Sunday, December 9, 2012

উদ্দেশ্য নিখাদ বাণিজ্য।ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়; পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি! পলাশ বিশ্বাস http://basantipurtimes.blogspot.in/


উদ্দেশ্য নিখাদ বাণিজ্য। 

পলাশ বিশ্বাস



নিখাদ বাণিজ্যই এখন বৈশ্বিক জায়নবাদী মনুস্মৃতি ব্যবস্থার চরমলক্ষ্য। রাষ্ট্র এখন করপোরেট একচেটিয়া ব্যবসা বাণিজ্যের মার্কেটিং এজেন্ট। জনকল্যাণকারী রাষ্ট্রের আখ্যান ইতিহাস। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী এবং এই লক্ষ্মী বন্দী একচেটিয়া করপোরেট সাতমহলা দুর্গে যেখানে বহিস্কৃত বহজন মানুষের প্রবেসাধিকার ত নেই - ই, বরং তাঁরা যে যেখানে আছেন, সেই প্রতিটি স্থান এখন বধস্থল। পৃথীবীর অধিকাংশ মানুষের খাদ্য, আশ্রয়, নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা যখন বিঘ্নিত বৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে চাঁদে এবং মন্গল গ্রহেও বসতি গড়ার, সাম্রাজ্য স্থাপনার প্রকল্প চলছে রমরমিয়ে- অথচ আজও কান পাতলেই শোনা যাবে কবি সুকান্তের সেই কালজয়ী কবিতাঃ

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়; পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি


চিদম্বরম জানালেন, দেশের বৃদ্ধির জন্য আর্থিক সংস্কার জরুরি ছিল। দৃঢ় পদক্ষেপ না নিলে থমকে যেত দেশের বৃদ্ধি। কমাতে হবে ভর্তুকির পরিমাণ, জানিয়েছেন পি চিদম্বরম।

হাতিয়ার তিন: সংস্কার-তারুণ্য-আক্রমণ. ঘুরে দাঁড়াতে তিন বার্তা। সনিয়া গাঁধীর সাফ কথা, "মুখ লুকোনোর কিছু নেই। বরং আক্রমণাত্মক মেজাজে জবাব দিন দুর্নীতিতে ডুবে থাকা বিরোধীদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রের। কারণ, আম-আদমির স্বার্থে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ করে চলেছে ইউপিএ সরকার। 

অনেকে বলেন, সংস্কার-বিরোধী অসন্তোষটা কংগ্রেসের ডিএনএ-র মধ্যে ঢুকে রয়েছে। আর শুধু কংগ্রেসই বা কেন, আর্থিক সংস্কার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে কম-বেশি বিতর্ক ভারতের সব দলের মধ্যেই আছে। যেমন, জ্যোতি বসু অথবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শিল্পায়নের কথা বললেও আলিমুদ্দিন ও সিটু শিল্প ধর্মঘটের পথে হাঁটে। 

চলতি আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া টিভি বার্তায় প্রধানমন্ত্রী সাফ জানালেন, "টাকা জোগাড় করতে গেলে সংস্কার করতে ... তাই সংস্কার করতে হবে। দু' দশক আগে আর্থিক উদারিকরণ, বিলগ্নীকরণ নিয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম তার সুফল আমরা পেয়েছি। সেই লক্ষ্যেই এবারও সংস্কার।

তা ছাড়া বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যও কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসনিক দক্ষতার উপরে, যে দক্ষতার জন্য দরকার আর্থিক সংস্কার। যেমন সঙ্ঘকে তুষ্ট রাখতে নরেন্দ্র মোদী মনমোহন সরকারের বিরোধিতা করলেও ভাল ভাবেই জানেন, বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করলে রাজ্যে যে উন্নয়নের ধারা শুরু করেছেন তিনি, তা আটকে যাবে।

– আর্থিক সংস্কারে গোড়া থেকেই অমত ছিল কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং নতুন অর্থমন্ত্রী দলনেত্রীকে বোঝালেন, প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী হার ঠেকাতে সংস্কারছাড়া পথ নেই৷ না হলে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে৷.

ভারতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র পেতে আসরে এবার খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ বললেন, আর্থিক সংস্কারের প্রক্রিয়া গতি হারানোয় ভারতে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছেন মার্কিন বিনিয়োগকারীরা৷ প্রয়োজনীয় সংস্কারের পথে হাঁটলেই ভারতের পাশে থাকবে তারা৷

আর্থিক সংস্কার নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণে দেরি করায় একসময় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল মার্কিন সংবাদমাধ্যম। এফডিআই নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পরেই বদলে যায় ছবিটা। সেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমেই প্রশংসার ঝাঁপি উপুড় করে সাধুবাদ জানিয়েছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে।

 শক্তিশালী কিছু দেশের পরিবর্তে বেশিরভাগ রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য জাতিসংঘ, ব্রেটন উডস ইনস্টিটিউশনস ও অন্যান্য বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জরুরি বলে গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিশ্বায়ন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বিশ্বায়ন (globalization) পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর এর প্রধান সহায়ক শক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সকল কিছুর উপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। বিশ্বায়ন বিষয়টি নিয়ে আক্ষরিক অর্থে গবেষণা নতুন করে শুরু হলেও এই ব্যাপরটি বেশ প্রাচীনই বলতে হবে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। যদিও তখন কোন সাধারণ নীতিমালা ছিল না। হাজার বছর পূর্বে মধ্যযুগে সিল্ক রোড ধরে ইউরোপের সাথে মধ্য এশিয়া হয়ে চীনের বাণিজ্য চলতো।


বিশ্বায়ন (globalization) মানে কি ? বিশ্বায়ন পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। যার মুল হিসেবে কাজ করে অর্থনীতি এবং নিয়মক হিসেবে কাজ করে তথ্যপ্রযুক্তি ।


হে মহাজীবন- সুকান্ত

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন কঠোর গদ্য আনো,
পদ্য-লালিত্য-ঝংকার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো
প্রযোজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় আজকে দিলাম ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ৷৷...

একুশে জুলাই, ১৯৬৯। ঠাণ্ডাযুদ্ধে সোভিয়েতকে টেক্কা দিল আমেরিকা। চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। সেই শেষ। তারপর, পেরিয়ে গেছে চার দশক। নাসা আর চাঁদে মানুষ পাঠানোর উদ্যোগ নেয়নি।শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি মার্কিন সংস্থা গোল্ডেন স্পাইক। দুহাজার কুড়ির মধ্যে তারা বাণিজ্যিক ভাবে চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছে। অ্যাপোলোর প্রাক্তন ফ্লাইট ডিরেক্টর গ্যারি গ্রিফিন এই সংস্থার চেয়ারম্যান। তিনি বলছেন, কোনও দেশ, কোনও সংস্থা বা কোনও ব্যক্তির ইচ্ছেপূরণ করতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।

 আর্থিক সংস্কারের নামে যে সুনামীর কবলে ভারতবর্ষের মানুষ, সেই বিপর্যয়ের মুল উদ্যোক্তা রাষ্ট্র।নিখাদ বাণিজ্যই রাষ্ট্রের ও রাজনীতির একমেব দায়বদ্ধতা, তাঁর জন্য জনগণের বিরুদ্ধে রীতিমত যুদ্ধ চলছে।অবাধ পুঁজি প্রবাহ ও মহামন্ত্র গায়ত্রী জাপ একাকার। ধর্মোন্মাদী জাতীয়তাবাদে মানুষের ধর্মসত্তা ও পরিচয় মনুষত্বকে তিলান্জলি দিয়ে। তাই গুজরাত গণহত্যার মূল অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদী ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রিত্বেন নূতন মুখ, তাঁকে আইকন হিসাবে প্রস্তুত করছে মার্কিন জায়নবাদী সংস্থা। ভারতের পক্ষ বিপক্ষ দুপক্ষই এখন উগ্রতম ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদের ধ্বজাবাহক।সেই শিখ নিধন থেকে শুরু, বাবরি ধ্বংস ও গুজরাত গণহত্যায় বাজার অর্থনীতি অপ্রতিরোধ্য হয়েছে। মানবতা ও গণত্নত্রের অপরাধীদের শাস্তি হয়নি।প্রতিদিন সংবিধানকে হত্যা করা হচ্ছে বাজারের প্রয়োজনে। সংসদীয় রাজনীতি কুনাট্যে, প্রহসনে পরিণত বাজারের প্রয়োজনে। কালো টাকার অবাধ কারবার চলছে, বামিজ্যের নামে হরেক রকম অপরাধ ন্যায়সন্গত, অথচ সম্পূর্ণ পূর্বোত্তর ভারত, কাশ্মীর ও প্রত্যেকটি উপজাতি অন্চলে চলছে অবাধ সৈন্য শাষণ। সশস্ত্র সৈন্য বিশেষাধিকার আইন কোথাও প্রত্যক্ষ ও কোথাও সলওয়া জুড়ুম, কথাও অপারেশন লালগড়, কোথাও অপারেশন গোদাবরী। ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ব প্রণয়ন করে জল জমি জন্গল আজীবিকা উত্পাদন প্রণালী নাগরিকত্ব থেকে উত্খাত করা হচ্ছে বস্তীবাসিদের, তফসিলী জাতি উপজাতির মানুষদের, ব্রাহ্মন্যতন্ত্রের শাষন হেতু ভারত বিভাজনের দুর্ভা গ্যপীড়িত উদ্বাস্তুদের। অথচ মতাদর্শ এই অশ্বমেধযজ্ঞে ইন্ধন জোগায় আশ্চর্যজনক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে। পেনসন পিএফ বীমা জমা পুঁজি সবই বাজারে। জনবিতরণপ্রণালী খতম। খতম রাষ্ট্রের শিক্ষা স্বাস্থ পরিবহন বিদ্যুত পরিসেবা। সব বুনিয়াদী প্রয়োজন, নাগরিক নিরাপত্তা, জরুরী পরিসেবা সবকিছু বাণিজ্য। খোলা বাজারে পয়সা থাকলে কিনে নিতে হবে। সবরকম ভরতুকি বন্ধ। অসংবৈধানিক আধার পরিচয়ে বহুজন সমাজকে বহিস্কার করে যাদের ক্যাশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হল, তাঁরা যাতে বাজারের বাণিজ্যে ভগের বিনিময়ে নগদ ক্রয়শক্তি হাতে পান তারই সুবন্দোবস্ত।প্রতিদিন বিজ্ঞাপনে মিথ্যা প্রলোভনে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যে বাবে সর্বস্বান্ত করা হয়, তাও নিখাদ বাণিজ্য নিয়ংন্ত্রণ লাগামছাডা়।আইন ব্যবস্থা, রিজার্ভ ব্যান্ক, সেবী, শিক্ষা সংস্থান,হাসপাতাল থেকে সংসদ পর্.ন্ত সবকিছু বাণিজ্যের প্রয়োজনে।নীতি প্রণযন করে করপোরেট। সরকার চালায় করপোরেট। নির্বাচনে চাঁদা বৈধ, তাই রাজনীতি ও গণতন্ত্রও করপোরেট নিয়ন্ত্রিত। 

ইরম শর্মিলা চানু. না একদানা খাবার, না একফোঁটা পানি; গত বারো বছর কিছুই খাননি। এমনকি পেটে যেন মুখের লালাও না পড়ে সে জন্য শুকনো ঠোঁট মোছেন স্পিরিট দিয়ে, আর দাঁত মাজেন শুকনো কাপড় দিয়ে। এক যুগ ধরে এভাবে কঠোর অনশন করছেন ইরম শর্মিলা চানু। এক যুগ ধরে অনশন করে তিনি বেঁচে আছেন কীভাবে? 'ভারতেরই উত্তর পুর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য মণিপুরের এই নারীর নাম ইরম শর্মিলা চানু। ২০০০ সালের ২ নভেম্বর মণিপুর রাজ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি গনহত্যার পরে AFSPA নামের একটি কালো আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনশনে বসেন মণিপুরি এই তরুণ কবি। AFSPA বা 'আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট, ১৯৫৮' আইনটির জোরে মণিপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হত্যা, অত্যাচার, অপহরণ, ধর্ষণ সবকিছুকেই জায়েজ করে রাস্ট্র নামের দৈত্য। ২১ নভেম্বর ২০০০ থেকে তার নাকে প্লাস্টিক নল ঢুকিয়ে তাকে জোর করে তরল খাদ্য খাওয়ানো চলছে, সেই সাথে চলছে তাঁর হাজতবাস। প্রতি বছর তাঁকে ছাড়া হয়, ফের একবার কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করার জন্য।

অতএব, দুজনকে চাঁদে নিয়ে যাওয়ার টিকিটের দাম এক দশমিক চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে, খদ্দের ধরতে বিভিন্ন ধনী দেশ ও কোটিপতিদের টার্গেট করেছে গোল্ডেন স্পাইক। 
চাঁদের মাটিতে লুকিয়ে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থের দিকেও নজর রয়েছে ওই সংস্থার।যে কোনও দিন খাদ্যের দামও ডলারে দিতে হবে। কৃষি উত্পাদন প্রণালী পরিবেশ ও মনুষত্বকে ধ্বংস করে বাজার ও পরিসেবা নির্ভর এই অর্থব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের স্থান নেই। রাষ্ট্রের হাতে শুধুই রক্তের দাগ। ঔ রক্তের গদাগই আজকের রাজনীতি, আজকের গণতন্ত্র, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং অবশ্যই আমাদের ধর্ম, পরিচিতি ও জাতীয়তাবাদ 

মার্কিন অর্থনীতির সঙ্কট এখনও বর্তমান। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্দেশে তাই চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিলে বাধ্য হয়েছে নাসা। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতেই এগিয়ে এগিয়ে আসছে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি।  আপাতত পনেরো থেকে কুড়িটি উতক্ষেপণের কথা ভেবেছে বেসরকারি সংস্থা গোল্ডেন স্পাইক।। প্রথমবার চাঁদে মানুষ পাঠাতে সাত থেকে আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে জানিয়েছে ওই সংস্থা। তাদের দাবি, টিকিট বিক্রি ছাড়াও বিজ্ঞাপন, অধিকার সত্ত্ব বিক্রি বাবদ বিভিন্ন খাতে পাওয়া অর্থে উঠে আসবে চন্দ্রাভিযানের খরচ। সম্প্রতি, বিভিন্ন সংস্থা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মহাকাশ অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও, বিজ্ঞানের উন্নতি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে গৃহীত এইসব পরিকল্পনার ভবিষ্যত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো চিন্তিত। চূড়ান্ত অভিযানের আগে ব্যয়সাপেক্ষ একাধিক পরীক্ষামূলক উতক্ষেপণ, অভিযানের ঝুঁকি - এ সবের দায় কে নেবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। 

রাষ্ট্রপতি বাঙালি ব্রাহ্মণ সন্তান প্রণব মুখার্জী কালো টাকার জন্য আম মাফী  দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। গুজরাত সমুদ্রে রিলায়েন্সকে তেল উত্খননের সুযোগ করে দিযেছেন।  ইন্দিরার সমাজবাদী জমানা থেকে খোলা বাজার অর্তনীতির যুগে তাংর করপোরেট অবতার। তিনিই কিন্তু জায়নবাদী ধর্ম জাতীয়তাবাদের সর্বাধিনায়ক।  অস্পৃশ্যতা ও অস্পৃশ্য নিধনের দেবী দুর্গার পুজী করেন।  চন্ডীপাঠেই তাঁর দিনলিপির প্রস্তানবিন্দু।  করপোরেট নয়নের মণি।  বাঙালি উদ্বাসুতুদের দেশছাড়া করতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন তাঁরই উদ্যোগ। আধার করপোরেট যোজনার পিছনেও তিনি।  আর্তিক সংস্কারের নরমেধ যজ্ঞের প্রধানতম পুরোহিত তিনিই।  বর্ণহিন্দু জায়নবাদী ব্রাহ্মণ্য মনুস্মৃতি ধর্মের ও অবশ্যই শাষনের সংরক্ষক কর্ণধার তিনিই। অথচ বহুজন সমাজের বিনাশকর্তা ইন্দ্রদেব আজ সদারণ মানুষের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের দুয়ার খুলে দিয়েছেন, উত্তরসুরি সংস্কার সিপাহসালার চিদম্বরেমের নির্বিচার গণহত্যার ইতিবৃত্তকে আড়াল করতে। বলাই বাহুল্য মাইন্ড কন্ট্রোল জনসংযোগের উদ্দেশ্য নিকাদ বাণিজ্য বহিস্কারের অর্থব্যবস্থায় পুঁজি, লগ্নি ও করপোরেট রমরমা অর্থক বৃদ্ধিকে রাষ্ট্রের ইনক্লুজিব গ্রোথ হিসাবে উপস্তাপনা ও সরকার ও রাষ্ট্রের ধর্ম ও বাণিজ্যকে অব্যর্থ কৌশল কৌশলী চাণক্যের৤

বিউগল, মার্চপাস্ট, ঘোড়া-লস্কর৷ সঙ্গে শিহরণ জাগানো ললকার, 'ভারতমাতা কি জয়!' রাষ্ট্রপতি ভবনের ঐতিহ্যবাহী প্রহরী-বদল অনুষ্ঠান৷ এত দিন ভবনের চৌহদ্দির ভিতরেই আটক ছিল এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান৷ এ বার থেকে প্রতি শনিবার সন্তাহের বিধিমাফিক প্রহরা-বদলের সময়ে ২০০ জন উত্সাহীর জন্য খুলে দেওয়া হবে রাষ্ট্রপতি ভবনের সিংহদ্বার৷ প্রতি শনিবার সকাল ১০টা থেকে আধ ঘণ্টার জন্য জনসাধারণের সামনে প্দর্শিত হবে এই বিশেষ ড্রিল৷ 

এমনিতে এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান চাক্ষুস করতে প্রতিবারই রাইসিনা হিল-এ ভিড় জমান দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা৷ এতদিন দূর থেকে, কড়া প্রহরার আড়াল দিয়ে স্বাদ নিতে হত এই অনুষ্ঠানের৷ এ বার একেবারে সামনে থেকে, রাইসিনা হিল-এর লনে বসেই উপভোগ করা যাবে তা৷ কিন্ত্ত দেশের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর সম্মানে অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজে জন সাধারণকে এতটা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত কেন? স্বয়ং রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাতেই, জানাচ্ছেন তাঁর জনসংযোগ সচিব ভেণু রাজামনি৷ রাষ্ট্রপতি পদে আসার পর থেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ রাইসিনা হিল তথা রাষ্ট্রপতি পদটিকেই জনসাধারণের আরও অনেক কাছের করে তুলতে চান তিনি৷ প্রহরা-বদলের চমকপ্রদ অনুষ্ঠানকে জনসাধারণের জন্য অবারিত দ্বার করে দেওয়া সেই ভাবনারই সম্প্রসারণ৷ শুধু তাই নয়, দর্শকের কাছে অনুষ্ঠানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার নির্দেশও দিয়েছেন প্রণব৷ 

শুধু ভারতীয় সেনা নয়, সমস্ত দেশের সেনা বাহিনীতেই এই প্রহরা-বদলের অনুষ্ঠানটির একটা বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে৷ বৈচিত্রে আর সৌন্দর্যে ভারতীয় সেনা বাহিনীর নিজস্ব রীতির খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়েই৷ পরম্পরা মেনে এই অনুষ্ঠানে পালিত হয় বিশেষ কুচকাওয়াজ রীতি৷ বিউগলের তালে তালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ দেহরক্ষী বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ৷ থাকে সুসজ্জিত অশ্বারোহী সেনাদলের প্যারেডও৷ এ বার সেই নিয়মরক্ষার অনুষ্ঠানও সাজতে চলেছে নতুন ভাবে৷ 

এ আর রহমানের 'মা তুঝে সালাম'-এর সুরে বাজবে সামরিক ব্যান্ড৷ তার তালে তালে কুচকাওয়াজ করবে বর্তমানে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ২৮ নং মাদ্রাস ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা৷ ব্যান্ডে বাজবে 'সারে জাহাঁ সে অচ্ছা' সহ আরও নানা দেশাত্মবোধক গানও৷ হচ্ছে স্থান পরিবর্তনও৷ আগে কুচকাওয়াজ হত ভবন চত্তরের নর্থ ব্লকে৷ এখন থেকে ফি শনিবার ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য শৈলীতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ভবনের সামনের লনে হবে এই অনুষ্ঠান৷ 

ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণ দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারত সমাজতান্ত্রিকনীতি গ্রহণ করে। এই ব্যবস্থায় চালু ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ প্রথাকে উপহাস করে বলা হত "লাইসেন্স রাজ" ও ধীর বৃদ্ধির হারটির নাম ছিল "হিন্দু বৃদ্ধিহার"। ১৯৮০-এর দশকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁর সরকারকে পিছু হটতে হয়। ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার ভারতকে দেউলিয়া রাষ্ট্র ঘোষণা করলে পি ভি নরসিমা রাও সরকার ও অর্থমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ দেশের অর্থব্যবস্থায় আমূল সংস্কারসাধনে প্রবৃত্ত হন। নতুন গৃহীত নীতিগুলির মধ্যে ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া, নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, বেসরকারিকরণ চালু করা, করব্যবস্থায় সংস্কার, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। এরপর থেকে দেশের সামগ্রিক উদারীকরণের গতিমুখ শাসক দল নির্বিশেষে একই প্রকার থাকে। যদিও ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষকের মতো শক্তিশালী লবি বা শ্রম আইন সংশোধন ও কৃষি ভর্তুকি হ্রাসের মতো বহু আলোচিত ক্ষেত্রে কোনো সরকারই হস্তক্ষেপ করেনি।[১]

২০০৯ সালের হিসেব অনুসারে দেশের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অতিদরিদ্রতার কবল মুক্ত হয়েছে।[২] ২০০৭ সালে উদারীকরণের চূড়ান্ত সাফল্যের নজির মেলে সর্বোচ্চ ৯% জিডিপি হার বৃদ্ধিতে।[৩] এর সঙ্গে সঙ্গেই চিনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বদ্রুত বৃদ্ধিশালী অর্থব্যবস্থায় পরিণত হয়।[৪]অর্গ্যানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)-এর রিপোর্ট অনুসারে, এক দশকে গড় বৃদ্ধির হার ৭.৫% গড় আয়ের দ্বিগুণ হবে এবং আরও সংস্কার প্রয়োজন হবে।[৫]

ভারতীয় সরকার সহযোগীরা উদারীকরণ এগিয়ে নিয়ে চলার প্রস্তাব রেখেছেন। কারণ, ভারতের বৃদ্ধির হার চিনের তুলনায় কম।[৬] ম্যাককিনসের মতে, প্রধান প্রধান বাধাগুলি অপসারিত করলেই, "স্বাধীন ভারতের অর্থনীতি চিনের মতো বার্ষিক ১০% হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।"[৭]

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  1.  That old Gandhi magic. প্রকাশক: The Economist. November 27 1997.
  2.  Nick Gillespie (2008). What Slumdog Millionaire can teach Americans about economic stimulus. প্রকাশক: Reason.
  3.  https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/geos/in.html#Econ
  4.  The India Report. প্রকাশক: Astaire Research.
  5.  Economic survey of India 2007: Policy Brief. প্রকাশক: OECD.
  6.  India's economy: What's holding India back?. প্রকাশক: The Economist. March 6th 2008.
  7.  The McKinsey Quarterly: India—From emerging to surging. প্রকাশক: The McKinsey Quarterly.

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ

Nick Gillespie (2009). What Slumdog Millionaire can teach Americans about economic stimulus. প্রকাশক: Reason.

Economic survey of India 2007: Policy Brief. প্রকাশক: OECD. 2007.

Gurcharan Das (2006). The India Model. প্রকাশক: The Foreign Affairs.

Aditya Gupta (2006). How wrong has the Indian Left been about economic reforms?. প্রকাশক: Centre for Civil Society.

The India Report. প্রকাশক: Astaire Research. 2007.

India's Rising Growth Potential. প্রকাশক: Goldman Sachs. 2007.


ক্রেতা, কৃষক সবার জন্যই প্রয়োজনীয় এফডিআই: প্রধানমন্ত্রী
লুধিয়ানা: সংসদে অনুমোদন পাওয়ার একদিন পরেই এফডিআই-এর সমর্থনে আরও জোরালো সওয়ালে সরব হলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের ফলে কৃষক থেকে ক্রেতা, প্রত্যেকেই উপকৃত হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। কৃষিপণ্য বিপণনে উন্নততর প্রযুক্তির ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

শনিবার ছিল পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডক্টর অফ সায়েন্সের সাম্মানিক ডিগ্রি প্রদান করা হয় তাঁকে। সদ্য শুক্রবার রাজ্যসভায় খুচরো বিতর্কের ভোটাভুটিতে বিরোধীদের হারিয়ে জয় পেয়েছে সরকারপক্ষ। একদিন পরেই এফডিআই-এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে সচেষ্ট হলেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে এফডিআই অনুমোদন পাওয়ার পর খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের সমর্থনে সরব হওয়ার প্রথম মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কেই। কৃষিজ পণ্য উত্‍পাদনে দেশের মধ্যে যে রাজ্য সবচেয়ে এগিয়ে সেখান থেকেই নিজের সংস্কারমুখী পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরলেন তিনি। কারণ সংসদে রাজনীতির হিসেবে জয় পেলেও, সামনে বড় পরীক্ষা লোকসভা ভোট। তার দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আনা আর্থিক সংস্কারের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে বাড়ানো প্রয়োজন। এফডিআই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে না পারলে, আগামী লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেতে পারে ইউপিএ সরকার। 

এর পাশাপাশি, কৃষিকাজে আগামী দিনে দেশ যে সব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে, তারও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এইসব ক্ষেত্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কৃষিপণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত নয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মনমোহন সিং। কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়াতে পরিকাঠামোর উন্নতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। এতে পচনশীল কৃষিদ্রব্য মজুত করার ব্যবস্থা আরও উন্নত হলে লোকসানের মাত্রা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দেশের কৃষিকাজে পাঞ্জাবের উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা উল্লেখ করেও, এখানে যেভাবে মাটির নিচের জল অপচয় করা হয়, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।


খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির পর, বিমা এবং পেনসন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দিল মনমোহন সিং মন্ত্রিসভা৷ সংস্কারের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী যে পিছু হটবেন না, এটা তারই প্রমাণ৷ বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৯ শতাংশ৷

পেনসন ক্ষেত্রও খুলে দেয়া হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য৷ এর পরিমাণ হবে ২৬ শতাংশ৷ পেনসন বিল সংসদে পেশ হবে৷ মোদ্দা কথা, পেনসন তহবিলে টাকা দেবে সরকার ও সরকারি কর্মচারি৷ টাকা খাটানো হবে বাজারে৷ ফেরত লাভ যেটা হবে, সেটা দেয়া হবে পেনসন আকারে৷ এতে সরকারের বাড়তি আর্থিক বোঝা অনেকটা কম হবে৷

তবে বিমা ও পেনসন বিল সংসদে পাশ করানো নিয়ে সংশয় আছে৷ কারণ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এর বিরোধী৷ প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিতে আপত্তি করেনি, কিন্তু ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোতে আপত্তি তুলেছে৷ তাই রাজনৈতিক কারণে এই বিল পাশে বাধা দিতে পারে তারা৷ তবে সংসদে সরকারের ২৫২ জন সাংসদ৷ বাইরে থেকে আছে এসপ এবং বিএসপি'র সমর্থন৷

বিমা ও পেনসন বিল সংসদে পাশ করানো নিয়ে আবারো দেখা দিতে পারে প্রতিবাদ, মিছিল...

পরিকাঠামো প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন দিতে প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে জাতীয় বিনিয়োগ পর্ষদ৷ নানা স্তরে অনুমোদনের জটিলতা হ্রাস পাবে৷ আজ মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয় ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল নিয়ে৷ ভবিষ্যতে কৃষিপণ্যের দাম কী হবে আন্দাজ করে আগাম লেনদেন৷

আর্থিক সংস্কারে মনমোহন সিং-এর দৃঢ়তা দেখে বাজারে সাড়া পড়ে গেছে৷ শেয়ার বাজারে তেজিভাব, ডলারের নিরিখে টাকার দাম বেড়েছে৷ সরকারের সাহসী পদক্ষেপের রাজনৈতিক পরিণাম নির্ভর করছে এর সুফল আমজনতার কাছে কবে এবং কতাটা পৌঁছাবে, তার ওপর৷

এই সংস্কারের ভালো-মন্দ দিকগুলি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দীপঙ্কর দাসগুপ্তের কাছে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ''এক ধাক্কায় সব দরজা খুলে না দিয়ে ধীরে ধীরে খোলা উচিত ছিল৷ কিছুটা খোলার পর যদি শুভসংকেত দেখা যায়, তাহলে দরজা আরও একটু খোলা যায়৷ ১৯৯১ সালের সংস্কারে আর্থিক প্রবৃদ্ধি হয়ত বেড়েছে, কিন্ত আয় বৈষম্য বেড়েছে তার থেকে বেশি৷

প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

http://www.dw.de/%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0/a-16282738-1


ভারতীয় সরকার ও সংবাদমাধ্যমে উপেক্ষা ইরম শর্মিলা চানুর ১১ বছরের অনশন

২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:২৭ |

শেয়ারঃ
00

 

ভারতে দুর্নীতি রোধের জন্য শক্তিশালী লোকপালের দাবিতে গান্ধীবাদী আন্না হাজারের মাস ছয়েক ধরে দফায় দফায় ১১ দিন অনশন নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সেটা শেষ হতে না হতেই প্রচারমাধ্যমে আসে আরেক অনশনের সংবাদ_২০০২ সালের সংখ্যালঘু নিধনের প্রশ্রয়দাতা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনশন 'শান্তি, একতা ও সামাজিক সম্প্রীতি' বৃদ্ধির জন্য! এমন লোকদেখানো অনশনের ভিড়ে আরেক গান্ধীবাদী ইরম শর্মিলা চানু যে টানা ১১ বছর ধরে মণিপুর রাজ্যের নিরাপত্তাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে অনশন করছেন, তা কিন্তু কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের কাছে উপেক্ষিত।
এ বছর ৫ এপ্রিল থেকে জন লোকপাল আইনের দাবিতে অনশন শুরু করেন আন্না হাজারে। প্রথম দিন থেকেই গোটা ভারতের সংবাদমাধ্যমের কাছে আন্নার 'টিআরপি' তুঙ্গে। পাশে ছিলেন কিরণ বেদী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, স্বামী অগ্নিবেশ, বাবা রামদেব, স্বামী রবিশঙ্কর, মেধা পাটকর প্রমুখ সেলিব্রেটির মুখ। প্রথম দফায় ৯৮ ঘণ্টার অনশনেই ভারতজুড়ে সাড়ে ছয় লাখ অনুগামী পেয়ে যান তিনি। বিশ্বজুড়ে পান লাখ লাখ সমর্থন। প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখার বিরোধিতা করে জুন মাস থেকে ফের আন্দোলন। ১৬ আগস্ট অনশন শুরু করার পরই গ্রেপ্তার হন আন্না। সব মিলিয়ে অনশনের মেয়াদ ১১ দিন। তাতেই ভারতজোড়া সমর্থন লাভে 'টিম আন্না' ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছে। গণমাধ্যম থেকে টুইটার-ফেইসবুক ভরে যায় আন্নার সমর্থনে বলিউড তারকাদের ছবি আর মন্তব্যে।
আন্নার অনশন ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জন লোকপাল বিল সংসদে পাস করার দাবিতে। আর মোদিরটা গুজরাটি সংকীর্ণ পরিসরে সীমিত না থেকে ভারতভাগ্যবিধাতা হওয়ার রাজনৈতিক উচ্চাশায়। অনশন মোদির মতো রাজনীতিকের জন্য একটা কৌশল। আন্না হাজারের অনশনে যে নৈতিকতা ছিল, মোদির ক্ষেত্রে তা কি বিন্দুমাত্র বিদ্যমান? অনশনকে যিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি গ্রহণযোগ্য প্রকরণে পরিণত করেছিলেন, সেই মহাত্মা গান্ধী একই সঙ্গে এটাকে আত্মশুদ্ধির উপায় রূপেও প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী ছিলেন। বস্তুত তিনি নিজে অনশনে বসার সময় আত্মশুদ্ধি বা চিত্তশুদ্ধির আধ্যাত্মিকতাকে আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই পরিপুষ্ট করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাঁরই অসহযোগ আন্দোলনে নেমে জনতা পুলিশ চৌকি আক্রমণ করে পুলিশ হত্যা করলে তিনি পত্রপাঠ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। মণিপুর-দুহিতা ইরম শর্মিলা চানু 'সশস্ত্রবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন' প্রত্যাহারের দাবিতে ১১ বছর ধরে যে অনশনে অবিচল, তার মধ্যেও সেই প্রবল নৈতিকতার জোর আছে। তিনি এত দিনে জেনে গেছেন, ভারত সরকার তাঁর দাবি মানবে না। কিন্তু সে জন্য তাঁর আমরণ অনশন মাঝপথে শেষ করেননি। আন্না হাজারে ও ইরম শর্মিলা চানুর অনশনে বিভেদ কোথায়_সেই প্রশ্ন উঠছে গণতন্ত্রকামী-বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে।
২০০০ সালের ১ নভেম্বর একদল উগ্রপন্থী মণিপুরের একটি সেনা ছাউনিতে বোমা হামলা চালায়। ঘটনার পর প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মত্ত অসম রাইফেলসের (সেনাবাহিনী) একদল জোয়ান মালম বাস স্ট্যান্ডে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। হামলায় নিহত হয় ১০ নিরীহ গ্রামবাসী। এই নৃশংস ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা মণিপুর। 'আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট' (AFSPA) বা 'আফস্পা' নামের এককালে আইনের রক্ষাকবচে কিছুই হয় না দোষী ভারতীয় সেনাসদস্যদের। ভারত সরকার মণিপুরসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে 'আফস্পা' বলবৎ করে ১৯৮০ সালে। এই অ্যাক্টের বলে ভারতীয় সেনাবাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই যেকোনো লোককে তল্লাশি, গ্রেপ্তার, কিংবা গুলি করে হত্যা করতে পারে। সেনাবাহিনীর এই সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অ্যাক্ট চালু হওয়ার পরই ভারতের উত্তরাঞ্চলে সেনাবাহিনীর তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের দোহাই দিয়ে চালু হওয়া সেনা অভিযানে নিরীহ মানুষও হামলার শিকার হয়। ১৯৫৮ সালে আইনটির জোরে মণিপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হত্যা, অত্যাচার, অপহরণ, ধর্ষণ সব কিছুকেই জায়েজ করে রাষ্ট্র নামের দৈত্য। জনরোষের সামনে পড়ে সরকার বারবার তদন্ত কমিশন বসিয়েছে। অপরাধ প্রমাণও হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো অপরাধী সেনা বা অফিসারের শাস্তি হয়নি।
 

১৪ মার্চ, ১৯৭২ সালে জন্ম নেওয়া ইরম চি নন্দ ও ইরম অংবি চাখির কন্যা নিজের বাড়ির কাছে বাস স্ট্যান্ডে সেনাবাহিনীর দ্বারা ১০ জন মানুষ খুন হতে দেখে চুপ থাকতে পারেন না। মণিপুরের লৌহমানবী হিসেবে পরিচিত ২৮ বছর বয়সী তরুণী ইরম শর্মিলা চানু 'আফস্পা' বাতিলের দাবিতে ২০০০ সালের ২ নভেম্বর অনশন শুরু করেন। প্রতিবাদ শুরুর পরই ৬ নভেম্বর আত্মহত্যা চেষ্টার অভিযোগে মণিপুরের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আত্মহত্যার চেষ্টা ভারতের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যার শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড। প্রতিবছর সংশ্লিষ্ট ভারতীয় আইন অনুযায়ী শর্মিলাকে একবার ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের কয়েক দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়। আইনের এই প্রহসন চলছে ১১ বছর ধরে। ২০০৬ সালে ২ অক্টোবর গান্ধীর জন্মদিনে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ গোপনে দিল্লি গিয়ে রাজঘাটে গান্ধীর সমাধি পরিদর্শন করলেন। এর পরই যন্তর-মন্তরে গিয়ে ফের অনশন শুরু করে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার করে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে নিয়ে যাওয়া হলো। তাঁর ভাই ইরম সিংহজিৎ সিং দিল্লি হাইকোর্টে এই গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ করেন। ২৮ নভেম্বর শর্মিলা তাঁর নাকের নল খুলে ফেলেন। কিন্তু আবার তাঁকে খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। ইরম শর্মিলা চানুকে বাঁচিয়ে রাখতে ভারত সরকার তাঁর নাকে ঢুকিয়ে রেখেছে নল। সেই নল দিয়ে তাঁকে তরল খাদ্য দেওয়া হয় জোর করে। তাঁকে জেলের হাসপাতালে পাঠিয়ে নেজাল ড্রিপের মাধ্যমে খাওয়ানো শুরু হয়। জেলে বন্দি থাকলে এটাই এখনো রুটিন বছর চল্লিশের চানুর। গত ১১ বছর এ রকমই চলছে। তখন থেকেই ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু হাসপাতালের একটি আইসোলেটেড কেবিন তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। অনশনে থাকাকালে তাঁর মুখে এক দানা খাদ্যও যায়নি, ঠোঁট, জিভ, তালু পায়নি এক বিন্দু জলের স্পর্শ। দাঁত মাজা মানে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়া, শুষ্ক ঠোঁট স্পিরিট দিয়ে মোছেন, যাতে এক বিন্দু লালাও গলা দিয়ে না যায়।
শর্মিলা অনশন শুরু করার পর মণিপুরের শহরাঞ্চলের কিছু অংশে 'আফস্পা' শিথিল করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই কালো আইনকে কিছুটা সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ব্যস, ওই পর্যন্তই! ভারতীয় প্রচারমাধ্যম আর সরকারের কাছে শর্মিলার অনশন আন্দোলন নয়, শর্মিলার অনশন মানে শুধুই আত্মহত্যার চেষ্টা! 'আত্মহত্যার চেষ্টা'র অপরাধে যতবারই সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে, সরকারিভাবে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। যে কয় দিন 'মুক্ত' থাকেন, নল-টল খুলে ফেলে ফিরে যান অনশনের পুরনো ধাঁচে। ফলে দু-একদিনের মধ্যেই ফের গ্রেপ্তার। আবার হাসপাতাল। 'অনশন অপরাধ'-এর এই আবর্ত থেকে কিছুতেই আর বেরোতে পারেন না শর্মিলা। আন্নার ক্ষতির আশঙ্কায় যেমন উদ্বিগ্ন ছিল ভারত সরকার, যেভাবে চার দিনের কারাদণ্ড দিয়েও, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তেমনটা শর্মিলার ক্ষেত্রে হয় না। আন্নার দাবি মেনে নেওয়া হলেও শর্মিলার দাবি মানা হয় না।
আন্না-মোদির অনশন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক প্রচার মানবাধিকার কর্মীদের হতাশ করেছে। চানুর ভাই তথা মানবাধিকার কর্মী সিংহজিৎ সিং বলেছেন, 'আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা, মানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ সব সময় উপেক্ষিত ও বৈষম্যের শিকার। আন্নার অনশনে বাকি ভারত ও প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকা এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করেছে। আন্নার অনশন যেখানে সংবাদপত্রগুলোর শিরোনামে, তখনো উপেক্ষিত আমাদের শর্মিলার ১১ বছরের লড়াই।'
শর্মিলার এ ধরনের চোয়ালচাপা লড়াই প্রায় আড়ালে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ গোপন করেনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এমনই এক সংগঠনের এক কর্মী বলেছেন, ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই চানুর লড়াইয়ের স্বীকৃতি দেয়নি। এ ব্যাপারে ভারতীয় জনগণের মনোভাব খুবই দুঃখজনক।
অরুন্ধতী রায় মনে করেন, আন্নাকে ঘিরে এই 'আন্দোলন' এক উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ, যে উগ্র জাতীয়তাবাদ উত্তর-পূর্বের কোনো মহিলার আন্দোলনকে গ্রহণ করবে না। ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপে জয় বা পোখরানে সাফল্যের পরে বা সংরক্ষণবিরোধী সমাবেশেও একই ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদের ছোঁয়া থাকে। অনশন বলতে, তার মানে, ইরম শর্মিলার অনশনকে বোঝায় না। শুধু সন্দেহের বশে মানুষ মারতে সেনাবাহিনীকে ছাড়পত্র দিয়েছে যে আইন, সেই আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১১ বছর ধরে অনশন চালাচ্ছেন তিনি।
মণিপুরের 'হিউম্যান রাইটস অ্যালার্ট'-এর অধিকর্তা বাবলু লইতংবাম বলেন, 'আমরা আন্নার আন্দোলনের বিরোধী নই। কিন্তু শর্মিলা ১১ বছর ধরে একা যে আন্দোলন ও অনশন চালিয়েছেন, তাকে গোটা দেশ সম্মান জানায়নি। সংসদও শর্মিলার আন্দোলন নিয়ে চুপ।' আন্নার আন্দোলন নিয়ে এই 'মাতামাতিতে' ক্ষুব্ধ শর্মিলার ভাইও বলেন, 'ভারত সরকার আন্নাকে মাথায় তুলেছে। তাঁর শরীরের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত সারা দেশ। তাঁর দলের লোকদের নামের ভারে বড় নেতারা হয়রান। বলিউডও আন্নার হয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু, মণিপুরের কথা গোটা দেশ মনেই রাখে না।' বাবলু অবশ্য মণিপুরের মানবাধিকারকর্মীদের পক্ষ থেকে আন্নার সমর্থনে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর আবেদন, আন্নার পাশাপাশি গোটা দেশ দয়া করে মণিপুরের এই মেয়েটির দিকেও চোখ ফেরাক। লোকপাল বিল যেমন প্রয়োজন, তেমনই মানবাধিকার রক্ষায় 'আফস্পা' প্রত্যাহারও গুরুত্বপূর্ণ। অসমের ছাত্র সংগঠন 'আসু'র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্যের মতে, ভারতের মূল ভূখণ্ডের মানুষ উত্তর-পূর্বের কথা মনেই রাখে না। সে জন্যই শর্মিলার মতো নেত্রী ১১ বছর অনশন করার পরও গুরুত্ব পান না।
শর্মিলার এই লাগাতার আন্দোলন মূলধারার মিডিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। এখন আন্না হাজারেদের আন্দোলন নিয়ে মিডিয়ার হৈচৈ সেই অভিযোগ সত্য প্রমাণ করছে। শর্মিলার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি 'জাস্ট পিস ফাউন্ডেশন'-এর ট্রাস্টি সদস্য বাবলু লয়তংবামের কথায়, 'উত্তর-পূর্বের কোনো ঘটনা মূল স্রোতের মিডিয়ার কাছে খবর হিসেবে সচরাচর গণ্য হয় না। পুরো আচরণটাই বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং হতাশাজনক।'
 

ভারতীয় টিভি চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শর্মিলা বলেছেন, 'ওটা (আন্না হাজারের আন্দোলন) যেন খানিকটা লোকদেখানো। আমরা কিভাবে দুর্নীতি দূর করব? আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমি সমাজটাকে বদলাতে চাওয়া এক সাধারণ মেয়ে। ওসব সোশ্যাল ওয়ার্কার, সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।'
শর্মিলার আন্দোলনকে উপেক্ষা আর তাঁর আন্দোলন নিয়ে হৈচৈয়ের অভিযোগ ওঠায় আন্না হাজারে মণিপুরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। শর্মিলার কাছে যাওয়ার কথা শুনিয়েছেন আন্নার মঞ্চে হাজির হওয়া বলিউড তারকা আমির খানও। শর্মিলার কথায়, 'আশা করি, আন্নাজি মণিপুরে আসতে পারবেন, তবে আমি তো জোর করতে পারি না।'
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্পর্কে শর্মিলার মন্তব্য, 'তাঁর নেতৃত্ব আমার পছন্দ নয়। তিনি কথা রাখেন না। এটা দুর্ভাগ্যের।' ২০০৬-এ আফস্পা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। কিন্তু এখনো তা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শর্মিলার আবেদন, 'দয়া করে আন্না হাজারের মতো আমাদের দিকেও নজর দিন। ঈশ্বরের মতো সবাইকে সমান চোখে দেখুন। আমি তাঁকে শুধু বলতে চাই, আপনার মনোভাব বদলান।'
এই ১০ বছরে ভারতীয় চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সেনাবাহিনীর বর্বরতা, শর্মিলা বা তাঁর আন্দোলনের কথা উচ্চারিত হয়নি বললেই চলে। এ বিষয়ে সংখ্যাগুরুর দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার সঙ্গে রাষ্ট্রের ব্যাপক মিল দেখা যায়। আত্মহত্যার প্রচেষ্টার অভিযোগে বারবার গ্রেপ্তার করা হয় শর্মিলাকে, আন্না হাজারের বেলায় তা হয়নি। টুপি-পাঞ্জাবি সজ্জিত ভদ্রলোক আন্নার সঙ্গে ফানেক-ইনাফি পরা শর্মিলার যে অনেক তফাত! এখানে মানুষের গুরুত্ব নির্ধারিত হয় ভোটের অঙ্কে। রাষ্ট্রে বাস করেও রাষ্ট্রহীন সংখ্যালঘু মানুষের দুর্দশার চিত্র সবখানেই তাই একই রকম।

 

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): ভারতভারতীয় সরকারভারতীয় সরকার ও সংবাদমাধ্যমভারতীয় সংবাদমাধ্যমইরম শর্মিলা চানুঅনশন ;
বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

http://www.somewhereinblog.net/blog/Shams13/29492667


শিশুর হেফাজতে ধর্ম খাটে না, বলছে কোর্ট

মুম্বই: কোনও শিশুর উপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত৷ শুধুমাত্র ধর্মাচার পালনের জন্য তাকে কোনও নির্দিষ্ট পরিবারের হেফাজতে রাখা ঠিক নয়৷ এই যুক্তিতেই তিন বছরের এক শিশুকন্যাকে তার বাবার পরিবারের হাতে তুলে দিতে রাজি হল না বম্বে হাইকোর্ট৷ 

মেয়েটির বাবা খ্রিস্টান, মা হিন্দু৷ বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ছুরি মেরে স্ত্রীকে খুন করেছেন৷ এখন তিনি জেলে রয়েছেন৷ মেয়েটির পিসি কিছুদিন আগেই আদালতে আবেদন করেন, শিশুকন্যাটিকে তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়া হোক৷ মেয়েটির বাবা ও পিসির যুক্তি ছিল, তাঁদের কাছে থাকলে মেয়েটি রোমান ক্যাথলিক ভাবধারায় বড় হতে পারবে৷ খ্রিস্টধর্মের মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে৷ তাকে ভর্তি করা হবে কনভেন্ট স্কুলে৷ এই যুক্তি যথেষ্ট বলে মনে করছেন না বিচারপতি রোশন ডালভি৷ 

ডালভি বলেন, 'স্ত্রীকে খুন করে জেলে রয়েছেন যে বাবা তিনি খ্রিস্টান কিনা সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামালে খ্রিস্টধর্মকেই অপমান করা হয়৷ এমন এক বাবার থেকে মেয়েটি খ্রিস্টধর্মের উদারতা, দয়া সম্পর্কে কতখানি শিখতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷' 

উপরন্ত্ত কেন মেয়েটিকে তার বাবার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে মতামত দেন ডালভি৷ তাঁর বক্তব্য, একজন বাবার ধর্মই তার সন্তানকে বয়ে বেড়াতে হবে এমন কথা ভারতের সংবিধানে বলা নেই৷ তাছাড়া নিতে হলে বাবার ধর্মই নিতে হবে, মায়ের নয়, এমন কথার মধ্যে লিঙ্গ-বৈষম্য স্পষ্ট৷ সেটাও কাম্য নয়৷ 

বাবার হাতে মা খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়েটি তার দাদু-দিদার কাছেই রয়েছে৷ মেয়েকে পাওয়ার জন্য বাবার পরিবারের তরফে আদালতে আবেদন জমা পড়ার কথা শুনেই আবেদন জানান মেয়েটির দাদুও৷ যে ভাবে দাদু-দিদার কাছে মেয়েটি রয়েছে, তাতে তাঁদের কাছ থেকে শিশুটিকে নিয়ে আসা মোটেই ঠিক হবে না বলেই মনে করছেন বিচারপতি৷ তাঁর মতে, শিশুটির ধর্ম কি হবে তা নিয়ে বিতর্ক বাড়ানোই অর্থহীন৷ দুটি ধর্মই যথেষ্ট উদার৷ যে কোনও একটিই শিশুটির জন্য প্রযোজ্য হতে পারে৷ কিন্ত্ত কিছুদিন ধরেই মেয়েটি একটা বাড়িতে থাকায়, সেখানকার আচার-ব্যবহার পালন করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ সেখান থেকে ধর্মের কারণে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসা ঠিক নয়৷ 

মেয়েটির বাবা ও পিসির তরফের আইনজীবী ছিলেন উদয় ওয়ারুঞ্জকর৷ তিনি বিচারপতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে মেয়েটির বাবা যেহেতু রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান, তাই তাঁর মেয়েও সেই মতাদর্শে চলবে এটাই কাম্য৷ ডালভি ফের সেই যুক্তি নাকচ করে বলেন, তিন বছরের শিশুকন্যার উপর ধর্ম চাপানো চলে না৷-সংবাদসংস্থা 

এজলাসে যুবকের চিত্‍কার, মমতাই ঠিক



এই সময়: এজলাসে তখন গিজগিজ করছে। আইনজীবী, সংবাদমাধ্যম, সাধারন মানুষ কে নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলা বলে কথা। তো আবার আদালত অবমাননার শুনানি।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'টাকা দিয়ে কেন আইন কেনা হবে?' অবমাননার মামলা এই মনতব্য নিয়েই। শুনানি হবে প্রধান বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় ও বিচারপতি সুবল বৈদ্যর ডিভিশন বেঞ্চে৷ 

বিচারপর্ব শুরু হয়েছে। হঠাত্‍ বছর পয়ঁত্রিশের এক যুবক হাতে একগোছা কাগজ নিয়ে চিত্‍কার করেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কথাই বলেছেন৷ তিনি বলেছেন ন্যায় বিক্রি হচ্ছে৷ আমি দূর্নীতির অভিযোগ এনে তথ্যসহ দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টে ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, দেশের আইনমন্ত্রী, লোকসভার অধ্যক্ষ, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেও কোনও ফল পাইনি৷ আমার মামলাটি হাইকোর্টে ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা টাকার খারিজ করে দিয়েছেন৷' এই কথা বলে এজলাসে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের মধ্যে তাঁর সমস্থ আবেদনের প্রতিলিপি ছিটিয়ে অতি দ্রুত এজলাস ছেড়ে চলে যান৷ সরকারি কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় চিত্‍কার করতে থাকে ওই যুবকটিকে গ্রেফতার করার জন্য৷ 

এজলাসের বাইরেই কর্তব্যরত পুলিশ যুবককে গ্রেফতার করে হাইকোর্টের থানায় নিয়ে যায়৷ পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশ তাঁর এজলাসে পুলিশ ওই যুবককে হাজির করা হয়৷ বিচারপতিদের প্রশ্নের উত্তরে ওই যুবক জানান, তিনি বহু লড়াই করেও বিচার পাননি৷ যার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সে টাকার বিনিময় বিচারপতিদের কিনে মামলায় তাকে হারিয়ে দিয়েছে৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি বলে থাকেন টাকার বিনিময়ে রায় কেনা হচ্ছে, আমিও একই কথা বলছি৷ তাই আমার বিরুদ্ধেও আদালত স্বতোপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করুক৷ তাহলে আমি আমার বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পাব৷ ডিভিশন বেঞ্চ ওই যুবককে বলে, আপনি কী জানেন আদালতে সব কিছুরই একটি পদ্ধতি আছে, সেই মত আপনি আবেদন করেননি কেন৷ যুবকটি টানটান শরীরে জানিয়ে দেন,তিনি সব পদ্মতিই ইতিমধ্যে পালন করেছেন৷ তবুও সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট কোনও কোনও কোর্টই তার কথা শুনতে চান নি৷ ডিভিশন বেঞ্চ যুবককে বলে আপনি পদ্ধতি মেনে আবেদন করুন, আমরা আপনার আবেদন শুনব৷ এবার ডিভিশন বেঞ্চের ওই যুবকের কাছে প্রশ্ন, আজকের আচরনের জন্য আপতি কী দুঃখিত৷ এবং তার জন্য কী আপতি ক্ষমা চাইছেন৷ দ্যার্থহীন গলায় তিনি জানিয়ে দেন, আজকের আচরনের জন্য তিনি কোনও দোষ করেন নি,তাই তিনি ক্ষমাও চাইবেন না৷ ডিভিশন বেঞ্চের এবার প্রশ্ন, আদালতে ভিতরে এইভাবে চিত্‍কার করা নিয়ম বিরুদ্ধ৷ তার জন্য কী আপনি ক্ষমাপ্রার্থী? যুবকটি জানান, এরজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী৷ এবার তিনি হাত জোর করে আদালতের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন৷ ডিভিশন বেঞ্চ তাকে ছেড়ে দেয়৷ 

হাইকোর্টের আটোসাঁটো নিরাপত্তার মাঝে কীভাবে ওই যুবক প্রধান বিচারপতির এজলাসে পৌঁছে গেলেন-এই প্রশ্নে হাইকোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মুকুলকুমার পালেক জানান, 'ই গেট' দিয়ে ওই ব্যক্তি গোলাপি স্লিপে মামলাকারি পরিচয় দিয়ে হাইকোর্টে প্রবেশ করেছিলেন৷ কারণ অন্য গেটে আইনজীবী এবং আদালতের কর্মীরা ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না৷ সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি মিথ্যা লিখে হাইকোর্টে প্রবেশ করেছিলেন৷ বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ 

বাইরে বেরিয়ে এসে ওই যুবক জানান, তাঁব নাম ইন্দ্রজিত্‍ বিশ্বাস৷ বাড়ি বীরভূম জেলার সুপুরে৷ সাঁইথিয়ায় একটি এলপিজি গ্যাসের ডিলারশিপের জন্য আবেদন করেছিলেন৷ কিন্ত্ত ভারত পেট্রোলিয়ামের সব কটি নির্দেশিকা মানা সত্বেও, তাকে বঞ্চিত করে এক ধনি ব্যক্তিকে ওই ডিলারশিপ দেওয়া হয়৷ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে হাইকোর্টে একাধিক এবং সু্প্রিম কোর্টে একাধিবার মামলা করেও কোনও ফল পাননি৷ প্রতিবারই তার আবেদন না শুনে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে৷ এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আদালত স্বতোপ্রণদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলা করবে কী না,সেই বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মামলার নথি হিসাবে একটি মাত্র সিডি আদালতের কাছে পেশ করা হয়েছে৷ একটি সিডি দুই বিচারপতির দেখা এখনও সম্ভব হয় নি৷ তাছাড়া লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চ‌ট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সু্প্রিম কোর্টের প্রাকন প্রধান বিচারপতির মত অনেকেই বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে একাধিক বক্তব্য রেখেছেন৷ বিচারপতি সৌমিত্র সেনও ইমপিচমেন্টের সময় লোকসভায় বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করেছিলেন৷ সরকারি কৌঁসুলি সেই সময় মনে পড়িয়ে দেন, সেন্টিনারি ভবনের উদ্ধোধনে এসে তত্কালিন দেশের রাষ্ট্রপতি জৈল সিং ও মন্তব্য করেছিলেন 'কই কই জাজ হিলতা হ্যায়৷' ডিভিশন বেঞ্চের এদিনে আরও মন্তব্য, 'বিচার ব্যবস্থা কী সমালোচনার উর্দ্ধে?' মামলাকারি আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য উত্তরে জানান, টাকা দিয়ে রায় কেনা হচ্ছে-এই ধরণের মন্তব্য করে বিচার ব্যবস্থাকে কেউ আক্রমণ করে নি, এই ঘটনা প্রথম৷ এরপরই অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি তাঁর ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে মামলার দিন পিছনো হল৷

ব্যবচ্ছেদ: বিশ্বায়নের অর্থনীতি-অর্থনীতির বিশ্বায়ন, গরিবের তোষন না শোষণ


ক্যাটাগরী: 

কোথায় চলেছে নিয়ে যুগের বিশ্বায়ন

সাধারণভাবে বলা যায় যে বিশ্বায়ন হলো এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে স্থানীয় বা আঞ্চলিক কোন বিষয় বা প্রপঞ্চ বিশ্বব্যাপী বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত হয়। শীলা এল ক্রাউচার ( গ্লোবালাইজেশন এ্যান্ড বিলংগিং : দ্য পলিটিকস অব আইডেন্টিটি এ চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড) বলেন যে এর মাধ্যমে বিশ্ব মানব গোষ্ঠী একটিমাত্র সমাজে একত্রিত হয় এবং একসাথে কাজ করে। আর এটি অর্থনৈতিক,প্রযুক্তিগত,সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদানমূহের সমষ্টি। জগদীশ ভগবতী (ইন ডিফেন্স অব গ্লোবালাইজেশন) একে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন চিহ্নিত করে বলেছেন যে-দ্যাট ইজ ইন্টিগ্রেশন অব ন্যাশনাল ইকনমিকস ইনটু দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইকনমি থ্রু ট্রেড,ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, ক্যাপিটাল ফ্লোস, মাইগ্রেশন এ্যান্ড দ্য স্প্রেড অব টেকনোলজি।বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সীমানাহীন উৎপাদন ও বিনিময়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য,আউটসোর্সিং, সরবরাহ শৃংখল,ব্যবসায়ী সংগঠন, বহুজাতিক কর্পোরেশন (এমএনসি),মিশ্র সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়গুলো সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। এ যুগের প্রথি্তযশা পণ্ডিত নোয়াম চমস্কি(কর্পোরেট গ্লোবালাইজেশন, কোরিয়া এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স) অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের নিওলিবারেল কাঠামো প্রসঙ্গে বলেন এর অর্থ হলো অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জাতীয় সীমানা উন্মুক্তকরণ এবং এখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আন্তআঞ্চলিক বাণিজ্যে পরিণত হবে। ফলে বিশ্বায়নের সুবাদে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে বিশাল আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের পরিমাপঃ মোটামুটিভাবে ০৪ টি অর্থনৈতিক গতিপ্রবাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন আবর্তিত হয়। (ক) পণ্য ও সেবা: জনগণের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের অনুপাত হিসেবে আমদানী ও রফতানি (খ) শ্রমিক/জনসম্পদ: নীট মাইগ্রেশন হার, বহির্গামী ও অস্তগামী মাইগ্রেশন গতিপ্রবাহ (গ) প্রযুক্তি: আন্তর্জাতিক গবেষণা ও উন্নয়ন গতিপ্রবাহ, 'ফ্যাকটর-নিউট্রাল' প্রযুক্তি গত উন্নয়ন যেমন-টেলিফোন, মোটরকার, ব্রডব্যান্ড প্রভৃতির মাধ্যমে গবেষণায় নিয়োজিত জনগণের অনুপাত। এসব চলকের ভিত্তিতে কেওএফ ইনডেক্স এর মতে বিশ্বের প্রধান গ্লোবালাইজড দেশ হলো বেলজিয়াম এবং এর পরপরই আছে অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডের অবস্থান। হাইতি, মায়ানমার ও বুরুন্ডি এ তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, কানাডা, ডেনমার্ক সর্ব্বোচ্চ গ্লোবালাইজড দেশ এবং সর্বনেম্নে রয়েছে মিশর, ইন্দোনেশিয়া,ভারত ও ইরান (এ টি কেয়ারনি)।

বিভাজনঃ অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে ঘিরে মোটামুটি ০৩ টি প্রধান চিন্তাধারা গড়ে উঠেছে। (ক) অর্থনৈতিক উদারবাদ: মিল্টন ফ্রিডম্যান, ওহন নেইসবিট প্রমুখ অর্থনৈতিক উদারবাদীরা আন্তর্জাতিক বাজার ব্যাবস্থাপনার সমান্তরালে দেখেছেন অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে। এখনকার বিশ্বে একটি পণ্য উৎপাদন বিশ্বের যে কোন প্রান্তে সম্ভব। পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে সংগ্রত করা যায়। পণ্য উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত কোম্পানি বা কারখানাটি বিশ্বের যেকোন প্রান্তে অবস্থিত হতে পারে। উপরন্তু উক্ত পণ্যটি বিক্রয়েরও কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই অর্থ্যাৎ পৃথিবীর যেকোন বাজারে তা বিক্রয়যোগ্য। ফলে ব্যক্তি, পরিবার, কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্বায়ন আমাদের সামনে এমন এক সুযোগ এনে দিয়েছে যা মানব ইতিহাসের কোন পর্বে দেখা যায়নি।অর্থনীতির এমন বিশ্বায়নের ফলে ব্যাক্তি ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করেছে। ব্যাক্তিগত সফলতা তার পরিবার কে করেছে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল। জীবনযাত্রার মান উন্নীত হয়েছে। এসব ব্যক্তিক সফলতা বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকে ত্বরান্বিত করেছে। এভাবে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি-কর্পোরেশন বা ট্রান্সন্যাশনাল কর্পোরেশন (টিএনসি), যার বেশ কয়েকটি বিভিন্ন খাতে বিশ্বের মোট উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়ের প্রায় অর্ধেক অংশ নিয়ন্ত্রন করছে। যেমন সুইজারল্যান্ডের ফুড ইন্ডাস্ট্রি নেসলে এসএ এর বহুজাতিক ইনডেক্স হলো ৯৪.০। এসনিভাবে সুইডেনের ইলেকট্রনিক্স শিল্প ইলেকট্রোলাক্স এবি, জাপানের ইলেকট্রনিক্স শিল্প সনি, মার্কিন কম্পিউটার শিল্প আইবিএম,কোরিয়ার দাওয়াউ যথাক্রমে ৮৮.৩,৫৯.১,৫৪.৯ ও ৪৭.৭ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এভাবে জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্বের মাত্র ১০০ টি বহুজাতিক কর্পোরেশনের টিএনসি ইনডেক্সের হার ৫১.০ ভাগ।

(খ)বাস্তববাদী মার্কেন্টাইলিজম: থমসন, ক্রেন্সার, ক্যাপ্সটেইন প্রমুখ বলেন বিশ্বায়ন হলো জাতীয় রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা। এর বাইরে নতুন কিছু নেই।তারা দেখান যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খুব উঁচুস্তরে ছিল, যা কেবল আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক।উল্লেখ্য যে বহুজাতিক কোম্পানি সমূহ তাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলে না। কারণ তারা হচ্ছে গ্লোবাল প্লেয়ার। মাতৃভূমির সাথে রয়েছে তাদের নিবিড় সম্পর্ক। যেমন টেলিনরের সাথে নরওয়ের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।তবে জাতি রাষ্ট্র বিশ্বায়নের ফলে হুমকির সম্মুখীন-উদারবাদীদের একথা অবাস্তব। কারণ এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য রাষ্ট্রের ক্যাপাসিটি কমেনি বরং বেড়েছে এ কথা সর্বোতভাবে গ্রহণযোগ্য।তবে তাত্ত্বিকভাবে এ মতবাদে রাষ্ট্রকে বড় করে এবং আন্তর্জাতিক নির্ভরশীলতাকে ছোট করে দেখাকে অন্যতম ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

(গ) রবার্ট কক্স প্রমুখ মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন একদিকে যেমন পারস্পারিক নির্ভরশীলতাকে তীব্রতর করে তোলে তেমনি অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনীতি সৃষ্টিতে তৎপর হয়। জাতীয় রাষ্ট্রসমূহ বিশ্বায়নের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, কিন্তু এক্ষেত্রে তারা অর্থনীতির উপর তাদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তারা গঠন করে ম্যাক্রো রিজিওন। মূলত অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন হলো অসম, স্বেচ্ছাচারী পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা ধীরে ধীরে নেতৃত্বদানকারী শিল্পোন্নত দেশের কব্জায় চলে যায়। মূলকথা বিশ্বায়ন হলো পুঁজিবাদের একটি ধরণ। পুঁজিবাদী ক্লাস ডোমিনেশনকে তা আরো পোক্ত করে। পাশাপাশি বিশ্বের অসহায় দরিদ্র জনগণকে শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট করে।

বিশ্বায়নের নীতি ও তত্ত্ব বিশ্ব অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।যেমন-(ক) শিল্প: বিশ্বব্যাপী উৎপাদন মার্কেটের উত্থান পর্ব ভোক্তা ও কোম্পানীর জন্য বিদেশী পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার, বিশেষত, বস্তুগত ও খাদ্য সামগ্রীর আন্তদেশীয় বিনিময় বিশ্বায়নেরই ফল। (খ) ফিনান্সিয়াল:বিশ্বব্যাপী ফিনান্স মার্কেটের উত্থান এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের বিকাশ হয়। (গ) ইকোনমিক: পণ্যসামগ্রী মূলধন বিনিয়োগের স্বাধীনতার মাধ্যমে গড়ে উঠেছে একটি গ্লোবাল কমন মার্কেট। (ঘ) রাজনৈতিক: ফ্রান্সিস্কো স্টিপো ( ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্ট মেনিফেস্টো: গাউড টু পলিটিক্যাল গ্লোবালাইজেশন) মনে করেন যে বিশ্বায়ন মানে হলো একটি বিশ্ব সরকার বা কতগুলো সরকারের সমষ্টি। ডব্লিউটিও, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফ সহ বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এসব সরকারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা পালন করে। রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশ্বায়নের প্রভাব ও নিজ বলিষ্ঠ-কার্যকর নীতিমালার সাহায্যে চীনও গত শতকে বহুমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জন ও সফলতা লাভ করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই চীন বিশ্বের অদ্বীতিয় পরাশক্তি হয়ে উঠবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। চার্লস হার্স্ট ( সোস্যাল ইনইকুয়ালিটি) বলেছেন যে- চাইনা উইল হ্যাভ ইনাফ ওয়েলথ, ইন্ডাস্ট্রি এ্যান্ড টেকনোলজি টু রাইভাল দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ফর দ্য পজিশান অব লিডিং ওয়ার্ল্ড পাওয়ার। (ঙ) প্রযুক্তি: ইন্টারনেট, কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট,সাবমেরিন কেবল, ওয়ারলেস টেলিফোন প্রভৃতি ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ও বহু সীমা উপাত্ত গতিপ্রবাহ গড়ে তোলা হচ্ছে,যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে করেছে আরো আধুনিক আরো গতিশীল।প্রযুক্তির উপর ভর দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি সমূহের প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্বায়ন বিভিন্ন দেশের দরিদ্র হার নিম্নমুখী করেছে। জেফরি সাচস ( দ্য এন্ড অব প্রোভার্টি,২০০৫) পরীক্ষা করে দেখান যে সাব সাহারান দেশের তুলনায় চীনে অধিক মাত্রায় বিশ্বায়ন ঘটেছে।ফলে চীনে দারিদ্রের হার উল্লখযোগ্যভাবে কমে আসে।তাছাড়া উন্মুক্ত বাণিজ্য, পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্রকেও বিশ্বায়ন আরো সুসংহত করেছে বলে তার দাবি।উন্মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থকরা বলে থাকেন যে বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে বিশ্বায়ন অর্থনেতিক সুযোগ সুবিধা ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছে। দ্রব্যমূল্যের নিম্নগতি, অধিক কর্মসংস্থান, উৎপাদনের উচ্চহার এবং জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটেছে। উন্নয়নশীল দেশ যার ফলে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়। সাউহুয়া চেন ও মার্টিন রেভেলিওন ( হাউ হ্যাভ দ্য ওয়ার্ল্ড'স পুওরেস্ট ফেয়ারড সিনস দ্য আরলি এইটিস) এবং বিশ্বব্যাংকের ডাটা থেকে দেখা যায় যে পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক এলাকায় বিশ্বায়নের অভিঘাতে অগ্রগতির সূচক উর্ধ্বমুখী। অবশ্য সাব সাহারার ক্ষেত্রে বিপরীত প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক এলাকায় ১৯৮১,১৯৮৭,১৯৯৩,১৯৯৯ ও ২০০২ সালে দিনে ১ ডলারের নিচে আয় করা মানুষের হার ছিল যথাক্রমে শতকরা ৫৭.৭,২৮.০,২৪.৯,১৫.৭ ও ১১.১ ভাগ এবং ১৯৮১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত মোট পরিবর্তনের হার ছিল, -৮০.৭৬%। আর অত্র অঞ্চলে দিনে ২ ডলারের নিচে আয় করা মানুষের এ পরিবর্তনের হার ছিল উল্লিখিত সময়ে ,-৫২,০০%। সাব সাহারান আফ্রিকায় একই সময়ে দৈনিক ১ ডলারের ক্সেত্রে হার ছিল যথাক্রমে ৪১.৬, ৪৬.৮,৪৪.০, ৪৫.৭ ও ৪৪.০ ভাগ এবং মোট পরিবর্তনের হার হলো +৫.৭৭%। ২ ডলারের ক্ষেত্রে মোট পরিবর্তনের হার ছিল +২.১%।

ডেভিড ব্রুক (গুড নিউজ এ্যাবাউট পোভার্টি) বলেন বিশ্বায়নের ফলে সমগ্র বিশ্বের আয় অসমতা অর্থ্যাৎ ইনকাম ইনইকুয়ালিটি ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। জেভিয়ার সালা-ই মার্টিন অবশ্য বলছেন আয় অসমতা একেবারে দূরীভূত হয়ে গেছে। মূলত আপেক্ষিক অসমতার চেয়ে দারিদ্র মোকাবিলা হলো মূখ্য ব্যাপার। বিশ্বায়ন মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে এটা সত্য।

উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষের জীবনকাল দ্বিগুণে উপনীত হয়েছে। এমনকি অনুন্নত সাব সাহারান আফ্রিকায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এব আগের তুলনায় ৩০ বছর আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে (গে পেফারম্যান, দ্য এইট লুজারস অব গ্লোবালাইজেশন)।

বিশ্বায়নের ফলে দেশে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে একথা সমবেশী সত্য। ফ্রিডম হাউসের তথ্যমতে ১৯০০ সালে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ জাতির ভোটাধিকার ছিল না। অথচ ২০০০ সালে এসে সমগ্র জাতির শতকরা ৬২.৫ ভাগ ভোটাধিকার পায়। এর পাশাপাশি নারীর অধিকার, সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন বাংলাদেশেই নারীদের চাকরি-বাকরি, কর্মসংস্থান, শিক্ষাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বব্যাপী খাদ্যঘাটতি গ্রাস পেয়েছে। এক হিসেবে দেখা যায় যে ১৯৬০ এর দশকে বিশ্ব জনগণের খাদ্য সরবরাহে ব্যক্তি প্রতি ২২০০ ক্যালরি ঘাটতি ছিল।যার শতকর হার ছিল ৫৬%। ১৯৯০ এর দশকে এ হার ১০% এর নিচে নেমে আসে। তাছাড়া ১৯৫০-১৯৯০ সালের মদ্ধ্যে বিশ্ব স্বাক্ষরতার হার ৫২% থেকে ৮১% এ উন্নীত হয়। অন্যদিকে শ্রমখাতে শিশুশ্রম ১৯৬০ সালের ২৪% থেকে ২০০০ সালে ১০% নামানো সম্ভব হয়েছে।

মানুষের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হওয়ার ফলে তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।বিদ্যুৎ, মোটর কার, টেলিফোন-মোবাইল ও নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহারের গতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিশ্বায়নের পরিবেশগত প্রভাব নেতিবাচক হওয়ায় তার অগ্রগতিকে অনেকটা সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।যেমন- দরিদ্র রাষ্ট্রের অবস্থা: চার্লস হার্স্ট (সোস্যাল ইনইকুয়ালিটি:ফর্মস কজেজ এ্যান্ড কনসিকুয়েন্সেস) মত দেন বিশ্বায়ন দরিদ্র রাষ্ট্রের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে।উল্লেখ্য যে বিশ্বায়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উন্মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে।এর অনেক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কারণ কিছু দেশ তাদের জাতীয় বাজারকে সংরক্ষণের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। দরিদ্র রাষ্ট্রের সাধারণত প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে কৃষি ও কৃষিজাত সামগ্রী।এসব দেশের কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান করে উন্নত দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে গরিব দেশের কৃষকরা বাজারের মূল্য অপেক্ষা অত্যন্ত কম মূল্যে তাদের পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

বিদেশী দরিদ্র শ্রমিক নির্যাতন:শক্তিশালী শিল্পোন্নত দেশসমূহের উন্নত ও বলিষ্ঠ পুঁজির অভিঘাতে দুর্বল ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর আত্মরক্ষা ব্যুহ ক্রমেই ভেঙে পড়ে। এসব দেশের সস্তা শ্রমের নিশ্চয়তা তাদেরকে প্রলুব্ধ করে। আত্মরক্ষার অভাবের সুযোগ নিয়ে শিল্পোন্নত দেশের বিভিন্ন কোম্পানি উন্নয়নশীল দেশের শ্রমিকদের অল্প মজুরিতে নিয়োগ দেয়। এসব দেশে কর্মঘণ্টাও উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি।কাজের পরিবেশও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।এক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানি নাইকির প্রসঙ্গ টানতে পারি।

আমেরিকা ভিত্তিক এ কর্পোরেশন ক্রীড়া ও অ্যাপারেল সামগ্রী তৈরির জন্য বিখ্যাত। অত্যন্ত লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ নিতান্তই কম। এর কারণ হলো এর ফ্যাক্টরি সমূহ এশিয়ার দরিদ্র দেশসমূহে স্থাপন করা হয়েছ্ শ্রমিকদেরও মজুরি হিসেবে কোনমতে জীবনধারনের জন্য সামান্য অর্থ প্রদান করা হয়। এমনকি শিশুরাও কম মজুরিতে এখানে কাজ করে। যদি এসব উন্নয়নশীল দেশে প্রতিরক্ষামূলক বিভিন্ন ব্যাবস্থা (আইন ও তার প্রয়োগ) থাকত তে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যেত। তবে অনেকেই বলে থাকেন যে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে শ্রমিকরা কাজের স্বাধীনতা পায়। তারা এক্ষেত্রে কারখানা বদল করতে পাওে বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু অনেক দরিদ্র দেশের শ্রমিকদের এ স্বাধীনতা ভোগ করা মানে কর্মসংস্থার হারানো বা ুধার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা । এসব দেশে কর্মসংস্থানের ত্রে অত্যন্ত সীমিত।

আউটসোর্সিং ও ইকোনমিক গ্যাপ: মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তের ফাঁদ-প্যাচ্রিক ম্যাকমোহন ( দ্য ডিকাইনিং মিডল কাস: এ্যা ফারদার এ্যানালাইসিস) দেখান যে উন্নয়নশীল দেশের সস্তা শ্রম কর্পোরেশনগুলোকে বিদেশের বাজারে পণ্য সামগ্রী উৎপাদন ও চালানে প্রলুব্ধ। মজুরি ও লাভ কম থাকার পরেও এখানকার অদ শমিকরা সার্ভিস সেক্টরে শ্রম দিতে বাধ্য হয়। উৎপাদন হয় কিন্তু বেশি। এভাবে দ ও অদ শ্রমিকদের মধ্যে ইকোনমিক গ্যাপ প্রলম্বিত হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কিঞ্চিত ধ্বংসের জন্য এটি দায়ী। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এ রকম ক্ষতিগ্রস্থতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অসমতা বৃদ্ধিতে একটি বড় ফ্যাকটর হিসেবে কাজ করে। এভাবে আউটসোর্সিং ও অধিক উৎপাদনের জন্য অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার নিু অবস্থানে চলে আসছে। আর নিুবিত্তের অবস্থা আরো সঙ্গীন। তাদের অবস্থা ম্যাকমোহনের ভাষায়-দ্যাট পিপল ইন দ্য লোয়ার কাস হ্যাভ মাচ হার্ডার টাইম কাইম্বিং আউট অফ পোভার্টি বিকজ অফ দ্য এ্যাবসেন্স অফ দ্য মিডল কাস এ্যাজ এ স্টিপিং স্টোন।

দুর্বল লেবার ইউনিয়ন: চার্লস হার্স্ট যুক্তি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি নিজেদের মধ্যে উøুত্ত সস্তা শ্রমিক বিনিময় করার ফলে লেবার ইউনিয়নের মতা ও কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে পড়ছে।লেবার ইউনিয়নের সদস্য প্রাপ্তি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কর্পোরেশনের উপর ইউনিয়নের প্রভাব কমে আসছে বলে তিনি মনে করেন।

অর্থনৈতিক অসমতা: অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান নেতিবাচক দিক হলো অর্থনৈতিক অসমতা। বিশ্বব্যাংকের বিশ্বব্যাংকের এক খর্থনীতিবিদ ব্রাঙ্কো মিলানোভিক ডিসেম্বর ২০০৭ সালের এক হিসেবে বলেন নভেম্বর মাসে বিশ্বব্যাপী অসমতা (বিশ্বের সকল ব্যক্রির মধ্যকার প্রকৃত আয়ের পার্থক্য) হিসাব করা হয় ৬৫ গিনি পয়েন্টস; যেখানে ১০০ পয়েন্টস হলো সম্পূর্ণ অসমতা এবং ০ সম্পূর্ণ সমতা প্রকাশ করে; যেখানে সকলের আয় সমান ধরা হয়। এখানে অসমতার লেভেল দক্ষিণ আফ্রিকার অসমতার লেভেল থেকে উচ্চ। কিন্তু ডিসেম্বরে এই বিশ্ব অসমতা হয় ৭০ গিনি পয়েন্টস যা বিশ্বের কোথাও কোনোদিন আগে দেখা যায়নি। আর এর নগ্ন শিকার হলো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো।

কর্পোরেট স্বার্থ: বিশ্বায়নের সমালোচনাকারীরা বলে থাকেন যে বিশ্বায়ন এমন একটি পদ্ধতি যা কর্পোরেট স্বার্থের তাহিদেই সৃষ্টি হয়েছে। আর এ স্বার্থুসদ্ধির তাগিদেই শূলত তৈরী হয় গ্লোবাল ইনস্টিটিউশন ও নীতিমালার বিকল্প সম্ভাব্যতা। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও নীতিমালা দরিদ্র ও শ্রমিক শ্রেণীর ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। পরিবেশগত বিষয়াবলী একই উৎস থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। তার মানে কর্পোরেট সংস্থা০ই এখানে মূখ্য।

বিশ্বায়ন বিরোধী তত্ত্ব: বিশ্বায়ন বিরোধী আন্দোলন বেশ ব্যাপক। এখানে আছে চার্চ গ্রুপ, জাতীয় স্বাধীনতা গ্রুপ, কৃষক ইউনিয়নবাদী, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, প্রতিরক্ষাবাদী, নৈরাজ্যবাদীসহ আরো অনেকে। নৈরাজ্যবাদীরা বলেন – বিশ্বায়ন হলো –রি লোকালাইজেশন। কিন্তু সংস্কার বাদীরা বলেন যে অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন পুঁজিবাদের মানবিক রুপ। বিপ্লববাদীরা একে দেখেন-এটি পুঁজিবাদ অপেক্ষা অধিক মানবিক পদ্ধতি। প্রতিক্রিয়াশীলরা বিশ্বাস করনে-বিশ্বায়ন জাতীয় শিল্প ও কর্মসংস্থানকে ধ্বংস করেছে।ৎ

শ্যাম্পেন গ্লাস ইফেক্ট: অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রবার্ট হান্টার ওয়েড ( দ্য রাইজিং ইনইকোয়ালিটি অফ ওয়াল্ড ইনকাম ডিস্ট্রিবিউশান) দেখান যে ২০০১ সালের আগের ২০ বছরে ৮ মেট্রিকসের মধ্যে ৭ টি আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮০ এর দশকে নিম্নশ্রেণীর আয় ও বিশ্ব আয় বিতরণের মধ্যে স্পষ্ট ব্যাবধান গড়ে ওঠে। এ আয় বৈষম্য কে জেভিয়ার গোবোস্টিয়াগ শ্যাম্পেন গ্লাস ইফেক্ট তত্ত্বের মাধ্যমে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার নির্দেশিত নিম্নোক্ত অধ্যয়ন থেকে দেখা যায় যে, বিশ্ব আয় বিতরণ ব্যাবস্থা অসম। ১৯৯২ সালের ইউএনডিপি রিপোর্ট মতে বিশ্বের ২০% ধনী ব্যক্তি বিশ্ব আয়ের মোট ৮২.৭% নিয়ন্ত্রণ করে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিচের দ্বিতীয় ২০% ধনীর এ হার ১১.৭%, তৃতীয় ২০% এর ক্ষেত্রে ২.৩%, চতুর্থ ২০% এর ক্ষেত্রে ১.৪% এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ের অতি দরিদ্র ২০% ক্ষেত্রে এ আয় মাত্র ১.২%। এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে কি পরিমাণ আয় বৈষম্য বিশ্বে বিরাজমান।

ফেয়ার ট্রেড তাত্ত্বিক যেমন জেফ ফক্স ( ইকোনমিক পলিসি ইনস্টিটিউট) প্রমুখদের মতে নিয়ন্ত্রণহীন মুক্ত বাণিজ্য গরিবের টাকায় ধনিকশ্রেণীর মুনাফার সন্ধান দিবে। বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতি গরিব দেশের কাছ থেকে শোষণমূলক শর্তযুক্ত লোনের বিপরীতে মোটা অংকের সুদ নিয়ে তা দিয়ে পশ্চিমা উন্নত দেশের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আর তৃতীয় বিশ্বের তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত পালিত একশেণীর দালাল তাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছে।

আমেরিকানাইজেশন:আমেরিকাকরণ এমন একটি পিরিয়ড যখন অন্যদেশ ও জনগোষ্ঠীর সাথে আমেরিকার উচ্চ রাজনৈতিক আঁতাত থাকবে।পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে আমেরিকার দোকান, বাজার ও অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সহজেই প্রবেশ করতে পারবে। আমেরিকানাইজেশন মূলত মার্কিন নয়া সাম্রাজ্যবাদের একটি পরিভাষা।

লরেন্স লী, জোয়েল বাকান প্রমুখ মনে করেন যে, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন হলো কর্পোরেটওদর স্বার্থসিদ্ধির ধারাবাহিক উন্নতি ও অগ্রগতিমূলক পদ্ধতি ও উৎকৃষ্ট হাতিয়ার। কর্পোরেট সংগঠনসমূহের স্বায়ত্ত্বশাসন ও শক্তিমত্ত্বা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেষের রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে এগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যা ঐসব দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরুপ। ঐসব দেশের সাধারণ জনগণ এগুলো কখনোই ভালো চোখে দেখে না। যেমন- বাংলাদেশ ইউএনডিপির সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লক ডেসালিয়ান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী প্রমুখ বাংলাদেশর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন হলো মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত কর্মকান্ডের ঐতিহাসিক বিবর্তনের একটি পর্ব। এর ইতিবাচক নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। দরিদ্র বিশ্বের ক্রমাবনতি, শ্রমিক নিপীড়ন, অবাধ আউটসোর্সিং, লেবার ইউনিয়নের ক্ষমতা হ্রাস, অর্থনৈতিক ও আয় বৈষম্য, একক কর্পোরেট স্বার্থ, ধনকি শ্রেণীর অর্থ শোষণ প্রভৃতি বিশ্বায়নের অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।আর এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে এন্টি গ্লোবালাইজেশন মুভমেন্ট। যোসেফ স্টিগলিস, অ্যান্ড্রু চার্লটন প্রমুখ মনে করেন যে এ আন্দোলন মূলত বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও- এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিমাত্রায় শর্তারোপ, বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ন্য, উন্নত পশ্চিমা বিশ্ব কর্তৃক তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহকে শোষণ প্রভৃতি বিষয়গুলোর প্রতি বেশি নজর দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে তাদের অভিমত হলো- এ ম্যালটিচ্যুড অফ ইন্টারকানেক্টেড ফ্যাটাল কনসিকুয়েন্সেস-সোসাল ডিসইন্টিগ্রেশান, এ ব্রেকডাউন অফ ডেমোক্রেসি, মোর র্যাপিড এ্যান্ড এক্সটেনসিভ ডেটারিওরেশান অফ দ্য এনভায়রনমেন্ট, দ্য স্প্রেড অফ নিউ ডিজিজ, ইনক্রিজিং পোভার্টি এ্যান্ড অ্যালিয়েনেশান ( ফ্রিটজ অফ কোপরা, দ্য হিডেন কারনকশান)।এমনকি যুগের বিখ্যাত পন্ডিত নোয়াম চমস্কি অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে ধনিক শ্রেণীর স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে দেখেছেন। তবে আমরা অস্বীকার করব না যে শিল্প, ফিন্যান্স,অর্থনীতি , রাজনীতি, তথ্য-উপাত্ত, সংস্কৃতি, ইকোলজি, পারস্পারিক বিনিময়, প্রযুক্তি, আইনও নৈতিকতা, বাণিজ্য, আউটসোর্সিং, স্টাইল প্রভৃতি বিষয়ে বিশ্বায়ন জগতের সামগ্রিক অগ্রগতির ধারাকে শক্তিশালী ও এক সূত্রে গ্রোথিত করতে সচেষ্ট আছে। যাকে অনেকেই বলছেন-হোয়াট এ্যান এক্সট্রা অর্ডিনারি এপিসোড ইন দ্য ইকোনমিক প্রোগ্রেস অফ ম্যান। বিশ্বায়নের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর গতিবিধি, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণ, পুঁজি ও মেধা পাচার প্রভৃতি বিশ্বায়নের কল্যাণকামিতাকে মোটাদাগে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। উদ্বৃত্ত্ব পুঁজি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে মুনাফা লাভ করার উদ্দেশ্যে উপনিবেশিক যুগে উন্নত দেশগুলো কেবলমাত্র নিজেদের স্বার্থে কলোনী স্থাপন করেছিলো। বর্তমানে সেই পুরনো পুঁজিবাদ তার বাহ্যিক রুপ পাল্টে ফেলেছে।অতীত নীতি ও উদ্দেশ্য ঠিক রেখে প্রতিষ্ঠিত করেছে নয়া উপনিবেশবাদ। নব্য সাম্রাজ্যবাদ। আর বিশ্বায়ন সেই বাহ্যিক অবয়ব বৈ কিছু নয়। এসব কথা এখন বিশ্বের আনাচে কানাচে সমস্বরে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

http://blog.bdnews24.com/cesar/103326


ওবামা প্রশাসনে উচ্ছ্বাস, প্রত্যাশা 
পূরণ করতে পেরে খুশি প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি, ৮ই ডিসেম্বর — যথারীতি ওবামা প্রশাসনে উচ্ছ্বাস। প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরে প্রত্যয়ী 'আন্ডারঅ্যাচিভার'। 

রাজ্যসভায় খুচরো ব্যবসায় বিদেশী লগ্নির অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই 'স্বাগত' জানিয়ে মার্কিন বিদেশদপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার দাবি করেছেন, এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক থেকে ক্রেতা উভয়েরই লাভ হবে। 'খুচরো বাণিজ্যে বহু ব্র্যান্ড পণ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ অনুমোদনে ভারতীয় সংসদের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।' বলেছেন টোনার। স্বাভাবিক। ক'দিন আগেই ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় শিরোনাম ছিল, 'মার্কিন মুলুকে বিকাশে অধোগতি, ওয়াল-মার্ট জোর দিচ্ছে বিদেশে।' 

প্রত্যয়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সংসদ থেকে অনুমোদন বার করে আনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় মার্ক টোনারের ঢঙয়ে তিনিও দাবি করেছেন, এতে কৃষক ও ক্রেতার উভয়েরই লাভ হবে। বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত কৃষিপণ্য বিপণনে আনবে নতুন প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ। সঙ্গে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তকে 'জোরালোভাবে সমর্থন জানিয়েছে পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠন।' এই সেদিন মার্কিন পত্রিকা 'টাইম' পত্রিকার কভার পেজের শিরোনাম ছিল, 'আন্ডারঅ্যাচিভার'। অর্থাৎ, 'প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ মনমোহন'। ওবামা প্রশাসনের প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরে দৃশ্যতই খুশি তিনি। শনিবার পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে তাই দাবি করেন, 'আমি নিশ্চিত, এতে যেমন কৃষকের লাভ হবে, তেমনই হবে ক্রেতার এবং আমাদের দেশের।'

বামপন্থীরা শুক্রবারই বলেছিলেন, এই জয় বাজার অর্থনীতির জয়। সি পি আই (এম) সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে এই জয় আসেনি। এই জয় আসলেই বাজার অর্থনীতির জয়। বাজার শক্তির জয়। মার্কেট মেকানিজমের জয়। সি পি আই কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এদিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সি পি আই এবং বামপন্থীরা এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে জাবে। মানুষকে সংগঠিত করবে। বেআব্রু করবে কংগ্রেস সরকারের নীতি। কেন্দ্রের এই জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য খুচরো ব্যবসায়ী ও মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে সি পি আই।

ওয়াশিংটনে মার্ক টোনার দাবি করেছেন, 'আমাদের বিশ্বাস খুচরো বাণিজ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের অনুমোদন ভারতের বাজারকে বাড়াবে, যেমন বাড়িয়েছে চীন, ব্রাজিলের মতো অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে।' বেশকিছু মার্কিন সংস্থা ভারতে খুচরো বাণিজ্যর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানান তিনি। শুধু টোনারই নন, 'স্বাগত' জানিয়েছে ভারত মার্কিন বিজনেস কাউন্সিল। 

আর পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ভারতে কৃষিপণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল ভীষণভাবেই টুকরো-টুকরো। রয়েছে অদক্ষতাও। এতে উৎপাদক, ক্রেতা উভয়েরই ক্ষতি হচ্ছে। ক্রেতাদের দিতে হচ্ছে চড়া দাম, কিন্তু এই চড়া দাম পাচ্ছেন না উৎপাদক।' সেকারণেই এই সিদ্ধান্ত। যাতে কৃষক ও ক্রেতার উভয়েরই লাভ হবে।

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় গুজরাতে শিল্পের বিকাশ হয়েছে অনেক। কিন্তু কতটা সাফল্য এসেছে কৃষিক্ষেত্রে? তেরোই ডিসেম্বর গুজরাতে প্রথম দফার নির্বাচন। ওইদিন সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের সাতটি জেলায় ভোটগ্রহণ হবে। সাম্প্রতিককালে গুজরাতে যত কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার অর্ধেকই সৌরাষ্ট্রে। নির্বাচনের মুখে কী বলছেন সেখানকার মানুষ? শুনেছেন আমাদের প্রতিনিধি রজতশুভ্র মুখোটি। (http://zeenews.india.com/bengali/nation/sourashtra-special-report-by-rajat-shubhra-mukhoti_9846.html)

এবারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে গুজরাতে প্রায় ৪০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তার মধ্যে শুধু সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের সাতটি জেলাতেই ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১০ বছরে এবার সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে সৌরাষ্ট্রে। তুলো, বাদাম, জোয়ারের চাষ করেছিলেন বহু কৃষক। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফলন মার খাওয়ায়, অনেকে দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেন। রাজকোট জেলার জলদন ব্লকের অন্তর্গত ফুলিহার গ্রামের বাসিন্দা কৃষিজীবী প্রেমজী ভাই দেনার দায়ে গত মাসে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর ছেলে জানালেন, "কৃষকেরা একের পর এক আত্মহত্যা করে চলেছেন। কিন্তু মোদী তা পরোয়াই করেন না"। ২০০১ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, নর্মদা নদীর জল ক্যানেলের মাধ্যমে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে নিয়ে আসা হবে। সেচের কাজে লাগানো হবে সেই জল। কৃষকদের অভিযোগ, মোদীর সেই প্রতিশ্রুতি শুধু প্রতিশ্রুতিই রয়ে গিয়েছে। সেটাই এখন সৌরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা। জলের পাশাপাশি বিদ্যুতেরও সমস্যা রয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুত তাঁরা পান না। 


ভ্যাট বেশি হওয়ায় রাসায়নিক সারের দাম বেশি। তুলো, বাদামের মতো ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়নি। এমনই নানা সমস্যায় জেরবার সৌরাষ্ট্রের কৃষকরা। যদিও নরেন্দ্র মোদীর দাবি, গুজরাতে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার এগারো শতাংশ। সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে। গত ১০ বছরে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে নর্মদার ক্যানাল পৌঁছে দিতে পারেনি বিজেপি সরকার। কৃষিতে এই সঙ্কটের জন্য নরেন্দ্র মোদীকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে সাত হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। আমি ৩ বছরে ১১ হাজার কিলোমিটার লম্বা ক্যানাল বানিয়েছিলাম। নরেন্দ্র মোদী ১২ বছরে মাত্র ৯ হাজার কিলোমিটার ক্যানাল বানিয়েছেন। এখনও ৬৪ হাজার লম্বা ক্যানাল বানানো বাকি রয়েছে। কেন করনেনি নরোন্দ্র মোদী? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষির এই দুরবস্থা এবার সৌরাষ্ট্র অঞ্চলে ব্যাপক সমস্যায় ফেলতে পারে নরেন্দ্র মোদীকে। 

 গুজরাতে যে উন্নয়নের গরিমা মোদি সরকারের প্রধান হাতিয়ার, ভোট প্রচারে এসে সেই উন্নয়নের দিকেই প্রশ্ন তুললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। রবিবার নির্বাচনী প্রচারে আমদাবাদ সফরে আসেন মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক দু-দিন আগেই ঝটিকা সফরে গুজরাতে ঘুরে গিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনিও।

গুজরাতে উন্নয়ন নিয়ে যে ঢালাও প্রচার চলছে, তা আসলে নির্দিষ্ট এক শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সব গুজরাতবাসীর কাছে মোটেও উন্নয়নের আলো পৌঁছয়নি। আমদাবাদে নির্বাচনী প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদির 'উন্নয়নের দিশারী' ভাবমুর্তির দিকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "বিজেপি সরকারে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করছে।" গুজরাতবাসীকে এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এখনও সংখ্যালঘু ক্ষোভে আক্রান্ত মোদীগড়

Update: December 8, 2012 10:13 IST

তেরো ডিসেম্বর গুজরাটের প্রথম দফার নির্বাচন।  নির্বাচনের ঠিক আগে কেমন আছেন গুজরাটের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়? উন্নয়নের সুফলই বা কতটা পেয়েছেন তাঁরা? সরকারের কাছে তাঁদের আশাই বা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে। গত দু'দশকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাল্লাই বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। গুজরাট থেকে রজতশুভ্র মুখোটির রিপোর্ট। 

২০০২ থেকে ২০১২। মাঝে কেটে গেছে দশটা বছর। তবুও গুজরাট হিংসার ক্ষত এখনও পুরোপুরি শুকোয়নি। মাঝখানে পেরিয়ে গেছে দুটো নির্বাচন।  কেশুভাই পটেলের পর ক্ষমতায় এখন নরেন্দ্র মোদীর সরকার। মোদী সরকারের আমলে কতটা উন্নয়ন হয়েছে সংখ্যালঘুদের? তের ডিসেম্বর গুজরাটে প্রথম দফার নির্বাচন। তার আগে মোদী সরকারকে উন্নয়নের মার্কশিটে কতটা নম্বর দিচ্ছেন সংখ্যালঘুরা?

গুজরাটের মোট জনসংখ্যা প্রায় ছ'কোটি। এরমধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। মোট জনসংখ্যার দশ থেকে এগারো শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ হলেও ভোটবাক্সে তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি বিগত দুই নির্বাচনে।  দোরগোড়ায় আরও একটা নির্বাচন। মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের অভিযোগ রাজনৈতিক মেরুকরণের শিকার তাঁরা। গুজরাট নির্বাচনে মোট আসন সংখ্যা ১৮২। এরমধ্যে এবার একটি আসনেও মুসলিম প্রার্থীকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। পাশে দাঁড়ায়নি কংগ্রেসও। উন্নয়নের থেকে বঞ্চনাই বেশি বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গুজরাটের সংখ্যালঘুরা।

ধর্মীয় মেরুকরণের কারণে উন্নয়নও অনেকাংশেই বিত্তশালী মানুষদের ঘিরে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন গুজরাটের সংখ্যালঘুরা। প্রসঙ্গত, ১৩ তারিখের প্রথম পর্যায়ের ভোটে ৩০ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি। কর্মসংস্থান থেকে শিক্ষা সর্বত্রই উঠে এসেছে সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ।

গুজরাট হিংসার পর মাঝে অনেকগুলো বছর কেটে গেলেও  ক্ষত কিন্তু রয়েই গেছে।  অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলে দোষীদের শাস্তিই হয়নি। রয়েছে ইনসাফের দাবি।

http://zeenews.india.com/bengali/nation/minorities-still-in-crisis-in-gujarat_9820.html


মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। মোদীগড়ে কৃষক ও গরিব উন্নয়নে লক্ষ্যই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সোনিয়া। গুজরাত নির্বাচনের প্রাক্বালে শুক্রবার দক্ষিণ গুজরাতের একটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাহায্যের টাকাও নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। 

এদিন আগাগোড়াই মোদীর বিরুদ্ধে ক্ষুরধার ছিলেন সনিয়া। তিনি বলেন, "ইউপিএ সরকার অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে গুজরাতকেও হাজার কোটি টাকার অর্থ সাহায্য করেছে। কিন্তু গুজরাতে সেই টাকা কীখাতে খরচ করা হল, তা কেউ জানে না।" রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, "তাঁরা গরিবদের বিষয়ে ভাবিত নন।" গুজরাত সরকার নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত বলে অভিযোগ তুলেছেন নেত্রী। 

শুক্রবার সোনিয়ার সভামঞ্চে জমায়েত হয়েছিল ভালই। তেরো ডিসেম্বর এই কেন্দ্র থেকেই মোদীর ভাগ্যপরীক্ষা শুরু হবে। সেই নিরিখে সনিয়ার আজকের জনসমাবেশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে এখান থেকেই মোদীকে `মত কা সদাগর` বলে বিতর্ক উস্কেছিলেন সোনিয়া। গুজরাতের উপজাতিদের কথা মাথায় রেখে, সোনিয়া বলেন, "সমালোচকরা আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।" সেইসঙ্গে, যে কোনও পরিস্থিতিতে কংগ্রেসে পাশে থাকার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সোনিয়া। 

ইউপিএ প্রধান আরও অভিযোগ করেন, গুজরাত সরকারের রাজনীতির জন্যই কেন্দ্রের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পগুলি বাধা পাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী নরহরি আমীন দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ঠিক পরের দিনই সনিয়া গান্ধী কংগ্রেসকেই গুজরাতের ভবিষ্যৎ রূপকার বলে বর্ণনা করেছেন। কংগ্রেস সভানেত্রীর এদিনের বক্তব্যে নির্বাচনের আগে দলীয় সমর্থকরা চাঙ্গা হবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

সোনিয়ার দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী প্রচারের ঠিক আগে মোদীর করা মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক সোরগোল ছড়ায়। গত বুধবার কংগ্রেস সভানেত্রীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে বলেন। ডিসেম্বরের ১৩ ও ১৭ তারিখ দু`দফায় গুজরাতে ভোটগ্রহণ হবে। ফল ঘোষণা হবে ২০ তারিখ। 


লালগড়ে উন্নয়ণ নিয়ে নীরব জয়রাম



বিশ্বজিত্‍ বসু ও অরূপকুমার পাল 

লালগড়: দলনেত্রী হিসাবে তাঁকে কুর্ণিশ করলেও, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে তাচ্ছিল্যই করলেন জয়রাম রমেশ৷ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে গেলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী নন, রাস্তার লড়াকু নেত্রী হিসেবেই বেশি দক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাই তাঁর দেড় বছরের রাজত্বে এই রাজ্যে কোনও সরকার নেই, নেই কোনও প্রশাসনও৷' এরকম চড়া সুরেই শনিবার লালগড়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীই শুধু নন, এ রাজ্য থেকে সদ্য নির্বাচিত তিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি এবং আবু হাসেম খান চৌধুরীও মমতা এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা করলেন৷ সিপিএমের চেয়েও কড়া ভাষায় প্রাক্তন জোটসঙ্গীকে আক্রমণ করতে পিছিয়ে ছিলেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার মতো নেতারাও৷ 

কংগ্রেসের সভা কিন্ত্ত হতাশই করেছে লালগড়কে৷ গত কয়েক দিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কংগ্রেস নেতারা জয়রাম রমেশকে দিয়ে লালগড়ে উন্নয়নের বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করানোর যে চেষ্টা করেছিলেন, তাকে জল ঢেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নিজেই৷ বরং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার নানা অভিযোগের জবাব ও পাল্টা অভিযোগ জানানোর মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেছেন লালগড়কে৷ মঞ্চে উপস্থিত কংগ্রেসের মন্ত্রী-নেতারা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের দেওয়া টাকায় 'ফুটানি' করছে রাজ্য সরকার৷ জয়রাম বলেন, 'গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে অঢেল টাকা দিচ্ছে৷ কিন্ত্ত রাজ্যে কোনও কাজ হচ্ছে না৷ কেন হচ্ছে না, তার কোনও জবাব নেই৷' প্রদীপবাবু দাবি করেন, 'এই সরকার পাঁচ বছরও টিঁকবে না৷ রাজ্যে ফের পরিবর্তন আসছে৷ আগামী দিনের বাংলা হবে কংগ্রেসের৷' প্রদেশ কংগ্রেসের এই আশায় ধুয়ো দিয়ে জয়রামও বলেন, 'এক হয়ে লড়তে পারলে কংগ্রেস একাই রাজ্যে সরকার গড়তে পারবে৷' দীপার মন্তব্য, 'মমতার পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না৷' অধীর আবার কংগ্রেসকে হাতির সঙ্গে তুলনা করে তৃণমূলকে নেংটি ইঁদুর বলে কটাক্ষ করেন৷ তিনি বলেন, 'কংগ্রেসকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই৷ ওসব আমরা অনেক দেখেছি৷ এই রাজ্যে এক জনই মন্ত্রী৷ বাকি সব সান্ত্রী৷' 

রাজনৈতিক তরজা যাই হোক না কেন, লালগড় কিন্ত্ত প্রত্যাখান করেছে কংগ্রেসকে৷ স্থানীয় ফুটবল ময়দানে এই সভায় খুব বেশি লোক হয়নি শনিবার৷ বিশেষ করে লক্ষ্যনীয় অনূপস্থিতি ছিল লালগড়ের মানুষের৷ মঞ্চ থেকে অধীর-মানসরা অবশ্য অভিযোগ করেন, বহু জায়গায় আগের রাতে মানুষকে হুমকি দিয়ে কংগ্রেসের সভায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ দলের পতাকা ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা হুমকি দেন, এসব আর বেশি দিন বরদাস্ত করা হবে না৷ লালগড় থেকে লোক না এলেও, তিন কিমি দূরের বামাল থেকে লোক এসেছিল৷ মেদিনীপুর থেকে লালগড় ফুটবল ময়দানে যাওয়ার পথ ঢেকেছিল শুধুই তৃণমূলের পতাকায়৷ মাঝে মাঝে কংগ্রেসের দু'একটি পতাকা জানিয়ে দিয়েছে দলের অস্তিত্ব আছে এলাকায়৷ ঘাটাল, খড়গপুর, কেশপুর, বেলপাহাড়ি থেকেও লোক আনা হয়েছিল৷ সবং থেকে ২৬টি বাস বোঝাই করে লোক আনা হয়েছে৷ বাদ যায়নি বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনাও৷ সেখান থেকেও বাস-ম্যাটাডর করে দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসা হয়৷ 

লোক কম হলেও এই সভায় কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের মেজাজ ছিল অত্যন্ত চড়া৷ যে সিপিএমকে গত দেড় বছর আগে কংগ্রেস আর তৃণমূল জোট বেঁধে রাজ্য ছাড়া করেছে, সেই সিপিএমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস নেতাদের মুখে তেমন কোনও আক্রমণাত্মক কথা শোনা যায়নি৷ বরং তাঁরা অনেক বেশি আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ রাজ্যে নতুন সরকার হওয়ার পর পরই নেতাজি ইন্ডোরে কংগ্রেসের পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ তৃণমূলকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, 'কংগ্রেস রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেয়নি যে চুপ করে বসে থাতবে৷' তখন থেকেই দুই জোটসঙ্গীর ঠোকাঠুকি লেগেছিল৷ এ দিনও তিনি বলেন, 'এ রাজ্যে কংগ্রেস সন্ন্যাস নেয়নি৷ তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে দেওয়ার পর কংগ্রেসের পুনর্জন্ম হয়েছে৷' মমতার নাম না করে জয়রাম বলেন, 'কিছু লোক কংগ্রেস থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন, কিছু সুবিধা নেন৷ তার পর কংগ্রেসকেই ধাক্কা মারেন৷ কিন্ত্ত তাতে কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না৷' তিনি বলেন, 'আমাদের প্রথম লড়াই আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট৷ রাজ্যের মানুষ সিপিএম, তৃণমূলকে দেখেছে৷ এবার কংগ্রেসকে দেখবে৷' দীপা-অধীর-আবু হাসেমের ভাষণে মমতার আমলে নানা রেলের প্রকল্প থেকে শুরু করে ত্রিফলা কেলেঙ্কারি, রায়গঞ্জের এইমস ধাঁচের হাসপাতাল পর্যন্ত রাজ্যের অনেক প্রসঙ্গই আসে৷ 

রবিবার রামগড়ে তৃণমূল পাল্টা সভা করবে৷ সেই সভাকে কটাক্ষ করে অধীর বলেন, 'কার বিরুদ্ধে কাল ওরা সভা করবে? ওরাই তো সরকার চালাচ্ছে৷' কংগ্রেসের অভিযোগ সম্পর্কে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, 'লালগড়ে কংগ্রেস কোথায়? ওরা বাইরে থেকে লোক এনেছে৷ আমরা তো আর ওদের লোক দিতে পারব না৷' 

লালগড়ে তৃণমূলকে আক্রমণ জয়রাম রমেশের



লালগড়: আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে লক্ষ্য করে লালগড়ে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। কংগ্রেসকে এ রাজ্য থেকে কেউ সরাতে পারবে না বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী। কেন্দ্রীয় অনুদানের টাকা রাজ্য সরকার নয়ছয় করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। 

লালগড়ের ফুটবল ময়দানে শনিবার সভা করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। ছিলেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৈধুরী ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও। কংগ্রেসের থেকে জন্ম নিয়ে, কংগ্রেসের থেকে প্রচুর উপকার নিয়ে কংগ্রেসকে আঘাত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। লালগড়ে দাঁড়িয়ে এই অভিযোগ করেন রমেশ। তিনি বলেছেন, "যদি কেউ মনে করে কংগ্রেস এ রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়েছে, সেটা তার ভুল ধারণা। এ রাজ্যে পরিবর্তন আনতেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল কংগ্রেস. এখন তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে নতুন ভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস কর্মীরা। পঞ্চায়েত ভোটেই তার প্রভাব পড়বে।" লালগড়ের মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, "আপনারা সিপিএম-কেও দেখেছেন, তৃণমূলকেও দেখছেন। কিন্তু আপনারা কিছু পেলেন কি?" 

সাংবাদিকদের প্রশ্নে অবধারিত ভাবে এসে পড়ে লোকসভা ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূলে অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রসঙ্গ। তার উত্তরে জয়রাম রমেশ বলেন যে তৃণমূল যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর নামে কুত্‍সা প্রচার করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দাজনক। কংগ্রেসের মন্ত্রীদেরও তৃণমূল অপমান করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর দাবি, "কেন্দ্র মানেগ্রা প্রকল্পের অধীনে ২,৭০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলায় ৫,৫০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্যও অর্থ মঞ্জুর করেছে। কিন্তু কেন্দ্রের নামে এখানে অপপ্রচার চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। নারী উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্র যে টাকা অনুদান দিয়েছে, তা রাজ্য সরকার নিজেদের 'আনন্দধারা' প্রকল্পে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেন রমেশ।

মহাকরণ অভিযানের প্রস্ত্ততি শুরু করল জমিরক্ষা কমিটি



এই সময়: লোবার জমি আন্দোলন আরও জোরদার করার জন্য এ বার ব্লকে ব্লকে প্রচারের প্রস্ত্ততি নিচ্ছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি৷ ১৩ ডিসেম্বর কমিটি যে মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছে, তা সফল করতেই এই উদ্যোগ৷ কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, তারা অন্যান্য জেলাতেও নিজেদের সমর্থনে জনমত গড়ে তুলতে চায়৷ বৃহস্পতিবার কমিটির যুব সংগঠন ডিভিসি-এমটার প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্প এলাকার বাইরে বিভিন্ন গ্রামে ছোট ছোট একাধিক সভা করে৷ সভাগুলিতে বেশ ভালোই ভিড় হয়েছে বলে দাবি করে কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার বলেন, লোবার জমি আন্দোলনের ঢেউ এ বার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে৷ 

কমিটি সূত্রে খবর, শুধু দুবরাজপুরই নয়, জেলার বিভিন্ন ব্লকেও প্রচার চালানো হবে৷ এমনকী, অন্য জেলাগুলিতেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে প্রচার আন্দোলন৷ মঙ্গলবার সিউড়িতে কমিটি যে মিছিল করেছিল, তাতে গ্রামবাসীদের হাতে ছিল কোদাল, লাঙল, ঝুড়ি, বেলচা, মাছ ধরার জাল ইত্যাদি৷ ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মহাকরণ অভিযানেও মিছিলকারীদের হাতে সে সব থাকবে বলে জানান কমিটির সভাপতি ফেলারাম মন্ডল৷ এখন দেখার, রাজ্য প্রশাসন সে দিন কৃষি জমি রক্ষা কমিটিকে মহাকরণ অভিযানের অনুমতি দেয় কি না৷ ফেলারামবাবু বলেন, 'অনুমতি না দিলেও আমাদের অভিযান হবে৷' 

দশটি গ্রামের ১১টি মৌজার মোট ৩৩৫৩ একর জমিতে হওয়ার কথা ছিল ডিভিসি-এমটার প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি প্রকল্প৷ এই ১১টি মৌজার যুবকদের নিয়েই গড়ে উঠেছে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির যুব শাখা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার লোবা সফরে এসে গ্রামবাসীদের মূল সমস্যাকেই এড়িয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ৷ সে দিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা৷ তাঁদের অভিযোগ, ডিভিসি-এমটার যৌথ সংস্থা জমির ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনও কথাই বলার প্রয়োজন মনে করেনি৷ বরং দালাল লাগিয়ে জমি কেনার চেষ্টা করছে৷ কমিটির নেতারা জানান, গ্রামবাসীরা জমি দিতে রাজি৷ কিন্ত্ত তাঁরা চান, সরকারের মাধ্যমে জমি কিনুক সংস্থাটি৷ মাঝে কোনও দালাল রাখা চলবে না৷ একে ঘিরেই যাবতীয় সমস্যার শুরু৷ গত ৬ নভেম্বর লোবায় পুলিশি তাণ্ডবের পর সরকারের ভূমিকায় সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ৷ তাঁরা ভেবেছিলেন, রাজ্য সরকার ওই সংস্থার সঙ্গে গ্রামবাসীদের আলোচনার ব্যবস্থা করে দেবে৷ কিন্ত্ত সরকার সে পথে হাঁটেনি৷ উল্টে মুখ্যমন্ত্রী লোবায় এলেও, কমিটির কারও সঙ্গে কথা বলেননি, যাননি কমিটির ধরনা মঞ্চেও৷ সে দিনই ওই মঞ্চ থেকে কমিটির নেতারা জানিয়ে দেন, ১৩ ডিসেম্বর মহাকরণ অভিযান করে কলকাতা অচল করে দেওয়া হবে৷ সেই মতোই বৃহস্পতিবার থেকে গ্রামে গ্রামে প্রচার শুরু হয়েছে৷

ক্ষুধা মেটাতে পোকা ও কৃত্রিম মাংস

অনলাইন ডেস্ক | তারিখ: ০৭-০৮-২০১২

বিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী দিনে মানুষের খাদ্য তালিকা নির্ধারণে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)

বিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী দিনে মানুষের খাদ্য তালিকা নির্ধারণে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা), মাংসের মূল্যমান ও বাদ্য-বাজনার সুরের মধ্যে একটি যোগসূত্র থাকবে।

ছবি- বিবিসি

মানুষ বাড়ছে। সে অনুযায়ী খাদ্য বাড়ছে না। গোটা বিশ্বজুড়েই এ অবস্থা। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে এক পর্যায়ে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। কী খাওয়া যায়—এ নিয়ে বড় ধরনের হয়রানিতে পড়তে পারে মানুষ। এজন্য খাদ্য বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, আগামী ২০ বছরে মানুষের খাদ্য তালিকায় কি কি স্থান পেতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় খাবারের তালিকায় পোকামাকড়ের কদর বাড়ানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। আমিষের চাহিদা পূরণে ভাবা হচ্ছে কৃত্রিম মাংসের কথাও। 
শুনতে বিস্ময় জাগানিয়া হলেও বিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী দিনে মানুষের খাদ্য তালিকা নির্ধারণে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা), মাংসের মূল্যমান ও বাদ্য-বাজনার সুরের মধ্যে একটি যোগসূত্র থাকবে। তাঁরা বলছেন, তাত্ক্ষণিকভাবে সম্পর্কটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও ভবিষ্যতে মানুষ কি খাবে এবং কিভাবে খাবে, তা নির্ধারণে ওপরের তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্বজুড়ে মাংসের দাম বাড়ছে। অভিজাত খাদ্য উপাদান হিসেবে মাংসের কদর রয়েছে। ব্যাপক হারে ঘরে পালিত হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, জবাই করার কারণে একদিকে প্রাণিকুলের পরিবেশের ভারসাম্যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, তেমনি গ্রিন হাউস গ্যাসের বিরূপ প্রভাবও বাড়ছে। 
এ পরিস্থিতিতে নাসার গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি মাংস পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। অন্যদিকে, প্রচলিত খাদ্যের সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে চান বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, সেক্ষেত্রে নতুন ধরনের খাদ্যগ্রহণে মানুষকে আকৃষ্ট করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ওই বিশেষ খাদ্যের সঙ্গে মিলিয়ে সুরের আয়োজন। যেমন নতুন ও ভিন্নধর্মী একটি সামুদ্রিক খাবার পরিবেশন করার সময় এর সাগরের গর্জন শোনানোর কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। এতে ওই খাবার ভোক্তাদের কাছে সমাদৃত হবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
খাবার ও জনসংখ্যার দাম বাড়ার সঙ্গে পরিবেশগত উদ্বেগ যোগ হওয়ায় গরিব দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত বিশ্বের দেশও ভবিষ্যতে তাদের জনগণের খাবার জোগানো নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছে। যুক্তরাজ্যে মাংসের দামের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে মানুষের খাদ্যাভ্যাস। 
কয়েকটি খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে মাংসের দাম প্রায় দ্বিগুণে ঠেকবে। মাংস তখন বিলাসজাত খাবারের তালিকায় স্থান পাবে। ভবিষ্যত্ খাদ্য বিশেষজ্ঞ মরগেইন গেয়ি বলেন, 'পশ্চিমে এক সময় পর্যাপ্ত মাংস পাওয়া যেত। সে সময় দামও ছিল সস্তা। দাম বাড়ার কারণে মাংস হয়ে গেছে অভিজাত খাবার। কাজেই, এখন আমরা মাংসের শূন্যতা পূরণের উপায় খুঁজছি।' 
গেয়ি বলেন, 'মাংসের বিকল্প হিসেবে আমরা পোকামাকড়ের দ্বারস্থ হতে পারি। যা আমাদের খাবার তালিকার অন্যতম প্রধান উপাদান হয়ে উঠতে পারে।' নেদারল্যান্ডের ওয়াগেনইঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের দাবি, এটা যেন লাভের ওপর লাভ। সাধারণ মাংসের চেয়ে পোকামাকড়ে পুষ্টিগুণ থাকে অনেক বেশি। পোকামাকড় আমিষের এক বিশাল উত্স। সারা বিশ্বে মানুষ খেতে পারে এমন এক হাজার ৪০০ প্রজাতির পোকামাকড় আছে। শুঁয়াপোকায় আমিষ থাকে ২৮ দশমিক ২ গ্রাম, লোহা থাকে ৩৫ দশমিক ৫ গ্রাম; ফড়িংয়ে আমিষের পরিমাণ ২০ দশমিক ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম আছে ৩৫ দশমিক ২ গ্রাম। 
পোকামাকড়ের তৈরি বার্গার ও সসেজ (পাতলা চামড়ার আবরণের মধ্যে মসলাযুক্ত মাংসের কিমা ভরে প্রস্তুত এক ধরনের খাবার) দেখতে অনেকটা মাংসের বার্গারের মতো। মজাদার বার্গারের উপাদান হিসেবে চমত্কারভাবে ব্যবহার করা যায় ফড়িং ও ঝিঁ-ঝিঁ পোকাকে। পোকামাকড়কে প্রধান খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করতে ডাচ সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। সম্প্রতি এই খাতে গবেষণার জন্য দেশটির সরকার ১০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করেছে। পোকামাকড় চাষে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের প্রস্তুতিও হাতে নিয়েছে দেশটি। 
সারা বিশ্বে প্রচুর মানুষ প্রতিদিন খাবার হিসেবে পোকামাকড় খায়। আফ্রিকার মানুষের কাছে শুঁয়াপোকা ও পঙ্গপাল (ফড়িং, মাছির মতো লাফাতে পারে এমন কীট) অত্যন্ত জনপ্রিয়। জাপানিদের কাছে ভিমরুল বেশ সুস্বাদু খাবার। থাইল্যান্ডে ঝিঁ ঝিঁ পোকা হরদম খাওয়া হয়। গেয়ি বলেন, অবশ্য ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার খুঁত খুঁতে লোকদের কাছে এসব পোকামাকড় সুস্বাদু করে তোলার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। তিনি বলেন, 'এসব পোকামাকড় জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তখনই, যখন আমরা এদেরকে পোকা না বলে ঘরে পালিত ছোট্ট প্রাণীটি মনে করব।' 
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণত দেখে ও শুঁকে খাবার খাওয়া হয়। তবে খাবারের স্বাদে শব্দেরও প্রভাব রয়েছে বরে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ সুর ব্যবহার করে বিশেষ খাবারকে অনেক মিষ্টিবা তেতো করা যায়। 
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষণমূলক মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক চার্লস স্পেন্স পরিচালিত দি বিটারসুইট স্টাডি নামে এক গবেষণায় দেখা গেছে, রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি হালকা সঙ্গীতের আয়োজন খাবারের স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়। 
এ ব্যাপারে শব্দ ও সুর নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান কনডিমেন্ট জাংকির এক কর্মকর্তা রাসেল জোনস বলেন, 'খাওয়া-দাওয়ার সময় সুরের ব্যবহারে মস্তিষ্কে আসলে কী ঘটে, তা আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত নই, তবে কিছু একটা তো ঘটেই।' 
এভাবে সুর ও সঙ্গীতের ব্যবহার আরো ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। জোনস বলেন, একটি মিষ্টিজাতীয় খাবারে চিনির পরিমাণ কমানোর পর সেটা আগের মতো স্বাদ লাগার কথা নয়। কিন্তু, বিশেষ সুর সংযোগে ভোক্তাদের কাছে খাবারটি যেন মিষ্টি-মিষ্টি লাগে তার ব্যবস্থা করা হয়। 
আজকাল খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খাবার ও শব্দের মধ্যে এক ধরনের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টাও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন চিপসের বেলায় এটি বেশি প্রযোজ্য। মচমচে চিপসের মত তার মোড়কও যদি স্পর্শ করলে মচমচ শব্দ হয়, তবে ভোক্তারা ভাববেন এটা একদম টাটকা। আর তখন সেটার স্বাদও যেন বেড়ে যায়। 
ডাচ বিজ্ঞানীরা চলতি বছরের শুরুতে কৃত্রিম উপায়ে মাংস তৈরিতে সফল হয়েছেন। অনেকে এটাকে বলেন টেস্টটিউব মাংস। বিজ্ঞানীরা গাভীর স্টেম সেল ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে মাংসপেশির টিস্যু সৃষ্টি করেন। তাঁরা আশা করছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বের প্রথম টেস্টটিউব বার্গার তৈরি করতে পারবেন। নাসার বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে মাংস তৈরি প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ ব্যাপারে তাঁদের প্রথম গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এভাবে উদ্ভাবিত মাংস খাওয়া গেলে এখন থেকে নভোচারীরা মহাকাশে মাংসও খেতে পারবেন। এ খাতে গবেষণাকাল ১০ বছর হতে চলল। বিজ্ঞানীরা আরো কার্যকর ও পরিবেশ-বান্ধব করে ওই মাংস পরিবেশন করার চেষ্টা করছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পশু-জবাইয়ের পরিবর্তে পরীক্ষাগারে মাংস তৈরি করলে তা গ্রিন হাউস গ্যাস কমাতে সহায়ক হবে। এতে একই সঙ্গে জ্বালানি ও পানির ব্যবহারও কমে আসবে। এতে চর্বি কমবে, বাড়বে পুষ্টিগুণ। এ ছাড়া, গবাদিপশু পালনে প্রচুর জায়গাও লাগে। 
ম্যাসট্রিচট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাচ বিজ্ঞানীদের দলনেতা অধ্যাপক মার্ক পোস্ট বলেন, পরীক্ষাগারে তৈরি এ মাংস দেখতে ভিন্ন হলেও, এতে আসল মাংসের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টাই করছেন তাঁরা। 
খাবার হিসেবে একেবারে শেষ দিকে থাকা উপাদান হচ্ছে শৈবাল। খাদ্য ঘাটতিসহ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জটিল সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে এই শৈবাল। মানুষ ও পশুর খাবার জোগানোর পাশাপাশি মহাসাগরের তলে জন্মাতে পারে এই শৈবাল। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, শৈবাল থেকে উদ্ভূত জৈব-জ্বালানি জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা কমাতে পারে। 
এশিয়ায়, বিশেষ করে জাপানে এ ধরনের বড় বড় খামার রয়েছে। শুধু স্থলেই নয়, কেবল সাগরতলেই ১০ হাজার ধরনের শৈবাল পাওয়া যায়। আর তাই, কয়েকটি খাদ্য-শিল্প কারখানা ভবিষ্যদ্বাণী করছে, শৈবাল চাষ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃষি শিল্পে পরিণত হতে পারে। 
বিবিসি অবলম্বনে হাসান মাহমুদ ফয়সল।

http://www.prothom-alo.com/detail/news/279999


বরেন সরকার২রা, ডিসেম্বর ২০১২
অপুষ্টির ছবি বদলাতে আধপেটা খেয়ে সংসার চালিয়ে যাঁরা প্রকল্পের কাজ করছেন সেই মহিলাদের ন্যূনতম মজুরিটুকু দিতে রাজি নয় কেন্দ্র, কিন্তু অভিনেতা আমির খানকে মডেল করে তাঁর সঙ্গে ছবি তুলে বিজ্ঞাপনে প্রচার করতে উদ্যোগী হয়েছেন কেন্দ্রের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রীমতি কৃষ্ণা তিরথ। তাঁর সঙ্গে সহাস্য ছবিও প্রকাশ হয়েছে সংবাদপত্রে। মদের ঠিকাদার কোটিপতি পন্টি চাড্ডা ভ্রাতৃদ্বয় পরস্পর মারামারিতে খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনা রাজধানীর সকলের নজর কেড়েছে।...

>>>

কৃষ্ণেন্দু রায়২৫শে, নভেম্বর ২০১২
"Her Blood is on Your Hand" - এই প্ল্যাকার্ড হাতে প্রায় ১০-১২হাজার মানুষের তীব্র বিক্ষোভের সাক্ষী থাকলো আয়ারল্যান্ড। বিক্ষোভের নিশানায় আইরিশ সরকার ও তাদের প্রণয়ন করা গর্ভপাত বিরোধী আইন। তাদের জিজ্ঞাসা একটাই- কে বড়? ধর্মীয় আচরণ না মানুষ ? গত মাসের শেষ সপ্তাহে আয়ারল্যান্ড নিবাসী ভারতীয় দন্ত চিকিৎসক সবিতা হালাপ্পানাভারের মর্মান্তিক মৃত্যু আয়ারল্যান্ডের ধর্ম আর ধর্মের বেড়াজালে আটকে থাকা গর্ভপাত নিষিদ্ধকারী আইন দুটোকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।...

>>>

১১ই, নভেম্বর ২০১২
দেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ— রুখে দাঁড়ানো ছাড়া পথ নেই। প্রতিবাদের, প্রতিরোধের, মহিলাদের সম্মান-সুরক্ষার এই দায়িত্ব কেবল মহিলাদের হতে পারে না। সমাজের সব অংশের মানুষকে সমবেত ভাবে মানবতার এপরে এই আক্রমণকে রুখে দিতে হবে। দেশজুড়ে মধ্যযুগের বর্বরতা হরিয়ানায় এক মাসে বারোটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এবছরের প্রথম ৬মাসের মধ্যে ৩৬৭টি ধর্ষণের ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে। এই হিসেব অবশ্যই শুধুমাত্র যে অপরাধগুলি নথিবদ্ধ হয়েছে তার ভিত্তিতে।...

>>>

স্বর্ণেন্দু দত্ত২৮শে, অক্টোবর ২০১২
উৎসবের মুখে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে রাজস্থানের রিকসা চালক বাবলু আর তাঁর সদ্যোজাত মেয়ে দামিনীর কাহিনী নাড়িয়ে দিল দেশের সংবেদনশীল মানুষগুলোকে। দামিনী এক গরিব রিকসা চালকের এক মাসের শিশুকন্যা, জন্ম দেওয়ার পরেই তার অ্যানিমিয়া আক্রান্ত মায়ের মৃত্যু হয়েছে। দিনমজুর বাবা ছাড়া দামিনীকে দেখার কেউ নেই। কিছুদিন রিকসা টানা বন্ধ রেখে দামিনীকে দেখভাল করেছেন বাবলু। কিন্তু তাতে চলবে কী করে? সারা দিনে রিকসা টেনেই দু'বেলা পেট ভরে খাবার জোটে না। অনাহার, অপুষ্টিতে যাঁর স্ত্রী অ্যানিমিয়ায় মারা যায় সন্তানের জন্ম দিয়ে, তাঁর কী ঘরে বসে থাকা সাজে?

>>>

অরূপ দাস১৪ই, অক্টোবর ২০১২
সাহসিনীর মৃত্যু হয় না। তালিবানি হিংসা এযাত্রায় অন্তত ১৪বছরের কিশোরীটির প্রাণ কেড়ে নিতে পারলো না। ফতোয়া উপেক্ষা করে ও হয়তো আবার বলবে, ''তোমরা গুলি চালাও, আমি স্কুলে যাবোই।'' মালালা ইউসুফজাই। বয়স মাত্র ১৪, কিন্তু সাহস বা তেজ প্রাপ্তবয়স্কদের হার মানায়। ভয়ডর তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে উগ্রপন্থীদের কবজায় থাকা সোয়াত উপত্যকায় সেই কবে তিন বছর আগেই তালিবানি ফতোয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিল ইউসুফজাই।...

>>>

কৃশানু ভট্টাচার্য১৪ই, অক্টোবর ২০১২
''আমার বাবা খুঁজে পেয়েছিলেন আমার ডায়েরিটা; তারপর ...'' ''আমার মা'র কাছেই রয়েছে আমার ডায়েরি, কিন্তু ...'' ''বাবা যুদ্ধশে‍‌ষে আমস্টারডামে ফিরে এসে অনেক কষ্টে খুঁজে বার করেন আমার ডায়েরিটা। আমি ডায়েরিটা লিখেছিলাম ডাচ ভাষায়। আমার ১৩ বছরের জন্মদিনে এই ডায়েরিটা কেউ উপহার দিয়েছিলেন। তার দু'বছর আগে নু‍‌রেমবার্গ আইনের দৌলতে আমরা নাগরিকতা হারালাম।...

>>>

ভারতী মুৎসুদী১৪ই, অক্টোবর ২০১২
নিগৃহীত মহিলাদের পাশে আইনী লড়াইয়ে মহিলা আইনজীবীরা থাকবেন। দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিল গণতান্ত্রিক আইনজীবী সঙ্ঘ। ২৯শে নভেম্বর গণতান্ত্রিক আইনজীবী সঙ্ঘের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ক‍‌মিটি আয়োজিত চতুর্থ মহিলা আইনজীবী কেন্দ্রীয় কনভেনশনে দৃপ্ত ঘোষণা করা হয় নিগৃহীত মহিলাদের পাশে আইনী লড়াইয়ে মহিলা আইনজীবীরা দৃঢ়ভাবে থাকবেন।...

>>>

কেয়া পাল৩০শে, সেপ্টেম্বর ২০১২
ভারতের জনসংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার মানচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। চীনের পরই ভারতের স্থান। কিন্তু পুষ্টির গুরুত্বের দিক থেকে আমাদের দেশ সারা পৃথিবীর মধ্যেই পিছিয়ে রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হয়েও এদেশের সব মানুষ দু'বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। অপুষ্টি তাই এদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের নিত্যসঙ্গী। এই অপুষ্টির পেছনে রয়েছে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, পুষ্টিশিক্ষার অভাব প্রভৃতি কারণসমূহ।...

>>>

১৬ই, সেপ্টেম্বর ২০১২
প্রশ্ন থাকতেই পারে, যতই বেঠিক হোক তবু থাকা দরকার জাতীয় মহিলা কমিরশনের। অনেকটা দায়বদ্ধ থেকে আর বিতর্কের বেশ খানিকটা উপরে উঠে। আজ যখন জাতীয় মহিলা কমিশনের ভূমিকাই প্রশ্নের মুখে, তখন তা টিকিয়ে রাখার পথ খুঁজতে গণশক্তির প্রতিবেদন। যেমন এদেশের মৌসুমী বায়ু, তেমনই সংসদের মৌসুমী অধিবেশন।...

>>>

২রা, সেপ্টেম্বর ২০১২
''আমাকে এখানে আরও একমাস বসবাস করতে হবে। তারপর আমাকে স্নান করে মন্দিরে যেতে হবে, সেখানে আমার সন্তানের নামকরণ হবে। শুধুমাত্র তারপরেই আমি বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি পাবো।'' মাত্র ২০ দিনের সন্তানের মা জয়াম্মা, ছোট্ট ঝুপড়ি থেকে বেরিয়ে এসে এই কথাগুলি জানালেন। ভরা বর্ষায় গ্রাম থেকে দূরে চাষের জমির মাঝে একাকী দিন কাটাচ্ছেন।...

http://ganashakti.com/bengali/Samaswar.php


'ক্ষুধা-দারিদ্র্য মোকাবেলায় চাই বৈশ্বিক কর্মপন্থা'
Mon, Aug 13th, 2012 12:43 am BdST
 
লন্ডন, অগাস্ট ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবেলায় বৈশ্বিক কর্মপন্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রোববার লন্ডনে পুষ্টি বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। 

অলিম্পিকের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ব্রাজিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল টিমারও বক্তৃতা করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দারিদ্র্য ও ক্ষুধা কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়, বরং এর প্রভাব বিশ্বের সর্বত্র। এ জন্য এসব বিষয়ে বৈশ্বিক এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়নে গোটা বিশ্বের সম্পদের ব্যবহার, অভিজ্ঞতা বিনিময়, গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রয়োগের ব্যাপারে গোটা বিশ্বকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।" 

ক্ষুধা এবং অপুষ্টি মোকাবেলায় সমন্বিত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন তিনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, "আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব উদ্যোগের মধ্যে খাদ্যশস্যের আঞ্চলিক মজুত, খাদ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা বা কোনো কারণে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগের নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।" 

পণ্যের অস্বাভাবিক লেনদেন ও পণ্য বাণিজ্যিকীকরণ কার্যকরভাবে মোকাবেলায় বৈশ্বিক ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ সালে খাদ্য ঘাটতির কারণে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছিল এবং রফতানির ওপর খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়কে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১০ শতাংশ উৎপাদনশীলতা কমে যায়। এতে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পায়, যার মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। 

"এর পরিমাণ হচ্ছে জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এর সঙ্গে সম্পদ ও অনুরূপ অন্যান্য যোগ হলে বাংলাদেশের এই ক্ষতির পরিমাণ হবে জিডিপি'র ৩ থেকে ৪ শতাংশ।" 

"এই ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া গেলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সহজেই অনেক বেশি হত। এতে অর্থনৈতিক ভিত দৃঢ় হত, কর্মসংস্থান বাড়ত, খাদ্য উৎপাদন ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ত," বলেন শেখ হাসিনা। 

অপুষ্টিকে রোগ-বালাইয়ের বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রায় ১৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু মারাত্মক ও ধারাবাহিক খাদ্যাভাবের কারণে কম ওজন নিয়ে জন্মায় এবং এসব দেশের প্রাক-স্কুলগামী ১৪ কোটি ৭০ লাখেরও বেশি শিশু অনাহারের শিকার। 

আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু অপুষ্টির হার সর্বাধিক এবং বিশ্ব শিশু অপুষ্টিতে বাংলাদেশের হার ৬ শতাংশ, এই তথ্যও বক্তব্যে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 

অপুষ্টি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের বাস্তবসম্মত নীতি ও পদক্ষেপের ফলে দৈনিক ১৮০৫ ক্যালরিরও কম খাদ্য গ্রহণকারী লোকের সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়েছে। 

"২০১৫ সাল নাগাদ আমরা এমডিজির ১৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করছি। বর্তমান সরকারের গত সাড়ে তিন বছরে আমরা অপুষ্টির হার ৪২ শতাংশ থেকে ৩৬ শতাংশে কমাতে সক্ষম হয়েছি এবং অনাহার ৪৩ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে।" 

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ২০১৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কম ওজনের শিশুর হার ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশে হ্রাস পাবে, যা ক্ষুধার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে এগিয়ে নেবে। 

শিশুর পাশাপাশি মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নেও সরকার সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএনপি/এসইউএম/এমআই/০০৪১ ঘ. 
http://bdnews24.com/bangla/details.php?id=202112&cid=2

বুধবার, 28 অক্টোবার 2009 16:20

ক্ষুধা বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ফাও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খাদ্য দিবস উপলক্ষে বিশ্বে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে একটি উদ্বেগজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ফাও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী যৌথভাবে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। বিশ্বে অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং দারিদ্র ও ক্ষুধা বিরোধী কর্মসূচীগুলোতে আন্তর্জাতিক সাহায্য হ্রাসের ব্যাপারে ঐ প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আজকের আসরে আমরা ঐ প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা করবো।

ফাও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ১০০ কোটি অভুক্ত মানুষ রয়েছে এং চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো ১০ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এদের দলে যুক্ত হবে। ফাও- এর মহাপরিচালক বলেছেন, কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী দরিদ্র ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, ১৯৮০ সালে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেখানে সাহায্যের পরিমাণ ছিলো শতকরা ১৭ ভাগ সেখানে ২০০৬ সালে এই খাতে সাহায্যের পরিমাণ শতকরা মাত্র ৩ ভাগে নেমে এসেছে।

বিশ্বের অভুক্ত মানুষের অধিকাংশই এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে বসবাস করে। ২০০৭ সালে ল্যাটিন আমেরিকার ১৭টি দেশের বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের পরিমাণ ছিলো ১৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। অথচ ২০০৮ সালে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কায় ঐ পরিমাণ প্রায় অর্ধেক কমে গিয়ে ৮ হাজার ৯০০ কোটিতে দাঁড়ায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসেব অনুযায়ী চলতি ২০০৯ সালের শেষ নাগাদ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর আয় আরো কমে যাবে এবং তা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকবে। বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে নজীরবিহীন এই পতনের ফলে দেশগুলোর খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে। অনেক দেশ খাদ্যদ্রব্য আমদানি করার ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যার মুখে পড়বে।

দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ শিল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যায্য বাণিজ্যিক নীতি। ঐ অন্যায় নীতির কারণে খাদ্যদ্রব্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বে মোট উৎপাদিত কৃষিপণ্যকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ দিলে দেখা যাবে বিশ্বে মোটেই খাদ্য ঘাটতি নেই। অর্থাৎ, ন্যায়ভিত্তিক খাদ্যদ্রব্য বন্টন নিশ্চিত করা গেলে বিশ্বে কারো অভুক্ত থাকার কথা নয়। ধান ও গমসহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যের একটি বড় অংশ উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত দেশগুলোতে উৎপাদিত হয়। ঐসব উন্নত দেশের গৃহিত কৃষি নীতির কারণে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষিখাত এক রকম ধ্বংস হতে বসেছে। উন্নত দেশগুলো তাদের দেশে কৃষিপণ্যের দাম কম রাখার জন্য এই খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার ভর্তুকি দিচ্ছে। ফলে উন্নত দেশগুলোর কৃষিপণ্যের সাথে দরিদ্র দেশগুলোতে উৎপাদিত পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।

উন্নত দেশগুলিতে চাষাবাদ হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে। ঐসব দেশ কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সমস্যারও সমাধান করে ফেলেছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এখনো কৃষিকাজের জন্য অধিকাংশ সময় বৃষ্টির ওপর নির্ভর করতে হয় এবং এসব দেশের কৃষিকাজ হয় সনাতন পদ্ধতিতে। উন্নত বিশ্বের অপকর্মের কারণে জলবায়ুতে যে বিশাল পরিবর্তন এসেছে তার ফলে এখন আর সময়মত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না বা অসময়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দরিদ্র দেশগুলোর কৃষকদের মারাত্মক বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এবং ফাও এর প্রতিবেদনে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উন্নত দেশগুলোর আরেকটি কর্মকে দায়ী করা হয়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানী উৎপাদনের কাজে খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করছে। ঐসব দেশ ফসিল জ্বালানী বা তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য জ্বালানী উৎপাদনের কাজে খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করছে। ফাও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত মোট ভুট্টার শতকরা ৩০ ভাগ ইথানল তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।

বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণায়নেরও প্রভাব রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ উষ্ণ হয়ে পড়ার কারণে তার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও আবহাওয়ার ওপর। একদিকে প্রবল বর্ষণের ফলে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে কোথাও কোথাও একেবারেই বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে হাজার হাজার একর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। এ কারণে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের লাখ লাখ কৃষক বেকার হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেলেও এসব প্রচেষ্টা শুধু আলোচনার টেবিল গরম করার মধ্যেই সীমিত থাকছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না । ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরো বেড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে ফাও এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া ২০৫০ সাল নাগাদ কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ শতকরা ৯ থেকে ২১ ভাগ কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অথচ সে সময়ে বিশ্বের জনসংখ্যা বর্তমানের সাড়ে ৬শ কোটি থেকে বেড়ে ৯১০ কোটিতে উন্নীত হবে । ঐ পরিমাণ জনগোষ্ঠির উদরপুর্তির জন্য তখন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের পরিমাণ শতকরা ৭০ ভাগ বাড়াতে হবে। কিন্তু পানির অভাবে তখন কোটি কোটি হেক্টর জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এবং ফাও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও তার সুষম বন্টন নিশ্চিত করা না গেলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষের সুনামী দেখা দেবে।

ফাও এর প্রতিবেদনে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ মোকাবিলার কিছু উপায়ও বলে দেয়া হয়েছে। কৃষিখাতে ব্যাপক গবেষণা চালাতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের সব স্থানে কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে ব্যাপক ফলনশীল শস্য উৎপাদনের কর্মসূচীও হাতে নিতে বলা হয়েছে। ফাও বলেছে, ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়নের কথা মাথায় রেখে এমন প্রযুক্তি আবিস্কার করতে হবে যাতে অনেক বেশী তাপমাত্রা ও রোদের ফলেও কৃষিপণ্যের ক্ষতি না হয়। ফাও এর প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দেয়া হলেও বাজেট ঘাটতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে কৃষিখাতে ব্যয়বহুল এসব গবেষণা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

এদিকে উন্নত দেশগুলো ক্ষুধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আর্থিক সাহায্যের যে সব কথা বলেছে তা এখন পর্যন্ত প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। গত বছর ইতালিতে অনুষ্ঠিত জিএইটের শীর্ষ সম্মেলনে দরিদ্র দেশগুলোর কৃষি উন্নয়ন খাতে ২ হাজার কোটি ডলার সাহায্য দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার একটি টাকাও পরিশোধ করা হয় নি। ২০০০ সালে জাতিসংঘের গৃহিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২০১৫ সাল নাগাদ বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠির সংখ্যা অর্ধেকে অর্থাৎ ৫০ কোটিতে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু ২০০৯ সালের শেষে এসে এখন দেখা যাচ্ছে অভুক্ত জনগোষ্ঠির সংখ্যা কমে নি। বরং এ বছরের শেষ নাগাদ আরো সাড়ে দশ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত মানুষের কাতারে শামিল হবে বলে ফাও ঘোষণা করেছে।#


এশিয়ায় বাংলাদেশের খাদ্য ও ক্ষুধা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ

নয়া দিগন্ত ডেস্ক
তারিখ: ১৩ অক্টোবর, ২০১২

গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স (জিএফএসআই) ও গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) কয়েক বছর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের খাদ্য ও ক্ষুধা পরিস্থিতিকে সবচেয়ে খারাপ বলে বর্ণনা করেছে।

ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গত বছরের মতো এবারো তার জিএসএফআই বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের ১০৫টি দেশের মধ্যে ৮১তম স্থানে দেখিয়েছে। রিপোর্টটি গত ১০ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের এ অবস্থান সর্বনিম্নে দেখানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেÑ ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালের পর বাংলাদেশের অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। ইউএনবি।

দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) তার ২০১২ সালের জিএইচআই রিপোর্ট ১১ অক্টোবর প্রকাশ করে। রিপোর্টে ১২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ৬০তম স্থানে দেখানো হয়েছে। এটিও ওপরে বর্ণিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সর্বনিম্নœ অবস্থান।

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষুধা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্কোর হচ্ছে ২৪ পয়েন্ট। এই স্কোরকে 'বিপজ্জনক মাত্রা' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্ব ক্ষুধা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলা হলেও বর্তমানে তা যে স্তরে রয়েছে সেটাকে 'মারাত্মক' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এই ইনডেক্সের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ ব্যাপারে উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতারের মতামত চাওয়া হলে তিনি বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো অনেক কারণ রয়েছে। তবে এসব প্রতিবেদনে যেভাবে একে চিত্রায়িত করা হয়েছে সেটাও ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, কারা কী কারণে এভাবে বাংলাদেশকে চিত্রায়িত করছে সেটা দেখতে হবে। জিএফএসআই ২০১২ পরিচালনা করেছে ডিউপন্ট। এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তিনটি জেনিটিক্যালি মডিফাইড বিজ উৎপাদনকারী কোম্পানির একটি। তাই ধারণা করতে কষ্ট হওয়ার নয় যে, কোনো দেশ তাদের বিজ কিনতে অনাগ্রহ দেখালে তারা সেটিকে তাদের টার্গেটে পরিণত করে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) রিসার্চ ডাইরেক্টর মো: আসাদুজ্জামান বলেন, 'সরকারকে তার খাদ্য পরিস্থিতি যথাযথভাবে নিরূপণে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ পরিসংখ্যান থাকতে হবে।'

http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=17503


আর্থিক সংস্কার অব্যাহত রাখতে এডিবির পরামর্শ

Thu, Dec 4th, 2008 6:45 pm BdST
 
ঢাকা, ডিসেম্বর ৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ব্যাংক ও আর্থিক খাতে গত দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেওয়া সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচিত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এক বৈঠকের পর সফররত এডিবি'র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মহাপরিচালক (ডিজি) কুনিও সেনগা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। 

এছাড়া বিশ্ব অর্থনীতির চলমান সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ-সহায়তারও আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, "গত দুই বছরে এডিবি বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ-সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থ ইতিমধ্যে ছাড় করা হয়েছে। বাকিটা পাইপলাইনে আছে। ভবিষ্যতেও এডিবি'র এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।" 

এডিবি মহাপরিচালক বলেন, "বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গত দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাংক ও আর্থিক খাতে বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে এসব সংস্কার কর্মসূচির সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতির চলমান সঙ্কট সত্ত্বেও দেশটির অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে।" 

সরকার সব কিছুই 'ভালোভাবে ম্যানেজ করেছে' বলে মন্তব্য করেন সেনগা। তিনি বলেন, "ছয় শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো।" 

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির এ ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচিত নতুন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন কুনিও সেনগা।

এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "এডিবি মহাপরিচালক গত দুই বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা (বাংলাদেশ) ঠিক পথেই এগুচ্ছি। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আরও উন্নতি করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও মনে করি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারলে আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।" 

উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক ইস্যুতে এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই এডিবি মহাপরিচালককে একথা জানিয়ে তিনি সংস্কার কার্যক্রম তারা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "এডিবি মহাপরিচালক ঋণ-সহায়তা কার্যক্রম আরো স

সংস্কার দরকার, গরিবের জন্যই দরকার

আর্থিক সংস্কার ঠিক কতটা প্রয়োজন?

নীতিগত ভাবে আমি মনে করি, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে সব রকম আর্থিক সংস্কার সাধারণ মানুষের জন্য, এমনকী গরিবতম মানুষের জন্যও প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সংস্কার হোক। তার পরে সরকারের ভূমিকা হোক সংস্কারের সুবিধাগুলি গরিবের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। আমি সংস্কারে খুবই বিশ্বাস করি ঠিকই, কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না যে সংস্কার করে ছেড়ে দিলে গরিবদের আপনিই লাভ হবে। কিন্তু প্রথম থেকেই যদি সংস্কার না হতে দিই, সেটা একটা ভুল চিন্তাধারা। পশ্চিমবঙ্গেও দেখেছি তিরিশ বছর ধরে, বাজারের গতিপ্রকৃতিটাকেই থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাজারটাকে থামিয়ে দিলে তো গোড়ার পদক্ষেপটাই করা হচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার কি শেষ বেলায় বাজারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল?

মনে হয়, শেষ বেলায় বুঝতে পেরেছিল। হয়তো পালাবদলের পাঁচ-ছ'বছর আগে। তার কারণ, ওরা চিনকে দেখে। চিন ১৯৭৮ পর্যন্ত, মানে মাওয়ের জমানায়, বাজারে বিশ্বাস করত না। জোরজবরদস্তি করে থামাতে গিয়েছে। তার উল্টো ফল হয়েছে। ১৯৫৮'য় গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড হচ্ছে, সাধারণ চাষিদের উৎপাদন বাড়ানোর উৎসাহ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে জোটবদ্ধ চাষ করা হল। মাও জে দংয়ের ধারণা ছিল, এক সঙ্গে সবাই কাজ করলে বিরাট উৎপাদন হবে। উল্টো হল। উৎপাদন ভেঙে পড়ল ১৯৫৮ থেকে '৬১, দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তার পরে ষাটের দশকের শেষে সাংস্কৃতিক বিপ্লব হল। আবার উল্টো ধাক্কা এল। এইগুলো আমরা দেখেছি। চিন নিজেও বুঝল। দেং জিয়াও পিং এলেন সত্তরের দশকের শেষে। নীতি বদলে গেল। বাজারকে নিজের নিয়মে চলতে দিতে হবে, এটা সি পি এমও শেষের পাঁচ বছরে বুঝতে পেরেছিল। ওদের একটা সমস্যা হল, ক্যাডারদের কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে যা শেখানো হয়েছে, তা বদলানো মুশকিল। তবে শীর্ষনেতৃত্ব বুঝে গিয়েছিল। কিন্তু তত দিনে অর্থনীতির অধঃপতন শুরু হয়ে গিয়েছে।

এর ফলে কি পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক উন্নয়নেও পিছিয়ে পড়েছে?

সি পি এম সরকার বলত, আমরা বৃদ্ধিতে বিশ্বাস করি না, মানুষের উন্নয়নে, সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বাস করি। সি পি এম হয়তো সত্যিই বিশ্বাস করে। কিন্তু উন্নয়নের যে সব মৌলিক দিকগুলিকে, সামাজিক উন্নয়নের যে সব সূচককে বামেরা গুরুত্ব দেয়, সেখানেই অধঃপতন হয়েছে। অর্থাৎ নীতিগত ভাবে কোথাও একটা ঘাটতি হয়েছে। ১৯৫১ সালের জনগণনায় সাক্ষরতার হারে পশ্চিমবঙ্গ সবচেয়ে এগিয়ে থাকা পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে। এখন নেমে গিয়ে জাতীয় গড়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। বামফ্রন্টের সদিচ্ছা ছিল। ওদের মধ্যে দুর্নীতি ছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু খুবই কম। স্রেফ ভাবনার ভুলে পারল না। বাজারটাকে তুমি যদি আদর্শগত বিষয় হিসেবে দেখো, তা হলে মুশকিল। বাজার হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণের মতো, থাকবেই, কিছু করার নেই। সেটা আদর্শগত ভাবে নাকচ করতে গেলে মারাত্মক ভুল হবে। সেটাই পশ্চিমবঙ্গের বিরাট ক্ষতি হল। ওরা ভুল বুঝতে পেরেছিল, কিন্তু সংশোধন করার আগেই নির্বাচনে হেরে গেল।

পশ্চিমবঙ্গ বরাবর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার দিকে অভিযোগ তুলেছে। রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার জন্য এটা কতটা দায়ী?

আমার মনে হয় না। যদি এই ধরনের বঞ্চনা থেকেও থাকে, তা আংশিক ব্যাপার। তার জন্যই রাজ্য পিছিয়ে পড়ল, তা মানি না। আবার বলছি, আসলে চিন্তাধারায় দোষ। তুমি চাইছ, শিল্পসংস্থাকে তোমার রাজ্যে এত টাকা মাইনে দিতে হবে। সেই চাওয়াটা খুবই ভাল, কিন্তু যদি এত বেশি চাও যে শিল্প আসবেই না, তা হলে সেটা খারাপ নীতি। আজকের দিনে পুঁজি এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে তো বটেই, একটা দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়। ভারতে বসে ভাবতে হয়, আমরা যদি পুঁজির উপর বেশি কর বসাতে চাই, সেটা চিনে চলে যাবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যাবে, ফিলিপিন্সে চলে যাবে। কাজেই বুদ্ধি খরচ করতে হবে, কতটা দাবি করা উচিত। পশ্চিমবঙ্গ তিরিশ বছর ধরে ভুল করেছে। আমরা এত বেশি দাবি করছিলাম যে রাজ্য থেকে ক্রমশ শিল্প বিদায় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিকে আসতে কেউ বাধ্য করতে পারে না। এটা তো বেসরকারি বিনিয়োগ। এটা ঠিকই যে বড় শিল্প সংস্থার শ্রমিকদের বেশি বেতন দেওয়া উচিত। কিন্তু তাদের অন্যত্র চলে যাওয়ারও পথ খোলা রয়েছে। এটা মনে রেখে দাবি করতে হবে। নইলে বোকামি হবে। তারই ফলাফল তিরিশ বছর ধরে আমরা ভোগ করেছি। আশা করি, এখন পরিস্থিতি বদলাবে।

এখন নতুন সরকারও কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছে। আর্থিক দায়বদ্ধতা, করবণ্টন নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এই সমস্যাটা গোটা ভারতেই রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, পঞ্জাবের আর্থিক অবস্থা খারাপ। অর্থ কমিশন কিছু নিয়ম করে দিয়েছে। এই নিয়মের বাইরে গিয়ে কতটা আর্থিক সাহায্য করা যাবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পশ্চিমবঙ্গের জন্য যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তিন দশক পরে পালাবদল হয়েছে। অতএব বিশেষ সাহায্য দেওয়া হোক। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলিও সেই দাবি করতে পারে। সবাইকে সাহায্য করতে আরম্ভ করলে, কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতি সামাল দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতেও কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ আসবে বলে মনে হয়। রাজ্যগুলিকে কতটা স্বাধীনতা দেওয়া হবে, কতটা আর্থিক ক্ষমতা দেওয়া হবে, তা নিয়ে আরও বিতর্ক হবে। আরও নতুন চিন্তাধারা আসা প্রয়োজন। দেখা যাক, নতুন অর্থ কমিশন তো বসছে। তার থেকে কিছু নতুন ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানার জন্য জন্য কী করা প্রয়োজন?

প্রথমত, মনস্থির করতে হবে যে বিদেশি বিনিয়োগ চাই কি না। বুঝতে হবে যে বিদেশি পুঁজি দানখয়রাত করতে আসছে না, লাভের জন্যই আসছে। তাই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সামলে রাখতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে অনেক দিন ধরে দ্বিধা ছিল, বিদেশি পুঁজি চাই কি চাই না। এখানেও বোকামি হয়েছে। ভারত পুঁজিবাদী অর্থনীতি। পুঁজিবাদকে ভাল লাগুক বা না লাগুক, তার বিকল্প নেই। বাম সরকার চিনকে দেখে জমি অধিগ্রহণ করতে গেল। চিনকে দেখে ঠিক করল, এই ভাবে জমি অধিগ্রহণ করব। কিন্তু এ দেশে তো চিনের মতো ব্যবস্থা নেই। তাই ভারতীয় ব্যবস্থার মধ্যে চিনের নীতি প্রয়োগ করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেল। সফল হল না। এর মধ্যে আদর্শের কোনও ব্যাপার নেই, সাধারণ বুদ্ধির ব্যাপার।

শিক্ষা ক্ষেত্রেও তো নিম্ন গতি এসেছে, রাজ্য অনেক পিছিয়ে পড়েছে?

এটা খুব খারাপ লাগে। প্রচণ্ড শিক্ষিত রাজ্য, বেস্ট মাইন্ডস উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। গোড়ার দিকে যখন দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এ ছিলাম, প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম দশ জনের মধ্যে সাত জন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসত। আশির দশকে স্কুল ও স্নাতক স্তরে পড়াশোনা খুব ভাল হচ্ছিল। তার পর ঝপঝপ করে নেমে গেল। অনেকে ডিজাস্টার বলেন, আমি এতটা খারাপ বলি না। কিন্তু মান নেমেছে, সেটা তো অনস্বীকার্য। পশ্চিমবঙ্গ সকলের চেয়ে এগিয়ে থাকত। আমেরিকায় ভারতের আর কোনও কলেজের নাম না জানলেও, কর্নেল-এ বসে, হার্ভার্ড-এ বসে প্রেসিডেন্সি কলেজের নাম জানে সবাই। এটা বিরাট সাফল্য ছিল।

ভুল হল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমান হবে, এটা ভাবতে গিয়ে। এলিট প্রতিষ্ঠান থাকতেই হবে। প্রেসিডেন্সির শিক্ষকরা গ্রামে গিয়ে পড়াবেন... তত্ত্বে শুনতে খুব ভাল লাগে যে সবাই সমান শিক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু ভারতে ৬০০ বিশ্ববিদ্যালয়, সবাইকে সমান মানে রাখতে গেলে সবগুলোই মাঝারি মানের হবে। আর্থিক ভাবেও সম্ভব নয়। আমেরিকাও পারবে না। আমেরিকা নীতি নিল ৫০টা ভাল প্রতিষ্ঠান হতে দাও, বাকিগুলো টিচিং শপ হোক। পশ্চিমবঙ্গে এলিট প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দেওয়া হল। এটা বিরাট ক্ষতি করেছে।

সমাধান কোথায়?

নতুন করে তো চেষ্টা হচ্ছে। প্রেসিডেন্সিতে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। গোটা দেশে বেশ কিছু এলিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতেই হবে। পরিষ্কার করে বলি, আমি আর্থিক এলিটিজম-এর পক্ষপাতী নই। আমি এখানে ইন্টেলেকচুয়াল, সায়েন্টিফিক এলিটিজম-এর কথা বলছি। উচ্চশিক্ষাকে বাঁচাতে গেলে সেটা ছাড়া গতি নেই। আর্থিক নীতিতে ভুল হলে দু'তিন বছরে সামনে নেওয়া সম্ভব। শিক্ষা নীতিতে ভুল হলে ১০-১৫ বছরের জন্য ক্ষতি হতে পারে।

 

পড়তে চাই, লিখতে চাই, ছবি আঁকতে চাই

সৃষ্টিশীল কাজ?

ছবি আঁকি। ভাল আঁকি তা নয়, আঁকতে ভালবাসি। চারকোল, অয়েল এবং অ্যাক্রিলিক করি। গত কয়েক বছরে শুধু কয়েকটা নিমন্ত্রণের কার্ড এঁকেছি। যেটা আর একটু দক্ষতার সঙ্গে করি, তা হল ছবি দেখা।

আর সাহিত্য?

শরৎচন্দ্রের 'শ্রীকান্ত'। রোমান্টিক, ভীষণ সুন্দর। সব বাঙালির মতো রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম, এই ত্রয়ীর লেখা পড়ে বড় হয়েছি। গভীরতম হলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে 'শ্রীকান্ত' ফেভারিট। শরৎচন্দ্রের রোমান্টিক আবেদন খুব ভাল লাগে।

আমার মনে হয় আমার ভাল ছবি দেখার চোখ আছে। অনেক অনামী শিল্পীদের ছবি কিনেছি, যারা পরে নাম করেছে। দর্শন নিয়ে পড়াশোনার শখ আছে। আড়াই বছরে ছুঁইনি। অমর্ত্যদার কাছে পিএইচ ডি করেছি। উনি একটা দিকে দার্শনিক। আমারও দর্শনে খুবই আগ্রহ।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বনাগরিক ছিলেন। নেহরুর মধ্যেও এটা ভীষণ ভাবে ছিল। সেটা খুব টানে। রবীন্দ্রসঙ্গীত সারা ক্ষণ শুনি। আমার স্ত্রী মহারাষ্ট্রের হলেও রবীন্দ্রসঙ্গীত দারুণ ভালবাসে। 'শেষের কবিতা' সিনেমা হচ্ছে শুনেছি। সিনেমা দেখাও বন্ধ ছিল।

আমার কিছু আনইউজুয়াল দার্শনিক বিশ্বাস আছে। সেগুলো নিয়ে এক দিন লিখতে চাই। অতএব অনেক পরিকল্পনা। তাই পড়তে চাই, লিখতে চাই, ছবি আঁকতে চাই।

আগে আধুনিক শুনতাম না।

এখন সুমন, অঞ্জন, লোপামুদ্রা ও

নচিকেতা খুব ভাল লাগে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষের হাল শোধরানোর জন্য কী করা উচিত?

রাজ্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু কর বসাতে, সরকারি পরিষেবার জন্য চার্জ করতে আরম্ভ করতে হবে। এটা সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সাধারণ লোকের সস্তায় জিনিস কেনার প্রয়োজন অনেক। কিন্তু সবাইকে যদি সস্তায় দিতে আরম্ভ করি, তবে অর্থটা আসবে কোথা থেকে? আয় ও ব্যয়, দু'টোই মাথায় রাখতে হবে। প্রণব মুখোপাধ্যায় এটা বার বার মনে করিয়ে দিতেন।

পশ্চিমবঙ্গের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তা হলে কী করা প্রয়োজন?

আবার উচ্চশিক্ষাকে ভিত্তি করতে হবে। আমরা শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে ভাবছি, কিন্তু আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে, কোনটাকে কেন্দ্রবিন্দু করা উচিত, বলব উচ্চশিক্ষা। লক্ষ্য নিতে হবে, আগামী পাঁচ বছরে উচ্চশিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ যেখানে ছিল, সেখানে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা খুবই সম্ভব। এখনও, এত খারাপ অবস্থার পর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে, সব প্রতিষ্ঠানে, সব শহরে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র বোঝাই হয়ে রয়েছে। তাই পাঁচ বছর এ দিকে মন দেওয়া দরকার। তার ঢেউ উপচে গিয়ে পড়বে অন্যান্য ক্ষেত্রে। এখন মানব পুঁজি সবচেয়ে বেশি দরকার। এই যে আমেরিকায় সিলিকন ভ্যালি, তার আগে ওখানে স্ট্যানফোর্ড, বার্কলে-র মতো প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে সেরা সেরা মস্তিষ্ক ছিল। তারই সুফল ফলল ব্যবসার ক্ষেত্রে। বেঙ্গালুরুতেও তাই হয়েছে। সেখানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স কাজ করছিল। তার পরে ইনফোসিস, উইপ্রো চলে এল। এর জন্য তো তেল বা মাটির তলার খনিজ দরকার নেই। শুধু ঠিক নীতি প্রয়োজন।

আপনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক?

এখনই সরকারে ফিরতে চাই না। তবে পরামর্শ চাইলে অবশ্যই দেব। কলকাতায় জন্মেছি, মানুষ হয়েছি। কলকাতার একটা অদ্ভুত টান হয়। পৃথিবীর খুব কম শহরে মানুষেরই এটা হয়। নিউইয়র্কাররা নিউইয়র্ককে ভীষণ ভালবাসে। লন্ডনের ক্ষেত্রেও এটা আছে। কলকাতাও তেমন। আমার খালি মনে হয়, কলকাতার এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরাট উন্নতির সম্ভাবনা আছে। পশ্চিমবঙ্গের মানব পুঁজি ভাল। আজকের দিনে সেটাই সবচেয়ে দামি পুঁজি। সেটাকে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই করতে পারি আমরা। সেই কাজে নিজেকে লাগাতে চাই। তবে আপাতত বসে লিখতে ইচ্ছে করছে। আমার অধ্যাপক-গবেষক দিকটাই দিকটা বেশি জেগে উঠেছে।

কী লিখতে চাইছেন?

ভারতীয় অর্থনীতির উপর একটা সহজ বই। স্বচ্ছ, ঝরঝরে। সাধারণ ভোটাররা যদি বুঝতে পারেন, কোনটা ঠিক নীতি, তা হলেই অর্থনীতির মঙ্গল। সরকারের ভিতর থেকে যেটা দেখলাম, সেটাও লিখব। সাক্ষাৎকার: প্রেমাংশু চৌধুরী

 

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%B8-%E0%A6%B8-%E0%A6%95-%E0%A6%A6-%E0%A6%95-113554202.html

No comments:

Post a Comment