদের মীমাংসায় প্রতিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে এই সময়কালে সংগঠিত আবেদন-নিবেদন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, ধর্মঘট কিংবা প্রস্তাবিত ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিংবা চুক্তি করেছিল, পরবর্তীকালে তারা তা কার্যকর করা দূরের কথা একতরফাভাবে উপেক্ষা করেছে। এই সমস্ত ঘটনা পরম্পরার শীর্ষে গত ২৬শে জুলাই, সারা দেশ থেকে দশ হাজারেরও বেশি শ্রমিক-কর্মচারীর উপস্থিতিতে সংসদ অভিযান সংগঠিত হয়। সংসদ অভিযান থেকে ১৫ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা পড়ার পরবর্তী সময়পর্বে ভারত সরকার কার্যত তা উপেক্ষা করেছে, কনফেডারেশনের নেতৃবৃন্দকে ডেকে আলাপ-আলোচনা দূরের কথা। এই প্রেক্ষাপটেই ধর্মঘট অনিবার্য হয়ে ওঠে।
নানান অপপ্রচার করেও ধর্মঘটী ডাক কর্মচারীদের মনোবলে চিড় ধরাতে না পেরে হতাশা ও ক্রোধ থেকেই প্রতিক্রিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করে আমাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সংগঠক ও ডাক কর্মচারীদের দৈহিক আক্রমণ ও কদর্য আস্ফালনের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। ধর্মঘটের কয়েকদিন আগে থেকেই এরাজ্যের বর্তমান শাসকদলের স্থানীয় দুষ্কৃতীরা বিভিন্নস্থানে পোস্ট অফিসগুলিকে টার্গেট করে দাপিয়ে বেরিয়েছে। ধর্মঘট করলে দেখে নেবার, পাড়া ছাড়া করবার হুমকি, আস্ফালন সবই পোস্টমাস্টার ও কর্মচারীদের সহ্য করতে হয়েছে। অফিসের অভ্যন্তরে ধর্মঘটের যারা বিরোধিতা করেছেন কার্যত তাদেরই কেউ কেউ এই ভয়ঙ্কর শক্তিকে ধর্মঘটী ডাক কর্মচারীদের 'শায়েস্তা' করবার কাজে ব্যবহার করেছেন এই ধারণা আদৌ অমূলক নয়। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক মুখ্য ডাকঘরের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে অংশ নেওয়া আমাদের নেতৃত্ব, সংগঠকদের উপর হামলা চালায় এরাজ্যের বর্তমান শাসকদলের স্থানীয় দুর্বৃত্তরা। সেখানে আমাদের পোস্টমেন গ্রুপ-ডি সংগঠনের সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ ঘোড়ুইকে নিদারুণভাবে প্রহার করা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিস এসেছিল ঠিকই, কিন্তু তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা নেয়। নদীয়ার কল্যাণী মুখ্য ডাকঘরের সামনে দীর্ঘদিনের রীতি মেনে, বিধিবদ্ধ উপায়ে অফিসে যাতায়াতের পর অবরুদ্ধ না করে অবস্থান করছিলেন ধর্মঘটী ডাক কর্মচারীরা। কল্যাণীর বনদপ্তরে কর্মরত বর্তমান রাজ্য সরকারপন্থী স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের জনৈক নেতার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ জমায়েতের উপর চড়াও হয় স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। আমাদের ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন মাটিতে ফেলে দিয়ে সরকারী অফিসেই শাসকদলের তেরঙ্গা ঝাণ্ডা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতেই ক্ষান্ত না হয়ে তারা শেষে মারমুখী হয়ে ওঠে এবং অনুপ বিশ্বাস ও প্রবীর মজুমদার নামে আমাদের দু'জন সংগঠককে বেদম প্রহার করে। এই কমরেডদের রক্ষা করতে গিয়ে আক্রান্ত হন আমাদের গ্রুপ-সি সংগঠনের সম্পাদক কৌশিক রায়। জোর করে অফিস খোলা হয়, যদিও এই আক্রমণের মুখেও আমাদের কর্মী, সংগঠক ও ধর্মঘটীরা কাজে যোগ দেননি। ধর্মঘটের পরের দিন পুনরায় দুর্বৃত্তরা ফিরে আসেন এবং মাইক বাজিয়ে বিকট চিৎকার সহযোগে অফিসের সামনেই দীর্ঘসময় ধরে সভা করেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে কল্যাণী মুখ্য ডাকঘরে ধর্মঘট দূরের কথা, এমনকি কেউ লালঝাণ্ডার সংগঠন করতে পারবে না। এই সভা থেকে তারা পোস্টমাস্টারকে নির্দেশের ভঙ্গিতে এই মর্মে ডেপুটেশন দেয় যে ঐ অফিসে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত গরিব ডেলি-রেটেড মজদুরদের বসিয়ে দিয়ে উক্ত রাজনৈতিক দলের অনুগতদের নিয়োগ করতে হবে। এভাবে গোটা অফিসে এমন একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যে অফিসের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হচ্ছে, কর্মচারীরা দূরের কথা এমনকি স্থানীয় ডাক প্রশাসনও পুলিসকে জানাতে ভয় পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অফিসের কর্মীদের নিরাপত্তা, স্বাভাবিক পরিষেবা ও আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবার স্বার্থে আমরা উচ্চতর ডাক প্রশাসন ও পুলিস প্রশাসনের দ্বারস্থ হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ধর্মঘটে অংশ নেবার 'অপরাধে' হুগলীর চাঁপাডাঙা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার রামচন্দ্র নন্দী এবং পোস্টম্যান কার্তিক কুণ্ডু ধর্মঘটের পরের দিন অফিসে আসার পথে প্রহৃত হন। তাঁদের এই মর্মে শাসানো হয় যে, ভবিষ্যতে আর কখনও ধর্মঘটে অংশ নিলে চাকরি 'নট' করে দেওয়া হবে। ধর্মঘটে অংশ নিয়ে অফিস বন্ধ রাখার একই 'অপরাধে' পরের দিন বারাকপুরের নোনাচন্দনপুকুর পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টারের উপরে মিছিল সহকারে চড়াও হয় ওই একই দলের স্থানীয় মস্তান বাহিনী। এখনও এই অফিসের ভিতরে বাইরে জ্বলজ্বল করছে শাসক দলের পোস্টার যাতে পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে কুৎসা করা হয়েছে, প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছে। গোটা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পোস্টমাস্টার এবং তাঁর পরিবার-পরিজন নানান অজানা আশঙ্কায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। কলকাতা জি পি ও, পুরুলিয়া মুখ্য ডাকঘর কিংবা বর্ধমান মুখ্য ডাকঘরে ধর্মঘট ভাঙতে পুলিসের রক্তচক্ষু আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, যদিও শেষ পর্যন্ত এসবে পিছু না হটে সাহসের সাথে সংশ্লিষ্ট ডাক কর্মচারী ও সংগঠকগণ ধর্মঘটে অটল থেকেছেন। উদাহরণ দিলে তা বাড়তেই থাকবে। মোদ্দা কথা, রাজ্যজুড়ে প্রতিক্রিয়ার শক্তির সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ মোকাবিলা করেই ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সফল করেছেন আমাদের স্থানীয় নেতৃত্ব, সংগঠক ও ধর্মঘটী কর্মচারীরা। শাবাশ কমরেড, শাবাশ। রক্তিম অভিনন্দন।
আমাদের এই ধর্মঘট হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার তথা তাদের তথাকথিত সংস্কার নীতির বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে নয়। তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ধর্মঘটের দাবিসনদের অন্যতম বিষয় মূল্যবৃদ্ধি রদের সপক্ষে এবং পেনশনে এফ ডি আই-র বিরুদ্ধে এরাজ্যের শাসকদলও, অন্তত এমনটাই তাদের ঘোষিত নীতি। এমনকি এইসব কারণেই তারা কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে বলে বড় গলায় জাহির করে। তাহলে একই ইস্যুতে ডাকা ধর্মঘটের প্রতি এরা এত খড়্গহস্ত কেন?
ধর্মঘটে অংশ নেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে প্রধানতম অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এর ফলে রাজ্যের কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে, আমাদের রাজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। আর এই অভিযোগে, ধর্মঘটের দিন কিংবা আগে-পরে রাজ্যের বিভিন্ন ডাকঘরে ডাকঘরে আমাদের সংগঠক, নেতৃত্ব ও কর্মীরা যখন নিদারুণ দৈহিক আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, সেদিনই আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। উক্ত পত্রিকার পঞ্চম পাতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ২০১৩ সালের ছুটির ক্যালেন্ডার ঘোষণা সংক্রান্ত 'আসছে বছর ফের বাড়তি ছুটি পুজোয়' খবর-শিরোনামে বলা হয়েছে, ''বন্ধ-ধমর্ঘট করে কর্মদিবস নষ্ট করার ঘোরতর বিরোধী তিনি। সেই তিনিই কর্মীদের খুশি করতে পুজোর ছুটির একদিন বাড়িয়ে দেন। একবার নয়, বার বার।'' অপর একটি ট্যাবলয়েড দৈনিক তার ১৫/১১/২০১২ সংখ্যায় ''কর্মী, আপনি ছুটি-ঘুম দিন কাজ এলে ডেকে দেবে সরকার'' শিরোনামে সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ''...জন্মদিন-মৃত্যুদিন, পূর্তি উৎসব-ফূর্তি উৎসব, অমুক দিবস-তমুক রাত্রি, জয়-জয়ন্তী-জয়জয়ন্তী-দেদার ছুটির বন্যা! অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারী ছুটি কারে কয় এবং কতপ্রকার বোঝার জন্য আলাদা দপ্তর খোলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ক্যালেন্ডার লালে লাল করে দেওয়ার সবুজ প্রবণতায় শেষ সংযোজন 'সেকশনাল হলিডে'। ছট, বুদ্ধ পূর্ণিমা, মহাবীর জয়ন্তী, বৈশাখী, ইস্টার এবং শবেবরাতে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ এবার ছুটি পাবেন।'' উক্ত সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে, ''সব সম্প্রদায় সম্মানীয়। সব সম্প্রদায়ের নিজস্ব উৎসব আছে। দেশে সব সম্প্রদায়ের সমানাধিকার। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশে এনিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, সব সম্প্রদায়ের সব উৎসবকেই ছুটির দিন বলে ঘোষণা করতে হয় কোনো গূঢ় কারণে? অপাঙ্গে ভোটবাক্সের দিকে তাকিয়ে তা যদি করতে হয়, তাহলে একসময় বছরে আর কাজের দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ সব সম্প্রদায় মিলিয়ে আমাদের তো ছত্রিশ কোটি উৎসব। তাহলে কাজটা হবে কখন? উন্নয়নের কী হবে? ছুটিতে লগ্নি করবেন কেন উদ্যোগপতিরা? উত্তর দেওয়ার দায় সরকারের নেই। কারণ বিরোধী কণ্ঠকে আপাতত ১০বছর মুখ বন্ধ করে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ... এই সরকার বেসরকারী বন্ধের বিরোধী, কিন্তু সরকারী বন্ধের সমর্থক।'' তাই ন্যায্য দাবিতে নোটিস দিয়ে বছরে একদিন কি দু'দিন ধর্মঘট করলেই আমরা শাসক দলের রক্তচক্ষুর মুখে পড়ছি। বিতর্কটা উৎসবে ছুটি ঘোষণা নিয়ে নয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ হিসাবে শ্রমিক-কর্মচারীরা ধর্মঘট করলেই কেন গেল গেল রব তোলা হচ্ছে, প্রশ্নটা তা নিয়েই।
আর রাজ্যের অগ্রগতি? দু-একদিন ধর্মঘট করলেই রাজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে, প্রচারে এমনটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। মালিকদের ডাকা 'লে অফ', 'লক-আউট'-এর কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের ডাকা ধর্মঘটের তুলনায় অনেক বেশি শ্রমদিবস নষ্ট হয়, যদিও তা প্রচারে প্রাধান্য পায় না — এই সত্যের পাশাপাশি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সরকারী দপ্তরগুলিকে সঙ্কুচিত করে কিংবা লক্ষ লক্ষ পদ দশকের পর দশক শূন্য রেখে কিংবা অবলুপ্ত করে বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরি পাওয়ার স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দেশের কিংবা রাজ্যের অগ্রগতি ব্যাহত হয় না? কিংবা সিঙ্গুরে একপ্রকার গায়ের জোরে টাটাদের ন্যানো কারখানাকে উচ্ছেদ করে, হলদিয়া থেকে এ বি জি কোম্পানিকে বিতাড়িত, কিংবা অতিসম্প্রতি দুর্গাপুরের জয় বালাজী ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কারখানায় হামলা চালিয়ে, অরাজকতা তৈরি করে শিল্প সম্ভাবনার পরিবেশ বিষিয়ে দিলে রাজ্যের উন্নয়ন ব্যাহত হয় না? পরিবহন শিল্প ও শ্রমিকদের কার্যত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে, কৃষকদের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে, রাজ্যের শিক্ষার আঙিনায় নৈরাজ্য কায়েম করে কোন্ অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে? এ রাজ্যের অন্তর্জলি যাত্রার ব্লুপ্রিন্ট সরকারী উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় কার্যকর করা হচ্ছে, যদিও প্রতিক্রিয়ার শক্তির তাতে কোনো হেলদোল নেই। শুধু শ্রমিক-কর্মচারীরা বাধ্য হয়ে ধর্মঘট করলেই এদের যতো গাত্রদাহ। আসলে আমাদের সংগঠন শ্রেণী সংগঠন। কেন্দ্রীয় সরকারের তথাকথিত উদারনীতিকে পরাস্ত করে জনস্বার্থ সংবলিত নানান ন্যায্য দাবি আদায় ও অর্জিত অধিকার রক্ষায় কখনও এককভাবে, আবার কখনও অন্য অংশের শ্রমজীবী মানুষের সাথে বৃহত্তর ও ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলেছেন, এমনকি সাধারণ ধর্মঘটেও কেন্দ্রীয় কর্মীরা অংশ নিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। এই ধর্মঘট সেই নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের অংশ, যা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির না-পসন্দ।
হামলা হবে জেনেও আমরা ধর্মঘটে অংশ নিয়েছি। এমনকি ধর্মঘটের দিন অফিসের সামনে অবস্থানে অংশ নিয়েছি। তথাকথিত পরিবর্তনের জমানায় ২৮শে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটেও আমাদের কর্মী, সংগঠকদের উপর নিদারুণ হামলা হয়েছিল। এখন প্রতিদিনই রাজ্যজুড়ে যেভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আক্রান্ত হচ্ছে, নির্মম অবজ্ঞা ও হিংস্রতায় ভেঙে ফেলা হচ্ছে গণতান্ত্রিক কাঠামো ও মূল্যবোধ, এমনকি রাজ্য বিধানসভার অভ্যন্তরে মহিলাসহ বিরোধী বিধায়করা শাসকদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে আমরা ছাড় পাবো কী করে? এতদ্সত্ত্বেও, রাজ্যজুড়ে আমাদের নেতৃত্ব, সংগঠক ও কর্মচারীরা মতাদর্শগত দৃঢ়তা ও অদম্য জেদ নিয়ে ধর্মঘট সর্বাত্মক সফল করেছেন। এই শক্তি ও জেদের উপর ভর করেই শত বাধা-বিপত্তির সামনে দাঁড়িয়েও আগামী ২০-২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৩, সি আই টি ইউ, আই এন টি ইউ সি, বি এম এস সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলির আহ্বানে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী দু'দিন ধর্মঘট সর্বাত্মক সফল করার যাবতীয় উদ্যোগ নেবে ডাক কর্মচারী তথা কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীরা।
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33897
দোষীদের কঠোর সাজা হবেই, গণধর্ষণ প্রসঙ্গে বললেন সনিয়া
গণধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল রাজধানী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, বিবৃতি দিয়েছেন সকলেই। এমনকী জাতির উদ্দেশে ভাষণ পর্যন্ত দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু এত দিন বিষয়টিতে মুখ খোলেননি সনিয়া। অবশ্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে কংগ্রেস সভানেত্রী মুখ খুললেন শুক্রবার। বলেছেন, 'যে তরুণী তাঁর জীবনের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন, আমরা সকলে তাঁর পাশে আছি। আমাদের একমাত্র প্রার্থনা, উনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং দোষীদের যাতে কালবিলম্ব না-করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়।'
এদিন কংগ্রেসের ১২৭তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে সনিয়া গান্ধির সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও। প্রধানমন্ত্রী এদিনও বলেছেন, 'এই ঘৃণ্য অপরাধের প্রতিবাদে যে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে, আমরা তার শরিক। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, দোষীদের কঠোরতম সাজার ব্যবস্থা করবে সরকার।'
কেওয়াইসি না হলে গ্যাস কিনতে হবে বাজারদরেই
ওয়েস্ট বেঙ্গল এলপিজি ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক অসীম সোম জানান, 'যারা কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ডিলারের কাছে জমা দেবেন না, জানুয়ারি মাস থেকে তাঁদের সিলিন্ডার কিনতে হবে ১২০১ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে৷'
সোম আরও বলেন, 'এখনও পর্যন্ত দিল্লি থেকে আমরা যা খবর পেয়েছি, তাতে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর কেওয়াইসি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আর বাড়ানো হবে না৷' প্রাথমিকভাবে কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩১ অক্টোবর৷ পরে এই সময়সীমা দু'বার বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে৷
কলকাতা ও সন্নিহিত এলাকায় প্রায় এক কোটি রান্নার গ্যাসের গ্রাহক রয়েছেন৷ এদের মধ্যে কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হচ্ছে আনুমানিক ১৬ লক্ষ গ্রাহককে৷ যে সমস্ত ঠিকানায় একাধিক নামে গ্যাসের কানেকশন রয়েছে, মূলত সেই সমস্ত গ্রাহককেই আপাতত কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হচ্ছে৷ তবে, ভবিষ্যতে সমস্ত গ্রাহককেই কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী সংস্থাগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় দশ লক্ষ গ্রাহক কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছে৷ যারা এখনও কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে জমা দেননি, তাদের একটি পৃথক তালিকাও সংস্থাগুলি তৈরি করেছে৷
কেওয়াইসি-র ব্যাপারে সংস্থাগুলি কঠোর অবস্থান নিলেও কানেকশনে নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ তবে ভর্তুকিতে সিলিন্ডার পাওয়ার জন্য নতুন কানেকশনের যে সমস্ত আবেদন গত সেপ্টেম্বর মাসের পরে জমা পড়েছে, তার মধ্যে অনেক গ্রাহকই কানেকশন পেয়ে গিয়েছেন৷
দ্বাদশ যোজনায় সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করার কথা বলেছে যোজনা কমিশন৷ এ দিন সেই বিষয়েই এনডিসিতে আলোচনা হয়৷ দ্বাদশ যোজনা শুরু হয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে৷ আর এই যোজনায় এ নিয়ে দ্বিতীয় বার সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার কমালো যোজনা কমিশন৷
ন'বছরে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম ৬.৫ শতাংশ ছিল ২০১১-১২ সালে৷ চলতি অর্থবর্ষে এই হার ৫.৭ থেকে ৫.৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে মনে করা হলেও প্রথম ছ'মাসে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার হয়েছে ৫.৪ শতাংশ, যা এক দশকে সবচেয়ে কম৷
দ্বাদশ পরিকল্পনায় বৃদ্ধির হার আট শতাংশে নামিয়ে আনাকে 'ঠিকঠাক পরিমার্জন' (রিজনেবল মডিফিকেশন) বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, 'এ বছর যেখানে বৃদ্ধির হার ছয় শতাংশেরও কম সেখানে দ্বাদশ যোজনায় বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ভাবা উচ্চাশা৷ আমরা যদি করছি-করবো মনোভাব নিই তবে এই আশা পূরণ করা সম্ভব হবে না৷' যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া আগেই বলেছিলেন বিশ্বের এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই তাঁরা দ্বাদশ যোজনায় দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অনুমান কমিয়েছেন৷ যখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল তখন বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল৷
ভারতকে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এমনকি কয়লাও আমদানি করতে হয়৷ প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, চাহিদা ও সেই সঙ্গে আমদানির পরিমাণ কমানোর জন্য ওই সমস্ত পণ্যের দাম আরও বাড়ানো উচিত৷ কারণ, আন্তজাতিক বাজারের তুলনায় বিদ্যুত, কয়লা, তেল ও গ্যাসের দাম দেশের বাজারে অনেক কম, বিশেষ করে কিছু শ্রেণির উপভোক্তাদের ক্ষেত্রে৷' তিনি অবশ্য বলেন, 'দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে ওই ফারাক এক্ষুনি দূর করা সম্ভব নয়৷ কিন্ত্ত, ধীরে ধীরে দাম বাড়িয়ে সেটা করা সম্ভব এবং সেটাই এখন জরুরী৷'
'শক্তির মূল্যের দুটি প্রভাব রয়েছে৷ যদি অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতের দাম খুব কম কম হয় তা হলে বিদ্যুতের খরচ কম করার জন্য কোনও উত্সাহ দেওয়া যাবে না এবং পরিষেবাও বাড়ানো যাবে না,' প্রধান মন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন৷ শক্তিক্ষেত্রে ভর্তুকি কতটা দেওয়া উচিত তা স্থির করতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির একযোগে কাজ করা উচিত বলে তিনি জানান৷ মনমোহন সিং বলেন, সরকারের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত অর্থনীতির শ্লথ হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আবার গতিশীল করা৷ 'আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্রমাগত শৈথিল্য সর্বত্রই বৃদ্ধির গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে৷ আমাদের প্রথম কাজই হল এই অভিমুখ উল্টো করে দেওয়া৷'
ভর্তুকি দেওয়া সিলিন্ডারের পরিমাণ কমানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিমত, 'পেট্রোপণ্যের দাম এ দেশে কমই রয়েছে৷' একই বন্ধনীতে রেখেছেন বিদ্যুত্ এবং কয়লাকেও৷ তিনি বলেন, ভর্তুকির জেরেই পরিকল্পনা খাতে খরচ কমাতে হচ্ছে৷ 'দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে শক্তির দাম কম৷ আমাদের দেশে কয়লা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দামের তুলনায় কম৷ এর মানে হল বিদ্যুতের দামও খুব কম, বিশেষত কিছু কিছু গ্রাহককে কম মূল্য দিতে হয়৷'
এই ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভর্তুকি সামাজিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে৷ তবে বিষয়টি সুবিন্যস্ত হতে হবে ও কাদের ভর্তুকি দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করতে হবে৷ ভর্তুকির মাত্রা আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে৷ এই সীমার মধ্যে ভর্তুকি বেঁধে না রাখতে পারার অর্থ হয় পরিকল্পনা খাতে খরচ কমানো নয়তো লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো আর্থিক ঘাটতি৷'
পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর কাঠামো সংস্কারে ও করকাঠামো ঢেলে সাজতে জিডিপির হিসাবে করের অনুপাত বাড়ানো দরকার৷ তিনি বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে জিএসটির দ্রুত বাস্তবায়ন কঠিন৷ তবে আমি আশা করব এ ব্যাপারে প্রতিটি রাজ্যের সহযোগিতা পাব ও দ্রুত জিএসটি কার্যকর করতে পারা যাবে৷' 'দেশের পাঁচটি দরিদ্রতম রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার এই প্রথম কোনও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি হচ্ছে৷ আমার মনে হয়, আর কিছুদিনের মধ্যে ভারতে 'বিমারু' রাজ্য বলে কিছু থাকবে না,' প্রধান মন্ত্রী বলেন৷
যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হল আরও সদর্থক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলা৷ যদি আমাদের ধারণা ঠিক হয় তবে বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ ধরার চেয়ে ৮ শতাংশ ধরাই ভালো৷ আমি বিষয়টি এনডিসি-র বৈঠকে তুলব৷'
বর্তমান অর্থবর্ষের প্রথম অর্ধে আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবর্ষের প্রথম অর্ধের বৃদ্ধির হারের (৭.৩ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম৷
এই অর্থবর্ষই দ্বাদশ যোজনার প্রথম বছর, আর এক দশকে এই বছরই বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম হতে চলেছে৷ কেন বৃদ্ধির হার কম হবে তা ব্যাখ্যা করে আলুওয়ালিয়া বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে এনডিসিতে তাঁরা অ্যাপ্রোচ পেপার (প্রস্তাব) দিয়েছিলেন৷ তার পরে দেশ ও বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক শ্লথ হয়েছে৷
এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দ্বাদশ যোজনায় (২০১২-১৭) বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার কমানোর প্রস্তাব করতে চলেছে যোজনা কমিশন৷ প্রাথমিক ভাবে বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল ৯ শতাংশ৷ পরে দেশের মোট জাতীয় উত্পাদনের বৃদ্ধির হার কমতে থাকায় ওই অনুমান কমিয়ে ৮.২ শতাংশ করা হয়৷
কয়েকদিন আগেই অবশ্য যোজনা কমিটি একটি খসড়া তৈরি করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, সরকার যদি অর্থনৈতিক সংস্কার ঠিক ভাবে রূপায়ণ করতে না পারে তা হলে দ্বাদশ যোজনার শেষে বৃদ্ধির হার কমে ৫ থেকে ৫.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে৷ একাদশ যোজনায় বৃদ্ধির হার হয়েছিল ৭.৯ শতাংশ৷ যদি সরকার নীতি নির্ধারণে গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখায় তবে বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ হতে পারে৷
বৃহস্পতিবারই সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি এনডিসিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে৷ এনডিসি-র শীর্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কমিটিতে রয়েছেন সবক'টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা৷ সেই কমিটিতে যে রিপোর্ট পেশ করা হবে তাতে বলা হয়েছে সরকার 'যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করেনি'৷ এ জন্য দ্বাদশ যোজনায় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৬-৬.৫ শতাংশে আটকে থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে৷
ওই রিপোর্টে চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির সম্ভাব্য হার ৬.৭ শতাংশ হবে বলে মনে করা হলেও অর্থমন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক বৃদ্ধির হার হবে ৫.৯-৫.৯ শতাংশ৷
অভিজিৎ মুখার্জির মন্তব্য ঘিরে তৈরি হওয়া দেশব্যাপী আলোড়নের মাঝে প্রণবপুত্রকে কার্যত ক্লিনচিট দিল কংগ্রেস। দিল্লির প্রকাশ্য রাজপথে গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভকারী মহিলাদের উদ্যেশে কটূক্তি করে বিতর্ক উষ্কে ছিলেন অভিজিৎ মুখার্জি। কিন্তু এ বিষয়ে জঙ্গিপুরের সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিল তাঁর দল। যেহেতু ইতিমধ্যেই অভিজৎ সংবাদমাধ্যমে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করেছেন, সে করণেই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না।
বিষয়টিকে ধামাচাপার চেষ্টা করছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি শুক্রবার বলেন, "তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পেরে ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়েছেন।" আলভির মত, অভিজিৎ মুখার্জির ক্ষমা প্রার্থনার পর দলের আর কিছু করার থাকে না।
দিল্লি ধর্ষণ কাণ্ডের প্রেক্ষিতে দেশ জুড়ে চলতে থাকা প্রতিবাদ নিয়ে বৃহস্পতিবার বেফাঁস মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি পুত্র অভিজিৎ মুখার্জি। জঙ্গিপুরের এই কংগ্রেস সাংসদের মতে, দিল্লির প্রতিবাদে সামিল হওয়া এখন ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। যাঁরা প্রতিবাদ করছেন তাঁদের সঙ্গে বাস্তবের কোনও যোগাযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। দিল্লিতে প্রতিবাদের নামে `নৌটঙ্কি` চলছে। অভিজিত বাবুর এই মন্তব্যকে ঘিরে কেন্দ্রীয় রাজনীতি তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। অস্বস্তিতে পড়েন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গোটা পরিবার।
রাজনীতির কারবারিদের সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই ফের কুরুচিকর মন্তব্যের অভূতপূর্ব নজির গড়লেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। পার্ক স্ট্রিটে সেদিনের ধর্ষণের শিকারকে সরাসরি ওই দিন পার্ক স্ট্রিটে কোনও ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। যা হয়েছে, তা হল মহিলার সঙ্গে তার খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি।
আজ সিএনএন আইবিএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "...পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটি ধর্ষণের কোনও ঘটনাই নয়। ওই মহিলা (ধর্ষিতা) এবং তাঁর খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জের।"
স্বভাবতই ২৪ ঘণ্টাকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পরেন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অভিযোগকারী। তাঁর প্রশ্ন, "আমাকে কী বলতে চান সাংসদ? আমি কি দেহপসারিণী?" তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, `আ রেপ ইজ আ রেপ`।
স্বভাবতই তাঁর এই মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে সব মহলেই। বুদ্ধিজীবী থেকে রাজনৈতিক মহল, কাকলি দেবীর মন্তব্যে নিন্দা এসেছে সব মহল থেকেই।
কাকলি ঘোষদস্তিদারের মন্তব্য শুনতে ক্লিক করুন এখানে।
মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে করা মন্তব্যের কারণে আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় জনসমক্ষে ক্ষমাপ্রার্থনা যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে রাজ্য পুলিসের ডিজিকে।
উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে বুধবার সভা ছিল সারা ভারত কৃষক সভার। ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সিপিআইএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের মন্তব্যে তৈরি হয় বিতর্ক। ভাষা ব্যবহার ও রাজনৈতিক সৌজন্য নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে।
আনিসুর রহমানের মন্তব্যে ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে। আনিসুর রহমানের মন্তব্য রুচিহীন এবং শালীনতাবর্জিত বলে তোপ দাগেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে বিধানসভায় স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস এনেছেন তৃণমূলের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তবে বিতর্কের জের বেশ দুর এগোয়নি। সে দিন বিকেলেই সাংবাদিক বৈঠকে আনিসুর রহমান জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী তিনি।
কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের নিন্দা করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিত্সারত তরুণীর আরোগ্য কামনা করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তৈরি হওয়া ক্ষোভের শরিক সরকারও। দোষীদের দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেন তিনি। কংগ্রেসের ১২৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আজ এআইসিসি-র সদর দফতরে যান সোনিয়া-মনমোহন।
ডিসেম্বর ১৬-র রাতে বেসরকারি বাসে গণধর্ষণের শিকার ২৩ বছরের প্যারামেডিকস ছাত্রীর সাহসকে কুর্নিশ জানিয়ে ক্কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, "আমি আশা করি ও তাড়াতাড়ি সেরে উঠে ফিরে আসবে।" এই ঘটনায় দোষীদের অবিলম্বে কঠোরতম শাস্তির আশ্বাস দেন তিনি।
একই সুর শোনা যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর গলায়। তিনি বলেন দোষীদের শাস্তি দিতে সরকার দায়বদ্ধ।
দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালে শারীরিক পরিস্থিতির অত্যন্ত দ্রুত অবনতি হওয়ায়, গত পরশুই নির্যাতিতাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেয়েটির সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোকেরাও এখন সিঙ্গাপুরে। তাঁদের সাহায্য করতে ভারতীয় দূতাবাসের একজন অফিসারকে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিযুক্ত করেছে বিদেশমন্ত্রক।
ঠাকুরপুকুর ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করল পুলিস। বৃহস্পতিবার বিহারের মোতিহারি থেকে অভিযুক্ত বিজয় মাহাতোকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, বড়দিনের আগের রাতে বাসের মধ্যে এক ভবঘুরে মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বিজয় মাহাতো। ঘটনার পরই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় সে।দিল্লির বাসে তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনায় একদিকে উত্তাল গোটা দেশ। তার মাঝেই বাসের ভেতর এক ভবঘুরে মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে কলকাতায়।
সোমবার রাতে ঠাকুরপুকুরের কদমতলায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে মহিলাকে এক মদ্যপ যুবক ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই যুবককে ধরে ফেলে পুলিসের হাতে তুলে দেন তারা। কিন্তু পুলিসের হেফাজত থেকেই উধাও হয় অভিযুক্ত। তবে ঠাকুরপুকুর থানার দাবি, পুলিসকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই পালিয়ে যায় ওই যুবক।
পরে পুলিস জানতে পারে, অভিযুক্তের নাম বিজয় মাহাতো। বৃহস্পতিবার বিহারের মোতিহারি থেকে অভিযুক্ত বিজয় মাহাতোকে গ্রেফতার করে পুলিস।
কোনও দলের ব্যানার বা সংগঠনের পতাকা নয়। সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদে আজ কলকাতায় পথে নামলেন কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী। দিল্লিকাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি ছাড়াও, রাজ্যে বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও তাঁরা প্রতিবাদ জানালেন।
রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী এদিন জড়ো হয়েছিলেন মিছিলে। কোনও নির্দিষ্ট ব্যানার বা পতাকা নিয়ে নয়। একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন এই ছাত্রছাত্রীরা।
মিছিল থেকে বারেবারে উঠেছে ধর্ষণকারীদের কঠোরতম শাস্তির দাবি। শুধু দিল্লি নয়, কলকাতার বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। নির্দিষ্ট কোনও সংগঠন বা কোনও ব্যানারকে সামনে না রেখে ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রতিবাদ ছিল চোখে পড়ার মতো। আর তাই প্রশাসনকেও এদিন সর্বক্ষণ তত্পর থাকতে হয় এই মিছিল নিয়ে।
রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজারকে খুনের অভিযোগ দিয়ে এখন বিতর্কের কেন্দ্রে তিনি। টাকা আদায়ের জন্য ফোনে অশালীন ভাষায় গালাগালি, হুমকি। ফোনে ম্যানেজারের সঙ্গে মন্ত্রীর সেই কথোপকথনের রেকর্ড উঠে এসেছে ২৪ ঘণ্টার হাতে।
অ্যারোমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি নির্মাণ সংস্থার ম্যানেজার সন্তু সিনহা। ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ দুপুর ঠিক তিনটে পাঁচে একটি ফোন আসে তাঁর কাছে। ফোনেই হুমকি। পরিচিত নম্বর। কারণ সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত ছিলেন অভিযুক্ত মন্ত্রী। সেই ফোনেই সন্তুবাবুকে প্রাণনাশেরও হুমকি দেন তিনি।
সাক্ষপ্রমাণ সহ সন্তুবাবুর অভিযোগ সদ্য তৃণমূলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হওয়া হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধেই। অভিযোগ, টাকার তাগিদা করতে মাঝেমধ্যেই ফোন করতেন মন্ত্রী। সন্তুবাবুর অভিযোগ, দিন কয়েক আগে তাঁর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তাঁর বৃদ্ধ বাবা মা-কে ভয়ও দেখান হুমায়ুন কবীর। এরপর বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সন্তুবাবু। এরপরেই তেইশ তারিখ ফের তাঁকে ফোন করেন হুমায়ুন কবীর। ডায়েরি প্রত্যাহার করার জন্য সরাসরি চাপ দেন সন্তুবাবুকে। চলে মন্ত্রীর তর্জনগর্জনও। সঙ্গে খুনের হুমকিও। মন্ত্রীর এই ফোন পাওয়ার পর রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজার সন্তু সিনহা।
মন্ত্রীর এই হুমকির জেরে এখন শোরগোল পড়ে গেছে রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে, একজন মন্ত্রী কি এভাবে হুমকি দিতে পারেন? সংশ্লিষ্ট মহলে খবর বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো বিব্রত তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও। মমতা বন্দ্যোপ্যায় কলকাতায় ফেরার পর, তাঁর সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে তৃণমূলের প্রথমসারির নেতারা।
ধর্ষণকাণ্ডের প্রেক্ষিত নিয়ে নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের বিতর্কিত মন্তব্যের জবাবে এবার মুখ খুললেন পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের নির্যাতিতা মহিলা। তাঁর পাল্টা দাবি, তাঁর সঙ্গে যে পাশবিক ঘটনা ঘটেছিল, তা কোনও নাটকের ঘটনাক্রম নয়। বরং কঠিন বাস্তব। ধর্ষণের মত ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও সংযত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন নির্যাতিতা মহিলা। ধর্ষণের প্রেক্ষিত নিয়ে দ্বিচারিতা ছেড়ে রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষা যাতে সুনিশ্চিত হয় সেজন্য রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজের সবস্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত। দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ড নিয়ে নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সভায় অর্পিতা ঘোষ মন্তব্য করেন, প্রেক্ষিতের বিচারে দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ড ও পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডকে এক করে দেখা উচিত হবে না।
অর্পিতা ঘোষের এই মন্তব্যের সমালোচনা হয় সবমহলেই। ধর্ষণের মত ঘটনা কি শুধুমাত্র প্রেক্ষিতের মাপকাঠিতে বিচার করা যায়? প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। বুধবার অর্পিতা ঘোষের এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতা মহিলা। তাঁর মতে ধর্ষণের মত পাশবিক ঘটনা একটি কঠিন বাস্তব। একইসঙ্গে ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও সংযত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
রাজ্যে মহিলাদের সুরক্ষার দিকটি সুনিশ্চিত করার বিষয়টিতেও জোর দিয়েছেন ওই নির্যাতিতা মহিলা। ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি সমাজের সবস্তরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। ধর্ষণকাণ্ডের প্রেক্ষিত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের মন্তব্য কার্যত অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্য সরকারকে। এবার তাঁর মন্তব্যের বিরুদ্ধে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডের নির্যাতিতা মহিলা পাল্টা মুখ খোলায় সেই অস্বস্তি আরও বাড়ল মনে করছে সবমহল।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে
মন্ত্রীর হুমকি
অভিযোগকারীর বক্তব্য
পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর হাতিয়ার সেই কেন্দ্র বিরোধী জিগির। কোচবিহারের পুণ্ডিবাড়িতে কৃষিঋণ মেলার উদ্বোধনে ফের ঋণশোধ ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তিনি। জনমোহিনী ভাবমূর্তি বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ঋণশোধের দায় না থাকলে দশ লক্ষ যুবক-যুবতীকে চাকরি দিতে পারত তাঁর সরকার।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোট দেওয়ার আগে গত দেড় বছরে সরকারের কাজের খতিয়ান মিলিয়ে দেখতে চাইবেন ভোটাররা, তা বুঝতে পারছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের টাকা নেই রাজ্যের হাতে, সম্প্রতি বিভিন্ন সভায় ফের একথা বলতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এর দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপানোর কৌশলই বেছে নিয়েছেন তিনি। ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ঋণশোধের ইস্যুটিই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিলেও, উত্তরবঙ্গ সফরের কারণে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে ওই বৈঠকে যোগ দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে যোগ দিয়ে ঋণের সুদ-আসল মেটানোর বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
এদিন, পুণ্ডিবাড়ির সভায় রাসায়নিক সার এবং পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জাতীয় সড়কের বেহাল দশার জন্যও কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে, রাজ্য সরকারের সমালোচনা করায় বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে একহাত নেন তিনি।
দোষীদের শাস্তির বদলে উল্টে পুলিসি হেনস্থার মুখে পড়ে আত্মঘাতী হলেন গণধর্ষণের শিকার তরুণী। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্জাবের পাটিয়ালা জেলায়। অভিযোগ, গণধর্ষণের পর চুয়াল্লিশ দিন কেটে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিস।
গত ১৩ নভেম্বর দিওয়ালির রাতে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে গ্রামেরই দুই যুবক বলবিন্দর সিং এবং গুরপ্রীত সিং। এলাকার পুলিস ফাঁড়িতে বিষয়টি জানানো হলেও পুলিস প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এমনকী ওই ফাঁড়ির অফিসার গুরচরণ সিং তরুণীকে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
শেষপর্যন্ত বুধবার ওই তরুণী বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় অভিযুক্ত পুলিস অফিসার গুরচরণ সিংকে। এরসঙ্গেই সামানার ডিএসপি এবং একজন এএসআইকেও ওই ঘটনায় সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাটিয়ালার আইজি পিএস গিল।
নারী নিগ্রহের সাজায় রাজ্য এক নম্বর, কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ঘিরে প্রশ্ন
কোচবিহার: পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনকারীরা সাজা পায় বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলা সফরে এসে পুণ্ডিবাড়িতে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি চাই, মা-বোনেদের উপর যেন কোনও অত্যাচার না হয়৷ এ ধরনের একটাও ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে 'স্ট্রং অ্যাকশন' নিতে বলি৷ আমাদের সরকার এরকম ঘটনায় অ্যাকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বরে রয়েছে৷ আমরা কেন্দ্রকে বলেছি, এই সংক্রান্ত আইন আরও শক্তিশালী করতে৷' মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বললেও ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেব বলছে, নারী নির্যাতনের ঘটনায় এ রাজ্যের স্থান উপরের সারিতে৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির সঙ্গে অবশ্য বাস্তবের অনেক ফারাক৷ পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডের পর তিনি প্রথমেই তাকে 'সাজানো ঘটনা' বলে মন্তব্য করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আজও অধরা৷ কাটোয়ায় ধর্ষণের পর সংশ্লিষ্ট মহিলার স্বামীকে সিপিএম সমর্থক বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ এর সঙ্গে চক্রান্তের ইঙ্গিতও দেন তিনি৷ পরে দেখা যায়, ওই মহিলার স্বামী কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন৷
কোচবিহার সফরের দ্বিতীয় দিনে এ দিন পুণ্ডিবাড়িতে একসঙ্গে ১১ টি প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'গত দেড় বছরে আমরা ২ লক্ষ চাকরি দিয়েছি৷' বিরোধী দলের প্রতি তাঁর প্রশ্ন, 'প্রাথমিক শিক্ষকদের এক লক্ষ চাকরি দেওয়া হয়েছে কি না,আপনারাই বলুন কমরেড! পুলিশে ৪০ হাজার চাকরি হয়েছে৷ কি, হয়নি? ভিলেজ পুলিশ নিয়েছি৷ জঙ্গলমহলে ১৫ হাজার চাকরি হয়েছে৷ কোথাও চিকিত্সক ছিলনা৷ আমরা আড়াই হাজার চিকিত্সক ও নার্স নিয়েছি৷' তিনি বলেন, 'অথচ কিছু লোক সন্ধ্যা হলেই টিভিতে আমাদের সমালোচনায় বসে পড়ে৷ আমাকে পছন্দ নাই করতে পারেন৷ কিন্ত্ত আমার কাজকে পছন্দ করুন৷ আমার নিজের নামও তো আমার পছন্দ নয়, কিন্ত্ত কী করব?' এ দিনও যথারীতি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে৷ এ বার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার আসেন ডুয়ার্স হয়ে৷ জলপাইগুড়ির জাতীয় সড়কের বেহাল দশায় তাঁকে ওই পথ দিয়ে আনার ঝুঁকি নেয়নি জেলা প্রশাসন৷ তাঁরা যে জাতীয় সড়কের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এটা দিল্লির রাস্তা৷ এক বছর আগে আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে বলেও কাজ করাতে পারিনি৷ আমাদের এমপিরা ধর্ণায় বসে কিছু করাতে পারেননি৷ এটা বর্ডার এলাকা৷ স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট৷ কেন্দ্র কেন রাস্তা সারাই করবে না৷ না পারলে আমাদের বলুন, আমরাই এ কাজ করে নেব৷'
কোচবিহারে বিমানবন্দর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখানে বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা রানওয়ের৷ ওটা বাড়াতে হবে৷ এজন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রাজ্য সরকার হাতে নিয়েছে৷ কোচবিহারে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারের পাশাপাশি জুট রিসার্চ সেন্টার এবং ৩৩ একর জমিতে জুট পার্ক তৈরির ঘোষণাও করেন তিনি৷ পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, 'সাত লক্ষ কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন জমা পড়ে রয়েছে৷ অথচ ব্যাঙ্ক কিছুই করছে না৷ আমরা বলেছি সব ছেড়ে দিতে৷' তাঁর দাবি, বাংলায় এত শিল্প হবে যে কাউকে বাইরে যেতে হবে না৷ এখানেই সবাই কাজ পাবেন৷ ৩৫ বছরে কিছু না হলেও আগামী দশ বছরের মধ্যে বাংলাকে সোনার বাংলা করে দেওয়া হবে৷ সেজন্য সরকারি মঞ্চ থেকেই তাঁর আবেদন, 'পঞ্চায়েতে এমন কাউকে ভোট দেবেন না যারা সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়৷ আমি চাই মানুষ তাদের ভোট দিন যারা কাজ করছে৷' সব শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, 'আমি হয়ত থাকব না কিন্ত্ত আমার সরকার ৬০ বছর থাকবে৷'
সান্টা ক্লজের 'উপহার' ? তেমন বললে হয়তো খুব বাড়াবাড়িও করা হবে না৷ কিন্ত্ত কীই বা করতে পারেন সাদা দাড়িওয়ালা ওই বুড়ো মানুষটি? তাঁর ঝোলার মধ্যে কী আছে আর কী নেই এ নিয়ে গবেষণার দিন যে অনেককাল পার করে এসেছে আমেরিকার হাইস্কুল পড়ুয়ারা৷ গড় বয়স ১১ থেকে ১৪ বছর হলে কী হয় - এখন তারাও 'বড়'-দের দলে৷ তাই রঙিন ফানুস, বা বাঁশি বা অন্যান্য 'বাচ্চা'দের খেলনা আর তাদের টানে না৷ তারা এখন বেশ পোক্ত 'অন্য' খেলা খেলতে৷ তারই স্বাভাবিক পরিণতি - যৌন রোগ৷ গত পাঁচ বছর ধরে আমেরিকার হাইস্কুলের প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার পড়ুয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে এক সমীক্ষা চালানো হয়৷ তার রিপোর্ট পড়ে রীতিমতো স্তম্ভিত দেশের প্রশাসন৷ অন্তত ৬৫০০ জন ছাত্রছাত্রী অর্থাত ৫% ছাত্রছাত্রীই আক্রান্ত হয়েছে নানা রকম যৌন অসুখে৷ চিকিত্সকদের সাফ জবাব, কেবলমাত্র যৌন সম্পর্কে লিন্ত হলে তাহলেই ওই রোগ হওয়া সম্ভব৷
আমেরিকায় ছেলে-মেয়েদের অবাধ মেশা নিয়ে কোনও সামাজিক বাধা কোনও কালেই ছিল না৷ তার সুযোগ নিয়ে কখনও সখনও তা 'বাড়াবাড়ি'-র পর্যায়েও পৌঁছত৷ কিন্ত্ত অবস্থা যে তলে তলে এই পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এতটা ভাবতে পারেননি অভিভাবকরাও৷ এ বার তাই কিশোর সমাজকে রক্ষা করার চেষ্টা শুরু গিয়েছে তেড়েফুঁড়ে৷ যদিও এমন ইঙ্গিত বহুবার পাওয়া গিয়েছে একাধিক মার্কিন সিনেমায়৷ ওমনকী 'ছোটদের' বলে পরিচিত সিনেমাতেও এমন আভাস দিয়েছেন পরিচালকরা৷ 'জুমানজি' ছবিতে গল্পর অন্যতম প্রধান চরিত্র অ্যাডাম তার বান্ধবী সারাকে 'জুমানজি' নামের একটি 'বোর্ডগেম' খেলতে ডাকলে বছর ১৩-১৪-র ওই কিশোরী বেশ অর্থপূর্ণ হাসি দিয়ে জানায় সে এমন 'বোর্ডগেম খেলা পাঁচ বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছে৷
এখন দেখা যাচ্ছে, একা সারা নয়, আরও অনেক মার্কিন কিশোর-কিশোরীরই আর হয়তো ব্যাকগ্যামন বা দাবার মতো 'বোর্ডগেম' খেলতে ভালো লাগে না৷ ফিলাডেলফিয়ার শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ যদিও বহু অভিভাবকই হাইস্কুলে কন্ডোম ভেন্ডিং মেশিন বসানোর এই সিদ্ধান্তের তূব্র বিরোধিতা করেছেন৷ তবে সেই বিরোধিতা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে না৷ ৪১৮টি স্কুলে কন্ডোম বিলি হচ্ছেই - জানিয়েছে শিক্ষা বিভাগ৷
স্বাস্থ্যরক্ষার অজুহাতে তাই বলে ১১-১২ বছরের পড়ুয়াদের হাতে বিনামূল্যে কন্ডোম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক? ফিলাডেলফিয়ার স্কুলছাত্রদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণাকারী চিকিত্সক ড. ডোনাল্ড সোয়াত্র্জ জানাচ্ছেন, এ ছাড়া উপায় নেই৷ যৌনক্রিয়ায় সক্ষম এমন পড়ুয়াদের মধ্যে মাত্র ৬০% ছাত্রই বর্তমানে কন্ডোম ব্যবহার করে৷ চিকিত্সকরা বলছেন, পড়ুয়াদের আচরণ যখন তাঁরা পরিবর্তন করতে পারবে না, তখন এমন কিছু করার চেষ্টা শুরু হোক যাতে অন্তত তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি না হয়৷ তবে অভিভাবকদের প্রতিবাদের কিছুটা ফল মিলেছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বাড়ির তরফ থেকে আপত্তি করা হলে সেই পড়ুয়াকে কখনওই জোর করে কন্ডোম নিতে বাধ্য করা হবে না স্কুলের পক্ষ থকে৷
আবদুল আউয়াল
সিগমুয়েন্ড ফ্রয়েড বলেন, 'একটি সভ্যতার জন্য প্রথম আবশ্যক ন্যায় বিচার।' এটাকে আমরা তুলনা করতে পারি সভ্যতার খুঁটির সঙ্গে। প্রাগৈতিহাসিককালে মানুষের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা ছিল না বলেই এটাকে আমরা বলি বুনো সমাজ। যে সমাজে ন্যায় বিচারের কাঠি যত সূক্ষ্ম, সে সমাজ তত বেশি সভ্য। জাতিসংঘের ঘোষণা মতে, বিশ্বে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ পালিত হচ্ছে বিশ্ব সামাজিক ন্যায় বিচার দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ২০০৯ সালে দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ্তুঅ ংড়পরঃু ভড়ৎ ধষষ্থবা্থ 'সবার জন্য এক সমাজ'_ এ সেস্নাগান নিয়ে দিনটি পালিত হয় সামাজিক ন্যায় বিচার, সংহতি, সমন্বয় এবং সমতার দাবি নিয়ে। যদিও বাংলাদেশে এ দিনটির বিশেষ আয়োজন চোখে পড়ে না।
ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হলে দরকার আইনের প্রতি আস্থাশীল হওয়া। মানুষ আইনের প্রতি আস্থাশীল হলে তবেই ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, তিক্ততা আর না পাওয়ার ইতিহাসের জলে সেই আস্থা আজ ক্রমেই ডুবে যাচ্ছে। যেখানে ন্যায় বিচার মানুষকে দেবে স্বস্তি সেখানে আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে অনেক সময় জড়িয়ে যেতে হয় নানা বিড়ম্বনায়, এ চিত্র পৃথিবীর অনেকাংশেই দৃশ্যমান। আইনের প্রতি আস্থা হারানোর অন্যতম আরেকটি কারণ আইনের প্রতি নেতিবাচক সামাজিক প্রেষণা। লক্ষণীয়, আজকের আমাদের সমাজের মুুভি, নাটক, সিনেমাগুলো জরিপ করলে দেখা যায় এর অধিকাংশই পুলিশ, আইন-আদালতের নেতিবাচক দিকটা তুলে ধরা হয়। সিনেমাগুলোতে প্রতিনিয়ত দেখানো হচ্ছে ঘুষখোর পুলিশ, বিচারের নামে প্রহসন ইত্যাদি। এতে সামাজিক সচেতনতা যদিও কিছুটা হচ্ছে, তবে সঙ্গে সঙ্গে আইনের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে কি না, তাও ভাবনার বিষয়। হিটলারের একান্ত সহকারী গোয়েবল বলেছিলেন, একটা মিথ্যাকে ১০০ বার প্রচার করলে তাও সত্য বলে মনে হয়। এ হিসাবে এসব অতি নেতিবাচক (ঢ়বংংরসরংঃরপ) চলচ্চিত্রগুলোও কখনো কখনো আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও আস্থার জায়গা হতে সরিয়ে দিচ্ছে।
সামাজিক ন্যায় বিচার শব্দটির পরিসর অত্যন্ত ব্যাপক। আর এ ন্যায় বিচার ও সমতার বীজ বপন করে দিতে হয় একবারে শৈশব থেকে, এতে মানুষের মন ও বিশ্বাসের জগতের পরিধি ব্যাপক হয়। শৈশব থেকে শিশু যদি প্রতিনিয়ত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বৈষম্যের শিকার হয় তবে কখনো তার মনে ন্যায় বিচারের প্রতি আস্থা থাকবে না। গত বছর ১০ মার্চ যশোরের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী লিমা (১১) স্কুল পিকনিকের টাকার জন্য দিনমজুর বাবা আনোয়ার হোসেনের কাছে বায়না ধরে। গরিব বাবা ২০০ টাকা মেয়ের পিকনিক বাবদ দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে ছোট্ট মেয়ে যখন দেখে তার স্কুল বন্ধুরা সবাই পিকনিকে যাচ্ছে আর সে যেতে পারছে না অর্থের অভাবে, ঘরে গিয়ে সে তখন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনা জাতীয় দৈনিকগুলোতে ছাপা হয়েছিল, কিন্তু প্রশ্ন হল তা কতজন পাঠকের মন নাড়া দিয়েছিল? আসলে এ ন্যায় বিচার, মূল্যবোধ আর সমঅধিকারের বিষয়টি আইন করে নিশ্চিত করা মুশকিল। এজন্য দরকার প্রতিটি ব্যক্তির বিবেক ও সত্য জীবন দর্শনের সঙ্গে পরিচয়। মানুষ ও পশুর মধ্যে মূল পার্থক্য মানুষের একটি মূল্যবোধ এবং নৈতিক-দর্শনের জগৎ আছে, যা পশুর নেই। নৈতিক দর্শনের অন্যতম বিষয় নিজ দায়িত্ব অনুধাবন। কনফুসিয়াস দর্শনে একে বলা হয়েছে 'লি'। প্রত্যেকে নিজ অবস্থানে থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করলে সামাজিক ন্যায় বিচার সক্রিয়ভাবেই প্রতিষ্ঠা পাবে আর এ আত্মদায়িত্বের উপলব্ধি ব্যক্তি মনে প্রতিষ্ঠা না পেলে যতই সংবিধানে তা থাকুক না কেন ফলাফল শূন্য। হেলেন কেলার তাই বলেছিলেন, ্তুটহঃরষ ঃযব মৎবধঃ সধংং ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ংযধষষ নব ভরষষবফ রিঃয ঃযব ংবহংব ড়ভ ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃু ভড়ৎ বধপয ড়ঃযবৎ্থং বিষভধৎব, ংড়পরধষ লঁংঃরপব পধহ হবাবৎ নব ধঃঃধরহবফ।্থ আজকের আমাদের যে জিনিসটির অভাব সবচেয়ে বেশি তা হল দায়িত্ব বোধ। সমাজের শিক্ষিত মহলের বিবেক যদি সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পারে অশিক্ষিত সমাজের প্রতি তার দায়িত্বের কথা, বুঝতে পারে যে প্রতিষ্ঠানে, যে দেশের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আপনি শিক্ষার স্বাদ পেয়েছেন, সে দেশের মালিক কিন্তু গ্রামের অসহায় কৃষক ও তার সন্তানও। নগরে আজ প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নিত্যনতুন প্রাইভেট স্কুল আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেতন, ভর্তি ফি ইত্যাদি। উন্নয়ন ফির নাম দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অভিভাবক থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ভাবতে হবে এসব বিদ্যালয়ের সিংহ দ্বার কাদের জন্য উন্মুক্ত? উন্নত শিক্ষা গ্রহণের চাবি যদি শুধু ধনীর দুলালদের হাতে তুলে দেওয়া হয় তবে তা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত হবে?
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাস (৫৩৫-৪৭৫ খ্রিস্টপূর্ব) বলতেন, 'চিকিৎসকদের উচিত হবে রোগীদের অর্থ দেওয়া, কারণ রোগীদের দ্বারা তাদের মেধার ও দক্ষতার বিকাশ ঘটছে।' আজকের যুগে হেরাক্লিটাসের এ যুক্তি হয়তো ধোপে টিকবে না। তাই বলে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে কিছু চিকিৎসকের উচ্চ ফি নেওয়ার গলাকাটা ছুরিও মেনে নেওয়া যায় না। বেসরকারি মেডিকেলে উচ্চ ফিয়ের তাড়া খেয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষেরা ছুটে যায় সরকারি হাসপাতালে, কিন্তু সেখানে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখতে হয় চিকিৎসকদের অবহেলার ও নীতিবিমুখতার উলঙ্গ রূপ। সামাজিক ন্যায় বিচার তখনই প্রতিষ্ঠা পাবে যখন মানুষ তার দায়িত্বকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বুঝতে পারবে। যখন তার ভেতরে এ দর্শন সত্যিকার অর্থে ঢুকানো যাবে সে যে মেডিকেল কলেজে পড়েছে, সে হলে থেকেছে, তাতে একজন দিনমজুরেরও কর আছে।
ফ্রান্সেস বেকন বলেছিলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অত্যাচার আইনের ওপর অত্যাচার। আর এর উদাহরণ এ দেশে ভূরি ভূরি। এ দেশে প্রতিনিয়ত সেসব ছোট-বড় অপরাধ হচ্ছে যেমন_ স্বামী-স্ত্রীর অত্যাচার, দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, পারিবারিক বা সামাজিক নির্যাতন, ব্যভিচার বা নারী সম্পর্কীয় স্পর্শকাতর বিষয়েও ধরনা দিচ্ছে পাড়ার মাতুব্বর, বড় ভাই, এলাকার নামকরা-নামছাড়া ব্যক্তিদের কাছে। বিপত্তিটা ঘটে ওখানেই। এসব কবিরাজি বিচারশালায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায় বিচার আসে না, বরং প্রভাবশালী মহলের প্রভাবই বড় হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া এ দেশের সিংহভাগ মানুষই আইন-আদালত, বিচার ইত্যাদি সম্পর্কে অজ্ঞ ও ভীত। ফলে আইনের দীর্ঘ মই পাড়ি দেওয়ার পরিবর্তে তারা এসক সালিশি বৈঠকের আশ্রয় নেয়। যত দিন না পর্যন্ত মানুষকে সত্যিকার অর্থে আইনের আশ্রয় ও প্রক্রিয়া তাদের হাতের কাছে সহজলভ্য না হবে ততদিন সামাজিক ন্যায় বিচার আশা করা যায় না। যদি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে আইন, সালিশ, আদালত, অপরাধ, শাস্তি, মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার ব্যবস্থাপনা ও কিভাবে আইনের আশ্রয় পাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করলে ধারাবাহিকভাবে একজন স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়ে বা ছেলে আইন-আদালত বা নিজ অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণাটুকু অন্তত পাবে। সরকার ও পাঠ্যবই কর্তৃপক্ষ চাইলে আইন ও বিচার ব্যবস্থা বিষয়ক একটি ডিসিপ্লিন বা বিষয় খুলতে পারে। বর্তমান দিনের কিশোর অপরাধের মহামারী রূপ, বিচার ব্যবস্থার দৌরাত্ম্য, আইনের আশ্রয়বিমুখিতা দূর করে সচেতন, আত্মরক্ষাকারী নাগরিক তৈরি করতে বিষয়টির গুরুত্ব অবহেলা করা যায় না। এতে একটি স্কুলপড়ুয়া মেয়েও বুঝতে পারবে সে যদি একটি অপরাধ করে বা কেউ তার ওপর অপরাধ করে তা হলে কিভাবে আইনের আশ্রয় নিতে হয়। সে তখন নিজে কখনোই ভুঁইফোড় সালিশের আশ্রয় নেবে না বা প্রশয় দেবে না।
বাংলাদেশে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম বাধা আইনের অনাধুনিকতা ও আইনের আশ্রয় প্রার্থীর নিরাপত্তার অভাব। আইনের নানা জটিলতার ৭ সাগর পাড়ি দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়নি বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিক করা। বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের যুগ। ঘরে বসেই আমরা জানতে পারি, যোগাযোগ করতে পারি বিশ্বের সঙ্গে। সুতরাং এখন ভাবনার সময় এসেছে নতুন করে, আইন বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদির বিষয়ে ভাবনার। অপরাধ বিজ্ঞান বা ক্রিমোনলজির ক্ষেত্র এখন অনেক প্রসারিত। সুতরাং আইনের বা বিচারের নামে হয়রানি এ যুগে আর কারোর কাম্য নয়। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলেই আমরা পাব বৈষম্যমুক্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুশৃঙ্খল সোনার বাংলাদেশ।
সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হলেই কাজী নজরুলের স্বপ্ন পূরণ হবে : ন্যাপ চেয়ারম্যান
যমুনা নিউজ : আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসন বিরোধী লড়াই এবং বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যে অবদান রেখেছেন তা জাতি সকল সময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বলে অভিমত প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান ও ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা জেবেল রহমান গাণি বলেছেন, কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম অর্থাৎ কবিতা-গান আমাদের সকল শোষন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরনা যোগায়। তিনি বলেন, অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিভিন্ন সময় স্বৈরতন্ত্রের পতন হলেও সত্যিকার অর্থে এখনও গণতন্ত্র মুক্তি পায়নি। যে দিন দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান হবে, সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে, আইনের শাসন তথা সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিনই কাজী নজরুল ইসলামের স্বপ্ন পূরণ হবে।
তিনি আজ সোমবার সকালে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ যুব ন্যাপ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখছিলেন। বাংলাদেশ যুব ন্যাপ'র আহ্বায়ক সৈয়দ শাহজাহান সাজু'র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন বাবু, নগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুহম্মদ কামালউদ্দিন, সাধারন সম্পাদক মোঃ শহীদুন্নবী ডাবলু, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্রদল আহ্বায়ক এম.এন. শাওন সাদেকী, যুব ন্যাপ যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মশিউর রহমান, বাহাদুর শামিম আহমেদ পিন্টু, আমিনা খাতুন মনি, মোঃ আবদুল মান্নান, ফাতেমা আক্তার লাকী, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন পিন্টু, আল-আমিন বিশ্বাস, হাসিবুর রহমান স্বপন প্রমুখ।
এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, উথাল-পাতালের মধ্য দিয়ে চলছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র। যখনই বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যায় তখনই সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি এবং তাদের এদেশীয় এজেন্টরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করার চক্রান্ত করছে সেই অপশক্তি। আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশের সকল জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমিক শক্তিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দেশপ্রেমের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ শাহজাহান সাজু বলেছেন, শোষন-স্বৈরাচার মুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজী নজরুল ইসলাম এমনই একটি নাম যার জীবন আলোচনা বাংলাদেশের অসমাপ্ত সংগ্রাম এবং আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসন বিরোধী লড়াইকে শানিত ও শক্তিশালী করতে পারে। তাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা ধারন করা সম্ভব নয়।
যমুনা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআর/জেএ.
সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠাতেই সফল হবে বাবার স্বপ্ন
বাঙালি মাত্রই উগ্র জাতীয়তাবাদী/সাম্প্রদায়ীক?
"বাঙালি, ইয়া মুসলমান?"
০১ 'কৌন্ হো তুম-বাঙালি ইয়া মুসলমান'- আজকের দিনে এটা একটা বহুশ্রুত প্রশ্ন, বাংলাদেশের শত্রুকবলিত অঞ্চলগুলোতে এরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যে-কোনো বাঙালিকে। প্রশ্নকর্তা হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য। এমনি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন চট্টগ্রামের একটি মসজিদের ইমাম সাহেব, ৬০ বছর বয়সী শান্ত সৌম্য বৃদ্ধ হতভাগ্য ইমাম সাহেব, জোহরের জামাত শেষে জায়নামাযে বসে তসবিহ পাঠ করেন কিছুক্ষণ। ততোক্ষণে মুসল্লিরা যার যার ঘরে ফিরে যায়- জামে মসজিদের সিঁড়িতে ভীড় থাকেনা। তখনই নেমে আসছিলেন সিঁড়ি বেয়ে সড়কে। সামনে পড়লো একদল টহলদার পাকিস্তানি সৈন্য, ওদের একজন প্রশ্ন করলোঃ 'এই বুড্ঢা। তুম বাঙালি, ইয়া মুসলমান?' বলে কী! নিশ্চয় আমি বাঙালি, এই বাংলার চায়া-সুনিবিড় এক শান্তির নীড়ে আমি জন্মেছি, মায়ের আদরে বোনের সোহাগে বড়ো হয়েছি। মায়ের মুখের বুলি বাংলাভাষায় কথা বলতে শিখেছি এবং আমি যে আরবি-ফারসি ভাষা ধর্মপুস্তক পাঠ করেছি, তা-এ বাংলা ভাষার মাধ্যমেই। আমার দেশ বাংলাদেশ, দেশের মানুষের ভাষা বাংলা ভাষা। ঘরে-বাইরে যেখানেই যাই, বাংলা ভাষাতে হয় আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা। আমার মা বাঙালি, বাপ বাঙালি, এই যে মসজিদে নমাজের জামাতে শামিল হয় অগণিত মুসল্লি, তাদের কেউ জুম্মার নামাজ- ঈদের নামাজের নিয়ত না জানলে বাংলাতেই তাদেরকে শিখিয়ে দিই নিয়ত পাঠ করার জন্য। এবং নিশ্চয় আমি মুসলমানও। বংশপরম্পরায় আমরা মুসলমান। আমার বাপ-দাদা ছিলেন মুসলমান। আমাকে তাঁরা দীন-ই-ইলম শিক্ষা দিয়েছেন। আমি আজ মুসলমানদের নমাজের জামাতে ইমাম পর্যন্ত হয়েছি। আমি রোজ রোজ মসজিদের মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে নসিহত করে থাকি। নিশ্চয় আমি মুসলমান। জন্মগতভাবে। দেশ-পরিচয়ে আমি একজন অকৃত্রিম বাঙালি এবং আমার ধর্ম পরিচয় আমি মুসলমান। কিন্তু এটা কেমন প্রশ্নঃ বাঙালি না মুসলমান? আমাদের মহানবী(সাঃ) নিজকে জন্মভূমির পরিচয়ে 'আরবীয়' বলতে আনন্দ পেতেন, আমার 'বাঙালি' পরিচয়ও তাই আনন্দদায়ক। বিশেষ করে আজ আমাদের সন্তানেরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অকাতরে প্রাণপণ করেছে। বৃদ্ধ ইমাম সাহেব জবাব দিলেনঃ 'আমি তো, বাপু, একজন বাঙালি মুসলমান।' তিনি হয়তো আরো কিছু বলতেন। কিন্তু তার আগেই হানাদার দস্যুর বিষাক্ত বেয়নেট বিদ্ধ করে দিয়েছিলো ৬০ বছরের বৃদ্ধের বুক! বৃদ্ধ ইমামের মুখে অন্তিম কলেমা পাঠ শুনেও দুষ্কৃতকারী পাকিস্তানি সৈন্যদের বিচলিত হবার কোনো কারণ ছিলো না। আর এভাবেই তারা হত্যা করেছে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের। বাংলাদেশের শত্রুকবলিত এলাকাগুলোকে বাঙালিশূন্য করাই তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য কোনো দিনই সফল হবে না, কেননা বাংলার আবালবৃদ্ধবিনতা আজ রক্তের বদলে রক্ত নেবার সঙ্কল্পে ঐক্যবদ্ধ। পাকিস্তানি পশুশক্তিকে তারা বাংলার সবুজ মাঠ থেকে উতখাত করবেই। সর্বশেষ রক্তবিন্দুর বিনিময়ে তারা এ সঙ্কল্প থেকি বিচ্যুত হবে না। বাঙালি মুসলমান বৃদ্ধ ইমাম সাহেবের উষ্ণ রক্তকে কিছুতেই তারা দেবে না বৃথা যেতে।
-
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ০২-০৫-১৯৭১-এ বেলাল মোহাম্মদ কর্তৃক রচিত ও প্রচারিত কথিকা।
প্রকাশ করা হয়েছে: ভাঙা বারান্দা বিভাগে । বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...
http://www.somewhereinblog.net/blog/mreenmoyblog/28713838লা জুন, ২০০৭ দুপুর ১:১৮ |
বাঙালি চরিতামৃত
সৈয়দ আবুল মকসুদ
লক্ষ্মণ সেন ও বখতিয়ার খিলজির পরবর্তী হাজার বছরের বাংলার ইতিহাসে গত হপ্তায় প্রথম হয়ে গেল কফিন র্যালি। বাংলার মাটিতে একবার কেউ কোনো কিছু শুরু করলে তা আর থামে না। চলতে থাকে অপ্রতিহত গতিতে। অবিলম্বে কফিন র্যালির কারণে যানজট বেঁধে যাবে প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, মওলানা ভাসানী এভিনিউ থেকে জাদুঘর পর্যন্ত। শুধু ঢাকায় নয়, জেলা ও উপজেলা সদরেও হবে। নানা দাবি আদায়ে হবে কফিন র্যালি। কেউ করবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে, কেউ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে, কেউ ইসলামি শরিয়া বাস্তবায়নের দাবিতে, কেউ অতি দ্রুত পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবিতে, কেউ টিপাইমুখ ও তিস্তা চুক্তির ইস্যুতে, কেউ বিদ্যুতের দাবিতে, কেউ সপ্তম নৌবহর 'দ্বিতীয় বাংলাদেশে' এসে নোঙর ফেলতে না পারে সে দাবিতে, কেউবা কালোটাকা সাদা করার দাবিতে।
আমি প্রথম শিরোনাম দেখে মনে করেছিলাম, নতুন বাজেটে কফিনের ওপর ভ্যাট নামক কর আরোপের প্রতিবাদে কফিন মিছিল ও সমাবেশ। কারণ, এমন বিষয় নেই যার ওপর মাননীয় অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেননি। বিস্ময়ের ব্যাপার, কফিনের ওপরই তিনি ভ্যাট আরোপ করেননি। হয়তো মনে পড়েনি ওই বস্তুটির কথা, কফিন মিছিল হয়েছে 'নিরাপদে হাঁটার পরিবেশের দাবিতে'।
'পথচারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ করে নগরে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার জন্য যান্ত্রিক যানের গতি নিয়ন্ত্রণ'-এর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কফিন র্যালি হয়। র্যালির যাঁরা আয়োজন করেন, তাঁরা কেউই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে ছাড়া পাওয়া মানুষ নন। ওখান থেকে ছাড়া পেলেই ঢাকা দক্ষিণে এসে তাঁরা কফিন র্যালি করবেন, অত পাগল তাঁরা কেউ নন। কফিন র্যালির আয়োজন করে একটি নয়, দুটি নয়—১১টি বেসরকারি সংগঠন।
কফিন র্যালি অতিদূরদর্শী ও খুবই বাস্তব চিন্তাপ্রসূত কর্মসূচি। তার পেছনে রয়েছে গভীর ফিলোসফি। দুঃখবাদী জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার আজ বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। আড়াই শ বছর পরে তাঁর দর্শনের বাস্তবায়ন হলো বাংলার মাটিতে। উচ্চমধ্যবিত্ত বাঙালি প্রবীণ আর কফিনের সম্পর্ক আজ ঘনিষ্ঠ। তাঁরা থাকেন ঢাকায় একা চাকরদের নিয়ে। ছেলেরা থাকে আমেরিকায়। বড় মেয়ে স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়, ছোট মেয়ে একগাদা বাচ্চা নিয়ে কানাডায়। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর গরম পানি ও বরইপাতা দিয়ে গোসল দিয়েই দাফন হবে, তা সম্ভব নয়। হাসপাতালে নার্সদের হাতের মধ্যে দমটা তো বেরোল। তারপর প্রাণহীন শরীরটা না হয় আত্মীয়স্বজন টানাটানি করল। ছোট মেয়ের আবার বাচ্চা হবে। স্ত্রী গেছে ওই অজুহাতে কানাডা বেড়াতে।
সারাজীবন জ্বালাতন করলেও শেষ দেখাটা দেখতে চান। তাঁর আসতে লাগবে তিন দিন। ছেলেদের একজন তো আসবেই না। যে ছেলে আসবে বাবার লাশ দেখতে, তারও তিন দিনের আগে পৌঁছা সম্ভব নয়। আরেক মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে স্বার্থপরের মতো চলে গেলেও এখন জন্মদাতার মরা মুখ দেখতে অনর্থক অস্ট্রেলিয়া থেকে আসবে। অত টাকা খরচ করে তার জামাইয়ের আসার একেবারেই ইচ্ছা নেই। অথচ বউকে খুশি করতে না এসে উপায়ও নেই। কয়েকটি এয়ারলাইনস ঘুরেছে সস্তায় টিকিটের জন্য। শেষ পর্যন্ত কনসেশনে একটা কোম্পানিতে পাওয়া গেছে। তার ফ্লাইট ছয় দিন পরে। মনে মনে গজগজ করতে করতে বাসায় ফিরে বউকে বলবে, 'আব্বা আমাকে এত আদর করতেন। তাঁর চেহারাটা আমার চোখে ভাসতেছে দুদিন যাবৎ। অনেক কষ্টে টিকিট পাইলাম। আমার নিজের বাবা মারা গেলেও যাইতাম না। মঙ্গলবার সকালে ফ্লাইট। রেডি হয়ে নাও।'
এসব কারণে বাংলার মধ্যবিত্ত প্রবীণেরা একটা সময় কফিনের কথা না ভেবে পারেন না। কারণ, ওই বাক্সের ভেতরে তাঁকে বারডেমের হিমঘরে কাটাতে হবে পুরো একটি সপ্তাহ। মৃত্যুর পরবর্তী প্রথম একটি ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ওই সময়টুকুতেই প্রিয়জনেরা কান্নাকাটি করে। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে যারা এসে জড়ো হবে, তাদের মধ্যে শোকের লেশমাত্র থাকবে না।
তা ছাড়া উচ্চমধ্যবিত্তের নানা রকমের ফ্যাকরা আছে। পাকিস্তান আমলে মারা গেলে ঠাঁই হতো সোজা আজিমপুর। কিন্তু স্বাধীনতার পরে দেখা গেল, ওটা সেকেলে হয়ে গেছে। ওখানে বেওয়ারিশ, গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্তরা থাকুক। শুরু হলো বনানীতে ভিড়। ওখানে দাফন হওয়া একটা স্ট্যাটাসের ব্যাপার। আশির দশকে শুরু হলো আরেক নতুন চালাকি। জীবনকালে মুক্তিযুদ্ধের ধারেকাছে ছিলেন না, মনপ্রাণ দিয়ে একাত্তরের টিক্কা খাঁর অবৈধ প্রশাসনকে সহায়তা করেছেন। তিনবার ঘুরে এসেছেন পশ্চিম পাকিস্তান। অক্টোবর, নভেম্বরেও লাহোরে করেছেন প্রচুর কেনাকাটা। গেছেন ল্যান্ডিকোটলি। ছেলেমেয়েরা সব জানে। কিন্তু তারা প্রমোশনের প্রয়োজনে ও অন্যান্য সুবিধা নিতে বুকে আঙুল ঠুকে বলে, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। হাসপাতালে ডাক্তার মুখ গম্ভীর করে বারান্দায় এসে কঠিন সংবাদটা দিতেই ছেলেমেয়েরা সিদ্ধান্ত নেয়, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা গোরস্তানে ব্যবস্থা করতে। লোকে যখন জিজ্ঞেস করবে, 'হাওলাদার সাহেবকে কোথায় দিলেন?' তখন যাতে বলা যায়, 'মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে।' ওই কথাতে লোকে ধরে নেবে, বাবা বারো আনা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শুধু ১০ হাজার টাকা খরচ করে সার্টিফিকেটটা জোগাড় করার প্রয়োজন মনে করেননি।
বাঙালি মধ্যবিত্তের মাথায় বুদ্ধি অতি বেশি, তা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কফিন র্যালি কোনো সাধারণ প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল না। তাতে প্রকাশ পেয়েছে একালের বাঙালির প্রজ্ঞা, পরিমিতিবোধ, দ্রোহ, দূরদৃষ্টি ও সংগ্রামী চেতনা। এ ধরনের বুদ্ধি তিতুমীর, সূর্য সেন বা সুভাষ বসুর থাকলে তিরিশের দশকেই উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশরা বিতাড়িত হতো, সাতচল্লিশ পর্যন্ত বসে থাকতে হতো না।
এমন কর্মসূচি ভাসানী-মুজিব পালন করলে পঞ্চাশের দশকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। দিন সাতেকের মধ্যে দাবি আদায়ের এমন কৌশল ইরাকিদের জানা থাকলে মার্কিন সেনারা অনেক আগেই বাগদাদ থেকে পালাত। জায়গা থাক বা না থাক, ফুটপাতে হেলেদুলে অথবা হন হন করে হাঁটার জন্য তা ১০ হাত চওড়া করতে হবে। মোটরগাড়ি, বাস-ট্রাক চলাচলের জন্য মূল রাস্তা যদি গলির মতো সরু হয়, তাতে ক্ষতি নেই। বরং তাতে লাভ এই যে, গাড়ি কম চলবে। তাতে দুর্ঘটনা কমবে। পরিবেশদূষণ হবে না। জ্বালানির খরচ কমবে। মানুষ হেঁটে যাতায়াত করবে। তাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কফিন বানানোর কাঠের প্রয়োজন হবে কম। বাঁচবে বনের গাছ। বাংলাদেশ হবে সুখী ও সমৃদ্ধ।
কফিন মিছিল আরেকটি বার্তা পৌঁছে দেয় সরকারকে। ফুটপাত ১০-১২ হাত চওড়া না করলে নিরাপদে হাঁটা যাবে না। না হাঁটলে শরীরে চর্বি জমবে। হূদরোগ, ডায়াবেটিসে মানুষ মারা যাবে। সুতরাং ফুটপাত চওড়া করতে বাজেটে টাকা বরাদ্দ চাই। তা না দিলে তিতুমীর, সূর্য সেনের মতো লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করব। উৎসর্গ মানে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মারা যাব। তখন কফিনই হবে শেষ আশ্রয়। এই কর্মসূচির মধ্যে সরকারকে ভয় ধরিয়ে দেওয়া।
যুগে যুগে, দেশে দেশে বড় বড় অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু বাংলার মানুষকে দেখেছি, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় কোত্থেকে কয়েকটি জোনাকি পোকা ধরে এনে 'জোনাকি মিছিল' করতে। আরেকটু মোটা বুদ্ধি যাঁদের, তাঁরা করেন হারিকেন ও কুপি মিছিল। ঝাড়ু ও জুতা মিছিল আজ দেদার হচ্ছে। যেকোনো দাবিতে তা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ভর্তির দাবিতে হতে পারে। সর্বোচ্চ দরপত্রকে টেন্ডার দেওয়ার দাবিতে হতে পারে। বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে হতে পারে ঝাড়ু মিছিল। পানির দাবিতে বাংলার নারীকে কলস, হাঁড়ি-পাতিল ও বদনা নিয়ে মিছিল করতে দেখেছি দক্ষিণ রাজধানীতে। কোথাও একদিন হয়ে গেল থুতু ফেলা কর্মসূচি। দ্রোহ ও বুদ্ধির অপূর্ব মিশ্রণে প্রতিবাদ করতে পারে একমাত্র বাঙালি।
তবে বাঙালির কাছে সুন্দর জীবনের চেয়ে মৃত্যুর নীরবতা অনেক বেশি মূল্যবান। তাই সুন্দর জীবনের প্রতীক নিয়ে কোনো র্যালি নয়, মিছিল ও পাঁচ ঘণ্টার আমরণ অনশন হয় কাফনের কাপড় পরে। মিছিল হয় কফিন কাঁধে নিয়ে। অবশ্য বাঙালি অত বোকা নয় যে, শুধু পারলৌকিক জীবন নিয়ে ভাববে। ইহজগতের বুঝটাও সে বোঝে ভালো। গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন যে কতজনকে দেওয়া হচ্ছে পদক-পুরস্কার, তার খবর জানে শুধু দক্ষিণ রাজধানীর বোবা দেয়ালগুলো। আজীবন সম্মাননা, স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক, ব্রোঞ্জপদক; বিভিন্ন ধাতুর যা দাম তাতে হয়তো শিগগিরিই প্রবর্তিত হবে অ্যালুমিনিয়াম ও লৌহপদকও। তবে সবচেয়ে ভালো হবে পঞ্চধাতুর মিশ্রণে এমন এক নতুন পদক চালু করা, যার নাম হবে 'পঞ্চধাতুর পদক'। তাতে কারও ক্ষোভ থাকবে না, তাতে সোনা থাকবে এক অণুুপরিমাণ আর তামা ও লোহা থাকবে পুরোটা।
পদকের সঙ্গে টাকাও বিতরিত হচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো।
তবে আজীবন সম্মাননা ও পদক পুরস্কারের সঙ্গে বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা যোগ করেছেন গত চার বছর যাবৎ আরেকটি নতুন উপাদান। ক্রেস্ট, চেক ও সার্টিফিকেট গুণীজনকে দেওয়া হয় হাতে। গলা ও কাঁধ বলে, আমাকে কিছু দিলেন না। তাদের জন্য ওই উপহার। বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন। উত্তরীয়। ওড়না নয়, চাদর নয়, গামছা নয়, মাফলারও নয়—অথচ ওই সবগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি এক খণ্ড বস্ত্র। বছর দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গীয় কায়দায় চাদর ভাঁজ করে হাতে অথবা কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। উদ্দীনীয় সরকারের সময় যোগ হয় চাদরের সঙ্গে উত্তরীয়। উত্তরীয় শোভিত ছবি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, জসীমউদ্দিন, বিভূতি, মানিক, বুদ্ধদেবদের দেখিনি।
চিরকালের বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতিও আজ বিশুদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের কাছে যথেষ্ট নয়। তাঁরা দক্ষিণ ভারতীয় অবাঙালি হিন্দুদের সংস্কৃতিকে মনে করছেন অতি আধুনিক বাঙালিয়ানার প্রতীক। মৌলবাদীরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করছেন আরব্য-সংস্কৃতি। অতি বাঙালিরা অত দূর যাননি। তাঁরা গেছেন দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত। আবরীয় সংস্কৃতি দ্রুত গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতি রাজধানী উত্তর ও রাজধানী দক্ষিণে ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত হয়ে গাল খাওয়ার ভয়ে মুখে এ নিয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। আমাদের অনুকরণপ্রিয় মানুষ। একবার কিছু চালু হলে তা থামানো কঠিন। এক সময় এমন অবস্থা হবে, এই জিনিস গলায় না ঝুলিয়ে কেউ শ্বশুরবাড়িও যাবে না। দেহে অন্য বস্ত্র থাকুক আর না থাকুক, গলায় উত্তরীয় শোভা পাবে বঙ্গসন্তানদের। বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। অথবা শাড়ি, গরু ও গরম মসলার মতো আসবে চোরাচালানের মাধ্যমে।
নীতিবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব দর্শনশাস্ত্রেরই শাখা। জাতীয়তাবাদী চেতনারও একটি দার্শনিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রতিবাদের নামে কুরুচিপূর্ণ কাজ করা অনৈতিক। স্বকীয়তা মানুষের অমূল্য সম্পদ। আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি 'জাতীয়তাবাদ'। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো জাতীয়তাবাদও মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। কুরুচিপূর্ণ কাজ ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অপচর্চা থেকে মানুষকে বিরত রাখেন এমন নেতৃত্ব কোথায়?
শ্রেষ্ঠদের নিয়ে জাতি গর্ব করে। কিন্তু কোনো জাতির স্বভাব-চরিত্রের পরিচয় তার শ্রেষ্ঠদের পরিচয়ে নয়, সাধারণদের পরিচয়ে। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুলকে দিয়ে বাঙালি জাতির স্বভাব-চরিত্র, মেধা, নৈতিকতা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা ও রুচির পরিমাপ করা যাবে না। রহিম-করিম, রাম-শ্যাম, যদু-মধু, ছলিমুদ্দি-কৈমুদ্দিরাই বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের আজকের অসাধারণ-সাধারণ কারও কাজই জাতি গঠনমূলক নয়, আত্মঘাতী। এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে আমাদের স্বাধীন অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়বে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ
: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
(সূত্র: প্রথম আলো,১২/০৬/১৩) http://www.sonarbangladesh.com/writer/SayedAbulMaksud
http://www.sonarbangladesh.com/article/8995
বাঙালি চরিতামৃত
সৈয়দ আবুল মকসুদ
আমি প্রথম শিরোনাম দেখে মনে করেছিলাম, নতুন বাজেটে কফিনের ওপর ভ্যাট নামক কর আরোপের প্রতিবাদে কফিন মিছিল ও সমাবেশ। কারণ, এমন বিষয় নেই যার ওপর মাননীয় অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেননি। বিস্ময়ের ব্যাপার, কফিনের ওপরই তিনি ভ্যাট আরোপ করেননি। হয়তো মনে পড়েনি ওই বস্তুটির কথা, কফিন মিছিল হয়েছে 'নিরাপদে হাঁটার পরিবেশের দাবিতে'।
'পথচারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ করে নগরে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার জন্য যান্ত্রিক যানের গতি নিয়ন্ত্রণ'-এর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কফিন র্যালি হয়। র্যালির যাঁরা আয়োজন করেন, তাঁরা কেউই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে ছাড়া পাওয়া মানুষ নন। ওখান থেকে ছাড়া পেলেই ঢাকা দক্ষিণে এসে তাঁরা কফিন র্যালি করবেন, অত পাগল তাঁরা কেউ নন। কফিন র্যালির আয়োজন করে একটি নয়, দুটি নয়—১১টি বেসরকারি সংগঠন।
কফিন র্যালি অতিদূরদর্শী ও খুবই বাস্তব চিন্তাপ্রসূত কর্মসূচি। তার পেছনে রয়েছে গভীর ফিলোসফি। দুঃখবাদী জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার আজ বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। আড়াই শ বছর পরে তাঁর দর্শনের বাস্তবায়ন হলো বাংলার মাটিতে। উচ্চমধ্যবিত্ত বাঙালি প্রবীণ আর কফিনের সম্পর্ক আজ ঘনিষ্ঠ। তাঁরা থাকেন ঢাকায় একা চাকরদের নিয়ে। ছেলেরা থাকে আমেরিকায়। বড় মেয়ে স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়, ছোট মেয়ে একগাদা বাচ্চা নিয়ে কানাডায়। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর গরম পানি ও বরইপাতা দিয়ে গোসল দিয়েই দাফন হবে, তা সম্ভব নয়। হাসপাতালে নার্সদের হাতের মধ্যে দমটা তো বেরোল। তারপর প্রাণহীন শরীরটা না হয় আত্মীয়স্বজন টানাটানি করল। ছোট মেয়ের আবার বাচ্চা হবে। স্ত্রী গেছে ওই অজুহাতে কানাডা বেড়াতে।
সারাজীবন জ্বালাতন করলেও শেষ দেখাটা দেখতে চান। তাঁর আসতে লাগবে তিন দিন। ছেলেদের একজন তো আসবেই না। যে ছেলে আসবে বাবার লাশ দেখতে, তারও তিন দিনের আগে পৌঁছা সম্ভব নয়। আরেক মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে স্বার্থপরের মতো চলে গেলেও এখন জন্মদাতার মরা মুখ দেখতে অনর্থক অস্ট্রেলিয়া থেকে আসবে। অত টাকা খরচ করে তার জামাইয়ের আসার একেবারেই ইচ্ছা নেই। অথচ বউকে খুশি করতে না এসে উপায়ও নেই। কয়েকটি এয়ারলাইনস ঘুরেছে সস্তায় টিকিটের জন্য। শেষ পর্যন্ত কনসেশনে একটা কোম্পানিতে পাওয়া গেছে। তার ফ্লাইট ছয় দিন পরে। মনে মনে গজগজ করতে করতে বাসায় ফিরে বউকে বলবে, 'আব্বা আমাকে এত আদর করতেন। তাঁর চেহারাটা আমার চোখে ভাসতেছে দুদিন যাবৎ। অনেক কষ্টে টিকিট পাইলাম। আমার নিজের বাবা মারা গেলেও যাইতাম না। মঙ্গলবার সকালে ফ্লাইট। রেডি হয়ে নাও।'
এসব কারণে বাংলার মধ্যবিত্ত প্রবীণেরা একটা সময় কফিনের কথা না ভেবে পারেন না। কারণ, ওই বাক্সের ভেতরে তাঁকে বারডেমের হিমঘরে কাটাতে হবে পুরো একটি সপ্তাহ। মৃত্যুর পরবর্তী প্রথম একটি ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ওই সময়টুকুতেই প্রিয়জনেরা কান্নাকাটি করে। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে যারা এসে জড়ো হবে, তাদের মধ্যে শোকের লেশমাত্র থাকবে না।
তা ছাড়া উচ্চমধ্যবিত্তের নানা রকমের ফ্যাকরা আছে। পাকিস্তান আমলে মারা গেলে ঠাঁই হতো সোজা আজিমপুর। কিন্তু স্বাধীনতার পরে দেখা গেল, ওটা সেকেলে হয়ে গেছে। ওখানে বেওয়ারিশ, গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্তরা থাকুক। শুরু হলো বনানীতে ভিড়। ওখানে দাফন হওয়া একটা স্ট্যাটাসের ব্যাপার। আশির দশকে শুরু হলো আরেক নতুন চালাকি। জীবনকালে মুক্তিযুদ্ধের ধারেকাছে ছিলেন না, মনপ্রাণ দিয়ে একাত্তরের টিক্কা খাঁর অবৈধ প্রশাসনকে সহায়তা করেছেন। তিনবার ঘুরে এসেছেন পশ্চিম পাকিস্তান। অক্টোবর, নভেম্বরেও লাহোরে করেছেন প্রচুর কেনাকাটা। গেছেন ল্যান্ডিকোটলি। ছেলেমেয়েরা সব জানে। কিন্তু তারা প্রমোশনের প্রয়োজনে ও অন্যান্য সুবিধা নিতে বুকে আঙুল ঠুকে বলে, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। হাসপাতালে ডাক্তার মুখ গম্ভীর করে বারান্দায় এসে কঠিন সংবাদটা দিতেই ছেলেমেয়েরা সিদ্ধান্ত নেয়, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা গোরস্তানে ব্যবস্থা করতে। লোকে যখন জিজ্ঞেস করবে, 'হাওলাদার সাহেবকে কোথায় দিলেন?' তখন যাতে বলা যায়, 'মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে।' ওই কথাতে লোকে ধরে নেবে, বাবা বারো আনা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শুধু ১০ হাজার টাকা খরচ করে সার্টিফিকেটটা জোগাড় করার প্রয়োজন মনে করেননি।
বাঙালি মধ্যবিত্তের মাথায় বুদ্ধি অতি বেশি, তা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কফিন র্যালি কোনো সাধারণ প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল না। তাতে প্রকাশ পেয়েছে একালের বাঙালির প্রজ্ঞা, পরিমিতিবোধ, দ্রোহ, দূরদৃষ্টি ও সংগ্রামী চেতনা। এ ধরনের বুদ্ধি তিতুমীর, সূর্য সেন বা সুভাষ বসুর থাকলে তিরিশের দশকেই উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশরা বিতাড়িত হতো, সাতচল্লিশ পর্যন্ত বসে থাকতে হতো না।
এমন কর্মসূচি ভাসানী-মুজিব পালন করলে পঞ্চাশের দশকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। দিন সাতেকের মধ্যে দাবি আদায়ের এমন কৌশল ইরাকিদের জানা থাকলে মার্কিন সেনারা অনেক আগেই বাগদাদ থেকে পালাত। জায়গা থাক বা না থাক, ফুটপাতে হেলেদুলে অথবা হন হন করে হাঁটার জন্য তা ১০ হাত চওড়া করতে হবে। মোটরগাড়ি, বাস-ট্রাক চলাচলের জন্য মূল রাস্তা যদি গলির মতো সরু হয়, তাতে ক্ষতি নেই। বরং তাতে লাভ এই যে, গাড়ি কম চলবে। তাতে দুর্ঘটনা কমবে। পরিবেশদূষণ হবে না। জ্বালানির খরচ কমবে। মানুষ হেঁটে যাতায়াত করবে। তাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কফিন বানানোর কাঠের প্রয়োজন হবে কম। বাঁচবে বনের গাছ। বাংলাদেশ হবে সুখী ও সমৃদ্ধ।
কফিন মিছিল আরেকটি বার্তা পৌঁছে দেয় সরকারকে। ফুটপাত ১০-১২ হাত চওড়া না করলে নিরাপদে হাঁটা যাবে না। না হাঁটলে শরীরে চর্বি জমবে। হূদরোগ, ডায়াবেটিসে মানুষ মারা যাবে। সুতরাং ফুটপাত চওড়া করতে বাজেটে টাকা বরাদ্দ চাই। তা না দিলে তিতুমীর, সূর্য সেনের মতো লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করব। উৎসর্গ মানে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মারা যাব। তখন কফিনই হবে শেষ আশ্রয়। এই কর্মসূচির মধ্যে সরকারকে ভয় ধরিয়ে দেওয়া।
যুগে যুগে, দেশে দেশে বড় বড় অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু বাংলার মানুষকে দেখেছি, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় কোত্থেকে কয়েকটি জোনাকি পোকা ধরে এনে 'জোনাকি মিছিল' করতে। আরেকটু মোটা বুদ্ধি যাঁদের, তাঁরা করেন হারিকেন ও কুপি মিছিল। ঝাড়ু ও জুতা মিছিল আজ দেদার হচ্ছে। যেকোনো দাবিতে তা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ভর্তির দাবিতে হতে পারে। সর্বোচ্চ দরপত্রকে টেন্ডার দেওয়ার দাবিতে হতে পারে। বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে হতে পারে ঝাড়ু মিছিল। পানির দাবিতে বাংলার নারীকে কলস, হাঁড়ি-পাতিল ও বদনা নিয়ে মিছিল করতে দেখেছি দক্ষিণ রাজধানীতে। কোথাও একদিন হয়ে গেল থুতু ফেলা কর্মসূচি। দ্রোহ ও বুদ্ধির অপূর্ব মিশ্রণে প্রতিবাদ করতে পারে একমাত্র বাঙালি।
তবে বাঙালির কাছে সুন্দর জীবনের চেয়ে মৃত্যুর নীরবতা অনেক বেশি মূল্যবান। তাই সুন্দর জীবনের প্রতীক নিয়ে কোনো র্যালি নয়, মিছিল ও পাঁচ ঘণ্টার আমরণ অনশন হয় কাফনের কাপড় পরে। মিছিল হয় কফিন কাঁধে নিয়ে। অবশ্য বাঙালি অত বোকা নয় যে, শুধু পারলৌকিক জীবন নিয়ে ভাববে। ইহজগতের বুঝটাও সে বোঝে ভালো। গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন যে কতজনকে দেওয়া হচ্ছে পদক-পুরস্কার, তার খবর জানে শুধু দক্ষিণ রাজধানীর বোবা দেয়ালগুলো। আজীবন সম্মাননা, স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক, ব্রোঞ্জপদক; বিভিন্ন ধাতুর যা দাম তাতে হয়তো শিগগিরিই প্রবর্তিত হবে অ্যালুমিনিয়াম ও লৌহপদকও। তবে সবচেয়ে ভালো হবে পঞ্চধাতুর মিশ্রণে এমন এক নতুন পদক চালু করা, যার নাম হবে 'পঞ্চধাতুর পদক'। তাতে কারও ক্ষোভ থাকবে না, তাতে সোনা থাকবে এক অণুুপরিমাণ আর তামা ও লোহা থাকবে পুরোটা।
পদকের সঙ্গে টাকাও বিতরিত হচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো।
তবে আজীবন সম্মাননা ও পদক পুরস্কারের সঙ্গে বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা যোগ করেছেন গত চার বছর যাবৎ আরেকটি নতুন উপাদান। ক্রেস্ট, চেক ও সার্টিফিকেট গুণীজনকে দেওয়া হয় হাতে। গলা ও কাঁধ বলে, আমাকে কিছু দিলেন না। তাদের জন্য ওই উপহার। বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন। উত্তরীয়। ওড়না নয়, চাদর নয়, গামছা নয়, মাফলারও নয়—অথচ ওই সবগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি এক খণ্ড বস্ত্র। বছর দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গীয় কায়দায় চাদর ভাঁজ করে হাতে অথবা কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। উদ্দীনীয় সরকারের সময় যোগ হয় চাদরের সঙ্গে উত্তরীয়। উত্তরীয় শোভিত ছবি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, জসীমউদ্দিন, বিভূতি, মানিক, বুদ্ধদেবদের দেখিনি।
চিরকালের বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতিও আজ বিশুদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের কাছে যথেষ্ট নয়। তাঁরা দক্ষিণ ভারতীয় অবাঙালি হিন্দুদের সংস্কৃতিকে মনে করছেন অতি আধুনিক বাঙালিয়ানার প্রতীক। মৌলবাদীরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করছেন আরব্য-সংস্কৃতি। অতি বাঙালিরা অত দূর যাননি। তাঁরা গেছেন দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত। আবরীয় সংস্কৃতি দ্রুত গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতি রাজধানী উত্তর ও রাজধানী দক্ষিণে ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত হয়ে গাল খাওয়ার ভয়ে মুখে এ নিয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। আমাদের অনুকরণপ্রিয় মানুষ। একবার কিছু চালু হলে তা থামানো কঠিন। এক সময় এমন অবস্থা হবে, এই জিনিস গলায় না ঝুলিয়ে কেউ শ্বশুরবাড়িও যাবে না। দেহে অন্য বস্ত্র থাকুক আর না থাকুক, গলায় উত্তরীয় শোভা পাবে বঙ্গসন্তানদের। বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। অথবা শাড়ি, গরু ও গরম মসলার মতো আসবে চোরাচালানের মাধ্যমে।
নীতিবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব দর্শনশাস্ত্রেরই শাখা। জাতীয়তাবাদী চেতনারও একটি দার্শনিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রতিবাদের নামে কুরুচিপূর্ণ কাজ করা অনৈতিক। স্বকীয়তা মানুষের অমূল্য সম্পদ। আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি 'জাতীয়তাবাদ'। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো জাতীয়তাবাদও মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। কুরুচিপূর্ণ কাজ ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অপচর্চা থেকে মানুষকে বিরত রাখেন এমন নেতৃত্ব কোথায়?
শ্রেষ্ঠদের নিয়ে জাতি গর্ব করে। কিন্তু কোনো জাতির স্বভাব-চরিত্রের পরিচয় তার শ্রেষ্ঠদের পরিচয়ে নয়, সাধারণদের পরিচয়ে। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুলকে দিয়ে বাঙালি জাতির স্বভাব-চরিত্র, মেধা, নৈতিকতা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা ও রুচির পরিমাপ করা যাবে না। রহিম-করিম, রাম-শ্যাম, যদু-মধু, ছলিমুদ্দি-কৈমুদ্দিরাই বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের আজকের অসাধারণ-সাধারণ কারও কাজই জাতি গঠনমূলক নয়, আত্মঘাতী। এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে আমাদের স্বাধীন অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়বে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ
: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
(সূত্র: প্রথম আলো,১২/০৬/১৩)
http://www.sonarbangladesh.com/article/8995
বাঙালি জাতীয়তাবাদ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ হল একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি যার মাধ্যমে বাংলার জনগণ, তথা বাংলার ভাষাগত অঞ্চলের অধিবাসীদের বুঝানো হয়ে থাকে।[১] [২] এই অঞ্চলটি বাংলাদেশ এবং ভারত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ মধ্যে বিভক্ত করা হয়। ১৯ শতকের উদ্ভূত বাংলার নবজাগরণ এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টি পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে।
পরিচ্ছেদসমূহ
[আড়ালে রাখো]
[সম্পাদনা]ইতিহাস
- মূল নিবন্ধ: বাংলার ইতিহাস এবং বাংলার নবজাগরণ
বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলার ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মধ্যে গৌরবজ্জ্বল ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার নবজাগরণ বলতে বাঙালি সমাজের রুপান্তর এবং উন্নয়নে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রচলন শুরু হওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলা হয়ে ওঠে আধুনিক সংস্কৃতি, বুদ্ধিজীবী ও বৈজ্ঞানিক কাজকর্মের, রাজনীতি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম প্রাধান কেন্দ্র। প্রথম সামাজিক ও ধর্মীয় পুনর্গঠন যেমন বাংলায়ব্রাহ্ম সমাজ এবং রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদির নেতৃত্বে ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, শ্রী অরুবিন্দু, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের মত বিভিন্ন জাতীয় নেতা এবং সংস্কারকগণ। বাংলা সাহিত্য, কবিতা, ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শনের বিস্তারের ক্ষেত্রে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, জগদীশ চন্দ্র বোস ও কাজী নজরুল ইসলামের কাজ ব্যাপক অবদান রাখে।ইয়ং বেঙ্গল, এবং যুগান্তর আন্দোলন এবং অমৃত বাজার পত্রিকার মত ভারতের সংবাদপত্রগুলো বুদ্ধিজীবী উন্নয়ন নেতৃত্বে দিয়েছিলো। কলকাতা-ভিত্তিকভারতীয় ন্যাশনাল এসোসিয়েশন এবং ব্রিটিশ ভারতীয় এসোসিয়েশন ছিল ভারতে প্রথমদিকের রাজনৈতিক সংস্থা।
[সম্পাদনা]ইউনাইটেড বঙ্গ
[সম্পাদনা]ভাষা আন্দোলন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ নির্মাণ
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ http://www.bangla2000.com/bangladesh/language.shtm
- ↑ BANGLA - The Official Language of Bangladesh. প্রকাশক: Betelco.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2011-12-22.
- এম আহমেদ, শেখ মুজিবুর রহমানের যুগ (১৯৮৩), ইউনিভার্সিটি প্রেস
- ক্রেগ বক্সার, বাংলাদেশ: একটি জাতি থেকে একটি রাজ্য (১৯৯৭), ওয়েস্টভিউ প্রেস
- Cyriac Maprayil, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (২০০১) ISBN 81-7510-121-0
- Anthony Mascarenhas, Bangladesh: A Legacy of Blood ISBN 0-340-39420-X
- Mahua Sarkar, Visible Histories, Disappearing Women: Producing Muslim Womanhood in Late Colonial Bengal, (2008) Durham, NC: Duke University Press.
- Nitish Sengupta, History of the Bengali-speaking People ISBN 81-7476-355-4
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
- বাংলার নবজাগরণ
- ইউনাইটেড বেঙ্গল আন্দোলন
- মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ এর উপর বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ
- ইন্দো বাংলাদেশ standoff
- ইন্দো বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ম্যাট্রিক্স
- বুদ্ধিজীবিদের থেকে নকশা তবক সরানো
[দেখাও]
[দেখাও]
[দেখাও]
বাঙালি জাতীয়তাবাদ হল একটি রাজনৈতিক অভিব্যক্তি যার মাধ্যমে বাংলার জনগণ, তথা বাংলার ভাষাগত অঞ্চলের অধিবাসীদের বুঝানো হয়ে থাকে।[১] [২] এই অঞ্চলটি বাংলাদেশ এবং ভারত রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ মধ্যে বিভক্ত করা হয়। ১৯ শতকের উদ্ভূত বাংলার নবজাগরণ এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সৃষ্টি পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]ইতিহাস
- মূল নিবন্ধ: বাংলার ইতিহাস এবং বাংলার নবজাগরণ
বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাংলার ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মধ্যে গৌরবজ্জ্বল ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার নবজাগরণ বলতে বাঙালি সমাজের রুপান্তর এবং উন্নয়নে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রচলন শুরু হওয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলা হয়ে ওঠে আধুনিক সংস্কৃতি, বুদ্ধিজীবী ও বৈজ্ঞানিক কাজকর্মের, রাজনীতি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম প্রাধান কেন্দ্র। প্রথম সামাজিক ও ধর্মীয় পুনর্গঠন যেমন বাংলায়ব্রাহ্ম সমাজ এবং রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদির নেতৃত্বে ছিলেন রাজা রামমোহন রায়, শ্রী অরুবিন্দু, রামকৃষ্ণ পরমহংস ও স্বামী বিবেকানন্দের মত বিভিন্ন জাতীয় নেতা এবং সংস্কারকগণ। বাংলা সাহিত্য, কবিতা, ধর্ম, বিজ্ঞান এবং দর্শনের বিস্তারের ক্ষেত্রে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, শরত চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, জগদীশ চন্দ্র বোস ও কাজী নজরুল ইসলামের কাজ ব্যাপক অবদান রাখে।ইয়ং বেঙ্গল, এবং যুগান্তর আন্দোলন এবং অমৃত বাজার পত্রিকার মত ভারতের সংবাদপত্রগুলো বুদ্ধিজীবী উন্নয়ন নেতৃত্বে দিয়েছিলো। কলকাতা-ভিত্তিকভারতীয় ন্যাশনাল এসোসিয়েশন এবং ব্রিটিশ ভারতীয় এসোসিয়েশন ছিল ভারতে প্রথমদিকের রাজনৈতিক সংস্থা।
[সম্পাদনা]ইউনাইটেড বঙ্গ
[সম্পাদনা]ভাষা আন্দোলন
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ নির্মাণ
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ http://www.bangla2000.com/bangladesh/language.shtm
- ↑ BANGLA - The Official Language of Bangladesh. প্রকাশক: Betelco.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2011-12-22.
- এম আহমেদ, শেখ মুজিবুর রহমানের যুগ (১৯৮৩), ইউনিভার্সিটি প্রেস
- ক্রেগ বক্সার, বাংলাদেশ: একটি জাতি থেকে একটি রাজ্য (১৯৯৭), ওয়েস্টভিউ প্রেস
- Cyriac Maprayil, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (২০০১) ISBN 81-7510-121-0
- Anthony Mascarenhas, Bangladesh: A Legacy of Blood ISBN 0-340-39420-X
- Mahua Sarkar, Visible Histories, Disappearing Women: Producing Muslim Womanhood in Late Colonial Bengal, (2008) Durham, NC: Duke University Press.
- Nitish Sengupta, History of the Bengali-speaking People ISBN 81-7476-355-4
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
- বাংলার নবজাগরণ
- ইউনাইটেড বেঙ্গল আন্দোলন
- মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ এর উপর বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ
- ইন্দো বাংলাদেশ standoff
- ইন্দো বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ম্যাট্রিক্স
- বুদ্ধিজীবিদের থেকে নকশা তবক সরানো
|
|
|
বাঙালি : একটি রুগ্ন জনগোষ্ঠি? - ১
১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:২৪ |বাঙালি, পৃথিবীর সবচেয়ে অহমিকাপরায়ণ জাতিগুলোর একটি, বাস করে পৃথিবীর এককোণে; ছোটো, জুতোর গুহার মতো, ভূভাগে;- খুবই দরিদ্র, এখন পৃথিবীর দরিদ্রতম। তার দেশ ছোটো;- ছোটো ভূভাগে বাস করার একটি ফল মানসিকভাবে ছোটো, সংকীর্ণ হওয়া; কুপমন্ডুকতায় ভোগা, যাতে ভুগছে বাঙালি অনেক শতাব্দী ধ'রে। বাঙালির এক অংশ প'ড়ে আছে এক বড়ো দেশের একপ্রান্তে, ভুগছে প্রান্তিক মানসিকতায়; এবং আরেক অংশ ঠাসাঠাসি করে বেঁচে আছে আরেক ভূভাগে, যা এক টুকরো। বাঙালির দারিদ্র বিশশতকের এক কিংবদন্তি ও সত্য। আর্থিক দারিদ্র মানুষকে মানসিকভাবে গরিব করে, বাঙালির মনের পরিচয় নিলে তা বোঝা যায়। প্রতিটি বাঙালি ভোগে অহমিকারোগে, নিজেকে বড়ো ভাবার অচিকিৎস্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বাঙালি। ইতিহাসে বাঙালির যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা গৌরবজনক নয়; এবং এখন যে পরিচয় পাই বাঙালির তা আরো অগৌরবের। প্রতিটি জনগোষ্ঠির রয়েছে একটি বিশেষ চরিত্র, যা দিয়ে তাকে শনাক্ত করা যায়; কিন্তু বাঙালির পাওয়া যায় না এমন কোন বৈশিষ্ট্য;- কোনো জাতি সরল, কোনো জাতি পরোপকারী, কোনো জনগোষ্ঠি উদার, বা মহৎ, বা আন্তরিক; বা কোনো জাতি স্বল্পভাষী, বা বিনয়ী, বা পরিশ্রমী, বা উচ্চাভিলাষী; কিন্তু বাঙালির নেই এমন কোনো গুণ, যার সংস্পর্শে এসে মুনষত্বের প্রসার ঘটতে পারে। বাঙালি জাতিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যবেক্ষণ ও বিচার করা হয়েছে কি না, তা জানি না আমি; কিন্তু বোধ করি তা এখন জরুরি। বাঙালিকে এখন বিচার করা দরকার শারীরিক দিক থেকে- তার অবয়বসংস্থান কেমন, ওই সংস্থান মানুষকে কতোটা সুন্দর বা অসুন্দর করে, তা দেখা দরকার। বিচার করা প্রয়োজন বাঙালিকে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে;- কেমন তার মানসগঠন, ওই মনে নিয়ত চলছে কিসের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; দিনভর কতোটা ইর্ষায় ভুগছে, উত্তেজিত থাকছে কতোখানি, কতোটা গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে দিনরাত, বা কতোটা গৌরবে তার সময় কাটে। মানসিক এলাকাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বাঙালির মানস উদ্ঘাটনের চেষ্টা হয়নি আজো। বাঙালির আচরণও বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও বিচারের বিষয়। বাঙালি সাধারণত কী আচরণ করে, তার সামাজিক আচরণ কেমন; বন্ধুকে কতোটা প্রীতির সাথে গ্রহণ করে, শত্রুকে দেখে কতোটা ঘৃণার চোখে; কতোটা কথা বলে বাঙালি, কথায় কতোটা বক্তব্য থাকে বা থাকে না, এবং আরো অনেক আচরণ সূক্ষভাবে বিচার করা দরকার। তার আর্থ, সামাজিক, রাজনীতিক জীবন ও আচরণ তো গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়। অর্থাৎ আমি বলতে চাই খুব বিস্তৃতভাবে রচনা করা দরকার বর্তমান বাঙালির জীবন ও স্বপ্নের ব্যাকরণ, যাতে আমরা বুঝতে পারি তার সমস্ত সূত্র। ওই সব সূত্র যদি কখনো রচিত হয়, তবে কি ধরা পড়বে যে বাঙালি একটি সুস্থ জনগোষ্ঠি, না কি ধরা পড়বে বাঙালি জাতি হিশেবে রুগ্ন; আর এ রুগ্নতা শুধু সাম্প্রতিক নয়, ঐতিহাসিকও। বাঙালির অহমিকা কি বাঙালিকে বাধা দেবে না নিজের নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে ও বিচারে? তা দেবে; কেননা বাঙালি সত্যের থেকে শূণ্য স্তাবকতা পছন্দ করে। আমি এখানে বাঙালির কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা বা বর্ণনা করতে চাই, বস্তুনিষ্ঠভাবে, যাতে বাঙালির ব্যাকরণ রচনার সূচনা ঘটে।
বাঙালির ভাষিক আচরণ দিয়েই শুরু করি। জাতি হিশেবে বাঙালি বাচাল ও বাকসর্বস্ব; অপ্রয়োজনেও প্রচুর কথা বলে। বাঙালির স্বভাব উঁচু গলায় কথা বলা; সাধারণত শুরুই করে উচ্চকন্ঠে, বা ক্রমশ তার গলার আওয়াজ চড়তে থাকে। যদি আলাপের বিষয়টি বিতর্কিত হয়, পক্ষ-বিপক্ষ থাকে, তাহলে অল্প সময়েই তারা প্রচন্ড আওয়াজ সৃষ্টি করতে থাকে; এবং অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যদি দুয়ের বেশি হয়, তিন-চার-পাঁচজন হয়, তাহলে আলোচনা পন্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে-কোন আলোচনায় বাঙালি নিজেই নিজেকে প্রবেশ করিয়ে দেয়, অন্যদের অনুমতির প্রয়োজন বোধ করে না; এমনকি, অনেক সময়, আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে কিছু না জেনেই বাঙালি তীব্র আলোচনায় অংশ নেয়। বাঙালির যুক্তি কন্ঠের উচ্চতা; যার কন্ঠ যত উঁচু সে নিজেকে ততোটা যুক্তিপরায়ণ ব'লে গণ্য করে; এবং নিজের জয় অবধারিত ব'লে জানে। যুক্তিতে কোনো বাঙালি কখনো পরাজিত হয়নি, হয় না, ভবিষ্যতেও হবে না। বাঙালি কথায় সাধারণত ভুল শব্দ ব্যবহার করে, বাক্য সম্পুর্ন করে না; এক কথা বলে অন্য কথা বুঝিয়ে থাকে। বাঙালি উচ্চকন্ঠে আলাপ করে, অযুক্তি পেশ করে, এবং অনেকের মাঝখানে থেকেও ফিশফিশে স্বরে চমৎকার চক্রান্ত করতে পারে। বাঙালি কারো সাথে দেখা হ'লেই কথা বলে, কথার কোনো প্রয়োজন না থাকলেও। বাঙালি প্রচুর মিথ্যা কথা বলে থাকে, অনেকে মিথ্যা কথা বলাকে মনে করে চাতুর্য, একধরণের উৎকর্ষ। বাঙালির প্রতিটি এলাকায় অন্তত একজন পেশাদার মিথ্যাবাদী পাওয়া যায়। দক্ষিণ ভারতে একটি উপজাতি রয়েছে, যারা চল্লিশ বছর পার হওয়ার পর কথা বলাই থামিয়ে দেয়, তাদের বলার মতো আর কিছু থাকে না। বাঙালি এর বিপরীত- বয়স বাড়ার সাথে কথাও বাড়তে থাকে বাঙালির; বাঙালি বুড়োরা কথা বলার জন্য প্রসিদ্ধ। বাঙালির কথার পরিমাণ ও বক্তব্য সমানুপাতিক নয়; প্রচুর কথায় বাঙালি সামান্য বক্তব্য প্রকাশ করে। বাঙালির কথার প্রাচুর্য হয়ত বোঝায় যে জীবন তাকে ক্লান্ত করে নি; এবং সাথে সাথে এও বোঝায় যে জীবনে তার অপ্রাপ্তী অশেষ। বাঙালির অধিকাংশ কথা তার না পাওয়ার কথা, তার সমস্যার কথা, তার জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যর্থতার কথা। বাঙালি তার কথা দিয়ে জীবনে না-পাওয়ার শূণ্যতাগুলো পূরণ করে। এ-দিক দিয়ে বেশ ট্র্যাজিক জাতি বাঙালি; কিন্তু সে তার ট্র্যাজেডিকে লুকিয়ে রাখতে চায় অন্যের কাছে। বাঙালির কথায় ধরা পড়ে তার অন্তঃসারশূণ্যতাও।
বাঙালি গুছিয়ে কথা বলে না; এক কথা বারবার বলে; কথায় কথায় অতিশয়োক্তি প্রয়োগ করে। সাধারণ মানুষের বাক্যের ভান্ডার বেশ সীমাবদ্ধ; কিন্তু তারা ওই সীমাবদ্ধ ভান্ডারকে বারবার ব্যবহার করে প্রায় অসীম ক'রে তোলে। বাঙালি মনে করে এক কথা বারবার বললে তা গ্রহণযোগ্য হয়, তাতে ফল ফলে। এটা হয়তো মিথ্যে নয়, কিন্তু এতে কথার তাৎপর্য কমে, মূল্য বাড়ে পৌনপুনিকতার। সাধারণ মানুষকে যদি ছেড়ে দিই, ধরি যদি মঞ্চের মানুষদের, বিচিত্র কথা বলা যাদের পেশা, তারাও একই কথা বারবার বলে। বাঙালি নতুনত্ব চায় না, বিশাস করে পুনরাবৃত্তিতে। পুনরাবৃত্তিতে বাঙালির প্রতিভা কি তুলনাহীন? বাঙালির স্বভাবে রয়েছে অতিশয়োক্তি, সে কোনো আবেগ ও সত্য প্রকাশ করতে পারে না অতিশয়োক্তি ছাড়া। অতিশয়োক্তি ভাষাকে জীর্ণ করে, নিরর্থক করে, যার পরিচয় পাওয়া যায় বাঙালির ভাষিক আচরণে ও লিপিবদ্ধ ভাষায়। 'দারুণ পছন্দ করি', 'ভীষণ ভালোবাসি', 'শ্রেষ্ঠতম কবির' মতো অতিশয়োক্তিতে বাঙালির ভাষা পূর্ণ। অতিশয়োক্তি লঘুতার লক্ষণ, এতে প্রকাশ পায় পরিমাপবোধের অভাব। বাঙালি লঘু, পরিমাপবোধহীন। বাঙালি সাধারণত কারো আন্তর গুরুত্ব নিজে উপলব্ধি করতে পারে না; অন্য কারো কাছ থেকে তার জানতে হয় এটা; এবং একবার অন্যের কাছ থেকে জেনে গেলে, বিচার না ক'রে, সে তাতে বিশ্বাস করে। বাঙালি ভাষাকে এক ধরণের অস্ত্ররূপেও ব্যবহার করে। কলহে বাঙালির প্রধান অস্ত্র ভাষা- আগ্নেয়াস্ত্রের মতো বাঙালি ভাষা প্রয়োগ ক'রে থাকে।
বাঙালি স্বভাবত ভদ্র নয়। সুবিধা আদায়ের সময় বাঙালি অনুনয় বিনয়ের শেষ সীমায় যেতে পারে, কিন্তু সাধারণত অন্যদের সাথে ভদ্র আচরণ করে না। বাঙালি প্রতিটি অচেনা মানুষকে মনে করে নিজের থেকে ছোটো, আগন্তুক মাত্রকেই মনে করে ভিখিরি। কেউ এলে বাঙালি প্রশ্ন করে 'কী চাই?' অপেক্ষা করার জন্য বলে 'দাঁড়ান'। কোন কর্মক্ষত্রে গেলে বাঙালির অভদ্রতার পরিচয় চমৎকারভাবে পাওয়া যায়। যিনি কোনো আসনে ব'সে আছেন কোনো কর্মস্থলে, তাঁর কাছে অচেনা মানুষ গেলে তিনি সুব্যবহার পাবেন না, এটা বাঙালি সমাজে নিশ্চিত। আসীন কর্মকর্তা, তিনি যতো নিম্নস্তরেই থাকুন-না-কেনো, তিনি আগন্তুকের দিকে মুখ তুলেও তাকাবেন না; তাকালে মুখটি দেখে নিয়েই নানা অকাজে মন দেবেন। তিনি হয়তো পান খাবেন, অপ্রয়োজনে টেলিফোন করবেন, পাশের টেবিলের কাউকে ডেকে বাজে কথা বলবেন, আগন্তুকের দিকে মনোযোগ দেবেন না। সামনে কোনো আসন থাকলেও আগন্তুককে বসতে বলবেন না। বাঙালি অন্যকে অপমান ক'রে নিজেকে সম্মানিত করে। পশ্চিমে এটা কখনো হয় না। পশ্চিমে সাক্ষাৎপ্রার্থী সাদরে গৃহীত হয়, সম্মানিত হয়; কিন্তু বাঙলায় প্রতিটি সাক্ষাৎপ্রার্থী হয় অপমানিত। বাঙলায় সম্মানলাভের বড়ো উপায় হচ্ছে ক্ষমতা। কোথাও গিয়ে তাই প্রথমেই নিজের পদের পরিচয় দিতে হয়, ঐ পদটি যদি আসীন ব্যক্তিকে সন্ত্রস্ত করে, তাহলে সাক্ষাৎপ্রার্থী যথেষ্ট সমাদর লাভ করেন। তাই বাঙালি সামাজিকভাবে ভদ্র ও সৌজন্যপরায়ণ নয়; তার সৌজন্য ভীতি বা স্বার্থচেতনাপ্রসূত। বাঙালি যখন পথেঘাটে পরস্পরের মুখোমুখি হয়, তখনও ঠিক সৌজন্য বিনিময় ঘটে না। ধর্মীয় সম্বোধন অনেকে পরস্পরের মধ্যে বিনিময় ক'রে থাকে, তবে তা যতোটা যান্ত্রিক, ততোটা সামাজিক বা সাংস্কৃতিক নয়। পশ্চিমে রাস্তায় বেরিয়েই পরিচিতজনের, সামান্য পরিচিতের, হাসিমুখ দেখা স্বাভাবিক ঘটনা; কিন্তু এখানে হাসিমুখ দুর্লভ; রেশারেশি বাঙলায় আলোবাতাসের মতো সত্য। প্রতিটি এলাকা পারস্পরিক রেশারেশিতে গোপন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো ভয়ঙ্কর এখানে। তাই সামাজিক ভদ্রতা দুষ্প্রাপ্য। বাঙালি সমাজ প্রতি মুহূর্তে ক্ষমতানিয়ন্ত্রিত; প্রতিটি ব্যক্তি একেকটি ক্ষমতারূপে বিরাজ করে, চলাফেরা করে। ক্ষমতা কোনো ভদ্রতা জানে না। ক্ষমতার দুটি দিকে রয়েছে;- একটি দম্ভ, তা শক্তিমানকে দাম্ভিক করে; আরেকটি অসহায়ত্ব, তা অধীন ব্যক্তিকে স্তাবকে পরিণত করে। তাই বাঙালি দাম্ভিক বা স্তাবক, ভদ্র নয়।
বাঙালির চরিত্রের একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য ভন্ডামো। বাঙালি প্রকাশ্যে একটি মুখোশ পরতে ভালোবাসে, মুখোশটি নানা রঙে রঙিন ক'রে রাখে; কিন্তু তার ভেতরের মুখটি কালো, কুৎসিত। বাইরে বাঙালি সব আদর্শের সমষ্টি, ভেতরে আদর্শহীন। বাঙালি সততার কথা নিরন্তর বলে, কিন্তু জীবনযাপন করে অসততায়। বাঙলায় এমন কোনো পিতা পাওয়া যাবে না, যিনি পুত্রকে সৎ হ'তে বলেন না; আর এমন পিতাও খুব কম পাওয়া যাবে, যিনি পুত্রের অসৎ উপার্জনে গৌরব বোধ করেন না। 'চরিত্র' সম্পর্কে বাঙালির ধারণাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 'চরিত্রহীন' বলতে বাঙালি বোঝে পরনারীতে আসক্ত পুরুষ; তার চোখে আর কেউ চরিত্রহীন নয়, শুধু পরনারীআসক্তই চরিত্রহীন বা দুশ্চরিত্র। ঘুষ খাওয়া চরিত্রহীনতা নয়, গৌরব; কপটতা চরিত্রহীনতা নয়, মিথ্যাচার চরিত্রহীনতা নয়, এমনকি খুন করাও চরিত্রহীনের লক্ষণ নয়, শুধু নারীআসক্তিই চরিত্রহীনতা। তবে বাঙালি মাত্রই পরনারীআসক্ত; প্রকাশ্যে নয়, গোপনে। বাঙালি ধর্মের কথা সোরগোল ক'রে ব'লে ধর্মবিরোধী কাজ করে অবলীলায়, প্রগতির কথা ব'লে প্রগতিবিরোধী কাজ করে প্রতিদিন; বাঙালি প্রকাশ্যে মহত্ত্ব দেখিয়ে বাস্তবে কাজের সময় পরিচয় দেয় ক্ষুদ্রতার। বাঙালি যা বিশ্বাস করে মুখে তা প্রকাশ করে না; বাঙালি যা প্রকাশ করে আচরণে তা পালন করে না; বাঙালি পেছনে যার নিন্দা করে, মুখোমুখি তার তোষামোদ করে- যদি সে শক্তিমান হয়। শক্তি বাঙালির জীবনের বড়ো নিয়ন্ত্রক;- বাঙালি শক্তিমানের পদানত হয় নির্দ্বিধায়, আর দুর্বলকে পীড়ন করে অবলীলায়। বাঙালি শক্তিমানের কোনো ত্রুটি দেখে না, শক্তিমানের সমস্ত অন্যায়কে মেনে নেয়, বাঙালির চোখে শক্তিমান কখনো চরিত্রহীন নয়, শক্তিমানের কোন চরিত্র থাকার দরকার আছে বলেও মনে করে না বাঙালি; কিন্তু চরিত্রবান হওয়া দুর্বলের জন্য বিধিবদ্ধ। বাঙালি খুবই পরনিন্দা করে, পিতার নিন্দা করতেও কুন্ঠিত হয় না; তবে বাঙালির চোখে সামাজিকভাবে কেউ নিন্দিত নয়, যদি সে শক্তিমান হয়। নিন্দিত শক্তিমানের কন্ঠে মালা পরাতে বাঙালি লজ্জিত হয় না, গর্ব বোধ করে; নিন্দিত শক্তিমানকে নিমন্ত্রণ করে ধন্য বোধ করে বাঙালি। বাঙালি, অশেষ ভন্ডামোর সমষ্টি, শক্তিকেই মনে করে বিধাতা।
বাঙালির শরীরটির দিকেই তাকানো যাক একবার। বাঙালি কি সুন্দর, বাঙালি কি নিজেকে মনে করে রূপমন্ডিত? বাঙালির অহমিকা আছে, তাই নিজেকে রূপের আঁধার মনে করে নিশ্চয়ই; কিন্তু বাঙালির চোখে সৌন্দর্যের দেবতা অন্যরা। একটু ফরশা হ'লে বাঙালি তাকে বলে 'সাহেবের মতো সুন্দর'; একটু বড়োসড়ো হলে বাঙালি তার তুলনা করে, বা কিছুদিন আগেও তুলনা করত, পাঠানের সাথে। বাঙালি সাধারণত খর্বকায়, তবে সবাই খর্ব নয়; বাঙালির রঙ ময়লা, তবে সবাই ময়লা নয়, কেউ কেউ ফরশা। শাদা রঙটিকে পূজো করে বাঙালি, সম্ভবত সমস্ত ভারতবর্ষীয়ই। এদিক দিয়ে বাঙালিকে বর্ণান্ধ বা বর্ণবাদীও বলা যায়। রঙের জন্য এত মোহ আর কোথাও দেখা যায় কিনা সন্দেহ। যে-মেয়ে শুধুই শাদা, আর কিছু নয়, যার মুখের দিকে তাকানো যায় না, যার শরীর বেঢপ, তাকেও বাঙালি সুন্দর বলে, কারণ সে শাদা। বাঙালি কালো, কিন্তু তার সৌন্দর্যের দেবী শাদা। বাঙালির শরীর সুন্দর নয়। কেউ হয়তো খর্ব, মধ্যভাগে মাংশ প্রচুর; নারীদের সৌন্দর্য কম, যদিও কেউ কেউ রূপসী। বাঙালি নারী বক্র হয়ে যায় পিঠ বাঁকিয়ে চলতে চলতে, আর ঠিক মতো সোজা হ'তে পারে না, সব সময় ঢাকা থাকে জড়তায়। বাঙালি পুরুষের কাঠামোতে পৌরুষের অভাব; নারীদের অভাব আবেদনের। বাঙালি অবশ্য নিজের সম্পর্কে সবকিছু বাড়িয়ে বলতে ভালোবাসে ব'লে সৌন্দর্যের কথাও বাড়িয়ে ব'লে থাকে; কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির সাথে তুলনা করলে তার সৌন্দর্য স্থান পাবে তালিকার নিচের দিকেই। তাই বাঙালি তাকেই সুন্দর বলে যে দেখতে বাঙালির মতো নয়। তাহলে কি বাঙালির সৌন্দর্যচেতনা চিরকালই থেকে যায় অপরিতৃপ্ত? বাঙালির জীবন ভ'রে অপরিতৃপ্ত ও অসন্তোষ; অর্থ তাকে সচ্ছলতা দেয় না, সমাজ তাকে শান্তি দেয় না, রাজনীতি তাকে মানুষ হিশেবে গণ্য করে না, আর তার সৌন্দর্যপিপাসাও তাকে করে রাখে অপরিতৃপ্ত?
বাঙালি দরিদ্র কিন্তু অপচয়প্রবণ; আর বাঙালি সময়ের মূল্যবোধহীন। দারিদ্রের একটা বৈশিষ্ট্য সম্ভবত অপচয়, বা অপচয়ে তারা গৌরব বোধ করে। গরিব বাঙালির বাড়িতে গেলেও নানা অপচয় চোখে পড়ে। ভাতের অভাব বাঙালির জীবনে ঐতিহাসিক সত্য ও নিয়তি; কিন্তু প্রতি বাড়িতেই প্রতিদিন কিছু পরিমাণ হ'লেও ভাতের অপচয় ঘটে। কেউ হয়তো খাওয়ার সময় কিছু ভাত ফেলে দেয়, কেউ না-খেয়েই উঠে যায়; কিন্তু ধনী দেশগুলোতে এক টুকরো রুটিও অপচয় হয় না। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাঙালির অপচয়ের কোনো শেষ নেই, এটা ব্যাক্তির অপচয়েরই রাষ্ট্রীয় পরিণতি। বাঙালির রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিদিন অপচয় করে চলে, কিন্তু জাপানে একটি ইয়েনেরও অপচয় ঘটে না। অপব্যয় বাঙালির স্বভাব ও সামাজিক দাবি। বৃটেনে কারো আয়ের একটি ছোটো মুদ্রাও অপব্যয়িত হয় না; তারা নিজেরা অপব্যয় করে না, রাষ্ট্র অপব্যয় করতে দেয় না, সমাজ অপব্যয় করতে দেয় না। সিগারেটকেই উদাহরণ হিশেবে নিই। আমি সিগারেট খাই, হিশেব মতো খেতে চাই, কিন্তু হয়ে ওঠে না। পাশের কাউকে-না-কাউকে প্রতিদিনই দু-চারটি দিতে হয়, যদিও তাদের অনেকেই ধূমপায়ী নন, কিন্তু অন্যকে সিগারেট খেতে দেখলে ধূমপানের শখ জেগে ওঠে তাঁদের। প্রতিদিনই কয়েকটি সিগারেট অপচয় হয় আমার, যেমন হয় অধিকাংশ বাঙালির। আয় খুব সামান্য, কিন্তু অপচয় অনেক;- কখনো স্বেচ্ছায়, কখনো বাধ্য হয়ে। দর্জির কাছে কখনো একবার গিয়ে জামা তৈরি পাওয়া যায় না, দু-তিনবার যেতে হয়, অপচয় ঘটে সময়ের ও অর্থের; যে কাজে একবারের বেশি যাওয়ার কথা নয়, সেখানে যেতে হয় বারবার। এমন অপচয় পশ্চিমে ঘটে না। তারা অনেক আয় করেন, কিন্তু তাঁদের একটি সিগারেটেরও অপচয় ঘটে না। বাঙালি আয় করে কম, কিন্তু তার একটা বড় অংশ অপচয় হয়ে যায়। অপচয় হয় বাঙালির জীবন। বাঙালির সময় বোধ নেই বললেই চলে; বাঙালি পাঁচটা বললে ছটা-সাতটাও বোঝাতে পারে। সময় মতো যে চলে বাঙালি সমাজে সে-বেমানান, তাকে বার বার পড়তে হয় অসুবিধায়। বাঙালি সভা বা বৈঠক করতে খুবই উৎসাহী; প্রতিটি অফিস বৈঠকপরায়ণ, তারা প্রতিদিন নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে ব্যগ্র; কিন্তু ঠিক সময়ে কোনো সদস্য আসে না বৈঠকে। যারা আগে আসে তাদের মূল্য কম, বাঙালি মনে করে সময়বোধহীন বিলম্বীরাই মূল্যবান। যে-ঠিক সময়ে এসেছে বাঙালি তাকে খেয়াল করে না; কিন্তু যে আসে নি, আসবে কি না সন্দেহ, বাঙালি তার কথা বারবার বলে, তার জন্যে বড়ো আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
প্রতারণা বা প্রবঞ্চনা বা কথা না রাখায় বাঙালি প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে। কারো সাথে আর্থিক সম্পর্কে জড়িত হ'লে প্রবঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে একশো ভাগ, না হ'লেই বিস্ময় জাগে। বাঙালি প্রচুর দলিলপত্র ক'রে ব্যবসায়ে নামে অন্যের সাথে, তারা সবাই সুযুগ খুঁজতে থাকে পরস্পরকে ঠকানোর, এবং ঠকাতে পারলে গৌরব বোধ করে, ও না ঠকলে অবাক হয়। ঋণ শোধ না করা বাঙালির স্বভাব। কেউ একবার ঋণ নিলে তা যে ফেরত পাওয়া যাবে, এমন আশা করা বাঙালি সমাজে অন্যায়; আর ফেরত পাওয়া গেলেও তা কখনো ঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। বাঙালি কারো প্রাপ্য অর্থ শোধ করতেও কয়েকবার ঘোরায়। প্রথমে একটি তারিখ দেয়, প্রাপক গিয়ে দেখে অন্যজন অনুপস্থিত। তখন তার খোঁজ করতে হয়, পাওয়া গেলে প্রাপ্য টাকা পাওয়া যায় না, টাকা শোধের আরেকটি তারিখ পাওয়া যায়। অনেকবার ঘোরানোর পর বাঙালি টাকার কিছুটা শোধ করে, বাকিটার জন্যে আরেকটি তারিখ দেয়। এটাই হচ্ছে বাঙালির ঋণনীতি। ব্যবসাবাণিজ্যে যারা জড়িত, তারা প্রত্যেকেই প্রতারক; কাউকে-না-কাউকে প্রতারণ করে তারা টাকা করে। এখন অবশ্য রাষ্ট্রকে প্রতারণ করার পথই তারা আবিষ্কার করেছে। বাঙালি বন্ধুকে, পরিচিত জনকে, এমনকি অপরিচিতকেও নানা রকম কথা দেয়; কিন্তু কথা রাখে না। কথা না-রাখার অজুহাত বের করতে দক্ষ বাঙালি; এতো দক্ষ যে বাঙালির কথা শুনে যে বিশ্বাস করবে না তাকে চরম অবিশ্বাসী ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
বাঙালি খুবই স্বৈরাচারী; দেখতে এতোটুকু, কিন্তু সবাই ছোটোখাটো চেঙ্গিশ খাঁ। প্রতিটি পরিবারকে যদি একটি ছোটো রাষ্ট্র হিশেবে দেখি, তাহলে ঐ রাষ্ট্রের একনায়ক পিতাটি। পল্লীসমাজে পিতার একনায়কত্ব খুবই প্রবল ও প্রচন্ড; শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজে কিছুটা কম। পিতার শাসনে স্বৈরাচারে পরিবারটি সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে সারাক্ষণ; মা-টি হয় সবচেয়ে পীড়িত ও পর্যুদস্ত, সন্তানেরাও তাই। পিতার স্বৈরাচারের পরিচয় পরিবারের সদস্যদের সম্বোধনরীতিতেও ধরা পড়ে। আগে, সম্ভবত এখনো, সন্তানেরা পিতাকে সম্বোধন করতো 'আপনি' বলে, কিন্তু মাকে সম্বোধন করতো বা করে 'তুমি' বলে। পিতা যে প্রতাপশালী ও অপ্রতিহত, এটা বোঝে ছোটো শিশুটিও; মা যে শক্তিহীন তাও বোঝে। মা তাদের মতোই পীড়িত। বাঙালির পারিবারিক একনায়কত্বই বিস্তৃত হয় সমাজে, রাষ্ট্রে। বাঙালি সমাজে প্রধানেরা একনায়ক, তারা অন্যের মত গ্রাহ্য করে না, নিজের মত চাপিয়ে দেয় সকলের ওপর। রাষ্ট্রনায়কেরা তো প্রসিদ্ধ একনায়ক, যদিও বিশ্বের প্রধান একনায়কদের কাছে তারা ইঁদুরছানার মতো। বাঙালি একনায়কত্ব করে, ও ওপরের একনায়কের বশ্যতা মেনে নেয়। নিচের সবাই তাদের কাছে 'ভৃত্য', ওপরের সবাই 'প্রভু'। একনায়কত্ব বাঙালিসমাজে বিকাশ ঘটিয়েছে স্তাবকতার। স্তাবকতায় বাঙালি কি অদ্বিতীয়? প্রভুকে তারা হাজার বিশেষণে শোভিত করে, এতো বিশেষণ তাকে উপহার দেয় যে বিধাতাকেও অতো বিশেষণে সাজানো হয় না। স্তাবকতায় যে-কোনো অতিশয়োক্তি প্রয়োগ করতে পারে বাঙালি, এবং মুহূর্তে মুহূর্তে নতুন অতিশয়োক্তি খুঁজে ফেরে। তবে বাঙালি কখনো প্রভুভক্ত নয়। বাঙালি জানে প্রভু শাশ্বত, কিন্তু কোনো বিশেষ প্রভু নশ্বর। এক প্রভু নিঃশেষ হয়ে গেলে বাঙালি আরেক প্রভু ধরে, আগের প্রভুর নিন্দায় মুখর হয়, জয়গানে মুখর হয় নতুন প্রভুর।
- হুমায়ুন আজাদ
বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...
http://www.somewhereinblog.net/blog/tanjid/29577134
বাঙালি জাতি
বাঙালি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মোট জনসংখ্যা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
২৩০,০০০,০০০ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চলসমূহ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
~ এই দেশগুলিতে বৃহত্তর জনসংখ্যা রয়েছে: বাংলাদেশ ওভারতে (পশ্চিমবঙ্গ)। | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভাষাসমূহ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ধর্ম | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ইন্দো ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয়, ইন্দো-আর্য,অস্ট্রো-এশীয়, তিব্বতীয়-বার্মা, প্রোটো অস্ট্রালয়ড,অসমীয়, বিহারি, দ্রাবিড়ীয়, উড়িয়া, ত্রিপুরি |
বাঙালি জাতি হল বঙ্গদেশ অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের অধুনা বাংলাদেশ ও ভারতের কিয়দংশে বিভাজিত এক অঞ্চলে বসবাসকারী মানব সম্প্রদায় যাদের ইতিহাস অন্ততঃ চার হাজার বছর পুরোনো। এদের ভাষা বাংলা যা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর পূর্ব-ইন্দো-আর্য বিভাগের একটি ভাষা। নৃতাত্বিকভাবে এরা একদিকে যেমন ওড়িয়া, আসামী, বিহারী ও অন্যান্য পূর্বভারতীয় ভাষাভাষী গোষ্ঠীর নিকট আত্মীয়, তেমনই এদের মধ্যে কিয়দংশে মুণ্ডা, প্রোটো-আস্ট্রালয়েড, তিব্বতী-বর্মী, অস্ট্রো-এশীয়, এবং দ্রাবিড় গোষ্ঠীর বংশধারাও মিশে আছে। এর ফলে বাঙালি জাতি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও স্থানভেদে ভিন্ন। এই নৃগোষ্ঠীর সর্বাধিক ঘনত্ব দেখা যায় অধুনা বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যে। তবে এছাড়াও অনেক বাঙালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভারতের আরো নানা রাজ্যে, যেমনঃত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, দিল্লী, কর্ণাটক এবং ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্তের রাজ্যগুলিতে (অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড)। এছাড়াও পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা ইত্যাদি দেশে অনেক বাঙালি আছেন।
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]ইতিহাস
বাঙালি জাতির ইতিহাসকে আদি বা প্রাচীন, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগে ভাগ করা যায়।
[সম্পাদনা]প্রাচীন ইতিহাস
আগে এদেশের সভ্যতাকে অনেকেই অর্বাচিন বলে মনে করলেও বঙ্গদেশে চার হাজারেরো বেশি প্রাচীন তাম্রাশ্ম (chalcolithik) যুগের সভ্যতার নির্দশন পাওয়া গেছে [১৫][১৬] যেখানে দ্রাবিড়, তিব্বতী-বর্মী ও অস্ট্রো-এশীয় নরসম্প্রদায়ের বাস ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বঙ্গ বা বাংলা শব্দটির সঠিক ব্যুৎপত্তি জানা নেই তবে অনেকে মনে করেন এই নামটি এসে থাকতে পারে দ্রাবিড় ভাষী বং নামক একটি গোষ্ঠী থেকে যারা এই অঞ্চলে আনুমানিক ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বসবাস করত। [১৭] ডঃ অতুল সুরের মতে "বয়াংসি" অর্থাৎ পক্ষী এদের টোটেম ছিল। আর্যদের আগমনের পর বাংলা ও বিহার অঞ্চল জুড়ে মগধ রাজ্য সংগঠিত হয় খ্রীশষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে। বুদ্ধের সময় মগধ ছিল ভারত উপমহাদেশের চারটি মহাশক্তিশালী রজত্বের অন্যতম ও ষোড়শ মহাজনপদের একটি। বংশেরচন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বের সময় মগধের বিস্তার হয় দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল অঞ্চলে। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের সময় আফগানিস্তান ও পারস্যের কিছু অংশও মগধের অধিকারভুক্ত ছিল। বৈদেশিক রচনায় বাংলার প্রথম উল্লেখ দেখা যায় গ্রিকদের লেখায় ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি। তাতে বর্ণিত আছে গাঙ্গেয় সমতলভুমিতে বাসকারী গঙ্গারিডি নামে জাতির শৌর্যবীর্যের কথা যা শুনে মহাবীর আলেক্সান্ডার তাঁর বিশ্ববিজয় অসম্পূর্ণ রেখে বিপাশার পশ্চিম তীর থেকেই প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। গঙ্গারিডি শব্দটি হয়ত গ্রিক Gangahrd (গঙ্গাহৃৎ) থেকে এসে থাকবে— গঙ্গা-হৃৎ অর্থাৎ গঙ্গা হৃদয়ে যে ভুমির।[১৮] খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতকে মগধে গুপ্ত রাজবংশের পত্তন হয়।
[সম্পাদনা]মধ্যযুগ
বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা বলা হয় শশাঙ্ককে যার রাজত্ব ছিল সাতশো শতকের গোড়ার দিকে।[১৯]তারপর কিছুদিন অরাজকতার পর বৌদ্ধ ধর্মী পাল বংশ এখানে চারশো বছর রাজত্ব করে, তারপর অপেক্ষাকৃত কম সময় রাজত্ব করে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মী সেন বংশ। বাংলা অঞ্চলে প্রথম ইসলামের প্রচার হয় দ্বাদশ শতকে সুফী ধর্মপ্রচারকদের দ্বারা। পরবর্তীতে বাংলা ইসলামীয় রাজত্বের অধিকারভুক্ত হলে বাংলায় প্রায় সব অঞ্চলেই দ্রুত ইসলামের প্রসার ঘটে।[২০] দিল্লীর দাস বংশের সুলতানীর একজন তুর্কী সেনাপতি বক্তিয়ার খলজী সেন বংশের রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বাংলার এক বিশাল অংশ দখল করেন। অতঃপর দিল্লীর বিভিন্ন সুলতান রাজবংশ ও বা তাদের অধীনস্থ স্থানীয় সামন্ত রাজারা বাংলায় রজত্ব করে। ষোড়শ শতকে মুঘল সেনাপতি ইসলাম খান বাংলা দখল করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে দিল্লীর মুঘল সরকারের নিযুক্ত শাসকদের হাত ছাড়িয়ে আপাত-স্বাধীন মুর্শিদাবাদের নবাবদের রাজত্ব শুরু হয়, যারা দিল্লীর মুঘল সরকারের শাসন কেবল নামে মাত্র মানত।
[সম্পাদনা]বাংলার নবজাগরণ
বাংলার নবজাগরণ বলতে বোঝায় ব্রিটিশ রাজত্বের সময় অবিভক্ত ভারতের বাংলা অঞ্চলে উনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দলনের জোয়ার ও বহু কৃতি মনীষীর আবির্ভাবকে। মুলতঃ রাজা রামমোহন রায়ের(১৭৭৫-১৮৩৩) সময় এই নব জাগরণের শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় কবিগুরুরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সময়ে, যদিও এর পরেও বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ এই সৃজনশীলতা ও শিক্ষাদীক্ষার জোয়ারের বিভিন্ন ধারার ধারক ও বাহক হিসাবে পরিচিত হয়েছেন।[২১] উনবিংশ শতকের বাংলা ছিল সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় দর্শনচিন্তা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম, ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার যা মধ্যয্যগের যুগান্ত ঘটিয়ে এদেশে আধুনিক যুগের সূচনা করে।[২২]
[সম্পাদনা]স্বাধীনতা আন্দোলন
বাঙালিরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে খুবই মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত করেন কিছু শিক্ষিত বাঙালি বুদ্ধিজীবী, যাঁদের পুরোধা ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, সত্যেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় ইত্যাদি নরমপন্থীরা, এবং পরবর্তীতে বিপ্লবাত্মক ভূমিকায় ঋষিঅরবিন্দ ঘোষ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, রাসবিহারী বসু, ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, সূর্য সেন প্রমুখ বীর বিপ্লবীবর্গ।
[সম্পাদনা]বঙ্গভঙ্গ
বঙ্গভঙ্গ ইতিহাসে ঘটে দুবার: ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ রাজত্বকালে বঙ্গভঙ্গ, যাতে উদবেলিত বাঙালির প্রবল প্রতিবাদস্বরূপ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন হলে ১৯১১ সালে এই বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। দ্বিতীয়বার বাংলা ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হবার সময়— বাংলার মুসলিমপ্রধান পূর্ব ভাগ পুর্বপাকিস্তান হিসাবেপাকিস্তানের অংশগত হয় ও হিন্দু প্রধান পশ্চিম ভাগ পশ্চিমবঙ্গ নামে ভারতের অংশ থাকে। পুর্বপাকিস্থান এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর হয় অধুনা স্বাধীনবাংলাদেশ।
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের জন্ম
এই বিষয়ের জন্য দেখুন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন নিবন্ধ গুলি।
[সম্পাদনা]বাঙালির লোকাচার
বাঙালিরা শিল্প-সংস্কৃতিতে কৃতিত্বের জন্য বিখ্যাত। নানা বাঙালি লেখক, নাট্যকার, সুরকার, চিত্রকর, এবং চলচ্ছিত্রকাররা ভারতে শিল্প ও কলাচর্চার উন্মেষ ও বিকাশে মুখ্য ভুমিকা রাখেন। উনবিংশ শতকের বাংলার নবজাগরণ মূলে ছিল কিছু ব্রিটিশদের দ্বারা এদেশে পাশ্চাত্যের শিক্ষার ও পাশ্চাত্যীয় আধুনিকমনস্কতার অনুপ্রবেশ। অন্যান্য ভারতীয়দের তুলনায় বাঙালিরা অপেক্ষাকৃত দ্রুত ব্রিটিশদের প্রথা শিখে ফেলেছিল ও ব্রিটিশদের-ই নিজেদের দেশে ব্যবহৃত প্রশাসনব্যবস্থা ও আইনকানুন ইত্যাদির জ্ঞান পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দলনে কাজে লাগিয়েছিল। বাংলার নবজাগরণের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল জায়মান রাজনৈতিক ভারতীয় জাতীয়তার বীজ ও আধুনিক ভারতের কলা ও সংস্কৃতির প্রথম উন্মোচন।বাঙালি কবি ও ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয় করে এশিয়ায় সাহত্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী হন।
[সম্পাদনা]আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
- ↑ https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/bg.html#People
- ↑ http://www.everyculture.com/wc/Afghanistan-to-Bosnia-Herzegovina/Bengalis.html
- ↑ [১]
- ↑ http://www.7days.ae/showstory.php?id=62077
- ↑ [২]
- ↑ [৩]
- ↑ [৪]
- ↑ US Census 2000 foreign born population by country
- ↑ ৯.০ ৯.১ Hasan, Rafiq (November 20, 2003), "4,000 Bangladeshis to return from Oman in December", The Daily Star খণ্ড: 4 (176), r হয়েছে: 2008-12-19
- ↑ [৫]
- ↑ [৬]
- ↑ [৭]
- ↑ [৮]
- ↑ [国籍別外国人登録者数の推移]
- ↑ History of Bangladesh. প্রকাশক: বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগৃহীত হয়েছে: ২০০৬-১০-২৬.
- ↑ বাংলাদেশে ৪০০০ বছর পুরোনো মানব বাসস্থানের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনের খনন, জিনহুয়া সংবাদ সংস্থা, মার্চ ২০০৬
- ↑ (১৯৮৯) প্রাচীন ইতিহাস, ১০০০ খ্রীঃপূঃ-১২০২ খ্রীঃ, জেমস হাইৎস্মান ও রবার্ট এল ওয়ার্ডেন: বাংলাদেশ:এ কান্ট্রি স্টাডি. লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস
- ↑ চৌধুরী, এ.এম.. Gangaridai. বাংলাপিডিয়া. প্রকাশক: এশিয়াটিক সোসায়টি অফ বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-08.
- ↑ শশাঙ্ক. বাংলাপিডিয়া. প্রকাশক: এশিয়াটিক সোসায়টি অফ বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: ২০০৬-১০-২৬.
- ↑ Islam (in Bengal). বাংলাপিডিয়া. প্রকাশক: এশিয়াটিক সোসায়টি অফ বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: ২০০৬-১০-২৬.
- ↑ History of the Bengali-speaking People নিতিশ সেনগুপ্ত, পৃ ২১১, ইউবিএস পাব্লিশার্স' ডিস্ট্রিবিউটার্স প্রাইভেট. লিমিটেড. ISBN 81-7476-355-4।
- ↑ Calcutta and the Bengal Renaissance - সুমিত সরকার Calcutta, the Living City-তে, সম্পাদকঃ সুকন্ত চৌধুরী, ভলিউম ১, পৃ ৯৫।
ভারতে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি
এই প্রবন্ধটি নিম্নোক্ত শ্রেণীর অংশ: |
রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতি ভারতে আইন রচনা ও সরকারি নীতিনির্ধারণের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে দেওয়া সাংবিধানিক পথনির্দেশিকা। ভারতীয় সংবিধানের চতুর্থ অংশে এই নীতিগুলি বর্ণিত হয়েছে। এগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়। তবে নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক অধিকার সুনিশ্চিত করে ভারতকে একটি জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই নীতিগুলির মাধ্যমে ভারতে রাষ্ট্র[১]পরিচালনার মৌলিক লক্ষ্যগুলি স্থির করা হয়েছে । ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি আইরিশ সংবিধানের সামাজিক নীতিগ্রহণের নির্দেশাত্মক আদর্শ এবং গান্ধীবাদের আদর্শ থেকে গৃহীত। এগুলি সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক কল্যাণ, বৈদেশিক নীতি এবং বিচারবিভাগীয় ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত।
নির্দেশাত্মক নীতিগুলি নিম্নলিখিত বিষয়শ্রেণীগুলির অন্তর্গত: গান্ধীবাদ, অর্থনৈতিক ও সমাজতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক, ন্যায় ও বিচারবিভাগীয়, পরিবেশ-সংক্রান্ত, সৌধরক্ষণ-সংক্রান্ত এবং শান্তি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত।[২]
পরিচ্ছেদসমূহ[আড়ালে রাখো] |
[সম্পাদনা]ইতিহাস
রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি আইরিশ সংবিধান থেকে গৃহীত। ভারতীয় সংবিধানের নির্মাতারা আয়ারল্যান্ডের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই আইরিশ সংবিধানের সামাজিক নির্দেশাত্মক নীতিগুলি ভারতীয় সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলির উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে।[৩] এই জাতীয় নীতির ধারণা পাওয়া যায় "ফরাসি বিপ্লবের সময় ঘোষিত নাগরিক ও মানবাধিকার সনদ এবং আমেরিকান উপনিবেশগুলির স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যে।"[৪] তাছাড়া ভারতীয় সংবিধান রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার সনদ দ্বারাও প্রভাবিত হয়।
১৯১৯ সালে রাওলাট আইন ব্রিটিশ সরকার ও পুলিশকে নির্বিচার গ্রেফতার ও আটক, বিনা-পরোয়ানায় তল্লাসি ও বাজেয়াপ্তকরণ, জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং গণমাধ্যম ও প্রকাশনা শিল্পের উপর ব্যাপক সেন্সরশিপের চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রদান করে। এই আইনের বিরুদ্ধে নাগরিক স্বাধীনতা ও সরকারি ক্ষমতা সীমিত করার দাবিতে সারা দেশে অহিংস আইন অমান্য গণআন্দোলন গড়ে ওঠে। স্বাধীনতাকামী ভারতবাসী এই সময় আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলন ও আইরিশ সংবিধানের ক্রমবিকাশের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। ভারতীয়রা মনে করেন, উক্ত সংবিধানের নির্দেশাত্মক নীতি স্বাধীন ভারতের সরকারকে ভারতের মতো একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশের জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি অপসারণে সহায়তা করবে।
১৯২৮ সালে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নেহেরু কমিশন ভারতের জন্য অধিরাজ্য বা ডোমিনিয়ন মর্যাদা এবং সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং সরকারি ক্ষমতার সীমাবদ্ধকরণের জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রস্তাব রাখে। ১৯৩১ সালে সেযুগের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মৌলিক নাগরিক অধিকার রক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক অধিকার রক্ষার (ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং অস্পৃশ্যতা ও ভূমিদাসত্ব প্রথা নিবারণ) জন্য প্রস্তাব কমিটি গঠন করে।[৫] ১৯৩৬ সালে এই কমিটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শ গ্রহণ করে। কংগ্রেস নেতৃত্ব দেশের জনসাধারণের মধ্যে জাতীয় স্বার্থরক্ষা ও বাধাবিপত্তি মোকাবিলায় দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সংবিধান থেকে মৌলিক নাগরিক কর্তব্যের ধারণাটি গ্রহণ করেন।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর নতুন রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার কাজ ড. রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে নির্বাচিতগণপরিষদের হাতে ন্যস্ত হয়। কংগ্রেস নেতারাই এই গণপরিষদের সিংহভাগ আসন অধিকার করে ছিলেন। তবে তাঁরা সংবিধান ও জাতীয় আইন রচনায় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও নানা দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন।[৬] উল্লেখযোগ্য, সংবিধানের খসড়া সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন ভীমরাও রামজি আম্বেডকর। বিভিন্ন বিষয়ের দায়িত্ব পাওয়া সমিতি ও উপসমিতিগুলির চেয়ারম্যান ছিলেন জওহরলাল নেহেরু ও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। ইতিমধ্যে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ সভা মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করে সকল সদস্য রাষ্ট্রকে নিজ নিজ সংবিধানে এই অধিকারগুলি স্বীকার করার আহ্বান জানায়। ভারতের সংবিধান রচনার কাজ তখন মাঝপথে ছিল।
খসড়া সমিতি দ্বারা রচিত মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশাত্মক নীতিগুলি সংবিধানের প্রথম খসড়া (ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮), দ্বিতীয় খসড়া (১৭ অক্টোবর, ১৯৪৮) ও তৃতীয় তথা সর্বশেষ খসড়ার (২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯) অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
[সম্পাদনা]বৈশিষ্ট্য
নির্দেশাত্মক নীতিগুলির উদ্দেশ্য এমন এক আর্থ-সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে নাগরিকেরা সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। তাছাড়া একটি জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাও এই নীতিগুলির উদ্দেশ্য। এই নীতিগুলি সরকারের প্রতি নজরদারির একটি মাধ্যম। তত্ত্বগতভাবে এই নীতিগুলিই সরকারের কাজকর্মে জনগণের নজরদারি ও সরকারের ব্যর্থতায় সরকারকে ভোট না দেওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি। নির্দেশাত্মক নীতি আদালতে অগ্রহণযোগ্য নাগরিক অধিকার। ১৯৭১ সালে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী আইনের মাধ্যমে ৩১-গ ধারার অন্তর্ভুক্তি ঘটিয়ে এই নীতিগুলির মর্যাদা বৃদ্ধি ঘটানো হয়।[৭] বলা হয়, কোনো আইন যদি মৌলিক অধিকারের উপর নির্দেশাত্মক নীতিকে স্থান দেয়, তাহলে শুধুমাত্র মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করছে, এই অভিযোগে সেই আইনকে খারিজ করা যাবে না। আবার মৌলিক অধিকার ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে সংঘাত বাধলে, নির্দেশাত্মক নীতি যদি সেক্ষেত্রে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের পক্ষে থাকে, তবে আদালতে নির্দেশাত্মক নীতিই গ্রাহ্য হবে।[৮] তাই নির্দেশাত্মক নীতি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হলেও দেশের সরকার পরিচালনার কাজে অপরিহার্য্য। রাষ্ট্রের[১] কর্তব্য এই নীতিগুলিকে আইনে পরিণত করা।[৯] তাছাড়া সব সরকারি সংস্থাই এই নীতিগুলির দ্বারা পরিচালিত। এমনকি বিচারকার্যে বিচারবিভাগকেও এই নীতিগুলি স্মরণে রাখতে হয়।[১০][১১]
[সম্পাদনা]নির্দেশসমূহ
নির্দেশাত্মক নীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্র[১] সামাজিক, আর্থিক ও রাষ্ট্রনৈতিক ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি সমাজব্যবস্থা গঠন করে জনকল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হবে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আয়-বৈষম্য কমাতে চেষ্টা করবে;[১২] অর্থনৈতিক সম্পদের সুষম বণ্টন ঘটাবে; শিশু ও মহিলাদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও শোষণের হাত থেকে রক্ষা করবে;[১৩] সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র সবাইকে বিনামূল্যে আইনি সাহায্য দেবে এবং খেয়াল রাখবে যাতে আর্থিক দুরবস্থার কারণে কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়;[১৪] গ্রাম পঞ্চায়েত গঠনের মাধ্যমে গ্রামীণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার সুনিশ্চিত করবে;[১৫] কাজ ও শিক্ষার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবে দুর্গতদের বেকার, বৃদ্ধ ও অসুস্থ অবস্থায় রাষ্ট্র সাহায্য করবে।;[১৬] এবং রাষ্ট্র কাজের শর্তাবলি মানবাধিকার-সম্মত করবে এবং প্রসূতিদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।[১৭]
রাষ্ট্র নাগরিকদের জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি ও সুন্দর জীবনযাত্রার সুযোগ দেবে। কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়তাদানও রাষ্ট্রের কর্তব্য হবে।[১৮]তাছাড়া রাষ্ট্র শিল্প পরিচালনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে।[১৯]
রাষ্ট্র সকল নাগরিকের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার চেষ্টা করবে;[২০] চোদ্দো বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।[২১] শিশুশিক্ষা-সংক্রান্ত এই নির্দেশটি ২০০২ সালের ৮৬তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত হয়।[২২] তফসিলি জাতি, উপজাতি ও অনুন্নত শ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক ও শিক্ষার স্বার্থের উন্নতিবিধান এবং তাদের সামাজিক অন্যায় ও অন্যান্য শোষণের হাত থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।[২৩]
রাষ্ট্র জনস্বার্থের উন্নতিকল্পে পুষ্টি ও জীবনধারণ পদ্ধতির উন্নতি ঘটাবে এবং ঔষধের প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য উদ্দেশ্যে মদ ও মাদক দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে।[২৪] গোরু-বাছুর প্রভৃতি হিতকারী গৃহপালিত পশু ও অন্যান্য দুগ্ধবতী ও ভারবাহী পশু হত্যা বন্ধ করবে।[২৫][২৬] রাষ্ট্র পরিবেশ, বন ও বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করবে।[২৭] ১৯৭৬ সালের ৪২ তম সংশোধনীর মাধ্যমে বন ও বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত নির্দেশটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২৮]
ঐতিহাসিক স্থান ও স্মারক এবং জাতীয় গুরুত্ব ও শিল্পমূল্যসম্পন্ন বস্তু ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা,[২৯] এবং শাসনবিভাগ থেকে বিচারবিভাগের পৃথকীকরণ[৩০] রাষ্ট্রের কর্তব্য হবে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি, অন্যান্য রাষ্ট্রের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক সম্পর্ক রক্ষা, আন্তর্জাতিক আইন ও সন্ধির প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি এবং সালিশির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মীমাংসার ব্যাপারে রাষ্ট্র সচেষ্ট থাকবে।[৩১]
[সম্পাদনা]প্রয়োগ
রাষ্ট্র নির্দেশাত্মক নীতি প্রয়োগে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সর্বশিক্ষা অভিযান ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চোদ্দো বছরের নিচে সব শিশুর শিক্ষায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালে অন্তর্ভুক্ত ৮৬তম সংবিধান সংশোধনীতে ২১-ক নামক যে নতুন ধারাটি অন্তর্ভুক্ত হয় তার লক্ষ্যই ছিল ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সব শিশুর বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।[২২] সমাজের দুর্বল অংশের কল্যাণার্থে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি নানা কল্যাণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছেলেমেয়েদের জন্য ছাত্রাবাস নির্মাণের কর্মসূচি।[৩২]ড. বি. আর. আম্বেডকরের স্মৃতিরক্ষার্থে ১৯৯০-৯১ বর্ষটিকে "সামাজিক ন্যায়বিচার বর্ষ" ঘোষণা করা হয়।[৩৩] সরকার চিকিৎসাবিদ্যা ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠরত তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবইও দিয়ে থাকে। ২০০২-০৩ সালে শুধু এই খাতেই সরকার ব্যয় করেছিল ৪.৭৭ কোটি টাকা।[৩৪] তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তদের নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা করতে ১৯৯৫ সালে নিষ্ঠুরতা বিরোধী আইন বলবৎ করে অপরাধকারীদের কঠোর শাস্তির বন্দ্যোবস্ত করা হয়।[৩৫]
গরিব চাষীদের জমির অধিকার দেওয়ার জন্য অনেকগুলি ভূমিসংস্কার আইন পাস হয়েছে।[৩৬] ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ২০,০০০,০০০ একরেরও (৮০,০০০ বর্গকিমি) বেশি জমি তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ভূমিহীন গরিবদের মধ্যে বিতরিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকিং নীতির উপর জোর দিয়ে এই সব এলাকায় ব্যাংক ব্যবস্থার সুবিধা প্রসারিত করা হয়েছে।[৩৭] ১৯৪৮ সালের ন্যূনতম মজুরি আইনের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা হাতে নেয়।[৩৮] ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইন বলবৎ করে ক্রেতাদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের সম-আয় আইনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষদের অভিন্ন বেতনব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।[৩৯] ২০০১ সালে চালু হওয়াসম্পূর্ণ গ্রামীণ রোজগার যোজনা গ্রামাঞ্চলে গরিব মানুষের কর্মনিযুক্তির ব্যবস্থা করেছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে থাকে।[৪০]
পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতের সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেই রয়েছে।[৪১] পঞ্চায়েতের প্রতিটি স্তরে এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।বিহারে অর্ধেক আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।[৪২][৪৩] ফৌজদারি বিধিতে কোনো অভিযুক্ত দারিদ্রের কারণে আইনজীবী নিয়োগে ব্যর্থ হলে, তার আইনি ব্যয় বাধ্যতামূলকভাবে সরকার বহন করে।[১৪] জম্মু ও কাশ্মীর ও নাগাল্যান্ড ছাড়া সকল রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগ পৃথক করা হয়েছে।[৩০][৩৪]
ভারতের বিদেশনীতিও নির্দেশাত্মক নীতির দ্বারা কিছুটা প্রভাবিত। অতীতে ভারত সকল প্রকার আগ্রাসনের বিরোধিতা ও রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা কর্মসূচিকে সমর্থন করে এসেছে। ২০০৪ সালের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৩৭টি রাষ্ট্রসংঘ শান্তিরক্ষা অভিযানে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে নিরাপত্তা পরিষদ ও সেনা-সহযোগিতাকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি সনদ গ্রহণে প্রধান ভূমিকা নেয় ভারত।[৪৪] ভারত পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে মত প্রকাশ করে।[৩৪]
[সম্পাদনা]সংশোধনী
নির্দেশাত্মক নীতিগুলিকে সংশোধন করতে হলে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। এর অর্থ, একটি সংশোধনী আনতে হলে উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি প্রয়োজন হয়। যদিও, ভোটদানকারী সদস্যদের সংখ্যা কি লোকসভায় কিরাজ্যসভায় সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কম হলে চলে না।
- ধারা ৩১-গ ১৯৭১ সালের ২৫তম সংবিধান-সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দেশাত্মক নীতির উন্নতিকল্পে নীতিসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়।[৪৫] এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দেশাত্মক নীতিগুলিকে মৌলিক অধিকারের উপরে স্থান দেওয়া হয় এবং মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করলেও যাতে নির্দেশাত্মক নীতি বাতিল না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়।[৮]
- ধারা ৪৫ শিশুদের বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করে।[২১] এটি ২০০২ সালের ৮৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত।[২২]
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
- ভারতের মৌলিক অধিকার, নির্দেশাত্মক নীতি ও মৌলিক কর্তব্য
- ভারতে মৌলিক অধিকার
- ভারতীয় সংবিধান
- ভারত সরকার
- ভারতীয় সংসদ
- ভারতীয় আইনে লেখ
[সম্পাদনা]পাদটীকা
- ↑ ১.০ ১.১ ১.২ The term "State" includes all authorities within the territory of India. It includes the Government of India, the Parliament of India, the Government and legislature of the states of India. It also includes all local or other authorities such as Municipal Corporations, Municipal Boards, District Boards, Panchayats etc. To avoid confusion with the term states and territories of India, State (encompassing all the authorities in India) has been capitalized and the term state is in lowercase.
- ↑ Constitution of India-Part IV Directive Principles of State Policy.
- ↑ Tayal, B.B. & Jacob, A. (2005), Indian History, World Developments and Civics, pg. A-39
- ↑ Pylee, M.V. (1999). India's Constitution. প্রকাশক: S. Chand and Company. (New Delhi). আইএসবিএন 81-219-1907-X.
- ↑ Gandhi, Rajmohan. Patel: A Life. পৃষ্ঠা- 206.
- ↑ UNI. Sardar Patel was the real architect of the Constitution. প্রকাশক: Rediffmail.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-05-15.
- ↑ 26th Amendment Act, 1971.
- ↑ ৮.০ ৮.১ Constitution of India-Part III Article 31C Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 37 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Tayal, B.B. & Jacob, A. (2005), Indian History, World Developments and Civics, pg. A-39 to A-40
- ↑ Sinha, Savita, Das, Supta & Rashmi, Neeraja (2005), Social Science – Part II, pg. 29
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 38 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 39 Directive Principles of State Policy.
- ↑ ১৪.০ ১৪.১ Constitution of India-Part IV Article 39A Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 40 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 41 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 42 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 43 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 43A Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 44 Directive Principles of State Policy.
- ↑ ২১.০ ২১.১ Constitution of India-Part IV Article 45 Directive Principles of State Policy.
- ↑ ২২.০ ২২.১ ২২.২ 86th Amendment Act, 2002.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 46 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 47 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Article 48
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 48 Directive Principles of State Policy.
- ↑ ২৭.০ ২৭.১ Constitution of India-Part IV Article 48A Directive Principles of State Policy.
- ↑ ২৮.০ ২৮.১ 42nd Amendment Act, 1976
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 49 Directive Principles of State Policy.
- ↑ ৩০.০ ৩০.১ Constitution of India-Part IV Article 50 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Constitution of India-Part IV Article 51 Directive Principles of State Policy.
- ↑ Tayal, B.B. & Jacob, A. (2005), Indian History, World Developments and Civics, pg. A-44
- ↑ Dr. Bhimrao Ambedkar. প্রকাশক: Dr. Ambedkar Foundation। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ ৩৪.০ ৩৪.১ ৩৪.২ Tayal, B.B. & Jacob, A. (2005), Indian History, World Developments and Civics, pg. A-45
- ↑ Prevention of Atrocities Act, 1995. প্রকাশক: Human Rights Watch। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ 40th Amendment Act, 1976
- ↑ Banking Policy and Trends (PDF). প্রকাশক: Union Budget and Economic Survey। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ Minimum Wages Act, 1948. প্রকাশক: Helplinelaw.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ Equal Remuneration Act, 1976. প্রকাশক: IndianLawInfo.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ Sampoorna Grameen Rozgar Yojana, 2001 (PDF). প্রকাশক: Ministry of Rural Development, India। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ Panchayati Raj in India. প্রকাশক: Poorest Areas Civil Society। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ 73rd Amendment Act, 1992
- ↑ Seat Reservation for Women in Local Panchayats (PDF). পৃষ্ঠাসমূহ- 2। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ Indian and United Nations. প্রকাশক: Permanent Mission of India to the United Nations। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-06-29.
- ↑ 25th Amendment Act, 1971.
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
Bodhisattwa Gautam vs. Subhra Chakraborty; 1995 ICHRL 69. প্রকাশক: World Legal Information Institute। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-05-25. Date of ruling 15 December 1995 Kesavananda Bharati vs. The State of Kerala; AIR 1973 S.C. 1461, (1973) 4 SCC 225. প্রকাশক: Wikipedia। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-05-25. In this case, famously known as the "Fundamental Rights case", the Supreme Court decided that the basic structure of theConstitution of India was unamendable.
|
|
No comments:
Post a Comment