Thursday, December 20, 2012

ধর্ষণে দু’নম্বরে, নারী নির্যাতনে শীর্ষে বাংলা

ধর্ষণে দু'নম্বরে, নারী নির্যাতনে শীর্ষে বাংলা
শুধু দিল্লিই নয়। মহিলাদের উপর অত্যাচারের প্রশ্নে পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। বলছে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ধর্ষণের ঘটনাকে সাজানো অভিযোগ বলে দাবি করুন না কেন, ২০১১-র হিসেব বলছে, ধর্ষণে দেশের মধ্যে দু'নম্বরে রয়েছে তাঁর রাজ্য। আর (ধর্ষণ, পণ বা অন্যান্য কারণে নিগ্রহ, খুন, পাচার এই সব ধরনের অপরাধ মিলিয়ে) নারী নির্যাতনে এই রাজ্য ছিল এক নম্বরে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য জানাচ্ছে, শুধু দিল্লি বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, গত কয়েক বছর ধরেই ধর্ষণ, নারী নির্যাতন বেড়েছে গোটা দেশেই। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সালে গোটা দেশে ধর্ষণ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। আর সার্বিক ভাবে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। দেশের চারটি বড় শহরের মধ্যে এগিয়ে থাকায় দিল্লিই এখন কার্যত ধর্ষণের রাজধানী। দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় গত এক বছরে ৫৭২টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও কলকাতায় সংখ্যাটি যথাক্রমে ২২১, ৯৭, ৭৬ ও ৪৬টি।
শহর কলকাতা আপাত ভাবে নিরাপদ হলেও সামগ্রিক ভাবে গোটা রাজ্যের অবস্থা যে ভাল নয় সেটা বেশ স্পষ্ট পরিসংখ্যানেই। ২০১১ সালে রাজ্যে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ২,৩৬৩টি। গোটা দেশে এর থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে শুধু মধ্যপ্রদেশে (৩৪০৬টি)। আর গোটা দেশে গত বছর ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে ২৪,২০৬টি।
২০১১-য় নথিভুক্ত ধর্ষণ
রাজ্যে
• মধ্যপ্রদেশ ৩,৪০৬ (১৪.১%)
• পশ্চিমবঙ্গ ২,৩৬৩ (৯.৮%)
• উত্তরপ্রদেশ ২,০৪২ (৮.৪%)
• রাজস্থান ১,৮০০ (৭.৪%)
• অসম ১,৭০০ (৭%)
• অন্ধ্রপ্রদেশ ১,৪৪২ (৬%)
• কেরল ১,১৩২ (৪.৭%)
শহরে
• দিল্লি ৫৭২ • মুম্বই ২২১
• ভোপাল ১০০ • বেঙ্গালুরু ৯৭
• জয়পুর ৯২ • পুণে ৭৯ 
• চেন্নাই ৭৬ • আমদাবাদ ৬০
• হায়দরাবাদ ৫৯ • কলকাতা ৪৬
• তিরুঅনন্তপুরম ৩৯ • লখনউ ৩৮
• পটনা ২৭
* সূত্র: ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো
নারী নির্যাতন
• প্রথম পশ্চিমবঙ্গ ২৯,১৩৩ • দ্বিতীয় অন্ধ্রপ্রদেশ ২৮,২৪৬
• তৃতীয় উত্তরপ্রদেশ ২২,৬৩৯ • সারা ভারতে ২,২৮,৬৫০
গোটা দেশে গত এক বছরে ২,২৮,৬৫০টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ঘটেছে ২৯,১৩৩টি ঘটনা। সারা দেশের হিসেবে যা ১২.৭%। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের এই বাড়বাড়ন্তে স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। উদ্বিগ্ন জাতীয় মহিলা কমিশন অবিলম্বে প্রতিটি রাজ্যের মুখমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য চিঠি লিখতে চলেছেন। দিল্লির গণধর্ষণ-কাণ্ডে বিচলিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ দোষীদের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে ও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেকে।
গত চার বছরে দেশে মহিলাদের উপর নির্যাতনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৩.৪ শতাংশ। জাতীয় মহিলা কমিশন ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর সম্ভাব্য দু'টি কারণের কথা বলছে। এক, মহিলাদের উপর নির্যাতন আগের থেকে সত্যিই অনেক বেড়েছে। দুই, আগে মহিলারা নির্যাতিত হলে ঘটনার পর মানসিক ভাবে এতটাই গুটিয়ে যেতেন যে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস করতেন না। এখন আগের চেয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধি হওয়ায়, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ায় মহিলারা সাহস করে এগিয়ে এসে পুলিশে অভিযোগ নথিভুক্ত করছেন। এর ফলেও নারী নির্যাতনের অভিযোগ আগের থেকে অনেক বেশি পুলিশের খাতায় জমা পড়ছে। 
তবে মহিলা কমিশনের বক্তব্য, "এই যুক্তি তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও এটা তো সত্যি হত এক 
বছরে এই সংখ্যক নারীর উপর নির্যাতন হয়েছে এ দেশে। এবং এটাও সত্যি এখনও শুধু প্রত্যন্ত অঞ্চলই কেবল নয় বড় শহরে মহিলা নির্যাতনের পরে অভিযোগ দায়ের করার সাহস পান না।"
http://www.anandabazar.com/20desh3.html

টাকা-ক্ষমতার সস্তা আস্ফালন মুখ পোড়াচ্ছে দিল্লির
ন্নয়নের আলোর নীচেই অপরাধের আঁধার! রাজধানী দিল্লিতে এক দিকে যখন নগরায়ণের ঢেউ উঠেছে, অন্য দিকে তখন এই শহরের বুকেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ। 
কমনওয়েলথ গেমস ঘিরে গত কয়েক বছরে দিল্লির নাগরিক পরিকাঠামোর অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। শহরের কোণায় কোণায় ঝাঁ-চকচকে শপিং মল, আকাশছোঁয়া আবাসন। যেখানে এক একটি ফ্ল্যাটের দাম শুরুই হচ্ছে কোটি টাকা থেকে। সেই রাজধানী সম্পর্কেই জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, ধর্ষণের হিসেবে অন্তত গত পাঁচ বছর ধরে দেশের অন্যান্য সমস্ত মেট্রো শহরকে পিছনে ফেলে রেকর্ড গড়েছে দিল্লি। যে কোনও বছরে কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে মোট ধর্ষণের ঘটনার চেয়ে শুধু দিল্লিতে ধর্ষণের সংখ্যা বেশি। 
মেট্রো শহর শুধু নয়, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যকেও পিছনে ফেলেছে দিল্লি। রাজ্যগুলির আয়তন বেশি, লোকসংখ্যাও বেশি। অথচ দিল্লিতে যেখানে প্রতি এক লক্ষ মহিলার নিরিখে ধর্ষণের গড় ৭.২, সেখানে হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশে 
এই সংখ্যাটা যথাক্রমে ৬.২, ৫.৪ ও ২.৫। পুলিশের হিসেব বলছে, ধর্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য সব রকম যৌন নিগ্রহের ঘটনাও দিল্লিতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
ধর্ষণের রাজধানী
২০১০ : ৫০৭
২০১১ : ৫৭২
২০১২ : ৬৩৫
(১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত)
কেন এই দুর্গতি দিল্লির?
রাজধানীর আদত বাসিন্দা থেকে সমাজতত্ত্ববিদ, মহিলাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, দিল্লির একটা বড় অংশের মানুষের হাতে হঠাৎ করে প্রচুর কাঁচা টাকা এসে গিয়েছে, যার অনেকটাই অসদুপায়ে আয় করা। বহু ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এই টাকার উৎস হল জমি-বাড়ির দালালি। সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে ধৃতদের মধ্যে রয়েছে এক বাসচালক ও তার ভাই, এক ফলওয়ালা, এক জিম ইনস্ট্রাক্টর। চরিত্রগুলোকে কলকাতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। এদের অনেকেরই হাতে আছে নানা ভাবে আয় করা টাকা, তার সঙ্গে রয়েছে দুর্বিনীত, বেপরোয়া মেজাজ। রাজধানীতে বাস করার ফলে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক স্তরে যোগাযোগও তৈরি হয়েছে এদের অনেকের। টাকা আর ক্ষমতায় ভর করে এই শ্রেণির লোকেরা, বিশেষত উঠতি বয়সের যুবকরা নামছে অ্যাডভেঞ্চারে। এদের বিশ্বাস, পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ছাড় পাওয়া যাবে। কাজেই আইনের ভয় নেই। এমনিতেই দিল্লিতে শহরের আদি বাসিন্দার চেয়ে অন্যান্য রাজ্য থেকে পড়াশোনা, ব্যবসা বা চাকরি করতে আসা লোকের সংখ্যা বেশি। ফলে একই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যেও সামাজিক বন্ধন নেই। এমন নানা কারণেই দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা এত বাড়ছে। এর জন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে দায়ী করে লাভ নেই। এটা একটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অসুখ বলে মনে করছেন সবাই।
অভিনেতা রাহুল বসু যেমন বলছেন, "দিল্লির মেয়েটির উপর অত্যাচার ও গণধর্ষণ প্রমাণ করে, মহিলাদের উপর নির্যাতনের একটা বিরক্তিকর শহুরে ধারা তৈরি হয়েছে।" দিল্লির গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী সেহবা ফারুকির মতে, "দিল্লির গ্রামগুলিতেও এখন হুহু করে নগরায়ণ হচ্ছে। যার ফলে এমন একটা নতুন শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে, যারা উপরতলার মানুষ নয়, আবার চাকুরিজীবী বা সরল সাদাসিধে গ্রামবাসীও নয়। ধর্ষণের মতো বেশির ভাগ অপরাধই এদের অ্যাডভেঞ্চার আর পেশিশক্তির থেকে জন্ম নিচ্ছে।" জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মার সাফ কথা, "অল্প বয়স থেকেই মহিলাদের সম্মান করাতে শেখাতে হবে।" আবার সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চের ডিরেক্টর রঞ্জনা কুমারী মনে করেন, মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি, এই ধরনের অপরাধ ঠেকাতে দিল্লির মতো শহরে, যেখানে বিভিন্ন ভাষাভাষীর বাস, সেখানে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে হবে।
http://www.anandabazar.com/20desh4.html

No comments:

Post a Comment