Saturday, December 29, 2012

http://basantipurtimes.blogspot.in/ ভারতবর্ষ কি শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াবে শোকের আবেগ কাটিয়ে বাস্তবের কঠিন জমিতে? রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই যে আসলে ধর্ষণ সংস্কৃতিরই নামান্তর, তা উপলব্ধি করে? পীড়িতা তরুণীকে তড়িঘড়ি সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার যে নির্লজ্জ চক্রান্ত করেছে আধিপাত্যবাদী কর্তৃত্ব, তার মর্মার্থ কি আমরা আদৌ উদ্ধার করতে পারবো? যে কলকাতা আবেগে , প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে, যেখানে ধর্ম মাতৃতান্ত্রিক এবং আমরা সবাই মায়েরই ভক্ত, দুর্গোত্সব আমাদের সংস্কৃতি, সেখানেই প্রতি পদে পদে নারীত্বের চরম অবমাননা কেন?কেন বিদ্রোহী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে লিখতে হয়, ধর্ম থাকতে নারীর অধিকার দুরস্থান, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায় অলীক কল্পনা? তসলিমাকে নির্বাসিত করে আমরা কি সত্য পালটাতে পেরেছি? দিল্লীর ক্ষোভে সুর তাল মিলিয়ে যে কলকাতা রাস্তায় নামে, এই বাংলায় ধর্ষণের রোজনামচার প্রতিবাদে তার কন্ঠ কেন রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষ অনুযায়ী দ্বিধাগ্রস্ত? বাংলা নারী নির্যাতনে এক নম্বর, অপরাধিদের শাস্তিতে পনেরোই বা কেন? কেন মা মাটি মানুষের সরকার ধর্ষণের যাবতীয় অভিযোগ সাজানো বলে উড়িয়ে দেয়?আমরা বাঙ্গালিরা প

ভারতবর্ষ কি শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াবে শোকের আবেগ কাটিয়ে বাস্তবের কঠিন জমিতে? রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই যে আসলে ধর্ষণ সংস্কৃতিরই নামান্তর, তা উপলব্ধি করে? পীড়িতা তরুণীকে তড়িঘড়ি   

সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার যে নির্লজ্জ চক্রান্ত করেছে আধিপাত্যবাদী কর্তৃত্ব, তার মর্মার্থ কি আমরা আদৌ উদ্ধার করতে পারবো? যে কলকাতা আবেগে , প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে, যেখানে ধর্ম মাতৃতান্ত্রিক এবং আমরা সবাই মায়েরই ভক্ত, দুর্গোত্সব আমাদের সংস্কৃতি, সেখানেই প্রতি পদে পদে নারীত্বের চরম অবমাননা কেন?কেন বিদ্রোহী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে লিখতে হয়, ধর্ম থাকতে নারীর অধিকার দুরস্থান, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায় অলীক কল্পনা? তসলিমাকে নির্বাসিত করে আমরা কি সত্য পালটাতে পেরেছি? দিল্লীর ক্ষোভে সুর তাল মিলিয়ে যে কলকাতা রাস্তায় নামে, এই বাংলায় ধর্ষণের রোজনামচার প্রতিবাদে তার কন্ঠ কেন রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষ অনুযায়ী দ্বিধাগ্রস্ত? বাংলা নারী নির্যাতনে এক নম্বর, অপরাধিদের শাস্তিতে পনেরোই বা কেন? কেন মা মাটি মানুষের সরকার ধর্ষণের যাবতীয় অভিযোগ সাজানো বলে উড়িয়ে দেয়?আমরা বাঙ্গালিরা পৃথীবীতে নিজেদের সবচাইতে বুদ্ধিমান বিপ্লবী মনে করি অথচ জায়নবাদী মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণের তন্ত্র সম্পর্কে কতটা জানি? দিল্লীর গণধর্ষমের আড়ালে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপে যে সংস্কার চলছে সর্বদলীয় সম্মতিতে, যে ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ চলছে ও করপোরেট এজেন্ডা অনুযায়ী গণসংহারের করপোরেট নীতি নির্ধারণ হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই কেন?


পলাশ বিশ্বাস


http://basantipurtimes.blogspot.in/



মৃত্যুর কাছে হার মানল বাঁচার মরিয়া লড়াই। তেরো দিনের লড়াই শেষে মৃত্যু  হল দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণীর। ভারতীয় সময় রাত দু'টো পনেরোয় তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিঙ্গাপুরেই তাঁর ময়না তদন্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিস।ভারতবর্ষ কি শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়াবে শোকের আবেগ কাটিয়ে বাস্তবের কঠিন জমিতে? রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াই যে আসলে ধর্ষণ সংস্কৃতিরই নামান্তর, তা উপলব্ধি করে? পীড়িতা তরুণীকে তড়িঘড়ি   

সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার যে নির্লজ্জ চক্রান্ত করেছে আধিপাত্যবাদী কর্তৃত্ব, তার মর্মার্থ কি আমরা আদৌ উদ্ধার করতে পারবো? যে কলকাতা আবেগে , প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে, যেখানে ধর্ম মাতৃতান্ত্রিক এবং আমরা সবাই মায়েরই ভক্ত, দুর্গোত্সব আমাদের সংস্কৃতি, সেখানেই প্রতি পদে পদে নারীত্বের চরম অবমাননা কেন?কেন বিদ্রোহী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে লিখতে হয়, ধর্ম থাকতে নারীর অধিকার দুরস্থান, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায় অলীক কল্পনা? তসলিমাকে নির্বাসিত করে আমরা কি সত্য পালটাতে পেরেছি? দিল্লীর ক্ষোভে সুর তাল মিলিয়ে যে কলকাতা রাস্তায় নামে, এই বাংলায় ধর্ষণের রোজনামচার প্রতিবাদে তার কন্ঠ কেন রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষ অনুযায়ী দ্বিধাগ্রস্ত? বাংলা নারী নির্যাতনে এক নম্বর, অপরাধিদের শাস্তিতে পনেরোই বা কেন? কেন মা মাটি মানুষের সরকার ধর্ষণের যাবতীয় অভিযোগ সাজানো বলে উড়িয়ে দেয়?আমরা বাঙ্গালিরা পৃথীবীতে নিজেদের সবচাইতে বুদ্ধিমান বিপ্লবী মনে করি অথচ জায়নবাদী মস্তিস্ক নিয়ন্ত্রণের তন্ত্র সম্পর্কে কতটা জানি? দিল্লীর গণধর্ষমের আড়ালে একের পর এক সাহসী পদক্ষেপে যে সংস্কার চলছে সর্বদলীয় সম্মতিতে, যে ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ চলছে ও করপোরেট এজেন্ডা অনুযায়ী গণসংহারের করপোরেট নীতি নির্ধারণ হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই কেন?


উত্তুরে হাওয়ার দাপট কিছুটা কমায় আজ, শনিবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শীতের তীব্রতা সাময়িক ভাবে কমবে বলে পূর্বাভাস দিল আলিপুর আবহাওয়া দন্তর৷ ফলে, গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য জুড়ে যে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা চলছিল, তা থেকে সাময়িক মুক্তি মিলতে পারে৷ শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে শৈত্যপ্রবাহের যে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল, তাও আপাতত তুলে নেওয়া হচ্ছে৷ আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে চার ডিগ্রি কম৷ বৃহস্পতিবারের তুলনায় এই তাপমাত্রা অবশ্য সামান্য বেড়েছে৷ দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে৷ আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, শৈত্যপ্রবাহের সতর্কবার্তা তুলে নেওয়া হলেও ঠান্ডা যে একেবারে চলে যাচ্ছে এমন নয়৷ একই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আজ সকালে কুয়াশার দাপট থাকবে বলেও তারা সতর্ক করেছে৷ 


ক্রমশই জোরালো হচ্ছে কঠোর আইনের দাবি


ক্রমশই জোরালো হচ্ছে কঠোর আইনের দাবি
শোকবার্তা 

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-- 'উনি একজন সাহসী নারী যিনি সম্মান ও জীবনের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়েছিলেন। উনিই দেশের আসল নায়ক, যুবসমাজের শ্রেষ্ঠ প্রতীক। 

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-- '...উনি জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে পারেন, কিন্তু আমাদের সকলকে নিশ্চিত করতে হবে, এই মৃত্যু যেন বৃথা না যায়'। 

শীলা দীক্ষিত -- 'আমাদের হৃদয় লজ্জা ও দুঃখে দগ্ধ। এটা স্তব্ধ থাকার বা কথা বলার সময় নয়, আমাদের অন্তরে গভীর প্রতিফলনের সময়। খুঁজে বের করতে হবে, সমাজে এমন কী আছে যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-- 'ঘটনায় আমি শোকাহত। এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে আইন কঠোর করা প্রয়োজন। তার দায়িত্ব কেন্দ্রের। প্রয়োজনে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক। আমরা সহযোগিতা করব।' 

সুষমা স্বরাজ-- 'দেশের বিবেকে ধাক্কা দিয়েছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। আমাদের জেগে উঠতে হবে, ভারতকে কন্যাসন্তানদের জন্য নিরাপদ করে তুলতে হবে।' 

সুশীলকুমার শিন্ডে -- 'আইন কঠোর করার লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।' 

নরেন্দ্র মোদি-- 'দেশের বীর কন্যার মৃত্যুতে শোকাহত।' 

অমিতাভ বচ্চন-- 'আমানত, দামিনী-- এগুলো এখন একেকটা নাম মাত্র... দেহটা চলে গিয়েছে, কিন্তু ওঁর আত্মা আমাদের হৃদয়ে চিরকাল অমর থাকবে।' 

অভিষেক বচ্চন-- 'দেশকে জাগাতে কেন সবসময়েই এমন একজন নিষ্পাপের বলি দিতে হবে? এই দেশে তো আমি বড় হইনি। আমার মেয়ে এমন একটা দেশে বড় হোক, তা চাই 

না।' 

কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নয়, চিকিত্‍সকদের পরামর্শেই নির্যাতিতা তরুণীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। 

তিনি আরও জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে নির্যাতিতা কিশোরীর সমস্ত চিকিত্‍সার ভার ও তাঁর অভিভাবকদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার খরচ ও বিদেশে যাওয়ার পাশপোর্ট করানোর দায়িত্ব বহণ করছে সরকার। কিশোরীর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য চিকিত্‍সার কোন খামতি রাখবে না সরকার। তাঁকে তড়িঘড়ি সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য কোনো রাজনৈতিক হাত নেই। এটা পুরোটাই অভিঞ্জ চিকিত্‍সকদের পরামর্শ নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

তাঁর চিকিত্‍সার জন্য আমেরিকা, লন্ডন অথবা জার্মানির মতো অত্যাধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিকিত্‍সকেরা চিন্তা ভাবনা করেছিলেন। তবে, কিশোরীর শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত হয়। 

যে ভাবে কিশোরীর ইচ্ছাশক্তি সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে উঠতে পেরেছে, তাতে সে খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। 

গত ২৬ ডিসেম্বর, দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের দ্রুত ব্যবস্থা করে সঙ্কটজনক অবস্থায় নির্যাতিতা কিশোরীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

যন্তরমন্তরে শীলা দীক্ষিতকে ঘিরে ধরে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের৷ ফিরতে হল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে৷ নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ৷ দেশ জুড়ে শোকপালন আর প্রতিবাদ মিছিল৷
১৩ দিনের মাথায় থেমে গেল লড়াই৷ মৃত্যুর কাছে হেরে গেল জীবন৷ কিন্তু, তাঁকে ভোলেনি দেশ৷ তাঁকে ভোলেনি রাজধানী৷ তাই, আজও হাতে ছিল মোমবাতি৷ চোখে জল৷
দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে মৃত তরুণীর আত্মার শান্তি কামনায় যন্তরমন্তরে জমায়েত হয়েছিল কয়েক'শ মানুষ৷ দুপুর ২টো নাগাদ সেখানেই যান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত৷ তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কমপক্ষে ৫০০ মানুষ৷ বিক্ষোভের মুখে ফিরতে হয় শীলা দীক্ষিতকে৷ 
শনিবার সকাল থেকেই যন্তরমন্তরে জড়ো হতে শুরু করেন অসংখ্য মানুষ৷ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়ের বহর৷ 
প্রতিবাদ বেঙ্গালুরুতেও৷ সারি সারি মোটরবাইকে নিস্তব্ধ প্রতিবাদেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় তাঁকে৷ 
কলকাতায় মেট্রো চ্যানেলের সামনেও চলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন৷ জ্বলে ওঠে শ'য়ে শ'য়ে মোমবাতি৷ 
দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরু৷ প্রতিবাদের সূত্রে মুছে গেল দূরত্ব৷ কালো কাপড়ে ঢাকা মুখ গুলোর একটাই প্রশ্ন, আর কতদিন? আর কতবার?


সবার আগে এই সময়ে আজ প্রকাশিত এই খবরটে পড়ুনঃ


নারী নিগ্রহে শীর্ষে, সাজা দেওয়ায় ১৫ নম্বরে রাজ্য



হিমাদ্রি সরকার 

নারী নির্যাতনের ঘটনায় দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ৷ কিন্ত্ত অভিযুক্তদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের অবস্থান বেশ পিছনের সারিতেই৷ ১৫ নম্বরে৷ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) ২০১১ সালের তথ্য তেমনই বলছে৷ বৃহস্পতিবার কোচবিহারে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, নারী নির্যাতনকারীদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ৷ এনসিআরবি-র তথ্য কিন্ত্ত মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবি নস্যাত্‍ করেই দিচ্ছে৷ প্রসঙ্গত, এনসিআরবি রাজ্যের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের রিপোর্ট তৈরি করে৷ তাদের পরিসংখ্যানের মধ্যে নারী-পাচার, বধূ নির্যাতনের মতো ঘটনাও ধরা হয়েছে৷ এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী নারী নির্যাতনের বিভিন্ন মামলায় গত বছর এ রাজ্যে মাত্র ০.৩২ শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে৷ এই হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেকটাই কম৷ বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলির তুলনাতেও অনেকটাই পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ৷ 

তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের৷ এ বছর নারী নির্যাতনের যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল, তা হল ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ড৷ ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কাদের খানকে এখনও গ্রেন্তারই করতে পারেনি পুলিশ৷ এমনকী মাস ছয়েক আগে চার্জশিট জমা পড়লেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ-গঠন করা যায়নি৷ ফলে, বিচার প্রক্রিয়াও থমকে রয়েছে৷ পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার কয়েক দিন পরেই কাটোয়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে নামিয়ে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করা হয়৷ ওই ঘটনায় পুলিশ ন'জনকে গ্রেন্তার করেছিল৷ কিন্ত্ত সেই মামলাও চলছে ধীরগতিতে৷ এনসিআরবি-র ২০১২-র রিপোর্ট এখনও প্রকাশিতই হয়নি৷ কিন্ত্ত রাজ্য পুলিশ সূত্রে এ বছরের প্রথম ছ'মাসের যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতেও রাজ্যে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত মিলেছে৷ এ বছর জুন পর্যন্ত রাজ্যে ১৩৮২টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে৷ গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ২৩৬৩৷ 

২০১১-র এনসিআরবি রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের মধ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনায় শীর্ষস্থানে ছিল পশ্চিমবঙ্গ৷ গত বছর রাজ্যে নারী নির্যাতনের ২৯ হাজার ১৩৩টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল৷ আগের বছরগুলির বকেয়া মিলিয়ে গত বছর পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৮৯টি নারী নির্যাতনের মামলা বিচারের অপেক্ষায় ছিল৷ তার মধ্যে সাজা হয়েছে ৪৪৮টি ক্ষেত্রে৷ ৪৪৪৩টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন৷ বছর শেষে বকেয়া মামলার সংখ্যা ১ লক্ষ ৩২ হাজার ২০৮৷ তার মধ্যে ধর্ষণের মামলা ১৩ হাজার ৩২টি৷ শ্লীলতাহানির মামলা ১৩ হাজার ৯২টি৷ রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক জানান, অনেক ক্ষেত্রে ফরেন্সিক রিপোর্ট যথাসময়ে না এসে পৌঁছনোয় মামলার চার্জ-গঠনে দেরি হয়৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারদের উপরে কাজের চাপ থাকায় অথবা তাঁদের গাফিলতিতেও চার্জশিট ঠিক সময়ে দাখিল হয় না৷ হলেও তাতে বিস্তর ফাঁক থেকে যায়৷ তবে পর্যান্ত সংখ্যক আদালতের অভাবেই বেশিরভাগ মামলা ঝুলে থাকে৷ অভিযুক্তদের সাজাও হয় না৷ 


রাজনীতির কারবারিদের সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই ফের কুরুচিকর মন্তব্যের অভূতপূর্ব নজির গড়লেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। পার্ক স্ট্রিটে সেদিনের ধর্ষণের শিকারকে সরাসরি ওই দিন পার্ক স্ট্রিটে কোনও ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি। যা হয়েছে, তা হল মহিলার সঙ্গে তার খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। 

আজ সিএনএন আইবিএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, "...পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটি ধর্ষণের কোনও ঘটনাই নয়। ওই মহিলা (ধর্ষিতা) এবং তাঁর খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জের।"

স্বভাবতই ২৪ ঘণ্টাকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পরেন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের অভিযোগকারী। তাঁর প্রশ্ন, "আমাকে কী বলতে চান সাংসদ? আমি কি দেহপসারিণী?" তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, `আ রেপ ইজ আ রেপ`। 

স্বভাবতই তাঁর এই মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে সব মহলেই। বুদ্ধিজীবী থেকে রাজনৈতিক মহল, কাকলি দেবীর মন্তব্যে নিন্দা এসেছে সব মহল থেকেই। 

কাকলি ঘোষদস্তিদারের মন্তব্য শুনতে ক্লিক করুন এখানে। 


এবিপি আনন্দ  প্রতিবেদনঃ


কলকাতাঃদিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণকে ঘিরে যখন উত্তাল গোটা দেশ, অপরাধীদের চরম সাজার দাবিতে বিক্ষোভে ফুঁসছে রাজধানী, উদ্বিগ্ন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, তখন বিক্ষোভকারীদের একাংশকে কটাক্ষ করে বিতর্কের ঝড় তুললেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র তথা জঙ্গিপুরের কংগ্রেস সাংসদ অভিজিত্‍ মুখোপাধ্যায়৷ দিল্লিতে বিক্ষোভকারী মহিলাদের একাংশ রং মেখে প্রতিবাদে নেমেছেন এবং তাঁরা কেউ ছাত্রী নন বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি৷ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, যাঁরা মোমবাতি হাতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান, নিচুতলার মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই! এরপরই তীব্র সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সব মহলে৷ শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি-তনয়৷ 

সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট থেকে শুরু করে কিরণ বেদী, বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি, সকলেই তাঁর কটাক্ষে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ অভিজিতের কড়া সমালোচনা করেন বৃন্দা বলেন, মহিলাদের অপমান করেছেন উনি৷ ক্ষমা চাওয়া উচিত ওনার। অভিজিতের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া এতটাই জোরালো ছিল যে, তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন তাঁর বোন তথা রাষ্ট্রপতি-কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, অভিজিত্‍ এসব বলতে পারেন ভাবিনি৷ বিশ্বাসই হয় না৷আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ এরকম নয়৷ দাদার হয়ে ক্ষমা চাইতে রাজি৷ দিল্লির বিক্ষোভ নিয়ে দাদার একেবারে উল্টো সুরে শর্মিষ্ঠা এও বলেন, মানুষের ক্ষোভের সঙ্গত কারণ রয়েছে৷ এই প্রতিবাদ স্বতঃস্ফূর্ত৷ একে রাজনীতির চোখ দিয়ে দেখা উচিত নয়৷ এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বাবার কথাও উল্লেখ করেন শর্মিষ্ঠা। জানান, তিনি  নিশ্চিত, তাঁর বাবা  দাদার মতের সঙ্গে সহমত নন। শর্মিষ্ঠা বলেন, উনি তো বিবৃতি দিয়েছেন এবং ঘরোয়া কথাবার্তায় ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র উষ্মা পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন।পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলপন্থী অর্পিতা ঘোষের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শর্মিষ্ঠা বলেন, ধর্ষণ তো ধর্ষণই, তা যেখানেই হোক৷ 
এরপরই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন অভিজিত্‍৷ বলেন, অন্য প্রেক্ষিতে কথাটা বলেছিলাম৷ কাউকে আঘাত করতে চাইনি৷ ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করছি৷ কিন্তু তিনি ক্ষমা চাইলেও তাতে ক্ষোভের প্রশমন  হয়নি। বৃন্দা বলেন, রাজনৈতিক নেতারা মহিলাদের প্রতি কটুক্তি করে স্রেফ ক্ষমা চেয়ে পার পেতে পারেন না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে যর্থার্থ আচরণবিধি চালু করার দাবি করেন তিনি। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কিরণ বেদির বক্তব্য, উনি এমন কথা বলে থাকলে খুবই দুঃখের।বাস্তবের সঙ্গে এই মন্তব্যের কোনও যোগই নেই। একজন জনপ্রতিনিধির মুখে এমন কথা অবশ্যই তাঁর অসহিষ্ণুতাই প্রকট করে তুলেছে। এজন্যই তো সমস্যা বাড়ছে। বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ছেলের মুখ থেকে এমন কথা বেরল! সেজন্যই এত খারাপ লাগছে। তাও এমন একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ে তিনি কথাগুলি বলেছেন যখন মেয়েদের সুরক্ষার দাবিতে পুরুষরাও রাজপথে নামছেন।


দিল্লিতে নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে শোকবার্তা পোস্ট করেছেন তিনি। তারপরই শুরু হয়েছে সমালোচনা। রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে ফেসবুকে বহু মানুষ সরব হয়েছেন। 

চলন্ত বাসে গণধর্ষণ এবং তারপরে নির্মম প্রহারের জেরে মৃত্যু হয়েছে তরুণীর। তরুণীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে একটি শোকবার্তা পোস্ট করেছেন তিনি। তাতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন ----

"দিল্লিতে ঘৃণ্য ও বর্বর আক্রমণের শিকার ওই তরুণী আজ মারা গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যু চরম দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখের। আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। এই ঘটনা নৃশংসতার যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন করেছে। দোষীদের কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে এবার কঠোর আইন তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ করার আগে কেউ তার পরিণতি সম্পর্কে ভাবে। কঠোর আইন পাস করানোর জন্য কেন্দ্র প্রয়োজনে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে পারে। আমরা সর্বতো ভাবে সহযোগিতা করব। পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধ যাতে আর না ঘটে, সে জন্য জনমানসে সচেতনতা, দায়িত্ব এবং স্পর্শকাতরতা বাড়াতে হবে। এই দুঃখের সময় মৃতার পরিবারকে গভীর শোক জানাই।"

ফেসবুকে মুখ্যমন্ত্রীর এই শোকবার্তা সামনে আসার পরই কিন্তু সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ধর্ষণের ঘটনায় দ্বিচারিতার অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকে। 

উজ্জ্বল দত্ত: আপনার কী এসে যায়? আপনার কাছে তো সব ধর্ষণের ঘটনাই মিথ্যা, রং চড়ানো, এবং ধোয়া তুলসী পাতা সরকারকে বদনাম করার জন্য সাজানো। মুখ বন্ধ রাখুন। আর হ্যাঁ, একটা কথা। আমি কিন্তু মাওবাদী নই। 

শিবাজি দেবনাথ: দিদি, দয়া করে আপনার দলের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে শাস্তি দিন। তাঁর মানুষ হওয়ার কোনও যোগ্যতাই নেই। 

রক্তিম ঘোষ: পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষিতাকে আগে বিচার দিন। আর ওনার চরিত্রের দিকে আঙুল তোলা বন্ধ করতে বলুন। 

জুনা কিমওয়াহব: বেশ লম্বা-চওড়া আপডেট। পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে কী হয়েছিল, তা সবাই জানে ম্যাডাম ...! তারপরেও আর এসব কথা বলবেন না। 

সৌরভ দাস: আমি নিজে তৃণমূলের সমর্থক। তবু বাধ্য হয়ে বলছি, আপনি যে এত জ্ঞান দিচ্ছেন, আপনার নিজের রাজ্যের অবস্থা জানেন? ... আপনি ফেসবুকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে না গিয়ে, আগে নিজের রাজ্য দেখুন। নইলে কিছু দিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ধর্ষণের ঘটনায় গিনেস বুকে নাম লেখাবে। 

মৌমিতা চক্রবর্তী: পার্ক স্ট্রিটের নির্যাতিতার প্রতি কি কোনও সমবেদনা নেই, কারণ তিনি তো মারা যাননি! 

বর্ণালি ঘোষ: দিদি, আপনি এত কথা বলছেন। কিন্তু আপনি মহিলা হয়ে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাকে সাজানো ঘটনা বলেছেন। ... দিদি, এবার আপনি একটু চোখ খুলে দেখুন। 

সুরঞ্জন ঘোষ: কথার চেয়ে কাজের জোর বেশি, আশা করি আপনি জানেন

অমল মাঝি: নিজের ঘরেই ছিদ্র। আর লোকের বাড়ির দিকে আঙুল তুলে কী হবে!!!

জয়জিত ভৌমিক: আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে যদি দিল্লির ঘটনাটা ঘটত, তাহলে তিনি কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেন????

সৌরভ মিত্র: পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে দোষীদেরও চরম শাস্তি চাই

নির্মাল্য শেঠ: ধর্ষণকে কি পশ্চিমবঙ্গে সাজানো এবং দিল্লিতে ধর্ষণ বলে!!




সুফল সরকার: দিল্লিরটাও মিথ্যা। সব পাবলিকের সাজানো।  


পার্ক ষ্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের কুরুচিকর মন্তব্যের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠল সমাজের সব মহলে। সাংসদের করা বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে আর এক তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন বলেন, "তাঁর বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।" একজন জনপ্রতিনিধির এ ধরনের মন্তব্যে মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কবীর সুমন প্রশ্ন তুলেছেন, "এ ভাবে নিজেকে ছোট করছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার?"

মহিলাদের ধর্ষণযোগ্য বলা, তাঁদের মর্যাদা হানি করা। এমন চললে বিপদে পড়বে গোটা সমাজ।  কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মন্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন সুনন্দ সান্যাল। সেইসঙ্গে, রাজ্যে পুলিসি সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে বলেও মন্তব্য করেন এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ। 

কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নাট্যকর্মী কৈশিক সেনও। ধর্ষণের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করে। এ সবের মধ্যে জড়িয়ে নিজেদের হাস্যকর করে তুলছেন তৃণমূল নেতারা। এ থেকেই বোঝা যায় তাঁদের কাণ্ডজ্ঞান কতটা কম। পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ড প্রসঙ্গে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মন্তব্য সম্পর্কে এমনটাই মত কৌশিক সেনের। আবার সমাজকর্মী মীরাতুন নাহারের প্রশ্ন, "ঘটনার এতদিন পর কাকলি ঘোষদস্তিদার এমন মন্তব্য করছেন কেন?"

দেহপসারিণী হলে কী তাঁকে ধর্ষণ করা আইনতসঙ্গত? তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এমনই প্রশ্ন তুললেন পার্কস্ট্রিট কাণ্ডের অভিযোগকারীনি। তাঁর অভিযোগ, সরকার তাঁর ওপর মানসিক চাপ তৈরি করছে।  

রাজনীতির কারবারিদের সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই ফের কুরুচিকর মন্তব্যের অভূতপূর্ব নজির গড়লেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। পার্ক স্ট্রিটে সে দিনের ধর্ষণের ঘটনাকে সরাসরি ওই দিন পার্ক স্ট্রিটে কোনও ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর মতে, যা হয়েছে তা হল মহিলার সঙ্গে তার খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি!


চিকিত্‍‍সা চলছিল সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। শুক্রবার থেকে ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে তরুণীর। বিকল হতে থাকে বিভিন্ন অঙ্গ। সর্বোচ্চ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে।

শেষ পর্যন্ত শরীরের বেশ কয়েকটি অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ায় থেমে গেল এই তরুণীর মরিয়া লড়াই। শেষ সময়ে ওই তরুণীর পাশে ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাই কমিশনের আধিকারিকরাও। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে আজই বিকেল পাঁচটার পর তরুণীর দেহ নিয়ে আসা হবে ভারতে। তবে মৃত তরুণীর দেহ দিল্লি না উত্তরপ্রদেশে গোরখপরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে তাঁর পরিবারই।

মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁর মানসিক জোরকে কুর্নিশ জানানো হয়েছে। "তরুণী অত্যন্ত সাহসী। শেষপর্যন্ত সমস্ত রকম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনির কিন্তু তাঁর শরীরের ক্ষত এতটাই গভীর ছিল যে শেষরক্ষা হল না"। তরুণীর মৃত্যুর পর শনিবার সকালে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়।

হাসপাতালের সিইও কেভিন লো বলেন, "আট জন চিকিত্সকের বিশেষ টিম ক্রমাগত তরুণীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত দু'দিন ধরে তাঁর শারীরিক অস্থার অবনতি হতে থাকে। শরীর ও মস্তিষ্কে গভীর ক্ষত থাকা কারণে ও একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ায় মৃত্যু হয় তাঁর"। সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার আগেই দিল্লির সফদরজং হাসপাতালেই একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তরুণী। তিনবার অস্ত্রপচার করা হয় তাঁর।

গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ২৩ বছরের ওই ছাত্রী। ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে উত্তাল রাজধানী। 


দোষীদের শাস্তি দিতে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করবে না সরকার। দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ড প্রসঙ্গে শুক্রবার এ কথা বললেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি। তিনি জানিয়েছেন, নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের পাশে সরকার রয়েছে। অন্য দিকে, গণধর্ষণের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্যের জন্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অভিজিত্‍ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেছেন, 'উনি নিজের কথা ফিরিয়ে নিয়েছেন, ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছেন। এর পর আর কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।' 

গণধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল রাজধানী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, বিবৃতি দিয়েছেন সকলেই। এমনকী জাতির উদ্দেশে ভাষণ পর্যন্ত দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু এত দিন বিষয়টিতে মুখ খোলেননি সনিয়া। অবশ্য বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে কংগ্রেস সভানেত্রী মুখ খুললেন শুক্রবার। বলেছেন, 'যে তরুণী তাঁর জীবনের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন, আমরা সকলে তাঁর পাশে আছি। আমাদের একমাত্র প্রার্থনা, উনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং দোষীদের যাতে কালবিলম্ব না-করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়।' 

এদিন কংগ্রেসের ১২৭তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে সনিয়া গান্ধির সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও। প্রধানমন্ত্রী এদিনও বলেছেন, 'এই ঘৃণ্য অপরাধের প্রতিবাদে যে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে, আমরা তার শরিক। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, দোষীদের কঠোরতম সাজার ব্যবস্থা করবে সরকার।'


দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে ধৃত ছয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এবার খুনের মামলাও দায়ের করতে চলেছে দিল্লি পুলিস। এদিন ভোররাতে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে ২৩ বছরের নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুর পর দিল্লি পুলিসের তরফে একথা জানানো হয়েছে। দিল্লি পুলিসের তরফে জানানো হয়েছে, ফাস্ট ট্রাক করে যাতে দিল্লি গণধর্ষণ মামালার নিষ্পত্তি হয়, তার চেষ্টা চালাবে তারা। সেইসঙ্গে, অপরাধীদের কঠিন শাস্তিরও চেষ্টা চালাবে দিল্লি পুলিস। এছাড়াও দিল্লি পুলিসের তরফে শহরের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়েছে।

দিল্লি ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত ছ`জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, অপহরণ, অপ্রাকৃতিক অপরাধ, আঘাত করা ও ডাকাতি করার মতো মামলা চলছিল। তরুণীর মৃত্যুর পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা দায়ের হবে। দিল্লি পুলিস জানিয়েছে, ২ জানুযারি এই ঘটনার চার্জশিট পেশ করা হবে। মনে করা হচ্ছে, প্রায় হাজার পাতার চার্জশিট পেশ করা হবে ওই দিন। আগামী সোমবারের মধ্যে ফরেন্সিক তদন্তের রিপোর্টও চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।


দিল্লির নিগৃহীতা তরুণীর শরীরে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণই তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিত্‍‍সক যতীন মেহেতা। দিল্লি থেকে সিঙ্গাপুরে তরুণীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার সময় তরুণীর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার চিকিত্‍‍সক যতীন মেহেতা। শুক্রবার রাতে কলকাতায় ফিরে একান্ত সাক্ষাত্‍‍কারে ২৪ ঘণ্টাকে জানালেন তরুণীর শারীরিক পরিস্থিতি। 

দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল। দীর্ঘ ছয় ঘন্টার যাত্রা। তিরিশ হাজার ফুট উচুঁতে উড়ান। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া ২৩ বছরের তরুণীর লড়াই। পুরো যাত্রাপথেই সঙ্গে ছিলেন যতীন মেহেতা। তরুণীর শারীরিক অবস্থাও পরীক্ষা করেছেন তিনি। শুক্রবার রাতে কলকাতায় ফিরে তিনি জানিয়েছেন শরীরে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমনই নিগৃহীতা তরুণীর শারীরিক সংকটের সবথেকে বড় কারণ।
 
সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার সময়ও তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কমে যায় রক্তচাপ। সেইসময় ঠিক কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল চিকিত্সকের? যতিন মেহেতা বলেন, "শুরু থেকেই তাঁর অভ্যন্তরীন ক্ষত ছিল। আগাগোড়াই অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক ছিল। বেশিরভাগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গ্যাংরিনের কারণে বিকল হতে শুরু হয়ে যায়।" চিকিত্‍‍সক যতীন মেহেতা জানিয়েছেন বাইরের চোটের থেকে শরীরের ভেতরের জখমই বেশি ছিল তরুণীর দেহে। তবে কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। 


গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ২৩ বছরের ওই ছাত্রী। সে রাতে একটি বেসরকারি বাসে তিনি ও তাঁর এক বন্ধু সওয়ার হন। চলন্ত বাসে অন্য ছয় যাত্রীর সাঙ্গে তাঁদের বচসা বাঁধে। তরুণী ও তাঁর বন্ধুকে বেধড়ক মারধর করে ওই ছয় অপরাধী। তরুণীকে ধর্ষণ করে তাঁকে ও তাঁর বন্ধুকে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তায়।

টানা ১০ দিন ধরে দিল্লির সফদরজং হাসাপাতালে ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে একটি বিশেষ বিমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সকালে ওই তরুণীর একাধিক অঙ্গ বিকল হওয়ার কারণে মৃত্যু হয়।

ঘটনার দু`দিনের মাথায় চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিস। গত সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশ থেকে পঞ্চম অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিস। ঠিক তার পরের দিন বিহার থেকে ষষ্ঠ জনকে গ্রেফতার করা হয়।


শোক, ক্ষোভ একাকার হয়ে আছড়ে পড়ল কলকাতার বুকে। প্রতিবাদী কলকাতায় আজ শুধুই মোমবাতি, মিছিল, মোমবাতি-মিছিল। কখনও নীরবে, কখনও সোচ্চারে আরও একবার প্রতিবাদী হল শহর কলকাতা। 

তেরো দিনের অদম্য লড়াইয়ের পর শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন দিল্লির তরুণী। চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার এই ২৩-এর কন্যার লড়াইয়ের সঙ্গে প্রথম দিন থেকেই সামিল ছিল সারা দেশ। সঙ্গে ছিল এ শহরও। গোটা রাজ্য। আজকেও তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিবাদে পা মেলাল কলকাতা। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে একাধিক মিছিল বার হয় আজ।

কলেজ স্কোয়ার থেকে এসপ্লানেড অবধি একটি মিছিলে এক সঙ্গে হাঁটেন বিভিন্ন বামপন্থী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি। প্রায় দু`হাজার মানুষ সামিল হন এতে। স্লোগান, পোস্টারে প্রতিবাদ জানান। শুধু দিল্লির ঘটনা নয়, দেশ জুড়ে বেড়ে চলা নারী নির্যাতনও বারবার উঠে আসে তাঁদের স্লোগানে। 

অন্যদিকে মৌন মিছিল করলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু হয়ে শেষ হয় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। মিছিলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন সংগঠনের নেতারা। 

এছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু ছোট বড় মিছিল হয়। মোমবাতি মিছিলে দিল্লির সাহসিনীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।


বাজারদরে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রির পক্ষে এনডিসি



বাজারদরে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রির পক্ষে এনডিসি
নয়াদিল্লি: রিলায়েন্স সহ দেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক গ্যাস প্রস্ত্ততকারী সংস্থাগুলিকে বাজার চলতি দামে প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করল জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ৷ বৃহস্পতিবার দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১২-১৭) গৃহীত প্রস্তাব সম্পর্কে জানাতে গিয়ে জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ বলে, 'প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ঠিক করার সময় বাজার চলতি দামের নিরিখেই তা ঠিক করার অনুমতি উত্পাদনকারী সংস্থাগুলিকে দেওয়া উচিত৷' বর্তমানে ভারতে উত্পাদিত প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ৪.২ মার্কিন ডলার, যা ওই গ্যাসের আমদানিমূল্যের ৩৩ শতাংশ৷ 

বিভিন্ন ধরণের ক্রেতার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পৃথক রাখলে তা নিয়ে জালিয়াতি হতে পারে এবং এ কারণে সারা দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের একই দাম চালু করার বিষয়টি নতুন করে বিবেচনার প্রয়োজন৷ বাজারের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামে পরিবর্তন ঘটানোই নীতি বলে প্রস্তাবে জানিয়েছে জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ৷ 

পর্ষদের বৈঠকে বক্তব্য জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, 'ভারতে প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা এবং অন্যান্য তরল জ্বালানীর দাম আন্তর্জাতিক বাজারের দামের তুলনায় অনেক কম৷ দেশের বাজারে জ্বালানীর দাম অত্যন্ত কম হলে সংস্থাগুলি তাদের উত্পাদন দক্ষতা বাড়াতে এবং জ্বালানীর জোগান বাড়াতে আগ্রহী হবে না৷' তিনি আরও বলেন, 'দেশের বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানীর দামের যে পার্থক্য রয়েছে তা দ্রুত মেটানো সম্ভব নয়, তবে ধারাবাহিকভাবে তা কমিয়ে আনা অবশ্যই প্রয়োজন৷' 

২০১১-১২ অর্থবর্ষে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ছিল ১৯৪ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার৷ চলতি অর্থবর্ষে তা বেড়ে ২৮৬ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এই চাহিদা ৪৬৬ মিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক মিটার হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ৷ নতুন এক্সপ্লোরেশন এবং লাইসেন্সিং নীতিতে (নিউ এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি) সংস্থাগুলির কর ছাড়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার কথাও জানানো হয়েছে পরিকল্পনায়৷ বর্তমানে নেল্প-এর আওতায় থাকা খনিগুলি থেকে অপরিশোধিত তেল উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাতবছরের আয়কর ছাড় দেওয়া হয়৷ কিন্ত্ত একই খনি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্পাদনের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়া যায় না৷ জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদ তাদের প্রস্তাবে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাসকে 'বিশেষ পণ্য' হিসাবে চিহ্নিত করার কথা বলেছে যাতে দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেই তা একই দামে পাওয়া যায়৷ 

দফায় দফায় তেল, গ্যাসের দাম বাড়াতে চান মনমোহন
দফায় দফায় তেল, গ্যাসের দাম বাড়াতে চান মনমোহন
নয়াদিল্লি: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্বাদশ যোজনায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধির ভাবনা যথেষ্ট উচ্চাশা বলে মন্তব্য করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং৷ বৃহস্পতিবার ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের (এনডিসি) সাতান্নতম বৈঠকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এই পরিস্থিতিতে 'চলছে-চলবে' মানসিকতা আঁকড়ে থাকলে চলবে না৷ জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী নিজে৷ কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রের পূর্ণমন্ত্রীরা এবং সবক'টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ 

দ্বাদশ যোজনায় সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার ৮.২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করার কথা বলেছে যোজনা কমিশন৷ এ দিন সেই বিষয়েই এনডিসিতে আলোচনা হয়৷ দ্বাদশ যোজনা শুরু হয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে৷ আর এই যোজনায় এ নিয়ে দ্বিতীয় বার সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার কমালো যোজনা কমিশন৷ 

ন'বছরে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার সবচেয়ে কম ৬.৫ শতাংশ ছিল ২০১১-১২ সালে৷ চলতি অর্থবর্ষে এই হার ৫.৭ থেকে ৫.৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে মনে করা হলেও প্রথম ছ'মাসে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার হয়েছে ৫.৪ শতাংশ, যা এক দশকে সবচেয়ে কম৷ 

দ্বাদশ পরিকল্পনায় বৃদ্ধির হার আট শতাংশে নামিয়ে আনাকে 'ঠিকঠাক পরিমার্জন' (রিজনেবল মডিফিকেশন) বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, 'এ বছর যেখানে বৃদ্ধির হার ছয় শতাংশেরও কম সেখানে দ্বাদশ যোজনায় বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ভাবা উচ্চাশা৷ আমরা যদি করছি-করবো মনোভাব নিই তবে এই আশা পূরণ করা সম্ভব হবে না৷' যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়া আগেই বলেছিলেন বিশ্বের এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই তাঁরা দ্বাদশ যোজনায় দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির অনুমান কমিয়েছেন৷ যখন পরিকল্পনা করা হয়েছিল তখন বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল৷ 

ভারতকে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এমনকি কয়লাও আমদানি করতে হয়৷ প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, চাহিদা ও সেই সঙ্গে আমদানির পরিমাণ কমানোর জন্য ওই সমস্ত পণ্যের দাম আরও বাড়ানো উচিত৷ কারণ, আন্তজাতিক বাজারের তুলনায় বিদ্যুত, কয়লা, তেল ও গ্যাসের দাম দেশের বাজারে অনেক কম, বিশেষ করে কিছু শ্রেণির উপভোক্তাদের ক্ষেত্রে৷' তিনি অবশ্য বলেন, 'দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে ওই ফারাক এক্ষুনি দূর করা সম্ভব নয়৷ কিন্ত্ত, ধীরে ধীরে দাম বাড়িয়ে সেটা করা সম্ভব এবং সেটাই এখন জরুরী৷' 

'শক্তির মূল্যের দুটি প্রভাব রয়েছে৷ যদি অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতের দাম খুব কম কম হয় তা হলে বিদ্যুতের খরচ কম করার জন্য কোনও উত্সাহ দেওয়া যাবে না এবং পরিষেবাও বাড়ানো যাবে না,' প্রধান মন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন৷ শক্তিক্ষেত্রে ভর্তুকি কতটা দেওয়া উচিত তা স্থির করতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির একযোগে কাজ করা উচিত বলে তিনি জানান৷ মনমোহন সিং বলেন, সরকারের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত অর্থনীতির শ্লথ হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আবার গতিশীল করা৷ 'আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ক্রমাগত শৈথিল্য সর্বত্রই বৃদ্ধির গতিকে শ্লথ করে দিয়েছে৷ আমাদের প্রথম কাজই হল এই অভিমুখ উল্টো করে দেওয়া৷' 

ভর্তুকি দেওয়া সিলিন্ডারের পরিমাণ কমানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিমত, 'পেট্রোপণ্যের দাম এ দেশে কমই রয়েছে৷' একই বন্ধনীতে রেখেছেন বিদ্যুত্ এবং কয়লাকেও৷ তিনি বলেন, ভর্তুকির জেরেই পরিকল্পনা খাতে খরচ কমাতে হচ্ছে৷ 'দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে শক্তির দাম কম৷ আমাদের দেশে কয়লা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দামের তুলনায় কম৷ এর মানে হল বিদ্যুতের দামও খুব কম, বিশেষত কিছু কিছু গ্রাহককে কম মূল্য দিতে হয়৷' 

এই ভর্তুকি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভর্তুকি সামাজিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে৷ তবে বিষয়টি সুবিন্যস্ত হতে হবে ও কাদের ভর্তুকি দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করতে হবে৷ ভর্তুকির মাত্রা আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে৷ এই সীমার মধ্যে ভর্তুকি বেঁধে না রাখতে পারার অর্থ হয় পরিকল্পনা খাতে খরচ কমানো নয়তো লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো আর্থিক ঘাটতি৷' 

পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর কাঠামো সংস্কারে ও করকাঠামো ঢেলে সাজতে জিডিপির হিসাবে করের অনুপাত বাড়ানো দরকার৷ তিনি বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে জিএসটির দ্রুত বাস্তবায়ন কঠিন৷ তবে আমি আশা করব এ ব্যাপারে প্রতিটি রাজ্যের সহযোগিতা পাব ও দ্রুত জিএসটি কার্যকর করতে পারা যাবে৷' 'দেশের পাঁচটি দরিদ্রতম রাজ্যের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার এই প্রথম কোনও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি হচ্ছে৷ আমার মনে হয়, আর কিছুদিনের মধ্যে ভারতে 'বিমারু' রাজ্য বলে কিছু থাকবে না,' প্রধান মন্ত্রী বলেন৷ 

স্তম্ভিত, দুঃখিত, লজ্জিত 
প্রতিক্রিয়া বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের

নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ২৯শে ডিসেম্বর— আমরা স্তম্ভিত, দুঃখিত, লজ্জিত। গোটা দেশ ও জাতির কাছে এই ঘটনা লজ্জার। দিল্লিতে ছাত্রীকে ধর্ষণের ন্যক্কারজনক ঘটনা ও ১৩দিন ধরে টানাপড়েন শেষে শনিবার ভোররাতে তাঁর মৃত্যুতে এই প্রতিক্রিয়াই জানালেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। 

বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সি পি আই (এম)-র রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে এদিন বলেন, এই মৃত্যু আমাদের দেশের লজ্জা। এই ঘটনায় যারা দোষী তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া যায়, তবে এধরনের ঘটনা কমানো যাবে না। এই মৃত্যু থেকে দেশের ও রাজ্যের সরকারকে, আমাদের সকলকে শিক্ষা নিতে হবে। নয়া-উদারবাদী নীতির কারণেই যে এই ধরনের অপরাধ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেকথা উল্লেখ করে বিমান বসু এদিন বলেন, গত দু'দশক ধরে দেশে নয়া-উদারবাদী অর্থনীতি চলছে। এই নীতির প্রভাবেই সমাজে ভোগবাদী প্রবণতা বাড়ছে এবং সবকিছুকেই পণ্যের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। নারীদেহের পণ‌্যায়নের ফলে বিজ্ঞাপনে তার অশালীন ব্যবহার চলছে। এসবই ধর্ষণের মতো অপরাধের প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে। শক্তহাতে এই সব অপরাধ দমন করার ব‌্যবস্থা করতে হবে। এটাই হওয়া উচিত এই ঘটনা থেকে শিক্ষা। বিমান বসু বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রীর পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আজ রাজ্যের প্রতিটি জেলায় বামফ্রন্টের উদ্যোগে শোকমিছিল করা হচ্ছে সহমর্মিতা জানিয়ে।

ফরওয়ার্ড ব্লক বাংলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ এদিন বলেন, দিল্লিতে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তারপর আজ সকালে এই দুঃসংবাদ এলো। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, এটা আমাদের সভ্যতার পক্ষে কলঙ্ক। সভ্য সমাজে এই ঘটনা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। কলকাতাতেও এধরনের ঘটনা ঘটছে। নতুন প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ, আসুন, সকলে মিলে এর প্রতিবাদে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে, সোচ্চার হতে হবে।

সি পি আই রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারও দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের দেশে মেয়েদের শুধু ধর্ষণের শিকারই হতে হচ্ছে না, তার পরিণতিতে তাঁদের মৃত্যুও হচ্ছে। সেই অর্থে মহিলাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। স্বাধীনতার ৬৫বছর পরেও এই চিত্র আমাদের পক্ষে লজ্জার। তিনি বলেন, দিনের পর দিন এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসাবে আমাদের পক্ষে এটা আরো উদ্বেগের যে, ধর্ষণের ঘটনায় দিল্লির পরই এখন এরাজ্য দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এটা মনে রাখা দরকার যে ধর্ষণের ঘটনা যারা ঘটায় তারাই কেবল দোষী নয়, যারা এই কাজে সাহায্য করে, ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে, তারাও কম দোষী নয়। ‌অপরাধীরা যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায়, তারজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং আইন কার্যকরী করার ব‌্যবস্থা করতে হবে। মজুমদার বলেন, এর বিরুদ্ধে সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সজাগ, সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে। 

আর এস পি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, এটা সমগ্র জাতির লজ্জা। নৃশংস এবং দুঃখের এই ঘটনা সভ্য জগতে ভাবাই যায় না। তিনি সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, যখন দিল্লিতেই উপযুক্ত চিকিৎসা হতে পারতো, তখন সরকার দায় এড়ানোর জন্য মেয়েটিকে বিদেশে নিয়ে গেল। সেখানে যাওয়াতে তাঁর পরিবারের অসুবিধাই হয়েছে। তিনি এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানান।

http://ganashakti.com/bengali/breaking_news_details.php?newsid=1001


নারী নিগ্রহের সাজায় রাজ্য এক নম্বর, কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ঘিরে প্রশ্ন



নারী নিগ্রহের সাজায় রাজ্য এক নম্বর, কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ঘিরে প্রশ্ন
কোচবিহারের পুন্ডিবাড়িতে বক্তব্য রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি----কৌশিক রায়।
চিত্রদীপ চক্রবর্তী এবং প্রবীর কুণ্ডু 

কোচবিহার: পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনকারীরা সাজা পায় বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলা সফরে এসে পুণ্ডিবাড়িতে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি চাই, মা-বোনেদের উপর যেন কোনও অত্যাচার না হয়৷ এ ধরনের একটাও ঘটনা ঘটলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে 'স্ট্রং অ্যাকশন' নিতে বলি৷ আমাদের সরকার এরকম ঘটনায় অ্যাকশন নেওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বরে রয়েছে৷ আমরা কেন্দ্রকে বলেছি, এই সংক্রান্ত আইন আরও শক্তিশালী করতে৷' মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বললেও ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেব বলছে, নারী নির্যাতনের ঘটনায় এ রাজ্যের স্থান উপরের সারিতে৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির সঙ্গে অবশ্য বাস্তবের অনেক ফারাক৷ পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ-কাণ্ডের পর তিনি প্রথমেই তাকে 'সাজানো ঘটনা' বলে মন্তব্য করেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আজও অধরা৷ কাটোয়ায় ধর্ষণের পর সংশ্লিষ্ট মহিলার স্বামীকে সিপিএম সমর্থক বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ এর সঙ্গে চক্রান্তের ইঙ্গিতও দেন তিনি৷ পরে দেখা যায়, ওই মহিলার স্বামী কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন৷ 

কোচবিহার সফরের দ্বিতীয় দিনে এ দিন পুণ্ডিবাড়িতে একসঙ্গে ১১ টি প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'গত দেড় বছরে আমরা ২ লক্ষ চাকরি দিয়েছি৷' বিরোধী দলের প্রতি তাঁর প্রশ্ন, 'প্রাথমিক শিক্ষকদের এক লক্ষ চাকরি দেওয়া হয়েছে কি না,আপনারাই বলুন কমরেড! পুলিশে ৪০ হাজার চাকরি হয়েছে৷ কি, হয়নি? ভিলেজ পুলিশ নিয়েছি৷ জঙ্গলমহলে ১৫ হাজার চাকরি হয়েছে৷ কোথাও চিকিত্সক ছিলনা৷ আমরা আড়াই হাজার চিকিত্সক ও নার্স নিয়েছি৷' তিনি বলেন, 'অথচ কিছু লোক সন্ধ্যা হলেই টিভিতে আমাদের সমালোচনায় বসে পড়ে৷ আমাকে পছন্দ নাই করতে পারেন৷ কিন্ত্ত আমার কাজকে পছন্দ করুন৷ আমার নিজের নামও তো আমার পছন্দ নয়, কিন্ত্ত কী করব?' এ দিনও যথারীতি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে৷ এ বার উত্তরবঙ্গ সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার আসেন ডুয়ার্স হয়ে৷ জলপাইগুড়ির জাতীয় সড়কের বেহাল দশায় তাঁকে ওই পথ দিয়ে আনার ঝুঁকি নেয়নি জেলা প্রশাসন৷ তাঁরা যে জাতীয় সড়কের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এটা দিল্লির রাস্তা৷ এক বছর আগে আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে বলেও কাজ করাতে পারিনি৷ আমাদের এমপিরা ধর্ণায় বসে কিছু করাতে পারেননি৷ এটা বর্ডার এলাকা৷ স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট৷ কেন্দ্র কেন রাস্তা সারাই করবে না৷ না পারলে আমাদের বলুন, আমরাই এ কাজ করে নেব৷' 

কোচবিহারে বিমানবন্দর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখানে বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা রানওয়ের৷ ওটা বাড়াতে হবে৷ এজন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রাজ্য সরকার হাতে নিয়েছে৷ কোচবিহারে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারের পাশাপাশি জুট রিসার্চ সেন্টার এবং ৩৩ একর জমিতে জুট পার্ক তৈরির ঘোষণাও করেন তিনি৷ পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলির প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, 'সাত লক্ষ কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আবেদন জমা পড়ে রয়েছে৷ অথচ ব্যাঙ্ক কিছুই করছে না৷ আমরা বলেছি সব ছেড়ে দিতে৷' তাঁর দাবি, বাংলায় এত শিল্প হবে যে কাউকে বাইরে যেতে হবে না৷ এখানেই সবাই কাজ পাবেন৷ ৩৫ বছরে কিছু না হলেও আগামী দশ বছরের মধ্যে বাংলাকে সোনার বাংলা করে দেওয়া হবে৷ সেজন্য সরকারি মঞ্চ থেকেই তাঁর আবেদন, 'পঞ্চায়েতে এমন কাউকে ভোট দেবেন না যারা সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়৷ আমি চাই মানুষ তাদের ভোট দিন যারা কাজ করছে৷' সব শেষে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, 'আমি হয়ত থাকব না কিন্ত্ত আমার সরকার ৬০ বছর থাকবে৷' 

'সাজানো' নয়, নারী নিগ্রহকে 
অপরাধ হিসাবেই দেখুক রাজ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি: কলকাতা, ২৯শে ডিসেম্বর—অধরা কাদের খান গা-ঢাকা দিয়ে থাকার রসদ পায়। ধর্ষিতা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহিলা আত্মঘাতী হওয়ার মানসিক অবসাদে ভোগেন।

কাটোয়ার ধর্ষিতা জননীকে প্রমাণ দিতে হয় তাঁর স্বামী ১১বছর আগেই মারা গেছেন।

বারাসাতের লাঞ্ছিতা তরুণীকে তাঁরই এলাকার বিধায়কের মুখ থেকে শুনতে হয়, মেয়েদের স্কার্টের সাইজ ছোট হওয়ায় সমস্যা বাড়ে।

ঝাড়গ্রামে অভিযোগ জানাতে আসা লাঞ্ছিতা গৃহবধূর ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট চায় পুলিস।

কাঁথির কানাইদিঘি গ্রামের এক জননীকে তাঁর মেয়ের সামনেই শ্লীলতাহানি করা হয়।নিজের মেয়ের সামনে লাঞ্ছিতা হওয়ার ঘটনায় লজ্জায় বিষ খেয়েছিলেন ঐ জননী। না তবুও মেলেনি কোন চিকিৎসার সুযোগ। অভিযুক্তরা তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতেও বাধা দিয়েছিল। একটিবারের জন্যও দেখা মেলেনি সরকারের দৃঢ়তার। 

এই বাংলায় এই নিদারুণ চিত্রই আজকের বাস্তবতা। আনন্দের ছবি এটা নয়। কিন্তু এর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে হরেক রকমের পরিসংখ্যান এবং রাজ্য সরকারের মনোভাব। জাতীয় মহিলা কমিশনের পর্যবেক্ষণ থেকে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য কোন কিছুকেই আমল দিতে চাইছে না এরাজ্যের বেপরোয়া সরকার। এরাজ্যে কোথাও দিনের কোনো সময়েই মহিলারা নিরাপদ নন। ৭ থেকে ৭২, সব বয়সের মহিলাই ধর্ষিতা হয়েছেন গত কয়েক মাসে। জাতীয় মহিলা কমিশনের এই পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতভাবে রাজ্যবাসীর কাছে উদ্বেগের।

উদ্বেগের এই সময়ে মমতা ব্যানার্জি সরকারের মনোভাব নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। কেমনতর সেই মনোভাব? চলতি বছরের ৩০শে আগস্টের উদাহরণই এখানে যথেষ্ট। সেদিন 'বাধ্য' হয়ে বামপন্থী মহিলা সংগঠনগুলি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়তে থাকা ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিকার চেয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয়েছিল। বাধ্য হয়েই প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি ও প্রতিকারের দাবিতে তার আগে দেখা করতে চেয়েছিল মহিলা সংগঠনগুলি। চার চারবার রাজ্যের স্বারাষ্ট্র সচিব, রাজ্য পুলিসের ডিজি'র কাছে দেখা করার জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল। দেখা করে শুধু অভিযোগ জানানোর কথা ছিল। মহিলা সংগঠনের প্রতিনিধিরা নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেখা করতে চাইছে অথচ রাজ্যের ডি জি, স্বরাষ্ট্র সচিব একটিবারের জন্যও মিনিট পাঁচেকের সময় দিতে পারেননি! সরকারের শীর্ষ মহলের সবুজসঙ্কেত ছাড়া এই ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেন ডি জি? কেন ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে ডেপুটেশন গ্রহণ করতেও অনীহা রাজ্য প্রশাসনের। রাজ্য সরকারের এই অনীহা যে অপরাধীদেরই উৎসাহিত করছে তার প্রমাণ, আগস্ট মাসের শেষে ঐ ঘটনার পরেও শুধুমাত্র সংবাদপত্রে প্রকাশিত ধর্ষণের ঘটনা প্রায় ২৮টির মতো।

রাজ্য সরকারের এই মনোভাবের পাশেই রাখা যাক কিছু পরিসংখ্যান। মহিলাদের ওপর আক্রমণ ও নিগ্রহের ঘটনায় ২০১১সালের হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশ উঠে এসেছে একেবারে সামনের সারিতে। রাজ্যবাসীর কাছে আরও উদ্বেগের তথ্য, মহিলাদের ওপর আক্রমণপ্রবণ এলাকার তালিকায় বিজওয়াড়া, কোল্লা, কোটা, জয়পুরের পাশাপাশি ঢুকে গেছে আসানসোলের নামও। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মহিলাদের ওপর অপরাধের ঘটনার হার যেখানে ২১শতাংশ সেখানে আসানসোলে এই হার ২০১১সালের হিসাবে দাঁড়িয়েছে ৪৮.২ শতাংশে! প্রশাসনের ভূমিকা কী? কিছুদিন আগেই বার্নপুরের ছয় বছরের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তদের তালিকায় আছে শাসক দলের কর্মীরাও। অপরাধীদের কী শাস্তি হয়েছে? জানেন না বার্নপুরের মানুষজনও। গোটা দেশে জনসংখ্যার ৭.৫ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের। সেখানে ২০১১সালে গোটা দেশে মহিলাদের ওপর অপরাধের ঘটনার ১২.৭ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গেই। 

প্রশাসনের এই গাফিলতির চেহারাই তাই শঙ্কা বাড়াচ্ছে রাজ্যবাসীর। কঠোর আইন তো পরের কথা চলতি আইনেই কেন গত প্রায় ১৯ মাসে একশোরও বেশি ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরকার একটি ক্ষেত্রেও কোন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলো না? বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে যখন অপরাধীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। কখনও বলা হচ্ছে 'সাজানো ঘটনা', কখনও সরকারেরই এক মন্ত্রী বলছেন, ''এমন কোন বড় ঘটনা নয়।'' কখনও আবার শাসক দলের নেতা বলছেন, এখন ধর্ষণের ঘটনা আমদানি করা হচ্ছে। কখনও আবার নির্যাতিতা মহিলার চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। একটিবারের জন্য রাজ্যবাসী ব্যাখ্যা পায়নি কেন আজও পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত অধরা। 

এরাজ্যের ধর্ষণের বাড়তে থাকা ঘটনাবলীকে রাজ্য সরকার তারই বিরুদ্ধে চক্রান্তের অংশ হিসাবে দেখতে শুরু করেছে। ধর্ষণের ঘটনাকে চক্রান্ত আখ্যা দিলে আসলে যে অপরাধীদের মনোবল বাড়ানো হয়! 

হেমতাবাদে ধর্ষিতা হলো দৌড়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এক মূক ও বধির প্রতিবন্ধী তরুণী। ২০১১ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সে। গত ডিসেম্বর মাসে প্রতিবন্ধীদের 'রোল মডেল' হিসাবে রাজ্যপালের হাত থেকে ১০হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছে এই তরুণী। নবম শ্রেণীর এই ছাত্রীকেও রেয়াত করেনি তৃণমূলীরা। গ্রেপ্তারও হয়েছে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী রঞ্জিত দাস। কিন্তু কী আশ্চর্য, তার পাশে সহমর্মিতার সঙ্গে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার নিন্দা করে একটি বিবৃতি আজও দেননি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী!

চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত এরাজ্যে ৯৬৯টি ধর্ষণ ও মহিলাদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্তের কোন ফল সামনে আসেনি। ২৩মামলায় এখনও তদন্তই শুরু হয়নি। আবার ২০১১সালে ২৩৬৩টি নারী নিগ্রহের ঘটনায় আজ পর্যন্ত কটা ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির বিধান হয়েছে? কোথায় প্রশাসন? বরং মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ তৃণমূলী সাংসদ প্রকাশ্যে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে আক্রান্ত মহিলাকে 'বারবণিতা' আখ্যা দিতেও পিছ পা হচ্ছেন না। 

দিল্লির ঘটনা প্রতিবাদের বেড়া ভেঙেছে। প্রতিবাদে, ক্ষোভে রাস্তায় নেমেছেন এ শহরের মানুষও। এই সচেতনতা, প্রতিবাদী সত্তা জারি থাকুক ৩৬৫দিন।'সাজানো ঘটনা' নয়, রাজ্য সরকার ঘৃণ্যতম অপরাধ হিসাবেই দেখুক নারী নিগ্রহের ঘটনাকে।

http://ganashakti.com/bengali/breaking_news_details.php?newsid=1002


সূর্যাস্তও অন্ধকার নামিয়ে আনতে পারেনি দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে। হাজার হাজার প্রতিবাদী মোমের আলোয় এখনও উজ্জ্বল ওই চত্বর। আজ ভোর রাতেই সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে থেমে গেছে তরুণীর জীবনের লড়াই। কিন্তু থামেনি প্রতিবাদ। দিল্লির এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য এখন সময় আরেক নতুন লড়াইয়ের প্রস্তুতি। গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বিক্ষোভে সামিল হয়েছে গোটা দেশ। কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে দিল্লির যন্তর-মন্তরে প্রতিবাদে সামিল হন বহু মানুষ। ছিলেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও বিক্ষোভ দেখান। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মুনিরকা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। 

গণধর্ষণকাণ্ডে তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল গোটা দেশের মানুষ। উত্তরের জম্মু থেকে দক্ষিণের বেঙ্গালুরু। সর্বত্রই মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নেমেছেন মানুষ। বেঙ্গালুরুতে মহিলাদের জন্য নিরাপদ সমাজের দাবিতে মোটরবাইক মিছিল হয়। আহমেদাবাদের স্কুলগুলিতে প্রার্থনা সঙ্গীতের সময় নিহত তরুণীর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। জম্মুতে নিহত তরুণীর আত্মায় শান্তির উদ্দেশে মোমবাতি মিছিল হয়। দেশের অন্যান্য শহরগুলিতেও নিহতের আত্মায় শান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। একইসঙ্গে দোষীদের চরমতম শাস্তির দাবি উঠেছে।   

নির্যাতিতার মৃত্যুর প্রতিবাদে দিল্লিতে মৌন মিছিল করলেন মহিলারা। মান্ডি হাউস থেকে যন্তরমন্তর পর্যন্ত এক মৌন মিছিলে ধর্ষণে অভিযুক্তদের চরম শাস্তির দাবি জানান তাঁরা। একইসঙ্গে, মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে সরকারের কাছে। মিছিলে পা মেলাল সিপিআইএম সাংসদ বৃন্দা কারাট ও সীতারাম ইয়েচুরি। 


রাজধানীর রাজপথে চলন্ত বাসে নৃশংস ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণীর মৃত্যুতে গভীর সমাবেদনা জানালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। রাষ্ট্রপতি তাঁর শোকবার্তায় জানিয়েছেন, "আজ সকালে সিঙ্গাপুরে ২৩ বছরের তরুণীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে আমি ব্যথিত। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সাহসী মেয়েটি জীবনের জন্য লড়াই করে গিয়েছে।" অসীম সাহসিকতার জন্য দিল্লির সাহসের মুখকে স্যালুট জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। 

তিনি আরও লিখেছেন, "আমি তাঁর অবিভাবক ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। তাঁরা যেন এই শোক সহ্য করতে পারেন, তার প্রার্থনা করি। ভারতের এই সাহসী মেয়েটির কথা গোটা দেশ মনে রাখবে। সেইসঙ্গে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, এই মৃত্যু যেন বৃথা না যায়। এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোখার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। 

গোটা দেশবাসীকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে লাগাম পড়াতে ও যোগ্য বিচারের পক্ষে সওয়াল করে সরকার কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। 


দিল্লিতে নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্ষণ রুখতে কড়া আইনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। ধর্ষণ বিরোধী আইন কার্যকর করার জন্য, সংসদে আলাদা করে বিশেষ অধিবেশন ডাকা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

গণধর্ষণের জেরে নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যু দেশের পক্ষে লজ্জার। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ধর্ষণে অভিযুক্তদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। না হলে এমন ঘটনা বন্ধ হবে না। নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিলেন অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণ এক সামাজিক অপরাধ। "দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ড সামাজিক অবক্ষয়ের ছবিটাই নতুন করে সামনে এনে দিয়েছে", আজ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে একথা বলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। এধরনের ঘটনার প্রতিবাদে সমাজের সবস্তরের মানুষের সোচ্চার হওয়া উচিত বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে তরুণীর মৃত্যুতে গভীর শোকজ্ঞাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এদিন তিনি জানিয়েছেন, ভারতের যুব সমাজের "দুঃখ ও শক্তি" জাহির করছে তাঁরা সমাজে পরিবর্তন চাইছেন। ভারতীয় সময় রাত ২টো ১৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের হাসপাতেলে ২৩ বছরের তরুণীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী এক বিবৃতিতে একথা জানিয়ছেন। 

তিনি জানিয়েছেন, "আমরা যদি আবেগ ও প্রতিবাদকে একটা গঠনমূলক দিক দিতে পারি, তবেই ওই তরুণীর প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হবে।" 

গত ১৩ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া তরুণীর আকস্মিক মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতও। সাধারণ মানুষকে শান্তি বজার রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তরুণীর মৃত্যু "সত্যিই, খুব খারপ খবর", বলেছেন শিলা দীক্ষিত। তাঁর আবেদন,"আমার অনুরোধ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।" 

সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দিল্লিকাণ্ডের ধর্ষিতার। ভারতে খবর পৌঁছতেই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হল রাজধানী। দিল্লি পুলিসের তরফে রাজন ভগত জানিয়েছেন, দিল্লি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যদিও যন্তর-মন্তর ও রামলীলা ময়দানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ছাড়পত্র দিয়েছে দিল্লি পুলিস। দিল্লি ট্রাফিক পুলিসের পক্ষ থেকে সমস্ত নাগরিককে ইন্ডিয়া গেট সংযোককারী সমস্ত রাস্তা ব্যবহার না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। শনিবার রাজপথ, বিজয় চক সহ ইন্ডিয়া গেট সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে বলে দিল্লি পুলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গেই বন্ধ থাকবে দশটি মেট্রো স্টেশনও।

শনিবার গোটা দিন দিল্লির রাজীব চক, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট, প্যাটেল চক, রেস কোর্স, খান মার্কেট, জোর বাগ, উদয় ঊবন, মান্ডি হাউজ, বারাকাম্বা রোড ও প্রগতি ময়দান মেট্রো স্টেশনে কোনও ট্রেন চলাচল করবে না। তবে দিল্লি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষেপ জানানো হয়েছে রাজীব চক ও সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট থেকে রুট বদল করতে পারবেন যাত্রীরা। 

শনিবার সকালে দিল্লি ট্রাফিক পুলিসের পক্ষ থেকে টুইটারে জানানো হয়, রাজপথ, বিজয় চক সহ ইন্ডিয়া গেট সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা ও রাজধানীর সব রাস্তা এদিন বন্ধ রাখা হবে। বন্ধ থাকবে কামাল আট্টারুক মার্গও। সমস্ত পথযাত্রীকে এই রাস্তাগুলি দিয়ে চলাচল এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত রাতেই তরুণীর ক্রমাগত শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর আসার সময়ই দিল্লি পুলিসের পক্ষ থেকে টুইট করে জনতাকে সংযত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছিল। গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে দিল্লি। রাজধানী থেকে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। 


সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে দিল্লিকাণ্ডের ধর্ষিতার। ভারতে খবর পৌঁছতেই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হল রাজধানী। দিল্লি পুলিসের তরফে রাজন ভগত জানিয়েছেন, দিল্লি জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যদিও যন্তর-মন্তর ও রামলীলা ময়দানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ছাড়পত্র দিয়েছে দিল্লি পুলিস। দিল্লি ট্রাফিক পুলিসের পক্ষ থেকে সমস্ত নাগরিককে ইন্ডিয়া গেট সংযোককারী সমস্ত রাস্তা ব্যবহার না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। শনিবার রাজপথ, বিজয় চক সহ ইন্ডিয়া গেট সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে বলে দিল্লি পুলিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গেই বন্ধ থাকবে দশটি মেট্রো স্টেশনও।

শনিবার গোটা দিন দিল্লির রাজীব চক, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট, প্যাটেল চক, রেস কোর্স, খান মার্কেট, জোর বাগ, উদয় ঊবন, মান্ডি হাউজ, বারাকাম্বা রোড ও প্রগতি ময়দান মেট্রো স্টেশনে কোনও ট্রেন চলাচল করবে না। তবে দিল্লি মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষেপ জানানো হয়েছে রাজীব চক ও সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট থেকে রুট বদল করতে পারবেন যাত্রীরা। 

শনিবার সকালে দিল্লি ট্রাফিক পুলিসের পক্ষ থেকে টুইটারে জানানো হয়, রাজপথ, বিজয় চক সহ ইন্ডিয়া গেট সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা ও রাজধানীর সব রাস্তা এদিন বন্ধ রাখা হবে। বন্ধ থাকবে কামাল আট্টারুক মার্গও। সমস্ত পথযাত্রীকে এই রাস্তাগুলি দিয়ে চলাচল এড়িয়ে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত রাতেই তরুণীর ক্রমাগত শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর আসার সময়ই দিল্লি পুলিসের পক্ষ থেকে টুইট করে জনতাকে সংযত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছিল। গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির বাসে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে দিল্লি। রাজধানী থেকে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। 



দিল্লিতে গণধর্ষণের নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যু দেশের বিবেককে জাগিয়ে দিয়ে গেল। এধরনের ঘটনা বন্ধ করতে রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআইএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। কঠোর আইনের মাধ্যমে দেশের মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। ধর্ষণের ঘটনার নিরিখে কংগ্রেসশাসিত মধ্যপ্রদেশ দেশের মধ্যে শীর্ষে বলে আজ প্রকাশ্য সমাবেশে স্বীকার করে নেন শাকিল আহমেদ। একইসঙ্গে তিনি বলেন, এনিয়ে রাজনীতি না করে সব জনপ্রতিনিধিদের উচিত ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।


তেরো দিনের লড়াই আর আশঙ্কার প্রহর

১৬ ডিসেম্বর, ২০১২: দিল্লিতে পাশবিক গণধর্ষণের শিকার তরুণী...মুনিরকা থেকে দ্বারকা যাওয়ার জন্য একটি এসি বাসে ওঠেন মেডিক্যাল ছাত্রী ওই তরুণী ও তাঁর বন্ধু। বাসের মধ্যে ছয় দুষ্কৃতী তরুণীকে ধর্ষণ করে মহিপালপুরের কাছে তাঁকে ও তার বন্ধুকে বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। মেডিক্যালের ছাত্রী ওই তরুণীর বন্ধুকেও। রাতে সেই তরুণীকে অচৈতন্য অবস্থায় ভর্তি করা হয় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে


১৭ ডিসেম্বর, ২০১২-
- চার দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করা হল। তরুণীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ। বাদ দেওয়া হল প্রায় পুরো অন্ত্র।

১৮ ডিসেম্বর, ২০১২-দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠল। দোষীদের ফাঁসির শাস্তি দাবি করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। এই কাণ্ডে চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিস।

১৯ ডিসেম্বর, ২০১২-- লেখার মাধ্যমে হাসপাতালে কথা বললেন দিল্লির সেই নির্যাতিতা। মেডিক্যাল বুলেটিনে বলা হল, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হছে তাঁর। ২০ ডিসেম্বর, ২০১২-- গণধর্ষণ কাণ্ডে সাক্ষী দিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা, তরুণীর বন্ধুর `সেটমেন্ট`ও নেওয়া হল। দিল্লিতে প্রতিবাদের আগুন ভয়াবহ রূপ নিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের বাড়ির সামনে প্রতিবাদ জানাল। ২১ ডিসেম্বর, ২০১২--- ভেন্টিলেটরে নিয়ে যাওয়া হল তরুণীকে। অণুচক্রিকার পরিমাণ হ্রাস পেল। তরুণীর বন্ধু মুকেশ নামের এক অভিযুক্তকে চিহ্নিত করল। হরিয়াণা, বিহারে তল্লাসি চালিয়ে আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হল। ২২ ডিসেম্বর-- মহকুমা শাসককে বয়ান দিলেন নির্যাতিতা। রাতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করায় তরুণীকে নিয়ে চিন্তা বাড়ল। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়ল। দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে হাজার হাজার জনতা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিলেন। ২৩ ডিসেম্বর-- আন্দোলনে হিংসা ছড়াল। মারমুখি জনতার ইটের আঘাতে আহত হলেন দিল্লি পুলিসের কনস্টেবল সুভাষ তোমার। সারাদিন বমি করে গেলেন তরুণী। ওয়াশ করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হল
২৪ ডিসেম্বর-- প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দিলেন। মনমোহনের আশ্বাস দোষীদের দ্রুত কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। শান্তি বজায় রাখার আবেদনও জানালেন প্রধানমন্ত্রী। ফের অস্ত্রোপচার করা হল তরুণীর।

২৫ ডিসেম্বর-- সকাল থেকেই তরুণীর অবস্থার উন্নতি হল। পুরো ঘটনার বয়ানও দিলেন। দোষীদের ফাঁসির সাজা চেয়েছেন এমন খবরও প্রকাশ পেল। রাতে হঠাত্‍ শারীরিক অবস্থার অবনতি হল। সেপসিসের প্রাথমিক উত্সর্গ দেখা দিল, চিন্তা বাড়ল।


২৬ ডিসেম্বর---
 আন্দোলন তীব্র আকার নিল যন্তরমন্তরের সামনে। নিহত পুলিস কনস্টেবল সুভাষ তোমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। সন্ধ্যা থেকেই হঠাত্‍ই সফদরজং হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো হল। নিয়মমাফিক কোনও মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করা হল না, শুরু হল জল্পনা।

তিনবার হদরোগে আক্রান্ত হলেন তরুণী.. রাত ১২টা নাগাদ তাঁকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হল।

২৭ ডিসেম্বর--
 দিল্লিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হল... এ দিকে সিঙ্গাপুরে সেই তরুণীর অবস্থা আরও খারাপ হল।

২৮ ডিসেম্বর--
 তরুণীর ৭টি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিল.. মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরের লক্ষণও দেখা দিল। অণুচক্রিকার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেল। গোটা দেশ আশঙ্কায় ডুবে। 

২৯ ডিসেম্বর
-- রাত ২.১৫ টা নাগাদ লড়াই শেষ হল... মারা গেলেন সেই তরুণী। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানানো হল মৃত্যুর খবর। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং শোক জানালেন।

http://zeenews.india.com/bengali/nation/timeline-of-delhi-gang-rape-case_10305.html


টুইটারে কুর্নিশ সাহসী মেয়ের লড়াইকে


সিঙ্গাপুরে দিল্লির ধর্ষিতা তরুণীর মৃত্যু হয়েছে আজ গভীর রাতে। শোকস্তব্ধ গোটা দেশ। ক্ষোভ, সমবেদনার জোয়ারে উপছে পড়ল টুইটার পেজ-

নরেন্দ্র মোদী:
 ভারতের নির্ভীক তরুণীর মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ, তাঁর আত্মীয় পরিজনদের গভীর সমবেদনা জানাই।
অমিতাভ বচ্চন: আমানত! এখন শুধুই একটা নাম। ওঁর পার্থিব শরীরের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু চিরকালের জন্য ওঁর আত্মা আমাদের হৃদয়ে রয়ে যাবে।
লতা মঙ্গেশকর: অনেক হয়েছ। নির্ভীক দামিনীর মৃত্যু হতে পারে না। আমাদের দেশের মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়েছে। এখন সরকারকে গভীর নিদ্রা থেকে উঠতে হবে আর পশুতুল্য ধর্ষকদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। চোখের জল ফেলা আর কথা বলা এবার বন্ধ হোক।
শাহরুখ খান: আমি লজ্জিত, আমি পুরুষ।
কৃষ্ণা তিরথ: ১৫ দিনের মধ্যে এর সুবিচার হওয়া প্রয়োজন। দোষীদের ফাঁসি হওয়া উচিত।
শাবানা আজমি: সিঙ্গাপুরে ওঁর মৃত্যুর পর আমাদের অক্ষমতা সামনে চলে এল। দেশের জন্য ও একটা জাগরণী আহ্বান দিয়ে গেল। এধরণের ঘটনা রুখতে কঠোর আইন প্রয়োজন। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা।

বিষেন সিং বেদী: ভারতের মননকে উজ্জীবিত করতে দেশের মহান মেয়েটিকে মৃত্যবরণ করতে হল। আশা করি, দেশ এরপর লজ্জায় অবনত হবে।
জাভেদ আখতার: ওঁর মৃত্যুতে সরকার, পুলিস, আমি, আপনি এবং সকলে এক ভয়ানক বিপদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে। ঘটনার নিন্দা করছি। অপরাধীদের প্রতি আমাদের ভাবনার পরিবর্তন প্রয়োজন।
শশী থারুর: সিঙ্গাপুরে আমাদের সাহসী মেয়ের অকস্মাত মৃত্যু জীবনের জন্য একটা যুদ্ধের সূচনা করল। একই সঙ্গে ওঁর মৃত্যুর কারণকেও আরও দৃঢ় করল।
শেখর কপুর: বর্ষবরণের রাতে ওই তরুণীর স্মরণে আমি নীরবতা পালন করব, তোমরা কি আমার সঙ্গে থাকবে? নাকি পার্টি করবে?
শোভা দে: ভারতের নির্ভীক কন্যা, দিল্লির রাজনৈতিক নেতারা নোংরা খেলা খেললেন, অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় ওই তরুণীকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল লোক দেখানো। 
অনুপম খের: এটা দিল্লির মেট্রো রেল, ইন্ডিয়া গেট বন্ধ করে দেওয়ার সময় নয়, এটা ক্ষমা চাওয়ার সময়।
প্রীতিশ নন্দী: আমার হৃদয় থমকে গিয়েছে, ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, গোটা বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার।
ওমর আবদুল্লা: শান্তিতে থাকো সাহসী মেয়ে।
মনোজ বাজপেয়ী: ও শান্তিতে থাক। গোটা দেশের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক মুহূর্ত।
সোনি রাজদান: এই তরুণীর মৃত্যু যেন বিফলে না যায়, পরিবর্তনের জন্য ভারত সরকারের কিছু করা উচিত।
শ্রেয়া ঘোষাল: এই প্রথম এধরণের নৃশংস ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে, যদিও এখনও অসংখ্য বৈবাহিক ধর্ষণের ঘটনা নথিভূক্ত হয় না।
দিয়া মির্জা: আমারই একটা অংশের মৃত্যু হল বলে মনে হচ্ছে।
রিতেশ দেশমুখ: নির্ভীক যোদ্ধা ছিল, গোটা ঘটনাটি খুবই দুঃখের, আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার সময় এসেছে।
নেহা ধুপিয়া: এরকম একটা দু:জনক ঘটনা দিয়ে বছরটা শেষ হল।

http://zeenews.india.com/bengali/nation/reactions-on-twitter-agaist-death-of-delhi-girl_10307.html


দায় বেড়েছে পরিবারে, ক্ষমতা নয়
ংসার চালাচ্ছেন মহিলারাই দেশে এমন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। সাম্প্রতিক জনগণায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১১% পরিবারে মহিলারাই বাড়ির মাথায় রয়েছেন। দেশে এই ধরনের পরিবার প্রায় ২ কোটি ৬৯ লক্ষ। এর মধ্যে ৪৩ লক্ষ বাড়িতে মহিলা একাই থাকেন। এই হিসেব থেকেই স্পষ্ট গত দশকে পুরুষ পরিচালিত পরিবারের সংখ্যা কমেছে।
আপাত ভাবে একে মহিলাদের ক্ষমতায়ন বলেই মনে করা যেতে পারত, কিন্তু তথ্যের একটু গভীরে ঢুকলেই দেখা 
যাচ্ছে ছবিটা আসলে উল্টো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, নেহাত বাধ্য হয়েই সংসারের দায় কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে মহিলাদের। বাড়িতে বাড়িতে সমীক্ষা চালিয়ে মূলত পাঁচটি কারণ উঠে এসেছে। এক, বাড়ির পুরুষরা দীর্ঘদিনের জন্য বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন। দুই, ওই মহিলা বিধবা, বিবাহবিচ্ছিন্না অথবা স্বামী পরিত্যক্তা। তিন, বাড়ির পুরুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে বা সে রোজগারের চেষ্টাকে অসম্মানজনক বলে মনে করে। চার, পুত্রসন্তান এখনও পূর্ণবয়স্ক হয়নি। পাঁচ, ছেলে বিয়ের পর আলাদা থাকছে।
অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে সঙ্গে শহরের অনেক মহিলাই একা নিজের মতো থাকছেন। কারও উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না। কিন্তু গোটা দেশের ছবিটা তা নয়। রেজিস্ট্রার জেনারেল ও জনগণনা কমিশনার সি চন্দ্রমৌলির বক্তব্য, যে ৪৩ লক্ষ বাড়িতে মহিলা একাই থাকেন, তার তিন-চতুর্থাংশই গ্রামে বাস করেন। পারিবারিক আয়, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও নারী-প্রধান পরিবারগুলি যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই ধরনের বাড়িগুলি ছোট। শতকরা ৪৫ ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে মাত্র একটিই ঘর। এই ধরনের ১৮ শতাংশ পরিবারে পানীয় জল আনতে আধ থেকে এক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। এই ধরনের ২৯ শতাংশ পরিবারেই স্কুটার বা গাড়ি থাকা তো দূরের কথা, রেডিও, টিভি, টেলিফোন, সাইকেলও নেই।
নারী-প্রধান পরিবারগুলির সংখ্যা বেশি লাক্ষাদ্বীপ, কেরল ও মেঘালয়ে। সেখানকার সমাজের একটা বড় অংশ অবশ্য মাতৃকূলভিত্তিক। পরিবারের মেয়ের বিয়ে হলে তাঁর স্বামী শ্বশুরবাড়িতে এসে থাকে। কিন্তু ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, গুজরাতের মতো বড় রাজ্যগুলিতে নারী-প্রধান পরিবারের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি। জাতীয় হার ১১ শতাংশের থেকেও বেশি।
নারী আন্দোলনকর্মী ও গবেষক শাশ্বতী ঘোষের বক্তব্য, মহিলাদের সংসার চালানোর প্রকৃত সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি। হয় তাঁদের স্বামী রোজগারের জন্য শহরে গিয়ে নতুন সংসার পেতেছে। অথবা সে নিষ্কর্মা, রোজগারের চেষ্টা করে না। মহিলারাই রোজগার করে সংসার চালাচ্ছেন, ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন। পুরুষ থাকলেও সে নৈবেদ্যর চূড়োর মতো বসে রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের হিসেবে তৃতীয় বিশ্বে প্রতি ৩টি পরিবারের ১টিতে মহিলাদেরই সংসারের জোয়াল টানতে হয়।
জনগণনায় তাঁদের সংখ্যাটা এত কম কেন? শাশ্বতীর ব্যাখ্যা, "শহরের বস্তি এলাকায় বা গ্রামে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, আসলে মহিলারা সামাজিক লজ্জায় স্বীকার করতে চান না যে তাদের স্বামী কাজকর্ম করেন না বা সে শহরে গিয়ে আর ফেরেনি। আমি তাই ১১ শতাংশ সংখ্যাটা শুনেই বিস্মিত হচ্ছি। বাস্তবে এই সংখ্যাটা আরও বেশি।" শাশ্বতীর দাবি, মাতৃকূলভিত্তিক সমাজেও দেখা গিয়েছে পুরুষরাই পরিবারের প্রধান।


মোটগ্রাম শহর
পরিবার২৪.৬৭ কোটি ১৬.৭৮ কোটি ৭.৮৯ কোটি
শীর্ষে মহিলা ২.৬৯ কোটি ১.৭৪ কোটি৯৪ লক্ষ
শতকরা ১০.৯%১০.৪% ১২%
http://www.anandabazar.com/29desh5.html


'নিগৃহীতার আঘাত দেখে শিউরে উঠেছিলাম'

নয়াদিল্লি: নিগৃহীতার আঘাতের চিহ্ন দেখে চিকিত্‍সক হয়েও শিউরে উঠেছিলাম৷ অমানবিক, ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালানো হয়েছিল তার ওপর৷ মন্তব্য চিকিত্‍সক যতীন মেটার৷ মেটার তত্ত্বাবধানেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিগৃহীতাকে৷ আরও আগেই সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল৷ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ধকল নিতে পারেননি তিনি৷ প্রতিক্রিয়া চিকিত্‍সক পি কে ঝা-র৷
ঘটনার পর প্রথমে এইমস, তারপর সফদরজঙ্গ৷ অবস্থা আরও সঙ্কটজনক হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে৷ তাহলে কি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে গেল? সফদরজঙ্গ হাসপাতালে যদি পরিকাঠামো নাই থাকে, তাহলে এতদিন নিগৃহীতাকে কেন ফেলে রাখা হল সেখানে? দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে নিগৃহীতার মৃত্যুর পর চিকিত্‍সক মহলে উঠছে প্রশ্ন৷
শল্যচিকিত্‍সক পি কে ঝা-র মতে, অনেক আগেই তাঁকে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল৷ যখন নিয়ে যাওয়া হল তখন আর এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সফরের ধকল নিতে পারেননি ২৩ বছরের তরুণী৷
নিগৃহীতাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার সময় এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের তত্ত্বাবধানে ছিলেন চিকিত্সক যতীন মেটা৷ মেটা জানান, নিগৃহীতার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল৷ এই অবস্থায় সফদরজঙ্গ হাসপাতালে চিকিত্‍সার পরিকাঠামো ছিল না৷ তাই সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ নিগৃহীতার আঘাতের চিহ্ন দেখে চিকিত্‍সক হয়েও তিনি শিউরে উঠেছিলেন৷ 
জানা গিয়েছে, সফদরজঙ্গ হাসপাতালে থাকাকালীন মঙ্গলবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন নিগৃহীতা৷ ক্ষতি হয় মস্তিষ্কের৷ আঘাতের জেরে একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে গিয়েছিল তাঁর৷ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়ার সময় অবস্থার আরও অবনতি হয়৷ অস্বাভাবিক হারে রক্তচাপ কমে যায়৷ শুক্রবার, সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ মস্তিষ্কে জল জমে গিয়েছিল৷
শুক্রবার মধ্যরাতে আর শেষরক্ষা হয়নি৷ সিঙ্গাপুরে ভারতীয় হাই কমিশনের তরফে জানানো হয়, আপ্রাণ চেষ্টা করা হলেও চিকিত্‍সকদের সব প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে৷ 
নিগৃহীতাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর৷ আজ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিণ্ডে জানান, কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, নিগৃহীতার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবেই তাঁকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
সিঙ্গাপুর থেকে দেহ আনার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান সেখানে পাঠানো হয়৷

http://www.starananda.newsbullet.in/national/60/31908-'%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%97%E0%A7%83%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%86%E0%A6%98%E0%A6%BE%E0%A6%A4%20%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%87%20%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A7%87%20%E0%A6%89%E0%A6%A0%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE'

No comments:

Post a Comment