Monday, December 24, 2012

দিল্লীতে গণধর্ষণ নিয়ে কংগ্রেস বিজেপি জোটের গট আপ গেম শীতের জমজমাট বাজারে জমে দই  বিক্ষোভ না কমায় আজ তাঁকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে হল জণগণ,সংবিধান ও সংসদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গণসংহার নীতি প্রময়নে মনুস্মৃত ব্যবস্থা কায়েম রেখে উগ্রদম হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তুলে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপে করপোরেট রাজ প্রতিষ্ঠিত করনেওয়ালা পুঁজিবাদী উন্নয়নের স্বপ্নের অবিসংবাদী তুখোড় ফেরিওয়ালা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে।সংরক্ষন বিল আটকাতে যে খেলা শুরু,মাঠে  দেখা যাচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণ এখন সংঘ পরিবারের হাতে।বিজেবির পালটা রাজনীতিতে কংগ্রেসী ক্ষমতার এখন চরম বিপর্যয়, তাই মাঠে নামতে হল বাজার অর্থনীতির ভগবানকে

পলাশ বিশ্বাস

কংগ্রেস বিজেপি জোটের গট আপ গেম শীতের জমজমাট বাজারে জমে দই  বিক্ষোভ না কমায় আজ তাঁকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে হল জণগণ,সংবিধান ও সংসদকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গণসংহার নীতি প্রময়নে মনুস্মৃত ব্যবস্থা কায়েম রেখে উগ্রদম হিন্দুত্বের পালে হাওয়া তুলে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপে করপোরেট রাজ প্রতিষ্ঠিত করনেওয়ালা পুঁজিবাদী উন্নয়নের স্বপ্নের অবিসংবাদী তুখোড় ফেরিওয়ালা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে।সংরক্ষন বিল আটকাতে যে খেলা শুরু,মাঠে  দেখা যাচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণ এখন সংঘ পরিবারের হাতে।বিজেবির পালটা রাজনীতিতে কংগ্রেসী ক্ষমতার এখন চরম বিপর্যয়, তাই মাঠে নামতে হল বাজার অর্থনীতির ভগবানকে

জাস্টিস মার্কন্ডেয় কাটজুর এই সময়ে লেখা মন্তব্যটি এই নাটকের মর্মার্থ উদ্দার করতে সাহায্য করবে।এই গুরুত্বপূর্ম লেখাটি পড়ে ঘটনাবলি সাজিয়ে নিন।যে দেশে আইনের শাসন নেই, ক্ষমতা, পুঁজি ও পেশীশক্তি শেষ কথা, সেখানে ধর্ষনের সাজা মৃত্যদন্ড হলেএ নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছেনা।আইন সবার জন্য সমান নয়।আইনের শাসন হলে ত বর্তমান আইনই যথেষ্ট। কিন্তু আইন ও ন্যায় প্রণালী যখন শ্রেণী স্বার্থ রক্ষা করতে কাজ করে, নিরপরাধকে বলির যুপকাষ্ঠে বলি দেওয়া হয়।সন্ত্রাসবিরোধী আইন কাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয় আমরা জানি। উপজাতিদের জন্য সংবিধানের পন্চম ও ষষ্ঠ শিডয়্যুলে আত্মনির্ণয়, স্বশাসন ও আদিবাসী অন্চলের যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারকে খারিজ করে দিয়ে রাষ্ট্র যেখানে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেখানে নূতন আইনেরই প্রাসঙ্গিকতা নেই বলতে হবে। ভারতে বিশ্বায়নের জায়নবাদী মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালূ করতেই শিখ গণসংহার, বাবরি ধ্বংস,গুজরাত গণহত্যা ও হিন্দুত্বের পুনরুত্থান। সেই আবহ ধরে রেখেই কংগ্রেস বিজেপি জোট দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার অভিযান অব্যাহত রাখতে এই নকল বিদ্রোহের রচনা করেছে। কিন্তু যেহেতু আন্দোলন এখন সংঘ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে, ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের টনক নড়েছে এবং এই জন্যেই রাষ্ট্রের প্রতি দায়দায়িত্বহীন প্রধানমন্ত্রীর এই সুচতুর সম্বোধন। লকাটজূর লেখাটি পড়ুন, জ্ঞানচক্ষু খুললেও খুলতে পারে

ভারত মানে কি দিল্লি



ভারত মানে কি দিল্লি
জারি আন্দোলন
মার্কণ্ডেয় কাটজু 

গণধর্ষণের প্রতিবাদে দিল্লিতে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে, একটা কারণে তা আমাকে অবাক করেছে৷ আমি ভেবে পাচ্ছি না ভারত মানে কি দিল্লি? দেশের কোথায় না ধর্ষণ, গণধর্ষণ হচ্ছে? রবিবার বিকেল পর্যন্ত ভোপালে ছিলাম৷ সেখানে শুনলাম, মধ্যপ্রদেশে গণধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহারে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে৷ কয়েক মাস আগে কলকাতায় পার্ক স্ট্রিটের মতো জায়গায় এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে গণধর্ষণ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত দিল্লির আন্দোলন গোটা দেশের নজর কেড়েছে৷ অন্যত্র এটা দেখা যায়নি৷ আন্দোলনকারীদের অনেকেই দাবি তুলেছেন, ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি হোক৷ আমি এই দাবি সমর্থন করি না৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় এই অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ আমি মনে করি এটাই যথেষ্ট৷ এর চেয়ে শত গুণ কঠোর সাজা দিলেও অপরাধটা কমবে না৷ এটা তাই সমাধানসূত্র নয়৷ 

ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও আমার মনে হয় দিল্লির মানুষের রাজপথে নেমে আসার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে যা থেকে রাজনৈতিক দল এবং সরকারের শিক্ষা নেওয়া উচিত৷ দেশে আরও অনেক গুরুতর সমস্যা আছে৷ যেমন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারি, কৃষক আত্মহত্যা৷ বিদর্ভে ২৫০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন৷ এ নিয়ে তেমন কোনও আন্দোলন চোখে পড়ছে না৷ যে মধ্যবিত্ত মানুষ ধর্ষণের প্রতিবাদে পথে নেমেছে, এই সমস্যাগুলি কিন্ত্ত তাদের জীবনেও বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথাই ধরা যাক৷ যে ব্যক্তি মাসে কুড়ি হাজার টাকা রোজগার করেন, তাঁর সেই টাকার মূল্য এখন দশ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে৷ কারণ, নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যের দাম দ্বিগুন, এমনকী তার বেশিও হয়েছে৷ এর ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জীবনযাত্রার মান ক্রমশ নিম্নগামী৷ বাজার মূল্যের সঙ্গে মানুষের আয় তাল মেলাতে পারছে না৷ ফলে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ সেই ক্ষোভই আছড়ে পড়ছে রাজপথে৷ তবে এই মানুষেরাও জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ৷ বাকিদের অবস্থা আরও সঙ্কটজনক৷ 

মানুষ রেগে আছে৷ এই গণপ্রতিবাদের ঘটনায় তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে৷ আমি মনে করি এর থেকেও গুরুতর সমস্যায় মানুষ ব্যতিব্যস্ত৷ সেগুলির সমাধান হলে এত মানুষ গণধর্ষণের ঘটনায় পথে নামত কিনা, আমার সংশয় আছে৷ এখানেই আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দল এবং সরকারের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে৷ যে আন্দোলন হচ্ছে তার পিছনে কোনও সাংগঠনিক উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত নজরে আসেনি৷ একটা স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই আন্দোলনের মধ্যে৷ এটা থেকে স্পষ্ট রাজনৈতিক দল এবং নেতানেত্রীদের উপর মানুষের আস্থা চলে গিয়েছে৷ নেতাদের ডাকে তাঁরা তাই সেভাবে সাড়া দিচ্ছেন না৷ তবে এই আন্দোলন সমস্যার সমাধান করতে পারবে বলে আমি মনে করি না৷ আন্না হাজারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করলেন, তাতে কি ভ্রষ্টাচার এক কণাও কমেছে? 

ধর্ষণ, গণধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ দমন করতে হলে চাই দ্রুত বিচার৷ আমি যখন হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে ছিলাম, তখন এই ধরণের বেশ কিছু অপরাধের মামলা আমাকে শুনতে হয়েছে৷ সুবিচার না পেলে মানুষ ক্ষিন্ত হবেই৷ সুবিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা এখানে উল্লেখ করতে চাই৷ পুলিশের যে অফিসার তদন্ত করে বলেছিলেন মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং অপরাধীদের গ্রেন্তার করতেও সক্ষম হয়েছিলেন সেই দময়ন্তী সেনকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছিল৷ আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাজটা ঠিক করেননি৷ এই ধরণের সিদ্ধান্তে প্রশাসনের উপর মানুষ আস্থা হারায়৷ আমি তাই কিছু দিন আগে বলেছিলাম দময়ন্তী সেনের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত৷ আজও একই কথা বলছি৷ 

(লেখক প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান)

স¤প্রতি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিকেলের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। আজ সোমবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, জঘন্য যে অপরাধ হয়েছে তাতে জনগণের ক্ষোভ যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত এবং তিনি সবার অনুভূতি বুঝতে পারছেন। তবে সংঘাত কোন ফল বয়ে আনবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, নয়াদিল্লীতেই সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। দিল্লির থানাগুলোতে প্রতি ১৮ ঘণ্টায় একটি ধর্ষণ এবং প্রতি ১৪ ঘন্টায় একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। আর সরকারের তথ্যানুযায়ী, গত বছর মোট দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩২৯ টি সহিংস অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৫০ টি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।


দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার তরুণীর শারিরীক অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। গতকাল তাঁর অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও ফের অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্‍সকরা। ওই তরুণীর দেহে ছড়াতে শুরু করা সংক্রমণ এবং রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা কমে যাওয়ার চিন্তিত তাঁরা। অস্ত্রোপচারের পর ফের তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। 

সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে কড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে নির্যাতিতা তরুণীকে। এরই মধ্যে রবিবার ফের অস্ত্রোপচার হয়েছে ওই তরুণীর। আপাতত ফের ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে তাঁকে। এতকিছুর মধ্যেও অবশ্য বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারাননি ওই মেডিক্যাল ছাত্রী। তাঁর এই অদম্য লড়াকু মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন চিকিত্‍সকরাও। 


দিল্লির ধর্ষণকাণ্ডে প্রতিবাদে মুখর কলকাতাও। আজও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল হয় মহানগরে। কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকে নয়, কলকাতায় প্রতিবাদ মিছিল হল স্বতঃপ্রণোদিত । স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের সঙ্গে কোথাও মিছিলে হাটলেন গৃহবধূরা, কোথাও আইটি অফিসের মহিলা কর্মীরা। 

দিল্লির মতো বিক্ষোভে উত্তাল না হলেও কলকাতাতেও আজ বের হয় প্রতিবাদ মিছিল। আমরা কি নিরাপদ? প্রতিবাদী মিছিলে জিজ্ঞাসা কলকাতার।  মোমবাতি নিয়ে পথে হাঁটেন তরুণ তরুণীরা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান এলাকা থেকে শুরু হওয়া মোমবাতি মিছিল শেষ হয় বি কে পাল আ্যাভিনিউয়ে। 

প্রতিবাদের আরেকটি মিছিল বের হয় বাঙ্গুর থেকে। মিছিলে বাঙ্গুরের স্থানীয় বাসিন্দারা যেমন অংশ নিয়েছেন, তেমনই আই টি সেক্টরে কর্মরত ভিন রাজ্যের বাসিন্দারাও ছিলেন মিছিলে। মিছিল শেষ হয় সল্টলেকের সিটি সেন্টারে। 


ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত। এজন্য কঠোর আইন প্রয়োজন। কলকাতায় আজ একথা বলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। রাজ্যের একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেছে চারটি বামপন্থী মহিলা সংগঠন। তাদের অভিযোগ রাজ্যে পরপর ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও নির্বিকার মুখ্যমন্ত্রী। 

ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তেদের জন্য কঠোর আইন দরকার। দরকার কড়া শাস্তির ব্যবস্থাও। দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনায় এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর অভিযোগ, এরাজ্যেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে নারী নিগ্রহ। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।  
 
দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। অথচ রাজ্যে বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের ঘটনায় নির্বিকার মুখ্যমন্ত্রী। এভাবেই রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন চারটি বামপন্থী মহিলা সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
 
নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার কনভেনশনের ডাক দেয় চারটি বামপন্থী মহিলা সংগঠন। কনভেনশন শেষে মৌলালি থেকে মল্লিক বাজার পর্যন্ত মিছিলে পা মেলান মহিলারা। এদিন দিল্লির গণধর্ষণ এবং রাজ্যের নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মেট্রো চ্যানেলে সিপিআইএমএল লিবারেশনের ছাত্র, যুব এবং মহিলা সংগঠনের তরফ থেকেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।


দিল্লিতে গণধর্ষণের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। কিন্তু এর মাঝেই ঘটে যাচ্ছে একেরপর এক পৈশাচিক ধর্ষণের ঘটনা। আজ এই রাজ্যেরই বারুইপুরে উঠল এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ। ঘটনাস্থল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুপুর। 

আজ ভোরে ফুলতলায় দমকল মোড়ের কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় এক মহিলাকে পড়ে থাকতে 
দেখেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা। তাঁরাই ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে উদ্ধার করেন। তাঁদের দাবি, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ওই মহিলা তাঁদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। এরপর মহিলাকে হাসপাতালে পাঠানোর পাশাপাশি, থানায় খবর পাঠানো হয়। 


দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পর মহিলাদের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশেষ অধিবেশন এবং সর্বদল বৈঠকের আর্জি নিয়ে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির দারস্থ হবে বিজেপি। আজ কোর কমিটির বৈঠক শেষে একথা জানান বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ। এর আগে সরকার বিরোধীদের এই দুই দাবিই নাকচ করে দিয়েছে। 
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বার আন্দোলনকারীদের কাছে শান্তি রক্ষার আর্জি জানালেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লি তরুণী ধর্ষণকাণ্ডে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের তীব্রতা যে জায়গায় পৌঁছেছে, তার ধাক্কা সামলাতে পরপর দু'দিন মুখ খুলতে হল প্রধানমন্ত্রীকে। গতকাল তিনি লিখিত বিবৃতি দিয়েছিলেন। তাতে বিক্ষোভ না কমায় আজ তাঁকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে হল। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কাছে এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার। এর বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভও স্বাভাবিক। তবে আন্দোলনের মধ্যে হিংসার প্রবেশ সমর্থন যোগ্য নয়।দিল্লীতে গণধর্ষণ নিয়ে 

সোমবার দুপুরে কোর কমিটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুষমা জানান সরকার সর্বদল এবং বিশেষ অধিবেশনে নাকচ করে দেওয়ায় বিরোধীদের পরবর্তী পক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতেই বৈঠকে বসে বিজেপি। আক্রমণাত্মক সুষমা বলেন, "সরকার সর্বদল বৈঠক চায় না। সংসদে বিশেষ অধিবেশনেও সম্মত নয়। আমি জানি না সরকার আসলে কী চায়!" 

কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বিরোধীদলনেত্রী বলেন, "গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমরা সংসদের দুই কক্ষেই এই ইস্যু তীলা সত্ত্বেও সরকার বিষয়টি নিয়ে কোনওরকম ব্যবস্থা নেয়নি।" ইন্ডিয়া গেটে পুলিসের ভূমিকারও কড়া সমালোচনা করেন সুষমা। সামগ্রিক বিষয়টি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে জানানোর জন্য মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ভবনে সময় চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আজ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন দিল্লিতে ২৩ বছরের তরুণীর নৃশংস ধর্ষণকাণ্ডে তিনি গভীর শোকাহত। তিনি আরও বলেন এই রকম নারকীয় ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে সেই বিষয় যাবতীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যও সমস্তরকম ব্যবস্থাও নেবে কেন্দ্র। 

প্রধানমন্ত্রী জানান দিল্লির গণধর্ষণের শিকার ২৩ বছরের ঐ তরুণীর শারীরিক অবস্থার খবর রাখছে সরকার।

চলন্ত বাসে তরুণীর গণধর্ষণের ঘটনা মানুষের মনে যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে তা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন তিনি। তবে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ যেভাবে ঘটছে, এবং তার জেরে পুলিস ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন মনমোহন সিং। এই পরিস্থিতিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। 

প্রসঙ্গত গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ দিল্লিতে উত্তরখণ্ডের ২৩ বছর বয়সী এক মেডিক্যাল ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। এরপর ওই ছাত্রী ও তার সঙ্গের ছেলেবন্ধুকে নৃশংসভাবে মারধর করে দুর্বৃত্তরা। বন্ধুটিকে রড দিয়ে বেধড়ক পেটায় এবং তাদেরকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়া হয়। ওই ছাত্রী এখন দিল্লির সফদারজং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস ব্যবস্থায় বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওই ছাত্রীর শরীরে দুই দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এরপর পর থেকেই ধর্ষকদের মৃত্যুদন্ড এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সপ্তাহজুড়ে ভারতজুড়ে মিছিল, সমাবেশ ও মোমবাতি প্রজ্বলন করে আসছে বিক্ষোভকারীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও চলছে বিক্ষোভ। 
এ ঘটনার পর নয়াদিল্লীতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয় গত শনিবার। এসময় পুলিশ বিভিন্ন সরকারি ভবনের চারপাশ ঘিরে রাখে। তবে রবিবার এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পুলিশের দাবি, তাদের ৬০ জন সদস্য আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রবিবার থেকে ইন্ডিয়া গেট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে ইন্ডিয়া গেট ও রাইসিনা হিলস এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিনের বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনস্থল পরিবর্তন করা হয়েছে। আজ সকাল থেকে দিল্লির কেন্দ্রস্থলে মেট্রোরেল স্টেশনের বাইরে ফের বিক্ষোভ শুরু হয় এবং এখনও চলছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নয়টি স্টেশন। অন্যদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রগতি ময়দান, বড়খাম্বা রোড, রাজীব চক, প্যাটেল চক, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট, উদয় ভবন, রেসকোর্স ও খান মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।

পক্ষান্তরে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধী নিজ বাসভবনে বৈঠক করেছেন। সোনিয়ার ছেলে ও কংগ্রেসের অন্যতম সেক্রেটারি রাহুল গান্ধিও এতে অংশ নেন। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছয় জনকে ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। 

নজিরবিহীন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দি করেও বিক্ষোভ আটকানো গেল না দিল্লিতে। ধর্ষণকাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে সকাল থেকেই বিক্ষোভ হয় যন্তরমন্তরের সামনে। বিভিন্ন রাস্তায় অস্থায়ী ব্যারিকেডকে উপেক্ষা করেই বিক্ষোভকারীরা যন্তরমন্তরে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। প্রধানমন্ত্রীর আবেদন যে কোনও কাজে আসেনি, সন্ধায় তা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনের পর আজ বিক্ষোভ হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডের বাসভবনের সামনে। যদিও এই বিক্ষোভকে কড়া হাতে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। হুঁশিয়ারি থেকেছে হুঁশিয়ারিতেই। সমস্ত হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করেই সুশীলকুমার শিন্ডের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে সরকারের কাছে আরও অস্বস্তির বার্তা পৌঁছে দিল বিক্ষোভকারীরা।

দিল্লি গণধর্ষণকে কেন্দ্র করে গত দু'দিনের তুমুল বিক্ষোভের পর আজ সকাল থেকে গোটা ইন্ডিয়া গেট চত্বরে ব্যারিকেড তৈরি করে দিল্লি পুলিস। ইন্ডিয়া গেট, রাজপথ, বিজয় চক, রাইসিনা হিল অঞ্চলকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢেকে ফেলা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিসবাহিনী। জারি রয়েছে ১৪৪ধারা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গেই প্রচারমাধ্যমকেও ওই অঞ্চলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাধা দেওয়া হয়েছে প্রাতঃভ্রমণকারীদেরও।  

নিরাপত্তার স্বার্থে রবিবারের মত আজকেও দিল্লিতে ৯টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে।

গতকাল ইন্ডিয়াগেট চত্বরে গণধর্ষণের প্রতিবাদ বিক্ষোভে দফায় দফায় জনতার সঙ্গে পুলিসের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিস আন্দোলনকারীদের উপর জলকামান, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করলে রণক্ষেত্রের রূপ নেয় গোটা ইন্ডিয়াগেট চত্বর। একজন পুলিস কর্মীসহ ১৪০ জন গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি সামলাতে সামগ্রিক ভাবেই ব্যর্থ হয় দিল্লি পুলিস।

রবিবারের দিল্লির বিক্ষোভে প্রতীবাদকারীদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়া এক পুলিসকর্মীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভেন্টিলেশনে ভর্তি করা হয়েছে। কারাওয়াল নগর পুলিস স্টেশনের কর্মী সুভাষ চাঁদ গতকাল শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে মোতায়েন ছিলেন, তখনই বিক্ষোভকারীদের আক্রমণের শিকার হন তিনি। আজ তিনি দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন। 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চাঁদের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে গতকাল থেকেই ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। দিল্লি পুলিসের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, "তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।" 

গতকাল দিনভর রাজধানীর ইন্ডিয়া গেটে বিক্ষোভ ও প্রদর্শন চলাকালীন দফায় দফায় পুলিস ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। এই ঘটনায় সুভাষ চাঁদ সহ আরও অনেক পুলিসকর্মী আহত হয়েছেন।

বোঝাই যাচ্ছে,এক মেডিক্যাল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের রাজধানী। জনতার বিক্ষোভ প্রশমণে রীতিমত জটিল সময় পার করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীনরা।


এর এক সপ্তাহ না যেতেই এবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক বিদেশি নারী এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩ বছরের এক শিশু ।


হিন্দি অনলাইন সংবাদপত্র নবভারত-এর বরাত দিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডট কম জানায়, গত শুক্রবারের দক্ষিণ দিল্লির মালবীয় নগরের হৌজরানী এলাকায় গণর্ধষণের শিকার হন আফ্রিকান পর্যটক। এছাড়া, গত সোমবার পশ্চিম দিল্লির সাগরপুরা এলাকার একটি বিদ্যালয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩ বছরের ওই শিশু ।


এ ঘটনার খবর দিল্লি পুলিশ প্রশাসনের ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে সর্বত্র হতাশা আর বিস্ময়েরও সৃষ্টি করেছে। খোদ রাজধানীতেই এরকম স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটতে থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার। ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিনধেকে নির্দেশ দিয়েছেন মনমোহন সিং।


এদিকে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী গণধর্ষণের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাগাদা দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২৫ বছর বয়সী আফ্রিকান ওই নারী দিনকয়েক আগে ভারত ভ্রমণে আসেন এবং দিল্লির মালবীয় নগরের হৌজরানী এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে দশটার দিকে তিনি তার ডেরায় ফিরছিলেন।


এসময় দুই যুবক তাকে পাকড়াও করে এবং ধর্ষণ করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ধর্ষকদের কাউকে চিনতে পারেননি তিনি। এসময় আক্রান্ত নারীর আর্তচিৎকার শুনে একজন পথিক ফোনে পুলিশকে খবর দেয়। শুক্রবার রাতেই হতভাগা ওই আফ্রিকান নারীকে স্থানীয় মদন মোহন মালবীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধর্ষণজনিত কারণে ভুক্তভোগীর বিশেষ অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দিল্লি পুলিশের ডিসিপি ছায়া শর্মা শনিবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভিকটিমের সঙ্গে ঠিকমত কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না।


তার সঙ্গে কথা বলার পরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এছাড়া মেয়েটির বক্তব্য বোঝার জন্য তার স্বদেশীদের ডাকা হয়েছে। তারা এসে যদি ধর্ষণের বিষয়টি পরিস্কার করে জানায়, তবে সে মোতাবেক অ্যাকশন নেওয়া হবে।


অন্যদিকে, গত সোমবার পশ্চিম দিল্লির সাগরপুরা এলাকার একটি বিদ্যালয়ে ৩ বছরের ওই শিশুটিকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও জানাজানি হয় দু'দিন পর। ধর্ষিত হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুটিকে অভিভাবকরা হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানেই চিকিৎসকরা জানান, ধর্ষণের শিকার হয়েছে শিশুটি। ধর্ষক ওই স্কুলেরই মালিকের স্বামী বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। এ ঘটনায় দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ডস রাইটের (ডিসিপিসিআর) চেয়ারম্যানকে অতিসত্ত্বর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নারী এবং শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী কিরন ওয়ালিয়া। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্কুলটিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।


এদিকে, দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিক্যাল ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় পুরো ভারত জুড়ে নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার আন্দোলন জোরালো আকার ধারণ করেছে। গতকাল শনিবার সকালে কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী নয়াদিল্লির রাইসিনা হিলের 'ইন্ডিয়া গেটে' বিক্ষোভ শুরু করে।


প্রতিবাদকারীরা রাষ্ট্রপতি ভবন ও সাফদারজাং হাসপাতালের সামনেও অবস্থান নেয়। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের প্রতিহত করতে রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া উত্তর ভারতে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংর্ঘষ বাধে। এসময় পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার এবং লাঠিচার্জ করে। প্রতিবাদকারীরা একটি পুলিশের ভ্যানে হামলা চালালে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ এসময় বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া সাবেক  সেনাবাহিনী প্রধান ভিকে সিং ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে দিল্লি পুলিশের ব্যর্থতার কারণ দর্শানোর কথা বলেন।


ব্যাঙ্গালোরে প্রতিবাদকারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ প্রর্দশন করে। এছাড়া জম্মু কাশ্মীরের কাছাকাছি একটি এলাকায় শিক্ষার্থীরা একটি মহাসড়ক অবরোধ করেছে। গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির সুস্থতা কামনা করে কলকাতার একটি মসজিদে বিশেষ দোয়া-মোনাজাতের আয়োজন করে স্থানীয় মুসল্লিরা।


এদিকে, সংসদীয় কমিটি আগামী ২৭ ডিসেম্বর একটি জরুরি সভার আহ্বান করেছে। ধর্ষণের বিষয়ে কোনো আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হবে। সভায় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র সচিব ও দিল্লি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।


ভারতের সংসদ সদস্যরা দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা ধর্ষণকারীদের কঠোর শাস্তি দাবি করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।

লোকসভায় প্রধান বিরোধীদল বিজেপির সিনিয়র নেতা সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ধর্ষণকারীদের ফাঁসি দিতে হবে। ধর্ষণ থামাতে কঠোর আইন পাস করারও দাবি জানান তিনি। রাজ্যসভায় কংগ্রেস নেতা রেনুকা চৌধুরী বলেছেন, 'ধর্ষণকারীরা এ  ধরনের কাজ করার পরও কিভাবে ভাবতে পারে যে,তারা ছাড়া পেয়ে যাবে?'

এদিকে,দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় বাসচালকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বাসচালক রাম সিং, তার ভাই এবং আরো চারজন সরাসরি জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে।   

গত রবিবার রাতে মুনিরকা থেকে দ্বারকা যাওয়ার জন্য একটি এসি বাসে ওঠেন ওই ছাত্রী ও তাঁর বন্ধু। তারা বাসে ওঠার ১০ মিনিটের মাথায় পাঁচ যুবক তরুণীকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে শুরু করে। পুরুষ বন্ধুটি বাধা দিলে তাকে মারধর করতে শুরু করে তারা। এরপর তারা তরুণীকে জোর করে বাসের কেবিনে নিয়ে গণধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য দু'জনের শরীর থেকে বেশির ভাগ জামাকাপড় খুলে নিয়ে দক্ষিণ দিল্লির মহিপালপুর ওভারব্রিজের ওপর তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। 


ইন্ডিয়া গেটের সামনে বিক্ষোভকারীদের দিনভর তাণ্ডবের পর রবিবার রাতে নড়েচড়ে বসল সরকার৷ দুঃখ প্রকাশ করে 'মর্মাহত' প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বললেন, মানুষের এই প্রতিবাদ সঙ্গত৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডেও ঘোষণা করলেন, মহিলাদের যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে কী পরিবর্তন আনা যেতে পারে, সে বিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখার জন্য জারি করা হল সরকারি বিজ্ঞন্তি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'এ দিন পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় আমি দুঃখিত... যা হয়েছে তা ভয়াবহ৷ আসুন, আমরা সকলে ওই মেয়েটির জন্য প্রর্থনা করি৷' দেশের সর্বত্র মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা হবে৷ তাঁর আবেদন, 'প্রতিবাদের পাশাপাশি সকলে শান্তি বজায় রাখুন৷' 

রাইসিনা হিল থেকে ইন্ডিয়া গেট, বিজয় চৌক থেকে ১০, জনপথ -- সব জায়গাতেই এ দিন দফায় দফায় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ হয়৷ পুলিশের দাবি, প্রতিবাদকারীদের মধ্যে থেকেই তাদের প্রথমে আক্রমণ করা হয়েছিল৷ 

অভিযোগ, ইন্ডিয়া গেটের কাছে যখন প্রতিবাদে মুখর জনতা সরকারের কাছে নিরাপত্তার দাবিতে সরব, তখন সেখান থেকে পুলিশের দিকে কেউ ইট ছোড়ে৷ পাল্টা আক্রমণ করে পুলিশও৷ শুরু হয় দুই পক্ষে হাতাহাতি৷ ইন্ডিয়া গেট থেকে প্রতিবাদকারীদের তাড়াতে ১৫০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে দিল্লি পুলিশ৷ সঙ্গে জল-কামান৷ 

কিন্ত্ত দমানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের৷ পুলিশের উপরও পাল্টা আঘাত আসতে থাকে৷ অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ নাকি রড নিয়ে আক্রমণ করেছিলেন পুলিশকে৷ বেশ কিছু পুলিশ কর্মীর আঘাত লাগে৷ পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার জানান তাঁদের ৬৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন৷ তার মধ্যে সুভাষ তোমর নামে এক কনস্টেবল আশঙ্কজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি৷ গুরুতর আঘাত লেগেছে এক জন ডিসিপি আর এক জন এসিপিরও৷ 

পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীদের মধ্যে মিশে ছিল গুন্ডারা৷ তারাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে৷ একই দাবি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরপিএন সিং-এরও৷ তবে তিনি এ দিন রাতে প্রতিবাদকারীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, 'পুলিশের ভুল হয়েছে৷ এ ভাবে আক্রমণ করা উচিত হয়নি৷ যে সব সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী৷' তবে যাঁরা এই সুযোগে অশান্তি বাধানোর চেষ্ট করেছেন, তাঁদের সহজে ছেড়ে দেওয়া হবে না৷ 

রবিবারের দিল্লি যে উত্তন্ত থাকবে, তা নিয়ে আগাম ধারণা সরকারের ছিলই৷ তৈরি ছিল পুলিশও৷ ফলে সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় সাতটি মেট্রো স্টেশন৷ উদ্দেশ্য, বিক্ষোভ স্থলে যাতে বেশি মানুষ জমায়েত হতে না পারেন৷ কিন্ত্ত লাভ হয়নি৷ ঘুরপথেই এসে হাজির হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইন্ডিয়া গেট, বিজয় চক-সহ আরও নানা জায়গায় এ দিন সকাল থেকেই ছিল ১৪৪ ধারা৷ কিন্ত্ত তা তোয়াক্কা না করে কাতারে কাতারে মানুষের জমায়েত হয়৷ ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বাবা রামদেবও৷ তাঁদের দলের লোকেদের সঙ্গেও পুলিশের অশান্তি হয়৷ অভিযোগ, তাঁদের ইন্ডিয়া গেটের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি৷ 

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ৷ বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলেকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে তাঁদের অভিযোগ জানাতে থাকেন৷ তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ৷ বাদ যায়নি অন্য বেশ কিছু গাড়িও৷ পুলিশের জিপও লক্ষ্য ছিল প্রতিবাদকারীদের৷ বিজয় চৌকের কাছে ২৬ জানুয়ারি উপলক্ষে কাঠের যে ব্যারিকেড বানানো হয়েছিল, ক্ষিন্ত জনতা তা ভেঙেচুরে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ বিকেল নাগাদ ইন্ডিয়া গেট চত্বর খালি করে দেয় পুলিশ৷ 

সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত৷ তিনি বলেন, নিরাপত্তার সব রকম ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ভিআইপি-দের নিরাপত্তা কমানোর আবেদনও জানান তিনি৷ তবে তাঁর দাবি, দিল্লিতে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দায় পুলিশ কমিশনারের৷ তাঁর পদত্যাগ করা উচিত৷ কিন্ত্ত তবে কমিশনার জানিয়েছেন, তিনি থাকবেন ও তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন৷ 

এক দিকে পুরো দেশ যখন তাঁর পাশে, তখন এ দিন ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে দিল্লির ওই নির্যাতিতা ছাত্রীর৷ সমস্যা বাড়ায় তাঁকে আবার ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়েছে৷ অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন৷ 

সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত বলছেন, 'এ উগরে ওঠা রাগ৷ বহু দিন ধরে যা জমা হচ্ছিল অল্প অল্প করে৷ এই ধর্ষণের ঘটনা একটা অনুঘটকমাত্র৷ এই স্বাভাবিক, স্বত:স্ফর্ত আন্দোলনে তাই আমি মোটেই আশ্চর্য নই৷' সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক কল্যাণ শঙ্কর মণ্ড বলছেন, এই প্রতিবাদ যুব সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে৷ রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে তারাই নেতৃত্ব দেবে৷' 


প্রতিবাদকারীরা রাষ্ট্রপতি ভবন ও সাফদারজাং হাসপাতালের সামনেও প্রতিবাদ শুরু করেছে। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের প্রতিহত করতে রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।  এছাড়া ভারতের উত্তরে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংর্ঘষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রতিবাদকারীদের উপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। এদিকে, প্রতিবাদকারীরা একটি পুলিশের ভ্যানে হামলা চালালে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। দিল্লীতে প্রতিবাদকারীরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে। পাশাপাশি তারা সরকার ও পুলিশকে নারীর নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি আহবান জানান।

ছাত্র, পেশাজীবী, নারীসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণীর মানুষ দিল্লীর রাস্তায় প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে পুরো ভারত জুড়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ব্যাঙ্গালোরে প্রতিবাদকারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ প্রর্দশন করে। এছাড়া জম্মু কাশ্মীরের কাছাকাছি একটি এলাকায় শিক্ষার্থীরা একটি মহাসড়ক অবরোধ করেছে।

গণধর্ষণের শিকার মেয়েটির সুস্থতা কামনা করে কলকাতার একটি মসজিদে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। এদিকে সাফদারজাং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ডেন্টাল ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে তার প্লাটিলেটের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে বলেও চিকিৎসকরা জানান। তার লিভারে পুনরায় ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্ত ছয়জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন বাস চালক রাম সিং, তার ভাই মুকেশ, ভিনয়, ফল বিক্রেতা কালু ও একজন ব্যায়ামাগারের সহকারী।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রার্থনা করা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধান সংবাদ মাধ্যমকে জানান। এছাড়া দিল্লী পুলিশ শনিবার হাইকোর্টে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানা যায়।

সংসদীয় কমিটি আগামী ২৭ ডিসেম্বর একটি জরুরি সভার আহবান করেছে। ধর্ষণের বিষয়ে কোনো আইনের পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে বিষয়ে সভায় আলোচনা করা হবে। সভায় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র সচিব ও দিল্লী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।


ধর্ষকদের নপুংসক করার দাবি : ভারতের ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন বা এনসিডব্লিউম্বর চেয়ারপারসন ধর্ষণকারীদেরকে নপুংসক করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।  গত রবিবার রাতে মুনিরকা থেকে দ্বারকা যাওয়ার জন্য একটি এসি বাসে ওঠেন ২৩ বছর বয়সী ওই কলেজ ছাত্রী ও তার বন্ধু। তারা বাসে ওঠার ১০ মিনিটের মাথায় পাঁচ যুবক তরুণীকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। পুরুষ বন্ধুটি বাধা দিলে তাকে মারধর করতে শুরু করে তারা। এরপর তারা তরুণীকে জোর করে বাসের কেবিনে নিয়ে গণধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর প্রমাণ লোপাটের জন্য দু'জনের শরীর থেকে বেশির ভাগ জামাকাপড় খুলে নিয়ে দক্ষিণ দিল্লীর মহিপালপুর ওভারব্রিজের ওপর তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এ বর্বরোচিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এ পর্যন্ত ছয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।

দিল্লী কী ধর্ষকের নগরী! : রাজধানী দিল্লীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় সর্বজনীন প্রতিবাদ-বিক্ষোভে এখন বলা যায় অগ্নিগর্ভ সমগ্র ভারত। জনতার বিক্ষোভ প্রশমনে রীতিমত জটিল সময় পার করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীনরা। এরই মধ্যে দিল্লীতেই এবার এক বিদেশী নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। হিন্দি অনলাইন সংবাদপত্র নবভারত শনিবার এ খবর দিয়ে জানিয়েছে, গত শুক্রবারের ওই ঘটনার শিকার নারী আফ্রিকার নাগরিক। ন্যক্কারজনক এ ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ দিল্লীর মালবয়ীয় নগরের হৌজরানী এলাকায়।এ ঘটনার খবর দিল্লী পুলিশ প্রশাসনের ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে সর্বত্র হতাশা আর বিস্ময়েরও সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার রাতেই হতভাগা ওই নারীকে স্থানীয় মদন মোহন মালবীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধর্ষণজনিত কারণে ভুক্তভোগীর বিশেষ অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দিল্লী পুলিশের ডিসিপি ছায়া শর্মা শনিবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভিকটিমের সঙ্গে ঠিকমত কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তার সঙ্গে কথা বলার পরই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এছাড়া মেয়েটির বক্তব্য বোঝার জন্য তার স্বদেশীদের ডাকা হয়েছে। তারা এসে যদি ধর্ষণের বিষয়টি পরিষ্কার করে জানায়, তবে সে মোতাবেক অ্যাকশন নেয়া হবে। ডিসিপি ছায়া আরও জানান, দুপুরের মধ্যেই মেডিকেল রিপোর্ট চলে আসবে। এ সম্পর্কে এত তাড়াতাড়ি কিছু বলাটা ঠিক হবে না। ঘটনা তদন্তে মালবীয় নগর পুলিশ ব্যস্ত রয়েছে। এদিকে, পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২৫ বছর বয়সী ওই নারী দিনকয়েক আগে ভারত ভ্রমণে আসেন এবং দিল্লীর মালবীয় নগরের হৌজরানী এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে দশটার দিকে তিনি তার ডেরায় ফিরছিলেন। এ সময় দুই যুবক তাকে পাকড়াও করে এবং ধর্ষণ করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ধর্ষকদের কাউকে চিনতে পারেননি তিনি। এ সময় আক্রান্ত নারীর আর্তচিৎকার শুনে একজন পথিক ফোনে পুলিশকে খবর দেয়।

শিশুও ধর্ষিতা হলো : অপরদিকে, পশ্চিম দিল্লীর সাগরপুর এলাকায় গত সোমবার এক স্কুলে ৩ বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনা দু'দিন পর জানা যায় যখন শিশুটিকে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় ধর্ষক সংশ্লিষ্ট স্কুলের স্বত্বাধিকারীর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্কুলটিকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। 

নয়াদিল্লীতে ধর্ষণ আতঙ্ক! : পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণরত ২৩ বছর বয়সী ডেন্টাল ছাত্রীর গণধর্ষণের শিকার হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে। বর্তমানে একই ধরণের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজধানীর নারীরা।

সোমবার পশ্চিম দিল্লির সাগরপুরা এলাকার একটি বিদ্যালয়ে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণকারী আর কেউ নয় ওই স্কুলেরই মালিকের লম্পট স্বামী বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। সোমবার ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটলেও, জানাজানি হয় দু'দিন পর। ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করায় তার অভিভাবক।

এদিকে খোদ রাজধানীতে এসব উপর্যুপরি ধর্ষণের ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে দিল্লরি ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার। ইতোমধ্যেই ধর্ষককে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে নজরদারি কর্তৃপক্ষ দিলীল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ডম্বস রাইটের (ডিসিপিসিআর) চেয়ারম্যানকে অতি সত্ত্বর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নারী এবং শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী কিরন ওয়ালিয়া ।

সুষমা স্বরাজের দাবি : ভারতের বিরোধী দলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদন্ড দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তার এ দাবির বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে জোরালোভাবে আহবান জানিয়েছেন তিনি। নয়াদিল্লী যখন বিক্ষোভে উত্তাল তখন এ দাবি তুললেন সুষমা স্বরাজ।

গত শনিবার লোকসভার এ বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, ''আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিপরীতে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির আইন করতে পার্লামেন্টের বিশেষ সেশন ডাকার আহবান করছি।'' সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এ নেত্রী লিখেছেন, ''তার এ আবেদন প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।''

১৮ ডিসেম্বর লোকসভায় ধর্ষণকারীদের মৃত্যুদন্ডের দাবি জানিয়েছিলেন বলে লিখেন সুষমা স্বরাজ। এ বিষয়ে নারী ও শিশু উন্নয়নমন্ত্রী কৃষ্ণা তিরাথের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান তিনি। এদিকে বিজেপির নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি ধর্ষণ ও এর প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লীতে বিক্ষোভের বিষয়টি সরকারের কাছে তুলেছেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সহনীয় আচরণ করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিনধেকে আহবান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের প্রশংসা করা উচিত।

মনমোহনের নির্দেশ : এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লীর নিরাপত্তা এবং রোববারের মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিনধেকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী গণধর্ষণের বিরুদ্ধে দ্রত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিনধেকে তাগাদা দিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, এর আগে গণধর্ষণের ঘটনার পর পরিস্থিতি সম্পর্কে মনমোহন সিংহের কাছে নির্দেশ চেয়েছিলেন সিনধে। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান সিনধে।

সূত্র আরও জানায়, সিনধেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার উচিত রাজধানীতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সোনিয়ার একাত্মতা প্রকাশ : দিল্লীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পার্টির প্রধান সোনিয়া গান্ধি।

রোববার মধ্যরাতে একদল বিক্ষোভকারী সোনিয়া গান্ধির সরকারি বাসভবন ১০ জনপথে বিক্ষোভ শুরু করলে তিনি হঠাৎ তার বাসভবন থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভকারীদের বলেন, ''আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি।'' তিনি রাত ১২টার দিকে তার বাসভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের সামনে আসেন। তিনি মাটিতে বসে প্রায় ২০ মিনিট নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় সাদা পোশাক পরিহিত নিরাপত্তাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ছিল।

সোনিয়া গান্ধি এ সময় এ ঘটনার বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন বলে বিক্ষোভকারীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে। তবে বিক্ষোভকারীরা কবে নাগাদ বিচার হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ''আমি কোনো চূড়ান্ত সময়সীমা দেবো না। তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।''

সোনিয়া গান্ধি রোববার সকালেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা করে তাদের অভিযোগ শোনার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এদিকে সাফদারজাং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ডেন্টাল ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

৬ অপরাধীই গ্রেফতার : দক্ষিণ দিলীলর ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) ছায়া শর্মা চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল ছাত্রীকে দেখতে শনিবার হাসপাতালের আইসিইউ কেবিনে যান। গত কয়েকদিনে আরও কয়েকবার তাকে সেখানে যেতে হয়েছে হতভাগা ওই নারীকে দেখতে। তবে এবার তিনি গিয়েছিলেন একটি 'সুখবর' দিতে।

কেবিনে ঢুকেই ছায়া বিছানায় শায়িত ভিকটিমকে শুভেচ্ছা জানান। সামান্য মাথা নেরে শুভেচ্ছার জবাব দেন তরুণী। এ সময় তিনি কথা বলারও চেষ্টা করেন কিন্তু কমিশনার তাকে থামিয়ে দেন। কারণ, ভয়াবহ গ্যাংরেপের শিকার হয়ে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতের প্রচন্ডতায় ওই নারী কোমায় চলে গিয়েছিলেন। গত দু'দিন যাবত চেতনা ফিরে পেলেও তিনি এখনও আশংকামুক্ত নন।

দিল্লীর সফদর জং হাসপাতালের আইসিইউ কেবিনে উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ডিসিপি ছায়া ভিকটিমকে প্রশ্ন করেন, হাউ আর ইউ? জবাবে মাথা নেড়ে উত্তর দেয়ার পর তিনি কথা বলতে চাইলে ডিসিপি বলেন, প্লিজ, ডোন্ট পিক!

এরপর ওই তরুণীকে তার নামে ধরে সম্বোধন করে তিনি বলেন, অল ক্রিমিনালস হ্যাভ বিন কট একথায় তরুণীর চেহারায় স্বস্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দু'চোখ বন্ধ করে ফেলেন, সেখানে দেখা দেয় কষ্ট আর স্বস্তি মাখানো আবেগ। গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা লোনা জল। পুলিশ কর্মকর্তারা এ সময় নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ভিকটিমকে অসম্ভব সাহসী একজন মানুষ বলে স্বীকার করেন।

এদিকে, পুলিশ সূত্র জানায়, সমগ্র দেশ জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ওই ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ লপটের বয়স ১৭ থেকে ৩৪-এর মধ্যে। এদের মধ্যে ৪ জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক রবিকে (ছদ্মনাম) গ্রেফতার করা হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। পুলিশ জানিয়েছে তাকে বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ন্যক্কারজনক ওই ঘটনা ঘটিয়ে সে বদায়ুন অর্থাৎ  বিহারে (ইউপি) পালিয়ে গিয়েছিল। ঘটনার দিন (রোববার) সে ওই গণধর্ষণের মূল হোতা বাসচালক রামসিংহের কাছ থেকে নিজের পাওনা টাকা নিতে এসেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। পরে একপর্যায়ে সে গণধর্ষণে অংশ নেয়। তবে বয়স কম হওয়ায় তার বিচার জুভেনাইল কোর্টে হবে বলে জানা গেছে। আদালত সূত্র জানায়, গত শুক্রবার তাকে জুভেনাইল জাস্টিস কোর্টে সোপর্দ করা হয়।

অপর অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুরকে বিহার পুলিশের সহায়তায় আওরঙ্গাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে ভিকটিমের জালিয়ে দেয়া কাপড়-চোপড়, মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, এটিএম কার্ডসহ পার্সটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা তাদের অপরাধ গোপন করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থল ওই বাসটি ধুয়ে মুছে ফেলেছিল এবং তরুণীর ছিড়ে নেওয়া কাপড়-চোপড় জ্বালিয়ে দিয়েছিল।


'আমরা সুবিচার চাই' : ভারতে তরুণীকে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড়

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, এবিনিউজ : 'আমরা সুবিচার চাই' ধ্বনিতে তরুণী গণধর্ষণের প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়ল রাইসিনা হিলসে। আজ দিল্লীতে সফদর জং হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইরত ২৩ বছরের ধর্ষিতা তরুণীর ন্যায় বিচারের দাবিতে নজিরবিহীনভাবে কয়েক হাজার প্রতিবাদী মানুষের মিছিল রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাতেই এই পদক্ষেপ বলে জানায় মিছিলকারীরা। এদিকে দিল্লী গণধর্ষণের ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ সকালে উত্তর প্রদেশের বেরিলি ও বরায়ু থেকে এদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বরায়ুর রাজুকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিল্লী পুলিশ কমিশনার নীরজ শর্মা।
গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, ইয়ং উইমেনস ক্রিশ্চান অ্যাসোসিয়েশনসহ একাধিক সংগঠনের সমাজকর্মী, ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ রাজপথ থেকে বিজয়চক হয়ে রাইসিনা হিলসে পৌঁছে। এর পর নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে প্রতিবাদী জনতার মিছিল রাষ্ট্রপতি ভবন, সাউথ ব্লক ও নর্থ ব্লকের দিকে এগিয়ে যায়। মহিলাদের জন্য নিরাপদ দিল্লী এবং ধর্ষিতার ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয় তারা। ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তারা।
শুধু রাজধানী নয়, রবিবারের নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় ছড়িয়েছে সারা দেশেই। দিল্লীতে তরুণীর গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন কলকাতার প্রাতঃভ্রমণকারীরা। আজ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকায় কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেন প্রাতঃভ্রমণকারীরা। দিল্লী সরকারের সমালোচনায় স্লোগানও দেন তারা। সবশেষে ফুটপাথে মোমবাতি জ্বালিয়ে নির্যাতিত তরুণীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রাতঃভ্রমণকারীদের দাবি, ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার শেষ করে অবিলম্বে শাস্তি দেয়া হোক। পাশাপাশি গোটা দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারের উপযুক্ত ব্যবস্থারও দাবি জানিয়েছেন তারা। মধ্যপ্রদেশের ভুপালেও প্রতিবাদে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। উত্তরপ্রদেশের লখনৌ এবং বিহারের পাটনাতেও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ।
রবিবার রাতে চলন্ত বাসের মধ্যে কলেজ-ছাত্রীকে ধর্ষণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যাদের মধ্যে ছিল বাসচালক রাম সিংহ, রাম সিংহের ভাই মুকেশ, জিম ইনস্ট্রাকটর বিনয় শর্মা ও ফলবিক্রেতা পবন গুপ্ত। আরও দুই অভিযুক্ত অক্ষয় ও রাজুকে খুঁজতে বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানে চিরুনী তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। রাজুকে গ্রেফতার করা হলেও ষষ্ঠ জনের সঠিক পরিচয় এখনও জানা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

এবিএন/শুক্র-২য়/আন্তর্জাতিক/ডেস্ক/মুস্তাফিজ/রিপা


পুলিশকে পাথর, ভাঙচুর গাড়িও



0
পুলিশকে পাথর, ভাঙচুর গাড়িও
নয়াদিল্লি: একদিন আগে পর্যন্ত যে বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ, হঠাত্ই কেন তা প্রবল আক্রোশে ফেটে পড়ল? কী এমন ঘটেছিল, যার জন্য রবিবার দুপুর ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত লাগাতার পাথর ছোড়া হল পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হল গাড়ি, ক্ষতি করা হল সরকারি সম্পত্তির? 

কারণ লুকিয়ে আছে আন্দোলনের চরিত্রের মধ্যেই৷ গত রবিবার দিল্লির গণধর্ষণের প্রতিবাদে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা ছিল স্বতঃস্ফর্ত৷ কোনও গোষ্ঠী বা নেতার সংগঠিত নয়৷ এআইএসএ থেকে শুরু করে সব ছাত্র সংগঠনই বিক্ষোভে ছিল, কিন্ত্ত নেতৃত্বে নয়৷ স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মনের তাগিদেই যোগ দিয়েছিল এই প্রতিবাদে৷ কিন্ত্ত এই ধরনের আন্দোলন যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে ঢুকে পড়ে কিছু স্বার্থাণ্বেষী গোষ্ঠী আর রাজনৈতিক শক্তি, যারা সেটিকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করে৷ ঠিক এটাই ঘটল রবিবার ইন্ডিয়া গেটে৷ 

যে জায়গা জুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছিল, সাউথ ও নর্থ ব্লকের সামনে পর্যন্ত ওই অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখানো দূরে থাক, এক সঙ্গে কিছু মানুষকে ওখানে দাঁড়াতেও দেয় না পুলিশ৷ বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার চলে নর্থ ও সাউথ ব্লক থেকে৷ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু এটাই, কারণ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অফিস এখানেই৷ এটাই ভিভিআইপিদের সংসদে যাওয়ার পথ৷ তাই ইন্ডিয়া গেট অবরুদ্ধ হওয়া মানে দিল্লি থমকে যাওয়া৷ এমনকি বলা যেতে পারে দেশ থমকে যাওয়া৷ কেউ যদি দক্ষিণ ও পূর্ব থেকে দিল্লির মধ্যবিন্দু্তে আসতে চান এবং মধ্য দিল্লি থেকে ওই স্থানে যেতে চান, তাহলে মাঝে পড়বে ইন্ডিয়া গেট৷ কলকাতায় যেমন বিবাদি বাগ, দিল্লিতে তেমনই সেন্ট্রাল দিল্লি-- যেখানে সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অফিস৷ 

রবিবার তাই সকাল থেকেই পুলিশ চাইছিল বিক্ষোভ সরে যাক রামলীলা ময়দানে, যাতে জনজীবনে তেমন প্রভাব না পড়ে৷ আর সোমবার বিক্ষোভ ইন্ডিয়া গেট থেকে নর্থ ও সাউথ ব্লক পর্যন্ত চললে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কোনও মন্ত্রীই আসতে পারতেন না তাঁদের দন্তরে৷ যেমন কলকাতার বিবাদি বাগে যদি এমন বিক্ষোভ চলে যে মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীরা তাঁদের দন্তরে আসতে পারবেন না, তেমন বিক্ষোভ ক'দিন বা বলা ভালো ক'ঘন্টা সহ্য করবে সরকার? এখানেও তাই আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম সুযোগে পুলিশ লাঠি, গ্যাস, জল-কামান ব্যবহার করে ইন্ডিয়া গেট ও তার আশপাশ খালি করে দেয়৷ পুলিশ যে ভাবে বিক্ষোভকারীদের সরিয়েছে, তা ঠিক না ভুল, তা নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে, কিন্ত্ত একটা সময়ে বিক্ষোভকারীদের সরাতেই হতো তাদের৷ 

আসলে নেতা না থাকায় সরকারের সামনে মূল অসুবিধা ছিল কার সঙ্গে আলোচনা করবে? সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী প্রথম দিনই পাঁচ জন বিক্ষোভকারীর সঙ্গে দেখা করেন৷ তার পর সনিয়া এক দল বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথাও বলেন৷ কিন্ত্ত এদের কথা অন্য বিক্ষোভকারীরা শোনেননি৷ ঠিক এই কারণেই শনিবার সুশীল কুমার শিন্ডে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ প্রতিনিধি দলে কারা থাকবেন , তা ঠিক করা যায়নি৷ ঠিক এই ঘোলা জলেই মাছ ধরতে চেয়েছেন কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতা৷ তাঁর মধ্যে দু'জন সামনে এসেছেন- কেজরিওয়াল ও বাবা রামদেব৷ কেজরিওয়াল ও তাঁর দলবল সকালে ঘন্টাখানেক রাস্তা অবরোধ করেছিলেন৷ বাবা রামদেবকে অবশ্য পুলিশ ইন্ডিয়া গেটে যেতেই দেয়নি৷ কারণ কংগ্রেস নেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা জানে রামদেবের উপস্থিতি মানেই পিছনে থাকতে পারে সঙ্ঘ পরিবার৷ সেক্ষেত্রে রামদেব ময়দানে নামলে ন্যায় বিচারের দাবিতে নয়, যে আন্দোলন শুরু হবে, তাতে সনিয়া-রাহুলের বিরোধী আন্দোলনের প্রচার শোনা যাবে৷ 

পুলিশ বলছে, হিংসা ছড়ানোর কারণ সমাজবিরোধীরা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল৷ এই ঘটনাও অস্বাভাবিক নয়৷ গত কয়েক দিন দেখা গিয়েছে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষোভ ছিল প্রবল৷ সামান্য স্ফুলিঙ্গ সেই ক্ষোভকে হিংসশ্রয়ী করতে পারত৷ 

এর পাশাপাশি বিরোধী দলেরও কিছু দায়িত্ব থাকে৷ তাঁরা মনে করেছিলেন, সরকার বিপাকে পড়েছে ভালো হয়েছে৷ কিন্ত্ত তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন এক্ষেত্রে তাঁদেরও একটা দায় থেকে যায়৷ পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যায়, তখন অন্তত শান্তি বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট হওয়ার আবেদন করা তাঁদের উচিত ছিল, কিন্ত্ত সেই প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেননি তাঁরা৷

পার্ক স্ট্রিটের মূল অভিযুক্ত অধরাই



পার্ক স্ট্রিটের মূল অভিযুক্ত অধরাই
দিল্লিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিল। কলকাতায় সিটি সেন্টার চত্বরে
চিত্রদীপ চক্রবর্তী 

কখনও মুম্বই কখনও ঝাড়খণ্ড, আবার কখনও বা বিহার৷ সড়ক পথে উত্তরবঙ্গ হয়ে সোজা নেপাল৷ সেখান থেকে বাংলাদেশ৷ আবার বাংলাদেশ থেকে খুশিমতো সৌদি আরব বা ইজিপ্ট৷ ঘন ঘন ডেরা পাল্টে কলকাতা পুলিশকে রীতিমত ক্লান্ত করে দিয়েছে পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণের ঘটনার মূল অভিযুক্ত কাদের খান৷ শেষ পর্যন্ত কাদেরের খোঁজে ইন্টারপোলের রেড কর্ণার নোটিশ জারি করেও ঘটনার দশ মাস পড়ে গ্রেফতার করা যায়নি কাদেরকে৷ সঙ্গী মহম্মদ আলি ওরফে জনিকে সঙ্গে নিয়ে কাদের আপাতত বিদেশেই গা ঢাকা দিয়েছে বলে তদন্তকারি অফিসারদের অনুমান৷ 

পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতা 'এই সময়'কে জানিয়েছেন, 'আমার কেসটার কি অবস্থা হয়েছে তাই জানিনা৷' তিনি এটা জেনে অবশ্যই হতাশ হবেন যে ঘটনার প্রধান অভিযুক্তকেই পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি৷ তবে এটা ঠিক, কাদেরকে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টার কসুর করেনি৷ তাঁর প্রতিটি মোবাইল ফোনের দিকে নজর রাখা হয়েছে৷ নজরে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠজনেদের মোবাইল৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজখবর করা হয়েছে৷ কারণ দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে থাকায় তার আর্থিক প্রয়োজন কীভাবে মেটানো হচ্ছে তাও জানার চেষ্টা করেছিল পুলিশ৷ এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় এ টি এম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলে নেয় অভিযুক্তেরা৷ কিন্ত্ত সে ভুল করেনি কাদের৷ তবে তার টাকা হাওলা বা হুণ্ডির মাধ্যমে বাইরের কোনও অ্যাকাউন্টে জমা হতে পারে বলে পুলিশের বিশ্বাস৷ যা বন্ধ করা বা খোঁজ নেওয়া পুলিশের পক্ষেও কার্যত অসম্ভব৷ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন জায়াগায় তার চামড়ার সামগ্রীর ব্যবসা ছিল রমরমা৷ সেখানকার খদ্দেররা তাকে টাকা যোগান দিচ্ছে বলে পুলিশের অনুমান৷ 

কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার জানান, কাদের যার সঙ্গে গাঢাকা দিয়েছে, সেই জনির খিদিরপুরে মোবাইলের ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে ওয়ার্ক পারমিট করিয়ে দেওয়ার ব্যবসাও রয়েছে৷ সেজন্য বেশ কয়েকবার ভায়া মুম্বই সে জেড্ডা এবং ইজিপ্টেও গিয়েছে৷ মনে করা হচ্ছে এক্ষেত্রে জনি এবং কাদের সেসব জায়গায় বহাল তবিয়তে রয়েছে৷ মোবাইল ব্যবহার করলে পুলিশ ধরে নিতে পারে সে আশঙ্কা থেকে তারা ল্যাণ্ড লাইনে যোগাযোগ রাখছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে৷ 

গত ৫ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির মধ্যে ধর্ষণ করা হয় এক মহিলাকে৷ তা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুলিশের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়৷ কলকাতা পুলিশের তত্‍কালীন যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) দময়ন্তি সেন জানিয়ে দেন, ওই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ যদিও মুখ্যমন্ত্রী বা কলকাতার পুলিশ কমিশনার তা মানতে চাননি৷ এর জেরে বদলি করে দেওয়া হয় দময়ন্তি সেনকে৷ 

এই ঘটনার তদন্তে পুলিশ দুই সদস্যর একটি স্পেশাল দল তৈরি করে দিয়েছিল৷ তারা কাদেরের খোঁজে মুম্বই যান৷ কিন্ত্ত কয়েক ঘণ্টার জন্য তাকে ধরা যায়নি৷ এরপর বিহারের মতিহারি গিয়েও কাদেরকে পাওয়া যায়নি৷ পুলিশের বিশেষ দলটি ধানবাদে হানা দিলে সেখানেও মেলেনি কাদেরের সন্ধান৷ এবার কাদেরের খোঁজে হানা দেওয়া হয় নাসিকে৷ পুলিশ পৌছনোর কয়েকদিন আগেই কাদের সেখান থেকে চম্পট দেয়৷ তারপর কয়েকদিন খবর সংগ্রহ করার পর পুলিশের দলটি যায় নেপালের পাটনে৷ কিন্ত্ত পুলিশ যাওয়ার আগের দিন কাদের পালিয়ে যায় নেপালের হোটেল থেকে৷ অথচ ওই হোটেলে তার পাঁচদিন থাকার কথা ছিল৷ এবার পুলিশ ছুটে যায় শিলিগুড়ি এবং মিরিকে৷ ততদিনে সেখান থেকেও সরে পড়েছে কাদের৷ কলকাতা পুলিশের এক তদন্তকারি অফিসার জানান, সম্ভবত নেপাল থেকে জাল পাসপোর্ট তৈরি করে ওখান থেকেই সৌদি আরবে চলে গেছে কাদের৷ তাকে খুঁজে বার করতে ইন্টারপোলের সাহায্য চাওয়া হয়েছে৷ এক অফিসার বলেন, এখন কাদেরের ছো কোনও ভুলের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা৷ তবে পেশাদার অপরাধীদের মতো নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে সে৷ 

কলকাতা পুলিশের কর্তারা অবশ্য পার্ক স্ট্রিট ইস্যু নিয়ে এতটাই আতঙ্কে যে তারা এবিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ 

রেলে ভাড়া বাড়তে পারে ১০ পয়সা প্রতি কিমি

 কুড়ি হাজার কোটি টাকার আর্থিক ঘাটতিতে চলছে ভারতীয় রেল৷ তাই 'যত্‍সামান্য' আয় বাড়াতে খুব শীঘ্রই রেলের ভাড়ার বাড়ানোর কথা ভাবছে রেলমন্ত্রক৷ আশা করা হচ্ছে নিকট ভবিষ্যতেই প্রতি কিলোমিটারে ৫ থেকে ১০ পয়সা যাত্রীভাড়া বাড়বে রেলে৷ তবে এই বর্ধিত ভাড়া আগামী বছর রেল বাজেটের আগে না পরে লাগু হবে তা নিয়ে এখনও সংশয়ে রয়েছে রেলমন্ত্রক৷ রেলমন্ত্রকের আশা, এই বর্ধিত ভাড়া চালু হলে কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকা তো ঘরে তুলতেই পারবে রেল৷ 

রেলের নতুন ভাড়া বিন্যাসের জন্য রেল ট্যারিফ অথরিটি গঠনের কথা বলেছে রেল৷ রেলের ভাড়া নির্ধারণকারী এই কমিটি গঠনের চড়ান্ত প্রস্তাব আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তৈরি করে ফেলবে আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী৷ অন্তত প্রধানমন্ত্রীর সেরকমই নির্দেশ রয়েছে৷ কিন্ত্ত তার আগেই রেলের ভাড়া বাড়ার একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন রেল আধিকারিকরা৷ রেলমন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে যাত্রীভাড়া৷ অর্থাত্, ২০১২-১৩ রেল বাজেটে তত্কালীন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী সে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই প্রস্তাব আবার করছে রেল মন্ত্রক৷ যদিও রেল প্রতিমন্ত্রী সূর্য প্রকাশ রেড্ডির মতে, '২০১৩-১৪ রেল বাজেটে ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ৫ থেকে ১০ পয়সা বাড়ানো উচিত৷ রেলের আর্থিক সঙ্গতি মোটেই নেই৷ টাকা না এলে, রেল বাঁচবে না৷' 

একই সুর শোনা গিয়েছে, আর এক প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরীর গলায়৷ তিনিও বলেছেন, 'রেলের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়৷ অবিলম্বে ভাড়া বাড়াতে হবে৷' অন্যদিকে, রেলওয়েমেন ফেডেরেশনের সাধারণ সম্পাদক শিব গোপাল মিশ্রের মতে, 'রেলের ভাড়া বাড়াতে বাজেট পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই৷ দেরি না করে তা এখনই ঘোষণা করা হোক৷' 

রেলের যাত্রীবাহী বিভাগ আপাতত ২২ হাজার কোটি টাকার লোকসানে চলছে৷ গত বছরের তুলনায় এ বছর অতিরিক্ত চার হাজার কোটি টাকার লোকসান যোগ হয়েছে রেলের ভাগ্যে৷ এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত রেলের আয় হয়েছে ৬৭,৮৭৯ কোটি টাকা৷ অবশ্য বাজেটে প্রস্তাবিত আয়ের লক্ষ্য ছিল ৭০,১৪৭ কোটি টাকা৷ যাত্রীবিভাগে ১৮,১৯৬ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য রেখেছিল রেল৷ কিন্ত্ত আয় হয়েছে ১৭,৬৯১ কোটি টাকা৷ পণ্যবাহী বিভাগেও আয় কমেছে রেলের৷ ৪৮,৫৮০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য মাত্রা ছিল এই বিভাগে৷ অথচ আয় হয়েছে ৪৬, ৮০৫ কোটি টাকা৷ রেল ভাড়া নির্ধারণের পাশাপাশি পণ্য ভাড়াও নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রেল ট্যারিফ অথরিটিকে৷ 

লবিং-এর আইনি সংজ্ঞা চাই, সুর তুললেন পাইলট

সম্প্রতি ওয়ালমার্টের 'লবি' ইস্যুতে উত্তাল হয়েছে সংসদ৷ ভারতের বাজারে ঢুকতে মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে লবি করছে ওয়ালমার্ট৷ এ জন্য ১২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে বিশ্বের বৃহত্তম খুচরো সংস্থাটি৷ এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারতে সরকার এবং সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দিয়েছে ওয়ালমার্ট এই দাবিতে তুলতে শুরু করেন বিরোধীরা৷ 

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী শচীন পাইলটের মন্তব্য, দেশে লবিংয়ের যথাযথ সংজ্ঞা থাকলে ঘুষের অভিযোগ কোনও পক্ষই তুলতে পারতেন না৷ পাইলটের মতে, লবিং, অ্যাডভোকেসি (বরাত পেতে তোশামোদ বা তদবির) আর ঘুষ দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া, এই তিন বিষয়ের পার্থক্য বোঝাতে তিনটিরই আইনি সংজ্ঞা থাকা দরকার৷ তা হলে লবিংয়ের নামে কেউ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনতে পারবেন না৷ এ ছাড়া কোনও নির্দিষ্ট নীতির উপর নির্দিষ্ট অবস্থান নিয়ে সরকারের কাছে সংস্থাগুলি বা ব্যবসায়িক সংগঠনগুলি উপস্থিত হচ্ছে কিনা, সেটাও সামনে আসা উচিত৷ 

এক সাক্ষাত্‍কারে মন্ত্রী শচীন পাইলট বলেছেন, 'কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেটা স্থির করার সময় এসেছে৷ লবি সম্পর্কে আমাদের দেশে কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই৷ যা আছে সেটা খুব অস্পষ্ট৷ সে জন্য লবি আইনি না বেআইনি, সেটা স্থির করতে হবে৷ লবি করা মানেই ঘুষ দেওয়া, এটা ভুল ধারণা৷ কিন্ত্ত সঠিক ধারণা না থাকার কারণে অদিাকংশ লোকই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করছেন৷' 

তিনি বলেন, আমেরিকায় লবি আইন-সিদ্ধ৷ সে দেশের সংস্থা লবি খাতে কত খরচ করছে প্রতি ত্রৈমাসিকে বা ষান্মাসিকে তার রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ ভারতীয় সংস্থাগুলিও যদি সরকারকে কোনও নীতি নিয়ে প্রভাবিত করতে চায়, তা হলেও প্রতি তিন মাস অন্তর তারাও সে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করুক৷ কারণ কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রীর মতে, 'পেশাদারির দুনিয়ায় এটা খারাপ কিছু নয়৷ আপনার যদি মনে হয়, একটি নির্দিষ্ট নীতিতে আপনার সংস্থা এবং সরকার দু'পক্ষই লাভবান হবেন, এবং আপনি যদি কোনও সাংসদ, বিধায়ক বা পঞ্চায়েত প্রধানকে অফিসিয়ালি ডেকে বিষয়টা বোঝান সেটা মোটেই অনৈতিক হতে পারে না৷ এবং প্রতি তিন মাস বা ছ'মাস অন্তর সে সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করেন, তা কখনওই আইন-বিরুদ্ধ হতে পারে না৷' সে কারণে শচীন পাইলট বলেছেন, আমেরিকার মতো ভারতেও লবি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনার নিয়ম করা হোক৷ আমেরিকায় যেটা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ আইনি৷ এ নিয়ে মতান্তর নেই৷ ভারতেও যদি সেরকম হয়, তা হলে লবি এবং ঘুষের বৈপরীত্যটা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে৷

এ বার অয়েল ইন্ডিয়া ও এনটিপিসি-র বিলগ্নিকরণ

সংস্কারের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে অয়েল ইন্ডিয়া এবং এনটিপিসি বিলগ্নীকরণ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা তোলার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নিয়েছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামী জানুয়ারিতে অয়েল ইন্ডিয়ার শেয়ার বিক্রি করার পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে এনটিপিসির শেয়ার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ 

বর্তমান বাজার দরে অয়েল ইন্ডিয়ার দশ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা তোলার পাশাপাশি এনটিপিসির সাড়ে নয় শতাংশ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি টাকা তোলা যাবে বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় সরকার৷ 

চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিলেও এখন অবধি মাত্র ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা তুলতে সমর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় বিলগ্নীকরণ দন্তর৷ অন্যদিকে চলতি অর্থবর্ষ শেষ হতে বাকি আর মাত্র তিন মাস৷ এই অবস্থায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যথেষ্ট কঠিন৷ 

বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে আদায় হওয়া ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার মধ্যে এনএমডিসির শেয়ার বিক্রি করে উঠেছে ৬ হাজার কোটি টাকা৷ হিন্দুস্থান কপারের শেয়ার বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৮০৮ কোটি টাকা৷ এর আগে এনবিসিসি-র শেয়ার বিক্রি বাবদ ১৫৪ কোটি টাকা আয় হয়েছিল সরকারের৷ 

ইতিমধ্যেই দশটি সংস্থাকে বিলগ্নীকরণের উদ্দেশ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ অয়েল ইন্ডিয়া এবং এনটিপিসির পরে স্টীল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা, সেল এবং হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্সের শেয়ার বিলগ্নীকরণের জন্য তোলা হবে৷ রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড এবং হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স প্রত্যেকের দশ শতাংশ করে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিলগ্নীকরণ দন্তর৷ এর সঙ্গে ন্যালকো, সেল, এমএমটিসির যথাক্রমে ১২.১৫ শতাংশ, ১০.৮২ শতাংশ এবং ৯.৩৩ শতাংশ করে শেয়ার বিক্রি করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এছাড়াও ভেইল-এর ৫ শতাংশ এবং হিন্দুস্তান কপারের ৪.০১ শতাংশ শেয়ারও বিক্রি করবে সরকার৷ 

অক্টোবরে দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়ল ৬৫ শতাংশ

গত বছরের তুলনায় এ বছর অক্টোবরে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ৷ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় শিল্প নীতি দন্তর৷ চলতি বছরের অক্টোবরে দেশে মোট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১৯৪ কোটি মার্কিন ডলার৷ গত অক্টোবরে এই সংখ্যাটা ছিল ১১৬ কোটি মার্কিন ডলার৷ 

শিল্প নীতি দন্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এপ্রিল-অক্টোবরে মোট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কিন্ত্ত ২৭ শতাংশ কমেছে৷ ২০১১ সালের এপ্রিল-অক্টোবরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে মোট ২০২৯ কোটি মার্কিন ডলার এসেছিল দেশে৷ কিন্ত্ত এ বছর ওই একই সময় দেশে আসা মোট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হল ১৪৭৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ 

তবে সেপ্টেম্বরে সরকারের আর্থিক সংস্কারের জন্য দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে৷ সেপ্টেম্বরে পরিষেবা, হোটেল, পর্যটন, মেটালার্জি, নির্মাণ ও গাড়ি শিল্পে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জোয়ার আসে৷ ওই মাসে পরিষেবা ক্ষেত্রে ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি হয়৷ এ বছরের প্রথম সাত মাসে মরিশাস থেকেই সবচেয়ে বেশি বিদেশি লগ্নি হয়৷ এই সাত মাসে ওই দেশ থেকে ভারতে মোট ৬৭৫ কোটি মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ হয়েছে৷ 

তবে অক্টোবরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ সেপ্টেম্বরের সংখ্যাকে টেক্কা দিতে পারেনি৷ কারণ ওই মাসে খুচরোয় ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি অনুমোদিত হওয়ার পর দেশে এসেছিল ৪৬৭ কোটি ডলার৷ 

আয়করের সীমা বাড়ানোর সুপারিশ ফিকি-র

বণিকসভা ফিকি চাইছে বার্ষিক কুড়ি লক্ষ টাকা রোজগার হলে কার উপরেই তিরিশ শতাংশ আয়কর ধার্য করা হোক৷ করদাতাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোয় উত্সাহ দিতেই এই সুপারিশ করেছে ফিকি বা ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ৷ 

বাজেট পূর্ববর্তী প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রকে তারা এই আবেদন করেছে৷ তারা বলেছে, 'দশ লক্ষ টাকা ও তার বেশি আয়ে ৩০.৯ শতাংশ আয়কর (শিক্ষা সেস ধরে) পুনর্বিবেচনা করা দরকার কারণ এটি মধ্যবিত্তের উপরে উপরে অতিরিক্ত বোঝা চাপায়৷ এই বোঝা কমালে তাদের খরচ করা ক্ষমতা বাড়বে৷' 

তাদের পরামর্শ, ২০১৩-১৪ সালে যাঁদের আয় বছরে কুড়ি লক্ষ টাকার বেশি তাঁদের উপর এই কর প্রযোজ্য হতে পারে৷ সাম্প্রতিক সময়ে আয়কর অনেকটাই বাস্তবসম্মত করা হলেও তা এখনও যথোপযুক্ত নয়৷ 

নতুন প্রেসিডেন্ট নয়নালাল কিদোয়াইয়ের নেতৃত্বে ফিকির আবেদন, আবার ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন চালু করা হোক, তাতে বেতনভুক কর্মীদের সুবিধা হবে৷ বণিকসভার পরামর্শ, 'কর বাঁচানোর জন্য ও আরও বিনিয়োগের জন্য ৮০সি ধারায় ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার কথা সরকার বিবেচনা করতে পারে৷' 

যে ভাবে জমিবাড়ির দাম বাড়ছে এবং পাল্লা দিয়ে সুদের হার বাড়ছে তাতে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে তারা বলেছে, সন্তানের পড়াশোনার জন্য খরচ ৮০সি ধারার আওতায় না রেখে এ জন্য নতুন ধারা (যেমন মেডিক্যাল ইনসিওরেন্সের জন্য ৮০ডি ধারা) তৈরি করা হোক৷ বর্তমানে টিউশন ফি ৮০সি ধারার অন্তর্ভূক্ত৷ চিকিত্‍সার জন্য ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে অনুরোধ করেছে ফিকি৷ 

আগামী বছরের বাজেট পেশ হতে পারে ২৮ ফেব্রুয়ারি (সাধারণত ওই দিনেই হয়, তবে প্রণব মুখোপাধ্যায় তার আগেই বাজেট পেশ করেছিলেন)৷ তার আগে অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদাম্বরম জানিয়েছেন যে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করবে৷ তিনি বলেছেন, 'আমাদের লক্ষ্য হবে করদাতা ও করগ্রহীতা উভয়ের কথা চিন্তা করে সবচেয়ে ভালো যা করা যায় সরকার সেই চেষ্টাই করবে৷' ১৯৯৬-৯৭ সালের বাজেট পেশ করার সময় চিদাম্বরমই ১০, ২০ ও ৩০ শতাংশ - এই তিনটি ধাপ চালু করেছিলেন৷ সেই বাজেটকে 'স্বপ্নের বাজেট' আখ্যা দেওয়া হয়েছিল৷ তারপরে প্রত্যক্ষ কর বসানো, করের কাঠামোয় পুনর্বিন্যাস-সহ অনেক পরিবর্তনই হয়েছে কিন্ত্ত চিদাম্বরমের ওই তিনটি ধাপ রয়েই গিয়েছে৷ প্রস্তাবিত ডায়রেক্ট ট্যাক্স কোডে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড়ের কথা বলা হয়েছে৷ ৩-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ১০ লক্ষ টাকার বেশি কিন্ত্ত কুড়ি লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং তার বেশি হলে তিরিশ শতাংশ করের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে৷ 

অর্থমন্ত্রী অবশ্য ধীরে ধীরে পরিবর্তনের পক্ষে৷ সম্প্রতি তিনি বলেছেন দেশে সাড়ে তিন কোটি মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা করেন৷ এর মধ্যে ১৪.৬ লক্ষ করদাতা তাঁদের আয় ১০ লক্ষের বেশি বলে জানিয়েছেন৷ চিদাম্বরম অবশ্য মনে করেন এই সংখ্যা সঠিক নয়৷ যাঁরা আয়ের তথ্য গোপন করছেন কিছুদিন আগেই রেভেনিউ সচিব সুমিত বসু তাঁদের সতর্ক করেছেন৷ তিনি বলেছিলেন, 'আজ না হয় কাল কর বিভাগ সত্যিটা জেনে তাঁদের (যাঁরা আয়ের তথ্য গোপন করছেন) বাড়ির দোরগোড়ায় হাজির হয়ে যাবে৷ আয় লুকিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে কোনও লাভ হবে না৷'

অর্থনৈতিক সংস্কারে উদারতা : সুপার মার্কেটের জন্য দুয়ার খুলে দিয়েছে ভারত

 অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত এবং সরকারকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের উদার নীতির অংশ হিসেবে ভারত বিদেশী সুপার মার্কেট চেইনগুলোকে দেশে প্রবেশের সবুজ সংকেত দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ওয়ালমার্ট, টেস্কো ও করেফোরের মতো চেইন সুপার শপগুলো ভারতে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করতে পারবে। গত ডিসেম্বরে মনমোহন প্রশাসন বেশ কিছু দুর্নীতি কেলেংকারির কারণে প্রতিরোধের মুখে সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। পক্ষান্তরে সরকারের অন্যতম শরীক দল তৃণমূল কংগ্রেস এ সংস্কার কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদ জ্যোতি নরসিংহন বলেন, শেষ পর্যন্ত সরকার সঠিক পথে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ড. মনমোহন সিং নতুন সংস্কার পদক্ষেপ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলেন, মন্ত্রিসভা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার এবং ভারতকে বিদেশী বিনিয়োগের লোভনীয় গন্তব্যে পরিণত করতে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এসব পদক্ষেপ আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং এ কঠিন সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। সরকার প্রথমবারের মতো দেশে বিদেশী বিমান পরিবহন সংস্থাকে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে পরিবহন খাতে বিনিয়োগের বিধি-বিধানও শিথিল করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ডিজেলের দাম ১২ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণার পর শুক্রবার নেয়া সরকারের এসব সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন। তারা মনে করছেন, সরকার নিষ্ক্রিয়তার দুর্নাম ঝেড়ে ফেলে অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করতেই এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এতে যে স্পষ্ট বার্তা রয়েছে তা হলো এ সরকার ভারতের স্বার্থ, এর প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, সম্পদ সৃষ্টি ও অবকাঠামো বিনির্মাণ নিয়ে চিন্তা করে। তবে দোকানদার, বিরোধী দল এবং একটি মিত্র দলও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছে এতে করে খুচরা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তি ও উন্নয়নশীল দেশের কৃষি

আমাদের এসময়ে বিশ্বায়ন ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশিত মুক্ত-বানিজ্যর কাঠামোতে বিশ্বের উন্নয়নের চালচিত্র দেখি, তখন দেখতে পাই যে, সম্পদশালী দেশগুলোর কারনে একদিকে যেমন এশিয়া ও Agriআফ্রিকার দেশসমূহে সকল ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্বেও তার মৌলিক চাহিদা (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, পানি, চিকিৎসা,শিক্ষা) পূরনে বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হচ্ছে, আবার অন্যদিকে উত্তরের ধনী দেশের জনগোষ্ঠী ভোগবিলাসে মাতোয়ারা হয়ে উন্নয়নের নামে অনুন্নত ও দারিদ্রক্লিুষ্ঠ মানুষের ভাগ্যে প্রনয়নের ও মানবধিকার রক্ষার মানবিক প্রয়াসে সাহায্যে সহযোগিতা করার নামে তাদের সকল অধিকার ও প্রবেশের পথ রুদ্ধ করছে । ভোগে ও সম্পদের মধ্যে ডুবে থেকে এসকল বিবেকবর্জিত মানুষ ও তাদের রাষ্ট্র শুধু অবিচারই করে চলছেন । পশ্চিমের ধনী দেশগুলো তাদের নৈতিকতার মানদন্ডে উন্নয়নের সঠিক রোডম্যাপ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন যা ন্যায় বিচার বা ভারসাম্য পূর্ণ উন্নয়ন কৌশল বা কার্যক্রমের মাধ্যমে সকলকে একই সঙ্গে উপকৃত করতে পারে। সকল সম্ভবনা ও সম্পদের অধিকারী পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ গরীব মানুষের উপর শোষন ও বৈষম্য র্পূণ আচরণ করে চলেছে এসকল উন্নত দেশসমূহ।

নব্বই দশকের মাঝামাঝি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার যাত্রার প্রাক্কালে যখন বিভিন্ন্‌ চুক্তি গৃহীত হচ্ছিল, তখন অন্যান্য চুক্তির পাশাপাশি গৃহীত কৃষি চুক্তির ক্ষেত্রেও সব সদস্যরাষ্ট্রকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল যে উন্নয়নশীল ও পশ্চাদপদ দেশসমূহের কৃষি বাণিজ্যে এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী এবং কৃষি প্রবৃদ্ধিও অনেক গুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু কার্যত ২০০৭ সালে এসে এক দশকের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখতে পাই যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তি যে ধরনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তা নিষ্ফলা এবং শুধুই হতাশা। ফলে এ চুক্তি সম্পর্কে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মোহভঙ্গ হয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এ ছাড়া কৃষি চুক্তির ফলে উন্নয়নশীল দেশের কৃষি ও এর দরিদ্র কৃষকের জীবন-জীবিকার ওপর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায় এ চুক্তির আঘাত হয়েছে মারাত্মক।

এ এশিয়া ও আফ্রিকায় দুই মহাদেশের অধিকাংশ উন্নয়নশীল গ্রামর্নিভর দেশে কৃষিই হচ্ছে জীবিকার একমাত্র উৎস। মূলত কৃষিকে ভিত্তি করেই এসব দেশের সব অর্জন বা সাফল্য নির্ভর করে এবং এ খাতেই এসব দেশের সবচেয়ে বেশি শ্রমশক্তি নিয়োজিত রয়েছে। এসব দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি, জাতীয় উন্নয়ন ও জাতীয় উৎপাদনে কৃষি হচ্ছে এর অর্থনীতির সবচেয়ে বড় স্তম্ভ। এ ক্ষেত্রে ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ সব কৃষিনির্ভর দেশ কার্যত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আবির্ভাবের ফলে এসব দেশের কৃষক ও সরকারকে গত এক দশকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার কাজে।

আশির দশকে নয়া উদার অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের নির্দেশে কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশেই কৃষি তার আভ্যন্তরীন উৎপাদন থেকে সরে গিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে বিশ্ব বাজারে রপ্তানিমুখী খাত হিসেবে অভির্ভূত হয়েছে, যার ফলে এসব দেশ আগে যেখানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বা একটি সক্ষমতা মাত্রায় ছিল, তা আজ রূপান্তরিত হয়েছে সম্পূর্ণ খাদ্য আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে । কার্যত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কৃষি চুক্তি নিজে নিজেই অচল হয়ে পড়েছে তার নিজস্ব নীতিমালার কারণে। তাদের রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক রূপ নেওয়ার ফলে এসব দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে উন্নত দেশের কৃষিপণ্যে স্তূপকৃত করা হয়েছে। এ কথা এখন পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে, কৃষি চুক্তি এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকায় বহু কৃষি সম্ভাবনার দেশকে পথে বসিয়েছে।

তাদের ক্ষুদ্র পর্যায়ের খামারব্যবস্থা, খাদ্য অধিকার এবং গ্রামাঞ্চলের কর্মসংস্থান এখন অত্যন্ত জরুরিভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, যে নীতিনির্ধারণী সহায়তা, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সমর্থন না পাওয়া গেলে কৃষি চুক্তি এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকায় বহু কৃষি সম্ভাবনার দেশকে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে নিপতিতত করবে। ফলে এসব দেশের কৃষকেরা হয়ে যেতে পারে সর্বস্বান্ত, তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে। যেখানে কর্মসংস্থান, জাতীয় উৎপাদন ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কৃষির ওপর এসব দেশ সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। এ দেশের জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশ কৃষির মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। সুতরাং কৃষি চুক্তির বিধ্বংস্বী প্রভাবের ফলে এসব দেশে ক্রমান্বয়েই তার প্রতিযোগিতার খাঁজ ও সম্ভাবনাকে হারিয়ে ফেলছে এবং তৈরি করছে গভীর সংকটের। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দুর্ভোগ ও ভুক্তভোগী আমেরিকা মহাদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশ এবং এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ সব শক্তিশালী জাতির কাছে আবেদন এখন অত্যন্ত জোরালোভাবে।

এশিয়া : এশিয়ার অধিকাংশ দেশ কৃষি খাত থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সরাসরি প্রত্যাহার দাবি করছে। কেননা, এসকল দেশে কৃষি শুধু কৃষি কার্যক্রম নয়, এ ক্ষেত্রে কৃষি হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকা এবং জীবন-জীবিকা একমাত্র উপায় । বাণিজ্য উদারীকরণের কবলে পড়ে এসব দেশ তার কৃষিকে হারাতে বসেছে। ক্রম্বানয়ে সংকুচিত হচ্ছে কৃষি কার্যক্রম, দেশ যখন পুরোমাত্রায় আমদানিনির্ভর ও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ছে, সৃষ্টি হচ্ছে জনগণের দুর্ভোগ ও দুর্দশা। যেখানে সব দেশের শতকরা ৬০-৭০ ভাগ কর্মসংস্থান জাতীয় উৎপাদন প্রবৃদ্ধি এখনো নির্ভর করছে, সেখানে এ আমদানিনির্ভর কৃষিব্যবস্থা তাদের কৃষিকে করে তুলছে চরমভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারের কৌশল নির্ধারণে এসব দেশ পারস্পরিক যোগাযোগ ও নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে তাদের ক্ষেত্রে এ মারাত্মক হুমকিরস্বরূপ কৃষি চুক্তি থেকে নিজেদের সুরক্ষা দেওয়ার কেশিল নির্ধারন করতে পারেন।

এশিয়ার ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, এবং বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংক আইএমএফের তদারকিতে আশির দশকে কাঠামোগত সংস্কার চালাতে গিয়ে তাদের অর্থনীতি ও বাজার ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক উদার করে ফেলেছে। ফলে তাদের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মাত্রার কৃষি আজ রয়েছে যথেষ্ট হুমকির মুখে ।

বিশেষ এবং তারতম্যমূলক ব্যবস্থার আলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের বাজার উদারীকরণের চাপ থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই বললেই চলে। সারা বিশ্বে ৫০০ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করছে, যারা ধারাবাহিকভাবে ক্ষুধা ও দারিদ্রবস্থার মধ্যে দিয়ে দিনতিপাত করছে। লাখ লাখ ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষি হারিয়ে যাচ্ছে বাজার উদারীকরণের কারনে শুধু মাত্র আমদানিনির্ভর বাণিজ্যিক রূপান্তরের মাধ্যমে। দরিদ্রতা এবং উচ্চ বেকারত্ব এসব দেশকে ভোগাচ্ছে। কৃষি হচ্ছে এসব দেশের ঐতিহ্যগত উৎস, যা থেকে তাদের অস্তিত্ব ও জীবিকা নির্ভর করতে হয়। এ সবকিছুই প্রতিস্থাপিত হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক নির্দেশিত অসমতা ও অধিকারমূলক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নীতিমালার মাধ্যমে, এ নীতিমালার মাধ্যমে কার্যত পৃথিবীর ধনী দেশ ও তাদের বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থকেই প্রধান্য দেয়া হয়েছে। এ বৈষম্যমূলক আচরন ও ব্যাবস্থার বেড়াজাল থেক্বে এশিয়া ও আফ্রিকায় ও আমেরিকা মহাদেশের অধিকাংশ উন্নয়নশীল ও দারিদ্র দেশের লক্ষ লক্ষ জনগোষঠীকে বাচাঁতে এখনই দরকার স্বমন্বিত কর্মসূচী, অন্যথায় এ সকল মানচিত্রের পরিচিত জনগোষঠী হারিয়ে যেতে পারে চিরদিনের জন্যে।

- রফিকুল ইসলাম আলম

http://aprar-bd.net/bn/index.php/policy-research/analysis/41-agri_agreement.html

বিক্ষোভের গর্জনে ব্রাত্য, উদ্বেগে রাজনীতি
রাজধানীতে মানুষের ক্রোধ, অসন্তোষ, বিক্ষোভ, বিদ্রোহ দেখে শুধু শাসক দল কংগ্রেসই নয়, বিরোধী দল বিজেপি-সহ দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রমাদ গুনছেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের ব্যর্থতা অবস্থাকে জটিল করে তুলেছে বলে বিরোধী নেতারা মনে করলেও লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ সাংসদের মতেও, এই বিক্ষোভের মধ্যে শুধুই যে রাগ আছে, তা নয়। আছে মানুষের বেদনা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই আন্দোলনে মানুষের সংসদীয় দলীয় ব্যবস্থা থেকে বিযুক্তি এবং নিঃসঙ্গতার প্রকাশ ঘটছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, "মূলত যুব সমাজের অরাজনৈতিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ-প্রক্রিয়াকে দোহাই সামাজিক ব্যধি বলবেন না। এটি আসলে ব্যধিগ্রস্ত সমাজের বিরুদ্ধে আদর্শবাদী, ভাবপ্রবণ যৌবনের প্রতিক্রিয়া।"
বিরোধী শিবির এই ঘটনারও রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য সনিয়া গাঁধী ও শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে মুখর হয়ে উঠেছে। সঙ্ঘ পরিবার থেকে বিজেপি, টিম-অণ্ণা থেকে কেজরিওয়াল সকলেই 'ভিড়ের মনস্তত্ত্ব'কে উস্কে দিয়ে রাজনীতির পারানির কড়ি জোটাতে মরিয়া। কিন্তু প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে সব দলের নেতারাই বুঝতে পারছেন, এই ঘটনাকে শক্ত হাতে মোকাবিলা না করলে আগামী দিনে দেশে গৃহবিদ্রোহের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আপাত ভাবে একটি ধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু দলহীন, নেতাহীন, মূলত শহুরে যুব সমাজের বিক্ষোভের এই বিস্ফোরণ শুধুই ওই একটি ঘটনাতেই কেন্দ্রীভূত নয়। এর মধ্যে আসলে আছে আর্থ-সামাজিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং রোষের প্রকাশ। 
বিক্ষোভকারী সেন্ট স্টিফেন কলেজের ছাত্র পুরুষোত্তম সিন্হা বললেন, "আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি, যেখানে ধর্ষণ করলে শাস্তি হয় না। ধনী চিত্রতারকা আইন ভেঙে বিরল প্রজাতির প্রাণীকে হত্যা করলে শাস্তি হয় না। বিএমডব্লিউ গাড়ি চালিয়ে পথচারীকে হত্যা করা যায়। তাতেও শাস্তি হয় না। সব শেয়ালের একই রা। সব চোরের ভাষাও এক।"
ক'দিন আগে গাজিয়াবাদে এক যুবক আত্মহত্যা করেন দুর্নীতির প্রতিবাদে। এবং মৃত্যুর আগে লিখে যান, এই ব্যবস্থাকে তিনি সহ্য করতে পারছেন না। ব্যবস্থার প্রতিবাদে তিনি মৃত্যু বেছে নিলেন। এবং মৃত্যুর আগের দিন ওই যুবক তাঁর ভাইকে একান্তে বলেছিলেন, পর দিন আত্মহত্যা করবেন। যদি কেউ তাঁকে পাগল 
বলে, তখন যেন সকলকে জানিয়ে দেন, তাঁর দাদা পাগল ছিলেন না। শুধু সমাজকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

সংঘর্ষের শহর
ভাঙব বলেকাঁদিয়ে তাড়ানো মানুষের মর্যাদায়

লাঠিতে শায়েস্তা
সকাল সাড়ে ন'টা: বিক্ষোভকারীদের ভিড় ইন্ডিয়া গেটে।

সাড়ে দশটা: ভিড়ের রাস্তা আটকাল পুলিশ। ভাঙচুর শুরু।

এগারোটা: ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথে মানুষ। পুলিশ ফেরত পাঠাল ভিড়কে।

বারোটা: সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ বিক্ষোভকারীদের।

সওয়া বারোটা: ধর্ষিতার স্বাস্থ্যের অবনতি।
সফদরজঙ্গের সামনে প্রার্থনা, প্রতিবাদ।

বেলা দেড়টা: রেলভবনের সামনে দিয়ে
রাইসিনা হিল যাওয়ার চেষ্টা। শুরু খণ্ডযুদ্ধ।


কামানের মুখে
সওয়া দু'টো: লাঠিতেও সরলো না ভিড়। অগত্যা ইন্ডিয়া গেটে জমায়েতের অনুমতি।

তিনটে: ইন্ডিয়া গেটে পুলিশের গাড়ি উল্টে দিল ভিড়। ধর্নায় কেজরিওয়াল। 

চারটে: বাসের মাথায় চেপে রামদেবের রামলীলা যাত্রা

সাড়ে চারটে: ইটবৃষ্টি শুরু বিক্ষোভকারীদের।
পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, পাল্টা ইট। 

পাঁচটার পরে: জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠক শীলা দীক্ষিতের।
পরে বৈঠক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের সঙ্গে ।

আটটার পরে: পুলিশের সমালোচনায় শীলা

রাজধানীর রণচিত্র: পিটিআই এবং এএফপি


আমির খান
সত্যমেব জয়তে করতে গিয়ে শিখেছি, মেয়েদের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না এলে অগ্রগতি অসম্ভব।
অভিনেতা
শাবানা আজমি
ভারতীয়দের ৫০ শতাংশের বয়স পঁচিশের নীচে। এই তারুণ্যকে বিক্ষিপ্ত হতে দিও না। বদলের অনুঘটক হও।
অভিনেতা
রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা
সামনের বার সতর্ক হয়ে ভোট দেবেন। দল, জাতপাত, ধর্মের জন্য নয় এবং অবশ্যই ভয় থেকেও নয়।
পরিচালক
শেখর কপূর
তরুণ প্রজন্ম প্রমাণ করে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মডেলে তারা শুধু সংখ্যা নয়। বদল আনার ক্ষমতাও রাখে।
পরিচালক

ভাই বুঝতে পারেননি যে, দাদা মজা করছেন না। সত্যি কথাই ভাইকে আগাম জানিয়েছিলেন। 
কিছু দিন আগে অণ্ণা হজারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক দলীয় পরিসর করায়ত্ত করেছিলেন। তবে শুধু অণ্ণার ক্ষেত্রে নয়, এর আগে নাগরিক সমাজকে কখনও বাবা আমতে, কখনও মেধা পাটকর, কখনও মহাশ্বেতা দেবী আবার কখনও কেজরিওয়ালের আহ্বানে উদ্বেল হতে দেখেছেন মানুষ। এই অণ্ণা, কেজরিওয়াল থেকে কিরণ বেদীরা হয়তো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের ঘেরাটোপে বাঁধা থাকেন না, কিন্তু অরাজনৈতিক পরিসরের মধ্যে এঁরাও যেন আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর এক-একটি ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে ওঠেন। তাঁদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদও ক্রমে ক্রমে এ দেশের গণদেবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর তাই আজ যখন নেতা ছাড়াই দিল্লির চার দিকে এক স্বতঃস্ফূর্ত অভিনব উন্মত্ততা দেখা যাচ্ছে, তখন কিন্তু কিরণ বেদী বা যোগগুরু রামদেবের বিবৃতিতে সমর্থন যতই থাকুক, বাস্তবে কিন্তু দেখা যায়, তাঁরাও এই আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন। 
রাজনীতিবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক সমাজের মধ্যেও একটি বিভেদ করেছেন। নাগরিক সমাজের বিদ্রোহ রাজনৈতিক সমাজের অঙ্গ হয়ে উঠবে কি না, সেটি নির্ভর করে আন্দোলনকারীদের সামিল হওয়ার ধারাবাহিকতা এবং তার গণতান্ত্রিক সাফল্যের উপরে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুদীপ্ত কবিরাজ বলেন, "পৃথিবীর ইতিহাসে নাগরিক সমাজের ধারণাটি নতুন নয়। এবং এটি মূলত জন লকের ভাবনা থেকে উৎসাহিত। কিন্তু পাশ্চাত্যের এই ভাবনা ভারতীয় সমাজের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে ঐতিহাসিক ভাবে।" ফরাসি বিদ্রোহের সময়েও ভলতেয়ার, রুশোর নাগরিক সমাজের তথা মধ্যবিত্ত সমাজের বিচ্ছিন্নতাই বড় বিপ্লবের অনুঘটক হয়ে উঠেছিল। সুদীপ্ত কবিরাজ মনে করেন, উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে এবং আর্থিক উদারবাদের প্রসারের ফলে অধুনা নাগরিক সমাজের বিক্ষোভের মনস্তত্ত্বটিও ভারতে অনেক আধুনিক ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। 
আর্থিক উদারবাদ ভারতের মধ্যবিত্ত সমাজের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের তুলনায় যা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় ত্রিশ কোটি মধ্যবিত্ত মানুষ, যার মধ্যে যুব সম্প্রদায় হচ্ছে নির্ধারক শক্তি। যে যুব সমাজে সততা, নিষ্ঠা, দুর্নীতি-বিরোধী মানসিকতা প্রবল। এবং এই প্রতিবাদী জনসমাজ কিন্তু শুধু গরিব, সমাজের নিচুতলার মানুষ নয়। আমির খানের মতো অভিজাত চিত্রতারকা যখন 'সত্যমেব জয়তে' অনুষ্ঠান করেন, তখন কিন্তু দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ বা দিল্লি পাবলিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও তাতে অনুরক্ত হয়। এবং সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি 'পিপলি লাইভে'র মতো চলচ্চিত্রও সমাজে মানবতা এবং নৈতিকতা বোধের এক নতুন উন্মেষ ঘটায়। সমাজ-মনোবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বারবার বলেছেন, যে জনপ্রিয় হিন্দি ছবির মধ্য দিয়েও আম-জনতার ব্যবস্থা-বিরোধী বিদ্রোহের ক্যাথারসিস হয়। সেটি কখনও রাগী যুবক অমিতাভ বচ্চন বা কখনও দাবাংয়ের সলমন খানের মাধ্যমে। এই পরিসরই নৈরাজ্যের পথে চলে যেতে পারে যদি শাসক এবং বিরোধী কোনও পক্ষই সমস্যার গভীরে না যায়। এবং এই কারণেই সমাজবিজ্ঞানী আন্দ্রে বেতেই বলেছেন, "শাসক দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে একটা রাজনৈতিক সমন্বয় (পলিটিক্যাল সিমবায়োসিস) গড়ে ওঠা প্রয়োজন।" 
আপাতত পুলিশি দমন নীতি এবং বিক্ষোভকারীদের উষ্মাকে ঠান্ডা করে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা শাসক দলের লক্ষ্য। এই অসন্তোষের উষ্মা হয়তো ক'দিন পরে থিতু হবে। প্রশ্ন থাকছেই, এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে আম জনতার বিচ্ছিন্নতা কী তাতে দূর হবে?

তরুণী আবার ভেন্টিলেটরে
বাবা বলছেন, "আমার মেয়ের মনের জোর আছে। ও খুবই সাহসী। আপনারা ওর জন্য প্রাথর্না করবেন।" সারা দেশ বলছে, শীঘ্র সেরে উঠুক মেয়েটি। আর কঠিনতম শাস্তি হোক অভিযুক্তদের। কিন্তু যাঁর জন্য এত কাণ্ড, কেমন আছেন চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার ২৩ বছরের সেই তরুণী? শনিবার মেয়েটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও রবিবার তাঁর শ্বাসযন্ত্রে কিছু সমস্যা ধরা পড়ে। ফলে ফের তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান সফদরজঙ্গ হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেনডেন্ট বি ডি আথানি। সংক্রমণ এড়াতে কড়া অ্যান্টিবায়োটিক ও হজমের ওষুধও দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিশন
দিল্লি গণধর্ষণের তদন্তের জন্য গঠিত কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। রবিবার এ কথা জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের বিশেষ কমিশনার ধর্মেন্দ্র কুমার। পাশাপাশি ধর্ষণে আরও কড়া শাস্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গড়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যম।

প্রতিদিন শুনানি
দিল্লিতে সব যৌন নির্যাতনের মামলার শুনানি প্রতি দিন করার নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। আগে কখনও এই ধরনের নির্দেশ জারি করা হয়নি। দিল্লির সব অতিরিক্ত দায়রা বিচারককেই এই নির্দেশ পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
http://www.anandabazar.com/24desh3.html

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে শিণ্ডের সাফাই

ব্যুরো রিপোর্ট,এবিপি আনন্দ

নয়াদিল্লিঃ দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডকেন্যক্কারজনক বলে ফের বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে শান্তিতে প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিণ্ডে। তিনি বলেছেন কেন্দ্রীয় সরকার এই বিক্ষোভ আন্দোলনের বিরোধিতা করছে না। শুধু শান্তিতে আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছে। এর আগে সোমবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও একই কথা বলেন। হিংসা কোনও সমস্যার সমাধান নয়।  শিণ্ডে এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, তাঁর ধারণা হয়তো এই আন্দোলনের মধ্যে মাওবাদীরাও ঢুকে পড়তে পারে। তাই হিংসার মাধ্যমে নয়, আন্দোলন শান্তিতে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি, কারণ এটা মানুষের অধিকার। তাঁর বক্তব্য, আন্দোলন করতে করতে রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা উচিত্ হয়নি আন্দোলনকারীদের। তিনি জানিয়েছেন, গত  ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণের পর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে শুনেছেন। কিন্তু বিজয়চকে জমায়েত হয়ে, নিরাপত্তা বেড়াজাল ভেঙে রাইসিনা হিলসের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাকে তিনি মোটেই  সমর্থন করছেন না। জনতাকে ছ্ত্রভঙ্গ করার জন্য রবিবার পুলিশ যে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছিল, লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল, সেবিষয় শিণ্ডের বক্তব্য, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশকে এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে৷ সরকার কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞকে নিয়ে নারী নির্যাতনের উপযুক্ত শাস্তি নির্ধারনের কমিটিও গঠন করেছে৷  তা সত্ত্বেও কেন এখনও বিক্ষোভ চলছে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। তাঁর মতে, এই বিক্ষোভে লেগে গেছে রাজনীতির রঙ৷ 

তিনি আরও বলেন, রাজ্যগুলিতে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী কেন্দ্র৷ ৪ঠা জানুয়ারি সমস্ত রাজ্যের ডিজিপি ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের ডাক দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিণ্ডে৷ বৈঠকে রাজগুলিতে কতগুলি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এবং মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাওয়া হবে রাজ্যগুলির কাছে৷

এদিকে কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দিক্ষিত রবিবার গণধর্ষণকাণ্ডের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারের বদলির দাবি তোলেন। এবিষয় শিণ্ডে জানিয়েছেন, পুলিশ কমিশনারকে বদলির বিষয় এইমুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সরকার মহিলাদের ওপর নির্যাতন সংক্রান্ত যেকোনও মামলার ফয়সালা যে ফাস্টট্র্যাক আদলতে করার আবেদন জানিয়েছিল, তা মেনে নিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। মহিলাদের সুরক্ষার জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী একটি হেল্প লাইন চালু করেছেন। ১৬৭ নম্বর ডায়াল করে মহিলারা যেকোনও সময় সরাসরি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। 

http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/31762-2012-12-24-09-45-54


ভারতের 'জাতীয় লজ্জা'

অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ১২-০৮-২০১২

মধ্য প্রদেশের ছোট্ট এক গ্রাম মারখেদা। গ্রামের মাটির ঘরের এক উঠানে বসে অতি রুগ্ন দুই বছরের ছেলে দেশরাজকে হাঁটুর নিচে বসিয়ে দোল দিচ্ছিলেন মা। বয়স তার দুই বছর, তবে দেখতে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর চেয়ে খুব বেশি বড় বলে মনে হয় না। দুর্বল শরীর, কাঠির মতো হাত-পা, কোটরে ঢুকে পড়া দুটি চোখ। ক্ষুধায় ক্লান্ত দেশরাজ খাবারের জন্য আপ্রাণ কেঁদে যাচ্ছে, তবে দুর্বল শিশুটির ক্ষীণ স্বরের এই কান্না খুব বেশি দূর যাচ্ছে না।
শিশুটি কাঁদছে কেন, বিবিসির সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলেন দেশরাজের মা। বললেন, 'আমরা তাকে খেতে দিতে পারি না।' এরপর ছেলেকে নিয়ে উঠে অন্যদিকে চলে গেলেন অসহায় মা।
এমন মা ও শিশু রয়েছে ভারতের অনেক এলাকায়। শিশুদের এই অপুষ্টির বিষয়টিকে 'জাতীয় লজ্জা' বলে অভিহিত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকা ভারত এই জাতীয় লজ্জা কাটাতে কোটি কোটি রুপি বরাদ্দ করলেও কার্যত তা কোনো ফল বয়ে আনছে না। এ জন্য ভারতের দীর্ঘদিনের শক্তিশালী দুর্নীতি ব্যবস্থাকেই দায়ী করা হয়।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বে অপুষ্টিতে আক্রান্ত প্রতি চারটি শিশুর একটি ভারতের। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আফ্রিকার সাব-সাহারা এলাকার চেয়ে ভারতে বেশি। অপুষ্টির শিকার এসব শিশু নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত। অপুষ্টিতে প্রতিবছর মারা যায় হাজার হাজার শিশু। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে এসব শিশু নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগে ভোগে।
শিশু উন্নয়ন সূচকে ভারতের অবস্থা বেশ নাজুক। সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশু উন্নয়ন সূচকে ভারতের অবস্থা প্রতিবেশী বাংলাদেশ, এমনকি আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর চেয়েও খারাপ। আজ লন্ডনে শুরু হতে যাওয়া ক্ষুধাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাই ভারতের অনেক কিছু শেখার আছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর মা এতই নিরক্ষর যে তাঁরা ঠিকমতো সন্তানের যত্ন নিতে পারেন না। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে ৬০০ পরিবার নিয়ে একটি প্রকল্প চালু করা হলেও মা-বাবার অজ্ঞতার কারণে সাফল্য আসেনি।
দরিদ্র মানুষের কাছে কম মূল্যে খাবার পৌঁছে দিতে সরকার জনবিপণনব্যবস্থার (পিডিএস) আওতায় দোকান চালু করেছে। এই দোকানগুলো আদৌ কোনো কাজে আসছে কি না, এর উত্তর সন্ধান করতে গিয়ে মিলল বেশ মজার তথ্য। কাগজে-কলমে এগুলো চালু থাকলেও বাস্তবে দেখা গেল এসব দোকান বন্ধ হয়ে আছে। দেশরাজের গ্রামের কথা ধরা যাক, পিডিএসের দোকানটি বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। 
গ্রামের একজন বাসিন্দা জানান, সরকারের কোনো কর্মীকে এই গ্রামে শেষ কবে দেখেছেন তিনি, তা মনে করতে পারেন না। তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারি দলের নেতা ওম প্রকাশ উল্টো বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, 'আপনারা কী করেন, তা দেখার জন্যই আমরা এখানে আসি।'
অনেক পরিবার জানাল, পিডিএস দোকান থেকে যেসব খাবার পাওয়া যায়, তা পর্যাপ্ত নয়। আবার এসব খাবারের মানও খারাপ। তাই বেশির ভাগ সময়ই অভুক্ত থাকতে হয় বলে জানালেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ব্রিজমোহন। 
শিবপুরিতে পুষ্টিবিষয়ক পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিত্সা দিচ্ছিলেন চিকিত্সক রাজকুমার। দুই বছর বয়সী আনজিনির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে করতে বললেন, তার ওজন চার কেজিরও কম। চরম অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুটি যক্ষ্মা ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে। 
মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের এমন খারাপ অবস্থার মুখে সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত বছর ভারতের ক্ষমতাসীন জোট খাদ্যনিরাপত্তা বিল পাস করে। এই বিল পাসের সময় কোনো সাংসদ আপত্তি না করলেও এর বাস্তবায়নে তাঁদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
ভারতের খাদ্য উত্পাদন পরিস্থিতি গত এক দশকের তুলনায় বর্তমানে অনেক ভালো বলে দাবি করলেন মন্ত্রী শচীন পাইলট। টেলিকমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও তিনি খাদ্যনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, খালি পেটের, শুকনা পায়ের শিশু প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু এখনো এমন অনেক শিশু আছে। তাদের যথাযথভাবে বড় করতে না পারলে মেধাশূন্যতার সৃষ্টি হবে।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-08-12/news/281348


সনিয়াদের আশ্বাস বৃথা, পথে পথে চলল লড়াই
হায়দরাবাদ হাউসের সামনেই ঝুলছে বিরাট পোস্টারটা। 'পুলিশ, তোমার কাঁদানে-বোমার প্রয়োজন নেই। আমাদের চোখ এমনিতেই অশ্রুসিক্ত।' 
অশ্রু এখন ঘৃণার আগুন। জলকামান-লাঠির বাড়ি-কাঁদানে গ্যাসের সামনে পড়ে সে আগুন আরও গনগনে। গোটা শহর জুড়ে খণ্ডযুদ্ধ। বহু যুদ্ধের সাক্ষী দিল্লি এমনটা দেখেনি সাম্প্রতিক ইতিহাসে।
পাল্টা? আরও লাঠি, আরও কাঁদানে গ্যাস, আরও জলকামান। মেয়েদের চুল ধরে হিড়হিড় করে টেনে সরানো! কেউ কেউ টিভি ক্যামেরার সামনে বলে উঠল, "ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে এসেছি। আজ পুলিশ আর এক বার ধর্ষণ করল আমাদের।"
প্রায় ৬৫ জন প্রতিবাদী আহত হয়েছেন এ দিন। আহত হয়েছেন ৭৮ জন পুলিশও। দুই কনস্টেবলের শারীরিক অবস্থা গুরুতর।
থামছে না বিক্ষোভ। এ বার তা হয়ে উঠল মারমুখী। পুলিশের দিকে
বাঁশ ছুড়ছেন এক প্রতিবাদী। রবিবার ইন্ডিয়া গেটের সামনে। ছবি:এ পি
কেন এমন মারমুখী হয়ে উঠল আন্দোলন? পর্যবেক্ষকরা তিনটে কারণ দিচ্ছেন। এক, বাড়াবাড়ি রকম পুলিশি আক্রমণ। সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে গিয়েছে। দুই, বিক্ষোভের দলে ভিড়ে গিয়েছে কিছু গুন্ডার দল, কিছু রাজনৈতিক ক্যাডারও। এমন নেতৃত্বহীন গণবিক্ষোভে যা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তিন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা। 
গত কাল সারা দিন দফায় দফায় দাবি উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী এক বার আসুন। মনমোহন সিংহ আসেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে সাংবাদিক বৈঠক করে দায়িত্ব সেরেছেন। এ দিন রাতে মনমোহন অবশেষে বিবৃতি দিলেন। মেনে নিলেন, মানুষের রাগের সঙ্গত কারণ আছে। স্বীকার করলেন, পুলিশের সঙ্গে এই সংঘাতের ঘটনায় তিনি ব্যথিত। প্রতিশ্রুতি দিলেন, মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার সব রকম ব্যবস্থা নেবে। রাতেই নির্যাতিতা তরুণীর বাবাও টিভি মারফত প্রতিবাদীদের অনুরোধ করলেন, শান্ত থাকতে, পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে।
এ সবের আগে গত বারো ঘণ্টায় অবশ্য দু'-দু'বার সনিয়া গাঁধী দেখা করেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। দেখা করেন রাহুলও। কংগ্রেস নেতাদের আশা ছিল, সনিয়া-রাহুল দেখা করলে উত্তেজনা কমবে। রাজধানী দেখাল, অনুমান কতটা ভুল ছিল। 
গত কাল মধ্যরাতে সনিয়া ১০ জনপথ থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। আজও কিছু ছাত্রছাত্রী দেখা করেন সনিয়ার সঙ্গে। সনিয়া নাম জানতে চাওয়ায় তাঁরা বলেন, নামে কী আসে যায়? কংগ্রেস সভানেত্রী আশ্বাস দেন, তিনি তাঁদের পাশে রয়েছেন। ন্যায়বিচার হবে। এক ছাত্রের কথায়, "সনিয়া জানিয়েছেন, তাঁরা কিছু না কিছু করবেন। তবে কবে সেটা হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।"
প্রতিবাদীদের সঙ্গে কথা বলছেন সনিয়া। ছবি: পি টি আই
এই আশ্বাসবাক্য উত্তেজনা কমাতে পারেনি। কেন? শুধুই কি প্রতিবাদীদের মধ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্বের অভাবে? সেটা একটা কারণ হতে পারে। রামদেব বা অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা বিক্ষোভে যোগ দিলে কী হবে, এ আন্দোলনের নেতৃত্ব ওঁদের হাতেও নেই (কেজরিওয়ালের হয়ে জনতার কাছে যেতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খান প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ)। এবং এর কারণটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রতিবাদীরাই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। অনেকটা গত কালই যা বলছিলেন ওমর আবদুল্লা! আজ এক বিক্ষোভকারী বলছিলেন, পুরো একটা সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে সনিয়া-রাহুল কিছু আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি ম্যাজিকের মতো বদলে দেবেন, এটা আর সম্ভব নয়। বিশেষত যেখানে পুলিশ ইতিমধ্যেই দমনপীড়নের রাস্তা নিয়ে ফেলেছে। পুলিশের এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতও। পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারকে সরতে হতে পারে, এমনও ইঙ্গিত দেন তিনি। এ সব কথা প্রকাশ্যে বলায় কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর একটা টানাপোড়েনও তৈরি হয়েছে। 
রাতে এই খবর লেখার সময়ও আনন্দবাজার অফিসের বাইরে (যা কিনা সংসদ এবং রেলভবন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে) রফি মার্গে অব্যাহত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। দলে দলে মানুষ রেলভবন, সংসদ কর্ডন করে রাখা পুলিশ-ব্যূহের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। চলছে আধলা ইট-বিনিময়, লাঠি চার্জ এবং পুলিশকে গালিগালাজ। যেখানে সাংবাদিকদের অহরহ যাতায়াত, সেই শাস্ত্রী ভবনের সামনে একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিককে লাঠিচার্জের মুখে পড়তে হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে তাঁর ক্যামেরা ও সরঞ্জাম। অদূরে ভিপি হাউসের সামনে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য রাখা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে চলছে গণ-প্রস্রাব।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিল, রেলভবন, কোপার্নিকাস মার্গ, বিজয় চক সর্বত্র। রাত ১০-২০ নাগাদ পুলিশ গিয়ে ইন্ডিয়া গেটের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের তুলে নিয়ে সরিয়ে দেয়। "পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা যেন গণধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটা সাধারণ মঞ্চ পেয়ে গিয়েছে। এখানে এমন অনেকেই আসছেন যাঁরা বা যাঁদের নিকট জন, বিভিন্ন নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগী। অথচ ন্যায়বিচার পাননি," বিকেলে বলছিলেন দলবীর কৌর। হায়দরাবাদ হাউসের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতির দিকে নজরে রাখছিলেন লাজপত নগরের এই বস্ত্র ব্যবসায়ী।
মানুষের রাগ ও যন্ত্রণার সঙ্গত কারণ আছে। পুলিশ এবং
প্রতিবাদীদের মধ্যে যে ভাবে সংঘর্ষ হয়েছে, তাতে আমি
অত্যন্ত ব্যথিত। কথা দিচ্ছি, দেশ জুড়ে মহিলাদের
নিরাপত্তা দিতে আমরা সব রকম ব্যবস্থা নেব।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ
নিজেও হাতে নিয়েছেন একটি পোস্টার। তাঁরই পাশে দাঁড়ানো মণীশ চোপড়া (পেশায় সরকারি চাকুরে) দলবীরকে সমর্থন করলেন, "বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার চিত্রটিই এ ভাবে রাজধানীতে আছড়ে পড়ল।" 
কথা থমকে যাচ্ছে পাঁচ মিনিট অন্তর কাঁদানে গ্যাসের আওয়াজে। দলে দলে পুলিশের তাড়া খেয়ে 
দৌড়ে যাওয়া মানুষের ঢল। তার ঠিক পরেই পাল্টা গালিগালাজ এবং ইট বর্ষণ। আন্দোলনের স্নায়ুকেন্দ্র অবশ্যই ইন্ডিয়া গেট। হায়দরাবাদ হাউসের সামনে অভিজাততম রাস্তা বারাক ওবামা থেকে ভ্লাদিমির পুতিন, বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনায়কের গাড়ি যার উপর দিয়ে যাতায়াত করেছে আজ সেখানে শুয়ে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ২৬শে জানুয়ারির মহড়ার জন্য জড়ো করা বেঞ্চিগুলোয় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
পোস্টার হাতে মহিলা বাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন গায়ত্রী পান্ডে। পূর্ব দিল্লির ময়ূর বিহার অঞ্চলের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের মহিলাদের জড়ো করে সকালবেলাই চলে এসেছিলেন যন্তরমন্তরে। সেখানে অনুমতি পাননি, তাই ইন্ডিয়া গেটে সামিল হয়েছেন অন্যদের সঙ্গে। ভাঙা গাড়ির সামনে অসহায় মুখে দাঁড়ানো এক পুলিশ কর্তাকে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। "প্রতিদিন ধর্ষণ, ইভ টিজিং-এর ঘটনার সময় আপনাদের টিকির দেখা যায় না। আজ এসেছেন, প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করতে?" জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায় এসেছেন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হতে। বলছেন, "যাতে এই চাপের মুখে ধর্ষণের আইন কঠোর করার সিদ্ধান্ত হয়, তারই চেষ্টা করছেন সবাই। ধৌলাকুঁয়াতেও নৃশংস ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল কয়েক বছর আগে। কিছু দিনের হইচই-এর পর সব থেমে যায়।" 
এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখে পড়ে রীতিমতো দিশেহারা দেখাচ্ছে সরকারকে। দফায় দফায় বৈঠক চলছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশাল কুমার শিন্দের সঙ্গে বসেছিলেন মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা। পরে মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের সঙ্গে পৃথক ভাবে বৈঠক করেছেন শিন্দে। সকালে সনিয়া যখন ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ। বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজও কথা বলেছেন শিন্দের সঙ্গে।
গত কাল এবং আজ ছিল ছুটির দিন। আটটা স্টেশনে মেট্রো বন্ধ রেখেও স্রোতের মতো লোক আসা ঠেকানো যায়নি। কাল, সোমবারও বন্ধ থাকবে ন'টি মেট্রো স্টেশন। প্রশ্ন হল, আন্দোলন জারি থাকলে এই ভাবে কি তা সামাল দেওয়া যাবে? তা না হলে আর কী ভাবে আটকানো যাবে নামহীন, নেতৃত্বহীন এই জনস্রোত? 
উত্তর জানে না কেউ।
http://www.anandabazar.com/24desh1.html


প্রাচীন ভারতে শূদ্রবিদ্রোহ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:২৮ |

শেয়ারঃ
00



এই সেদিনও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীরা চব্বিশজন পুলিশ খুন করল। দিনকে দিন মাওবাদীরা যেন ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণঅসাধ্য হয়ে পড়েছে, উত্তর ভারতে ওই বিপ্লবীদের তৎপরতার মাত্রা দিনদিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে। সামরিক ছাউনি বসিয়ে কিংবা পুলিশি টহল জোরদার করেও এদের যথাযথভাবে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বরং সময় যতই গড়াচ্ছে মাওবাদী বিপ্লবী গেরিলাদের ভূমিকা ততই বল্গাহীন হয়ে উঠছে । 
এখন যেমন মাওবাদীরা উত্তর ভারতের ক্ষমতার তখ্ততাউস্টি জবরদখল করতে রক্তাক্ত পথে তৎপর, প্রাচীন ভারতেও অনুরূপ রক্তঝরা বিপ্লবী তৎপরতা অব্যাহত ছিল; সভ্যতার শ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিকগন তো বলেই গেছেন : রক্তাক্ত বিপ্লব মানবেতিহাসের আদি ও অকৃত্রিম ঝোঁক। রাজনীতির ভাষায় বিপ্লবী তৎপরতাকে শ্রেণীসংগ্রাম বলে। সভ্যতার ইতিহাসে শ্রেণীসংগ্রাম দৃষ্টান্ত অপর্যাপ্ত নয় বরং অপরিমেয়। প্রাচীন চিনের হলুদ বিদ্রোহ থেকে আরম্ভ করে ১৮৭১ সালের ফ্রান্সের প্যারি কমিউন, সেই আদর্শগত উত্থানের সূত্রে বিংশ শতকের প্রারম্ভে পূর্ববাংলায় তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন প্রভৃতি গণমানুষের বিপ্লবী তৎপরতারই রক্তস্বাক্ষর। 



ভারতীয় মাওবাদী; এরা হাজার বছরের অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে চায়। এরা কি জানে শ্রেণীসংগ্রাম কিংবা গণবিদ্রোহের ফলে রাষ্ট্রকাঠামো জোর ঝাঁকুনি খায় বটে তবে ক্ষমতাসীনেরা একেবারেই লুপ্ত হয়ে যায় না। আবার তারা বেদখল হয়ে যাওয়া ক্ষমতার তখ্ততাউস্টি পুনুরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফলও হয় তারা। ক্ষমতা পুনুরুদ্ধারের পথটি কম বিচিত্র নয়। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণবিদ্রোহের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় হলেও- মাত্র পাঁচ বছর পরই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের বাংলাদেশি তাবেদারদের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সমর্থ হয়। হাজার বছর ধরে সংঘটিত বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবের এই ধারা। 

প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসেও একটি বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবময় অধ্যায়কে চিহ্নিত করা চলে। বর্তমানে ভারতবর্ষে মাওবাদীরা তৎপরতার মূলকেন্দ্রটি ভারতের বিহার। অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিপ্লব-প্রতিবিপ্লবময় অধ্যায়টি সংঘটিত হয়েছিল ওই বিহার রাজ্যেই। 
সেই চমকপ্রদ ইতিহাসের দিকে এবার মুখ ফেরানো যাক।
প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকে। এর আগেও যে রাজনীতি ছিল না,তা নয়, তবে সেই ইতিবৃত্তটি আজও তেমন স্পস্ট নয়। রাম শরণ শর্মা, দামোদর ধর্মানন্দ কোসাম্বী প্রমূখ ঐতিহাসিক খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতক থেকেই রাজনৈতিক ইতিহাস আলোচনা করেছেন। 
খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের দিকে প্রাচীন ভারতে ষোলটি স্থানীয় রাজ্য গড়ে উঠেছিল। বৌদ্ধগ্রন্থ অঙ্গুত্তর নিকয় তে এই রাজ্যগুলির নাম পাওয়া যায়। বৌদ্ধসাহিত্যে এই রাজ্যগুলির ষোড়শ মহাজনপদ বলে অবহিত করা হয়েছে। 



প্রাচীন ভারতের মানচিত্র। খিষ্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের দিকে এখানেই গড়ে উঠেছিল ষোলটি স্থানীয় রাজ্য। ষোড়শ মহাজনপদগুলি হল: কাশী কোসল অঙ্গ মগজ বজ্জি মল্ল চেদি বৎস কুরু পাঞ্চাল মৎস সুরসেনা অস্মক অবন্তী গান্ধার এবং কম্বোজ। আমাদের আলোচ্য মগধ। মগধ বলতে বর্তমান দক্ষিণ বিহারের পাটনা এবং গয়া জেলাকে বোঝাত । বর্তমানে ভারতবর্ষে মাওবাদীরা তৎপরতার মূলকেন্দ্রটি এখানেই। 





মগধ। গঙ্গানদী বিধৌত মগধের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিল। ফলে কালক্রমে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে মগধ অন্যান্য জনপদগুলির তুলনায় অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক শক্তিতে মগধ উত্তর ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে যায়। সেকালে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিল: মগধ শাসন করে যে উত্তর ভারত তার পদানত।

মগধের প্রথম রাজবংশের নাম হর্যঙ্ক বংশ। এই বংশের সম্রাটগন মগধকে উত্তরভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় শ্রেয়তর অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। হর্যঙ্ক বংশের শ্রেষ্ট নৃপতির নাম বিম্বিসার। এঁর সময়কাল ৫৪৫-৪৯২ খ্রিস্টপূর্ব । জীবনানন্দের বনলতা সেন কবিতায় এঁর উল্লেখ রয়েছে। 

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;


বৌদ্ধ ও জৈনসাহিত্যে সম্রাট বিম্বিসারকে প্রজাবৎসল ও অত্যন্ত উদার মনের অধিকারী বলে অবহিত করা হয়েছে। গৌতম বুদ্ধ এঁর সমসাময়িক ছিলেন। এঁর রাজত্বকালেই প্রাচীন ভারতীয় দর্শন এক মননশীল স্তরে পৌঁছেছিল। সম্রাট বিম্বিসার চিন্তার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন। মগধের রাজধানী রাজগৃহ নগরে জৈনধর্মের প্রবক্তা মহাবীর ও বুদ্ধ ছাড়াও অজ্ঞেয়বাদী সঞ্জয় বৈরট্টিপুত্র ও চার্বাকপন্থী নাস্তিক অজিত কেশকম্বলী নিঃসঙ্কোচে ঘুরে বেড়াতেন, নিজেদের মতবাদ জনগনের মাঝে প্রচার করতেন। রাজগৃহ নগরকে দক্ষিণ এশিয়ার এথেন্স ও সম্রাট বিম্বিসার কে গ্রিক রাষ্ট্রনায়ক পেরিক্লিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। 



বিম্বিসার। 

সম্রাট বিম্বিসার-এর পুত্রের নাম ছিল অজাতশক্র । এঁর সময়কাল ৪৯৩-৪৬২ খ্রিস্টপূর্ব। অজাতশক্র ভারতের ইতিহাসের কলঙ্ক। ক্ষমতার লোভে পিতা সম্রাট বিম্বিসার কে বন্দি করেন এবং কারাগারে প্রায়োপবেশনে ( না খাইয়ে) মেরে ফেলার নির্দেশ দেন অজাতশক্র । ক্ষমতালোভী অজাতশক্র ছিলেন যুদ্ধবাজ। গঙ্গার উত্তরে ৩৬ টি গণরাজ্য নিয়ে একটি প্রজাসংঘ গড়ে উঠেছিল। প্রজাসংঘ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে অজাতশক্র সামরিক অভিযান মনস্থ করেন। বুদ্ধ নিষেধ করেন। অজাতশক্র বুদ্ধের কথায় কর্ণপাত করেননি। 



পাটলিপুত্র। নন্দ ও মৌর্যরা এই পাটলিপুত্রকেন্দ্র করে উত্তর ভারত শাসন করেছে। আগে মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ; পরে পাটলিপুত্রে স্থানান্তরিত হয়। মগধের রাজধানী পাটলিগ্রামে স্থানান্তরিত করার কথা অজাতশক্রই প্রথম ভাবেন। পাটলিগ্রামের অবস্থান ছিল গঙ্গা ও শোন নদীর মধ্যবর্তীস্থলে। এই পাটলিগ্রামই পরে প্রাচীন ভারতের বিস্ময়কর নগর পাটলিপুত্র। অজাতশক্র এর উত্তরসূরী রাজা উদয়িন এর রাজত্বকালে এই স্থানান্তরকরণ সম্পন্ন হয়। 

রাজা উদয়িন এর বংশধরেরা দুর্বল ছিলেন। সুশাসনের অভাবে মগধজুড়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয় । এই সুযোগে হর্যঙ্ক বংশ দূর্বল হয়ে পড়লে শিশুনাগ নামে এক উচ্চভিলাষী ব্যাক্তি মগধ অধিকার করেন । এবং শিশুনাগই মগধে শিশুনাগ বংশ প্রতিষ্ঠিত করেন। শিশুনাগ বংশের সময়কাল ৪৩০-৩৬৪ খ্রিস্টপূর্ব। শিশুনাগ মগধের রাজধানী প্রথমে রাজগৃহে পরে আবার বৈশালীতে স্থানান্তর করেন। এঁর পুত্রের নাম কালাশোক কাকবর্ণ। ইনি মগধের রাজধানী আবার পাটলিপুত্রে নিয়ে আসেন। 
এ গেল মগধের রাজনৈতিক ইতিহাস। এর আড়ালে অন্য এক ঘাতপ্রতিঘাতের চোরাস্রোত সক্রিয় ছিল- যাকে বলে সামাজিক দ্বন্দ। এই সামাজিক দ্বন্দ হল বর্ণভেদ এবং দাসপ্রথা। প্রাচীন ভারতীয় সমাজে এই দুটি বিধানই জনবিক্ষোভের উপাদান বলে চিহ্নিত। বৈদিক যুগ থেকেই প্রাচীন ভারতে দাস প্রথার প্রচলন ছিল। সে যুগে যারা যুদ্ধে পরাজিত এবং বন্দী হত তাদের দাসে পরিনত করা হত। কেউ কেউ জন্মসূত্রেও দাস হত। বর্ণাশ্রম প্রথা। সমাজের সর্বনিু জাত হিসেবে শূদ্রনিগ্রহ অব্যাহত ছিল । এরাই আজ ভারতবর্ষের সমাজে 'দলিত' বলে চিহ্নিত। এ প্রসঙ্গে জনৈক ভারতীয় ঐতিহাসিক লিখেছেন: In the context of traditional Hindu society, Dalit status has often been historically associated with occupations regarded as ritually impure, such as any involving butchering, removal of rubbish, removal of waste and leatherwork. Dalits work as manual labourers, cleaning latrines and sewers, and clearing away rubbish. Engaging in these activities was considered to be polluting to the individual, and this pollution was considered contagious. As a result, Dalits were commonly segregated, and banned from full participation in Hindu social life. For example, they could not enter a temple nor a school, and were required to stay outside the village. Elaborate precautions were sometimes observed to prevent incidental contact between Dalits and other castes. Discrimination against Dalits still exists in rural areas in the private sphere, in everyday matters such as access to eating places, schools, temples and water sources. It has largely disappeared in urban areas and in the public sphere.
এক ক্রান্তিকালে মগধে শাসন করছিলেন শিশুনাগ বংশের কালাশোক কাকবর্ণ।এবার মগধের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হল এক অস্পৃশ্য দলিতের হাতে। তার নাম নন্দ; এই নিুবর্ণের যুবক কালাশোক কাকবর্ণ কে হত্যা করে মগধে নন্দবংশের প্রতিষ্ঠাতা করে। এঁর সময়কাল ৪৫০-৩৬২ খ্রিস্টপূর্ব। তার আগে অবশ্য নন্দ শব্দের আগে মহাপদ্ম যোগ করে সে। আমাদের দেশের অনেক কলিম-ছলিম যেমন নামের আগে বা পরে খান-চৌধুরী যোগ করে জাতে ওঠে। 

মহাপদ্মনন্দর মা ছিলেন শূদ্র রমনী। আপন পুত্রের মগধের ক্ষমতা গ্রহনের পিছনে এই নারীর ভূমিকা থাকতে পারে যেমন প্রাচীন ফিলিস্তিতে একটি নতুন ও সংশোধিত আর্দশের জয়গানে যিশু খ্রিস্টের মা মেরির সক্রিয় ভূমিকা অনেকেই বিবেচনা করেন। যিশুর জন্মকালীন সময়ে প্রাচীন ফিলিস্তিন শাসন করত রোমানরা; তারা দরিদ্র ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যধিক করারোপ করেছিল। যাতে করে জনগনের জীবনযাত্রা নাভিশ্বাস উঠছিল। তেমনি শিশুনাগ বংশের শাসন অসহনীয় হয়ে উঠেছিল মগধের দরিদ্র জনগন। 

সে যাই হোক। অন্য একটি সূত্রের মতে, মহাপদ্মনন্দর বাবা ছিলেন নাপিত। নাপিত আর শূদ্র রমনীর মিলনে শূদ্র নন্দর জন্ম হয়েছিল। ভারতীয় ঐতিহাসিকেরা তাঁকে হীন বংশজাত বলে উল্লেখ করেছেন। জনৈক ঐতিহাসিকের মতে: It is commonly believed that the caste division is somewhat uniform in North Indian society compared to South Indian society. However some prominent rulers of North India were believed to have originated from the Shudra caste, e.g. the Nandas, Nigams, and the Mauryas.
তা হলে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে মগধে একটি অন্ত্যজ বিপ্লব ঠিকই সংঘটিত হয়েছিল?
হ্যাঁ। তাইই। 



ভারতবর্ষে আজও দলিতরা অস্পৃশ্য। 

দলিতকেন্দ্রিক বিপ্লবের ফলে প্রাচীন ভারতীয় রাজনীতিতে ব্রাহ্মণ্য-ক্ষত্রিয় প্রাধান্যের অবসান ঘটেছিল; ব্রাহ্মণ্যবিরোধী বলে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের প্রচার ও প্রসারে জোয়ার আসে। পাঠ করুন:The collapse of the old Ksatriya dynasties under the rigorous power politics of Mahapadma Nanda, who is explicitly denigrated as the son of a Shudra, and the support extended to followers of non-Vedic philosophies, all has been described as negative signs in the Puranas, which often identify Mahapadma Nanda's rise as a mark of Kaliyuga. 
শূদ্রেরা ক্ষমতা দখলে নিলেই কলিযুগ? আর ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ জোটের শোষণশাসন স্বর্গযুগ? আজ আমরা জানি শ্র"তি-শাস্ত্র-পুরাণ ইত্যাদি কার স্বার্থে রচিত হয়েছে! ভারতবর্ষ সুপ্রাচীনকাল থেকে ছিল আর্যাবর্ত বা আর্যের ভূমি। আর্য অভিজাতেরা সামাজিক শোষণ দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে বর্ণভেদের বিধান রচেছিল। যে বিভেদের বিরুদ্ধে বাংলার লালনের হুঙ্কার -

ভেদবিধির পর শাস্ত্র কানা। 

বিভেদে সে আর্যভূমি শূদ্রের ভূমি হয়ে উঠেছিল মহাপদ্মনন্দর বিপ্লবের ফলে । মগধে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শূদ্রজাত নন্দবংশ। যে বংশের শাসনকাল ৩৬৪ থেকে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্ব।
এতসব ঘটেছিল প্রাচীন বিহারে যেখানে এখন মাওবাদীদের রক্তাক্ত পদচারণা। নন্দরাজ মহাপদ্ম নন্দের মতোই মাওবাদীরাও একটি সামাজিকঅর্থনৈতিক পরিবর্তনের লক্ষে অনঢ়। মাওবাদী অর্থনৈতিক লক্ষ আছে। নন্দবংশীয় শূদ্রবিদ্রোহের কি সেরকম লক্ষ ছিল? মনে হয় না। শূদ্রজাত মহাপদ্মনন্দর আর্ন্তবিপ্লবের ফলে মগধের শূদ্রসমাজের কি কোনও যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছিল? মনে হয় না। কারণ, ইতিহাস বিশ্লেষনে দেখা যায় বিপ্লবীরা ক্ষমতায় গিয়ে পূর্ববর্তী শোষকদের মতোই আচরণ করে। তাদের হৃদয়ের বিপ্লবী অনল মিইয়ে আসে। মগধে কতটুকু ধনবৈষম্যের প্রতিকার করতে পারল নন্দবংশ? মগধে শূদ্রবিপ্লবের ২৩ শ বছর পর এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। 
বরং ইতিহাসগ্রন্থগুলি এই সাক্ষীই দেয় যে; উর্বর কৃষিজমিতে উচ্চহারে করারোপ প্রাচীন ভারতে নন্দদের সময়েই সূত্রপাত হয়েছিল। এতে কৃষকের জীবন বিপর্যস্তই হয়ে পড়েছিল বলে অনুমান করা চলে। 



মগধে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু

নন্দদের অপরিমেয় ধনের কথাও ইতিহাসপুরাণে লিখিত আছে। এই ধনের কারণ মগধের উর্বর কৃষিজমিতে উচ্চহারে করারোপ। তাছাড়া বৈদেশিক আক্রমনের হুমকি নন্দদের রাষ্ট্রযন্ত্রকে আরও সুসংহত করেছিল। গ্রিক সম্রাট আলেকজান্দার ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চল আক্রমন করেছিলেন। সেই সময়কার প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গঙ্গাঋদ্ধি নামে একটি পরাক্রান্ত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের কথা শোনা যায়। গঙ্গাঋদ্ধি মগদের নন্দশাসনের করতলগত ছিল। বিদেশি লেখকদের চোখে মগধ হল প্রাসি । গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে প্রাসির শাসনাধীন ছিল। 



নন্দ সাম্রাজ্য

মহাপদ্মনন্দর পরে নন্দবংশের অন্যতম শাসকের নাম ধননন্দ। অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ' নন্দবংশীয় রাজা ধননন্দ আলেকজান্ডারের সমসাময়িক। এঁর রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। গ্রিক লেখকদের কাছে ইনি 'আগ্রামেস' নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীতে ২০,০০০ অশ্বারোহী, ২০০,০০০ পদাতিক, ২০০০ রথ এবং ৩০০০ হাতি ছিল। গঙ্গাহৃদি ও প্রাসি তাঁর শাসনাধীন ছিল। (প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ১ম খন্ড। পৃষ্ঠা, ১৩১) 

 

প্রাচীন মগধ এখন কেবলি স্মৃতিচিহ্ন 

এরপরও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। মগধের নন্দবংশের অপরিমেয় ধনসম্পদে মগধের শূদ্রসমাজের বিশেষ কি উন্নতি হল? নিজেদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে অকাতরে ব্যয় করেছে নন্দ সম্রাটগন। নন্দদের সৈন্যবাহিনীতে ৩০০০ হাতি ছিল। হাতির রক্ষণাবেক্ষণ তো ব্যয়বহুল। যে কারণে শূদ্রসমাজ পদদলিতই রয়ে গেল। আজও তাই আছে। 
সোনার বাংলার স্বপ্নে যুদ্ধ করে আজও সোনার বাংলা স্বপ্নই রয়ে গেছে ...
তবে ইতিহাসচর্চায় আবেগ বিসর্জন দেওয়াই ভালো। নিরাবেগ ইতিহাসবিশ্লেষন অনেক সময় সত্য উপলব্ধিতে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। ১৯৭২ থেকে '৭৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকার শাসনকার্যে কি স্বাধীনতা যুদ্ধের স্পিরিটটি প্রতিফলিত হয়েছিল? নাকি তাদের ভূমিকাও হয়ে উঠেছিল পাকিস্তানি শোষকদের মতোই? এই অনিবার্য প্রশ্নটি ভবিষ্যতেও উঠবে। কেননা, দেখা গেছে বিপ্লবীরা ক্ষমতা গিয়ে পূর্ববর্তী শোষকদের মতোই আচরণ করে। চিনের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী কি সত্যিই বিপ্লবপূর্ব আদর্শে পরিচালিত? না, আমরা চিনে আরেকটি বিপ্লব কিংবা প্রতিবিপ্লবের জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। 

 

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): প্রাচীন ইতিহাস ;
প্রকাশ করা হয়েছে:  ইতিহাস (প্রাচীন)  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৩:১৬ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

http://www.somewhereinblog.net/blog/benqt60/29101851



No comments:

Post a Comment