Thursday, February 21, 2013

ওপার বাংলাঃ প্রতিবাদে প্রজন্ম আন্দোলন, বাংলাদেশে পালন ভাষা শহীদ দিবস,এপার বাংলাঃধর্মঘটে হাজির না থাকার শাস্তি, কান কাটা হল আধিকারিকের!

ওপার বাংলাঃ প্রতিবাদে প্রজন্ম আন্দোলন, বাংলাদেশে পালন ভাষা শহীদ দিবস,এপার বাংলাঃধর্মঘটে হাজির না থাকার শাস্তি, কান কাটা হল আধিকারিকের!
এই সময়, বারাসত: 'ও পারে যে বাংলাদেশ, এ পারে সে বাংলা'। 

কবির এই পংক্তির সঙ্গে মিলছে না বাস্তবের সমীকরণ৷ ওপার বাংলার নয়া প্রজন্ম একুশের রঙে শান দিচ্ছে তাদের গণতান্ত্রিক চেতনায়৷ আজ ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে তাদেরই একটা অংশ আসবে বেনাপোল সীমান্তে৷ ভাষার মাধ্যমে তারা মিলিয়ে দিতে চায় দুই বাংলাকে৷ এপারের চিত্র ঠিক তার উল্টো৷ ভাষা দিবসে পেট্রাপোল সীমান্তে মঞ্চের দখল নিয়ে কাজিয়ায় মাতল শাসক দল তৃণমূল এবং প্রধান বিরোধী সিপিএম৷ তবে শেষ পর্যন্ত শাসক দলকে ওয়াক ওভার দিয়ে সিপিএম সেই অনুষ্ঠান নিয়ে গিয়েছে সল্টলেকের এক প্রেক্ষাগৃহে৷ 

প্রতি বছরই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ২১ ফেব্রুয়ারি মিশে যায় দুই বাংলা৷ নো ম্যানস ল্যান্ডের শহিদ বেদিতে মালা দেন দু'পারের মানুষ৷ তার পর ওপার থেকে জনপ্রতিনিধি, সরকারি প্রতিনিধি এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি-সহ ১০০ জন আসেন পেট্রাপোলের অনুষ্ঠানে৷ পরে এপার বাংলা থেকেও ১০০ জনই যান ওপারের বেনাপোলে৷ কয়েক ঘণ্টার জন্য দু'দেশের সীমান্তে প্রহরারত জওয়ানরাও সঙ্গীন নামিয়ে রাখেন৷ তখন ভেঙে যায় দু'বাংলার যাবতীয় প্রোটোকল৷ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই প্রথা৷ দু'পারের অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য 'গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতি' নামে একটি যৌথ কমিটিও আছে৷ তার সভাপতি হলেন যশোরের সাংসদ শেখ হাফিলুদ্দিন৷ সম্পাদক প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দী৷ দমদমের সাংসদ থাকাকালীনই তিনি এর সম্পাদক হন৷ যৌথ কমিটিতে যেমন ওপারের শাসক আওয়ামি লিগের প্রভাব রয়েছে, তেমনি এককালের এ বাংলার শাসক সিপিএমেরও প্রভাব আছে৷ 

রাজ্যে পরিবর্তনের পর অবশ্য প্রায় রাতারাতি ছবিটা পাল্টে যায়৷ গত বছর মৈত্রী সমিতিকে ২১ ফেব্রুয়ারি পেট্রাপোল সীমান্তে অনুষ্ঠান করার অমুমতি দেন বনগাঁর মহকুমা শাসক৷ সেই ভাবে প্রস্ত্ততিও চলে৷ তার পর হঠাত্ সেই অনুমতি বাতিল করে দেন মহকুমা শাসক৷ পরে দেখা যায়, ২১ তারিখ বনগাঁ পুরসভা সেই অনুষ্ঠানের হর্তাকর্তা৷ রাজ্যের তাবড় মন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতা হাজির সেই অনুষ্ঠানে৷ তার ঠিক উল্টোদিকে মৈত্রী সমিতির অনুষ্ঠান হয়৷ সেখানে বক্তা ছিলেন সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, অমিতাভ নন্দী প্রমুখ৷ ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে এই 'আমরা ওরা'র বিভাজন কেউ ভালো চোখে দেখেনি৷ 

শাহবাগের ঢাকা
লক্ষ চিঠি উড়ল শহিদের উদ্দেশে, ঠিকানা আকাশ
রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লার কবিতার সেই লাইনটা আজও বাংলাদেশের তরুণদের মুখে মুখে ফেরে 'ভাল আছি, ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।' বুধবার শাহবাগের ডাকে শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের সর্বত্র লাখো লাখো বেলুন উত্তরপুরুষের চিঠি 
নিয়ে চলল মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আকাশের ঠিকানায়। কোনও চিঠিতে অঙ্গীকার, 'ঘাতকদের ফাঁসির দাবি ছিনিয়ে তবেই থামা', তো কোথাও দৃপ্ত প্রতিজ্ঞা, 'জয় আমাদের হবেই, তোমরা নিশ্চিন্ত থেকো।'
কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। যে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাংলাদেশের সৃষ্টি, আজ তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন মাত্রা পাচ্ছে এ বারের 'একুশে'। বুধবার সকাল থেকেই হাজার হাজার স্কুল পড়ুয়ার ঢল নামে শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরে। ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই। দুপুরে সেই কিশোর-কিশোরীদের কাঁচা গলার স্লোগানেই গলা মেলায় শাহবাগ চত্বর। তার পরে বিকেল ঠিক চারটে ১৩। 'জয় বাংলা' ধ্বনিতে মুখর বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শহর থেকে এক সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়া হল লক্ষ বেলুন। প্রতিটি বেলুনে গাঁথা একটি করে চিঠি, শহিদদের উদ্দেশে। ঠিকানা আকাশ। শাহবাগ বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক ইমরান লিখেছেন, 'তোমরা মেঘের কোলে ঘুমিয়ে থেকো। জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর, জেগে আছে বাংলাদেশ। আমাদের অবিচল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপ্রসূত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এ যুদ্ধের অনুপ্রেরণা তোমরা, দিগ্নির্দেশক তোমরা।'

স্মরণে: ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেখ হাসিনার। বুধবার রাত বারোটায় শহিদ মিনারে।
আর এক সংগঠক সনিয়া লিখেছেন, 'তোমরা শান্তিতে ঘুমোও, আমরা জেগে আছি'। মাদারিপুর থেকে আসা বৃদ্ধ সেকেন্দর আলির চিঠি তাঁর দুই শহিদ বন্ধুকে, 'সহযোদ্ধা খোরশেদ ও আলি, তোমাদের হত্যার বিচার হবেই'। ছাত্রী সুমতির আপ্লুত উচ্চারণ, 'আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জেগে থাকব, তোমাদের হত্যাকারীদের ফাঁসি না দিয়ে ঘুম নেই'।
একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির পাশাপাশি সে দিন পাকিস্তানের সহচর, গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে ১৬ দিন ধরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের লাখো তরুণ। দেশজুড়ে শাহবাগ যে গণজোয়ার এনেছে, সরকারকেও তার পাশে এসে দাঁড়াতে হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে 'আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন'-এ সংশোধনী আনতে হয়েছে, যাতে জামাতকে কাঠগড়ায় তোলা যায়। তবে এই দলকে এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি। তার মধ্যেই 'একুশে'। কাল ফের জনস্রোতে ভেসে যাবে প্রজন্ম চত্বর। আসবেন ভাষা আন্দোলনের সেনানীরা। প্রতি বারের মতো শহিদ মিনারে ফুলের শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরবেন যে সব মানুষ, তাঁরা শাহবাগেও ঘুরে যাবেন। সেখানে ডাকা হয়েছে একটি বড় সভা। সেই মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। তার আগে আজ গানে-স্লোগানে-কবিতায় নতুন উদ্দীপনার আগুন ছোটে প্রজন্ম চত্বরে। ভারত থেকে বহু মানুষ এসেছেন একুশের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁরাও শাহবাগে এসে সংহতি জানান।

লড়াকু তুলি একুশের তোড়জোড়। বুধবার ঢাকার ভাষা শহিদ মিনার চত্বরে।
গণজোয়ারের সঙ্গে সংহতি জানাতে আজ আখাউড়া সীমান্তে সমবেত হন ত্রিপুরার মানুষ। বাংলাদেশের মানুষরাও তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান। কবিতা পড়েন ত্রিপুরার তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী অনিল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বার্তা পাঠ করা হয়।
ছবি: উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী

মলদ্বীপে ভারতীয় প্রতিনিধি
বুধবার মালেতে মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশ মন্ত্রকের কিছু ভারতীয় প্রতিনিধি। এই ভারতীয় প্রতিনিধির নেতৃত্বে রয়েছে যুগ্ম সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা।মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদের ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেওয়ার ফলে যে বিক্ষোভ ওঠে তা নিয়ন্ত্রণ আনতেই এই বৈঠক। বুধবার মলদ্বীপের একটি আদালতে মহম্মদ নাসিদের শুনানি ছিল। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশনে আশ্রয় নেওয়ায় তাঁর শুনানি বাতিল হয়ে যায়। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ অবশ্য জানান, এই পরিস্থিতি দ্রুত মীমাংসা হলে ভারত খুশি হয়।
http://www.anandabazar.com/21bdesh2.html

লন্ডনে ভাষা শহীদ দিবস পালিত, কন্ঠে - Video Dailymotion

2 घंटे पहले
http://www.somoynews.tv/details.php?id=7667. more close. News. 21-02-2013. Comments; Videos from ...

ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
আজ মহান ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি একদিকে স্মরণের অন্যদিকে উজ্জীবিত হবার। মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবিতে '৫২ সালের এই দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। তাদের সে আত্মদানের কথা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের স্বীকৃতির ফলে কার্যত ভাষা শহীদরাও বিশ্বব্যাপী বিরল সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন। হাজার বছর ধরে জাতির অভ্যন্তরে যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লালিত হয়ে আসছিল কার্যত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ইতিহাসের শরণাপন্ন হলে এ কথা বলতেই হবে, ব্রিটিশ আমলেই ব্রিটিশমুক্ত ভারতে লিংগুয়াফ্রাঙ্কা হিসেবে হিন্দি-উর্দুর পাশাপাশি বাংলার প্রস্তাব করেছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ভাষা আন্দোলনের অনিবার্য সুফল হিসেবে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। আজকের এই দিনে আমরা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। 
ফেব্রুয়ারি আবেগের মাস। এ মাসের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী প্রকৃত পুনঃজাগরণের দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কুরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেছেন, তিনি মানুষকে 'বয়ান' দান করেছেন। সুতরাং মায়ের বুলি প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয় অর্জন কোন কিছুই ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ইতিহাসও সেই সাক্ষী দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্দীপ্ত হবার জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে পবিত্র কোরআন পাঠ করা হতো। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল তমুদ্দুন মজলিসের হাত ধরে। '৪৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছাত্র-কর্মীরা পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় ভাষার দাবি বেগবান হয়েছিল। লক্ষ্য অর্জনে সচিবালয় ঘেরাও হলে তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও অলি আহাদসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে আন্দোলন পরিচালনায় যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন মওলনা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।  বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠার দাবির চেতনার মূলে বিশেষভাবে কাজ করেছে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। সামগ্রিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এটা বলা যায়, এই আন্দোলনের স্বাপ্নিকগণ এবং লালন ও চর্চাকারী সকলেই সচেতন মুসলমান ও ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। সে কারণে ভাষার অধিকারের পথ ধরেই গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক অধিকারের দাবি উচ্চকিত হয়েছিল। শুরু হয়েছিল, স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের সংগ্রাম। এর পর '৭০-এর নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। রাজনৈতিক ও গবেষকদের বিশ্লেষণের সূত্র ধরেই বলা যায়, ভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র নিছক একটি আন্দোলন অথবা ভাষারই আন্দোলন ছিল না বরং চেতনা সঞ্চারী এই আন্দোলন ভেতরগত অবিনাশী চেতনার স্মারক হয়ে রয়েছে। এই চেতনা স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বটে। ভাষা আন্দোলন প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল প্রতারণার বিরুদ্ধে বিজয়ের নির্দেশক।
মূলত ভাষা আন্দোলনের চেতনা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যের এবং জাতীয় সমৃদ্ধির। এবারে যখন ভাষা দিবস পালিত হচ্ছে, তখন কার্যত জাতি দ্বিধাবিভক্ত। গভীর সংকটে রয়েছে, জাতীয় মানস। সংকট অতিক্রমে ২১-এর অবিভাজ্য চেতনার প্রয়োজন। জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনের বিবেচনায় বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে স্বীয় ভাষার উৎকর্ষতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ভাষার দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। জাতীয় প্রতিষ্ঠার অন্তর্গত চেতনা ধারণ করে আছে যে ভাষা আন্দোলন তার প্রতিষ্ঠায় জাতিকে জ্ঞানে, গুণে, মেধায়, মননে, সুখ্যাতি, সুনামে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। লক্ষ্য অর্জনে সকল ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে ঐকমত্য জরুরী। সে কারণেই সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে ২১-এর শিক্ষা ঐক্যবদ্ধতাকে ধারণ করতে হবে। এ বছর ২১-এর পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশের চেতনা সমুন্নত রাখার যে আহ্বান জানিয়েছেন, কার্যত তার সফল বাস্তবায়নে সকল মহলের আন্তরিকতা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
জলঙ্গি (মুর্শিদাবাদ): ধর্মঘটের দিন কাজে না-আসার জন্য কান কেটে নেওয়া হল পঞ্চায়েত কর্মীর। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে। ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। 

জানা গিয়েছে, বুধবার শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের দিক অফিসে আসেননি দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী হজরত ওমর। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তিনি আসতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন তৃণমূল কর্মীরা। তাঁর কাছে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাওয়া হয়। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। অভিযোগ, এর পরই ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেকে। কেটে নেওয়া হয় বাঁ কান। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই কর্মীকে বহরমপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ করেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তিনি বলেছেন, শাসকদলের নেতৃত্বর মদতেই এ সব হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে তাঁর দল সরব হবে। নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। নাট্যকর্মী কৌশিক সেন এই ঘটনাকে 'নারকীয়' বলে মন্তব্য করেছেন।

রাজাকার-মুক্ত গড়ার ডাক হাসিনার
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময়কার খুন ও ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত জামাত-ই-ইসলামির নেতাদের শাস্তি নিয়ে টালমাটাল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি৷ সেই অশান্ত পরিস্থিতিতেই ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষাদিবসের প্রাক্কালে একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বুধবার ২০১২-এর 'একুশে পদক' জয়ীদের সম্মানিত করতে ওসমানিয়া মেমোরিয়াল অডিটোরিয়ামে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করে তিনি জানান, সকলের মিলিত প্রচেষ্টাতেই যুদ্ধ অপরাধী ও রাজাকারদের সরিয়ে সমৃদ্ধশালী, শান্তিপূর্ণ ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব৷ 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণেই বাংলাদেশে 'একুশে পদক'-এর সূচনা৷ শ্রেষ্ঠ নাগরিক সম্মানগুলির মধ্যে অন্যতম এই পদকে সম্মানিত করা হল একটি সংস্থা সহ ১২ জন নাগরিককে৷ বাংলা শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নতির জন্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তি বা সংস্থাকেই দেওয়া হয় এই সম্মান৷ এই অনুষ্ঠানে ভাষাদিবসের গুরুত্ব বোঝাতে হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে ১৯৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে একুশের অমর বার্তা৷ পঞ্চাশের দশক থেকেই ভাষা আন্দোলন আত্মপ্রত্যয়ের প্রতিরূপ হয়ে দেখা দিয়েছে৷ তরুণ প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্ব বুঝতে হবে৷' 

বুধবারের এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ৷ উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রকের সেক্রেটারি সুরাইয়া বেগমও৷ বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য প্রশাসন গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও এ দিন ঘোষণা করেন হাসিনা৷ তিনি জানান, বাংলাকে রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ প্রশাসন৷ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ 

রাষ্ট্রীয় ভাষা সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সংক্রান্ত আইন জোরদার করা থেকে শুরু করে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সংস্থা স্থাপনের কথাও এ দিন ঘোষণা করেন হাসিনা৷ তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে সমস্ত সংস্থার মোবাইল ফোনে বাংলা কিপ্যাড রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷' 

ভাষা আন্দোলনের শহিদ সালাম, বারকাত, রফিক, জাব্বর, সফিয়ুদের কথা বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগ বিহ্বলই হয়ে পড়েন হাসিনা৷ 'একুশে পদক' জয়ীদের সম্মান জানিয়ে তিনি বলেন, 'একুশের আন্দোলন আমাদের গর্ব ও পরিচিতি৷' 

অন্য দিকে এ দিনই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বিচারের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ঘোষিত হল৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকার পক্ষের আইনজীবী নিযুক্ত হলেন তুরিন আফরোজ৷ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তুরিন বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষিকাও৷ এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি হোসেন-ই-মঞ্জুর ও সানিয়ান রহমানকে সরকার পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হলেও, পরে তা স্থগিত করা হয়৷ 

Thu, 21 Feb, 2013 03:02:39 AM
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাতের প্রথম পহর
নতুন বার্তা ডেস্ক

কলকাতা: বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো অনেকে। তারপর থেকেই বাংলাভাষার এই অমর শহীদদের স্মরণ করে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভাষা দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। পরে  জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয় ২০০০ সালে। সেই থেকেই বিশ্বজুড়ে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপিত হবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। বুধবার দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২১ ফেব্রুয়ারিও সাধারণ ধর্মঘটের দিন পূর্বনির্দিষ্ট থাকলেও, ভাষা দিবস উদ্‌যাপনের জন্য পরিবহনকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এদিন স্বাভাবিক থাকবে পরিবহন পরিষেবা। এছাড়াও ভাষা দিবস অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনেও কোথাও কোনো সমস্যা হবে না বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজ্যজুড়ে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রভাতফেরির আয়োজন করা হয়েছে। পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রভাতফেরি শুরু হয়ে শেষ হবে ডেপুটি হাই কমিশনের অফিসের সামনে। এরপর সেখানে সভা ও বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ধর্মতলায় সুরেন্দ্রনাথ উদ্যানে (কার্জন পার্ক) বরাবরের মতো নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে উদ্‌যাপিত হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।  

এদিন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে চেতলা পার্ক ও কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগর মূর্তির সামনে ভাষা দিবস উদ্‌যাপন হবে। ডিওয়াইএফআই বাগবাজার আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে শহীদ ক্ষুদিরামের মূর্তির সামনে থেকে পদযাত্রা গিরিশ মঞ্চ পর্যন্ত যাবে। পাইকপাড়ায় পদযাত্রাতে শামিল হবেন যুবরা। ভাষা দিবস উদ্‌যাপিত হবে বেহালা ও সরশুনায়। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ও কলকাতা নাগরিক সম্মেলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে কালীঘাট পার্কে বিদ্যাসাগর মূর্তির নিচে ভাষা দিবস পালিত হবে।

এছাড়াও আদিবাসী ও লোকশিল্পী সংঘ, বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি, এবিপিটিএ, হরিপাল ভাষা শহীদ উদ্‌যাপন কমিটি, ভাষা চেতনা মঞ্চ, অমর একুশে সাংস্কৃতিক জোট, ভাষা ও চেতনা সমিতি প্রভৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকেও ভাষা দিবস পালিত হবে।  সূত্র: ওয়েবসাইট।

নতুন বার্তা/এসএফ

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত বাংলাদেশ ও বিশ্বজুড়ে
  2013-02-21 18:12:28  cri

 

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পালিত হয়েছে দিবসটি।

বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করেছে ভাষা শহীদদের। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতির পক্ষ থেকে প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিবর্গ, তিনবাহিনী প্রধান, কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা জানান শহীদ মিনার। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ থাকায় এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় এবার তারা শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি।

শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ মিনারেই আমার বর্ণমালা নামে ডিজিটাল বর্ণমালার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার।

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও ইউনেস্কো মহাসচিব ইরিনা বোকোভা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।

মাহমুদ হাশিম., ঢাকা থেকে।


২১ ফেব্রুয়ারী কেন পালন করি????????????

আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু
গড়া এ ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

আমার সোনার দেশের রক্তে
রাঙানো ফেব্রুয়ারী
আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো
একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।।



গানটির রচয়িতা না হয় লেখার সময় এরকম লিখেছেন। 
তাই বলে..............আমরাও???

উর্দু থেকে বাংলা (মাতৃভাষা) ভাষায় আসার জন্য এত যুদ্ধ, এত প্রান গেল।
কিন্তু বলা এবং পালন করার সময় আমরা ভাষা শহীদ দিবস পালন করি ফেব্রুয়ারি মাসে , কেন আমরা ফাল্গুন মাস উচ্চারণ করি না???????????????????????
কেন আমরা বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করি???????????? বলবেন কেউ???????????????

রাষ্ট্র ভাষা যেমন বাংলা চাই!!!!!!!!
ভাষা শহিদ দিবস ও বাংলা চাই!!!!!

বাংলিশ চাইনা...................(২১ ফেব্রুয়ারী)
শুদ্ধ বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে চাই!!!!


মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী থাকল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির বেণীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস। ধর্মঘটের দিন অফিসে হাজির না হওয়ায় ব্যাপক মারধর করে এক পঞ্চায়েত অফিসারের কান কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। 

গতকাল অফিসে হাজির হননি পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিসটেন্ট হজর ওমর। আজ সকালে যখন তিনি কাজে যোগ দেন, সে সময় তাঁর ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ওই আধিকারিক। ঘটনার প্রতিবাদে বেণীপুরের পঞ্চায়েত কর্মীরা জলঙ্গির বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখান। 

অন্যদিকে,গতকাল সাধারণ ধর্মঘটের দিন  স্কুল বন্ধ রাখায় আজও স্কুল খুলতে দেওয়া হল না। স্কুলের সামনে মঞ্চ বেধে প্রধানশিক্ষককে বসিয়ে রেখে চলল শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহ। গোটা ঘটনাই ঘটে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সামনেই। আজ সকালে এই ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া নেতাজি কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ মঞ্চে বসিয়ে রাখার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রধানশিক্ষক মনিগোপাল বিশ্বাস। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।   

একই ভাবে আজ স্কুল  দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দির বাজারের ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুল, হুগলির চণ্ডীতলার কলাছড়া হাইস্কুল, কালনার বিরুহা শরতচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, হুগলির চণ্ডীতলার কলাছড়া স্কুলে একই কায়দায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের  স্কুলে ঢুকতে বাধা দিলেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। 



আর এই আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাংলাদেশে। চুপ করে বসে নেই জাম-এ-ইসলামি সমর্থকরাও। হরতালের সমর্থনে পথে নেমেছে তারাও। আর তার জেরেই হচ্ছে সংঘর্ষ। বিভিন্ন জায়গায় জামাত সমর্থকদের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে। কক্সবাজারে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়ফ নামতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। হরতাল সমর্থনকারীদের রোষ থেকে বাদ যায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। সংঘর্ষ রুখতে পথে নেমেছে পুলিস ও আরএবি লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে হয়েছে পুলিসকে। 

বাংলাদেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে হিংসার আগুন। কিন্তু, এই হিংসা কোনওভাবেই দমাতে পারেনি আন্দোলনকারীদের। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা। জামাতের ডাকা হরতালকে কার্যত তোয়াক্কা না করেই ঢাকা শহরে খোলা ছিল স্কুল, কলেজ এবং সরকারি দফতরগুলি। হরতালকে বানচাল করতে পথে নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্লগার রাজীব হায়দরের খুনের প্রতিবাদেও সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। একাত্তরের যুদ্ধপরাধী আজাদের মৃত্যুদণ্ড রদের দাবিতে লাগাতার হরতালের ডাক দিয়েছে জামাত-ই-ইসলামি। অপর অভিযুক্ত আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজারও প্রতিবাদে সোচ্চার তাঁরা। এ নিয়ে তাঁরা পাশে পেয়েছে বিএনপি-কে। কিন্তু, সেই দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে আওয়ামি লিগ।

জামাত-এ-ইসলামি সহ যেকোনও সংগঠনকে শাস্তি দিতে যুদ্ধ অপরাধ আইন সংশোধন করল বাংলাদেশ সংসদ। এর ফলে জামাত-এ-ইসলামি দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পথ অনেকটাই খুলে গেল বলে মত পর্যবেক্ষক মহলের। আইন সংশোধনের খবর পৌঁছতেই ঢাকার রাস্তায় উচ্ছাসে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। 

একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। এরই মধ্যে শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দোলনের সংগঠক ব্লগার রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ড আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভরতদের অভিযোগ, জামাত সমর্থকেরাই খুন করেছে রাজীবকে।   

এই পরিস্থিতিতে রবিবার বাংলাদেশ সংসদে পাস হয়ে গেল যুদ্ধ অপরাধ আইন সংশোধন বিল, দুহাজার তেরো। সংশোধিত এই আইন অনুযায়ী এবার থেকে যুদ্ধপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির পাশাপাশি দল বা সংগঠনেরও বিচারের সুযোগ থাকছে। একইসঙ্গে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আসামীর পাশাপাশি সরকারেরও আপিল করার সমান সুযোগ রাখা হয়েছে সংশোধিত আইনে। 

এর ফলে বাংলাদেশের সর্ববৃহত্‍ ইসলামি দল জামাত-এ-ইসলামির যুদ্ধপরাধের বিচার করার পথ খুলল। এতে ভবিষ্যতে জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার রাস্তা মসৃণ হল বলেও মনে করা হচ্ছে। 

দিনকয়েক আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও হয়। 

এবার সংশোধিত আইনে তাঁর সাজা বাড়ানোর আপিল করার পথও তৈরি হল। 

জামাত এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রবিবার সংসদ বয়কট করেছিল। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই পাশ হয়ে যায় এই সংশোধনী বিল। বিল পাশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন শাহবাগ স্কোয়ারে আন্দোলনরত হাজার হাজার মানুষ। গত দু সপ্তাহ ধরে জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলনে সামিল তাঁরা। 

অন্যদিকে আজ জামাতের ডাকা বাংলাদেশ বনধে উত্তেজনা এড়াতে তত্‍পর প্রশাসন।   


কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের প্রথম দিন বুধবার অফিসে আসেননি৷ আর এর খেসারত দিতে হল এক সরকারি কর্মীকে নিজের কান খুইয়ে৷ ধর্মঘটে অফিসে না আসায় পঞ্চায়েত কর্মীর কান কেটে শাস্তি দেওয়ার এই অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে৷  মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এই  ঘটনা ঘটেছে৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে হজরত ওমর নামে এই কর্মী অফিসে আসতেই তাঁর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সমর্থকরা৷ অভিযোগ, এরপরেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা  তারা৷ সেই আক্রমণেই তাঁর কান কেটে যায় বলে অভিযোগ৷ রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে বহরমপুরে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ওই পঞ্চায়েত কর্মীর অভিযোগ, ১০-১২ জন সশস্ত্র তৃণমূল কর্মী তাঁর ওপর আক্রমণ করেন৷ জলঙ্গি থানায় ৫জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি৷


ধর্মঘটের দিন সরকারি কর্মীদের অফিসে হাজিরা দেওয়ার জন্য কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷  উপযুক্ত কারণ না দেখাতে পারলে গরহাজিরদের একদিনের বেতন কাটা ও চাকরি জীবনের মেয়াদ একদিন কমানোর দাওয়াই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷  অতএব কেউ অফিসে না এলে তার শাস্তি হবে খাতায়-কলমে, এমনটাই প্রত্যাশিত ৷  কিন্তু এধরনের 'নিরীহ' শাস্তির অপেক্ষায় তৃণমূল কর্মীরা যে বসে থাকতে রাজি নয়, এই ঘটনায় তারই হাতেগরম প্রমাণ মিলল বলে মনে করা হচ্ছে ৷  আইন-কানুনের পরোয়া না করেই শাস্তি দেওয়ার ভার নিজেদের হাতেই তুলে নিচ্ছেন শাসক দলের কর্মীরা ৷  গতকালই পড়ুয়াদের কম হাজিরার কারণে সাজা পান এক সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ হালিশহরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে স্কুলে ঢুকে প্রধানশিক্ষক ও এক পার্শ্বশিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ওঠে৷ বিভিন্ন ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা স্বত্বেও যে তৃণমূল কর্মীদের 'গা-জোয়ারি' অব্যাহত, তা এদিনের ঘটনায় আরও একবার প্রতিফলিত হল বলেই মনে করা হচ্ছে ৷
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।৷ নাট্যকর্মী কৌশিক সেন এ ঘটনাকে নারকীয় বলে মন্তব্য করেছেন ৷ বিরোধী দলগুলিও ঘটনার নিন্দা করেছে। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরি এই ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বলে অভিহিত করেছেন ৷

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/33797-2013-02-21-08-40-13

শহীদ দিবসে গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ প্রসঙ্গপ্রিন্ট কর
সোনা কান্তি বড়ুয়া । টরন্টো থেকে   
রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১
সলিল চৌধূরীর এক বিখ্যাত গানে লেখা আছে, "বিচার পতি, তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে সেই জনতা।" জনতার প্রশ্ন :  গৌতমবুদ্ধ বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার পর ও আজ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কেন? ওড়িয়া ভাষায় মহাভারতের লেখক সারলা দাস লিখেছেন, "বউদ্ধ রূপেরে বিজে অছি জগন্নাথে," তবু ও বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির আজ ও হিন্দু রাজনীতি দখল করে আছে। বাংলা বর্ণমালায় বুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিরাজমান এবং বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রূপ।  প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য যে, বাংলা বর্ণমালার ইতিহাসে প্রায় ২৫৫৫ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫ ) সগৌরবে লিপিবদ্ধ এবং ইতিহাসে দেদীপ্যমান হয়ে আছে। বিংশ শতাব্দীর আটচলিশ সাল থেকে বায়ান্নোর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র"য়ারী আমি কি ভুলিতে পারি? আমার লেখা কবিতায়,

      "বাঙালির অন্তর জগতে সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকের স্মৃতি অম্লান, 

      শহীদ হয়ে তোমাদের বাংলা ভাষায় দেশ প্রেম করে গেলে দান।

      যে কবিতাখানি সযতেœ করেছি রচনা আজ,

      তার মাঝে হেরি আমি একুশের ভাষা সৈনিকদের বায়ান্নোর লাশ।

      ভাষা শহীদদের পদ দলিত পাক সেনাদের প্রেত অট্টহাসি,

      বাংলা বর্ণমালা ও জাতীয় অস্তিত্বের প্রতিসূত্রে উঠিছে উচ্ছ্বসি।

      মসজিদ মন্দির বিহার গীর্জায় যাবার আগে,

      বাঙালি মন কেন হঠাৎ করে চলে যায় শহীদ মিনারে?

      হে মোর চিত্ত গণতীর্থে জাগোরে ধীরে

      শহীদ মিনারের স্মৃতির সাগর তীরে।"

      অমর একুশের রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হ'ল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" আলোকিত বিশ্বের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিশ্র"তি। বৌদ্ধধর্ম, বুদ্ধাব্দ ও পালি ভাষা হারিয়ে যাবার সাথে যদি চর্যাপদের  বাংলা ভাষা টা ও হারিয়ে যেতো, তবে একুশ কোটি বাঙালির কি হতো? বাংলাভাষায় লেখা বুদ্ধের জীবনী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূর্বে ও ছিল না।  
 
 
 
 
 
 

        ইতিহাস চুরি ও তত্ত্বের ফাঁদে ১৯৩১ সালে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে ছয় লাইনের একটি ব্রাহ্মীলিপিতে উৎকীর্ণ সম্রাট অশোকের শিলালিপিকে অস্বীকার করে বিতর্কিত বঙ্গাব্দ রচিত হয়েছিল আজ ও ইহা কোলকাতা যাদুঘরে বিরাজমান। হিন্দুরাজনীতি টাকা ও ক্ষমতার লাভের জন্যে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু মন্দিরে পূজা না করে ও নবম অবতার করেছেন, এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংস করতে 'আল্লাহ উপনিষদ' রচনা করে হিন্দুস্থানে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। "মনে মৈত্রী করুণ রস, বাণী অমৃত পদ। জনে জনে হিতের তরে, পড়েন 'শহীদ দিবস, 'বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন,' গৌতমবুদ্ধের জীবনী এবং চর্যাপদ।" চর্যাপদে গৌতমবুদ্ধকে পূজা করার নীতিমালা থাকা সত্বে ও বঙ্গাব্দ বুদ্ধের নামে বুদ্ধাব্দ হল না কেন? ব্রাহ্মণ্যবাদের হিন্দুরাজনীতি সম্্রাট আকররের রাজত্বকালে "আল্লাহ উপনিষদ" রচনা করে হিজরির সাথে বঙ্গাব্দের মিলন হ'লে আজ ১৪৩২ হিজরিতে ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কেন? ইহা নহে হিজরি সাল, না বাংলা বঙ্গাব্দ। সহজ কথায় হিন্দু রাজনীতির ষড়যন্ত্রে বাঙালির সত্যিকারের ইতিহাসের মস্তক বিদীর্ণ করে বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠিত হল।

      জাতিভেদ প্রথার মাধ্যমে বৈদিক ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি ধর্মের অপব্যবহার করে লেখাকে নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি করে বিধান দিলেন, "স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নয়। দেবভাষায় কোন লিপি নেই (দেশ, ১৪ পৃষ্ঠা, কলকাতা, ১ ফেব্র"য়ারী ১৯৯২)।" গৌতমবুদ্ধ দক্ষিন এশিয়ার এই সামাজিক বিকৃতির হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করেন। বাংলা  বর্ণমালায় বাংলার ইতিহাস প্রতিবিম্বিত হয়ে আছে। বাংলা ভাষার প্রথম বইয়ের নাম "চর্যাপদ।" হিন্দুত্ববাদীরা তুর্কীদের নাম দিয়ে ভারত ও প্রাচীন বাংলার অনেক বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করার পর বিশ্ববৌদ্ধদের সবচেয়ে পবিত্রতম তীর্থস্থান বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির আজ ও অন্যায়ভাবে দখল করে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মানবাধিকার নেই বেন?  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার বিরুদ্ধে বৈদিক সমাজপন্থী ব্রাহ্মণ্যবােেদর 'জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডি' রক্ষার মন্ত্র ছিল:

      "অষ্ঠাদশ পুরাণানি রামস্য চরিতানি চ।

      ভাষায়াং মানবঃ শ্র"ত্বা রৌরবং নরকং ব্রজেৎ ।।  অর্থাৎ ব্রাহ্মণ ব্যতীত জন সাধারণ রাম কাহিনী সহ ১৮ পুরাণ সাহিত্যসমূহের ভাষা শ্রবণে (মৃত্যুর পর) রৌরব নামক ভয়ঙ্কর নরকেই প্রবেশে বাধ্য হবেন।" কথায় বলে, " শূদ্র সন্তানগণ চর্তু ভেদ ১৮ শাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর ও ব্রাহ্মণ সন্তানদের মতো পন্ডিত হতে পারবেন না। হরলাল রায়ের মতে, "চর্যার যুগে ও আমরা দেখতে পাই ব্রাহ্মণরা সংখ্যায় কম হলে ও কঠোর সমাজ বন্ধনে দেশের অন্ত্যজ গণসমাজ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। অথচ তারা তাদের পাওনা হিসেব ও বুঝে পায়নি। এমন কি বুকের ভাবকে মুখের ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে ও তাদের উপর অভিশাপ ছিল রৌরব নরকে তাদের স্থান হবে। এমনি অবস্থায় সংগ্রাম করেছে তারা মুখের ভাষার জন্য; পারেনি; 'আমার ভাষার'র জন্য দেশ ত্যাগ করেছে তবুও ছাড়েনি আপন ভাষাকে মাতৃভাষাকে। জয় হয়েছে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের। আজ তো বাংলা দেশে সাহিত্যের এ ভাষা সংস্কৃত নেই।"

   বিশ্বের ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে একমাত্র গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র  সিদ্ধার্থ) ২৫৫৫ বছর পূর্বে  বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনীর সচিত্র খন্ডচিত্র ইতিহাস ভারতের অজন্তা গুহায় আজ ও বিরাজমান। ব্রাহ্মী (অশোকের শিলালিপির ভাষা) ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষার বর্ণমালা দেবনাগরী লিপি, তামিল লিপি, বাংলা বর্ণমালা সহ প্রায় ৪০টি ভাষার বর্ণমালা উৎপত্তি। ব্রাহ্মণ্য রাজনীতি বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করতে গিয়ে বাংলাভাষা ও বঙ্গাব্দ (বুদ্ধাব্দ) কে ধ্বংস করেছিলেন। রাজা শশাংক (৮ম শতাব্দী) এবং শংকারাচার্য (নবম শতাব্দী) বোধিবৃক্ষ, বৌদ্ধ সাহিত্য, বৌদ্ধ জনতা এবং বৌদ্ধধর্মকে সমূলে ধ্বংস করার  বিষাদ সিন্ধুর রক্তাক্ত কাহিনী ইতিহাসে বিরাজমান। কিন্তু বাংলার অতীত আজ ও মুখ ফোটে মনের কথা বলতে পারে নি। হিন্দুধর্মের রাজনীতি বৌদ্ধ চর্যাপদ আবিষ্কার হওয়ায় বাংলাভাষাকে হিন্দুধর্মের লেজুড় বানাতে পারেননি। বৌদ্ধধর্মকে হিংসা করে পরধর্ম আক্রমন করতে হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধগয়া  দখল করার পর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। অন্যায়কে সহ্য করা অপরাধ। হিন্দু রাজনীতি ব্রাহ্মণদের আদেশে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেন।

      ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়দে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ তদানিন্তান পূর্ব পাকিস—ানে (বাংলাদেশ) এসে বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সরকারিভাবে বন্ধ করে দিয়ে ঊর্দু ভাষাই একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ঠ্রভাষা ঘোষনা করেছিলেন। ইসলাম ধর্মের নাম দিয়ে বাংলাদেশের আপাদ মস্তক পাকিস্তানী বোরখায় ঢাকা ছিল, ধর্মের নাম অপব্যবহার করে বাঙালির বঙ্গাব্দ ও বাংলা ভাষা মুখ থেকে ছিনিয়ে নেয়া সহজ ব্যপার নয়। প্রসঙ্গত: বৈদিক ইন্দ্র রাজা ৩৫০০ পূর্বে মহেঞ্জোদারো হরপ্পার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধধর্ম সহ হাজার হাজার নর নারী ও শিশু হত্যা এবং সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস  করে আর্যদের বৈদিক সভ্যতা স্থাপন করেছিলেন (ঋগে¦দ ১/৩৬/৮); এবং আছে যদু (যাদব ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণর প্রথম পূর্ব পুরুষ) দূর দেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন। "সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন না হলে ও 'হাই মাউন্ড' এর চুড়োয় বৌদ্ধস্তুপটি ও অবশ্য দেখার মতো (বিবর্ণ সিন্ধূ , ভোরের কাগজ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০০৬, ঢাকা)।

      আর্যদের আধুনিক রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে 'চোর এবং নাস্তিক' বলে গালাগাল দেবার পর আজকের হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধকে হিন্দুর নবম অবতার বানিয়ে বৌদ্ধ জগতের সবচেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থভূমি বুদ্ধগয়াকে দখল করে জাপান, থাইল্যান্ড সহ বৌদ্ধবিশ্ব থেকে 'টাকা আনা পাই' কামাচ্ছে। কোন হিন্দু মন্দিরে সকাল বিকাল বুদ্ধ পূজা না করে ও গৌতমবুদ্ধ হিন্দু রাজনীতির অবতার হ'ল কি কারনে? দেশ পত্রিকার লেখক সোমনাথ রায়ের মতে, "বিষমোহয়ম উপন্যাসঃ। বেদ ও কৃষ্ণ একই সময়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছেন। মহাভারতের আর্যসমাজের ওই বিশৃংখল অবস্থায় এই গোঁজামিল অবশ্যম্ভাবী, তাই অন্যায় ন্যায় হল, সত্য হল অসত্য, অসত্য হল সত্য, অধর্ম যুদ্ধ হল ধর্ম য্দ্ধু। এই হীন ব্যাপারগুলির উদ্দেশ্য আর্যদের তাঁবেদার করে রাখা, না হলে শূদ্ররা আসবে। তাই কলিযুগ বা শূদ্রযুগ আসছে বলে ভয় দেখানো  (চিঠিপত্র বিভাগ, দেশ, পৃষ্ঠা ১৯, কোলকাতা, নভেম্বর ১, ১৯৯৯ সাল)।

        জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারায় সমৃদ্ধ আজ বাংলাভাষা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ঠ্রের 'রাষ্ঠ্রভাষা এবং আগামি দিনের বঙ্গাব্দ  হবে বুদ্ধবর্ষ, যিনি বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ করেছিলেন। বাঙালিদের প্রশ্ন : ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কি আজকের ১৪৩২ হিজরী সালের উপর প্রতিষ্ঠিত? গায়ের জোরে গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ মুছে ফেলা সহজ ব্যাপার নয়।  বাংলাভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ, চর্যাপদ এবং বগুড়ার মহাস্থানের সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে বাংলা বর্ণমালা বিরাজমান। জনতার আদালতে বাঙালিরা সহ আমরা  সাম্প্রদায়িক বঙ্গাব্দ রচনার বিচার চাই।

      স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে "চন্ডালিকা" রচনা করে গৌতমবুেেদ্ধর জয়গান করেন এবং গীতার বেদ উপনিষদের উদারতার অভাব তাঁর সততায় খুব সহজে ধরা  পড়েছিল (পারস্যে, রবীন্দ্র রচনাবলী, ১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৫৪, প: ব: সরকার, ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ এবং দেশ, পৃষ্ঠা ১৯, কোলকাতা, নভেম্বর ১৯৯৯ সাল)।" বঙ্গাব্দকে ইতিহাসের মূল শেখড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে হিন্দুত্ববাদীরা ষড়যন্ত্র করে "আল্লাহ উপনিষদ" রচনায় বহিরাগত মুসলমানদের কাঁধে বন্দুক রেখে বৌদ্ধদের বুদ্ধাব্দকে শিকার করে ধ্বংস করার পর সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বঙ্গাব্দ প্রচলনের নাটক করেছিল।  হিন্দুত্ববাদীরা ৫০০ বছরের পুরানো বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে রামজন্মভূমির নামে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠায় হিংসা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করলে, জনগনমন অধিনায়ক গৌতমবু্েদ্ধর ধর্ম ও সভ্যতা কি ভাবে ধ্বংস করেছে ইতিহাসে আজ ও ইহা বিরাজমান ।

হিংসার কারনে চতুবর্ণ  দিয়ে "জাতিভেদ প্রথার" মাধ্যমে গীতা সহ হিন্দুধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল। অহিংসা পরমধর্ম দিয়ে বৌদ্ধধর্ম  মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার ধর্ম ছিল। বৈদিক রাজা ইন্দ্র  সেই প্রাগৈতিহাাসক বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে ভারতে বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার পর অহিংসার পরিবর্তে হিংসার ধর্ম বা "জাতিভেদ প্রথা" দিয়ে বিশ্বমৈত্রী ও মানবতাকে খন্ড বিখন্ড করেছিলেন।  ঋগে¦দে (১/৩৬/৮) আছে যদু (যাদব ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণর প্রথম পুরুষ) দূরদেশ থেকে ভারতে আসেন (দেশ, পৃষ্ঠা ১৪, কোলকাতা, নভেম্বর ১, ১৯৯৯)। বিদেশী বৈদিক ধর্ম বা বিষবৃক্ষ ভারতে প্রবেশ করে স্বদেশী সিন্ধুসভ্যতার বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করেছিল (ইংরেজি ভাষায় রচিত স্বপন বিশ্বাসের লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ "মহেঞ্জোদারো হরপ্পায় বৌদ্ধধর্ম, ১৯৯৯, কোলকাতা)।

      বাংলা বর্ণমালা কবে, কে প্রথম পড়েছিলেন আমরা ভুলে গেছি। প্রসঙ্গত:উলেখযোগ্য যে, (নারায়ন স্যানালের লেখা বই "অজন্তা অপরুপা") ভারতের অজন্তা গুহাচিত্রে বঙ্গবীর বিজয় সিংহের ঐতিহাসিক শ্রীলংকা জয়ের ইতিকথা বিরাজমান অথচ চর্যাপদ বা বাংলা বর্ষ গণনায় আজ ১৪১৬ বর্ষ হবার কথা নয়। আজ ২৫৫৫ বাংলা বর্ষ ( থাইল্যান্ডের পঞ্জিকায় বুদ্ধবর্ষ ২৫৫৫) হবার কথা ছিল। বঙ্গাব্দের ইতিহাস চুরির পূর্বে সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হিন্দু পন্ডিতগণ "আল্লাহ উপনিষদ" রচনা করে সদাশয় সম্রাটের কৃপাদৃষ্ঠি লাভ করেন।  অগ্নি পুরান, বায়ু পুরান ও বিষ্ণু পুরান সহ ইতিহাসের অপব্যাখ্যা, মনগড়া ইতিহাস তৈরীর ব্যাপারে পুরানো শাসকদের  (সেনাপতি পুষ্যমিত্র, রাজা শশাংক ও পুরোহিত শংকারাচার্য) জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়। সম্রাট আকবরের আমলে সর্বপ্রথম বঙ্গাব্দ দিয়ে সরকারী কর্ম শুরু হলে ও কিন্তু বাংলাদেশে সোনার গাঁ এর শাসক ঈশা খাঁ বিভিন্ন কারনে সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে সেনাপতি মানসিংহের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিলেন। বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে বাংলা লিপির ঐতিহাসিক মূল্যায়ন গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ন কি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে?

      ইতিহাস চুরির ফাঁদে বঙ্গাব্দ কাহিনী: দক্ষিন এশিয়া সহ বাংলাদেশের জনতার  বৌদ্ধ ঐতিহ্য বাদ দিয়ে দিল্লিতে বসে তদানিন্তন হিন্দু মুসলমান শাসকগণের শকাব্দ এবং হিজরি বর্ষকে কেন্দ্র করে রাতারাতি বঙ্গাব্দের ইতিহাস রচিত হয়েছিল। লেখক শৈলেন্দ্র ঘোষের মতে, "এই জটিলতা নিরসনের জন্য পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে গৌড়েশ্বর হোসেন শাহ তাঁর উজির পুরন্দর খাঁ,  মুকুন্দ দাস, এবং মালাধর বসু প্রভৃতি সভাসদদের পরামশক্রমে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন।" বাংলাভাষা, বাংলা বর্ণমালা, বঙ্গাব্দ এবং বাঙালির স্বাধীনতা নিয়ে প্রতিটি বাঙালি বাংলাদেশে জন্ম গ্রহন করেন। ইসলাম ধর্মের নামে বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে) কায়দে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের উর্দূ ভাষা প্রচলনের বিরুদ্ধে দেশে রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের ক্ষেত্রে বাঙালির অখন্ড সাধনা এবং এই অখন্ড সাধনার ফলেই সালাম, বরকত, রফিক, সহ অনেক নাম না জানা শহীদদের জীবন দান। গৌতমবুদ্ধের সময়ের বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র"য়ারীতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় 'শহীদ দিবস।' ধর্মের নামে অবিচারকে বাদ দিয়ে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ হয়ে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার জন্যে প্রান দান করেন।

      গৌতমবুদ্ধের বঙ্গলিপি অধ্যয়ণ সহ বাংলা বর্ণমালার হাতধরেই বাঙালি জাতির সভ্যতার যাত্রায় বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ পরিগ্রহ করে প্রথম বাংলা বইয়ের নাম "চর্যাপদ" এবং অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বাংলাদেশের ইতিহাসের উত্তম ধ্যানী পুরুষ।  তাই বাংলাদেশে গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধাব্দই বঙ্গাব্দ ছিল। বাংলাদেশে মাটির নীচে ও উপরে বুদ্ধমূর্তি বিরাজমান, দেশে বৌদ্ধ পালরাজাদের চারশত রাজত্ব, গৌতমবুদ্ধের বাংলাভাষা অধ্যয়ণ, বাংলাভাষার প্রথম বই বৌদ্ধধর্মের 'চর্যাপদ'এবং বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত  রূপ হওয়ার জন্যে গৌতমবুদ্ধের নামে বঙ্গাব্দের নামকরন হওয়ার ঐতিহাসিক দাবী ছিল। যীশু খৃষ্ঠের নামে খৃষ্ঠাব্দ আছে, ঐতিহাসিকদের দৃষ্ঠিতে গৌতমবুদ্ধ বাংলা বর্ণমালার ইতিহাস বিজয়ী পাঠক হয়ে ও তাঁর নামে বাংলাদেশের পঞ্জিকায় (ক্যালেন্ডারে) বুদ্ধাব্দ লেখা হলো না কেন? ২৩০০ বছর পূর্বে সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর পুরোহিত ও হিন্দু রাজ শক্তি মানবাধিকার ধ্বংস করতে দিনের পরদিন বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ প্রবর্তন করার পর ও সমাজে 'সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার' জন্যই নাটক চর্চা করতেন এবং  চর্যাপদের ১৭ নম্বর কবিতায় (চর্যায়) আমরা পড়েছি, "নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী / বুদ্ধ নাটক বিসমা হোই অর্থাৎ দেবী গাইছেন, বজ্রাচার্য নাচছেন, এভাবে বুদ্ধ নাটক শেষ হলো। সংসারের দুঃখ থেকে নির্বানলাভ বা বিমুক্তি সুখই ত্রিপিটক ও চর্যাপদে মানব জীবন নিয়ে সাধনা ।

      বৌদ্ধ তান্ত্রিক মতে, গুহ্য নাভি মূলকে বলা হয় নির্মানচক্র, হদয়ে ধর্মচক্র, কন্ঠে সম্ভোচক্র, মস্তিষ্কে মহাসুখচক্র। দেহের নাড়িকে সংযত করার সাধনা তান্ত্রিক সাধনা। দেহে বামে ইড়া, ডানে পিঙ্গলা, মাঝে সুষূম্না নাড়ি। সুষম্না নৈরাত্মা, বোধিচিত্ত, অবধূতী বা যোগীনির প্রতীক। ইড়া পিঙ্গলাকে যথাক্রমে শক্তি ও শিবের প্রতীক। ইড়া পিঙ্গলাকে সাধনার মাধ্যমে সুষুম্নাতে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর সাধনায় সষুম্না পরিনত হবে সহস্রায় বা মহাসুখ চক্রে। সেখানেই আছে মহা সহজানন্দ।

      ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্রে তদানিন্তন রাজনীতিবিদরা বুদ্ধাদ্ধকে বাদ দিয়ে হিজরী সাল নিয়ে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করা হল। নববর্ষ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ  (সৌরবর্ষ) হলে আজ ১৪৩১ হিজরী (চান্দ্র বর্ষ) হয়।  ১৪১৭ বঙ্গাব্দ কি আরবীয় রাজনৈতিক ঐতিহ্যের সাল,  না কি বাঙালির ললাটে কলঙ্কিত বঙ্গাব্দ? বাংলাভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রূপ এবং বৌদ্ধ ত্রিপিটকে পালি ভাষার নিজস্ব কোন বর্ণমালা নেই। সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর সেনাপতি পুষ্যমিত্র (খৃঃ পূর্ব ১ম শতাব্দিী) ও গৌড়ের (বাংলা) রাজা শশাংক (৭ম শতাব্দি) কর্তৃক বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের কারনে বাংলা ভাষায় পালি ত্রিপিটক রচিত না হলে ও শ্রীলংকা সহ বৌদ্ধবিশ্বে পালি ভাষায় থেরবাদী বৌদ্ধ ত্রিপিটক বিরাজমান। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতি বাংলা বর্ণমালা ইতিহাসের সাথে বঙ্গাব্দের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন না। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করলে আজ ১৪১৭ বঙ্গাব্দ না লিখে বাঙালি জাতির পঞ্জিকায় ২৫৫৫বঙ্গাব্দ লেখার ইতিহাস জড়িত ছিল। বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস জুড়ে গৌতমবুদ্ধ বিরাজমান। প্রসঙ্গত: আজকের ভারতীয় সভ্যতা ও চীন সভ্যতা গৌতমবুদ্ধের অবদানকে অস্বীকার না করে অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন ভারতের স্বাধীন জাতীয় পতাকায় "অশোকচক্র" স্থাপন করে এবং চীনদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সভ্যতা ও শিক্ষা প্রণালীর মাধ্যমে। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক ইউয়েন চোয়াঙ ৬৩৯ খৃষ্ঠাব্দ থেকে ৬৪৫ খৃষ্ঠাব্দের মধ্যে পুন্ড্রবর্ধন (বগুড়া) পরিভ্রমন করেন। তিনি তখন বাংলাদেশে অনেক বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান ছাড়া ও নগরের (বগুড়া) কাছে এক বিরাট বৌদ্ধ বিহার দর্শন করেন।

বুদ্ধাব্দ কে বাদ দিয়ে প্রতিদিন সকালে আকাশবানীতে সংস্কৃত ভাষায় সংবাদ পরিবেশনের সময় শকাব্দ ঘোষনা করা হয়। অথচ "বন্দে মাতরম" শীর্ষক কবিতার লেখক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, "তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ (বুদ্ধ) অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তারপূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, - আমি তোমাদের রক্ষা করিব।"

      অষ্টম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল সাধক চর্যাকারগনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। যার দূর্ণিবার জীবন্ত স্রোত হাজার বছরের সংকোচের জগদ্দল পাথর ভেঙ্গে এলো আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র"য়ারীর উনিশশো বায়ান্ন সাল থেকে আজকের বাঙালী ঐতিহ্যমন্ডিত আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালী জাতি আবার নতুন সহস্রাব্দের আলোকে আবিস্কার করবে বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন বৌদ্ধ চর্যাপদের প্রতিটি শব্দ ও তার গভীর মর্মার্থকে। কারণ দেশ ও ভাষা বাঙালীর কাছে নিরেট বাস্তব, অতিশয় অপরিহার্য।  চর্যাপদ পাঠ এবং গবেষণার সময় মনে হবে বাংলা কেবল একটি দেশ  নয়, সে একটি সভ্যতা, একটি সংস্কৃতি, একটি অপাপবিদ্ধ জীবনাদর্শ বা জীবন দর্শনের প্রতীক, যার মর্মবাণী হল বিশ্ব মানবতাবাদ।  
 

      গৌতমবুদ্ধ  প্রাচীন দক্ষিন এশিয়ায় (ভারতীয়) বর্ণমালার রক্ষক বা মহাজনক

      বাংলা বর্ণমালা যে কতো পুরানো তা ইতিহাস আমাদেরকে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । অধ্যাপক হরলাল রায় তিনি তাঁর লেখা 'চর্যাগীতি'  গ্রন্থের দশম পৃষ্ঠায় লিখেছেন, 'ধর্মকোলাহলেই বাংলা সাহিত্যের পুষ্টি ও বিকাশ। বাঙালী সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। "টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।" নিজ বাসভূমেই পরবাসী করে দিয়েছে বাঙালীকে। ইতিহাসের এই অন্ধকার যুগে তবু বাঙালী দুহাতে অনন্ত সমস্যার পাথর সরিয়ে জীবনের যাত্রা পথ ধরে হাঁটতে শুরু  করেছিল অন্যতর আলোর লক্ষ্যে। 

মানবদেহ বাংলাদেশ এবং চর্যাপদে বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধান

      ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক শেখড়ের সন্ধানে ইহা ও এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উলেখযোগ্য যে, আমরা 'বৌদ্ধ চর্যাপদের' সন্ধান পেলাম আজ থেকে ১০২ বছর আগে। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালায় প্রাচীন পান্ডুলিপির সন্ধান করতে গিয়ে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহোদয় উক্ত বৌদ্ধ চর্যাপদের মরমী সংগীতগুলো আবিস্কার করেন এবং ভাষা আন্দোলনের আলোকে চর্যাপদ সন্ধানের ( ১৯০৭- ২০০৭) শতবার্ষিকী ছিল।  পরে  "চর্যাপদ" সম্বন্ধে গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন, ডঃ সুনীতি কুমার চাট্টোপাধ্যায়, ডঃ  মোহাম্মদ শহীদুলাহ, ডঃ প্রেবোধ চন্দ্র বাগচি, ডঃ রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ডঃ সুকুমার সেন,  ডঃ মনীন্দ্রমেহন বসু, ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্ত, ডঃ তারাপদ মুখার্জী, ডঃ অতীন্দ্র মজুমদার, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিত পার কভিরনে সহ আর, ডঃ আহমদ শরীফ, ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ হাসনা জসীমউদ্দীন (মওদুদ) ও অনেক বিখ্যাত গুণীজন। মুনিদত্ত চর্যাপদ তিব্বতি ভাষা থেকে সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেন।

সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন ইংরেজী সংবাদপত্রে  আমরা পড়েছি "বুড্ডিজম ওন দি বেষ্ঠ রিলিজিয়ন ইন দি ওয়ার্ল্ড এওয়ার্ড।" সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে ৭ই জুলাই ২০০৯; আন্তর্জাতিক সর্বধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা উন্নয়ন সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ (আই.সি. এ.প. উ.এস), "বৌদ্ধধর্ম কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে  বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে পুরস্কৃত করেছেন। কারন সন্ত্রাসের বিশ্বায়ন ধর্ম না রাজনীতি? আজকের মতো বাঙালি জাতির প্রাচীন বাংলাদেশের সর্বশ্র্ষ্ঠে ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম। প্রায় হাজার বছর আগে ব্রাহ্মণ, হিন্দু শাসকগণ ও বখতিয়ার খিলজির হিংসার আগুনে বৌদ্ধধর্ম জ্বলে পুড়ে গেল। অহিংসায় মানুষের পরিচয়। হিংসায় পাশবিকতার পরিচয়।  জনতার প্রশ্ন :  ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর  ( গৃহীনাম : রাজপুত্র চন্দ্রগর্ভ, জন্ম ৯৮২  মৃত্যু তিব্বতে ১০৫৪) তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল?  ১২০১ সালে বখতিয়ার খিলজির  হিংসার আগুন পাল সম্রাট ধর্মপালের (৭৭০ -  ৮১০) প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (বিহার, ভারত) ধ্বংস করে দিল। 

      শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ বিশ্বের বৌদ্ধ জাতি সহ বিশ্বমানবতায় আলোকিত সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। খৃষ্ঠপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে কপিলাবাস্তু নগরে মহামানব গৌতমবুদ্ধ রাজপুত্র রূপে এ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম গ্রহন করেছিলেন। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি পরমজ্ঞান বুদ্ধত্ব লাভ করেন এবং ৮০ বছর বয়সে এই বুদ্ধপূর্ণিমা তিথিতে তিনি মহাপরিনির্বান লাভ করেন। এই ত্রিস্মৃতিতে সমুজ্বল আজকের মহান বুদ্ধ পূর্ণিমার ২৫৫৪ বুদ্ধাব্দ (বুদ্ধবর্ষ)। বাংলা ভাষা বৌদ্ধ চর্যাপদের অবদান হলে, বঙ্গাব্দ বুদ্ধাব্দকে বাদ দেয় কেমন করে? ইতিহাস তো রাজনীতির হাতের পুতুল নয়।  

বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপের ভাবমূর্তি 

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চরম বিকৃতির মতো বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের সময় গৌতমবুদ্ধকে বাঙালির ইতিহাস থেকে সম্পূর্ন বাদ দিয়ে  হিন্দু মুসলমান ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি টরন্টোর বাংলাদেশী সাপ্তাহিক "আজকাল" (১১ আগষ্ট, ২০০৯) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় ইংরেজি সংবাদে আমরা পড়েছি, "বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর "সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের  "পুরস্কার লাভ করেছেন।"  প্রতœতাত্বিক, ভূতাত্বিক, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ব ও ভাষাতত্বের আলোকে বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং  বৌদ্ধদের অবদানে চর্যাপদ এবং আজকের ২৫৫৪ বঙ্গাব্দ  (১৪১৭ নয়)। অথচ বিদেশি শাসকগণ দিলীর সিংহাসনে বসে বঙ্গাব্দের নব সংস্করন প্রবর্তন করেন এবং উক্ত আইনের পরিনামফল আজকের ১৪১৭ বঙ্গাব্দ ট্রাজেডি। বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনে দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ বিরাজমান, যিনি  ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন।   

সহজ ভাষায় বৌদ্ধ বিহার, মসজিদ, চার্চ ও বিভিন্ন অহিন্দু উপাসনালয় সমূহে হিন্দু রাজনীতি বেদখল করার ক্ষমতা পেয়েছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, স্বয়ং গৌতমবুদ্ধ যেখানে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন সেই বৌদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির বেদখল হয়ে যাওয়াটা মেনে নিলে বৌদ্ধধর্ম ও জাতির গুরুতর অঙ্গহানি হয়ে যায়।  

 ১৯২৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ের খোঁজে ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুলাহ (ইংরেজীতে তাঁর পি.এইচ. ডি.  থিসিসি ছিল) 'বুড্ডিষ্ট মিষ্টিক সংস (বা বৌদ্ধ চর্যাপদ)' শীর্ষক বই লিখেছেন এবং বলেছেন, "আমরা বলিতে পারি যে বৌদ্ধগানই (চর্যাপদ) যেমন একদিকে গজলের, তেমনি অন্যদিকে বৈষ্ণব পদাবলীর মূল উৎস।" ভাবতে ও আশ্চর্য লাগে যে ১৯০৭ সালের আগে বাংলাদেশে বাংলা ভাষার প্রথম গ্রন্থ 'চর্যাপদ' খুঁজে পাওয়া যায় নি। বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংসের বিভিন্ন কারন সমূহ (হিন্দু রাজা শশাঙ্ক, ৭ম শতাব্দী ও হরিসেন ও হলায়ুধ মিশ্র; ১২শ শতাব্দীর মৌলবাদ ও  বখতিয়ার খিলজির মৌলবাদ সন্মিলিত ভাবে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে।) জনপ্রিয় লেখক কথাশিল্পী শওকত আলী তিনি তাঁর লেখা 'প্রদোষে প্রাকৃত জন' এবং 'দুষ্কালের দিবানিশি' গ্রন্থদ্বয়ে ব্যাখ্যা করেছেন।  বাংলাদেশের  বিক্রমপূরের বজ্রযোগীনি (কালী বা তারা দেবী বোধিসত্ত্ব) গ্রামের অতীশ দীপংকর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের প্রতিনিধি এবং অতীশ দীপংকরের বিশ্ববিজয়ী স্মৃতি বাংলাদেশের সর্বকালের আলোকিত সারস্বত সমাজ প্রতিষ্ঠার উৎস 'চর্যাপদ' বাংলা ভাষার প্রথম বই এবং এবং ২৫৫৫ বুদ্ধাব্দই আজকের বঙ্গাব্দ। 

 বৌদ্ধরাজ্য  আরাকান রাজ সভায় বাংলা সাহিত্যের সন্মান থাকলে ও বাংলা ভাষা আরবীয় এবং পাকিস্তানের মুসলমানের ভাষা নয় বলে ১৯৪৮ সালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসেছিলেন বাঙালি জাতির মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে ঊর্দূ ভাষা শেখাতে। বাঙালি কোন ভাষায় কথা বলবে এবং বঙ্গাব্দ  কখন থেকে শুরু হবে তা নির্নয় করার অধিকার অবশ্যই বাঙালি জাতির আছে। বাঙালি জাতির বঙ্গাব্দ অবাঙালি শাসকগণ কেন প্রবর্তনের নির্দেশ দেবে?  ইংরেজিতে ঢাকা বানান ভুল ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তা শুদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ঠ বাংলাদেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ত্রিশলক্ষ শহীদ জনতার রক্তের বিনিময়ে একাত্তরের ডিসেম্বরে হাজার বছরের বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর ও বঙ্গাব্দ নিয়ে আজ ও কোন গবেষনা হয়নি । লেখক শওকত আলী তিনি তাঁর লেখা "প্রদোষে প্রাকৃতজন" গ্রন্থে বখতিয়ার খিলজির বাংলাদেশ আক্রমনের সময় ১২০২ সালে মহামস্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র ও হিন্দুমন্ত্রী হরিসেন কর্তৃক "বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের" ভয়াবহ বর্ণনার মাধ্যমে তিনি তাঁর উপন্যাসে বিচার বিশেষন করেছেন।  বুদ্ধগয়ার 'মহাবোধি মন্দির' দখল করে বৌদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনের "অশোক কক্ষ" এবং ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্ম সঞ্জাত "অশোকচক্র"  ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু শাসকগণ ঐতিহাসিক কারনে সগৌরবে ব্যবহার করছেন "গরীব দলিত জনতা নির্যাতন" এবং মানবাধিকার সনদ গ্রাহ্য না করে।

৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এক অভূতপূর্ব রক্তাক্ত বিষাদ সিন্ধু। কিন্তু একই সঙ্গে ভারতের লকেèৗ হাইকোর্টের বে-আইনি রায় সচেতন শান্তিকামী জনতা ও নাগরীকদের হতবাক করে দিয়েছে। মূল বিষয় থেকে শতভাগ সরে এসে ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০১০ লকেèৗ হাইকোর্ট অভিযুক্ত (সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কল্যান সিংহ সহ) ৬৮ জন  হিন্দু নেতাকে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি না দিয়ে রামজন্মভূমির জন্য হিন্দু সংস্থা সমূহকে সমস্ত বাবরি মসজিদের দুই ভাগ জমি প্রদান করলেন এবং মাত্র একভাগ জমি বাবরি মসজিদের জন্য  রেথেছেন। এই ভয়ঙ্কর ধাঁধাঁর আবর্তে ভারতীয় জনতাকে আর কতদিন ফেলে রাখেবেন , হে মহামহিম আদালত? ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকার রক্তাক্ত, ক্ষতিগ্রস্থ ও নির্যাতিত মুসলমানদের তাঁদের 'বাবরি মসজিদ' ফিরিয়ে দেয়া যে রাষ্ঠ্রের কর্তব্য ও দায়িত্ব  এই সহজ কথাটি পর্যন্ত ভুলে গেছে। 'আল্লাহ উপনিষদের'  আলোকে রামের জন্মভূমির উপর আল্লাহের মসজিদ প্রতিষ্ঠা অন্যায় হলে ভারতীয় হিন্দু পন্ডিতগণ সম্রাট আকরের আমলে 'আল্লাহ উপনিষদ' রচনা করে কি ইসলাম ধর্মকে  হিন্দুধর্মের  লেজুড় বানিয়েছিলেন? জাতির পিতা গান্ধীজির পরম প্রিয় ভজন ছিল, "ঈশ্বর আল্লাহ তেরে নাম / সবকো সদ মতি দেয় ভগবান।"  বিশ্ববিধাতার  কাছে হিন্দু রাজনীতবিদগণ ও মহামহিম আদালতের কি সদ মতি নেই?  

      প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দও ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে  "গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়" আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। ধর্মচক্র মূদ্রা বা ভূমিস্পর্শ মূদ্রায় বজ্রসত্ত্ব বা বুদ্ধকে বর্ণনা করার মতো কলম, অথবা  এঁকে দেখাবার মতো তুলি আমার নেই। শুধু আমি আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের বুদ্ধমূর্তির চিত্রে এমন একটা কিছু আছে যার জন্যে  ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাব বার ফিরে ফিরে এঁকে দেখলে ও চোখ ক্লান্ত হয় না, পীড়িত হয় না। বাংলাদেশে একাধিক বুদ্ধমূর্তি আছে যা নাকি শুধু বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে বানানো নয়, যেন তাঁর মধ্যে হাজার বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে শিল্পীর অনুক্ত কথা, একটি অপ্রকাশিত ধ্যানের মন্ত্র। যা খোলা নয়, ঢাকা। মন বলে, "প্রতিদিন আমি হে জীবন স্বামী / দাঁড়াব তোমার সন্মুখে।" তবু তা যে অছে তা অনুভব করা যায়, উপলব্ধি করা যায় পবিত্র মন ও শ্রদ্ধা নিয়ে উক্ত বুদ্ধমূর্তির সামনে এসে দাঁড়ালে।

        সেইদিনের ঐতিহাসিক স্মৃতিখন্ড পবিত্র বুদ্ধ তীর্থভূমি যেখানে গৌতমবুদ্ধ তাঁর অমৃতময় ধর্ম প্রচার করেছিলেন সম্রাট অশোক সেই মহান পুণ্যভূমিকে স্মরনীয় করার জন্যে  বৌদ্ধবিহার (বামু বিহার) ও বুদ্ধচৈত্য নির্মান করেন এবং আজ ও সম্্রাট অশোকের "প্রাচীন বাংলা ভাষায়" শিলালিপিটা কলকাতা জাদুঘরে বিরাজমান। প্রসঙ্গত: পাকিস্তানের রাজনীতিতে কায়দে আযম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ আরবীয় ইসলাম রক্ষার নামে বাংলাভাষা সমূলে ধ্বংস করার রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস চিন্তা করতে গেলে অনেক বাঙালি পাঠকদের মনে পড়ে যায় কথাশিল্পি  শওকত আলীর হদয়বিদারক লেখা (১) দুষ্কালের দিবানিশি এবং (২) প্রদোষে প্রাকৃতজন শীর্ষক গ্রন্থদ্বয়ের বাংলাদেশে লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র,  সেনাপতি হরি সেন ও বখতিয়ার খিলজি কর্তৃক সন্মিলিত বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের ইতিকথা।  আজ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হয়ে ও বাংলা লিপি এবং ভাষার জন্যে প্রান দান করার পর শহীদদের জন্যে জাতীয় শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীন বাংলাদেশের জনম সার্থক হয়েছে। জয় বাংলা।

      (উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় খ্যাতনামা লেখক সোনা কান্তি বড়–য়া বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা এবং জাতিসংঘে কানাডিয়ান বৌদ্ধ প্রতিনিধি। )
http://www.news-bangla.com/index.php?option=com_content&task=view&id=6672&Itemid=47

প্রবন্ধ ১...
এই আন্দোলন কি পরের ধাপে পৌঁছবে
বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র এখন শাহবাগ। ঢাকার এই চৌরাস্তার মোড়ে তরুণ ব্লগারদের গণজাগরণ-মঞ্চকে ঘিরে লক্ষ মানুষের ঢল নামছে প্রতিদিন বিকেল হতেই। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাই থাকছেন গভীর রাত পর্যন্ত। হাজার কয়েক তরুণ-তরুণী রাস্তাতেই রাত কাটাচ্ছেন। এই জাগরণের ঢেউ লেগেছে সারা দেশে। মফসস্লে, একেবারে উপজেলা পর্যায়েও, তরুণদের উদ্যোগে জাগরণ-মঞ্চ তৈরি হয়েছে এবং সব বয়সের মানুষ তাতে যোগ দিচ্ছেন।
বোঝা যাচ্ছে, ইতিহাসের আরেকটি সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ ইতিহাসের ভাঙাগড়ায় অংশ নিতে বারবার রাজপথে নেমে এসেছে। রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন তরুণদের ওপর কেন এত ভরসা মানুষের? কেননা, বার বার তাদের আশাভঙ্গের কারণ হয়েছেন গতানুগতিক ধারার রাজনীতিবিদরা বাম-ডান-মধ্যপন্থী সকলেই। এই আনকোরা তরুণদের বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তা এবং আপসহীন অবস্থান তাদের আকৃষ্ট করেছে। মূল একটি দাবিকে ঘিরেই তাদের আন্দোলন, সেটি স্পষ্ট ভাবেই তাঁরা বলছেন। তাদের যে কোনও গোপন অ্যাজেন্ডা নেই অর্থাৎ মাঝপথে আপস করে আন্দোলনের ইতি টানার সম্ভাবনা যে নেই, সেটাও মানুষকে আশ্বস্ত রাখছে। 
বাংলাদেশের মানুষ বারবার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জেগে উঠেছে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের কথা বলা যায় নজির হিসেবে। প্রতিবারই ঐতিহাসিক বিজয়ও অর্জিত হয়েছে। এ বারেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ ঘটে চলেছে দেশে।

পরপ্রজন্ম। শাহবাগ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৩।
কিন্তু এ বারে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রায় চল্লিশ বছর পরে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণকারী দল আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন সরকার রয়েছে ক্ষমতায়। প্রশ্ন হল, আইন এবং ব্যবস্থার অধীন একটি নিয়মতান্ত্রিক সরকার তার অবস্থান থেকে এ দাবি কী ভাবে পূরণ করবে। অতীতের সব গণ-জাগরণ, গণ-আন্দোলনে সরকার ছিল প্রতিপক্ষ। তাকে প্রতিরোধ করে, এমনকী অপসারণ করেই জনতার বিজয় এসেছে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে যারা বিচারাধীন আছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ বিচারে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে আওয়ামি লিগ ও তার শরিকদের আপত্তি বা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তরুণ এবং তাদের সঙ্গে লক্ষ মানুষ সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতিকে একাত্তরের অবস্থানে ফিরিয়ে এনেছে। তাদের অন্তরে নিহত বুদ্ধিজীবী, ত্রিশ লক্ষ শহিদ বা নির্যাতিতা নারীদের ফরিয়াদ যেন তরতাজা স্মৃতি। সেই সঙ্গে আবেগপ্রবণ লেখনী আর জীবন্ত সব ছবির মাধ্যমে রাজপথে মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত ঢলকে উজ্জীবিত রাখছে দেশের সকল গণমাধ্যম। বিভিন্ন পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলের সার্বক্ষণিক কাভারেজ আন্দোলনের উদ্দীপনাকে শুধু জিইয়ে রাখেনি, পুরো জাতিকে এর মধ্যে শরিক রেখেছে। এ ভাবে একটা জাতীয় ঐক্যও তৈরি হচ্ছে। একাত্তরে যেমন কিছু পাকিস্তানপন্থী ছাড়া বাকি সকলেই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে আজ গণমাধ্যম ও রাজপথে সেই অবস্থারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু হয়তো প্রকৃত বাস্তব এত সহজ ও সরল নয়। এ পর্যায়ে সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন উঠবে, এ আন্দোলনের সুফল কে কী ভাবে পাচ্ছেন? এবং রাজপথ অবরোধ করে এই যে আন্দোলন, তার সমাপ্তি টানা যাবে কী ভাবে?
অতীতের সব গণ-আন্দোলনের মতোই এ পর্যন্ত মনে হচ্ছে এ বারও, সরকারে থেকেও আওয়ামি লিগই সুফল সবচেয়ে বেশি পাবে। একতরফা এ সুফল ভোগ করার কারণ দেশের অপর বড় দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে পরিচিত জামায়াত-এ-ইসলামির সঙ্গে জোট এখনও বজায় রাখছে। জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার যে অভিযোগ, তা নিয়েও দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করতে তারা উৎসাহী নয় বলেই মনে হয়। আর যে ছোট দলগুলো আওয়ামি লিগের সঙ্গে জোট রয়েছে, তাদের সামর্থ্য নেই আলাদা ভাবে এর সুফল ভোগ করার।
তবে বিএনপি এই অবস্থানেই থেকে গেলে এ আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাধান কঠিন হয়ে যাবে। বিএনপি'কে পাশে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জামায়াতের প্রত্যাঘাতের তীব্রতা বাড়ছে। বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের অস্থির ও সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির এটাই হোক চূড়ান্ত পর্ব, এমনটাই অনেকে চাইছেন। তরুণদের আন্দোলন সে রকম একটি সম্ভাবনার দুয়ার কিন্তু খুলে দিয়েছে। তবে সে দায় তরুণরা একক ভাবে তা নিতে পারবে না। আর অরাজনৈতিক তরুণদের সৃষ্ট এ আন্দোলনের ফল হিসেবে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে চূড়ান্ত বোঝাপড়ার দায় রাজনৈতিক দল, বিশেষত আওয়ামি লিগ এখনই নিতে কতটা প্রস্তুত এবং কতটা ইচ্ছুক, তা-ও স্পষ্ট নয়।
শাহবাগ আন্দোলনের দাবিগুলোর রাজনৈতিক সারসংক্ষেপ করলে মূল একটি দাবিই দাঁড়ায়: বাংলাদেশের রাজনীতির আদর্শিক ভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই চেতনার মূল উপাদান হল ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্র। এখন হয়তো এর সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক স্বাধিকার রক্ষার প্রসঙ্গটিও আসবে। এতে জামায়াতের সঙ্গে আর না জড়িয়ে চলমান আন্দোলনে শামিল থাকার কৌশল নিলে এ গণ-জাগরণের এ পর্যায়ে সুষ্ঠু সমাপ্তি টানা যেত।
কিন্তু দলের ইতিহাসের প্রভাবে আচ্ছন্ন নেতৃত্ব এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে না। গঠন-পর্ব থেকেই বিএনপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামি লিগ। ফলে এর বিপরীতে রাজনীতি দাঁড় করাতে গিয়ে জিয়াউর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা পুরনো মুসলিম লিগের পথে হেঁটেছেন, এমনকী মাঠ-পর্যায়ে আওয়ামি লিগকে ব্যতিব্যস্ত রাখার জন্যে জামায়াত শিবিরের পুনরুজ্জীবনে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে গেছেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির ইতিহাস মূলত বিএনপি ও আওয়ামি লিগের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ক্ষমতার জন্য তীব্র লড়াইয়ের ইতিহাস। তরুণদের চলমান আন্দোলন এই সংঘাত ও অসহিষ্ণুতার অবসান ঘটানোর একটা সুযোগ তৈরি করেছে। সেটা কাজে লাগাতে হলে বিএনপি'কেই পরিবর্তনের পথে বড় পদক্ষেপ নিতে হত। কিন্তু তারা ইতিহাসের ডাক উপেক্ষা করে অভ্যস্ত পথেই যেন চলতে চাইছে। যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিটাকে নিয়ে রীতিমতো গণ-আন্দোলন গড়ে তুলে তরুণরা বুঝিয়ে দিয়েছে যে, এটি কেবল তাদের দাবি নয়, এটি মোটামুটি বাংলাদেশের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি এ ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার একটি সহজ কারণ হল সাধারণ মানুষ গৌরবের অংশীদার হতে চায়, গ্লানির বোঝা বহন করতে চায় না। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য থেকে এ রকমই ধারণা হয়।
বিএনপি সাধারণ মানুষের এই ভাবাবেগকে উপেক্ষা করে জামায়াতকেই সমর্থন দিয়ে গেলে শাহবাগের আন্দোলনকে দীর্ঘমেয়াদে টেনে নেওয়ার প্রশ্ন দেখা দেবে। আর তাতে যে উদ্যোগটি নির্দলীয় স্বতঃস্ফূর্ততার জন্যে জনগণকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিল, তার পক্ষে সে চরিত্র ধরে রাখা হবে কঠিন। ঢাকার বাইরে অনেক জায়গাতেই আওয়ামি লিগ বা সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সহযোগিতা ছাড়া আন্দোলনকে জামায়াতি প্রত্যাঘাতের ঝাপটা থেকে রক্ষা করাই হবে মুশকিল। এই সূত্র ধরেই বলা যায়, এই আন্দোলন আওয়ামি লিগের জন্যে চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করে সুযোগও তৈরি করেছে। সুযোগটা হল কালো টাকা, পেশিশক্তি, দখলদারি ও টেন্ডারবাজি অর্থাৎ ক্ষমতার প্রতাপ আর দুর্নীতির গাঁটছড়া-বাঁধা যে গতানুগতিক দূষিত রাজনীতির প্রকোপ বেড়েছে, তা থেকে দলকে সম্পূর্ণ বের করে আনা। দ্বিতীয়ত, এ আন্দোলন জাতীয় জীবনে যে বৃহত্তর ঐক্যের বাতাবরণ তৈরি করেছে, তাকে মূল্য দিয়ে সংকীর্ণ স্বার্থ-বিবেচনা বাদ দেওয়া। আওয়ামি লিগ বড় দল, তাই তার মধ্যে নানা ধরনের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সমাবেশ। ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির আবহে নানা স্বার্থের কাছে তাদের রাজনীতি বাঁধা। তরুণদের আন্দোলন জানান দিচ্ছে, এই গতানুগতিক ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতি আর চলতে পারে না।
এই দাবির দিকে লক্ষ রেখে বিএনপি এবং আওয়ামি লিগ দেশের দুই প্রধান দল যদি সময়ের দাবি অনুযায়ী সৃজনশীল হতে না পারে, তবে এ আন্দোলনও শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের নতুন কোনও তাৎপর্য বয়ে আনতে পারবে না। তবে, সেই হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে 'ত্রাতার' ভূমিকায় নামার জন্যে সামরিক বাহিনী যাতে কোনও সুযোগ করে না নিতে পারে, সেই দিকে নজর রেখে তরুণ প্রজন্মকে প্রয়োজনে কৌশল পরিবর্তন করতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন চালানোর কথা ভাবতে হবে।

লেখক ও সাংবাদিক
http://www.anandabazar.com/21edit3.html

চার দশক পর এটুকু পারাই তো বিরাট অর্জন
ঢাকার একটি ব্যস্ততম সড়কের মাঝখানে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এসে দাঁড়ালেন প্রথমে কয়েকশো ব্লগার, তার পর আরও হাজার খানেক মানুষ। তাঁদের হাতের ব্যানারে লেখা "যুদ্ধাপরাধীদের এই রায় আমরা মানি না, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই।" তাঁরা নিজেরাও তখন ভাবতে পারেননি, কী ভাবে এই জটলা থেকে তৈরি হয়ে উঠবে একটা গোটা আন্দোলন, লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগ দেবে তাতে, বিশ্বের সাম্প্রতিক সামাজিক আন্দোলনগুলির (New Social Movements) তুলনা টানা হবে এর সঙ্গে। হঠাৎই মানুষের মুখে মুখে বদলে গেল শাহবাগের নাম: 'প্রজন্ম ৭১ চত্বর', কিংবা তহরির স্কোয়্যারের অনুসরণে, 'শাহবাগ স্কোয়্যার'। 
শুরুতে এঁদের পিছনে কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। অথচ এঁদের দাবিগুলি প্রথমাবধিই রাজনৈতিক। একটা কথা অবশ্য ব্লগাররা ভাল করেই বুঝে গিয়েছিলেন: রাষ্ট্রক্ষমতা অনুকূল না থাকলে এই লড়াই শুধু গানবাজনা ও জমায়েতের শক্তির ভিত্তিতে বেশি দূর আগাতে পারবে না, তাই ক্রমে দেখা গেল, রাজনৈতিক শক্তির অপ্রত্যক্ষ সাহায্য নিতে তাঁরা মোটেও দ্বিধা করলেন না। ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ এই আন্দোলনকে স্বাগত জানাল। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রথমে বিরোধিতা করলেও শেষে আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে এল, যুক্তি দিল, আন্দোলনকে বর্তমান সরকার "ব্যবহার করছে" তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মূল আন্দোলনকে চাপা দেওয়া জন্য। আর প্রধান বামপন্থী দলগুলি তো এর সঙ্গে প্রথম থেকেই এককাট্টা। দেখা গেল, জনজাগরণের বেগ যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য রাষ্ট্রের যথেষ্ট আনুকূল্য: মিউনিসিপ্যালিটি ব্যবস্থা করল চলন্ত 'টয়লেট কার'-এর। সশস্ত্র আক্রমণ বা বোমা হামলা আটকানোর জন্য সিসিটিভি, মেটাল ডিটেক্টর-সহ তীক্ষ্ণ নজরদারির ব্যবস্থা করল সরকার।

এখন পর্যন্ত এই আন্দোলন বহু দল-বহু মতের প্ল্যাটফর্ম, যার ন্যূনতম ভিত্তি হিসেবে ধরা যায় তিনটি দাবিকে: ১) সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও তাদের সর্বোচ্চ দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) দান, ২) যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত-এ-ইসলামিকে নিষিদ্ধ করা, ৩) জামাত-এর হাজার হাজার সহযোগী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করা। তবে প্রথম দাবিটিই মূল। জামাত-এ-ইসলাম ও বিএনপি-র অঙ্গ দুই ছাত্র সংগঠন (জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামি ছাত্রশিবির) ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠন এবং দুটি ব্লগার গোষ্ঠীর দুই প্রতিনিধি এর প্রধান অংশীদার। 
আন্দোলনের মূল দাবিটি বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে এত গভীর ভাবে জড়িত যে গোটা দেশের মানুষকেই তা নাড়া দিয়েছে, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাঁরা জড়ো হয়েছেন শাহবাগে। বাংলাদেশের এখনকার তরুণ প্রজন্ম মূলত মুক্তিযুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া ছেলেমেয়েরা তারা যে দলে দলে যোগ দিয়েছে তাই নয়, 'ট্র্যাডিশনাল' নেতৃত্ব ও সংগঠনগুলিকে পাশে সরিয়ে রেখে নিজেরা প্রথম সারি দখল করেছে। যে ছেলেটি কখনও রাজনীতি করেনি, কিংবা রাজনীতির প্রতি যার এক ধরনের তীব্র অনীহাই এত দিন টের পাওয়া যেত, সেও কিন্তু এখানে এসেছে বিনা দ্বিধায়। অর্থনীতি বা রাজনীতির দীর্ঘমেয়াদি জটিল বিষয়গুলি বা ক্ষমতার জটিল লড়াই ইত্যাদি কিছুই তার কাছে অত জরুরি নয়, সবচেয়ে জরুরি তার স্বদেশের জন্মের পিছনে যে মুক্তিযুদ্ধের কথা সে জানে, জামাত-রাজাকার-আলবদরদের বিচার শেষ করে সেই মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা। জন্মাবধি শুনে-আসা বহু গল্প, বহু অভিজ্ঞতা, বহু দুঃখ-প্রতিহিংসা-বীরত্বের ব্যক্তিগত ও জাতীয় বাস্তবের নির্যাস হয়ে উঠছে তাদের একটিমাত্র স্লোগান: ফাঁসি-ফাঁসি-ফাঁসি চাই! স্লোগানটি নিষ্ঠুর, মানবতাবাদীদের মোটেও এ স্লোগান শুনতে ভাল লাগবে না, কিন্তু বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে এই স্লোগান এখন অস্তিত্বের শিকড়ের টান, তাদের একমাত্র প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সেন্টিমেন্ট। তাই স্বামী-স্ত্রী ছোট-ছোট শিশু নিয়ে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্দ্বিধায় বলছেন, "আমি চাই আমার বাচ্চারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে ধারণ করেই বেড়ে উঠুক।" হিংসা ঠেকানো যায়নি, কয়েকটি হত্যা ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে: শান্তিপূর্ণ পথে এই আন্দোলনকে কী ভাবে পরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, জল্পনা চলছে।
ভবিষ্যতের প্রশ্নে একটা কথা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে একটা অদ্ভুত গোঁজামিল আছে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্র কোনও বৈষম্য করবে না এ কথা উল্লেখ করেও কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামকেই গ্রহণ করেছে। অন্য অনেক পুঁজিবাদী দেশের মতোই এ দেশেও এখন দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা, দুই দলেরই অর্থনৈতিক আদর্শ মোটের উপর কাছাকাছি। তবে একটি দলের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিকাশের দীর্ঘ ইতিহাস আছে, অন্য দলটির জন্ম সেনাশাসনের ছত্রছায়ায়, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর জোরালো সাহচর্যের মধ্যে। এমনকী জামাতের দুই যুদ্ধাপরাধীকে (এই মুহূর্তে বিচারাধীন) মন্ত্রিসভায় ঠাঁইও দিয়েছিল তারা। এ দিকে, আওয়ামি লিগ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় গঠিত দল হলেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে অনেকটাই সরে গিয়েছে, এবং ভোটের স্বার্থে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলিকে (এমনকী জামাত-এ-ইসলামিকেও) অনেক ক্ষেত্রে 'কনসেশন' দিয়েছে। 
বর্তমান আন্দোলনের অভিঘাতে এই জায়গাটায় পরিবর্তন ঘটে কি না, সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। এই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধী-প্রশ্নে বিএনপি থমকে দাঁড়িয়েছে, আওয়ামি লিগও বর্ধিত দৃঢ়তা দেখাচ্ছে। এই আন্দোলন কোনও ভাবে জিইয়ে রাখলে, তরুণ প্রজন্মের মনে যদি আন্দোলনের মূল চেতনা কিছুটা শিকড় ছড়ালে আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে। 
বাংলাদেশের রাজনীতির আর একটি গলার কাঁটা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নটি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যদি যুদ্ধাপরাধী-বিষয়ে তাদের মত পাল্টিয়ে জামাতকে পরিত্যাগ করে, এবং আওয়ামি লিগও নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে কিছুটা এগিয়ে আসতে সম্মত হয়, তা হলে হয়তো ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এক ধরনের স্থিতিশীলতার সন্ধান মিলবে। জামাত তখন একা হয়ে পড়বে, নতুন প্রজন্মের দাবিগুলি পূরণ করা তখন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষে সহজতর হবে। বাইরের দেশের প্রভাবের বিষয়টিও ভুলে গেলে চলবে না। এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে ভারতের সমর্থন লক্ষ করা গেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের ভূমিকা তেমন স্পষ্টনয়। আচ্ছা, ভাবা যাক তো, যদি বাইরের প্রশ্রয় না মেলে? এই আন্দোলনের ভবিষ্যৎও যদি তত উজ্জ্বল না হয়? তবু একটা জিনিস তো থেকে যাবে। এই কয়েক দিনের মধ্যে যতটুকু মিলেছে, সেটা হারিয়ে যাবে না। এ এক বিরাট অর্জন: 'অপহৃত' বাংলাদেশকে চার দশক পর শাহবাগ চত্বরে আবার নতুন করে খুঁজে পাওয়া!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষক
http://www.anandabazar.com/21edit4.html

জীবনের সব ক্ষেত্রে বাংলার প্রয়োগে কেন আমরা কুণ্ঠিত?
অনুপম সেন
বাংলাদেশের বাঙালী জীবনে তিনটি দিনের ইতিহাস চিরকাল অবিনাশী অক্ষরে লেখা থাকবে। এই তিনটি দিন হলো : একুশে ফেব্রুয়ারি, ছাব্বিশে মার্চ ও ষোলোই ডিসেম্বর। একুশে ফেব্রুয়ারির তৈরি পথ ধরেই বা তারই ধারাবাহিকতায় এসেছে ছাব্বিশে মার্চ ও ষোলোই ডিসেম্বর। বস্তুত উনিশ শো বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেই প্রকৃত বাঙালী জাতীয়তাবাদের বীজ-এর উন্মেষ হয়েছিল। বাঙালী জাতিসত্তা বেশ প্রাচীন, কয়েক হাজার বছরের। অস্ট্রিক, নিগ্রোয়িড, মঙ্গোলয়েড, ককেশীয় প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর মিলন বা সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে এই মিশ্র জাতিসত্তা গড়ে ওঠে। উভয় . . .
বাংলা নিয়ে গ্লানিবোধ কেন
মুনতাসীর মামুন
'নাউ তোমাদের একটা ছং শোনাবে'-আমার মেয়ে যদি আমার সঙ্গে এ ভাষায় কথা বলত, তাহলে অবশ্যই সে চড় খেত। কোন সুস্থ পিতা-মাতা বা অভিভাবক বা সুস্থ সমাজ এ ধরনের ভাষা গ্রহণ করবে না। এটা অশুদ্ধ, বিকৃত, অশ্লীল। কিন্তু আজ আমার, আমাদের বাংলাদেশে কিছু ব্যবসায়ী এ ধরনের অশ্লীলতা ফেরি করতে চাচ্ছে স্মার্টনেসের নামে। ইংরেজি ভাষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে, গরিবদের সমাজ-অর্থনীতি থেকে হটিয়ে দেয়ার জন্য একটি নতুন এলিট শ্রেণী তৈরি করেছিল সামরিক স্বৈরশাসকরা। সেটি বৃদ্ধি পেয়ে তাদের থেকেই একটি শাখা তৈরি হচ্ছে, যাদের মূল লক্ষ্য . . .
একুশের পূর্ণাঙ্গ দাবি পূরণ কীভাবে সম্ভব
আহমদ রফিক
একুশে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২-সূর্য বিস্ফোরণের দিন। রাষ্ট্রভাষা বাংলাসহ একাধিক দাবিতে প্রত্যয়ের ঢেউ তোলা ফেব্রুয়ারি রক্তচিহ্নগুলো কবে মুছে গেছে, কিন্তু একুশে জেগে আছে 'হৃদয়ে একুশ' এই দীপ্ত শপথ নিয়ে। আছে তারুণ্যের গর্ব ও অহংকারে। এসব কিছুরই মূলভিত্তি 'শহীদ দিবস' ২১ ফেব্রুয়ারি (যা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও বটে) ও শহীদ মিনার। 'দিবস' ও 'মিনার' একুশের ভাষা আন্দোলনের অবদান হিসাবে আমাদের জাতীয় ও রাজনৈতিক জীবনের অনেক কিছুই ধারণ করে আছে যা প্রধানত সদর্থক চরিত্রের। . . .
শিখা চিরন্তন
শান্তনু কায়সার
১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি গৌরদাস বসাককে লেখা এক চিঠিতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, I should scorn the pretensions of that man to be called 'educated' who is not master of his own language-এই চিঠিতেই অন্যত্র তিনি লিখেছেন,Bengali is a very beautiful language, It only wants men of genius to polsh it up. তিনি আরও লিখেছেন, Such of us, owing to early defective education, know litte of it and have learnt to despise it, are miserably wrong. পৌনে দুইশ' বছরের আগে করা মন্তব্যকে এখনও সাম্প্রতিক . . .
কবিরউদ্দিনের সংসার
রকিবুল ইসলাম মুকুল
দূরে কোথাও কোথাও জ্বলছে সন্ধ্যাবাতি। শীতের এই শেষ সময়ে নরসিংহপুরের রাস্তাটা যেন বড় রুক্ষ হয়ে উঠেছে। দু'পাশে বাঁশঝাড়। দ্রুত বাইসাইকেলের প্যাডেল চাপছেন কবিরউদ্দিন। ক'দিন ধরেই ভাবছিলেন নরসিংহপুর বাজারে নিয়ে সাইকেলটা মেরামত করবেন। কে জানতো যে আজই বেরিয়ে পড়তে হবে? আলো আঁধারিতে দু'পাশের ঝোপঝাড়ে দু'একটি ঝিঁঝি পোকার ডাক ছাড়া শুনশান নীরবতা। প্যাডেলের কাঁই কুই শব্দটা যেন খান খান করে ভেঙ্গে দিচ্ছে এই শূন্যতাকে। বেলতলীর এই মাঠ পেরিয়ে মাইলখানেক গেলেই বড় রাস্তা। এবড়ো খেবড়ো পথ চলতে দু'একবার . . .
বাংলার সংঘবদ্ধ গণশক্তিই এর জবাব দেবে
কামাল লোহানী
অগ্নিগর্ভ শাহবাগ। উত্তাল জনসমুদ্র চতুর্দিকে। আবালবৃদ্ধবনিতার গগনবিদারী সেøাগান : 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই', 'ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ কর।' আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে উঠছে মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি : 'জয় বাংলা।' তারুণ্যদীপ্ত ছাত্র-যুবা অগণিত। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন চাকরিজীবী মহিলা-পুরুষ। এসেছেন গৃহিণী ঘর ছেড়ে রাজপথে। কেউ বা নিয়ে আসছেন রান্না করা খাবার হাতে। এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা এ বৃদ্ধ বয়সে কারণ তিনি ৪০টি বছর অপেক্ষা করেছিলেন এই প্লাবনের জন্যও। এসেছেন, আসছেন বার্ধক্যের . . .
প্রত্যাবর্তনের দিন
রফিকুর রশীদ
বহুদিন পর মোমিন উদ্দীন দেশে ফিরছেন। বহুদিন মানে কতদিন ভাবতে পারেন আপনারা? বহুদিন না বলে বহু বছর বলাই ভাল। সেই একাত্তরে তিনি দেশ ছেড়েছেন। সে কি আজকের কথা? সে এক ভয়ানক দুঃসময়। আশৈশব দেখেছেনÑবাড়ির দক্ষিণে চন্দ্রদিঘি বিলের বিস্তৃত থাবা এক সময় গুটিয়ে আসে, চোত বৈশাখ আসতে আসতে সারা বিলের পানি শুকিয়ে একবারে মাঝখানে অপ্রশস্ত এক গর্তে এসে জমা হয়। তখন মাছ ধরার মজা কত! জাল পলো, বড়শি বিত্তিÑ এসব অস্ত্রপাতি ছাড়াই স্রেফ খালি হাতে আনাড়ি বালকের পক্ষেও কাদা খুঁচে খুঁচে বেশ মাছ ধরা সম্ভব। মোমিন উদ্দীনও . . .
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও আমাদের অঙ্গীকার
সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী
বহু দেন-দরবার ও কূটনৈতিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে আমরা ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবটি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলাম। ফলে আমাদের অমর একুশে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও উদযাপিত হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশের জনগণ আজ তাদের স্ব-স্ব মাতৃভাষা রক্ষণ ও বর্ধনের জন্য অঙ্গীকার করে গেছেন। সারা জাতির জন্য আজ এক গৌরবময় দিন। প্রস্তাবের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ পৃথিবীর সব মাতৃভাষা রক্ষণের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালনেরও অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু আমাদের জাতির . . .
একুশের আলপনা
হাশেম খান
একুশের প্রভাতফেরি। খালি পায়ে-হেঁটে শহীদ মিনারে এবং ভাষা শহীদদের কবর-আজিমপুর কবরস্থানে ফুলের অর্ঘ্য নিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের পর থেকেই। ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-জনতা রাজনীতিবিদরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে দলে শহীদ মিনারে ও কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হতে শুরু করল। সেই যে শুরুÑতার ধারাবাহিকতা আজো চলছেÑ যতদিন বাংলাদেশ থাকবে এই প্রভাতফেরির সংস্কৃতি আবহমানকাল ধরে চলতে থাকবে। ১৯৫৩ সালে শহীদ মিনার ছিল ছাত্র জনতার হাতে তৈরি। সেই সময়ের মুসলিম . . .
একুশের আরেক মাত্রা
আহসানুল হক
একুশে কি শুধু ফুল, নগ্নপদ, হারমোনিয়াম ও সুরেলা কণ্ঠ? একুশে কি শুধু আনুষ্ঠানিকতা? আনুষ্ঠানিকতা থাকবে বৈ কি? যদি প্রয়োজনীয় গঠনমূলক কাজ দিয়ে তাকে পরিপূরণ করে নেয়া হয়। ভুললে চলবে না একুশের পথ বেয়ে এগিয়েছে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাসÑস্বাধিকার চেতনা, জেলজুলুম-রক্তদান, মুক্তিযুদ্ধ, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। একুশে আমাদের চেতনা-প্রচেষ্টা-সাফল্যের মাপকাঠি। একুশে, আমি মনে করি, আমাদের জবাবদিহিতার কাঠগড়া। প্রতিটি একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার খতিয়ান করতে গিয়ে একটা জায়গায় কিন্তু আমরা . . .
শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ ইতিহাসের পালাবদল
নুরুল করিম নাসিম
উনিশ শ' বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই হাজার তেরোর ২১ শে ফেব্রুয়ারি সময়ের হিসেবে ৬১ বছর, অর্থাৎ ছয়টি দশক এরই মাঝে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সময়ের ক্যানভাসে এই দীর্ঘসময় খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এক অর্থে একুশের বয়স একষট্টি। ইতোমধ্যে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজ আমরা আরেকটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছি। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমাদের যুদ্ধ ছিল পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে, তখন বাইরে শত্রু ছিল। আর আজকে এই দু'হাজার তেরো সালে ২১ ফেব্রুয়ারির ঊষালগ্নে আমাদের যুদ্ধ ঘরের শত্রুর সাথে। একাত্তরে . . .
পরাজিত হওয়ার জন্য জন্মাইনি
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
মতাদর্শিক লড়াইয়ের গুরুত্ব নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। গণতন্ত্রের নির্মাণে ভাবনার স্থান ও ভূমিকা অপরিসীম। এখানেই লড়াইয়ের ধারণার ওপর জোর : মতাদর্শ হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র, আর অন্যান্য লড়াইয়ের মাশুল এখানেই। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় মতাদর্শিক পূর্বশর্ত বিশ্লেষণ করা সেজন্য জরুরী : সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের, শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের মিত্রদের গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে জয়লাভ করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। মতাদর্শিক-রাজনৈতিক চিন্তার ভুবন হচ্ছে : সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হৃদয় ও মনকে গণতন্ত্রের দিকে ফিরিয়ে আনা। এটা ভেবে লাভ নেই : গণতন্ত্র . . .
হারিয়ে যাওয়া ভাষা
আন্দালিব রাশদী
ভেনিজুয়েলার অজপাড়ায় ক্ষীণতোয়া এক নদীর ধারে, একটি পাখি একটু পরপর কী যেন বলে যাচ্ছে। পাখির ভাষা যে এমন নয়। এক জার্মান প্রকৃতি বিজ্ঞানী ও অভিযাত্রী ঘুরতে ঘুরতে তখন সেই গ্রামে। তিনি পাখির কথা শুনে যাত্রাবিরতি করলেন। তিনি পাখির কথা বুঝতে চান। দীর্ঘসময় নিয়ে গবেষণা করে তিনি বের করলেন পাখির কথা এখানকারই মানুষের মুখের ভাষা থেকে তুলে নেওয়া। এখানকার মানুষের হলেও ভাষাটি কিন্তু এখনকার নয়। দু'শ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ভাষা। ভাষার নাম এটিওর্স। কিন্তু প্রশ্ন দু'শ বছর পরের পাখি তা শিখল কেমন করে? প্রকৃতি . . .
বরাক উপত্যকায় ভাষা আন্দোলন
অপূর্ব শর্মা
'জান দেবো তবু জবান দেবনা'- বাংলা ভাষার দাবিতে কাছাড়ের বাঙালিদের সেøাগান ছিল এটি- এ প্রত্যয়ের ব্যত্যয় ঘটেনি। জীবন দিয়েছিল তারা, জবান দেয়নি। ১৯৬১ সালের ১৯ মে বাংলাভাষার দাবিতে কাছাড়ের বাঙালিরা বলিদান দিয়েছিল ১১টি প্রাণ। সেই বলিদানের বদৌলতে তারা পেয়েছে মুখের ভাষা। বরাক নদীর উৎস ভারতে, সেই বরাক নদীই আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে সুরমা আর কুশিয়ারা নামে। বরাকের জলধারাই প্রবাহমান এই দুই নদী দিয়ে। তার গতি স্বাভাবিক নিয়মেই ভাটির দিকে। নদীর স্রোতধারাতো উজানে বয় না। কিন্তু আন্দোলনের ঢেউ যদি উজানে . . .
আমার ভাষা, আমাদের বানান
হরিশংকর জলদাস
'৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পর পঞ্চাশ বছর কেটে গেছে। পঞ্চাশ বছর মানে অর্ধশতাব্দী। অর্ধশতাব্দী একটি জাতির ভেতর-বাহিরটা বদলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট সময়। অর্ধশতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে '৫২-কে ভিত্তি করে ঊনসত্তরের গণজাগরণ হয়েছে। গণআন্দোলনের ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে '৭১-এর মুক্তিসংগ্রামের উদ্দীপিত চেতনা। এরপর স্বাধীনতা এলো। নানা উথালমাতাল সময়ের ভেতর দিয়ে আমাদের সাধের স্বাধীনতা এগিয়ে এসেছে ২০১৩Ñএর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই ৪২ বছরে আমরা পেয়েছি অনেক, না পাওয়ার বেদনাও আমাদের কম নয়। এই বেদনার . . .
নিশিদিন ভরসা রাখিস ॥ ফেব্রুয়ারির উত্তাল বাংলাদেশ
শিবনারায়ণ রায়
যদিও জন্মেছি উত্তর কলকাতায় এবং জীবনের প্রথম পঁয়ত্রিশটি বছরের বেশিরভাগই কেটেছে এই রহস্যময় গলিগুঁজির শহরে, যদিও বিশ বছর বাইরে কাটানোর পর হয়তো শিকড়ের টানেই এই মস্তান-আক্রান্ত, স্মৃতি-ধূসর, মর্তুকাম নগরীতে ফিরে এসেছি, তবু যতবারই আমি এখান থেকে বাংলাদেশে যাই ততবারই সেখানকার জগৎ আমার কাছে সুনিশ্চিতভাবে নিকটতর ঠেকে। এই প্রত্যাসত্তির নানা কারণের ভিতরে একটি অবশ্যই সেখানকার সুজলা সুফলা ভূ-প্রকৃতি, সেখানকার নিয়ত বহমান অজস্র নদ-নদী উপনদী শাখানদী, শ্যামল মৃত্তিকা আর সুনীল আকাশ, পঞ্চভূতের অনারত সিম্ফনী। অন্য কারণ . . .
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ২১শের প্রথম প্রভাতফেরি
সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু
বাংলাদেশী হিসাবে আজ আমরা সবাই গর্বিত এই জন্য যে, পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালী জাতি তার জীবন দিয়েছে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের সেই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজ সারা বিশ্ব আমাদের শোক দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসাবে। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে আমেরিকাতে আমার প্রথম পদার্পণ লসএঞ্জেলেস শহরে পড়াশোনার জন্য। বাবা মা, ভাইবোন ছাড়াও ভীষণভাবে অভাব অনুভব করছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর, ২১শে'র বইমেলা, রেডিও, টেলিভিশন , মহিলা সমিতির . . .
বিস্মৃতপ্রায়ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি
আমানুল হক
ভাষা আন্দোলনে আমার অংশগ্রহণ প্রধানত পাকিস্তানী শাসকচক্রের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে নিহত ভাষাসংগ্রামী শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের ঐতিহাসিক আলোকচিত্রটি ক্যামেরায় ধারণ ও তাই নিয়ে আমার নানা কর্মতৎপরতা। মেডিক্যাল কলেজের বারান্দার সামনেই দেখা হয় পূর্ববাংলা প্রচার দপ্তরের তৎকালীন সহকারী পরিচালক কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসের সঙ্গে। পূর্ব বাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) সরকারের কর্মকর্তা হয়েও গুলি বর্ষণের খবর শুনে ছুটে এসেছিলেন তিনি হাসপাতাল এলাকায়। তাঁর জবানিতে হুবহু তুলে ধরলেই একুশে ফেব্রুয়ারি-সংশ্লিষ্ট আপাত বিস্মৃতপ্রায় . . .
একুশের চেতনা
অজয় রায়
আমাদের মাঝে একটি প্রবাদবাক্যের মতই কথা চালু আছে Ñ 'একুশের চেতনা।' আমাদের মানে বিদ্বৎজনের মাঝে তো বটেই, রাজনীতিবিদদের মাঝে, সাাহিত্যিক-কবি সমাজে এবং সাধারণ শিক্ষিত সমাজেও এটি একটি চালু বাক্য আমরা সতত ব্যবহার করে থাকি এর তাৎপর্য বুঝি আর না বুঝি। কিন্তু একুশের চেতনা বলতে আমরা ঠিক কী বোঝাতে চাই তা আমরা স্পষ্ট করে বলি না। আমি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বড় হয়েছি, একুশের আন্দোলনের বিভিন্ন স্তর, আমার সৌভাগ্য হয়েছে কাছ থেকে দেখার। তাই একুশের চেতনা আমার কাছে ভিন্ন ব্যঞ্জনা নিয়ে দেখা দেয়। . . .
অনুবাদ ভাষার শক্তি বাড়ায়
মাহমুদ দারবিশ ॥ অনুবাদ : নাজিব ওয়াদুদ
কবিদের লেখা ভূমিকা আমি ক্বচিৎ পড়ি, আর যদি পড়িই তাহলে সেটা প্রধানত এজন্য যে কবি যা বলেন এবং কবিতায় যা পাওয়া যায় তার মধ্যকার চমৎকার বৈষম্যকে আমি উপভোগ করতে চাই। কিন্তু তাহলে, উদাহরণ হিসেবে ধরুন, এই কবিতা সংকলন উপস্থাপন করার জন্য আমার প্রতি ক্রমাগত অনুরোধের প্রতি আজ আমার প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? বিশেষত যেহেতু আমার কাছে প্রত্যেকটা এ্যান্থলজিই প্রবঞ্চনা বলে মনে হয়, যদিও সংকলক তাঁর বাছাইকৃত কবির সঙ্গে যতদূর সম্ভব খাপ খাওয়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন: তিনি হয়ত পারেন সাহিত্যকর্মটির ছায়াকে পাশে রেখে তার আলোকোজ্জ্বল . . .

মাতৃভাষা বাংলা ভাষা খোদার সেরা দান

সাদেকুর রহমান : ভাষার অধিকার আদায়ে দ্রোহের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারি ১৮ তারিখ আজ সোমবার। আর মাত্র তিনদিন পরেই আসছে জাতির সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি। অমর একুশের প্রথম প্রহরেই প্রতিটি শহীদ মিনাহারের পাদদেশ ফুলে ফুলে ভরে যায়। শহীদ মিনার ভাষা শহীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলে জাগরুক শোক আর শ্রদ্ধার মিশেলে অনির্বচনীয় আবেগ নিয়ে জমায়েত হয়। শেষে নাঙ্গা পায়ে প্রভাত ফেরী কর্মসূচি পালন করে। গাল মেলে ধরে সেই গান- 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি?'

একুশে ফেব্রুয়ারি বা অমর একুশে আমাদের মহান শহীদ দিবস বা ভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ শুধু ভাষা দিবসই নয়, আমাদের অমর একুশে আজ সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিসব। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে এবং পরবর্তীয় আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে শহীদ হন সালাম, রফিক, জববার, বরকত, অহিউল্লাহ ও শফিকসহ নাম না জানা আরও অসংখ্য ভাষাবীর। সঙ্গত কারণেই এই দিনটি আমাদের অস্থিমজ্জার সাথে মিশে আছে আর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত শহীদ মিনার অহর্নিশি ভাষা পুত্রদের অপরিসীম ত্যাগ ও অদম্য সাহসের স্তব গাইছে।

বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় ঊনিশশ' বায়ান্ন সালের তেইশে ফেব্রুয়ারি। এর পরিকল্পনা, স্থান নির্বাচন ও নির্মাণসহ সবই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের উদ্যোগে  সম্পন্ন হয়। বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্ব-দক্ষিণ থেকে শহীদদের রক্তসিক্ত স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া ভিত্তির ওপর ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এর গায়ে 'শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ' লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেয়া হয়। নির্মাণের পরপরই এটি নগরবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হয়ে ওঠে। প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীকী মর্যাদা লাভ করে। এখানে দলে দলে মানুষ ভিড় জমায়। ছাবিবশে ফেব্রুয়ারি সকালে 'দৈনিক আজাদ' পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। ঐ দিন বিকেলে পুলিশ এটি গুঁড়িয়ে দেয়। সারা দেশে বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুরূপ ছোট ছোট অসংখ্য শহীদ মিনার গড়ে ওঠে।

১৯৫৩ সাল থেকে ছাত্রসমাজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে মহান শহীদ দিবস হিসেবে পালন করতে থাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের শূন্য স্থানটিতে লাল কাগজে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের অবিকল প্রতিকৃতি স্থাপন করে তা কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয়। সেই প্রতীকী শহীদ মিনার থেকেই সে বছর ছাত্রদের প্রথম প্রভাত ফেরির সূচনা হয়। পরের বছরও ছাত্ররা একইভাবে শহীদ দিবস পালন করে। ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে একুশ দফার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহীদ মিনার তৈরি, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে। কিন্তু ঐ বছর ৩০ মে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তা আইনসিক্ত করা সম্ভব হয়নি। ঊনিশশ' ছাপান্ন সালে একুশে ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পূর্ববঙ্গ সরকারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও ভাষা শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম। সে সময়ই 'একুশে' আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। এরপর ঊনিশশ' সাতান্নতে শিল্পী হামিদুর রহমানের পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণের একাংশে শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হয়। হামিদুর রহমানের সহকর্মী হিসেবে ছিলেন ভাস্কর নভেরা আহমদ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তার কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে আরও তিনবার ভেঙ্গে ফেলা ও পুনঃনির্মাণের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সাল থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি তার স্থাপত্য ভাস্কর্যগত অস্বচ্ছতা নিয়েই সংগ্রামের প্রতীক একুশের চেতনার প্রতীক রূপে দাঁড়িয়েছে।

অমর একুশে উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশের শহীদ মিনারগুলোর ধোয়ামোছা ও সংস্কার কাজ চলছে। একই সাথে প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি কুড়ি তারিখ দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটেই জাতি পরম শ্রদ্ধা ভরে ফুলেল ভালোবাসা অর্পণ করবে ভাষাপুত্র রফিক, জববার, বরকত, সালাম প্রমুখ জাতীয় বীর সন্তানদের প্রতি। যারা রক্ত না দিলে হয়তো পেতাম না 'অ আ ক খ', পেতাম না জ্বলজ্বলে একুশে ফেব্রুয়ারি।

http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=109560


চির প্রেরণার অমর একুশে
ফারাজী আজমল হোসেন
অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতির জীবনে অবিস্মরণীয় ও চিরভাস্বর দিন আজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর জব্বাররা। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। সকলের কণ্ঠে বাজছে একুশের অমর শোকসঙ্গীত 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।' 

একুশের চেতনা আমাদের আত্মমর্যাদাশীল করেছে। 'একুশ মানে মাথা নত না করা' চিরকালের এ শ্লোগান তাই আজও সমহিমায় ভাস্বর। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। বায়ান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারি বসন্তের বাতাস ও পলাশ রঙে রাঙানো প্রভাতের সূর্য অমিত সম্ভাবনার যে স্বপ্ন, যে প্রত্যয় জাতির হূদয়ে বপন হয়েছিল, সেই তেজোদীপ্ত বিদ্রোহের সুর আজো প্রতিটি ক্রান্তিকালে ধ্বনিত হয় বাঙালির হূদয়ে। একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে, খালি পায়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই শামিল হতে শুরু করেছেন শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারাদেশের স্কুল-কলেজ, জেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। 

আজ সরকারি ছুটির দিন। অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হবে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে। মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে বাঙালি জাতি যে ইতিহাস রচনা করেছিল, শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্ব তাকে বরণ করেছে সুগভীর শ্রদ্ধায়। ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বিশ্বের সকল জাতিসত্তার ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নেয় ১৯৫২ সালের বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের দিন সেই একুশে ফেব্রুয়ারি। 

শোকবিহ্বলতা, বেদনা আর আত্মত্যাগের অহংকারে দেদীপ্যমান ভাষা আন্দোলনের সেই শপথ যুগে যুগে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা যোগায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। যখন স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে চলেছে, ধর্মান্ধ মৌলবাদী মানবতাবিরোধী অপশক্তি যখন দেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডল অস্থির অশান্ত করে তোলার চক্রান্তে লিপ্ত তখন চির প্রেরণার প্রতীক অমর একুশে নতুন তাত্পর্য নিয়ে জাতির সামনে হাজির হয়েছে। তাই আজ শুধু শোক নয়, শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিন।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি।' মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, 'প্রদেশের ভাষা কী হবে, তা প্রদেশবাসীই স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোন দেশ শক্তিশালী হতে পারে না।' খাজা নাজিমুদ্দিনের এই মন্তব্যটুকুই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট ছিল। এর প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করে। আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। এতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য পিছিয়ে গেলেও ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায়। এতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা অনেকে নিহত হন। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। ছাত্রদের প্রবল প্রত্যাশার মুখে ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের হিসাব-নিকাশের রাজনীতি উড়ে গিয়েছিল সেদিন। রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছে তার মুক্তির, তার গন্তব্যের দিশা। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাংলাদেশের, বাঙালির চির প্রেরণার প্রতীক। 

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্যসাধারণ অর্জন। 

একুশের কর্মসূচি:

আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এছাড়া সকাল সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি এবং আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত করা হবে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে ফেব্রুয়ারি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জাতীয় পার্টি (জেপি) একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সকাল সাড়ে ৬টায় জাতীয় পার্টির (জেপি) সকল কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল সাড়ে ৭টায় আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এছাড়াও ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। 

রাষ্ট্রপতির বাণীঃ 

মহান একুশে উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এক বাণীতে বলেন, মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন কেবলই আমাদের মাতৃভাষার দাবি আদায় করেনি বরং তা বাঙালি জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায় এবং স্বাধিকার অর্জনে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে। এ আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালি জাতির বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

বাণীতে তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তত্কালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিক; যাঁদের অসীম সাহস ও অদম্য প্রেরণায় ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি অর্জন করে মাতৃভাষার অধিকার। রাষ্ট্রপতি এদিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোত্সর্গকারী ভাষাশহীদ বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। তিনি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী ঃ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, সামপ্রদায়িকতা এবং নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম উল্লে¬খ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত চার বছরে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি।

শেখ হাসিনা মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। 

তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের এদিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত, শফিউদ্দিন, সালামসহ আরো অনেকে।

জাতীয় পার্টি (জেপি)

জাতীয় পার্টি-জেপি'র চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ১৯৫২ সনের এই দিনে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী নিয়ে বাংলাদেশের অকুতোভয় ছাত্র-জনতা পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউদ্দিনসহ অসংখ্য শহীদের তপ্ত রক্তে লাল হয়েছিল বাংলার মাটি। আমরা আজ বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বীর শহীদদের স্মরণ করছি। আমরা আরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল ভাষা সৈনিককে; যাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মাঝে উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের। আজকের এই দিনে আমরা একুশের সকল শহীদের এবং যে সকল ভাষা সৈনিক ইন্তেকাল করেছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি এবং দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে তাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দীপ্ত শপথ গ্রহণ করি।

একুশে ফেব্রুয়ারী ও ভাষা শহীদদের সংগ্রাম

ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্তদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষা করার জন্য ১৯৪৮ সালে এ দেশের ছাত্র সমাজ মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে। ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে ছাত্রদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র সমাজের গৌরবময় রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি হয়। '৫২-এর ছাত্র আন্দোলন এদেশের বাঙালী জাতির মুক্তি সংগ্রামের আকাঙ্খাকে জাগ্রত করে।

একুশে ফেব্রুয়ারী আসলেই আলোচনা সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। কিন্তু বাংলা ভাষা শহীদদের চেতনা-সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা সকলেই জানি, একুশে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী পালনের খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হবে। অথচ একুশে ফেব্রুয়ারী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ দিবসের ৫৭ বছর পূর্ণ হলেও ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবী অদ্যাবধি উপেক্ষিত। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১১ দফা, '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৮২-'৯০ সময়কালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ছাত্র সমাজের রক্তস্নাত ১০ দফা ও '৯০-এ মহান গণঅভ্যুত্থানসহ এ পর্যন্ত সকল গণ-আন্দোলনে প্রায় সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও শক্তি যে দাবীটি জানিয়ে আসছে, যা এখনো জনগণের প থেকে উত্থাপিত হচ্ছে তা হলো, শিক্ষার প্রধান মাধ্যম হতে হবে মাতৃভাষা বাংলা এবং ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ জরুরী ভিত্তিতে বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।

৫৭ বছর আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনের সূচনা, বুকের রক্ত ঢেলে জাতিকে রুখে দাঁড়াবার সাহসে উজ্জীবিত করেছিল যারা, সেই ভাষা শহীদদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালিত হবে। '৫২-এর ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার মধ্যে সীমিত থাকেনি, ভাষাভিত্তিক চেতনায় জাতি ক্রমে ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের শিকল ছিঁড়ে মুক্তিকামী মানুষ একুশের চেতনার পথ ধরেই একাত্তরে রক্তাক্ত মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে মহান স্বাধীনতা। গৌরবোজ্জ্বল এই দিবসের অনন্যতা বিষয়ে জাতির গর্ব আরো বেড়ে গেছে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর। বাঙালির ও বাংলাদেশের একুশ এখন সারা বিশ্বে প্রধান ও অপ্রধান মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার ভাষার মানুষের জন্য মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনের দিন। একুশ এখন সারা বিশ্বে ভাষা ও অধিকারজনিত সংগ্রাম ও মর্যাদার প্রতীক। একুশ আমাদের সংগ্রাম ও জাতীয় মর্যাদাকে বিশ্বদরবারে সমুন্নত করেছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে একুশে উদযাপন করা হলেও সরকার একুশের শিক্ষা ও চেতনাকে জাতির জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগই নিতে পারে নি। একুশের শিক্ষা ও চেতনাকে জাতির জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার হাতিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন তথা বিজ্ঞানভিত্তিক ও গণমুখীকরণ কেন করতে পারে নি? একুশের চেতনা ও শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন ও জনগণের প্রয়োজনে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়াটাও জরুরি হয়ে ওঠেছে। সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর আমলা মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া লুটেরা ধনিক বণিক শ্রেণীর বিগত ৩৮ বছরের শাসন ও রাজত্বে নানা সমস্যা ও সঙ্কটে বিদীর্ণ হলেও বর্তমান ১৪ দলীয় মহাজোট সরকারের আমলেও তো আজকের জাতীয় জীবনে একুশের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ ও প্রেরণা খুঁজে পাওয়াটাই একটা বড় সমস্যা। স্বাধীনতার পর থেকে সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর আমলা মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শাসক শ্রেণী সকল নির্মাণ ও উন্নয়ন প্রয়াসে একুশের চেতনাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দেয়ার চেষ্টাই তো হয় নি, অতএব ব্যর্থতার দিকটি বলার উপায় নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে একুশের চেতনাবিরোধী কার্যক্রমের অসংখ্য নজির স্থাপিত হয়েছে প্রতিটি সরকারের আমলে। এই চেষ্টাহীনতা, ব্যর্থতা ও মর্যাদাহানির বিষয়টি আরো নগ্নভাবে ধরা পড়তে শুরু করেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদক বিতরণের কর্মসূচির মধ্যেও। একুশের চেতনা, সংগ্রাম ও প্রেরণাকে জাতির মধ্যে সঞ্জীবিত রাখার লক্ষ্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীল সন্তানদের একুশে পদক দিয়ে জাতীয় সম্মাননা জ্ঞাপন নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কাদের দেয়া হচ্ছে এই পদক? যারা এ পদক পাচ্ছেন, তাদের সকলেরই ব্যক্তিগত অবদান কি একুশের আন্দোলন ও চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত? এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ও একুশের সংগ্রাম ও চেতনা ধারণ করেন এমন রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শ তথা সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী অনেকেই এ পদক পাননি। অথচ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং ভাষা ও গণসংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নে অবদান নেই- এমন লোকজনও এ পদক পাচ্ছেন। একুশের মহান সংগ্রাম ও চেতনা ছাপিয়ে সরকারের মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণীর সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় ও পক্ষপাতই প্রধান হয়ে উঠছে কেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে? এ যাবত যাদের একুশে পদকে সম্মানিত করা হয়েছে, সেই তালিকা সচেতন মানুষের মনে এ প্রশ্ন না জাগিয়ে পারে না। জাতিকে নানাভাবে এগিয়ে নেয়ার সাধনায় সংগ্রামী, ত্যাগী ও গুণী মানুষ দেশে অবশ্যই রয়ে
ছেন। কিন্তু সরকার তাদেরকে যথাযথ সম্মান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সমাজজীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো মহান একুশের নামে প্রবর্তিত একুশে পদকের ক্ষেত্রেও তদবির পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনে আরো দু'টি ব্যর্থতা আমাদেরকে লজ্জিত করে। সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারক ঐতিহাসিক একুশের ডকুমেন্টস সরকার বহির্বিশ্বে প্রচার করতে পারে নি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার কাজও থমকে আছে। আমাদের দেশের জনগণের সকল সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস ও অর্জনকে সংরক্ষণ এবং আমাদের দেশের জনগণের সংগ্রাম, জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরবকে অক্ষুন্ন রাখার শপথে একুশের প্রেরণায় উজ্জীবিত জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে আবারও সকল ধরণের দেশী-বিদেশী শোষণ-বঞ্চনা-অনুন্নয়ন-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুক- এই প্রত্যাশা করি। মহান একুশে ফেব্রুয়ারী ও ভাষা শহীদদের সংগ্রাম-স্বপ্ন-ল্ক্ষ্য-স্মৃতি অমর হোক।



  

৫ টি মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া এসেছে এ পর্যন্ত:

  1. সান্ত্বনা লিখেছেন:

    একুশে ফেব্রুয়ারী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ দিবসের ৫৭ বছর পূর্ণ হলেও ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবী অদ্যাবধি উপেক্ষিত।

    বিভিন্ন ভাষা থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থগুলো কি একেবারেই অনূদিত হয়নি? শুনেছি এককালে বাংলা একাডেমীর একটি অনুবাদ বিভাগ ছিল, যেখানে কর্মরত ছিলেন সরদার ফজলুল করিম। সেই বিভাগটি বিলুপ্ত হলো কীভাবে? এখনকার ভাষা ইনস্টিটিউট কি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে না? এসব বিষয়ে আমার বিশেষ জানা নেই। বিস্তারিত আলোচনা করলে উপকৃত হব।

    একুশে পদক প্রসঙ্গে আপনি লিখেছেন :

    একুশের চেতনা, সংগ্রাম ও প্রেরণাকে জাতির মধ্যে সঞ্জীবিত রাখার লক্ষ্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীল সন্তানদের একুশে পদক দিয়ে জাতীয় সম্মাননা জ্ঞাপন নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু কাদের দেয়া হচ্ছে এই পদক? যারা এ পদক পাচ্ছেন, তাদের সকলেরই ব্যক্তিগত অবদান কি একুশের আন্দোলন ও চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত? এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ও একুশের সংগ্রাম ও চেতনা ধারণ করেন এমন রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শ তথা সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী অনেকেই এ পদক পাননি। অথচ কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং ভাষা ও গণসংস্কৃতির বিকাশ ও উন্নয়নে অবদান নেই- এমন লোকজনও এ পদক পাচ্ছেন। একুশের মহান সংগ্রাম ও চেতনা ছাপিয়ে সরকারের মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া শ্রেণীর সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় ও পক্ষপাতই প্রধান হয়ে উঠছে কেন মনোনয়নের ক্ষেত্রে? এ যাবত যাদের একুশে পদকে সম্মানিত করা হয়েছে, সেই তালিকা সচেতন মানুষের মনে এ প্রশ্ন না জাগিয়ে পারে না। (নজরটান আমার)

    এই তালিকাটি এখানে উদ্ধৃত করলে খুব ভালো হয়।
    "এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ও একুশের সংগ্রাম ও চেতনা ধারণ করেন এমন রাজনীতি সচেতন শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শ তথা সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী অনেকেই এ পদক পাননি।" — নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট কয়েকজন মানুষের কথা বিবেচনায় রেখেই আপনি এ কথা লিখেছেন। সম্ভাব্য প্রাপকদের সেই তালিকাটাও দেখতে ইচ্ছে করছে।

  2. মনিপুরী লিখেছেন:

    ভালো লেগেছে। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

  3. রায়হান রশিদরায়হান রশিদ লিখেছেন:

    বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি ভাষার আন্দোলনে পৃথিবীর প্রথম আদিবাসী ভাষাশহীদ সুদেষ্ণা সিংহের আত্মদান নিয়ে কুঙ্গ থাঙ এর পোস্ট

  4. শামস লিখেছেন:

    … একুশে ফেব্রুয়ারী তথা বাংলা ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদ দিবসের ৫৭ বছর পূর্ণ হলেও ইংরেজীসহ ভিন্ন ভাষায় রচিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক গ্রন্থসমূহ বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবী অদ্যাবধি উপেক্ষিত।

    আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও 'বাংলায় অনুবাদ ও প্রকাশের' জন্য অনুরোধ (দাবি) জানাচ্ছি।

    http://nirmaaan.com/blog/syedzaman/3193


    শহীদ দিবসের ভাবনা
    জাস্ট নিউজ -
    ভাষ্যকার

    অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। একই সঙ্গে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে। আমাদের ভাষা শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা গর্বিত। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

    আমাদের জাতীয় ইতিহাসে ২১ ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা, ১৯৫২ সালের এদিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা একদিকে যেমন ছিল অভূতপূর্ব, তেমনি তা সূচনা করেছিল এ দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের অভিযাত্রা। '৫২'র ভাষা সংগ্রামের পথ ধরেই পরবর্তী গণআন্দোলন এবং সর্বশেষ আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলাম। বলা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়েছে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা আমরা এ মহান দিনের কাছ থেকে পেয়ে আসছি। যতোবার বাংলাদেশ কোনো স্বৈরশাসনের কবলে পড়েছে, গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়েছে, এদেশের মানুষ তা পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে, নিয়েছে দীক্ষা। একুশ তাই বারবার ফিরে আসে আমাদের অধিকার আদায়ের চেতনার মশাল জ্বালিয়ে। পথ দেখার নির্ভয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। 

    একুশের রক্তমাখা পথ ধরেই এসেছে আমাদের স্বাধীনতা। '৫২-তে যারা আত্মোৎসর্গ করেছিলেন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায়, তাদের একটা স্বপ্ন ছিল, আকাঙক্ষা ছিল। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধ দেশের, একটি সংস্কৃতিবান জাতির। বাংলাদেশ তার আপন শক্তিতে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, এদেশের মানুষ সংস্কৃতিবান জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথাউঁচু করে দাঁড়াবে এটা ছিল ভাষা শহীদদের আকাঙক্ষা। একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। চার দশক অতিক্রান্ত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের। কিন্তু এখনো যে প্রশ্নটি বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হতে শোনা যায় তাহলো- '৫২-এর ভাষা শহীদ কিংবা স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন-আকাঙক্ষার কতোটা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। বলা বাহুল্য, সে স্বপ্নের খুব কম অংশই পূরণে সক্ষম হয়েছি আমরা। বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে যেমন গড়ে তোলা যায়নি, তেমনি আমাদের সংস্কৃতিকেও দাঁড় করাতে পারিনি শক্ত কোনো ভিতের ওপর। এ ব্যর্থতা একক কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির নয়। এ ব্যর্থতা জাতি হিসেবে আমাদের সবার। তবে যারা আমাদের নেতৃত্ব দেন বা দিচ্ছেন, তাদের দায়ভার এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এটা অস্বীকার করা যাবে না। 

    মূলত আমাদের নেতৃত্ব জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারেনি। তারা হয় রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চিন্তায় আচ্ছন্ন থেকেছেন কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতাকে স্থায়ী করার মানসে জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করেছেন। জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে যে 'ভিশনারি লিডারশিপ' প্রয়োজন দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া তার প্রকট অভাব আমরা এ যাবৎকাল লক্ষ্য করে আসছি। বলাটা অত্যুক্তি নয়, ওই ধরনের 'লিডারশিপ' না আসা পর্যন্ত শহীদের স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে না।
    '৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতিগত স্বাতন্ত্র্যকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। বাংলা আমাদের ভাষা। আমাদের আলাদা ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি রয়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের বাংলা ভাষাভাষীরা যে আলাদা একটি জাতি সে চেতনার অঙ্কুরোদগম ঘটেছিল '৫২'র ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশের বাইরেও বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী আছে। কিন্তু তারা তাদের ভাষার জন্য সংগ্রাম করেনি, জীবন দেয়নি। বাংলা ভাষা সেখানে রয়ে গেছে শুধুই আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে, রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা পায়নি। সুতরাং যারা মাঝে মধ্যে 'এপার বাংলা-ওপার বাংলা' বলে কোরাস গাওয়ার চেষ্টা করেন, তারা যে আমাদের স্বাতন্ত্র্যকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করতে চান সে বিষয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে হয় না। 

    অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলাদেশের সংস্কৃতি আজ দৈন্যদশায় উপনীত হয়েছে। বিদেশি সংস্কৃতির প্রবল জোয়ারে আমাদের আবহমানকালের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্য ভেসে যাওয়ার উপক্রম। নতুন প্রজন্ম ভুলে যেতে বসেছে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে। তাদের পরিচালনা করা হচ্ছে ভুল পথে। প্রতিবাদের নামে, সংস্কৃতির নামে তাদের শেখানো হচ্ছে 'মঙ্গলপ্রদীপ' জ্বালাতে। পোশাকে-আশাকে, চলনে-বলনে, আচার-আচরণে, একশ্রেণীর তরুণ-তরুণীকে আজ বড়ো অচেনা মনে হয়। এরা আমাদেরই সন্তান, ভাবতে শুধু অবাক লাগে না, কষ্টও হয়। এরা বিশ্বসভ্যতার অনেক খবর রাখে, কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করে এরা অনেক কিছু জেনে নেয়, কিন্তু বুক সেলফ থেকে বই নিয়ে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হয় না। এটা তরুণদের দোষ নয়। এর দায় অগ্রজদের। তারা ওদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা ওদেরকে উদ্ধুদ্ধ করতে পারেননি জাতীয় ইতিহাস চর্চায়, নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার সংগ্রামে। কখনো কখনো তরুণদের অংশ বিশেষকে কোনো কোনো বিষয়ে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। তবে তার পেছনে সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী কাজ করায় তা খুব বেশি ব্যপ্তিলাভ করতে পারেনি। উজ্জীবিত তরুণরাও পেছনের রাজনৈতিক মতলববাজী দেখতে পেয়ে মুহূর্তেই চুপসে গেছে। আশা ভঙ্গের হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে। 

    আমাদের জাতীয় জীবনে আজ যে স্থবিরতা, সংকট এবং সংস্কৃতিগত অবক্ষয় চলছে, তা থেকে উত্তরণের শিক্ষা নেয়া সম্ভব অমর একুশে থেকে। কেননা একুশে আমাদেরকে শিক্ষা দেয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে নিরন্তর সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হতে। আমরা ঐতিহ্যের অধিকারী, আমাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমরা কারো মুখাপেক্ষী থাকবো না। সাংস্কৃতিক যে আগ্রাসন আমাদের দেশে এখন চলছে, তাকে যদি প্রতিহত করা না যায়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত হয়ে পড়বে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আগামী প্রজন্ম তলিয়ে যাবে  সে ঘোরতর অন্ধকারে। এতো ত্যাগ, এতো রক্তদান, এতো সংগ্রামের পর অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা হয়ে পড়বে অর্থহীন। ফলে চেতনার মশাল জ্বেলে নব প্রজন্মকে সঠিক পথের দিশা এখনই দেখাতে হবে। তাদেরকে ফেরাতে হবে ভ্রান্ত পথ থেকে। তাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে দেশাত্মবোধ। বিদেশী সংস্কৃতির খারাপ দিকগুলো, যেগুলো আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো যাতে তারা বর্জন করে সেজন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। 

    ছয় দশক পার হয়েছে ভাষা শহীদ দিবসের। প্রতি বছরই দিনটি আসে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার মর্মবাণী নিয়ে। কিন্তু সে মর্মবাণী যে আমাদের মর্মমূলে খুব একটা আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না, তার ছাপ সর্বত্র। এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে আমরা যদি বাংলাভাষা-সংস্কৃতিকে ঐতিহ্য মন্ডিত করতে পারি, তথা বাংলাদেশকে করে তুলতে পারি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধশালী, তাহলেই '৫২ এর সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের আত্মদান সার্থক হবে। আমরা মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ সালাম।


    অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদের স্মরণ


    টাইমস্ আই বেঙ্গলী ডটকম, নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : বৃহস্পতিবার ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটির প্রথম প্রহরেই বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদের স্মরণ করলো জাতি।মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালি স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তরে নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলনের ৬১ বছর পূর্ণ হবে বৃহস্পতিবার। বস্তুত একুশে ফেব্রুয়ারি একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কারণ পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি ভাষার জন্য এদিন জীবন দিয়েছিল।
    ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে ঐতিহাসিক একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি আগামীকাল একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
    তবে এবারে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে শহীদ দিবস। একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসিঁর দাবিতে পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ। কাদের মোল্লার ফাসিঁর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে তরুন প্রজন্মের আন্দোলন দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পরেছে দেশে বিদেশে। বিশ্বের যেখানেই বাঙালি সেখানেই যুদ্বাপরাধীদের ফাসিঁর দাবিতে সোচ্চার তারা। এই দাবিতে দেশের সব শহীদ মিনারে আজ মিলিত হবে কোটি কোটি বাঙালি।কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে গত মধ্যরাতে মহান একুশের সূচনা হয়েছে।তবে একুশের প্রথম প্রহরে প্রথমে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদনের রীতি থাকলেও শহীদ মিনারে আসেননি রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।রাত ১২টা এক মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ভাষা শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। এরপর 'আমার বাংলা আদর্শ বর্ণমালা' নামের একটি নতুন বাংলা ফন্টের উদ্বোধন করেন তিনি।অন্যদিকে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাত ১২টা ৪১ মিনিটের পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।প্রধানমন্ত্রীর পর শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। এরপর পর্যায়ক্রমে ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতারা, চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, তিন বাহিনীর প্রধানরা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে বিদেশি কূটনীতিকরা, হুইল চেয়ারে করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা ও আটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি শিক্ষক সমিতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশে উপস্থিত না থাকায় এরপর বিএনপি নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
    এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ বিভিন্নম্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের নেতাকর্মীরা একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন। এভাবে সম্মিলিত মানুষের স্রোত বয়ে চলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে।
    ২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
    শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
    ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
    এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাত ১২টা ০১মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সকল শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।সকাল সাড়ে ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ করে নিউ মার্কেটের দক্ষিণ গেট থেকে নগ্নপদে প্রভাত ফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন।
    আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দিবসটি উপলক্ষে সকল কর্মসুচী পালনের জন্য দলের নেতা কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।



    সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ১৯৭১ সালে যারা ধর্মের নামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদিতে অংশ গ্রহণ করেছে, তারা আজ অপরাধীদের বিচার বানচাল করার চেষ্টা করছে।

    ছাত্র নেতাদের এই অভিযোগ আসে এমন সময়ে, যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন শাহবাগের চলমান আন্দোলনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

    গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন মাদ্রাসা-মসজিদে, ইন্টারনেটে এবং কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় শাহবাগ আন্দোলনের আয়োজক ব্লগারদের 'নাস্তিক' এবং 'ইসলাম-বিদ্বেষী' আখ্যায়িত করা হয়েছে।

    শাহবাগের গণ জমায়েতে ১৯৭১ সালে গণহত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী পুনরায় করা হয়েছে।

    ভাষা শহীদ দিবস

    ফেব্রুয়ারি ২১, অর্থাৎ ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শাহবাগের চলমান বিক্ষোভ এ ১৭ দিনে তৃতীয়বারের মত 'মহাসমাবেশ' ডাকা হয়েছে।

    সমাবেশের শুরুতে কোরান তেলাওয়াত সহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এর পরে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ভাষা শহীদ দিবসের সঙ্গীত 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারি গাওয়া হয়।

    http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/02/130221_sm_feb21shahbag.shtml


    মহান শহীদ দিবস আজ : সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন নিশ্চিত হোক

    পরের সংবাদ»
    আজ অমর একুশে, মহান ভাষা দিবস। বায়ান্ন'র রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনে আত্মোত্সর্গকারী শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত দিন। এ দিনে বাংলাদেশের মাটিতে স্বাধিকার চেতনার যে বীজ রোপিত হয়েছিল তা-ই একাত্তরে রূপ নেয় ফলবান মহীরুহে; জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। মাতৃভাষার প্রতি অনন্য ভালোবাসা ও মমত্ববোধের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত রেখে সেদিন যারা জীবন দিয়েছিলেন, জাতি আজ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাদের স্মরণ করছে।
    মাতৃভাষার জন্য লড়াই, আত্মোত্সর্গ বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই আত্মদানের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিসত্তার স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয় স্বতন্ত্র মাহাত্ম্যে, ভিন্নতর উচ্চতায়। আমাদের সার্বিক বিজয়ের সূতিকাগার এই একুশ। সে অর্থে একুশ শুধু উদযাপনের নয়, উজ্জীবনের-উদ্দীপনের।
    ভাষা শহীদদের আত্মদানের গৌরবগাথা আজ শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও দিনটি স্বতন্ত্র মহিমা নিয়ে চিহ্নিত। আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে অমর একুশকে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে বাংলাভাষা তো বটেই, সব জাতির ভাষাই ভিন্ন মর্যাদায় স্মরণীয় হয়ে উঠেছে। একুশের চেতনা তথা এর অন্তর্গত তাত্পর্যে সব ভাষাভাষী মানুষই আজ আন্দোলিত-আলোড়িত। সারাবিশ্বে প্রায় ছয় হাজার ভাষা রয়েছে। সেসব ভাষাভাষী যখন আমাদের ভাষা দিবসকে তাদেরও ভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন বাংলাদেশী তথা বাংলাভাষী হিসেবে আমরা এক অনির্বচনীয় গৌরববোধে উদ্বেলিত হই। অন্যদিকে একুশ সব ভাষাভাষীর নিজ নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার তাগিদও সৃষ্টি করে। এদিক থেকেও ভাষা দিবস অনন্য মহিমায় অভিষিক্ত।
    ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ছয় দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন—আমরা কি মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি? ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা? আমরা কি প্রমাণ করতে পেরেছি, 'মাতৃভাষা রূপ-খনি পূর্ণ মণিজালে?'—এসব প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়ার প্রতীক্ষা শেষ হয়নি আজও। স্বাধীনতা অর্জনের চারদশক অতিক্রান্ত হলেও সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটেনি, যা হওয়ার কথা ছিল। আমাদের সাহিত্য চর্চা ক্রমাগত অগ্রসরমান, ভাষার ব্যাকরণ নিয়ে গবেষণা চলছে নিরন্তর—সে বিবেচনায় বাংলা চর্চার সৌকর্য বেড়েছে। কিন্তু আজও সুনির্দিষ্ট এবং সর্বজনগ্রাহ্য একটি বানানরীতি অনুসরণ করার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বহুমাত্রিক অভিধানের অভাব এখনও অনুভূত। একে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি বললেও অত্যুক্তি হবে না। এমনকি বাংলা একাডেমী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও মেনে চলছে না অভিন্ন বানানরীতি। ফলে বানান তথা উচ্চারণের ক্ষেত্রে বিরাজ করছে এক গোলমেলে অবস্থা। উল্লেখ্য, বাংলায় সাইবোর্ড লেখার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও সর্বত্রই তা উপেক্ষিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার অনুশীলন দেখাই যায় না। পারিবারিক মনোযোগও এ ক্ষেত্রে উত্সাহব্যঞ্জক নয়। প্রাত্যহিক পঠিত সংবাদপত্র এবং শ্রুত গণমাধ্যমও বানান এবং উচ্চারণের বেলায় তেমন শৃঙ্খলা রক্ষা করছে না। ভাষার ক্রম অগ্রগতি ও সুষম বিকাশের ক্ষেত্রে এসব বিচ্যুতি অন্তরায় বৈকি।
    বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও আমরা পিছিয়ে আছি। মাতৃভাষার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা আয়ত্ত করাও সময়ের দাবি। কিন্তু নিজ ভাষাকে অবহেলা করে তা অসম্ভব। অথচ ক্রমেই এই প্রবণতা বাড়ছে। অন্যান্য ভাষার লিখিত অনুবাদের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবেই আমাদের সামনে আসে। এই প্রেক্ষাপটে মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করার বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা দরকার। দুঃখজনকভাবে তা হচ্ছে না। এ অবস্থায় ফি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে পদক ও পুরস্কার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা বহন করে না।
    না, ভাষা আন্দোলন ও শহীদ দিবস উদযাপন আনুষ্ঠানিকতার মোড়কে বন্দী করে রাখা একুশের চেতনার অনুগামী নয়। সার্বিক সুষম উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একুশ উদযাপনের মাহাত্ম্যকে রূপায়ণ সম্ভব। সেই সঙ্গে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাওয়া ছোট ছোট নৃ-গোষ্ঠীর ভাষাগুলোকেও শুশ্রূষা দিয়ে টিকিয়ে রাখার দায় এড়ানো যায় না। বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। নিবিড় চর্চায় ক্রমাগত উত্কর্ষ সাধনের মাধ্যমে এর যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের আত্মদান সার্থক করে তোলা সম্ভব। এবারের একুশেতে সবাই সেই প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হয়ে উঠবে—এটাই প্রত্যাশা।

    বুকের খুনে মুখের ভাষা
    আজ অমর একুশে ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
    মোরসালিন মিজান ॥ বাহান্নতে মুখের ভাষা কিনছি বুকের খুনে রে,/বরকতেরা রক্ত দিছে বিশ্ব অবাক শুনে রে...। হ্যাঁ, মাতৃভাষার জন্য প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছিল বাঙালী। বছর ঘুরে আবার এসেছে ভাই হারানোর ব্যথা আর বিসর্জনের সুখ জাগানিয়া সেই দিন। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিজাগানিয়া মহান শহীদ দিবস। বাঙালী জাতির জীবনে চিরভাস্বর এদিন একই সঙ্গে বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষাকে সম্মান জানানোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এদিনে বুক দিয়ে বুলেট রুখে দিয়েছিল রফিক, শফিক, সালাম, জব্বাররা। তাঁদের রক্তে শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছিল দুুখিনী বর্ণমালা। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই সেইসব ভাষাশহীদদের কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে জাতি। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে আজ গাইছেÑ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...। আজ সারাদেশের সবকটি শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে ওঠবে। আজ কোটি প্রাণ হয়ে উঠবে শহীদ মিনার। 
    তবে এবার এমন এক সময়ে দরজায় কড়া নেড়েছে অমর একুশে যখন একাত্তরের চেতনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবাদ প্রতিরোধের নতুন ইতিহাস গড়েছে তরুণরা। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- নিশ্চিত করে এবার জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর। সারাদেশে হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। সেসব মঞ্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে প্রতিদিন। খুব অনুমান করা যায়, অমর একুশে সেই প্রত্যয় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাবে।
    ইতিহাস বলে, বহু আগেই পূর্ব পাকিস্তানে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। মায়ের ভাষার প্রতি বাঙালীর অনুভূতি কত তীব্র ছিল তা জানাতেই হয়ত মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেনÑ যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি...। কিন্তু দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তানের শাসকরা সেটি অনুধাবন করতে পারেনি। তাই এ অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল তারা। বাংলাভাষী মানুষের সকল অনুভূতি তুচ্ছ করে উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানে রফতানি করতে চেয়েছিল। শুরুটা '৪৭ থেকেই। এ বছর ১৭ মে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু। এই বক্তব্য সমর্থন দেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দীন। প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদ পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যায়। এভাবে যুক্তিতর্ক চলে। প্রতিবাদ গড়ে উঠতে থাকে। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। পরিষদের পক্ষে থেকে ১১ মার্চ পূর্ববঙ্গে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এরই মাঝে ১৯ মার্চ ঢাকার আসেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তিনি ঘোষণা দেনÑ উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। অন্য কোন ভাষা নয়। ২৩ মার্চ এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন একে ফজলুল হক। এর পরও ২৪ মার্চ কার্জন হলে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন জিন্নাহ। সঙ্গে সঙ্গে 'নো' 'নো' বলে চিৎকার করে ওঠে ছাত্ররা। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন সে একই ঘোষণা দেন। বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তিনি যোগ করেন, পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি। এর প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার সকল স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা ও আরবি হরফে বাংলা ভাষা প্রচলনের চেষ্টার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভাষার দাবি রুখতে সেদিন ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। কবির ভাষায়Ñ মাগো, ওরা বলে/ সবার কথা কেড়ে নেবে।/ তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না।/ বলো, মা,/ তাই কি হয়? হয় না। তাই অসীম সাহসের সঙ্গে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে নামে ছাত্ররা। বাংলার দাবি চিরতরে স্তব্ধ করতে পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার ও আবদুস সালাম, শফিক, রফিকসহ নাম না জানা অনেক ছাত্রযুবা। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি আবারও রাজপথে নামে। স্বজন হারানোর স্মৃতি অমর করে রাখতে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে উঠে স্মৃতিস্তম্ভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি এটি গুঁড়িয়ে দেয় পাকি বাহিনী। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে অমর একুশে।
    আজ শুধু শোক নয়, শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিন। কোন একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নয় বরং সমাজের সকল অন্যায় অসাম্য ধর্মান্ধতা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার নতুন শপথ নেবে বাঙালী। প্রতিবাদ প্রতিরোধের অগ্নিশিখা ভেতরে জ্বালিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা গ্রহণ করবে। এদিকে নিজ নিজ মায়ের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বহু দেশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করবে। বাঙালীর জন্য এও বড় অর্জন।
    এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি থাকবে। অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে সর্বত্র উড়বে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। বিকেল তিনটায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে আয়োজন করা হবে মহাসমাবেশের। এটি এবারের একুশের অনুষ্ঠানমালাকে নতুন মাত্রা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
    রাষ্ট্রপতির বাণী ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন কেবলই আমাদের মাতৃভাষার দাবি আদায় করেনি বরং তা বাঙালী জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায় এবং স্বাধিকার অর্জনে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে। 
    প্রধানমন্ত্রীর বাণী ॥ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালীর জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। 
    বিরোধীদলীয় নেত্রীর বাণী ॥ শহীদ দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন ২১ ফেব্রুয়ারি। একুশের পথ ধরেই অর্জিত হয় স্বাধীনতা। একুশের চেতনা অক্ষুণœ রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 
    শহীদ মিনারে প্রজন্ম সেনারা ॥ একুশের প্রথম প্রহরে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চ। ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা শহীদ মিনারে যান।
    আওয়ামী লীগের কর্মসূচী ॥ একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল শাখায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

    আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস- অমর একুশে এবং বিশ্ব

    ব্লগারের প্রোফাইল ছবি

     

    ভাষাকে নিয়ে মানুষের হৃদয় লালিত পালিত ও বিকশিত, ভাষার জন্য বলা যায় মানুষ আজ সভ্য আজ এত উন্নত এবং সৃস্টির সেরা জীব। ভাষাই মানুষকে দিয়েছে মনের ভাব প্রকাশ করার, ভাল মন্দ প্রকাশ করার শক্তি যা আমাদের করেছে সামাজিক এবং সেই সাথে করেছে একে অন্যয়ের সহায়ক। মা, মাতৃভাষার সাথে নাড়ির টান ও সর্ম্পক অবিচ্ছেদ্য।

    আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস চলে আসছে ২০০০ সাল হতে যখন বাংলাদেশ সরকার অফিসিয়ালি ইউনেসকোতে আবেদন করে এবং ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বরে ইউনেস্কোর সাধারন কনফরেন্সে সবসম্মতি ক্রমে গৃহীত হয় যেখানে ২১ এ ফেব্রুয়ারীকে "আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষনা করা হয়। এই ঘোষণার ফলে আমাদের একুশের গৌরবোজ্জল ইতিহাস বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে গেছে । ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন হওয়া এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আমাদের মত জাতিসংঘের ১৮৮টি সদস্য দেশেও উদযাপিত হয়ে থাকে এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ।

    এটা বাংলাদেশের জন্য এক অবিস্বরনীয় অর্জন বলাযায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর এটিই সবচেয়ে বড় অর্জন। আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বরং এটি সকল মানুষের সকল ভাষার সারা বিশ্বের জন্য গৈরবের, সকলের ভাষাকে ভালবাসার জানার এবং উন্নয়নের জন্য ভাবার দিন। তাসত্বেও বাংলাদেশই সবচেয়ে গর্বিত আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য কারন বাংলাদেশের এবং ভাষা শহীদদের জন্যই আজ আমাদের সারা বিশ্বের মানুষের এ পাওয়া।

    এবার একটু ফিরেদেখা আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের ইতিহাস: আমরা বাঙালি ,বাংলা আমাদের মাতৃভাষা । বিশ্বের প্রায় ৩০কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা । মাইকেল , বঙ্কিমচন্দ্র ,রবীন্দ্রনাথ ,নজরুল ,জীবনান্দ,শরতচন্দ্রসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্মী ও ভাষাপ্রেমী মনীষীর কর্মপ্রয়াসে বাংলা ভাষা উন্নীত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানে ।

    ২১শে মার্চ ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা দেন যে উর্দু এবং শুধুমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাস্ট্র ভাষা। তখন পাকিস্তান দুভাগে ছিল এক পশ্চিম ও পুর্ব পাকিস্তান( যা বর্তমানে বাংলাদেশ)। এ ঘোষনার পর পুর্ব পাকিস্তান( যা বর্তমানে বাংলাদেশ) এর জনগন যাদের মাতৃভাষা বাংলা সবাই প্রতিবাদ করে।
     
    ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ঐতিহাসিক আমতলায় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী একত্র হয়েছিলেন সেই উদ্দীপ্ত তরুণদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা চলছিল । রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাইব -এই দাবিতে এক অদ্ভুত চঞ্চলতা চলছিল । তারা সেইদিন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সব ধরনের নিপীড়নের বিবরুদেদ্ধ রুখে দাড়াতে যূথবদ্ধ হয়ছিলেন । তারা সেদিন বজ্রদীপ্ত কন্ঠে ১৪৪ ধারা ভাংগার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন । তার পর দলে দলে বিভক্ত হয়ে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিপেটা করে ,কাদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে ,গুলি করে হত্যা করে সালাম,বরকত,রফিক, শফিক ,জব্বারসহ অরো নাম না জানা অনেককে । কিন্তু সেই নৃশংস হত্যাকান্ড অমিত প্রাণের কল্লোল থামাতে পারে না । আন্ন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে ,সারা দেশে । তারপরদিন প্রথম শহীদ দের স্মরণ করে ঢাকায় শহীদ মিনার তৈরী করা হয় যা পাক শাসক ভেংগে ফেলে।

    সময়টা ছিল ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর বিকেলে তিনটা ২০ থেকে ৫০ মিনিট । সেই বিকেলের ৩০ মিনিটে তারা নির্ধারণ করে দিয়েঠছলেন আমাদের জাতি আর মাতৃভাষার ভবিষ্যতকে । এই সেই ৩০ মিনিট যখন পুলিশ সতর্কবাণী না উচ্চারণ করেই নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলেন । এই সেই ৩০ মিনিট যা প্রতিবাদী তরুণ তরুণীদের সমবেত শক্তিকে অরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল , তাদের সংকল্প আরো অটল করে তুলেছিল । তারা গুলির সামনে বুক পেতে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন । সেই ৩০ মিনিটই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন আমাদের মহান মাতৃভাষার আর জাতির ভাগ্য ,যা কিনা স্ফুলিংগ হিসেবে কাজ করছে । সেই স্ফুলিংগ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছিল শহর থেকে গ্রামে , প্রতিটি জনপদে ।

    এরপর একটি তারিখ ২১শে ফেব্রুয়ারী ,একটি বছর ১৯৫২ সাল আমাদের অত্ত্যন্ত আপন হয়ে আমাদের হৃদয়ে চিরকালের জন্য ঠাই পেয়ে গেছে । আমাদের ভাষা বাংলাকে আমরা নিজের করে পেয়েছি । আমরা একটি দেশ পেলাম যার নাম বাংলাদেশ । আর একটি দিবস পেলাম যাকে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ।

    মাতৃভাষার ধর্মীয় প্রভাব ইসলাম কি বলে: মানুষের চিন্তা চেতনা ও মনের ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম উপার হলো মাতৃ ভাষার মাধ্যমে তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব ইসলামে অপরিসীম। মানুষের জন্য ভাষা আল্লাহর পক্ষ হতে নিয়ামত স্বরুপ আল্লাহ সুরা আর রহমানে বলেন সূরা নং ৫৫ আয়াত ৩-৪ "আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন ভাষা"

    আল্লাহ মানুষকে হেদায়াতের জন্য অনেক নবী রাসুল পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বা জাতির কাছে । সেই সকল নবী রাসুল গন তাদের জাতির কাছে আল্লাহর বানী প্রচার করেছেন তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে আল্লাহ বলেন সুয়া ইবরাহিম সুরা নং১৪ আয়াত নং ৪

    " আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। "


    আর আমাদের পবিত্র কোরআনও নাযীল হয় আমাদের মহানবী রাসুল (সঃ) এর কাছে ওনার মাতৃভাষায় যা ছিল আরবী দেখুন সুরা ১২) সূরা ইউসূফ আয়াত ২ "আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। "

    এবং ১৯) সূরা মারইয়াম আয়াত ৯৭ এ "আমি কোরআনকে আপনার ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে আপনি এর দ্বারা পরহেযগারদেরকে সুসংবাদ দেন এবং কলহকারী সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন।"

    এবং ২০) সূরা ত্বোয়া-হা , আয়াত ১১৩ "এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্কবাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়।"

    এছারাও ইসা আলাইহিস সালাম এই উপর ইনজিল কিতাব নাযিল হয় যা ছিল ওনার মাতৃভাষায় হিব্রুতে।

    ভাষার ভিন্নতাই হচ্ছে আল্লাহর মহিমা/মর্যাদা/গৌরব/ঐশ্বর্য ৩০) সূরা আর-রূম আয়াত নং ২২ শে আল্লাহ বলেন "তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।"

    বাংলাদেশের ভাষা: বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, বহু ধর্ম এবং বহু ভাষার দেশ। এ দেশে প্রধান ভাষা বাংলা হলেও শতকরা দুই ভাগেরও অধিক ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাস করে। এদের মধ্যে উর্দুভাষী বিহারি, তেলেগুসহ ৩০ লাখ বা তারও বেশী আদিবাসী বা নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী বাস করে। যদিও সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা এর অর্ধেক। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও প্রায় ৪৫ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসীদের ভাষা বিশে­ষণ করে দেখা যায় যে, পৃথিবীর চারটি প্রধান ভাষা-পরিবারের প্রায় ৩০টি ভাষা তারা ব্যবহার করে । এর মধ্যে কিছু ভাষা পৃথক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলেও অনেক ভাষাই পরস্পর এতটা ঘনিষ্ঠ যে এগুলোকে উপভাষাই বলা যায় যেমন তনচঙ্গা মূলত চাকমা ভাষার উপভাষা। অনুরুপভাবে রাখাইন মারমা ভাষার, লালং বা পাত্র গারো ভাষার এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ও হাজং বাংলার উপভাষা। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষার সংখ্যা ২৬-৩০ টি।

    আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস কিভাবে পালন করা হয়:? বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম , এই দিনে জাতিয় পতাকা অর্ধ নিমিত রাখা হয় সকল সরকারী ও বেসরকারী অফিসে সেই সকল ভাষা শহীদদের স্বরনে। সারাদেশ হতে মানুষ ঢাকার কেন্দীয় শহীদ মিনারে আসেন তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এবং প্রধান মন্ত্রী ও রাস্ট্রপতীর মাধ্যমে প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয় যা টিভি ও বেতারে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়ে থাকে এবং সকল জেলাতেও জেলার শহীদ মিনার গুলো মানুষে ভরপুর হয়ে থাকে। এই দিনে তারা শহীদ মিনারে ফুল প্রদান করেন শ্রদ্ধা হিসেবে, সারা দেশের সকল জেলা ও পাড়া মহল্লাতেও অস্থায়ী শহীদ মিনার বানানো হয় যেখানে ছোট ছেলে মেয়ে থেকে যুবক বৃদ্ধ সবাই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
     
    আর ১৯৫২ ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ দিবসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ১৯৫২

    সারা বিশ্বেও একই ভাবে যেখানে শহীদ মিনার রয়েছে বা অস্থায়ী ভাবে তৈরী করে ফুলের শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও ভাষা বিষয়ক আলোচনা এবং সংস্কৃতিক অনুস্ঠানের মাধ্যমে এই দিন পানল করা হয়ে থাকে।

    এ পৃথিবীর জন্য আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস :সারা বিশ্বে অনুমানিক ৬০০০ ভাষায় কথা বলা হয়ে থাকে এর মধ্য ৬০% থেকে ৮০% রয়েছে ঝুকির মধ্যে যার মানে এই ৬০-৮০% ভাষা গুলো ১০০ বছর পরে আর প্রচলিত থাকবেনা যা বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতি হুমকি, মানবতার প্রতি হুমকি।

    আমার মত আরো যারা প্রবাসে রয়েছেন তাদের আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে পালনের জন্য এক্সট্রা কিছু রয়েছে যা আমরা প্রতিদিনই করতে পারি, আমাদের প্রতিদিনের কাজের ফাকে কখনো কি দেখছি আমার সহকর্মী কোন ভাষায় কথা বলে তাদের ঐতিহ্য কি?

    আমার উদাহরনই দেই এখানে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বের সকল দেশের মানুষ অভিবাসি হয়ে থাকতে আসে সবার ভাষা ভিন্ন এমনকি এ দেশের আদিবাসীদের ভাষাও ভিন্ন ইংরেজী নয়। তাই রাস্তায় বাসে ট্রেনে বা রেস্টুরেন্টে বা অফিসে কত মানুষের সাথে প্রতিদিন দেখা হচ্ছে, যদি সুযোগ ও সময় থাকে সাহস করে তাদের সবার অরিজিন বা মাতৃভাষা সম্পকে যদি জানতে চেয়ে একটি কথা বলা শুরু করি দেখবেন সেই মানুষটা আপনাকে কত আগ্রহ নিয়ে মুখে কতটা হাসি নিয়ে আপনাকে তার ভাষায় কথা শোনাচ্ছে এই হচ্ছে মাতৃভাষা আর আমরা বাংলাদেশি হিসেবে তাদের কে মনে করিয়ে দিতে পারি আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসের কথা।

    এবার একটু খারাপ খবরটাও দেই অস্ট্রেলিয়ার নর্দান টেরিটরি যেখানে শত শত স্কুলের শিক্ষার্থিরা যারা তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে (ইংরেজি নয়) তারা মাতৃভাষায় শিক্ষা হতে বন্চিত হচ্ছে আর সরকারী সহায়তা ও কম পাচ্ছে তাদের ভাষায় কারন সরকারের পলিসির জন্য যা কিনা তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান ব্যন করে রেখেছে যদিও অস্ট্রেলিয়া সাপোর্ট করে ইউনাইটেড নেশনের ডিক্লারেশন যা আদিবাসি দের মাতৃভাষায় শিক্ষার সমঅধিকার নিশ্চিত করে এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের পাহাড়ী অন্চলের লোকদের কথা যদিও তাদের আদিবাসি মানতে আমি নারাজ তবে তাদের ভাষা রক্ষায় আমি একশত ভাগ সাপোর্ট করবো।

    তবে এ দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সর্ম্পকে বলা যায় এখন হতে আগামিতে এই বিশ্বে যারাই কোন ভাষা বা ঐতিহ্যের প্রতি কোন প্রকার বিরুপ আচরন করবে বা করার চিন্তার করবে তার আগে একশ বার ভাববে তার পরিনতির কথা। আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস প্রতি বছর আমাদের স্বরন করিয়ে দেয় এই দিবস পৃথিবীর সকল ভাষার সুরক্ষার জন্য উদাহরন স্বরুপ যা একটি ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করছে কারন কেহ কোন ভাষার প্রতি মানুষের প্রতি জুলুম করে যে পার পাবেনা এই দিন আমাদের সেটাই স্বরন করিয়ে দেয়। এখান থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া শুধু ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা, এটা একটি ব্যতিক্রমি ও গুরুত্বপুর্ন উপহার সারা বিশ্বকে সকল মানুষ কে একটি ছোট্র গরিব দেশের মানুষের পক্ষ হতে।

    আর আমাদের জন্য আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস বর্তমানটা চেক করে দেখি: ২১শে ফেব্রুয়ারী এলেই আমরা শোক পালনের অভিনয় করি । রাস্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সাধারন মানুষ পর্যন্ত যে যার মতো শোক পালনের অভিনয়ে অংশ গ্রহন করে নিজেদের ধন্য মনে করি ।
     
    ২১ শে ফেব্রুয়ারী মধ্যরাত থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত যতো কোটি টাকার ফুল দেওয়া হয় শহীদ মিনার একটি বছর যদি ফুল না দিয়ে সে টাকাটা শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষনে ব্যয় করা হতো তা হলে হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যরকম হতো ।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারী এলেই সপ্তাহ জুরে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করা হয় শহীদ মিনার অথচ শহীদদের কবর পরিস্কার করা প্রয়োজন মনে করে না সরকার সরকার । সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার আরো নাম না জানা কতো শহীদ যে অবহেলায় অপমানে মুখ গুজে পরে আছে কবরে তার খোজ রাখার কোন দ্বায়িত্ব যেন নেই রাস্ট্রের, সালাম, বরকত,রফিক ,জব্বারের পরিবারের সদস্যরা এখনও পায়নি সরকারের তরফ থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা । যা সত্যিই দু:খজনক।

    ২১ শে ফেব্রুয়ারী ঘটা করে ফুল দেবার অভিনয় করার পর ২২শে ফেব্রুয়ারী চলে ঘটা করে দৈনিক গুলোতে এবং টিভি চ্যানেল গুলোতে নিজের ছবি দেখা, স্মৃতি চারন সহ আরো কতো কি । যা সত্যিই হাস্যকর।
    মুখেই শুধু গেয়ে যাই —আমার ভাইয়ের রঙে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী — আর মনে আচরন করি বিমাতাসুলভ ।

    আর তরুন থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের অবস্থা জানতে এটাই যথেস্ট যেখানে দেখানো হয়েছে তরুন হতে আধুনিক মা সবাই জানেনা ২১শে ফেব্রুয়ারী কি হয়েছিল। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু আছে কি? আমার জানা মতে নেই। 

    এবারের ফেব্রয়ারীতে সবাই সচেতন হই বাংলা হোক হিন্দি আগ্রাসন মুক্ত, ডোরেমনের প্রভাব শিশুদের মাঝে দেখেছি এবং তা বন্ধ করাতে সাধুবাদ কিন্তু বড়রা যে সিরিয়ালে আসক্ত এবার তা থেকে মুক্তির জন্য সবাই কাজ করে যাই।

    আর যারা আধুনিকতার নামে হিন্দিতে কথা বলে ইংলিশে ভাব মারে এবং বাংলাটা ঠিকভাবে বলতে পারে না তাদের জন্য কবি - আবদুল হাকিম তার বঙ্গবাণী কবিতায় যথার্থই বলেছেন-
    যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
    সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥
    দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
    নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়॥"


    আমাদের আশা আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে: বাংলা ভাষার চরম প্রকাশও পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের মাধ্যমে বাংলা ভাষার সংরক্ষণের জন্য ১৯৫২ সালে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল এদেশের অকুতোভয় সন্তানেরা । তাদের আত্মত্যাগ আজ আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাদা লাভ করেছে ।

    বিশ্বের বিভিন্ন মানুষ তাদের আত্মত্যাগ কে স্মরণ করবে । আমাদের গৌরবদীপ্ত জীবনকাহিনী বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে । আর আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এ উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হবে । আর তা সম্ভব আমাদের ভাষাকে ভালবাসার মাধ্যমে এই ইতিহাস জানার মাধ্যমে একে সবার কাছে ছরিয়ে দেয়ার মধ্যমে।

    আশাকরি আমার এ পোস্টের মাধ্যকে সবাই একটু হলেও আমাদের এই মহান ভাষাকে ভালবেসে সবার মাঝে ছরিয়ে দিবো সেই শুভকামনায় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো -

    A Tribute to International Mother Language Day (21st February) by ZANALA Bangla
    দেখুন 
    ------------------------------------------------------------------------
    এই পোস্ট লিখতে যে সকল সুত্রের ও পোস্টের সাহাজ্য নেয়া হয়েছে:
    ০। আমার গত বছরের ইংরেজি ব্লগ International Mother Language Day- ফায়সাল হাসানhttp://www.maximusit.net/p/international-mother-language-day.html
    ১। ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারী… ফিরে দেখা… সুরঞ্জনা –http://www.somewhereinblog.net/blog/Suronjona/29327977
    ২। সামহ্যারেতে প্রকাশিত ২১শে ফেব্রুয়ারী নিয়ে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য পোষ্ট -নষ্ট কবিhttp://www.somewhereinblog.net/blog/architect_rajib/29325939
    ৩। যে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে … রাগিব হাসানhttp://www.somewhereinblog.net/blog/ragibhasanblog/28770489
    ৪। উইকিপিডিয়া http://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_Language_Movement
    ৫।২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা শোক পালনের অভিনয় করি -মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনhttp://blog.bdnews24.com/ShakhawatBabon/69140
    ৬। আমাদের মাতৃভাষা- http://www.dcnaogaon.gov.bd/index.php?option=com_content&view=article&id=80&Itemid=90
    ৭। Importance of mother language in Islam- Prof. Hasan Abdul Quayyum http://www.daily-sun.com/details_yes_15-02-2013_Importance-of-mother-language-in-Islam_410_2_33_1_1.html
    -----------------------------------------------------------------------
    >>> ফয়সাল হাসান -faysal2005@gmail.com <<<

    লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী, ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ভাষা দিবস, ১৯৫২, ভাষা শহীদ, ভাষা সংগ্রাম, বাংলা ভাষা, ৮ই ফাল্গুন, বাংলাদেশ, মাতৃভাষা, প্রথম প্রহর, একুশে, মহান একুশে, আর্ন্তজাতিক মাতৃ ভাষা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী, ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ভাষা দিবস, ১৯৫২, ভাষা শহীদ, ভাষা সংগ্রাম, বাংলা ভাষা, ৮ই ফাল্গুন, বাংলাদেশ, মাতৃভাষা, প্রথম প্রহর, একুশে, মহান একুশে ;

    Thursday, 21 February 2013 02:15:58 AM
    ভাষা আন্দোলন ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা: রাষ্ট্রপতি
    নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

    ঢাকা, ২১ ফেব্রুয়ারি: রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন কেবলই আমাদের মাতৃভাষার দাবি আদায় করেনি বরং তা বাঙালি জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায় এবং স্বাধিকার অর্জনে বিপুলভাবে উদ্বুদ্ধ করে। এ আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালি জাতির বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।


    রাষ্ট্রপতি আজ মহান শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।

    বানীতে তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিক; যাঁদের অসীম সাহস ও অদম্য প্রেরণায় ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি অর্জন করে মাতৃভাষার অধিকার।

    রাষ্ট্রপতি এ দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষাশহীদ বরকত, রফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরসহ নাম না জানা শহীদদের। তিনি তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

    তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন আমাদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির লালনসহ সামনে এগিয়ে যাওয়ার অফুরন্ত প্রেরণা যোগায় এবং সকল অন্যায়, অবিচার ও বঞ্চনার বিরুদ্বে দাঁড়াতে উজ্জীবিত করে।
    তিনি বলেন,কোনো জাতির আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। আমরা গর্ববোধ করি এই ভেবে যে 'শহীদ দিবস' আজ পরিণত হয়েছে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে'। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের যে গভীর তাৎপর্য তার অনুরণন আজ আমরা সারাবিশ্বে দেখতে পাই 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে।

    বানীতে জিল্লুর রহমান বলেন, অমর একুশে তাই কেবল আমদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রাকে অনুপ্রাণিত করছে না বরং তা পৃথিবীর অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে লালন ও সংরক্ষণে উৎসাহ যোগাচ্ছে। মূলত মহান ভাষা দিবস আজ পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করেছে, বিশ্ববাসীকে করেছে ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।

    রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করে বলেন,ভাষা ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে। পৃথিবীর বর্ণাঢ্য ভাষা ও সংস্কৃতির বহমান ধারাকে বাঁচিয়ে রাখতে লুপ্তপ্রায় ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিশ্ববাসী আরও অবদান রাখবে এবং পৃথিবীর সব নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে এক শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ।

     

    (ঢাকাটাইমস/ এইচএফ/ ০২.১০ঘ.)


    বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ভাষা শহীদ দিবস

     
    21.02.2010, 15:08
    প্রবন্ধটি ছাপানোর জন্য বন্ধুকে ইমেইল করুন এই পাতাটি ব্লগে যোগ করুন

    আজ অমর একুশে .শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাংলা ভাষা-ভাষি লোকজন স্মরণ করছে ভাষা শহীদদের. ফুলে ফুলে ভরে গেছে ভাষা শহীদদের স্মরনে নির্মিত শহীদ মিনার.একই সাথে আজ বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস.ইউনেস্কো ১৯৯৯ সনে এক ঘোষনায় এই দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়.

    এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে রাশিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাসে. 
    উল্লেখ্য,১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার রক্ষার মিছিলে তত্কালীন পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশে সাধারন মানুষের উপর গুলি চালায় পুলিশ.ঐ সময় নিহত হয় আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর আর আব্দুল জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে. 
    রেডিও রাশিয়ার "বাংলা বিভাগের" সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ৫২'র ভাষা শহীদদের স্মরণ করছি. 

No comments:

Post a Comment