Saturday, December 15, 2012

প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তিনি আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে? তাই যদি হয়, তাহলে একবারের জন্যও তিনি সংস্কারের বেসিক আধার ডিজিটাল নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না কেন?কেন্দ্র ভর্তুকি তুলে দেবার জন্য ক্যাশ সাবসিডি প্রকল্প চালূ করে এই অসংবৈধানিক বোইনী মানবাধিকার লঙঘনে একচেটিয়া করপোরেট আধিপাত্যের পাকা পোক্ত বন্দোবস্ত করছেন, এটা বোঝার জন্য তাঁর সমর্থক সুশীল সমাজের অনেক অর্থনীতিবিদ বিশেষক্জ্ঞরা রয়েছেন, তবূ এই প্রসঙ্গে তাঁর নীরবতার একমাত্র কারণ কর্তৃত্ব বা হেজেমনি যে বহিস্কার ও অস্পৃশ্যতার মনুস্মৃতি ব্যবস্থায় ভর করে বহুজন সমাজের চরম সর্বনাশ করে চলেছে, তাঁকে চির স্থাই বন্দোবস্তে পরিণত করতেই এই ডিজিটাল নাগরিকত্ব। মতুয়া ধর্মান্তরিত বাংলার অবিংসম্বাদী ব্রাহ্মন্যতন্ত্রের নেত্রীর যেমন চন্ডাল আন্দোলনের ঐতিহ্যে বা উদ্বাস্তু সমস্যায় কোনও স্বার্থ না থাকারই কথা, তেমনি আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে এই জেহাদের ইতিকথা ডিজিটাল নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে তাঁর নীরবতাই। পলাশ বিশ্বাস http://basantipurtimes.blogspot.in/

 প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তিনি আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে? তাই যদি হয়, তাহলে একবারের জন্যও তিনি সংস্কারের বেসিক আধার ডিজিটাল নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না কেন?কেন্দ্র ভর্তুকি তুলে দেবার জন্য ক্যাশ সাবসিডি প্রকল্প চালূ করে এই অসংবৈধানিক বোইনী মানবাধিকার লঙঘনে একচেটিয়া করপোরেট আধিপাত্যের পাকা পোক্ত বন্দোবস্ত করছেন, এটা বোঝার জন্য তাঁর সমর্থক সুশীল সমাজের অনেক অর্থনীতিবিদ বিশেষক্জ্ঞরা রয়েছেন, তবূ এই প্রসঙ্গে তাঁর নীরবতার একমাত্র কারণ কর্তৃত্ব বা হেজেমনি যে বহিস্কার ও অস্পৃশ্যতার মনুস্মৃতি ব্যবস্থায় ভর করে বহুজন সমাজের চরম সর্বনাশ করে চলেছে, তাঁকে চির স্থাই বন্দোবস্তে পরিণত করতেই এই ডিজিটাল নাগরিকত্ব। মতুয়া ধর্মান্তরিত বাংলার অবিংসম্বাদী ব্রাহ্মন্যতন্ত্রের নেত্রীর যেমন চন্ডাল আন্দোলনের ঐতিহ্যে বা উদ্বাস্তু সমস্যায় কোনও স্বার্থ না থাকারই কথা, তেমনি আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে এই জেহাদের ইতিকথা ডিজিটাল নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে তাঁর নীরবতাই

পলাশ বিশ্বাস


 ডিজিটাল নাগরিকত্ব আর্থিক সংস্কারের জন্য কত বেসি প্রয়োজনীয় এবং সংস্কারের এজন্ডায় তা সবচেয়ে উবরে,প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন,শনিবার রাজধানীতে ফিকির বাত্সরিক সম্মেলনে আধার কার্ডের মাধ্যমে নগদে ভর্তুকির পক্ষে জোরদার সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী। ফিকির সম্মেলনে নতুন ব্যবস্থায় দুর্নীতি কমবে বলে দাবি করেন তিনি।

তাহলে সংস্কারের যারা সত্যিই বিরোধিতা করছেন,তাঁরা নকল খুচরো বিরোধিতার লোকদেকানো রণকৌশল ত্যাগ করে কেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও আধার কার্ড করপোরেট প্রকল্পের বিরোধিতা করবেন না?

বিরোধীদের বাধা কাটিয়ে আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় কেন্দ্রীয় সরকার। শিল্পমহলকে এই বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। আজ দিল্লিতে বণিকসভা ফিকির সম্মেলনে তিনি বলেন, আর্থিক বিকাশের গতি ফেরাতে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ করেছে। ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে আর্থিক ঘাটতি কমিয়ে আনার পক্ষেও এ দিন সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। 

মনমোহনের সংস্কার সওয়াল
http://www.abpananda.newsbullet.in/video/country/31455-2012-12-15-10-38-43

শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার নীতিতে তিনি অনড়।তিনি পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
।তিনি এখন রাজধানী দিল্লীতে বাংলার জন্য লগ্নি টানার মিশনে যেমন ব্যস্ত ,তেমনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে দেশের নেতৃত্ব দেবার রাজনৈতিক প্রস্তুতিতেো সমান ব্যস্ত। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ বিল সংসদে পাশ হবার জন্য প্রস্তুত।প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী আশি শতাংশ চাষী রাজী থাকলেই অনিচ্ছুক চাষীদেরও জমি অধিগ্রহণ সম্ভব। এই আইন পাশ হলে, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের কি হবে,মা মাটি মানুষের সরকার এখনও বেবে দেখেছে, তেমন ইঙ্গিত নেই। অবশ্য মানুষের স্বার্থে এই সরকার নিযম নীতি বা কায়দা কানুনের যে খূব বেশী তোয়াক্কা করে, এমন দাবি শত্রুরাো করতে পারেন না। প্রতিটি সরকারি পদক্ষেপে তা রীতিমত প্রমাণিত

 তবু দিদি কিন্তু আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন, মনে রাখা দরকার। এখন প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তিনি আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে? তাই যদি হয়, তাহলে একবারের জন্যও তিনি সংস্কারের বেসিক আধার ডিজিটাল নাগরিকত্বের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না কেন?কেন্দ্র ভর্তুকি তুলে দেবার জন্য ক্যাশ সাবসিডি প্রকল্প চালূ করে এই অসংবৈধানিক বোইনী মানবাধিকার লঙঘনে একচেটিয়া করপোরেট আধিপাত্যের পাকা পোক্ত বন্দোবস্ত করছেন, এটা বোঝার জন্য তাঁর সমর্থক সুশীল সমাজের অনেক অর্থনীতিবিদ বিশেষক্জ্ঞরা রয়েছেন, তবূ এই প্রসঙ্গে তাঁর নীরবতার একমাত্র কারণ কর্তৃত্ব বা হেজেমনি যে বহিস্কার ও অস্পৃশ্যতার মনুস্মৃতি ব্যবস্থায় ভর করে বহুজন সমাজের চরম সর্বনাশ করে চলেছে, তাঁকে চির স্থাই বন্দোবস্তে পরিণত করতেই এই ডিজিটাল নাগরিকত্ব

 মতুয়া ধর্মান্তরিত বাংলার অবিংসম্বাদী ব্রাহ্মন্যতন্ত্রের নেত্রীর যেমন চন্ডাল আন্দোলনের ঐতিহ্যে বা উদ্বাস্তু সমস্যায় কোনও স্বার্থ না থাকারই কথা, তেমনি আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে এই জেহাদের ইতিকথা ডিজিটাল নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে তাঁর নীরবতাই

 সংঘ পরিবার এবং উগ্রতম ধর্ম জাতীযতাবাদের মুল উদ্দেশ্য একই, যা আবার মুক্ত বাজার ব্যবস্থা এবং জায়নবাদী করপোরেট সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নেরও মুল সিদ্ধান্ত। খুচরো ব্যবসায় বিদেশী লগ্নির বিরোধিতা চায়ীদের বা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়, বণিক আধারিত নিজ ভোটব্যান্ক ধরে রাখতেই, তড়ি ঘড়ি সংসদীয কূনাট্যে বিদেশী লগ্নিকে বৈধতা দেওয়ার গট আপ গেম শেষ হতে না হতেই যাবতীয় সংস্কার আইন পাশ করিয়ে নিতে রাজনৈতিক লড়াইএর তূরীয় আবহ তৈরি করে কর্তৃত্বের পক্ষ বিপক্ষ একজোট।  দিদি কি এতই সরল, যে রাজনীতির এই অন্ক গণিত বোঝেন না?খোলা বাজারের বিরোধিতা করে লগ্নি আকর্ষণ অসম্ভব মুখে স্বদেশী, উগ্রতম হিন্দুত্বের ভাবী প্রধানমন্ত্রী গুজরাত গণহত্যার মহানায়ক কিন্তু খোলা বাজারের ব্যাকরণ মেনেই চলেন  সংঘশাসিত মধ্যভারতে তাই করপোরেট স্বার্থে মুলনিবাসী উপজাতিদের বিরুদ্ধে উত্খাত যুদ্ধে রাজ্য, রাষ্ট্র ও জায়নবাদী করপোরেট একজোট- সলওয়া জুড়ুম আসল কথা, লোকে যাই বুঝুক, সংস্কারের অশ্বমেধী রথ চলছে গড়গড়িয়ে, তাকে থামাবার আদৌ কোনও চেষ্টা সর্বহারার অধিনায়কত্বে বিশ্বাসী বামপন্থীরাও উদারনীতির এই সুদীর্ঘ সময়ে করেননি  তাঁদেরই উত্তরসুরী একইভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদের উপাসক মুখ্যমন্ত্রীরও তাই কোনও দায় নেই সংঘ পরিবার যেমন ক্ষমতার উষ্মায়নে খুচরো ব্যবসায়ে লগ্নির বিরোধিতা করেছেন, দিদির সংস্কার বিরোধী জেহাদের গোত্রও তেমনই একই 

সংস্কারের পথে আরও কয়েক ধাপ এগোবে কেন্দ্র। শুক্রবার এই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি বলেছেন, দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই করবে। 

আর্থিক বিকাশের গতি বাড়াতে সরকার কী কী করেছে, তার খতিয়ান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, '২০০৮ সালে ভারতের অবস্থা খুব ভালো ছিল। কিন্তু বিশ্ব আর্থিক মন্দার প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। ইউরোপের পরিস্থিতি আমাদের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয়। আমেরিকা ও চিনেরও সমস্যা হচ্ছে। কবে এই পরিস্থিতি ঠিক হবে, তা বলা সম্ভব নয়।' কিন্তু তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার এর মধ্যেই আর্থিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, গত আর্থিক বছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৫.৯ শতাংশে নেমেছিল। তিনি জানিয়েছেন, ঘাটতি ৫.৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছেন। 

এ প্রসঙ্গেই তিনি সংস্কারের পক্ষে ফের সওয়াল করেছেন। এই অবস্থায় কী ভাবে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ নামিয়ে আনা সম্ভব, সে প্রশ্নের উত্তরে মনমোহন বলেছেন, 'বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনলেই আমরা এ কাজ করতে পারব।' মুদ্রাস্ফীতির হারও ৫-৬ শতাংশে নামিয়ে আনার উপর জোর দিয়েছেন তিনি।

বার বার অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম বলছেন, সংসদে এবং সংসদের বাইরে- সংসকার অব্যাহত থাকছেই  অর্থব্বস্থার জন্য ডাক্তার চিদম্বরমের প্রেসক্রিপ্সনে একের পর এক কড়া দাওয়াই  শিল্প জগতের নয়নের মণি তিনি, ঠিক তেমনই যেমনটি ছিলেন ও আছেন তাংর পূর্বসুরী উগ্রতম ধর্মজাতীয়তাবাদের সর্বাধিনায়ক চন্ডীউপাসক প্রহ্মমসন্তান প্রণব মুখার্জী  ব্রাহ্মণ কন্যা মমতা দিদি নিজ শ্রেণী স্বার্থবিরোধী সংস্কারবিরোধী যুদ্ধে সত্যিই অবতীর্ণ হবেন, বণিক মহল তেমন আশন্কা করছে না  মনে রাখা উচিত, করপোরেট মিডিয়া ও বাজারের সমস্ত শক্তির সমর্থনেই আজ মিনি ক্ষমতায়  অথচ মজার কথা হল, তিনি বাজার ও করপোরেট রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেই চলেছেন  এই যুদ্ধ নকল যুদ্ধ  মা মাটি মানুষের সরকার করপোরেট, বিল্ডার প্রোমোটার স্বার্থেই কাজ করে চলেছে লগ্নির খোঁজে দিল্লি গিয়েও সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রাজধানীতে বণিকসভা ফিকির সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমে তাঁর সরকার সম্পর্কে লাগাতার অপপ্রচার চলছে। 

বণিকসভা ফিকির এই  সম্মেলনেই মমতার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,
আর্থিক সংস্কারের গতি বাড়াতেই উদ্যোগী কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার এমনটাই ফুটে উঠল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকরের সংস্কারের সমালোচকদের `জ্ঞানহীন` ও `সেকেলে` বলে পাল্টা সমালোচনা করতেও ছাড়েননি মনমোহন সিং। 

এদিন প্রধানমন্ত্রী দাবি জানান, "২০০৮ সাল থেকে ভারতীয় অর্থনীতিতে স্বচ্ছলতা এসেছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দা ভারতীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। অত্যাধিক হতাশাজনক খবর দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, "ইউরোপের আর্থিক অবস্থা উদ্বেগজনক পরিস্থিতে রয়েছে। চীন ও মার্কিন অর্থনীতিতেও মন্দা। বিশ্বের পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না।"

ফিকির ৮৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তব্য রাখছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে বারতে থাকা ফিসক্যাল ডেফিসিট উদ্বেগের কারণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "রাজনৈতিক দিক থেকে কঠিন, সম্প্রতি এমন কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হয়েছে। যাঁরা সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা হয় জ্ঞানহীন নতুবা সেকেলে ভাবাদর্শের বসবর্তী হয়েই একাজ করেছেন।" 

"দেশকে আর্থিক মন্দা থেকে বের করে আনতে প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ করবে ইউপিএ সরকার। যাঁরা আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা হয় বিশ্ব অর্থনীতির বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ, নয়তো পুরনো কিছু ধ্যান-ধারণা আঁকড়ে রয়েছেন।" নয়াদিল্লিতে ফিকি-র সভায় এ কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিরোধীদের পাশাপাশি, নাম না করে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত দু-এক বছর অতিরিক্ত রক্ষণশীলতার জন্য তাঁর সরকার ইচ্ছে থাকলেও বিশেষ সংস্কারমুখী পদক্ষেপ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

পেনশন থেকে বিমা বিল। কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জোরালো আপত্তি জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর জন্যই বেশ কয়েকটি আর্থিক সংস্কারমুখী পদক্ষেপ বাতিল করতে হয়েছে সরকারকে। সেই ক্ষোভই শনিবার বণিকসভার সামনে উগরে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্যই যে এতদিন আর্থিক সংস্কার বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, নাম না করে তা পরিস্কার বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এফডিআই নিয়ে বিরোধিতার জেরে তৃণমূল কংগ্রেস ইউপিএ-র সঙ্গ ত্যাগ করার পরে এবার যে সংস্কার কর্মসুচি পালে হাওয়া লাগবে, সে কথাও স্পষ্ট করলেন মনমোহন সিং। 

পণ্য এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে ডিরেক্ট ট্যাক্স কোড চালু করার ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বলে ফিকি-র সভায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্র কর আদায়ের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, বিদ্যুত্‍ এবং পেট্রোপণ্যে ভর্তুকির জন্য রাজকোষে ঘাটতির বিষয়টিও যে সরকারের উদ্বেগের অন্যতম প্রধান কারণ, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। তবে দেশকে সামাজিক ও আঞ্চলিক ভাবে আর্থিক বিকাশের পথে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকার প্রয়োজনে নীতির পরিবর্তন করবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এফডিআই এবং ব্যাঙ্কিং ও বিমাক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতির বিষয়টিও আর্থিক বিকাশের জন্য অন্যতম পদক্ষেপ বলে দাবি করেছেন তিনি। সম্প্রতি যে সব আর্থিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তা দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির পরিমাণ আট থেকে নয় শতাংশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে বলে দাবি করেছেন মনমোহন সিং।

সরকার আগামী কয়েকদিনে আরও কয়েকটি কঠোর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবে৷ শুক্রবার লোকসভায় এই মন্তব্য করলেন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম৷ 

তার মতে, অসুখ করলে ওষুধ খেতে হয়৷ রোগ গুরুতর হলে কড়া দাওয়াইয়ের প্রয়োজন পড়ে৷ রোগে জর্জরিত ভারতীয় অর্থনীতিরও কড়া দাওয়াই প্রয়োজন ছিল৷ তেতো হলেও সেটা 'ভাল ওষুধ' ছিল৷ আগামী কয়েকদিনেও সেরকম কয়েকটি দাওয়াই পড়বে ভারতীয় অর্থনীতির উপর৷ 

তিনি বলেন, অসুখ কঠিন হলে মানুষকে চাঙ্গা করতে তেতো ওষুধের প্রয়োজন পড়ে৷ ওষুধের স্বাদ বিচ্ছিরি হলেও রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য তা দরকার৷ আগামী বছর অর্থনীতি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার জন্য কড়া দাওয়াই নামক 'আর্থিক সংস্কার' চালু হয়েছে দেশে৷ রুগ্ন অর্থনীতি এর ফলে আগামী বছর আবার বৃদ্ধির পথে পা বাড়াবে৷ 

তবে এই বৃদ্ধির পথে অন্তরায় দেশের চড়া মুদ্রাস্ফীতি৷ অর্থমন্ত্রীর মতে, পাইকারি পণ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার সরকারের উদ্বেগের কারণ নয়৷ কারণ গত দু'মাস ধরে তা নিম্নমুখী৷ 

শুক্রবার কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে প্রকাশিত তথ্য বলছে, নভেম্বরে পাইকারি পণ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৭.২৪ শতাংশ৷ অক্টোবরে তা ছিল ৭.৪৫ শতাংশ৷ কিন্ত্ত খুচরো পণ্যে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছে না৷ নভেম্বরে খুচরোয় মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯.৯০ শতাংশ৷ অক্টোবরে ছিল ৯.৭৫ শতাংশ৷ আর এটাই এখন সরকারের মাথাব্যথার প্রধান কারণ৷ 

মুদ্রাস্ফীতি চড়া থাকলে, ১৮ ডিসেম্বর ঋণনীতি পর্যালোচনার সময় সুদের হার নাও কমাতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ বৃহস্পতিবারই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কে সি চক্রবর্তী বলেন, আগামী দু'-তিন মাসে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বাগে আসবে৷ স্পষ্টতই ডেপুটি গভর্নরের ইঙ্গিত চলতি মাসে ঋণনীতি ঘোষণার সময় সুদের হার অপরিবর্তিতই রাখবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ এদিনও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন, এই ডিসেম্বরে সুদের হার না কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে আরবিআই৷ বরম জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি কমলে তখন সুদের হার কমতে পারে৷ চিদম্বরমের মতে, সুদের হার না কমালে দেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে না৷ থমকে থাকবে বৃদ্ধি৷ সে ক্ষেত্রে আরবিআই যদি সুদের হার না কমায় তা হলে বৃদ্ধিকে ত্বরাাণ্বিত করতে অন্য কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেবে হয়তো সরকার৷ 

চিদম্বরম জানিয়েছেন, ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির ৯ শতাংশের উপরে ছিল৷ গত বছর তা নেমে এসেছিল ৬.৫ শতাংশে৷ কিন্ত্ত এ বছর তা ৫.৫ বা ৬ শতাংশের পাশাপাশি থাকবে৷ যা গত ন'বছর সর্বনিম্ন৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে, বৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশের কাছাকাছি থাকতে পারে৷ শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটির প্রধান সি রঙ্গরাজন জানিয়েছেন, বৃদ্ধি ৫.৫ শতাংশের বেশি হয়তো হবে না৷ এ হেন অর্থনীতিকে তুলে ধরতে পারে আর্থিক সংস্কার৷ এবং সে কারণেই এ বছর কিছু 'অপ্রিয়' সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে এবং হবে সরকারকে৷ 

আর্থিক সংহতিকরণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকাররের আয় যদি আশানুরূপ না হয়, তা হলে রেটিং বা ঋণপাওয়ার যোগ্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে৷ বিভিন্ন রেটিং সংস্থা যদি ভারতকে 'জাঙ্ক' স্তরে নামিয়ে দেয় তা হলে বিশ্ব মহল থেকে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে ভারতের৷ পাশাপাশি, রাজকোষ ঘাটতিকে ৫.৩ মাত্রায় বেঁধে রাখতে সচেষ্ট সরকার৷ যে কারণে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে হবে৷ এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছরও ভর্তুকি খাতে তেল সংস্থাগুলিকে ২৮ হাজার ৫০০ টাকা দেবে সরকার৷ সরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার পুনরুজ্জীবনে ব্যয় হবে দু'হাজার কোটি টাকা৷ 


শিল্পপতিদের সম্মেলনে রাজ্যের জমিনীতি নিয়ে শিল্পমহলকে কোনও দিশা দেখাতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের জমি বিলে শিল্পের জন্য সরকারের হাতে জমি অধিগ্রহণের সংস্থান থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে নারাজ। রাজ্য সরকার কোনও অবস্থাতেই জমি অধিগ্রহণ করবে না বলে আজ ফের জানিয়েছেন তিনি। জমি সমস্যার কথা মাথায় রেখে শিল্পপতিদের ছোট শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।  



বৃহস্পতিবার, জমি অধিগ্রহণ বিলে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। নতুন বিলটিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি উদ্যোগের জন্য সর্বাধিক কুড়ি শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে সরকার। যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিরিশ শতাংশ জমি নেওয়ার অধিকার থাকবে সরকারের হাতে। 

জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে জমি মালিকরা বঞ্চিত হবেন। সমস্যায় পড়বে শিল্পমহলও। এই যুক্তিতেই জমি বিলে সরকারকে জমি অধিগ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে ভূমি সংস্কারের পর জোতের আয়তন ছোট হওয়ায় এখানে সরকারের সাহায্য ছাড়া শিল্পপতিদের পক্ষে সরাসরি জমি কেনা কঠিন। যদিও, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। শুক্রবার, কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে শিল্পপতিদের সম্মেলনে হাজির ছিলেন তিনি। সে খানে মুখ্যমন্ত্রী ফের জানান, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না রাজ্য সরকার। শিল্পপতিদের নিজেদেরই জমি কিনে নিতে হবে। সরকার শিল্পপতিদের জমি দিলে তা জমি ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া হবে। 

কিন্তু, জমি ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া জমিতে শিল্পমহলের চাহিদা মিটবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতার কাছে একলপ্তে বড় জমি পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান শিল্পমহল। 

জমি সমস্যা যে শিল্পমহলকে বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে তা মুখ্যমন্ত্রীর অজানা নয়। শুক্রবার তিনি শিল্পপতিদের বলেন, শুধুমাত্র বড় শিল্প নয়, ছোট শিল্পকেও লগ্নির ক্ষেত্র হিসাবে ভাবতে হবে। কয়েকদিন আগে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনেও একই কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহত শিল্পের জন্য এ রাজ্যে জমি মেলা যে দুরুহ, এ কথা বুঝতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী ছোট শিল্পের পক্ষে সওয়াল করছেন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

'শিল্পের জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে দেবে না। শিল্পপতিদের হয় ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে নিতে হবে নতুবা কিনতে হবে।' শনিবার দিল্লিতে ফিকির এক বার্ষিক অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের সামনে এই কথাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শিল্পপতিদের তরফে বলেন, 'জমি কেনার কোনও সমস্যা হবে না। জমির সমস্যা নিয়ে যে নেতিবাচক গুজব সৃষ্টি হয়েছে তাতে কান না দিয়ে আপনারা আসুন, দেখুন।'

এদিন এই অনুষ্ঠানে রাজ্যে পর্যটনশিল্পের প্রসারের উপরও বিশেষ জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পপতিদের তিনি বলেন, 'রাজ্যে সুন্দরবন ও দার্জিলিং-এর মতো সুন্দর জায়গা রয়েছে। সেখানে ভালো পর্যটনশিল্প গড়ে উঠতে পারে।' সুন্দরবনকে 'আফ্রিকান সাফারি' ও দার্জিলিংকে 'সুইজারল্যান্ড' গড়ে তোলার জন্য শিল্পপতিদের আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও জানান, এই সব জায়গাতে হোটেল গড়ে তুলুন। কালিম্পং, সান্দাকফুতেও পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেও বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব আনতে শিল্পপতিদের আহ্বান জানান তিনি। শুধু পর্যটনই নয়, বস্ত্রশিল্পের উপর বিনিয়োগ প্রস্তাব আনার বিষয়েও জোর দিয়েছেন তিনি। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যম তার উপরই বেশি জোর দিতে চাইছে। আপনারা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে বাংলায় আসুন।' তবে শিল্প বা ব্যবসা করার জন্য বিনিয়োগকারীদের জমি নিজেদেরই কিনতে হবে। সরকার জোর করে জমি অধিগ্রহণ করে দেবে না বল্ এদিন ফ্র স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক থেকে শিল্পের জন্য শিল্পপতিরা এ রাজ্যে জমি কিনতে পারবে বলে বনিকসভার এই অনুষ্ঠানে জানান মমতা।

রাজ্য সরকার গত দেড় বছরে ২ থেকে ৩টি টুরিজ্যম-পার্ক তৈরি করেছে। সবুজদ্বীপে পর্যটনশিল্প গড়ে তোলার জন্য ১০০একর জমি রয়েছে। ৩৪১টি কৃষাণ-বাজার তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কাজ প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছে। ৩৭টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ার কথা কাজও শুরু হয়েছে বলে, দেশি-বিদেশি শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের সামনে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী ইস্তাহারে যা বলেছিলেন তা গত দেড় বছরে তার ৯৯ শতাংশ করে দেখিয়েছেন বলে এদিন বণিকসভায় উপস্থিত শিল্পপতিদের সামনে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েতে

মহিলাদের সংরক্ষণ, 'জল ধরো, জল ভরো' প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। কিন্ত্ত সবটাই তাঁর হাতে নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়ণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া হলেও ঋণের জন্য অনুমোদন মিলছে না বলে কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ইতিমধ্যে বিধানসভায় বাম বিধায়কদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবার সর্বভারতীয় মঞ্চে সরব হলেন বামেরা। ঘটনার প্রতিবাদে আজ সংসদ চত্বরে  বিক্ষোভ দেখান বাম সাংসদরা। তাঁদের অভিযোগ, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে বারবার  ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। গত কয়েকদিনে রাজ্য বিধানসভার ঘটনায় স্পষ্ট, রাজ্যে ভেঙে পড়েছে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। গতকালই এই মন্তব্য করেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। 

মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় শাসক ও বিরোধীপক্ষের বিধায়কদের মধ্যে তুমুল মারপিটের জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ,  সেই সময় বাম বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রমকে হেনস্থা করেন তৃণমূলের দুই বিধায়ক  বেচারাম মান্না ও চন্দ্রনাথ সিং। দেবলীনা হেমব্রমকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন আরেক বাম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি। মাথা ফেটে যায় তাঁর। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সংসদের দুই কক্ষের সামনে ধর্নায় বসেন বাম সাংসদেরা। 

বামেদের অভিযোগ, শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে রাজ্যে জাল ছড়িয়েছে চিটফাণ্ড সংস্থাগুলি। বেআইনিভাবে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। 

চিট ফান্ডগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার বিধানসভায় সরব হয়েছিলেন বামেরা। যার থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বামেরা। 

বামেদের অভিযোগ, রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। বিধানসভার ঘটনাও তারই অন্যতম উদাহরণ। 

সংস্কার: মনমোহনের কটাক্ষ, জবাব মমতারও

নয়াদিল্লি: আর্থিক সংস্কারের ইস্যুতে বাকযুদ্ধে জড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শনিবার বণিক সংস্থা ফিকির বার্ষিক সাধারণ সভায় নাম না করেই তৃণমূল নেত্রীকে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। কোনও পরিস্থিতিতেই কেন্দ্র সংস্কারের পথ থেকে সরে আসবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, যাঁরা কেন্দ্রের আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করছেন৷ তাঁরা পুরনো ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী৷ মনমোহন মমতার নাম মুখে না আনলেও তাঁর এই সমালোচনার নিশানা যে তিনিই, তা বলাই বাহুল্য। কেননা আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতা করেই কেন্দ্রের সরকার ও ইউপিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন মমতা৷ ভরতুকিতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা বছরে কমিয়ে ৬টিতে নামিয়ে আনা থেকে শুরু করে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) অনুমোদন, বিমা সংস্কার বিল- কেন্দ্রের যাবতীয় সংস্কার কর্মসূচীর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন মমতা৷ মনমোহনের কটাক্ষের প্রতিক্রিয়ায় সেই অনড় মনোভাব বজায় রেখেই মমতার পাল্টা জবাব, কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি৷ মানুষের সঙ্গেই আছি৷ সাধারণ মানুষকে যদি পিছিয়ে পড়া বলা হয়, তাহলে আমিও তাই৷ 
তবে মমতা সরকার-জোট ছাড়ায় ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে নিষ্কন্টক পথে সংস্কারের ঘোড়া ছোটাচ্ছেন মনমোহন সিংহ৷ আজ ফিকি-র সভায় তিনি বলেছেন, এফডিআইতেই শেষ নয় সংস্কার৷ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ও বিনিয়োগ টানতে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র৷ খুচরোর পাশাপাশি বিমা ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও এফডিআই নিয়ে আগ্রহী কেন্দ্রীয় সরকার৷ আর্থিক ঘাটতি মেটানো ও পরিকাঠামো উন্নয়নেও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেশের আর্থিক ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, পরিকাঠামো-সহ ব্যাঙ্কিংউন্নয়নে নজর দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্য রাখা হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়ন, মুদ্রাস্ফীতি ও দারিদ্র দূরীকরণে।  গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, গরিব মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে নগদ ভর্তুকি প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছে,  আর্থিক বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে। আবার কোন কোন বিষয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্র ব্যবস্থা নিয়েছে, জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন,  পরিকাঠামো প্রকল্পে ছাড় দেওয়ার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণে স্বচ্ছতা আনতে নিয়ে আসা হয়েছে জমি বিল। ভারতে সংস্কার কর্মসূচীর নায়ক তাঁর ভাষণে দাবি করেছেন, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা চলছে। ইউরোপ ও চিনের আর্থিক স্থিতিশীলতায় তার প্রভাব পড়েছে।কিন্তু এই পরিস্থিতি যথেষ্ট দক্ষতা সঙ্গে সামাল দিয়েছে ভারত।


জমি না পেলে শিল্প হবে কোথায়, মমতাকে বণিক-প্রশ্ন

নয়াদিল্লি: বণিক সভার মঞ্চে জমি নিয়ে শিল্পপতিদের প্রশ্নের মুখে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জমি না পেলে শিল্প হবে কোথায়? তাঁকে সরাসরি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন শিল্পপতিরা৷ 

রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করবে না৷ শিল্পের জন্য জোর করে জমি নেবে না তাঁর সরকার৷ সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনে নিতে হবে শিল্প গড়তে আগ্রহী সংস্থাকেই, এই অবস্থানে অনড় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে না দিলেও শিল্পের পথে জমির কোনও সমস্যা হবে না বলেও তিনি দাবি করছেন৷ কিন্তু ফিকির বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁর এহেন তত্ত্বই কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়ল৷ শনিবার নয়াদিল্লিতে ফিকির বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ভাষণ দিয়ে চলে যাওয়ার পর আসেন মমতা৷ সঙ্গে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র৷ লগ্নি টানার মঞ্চ হিসেবে বণিকসভার অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করলেও মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের জন্য জোর করে জমি নেওয়া হবে না৷ জমি মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি জমি কিনতে হবে শিল্পপতিদেরই৷ প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই জমি অধিগ্রহণ বিল অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ বিল অনুযায়ী, বেসরকারি প্রকল্পের জন্য লাগবে ৮০ শতাংশ জমিদাতার অনুমতি৷ আর পিপিপি মডেলের জন্য চাই ৭০ শতাংশের সায়৷ যদিও মমতা জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের হস্তক্ষেপের বিরোধী৷ কিন্তু তাঁর আশা, এই শর্তেই রাজ্যে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন লগ্নিকারীরা৷ ভাষণে শিল্পপতিদের উদ্দেশে মমতা বলেন, রাজ্যে আসুন, বিনিয়োগ করুন! কিন্তু এই আহ্বানে ভরসা রাখতে না পেরে শিল্পপতিরা তাঁকে কঠিন বাস্তবের মুখে ফেলে দিলেন, জানতে চাইলেন, জমির ব্যবস্থা না হলে শিল্প হবে কীভাবে?
এদিকে নয়াদিল্লিতে যখন মুখ্যমন্ত্রী লগ্নি টানার চেষ্টায় ব্যস্ত, তখন তাঁর সরকারের জমি নীতিকেই কাঠগড়ায় তুলল প্রদেশ কংগ্রেস৷  কলকাতায় প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, যে জমি নীতি নিয়ে রাজ্য সরকার চলছে, তাতে অটল থাকলে রাজ্যে শিল্প আসবে না৷ ল্যান্ডব্যাঙ্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷ লগ্নি টানতে বণিকসভার আজকের অনুষ্ঠানে ফের সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর অভিযোগ, শুধুমাত্র খারাপ দিক তুলে ধরা হচ্ছে, অপপ্রচার চলছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে৷ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, সুন্দরবনে পর্যটনের উন্নয়নে 'আফ্রিকান সাফারি' তৈরি করবে রাজ্য৷ ২৯ তারিখ তিনি রাজারহাটে ইকো ট্যুরিজম পার্কের উদ্বোধন করবেন বলেও ঘোষণা করেন মমতা৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/31467-2012-12-15-11-56-32

সংস্কার নিয়ে সক্রিয় মনমোহন

নয়াদিল্লিঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন আদায় করে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণে সক্রিয় হয়ে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। 
কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ফরওয়ার্ড ট্রেডিং আইন সংশোধন নিয়ে মন্ত্রিসভার গত বৈঠকের আগে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল। এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে 'নোট অফ ডিসেন্ট' পাঠিয়েছিলেন মমতা। সেই নোট পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে ফের ওই বিল পেশ করতে চলেছে সরকার। 
মুকুল অবশ্য বৃহস্পতিবারের বৈঠক স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে কলকাতায় থাকার কারণে তাঁর পক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। সেই আর্জিতে সাড়া দিয়ে বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত যদিও বুধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, ভোট দিয়েও দিল্লি আসতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য বৈঠকের সময় সন্ধ্যা ছ'টা রাখা হয়েছে। 
শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে কিনা, এবং তাতে ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া যাবে কিনা তা সময় বলবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সময়ের দাবি মেনে রাজনৈতিক বাধা অতিক্রম করে তিনি যে সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, সেই বার্তাই দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেলের বিলগ্নিকরণের প্রস্তাবও অনুমোদন পেতে পারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। 
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি মমতার সমর্থন ঘোষণার পর মঙ্গলবারই এই প্রশ্নই উঠেছিল যে, তা হলে কি সংস্কার প্রক্রিয়ায় ফের রাশ টানবেন প্রধানমন্ত্রী। কেননা, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শুরু থেকে পেনশন, বিমা বিল, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্রের মতো সংস্কারের কর্মসূচিতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল। 
কিন্তু সরকার ও কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যে সব সংস্কার কর্মসূচির রূপায়ণ অপরিহার্য, রাজনৈতিক বাধা কাটিয়ে সেগুলি রূপায়িত করতে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তাঁর পাশে রয়েছেন সনিয়া গাঁধীও। মনমোহন তাঁকে বুঝিয়েছেন যে, আর্থিক বৃদ্ধি ছাড়া সামাজিক প্রকল্পগুলিতে অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব নয়। 
মন্ত্রিসভার এক বর্ষীয়ান সদস্যের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ করে দিয়েছে মনমোহনকে। প্রথমত, মুলায়ম সিংহ যাদব এখন কংগ্রেসের পাশে। দ্বিতীয়ত, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে এক ঘরে হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে তৃণমূলের সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বলতাও বোঝা গিয়েছে। ফলে আর্থিক সংস্কারের বিরোধিতায় তৃণমূল এখন পথে নামতে পারে, কিন্তু ইউপিএ ছেড়ে চলে যাবে না। 
আর সেটা বুঝেই ঝুঁকি নিতে চাইছে কংগ্রেস তথা সরকার। সেরে ফেলতে চাইছে শিল্পমহলকে বার্তা দেওয়ার কাজ। সরকারি সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে যে, অচিরে ডিজেলের মূল্য নির্ধারণের বিনিয়ন্ত্রণের পথেও হাঁটা হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী বুধবার বলেন, "কোনও সরকারই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না, যাতে মানুষের অসুবিধা হয়। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সরকারকে কিছু পদক্ষেপ করতে হয়। অতীতে রাজনৈতিক বাধা পেরিয়ে পেট্রোলের মূল্য নির্ধারণ বিনিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। সম্প্রতি দু'বার পেট্রোলের দামও বাড়ানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে তৃণমূল সরব হলেও সরকার কিন্তু পিছু হটেনি।"
প্রসঙ্গত, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিলের সংশোধন নিয়ে তৃণমূলের মূল আপত্তি হল, এর ফলে ফড়েদের বাড়বাড়ন্ত হবে। এবং তাতে পণ্যের দাম বাড়বে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, প্রস্তাবিত বিলে খাদ্যশস্যের ফাটকা বাজারের নিয়ন্ত্রক 'ফরওয়ার্ড মার্কেট কমিশন'কে আরও বেশি আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আসবে এবং বাজার আরও স্থিতিশীল হবে। 
আজ তাঁর সচিবালয়ে খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়েও দীর্ঘ বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং সংস্কারপন্থীদের দাবি মেনে এই বিলকে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলতে চেয়েছেন। সরকার ইতিমধ্যে সংসদে যে বিল পেশ করেছে, তাতে বিপিএল পরিবারগুলিকে মাসে ৩৫ কেজি এবং এপিএল পরিবারগুলিকে মাসে ১৫ কেজি খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তা সংশোধন করে সব এপিএল পরিবারকে খাদ্যশস্য না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তার পরিবর্তে বিপিএল সীমারেখার আশেপাশে থাকা পরিবারগুলিকে খাদ্য সুরক্ষার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে গরিব পরিবারগুলির ৭০ শতাংশই সস্তায় খাদ্যশস্য পাবেন।
যদিও অনেকেরই দাবি ছিল, খাদ্য সুরক্ষা সর্বজনীন করা হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সরকারের আর্থিক ক্ষমতা এখন সীমিত। ফলে যেটুকু করা সম্ভব প্রাথমিক ভাবে তা-ই রূপায়ণ করা হোক। প্রকৃত দরিদ্ররা খাদ্য সুরক্ষার সুবিধা পেলে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ হবে। আর সংস্কারের সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার ভারসাম্য রাখার বার্তাও দেওয়া যাবে।


http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/25821-2012-07-19-10-56-21

চিট ফান্ডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে সব পক্ষই



শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

অ্যালবার্তো দেল রিও, ফিলিপ 'সিএম পাঙ্ক' ব্রুকস, পল 'বিগ শো' রাইট - চেনেন এঁদের? বাড়ির ছোটোদের জিজ্ঞেস করুন, ওরা ঠিক চিনতে পারবে৷ ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেনমেন্টের (ডব্লুডব্লুই) সুপারস্টার এঁরা সবাই৷ লড়াই দেখিয়ে লোকের মন ভোলানে এঁদের পেশা৷ দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে লড়াইটা আসল না নকল৷ কখনও কখনও হাত-পা ভাঙে বইকি! যেমন, সম্প্রতি সিএম পাঙ্কের হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে৷ ইভান বোমের পা ভেঙেছে৷ এমনি আরও আছে৷

মঙ্গলবার ডব্লুডব্লুই-এর এমনই একটা শো হয়ে গেল বিধানসভায়৷ তবে, সেখানে কুশীলবরা ছিলেন সরকার ও বিরোধী দলের বিধায়করা৷
ঘটনার সূত্রপাত চিট ফান্ড নিয়ে বিরোধীদের আনা একটি মুলতুবি প্রস্তাবকে ঘিরে৷

কিন্ত্ত চিট ফান্ড নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব এখন কেন? বৃহস্পতিবার পূর্বতন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুন্ত চিট ফান্ড নিয়ে সিপিএম-এর মুখপত্র 'গণশক্তি'তে প্রতি-সম্পাদকীয় লিখে ফেললেন৷ ওই দিন সিপিএম-এর আরেক নেতা গৌতম দেব সাংবাদিক সন্মেলন করে অনেক অভিযোগ করলেন চিট ফান্ড ও তাদের প্রতি বর্তমান রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে৷

কিন্ত্ত, ১৯৭৭ থেকে ২০১১ অবধি দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এ রাজ্যের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল সিপিএম-নেতৃত্বাধীন বামপন্থী দলগুলির হাতে৷ আর, এ রাজ্যে চিট ফান্ডের বাড়বাড়ন্ত আজকে নতুন নয়৷ সোত্তর-আশির দশকে সঞ্চয়িতা, ওভারল্যান্ড ফিনান্স, ভেরোনা ওয়েলফেয়ার, রেনেসাঁ, রুবিস্টার সাধারণ লোকের কাছ থেকে টাকা তুলে গনেশ উল্টেছে৷ আজ যে চিট ফান্ডগুলির বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে তারাও ছত্রাকের মতো গজিয়ে উঠেছিল পাঁচ বছর আগেই৷ রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের মতে বর্তমানে রাজ্যে এই ধরণের সংস্থার সংখ্যা পাঁচশ'র কাছাকাছি৷ প্রত্যেকটি মূল সংস্থার ১০ থেকে ১৫টি শাখা সংস্থা রয়েছে৷


অথচ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য কোনও আইনই প্রণয়ন করে নি তত্কালীন রাজ্য সরকার৷ শেষমেশ ২০০৯ সালে ২৩ ডিসেম্বর বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ আমানতকারীদের (আথিক প্রতিষ্ঠানে) স্বার্থ সুরক্ষা বিল পাশ হয় এবং তিন বছর ধরে ওই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমতির অপেক্ষায়৷
মজার কথা হল, ওই বিলে রাষ্ট্রপতির শীঘ্র অনুমোদনের জন্য রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দলই - তা সে সিপিএম, সিপিআই, তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস - কখনও কোনও চেষ্টা করে নি৷ অথচ, রাজ্যে চিট ফান্ডের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম-সহ সব দলই বিভিন্ন জনসভায় গলা ফাটিয়ে তাঁদের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই সমস্ত সংস্থার কাছে টাকা রেখে সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়বে৷

ঠিকই৷ বেআইনিভাবে যে সমস্ত সংস্থা টাকা তুলছে বেশি প্রতিদান পাওয়ার লোভে সেখানে টাকা রাখলে বিনিয়োগকারীদের দুর্দশা তো বাড়বেই৷ যেমনটা হয়েছিল সঞ্চয়িতা, ওভারল্যান্ডে৷ এখন যেমন হল সাহারা, এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্সে৷

কিন্ত্ত এ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের এই কুমীরের কান্না সেই সমস্ত হতভাগ্য বিনিয়োগকারীদের যারা কষ্ট করে রোজগার করা টাকা খুইয়েছেন ওই সমস্ত অসত্ সংস্থায় বিনিয়োগকরে তাদের পক্ষে অবমাননাকর নয় কি?

নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলির তত্ত্বাবধানের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিভাগীয় প্রধান জানান, আগের সরকারকে আমরা একাধিকবার অনুরোধ করেছিলাম রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ৪৫(টি) অনুধারায় বিজ্ঞন্তি জারি করতে যাতে পুলিশ কারুর নালিশ ছাড়াই এই ধরণের কোনও সংস্থায় তল্লাশি চালাতে পারে এবং নথি বাজেয়ান্ত করতে পারে৷ কিন্ত্ত, প্রাক্তন বা বর্তমান - কোনও সরকারই তা করেনি৷

ওই বিজ্ঞপ্তি না থাকলে নালিশ ছাড়া পুলিশ কোনও সংস্থায় তল্লাশি চালিয়ে নথি, দস্তাবেজ বাজেয়ান্ত করতে পারে না৷

গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরও বলেন, চিট ফান্ড সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কেবল রাজ্য সরকার৷

এই সংস্থাগুলি যে উপায়ে টাকা তুলছে - অপরিবর্তন যোগ্য ডিবেঞ্চারের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট করে বা কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে - তাতে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির হাতেও ক্ষমতা আছে ওই সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা৷ সাহারা, রোজ ভ্যালি এবং এমপিএস গ্রিনারির ক্ষেত্রে তার উদাহরণ দেখা গেছে৷

কোনও ডিবেঞ্চার বা শেয়ারের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট করতে হলে ৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারীকে ওই ডিবেঞ্চার বা শেয়ার বিক্রি করা যায় না৷ অথচ, এই সংস্থাগুলি হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা তুলছে৷ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৫০ এর বেশি হলেই, ওই শেয়ার বা ডিবেঞ্চার শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত করানো বাধ্যতামূলক এবং সেক্ষেত্রে সংস্থাটি সেবির নিয়ন্ত্রণাধীন হবে৷

এমপিএসের মতো কালেকটিভ ইনভেস্টমেন্ট সংস্থা হলেও সেবির কাছে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে৷

কিন্ত্ত, বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? সাহারার উদাহরণই নেওয়া যাক৷ ১৯৭৮ সালে সংস্থাটি শুরু হয় মাত্র দু'হাজার টাকা মূলধন দিয়ে৷ ১ ডিসেম্বর বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংস্থাটির দেওয়া বিজ্ঞাপন অনুযায়ী সাহারার নেট-ওয়ার্থ বা মূলধনের পরিমাণ ৬৪,১৭৪ কোটি টাকা৷ অর্থাত্, গত ৩৪ বছরে প্রতি বছর ৭৮ শতাংশের বেশি ক্রমবর্ধমান হারে সংস্থাটির লাভ বেড়েছে! বিনিয়োগকারীদের বন্টিত প্রতিদান হিসাবে ধরলে, সাহারার প্রতি বছর মূলধন দ্বিগুণ হয়েছে গত ৩৪ বছর ধরে৷ এটা সম্ভব?

১৯৭৮ সালে চিট ফান্ড আইনত নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক্তিয়ার থেকে সরে এসে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের আওতায় সংস্থাগুলি বেআইনিভাবে টাকা তোলা শুরু করেছে৷ এই সংস্থাগুলির মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা একটা সহজ উপায়৷ তাই, কোনও রাজনৈতিক দল মুখে বললেও এদের বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে সচেষ্ট হয় না যতক্ষণ না জল মাথার ওপরে ওঠে৷

তাই, বিধানসভায় মঙ্গলবার যা ঘটল তাকে ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেনমেন্টের আরেক 'শো' ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? 

আদিবাসীদের জীবিকা বিপন্ন জানিয়ে জঙ্গলমহল থেকে চিঠি মহাকরণে

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৪ই ডিসেম্বর — মাত্র একদিন পর, রবিবার জঙ্গলমহলসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষাধিক আদিবাসীর জমায়েত হবে কলকাতায়। তাঁদের সেই সমাবেশের আগে মহাকরণে চিঠি পৌঁছেছে শালমহলের গ্রামের। চিঠিতে আশঙ্কা স্পষ্ট— কয়েক লক্ষ আদিবাসীর জীবন জীবিকার ভরকেন্দ্র প্রবল বিপন্ন। আগামী মরসুমে কেন্দুপাতা আর কিনতেই পারবে না মমতা ব্যানার্জির সরকার, পরিস্থিতি এমনই।

রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসকে চিঠি লিখেছেন বাঁকুড়ার রাইপুরের ডি আর এম এস লার্জ সাইজড মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (ল্যাম্পস)-র ম্যানেজার শশী ভূষণ প্রহরাজ। ৯ই ডিসেম্বর লেখা প্রহরাজের চিঠিটি মহাকরণে মন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে বৃহস্পতিবার। ইতোমধ্যে প্রহরাজ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু তাঁর তোলা সমস্যা এখনো আগের মতোই রয়েছে। তবে শুধু রাইপুরেই নয়, ঝাড়গ্রাম, বেলাপাহাড়ি, বান্দোয়ানসহ জঙ্গলমহলের আদিবাসী প্রধান এলাকার প্রতিটি ল্যাম্পসেই একই ছবি। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ড. পুলিনবিহারী বাস্কে এদিন বলেন, ''সরকারের কোন স্পষ্ট নীতি, পদক্ষেপ নেই। আদিবাসীদের জীবন জীবিকা, জমি, অধিকার ক্রমাগত আক্রমণের মুখে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কেবল প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কেন্দুপাতার এই সঙ্কট তারই প্রমাণ।''

শশীভূষণ প্রহরাজের চিঠিটির নং- ১৭৪/ডি আর এম এস। চিঠিতে প্রহরাজের আবেদন, ''মহাশয়, আপনার অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, ডি আর এম এস ল্যাম্পস লিঃ গ্রাম-রাইপুর, পোঃ-গড়রাইপুর, জেলা বাঁকুড়া ২০১২ মরসুমে সর্বমোট ৩৫৫০ (তিন হাজার পাঁচশো পঞ্চাশ) বস্তা ওজন-৭৭০ (সাত শত সত্তর) কুইন্টাল ফালি কেন্দুপাতা সংগ্রহ করেছে। উক্ত কেন্দুপাতা সংগ্রহের জন্য ল্যাম্পস পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন সমবায় নিগম লিমিটেড হইতে ৩১লক্ষ উনত্রিশ হাজার পাঁচ শত ক্যাশ ক্রেডিট গ্রহণ করেছে। কিন্তু কর্পোরেশন আহুত বিগত নিলামগুলিতে অদ্যাবধি কোন পাতা বিক্রি হয়নি।'' তাঁর আরো উদ্বেগ, ''......২০১৩ মরসুমে একদিকে যেমন কেন্দুপাতা সংগ্রহ কার্য ব্যাহত হইবে অন্যদিকে ল্যাম্পসের কার্যকরী এলাকাস্থ কেন্দুপাতা সংগ্রহ কার্যে যুক্ত ৫০০০আদিবাসী পরিবার তাঁদের নির্দিষ্ট আয় থেকে বঞ্চিত হইবেন। কেননা সাধারণত সংগ্রহকালীন সময়ে জঙ্গল এলাকায় বিকল্প কোন কাজের সংস্থান থাকে না।''

এই অভিজ্ঞতা শুধু রাইপুরের ওই ল্যাম্পসটিরই নয়। ঝাড়গ্রাম ল্যাম্পসের অ্যাকাউন্টেন্ট অনুপকুমার দে শুক্রবার জানিয়েছেন, ''এমন অবস্থা আগে কখনো হয়নি। আমাদের গুদামে পড়ে আছে ৮০০বস্তা কেন্দুপাতা। ওই ১৬০ কুইন্টাল পাতা কিনতে ল্যাম্পসের খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা। কিন্তু একটি টাকারও পাতা বিক্রি হয়নি। সরকারের তিনটি নিলামেও কোন লাভ হয়নি। বিক্রি যদি না হয়, সামনের মরসুমে পাতা কিনতে পারবো না। রাখার জায়গা নেই, টাকার সংস্থান নেই।'' 

কিন্তু এই সঙ্কটের কারণ কী? রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন সমবায় নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অতনু চ্যাটার্জির অজুহাত, ''ওডিশা এবং ঝাড়খণ্ডের থেকে পাতা বাজারে চলে আসায় আমাদের পাতা বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে। ওদের পাতার মানও ভালো। ফলে খোলাবাজারে কমদামে ভিন রাজ্যের পাতা বিক্রি হচ্ছে।'' অথচ রাজ্য সরকার দর্শক। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কেবলই প্রতিশ্রুতি এবং অদ্ভুত দাবি। যেমন গত ১৫ই আগস্ট, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দূরদর্শনের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ''কেন্দুপাতার দাম আমরা ৭৫টাকা করেছি।'' কিন্তু প্রকৃত তথ্য হলো, ২০১১-র কেন্দুপাতা সংগ্রহের দর হয়েছিল ৭৫টাকা। এক চাটায় দু'হাজার কেন্দু পাতা থাকে। রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের এক আধিকারিক এদিন জানিয়েছেন যে, ২০১০-এ চাটা প্রতি কেন্দুপাতার দর ছিল ৫০টাকা। ২০১১-তে রাজ্য সরকার ওই দর বাড়িয়ে করে ৭৫টাকা। 

রাজ্যে ১৫৫টি ল্যাম্পস আছে। প্রায় তিন লক্ষাধিক আদিবাসীর জীবন জীবিকা ল্যাম্পসগুলির উপর অনেকটা নির্ভরশীল। সর্বাধিক ল্যাম্পস রয়েছে পুরুলিয়ায়, ২৩টি। তারপরই পশ্চিম মেদিনীপুর। সেখানে রয়েছে ২১টি। মূলত আদিবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ল্যাম্পসগুলি বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে। তার অন্যতম আদিবাসীদের সংগৃহীত কেন্দুপাতা কিনে নিলামে বিক্রি করা। কেন্দুপাতা আদিবাসীরা সংগ্রহ করে ল্যাম্পসে বিক্রি করেন মার্চ-এপ্রিলে। ল্যাম্পস সাধারণত শারদীয়ার আগে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা বিক্রি করে দেয়। কখনো কখনো তা অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়ায়। বিক্রি হয় নিলামে। নিলামের যাবতীয় দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী উন্নয়ন সমবায় নিগম এই নিলাম পরিচালনা করে। এবার ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে গেছে, তবু পাতা বিক্রি করতে পারেনি সরকার। কেন? এই প্রশ্নের জবাবে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের এক অফিসার জানিয়েছেন, ''এই বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তিনবার নিলাম ডাকা হয়েছে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছিল না।'' 

মন্ত্রীর কাছে চিঠি এসেছে রাইপুরের যে ল্যাম্পস থেকে তার সচিব আনন্দ মাণ্ডি এদিন জানিয়েছেন, ''যত সময় যাবে, তত পাতার মান খারাপ হবে। দাম পড়বে। ফলে আখেরে আদিবাসীদের এবং তাঁদের এই ল্যাম্পসেরই ক্ষতি হচ্ছে। ল্যাম্পস রুগ্‌ণ হয়ে যাচ্ছে।'' তবে অতনু চ্যাটার্জি এদিন দাবি করেছেন, ''একদম হয়নি, তা নয়। কিছু বিক্রি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ১৮ই ডিসেম্বর নিলামে বাকিটা বিক্রি করতে। না হলে জানুয়ারিতে আর একটি নিলামে হবে বলেই আমরা আশা করছি।''

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33494


কোটি টাকা তুলে রাতারাতি উধাও স্বপ্ন দেখানো চিট ফান্ড

মধুসূদন চ্যাটার্জি

বাঁকুড়া, ১৪ই ডিসেম্বর— সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। এই টাকাতেই তোমার জীবনের বেকারত্বের অন্ধকার মুছে যাবে। কীভাবে? তারও রেডিমেড ফর্মুলা জানিয়ে দেওয়া হলো। ঐ টাকা জমা দিয়ে একজন নাম নথিভুক্ত করলে চার বছর ধরে প্রতি মাসে ২২০ টাকা করে যে কোনো কোম্পানির জিনিস, তা টুথপেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, গুঁড়ো দুধ, হেল্‌থ ড্রিঙ্কস যা কিছু চাইবে তা বিনামূল্যে পাবে। এরপর ৫বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এগার হাজার টাকা নগদ ক্যাশ ফেরত পাবে। অর্থাৎ ৫৫০০ টাকার বিনিময়ে গ্রাহক পা‍‌চ্ছেন ৫বছরে ২০ হাজার ৬০০ টাকা। রাতারাতি উন্নতির শিখরে উঠতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বাঁকুড়ার হাজারো যুবক। এন মার্ট নামে একটি চিটফান্ড বছর খা‍নেক আগে বাঁকুড়ায় এসে এই স্বপ্ন দেখিয়েছিল। এক একটা পরিবারের একাধিক সদস্য অর্থ রেখেছিলেন। ২-৩ মাস ২০০ টাকা করে তেল, সাবান, পেস্ট, ক্রিম পেয়েও ছিলেন। তারপর থেকে সব অন্ধকার। রাতারাতি এই চিটফান্ডটি পাততাড়ি গুটিয়েছে বাঁকুড়া থেকে। কোথায় তারা আছে কেউ জানে না। বাঁকুড়া থেকে কয়েক কোটি টাকা এক বছরেই এরা তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ। বেকার যুবক-যুবতী, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন যাঁরা সরল বিশ্বাসে টাকা রেখেছিলেন আজ তাঁরা দিশাহারা। একাধিক যুবকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে যাঁরা এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন, তাঁদের কাছে টাকা ফেরতের চাপ আসায় তাঁদের মধ্যে অনেকেই আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন বারংবার। প্রায় প্রতিদিনই বাঁকুড়ার নতুন চটী এলাকায় একটি বড় বাড়ির সামনে তাঁদের ভিড় করতে দেখা যায় যেখানে এন মার্ট কর্তৃপক্ষ বলেছিলো তারা বিশাল শপিং মল করবে। এখন দেখা যাচ্ছে, স্রেফ প্রতারণা করা হয়েছিলো বাঁকুড়ার মানুষকে। বলা হয়েছিল, গ্রাহকরা যদি দু'জন করে এই প্রকল্পে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে তারা প্রতি জোড়ার জন্য ৬০০ টাকা করে পাবেন। নিজেরা পরিবারের সমস্ত সম্বলটুকু ঢেলে অন্যকেও উৎসাহিত করেছিল বহু গ্রাহক। তারাও আজ সর্বস্বান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গুজরাটের গোপাল সিং শেখাওয়াতের এই চিটফান্ড কোম্পানিটি আজ বাঁকুড়ার হাজার হাজার মানুষের চোখের জল ফে‍‌লে, মানসিক ব্যাধি ধরিয়ে ম্যাজিকের চেয়েও দ্রুতগতিতে উধাও হয়ে গেছে। 

লাগামছাড়া প্রতারণার একটি উদাহরণ। কীভাবে নাম-বেনামী বিভিন্ন সংস্থা রাজ্যজুড়ে কারবার ফেঁদেছে, এ তারই এক কাহিনী। 

বাঁকুড়ারই আরেকটি উদাহরণ আর সি এম নামে একটি কোম্পানির কারবার। তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে দেড় হাজার করে টাকা নিয়ে ৩০০ টাকার একটি ব্যাগ, তাতে কিছু খুচরো জিনিস দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে কয়েক মাস আগে। এখানেও হাজারো পরিবার পথে বসেছেন। যে দোকান থেকে মালগুলি তোলা হতো সেই দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এদের ঠিকানা কেউ জানেন না বলে বহু গ্রাহকের অভিযোগ।

কয়েক দিন আগে জেলা পুলিস সুপা‍‌রের কাছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দেন বিশ্ব শান্তি মিশন নামে চিটফান্ডের সম্পর্কে। এই চিট ফান্ডের অফিস এখনও আছে ইন্দপুরে। এরা জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামে অর্থ সংগ্রহ করে যা‍‌চ্ছে নির্বিচারে। বলা হচ্ছে আদিবাসীদের পানীয় জল, শৌচাগারের নাকি ব্যবস্থা করা হবে। টাকা জমা রাখলে বেশি টাকাও নাকি ফেরত পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে গ্রাহকরা প্রতারিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। নির্বিকার সরকার প্রশাসন।

বাঁকুড়ার মানুষের স্মরণে আ‍‌ছে যে, ১০ বছর আগে বাঁকুড়া শহরে গজিয়ে উঠেছিলো ''রেভ্যুলিউশন ফর এভার''নামে একটি চিট ফান্ড সংস্থা। ৪৫০০ টাকা জমা দিলে কয়েক বছরের মধ্যে লক্ষপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো এরা। এদের মিটিং-এ নতুন কাউকে নিয়ে এলেই ৫০ টাকা করে দেওয়া হতো সরবরাহকারী ব্যক্তিটিকে। কোটি কোটি টাকা এখান থেকে তুলে রাতারাতি এরাও পাততাড়ি গোটায়। একাধিক পরিবারের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বাঁকুড়া শহরে দুই যুবক আত্মহত্যা করে। এই চিট ফান্ডটি যারা বাঁকুড়ায় পরিচালনা করতো তাদের কেউ কেউ আজ জমির দালাল। যাদের সঙ্গে এখন শাসকদলের দৈনন্দিন ওঠাবসা। 

বড় কয়েকটি চিট ফান্ডের এখন রমরমা। এই চিটফান্ডের একটা অংশ বর্তমান শাসক দলের বাঁকুড়ার বড়-মাঝারি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। নির্দিষ্টভাবে তাদের সেই দায়িত্বই দেওয়া আছে। পুজো থেকে শুরু করে খেলার বিজ্ঞাপনে, শহরের বড় বড় তোরণে তাদের প্রতিদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করেন। এদের দাপটে ডাকঘরে বা বিভিন্ন ব্যাঙ্কে স্বল্প সঞ্চয়ের হারও গত ১বছরে বাঁকুড়া জেলায় কমে এসেছে। এক এজেন্ট জানান ১০০ টাকা সংগ্রহ করলে এজেন্টদের নামা স্তরে কমিশন দিতে ৪০ টাকা ব্যয় করা হয়। ৬০ টাকা নিয়ে গ্রাহককে ৫ বছরে বা ৪ বছরে কী করে দ্বিগুণ দেবে? আসলে এর টাকা নিয়ে ওকে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রাক্তন চিট ফান্ডের কর্মকর্তা জানান, ১৯৫৬ সালের কোম্পানি অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রত্যেকটি নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্স কোম্পানিকে মেমোরেন্ডাম আর্টিক্যাল প্লেস করতে হয়। তাতে উল্লেখ করতে হয় কোম্পানি বাজার থেকে টাকা তুলবে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বাজারে যেসব কোম্পানি চিটফান্ড করে টাকা তুলছে তাদের বেশিরভাগই এই অনুমোদন নেওয়া নেই। তাছাড়া যে সমস্ত চিট ফান্ড গ্রাহকদের আর ডি, এফ ডি, এম আই এস করাচ্ছে তারা এই সব স্কিম তাদের ওয়েবসাইটেও দেখা‍‌চ্ছে না। দেখতে হবে যে স্কিমের টাকা বাজার থেকে তোলা হচ্ছে সেই স্কিম নেটে দেখানো হচ্ছে কিনা। কেন না, টাকা তুলতে গেলেই আর বি আই, এস ই বি আই (সেবি) ও আই আর ডি এর অনুমোদন চাই। কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হলেই ধরা পড়বে জালিয়াতি। তাছাড়া কোম্পানি যাদের এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ করছে সেই এজেন্ট রিক্রুটমেন্ট অফার কোথায় প্রকাশ করা হয়? কোথাও না। মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে কোটি টাকা তোলা হচ্ছে। 

রাজ্যের নানা প্রান্তের মতো বিপজ্জনক পরিণতি দেখতে শুরু করেছে বাঁকুড়াও।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33493


প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে 
সরকারের অপদার্থতায় 
তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত সংশয়

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ১৪ই ডিসেম্বর— রাজ্য সরকারের অপদার্থতার ফলেই প্রাইমারি শিক্ষকের ৫৫লক্ষের আবেদনকারীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে রইলো। আদৌও বিষয়টি ফয়সলা হবে কিনা তা নিয়েও দেখা দিয়েছে চূড়ান্ত সংশয়। ৩৪হাজার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে সরকারের অস্বচ্ছ বিজ্ঞাপনই অনিশ্চিত করে দিলো রাজ্যের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ। এরমধ্যে শিক্ষক নিয়োগের আর একটি প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। 

৩৪হাজার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গত ১৫ই অক্টোবর রাজ্য সরকার বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আবেদনকারীরা। তাঁদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। আবেদনকারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বক্তব্য ছিল, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশনের নির্দেশিকা না মেনে এই বিজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার। এছাড়াও তাঁদের আরো একটি আপত্তির বিষয় হলো প্রশিক্ষণহীনদের সঙ্গে একই পরীক্ষায় বসা নিয়ে। দুটি বিষয়ই এন সি টি ই-এর আইনবিরুদ্ধ। ফলে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয় সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে।

প্রায় ৩৫হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ করার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য। সেইমতো রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বিজ্ঞাপনও দেয়। সেই অনুযায়ী যাঁরা দু'বছরের ডি এল এড (ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন) পাস করেছেন তাঁদের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল সাধারণ আবেদনকারীদের সঙ্গে। এখানেই আপত্তি তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন হাজারের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত (যাঁরা ডি এল এড পাস) আবেদনকারী। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, সেই আরজির শুনানির পর বৃহস্পতিবার সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে দিলো হাইকোর্ট।

মূলত দুটি বিষয় নিয়ে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে গেল। সেগুলি হলো, এন সি টি ই-এর বিধি অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণহীন উভয়ই একই পরীক্ষায় বসতে পারে কিনা ? এছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অতিরিক্তি ২০নম্বর দেওয়া সম্ভব কিনা ? এই দুটি প্রশ্ন কী মেনে নেবে সরকার ? যদি এই দুটি প্রশ্ন মেনে নেয় তাহলে আরো একটি জলন্ত সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে রাজ্য সরকারকে। প্রাইমারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নম্বরের সুবিধা দেওয়া হলে এস এস সি'র আবেদনকারী বি এড ডিগ্রিধারীরাও এই দাবি তুলবেন এবং তাঁদের সেই দাবি ন্যায়সঙ্গত। কারণ, ২০১০সালের ২৩শে আগস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত এন সি টি ই'র জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার বলা রয়েছে, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষকদের যোগ্যতায় এক বছরের বি এড ডিগ্রি থাকতেই হবে। এই আইন দেখিয়েই এস এস সি'র আবেদনকারী বি এড ডিগ্রিধারীরা অতিরিক্ত নম্বরের দাবি তুলে হাইকোর্টে যাবেন। যেমনটি তুলেছেন প্রাইমারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আবেদনকারীরা। 

অন্যদিকে আরো একটি বিষয় নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন বি এড ডিগ্রিধারীরা। প্রশিক্ষণহীন আবেদনকারীদের সঙ্গে একই পরীক্ষায় বসতে আপত্তি জানিয়ে ইতোমধ্যে প্রাইমারি শিক্ষক শিক্ষণের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা স্থগিতাদেশ পেয়ে গেছেন। একই স্থগিতাদেশ চাইতে পারেন এস এস সি'র আবেদনকারী বি এড ডিগ্রিধারীরাও। প্রাইমারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের পক্ষে আইনজীবীরা যে বিধি খাঁড়া করে স্থগিতাদেশ আনতে পেরেছেন সেই বিধিকে হাতিয়ার করে বি এড ডিগ্রিধারীরা কোর্টে যেতে পারেন বলে প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

হাইকোর্টে প্রাইমারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আবেদনকারীদের অভিযোগ ছিল, এন সি টি ই-র নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সঙ্গে অন্যদের পরীক্ষা নেওয়া যায় না। কিন্তু রাজ্য সরকার সেটাই করছে। যা হাইকোর্টকে জানিয়েছে এন সি টি ই-র আইনজীবী আশা গুটগুটিয়া। তিনি কোর্টকে জানিয়েছেন, 'প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ শেষ না করে কখনই প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করা যায় না।' রাজ্যের প্রাইমারি শিক্ষা সংসদের আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত হাইকোর্টে বলেছেন, 'প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের স্বীকৃতি দিতেই তাঁদের অতিরিক্ত ২০নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদ।' এন সি টি ই-র বিধি উল্লেখ করে আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কোর্টকে বলেছিলেন, 'এভাবে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া নীতিবিরুদ্ধ।' বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত আবেদনকারীদের বক্তব্যকে আপাতগ্রাহ্য মনে করে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে দিয়েছে। 

এদিকে কোর্টের নির্দেশ মতো দু'সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। তা হতে হতে বড়দিনের ছুটি পড়ে যাবে। আদালত খুলবে ২রা জানুয়ারি। অর্থাৎ, চূড়ান্ত শুনানি শুরু হতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার কথা। রায় যার বিরুদ্ধে যাবে, সেই পক্ষই ডিভিসন বেঞ্চে আরজি জানাতে পারে। ফলে সহজে মামলা মিটবে না বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, রাজ্য সরকার যদি দু'বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী এবং সাধারণ প্রার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া কথা ঘোষণা করতো, তা হলে এই জটিলতার তৈরি হতো না। প্রসঙ্গত, নানা আইনী জটিলতার কারণে রাজ্যে ২০০৬ থেকে ২০০৯সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে রয়েছে। দুই বছরের বেশি হয়ে গেলো এস এস সি নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। যদিও দুই বছরের পর এস এস সি-এর বিজ্ঞাপন বের হয়ে প্রথম দফার পরীক্ষার ফলও প্রকাশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় আবেদনকারী বি এড ডিগ্রিধারীরা প্রাইমারীর উদাহরণ তুলে কোর্টের দ্বারস্থ হয় তাহলে সামগ্রিকভাবে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাবে।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=33480

রাজকোষ সামলাতে সংস্কারের পথে মমতা, ঋণ দিচ্ছে এডিবি

খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি থেকে শুরু করে পেনশন এবং বিমা বিল কেন্দ্রের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির কমবেশি সবেতেই আপত্তি রয়েছে তাঁর। কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নের জন্য রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে এখন ধীর পায়ে হলেও নিঃশব্দে সংস্কারের পথেই হাঁটছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের বেহাল আর্থিক দশা কাটাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (এডিবি) সহায়তা নিতে চলেছে মমতার সরকার। রাজ্যের আর্থিক উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচির জন্য ৩০ কোটি ডলার বা ১৬৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে এডিবি। আরও ২০ কোটি ডলার বা ১১০০ কোটি টাকা দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু এই ঋণ নিতে গেলে কিছু শর্ত মানতে হবে। কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে ঢিলেঢালা কর কাঠামো সংস্কারের সেই শর্ত স্বীকার করা নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাতারাতি করকাঠামো সংস্কারের এমন দাওয়াই এডিবি দেবে না, যাতে রাজ্যের অসুবিধা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূলত ৩টি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক, রাজস্ব বাড়াতে আরও উপায় খোঁজা। দুই, অপচয় বন্ধ করা। এবং তিন, ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকরী করা।

পশ্চিমবঙ্গের দুর্বল কর কাঠামো নিয়ে বাম আমল থেকেই সতর্কবার্তা দিচ্ছে কেন্দ্র। রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন সরকারকেও একই পরামর্শ দিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে রাজ্যকে বলা হয়েছে, রাজস্ব না বাড়ালে এক তরফা ভাবে আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, "গত সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, জলকর না বসালে রাজ্য জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) টাকা পাবে না। কারণ, এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্য যে পরিকাঠামো বা পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকা দরকার। কর বসিয়েই সেই টাকা তুলতে হবে।" মমতা তখন রাজি হননি। কিন্তু এখন বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে তিনি ক্রমশ ইতিবাচক পথে হাঁটছেন বলেই অর্থ মন্ত্রকের মত। বেশি জল ব্যবহারকারীদের উপরে কর বসানোর প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছে রাজ্য। অন্য দিকে ঘুরপথে হলেও বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধির ব্যাপারেও সায় দিয়েছেন তিনি। বাড়ানো হয়েছে দুধের দামও।

রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ফাঁকফোকর বন্ধে রাজ্য সরকারের এই 'সদিচ্ছা' দেখে কেন্দ্রও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। মমতার দাবি মেনে আসল ও সুদ পরিশোধের উপরে তিন বছরের স্থগিতাদেশ জারি করা হয়নি ঠিকই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক উন্নয়ন ও রাজস্ব আদায় ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য এডিবি যাতে সাহায্য করে সে জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছে কেন্দ্র। রাজ্যের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার পর গত ১১ জুলাই সেই প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে এডিবি। ৩০ অক্টোবর এডিবি বোর্ড এ ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। অবশ্য তার আগে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তা শোধরানোর উপায় বাতলানোর জন্য বেসরকারি পরামর্শদাতা সংস্থার মাধ্যমে টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিপোর্ট তৈরি করা হবে। সে জন্য এডিবি ইতিমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ করেছে।

রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের পথ খোঁজার এই চেষ্টা অবশ্য নতুন নয়। সাত বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঠিক একই ভাবে এডিবি-র সাহায্য নিয়ে রাজ্যের আর্থিক হাল ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন। সে জন্য প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্স ৬৯০ পৃষ্ঠার টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিপোর্টও তৈরি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রকল্প আর দিনের আলো দেখেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ডের জেরেই এ ব্যাপারে আর আগ্রহ দেখায়নি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।

আর্থিক দুরবস্থার জন্য বাম আমলের যে ঢিলেমি ও অকর্মণ্যতার অভিযোগ তোলেন মমতা, এডিবি-র প্রাথমিক রিপোর্টে পরোক্ষে তা-ই তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, "বছরের পর বছর রাজ্য সরকার আর্থিক বিষয়গুলি অবহেলা করেছে। সেই জন্য ২০১০-'১১য় পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ঘাটতি ছিল দেশের মধ্যে সর্বাধিক। পাশাপাশি, সেই বছর রাজ্যের নিজস্ব কর আদায়ের পরিমাণ ছিল রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৪.৬%। যেখানে জাতীয় গড় ৭.৩%।" এডিবি-র বক্তব্য, রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির যেটুকু সম্ভাবনা রয়েছে, তার পথও রুদ্ধ করছে এই দুর্বল কর ব্যবস্থা। পেনশন, বেতন ও সুদ দিতে গিয়েই ভাঁড়ার খালি হয়ে যাচ্ছে। ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছে রাজ্য। সেই পরিস্থিতিতে থেকে রাজ্যকে বের করে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছেন মমতা। শেষ পর্যন্ত কতটা করে উঠতে পারবেন, সেটাই এখন দেখার।

 

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%9C%E0%A6%95-%E0%A6%B7-%E0%A6%B8-%E0%A6%AE%E0%A6%B2-%E0%A6%A4-040052344.html


মমতা ব্যানার্জীর জাতীয় আকাঙ্খা?

সর্বশেষ আপডেট সোমবার, 1 অক্টোবর, 2012 16:22 GMT 22:22 বাংলাদেশ সময়
মমতা ব্যানর্জী ও শারদ ইয়াদব, একই মঞ্চে

মমতা ব্যানর্জী ও শারদ ইয়াদব, একই মঞ্চে

ভারতের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজধানী দিল্লীতে তৃণমূল কংগ্রেসের এক সমাবেশে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জী সোমবার ঐ ইস্যুতে দেশব্যাপী কর্মসূচি নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন৻

কিছুদিন আগেও যে সরকারের শরিক ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সেই সরকারকে আক্রমণ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মিস ব্যানার্জী বলেছেন যে আর্থিক সংস্কারের নামে আসলে দেশটাকে ব্ক্রিী করে দেওয়া হচ্ছে৻

তিনি বলেন, ''এই সরকার পুরো দেশটাকেই বেচে দিয়েছে – এই সরকার চলতে পারে না৻ যে সরকার দেশ বিক্রি করে দিতে পারে, জনগনই তাদের বিক্রি করে দেবে। এটাই গনতন্ত্রের নিয়ম – জনবিরোধী সরকারকে মানুষ ভোট দিয়ে সরিয়ে দিতে পারে৻''

সোমবারের সমাবেশের মূল ইস্যু যদিও ছিল খুচরো ব্যবসায় বিদেশী লগ্নির অনুমতি বা জ্বালানির দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, কিন্তু মমতা ব্যানার্জী তাঁর ভাষনে বার বার বলেছেন আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা।

ঘোষণা করেছেন বিভিন্ন রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস কিভাবে প্রতিবাদ সভা আয়োজন করবে৻

''নভেম্বরের ১৯-২০ তারিখে দিল্লীতে আবারও ধর্না হবে৻ ৪৮ ঘন্টার ওই ধর্না তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মসূচী৻ তারপরে একে একে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিং- মূলায়ম সিংয়ের সঙ্গে লক্ষ্ণৌতে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের সঙ্গে পাটনায় প্রতিবাদ সভা করা হবে৻ আমি যাব তামিলনাডু, হরিয়ানা প্রভৃতি রাজ্যেও৻''

''আমি দেখে নিতে চাই সাধারন মানুষ এই প্রতিবাদে কতটা সাড়া দেন,'' বলছিলেন মমতা ব্যানার্জী৻

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসবিরোধী প্রচার অভিযান শুরু করে মমতা ব্যানার্জী আসলে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে আরও বেশী প্রাসঙ্গিক করে তুলতে চাইছেন৻

কলকাতার রাজনৈতিক বিশ্লেষক রজত রায় বলছিলেন, ''২০১৪ সালের নির্বাচনে একটা নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করার চেষ্টা করছেন তিনি৻ কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে যে এখন আর তাঁর লাভ হবে না, সেটা তিনি বুঝে গেছেন৻''

''তাছাড়া কংগ্রেস নিজেও দুর্নীতি আর আর্থিক সংস্কারের বিষয়গুলি নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন৻ সেজন্যই মমতা ব্যানার্জী একটা বিকল্প তৈরি করার চেষ্টা করছেন৻''

মমতা ব্যানার্জীর সমাবেশে উল্লেখযোগ্যভাবে হাজির ছিলেন বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট এনডিএ-র আহ্বায়ক শারদ ইয়াদব৻

আর তাই কংগ্রেস নেতারা বলতে শুরু করেছেন যে মমতা ব্যানার্জী জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার জন্য বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র দিকেই ঝুঁকছেন৻

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন যে পশ্চিমবঙ্গের বিরাট মুসলিম ভোট ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে মমতা ব্যানার্জী হয়ত বিজেপি-র সঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন না৻

তিনি চেষ্টা করবেন কংগ্রেস আর বিজেপি–দুইয়ের থেকেই সমদূরত্ব বজায় রেখে একটা তৃতীয় বিকল্প গড়ে তুলতে৻

তবে বিশ্লেষক রজত রায়ের মতে, আঞ্চলিক দলগুলো মমতা ব্যানার্জীকে নিজেদের রাজ্যে কতটা জায়গা ছেড়ে দেবেন, তা নিয়ে একটা সন্দেহ থেকেই যায়৻


http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2012/10/121001_mk_mamata_ambition.shtml?print=1


সংস্কার নিয়ে দিশাহীন বিজেপি

মনমোহন সিংহের সরকার যে ভাবে সংস্কারের ঝড় তুলেছে, তাতে এখন উভয়সঙ্কটে বিজেপি নেতৃত্ব। 
দলের মধ্যে অরুণ জেটলি থেকে অরুণ শৌরি, এমনকী সভাপতি নিতিন গডকড়ী নিজেও খুচরো বিক্রি, বিমা, পেনশন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির জঙ্গি বিরোধিতার বিপক্ষে। জেটলি-শৌরিরা এর মধ্যে আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন, সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতা আজ আমজনতার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মনমোহন সিংহ যে পথে হাঁটছেন, তাকে কিন্তু মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকেই সমর্থন করছে। ভারতের মধ্যবিত্ত সমাজ প্রায় পঁচিশ কোটির। এদের মধ্যে বিজেপির একটা বড় ভোটব্যাঙ্ক আছে, যারা নিতিন গডকড়ীদের সংস্কারমুখী হিসেবেই দেখতে চায়। আর রয়েছে শিল্পমহল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমল থেকেই বিজেপি সংস্কারমুখী। সেই কথা মাথায় রেখে আজ তাদের সংস্কারের সমর্থনে দাঁড়াতে আবেদন জানিয়েছে বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম এবং সিআইআই। 
দলের একটি বড় অংশের বক্তব্য, শুধু কংগ্রেস বিরোধিতার জন্যই সংস্কারের বিরোধিতা করলে এদের সমর্থন হারাবে দল। তা ছাড়া বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যও কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসনিক দক্ষতার উপরে, যে দক্ষতার জন্য দরকার আর্থিক সংস্কার। যেমন সঙ্ঘকে তুষ্ট রাখতে নরেন্দ্র মোদী মনমোহন সরকারের বিরোধিতা করলেও ভাল ভাবেই জানেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করলে রাজ্যে যে উন্নয়নের ধারা শুরু করেছেন তিনি, তা আটকে যাবে। গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার সময়কে পিছনে ফেলে এখন তিনি উন্নয়নমুখী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ডাকেই গুজরাতকে বেছে নেন রতন টাটা। মোদীর চেষ্টাতেই গুজরাতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে অটো-হাব, যেখানে শুধু ন্যানো নয়, মারুতি, পুজোর মতো গাড়ি কারখানাও আসতে চাইছে। দেশি-বিদেশি শিল্পপতিদের নিয়ে নিয়মিত সম্মেলন করেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহান এবং ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহও ক্ষমতায় রয়েছেন উন্নয়নমুখী কাজের জন্য। হিন্দুত্ববাদী প্রচারের জন্য নয়।

সঙ্ঘের কাছে তাই জেটলি-শৌরিদের বক্তব্য, তাঁরা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সংস্কারের জঙ্গি বিরোধিতায় নামেন, তাতে বিজেপির লোকসানই বেশি হবে। তাঁদের মতের শরিক সুধীন্দ্র কুলকার্নি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, রাজনাথ সিংহ থেকে পীযুষ গোয়েল, অনেকেই। শুধু তাই নয়, দলের একটা অংশের মত, ইদানীং আরএসএস যে বিজেপির উপরে কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করছে, তা ঠেকাতে সংস্কারকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দলের অনেকেই এখন বুঝতে পারছেন, হিন্দুত্ববাদ আঁকড়ে থেকে দলের আর কোনও লাভ নেই।

বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিই এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। এখন সুশাসন এবং সংস্কারকে ধরে নতুন পথে চলতে হবে। তা হলে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিজেপি সরকার, সেই লাভ কেন্দ্রেও তারা তুলতে পারবে।
সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত কিন্তু চাইছেন নতুন করে স্বদেশি আন্দোলন। নাগপুরের সদর দফতর থেকে তাঁর সেই বার্তা দিল্লি আসার পর উৎসাহিত লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা। তাঁরা এখন মনে করছেন, মমতার দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বিজেপির উচিত এখনই রাজ্যওয়াড়ি আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া। যে দলে আছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহাও। 
নিট ফল, চরমে উঠেছে বিজেপির কোন্দল। দলীয় নেতৃত্ব নিজেদের অবস্থান নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলতে না পারায় তৈরি হয়েছে দিশাহীনতা। 
বিজেপি নেতাদের অনেকেই অবাক যশবন্ত সিনহার পরিবর্তনে। এনডিএ আমলে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বিমার বেসরকারিকরণে প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন যশবন্ত। তখন তার তীব্র বিরোধিতা করেছিল আরএসএস। দলের সভাপতি কুশাভাও ঠাকরে সঙ্ঘ এবং যশবন্ত সিনহার ঝগড়া মেটাতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী আডবাণীর। বিজেপির এক সংস্কারপন্থী শীর্ষ নেতার মন্তব্য, "সে দিনের সংস্কারবাদী যশবন্ত সিনহা আজ যেন মেধা পাটকর আর অরুন্ধতী রায় হয়ে উঠেছেন!"
দলের এই প্রবল দিশাহীনতার মধ্যে যশবন্ত সিনহা আমেরিকায়, রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছেন। আডবাণীও গত রাতে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ রাতে দিল্লি এসেছেন গডকড়ী। কাল বাকি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তিনি ভবিষ্যতের রূপরেখা ঠিক করবেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গডকড়ী কিন্তু বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিরোধিতা করে নিজে মুখ খোলেননি। কোনও শীর্ষ নেতাকে দিয়ে বিবৃতিও দেওয়াননি। সংসদে বিল এলে বিজেপি কী করবে, সে প্রশ্নেও নেতারা শর্তসাপেক্ষে সমর্থনের কথা বলেছেন। 
কিন্তু সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিজেপি নেতৃত্ব কি পারবেন দলকে সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতার পথে নিয়ে যেতে? 
সঙ্ঘপ্রধানের বার্তা আসার পরে আডবাণীরা, যাঁরা কংগ্রেস বিরোধিতাকে অগ্রাধিকার দিতে চান, তাঁদের যুক্তি, বিজেপি যতই সংস্কারপন্থী হোক, বিরোধী হিসেবে ভোটপ্রচারের সময় সংস্কারকে হাতিয়ার করা কখনওই সম্ভব নয়। এনডিএ আমলে বিলগ্নিকরণের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেস জোর দেয় সামাজিক দায়বদ্ধতায় আর নেহরুবাদী সমাজতন্ত্রে। তাই আডবাণীর প্রস্তাব, ভোটের আগে সংস্কার বিরোধিতার লাইন নিলে জনতার মন মিলবে। এনডিএ-র সম্প্রসারণেও অদূর ভবিষ্যতে সুবিধা হতে পারে।
বিজেপির মধ্যে আরএসএসের দাপট এখনও বেশি। তাই অনেকে মনে করছেন, জেটলি-শৌরি নন, যশবন্ত সিনহার লাইনই হবে পার্টি লাইন। কিন্তু অরুণ জেটলি দলের মধ্যে সংখ্যালঘু হলেও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা হিসেবে তিনি শীতকালীন অধিবেশনের আগে বিজেপির সংস্কার-বিরোধী প্রচারে রাশ টানতে তৎপর।
এখন প্রশ্ন, দিশাহীন বিজেপিতে কি সেই রাশ টানা সম্ভব হবে?

http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/29003-2012-10-06-03-25-59

No comments:

Post a Comment