আজ ২০১৬ তে, মেয়েরা ১৯৭০ থেকে ৮০ দশকের চেয়েও অনেকটাই পালটে গিয়েছে। তারা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গিয়েছে। নিজেদের কর্মক্ষেত্রে, নিজেদের পারিবারিক জীবনেও হয়ত আরো জটিল হয়েছে মেয়েরা, বহুমাত্রিক হয়েছে ।
আর ততই যেন, একমাত্রিক হয়েছে মেয়েদের বিবরণ মূলধারার সাহিত্যে, চুল নখ ঠোঁটে একেবারে বাজারের ডিক্টেশন মানা ও প্যাকেজিং করা।
মেয়েদের ছবি বাংলা মেনস্ট্রিম বা মূলধারার সাহিত্যে ক্রমশ এক স্টিরিওটাইপ থেকে আর এক স্টিরিওটাইপে বর্গীকৃত। এই এক খারাপ সময় বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে, যখন ছাঁচভাঙা মনে রাখার মত চরিত্র সৃষ্টি দেখছি না। অথচ সত্তরের দশক জুড়ে লেখা অনেক লেখকের প্রবণতা ছিল ছাঁচ ভাঙার। বিশেষত ওই একটা সময়ে যখন হাতে গোণা নারীদের কলমে হচ্ছে এই কাজ। কবিতা সিংহ লিখছেন তাঁর সটান সোজাপিঠ মেয়েদের নিয়ে গল্পগুলি। পোড়খাওয়া, খেটে খাওয়া মেয়েদের গল্পগুলি। প্রতিভা বসু বা আশাপূর্ণা ছাঁচের ভেতর থেকে আলাদা করে তুলে আনছেন ব্যক্তিত্বময়ী নারীর একাধিক চরিত্রকে। সেই একই সময়ে, মানসী দাশগুপ্তও লিখছেন তাঁর ছটি উপন্যাস এবং একগোছা গল্পে। কোথায় গেল এইসব মেয়েরা?
( প্রস্তুয়মান একটি লেখা থেকে...)
আর ততই যেন, একমাত্রিক হয়েছে মেয়েদের বিবরণ মূলধারার সাহিত্যে, চুল নখ ঠোঁটে একেবারে বাজারের ডিক্টেশন মানা ও প্যাকেজিং করা।
মেয়েদের ছবি বাংলা মেনস্ট্রিম বা মূলধারার সাহিত্যে ক্রমশ এক স্টিরিওটাইপ থেকে আর এক স্টিরিওটাইপে বর্গীকৃত। এই এক খারাপ সময় বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে, যখন ছাঁচভাঙা মনে রাখার মত চরিত্র সৃষ্টি দেখছি না। অথচ সত্তরের দশক জুড়ে লেখা অনেক লেখকের প্রবণতা ছিল ছাঁচ ভাঙার। বিশেষত ওই একটা সময়ে যখন হাতে গোণা নারীদের কলমে হচ্ছে এই কাজ। কবিতা সিংহ লিখছেন তাঁর সটান সোজাপিঠ মেয়েদের নিয়ে গল্পগুলি। পোড়খাওয়া, খেটে খাওয়া মেয়েদের গল্পগুলি। প্রতিভা বসু বা আশাপূর্ণা ছাঁচের ভেতর থেকে আলাদা করে তুলে আনছেন ব্যক্তিত্বময়ী নারীর একাধিক চরিত্রকে। সেই একই সময়ে, মানসী দাশগুপ্তও লিখছেন তাঁর ছটি উপন্যাস এবং একগোছা গল্পে। কোথায় গেল এইসব মেয়েরা?
( প্রস্তুয়মান একটি লেখা থেকে...)
পুরুষ যদি সফল, তো, একাধিক 'মেয়ে তোলা' তার মুকুটের পালক। স্টেজে অশীতিপর বৃদ্ধ লেখক বুক বাজিয়ে বলেন ' আমি বহু নারীকে ভোগ করেছি'। সব ক্ষেত্রেই এই পুরুষতান্ত্রিক ট্রফি কাল্চার। ধিক দিলাম।
এটা নিয়ে ফিল্ম স্টাডিজ অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনগুপ্ত দারুণ লিখেছেন তাঁ্র পোস্ট এ। তুলে দিলাম সবটাই।
" আলোচ্য মামলাটি যিনি ঠুকেছেন তাকে সমর্থন জানানো উচিত, কিন্তু এখন ছিছি করার মানে একটাই - আমরা খবর না হলে ভর্ৎসনা করিনা। কতগুলি ইতরপনা কালচার হয়ে গেলে আমরা কিছু বলিনা, মামলার খবর হলে বলি।
বোধহয় এইবছরের পয়লা জানুয়ারিতে 'জুলফিকার'-এর উপর একটি ফিচার হয়েছিল আনন্দবাজারে - সেখানে আমাদের মেদবহুল সুদর্শনেরা এইরকম একটি কথোপকথনে রত হয়েছিলেন
" আলোচ্য মামলাটি যিনি ঠুকেছেন তাকে সমর্থন জানানো উচিত, কিন্তু এখন ছিছি করার মানে একটাই - আমরা খবর না হলে ভর্ৎসনা করিনা। কতগুলি ইতরপনা কালচার হয়ে গেলে আমরা কিছু বলিনা, মামলার খবর হলে বলি।
বোধহয় এইবছরের পয়লা জানুয়ারিতে 'জুলফিকার'-এর উপর একটি ফিচার হয়েছিল আনন্দবাজারে - সেখানে আমাদের মেদবহুল সুদর্শনেরা এইরকম একটি কথোপকথনে রত হয়েছিলেন
"সাক্ষাৎকারী: কিন্তু সৃজিত বেশি শ্যুট করেন বলে ওঁকে আপনি তো বকাবকিও করেন?
প্রসেনজিৎ: সে তো আজকেও করি। একটা কথা বলি, আজকে সিনেমাটা ডিজিটালি শ্যুট হয়। সেই টেকনোলজিটার শেষ দেখা দেখে ছাড়বে সৃজিত। সেটা নিয়ে পড়াশোনা করবে। সেটা নিয়ে ভাববে। সেটাকে দ্য এন্ড পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে ছাড়বে না।
সাক্ষাৎকারী: যা সৃজিত ওঁর গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গে করে থাকেন?
(যিশু আর দেব সমস্বরে বলে ওঠেন: লাভলি, কারেক্ট আছে।)
প্রসেনজিৎ: (হাসি) আমি জানি না ওর গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গে ও কী করে। কিন্তু ‘জাতিস্মর’য়ের সময় যখন হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল, আমি নিজে হিরোইনদের ফোন করে বলেছিলাম, তোরা শিফট ডিউটি করে ওর বাড়ি যা আর দেখাশোনা কর। না হলে সুস্থ হবে না।
...
সাক্ষাৎকারী: আচ্ছা, ‘জুলফিকার’-এর সেট-এ মেয়েরা কতটা সেফ?
সৃজিত: (হেসে) এটা কেন বলছেন?
সাক্ষাৎকারী: মানে একটা সেট-এ আপনি, দেব, পরমব্রত, যিশু। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে না-হয় ধরলাম না...
যিশু: (থামিয়ে দিয়ে) কেন, বুম্বাদাকে ধরা হবে না কেন?
(সবার হাসি একসঙ্গে)
দেব: সবাইকে ধরুন। আজও বুম্বাদার গাড়ি লং ড্রাইভে ধাবাতে দেখা যায়...
(মিটিমিটি হাসছেন তখন প্রসেনজিৎ)
যিশু: হ্যাঁ, প্লিজ বাদ দেবেন না ওঁকে। আমরা আজও ওঁর কাছে শিশু। আমরা সবাই। মানে যখন মোবাইল ছিল না, সেই সময় থেকে ওঁর যা ফর্ম...
সৃজিত: হ্যাঁ, মোবাইল না থাকলেও উনি যথেষ্ট ‘মোবাইল’ ছিলেন...
প্রসেনজিৎ: কী দুষ্টু ছেলেগুলো সত্যি!"
প্রসেনজিৎ: সে তো আজকেও করি। একটা কথা বলি, আজকে সিনেমাটা ডিজিটালি শ্যুট হয়। সেই টেকনোলজিটার শেষ দেখা দেখে ছাড়বে সৃজিত। সেটা নিয়ে পড়াশোনা করবে। সেটা নিয়ে ভাববে। সেটাকে দ্য এন্ড পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে ছাড়বে না।
সাক্ষাৎকারী: যা সৃজিত ওঁর গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গে করে থাকেন?
(যিশু আর দেব সমস্বরে বলে ওঠেন: লাভলি, কারেক্ট আছে।)
প্রসেনজিৎ: (হাসি) আমি জানি না ওর গার্লফ্রেন্ডদের সঙ্গে ও কী করে। কিন্তু ‘জাতিস্মর’য়ের সময় যখন হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল, আমি নিজে হিরোইনদের ফোন করে বলেছিলাম, তোরা শিফট ডিউটি করে ওর বাড়ি যা আর দেখাশোনা কর। না হলে সুস্থ হবে না।
...
সাক্ষাৎকারী: আচ্ছা, ‘জুলফিকার’-এর সেট-এ মেয়েরা কতটা সেফ?
সৃজিত: (হেসে) এটা কেন বলছেন?
সাক্ষাৎকারী: মানে একটা সেট-এ আপনি, দেব, পরমব্রত, যিশু। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে না-হয় ধরলাম না...
যিশু: (থামিয়ে দিয়ে) কেন, বুম্বাদাকে ধরা হবে না কেন?
(সবার হাসি একসঙ্গে)
দেব: সবাইকে ধরুন। আজও বুম্বাদার গাড়ি লং ড্রাইভে ধাবাতে দেখা যায়...
(মিটিমিটি হাসছেন তখন প্রসেনজিৎ)
যিশু: হ্যাঁ, প্লিজ বাদ দেবেন না ওঁকে। আমরা আজও ওঁর কাছে শিশু। আমরা সবাই। মানে যখন মোবাইল ছিল না, সেই সময় থেকে ওঁর যা ফর্ম...
সৃজিত: হ্যাঁ, মোবাইল না থাকলেও উনি যথেষ্ট ‘মোবাইল’ ছিলেন...
প্রসেনজিৎ: কী দুষ্টু ছেলেগুলো সত্যি!"
শ্লীল ছিল এই কথোপকথন, এনাদের ভিরিলিটির প্রদর্শন? কারুর নাম করে অপমান করা হয়নি; কিন্তু 'রাজকাহিনী' করার পর ছেলেদের গ্যাঙস্টার-গ্যাংস্টার খেলার ভূমিকা হিসেবে যখন মেয়েদের নাম না করে এরকম বলা যায় - তখন আমরা ছিছি করিনি কেন? আর জেএনঅইউ-তে কটা স্লোগান উঠেছে কিনা শুনলে জাত্যাভিমানে ফোসকা পড়ে আপামর বাঙালির? উপরোক্ত কথাগুলোয় ফোসকা পড়ার মত চামড়া নেই আনন্দবাজারের পাঠকদের? একটা গোটা কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি মহিলাদের পাপোশের স্তরে নামিয়েছে এবং তা নিয়ে বিন্দুমাত্র অ্যাপলজেটিক হওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি কখন'ও এই পুরুষগুলি। বরং তাদের লাইফস্টাইলের দূর্গন্ধ আমাদের মুখের উপর দৈনন্দিন ছুঁড়ে মারার স্পর্ধা তারা দ্যাখাতে শিখেছে - টালিগঞ্জের বিগত প্রজন্মের লোকেরা অন্তত এতটা করতেন না - তাদের যাপন আড়ালে রাখতেন। ফিচারের লেখক উক্ত প্রসঙ্গ আনতে, লিখতে দ্বিধাবোধ করেননি; দ্বিধা করেননি সম্পাদক প্রকাশ করতে, যেভাবে বাংলার সবচেয়ে প্রতিভাবান পরিচালক ম্যানিকুইনের দিকে ইঙ্গিত করে অনুপস্থিত কারুর নাম নিতে দ্বিধাবোধ করেন না, তাকে নিয়ে জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা এবং জনপ্রিয় কিউট-অভিনেতা কি বলতে পারেন তা বেশ ভালোভাবে জেনেও, প্রযোজক বলেন না যে এটা রাখা যাবেনা।
আসলে নারীবাদ এদের কাছে একটি ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট (নতুন শেখা শব্দ প্রয়োগ করলাম), সেগুলি ইন্ডাস্ট্রির মেয়েরা 'করে' না, শুধু অভিনয় করে নারীবাদীর সিরিয়াস ছবিতে। নারীবাদ আত্মস্থ করা সহজ নয়, অস্বস্তিকর, যন্ত্রণাদায়ক, অনেকক্ষেত্রে পায়ের তলা থেকে জমি সরিয়ে দেয় নারী এবং পুরুষ উভয়েরই। নারীবাদ যদি জ্ঞান ও শিক্ষার অন্তর্গত না হয় (কেবল ফ্রিঞ্জ হ্যারাসমেন্টের বিড়ম্বনা হয়) সেক্ষেত্রে ন্যুণতম যেটা করা যায় তা হল নিজেদের শিল্পী হিসেবে ক্লেম না করে বিনোদন-ব্যবসায়ী, বিনোদন-ফ্রিল্যান্সার হিসেবেই পেশ করা। মহিলাদের এম্পাওয়ারমেন্ট নিয়ে ছবি না করা, প্রেসিডেন্সিতে গিয়ে বক্তৃতা না করা; ছবি নিয়ে বক্তব্যের সময়ে নলেজের গাম্ভীর্য না আনা; কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কদিন কাটিয়েছেন তা বিজ্ঞাপণের মত ব্যবহার না করা। আর সবসময়ে মনে রাখা যাদের পাপোশের মত ব্যবহার করলে আপনাদের তারকামূল্য বাড়ে তাদের সবার মুখ খুলতে আরম্ভ করলে আপনারা কোন কোন পোস্টারের পিছনে লুকোবেন।
তারা সবাই একসাথে মুখ খুলবেন না, কারণ একটা কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি ও কালচারাল মিডিয়া দাঁড়িয়েই আছে এই ভিতটার উপরে যে মেয়েরা এবং নিচুতলার কর্মীরা মুখ খোলেন না; পুরুষ এবং সফল হলেই অপমান করার লাইসেন্স পাওয়া যায়।
একটা গোটা সংস্কৃতি ও মিডিয়া ইতর ও ফিলিস্তিন হয়ে গেলে সেরকমই হয়।"
আসলে নারীবাদ এদের কাছে একটি ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট (নতুন শেখা শব্দ প্রয়োগ করলাম), সেগুলি ইন্ডাস্ট্রির মেয়েরা 'করে' না, শুধু অভিনয় করে নারীবাদীর সিরিয়াস ছবিতে। নারীবাদ আত্মস্থ করা সহজ নয়, অস্বস্তিকর, যন্ত্রণাদায়ক, অনেকক্ষেত্রে পায়ের তলা থেকে জমি সরিয়ে দেয় নারী এবং পুরুষ উভয়েরই। নারীবাদ যদি জ্ঞান ও শিক্ষার অন্তর্গত না হয় (কেবল ফ্রিঞ্জ হ্যারাসমেন্টের বিড়ম্বনা হয়) সেক্ষেত্রে ন্যুণতম যেটা করা যায় তা হল নিজেদের শিল্পী হিসেবে ক্লেম না করে বিনোদন-ব্যবসায়ী, বিনোদন-ফ্রিল্যান্সার হিসেবেই পেশ করা। মহিলাদের এম্পাওয়ারমেন্ট নিয়ে ছবি না করা, প্রেসিডেন্সিতে গিয়ে বক্তৃতা না করা; ছবি নিয়ে বক্তব্যের সময়ে নলেজের গাম্ভীর্য না আনা; কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কদিন কাটিয়েছেন তা বিজ্ঞাপণের মত ব্যবহার না করা। আর সবসময়ে মনে রাখা যাদের পাপোশের মত ব্যবহার করলে আপনাদের তারকামূল্য বাড়ে তাদের সবার মুখ খুলতে আরম্ভ করলে আপনারা কোন কোন পোস্টারের পিছনে লুকোবেন।
তারা সবাই একসাথে মুখ খুলবেন না, কারণ একটা কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি ও কালচারাল মিডিয়া দাঁড়িয়েই আছে এই ভিতটার উপরে যে মেয়েরা এবং নিচুতলার কর্মীরা মুখ খোলেন না; পুরুষ এবং সফল হলেই অপমান করার লাইসেন্স পাওয়া যায়।
একটা গোটা সংস্কৃতি ও মিডিয়া ইতর ও ফিলিস্তিন হয়ে গেলে সেরকমই হয়।"
No comments:
Post a Comment