Saturday, December 1, 2012

মানবাধিকার লঙঘনে আইটি আইন পলাশ বিশ্বাস

মানবাধিকার লঙঘনে আইটি আইন



পলাশ বিশ্বাস

আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তথ্য প্রযুক্তির হাওয়া। তাইতো বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া ভাবাই যায় না। 

পৃথীবীকে গ্লোবে পালটে দেবার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ, যেটা সবাই স্বীকার করবেন৷ গ্লোবীকরণের সবটাইতে বড় বিশেষত্ব হল কর্তৃত্ব বা হেজেমনির একচেটিয়া আধিপাত্য৷কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি এই কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সব চাইতে বড় হাতিয়ার জুগিয়েছে সোশাল নেটওয়ার্কিংএর মারফত৷পৃথীবীর সব দেশেই তথ্য গোপন করে অধিসংখ্য জনগণের বহিস্কার ও নরমেধ অভিযানের মাধ্যমে শাসক শ্রেণীর স্বার্থে রাষ্ট্র করজোরেট রাজ কায়ম করেছে৷ ইতিমধ্যে ওকুপাইওয়াল স্ট্রীট ও আরব বসন্ত ইন্টারনেটে সোশাল নেটওয়ার্কিং এর সাহায্যে সংগঠিত হয়েছে৷ ভারতেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে সোশাল নেটওয়ার্কিং র বড় ভূমিকা৷বিশ্ব ব্যবস্থার কূশী লবরা ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্রোহ দমনের সবরকম ব্যবস্থা করছেন পৃথীবীর সব দেশেই৷ ভারতবর্ষ নবউদারবাদী খোলা বাজার অর্থব্যবস্থায় ঐ বিশ্বব্যবস্থারই অধিবাজ্যে পরিণথ৷ তথাকথিত স্বাধীনতার পর এই দেশে একচেটিয়া করপোরেট ব্রাহ্মন্যবাদের মনুস্মৃতি শাসন চলছে, যেখানে জনগণের তথ্যের আইনসন্গত অধিকারসত্বেও নীতি নির্ধারণের পুরো প্রক্রিয়া গোপনীয়, যেহেতু আর্থিক সংস্কার  ও  অবাধ বিদেশী লগ্নির নামে কালো টাকার খেলা চলছে শাষক শ্রেণীর স্বার্থে৷ সোশাল নেটওয়ার্কিংএর মারফত নির্মম ভাবে এই গোপনীয়তা ভন্গ হচ্ছে বার বার৷ মীডিয়া করপোরেট, জনবিচ্ছিন্ন৷ জনস্বার্থের আওয়াজও তাই এখন সোশাল নেটওয়ার্কিংএর কন্ঠস্বর৷ শাষকশ্রেণীর হরেক রকম আলোচনা যেকানে অপরিহার্য৷ যে কথা বনার কোনও স্পেস আমরা কোথাও পাইনা, সেই কথা সোশাল নেটএর মাধ্যমে মুহুর্তেই সারা পৃথীবীতে সোচ্চার হয়ে ওঠে৷ এই গণবিদ্রোহ ঠেকাতেই দেশে দেশে চালূ হয়েছে আইটি আইন এবং শাসকশ্রেণী এই আইনের দ্বারা নাগরিক ও মানবিধিকার লঙঘন করছে. যারা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপদাপন্ন করবে, তাদের জন্য সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড রেখে এরই মধ্যে একটি সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া মার্কিন কংগ্রেসে পাস হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ছোট ছেলেমেয়েদের যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তাতে গোটা দেশ ক্ষুব্ধ। আজ এই মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানির সময়ে এই মন্তব্য করেছেন কবীর। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আরও আগেই যে কেউ ওই ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেননি তাতেই তিনি বিস্মিত।

ওই আইনের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও। এই বিষয়ে একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল।

সম্প্রতি ফেসবুকে মন্তব্য বা ই-মেলে ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোর জেরে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ধারায় গ্রেফতারি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে গোটা দেশেই। বাক্-স্বাধীনতার উপরে আঘাতের বিষয়টি নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন দিল্লির বাসিন্দা ও আইনের ছাত্রী শ্রেয়া সিঙ্ঘল। তাঁর বক্তব্য, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ওই ধারা সংবিধান-বিরোধী। বিষয়টির গুরুত্ব মেনে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে শুনানি শুরু করেছে শীর্ষ আদালতও। এই বিষয়ে অ্যাটর্নি-জেনারেল জি ই বাহনবতীর সাহায্য চেয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। কবীর জানিয়েছেন, এক সময়ে তাঁরা নিজেরাই এই বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ভেবেছিলেন। তবে বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত 'আপত্তিজনক' বিষয়বস্তু নিয়ে আইনি ব্যবস্থার উপরে স্থগিতাদেশ দেয়নি আদালত। আগামীকাল ফের এই মামলার শুনানি হবে।


তথ্যপ্রযুক্তি আইনের 'অপব্যবহার' নিয়ে এ বার রাজ্যকে নোটিস পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট৷ শুক্রবার শীর্ষ আদালত জানতে চেয়েছে অম্বিকেশ মহাপাত্র মামলায় ওই আইনের ৬৬-এ ধারার অপব্যবহার কেন করা হয়েছে৷শাহিন ধাদা, রেণুকা শ্রীনিবাসন, সুনীল বিশ্বকর্মা৷ এঁরা প্রত্যেকেই পুলিশি হেনস্থার শিকার৷ তিন জনেরই 'অপরাধ', ফেসবুকে কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে 'কুরুচিকর' মন্তব্য করা৷ কিন্ত্ত যে আইনবলে এঁদের বা এ রকম আরও অনেককে গ্রেফতার হতে হয়, সেই আইনের বিরুদ্ধেই এবার একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হল, খাস সুপ্রিম কোর্টে৷ সৌজন্যে দিল্লিনিবাসী আইনের ছাত্রী শ্রেয়া সিংহল৷অন্য দিকে, দশ দিন পর স্বস্তির শ্বাস ফেলতে চলেছে শাহিন ধাদা ও রেণু শ্রীনিবাসনের পরিবার৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে প্রশাসনের তরফে৷ বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি সঞ্জীব দয়াল বলেন, 'পালঘরে গ্রেফতার হওয়া ওই দুই তরুণীর বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট দাখিল করা হবে না৷ মামলা বন্ধ করার কথা জানিয়ে পুলিশের তরফে রিপোর্ট পেশ করা হবে৷'এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভ ও বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ তা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার তথ্যপ্রযুক্তি আইনের '৬৬-এ' ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে নয়া নিয়মবিধি তৈরি করল কেন্দ্রীয় সরকার৷

দেশ জুড়ে সমালোচনার জেরে অবশেষে ২০০০-এর তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬-র এ ধারা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। ঘটনাচক্রে  সুপ্রিম কোর্টে এই আইন সংশোধন নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা গৃহীত হয়। তার বেশ কিছু পরে এই আইন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত জানায় কেন্দ্র।

প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের নেতৃত্বে গঠিত একটি বেঞ্চ আজ জানায় সাম্প্রতিক অনভিপ্রেত ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনে স্যুয়ো মোটো বিচারাধিকার প্রয়োগ করা হতে পারে। এত দিনেও এই ধারাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি কেন সে বিষয়েও বিস্ময় প্রকাশ করে এই বেঞ্চ।

সাম্প্রতিক কালে খবরের শিরোনামে ফেসবুক ঘিরে নানা বিতর্কগ্রেফতারিমানবাধিকারের প্রশ্নবাকস্বাধীনতার প্রশ্ন। দেশ জুড়ে নানা বিতর্ক। এর পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার রুখতে উদ্যোগ নিল সুপ্রিম কোর্ট।

নোটিস পাঠানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সহ চার  রাজ্যকে। চার সপ্তাহের মধ্যে নোটিসের উত্তর দিতে নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মহারাষ্টদিল্লিপুদুচেরি সরকারকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল জি বাহানবতি জানানতথ্য প্রযুক্তি আইন ৬৬ (এ)এর অপব্যবহার রুখতে নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই আইনেই পশ্চিমবঙ্গে ব্যঙ্গ চিত্রকাণ্ডে অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। একই ধারাতে কিছুদিন আগে ফেসবুকে বির্তকিত মন্তব্যের দায়ে মুম্বইয়ের দুই তরুণী ও এয়ার ইন্ডিয়ার দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।


শুধু ফেসবুক কেন, যে কোনও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কেউ কারোর বিরুদ্ধে কিছু লিখলে বা ছবি বিকৃত করলে বা কেউ কাউকে আক্রমণাত্মক ও অশ্লীল ই মেল পাঠালে পত্রপাঠ তাকে গ্রেফতার করতে পারবে না স্থানীয় পুলিশ। সেক্ষেত্রে পুলিশকে নিতে হবে প্রশাসনিক বা উপর মহলের অনুমতি। তবেই দায়ের করা যাবে অভিযোগ। অনুমতি পেলে প্রথমে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। তারপর অনুমতি পেলে গ্রেফতার করা যাবে অভিযুক্তকে। বৃহস্পতিবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি ও গাইডলাইন জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে প্রেরক ও প্রাপকের কম্পিউটার আইপি অ্যাড্রেসটি হতে হবে দেশের সীমানার মধ্যেই। অনাবাসী, প্রবাসী ভারতীয় বা বিদেশি কোনও নাগরিক যদি প্রেরক বা প্রাপক হন, অথবা অভিযোগকারী বা অভিযুক্তের কেউ একজন যদি দেশের বাইরে থাকেন সেক্ষেত্রে ইন্টারপোল বা সেই দেশের পুলিশের সাহায্য নিতে হবে এদেশের পুলিশকে।

সরকার, আমলা, বেসরকারি সংস্থা, আম আদমি সহ সবার অনেকদিনের অভিযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অপরাধ দমনে যে আইন চালু আছে তা বর্তমানে চলতে থাকা অপরাধ ও অভিযোগের সুরাহা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকী অপরাধ রুখতেও হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের কাজ নিয়েও প্রচুর বিতর্ক দেখা দিচ্ছে।

তাই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬(এ) ধারার বদল ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে সরকার। সূত্রের খবর, "সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গ্রামীণ বা মফস‌্সল এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অভিযোগ বা অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ কোনও অভিযোগ দায়ের করতে চাইলে বা কাউকে গ্রেফতার করতে চাইলে ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ বা ডিসিপি পদমর্যাদার অফিসারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। মেট্রো শহরের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার কোনও অফিসারের কাছ থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আমলার বক্তব্য, "বালাসাহেব ঠাকরের মৃত্যুর পর মুম্বইজুড়ে বন‌্ধ পালন করা হয়েছিল। তা নিয়ে আপত্তি ও উষ্মা প্রকাশ করে দুই তরুণী ফেসবুকে যা লিখেছিল তাতে ওই দু'জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। সাম্প্রদায়িক রোষের মুখে পড়ে জীবন ও সম্পত্তিহানির আশঙ্কা থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারা। মহারাষ্ট্র পুলিশ ও সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্কে চরমে ওঠে। এই ধরনের ঘটনা যাতে বার বার না ঘটে সেজন্যই তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এই বদল ঘটাল সরকার।"

উল্লেখ্য, ৬৬(এ) ধারা হল জামিনযোগ্য অপরাধ এবং এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর এবং মোটা টাকা জরিমানা। এই ধারারই বদল ঘটাল অর্থাৎ আইনটিকে আরও নমনীয় করল সরকার।

প্রসঙ্গত, বুধবারই মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরের বিরুদ্ধে অশ্লীল কমেন্ট ফেসবুকে পোস্ট করায় এক কিশোরকে গ্রেফতার করে জুভেনাইল কোর্টে তোলে পুলিশ। এই ক্ষেত্রে পুলিশি পদক্ষেপকে মশা মারতে কামান দাগা বলে নিন্দে করে কংগ্রেস। বেশ কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র ফেসবুকে ফরোয়ার্ড ও পোস্ট করায় অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করায় কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হন রাজ্যের মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠন।  এই সব ঘটনা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের মত, সংবিধান স্বীকৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং মানুষের মন ও আবেগকে আঘাত পৌঁছানো রুখতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে প্রাথমিক বদল ঘটানো হল।


শ্রেয়ার বক্তব্য, 'মটি অসাংবিধানিক, কারণ তা বাকস্বাধীনতার অধিকারকে খর্ব করে৷ বহুদিন ধরেই এটি সংশোধন করা হয়নি, এবং বর্তমানে কিছু ব্যক্তি এর অপব্যবহার করছেন৷' এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর জানিয়েছেন, ঘটনা যে দিকে এগোচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধন করার আশু প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, 'আশ্চর্যের বিষয়, এর আগে কেউ এই ব্যাপারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালতে আসেন নি৷' প্রসঙ্গত, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের '৬৬-এ' ধারাটি ২০০৮ সালে সংযোজিত হয়৷ এই ধারা অনুযায়ী, কম্পিউটার বা যোগাযোগের অন্য কোনও মাধ্যমের সাহায্যে কোনও 'অসম্মানজনক' বার্তা পাঠালে সংশ্লিষ্ট প্রেরকের তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে৷

ভারতে ২০০৯ সালের তথ্য-প্রযুক্তি সংক্রান্ত আইনের সংশোধন এবং অনলাইনে কোনো আপত্তিকর মন্তব্য করাকে বেআইনি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এর নেতৃত্বে রয়েছেন কাপিল সিবাল। তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে এ আইনের কয়েকটি ধারা আবার পর্যালোচনার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে দেশের বাক-স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছে।ভারতের আইটি মন্ত্রী কাপিল সিবালের ওয়েবসাইটে (শুক্রবার) সাইবার হামলা হয়েছে। এতে তার ওয়েবসাইটের ছবি বিকৃত হয়ে গেছে। ভারতের অনলাইন মন্তব্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ণের বিরুদ্ধে যখন দেশটির জনমত তুঙ্গে তখন এ সাইবার হামলার কবলে পড়ল আইটি মন্ত্রীর ওয়েবসাইট।

সিবালের ওয়েবসাইটে হামলা এবং এতে ছবির বিকৃতি ঘটানোর সঙ্গে অ্যানোনিমাস ইন্ডিয়া নামের হ্যাকার গোষ্ঠী জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে।


টুইটারে দেয়া এক বার্তায় অ্যানোনিমাস ইন্ডিয়া বলেছে, সিবালের ওয়েবসাইটে হ্যাকাররা হামলা করেছে এবং সেখানকার ছবিগুলোকে এডিট করে দিয়েছে। অবশ্য, এ বিষয়ে সিবালের দফতরে যোগাযোগ করা হলেও সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।


এর আগে, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা বাল ঠাকরের অন্তেষ্টিক্রিয়াকে কেন্দ্র করে মুম্বাই অচল হয়ে পড়েছিল। বাল ঠাকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নয় বরং ভয়ে-আতংকে মুম্বাই নগরী অচল হয়ে পড়েছিল বলে ফেইসবুকে মন্তব্য করার পর দুই তরুণীকে পুলিশ আটক করেছিল।


এ ছাড়া, গত অক্টোবরে ভারতে সরকার-বিরোধী ব্যঙ্গচিত্র আঁকার দায়ে এক কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং সে সময় তাকে গ্রেফতারও করা হয়।


উল্লেখ্য,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ফেসবুকে কার্টুন শেয়ার করায় কলকাতা পুলিশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেপ্তার করেছিল গত এপ্রিল মাসে৷

বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতে মুম্বইয়ের অনুরূপ একটি ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ির অভিযোগ তুলে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়৷ শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর এবং সি চেলামেশ্বরের ডিভিশন বেঞ্চ মহারাষ্ট্র সরকারকে নোটিস দিয়ে জানতে চেয়েছে, কেন ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ওই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল৷ সেই মামলাতেই আসে পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও চারটি রাজ্যের নাম৷ বাকি তিন রাজ্য হল দিল্লি, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি৷ পুদুচেরির এক ভদ্রলোককেও পুলিশ গ্রেফতার করেছিল টুইটারে পি চিদম্বরমের ছেলেকে সমালোচনা করার জন্য৷

সংশ্লিষ্ট সব রাজ্যকেই ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারার অপপ্রয়োগ করা হয়েছিল৷ প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের দেড়শো বছর পূর্তির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ শনিবারই কলকাতায় আসছেন বঙ্গসন্তান আলতামাস কবীর৷ সব মিলিয়ে ফেসবুক ও টুইটার নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরই নেতৃত্বে কড়া মনোভাব নিল সুপ্রিম কোর্ট৷

বাংলাদেশও থথ্যপ্রযুক্তি আইন নিয়ে সরগরম

সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে অপপ্রচার, কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট অশ্লীল চিত্র, ব্যাঙ্গচিত্র ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার তথা সাইবার ক্রাইম বন্ধে কঠোর আইন করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনজ্ঞরা।

এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ফেইসবুক, টুইটার, গুগোল প্লাস ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইট গুলোতে সম্প্রতি উস্কানি মূলক বক্তব্য, ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার ফলে দেশে বড় ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

ফেইসবুকে একটি ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশের কারণেই রামু, উখিয়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘটেছে সহিংস ঘটনা। এ নিয়ে হাইকোর্টও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অপরদিকে, আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আইন করে কোন লাভ হবে না, ওইসব অপরাধীদের সনাক্ত করতে দেশের তথ্য প্রযুক্তিকে আরো অধুনিকায়ন করতে হবে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রনে 'তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন' করা হয়। তবে এ আইনটিতে বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তর মাধ্যমে সংঘঠিত অপরাধ গুলোর মধ্যে অনেকটাই মিল নেই। এ কারণে ওই আইন বর্তমানে কোন কাজে আসছে না। যার ফলে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগে কাউকে আটক করা হলেও তারা সহসাই পার পেয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা গেছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষোদ প্রধানমন্ত্রীসহ বিরোধী দলীয় নেতৃী বর্তমান ও সাবেক একাধিক এমপি ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

এসব ওয়েবসাইটে দেশের খ্যাতিনামা চলচ্চিত্র শিল্পী, অভিনয় শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্রীসহ বিভিন্ন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে না ধরনের কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট অশালীন চিত্র প্রচার করা হচ্ছে। এসব অশালীন চিত্র প্রচার করার কারণে অনেকের সংসার ভাঙ্গার অভিযোগও পাওয়া গেছে। অনেক কলেজ একাধীক কলেজ ছাত্রীর আত্মহননের ঘটনাও ঘটেছে।

দেখা গেছে, ফেইসবুকে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফকে অপমান করে তৈরি করা একটি ছবি প্রচার করার ফলেই রামু, উখিয়াসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ঘটেছে সহিংস ঘটনা। এবং অতিসম্প্রতি প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে ফেইসবুকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে ডা. এহসানুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে র‌্যাব।

পরে তাকে হাইকোর্টের নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে ফেইসবুকে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষোদ প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মদ রুহুল আমীন খন্দকার। এ ঘটনায় হাইকোর্ট তাকে তলব করলে তিনি হাজির হননি। পরে এ মামলায় হাইকোর্ট তাকেন ছয় মাসের কারাদ- দিয়েছিলো।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রতারকচক্র সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট গুলোকে পুজিকরে তাদের প্রতারনা ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এক শ্রেনীর প্রতারকচক্র বড় বড় ব্যাবসায়ী ও সম্মনী ব্যাক্তিদের অশালীন চিত্র কৃত্রিম ভাবে  তৈরি করে তা এসব ওয়েবসাইটে প্রচার করার হুমকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর টাকা না দিলে এসব ছবি ওইসব ওয়েবসাইট গুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।

এ ধরণের অপরাধের বিষয়ে হাইকোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রয়াত কথা শিল্পী হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে ফেইসবুকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আটক ডা. এহসানুজ্জামকে আদালতের নির্দেশে হাজির করা হয়। এ সংক্রান্ত শুনানিতে ওই বেঞ্চের জেষ্ঠ বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে যা খুশি তা লেখা হচ্ছে।

নানা ধরণের বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে। আমি নিজেও এর শিকার। আদালত বলেন, একজন মহিলা কাকে বিয়ে করলো, কার সাথে প্রেম করলো সেটাতো ফেইসবুকে লেখার মতো বিষয় না। আদালত আরো বলেন, এটা যাতে না হতে পারে সেজন্যে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। কারও বিরুদ্ধে ফেসবুকের অপব্যবহার করতে না পারে সেজন্য বড় ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা থাকা দরকার।

এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম সংবাদ২৪.নেট'কে বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে ফেইসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের সাহায্যে অবাদে বেআইনী ভাবে বিকৃত, অশ্লীল, মানহানিকর, মিথ্যাচার পূর্নকর্মকা- চালানো হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রনে জাতীয় স্বার্থেই যুগ-উপযোগি আইন প্রনোয়ন করা দরকার।

তিনি সংবাদ২৪.নেট'কে আরো বলেন, ২০০৬ সালে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রনে আমাদের দেশে 'তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন' নামে একটি আইন প্রনোয়ন করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে অপরাধের ধরন ও কৌশল নিত্য নতুন হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে আইনটি অপ্রতুল। অপরাধের ধরণের সাথে তাল মিলিয়ে আইনকেও সময়উপযোগি করা দরকার।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে নৈতিকতা, সামাজিকতা, রাজনীতি এমকি কুটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইমের প্রভাব ভয়ঙ্করভাবে পড়ছে। পারিবারিক জীবন ভেঙ্গে যাচ্ছে। অপূরনীয় সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে। যা প্রতিরোধে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে অবক্ষয়ের স্রত এতবড় আকার ধারণ করবে, যা এক সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। সাইবার ক্রাইম আমাদের অর্জিত সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এই আইনজ্ঞ।

এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সংবাদ২৪.নেট'কে বলেন, তথ্য প্রযুক্তির যেমন সুফল আছে, তেমন কু ফলও আছে। বাংলাদেশে দ্রুত তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর অপব্যবহারও বাড়ছে। তথ্য প্রযুক্তির এ অপব্যবহার প্রতিরোধে আরো আগেই কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয় উচিত ছিলো। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ব্যার্থতার কারণে অনেক গুলো ঘটনা ঘটে গেছে, যা আমাদের সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

মনজিল মোরসেদ সংবাদ২৪.নেট'কে আরো বলেন, এই প্রযক্তির সুযোগ নিয়ে প্রতিহিংসা বসত যে কোন ব্যাক্তিকে অপমান, মানহাসি ও সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। তাই অতিদ্রুত সরকারকে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রনে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রনোয়ন করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন মনজিল মোরসেদ।

এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ সংবাদ২৪.নেট'কে বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব বিস্তার করছে। এর সুফলের সাথে সাথে এর মাধ্যমে অপরাধও বাড়ছে। এ বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবসাইটে না ধরনের অপপ্রচারের শিকার হয়ে প্রান দিতে হচ্ছে অনেক তরুনীকে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রনে এখনই কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লা এন করিম সংবাদ২৪.নেট'কে বলেন, শুধু আইন করেই সব সমাধান হবে না। ওইসব অপরাধিদের সনাক্ত করতে আমাদের তথ্য প্রযুক্তকে আরো আধুনিক করতে হবে।

তিনি বলেন, একজন ব্যাক্তি যে কোন নামে মোবাইল বা, কম্পিউটার থেকে যে কোন কিছু আপলোপ করুক না কেন। আইটি ফরেন্সিকের মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করা সম্ভব। আমাদের দেশে বেসরকারী পর্যায়ে আইটি ফরেন্সিকের ব্যাবস্থা আছে তবে সরকারি ভাবে শুধুমাত্র বিসিসি কিছু কিছু শুরু করেছে। তবে আমাদের দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অনেক কম।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইটি ফরেন্সিকের বিষয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। আমাদের দেশের তথ্য প্রযুক্তিকে আরো আধুনিকায়ন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইটি ফরেন্সিকের বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা হলে সাইবার ক্রাইমের সাথে জড়িতদের সজেই খুজে বের করা সম্ভব হবে।

তিনি সংবাদ২৪.নেট'কে আরো বলেন, দেশের ভিতরে বিসিসি ও মোবইল কোম্পানী গুলো আইটি ফরেন্সিক কাজে সহযোগীতা করতে পারলেও দেশের বাইরের অপরাধীকে সনাক্ত করতে হলে সরকারি পর্যায়ে আরো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা দরকার।



এপ্রিল মাসে অম্বিকেশ মহাপাত্রের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে কলকাতা৷ বাক স্বাধীনতা হরণ করার অভিযোগ আনা হয় সরকারের বিরুদ্ধে৷ বৃহস্পতিবারও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে কার্টুন প্রসঙ্গে তাঁকে অসহিষ্ণু বলে মন্তব্য করেন৷ মুম্বইয়ের ঘটনায় মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও মহারাষ্ট্রের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন কাটজু৷ কিন্ত্ত রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক পদস্থ কর্তা এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, অম্বিকেশবাবুর গ্রেন্তারির ঘটনায় পূর্ব যাদবপুর থানার ভূমিকায় রাজ্য সরকার কোনও অন্যায় দেখছে না৷ তাই অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ উল্লেখ্য, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ইতিমধ্যেই ওই থানার অতিরিক্ত ওসি এবং আরও এক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে৷ সেই সঙ্গে অম্বিকেশবাবুদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ করেছে কমিশন৷ মহারাষ্ট্রের ঘটনাটি ছিল বাল ঠাকরেকে নিয়ে ফেসবুকেপোস্ট করা মন্তব্য৷ শীর্ষ আদালত এ দিন বলে, মহারাষ্ট্র সরকারকে জবাব দিতে হবে কী কারণে সূর্যাস্তের পর শাহিন ধাদা ও রেণুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ আর সত্যিই যদি কোনও পুলিশ কর্মীর কারও না জানার জন্য হয়ে থাকে, তা হলে এ ক্ষেত্রে অপরাধী কে, জানাতে হবে তা-ও৷ শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, সম্ভবত এর পিছনে কোনও গোপন উদ্দেশ্য ছিল৷

অম্বিকেশবাবু যে সময় মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কার্টুন প্রচার করেছিলেন তার ক'দিন আগেই দীনেশ ত্রিবেদীকে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে মুকুল রায়কে বসান৷ তার আগে রেলের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীনেশবাবুর তীব্র মতবিরোধ হয়েছিল৷ এ সব কিছুই ছিল অম্বিকেশবাবুর ওই কার্টুনের বিষয়৷ সুব্রতবাবু এবং তিনি দু'জনেই একটি আবাসনের পরিচালন সমিতির কর্মকর্তা৷ সেখানকার কম্পিউটার ব্যবহার করাতেই গ্রেন্তার করা হয়েছিল৷ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি পুলিশ অম্বিকেশবাবুদের থানা থেকেই জামিন দিতে পারত৷ কিন্ত্ত দেয়নি৷ তার থেকেও বড় অভিযোগ, অম্বিকেশবাবুদের বিরুদ্ধে আদৌ ওই ধারা প্রয়োগ করা সঙ্গত হয়েছে কি না৷ সংশ্লিষ্ট ধারায় ইলেকট্রনিক মাধ্যমকে অন্যায় ভাবে ব্যবহার করে কেউ যদি কোনও আপত্তিকর বার্তা পাঠান, তাহলে ৬৬-এ ধারায় তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷

বাল ঠাকরের মৃত্যু নিয়ে 'স্টেটাস আপডেট' দেওয়ায় শাহিন ধাদা ও তাঁর বন্ধুকে ১৮ তারিখ মহারাষ্ট্র পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল৷ ৬৬-এ ধারায় সেই গ্রেপ্তারকে সম্পূর্ণ অনৈতিক বলে এ দিন জানিয়েছেন অডিডটর জেনারেল জি ই বাহনবতি৷ প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর ও বিচারপতি জে চেলামেশ্বরের ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল৷ বৃহস্পতিবারই জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রর কাছে ৬৬-এ ধারার ব্যবহার নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠিয়েছিল শীর্ষ আদালত৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন বাহনবতী বলেন, 'আইন বদলে ফেলার কোনও প্রয়োজন নেই৷ এটা ঠিক, ওই ধারাকে নানা ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব৷ সুনির্দিষ্ট ভাবে 'ইলেকট্রনিক মেল' ও 'ইলেকট্রনিক মেল মেসেজ'-এর বিবরণ না থাকায় তার অপব্যবহারও হচ্ছে৷ তবে তার অর্থ এই নয় যে, আইনটি বাতিল করে দিতে হবে৷ আইনের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই৷ বাহনবতী এ দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করায় তিনি খুশি৷ কারণ এর ফলে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা-সহ নির্দেশিকা আনা সহজ হবে৷

দিল্লির এক ছাত্রী শ্রেয়া সিংহল বৃহস্পতিবার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬-এ ধারার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন৷ তিনি এ দিনের রায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি৷ তাঁর কথায়, 'বাক স্বাধীনতার অধিকার যে কোনও উপায়ে রক্ষা করা প্রয়োজন৷' বলেন, 'যা করেছি, তা আমার দেশের স্বার্থে৷ মৌলিক অধিকার হরণ করা হলে আর কী থাকবে?'

শ্রেয়ার পক্ষের আইনজীবী মুকুল রোহাতগি এ দিন জানান, ৬৬-এ ধারাটি সংবিধানের ১৯-এ ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ সংবিধানের ওই ধারায় যেখানে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সুনিশ্চিত করা হয়েছে, সেখানে ফেসবুক বা টুইটারে স্বাধীন মত প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে এত জনকে গ্রেন্তার করা হচ্ছে বা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে ৬৬-এ ধারা৷ এটা চলতে পারে না৷ তাঁর মতে, এই আইনে গ্রেন্তার করা সম্ভব৷ কিন্ত্ত তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক৷ তাই গ্রেন্তারিকে এই ধারার বাইরে রাখা উচিত৷ যদিও এই বিষয়ে শেষ কথা বলবে সুপ্রিম কোর্টই৷

এ দিকে, দেশদ্রোহিতার অভিযোগে দিল্লিতে এক কার্টুনিস্ট গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ তিনি ভারতীয় সংবিধানের ব্যঙ্গচিত্র বানিয়েছিলেন৷ ৬৬-এ ধারার অপপ্রয়োগ নিয়ে তিনিও এ দিন সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন৷ তাঁর মামলা গৃহীত হয়েছে৷

বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর ২০১২, ৮ অগ্রহায়ন ১৪১৯
ফেসবুকে থ্যাকারকে নিয়ে মন্তব্যে দুই তরুণী গ্রেফতার পরে মুক্তি
শনিবার বাল থ্যাকারে মৃত্যুকে ঘিরে মুম্বাইয়ের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেছিলেন ফেসবুকে। লিখেছিলেন, সম্মান অর্জন করতে হয়, জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না। কিন্তু গ্রেফতারির পর জামিনে ছাড়া পেয়ে সেই শাহিন ধাদা তড়িঘড়ি বন্ধ করে দিলেন নিজের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট। মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে জানালেন, 'বাল থ্যাকারে বড় মাপের মানুষ ছিলেন।' পুলিশের অতি সক্রিয়তার সমালোচনার পাশাপাশিই এ-ও জানিয়েছেন, থানায় তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি কেউ।
রবিবার নিজের ফেসবুক পেজে শাহিন লিখেছিলেন, বাল থ্যাকারের প্রতি শ্রদ্ধায় নয় বরং গণ্ডগোলের ভয়েই মুম্বাইয়ে বন্ধ সবকিছু। তাঁর এই পোস্ট 'লাইক' করেন বন্ধু রেণু শ্রীনিবাস। এক শিব সৈনিকের করা এফআইআরের ভিত্তিতে সোমবার সকালেই তাঁদের দু'জনকে গ্রেফতার করে মুম্বাই পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৯৫ এ (ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় আবেগে আঘাত), ৫০৫ (২) (উস্কানিমূলক মন্তব্য) ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন ৬৬ এ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। স্থানীয় আদালত তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেও শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান দু'জন। হেনস্তা শেষ হয়নি এখানেই। সোমবার শাহিনের কাকার ক্লিনিকে ঢোকে ভাংচুর চালায় জনা চলি শেক দুষ্কৃতী। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল শিবসেনা সমর্থকদের দিকেই। এই ঘটনায় সোমবার রাত থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর ওয়েবসাইটের।

ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে তুলকালাম

যাদবপুরের অধ্যাপককে মারধর, জোরজুলুমের অভিযোগ

ডিজিটাল ডেস্ক 
কলকাতা, ১৩ এপ্রিল, ২০১২

cartoon

সামান্য রসিকতা দমন করতে গিয়ে হাসির খোরাক হচ্ছে রাজ্য সরকার। বলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি- স্টার আনন্দ

একটা ব্যঙ্গচিত্র৷ তা নিয়েই তুলকালাম৷ মারধর-মুচলেকা-জেল-জামিন৷ গোটা ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়াসন বিভাগের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র৷ সমবায় আবাসনের ই-মেল আইডি থেকে ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোর জন্য দুঃখিত এবং অনুতপ্ত হলেও মেলের বিষয়বস্তুর মধ্যে এখনও আপত্তিকর কিছু দেখছেন না ওই অধ্যাপক৷ তাঁর দাবি, নির্মল আনন্দ ভাগের জন্যই মেলটি অন্যদের পাঠিয়েছিলেন তিনি৷ আর আবাসনের ই-মেল আইডি থেকে পাঠানোর জন্য গত ৬ এপ্রিল ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন৷
যাদবপুরের রসায়ন বিভাগের এই অধ্যাপকের আরও অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন কয়েকজন বহিরাগত আবাসনে ঢুকে তাঁকে মারধর করে৷ জোর করে তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেন, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মেলটি পাঠিয়েছেন এবং তিনি সিপিএম কর্মী৷ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বলেও অভিযোগ করেছেন অম্বিকেশবাবু।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার সল্টলেকের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়৷ সঙ্গে সঙ্গে এই অভিযোগের তদন্তভার নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে সিআইডি৷

অন্যদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদীপ নারায়ণ ঘোষ এদিন বলেছেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়৷ তবে মেল পাঠানো ছাড়া আরও কিছু নিশ্চয়ই রয়েছে৷ আইন আইনের মতো চলবে৷

পূর্ব যাদবপুরের নিউ গড়িয়ার 'নিউ গড়িয়া সমবায় আবাসনের' বাসিন্দা অম্বিকাবাবু। তিনি আবাসনের সহ-সম্পাদক৷ সম্পাদক তাঁরই প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্ত৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেলমন্ত্রী মুকুল রায় ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে জড়িয়ে ৬৫ জনকে ই-মেলে ব্যঙ্গ-কোলাজ পাঠানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় অম্বিকেশবাবু এবং প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকেও। পুলিশের বক্তব্য, চক গড়িয়ার  নয়াবাঁধের অমিত সর্দার নামে এক ব্যক্তি পূর্ব যাদবপুর থানায় অভিযোগ করেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র তিনি ই-মেলের মাধ্যমে পেয়েছেন৷ যাতে তাঁর মনে হয়েছে মন্ত্রীদের সম্মানহানি হয়েছে৷ এর পরই যাদবপুর থানার পুলিশ গতকাল গ্রেফতারের পর অধ্যাপকদের সারারাত থানায় বসিয়ে রাখে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০, ৫০৯, ১১৪ ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৬৬এ-র বি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়৷ তবে শুক্রবার দুপুরে অম্বিকেশ মহাপাত্র ও সুব্রত সেনগুপ্তকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে, বিচারক ব্যক্তিগত ৫০০ টাকার বন্ডে তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন৷

যে সব ধারায় অম্বিকাবাবু ও তাঁর প্রতিবেশীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে একনজরে সেই সব ধারা---

 তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ এ(বি) ধারা হল, অসদুপায় অবলম্বন করে আপত্তিকর ই-মেল পাঠানো।    যা অন্যকে আঘাত করে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী গালিগালাজ করে সামাজিক আইনশৃঙ্খলাভঙ্গ, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারায় সমবেতভাবে অপরাধ।

এদিন বিকেলে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর অম্বিকেশবাবু বলেন, গতকাল রাত ১০টা নাগাদই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি যে নিউ গড়িয়ার আবাসনে থাকেন, সেই আবাসনের কো-অপারেটিভের ই-মেল আইডি ব্যবহার করে ওই ব্যঙ্গচিত্রটিকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রসায়নের ওই অধ্যাপক। তিনি নিজে এ ব্যাপারে বলেছেন, আমি এর জন্য অনুতপ্ত। আর এর জন্য আমিই দায়ী। অন্য কেউ নন। বিষয়টিকে নির্মল হাস্যরস হিসেবেই অন্যের সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছিলাম। তার এই পরিণতি দুর্ভাগ্যজনক। গতকাল আমাকে একদল বহিরাগত আবাসনে ঢুকে মারধর শুরু করে। তখন আমি প্রাণভিক্ষা চাই। আমাকে দিয়ে জোর করে একটি চিঠিও লেখানো হয়। বলা হয়, আমি সিপিএম কর্মী, চিঠিতে সেটাও লিখতে হবে। আমি গত ৬ এপ্রিলই ওই ই-মেল পাঠানোর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলাম।

http://my.anandabazar.com/content/%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0-1588?page=135


রসিকতার দায়ে হাজতবাস, কেন্দ্রে সেই ফেসবুক



এই সময়: আবার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং৷ আবার বিতর্ক৷ এবং ঘটনাস্থল সেই মুম্বই৷ 

ফেসবুকে 'বিতর্কিত' মন্তব্য লেখার জন্য মুম্বই পুলিশ গ্রেফতার করে এয়ার ইন্ডিয়ার দু'জন কর্মীকে৷ ময়াঙ্ক মোহন শর্মা ও কেভিজে রাও দু'জনেই মুম্বইয়ে কর্মরত ছিলেন৷ 

ঘটনার সূত্রপাত মে মাসে৷ ময়াঙ্ক ১০ মে রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন৷ তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে বাড়িতে৷ হাতে গ্রেফতারি পরোয়ানা৷ পুলিশ তাঁকে পোশাক বদলে নেওয়ার নির্দেশ দেয়, নিয়ে যাওয়া হয় থানায়৷ ময়াঙ্কের কথায়, 'আমি জানতে চেয়ে‌েছিলাম যে আমার অপরাধ কোথায়, কিন্ত্ত তারা শুধু তির্যক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল৷' থানের একটি বহুতল থেকে রাওকে গ্রেফতার করা হয়৷ 

কিন্ত্ত মুম্বইয়ের শাহিন ও তার বন্ধুর মতো এতটা 'ভাগ্যবান' নন এয়ার ইন্ডিয়ার এই দুই কর্মী৷ তাঁদের দু'জনকে ১১ তারিখ কোর্টে তোলা হয়৷ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের (২০১০ সালের সংশোধনী) ৬৬-এ ও ৬৭ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷ একটানা ১২ দিন তাঁরা জেলে কাটান৷ জামিন মেলে মে মাসের শেষে৷ 

এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গিয়েছে, রাও ও ময়াঙ্ক যেহেতু সরকারি সংস্থায় কর্মরত, তাই আইন মেনে তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ কারণ দর্শানোর নোটিসও তাঁদের দেওয়া হয়েছে৷ 

কিন্ত্ত তাঁদের অপরাধ কী? 

পুলিশ জানিয়েছে, ওঁরা দু'জন ফেসবুকে কেন্দ্রের কয়েক জন মন্ত্রীকে নিয়ে কিছু 'অশালীন' মন্তব্য করেছিলেন৷ তার ফলেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়৷ কিন্ত্ত ময়াঙ্ক জানিয়েছেন, তাঁরা সে রকম কিছুই করেননি৷ তাঁরা এমন কিছু 'শেয়ার' করেছিলেন যা ইন্টারনেটে সব সময়ই পাওয়া যায়৷ কিছু হাস্যকৌতুক ছিল মাত্র৷ 

রাও এবং ময়াঙ্কের অভিযোগ, এনসিপি নেতা কিরণ পাওয়াস্করের চালেই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছিল৷ এর পিছনে এয়ার ইন্ডিয়ার দু'টি ইউনিয়নের সমস্যা আছে বলেই মনে করছেন তাঁরা৷ ময়াঙ্কদের বিরোধী শিবিরের নেতা কারনিক জানান, তিনিই ওঁদের দু'জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন৷ এবং তিনি মনে করেন না যে তিনি কোনও ভুল করেছিলেন৷ 

কিন্ত্ত শুনানির সময়ে মুম্বই হাইকোর্টের বিচারপতি জানান৷ এফআইআর-এ ৬৬ ও ৬৭-এ ধারার কথা বলা ছিল না৷ সেগুলো পরে আনা হয়েছে৷ ফলে তাঁরা জামিন পান৷ তবে এখনও চাকরি ফেরত পাননি৷ এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সরকারি সংস্থার নিয়ম মেনেই তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দু'জনেই সম্পূর্ণ নির্দোষ৷ কাজেই নিয়মানুযায়ী তাঁরা চাকরি ফেরত পাবেন, তবে কিছুটা সময় লাগবে৷ 

ফেসবুক-কাণ্ডে অভিযোগ তুলল পুলিশ


নয়াদিল্লি ও মুম্বই: দেশজুড়ে বিরোধিতা আর নিন্দা তো ছিলই। বৃহস্পতিবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতির কড়া মন্তব্য। উত্তরোত্তর চাপ বাড়তে থাকায় অবশেষে ফেসবুক-কাণ্ডে অভিযুক্ত শাহিন ধাদা এবং রেনু শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি সঞ্জীব দয়াল জানিয়েছেন, 'এই ঘটনায় কোনও চার্জশিট দেওয়া হবে না। একটি ক্লোজার রিপোর্ট থাকবে।' অন্য দিকে, পুরোপুরি সংশোধন না-হলেও, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ধারায় কিঞ্চিত্‍ বদল এনেছে কেন্দ্র।

মুম্বইতে যখন দুই তরুণীকে স্বস্তি দিল পুলিশ, তখন দিল্লিতে দেশের প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৬৬ (ক) ধারা। প্রশ্ন অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতমাস কবীর নন, তুলেছেন আর এক তরুণী। এদিন সর্বোচ্চ আদালতে ৬৬ (ক) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনের ছাত্রী শ্রেয়া সিংঘল। তাঁর দাবি, বিতর্কিত ধারাটি অসাংবিধানিক। তাঁর দাবি, 'আমার মনে হয় একটি বাক-স্বাধীনতা খর্ব করে। কেননা, এই ধারাকে সময়োপযোগী করে তোলা হয়নি, আর লোকে এর অপব্যবহার করছে।'

ধারাটি যে পুনর্বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন, সে কথা মেনে নেন প্রধান বিচারপতি আলতমাস কবীর। তিনি বলেছেন, 'যে ভাবে বাচ্চাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে দেশের আবেগ ক্ষুব্ধ। যে ভাবে ঘটনাগুলি ঘটছে, তাতে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।' কেন শাহিন ধাদা এবং রেনু শ্রীবাস্তবের ঘটনায় কেউ সুপ্রিম কোর্টে আসেননি, তা নিয়ে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, একটা সময়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টি তোলার কথা ভেবেছিল শীর্ষ আদালত।
আপাতত সংশোধন না-করলেও, বৃহস্পতিবার ৬৬ (ক) ধারায় সামান্য পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্র। এদিন নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, এই ধারার আওতায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হলে, আগে ডিসিপি বা আইজি পদমর্যাদার কোনও পুলিশ আধিকারিকের অনুমতি লাগবে। এই অনুমতি না-পেলে সংশ্লিষ্ট থানা অভিযোগ নিতে পারবে না। সরকার মনে করে, আপাতত এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে, পালঘাটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব।

ইন্টারনেটে স্বাধীনতা নিয়ে এদিন সমাজকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন টেলিকম মন্ত্রী কপিল সিবাল। তিনি জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অপপ্রয়োগ যাতে না-হয়, সে জন্য সবক''টি রাজ্য সরকারকেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।


ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার ১০

সংবাদসংস্থা 
কলকাতা, ২১ নভেম্বর ২০১২

ছবি- পিটিআই

দু'দিন আগেই বাল ঠাকরের মৃত্যুকে ঘিরে মুম্বইয়ের জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সমালোচনা করেছিলেন ফেসবুকে। লিখেছিলেন, সম্মান অর্জন করতে হয়, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু গ্রেফতারির পর জামিনে ছাড়া পেয়ে সেই শাহিন ধাদা তড়িঘড়ি বন্ধ করে দিলেন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে জানালেন, "বাল ঠাকরে বড় মাপের মানুষ ছিলেন।" পুলিশের অতি সক্রিয়তার সমালোচনার পাশাপাশিই এ-ও জানিয়েছেন, থানায় তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি কেউ।

রবিবার নিজের ফেসবুক পেজে শাহিন লিখেছিলেন, বাল ঠাকরের প্রতি শ্রদ্ধায় নয় বরং গণ্ডগোলের ভয়েই মুম্বইয়ে বন্ধ সব কিছু। তাঁর এই পোস্ট 'লাইক' করেন বন্ধু রেণু শ্রীনিবাস। এক শিব সৈনিকের করা এফআইআরের ভিত্তিতে সোমবার সকালেই তাঁদের দু'জনকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৯৫ এ (ইচ্ছাকৃত ভাবে ধর্মীয় আবেগে আঘাত), ৫০৫ (২) (উস্কানিমূলক মন্তব্য) ও তথ্য প্রযুক্তি আইন ৬৬ এ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। স্থানীয় আদালত তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেও শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান দু'জন। হেনস্থা শেষ হয়নি এখানেই। সোমবার শাহিনের কাকার ক্লিনিকে ঢুকে ভাঙচুর চালায় জনা চল্লিশেক দুষ্কৃতী। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল শিবসেনা সমর্থকদের দিকেই। এই ঘটনায় সোমবার রাত থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশির ভাগই সেনা সমর্থক বলে পুলিশ সূত্রে খবর। বাকিদের খোঁজ চলছে, জানান ঠানের পুলিশ সুপার।

এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। সোমবারই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে ই-মেল পাঠান প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কী পদক্ষেপ করছেন তা যেন অবিলম্বে জানান। অন্যথায় আইনের পথ দেখতে হবে তাঁকে। বিতর্কের চাপে পড়ে গত কালই মহারাষ্ট্র সরকার জানায়, গোটা ঘটনাটির তদন্ত করছেন কোঙ্কন রেঞ্জের আইজি। আশা করা হচ্ছে আগামী কালই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন আইজি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাটিল মঙ্গলবার বলেন, তরুণীদের বিরুদ্ধে সঠিক ধারা আনা হয়েছে কি না এবং হাসপাতাল ভাঙচুরে কারা জড়িত, এ সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ আজ সাংবাদিকদের জানান, রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই এ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।

এ দিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আজ নিজের অসন্তোষ জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা। তাঁর মতে, ফেসবুকে নিজের মত জানানো এফআইআর যোগ্য কোনও অপরাধই নয়। এতে আইনের অপব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই ঘটনার পর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের পরিধি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে মিলিন্দ জানান, আইনের বদল নয়, বরং তার অপব্যবহার রোখাই জরুরি। কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রী কপিল সিব্বলও জানান, এই ঘটনা দুঃখজনক। তাঁর মতে, মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি আইন তৈরি হয়নি। এই আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

শাহিন ও রেণুর অযথা হয়রানির প্রতিবাদে মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানান আইনজীবী আভা সিংহ। ওই তরুণীদের সূর্যোদয়ের আগে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল, যা আইন বিরুদ্ধ, অভিমত তাঁর। মহিলা কমিশনের সদস্যদের পালঘর থানায় এসে গোটা পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। এত কিছুর পরও শিবসেনা আছে সেই শিবসেনাতেই। নিজেদের অবস্থান একটুও বদলাতে নারাজ তারা। দলের বিধায়ক সঞ্জয় রাউত এ দিন জানান, পুলিশ উচিত কাজই করেছে। তাঁরা পুলিশের পাশেই আছেন।

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://50.17.227.185/content/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0-2866


সরকার দলতান্ত্রিক, মত মানবাধিকার প্রধানের

কার্টুন-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জরিমানার সুপারিশ করেছিলেন তিনি। তাতে উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ''বাইরে থেকে এনে যাঁকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান করা হল, তিনিই যেন এখন কলমের আঁচড়ে সরকার চালাচ্ছেন।'' তবু দমেননি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সেই চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। এ বার তিনি মুখ খুললেন প্রশাসনে দলতন্ত্রের অনুপ্রবেশ নিয়ে। সমালোচনার আঙুল তুললেন পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের মতো ঘটনা থেকে শুরু করে সরকারি আমলা ও পুলিশ-কর্তাদের জনসভার মঞ্চে তুলে সরকারের প্রশংসা করানোর মতো বিবিধ বিষয় সম্পর্কে। তাঁর বক্তব্য: "প্রশাসনে দলতন্ত্র আগের আমলে ছিল ঠিকই। কিন্তু এখন যা চলছে, পরিস্থিতি তখন এতটা খারাপ ছিল না।"

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার পরে গত এপ্রিলে অশোকবাবুকে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। তাঁর মুখে প্রকাশ্যে এই সমালোচনা স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের অস্বস্তি বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট। তবে রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের এ ধরনের কথা বলার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, "বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে পদে, যে দায়িত্বে আছেন, তার সঙ্গে এ সমস্ত বক্তব্য মানানসই নয়।" শনিবার বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার বেকবাগান এলাকায় একটি ক্লাবে 'ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ক্যালকাটা' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পুলিশ বিভাগের সংস্কার নিয়ে আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল। 'মেকিং পুলিশ রিফর্মস রিয়েল' শীর্ষক ওই আলোচনায় অন্যতম বক্তা ছিলেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তথা ওড়িশা ও তামিলনাড়ুর প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (আইবি) অবসরপ্রাপ্ত অধিকর্তা অমিয়কুমার সামন্তও ওই আলোচনা-চক্রে উপস্থিত ছিলেন। ডাক পেয়েছিল সংবাদমাধ্যমও। সেখানে সরাসরি নাম না-করে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ড এবং সেই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে দময়ন্তী সেনের বদলির বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে অশোকবাবুর বক্তব্য, "তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে সরকারের বদল হলে একশোরও বেশি আইএএস অফিসারকে রাতারাতি বদলি হতে হয়। এখনও এই রাজ্যে এ রকম শুরু হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে যে হবে না, সেটা কে বলতে পারে?"

এ কথা বলে তিনি নাম না করে পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। অশোকবাবুর কথায়, "এই রাজ্যেই হওয়া সাম্প্রতিক একটি ঘটনার প্রতি আমি আলোকপাত করতে চাই। সেখানে সঠিক পথে এগিয়ে একটি অপরাধের তদন্ত করার জন্য এক জন ভাল অফিসারের কী পরিণতি হয়েছিল, আমরা সবাই জানি। তাঁকে বদলি করা হয়েছিল। কারণ, 'পলিটিকাল বস'-এর বক্তব্যের উল্টো কথা তিনি বলেছিলেন।" অশোকবাবুর মন্তব্য, "আমি সরাসরি নাম করছি না। সবাই বুঝতে পারছেন। কিন্তু এ রকম ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর মনোবল কোথায় গিয়ে ঠেকবে?" এর পরেই তিনি বলেন, "আমি বলছি না, এটা শেষের শুরু। কিন্তু এটা বলব, এটা এই রাজ্যে প্রশাসনে দলতন্ত্রের শুরু। তা বলে আমি কিন্তু আগের জমানার প্রশংসা করছি না। সেই সময়েও প্রশাসনে দলতন্ত্রের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। কিন্তু এখনকার মতো এতটা খারাপ অবস্থা তখন ছিল না।" তাঁর কথায়, "প্রশাসন সমালোচনা সহ্য করতে পারছে না। এই ব্যাপারে প্রশাসন ক্রমশ বেশি করে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে।"

সভায় উপস্থিত শিক্ষাবিদ সুকান্ত চৌধুরী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, পুলিশের শীর্ষ কর্তাকে জনসভার মঞ্চে মাইক ধরিয়ে দিয়ে যদি সরকারের কাজকর্মের প্রশংসা করতে বলা হয়, তাতে কি ওই অফিসারের মর্যাদা রক্ষা করা হয়? জবাবে মানবাধিকার চেয়ারম্যান বলেন, "জনসভায় রাজ্য পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিবের হাতে মাইক ধরিয়ে দিয়ে (মুখ্যমন্ত্রী যেমন করে থাকেন) বলা হচ্ছে, 'বলুন, আমি যা বলেছি, ঠিক বলেছি কি না' এমনটা কখনও এই রাজ্যে হয়নি। এটা তো আইএএস, আইপিএস অফিসারদের সার্ভিস রুল-এর বিরোধী। সরকারি অনুষ্ঠানের নামে আদতে যা রাজনৈতিক জনসভা, সেখানে পুলিশের ডিজি চলে যাচ্ছেন। এ সব কী হচ্ছে?" মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য: "এটা প্রশাসনের কাজ। তাতে ওঁর কী এসে যায়! এটা কি কোনও সাংবিধানিক সমস্যা তৈরি করেছে, না আইন ভেঙেছে!" সুব্রতবাবুর মতে, "বিচারপতির এটা কাজ নয়। এ জন্য সূর্যকান্ত মিশ্র আছেন। এ ব্যাপারে যে উত্তর দেওয়া যায়, আমাদের রুচিতে বাধছে বলে তা বলতে পারছি না। উনি যদি পদ ছেড়ে দিয়ে রাজনীতি করেন বা সাধারণ নাগরিকও হন, তা হলে যথার্থ উত্তর আমাদের কাছে আছে, তা দিয়ে দেব।"

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%B8-%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A6%A4-%E0%A6%A8-%E0%A6%A4-%E0%A6%95-%E0%A6%AE%E0%A6%A4-%E0%A6%AE-053600020.html

দেশে দেশে সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা

২৪ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩৫ |

শেয়ারঃ
160

ভূমি, সাগর, বায়ুমন্ডল ও মহাবিশ্বের পর সাইবারস্পেস হলো পঞ্চম সাধারণ ক্ষেত্র যেখানে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং জাতির মধ্যে একটা পারস্পরিক সহযোগিতা, সমঝোতা এবং সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা দরকার। আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ পর্যায়ে সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার ক্রাইমকে অন্তর্ভুক্ত করে একটা চুক্তি বা নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার যার মাধ্যমে সাইবারস্পেসে গ্লোবাল শান্তি, নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা যাবে।

ইতিমধ্যে এ নিয়ে দেশে দেশে নানা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। যেমন, সর্বশেষ ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ইন্টারপোল এবং ইউরোপল মিলে ট্রান্সন্যাশানাল অপরাধের বিরুদ্ধে একটা সহযোগিতামুলক কর্মপরিকল্পনা তৈরী করতে একমত হয়েছে যার মাঝে সাইবার ক্রাইমও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ মাসেই বাহরাইনে সাইবারক্রাইম নিয়ে একটা বিল উথ্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও অষ্ট্রেলিয়ার 'হাউজ অফ রিপ্রেসেন্টেটিভ'এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল Cybercrime Legislation Amendment Bill 2011-এর উপর বিতর্ক। [১]


সাইবারক্রাইম আইন নিয়ে বাংলাদেশের প্রসংগে আসার আগে সংক্ষেপে জেনে নেই সাইবারক্রাইম বলতে আমরা কি বুঝি?

খুব সাধারণ অর্থে সাইবারক্রাইম হলো যেকোন ধরণের অনৈতিক কাজ যার মাধ্যম (tool) বা টার্গেট (target) বা উভয়টিই হলো কম্পিউটার। [২] 


আরেকটু বিস্তারিতভাবে,

The computer may be used as a 'tool ' in the following kinds of activity- financial crimes, sale of illegal articles, pornography, online gambling, intellectual property crime, e-mail spoofing, forgery, cyber defamation, cyber stalking. 

The computer may however be 'target' for unlawful acts in the following cases- unauthorized access to computer/ computer system/ computer networks, theft of information contained in the electronic form, e-mail bombing, data didling, salami attacks, logic bombs, Trojan attacks, internet time thefts, web jacking, theft of computer system, physically damaging the computer system. [৩]


এখানে বেশকিছু টেকনিক্যাল টার্ম ব্যবহার হয়েছে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পরবর্তীতে দেয়ার চেষ্টা করবো। 


বাংলাদেশে প্রথম ২০০২ সালে তথ্যপ্রযুক্তসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয় যেটা ২০০৬ সালে পাশ হয় যা 'The Information and Communication Technology Act 2006' নামে পরিচিত। 

এই অ্যাক্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী সংস্থা বা কর্পোরেশনের নানাবিধ জরুরী ডকুমেন্ট অনলাইনে আর্কাইভ করা। এর মাধ্যমে আর বেশি দক্ষতার সাথে সরকারী সেবা জনগণের দ্বারগোড়ায় পৌঁছানো। ইলেকট্রনিক ট্র‌্যান্ সেকশনের অথেনটিকেশন, ডিজিটাল সিগনেচারের অথেনটিকেশনসহ নানারকম অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ই-কমার্সের দ্বার অবারিত করা। নানারকম সরকারী গ্যাজেট অনলাইনে প্রকাশ করা। সরকারী, বেসরকারী বিভিন্ন অনলাইন ডকুমেন্ট যাতে হ্যাক বা নকল না হয় তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ আরো নানারকম তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত অপরাধের সমাধান খূঁজে বের করা। [৪]



ঐ অ্যাক্টে সাইবারক্রাইম বলে যেসব বিষয়কে চিন্হিত করা হয়েছে সেগুলো হলো,

a. Hacking or unauthorized entry into information systems

b. Virus introduction

c. Publishing or distribution of obscene content in eletronic form

d. Tampering with electronic documents required to be kept under
the law

e. Frauds using electronic documents

f. Violation of privacy rights such as STALKING

g. Violation of Copyright, Trademark or Patent design

h. Defamation through e-mail

i. Holdings out threats through e-mail


বর্তমান সরকার আসার পর এই নীতিমালাতে আরো কিছু সংশোধন আনা হয়েছে যেটা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মণ্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। [৫]


এই নীতিমালা মাধ্যমে ২০১০ সালের মে মাস বাংলাদেশে ফেইসবুক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল কিছুদিনের জন্য যেটা সবমহলেই বিতর্কিত হয়েছ, কারণ এর মাধ্যমে অনলাইন সোশাল নেটওয়ার্কিংকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। এটা নীতিমালার একটা অপব্যবহার হিসেবেই চিন্হিত হয়েছে। [৬]

২০০৯ সাল থেকেই এই নীতিমালার অধীনে কিছু আইন তৈরীর চিন্তাভাবনা শুরু হয় সরকারী মহলে। সুপ্রীম কোর্টের সাথে আলোচনাও হয়েছিল একটা সাইবার ট্রাইবুনাল গঠন করা নিয়ে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে 'Pornography Control Bill-2010' নামে একটি ড্রাফট বিল তৈরী হয় যেটা, স্বরাষ্ট্র মণ্ত্রনালয় আইন মণ্ত্রনালয়ের কাছে পাঠিয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। সেটা তার পরবর্তী কেবিনেট সভায় পাস হবার কথা। এরপরের খবর আমার আর জানা নেই।

সেই ড্রাফট বিলে যেকোন সাইবার ক্রাইম বা সাইবার সম্পর্কিত পর্নোগ্রাফীর অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবার আইন প্রস্তাবনা করা হয়েছে। [১, ৭, ৮] ঐ সময়ে র‌্যাবের ডিজি নিউ এইজ পত্রিকাকে বলেছেন, তাদের কাছে সাইবার সম্পর্কিত পর্ণগ্রাফীর অপরাধ যারা করে তাদেরকে সনাক্ত করার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত আইনের অভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। 


আমরা বিভিন্ন সময়ে ব্লগে, ফেইসবুকে বা ওয়েবসাইটে বিভিন্নজনের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দিতে দেখেছি যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা সমাজে নানা রকম হয়রানির স্বীকার হয়েছেন, হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন। এতে করে প্রাইভেসী ক্ষুণ্ণ হবার মতো ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বিভিন্ন রকম অশালীন, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে বিভিন্ন ব্লগার বা ফেইসবুক ইউজার বা অন্যান্য অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের উত্যক্ত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, যার বেশিরভাগই করা হয় মূলত নারী ইউজারদের যেটা সাইবার মবিং-এর পর্যায়ে পড়ে।

তাই আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি অতি দ্রুত যেন এই আইন পাশ করা হয়, এবং সব অনলাইন মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী ফোন নাম্বার বা ই-মেইল এড্রেস তথা যোগাযোগ করার ঠিকানা দিয়ে দেবার জন্য যাতে করে একজন ভিক্টিম খুব সহজেই তার অভিযোগ জানাতে পারেন।






১. Click This Link 

২। The ICT Act 2006

৩। http://www.scribd.com/doc/3399476/Cyber-Crime 

৪। Click This Link

৫। Click This Link

৬। Click This Link

৭। Click This Link

৮। Click This Link

 

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): সাইবার ক্রাইমসাইবার ক্রাইমcyber crimecyber mobing ;
প্রকাশ করা হয়েছে: এই বাংলাবিজ্ঞানবিশ্ব  বিভাগে । সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

http://www.somewhereinblog.net/blog/apesnajnin/29489812

No comments:

Post a Comment