Monday, December 8, 2014

প্রিয় বন্ধু, অন্ত্যজ জীবনের রূপকার বরেণ্য কথাশিল্পী অনিল ঘড়াই আর নেই। জাত কেউটের মতই জাত লেখক ছিলেন অনিল ঘড়াই। জাতে কিন্তু ছিলেন হাড়ি। অন্ত্যজ, ব্রাত্য, দলিত। অতি দলিত। কিন্তু দলিত জীবনের কোনো হীনমণ্যতা তাঁকে কোথাও স্পর্শ করতে পারেনি। অন্ত্যজ জীবনের সমাজবাস্তবকে তুলে ধরতে তিনি আমার মতে অনেক বড় বড় বাংলা লেখকের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখায় বিশেষকরে ছোটগল্পে।পরিযান প্রমাণ।

প্রিয় বন্ধু, অন্ত্যজ জীবনের রূপকার বরেণ্য কথাশিল্পী অনিল ঘড়াই আর নেই।

জাত কেউটের মতই জাত লেখক ছিলেন অনিল ঘড়াই। জাতে কিন্তু ছিলেন হাড়ি। অন্ত্যজ, ব্রাত্য, দলিত। অতি দলিত। কিন্তু দলিত জীবনের কোনো হীনমণ্যতা তাঁকে কোথাও স্পর্শ করতে পারেনি। অন্ত্যজ জীবনের সমাজবাস্তবকে তুলে ধরতে তিনি আমার মতে অনেক বড় বড় বাংলা লেখকের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখায় বিশেষকরে ছোটগল্পে।পরিযান প্রমাণ।

পলাশ বিশ্বাস


যা ছিলেন

যা হয়েছিলেন

জাত কেউটের মতই জাত লেখক ছিলেন অনিল ঘড়াই


জাতে কিন্তু ছিলেন হাড়ি। অন্ত্যজ,ব্রাত্য,দলিত। অতি দলিত। কিন্তু দলিত জীবনের কোনো হীনমণ্যতা তাঁকে কোথাও স্পর্শ করতে পারেনি। অন্ত্যজ জীবনের সমাজবাস্তবকে তুলে ধরতে তিনি আমার মতে অনেক বড় বড় বাংলা লেখকের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখায় বিশেষকরে ছোটগল্পে।


সাতের দশকের যে শক্তিমান লেখকদের কথা বাজারি লেখায় ছয়লাপ বাংলা সাহিত্যভুলে যেতে চলেছে,অভিজিত সেনগুপ্ত,শৈবাল মিত্র,অমর মিত্র,ভগীরথ মিশ্রদের সেই প্রজন্মের লেখদের সমকক্ষ ছিলেন অনিল ঘড়াই।


অতি আফসোসের সঙ্গ লিখতে হচ্ছে যে বাংলা তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে বন্চিত করল। টুকরো খবরে এবং কলকাতার কচড়ায় নামমাত্র উল্লেখ করে ষাটটির বেশি বইয়ের লেখকে সম্মান জানানো হল।


অন্ত্যজ জীবনের রূপকার বরেণ্য কথাশিল্পী অনিল ঘড়াই আর নেই। বিগত 23 শে নভেম্বরে কলকাতার এক নার্সিংহোমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর।


নদিয়ার কালীগঞ্জের আদি বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।


তারপর কোনো লেখা তাঁকে নিয়ে আমার চোখে পড়েনি।


আশা করব অন্ততঃ বাংলা লিটিল ম্যাগ তাঁকে স্মরণ করবে এবং বইমেলায় হয়ত আমরা কিছু লেখায় অনিল ঘড়াই ও তাঁর সমকালকে আবার ফিরে দেখতে পারব।


অনিলের মত আমি ক্ষমতাবান বাংলা লেখক নই।উদ্বাস্তুর ছেলে।পড়াশুনা হিন্দিতে বা ইংরাজিতে।হিন্দি কাগজে কাজ করি। লেখালেখি ইংরেজিতে করার অভ্যাস আছে।


লেখা আমার পিতৃদায়,যেহেতু তিনি সারা ভারতে অন্তযজ উদ্বাস্তুদের নিয়ে সারা জীবন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন এবং বাংলার বাইরের বাঙালিদের নিয়ে বাঙালির আদৌ কোনো মাথাব্যথা নেই।তাই আমায় মাঝে মাঝে বাংলা লেখার চেষ্টা করতে হয়।


বাংলায় লেখা অনিলের বরং জলভাত ছিল।ব্যাপক ছিল তাঁর পাঠক সমাজ এবং যত্ন করেই তাঁর বই প্রকাশকরা ছাপতেন।বাংলায় কোনো ভাষাতেই আমার লেখা ছাপা হয় না।কোনো দিনও হবে না।


তবু অনিল ঘড়াইকে নিয়ে একটি অতি দীর্গ লেখা বহুকাল আগে লিখেছিলাম।সুস্নাত জানা সমাপাদিত বইয়ের জন্য।অনিল ঘড়াই বিশেষ করে আমায় লিখতে বলেছিলেন।জানি না,আদৌ সে লেখা ছাপা হল কিনা।লেখার পর আমি আগামী লেখায় চলে যাই।আগের লেখা ছাপা হল কিনা খোঁজ করিনা।


ঔ লেখায় তাঁর পরিযান বইখানির সব গল্প নিয়ে লিখেছিলাম।

আমি তারাশন্করের বিখ্যাত সব বই পড়েছি,পড়েছি মাণিক বন্দোপাধ্যায়ও, যাদের লেখায় অন্ত্যজ জীবনের ইতিকথা লেখা আছে বলে দাবি করা হয়।সেখানে অন্ত্যজ জীবনের যৌণতার বিবরণ অনেক মিললেও তাঁদের জীবন জীবিকার খুঁটিনাটি অনুপস্থিত বলেই আমার মনে হয়েছে।সচেতন প্রচেষ্টা সত্বেও প্রামাণিকতার অভাব মনে হয়েছে ছত্রে ছত্রে।


অনিল ঘাড়াইয়ের লেখায় কিন্তু সেই সমাজবাস্তব ছিল যা আমি বাংলাদেশি লেখকদের লেখায় দেখতে পাই।


কিন্তু নবারুণদা অন্ত্যনা হয়েও,পা থেকে মাথাপর্যন্ত আগাগোড়া আরবন হয়েও অন্ত্যজ ও ব্রাত্যজীবনের যে সংগ্রামকে ভাষা দিতে পেরেছেন.সেটা অনিলের লেখাতেও পাইনি।আসলে সেই লড়াইয়ে অনিল ছিলেনই না কোথাও,তাঁর সমাজবাস্তবের দৃষ্টিপাত তাই আমাকে তাঁর কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছে।


১৯৯৪ সালে দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন সংস্কৃতি পুরস্কার।বাংলা দলিত সাহিত্য আন্দোলনও তাঁকে পুরস্কৃত করেছিল,বোধহয় 2002 সালেকাঁথিতে সেই বাংলা দলিত সাহিত্য সম্মেলনে আমি প্রথম ও শেষবার গিয়েছিলামতারপর বইমেলা ছাড়াও কোলকাতায় অনেক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে।কিন্তু সেই শেষ।


দলিত সাহিত্য সম্মেলনে রাজনৈতিক দলাদলি দেখে আমার আর ওদের সঙ্গে ওঠা বসা হয়নি এবং কোনো কালই দলিত সাহিত্যকি হিসাবে চিন্হিত হতে চাননি অনিল ঘড়াইও।


আমার এখনো আশ্চর্যা হয় যে কোন যে তাঁকে সেবার পুরস্কার দেওয়া হল এবং কানই বা তিনি নিতে গেলেন।তিনি ত মেইন স্ট্রিমের লিখক হতে সাদ্যমত চেষ্টা করেছিলেন এবং তাঁ বড় লেখক হয়ে ওঠার যথেষ্টই সম্ভাবনা ছিল।


আমি নাগরিকত্ব সংশোধণী আইন পাশ হওয়ার পর থেকে কোলকাতায় সেই 2003 সাল থেকে কোথাও বইমেলা বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে যাইনা।মাঝে ভাষাবন্ধনে যুক্ত থাকার জন্য হয়ত একাধবার গিয়েছি।


তাই অনিল ঘড়াইয়ের কোনো সংবাদ আমি জানতাম না।কয়েক মাসের বন্ধুত্বের জন্য তাঁকে প্রিয় বন্ধু লিখলাম,জানিনা সে অধিকার আমার আছে কিনা।


তাঁর প্রয়াত হওয়ার খবরও ঔ টুকরো খবর থেকে জানা।আমাকে কেউ জানাননি।কত লোক জনতে পেরেছেন,তাঁর পাঠকদের সবাই জানেন কিনা ধন্দে আছি।


তাই অন্ততঃ বাংলার বািরের পাঠকদের জন্য এই লেখার প্রয়োজন মনে হয়েছে।বাংলায় অনিলের অনেক বন্ধু আছেন, যারা আশা করি ভালোভাবে সময়মত অনিলকে স্মরণ করবেন এবং অবশ্যই তিনি তাঁর প্রাপ্যসম্মান থেকে বন্চিত হবেন না৷‌


অনিল ঘড়াইয়ের জন্ম ১৯৫৭ সালে মেদিনীপুর জেলার এগরা থানার অম্তর্গত রুশিতাংশণীপুর গ্রামে৷‌ তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময় কেটেছে নদীয়া জেলার কালীগঞ্জে৷‌


পিতা অভিমন্যু ঘড়াই ও মাতা তিলোত্তমা ঘড়াই।

মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর৷‌


রেখে গেছেন দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে৷‌

নদিয়ার কালীগঞ্জের আদি বাড়িতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।


গত ৮ মাস ধরে কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন এই সাহিত্যিক। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর এক সাহিত্যিক নন্দদুলাল রায়চৌধুরী বলেন, "সাহিত্য-সংস্কৃতির বড় ক্ষতি হয়ে গেল।"




২৭ বছর বয়সে চক্রধরপুরে রেলের ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৫ সালে খড়্গপুর রেল বিভাগে বদলি হন। ১৯৯০ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্প প্রকাশ হয় 'দেশ' পত্রিকায়। নদিয়ার রাজোয়াড় বিদ্রোহ নিয়ে লেখা উপন্যাস 'অনন্ত দ্রাঘিমা' ২০১০ সালে বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার পায়। ১৯৯৪ সালে দলিত সাহিত্যের জন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছিলেন সংস্কৃতি পুরস্কার।


তাঁর নুনবাড়ি, আকাশ মাটির খেলা, কাক, পরিযান-সহ বহু লেখা সাহিত্যপ্রেমী মনে রেখেছেন। রেলশহরের কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে তিনি গড়েছিলেন 'ঘরোয়া সাহিত্য বাসর'।


কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়েতে আধিকারিক হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরিসূত্রে চক্রধরপুর ও পরে খড়্‌গপুরে বসবাস করতেন।


তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ কাক এবং প্রথম উপন্যাস নুনবাড়্থি। তার গল্প, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে গ্রন্থের সংখ্যা পঞ্চাশেরও বেশি। অনিল ঘড়াইয়ের সাহিত্যের মূল সম্পদ দলিত, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনচর্যা। নদীয়া ও মেদিনীপুরের গ্রামীণ মানুষ ও তাদের কথ্যভাষা যেমন উঠে এসেছে তাঁর রচনায়, তেমনি চক্রধরপুরে বসবাস করার সুবাদে সিংভূম অঞ্চলের কথ্যভাষাসহ সেখানকার মানুষের জীবনের ছবি পাওয়া যায় তাঁর সাহিত্যে।


হিন্দী ও ইংরেজি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ।


দীর্ঘদিন থেকে কিডনির অসুখে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ অবস্থাতেও সমানে চালিয়ে গেছেন তাঁর সাহিত্যকর্ম, 'তূর্য' পত্রিকার সম্পাদনা ও অন্যান্য কাজ। মানুষের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার ছিল তাঁর চরিত্রের একটি উজ্জ্বল দিক।


প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'নুনবাড়ি' এবং গল্প-সঙ্কলন 'কাক' থেকেই তাঁর স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত সাহিত্য-পথের যাত্রাশুরু৷‌ যে যাত্রাপথে জীবনের বিস্তৃত পরিসর, মানসিক টানাপোড়েন, খুঁটিনাটি উঠে এসেছে বারবার৷‌ ষাটেরও বেশি বইয়ের রচয়িতা এই সাহিত্যিক তাঁর 'অনম্ত দ্রাঘিমা'-র জন্য পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার৷‌ ঔপন্যাসিক ও গল্পকার পরিচয়ের আড়ালে প্রয়াত সাহিত্যিকের ছিল এক কবি-মন৷‌ কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম৷‌ কবিতার জন্য পেয়েছেন 'আকাশ সাহিত্য পুরস্কার' এবং 'কবি নিত্যানন্দ পুরস্কার'৷‌ কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন সোমেন চন্দ পুরস্কার, তারাশঙ্কর পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, তিস্তা-তোর্সা সম্মান-সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মান৷‌ তাঁর পরিচিত গল্প-উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে 'পরীযান ও অন্যান্য গল্প', 'ভারতবর্ষ', 'কামকুঠিয়া', 'ফুলপরী', 'জন্মদাগ', 'নীল দুঃখের ছবি', 'সামনে সাগর', 'দৌড়বোগাড়ার উপাখ্যান', 'বনবাসী', 'জার্মানের মা', 'লোধগ্রামে সূর্যোদয়' প্রভৃতি৷‌

তাঁর কিছু বইঃ

  • Kak

  • The Stories of the Downtrodden

  • Poradhin

  • Agun

  • Gyanbrikkher phol

  • Germaner ma

  • Bharatbarsha

  • Garba dao

  • Noon Bari

  • Parijaan O Annanyo Galpo

  • Bababashi

  • Ekkanota Golpo

  • Koler Putul

  • Migh Jiboner Trishna

  • Ananta Draghima

  • Swapner Khorapakhi

  • Shreshto Golpo

  • Bokrorekha

  • Nil Dukkher Chobi

  • Khela Ghor

  • Antaja Premer Golpo

  • Swet Poddo

  • Nuna Samader Golpo

  • 25Ti Nirbachito Golpo

  • Biparit Juddhyer Mohora

  • Chaitrophul



মাটির সেতু

অনিল ঘড়াই এর লেখার জীবন্ত নমুনা তাঁর এই ছোটগল্পটি

কানের কাছে একটা মশা উড়লে আজকাল ভয় পায় রিতা। ভয়টা যে কোথা থেকে আসে সে নিজেও জানে না। এই ভয়ের কথা সে কারও কাছে মুখ ফুটে বলতে পারে না। কতবার ভেবেছে, বলবে। পারেনি। গুটিয়ে যাওয়া কেন্নোর মতো তার তখন শরীর। কুলকুল করে ঘামে। গলা শুকোয়। ফ্রিজের জল খেলেও হৃদপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক হয় না। তন্ময়কে জাগিয়ে দিয়ে সে তখন উদ্‌ভ্রান্ত স্বরে বলে ওঠে, অ্যায়, শুনছ ?

তন্ময়ের ঘুম ভাঙলে ভাল, নইলে আবার একা হয়ে যায় রিতা। ভয়টা মাকড়সার জাল বোনে তার মনে। বিষাক্ত লালায়, ভাবনায় ভরে ওঠে তার মন। এই প্রথম নয়, অনেক দিন থেকেই এমন অনুভূতি তাকে কুরে কুরে খায়। হিম করে দেয় রক্ত।

তুয়া এখন ঘুমোচ্ছে অঘোরে। দেওয়াল ঘড়িতে একটা বাজার সংকেত দেয়। থানায় ঘণ্টা বাজিয়ে দেয় নাইট-গার্ড। তুয়ার শরীর ছুঁয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিতা। এখনও এক বছর বয়স হয়নি মেয়েটার। সাত মাসে অন্নপ্রাশন হল। সেই আনন্দের দিনে ঠিক এমনই একটা ভয় পিচ্ছিল হিম সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরেছিল রিতার শরীর। সেদিনও পাশে তন্ময় ছিল। তার ঘেমো মুখের দিকে তাকিয়ে তন্ময় প্রথমে কিছু আন্দাজ করতে পারেনি। কিছু পরে ঠেলা মেরে সে বলেছিল, অ্যায় রিতা, তোমার কি শরীর খারাপ ?

— না, মানে...

কী হয়েছ বলবে তো ?

— কী বলবে রিতা। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। বাড়ি ভর্তি লোকের মাঝখানে 'ভয়' শব্দটার কোনও স্থান নেই। মুখ ফসকে কিছু বলে ফেললেই সবাই সন্দেহের চোখে তাকাবে। ভাববে— পাগল। সবার সামনে সে ছোট হতে পারবে না। এতে তন্ময়ের মান-সম্মান জড়িয়ে আছে। সেদিনও কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল রিতা। কাঁটা গেলার চেয়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি নিয়ে সে কোনও মতে সামাল দিয়েছিল পরিস্থিতি। অথচ ছোটবেলা থেকে সে নাকি অনেক সাহসী। বাথরুমে পড়ে গিয়ে তার মা'র যখন ষ্ট্রোক হল— তখন সেই বিপদের সময় রিতাই ডায়াল ঘুরিয়ে ডেকে এনেছিল ডাক্তার। রমা তবু বাঁচেনি। মরার আগে সে নাকি রিতার হাত ধরেছিল শক্ত করে। পরে যখন হাত ছাড়াতে যায়— তখন কী করুণ অবস্থা। সবাই ভয় পেলেও রিতা সেদিন ভয় পায়নি। রীতিমতো গায়ের জোরে সে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়েছিল মায়ের মুঠি থেকে। এ ঘটনা বেশি দিনের নয়। মাত্র চার বছর আগের। কেমিষ্ট্রি-অনার্স পাশ করার পর তার বিয়ে হয়ে গেল তন্ময়ের সঙ্গে। তন্ময়ের বদলির চাকরি। রিতা তার সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে। এই তো বছর খানেক আগে তারা ধানবাদে ছিল। শাশুড়ি চিঠি লিখতেন, সাবধানে থাকবে। তন্ময়ের শরীরের প্রতি নজর রেখো। সব ঠিক ছিল তবু কোথায় যেন একটা ফাঁক। আর সেই ফাঁক দিয়ে হিমেল রাতের সিঁধেল চোরের মতো ঢুকে এসেছে ভয়। আজকাল রিতা বড় মনমরা। সে একা থাকতে ভালবাসে। কখনও-সখনও রমার মৃত্যু দৃশ্য তার চোখে ভাসে। একটা ঠাণ্ডা হাত শক্ত করে ধরে আছে রিতার হাত। ছাড়বে না কিছুতেই। সঙ্গে নিয়ে যাবে। রিতা যাবে না, তবু জোর করে নিয়ে যাবে। রিতা ভাবে মৃত্যুর আগে বা পরে সবাই কি অমন স্বার্থপর হয়ে ওঠে ?  যে মা তাকে এত ভালবাসত— সে কেন অমন ভাবে তার হাত দুটো আঁকড়ে ধরল ?  স্বপ্নে কতবার যে রিতা ছটফট করেছে। সে কিছুতেই মায়ের সঙ্গে পারছে না। তাকে হারিয়ে দিচ্ছে মা। একটা খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। কেউ ফুঃ দিলে সে বুঝি তলিয়ে যাবে। 'আঃ!' এই অস্ফূট আর্তনাদ রিতার বুকে কান পাতলে তন্ময় বুঝি শুনতে পাবে। তবু কেন নির্বিকার তন্ময় ?  তা হলে সব শুনেও সে কি চুপ করে আছে।

মশারি উঠিয়ে জানলার কাছে এসে দাঁড়াল রিতা। বাইরে বেশ ফুরফুরে হাওয়া। বসন্তের এই হাওয়া গায়ের ঘাম চেটে খায়। রিতার আরামবোধ হয়। তার দু' চোখ থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে ভয়। হাওয়ায় প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মতো নড়ছে সিন্থেটিক পর্দা। সে নিজে পছন্দ করে কিনেছে। ঘর সাজাতে ভালবাসে বলেই ঘরের প্রতি তার এত নজর। তন্ময়েরও এতে সায় আছে। রিতা এ সব ব্যাপারে সুখী। তন্ময়ের মা তার কোনও কাজে দখলদারি দেয় না। বরং উৎসাহ দেয়। শ্বশুর তো মাটির মানুষ। ভগবান তুল্য। যা সে রেঁধে দেবে ভোগের প্রসাদ ভেবে খেয়ে নেবে তৃপ্তিতে। অথচ রিতা জানে— তার রান্না মোটেও আহামরি নয়। রান্নার বই পড়ে রান্না শেখা— সে তো এক ধরনের পুতুলখেলা। এত খেলা-খেলা সুখ তবু কেন ভয়ের অসুখ ?  তন্ময়কে সে কতদিন বলেছে, জানো, এখানে থাকতে আমার একদম ভাল লাগে না। তোমাদের বাড়িতে এলে আমার মুখের হাসি কে যেন চুরি করে নিয়ে যায়।

— সে কী, এ তো বড় ডেঞ্জারাস রোগ! তন্ময়ের চোখে-মুখে রসিকতা, শ্বশুরবাড়ি কোন মেয়েরই বা ভাল লাগে! আমার মায়েরও ভাল লাগেনি; তোমারও ভাল লাগবে না এ তো জানা কথা!

— তুমি হালকা ভাবে নিও না, প্লিজ। আমি আর পারছি না।

— কেন, কী হয়েছ ?

— এখানে এলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। রিতা হাঁপায়।

— সাউথ ফেস রুম। তাতেও তোমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ?

রিতা আলতো ভাবে নিজের চুলের গোড়া চেপে ধরে, তোমার ছুটি শেষ হতে আর ক'দিন বাকি ?

— পাঁচদিন পরেই চলে যাব।

— পাঁচদিন নয়, আজই চলো।

— এত তাড়াহুড়োর কী আছে! ছুটিই পাই না। বহু কষ্টে ম্যানেজ করতে হয়েছে, বুঝলে!

রিতা মুখ ঝুঁকিয়ে চলে যায় পাশের ঘরে, তন্ময় তার এই ব্যাকুলতার কোনও অর্থ আবিষ্কার করতে পারে না। যত দিন যায়, ততই যেন শুকিয়ে যায় রিতা। তার ঠোঁটের হাসি ভয় এসে চুরি করে নিয়ে গেছে।এ কথা সে কাকে বলবে ?  সে ভেবেছিল— তুয়া আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তা-ও হল না। এখন ভয়টা তুয়ার জন্যও। অতটুকুন মেয়ে, সবে দু' একটা কথা শিখছে। হা করে শুনতে চায় আশেপাশের শব্দ। সব শব্দ কি তুয়ার শ্রবণযোগ্য। এই যে বাতাসের শিস ভূতের মতো খেলে যাচ্ছে সারা ঘরে, ভাগ্যিস তুয়া ঘুমিয়ে আছে— না হলে নির্ঘাৎ সে শুনতে পেত। রিতা চায় না তুয়াও একই অসুখে ভুগুক। ভয়টা ভাইরাস। একবার আক্রান্ত হলে ছড়িয়ে পড়বে। বাইরে মৃদু জ্যোৎস্না আছে। চারদিক বেশ নিঝুম। সামান্য হিমেল আমেজ। শীত যেন গিয়েও যাচ্ছে না। কেন যে শীত আসে, বিশ্রী! রিতা খসে পড়া আঁচলটা বুকের উপর টেনে আনে। এখানে এসে সে নাইটি পরে না। শাশুড়ির শান্ত চোখ দুটো কেমন ড্যাবা-ড্যাবা হয়ে যায়। মন দিয়ে সিঁদুর পরে, না হলে সেই একই দৃশ্য! ক' দিনের তো মামলা। মানিয়ে নিতে হয়। জোর করে হাসতে হয়। না হলে অশান্তি। যাকে বলে 'গুড গার্ল' রিতা তাই হয়ে থাকতে চায় সবার কাছে। তার মা বলতেন, কাউকে আঘাত দিবি না, আঘাত দিলে তা ফিরে আসে। এখন, এই নিঝুম রাতে কোথায় যেন একটা কুকুর ডেকে ওঠে। বড় অদ্ভুত সেই ডাক। গায়ের লোমগুলো যেন খাড়া হয়ে ওঠে। রোজ রাতে কি এই কুকুরটা এমন তারস্বরে কাঁদে ?  রিতা আবার কেমন কুঁকড়ে যায়। সাদা হয়ে ওঠে চোখের জমি। তন্ময়ের ঘুমের কপাল ভাল। না জাগালে রোদ মুখে না পড়লে তার ঘুম ভাঙে না। নাইট-ল্যাম্পের আলোয় পুরো ঘর এখন নীল সমুদ্র। রিতা শুধু ঢেউ গুনছে। আর হাঁপিয়ে উঠছে। তার বয়সও হচ্ছে। কেউ তার কথাকে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। সবাই নিজের কথাটাই বেশি করে ভাবছে। এই দোতলা বাড়িটায় কেউ বুঝি নিঃশব্দে ঘোরাফেরা করে! রিতা নাক টেনে গন্ধ শোঁকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। দেওয়াল ঘড়িটার টিক-টিক শব্দ তার বুকে ভয়ের হাতুড়ি ঠুকে দেয়। রিতার চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। তার যত রাগ তন্ময়ের উপর গিয়ে পড়ে।

— তুমি আমার কথা শুনবে কি না বলো ?  তোমাকে শুনতেই হবে। রিতা হাঁপায়।

— বলো, কী বলতে চাও ?

— এখানে আমি আর থাকব না। আমার ভীষণ ভয় করে।

— ভয়! কীসের ভয় ?

— ও আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না। রিতার বিপর্যস্ত গলা, বাবাকে বলো বাড়িটা উনি বিক্রি করে দিক।

— তা হয় না। জানো, কত কষ্ট করে বাড়িটা উনি করেছেন। রিটায়ারমেন্টের সব টাকা এই বাড়ি করতে চলে গিয়েছে।

— তোমার কাছে বাড়ি বড় না আমি বড় ?  বলো, তোমাকে বলতেই হবে। রিতা ফুঁপিয়ে ওঠে; এই বাড়ির কিছু দূরেই শ্মশান। রোজ একটা না একটা মড়া এই রাস্তা দিয়ে যায়। ওরা কী রকম বীভৎস চিৎকার করে: বলো হরি হরি বোল! তুমি তো ঘরে থাকো না। আমাকে সব দেখতে হয়, শুনতে হয়। যারা যায় তাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমি যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি। ওই কথাগুলো আমি যে কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারছি না।

— এখানে আরও একশ'টা বাড়ি আছে, প্রতিটা বাড়িতে বউ আছে— কই তাদের তো এমন ভাবে রিয়্যাক্ট করে না।

— তাদের করে না বলেই যে আমার কিছু হবে না এমন তো নয়। সবার নার্ভ সমান নয়। এ রকম বেশি দিন হলে আমি পাগল হয়ে যাব। রিতা এবার সশব্দে কেঁদে ওঠে। তার কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তন্ময়ের। আলো জ্বেলে সে রিতার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘাড়ে হাত রেখে চমকে ওঠে তন্ময়। অদ্ভুত ঠাণ্ডা রিতার পুরো শরীর জুড়ে উঠে আসছে। রিতা যেন রক্তমাংসের মেয়ে নয়, একটা বরফের চাঁই। অনেকক্ষণ পরে তন্ময় শুধোল, তুমি ঘুমোওনি ?  আঁচলে চোখ মুছে নিয়ে রিতা বলল, না, ঘুম আসছে না। জানো, আবার একটা ডেড বডি গেল! আমার ভীষণ ভয় করছিল। আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আমার দম আটকে যাবে। মায়ের মতো আমি বুঝি তুয়ার হাতটা আঁকড়ে ধরব। তাই ভয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছি। এখানে দাঁড়াতেই হুড়মুড়িয়ে কান্না এল। কেন যে কান্না আসে, তা আমি তোমাকে কোনও দিনও বোঝাতে পারব না।

সমস্যার গভীরে ঢোকার চেষ্টা করল তন্ময়। কিন্তু ব্যর্থ হল সে। নিস্তেজ হয়ে বলল, কিছু মনে না করলে কাল আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।

— আমার ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার সব নরম্যাল।

— মেডিসিনের ডক্টরের কাছে নয়, আমি তোমাকে—

কথা শেষ হতে দিল না রিতা, ক্রুদ্ধ-আক্রোশে সে ঝাঁপিয়ে পড়ল তন্ময়ের বুকের উপর, তুমি আমাকে পাগল ভেবেছ, তাই না ?  সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যেতে চাও, তাই না ?  আমি জানি, তুমি আমার মরা মুখ দেখতে চাও। ভালই তো— আমি মরে গেলে তুমি তোমার অফিসের সুন্দরী স্টেনোকে বিয়ে করে নিতে পারবে।

— কী যা তা বলছ ?

— যা তা নয়, ইউনিভার্সাল ট্রুথ। রিতা থামল কিছু সময়। তারপর দম ছেড়ে বলল, তুমি যা চাও তা আমি কিছুতেই হতে দেব না। তুয়ার কিছু ক্ষতি হলে আমি তোমাকে শান্তিতে বাঁচতে দেব না।

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো তন্ময়ের অসহায় অবস্থা। সে যে কী করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না। তার আগেই রিতা তার হাত ধরে, চলো, বিছানায় চলো। মেয়েটা একা আছে। ওর পাশে আমাদের থাকা দরকার। ওর যাতে আমার অসুখটা না হয়, সেটা তো তোমাকে দেখতে হবে।

রিতার অস্বাভাবিক গলা। তন্ময় বাধ্য ছেলের মতো বিছানায় গিয়ে বসল। এখন ভালবাসার ইশারা করা পাপ। তবু সে রিতার হাতটা ধরল। রিতা সঙ্গে সঙ্গে বলল, জানো, আমার মা মরার আগে আমার হাতটা ঠিক এমনি করে ধরেছিল।

তন্ময় কোনও উত্তর দিল না।


জার্মানের মা / অনিল ঘড়াই / Nilkhet.Co - সবার জন্য বই

www.nilkhet.co/boi/deshi/CG-6596

নীলক্ষেত › অনিল ঘড়াই › জার্মানের মা. জার্মানের মা. রেট করুন: জার্মানের মা. নীলক্ষেত মূল্য: ৫৫৳. বইয়ের অবস্থা: ভালো. পছন্দ হয়েছে. স্টকে আছে. বিস্তারিত; সারমর্ম; কমেন্ট করুন; আরও বই. বই আইডি: CG-6596; নাম: জার্মানের মা; লেখক: অনিল ঘড়াই; পাবলিশার: সাব ক্যাটাগরি: ছোটগল্প ও গল্পসমগ্র,. No Summary added. Do you want to add one?

কাক / অনিল ঘড়াই / Nilkhet.Co - সবার জন্য বই

www.nilkhet.co/boi/deshi/UP-6911

নীলক্ষেত › অনিল ঘড়াই › কাক. কাক. রেট করুন: কাক. নীলক্ষেত মূল্য: ৩৫৳. বইয়ের অবস্থা: ভালো স্টক শেষ. স্টক শেষ. বিস্তারিত; সারমর্ম; কমেন্ট করুন; আরও বই. বই আইডি: UP-6911; নাম: কাক; লেখক: অনিল ঘড়াই; পাবলিশার: সাব ক্যাটাগরি: উপন্যাস,. No Summary added. Do you want to add one? Add a comment... Also post on Facebook. Comment ...

চৈত্রফুল / অনিল ঘড়াই. Caitraphula / - D. K. Agencies

www.dkagencies.com/result.asp...

পাতাটিকে অনুবাদ করে দেখাও

DK Number: DKBEN-4844. ISBN: 8189834681. Title: Caitraphula / চৈত্রফুল /. Author: Anila Gharai. অনিল ঘড়াই. Imprint: Kalakata : Ganacila, কলকাতা : গাঙচিল,. Physical Desc.: 221 p. ; 22 cm. Year: 2009. Price: USD 12.70. Nature Of Scope: Novel. Language: In Bengali. Summary: Novel on social themes. Subject Strings ...

অনন্ত দ্রাঘিমা / অনিল ঘড়াই. Ananta draghima /

www.dkagencies.com/.../details....

পাতাটিকে অনুবাদ করে দেখাও

DK Number: DKBEN-4634. ISBN: 9788129509130. Title: Ananta draghima / অনন্ত দ্রাঘিমা /. Author: Anila Gharai. অনিল ঘড়াই. Imprint: Kalakata : De'ja Pabalisim, কলকাতা : দে'জ পাবলিশিং,. Physical Desc.: 456 p. ; 25 cm. Year: 2009. Price: USD 19.75. Nature Of Scope: Novel. Language: In Bengali. Summary: Novel, based on ...

সামনে সাগর / অনিল ঘড়াই. Samane sagara / - D. K. Agencies

www.dkagencies.com/.../details....

পাতাটিকে অনুবাদ করে দেখাও

DK Number: DKBEN-1519. ISBN: 8129500825. Title: Samane sagara / সামনে সাগর /. Author: Anila Gharai. অনিল ঘড়াই. Imprint: Kalakata : De'ja Pabalisim, কলকাতা : দে'জ পাবলিশিং,. Physical Desc.: 224 p. ; 22 cm. Year: 2003. Price: USD 7.25. Nature Of Scope: A novel. Language: In Bengali. Summary: Novel, based on social ...


No comments:

Post a Comment