Sunday, January 6, 2013

ফের ভাঙড়ে আক্রান্ত হলেন সিপিআইএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা।রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কবলে বিশ্বায়িত বাংলা। পরিবর্তনের পর ক্ষমতার লড়াইয়ে কর্তৃত্বের দুপক্ষই সমান আগ্রাসী। একদম ভারত পকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের বিনোদন বাণিজ্যিক আবহে আমরা এই হিংসা পরিদৃশ্য উপভোগ করছি।আহা,কি আনন্দ! আর কত রক্ত ঝরলে বিনোদনের নিরপেক্ষ আবহসঙ্গীত বন্ধ করে আমরা নিজেকে প্রশ্ন করব, সত্যই কি আমরা এই পরিবর্তন , এই নৈরাজ্য চেয়েছিলাম? সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য বাঙ্গালির দিল্লীর মসনদে ব্রাহ্মণ্য আধিপাত্য কায়েম করার রাজনীতিতে দুই বাংলা চিরকালের জন্য পরস্পরবিচ্ছিন্ন দিখন্ড হয়ে গেলে কি হয়, বিশ্বায়ণের ব্রাহ্মণ্য করপোরেট আধিপাত্যের সংস্কৃতিতে হিংসায় ও নৌরাজ্যে এপার বাংলা ওপার বাংলা একাকার! পলাশ বিশ্বাস

ফের ভাঙড়ে আক্রান্ত হলেন সিপিআইএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা।রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কবলে বিশ্বায়িত বাংলা   পরিবর্তনের পর ক্ষমতার লড়াইয়ে কর্তৃত্বের দুপক্ষই  সমান আগ্রাসী। একদম ভারত পকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের বিনোদন বাণিজ্যিক আবহে আমরা এই হিংসা পরিদৃশ্য উপভোগ করছি।আহা,কি আনন্দ! আর কত রক্ত ঝরলে বিনোদনের নিরপেক্ষ আবহসঙ্গীত বন্ধ করে আমরা নিজেকে প্রশ্ন করব, সত্যই কি আমরা এই পরিবর্তন , এই নৈরাজ্য চেয়েছিলাম?সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য বাঙ্গালির দিল্লীর মসনদে ব্রাহ্মণ্য আধিপাত্য কায়েম করার রাজনীতিতে দুই বাংলা চিরকালের জন্য পরস্পরবিচ্ছিন্ন দিখন্ড হয়ে গেলে কি হয়, বিশ্বায়ণের ব্রাহ্মণ্য করপোরেট আধিপাত্যের সংস্কৃতিতে হিংসায় ও  নৌরাজ্যে এপার বাংলা ওপার বাংলা একাকার!

পলাশ বিশ্বাস



ফের ভাঙড়ে আক্রান্ত হলেন সিপিআইএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা।রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কবলে বিশ্বায়িত বাংলা।   পরিবর্তনের পর ক্ষমতার লড়াইয়ে কর্তৃত্বের দুপক্ষই  সমান আগ্রাসী। একদম ভারত পকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের বিনোদন বাণিজ্যিক আবহে আমরা এই হিংসা পরিদৃশ্য উপভোগ করছি।আহা,কি আনন্দ! আর কত রক্ত ঝরলে বিনোদনের নিরপেক্ষ আবহসঙ্গীত বন্ধ করে আমরা নিজেকে প্রশ্ন করব, সত্যই কি আমরা এই পরিবর্তন , এই নৈরাজ্য চেয়েছিলাম?সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য বাঙ্গালির দিল্লীর মসনদে ব্রাহ্মণ্য আধিপাত্য কায়েম করার রাজনীতিতে দুই বাংলা চিরকালের জন্য পরস্পরবিচ্ছিন্ন দিখন্ড হয়ে গেলে কি হয়, বিশ্বায়ণের ব্রাহ্মণ্য করপোরেট আধিপাত্যের সংস্কৃতিতে হিংসায় ও  নৌরাজ্যে এপার বাংলা ওপার বাংলা একাকার!


তাদের ক্ষমতার লোভ-লালসা, পারস্পরিক হিংসা-ঈর্ষা ও ক্রোধ-আশ্রিত 'রাজনীতি' ঐতিহাসিক কারণে ও সময়ের প্রয়োজনে সৃষ্ট দেশের দুটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেও বিবর্ণ করে ফেলেছে। তাই তাদের ... সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, দলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন সেই পরিবর্তনের নায়করা।এি হল বাংলাদেশ!


আমাদের কর্মফল আমাদের কে আজ আবার তাড়া করতে শুরু করেছে।পাহাড়ের সবুজে ঘেরা শান্ত রামু জ্বলছে অশান্তির অনলে।পুড়ছে অহিংসা আর মুক্তির বাণীর সহস্র বছরের ঐতিহ্য। ছেলেবেলার স্রিতিময় রামুর দুর্ভাগ্য আজ আমকে খুব বেশী অস্থির করে তুলছে।ভাবছি পাঠ্যপুস্তকে কিংবা কোন কবিতার সেই সম্প্রীতির কথাগুলো এতটাই মূল্যহীন হয়ে গেল কি করে।



অমর্ত্য সেনের 'পরিচিতি ও হিংসা' প্রকাশনা কলকাতায়
ভারতের কলকাতা শহরে মঙ্গলবার এক সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হলো অমর্ত্য সেনের 'আইডেন্টিটি এ্যান্ড ভায়োলেন্স-দ্য ইলিউশন অব ডেস্টিনি' বইয়ের বাংলা সংস্করণ। বাংলা অনুবাদে বইয়ের নাম 'পরিচিতি ও হিংসা'। বইটির মূল কথা হচ্ছে মানুষের সব পরিচিতিকে ছাপিয়ে একটিমাত্র পরিচয় যখন বড় হয়ে ওঠে... তুমি হিন্দু না মুসলমান? সাদা না কালো? তৃণমূল না সিপিএম...তখনই শুরম্ন হয়ে যায় হিংসার তা-ব।
চার বছর আগে সেই বইয়ে 'আইডেন্টিটি'র স্বরূপ বিশেস্নষণ করেছিলেন অমর্ত্য! একজন মানুষ তো একই সঙ্গে অনায়াসে আমেরিকান নাগরিক হতে পারে, হতে পারে আফ্র্রিকান বংশোদ্ভূত, খ্রিস্টান, উদারনৈতিক, শাকাহারী, বিসমকামী, সমকামী আন্দোলন সমর্থক, মহিলা, নারীবাদী পরিবেশপ্রেমী! কিন্তু সবকিছু ছেড়ে যখন একটি পরিচয়ই বড় হয়ে ওঠে, তখনই তো হিংসার জন্ম।
বাংলা অনুবাদে এই বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করতে এসেছিলেন লোকসভার সাবেক স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের। চারদিকে বিনা কারণে হিংসা, শ্রমিক মরছে, কৃষক মরছে' বলছিলেন সোমনাথ। বই প্রকাশে রাজনীতির কথা এলো না ঠিকই, কিন্তু সোমনাথ তো 'দলীয় হিংসা'র শিকার। প্রকাশিতব্য আত্মজীবনীতে প্রকাশ করাটাকে 'দাম্ভিক এবং উদ্ধত' বলায় দু'দিন আগেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, 'উনি তো আমাদের দলের নন।' দলে না থাকলে পরিচিতিও থাকে না! মানুষের বদলের দলীয় সদস্যের পরিচিতিটাই তখন এক এবং একমাত্র বৈশিষ্ট্য। আর সেখান থেকেই হয়ত 'দলীয় হিংসা'র উৎপত্তি! সোমনাথবাবু অবশ্য অত গভীর তত্ত্বে যাননি। সাফ বলে দিলেন, আমি লোকসভার স্পীকার ছিলাম, চাকরিটা চলেও গিয়েছে। তবে সংসদে প্রথম হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতার সময় অমর্ত্য সেনকেই নিয়ে এসেছিলেন।
দলীয় সংঘর্ষ তো সামান্য! এই বই স্যামুয়েল হান্টিংটনের 'সভ্যতার সংঘর্ষ'রও বিরোধিতা করেছিল! হান্টিংটন আজকের দুনিয়াকে খ্রিস্টধর্ম বনাম ইসলামের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখিয়েছিলেন। প্রতু্যত্তরে অমর্ত্য একের পর এক যুক্তি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সাহিত্য-শিল্প-বিজ্ঞান থেকে নানা রাসত্মায় মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। এইভাবে একটি ধমর্ীয় পরিচয়ের বন্ধনীতে মানুষকে বাঁধা যায় না। প্রথম মহাযুদ্ধে ইউরোপে যে লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিলেন তারা সকলেই প্রায় খ্রিস্টান। কিন্তু সে সময়ে ধমর্ীয় পরিচয়ের থেকে তাদের দেশজ পরিচয়ই বড় হয়ে উঠেছিল। ইরাক সমস্যা থেকে রম্নয়ান্ডা, হুট, টুটসি ইত্যাদি অজস্র উদাহরণ তুলে সেই বইয়ে মানুষের বহুমুখী একাত্মতা দেখিয়েছিলেন লেখক। এ দিনও বলছিলেন, মানুষ অন্যের সঙ্গে একাত্ম হতে চায়, সেটাই তার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একাত্মতা অন্যের সঙ্গে দূরত্বেরও সৃষ্টি করে। একটি মাত্র একাত্মতার কত ঘটনাই যে সেই বইয়ে দেখিয়েছেন লেখক! ছোটবেলায়, ১৯৪৪ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় তাঁদের বাড়ির গেটে খুন হয়ে গেল গরিব কাদের মিয়া। কাদের মিয়ার বাড়িতে সে দিন খাবার ছিল না, পেটের টানের সে ঝুঁকি নিয়ে হিন্দু মহলস্নায় এসেছিল। 'কয়েক মাস আগেও যারা নিজেদের বাঙালী ভেবে একাত্মবোধ করছিল, তারাই সেই সময়ে নিজেদের ধমর্ীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দিতে শুরম্ন করল, এ দিন সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করছিলেন নোবেলজয়ী। পরিচিতি ও হিংসার ছত্রে ছত্রে যে কত গল্প! হিথরো বিমানবন্দরে নেমে বাড়ি ফিরছেন অমর্ত্য, তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টে, 'মাস্টার অব ট্রিনিটি কলেজ' লেখা দেখে ব্রিটিশ অভিবাসন দফতরের জিজ্ঞাসা, "ওকে চেনেন নাকি? আপনার বন্ধু?" অমর্ত্য মাথা চুলকে ভাবলেন, "আমি নিজে কি কখনও নিজের বন্ধু হতে পারি?

তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত  রেজ্জাক মোল্লা, প্রতিবাদ বিরোধী শিবিরে
রেজ্জাক মোল্লা। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী।---নিজস্ব ছবি।
এইসময়- ভাঙড়ে সিপিআইএমে দলীয় কার্যালয়ের এক প্রতিবাদ সভায় গিয়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হলেন প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। হামলায় কোমরে ও পেটে গুরুতর চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। পুরো ঘটনায় অভিযোগের তীর উঠেছে তৃণমূলের দিকে। 

ঘটনার সূত্রপাত, রবিবার দুপুর সওয়া বারোটা। ভাঙরের কাঁটাতলায় সিপিআইএম কর্মীদের উপর আক্রমণ ও দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। পুলিশের উপস্থিতিতেই সেই প্রতিবাদ সভায় রেজ্জাক মোল্লার উপর একদল দুস্কৃতী হামলা চালায় বলে অভিযোগ সিপিআইএমের। গোটা ঘটনার পিছনে ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।রেজ্জাক মোল্লার আক্রান্তের খবর জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থি সামাল দিলে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়েছে পুলিশ। 

ঘটনার জেরে বিরোধী শিবিরে প্রতিবাদের আলোড়ন তৈরী হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছান বিরোধী দলনেতা সৃর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেছেন, আক্রমণ করেছে আরাবুল ইসলাম-ই। 'মার মার' বলে আরাবুলই প্রথমে চিত্‍কার করেন। তাঁর কথা মতোই হামলা চালানো হয় বয়স্ক রাজনৈতিক কর্মীর উপর। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন , ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য ও জেলা স্তরে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন তাঁরা। অন্যদিকে, দঃ ২৪ পরগার প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাদ্যায় দাবী করেছেন, কিছুই হয়নি রেজ্জাকের।

এই সময়: 'এই নক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের একটা মিটিং চলছিল। উনি গাড়ি থেকে সেখানে নামেন, কিছু একটা ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল, জানি না। কিন্তু উনি যা বলেছেন তা সবটাই মিথ্যা, ধাপ্পা। উনি একটি মিথ্যাবাদী ও খুনী। কেউ ওঁর গায়ে হাত তোলেনি। ৩৪ বছর ধরে একই নাটক করে যাচ্ছেন। এর প্রতিবাদে গোটা ভাঙরে ধিক্কার মিছিল করব।'-পাল্টা আক্রমণে এবার মুখ খুললেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম। 

ধটনার পর তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের যোগাযোগ করে তাদের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রথমে তাকা অস্বীকার করছে এই অভিযোগ । দ্বিতীয়ত, তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের পাল্টা প্রশ্ন-শাসকদলের দলীয় সমাবেশে উনি কী করতে গিয়েছিলেন। এটা তো সম্পূর্ম অসৌজন্যের রাজনীতি । 

দুপুর থেকে টানা ২ঘন্টা সম্প্রচারিত হওয়ার পর দলের শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেসেই মুখ খুললেন আরাবুল স্বয়ং। বেলা আড়াইটে নাগাদ জানা যায়, তৃণমূল ভবনে ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিক বৈঠক করে রেজ্জাকের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেবেন। 

শনিবার দুপুরে তৃণমূল ভবনে নিজের অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে ঘন্টা খানেকের জন্য ভাঙড়ে এসেছিলেন আরাবুল। ভাঙড় যুব তৃণমূলের অন্যতম নেতা কাইজার আহমেদও ছিলেন ঐ দলে। স্বামীজির জন্মসার্ধশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানের যে প্রস্তুতি বৈঠক ডাকা হয়েছিল তাতে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলারদের সঙ্গে কিছুক্ষনের জন্য ছিলেন আরাবুল। দঃ ২৪ পরগনার সাংবিধানিক বৈঠকে দলের উল্লেখযোগ্য সদস্যদের রবিবার তৃণমূল ভবনে ডাকা হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রে খবর। তবে যেকোন কারণেই হোক কাউন্সিলার বৈঠক শেষ হওয়ার পরই ভবন চত্বর ছেড়ে চলে যান আরাবুল। 

এদিকে আজ রবিবার ক্যানিং-এর জীবনতলায় একটি জনসভায় রওনা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সভায় সম্পাদক মুকুল রায়। ৯ তারিখ ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল যুবভারতী তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর কর্মীসভা করবেন। এই ফাঁকেই শোনা যাচ্ছে, কর্মীসভার পরিকল্পনা বাতিল করে ডায়মন্ড হারবারে জনসভা করতে পারে শুভেন্দু অধিকারী। 

শনিবার দুপুরে তৃণমূল ভবনে নিজের অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে ঘন্টা খানেকের জন্য ভাঙড়ে এসেছিলেন আরাবুল। ভাঙড় যুব তৃণমূলের অন্যতম নেতা কাইজার আহমেদও ছিলেন ঐ দলে। স্বামীজির জন্মসার্ধশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানের যে প্রস্তুতি বৈঠক ডাকা হয়েছিল তাতে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলারদের সঙ্গে কিছুক্ষনের জন্য ছিলেন আরাবুল। দঃ ২৪ পরগনার সাংবিধানিক বৈঠকে দলের উল্লেখযোগ্য সদস্যদের রবিবার তৃণমূল ভবনে ডাকা হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রে খবর। তবে যেকোন কারণেই হোক কাউন্সিলার বৈঠক শেষ হওয়ার পরই ভবন চত্বর ছেড়ে চলে যান আরাবুল। 

এদিকে আজ রবিবার ক্যানিং-এর জীবনতলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সভায় সম্পাদক মুকুল রায়ের একটি জনসভা করার কথা। ৯ তারিখ ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল যুবভারতী তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর কর্মীসভা করবেন।এই ফাঁকেই শোনা যাচ্ছে কর্মীসভার পরিকল্পনা বাতিল করে ডায়মন্ড হারবারে জনসভা করতে পারে শুভেন্দু অধিকারী। 

ভাঙড়ের মাটিতে আক্রান্ত রেজ্জাক

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, নিমাই পাণ্ডা, রঞ্জিত হালদার, এবিপি আনন্দ

ভাঙড়ের মাটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা৷ মারধরের অভিযোগ উঠেছে আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে৷ সিপিএমের কার্যালয়ে আগুন লাগানো থেকে ঘটনার সূত্রপাত৷ আর সেই আগুনের আঁচই রবিবার দুপুরের মধ্যে ছড়াল গোটা রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে৷ 
শনিবার গভীর রাতে ভাঙড়ের কাটাতলায় সিপিএমের একটি কার্যালয়ে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ৷ রবিবার সকালে দলীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে সেখানে যান রেজ্জাক মোল্লা৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, রেজ্জাকের আগেই সদলবলে সেখানে পৌঁছে যান প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম৷ বেলা বারোটা দশ মিনিটে ভাঙড়ের কাটাতলায় গোলাপি শার্ট পরা আরাবুলের ছবি ধরা পড়ে এবিপি আনন্দর ক্যামেরাতে৷ হুমকি দিয়ে এলাকার দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে মঞ্চ খাটিয়ে আরাবুল বক্তৃতাও করতে শুরু করেন৷ এরই মধ্যে রেজ্জাক মোল্লা সেখানে পৌঁছনো মাত্রই আরাবুল ও তাঁর শাগরেদরা গাড়ির ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ৷ রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের পাশাপাশি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ৷ বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে৷  
সিপিএম বিধায়ককে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ তাঁর চোখের তলায়, পেটে ও কোমরে আঘাত রয়েছে৷ ঠোঁটে সেলাই হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা৷
যদিও প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুলের দাবি, রেজ্জাক নাটক করছেন৷ 
এই ঘটনার পরই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়৷ ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গায় আরাবুলকে গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করে সিপিএম৷ 

  • নাম---আরাবুল ইসলাম
  • বয়স--৪৮
  • গ্রাম- উত্তর গাজিপুর
  • থানা- কাশীপুর
  • জেলা-দক্ষিণ ২৪ পরগনা
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা- মাধ্যমিক 

ছাত্র জীবনে কলেজের চৌকাঠ পেরোননি৷ অথচ, রাজনীতির সুবাদে তিনিই ভাঙড়ের রাজনীতির সর্বময় কর্তা৷ ভাঙরের বেতাজ বাদশা৷ লোকে বলে, তাঁর হুঙ্কারে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়৷ সবজি বিক্রেতার ছেলে থেকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ হয়ে ওঠার উত্স খুঁজতে ফ্ল্যাশব্যাকে তাকাতে হবে৷ বাম আমলে বারাসত থেকে রায়চক পর্যন্ত রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ কিন্তু, সেই রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে রাতারাতি ভাঙরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আরাবুল৷ তারই জেরে দু'হাজার ছয়ের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের গড় ভাঙরে ঘাস-ফুল ফোটান তিনি৷ কিন্তু পাঁচ বছরের মেয়াদে বিধায়ক আরাবুলের বিরুদ্ধে ওঠে একাধিক অভিযোগ৷ অভিযোগ, রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় নির্মাণ ব্যবসায়ীদের কাছে হুমকি দিয়ে তোলা তুলতেন এই আরাবুল ও তাঁর ভাই আজিজুল ইসলাম৷ 
২০০৬ সালের ভোটের আগে, নির্বাচন কমিশনের কাছে দেওয়া হিসেবে অনুযায়ী, আরাবুলের সম্পত্তির পরিমাণ সাড়ে তিন লাখ টাকার কিছু বেশি৷ 


দু'হাজার এগারোর বিধানসভা ভোটের আগে সেই সম্পত্তিই প্রায় ২৬ গুণ বেড়ে বিরানব্ব্ই লাখ টাকার কাছাকাছি৷ 
দু'হাজার নয় সালে বৈদিক ভিলেজকাণ্ডেও উঠে আসে আরাবুলের নাম৷ তাঁর ভাই আজিজুলও বৈদিক ভিলেজকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত৷ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে জমির দালালিরও অভিযোগ ওঠে৷ কোনও অভিযোগই অবশ্য মানতে চাননি আরাবুল৷ তবে, ২০০৬-এ বামফ্রন্টের ঝড়ের মুখে জিতলেও, ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে যেখানে পরিবর্তনের ঝড়, তখন, সেই ভাঙড় থেকেই হেরে যান আরাবুল৷ তবে, ভোটে হারলেও, ওই এলাকায় আরাবুল ও তাঁর সঙ্গীদের দৌরাত্ম এখনও কমেনি বলেই অভিযোগ৷ কখনও আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে অধ্যাপিকাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে, কখনও বেআইনিভাবে কলেজে অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ, গণ টোকাটুকিতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে৷ প্রতিবারই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আরাবুল ইসলাম৷ কিন্তু, বিতর্ক কখনওই তাঁর পিছু ছাড়েনি৷ সেই তালিকায় নয়া সংযোজন রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের অভিযোগ৷  

http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/32194-2013-01-06-10-19-56


  তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জরুরি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। সিপিআইএম বিধায়কের মুখে, ঘাড়ে, কোমরে আঘাত লেগেছে। তাঁর দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিনি কথা বলতে পারছেন না। কোমরের চোটও গুরুতর বলে চিকিত্‍সকরা জানিয়েছেন। রেজ্জাক মোল্লার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিত্‍সকরা।রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কবলে বিশ্বায়িত বাংলা।   পরিবর্তনের পর ক্ষমতার লড়াইয়ে কর্তৃত্বের দুপক্ষই  সমান আগ্রাসী। একদম ভারত পকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের বিনোদন বাণিজ্যিক আবহে আমরা এই হিংসা পরিদৃশ্য উপভোগ করছি।আহা,কি আনন্দ! আর কত রক্ত ঝরলে বিনোদনের নিরপেক্ষ আবহসঙ্গীত বন্ধ করে আমরা নিজেকে প্রশ্ন করব, সত্যই কি আমরা এই পরিবর্তন , এই নৈরাজ্য চেয়েছিলাম ? জমি আন্দোলনের নেপথ্য নিয়ে, ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে, বাজারী শক্তিগুলির গণসংহার ছক নিয়ে বাঙ্গালি মাথা ঘামায়নি।নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলি থেকে আবেগতাড়িত হার্মাদবিরোধী অভিযানে আমরা সবাই কম বেশি শরিক। ভোট বাক্সে তার সঠিক প্রতিফলন ঘটেছে।মতাদর্শ জলান্জলি দিয়ে পুঁজিবাদী উন্নয়নের মুক্ত বাজার অর্থনৈতিক রাজনীতিতে সিপিএম স্বখাত সলিলে বিসর্জিত হয়েছে।যথোচিত শাস্তি হয়েছে। কিন্তু আজকের এই ঘটনায় আবার প্রমাণিত ক্ষমতাবদলে হিংসার যে ঘনঘটা রাজ্যের জলবায়ু হয়ে গেছে, পরিবেশ দুষণে দুষ্ট এই পর্যাবরণে হার্মাদবাহিনী এখনও দাপিয়ে বেড়াছ্ছে।যতই বিবেক উত্সব করি আমরা, আমাদের বিবেক ঘুমন্ত, নিমিলিত নেত্রে উন্নয়নের মৃগ মরীচিকায় বিভ্রান্ত আমরা আমাদের চর্ম চক্ষে সমাজবাস্তবের সেই চেহারা দেখতে অপারগ, যা তৈরি হয়েছে বিশ্বায়িত মুক্তবাজারের কল্যাণে।পার্মাদ বাহিনীকে তাড়াতে গিয়ে আমরা খাল কেটে কুমীর ঢুকিয়েছি শষ্য শ্যামলা সোনার বাংলায়।করপোরেট স্বার্থে প্রমোটার বিল্ডার রাজত্বে পুঁজিবাদী উন্নয়নের অশ্বমেধে এই অভূতপূর্ব হিংসা ও নৈরাজ্য বিশ্বায়নের ব্যাকরণ মেনেই। রেজ্জাক মোল্লা আক্রান্ত হয়েছেন আজ, রাজনীতি আক্রান্ত, কর্তৃত্বের গায়ে আঁচড় পড়েছে।কিন্তু আমরা ওরায় খাড়খাড়ি বিভক্ত জনগণ ত রোজই আক্রান্ত হচ্ছে, ধর্য়িতা হচ্ছে নারী, রক্তনদী বয়ে যাছ্ছে। আশ্চর্য্য হয়, আজ সুশীল সমাজ অনুপস্থিত, যা নন্দীগ্রামের পূর্বে বাংলার বিবেক, গর্ব ছিল। যা আছে, যাঁরা আছেন দলবদ্ধ রংচং মাখা দলদাস মুখের সারি।যারা টিভিতে বিত্রকে গলাফাটিয়ে নিজ নিজ পক্ষ তুলে ধরতে মেপে মেপে কথা বলতে অতিশয় দক্ষতা অর্জন করেছেন।এই রাজ্যে আজ স্বাদীন কোনও কন্ঠস্বর আর কোথাও শোনা যায় না। বিবেকানন্দ মুখোপধ্যায়ের, তুষারকান্তি ঘোষ এমনকি গৌরকিশোরের সেই অমোঘ লেখনী বাঙ্গালি চিরদিনের জন্য হারিয়েছে। তুমুল নাচন কোঁদন এখন বঙ্গ সংস্কৃতি।কোথায় রক্তপাত হল, কার রক্ত ঝরল, কেন ঝরল, তা নিয়ে কার্নিওয়ালের মুখোশে কোনও ভাব সম্প্রসারণ হয়না।কবন্ধের মিছিলে আমরা দিনযাপন করছি।


বেলুড়মঠে পালিত হল সারদা দেবীর ১৬০ তম জন্মতিথি। প্রতিবছরই পৌষ মাসের কৃষ্ণা সপ্তমীতে পালিত হয় তাঁর জন্মতিথি৷ আজ, শুক্রবার সকাল ৪.৪০ মিনিট থেকে মঙ্গলারতির মধ্য দিয়ে উত্‍সবের সূচনা হয়। আয়োজন করা হয় চণ্ডীপাঠ, বেদপাঠেরও।  বেলুড়মঠে সকাল থেকেই ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সারদাদেবীর জন্মদিন পালিত হয় তাঁর জন্মভিটে জয়রামবাটিতেও। এই উপলক্ষে প্রভাতফেরি সহ একাধিক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। 

হুগলির জয়রামবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রীমা সারদা৷ তাঁর জন্মতিথি উপলক্ষে জয়রামবাটি মঠে ষোড়শপচারে আয়োজন করা হয় শ্রীমার পুজোর৷ সারাদিন ধরে নানা অনুষ্ঠান৷ ভোরে পুজো, তারপর প্রভাতফেরী৷ যোগ দেন ছাত্র-ছাত্রী সহ হাজার হাজার মানুষ৷ ভক্তিমূলক গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন৷ 


আজ ভাঙড়ে সিপিআইএম কর্মীদের ওপর হামলা ও দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রতিবাদ করতে যান রাজ্যের প্রাক্তন ভূমিরাজস্ব মন্ত্রী। সেই সময় কাঁটাতলায় তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে সিপিআইএম। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।

এই ঘটনায় সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। সুজন চক্রবর্তী বলেন, "বিনা প্ররোচনায় হামলা চালানো হয়। আরাবুল নিজে রেজ্জাক বাবুকে হামলা চালায়।" রেজ্জাক মোল্লা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বিশাল সংখ্যক পুলিস।


ওদিকে 

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে কেবল চ্যানেলের মালিক সঞ্জীব বর্ধনের খুনের ঘটনায় রীতিমতো উল্লসিত এলাকার সমাজবিরোধীরা। শনিবার দুপুরে মৃতদেহ নিয়ে শোকমিছিলের সময়ই বাজি ফাটিয়ে উল্লাস শুরু করে সমাজবিরোধীরা। শূন্যে গুলিও চালায় তারা। এর জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শহরের বাসিন্দারা। 

দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করে একজনকে পুলিস ধরতে পারলেও বাকিরা পালিয়ে যায়। এরপর সন্ধে থেকে আরও বাড়তে থাকে দুষ্কৃতী তাণ্ডব। রায়গঞ্জ স্টেশন চত্বরে শূন্যে গুলি ছুঁড়ে, আতসবাজি ফাটিয়ে উল্লাস শুরু করে তারা। এ ঘটনায় ফের আতঙ্ক ছড়ায় রায়গঞ্জে। ঘটনাস্থলে নামানো হয়েছে বিশাল পুলিসবাহিনী ও র‍্যাফ। গতকাল রাতে সঞ্জীববাবুকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। ২০০৯-এ এই চ্যানেলেরই চিত্র সাংবাদিক খুন হয়েছিলেন। সেই খুনের মামলার অন্যতম সাক্ষী ছিলেন সঞ্জীব বর্ধন। 

শুক্রবার রাতে অফিস থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে সঞ্জীব বর্ধনের গাড়ি ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় একদল দুষ্কৃতী। দেহে একাধিক গুলি লাগায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিলিগুড়ি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সময়ে মৃত্যু হয় সঞ্জীববাবুর। ফের দুষ্কৃতী হানায় খুন ব্যবসায়ী। এবারের ঘটনা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন রায়গঞ্জ কেবল টিভির কর্ণধার সঞ্জীব বর্ধন। জানা গেছে পেশাসূত্রে, সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।


উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন স্থানীয় কেবল টিভির কর্ণধার সঞ্জীব বর্ধন। শুক্রবার রাতে অফিস থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় একদল দুষ্কৃতী। দেহে একাধিক গুলি লাগায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিলিগুড়ি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সময়ে মৃত্যু হয় সঞ্জীববাবুর। ফের দুষ্কৃতী হানায় খুন ব্যবসায়ী। এবারের ঘটনা উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। শুক্রবার রাতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন রায়গঞ্জ কেবল টিভির কর্ণধার সঞ্জীব বর্ধন। জানা গেছে পেশাসূত্রে, সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের জানিয়েছেন, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়ির যাওয়ার জন্য অফিস থেকে বেরোন সঞ্জীববাবু। সেইসময়ে অফিস থেকে মাত্র পাঁচশো গজ দূরেই তাঁর গাড়ি ঘিরে ফেলে দুষ্কৃতীরা।  গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলিও চালানো হয়। একাধিক গুলি লাগে সঞ্জীববাবুর দেহে। প্রকাশ্যে দুষ্কৃতীহানার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। 


জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন সোচ্চার

সরকারের অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী আচরণে রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে

স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তিদানের দাবিতে সোচ্চার বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। তারা গতকাল বুধবার পৃথক বিবৃতি ও সভায় সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিরোধী দলের সাথে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী আচরণে পুরানো বাকশালী নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে। 
১০০১ বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম : ইসলামী নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা, অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি অস্থিতিশীলতা থেকে দেশকে রক্ষা করে শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠা করার জোর দাবি জানিয়ে দেশের ১০০১ বিশিষ্ট ওলামায়ে কিরাম এক যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এ দেশের স্বনামধন্য প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব। আর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ একজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব সারা জীবন তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন। দেশ থেকে সকল প্রকার দুর্নীতি, জুলুম, নির্যাতন দূর করে দেশে কিভাবে শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠা করা যায় এজন্য এ সকল নেতৃবৃন্দ স্ব-উদ্যোগে এবং দলীয়ভাবে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এজন্যে দেশের শান্তিকামী ও শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদেরকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে। তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করায় আজকে শান্তিপ্রিয় মানুষ চোখের পানি ফেলে এ অন্যায় কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সুতরাং জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য অনতিবিলম্বে এ সকল ইসলামী নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, এতে দেশের মানুষ আপনাদের কল্যাণে এগিয়ে আসবে, আপনাদের জন্য দোয়া করবে। নচেৎ জনরোষের শিকার হবেন। আল্লাহর গযবে পড়বেন। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-- মুফতি মাওলানা আব্দুর রব, মুফাসসির মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, মুফাসসির মাওলানা জামাল উদ্দীন, মুফতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, হাফেজ মুফতি মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা শাহ জালাল শরীফ, মাওলানা এমদাদুল হক, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু নোমান, মুহাম্মদ রফিকুর রহমান, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ ছালেহ আহমাদ, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবু নোমান, মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাওলানা মুহাম্মদ শফীকুর রহমান, মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, মোফাসসের মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন, মাওলানা মুহাম্মদ আবুল কাসেম গাজী, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবুল বারাকাত মুহাম্মদ ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা মুহাম্মদ রেজাওয়ানুল ইসলাম, মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জাববার, মাওলানা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। 
সচেতন প্রকৌশলী সমাজ : জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লাকে আদালতে নির্দেশ অমান্য করে কোন অভিযোগ ছাড়ায় অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সচেতন প্রকৌশলী সমাজের সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ ইসহাক ও সেক্রেটারি প্রকৌশলী শেখ আল আমিন এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের বিরোধীদল ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের সাথে অগণতান্ত্রিক, অরাজনৈতিক আচরণ দেখে দেশবাসীর সাথে আমরা হতবাক হয়েছি। আদালত হচ্ছে জনগণের শেষ ভরসাস্থল। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদি মনোভাবের কারণেই বিরোধীদল ও মতের নেতাকর্মীরা কোর্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করলেও অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে কোর্টচত্বর থেকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুরানো বাকশালী নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। 
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি : এক জরুরি সভা গতকাল সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এনডিপি চেয়ার্যা ন খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন এনডিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আইনুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক কাজী জামাল হোসেন, মহানগর আহবায়ক এমএ গফুর মাস্টার প্রমুখ। সভায় হয়রানিমূলক ও বানোয়াট মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় যে, এ ঘটনায় প্রমাণ করে সরকার বিরোধী দলকে হয়রানির উদ্দেশ্যে এবং যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের হয়রানির অসৎ উদ্দেশ্যেই এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটিয়েছে। সভাপতি বক্তব্যে খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা এই ধরনের হীন খেলা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে।

http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=34688


আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় গুলিবিদ্ধ সঞ্জীববাবুকে। তবে অবস্থার  অবনতি হওয়ায় রাতেই সঞ্জীববাবুকে শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা। শিলিগুড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়ে পড়ায় করণদীঘি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই সঞ্জীব বর্ধনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সক। 




ভাঙড়ে সিপিআইএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের ঘটনায় আরাবুল ইসলামের পাশেই দাঁড়াল তৃণমূল কংগ্রেস। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, প্রশাসনের নিষেধ অগ্রাহ্য করে তৃণমূলের সভায় গিয়েছিলেন রেজ্জাক মোল্লা নিজেই। সিপিআইএম বিধায়কই উত্তেজনা ছড়ান বলে পুরমন্ত্রীর অভিযোগ। তাঁর কথায়, এরপরই উত্তেজনা ছড়ায়, শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তবে, হাসাপাতলে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। গোটা বিষয়টি রেজ্জাক মোল্লার নাটক বলে দাবি করেছেন ফিরহাদ হাকিম।  



কলেজের শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন আরাবুল ইসলাম৷ কদিন
আগে অশ্লীল জলসাতে উপস্থিত থাকার অভিযোগও উঠেছিল আরাবুলের বিরুদ্ধে। আর এ 
বারের অভিযোগ সেই ভাঙড়ের মাটিতে সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে ব্যাপক 
মারধরের৷ এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই ফের একবার তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে 
বিভিন্ন মহলে৷ কিন্তু, যাবতীয় বিতর্কের মাঝেও আরাবুলের পাশে দাঁড়িয়েছে 
তৃণমূল৷

এদিকে প্রদেশ কংগ্রেস এই ঘটনার নিন্দা করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না 
হলে রাজ্যে চলতে থাকা অরাজকতায় লাগাম পরানো সম্ভব নয়। সিপিআইএম বিধায়ক 
আবদুর রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণের ঘটনার প্রেক্ষিতে এমনই প্রতিক্রিয়া 
জানালেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।


বাঙ্গালির আমরা ওরা প্রসঙ্গে রাজ ঠাকরের বক্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক যা একেবারেই বর্তমান বঙ্গমানসের যথায়থ প্রতিফলন!


ভারতে বেড়ে চলা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভিন রাজ্যে বসবাসকারী বিহারিরাই দায়ি। শনিবার রাতে গোরেগাঁওতে এক জনসভায় এই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার সুপ্রিমো রাজ ঠাকরে। তবে শুধু এই বলেই ক্ষান্ত দেননি রাজ ঠাকরে। নিজের সপক্ষে যুক্তি হিসাবে তিনি জানান দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রত্যেকেই বিহারি। 

তিনি বলেন ``এখন প্রত্যেকেই দিল্লির ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর অপরাধীরা কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে কেউই কিছু বলছে না। এর আগেও এদের (বিহারিদের) বিরুদ্ধে মন্তব্য করার জন্য আমাকে সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কিন্তু কেউই এই সত্যিটা নিয়ে মুখ খুলছেন না যে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রত্যেক ধর্ষকই আদতে বিহারের।`` 

ভিনরাজ্যে বসবাসকারী বিহারিদের সম্পর্কে এই ধরণের আপত্তিজনক মন্তব্য অবশ্য এমএনএস প্রধান এই প্রথম করলেন না। এর আগে মহারাষ্ট্রের বসবাসকারী বিহারিদের অনুপ্রবেশকারী বলেছিলেন তিনি। এমনকী ছট পুজো নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। 


দফায় দফায় ছাত্র সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শনিবার উত্তেজনা ছড়াল বেশ কয়েকটি জেলায়। কলেজ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে বর্ধমানের খান্দরা কলেজ, বাঁকুড়ার শালতোড়া, খ্রিষ্টান এবং সোনামুখী কলেজে। বাঁকুড়ার তিনটি কলেজে আহত হন বেশ কয়েকজন। অন্যদিকে নরসিংহ দত্ত কলেজের অধ্যক্ষকে হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার বর্ধমানের অন্ডাল থানার খান্দরা কলেজে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় এসএফআই এবং টিএমসিপি। প্রথমে দু পক্ষের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সেখান থেকে পরে সংঘর্ষের সূত্রপাত। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিস। 

কলেজ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বাঁকুড়ার শালতোড়া, খ্রিষ্টান এবং সোনামুখী এই তিন কলেজে। তিনটি কলেজেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা এসএফআই সমর্থকদের মনোনয়ন পত্র তুলতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এমনকি বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে এসএফআই সমর্থকদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। 

যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিএমসিপি সমর্থকরা। 

অন্যদিকে ১০ জানুয়ারির আয়োজিত একটি ক্যাম্প ঘিরে হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজের অধ্যক্ষকে হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এমনকি বিষয়টি মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় রাজ্যের এক মন্ত্রীকেও। 


ভাঙড়ে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে জলসায় অশ্লীল নাচ এবং মঞ্চে টাকা ছোড়ার ঘটনায় চক্রান্তের অভিযোগ তুললেন অভিযুক্ত দুই নেতা। এই ঘটনায় অভিযুক্ত মীর তাহের আলি এবং আয়নাল মোল্লার দাবি, ওই দিন আরাবুল ইসলাম- কাইজার আমেদসহ ভাঙড়ের অনেক দলীয় নেতাই হাজির ছিলেন মঞ্চে। ওই দিনের ঘটনায় তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আয়নাল এবং তাহের। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভাঙড় জলসাকাণ্ডের পর প্রথমবার মুখ খুললেন অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতা মীর তাহের আলি এবং আয়নাল মোল্লা। যদিও বিতর্কিত আচরণের জন্য বিন্দুমাত্র দুঃখপ্রকাশ না করেননি তাঁরা। 

 
এঘটনায় উল্টে ভাঙড়ের তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে ষড়যন্ত্রের পাল্টা তোপ দাগলেন দুই নেতা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য মীর তাহের আলির দাবি, অনুষ্ঠানের দিন মঞ্চে হাজির ছিলেন আরাবুল ইসলামসহ তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য স্থানীয় নেতারা। এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করতেই ফাঁসানো হয়েছে তাঁকে,এমনটাই দাবি তাহের আলির। ভাঙড় এক নম্বর ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল মোল্লা। ঘটনার দিন মঞ্চে উঠে মহিলাদের দিকে টাকা ছুঁড়তে দেখা যায় এই তৃণমূল নেতাকে। 

 
মঞ্চে সেদিন আয়নালের যে বেপরোয়া আচরন ধরা পড়েছিল ক্যামেরায়, একই রকম বেপরোয়া ভঙ্গি ধরা পড়ল এদিনও। নিজের সাফাইয়ে পাল্টা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করলেন আয়নালও। তাঁর দাবি, চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার যুব তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কাইজার আহমেদ। জলসাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই নেতার এদিনের মন্তব্য নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব। 


কড়েয়াকাণ্ডে মৃত আমিনুল ইসলাম ওরফে গুড্ডুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে দেখা করলেন পুলিসের শীর্ষকর্তারা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় অভিযুক্ত তিন পুলিসকর্মীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু হয়েছে। সমালোচনার মুখে কার্যত চাপে পড়েই পুলিসের এই পদক্ষেপ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।          

আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর চারদিন পর শনিবার প্রথম তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে গেলেন শীর্ষ পুলিসকর্তারা। মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যান কলকাতা পুলিসের যুগ্ম কমিশনার আর ত্রিপুরারি, ডিসি এসএসডি দেবব্রত দাস। পুলিসের বিরুদ্ধে তাঁদের কী কী অভিযোগ রয়েছে সেসব কথা শোনেন তিনি। আমিনুলের মৃত্যুর পর তাঁর বাড়ির লোকজন  কড়েয়া থানার তিন পুলিসকর্মীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করে। তিনশো ছয় ধারায় মামলাও দায়ের করে পুলিস। অভিযুক্ত দুই এসআই বিনোদ কুমার, রঞ্জিত যাদব এবং কনস্টেবল নাসিম খানকে ক্লোজ করা হয়েছে।     
 
কড়েয়াকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত শাহজাদা বক্সের ঘনিষ্ঠ ল্যাংড়া সেলিম, কলিম ও শামসেরের বিরুদ্ধে আমিনুলের পরিবার ২ জানুয়ারি কড়েয়া থানায় হামলার অভিযোগ দায়ের করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিস। হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত কলিম  শনিবার আলিপুর জজ কোর্টে আত্মসমর্পন করে। জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কড়েয়াকাণ্ডে ধর্ষিতার অভিযোগ,  মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখনও শাহজাদা ঘনিষ্ঠরা হুমকি দিচ্ছে তাঁকে। এখনও অধরা ল্যাংড়া সেলিম, শামসের। এরওপর কলিম জামিন পেয়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে কিশোরীর পরিবার। কড়েয়া ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত শাহজাদা বক্সের পরিবারের তরফেও শনিবার আলিপুর জজ কোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়। আবেদনের শুনানি হবে ৯ জানুয়ারি।  



ফের বিস্ফোরক কবীর সুমন। পরিবর্তনের আন্দোলনে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে কারা ছিলেন তা নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন তিনি। ২৪ ঘন্টাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। কী বললেন কবীর সুমন?  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় আসার লড়াইয়ে তৃণমূলের সঙ্গে ছিল মাওবাদীরাও। অকপট স্বীকারোক্তি তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনের। তৃণমূলের বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গেই ছিল মাওবাদীরা। এমনকী সিপিআইএমকে সরাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিতে আবেদন করেছিলেন স্বয়ং মাওবাদী শীর্ষ নেতা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি। ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া এক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে এমটাই জানিয়েছেন কবীর সুমন।  

"জঙ্গলমহলে তৃণমূলের আন্দোলনে মাওবাদীরা ছিল কীনা, সে প্রশ্নরে উত্তর এবার রাজ্যবাসীর সামনে দেওয়া উচিত তৃণমূলের। ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।" কবীর সুমনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বললেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। 

জঙ্গলমহলে তৃণমূলের কোনও সংগঠন ছিল না। নন্দীগ্রামে গেরিলা যুদ্ধে প্রশিক্ষণ দিত মাওবাদীরা। সোনাচূড়ায় ছিল অস্ত্র কারখানা। কবীর সুমনের জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সব তথ্যই জানালেন সাহিত্যিক মানিক মণ্ডল। তিনি বলেন, "বর্তমানে মাওবাদী বন্ধুদের ভুলে গেছে সরকার।" 

সাক্ষাৎকারে তৃণমূল কংগ্রেসের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুমন। ভাঙড়ের জলসাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মানতে নারাজ তৃণমূলের এই বিদ্রোহী সাংসদ। তাঁর মতে, রাজ্যজুড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যা করছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে ভাঙড়ে। "মাথাটা যখন পচতে শুরু করেছে, তখন পা কে দোষ দিয়ে লাভ কী!" ভাঙরের জলসা কাণ্ড নিয়ে এমনই উপলব্ধি কবীর সুমনের।

পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড নিয়ে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের মন্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করলেন কবীর সুমন। তাঁর প্রশ্ন একজন মহিলা হয়ে কীভাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন? 

দলের কাজকর্ম নিয়ে হঠাত্‍ই মুখ খুলেছিলেন কবীর সুমন। আর তার পর থেকেই দলের কাছে ব্রাত্য তিনি। তবে রাজ্যের পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অস্বীকার করেন না কেউই। দল তাকে ব্রাত্য করে রাখলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়েছেন কবীর সুমন। মাওবাদী নেতা কিষেণজীর মৃত্যুর পর গান বেঁধেছেন তাকে নিয়ে। ছত্রধরের মুক্তির দাবিতে সোচ্চারে গান গেয়েছেন তিনি। এই নিয়ে বারবার বিতর্কের মুখে পড়তে হলেও পিছু হঠেননি বিদ্রোহী সাংসদ। ফের সরব। ব্রিগেড থেকে ভাঙড়। কবীরের সমালোচন থেকে বাদ যায়িনি কিছুই। ২৪ ঘন্টাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্‍‍কারে আরও বেশ কিছু ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি। যা অতীতে কখনও করেননি। তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে আলোড়ন গোটা রাজনৈতিক মহলে। দল থেকে এবার বহিষ্কার করা হবে তাঁকে? আর যদি বহিষ্কার করা না হয় তাহলে কী তৃণমূল নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন তাঁর এই বক্তব্য? কী করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? শাস্তি নাকি উপেক্ষা?  রাজনৈতিক মহলের এখন সেটাই জল্পনা।
 
তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনের জবানবন্দি দেখতে ক্লিক করুন এখানে  


আমি বার বার যে কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি. তা হল ঘোটা উপমহাদেশে ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদী করপোরেট বিশ্বব্যবস্থার দোসর কর্তৃত্ব।আইন বদলের দাবীতে আমরা সেই ধর্মান্ধ মধ্যযুগের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছি, অথছ সমাজে, বাণিজ্যে, রাজনীতিতে, সংস্কৃতিতে এবং ধর্মে নারীর অবস্থান মনুস্মৃতি ব্যবস্তার বিধান অনুযায়ী পণ্যা, ভোগ্যা, শুদ্র, দাসী, অপাংতেয়, ব্রাত্য, অন্ত্যজ।ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বাজনীতি বার বার সোচ্চার কন্ঠে সেই বিধানেরই প্রতিধ্বনি করছে।আাজ আবার!

বিবাহিত মহিলাদের ঘর গোছানোর নিদান দিলেন মোহন ভাগবত


ধর্ষণ প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যের পর ফের নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। এবারে তিনি মন্তব্য করলেন মহিলাদের দায়িত্ব নিয়ে। ইন্দোরে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরএসএস প্রধান বলেন, "শুধুমাত্র ঘরের কাজ সামলানোই মহিলাদের দায়িত্ব।" সামাজিক বন্ধনের নিয়ম মেনে পুরুষেরই রোজগার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মোহন ভাগবত। তাঁর মতে, রোজগারের পাশাপাশি পুরুষেরই দায়িত্ব স্ত্রীকে রক্ষা করা। শুক্রবারই ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন আরএসএসের সরসঙ্ঘচালক। 

সেবারে তাঁর বক্তব্য ছিল, ধর্ষণের মতো অপরাধ `ইন্ডিয়াতে` হলেও ভারতে হয় না। ভারত বনাম ইন্ডিয়ার বিতর্ক উস্কে দিয়ে কার্যত ধর্ষণের জন্য শহরাঞ্চলে মহিলাদের জীবনযাত্রাকেই দায়ী করেছিলেন তিনি। সরসঙ্ঘচালকের মন্তব্য ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে।


January 4, 2013 21:36 

দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে তরুণীর মৃত্যুর পর দেশ যখন উত্তাল তখন ধর্ষণ নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর বক্তব্য, ভারতে নয়, ধর্ষণ হয় ইন্ডিয়ায়। এখানেই শেষ নয়। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়ভার্গেয়র মন্তব্য, লক্ষ্মণরেখা পেরোলে তার মূল্য চোকাতে হবে মহিলাদেরই। মহিলাদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের বিরাম নেই। এ বার এই তালিকায় যোগ হল আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের নাম। 

শিলচরে আরএসএস কর্মিসভায় সরসঙ্ঘচালকের মন্তব্য, ভারতে নয়, ধর্ষণ হয় ইন্ডিয়ায়। ধর্ষণের ঘটনার জন্য শহরাঞ্চলের মহিলাদের পাশ্চাত্য জীবনধারাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী কৈলাশ বিজয়ভার্গেয় আবার পুরুষের হাত থেকে বাঁচতে মহিলাদের লক্ষ্মণরেখা না পেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন। একদিকে আরএসএস প্রধান। অন্যদিকে, দলেরই এক মন্ত্রী। ধর্ষণ নিয়ে  জোড়া মন্তব্যে অস্বস্তিতে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে দলের তরফে মধ্যপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রীকে বক্তব্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এরপর, দলের চাপে ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন কৈলাশ বিজয়ভার্গেয়। দাবি করেন, সংবাদমাধ্যম তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছে। মধ্যপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রীকে দুঃখপ্রকাশে বাধ্য করলেও আরএসএস প্রধানের বক্তব্যকে সমর্থনে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। মহিলাদের অনুশাসনে বেঁধে রাখার পরামর্শ আর আরএসএস প্রধানের ভারত-দর্শনের সমালোচনায় সরব হয়েছে সব মহল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কিরণ বেদি, বৃন্দা কারাতরা মোহন ভাগবতের বিস্ফোরক মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হলেন। ইনদওরে মধ্যপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার ভোপালে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।


তেইশ বছরের তরুণীর মৃত্যুতেও বদলাল না রাতের রাজধানীর নিরাপত্তাহীনতার ছবিটা। দেশ জোড়া প্রতিবাদও ইতি টানতে পারল না ধর্ষকের বিকৃত মানসিকতার। বাড়ি ফেরার পথে ফের ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে নয়ডার চটপুর কলোনিতে। একুশ বছরের ওই তরুণীর বাড়ির কাছেই। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। 

অভিযুক্তদের জেরা করা হচ্ছে। পুলিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত নটা নাগাদ কয়েকজন মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে কর্মক্ষেত্র থেকে বেরোন ওই তরুণী। কলোনির কাছাকাছি এসে বাকিরা যে যার গন্তব্যে চলে যান। বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তরুণী। দশটা বেজে যাওয়ার পরও মেয়ে ফিরছে না দেখে খুঁজতে শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিসকে ঘটনাটি জানানো হলেও কোনও উদ্যোগ নেয়নি পুলিস। এমনকি নিখোঁজ ডায়েরি নিতেও পুলিস অস্বীকার করে বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে পুস্তা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় তরুণীর মৃতদেহ। তাঁর দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩৭৬ এবং ২০১ ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিস।



বাঙ্গালির কাছে আজ সবচেয়ে বড় খবর


ভারত-- ১৬৭, পাকিস্তান-- ১৫৭
ভারত জাগল। তবে দেরিতে, বড্ড দেরিতে। দিল্লির হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় ধোনির দল জয় পেল খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। গায়ের লোম খাড়া করে দেওয়া এই নাটকীয় ম্যাচে ভারত জিতল ১০ রানে। মাত্র ১৬৭ রানের পুঁজি নিয়েও ম্যাচের শেষ ১৫টা ওভার দারুণ ক্রিকেট খেলে ভারতীয় দল নিয়মরক্ষার ম্যাচে মান বাঁচল। সেই সঙ্গে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে ব্রাউনওয়াশ মানে ০-৩ হারের লজ্জা থেকে বেঁচে গেল ধোনির দল।

প্রথমে ব্যাট স্কোরবোর্ডে ভারতের রান ছিল মাত্র ১৬৭। জবাবে পাকিস্তানও দিব্যি খেলছিল। ৩৪ ওভারে উইকেটে ছিল ১১৩ রান। হার দেখতে দেখতে ক্লান্ত ভারতীয় সমর্থকরা ততক্ষণে টিভি বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্রাউনওয়াশের খাড়া মাথায় নিয়ে ক্যাপ্টেন কুল ধোনিকে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছিল। ফেসবুক, এসএসএসে ততক্ষণে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ব্রাউনওয়াশ হারের। কিন্তু এরপরই কোটলায় নাটক শুরু। ঠান্ডা হাড় কাপানো ঠান্ডায় হঠাত্‍ই ভারতীয়দের হারের লজ্জা     


ফিরোজ শাহ কোটলাতে খেলতে নেমে প্রত্যাশা মতোই নিজেদের খারাপ খেলার সিলসিলা বজায় রাখল টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচ শুরুর ১৩ ওভারের ৪৩ রানে ৩ টি উইকেট হারিয়ে যথারীতি ধুঁকছেন ভারতীয়রা। প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন দুই ওপেনার গম্ভীর এবং সেওয়াগের বদলি রাহানে। তাঁদের পথানুসরণ করেছেন বিরাট কোহলিও। এখন ক্রিজে ১১ রানে যুবরাজ সিং এবং ১ রানে রায়না অপরাজিত রয়েছেন।

ইডেনের মাটিতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ ইতিমধ্যে হাতছাড়া হয়ে গেছে। চিরপ্রতিদন্ধী প্রতিবেশী দেশের কাছে আগের দুটো ওয়ানডেতে রীতিমত নাস্তানাবুদ হয়েছে ভারত। দেশের মাটিতে পরপর দু'টো সিরিজ হারার কলঙ্ক এখন ভারতীয় ক্রিকেটারদের ড্রেসিংরুমে শক্তপোক্ত ঘাঁটি গেরে বসে আছে। ভেন্টিলেশনে চলে যাওয়া মৃতপ্রায় সম্মানকে কিছুটা জীবনীশক্তি যোগাতে আজ ফিরোজ শাহ কোটলাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ একদিনের ম্যাচে খেলতে নেমেছিল ধোনি বাহিনী। 

জানুয়ারির কনকনে ঠাণ্ডায় এখন কাবু গোটা দিল্লি। ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে রাজধানী। এমনিতেই এই সময়ে ফিরোজ শাহ কোটলাতে খেলা যে কোন দলের পক্ষেই অত্যন্ত কঠিন। কুয়াশার চোটে সন্ধে নামতে না নামতে এক হাত দূরের সব কিছু ঝাপসা। যাঁরা প্রথমে ব্যাটিং করবেন শেষ এক ঘণ্টা ভিজে বল নিয়ে সে দলের বোলাররা অসুবিধায় পড়বেন। অন্যদিকে আগে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিলে প্রথম থেকেই ফিল্ডিং নিয়ে বিপাকে পড়তে হবেই। অর্থাৎ সঙ্কটটা উভয় দিক থেকেই। তবে ফিরোজ শাহ কোটলার ইতিহাস নিয়ে অল্পবিস্তর গবেষণা করলে বোঝা যায় টসে জিতে ব্যাটিং নিলেই জেতার দিকে দাঁড়িপাল্লাটা কিঞ্চিৎ হেলে থাকে। 

অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অবস্থা এতটাই সঙ্গীন কোন হিসাব নিকাশেই বোধহয় জয়ের ভবিষ্যতবাণী  করা যায় না। অভিজ্ঞ ব্যাটিং বাহিনীর স্কুল স্তরের ব্যাটিং প্যারফর্মেন্স, অনভিজ্ঞ বোলারদের 'কী যে করি বুঝিতে না পারি' জাতীয় মানসিকতা, দিশাহীন অধিনায়কত্ব এবং বর্তমান কোচের অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতি, অসুখের কারণ গুলো মোটামুটি সবারই জানা। কিন্তু এ অসুখ সারবে কী করে, তার সুলুক সন্ধান আশ্চর্য ভাবেই কারোর কাছে নেই।  

দাপটের সঙ্গে আগের দুই ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর পাকবাহিনী। তাদের লক্ষ্য সিরিজ ৩-০ করার। অন্যদিকে ভারতীয়রা চাইছেন কোনভাবে এই শেষ ম্যাচটা জিতে কিছুটা সম্মান পুনরুদ্ধার। তবে সব মিলিয়ে নিশ্চিত ভাবেই অ্যাডভানটেজ মিসবা এন্ড কোম্পানি। 


ক্রিকেটে ফিরেই শতরান সচিনের


ওয়ানডে ক্রিকেটে অবসর নিয়ে নেওয়ার পর ক্রিকেট ফিরেই শতরান করলেন সচিন তেন্ডুলকর। তাঁর ওয়ানডে অবসর নিয়ে যখন গোটা ভারত বিষাদ আর আলোচনায় ডুবে। তখন মসৌরি থেকে ছুটি কাটিয়ে মাঠে ফিরেই সচিন তাঁর সেই অভ্যাসে ফিরলেন। ক্রিকেট সচিনের অভ্যাস মানেই শতরান। সেটাই করলেন রবিবার রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে রেলওয়েজের বিরুদ্ধে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সচিনের এদিনে শতরানটা যেন ফিরিয়ে দিল অতীতে। 

যারা এদিন তাঁর শতরানের ইনিংসটা দেখলেন তারা বলছেন, চলতি বছরে এটাই মাস্টার ব্লাস্টারের সেরা ইনিংস। 

রঞ্জি ট্রফিতে সচিনের এটি ১৮তম শতরান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৮০তম শতরান। আর একটা শতরান হলেই দেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সর্বাধিক শতরানের রেকর্ডটা (সুনীল গাভাসকরের রেকর্ড) ভেঙে ফেলবেন লিটল ডন। সচিনের শতরানের পার্টিতে যোগ দিলেন ওয়াসিম জাফরও। সব মিলিয়ে প্রথম দিনেই রেলওয়েজের বিরুদ্ধে ভাল জায়গায় মুম্বই।

ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ থেকে ঘরের মাঠে ফের টেস্ট ম্যাচে নামবেন সচিন। প্রতিপক্ষ তাঁর বড় প্রিয় অস্ট্রেলিয়া। আজকের এই শতরানটা অসিদের বিরুদ্ধে সিরিজের মহড়া চলল।


রক্তচোখকে হারিয়ে দিল রক্তপতাকা

চন্দন দাস

চণ্ডীপুর (পূর্ব মেদিনীপুর), ৫ই জানুয়ারি — ঠিক ২টো ৪০ মিনিটে এক সাংবাদিককে ফোন করলেন তৃণমূলের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। প্রশ্ন — কেমন লোক হয়েছে? 

সাংবাদিক কী জবাব দিলেন, তা অর্থহীন। কারণ চণ্ডীপুরের বিনয় কৃষ্ণ মেমোরিয়াল ফুটবল ময়দান জনারণ্য। আর সেই গণপ্লাবনে দাঁড়িয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আহ্বান জানিয়েছেন,''কারা এলো সরকারে মানুষ বুঝতে পারছেন। মা-বোনেদের সন্মানের জন্য, গরিবের জীবনের জন্য, কাজের জন্য আমাদের আরো জমায়েতের পথেই এগোতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থা ছাড়া আর কোন পথ নেই।''

মানুষের প্রতিবাদী মনোভাবে আঁচ ইতোমধ্যেই তৃণমূল পেয়েছে। তাই তৃণমূলের উদ্বিগ্ন 'তরুণ তুর্কি' সাংসদ জমায়েতের খোঁজ নিয়েছেন। আর তৃণমূল কর্মীরা কী করেছেন? পটাশপুর-২নং ব্লকের সিংদায় রড, লাঠি দিয়ে মেরে পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি রঞ্জিৎ মণ্ডল সহ ৬জনকে রক্তাক্ত করেছে তারা। তবে পিছিয়ে যাননি গ্রামবাসীরা। তাঁরা পথ অবরোধ করে, দোষীদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি আদায় করেছেন। হয়তো হবে না গ্রেপ্তার। কিন্তু মাথানত করেছে তৃণমূলের বশংবদ পুলিস। তাই বা কম কীসে? 

আর এই মনোভাবের প্রকাশই এদিন ফুটে উঠেছে সূর্যকান্ত মিশ্রর বক্তব্যে। তিনি বলেছেন,''ওরা ভয় পেয়েছে। ভয় পেতে শুরু করেছে মানুষকে। আমাদের আর কী বাকি আছে হারাতে? ওরা ঘরছাড়া করেছে, খুন করেছে, পার্টিঅফিস ভেঙেছে, জ্বালিয়েছে। ওরা পঞ্চায়েত ভাঙছে। জলের কল ভাঙছে। মানুষের ঐক্য ভাঙছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের লড়াই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই।'' তাঁর আরো বক্তব্য,''ভাঙার বিরুদ্ধে গড়ার লড়াই আমাদের। ভয় ভেঙেই ভাঙার বিরুদ্ধে সেই গড়ে তোলার লড়াই জিততে হবে। আর তারজন্য গরিব মানুষের ঐক্য গড়তে হবে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ মানুষই করবেন।''

প্রাদেশিক কৃষকসভার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ৩৬ তম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ উপলক্ষে এদিন চণ্ডীপুরে এই সমাবেশ হয়। চণ্ডীপুর নন্দীগ্রামের প্রবেশদ্বার। সভা পরিচালনা করেন কৃষকনেতা কানু সাহু। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র ছাড়াও সভায় প্রাদেশিক কৃষকসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী, কৃষকনেতা নিরঞ্জন সিহি, বিদ্যুৎ গুছাইত, অশোক গুড়িয়া বক্তব্য রাখেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন গণ-আন্দোলনের নেতা রবীন দেব।

নন্দীগ্রামের উপকণ্ঠে সভা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও নন্দীগ্রামের পরিপ্রেক্ষিত সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। ২০০৭-র ১১ই ফেব্রুয়ারি খেজুরি সংলগ্ন হেঁড়িয়ার সভায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন মানুষ না চাইলে নন্দীগ্রামে এক ইঞ্চি জমিও নেবো না। এদিন সেই ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,''সেই বিজ্ঞপ্তি নন্দীগ্রাম ব্লক অফিসে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও গোলমাল থামায়নি ওরা। রাস্তাঘাট কাটলো, ঘরবাড়ি জ্বালালো। খবর পেলাম মাওবাদীরা এসেছে। ১৪ই মার্চ পুলিস জমি নিতে যায়নি। অথচ তাই প্রচার হয়েছিল। পুলিস গিয়েছিলো অশান্তি বন্ধ করতে। নন্দীগ্রামে তখন মাওবাদীরা তৃণমূলের সঙ্গেই ছিল। সোনাচূড়ায় ওরা অস্ত্রের ট্রেনিং দিচ্ছিল সেই খবরও পেয়েছিলাম। তাই পুলিস না পাঠালে হতো না। বাধ্য হয়ে পাঠিয়েছিলাম। গুলি চলেছিলো। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কেউ গুলি চালাতে চায়? ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। কিন্তু সবাই পুলিসের গুলিতে মারা যাননি। ৮জন পুলিসের গুলিতে, বাকিরা ছুরি, ইঁটের আঘাতে মারা গিয়েছিলেন। কি করে তা হলো?'' এই প্রসঙ্গেই তাঁর মন্তব্য,''আমরা নন্দীগ্রামে আর একটি হলদিয়া করতে চেয়েছিলাম। আজ সারা দেশ পূর্ব মেদিনীপুরকে হলদিয়ার জন্য চেনে। প্রায় চল্লিশ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে কাজ করেন। আমাদের সরকারের সময় ৬০টি কারখানা হয়েছিল। কেউ আজ বলবে যে হলদিয়া ভুল হয়েছিলো? সরকার থেকে আমাদের সরে যাওয়ার পর গত দেড় বছরে একটিও নতুন কারখানা হলদিয়ায় হয়নি। আর নন্দীগ্রাম কেমন আছে? সেই নন্দীগ্রামেই আছে। কী নিয়ে থাকবে নন্দীগ্রাম? এখনো গোলমাল হচ্ছে। কিছু না পেলে তৃণমূলের লোকজন নিজেদের মধ্যেই মারামারি করছে। সেই সময় আমরা সব কথা বোঝাতে পারিনি। মানুষ এখন বুঝতে পারছেন।''

রাজ্যের অরাজক অবস্থা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য,''রাজ্যে কৃষকের দুরবস্থা মারাত্মক। আমন কমেছে। বোরোর চাষও অর্ধেক। সরকার ধান কিনছে না। আর ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তাম। এখন রাইস মিলকে দিয়ে ধান কেনানো হচ্ছে। বাসের শ্রমিকরা মাইনে পাচ্ছেন না। মন্ত্রীদের বেতন বেড়ে হয়েছে ২৭হাজার। কাগজ পড়লে মনে হয় লাখে লাখে চাকরি হয়েছে। কিন্তু ৫জনেরও কাজ হয়নি। ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন। রাজ্যের ইমাম, পুরোহিতরা কবে সরকারের ভরসায় ছিলেন? মুসলমান ছেলেদের ক'জনের চাকরি হয়েছে? চাকরি মিলছে না। ইমামদের টাকা দিচ্ছি। এইভাবে রাজ্যে বি জে পি-র মাথা তোলার পথ করে দেওয়া হচ্ছে।'' তাঁর জিজ্ঞাসা,''কাদের সরকার চলছে? পঞ্চায়েত ধুঁকছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পরিষদ দেশের দুর্নাম। এত চুরি করছে। রেগায় কাজ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।'' শাসকদলের নীতির প্রসঙ্গে ভট্টাচার্য বলেন,''কংগ্রেস থেকেই তো ওদের জন্ম। টি এম সি তো বড়লোকদেরই দল। মনমোহন সিংয়ের পথেই ওরা তাই চলছে। দিল্লিতে যতদিন মন্ত্রী ছিল ওরা, তখন তো কেন্দ্রীয় জনবিরোধী নীতির সব মেনেই নিয়েছে।

সূর্যকান্ত মিশ্র এদিন বলেন,''কৃষক এবং কৃষির সমস্যার সমাধান না করে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলছেন টাকা কী গাছে ফলে? আমাদের প্রশ্ন দেশের ৫লক্ষ কোটি টাকা যখন চুরি হয়ে যায়, কালো টাকা যখন বিদেশের ব্যাঙ্কে জমে তখন টাকা কোথায় ফলে?'' রাজ্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,''মুখ্যমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীর সুরে বলছেন টাকা নেই।অথচ তাঁর মেদিনীপুর যাওয়ার খরচ ১কোটি টাকা। ৪ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করছেন।সরকারী উদ্যোগে বীরভূম সহ অন্যান্য জেলা থেকে বাস জোগাড় হচ্ছে তৃণমূলের মেদিনীপুরের সভার জন্য। তিনফলা বাতির জন্য টাকা আছে। মুখ্যমন্ত্রী অন্য কোন শিল্প দেখেন না। ওনার একটিই শিল্প। যা উনি আঁকেন। আমরা জানতে চাই কত টাকা দিয়ে তাঁর ছবি বিক্রি হলো? কত সাদা টাকা? আর কত কালো টাকা? কারা কারা কিনলেন? আমাদের একটু জানাবেন?''

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=34295


Image

মমতা সরকারের ১০০দিন

গণশক্তির প্রতিবেদন

২০শে মে, ২০১১: দুপুর ১টা ১ মিনিট । শপথ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী



আগে বলেছিলেন ছোট মন্ত্রিসভা হবে, অথচ কলেবর যতটা বড় হতে পারে ততটাই। কে কে মন্ত্রী হবেন তার জল্পনা চলছিলই। কিন্তু শপথ গ্রহণের জন্য মন্ত্রীদের নাম ডাকার সময় মুখ্যসচিব ডাকলেন বাঁকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাশীনাথ মিশ্রের নাম। কিন্তু কাশীবাবু মঞ্চে উঠলেন কই? আসলে সাপলু‍‌ডো খেলায় শেষ মুহূর্তে কাশীবাবুর নাম বাদ পড়েছে। মুখ্যসচিবের তালিকায় তা সংশোধিত হয়নি। সমন্বয় রক্ষার অনন্য নজির প্রথম চোটেই।



মুখ্যমন্ত্রীর নিজের টাকায় অফিস সাজানো



ক্ষমতায় আসার পর মহাকরণে নিজের অফিসঘরটি তাঁর পছন্দমতো সাজানোর উদ্যোগ শুরু হতেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ২লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন সরকারকে। প্রচার হয়েছিল, সরকারী টাকায় না, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নিজের দেওয়া টাকাতেই নিজের অফিসঘরের সংস্কার করাচ্ছেন। কিন্তু এখন পূর্ত দপ্তর হিসাব করে দেখছে, অন্য কাজ নয়, শুধু বিদ্যুতের কাজ করাতেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের জন্য খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা! অন্যান্য খরচ ধরলে পূর্ত দপ্তরের হিসাবে টাকার পরিমাণ এতটাই যে, মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ২লক্ষ টাকা নেহাতই বিন্দু। 



মন ভরে না মন্ত্রীদের



রাজ্যের তৃণমূলী জোট সরকারের কোনও কোনও মন্ত্রী তাঁদের জন্য বরাদ্দ সরকারী ফ্ল্যাটে রান্নাঘরের জন্য দরকারী বাসনকোসনও কিনে দিতে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন! তাঁদের বায়নার বহর দেখে বিস্মিত রাজ্যের পূর্ত সচিব বাধ্য হয়ে পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সীকে চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠিতে পূর্ত সচিব এ আর বর্ধন পূর্তমন্ত্রীকে লিখেছেন, ''আগে রাজ্যের মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ ফ্ল্যাটে শুধু দুটো তোষক, চেয়ারসহ একটি ডাইনিং টেবিল, একটি সোফা সেট ও জানালার পর্দা দেওয়া হতো। অন্য যা কিছু দরকার হতো, তা প্রয়োজন মনে করলে মন্ত্রীরা নিজেরাই কিনে নিতেন।'' রাজ্যে নাকি প্রবল আর্থিক সঙ্কট, ভাঁড়ারে নাকি কোনও পয়সা নেই, অথচ পরিবর্তনের জমানায় মন্ত্রীদের চাহিদা সামলাতে পূর্ত দপ্তরের আমলাদের 



ঘাম ছুটে যাওয়ার উপক্রম!



পূর্ত সচিব তাঁর ওই চিঠিতে গত ১৪ই জুলাই পূর্তমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, নতুন সরকারের আমলে রাজ্যের মন্ত্রীদের ফ্ল্যাটে বরাদ্দ করা হয়েছে-দুটো তোষক, ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার, একটা সোফা সেট, চেয়ারসহ একটা পড়ার টেবিল, একটি ওয়ারড্রোব, এয়ার কন্ডিশনারসহ সমস্ত ধরনের আলো ও পাখা, জানালার পর্দা এবং একটি ২৬ ইঞ্চি রঙিন এল সি ডি টিভি।

পূর্তমন্ত্রীকে ওই চিঠিতে সচিব লিখেছেন, আমরা নতুন মন্ত্রীদের অনেকের কাছ থেকে এরপরেও ঘর সাজানোর উপকরণ হিসাবে বেশ কিছু জিনিস সরবরাহ করার আরজি পাচ্ছি।



দূরবীন ছাড়াই দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাস



সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মমতাকে বলেছিলেন তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি। আর সেই কথার সত্যতা প্রতিদিন স্পষ্ট হচ্ছে এখন। 

১৪ই মে থেকে ৩১জন বামপন্থী নেতা-কর্মী-সমর্থক তৃণমূল জল্লাদদের হাতে জীবন দিয়েছেন, ধর্ষিতা হয়ে খুন হয়েছেন ১জন আদিবাসী মহিলা, ধর্ষিতা আরো ১৪জন মহিলা। শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬১জন মহিলা। তৃণমূলের ভৈরব বাহিনীর অত্যাচারে ৬জন বাম কর্মী-সমর্থক আত্মহত্যার পথ বেছে নি‍‌য়েছেন। ভয়ঙ্কর এই আক্রমণে ২০৮৪জন বাম কর্মী-সংগঠক আহত হয়েছেন। অন্তত ১২হাজার এখনও ঘরছাড়া।প্রায় ২হাজার বামপন্থী কর্মীর ঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সি পি আই (এম )-র ৮২১টি দপ্তর লুট ও দখল করা হয়েছে। ৭০২টি বামপন্থী গণ-সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নের অফিস দখল করা হয়েছে। ৭২টি ছাত্র ইউনিয়নের অফিস দখল করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে ৭২১জন সি পি আই (এম) কর্মী-সমর্থকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পালা, চেষ্টা চলছে বামপন্থী নেতাদের মামলায় জড়িয়ে বন্দী করার। 

একই সঙ্গে চলছে নীরব সন্ত্রাস। তৃণমূলকে তোলা না দিলে বাড়িতে থাকা যাবে না—গ্রামগঞ্জে জারি হয়েছে ফতোয়া। জরিমানার নামে অন্তত ১৩কোটি ৭০লক্ষ টাকা আদায় করেছে তৃণমূলীরা। 



আক্রান্ত বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রীরাও



রাজ্যজুড়ে চলছে সি পি আই (এম)-সহ বামপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার জোয়ার। একের পর এক প্রায় সমস্ত জেলায় মিথ্যা মামলায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের নাম। তৃণমূলের হাতে লুট হয়ে যাওয়া পার্টি অফিসে বাইরে থেকে অস্ত্র এনে রেখে দিয়ে অনুগত পুলিসবাহিনীকে ডেকে এনে মিথ্যা অভিযোগে অস্ত্র আইনে জেলে ঢোকানো হচ্ছে সি পি আই (এমে) কর্মীদের। এই চক্রান্তে শুধু নিচুতলার কর্মীদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাই নয়, রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী এবং বর্তমান বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধেও থানায় অভিযোগ করেছে তৃণমূল। কঙ্কালকাণ্ড নামে মুখরোচক গল্প ছড়ানো হচ্ছে মিডিয়া‌য়।

রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর বাতাবরণে আক্রান্ত হচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরাও। পরিবর্তনের সরকার শপথ নেবার পরদিনই অর্থাৎ ২১শে মে আউশগ্রামের বামফ্রন্ট বিধায়ক বাসুদেব মেটের বাড়িতে হামলা করে তৃণমূলের জল্লাদবাহিনী। তার একমাসের মধ্যেই ২১শে জুন কয়লাখনি সম্প্রসারণের জন্য জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মিছিলে পুলিস লাঠি চালায়। পুলিসকে সঙ্গে নিয়েই তৃণমূল ভৈরববাহিনী আক্রমণ করে পাণ্ডবেশ্বরের সি পি আই (এম) বিধায়ক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জিকে। তার একমাসের মধ্যেই ২২শে জুলাই আমডাঙায় আক্রান্ত বাম কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আক্রান্ত হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সাত্তার। গত বিধানসভা নির্বাচনে হুগলীর খানাকুল কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থী শুভ্রা পাড়ুইকে আক্রমণ ও শ্লীলতাহানি করে তৃণমূলের জল্লাদবাহিনী।



জমির অধিকার আক্রান্ত



কৃষকদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু ঝরানো 'মা মাটি মানুষের' নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জন্য এই তথ্য— নতুন সরকারের তিন মাসেই তৃণমূলীদের হামলায় ৮৩০একর রায়ত জমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন ৫০৮জন কৃষক। পাট্টার বৈধ কাগজ থাকা সত্ত্বেও ১৫২৯একর জমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন ৪৭০৭জন পাট্টাদার। উচ্ছেদ হওয়া বর্গাদারের সংখ্যা ৩৫১১, জমির পরিমাণ ১৫২২একর। হামলা চালিয়ে জমি থেকে ফসল লুটের ঘটনা ঘটেছে ১২৪টি, জমির পরিমাণ ১৪৮৬একর। শুধুমাত্র সি পি আই (এম) সমর্থক হওয়ায় জমির ফসল নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এমন ঘটনা ৬৮টি, জমির পরিমাণ ১৬৫একর।

হাড়োয়ার জমি থেকে উচ্ছেদের জন্য পুলিস ও তৃণমূল যৌথ অভিযান চালায়। পাট্টা প্রাপক, বর্গাদার, মৎস্যজীবী ও দখলদার হিসাবে চারটি মৌজার ১০হাজার গরিব কৃষককে উচ্ছেদ করে ভেড়ি দখল করে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, মাছ লুঠপাটের উদ্দেশ্যেই হামলা চালানো হয় এখানে। জমি থেকেই উচ্ছেদ হওয়া গরিব কৃষক, বর্গাদার ও পাট্টাদারদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালো পুলিস। পুলিস-তৃণমূলের যৌথ হামলায় গুলিবিদ্ধ হলেন চারজন গরিব আদিবাসী কৃষক।

দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার দ্বীপখণ্ডা গ্রামে পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলীরা গরিব কৃষক, বর্গাদার ও পাট্টাদারদের ওপর গুলি চালায়। মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার ৪৮ঘণ্টার মধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, দক্ষিণ ২৪পরগনা, হুগলী, বাঁকুড়া, বীরভূমের বিস্তীর্ণ এলাকায় পাট্টাদারদের উচ্ছেদের অভিযান চালানো শুরু করেছে তৃণমূলীরা। 



'নীরব সন্ত্রাস', দখলদারি পঞ্চায়েতে



বামফ্রন্টের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের কোথাও হুমকি দিয়ে, কোথাও বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করিয়ে, আবার কোথাও অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটির দিন বামফ্রন্ট পঞ্চায়েত সদস্যদের অপহরণ করে দখল নেওয়া হচ্ছে পঞ্চায়েতের। কোথাও আবার পঞ্চায়েত প্রধান পদে বামফ্রন্ট প্রার্থীকে রেখেই সশস্ত্র হুমকি দিয়ে চালানো হচ্ছে পঞ্চায়েত। তৃণমূলীদের দেদার দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকা লুটের দায় পড়ছে বামফ্রন্টের পঞ্চায়েত প্রধানের ওপর। এরপর সি পি আই (এম)-কে হেয় করতে ঐ পঞ্চায়েত প্রধানকেই চুরির দায়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে পুলিসের হাতে। হাওড়া, বর্ধমান, বীরভূম, হুগলী, পূর্ব মেদিনীপুরের প্রায় সর্বত্রই এই ঘটনা। বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অধিকার আজ আক্রান্ত। 

পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম, নারায়ণগড়, সবং, শালবনী, সাঁকরাইল, পিংলা, মোহনপুর, চন্দ্রকোনা— অধিকাংশ জায়গাতেই বন্ধ পঞ্চায়েতের কাজকর্ম। হয় পঞ্চায়েত সদস্যদের ঘরছাড়া করা হয়েছে নতুবা পঞ্চায়েত সদস্যদের জোর করে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে দখল নেওয়া হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েতের।



মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনেই আক্রান্ত মহিলারা...



ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকেই গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন মিনাখাঁ বিধানসভা এলাকার কুলটি তেঘরিয়া গ্রামের শ'খানেক গ্রামবাসী। প্রায় পুরুষশূন্য গ্রামে পড়ে ছিলেন মহিলারা। ১৪ই মে রাতেই ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির শিকার হন কয়েকজন। খানাকুলে সি পি আই (এম) রাজহাটি কার্যালয়ে পার্টিনেতা অশোক পাড়ুইয়ের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় তৃণমূলীরা। চিৎকার শুনে পার্টি অফিস লাগোয়া অশোক পাড়ুইয়ের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন তাঁর স্ত্রী তথা বামফ্রন্টের প্রার্থী শুভ্রা পাড়ুই। তৃণমূলী তাণ্ডব থেকে রেহাই পাননি তিনিও, তাঁর শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা চালানো হয়। খানাকুলের মোড়াখানা গ্রাম পঞ্চায়েতের শশাপোঁতা গ্রামের এক বিধবা মহিলার বাড়িতে চার তৃণমূলী চড়াও হয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে। এমনকি খানাকুল থানায় তিনি অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিস তা নিতে অস্বীকার করে!

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রঘুনাথপুর ১নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিষদা গ্রামেও চলছে মহিলাদের ওপর অত্যাচার। কলকাতায় ১৮নম্বর ওয়ার্ডের মণিরুদ্দিন লেনে তৃণমূলীরা হামলা চালায় পিঙ্কি মল্লিক নামে এক সন্তানসম্ভবার ওপর। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। নৃশংসতম ঘটনাটি ঘটেছে গড়বেতার ধাদিকায়। এলাকা দখল, তোলা আদায়ের জন্য আধিপত্য নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর প্রবল দ্বন্দ্বের জেরে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে এক গরিব আদিবাসী মহিলা শ‌্যামলী হাঁসদা(৩২)-কে। 





চরম দলতন্ত্র



দলতন্ত্র কী তা এই ক'দিনেই পরিষ্কার করে দিয়েছে পরিবর্তনের সরকার। মাত্র এই ক'দিনে ৪০টির বেশি কমিটি তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সবক'টিতেই সংখ্যাধিক্য তৃণমূলপন্থীদের। বুদ্ধিজীবীদের। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিভিন্ন জেলার নির্বাচিত সভাপতিদের ডেকে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করার আদেশ দিলেন ৩রা জুন। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিদের সরিয়ে নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হলো যাদের সকলেরই রাজ‍‌নৈতিক পরিচয় তৃণমূল। তৃণমূলপন্থী শিক্ষাবিদদের বিভিন্ন কলেজের পরিচালন সমিতিতে সদস্য করার জন্য সময়কাল শেষ হবার আগেই পদত্যাগ করানো হলো সরকারী প্রতিনিধিদের। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন তৃণমূল নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হলো যাদের শিক্ষার সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পর্কও নেই। সরকারকে পরামর্শ দেবার নামে শিক্ষায় তৈরি করা কমিটি বৈধ প্রতিষ্ঠানকে যা খুশি ফতোয়া দিয়েই চলেছে। 



'সুইজারল্যান্ড নয়', গোর্খাল্যান্ড



গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে কার্যত বৈধতা দিল তৃণমূল সরকার। ১৮ই জুলাই সম্পাদিত চুক্তিতে এমনকি 'গোর্খাল্যান্ড' শব্দটিকেও জায়গা করে দিল তৃণমূল সরকার। যে চুক্তি সম্পাদিত হলো তা বিধানসভায় আলোচিত হয়নি, প্রকাশ্যেও আসেনি। উলটে তরাই ও ডুয়ার্সের 'গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসনের'' অন্তর্ভুক্ত করার বিবেচনায় কমিটি বানানো হয়েছে। 



সংবাদমাধ্যমও বিপদ গুণছে



মৌলিক অধিকারেও হস্তক্ষেপ করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার অনুগত না হলে সাংবাদিকদেরও নিস্তার নেই। ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলের সাংবাদিকরা ‍‌শিশুমৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে খোদ মহাকরণেই তাঁদের ধমক দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে ১লা জুলাই এমনকি 'বর্তমান' পর্যন্ত লিখতে বাধ্য হলো ''মুখ্যমন্ত্রী আজ একটি সংস্থার সাংবাদিকদের রক্তচক্ষু দেখালেন। প্রতিবাদ না হলে যে কোনও দিন যে কোনও সংস্থার প্রতিনিধিদেরও এই হাল হবে।'' এমন কথা লেখার অপরাধে তৃণমূলের সরকারী মুখপত্র 'জাগো বাংলা'-র ৮ ও ১৫ই জুলাই সংস্করণে বর্তমানকে সতর্ক করা হলো একেবারে খোলাখুলি। তৃণমূলপন্থী কাগজ ও চ্যানেলের সাংবাদিক ২১শে জুলাই তৃণমূলের দলীয় সমাবেশের মঞ্চে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করলেন। আর চাটুকার কাগজের সম্পাদকের জন্য পুরস্কার রাজ্যসভার সদস্যপদ। রঙ্গ বটে! মহাকরণে ৩০‍‌শে মে বিমল গুরুঙ-কে সাংবাদিকরা যখন গোর্খাল্যান্ডের দাবি সংক্রান্ত প্রশ্ন করছিলেন তখনও রণচণ্ডী মূর্তি মুখ্যমন্ত্রীর। বলে দিলেন, এমন প্রশ্ন করাই যাবে না। রোজকার রুটিন এইরকমই। 



স্বৈরতন্ত্রের কণ্ঠস্বর



ভারতের ইতিহাসে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল দু'বছর। আর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী গত ২১শে জুলাই প্রকাশ্যে বললেন বিরোধীরা দশ বছর মুখ বন্ধ রাখুক।

রাজ্যপালও ১৩ই জুন বিধানসভার ভাষণে তৃণমূলের রাজনৈতিক স্লোগান দিতে বাধ্য হলেন। সরকার পূর্ণাঙ্গ বাজেটও পেশ করলো না। আয়-ব্যয়ের স্পষ্ট ধারণা জানতেই পারলেন না রাজ্যবাসী। বিধানসভায় স্বরাষ্ট্র-সহ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা অধিকাংশ দপ্তরের বাজেট নিয়ে আলোচনাই হচ্ছে না। বিরোধীরা কথা বলতে পারবেন না। 





কলকাতা 'লন্ডন' হবে...



কলকাতাকে 'লন্ডন' বানানোর নামে কলকাতার গঙ্গা তীরের বিস্তীর্ণ প্রান্ত যাচ্ছে বেসরকারী হাতে। অথচ কলকাতা পৌরসভার এবারের বাজেটের দিকে চোখ রাখুন। রাস্তা মেরামতির খাতে ২০১০-১১ সালে বরাদ্দ ছিল ২৭৬ কোটি টাকা। ২০১১-১২ সা‍লে এই খাতে বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকা। বস্তি উন্নয়ন খাতে ২০১০-১১ সালে বরাদ্দ ছিল ১২৯ কোটি টাকা। ২০১১-১২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট খাতেও বরাদ্দ কমেছে ২ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ১১৪ কোটি টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। পার্ক এবং জলাধার সংরক্ষণেও বরাদ্দ ক‍‌মেছে ৪ কোটি। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। পার্ক এবং রাস্তার আলোকসজ্জার বরাদ্দ ১৫০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪০ কোটি। মূল বিষয়গুলির দিকে নজর না দিয়ে লোক দেখানো ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে লোক ঠকানোর কাজ। 



টেন্ডার ছাড়াই ল্যাপটপ



জুন মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেয় রাজ্য সরকার। মোট ৬২জন ছাত্র-ছাত্রীকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এদের প্রত্যেককেই একটি করে ল্যাপটপ উপহার দেওয়া হয়। সবক'টি ল্যাপটপের প্রস্তুতকর্তা একটি বিশেষ সংস্থা। তবে এই ল্যাপটপ কেনার জন্য সরকার কোনো টেন্ডার আহ্বান করেনি। 



মমতার 'ডহরবাবু'



৩০শে জুন সাঁওতাল বিদ্রোহের শহীদ স্মরণের সরকারী অনুষ্ঠান চলছিল কলকাতার সিধো-কানহু ডহর-এ। এই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন ১৮৫৫ সালের হুল বিদ্রোহের সিধো, কানহুর সঙ্গে 'ডহরবাবু'রও মৃত্যু হয়েছিল। 'ডহরবাবু'র পরিবারের কেউ অনুষ্ঠানে আছেন কিনা তাও খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। 



৬৮ হাজার শিক্ষক, ১৯ লক্ষ ছাত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত



২৮শে জুলাই ‍‌শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলির শিক্ষকদের প্রস্তাবিত নিয়োগপত্র দেবার কাজ বন্ধ করে দিলো তৃণমূল সরকার। তৃণমূলের সরকারের কার্যপদ্ধতিতে এখন গভীর সঙ্কটে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলির ভবিষ্যৎ। ৬৮ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার জীবন-জীবিকা এসে দাঁড়িয়েছে অনিশ্চয়তার সামনে। এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। ১৯ লক্ষের কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত। তাদের ভবিষ্যৎও আজ প্রশ্ন চিহ্নের মুখোমুখি।





সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটকও বন্ধ!



সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিংবদন্তী এই শিল্পীর বয়স এখন ৭৬ বছর। শরীরটা খুব ভালো নেই। তবুও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি অক্লান্তভাবে চালিয়ে যান মঞ্চে নাট্য অভিনয় এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। কলকাতার ঐতিহ্যমণ্ডিত মিনার্ভা থিয়েটার বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নতুনভাবে এবং নতুন সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মিনার্ভা রেপার্টারি থিয়েটারকে কেন্দ্র করেই সরকারী প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হয় শেক্‌সপিয়ার কিং লিয়ার-এর বাংলা অনুসরণ রাজা লিয়ার। রাজা লিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করেন স্বয়ং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নভেম্বর ২০১০-এ প্রথমবার মঞ্চস্থ হবার পর যে ক'বার এই নাটকের অভিনয় হয়েছে সব ক্ষেত্রেই প্রেক্ষাগৃহ ছিলো পূর্ণ। পরিবর্তনের পর এখন সৃষ্টির জগৎও আক্রান্ত। ব্যাখ্যা যাই হোক, সকলেই বুঝতে পারছেন কারণ কী। নাটকে লাভ চাই, জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী। 





সিঙ্গুরে 'অনিচ্ছুক' কৃষকের দাবি মাত্র ৪০একর



'৪০০ একর' নয়। মাত্র ৪০ একর। 'হাজার হাজার অনিচ্ছুক' কৃষক নয়। মাত্র তিনশো দশ জন।

সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমির যাঁরা 'অনিচ্ছুক কৃষক', ক্ষতিপূরণ নেননি, বরং জমি ফেরত চান, তাদের সবাইকে রাজ্য সরকার সময় দিয়েছিলো একমাস। তার মধ্যেই সিঙ্গুর ব্লক অ‍‌ফিসের মাধ্যমে হুগলী জেলা প্রশাসনের কাছে অধিগৃহীত এলাকায় নিজেদের জমির মালিকানা সংক্রান্ত দাবি ও প্রমাণপত্র পেশ করতে হবে। সেই একমাস সময়ের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২২শে জুলাই। সেদিন পর্যন্ত যেসব অনিচ্ছুকদের কাছ থেকে, জেলা প্রশাসন সেই কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছে, মাত্র ৩১০জন প্রকৃত দাবিদার। অথচ ২০০০-এর বেশি কৃষক 'অনিচ্ছুক' হিসাবে জমি ফেরতের দাবিদার হয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। আর এই তিনশো দশ জনের জমির পরিমাণ মোট কত? মাত্র ৪০ একর!



প্রকাশের আগেই ফাঁস উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফল



অভূতপূর্ব‍‌ই বটে। ফলাফল প্রকাশের আগেই স্টার আনন্দ চ্যানেলে দেখানো হতে থাকে উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকা। পরে সংসদের সভাপতির সাংবাদিক সম্মেলনের পর দেখা যায় সেই মেধাতালিকা হুবহু এক। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে দাঁড়িয়ে বলেন এ আর এমন কী? 



মদের ব্যবসায় রমরমা!



সূত্র বর্তমান পত্রিকা, ১লা আগস্ট কলকাতা সংস্করণ। খবরে প্রকাশ ''আয় বাড়াতে ১২টি নতুন দেশী মদের কারখানা খোলার অনুমতি দিলো আবগারি দপ্তর। এরকম আরো ২০টি কারখানার অনুমোদন দিতে আবগারি দপ্তরে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রাজ্যে এখন মাত্র ১৫টি দেশী মদের কারখানা আছে। ...২৫ হাজার টাকায় দরখাস্ত কিনে ৫ লক্ষ টাকা লাইসেন্স ফি জমা দিলেই জেলায় জেলায় দেশী মদের কারখানা খোলার অনুমোদন দেবার নীতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার।'' পরিবর্তন তো একেই বলে। 



কংগ্রেসও বিপাকে



পালাবার পথ আছে তো? জোটসঙ্গী তৃণমূলের ভৈরববাহিনীর হাতে আক্রান্ত কংগ্রেসও। ১৮ই জুন খোদ মালদার বুকে তৃণমূলের জল্লাদবাহিনীর হাতে আক্রান্ত হলেন ইংলিশ বাজারের কংগ্রেস বিধায়ক প্রাক্তন তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। ২৩শে জুন কলকাতায় আই এন টি ইউ সি-র সভায় বলা হলো ১৩ই মে-র পর রাজ্যে শ্রমিকশ্রেণী আক্রান্ত। ১লা আগস্ট প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য তৃণমূলের হামলা বিষয়ে চিঠি দেন মমতাকে একথাও জানাচ্ছে ঐদিনেরই বর্তমান পত্রিকা। ৩০শে মে তারিখে আই এন টি ইউ সি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জি সঞ্জীব রেড্ডি পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিকশ্রেণীর ওপর আক্রমণ বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি দেন। রোজ কলেজে কলেজে তৃণমূলীদের হাতে মার খাচ্ছেন কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের কর্মীরা। 



সরকারের 'সাফল্য'



৯০দিনেই ২০০দিনের প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। সে-সংক্রান্ত পুস্তিকায় অর্ধেকের বেশি 'কৃতিত্বের' তালিকায় আসলে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে হয়ে যাওয়া কাজ। অসংখ্য ঘোষণাকেও 'সাফল্য' বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।


http://ganashakti.com/bengali/features_details.php?featuresid=570



তরুণীর বন্ধুর সাক্ষাৎকার, জি নিউজের বিরুদ্ধে মামলা পুলিসের


দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণীর বন্ধুর সাক্ষাত্কার সম্প্রচারের ঘটনায় জি নিউজের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল পুলিস। শনিবার জি নিউজের এডিটর ইন চিফ সুধীর চৌধুরীকে ডেকে পাঠায় পুলিস। জি নিউজের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিসের এই আচরণের নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। 

শুক্রবার জি নিউজেই প্রথমবার ১৬ ডিসেম্বরের নারকীয় ঘটনার কথা বিশদে জানান দামিনীর বন্ধু। তিনি নিজেই জি নিউজে তাঁর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চাঞ্চল্যকর সেই সাক্ষাত্কার সম্প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি পুলিস। এফআইআর দায়ের করা হয় জি নিউজের বিরুদ্ধে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২২৮-এর এ ধারায় নিগৃহীতের পরিচিতি প্রকাশ দণ্ডনীয়। এই ধারাতেই জি নিউজের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। জি নিউজের এডিটর ইন চিফ সুধীর চৌধুরীকে ডেকে পাঠায় পুলিস। এরপর এফআইআরের প্রতিলিপি চাইতে  আদালতে যান সুধীর চৌধুরী। অডিও ভিজুয়াল মাধ্যমে তাঁর বয়ান রেকর্ড করার জন্যও আদালতে আর্জি জানান তিনি।

জি নিউজে সম্প্রচারিত চাঞ্চল্যকর ওই সাক্ষাত্কারে যদিও দোষের কিছু দেখছে না রাজনৈতিক মহল। পুলিস মামলা প্রত্যাহার না করলে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাবে বিজেপি। জানিয়েছেন বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ।



উপরোক্ত ধারায় নিগৃহীতর সুরক্ষার স্বার্থেই তাঁর পরিচয় গোপন রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সিপিআইএম নেত্রী বৃন্দা কারাট মনে করেন, এক্ষেত্রে সেই ধারা আদৌ কার্যকর নয়।


ছাত্র সংঘর্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে ঢাকা রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : 
রাজনৈতিক নৈরাজ্যে মেধাবী ছাত্র হত্যাকাণ্ডের শীর্ষে চবি

 
আমাদের সময়, Sun 12 Feb 2012
দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় একের পর এক ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সবধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও সীমাহীন হতাশা শুধু অভিভাবকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তারা এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে সরকারের কাছে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। 

সূত্রমতে, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেয়া ওই প্রতিবেদনগুলোয় দেশের তিনটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ ছাত্র সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ তিনটি হলো ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব শিক্ষাঙ্গন থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিতাড়িত করতে প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী বড় ধরনের হামলা চালানোর সুযোগ খুঁজছেন। 

এ জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কতর্ণ্ঠপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারির পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তা না হলে এসব শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংঘর্ষসহ একসঙ্গে অনেক ছাত্রের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। এ কারণে প্রতিবেদনগুলোয় ছাত্র সংঘর্ষের ক্ষেত্রে ওই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব প্রতিবেদনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সংঘর্ষের ঘটনায় বরাবরের মতো আওয়ামী লীগের নেতণ্ঠত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের ৩ বছরে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গত তিন বছরে ছাত্ররাজনীতির বলি হওয়া মেধাবী ছাত্রদের অধিকাংশই এ তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র। এর মধ্যে ছাত্র হত্যাকাণ্ডে এবার এককভাবে শীর্ষস্থান দখল করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গত তিন বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫ জন ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই সময়ে অন্য ৩ জন নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দ্বিতীয় স্থানে নিয়ে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে। 

তবে একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য ছাত্র সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও নিহত হয়েছেন একজন। তাই দেশে ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তণ্ঠতীয় স্থানে থাকতে হয় ঢাকা বিশ�বিদ্যালয়কে। বিএনপির নেতণ্ঠত্বাধীন গত চারদলীয় জোট সরকারের সময়েও রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সংঘর্ষে দেশের এ তিনটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছিল। 

ছাত্র হত্যাকাণ্ড ও সংঘর্ষে প্রথম তিনের মধ্যে থাকতে না পারলেও বর্তমান সরকারের আমলে একজন মেধাবী ছাত্র হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় জায়গা দখল করে নেয় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলে একই তালিকায় (অধিক ঝুঁকিপূর্ণের) স্থান করে নেয় ঢাকার জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ, বুয়েট, সরকারি তিতুমীর কলেজ, খুলনার আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ, বিএম কলেজ, খুলনা পলিটেকনিক, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংঘর্ষে গত তিন বছরে কোনো ছাত্রের মৃত্যু না হলেও মারাত্মক আহত হয়েছেন শ শ ছাত্র। এদের অনেককেই বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা সিলেট সরকারি কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, যশোরের এমএম কলেজ, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ�বিদ্যালয়, নেত্রকোনা সরকারি কলেজ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ, নড়াইল সরকারি কলেজ ও ফেনী সরকারি কলেজসহ আরো বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সাধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্ত করেছে। 

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান সরকারের প্রথম ৫ মাসেই শুধু ছাত্রসংগঠনের কারণে দেশের ৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। 
http://www.sonarbangladesh.com/newsdetails.php?ID=18883

সাংবাদিকরা খুন হন বিচার হয় না

 
সমকাল, Sun 12 Feb 2012
বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাংবাদিকরা খুন হলেও একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। গত এক দশকে ঘটে যাওয়া ২৩ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনও ঝুলে রয়েছে। কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে বছরের পর বছর সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, মূল অপরাধীদের পাশ কাটিয়ে চার্জশিট দেওয়া, দুর্বল অভিযোগ উত্থাপন এবং চার্জশিটভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার না করার অভিযোগ আছে। এমনকি প্রভাবশালী খুনিদের পক্ষ নিয়ে নিহত সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখানোরও 

অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠেছে নিম্ন আদালতে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে নিজ ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী। 

এদিকে একের পর এক সাংবাদিক হত্যা এবং এক দশকে একজন সাংবাদিক হত্যার বিচারও শেষ না হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী সমকালকে বলেন, বিচার না পাওয়ায় সাংবাদিক সমাজ সংক্ষুব্ধ হচ্ছে। রাষ্ট্র সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচারে ব্যর্থ হলে ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। 
এ ব্যাপারে সাংবাদিক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, গত এক দশকে একজন সাংবাদিক হত্যারও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা একের পর এক ঘটত না। 

গত এক দশকে খুন হয়েছেন যারা :এক দশকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ সংখ্যা ২৫-এ দাঁড়াল। 

২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি নিজ বাসায় স্ত্রীসহ খুন হন সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ। এর আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুন হন আরও ১৪ সাংবাদিক। ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যুরো প্রতিনিধি গৌতম দাসকে খুন করে এলাকার ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী একটি প্রভাবশালী চক্র। এ চক্রের অনিয়ম, জালিয়াতির বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশনের কারণে তাকে সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। 

২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন দৈনিক সংবাদের খুলনা ব্যুরোপ্রধান এবং প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা। ২০০৪ সালের ২৭ জুন নিজের অফিসে নিহত হন খুলনার দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বালু। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠের যশোর প্রতিনিধি শামছুর রহমান কেবল যশোরের জনকণ্ঠ কার্যালয়ে খুন হন। 

২০০৪ সালের ২ অক্টোবর বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক এবং বিএফইউজের তৎকালীন সহ-সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী নিজ বাসায় নিহত হন। ২০০৫ সালের ২৯ মে দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকণ্ঠের সম্পাদক মুহাম্মদ গোলাম মাহফুজ নিহত হন। ২০০৪ সালের ২ মার্চ কেরানীগঞ্জে দি নিউ এজের সাংবাদিক আবদুল লতিফ পাপ্পু নিহত হন। 

এ ছাড়া ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পেশাগত কারণে খুন হয়েছেন দৈনিক পূর্বাঞ্চলের স্টাফ রিপোর্টার হারুনার রশীদ খোকন, খুলনার দৈনিক অনির্বাণের রিপোর্টার এসএম নাহের আলী, সরদার শুকুর হোসেন, ঝিনাইদহের বীর দর্পণ পত্রিকার মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ, দৈনিক জনবাণীর রিপোর্টার বেলাল হোসেন, যশোরের দৈনিক রানারের গোলাম মাজেদ, রাঙামাটির এনটিভি প্রতিনিধি জামালউদ্দিন, খুলনায় দৈনিক সংগ্রামের বেলাল হোসেন, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দৈনিকের সাংবাদিক আহসান আলী, মৌলভীবাজারের ফারুক আহমেদ, নীলফামারী থেকে প্রকাশিত নীলসাগরের সাংবাদিক কামরুজ্জামান, গাইবান্ধার ফরিদুর রহমান রঞ্জু এবং সাতক্ষীরায় শ ম আলাউদ্দিন। ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল এবং ১৯৯৬ সালের ৮ জুন সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক শ ম আলাউদ্দিন হত্যা ছিল চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক হত্যার ঘটনা। 

একটি মামলারও বিচার হয়নি :অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত এক দশকে সাংবাদিক হত্যার কোনো বিচার হয়নি। সাংবাদিক দম্পতি ফরহাদ খাঁ হত্যা মামলার তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তার একমাত্র মেয়ে আইরিন পারভীন খান। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, মামলায় খুনের পরিকল্পনাকারীদের বাদ দিয়ে শুধু হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুই কিশোরকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের মাতবর এ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তাকেও ভয়ানক পরিণতি বরণ করতে হবে বলে হুমকি দেন। মামলার চার্জশিট হলেও এখন পর্যন্ত বিচার শুরু হয়নি। 

২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট গৌতম দাস হত্যা মামলা ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হলেও এখন পর্যন্ত বিচার শেষ হয়নি। সর্বশেষ ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানির পর আবারও ১৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। 

হুমায়ুন কবির বালু হত্যাকাণ্ডের আট বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত শেষ হয়নি। উন্মোচিত হয়নি খুনিদের মুখোশ। ফলে বিচার কাজও শুরু হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহল এবং পুলিশ এ মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার কারণেই মামলার তদন্ত শেষ করা হচ্ছে না। 
মানিক সাহা হত্যা মামলার বিচার আট বছরেও শেষ হয়নি। খুলনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার এখনও চলছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী মহলের মদদে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে পুলিশ। 

গত ১১ বছরেও শেষ হয়নি শামছুর রহমান কেবল হত্যার বিচার। পাঁচ বছর ধরে মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। একইভাবে ১৩ বছরেও শেষ হয়নি সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা। মামলার চার্জশিটভুক্ত সব আসামি রয়েছে জামিনে। অনেকে এ মামলা কবর দেওয়ার জন্য সরকার, এমনকি মিডিয়াকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। 

অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও বিচার সম্পন্ন কিংবা হত্যাকারীর শাস্তি হওয়ার কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। অতীতের অভিজ্ঞতায় সর্বশেষ সাগর সরওয়ার এবং মেহরুন রুনী দম্পতি হত্যার বিচারও হবে কি-না তা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ সংশয়ে আছে। একই সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। 
http://www.sonarbangladesh.com/newsdetails.php?ID=18879

নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজনীতির কাছে মাথা নত করবেন না: জ্যোতি বসু

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৪২ |

১৯৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে
গণ-আন্দোলনের শহীদ স্মরণে কলকাতায় সুবিশাল সমাবেশে জ্যোতি বসুর প্রেরিত বার্তার পূ্র্ণ বয়ানঃ


কমরেড সভাপতি
উপস্থিত বন্ধুগণ, মা ও বোনেরা,

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বামফ্রন্টের ডাকে এবছর ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পালন করা হচ্ছে। আজ সেই উপলক্ষে কলকাতার রাজপথে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। সেই মহান আন্দোলনকে স্মরণ করে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আপনারা যাঁরা এই সমাবেশে এসেছেন, তাঁদের সকলকে আমি এজন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। 

প্রতি বছরই ৩১শে আগস্ট আমরা উপযুক্ত মর্যাদার সঙ্গে শহীদ দিবস পালন করি। ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমার মনে আছে, খাদ্য আন্দোলনের ২৫ বছর পালন করার সময়ও আমরা সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম‍ নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। তবে এবার আমরা ১৯৫৯ সালের ৩১শে আগস্ট যেভাবে রাস্তায় তিন লক্ষের বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিলেন, তাকে স্মরণে রেখে রাস্তাতেই লক্ষ লক্ষ মানুষের এই সমাবেশের আয়োজন করেছি। 

খাদ্য আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমি আজ আবার আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শুনেছি, শহীদ পরিবারের মানুষেরাও আজকের এই সমাবেশে এসেছেন। তাঁদেরকেও আমি অভিনন্দন জানাই।

১৯৫৯ সালের ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য অসামান্য। রাজ্যের বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তা মোড় বদলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। আমাদের কাগজ 'স্বাধীনতা' তখন লিখেছিল, 'ঐতিহাসিক গণ-জাগরণ।' কলকাতাসহ জেলায় জেলায় সংগঠিত হয়েছিল বিক্ষোভ সমাবেশ। সেই আন্দোলন দমন করতে পুলিসী অত্যাচারের চরমে উঠেছিল। 

সেদিন কলকাতা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে ভুখা মিছিলে শামিল লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রধান দাবি ছিল-'খাদ্য চাই, খাদ্য দাও—নইলে গদি ছেড়ে দাও।' কিন্তু ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে তখনকার কংগ্রেস সরকার সেই শান্তিপূর্ণ ন্যায্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর অকথ্য পুলিসী নির্যাতন চালায়। লাঠি চালিয়ে খুন করা হয় নিরস্ত্র, নিরীহ ৮০ জন মানুষকে। এটা ছিল একটা ন্যক্কারজনক গণহত্যা। শুধু ৩১শে আগস্টেই নয়, পরপর কয়েকদিন ধরে কলকাতাসহ রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই পুলিসী নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। 

আজকের প্রজন্মের পক্ষে এটা কল্পনা করাও কঠিন সেই সময় জনগণের ন্যায্য আন্দোলনের ওপর কংগ্রেসের সরকার কি নির্মম অত্যাচার নামিয়ে এনেছিল! মানুষের স্বার্থে সেইসব আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের ওপর লাঠি চলেছে, গ্যাস,গুলি চলেছে। আমরা দিনের পর দিন বিনাবিচারে জেল খেটেছি। জেলের ভেতরে গুলি চলেছে, বাইরে গুলি চলেছে। আমরা আক্রান্ত, রক্তাক্ত হয়েছি। তবু আমরা আত্মসমর্পণ করিনি, কংগ্রেসের আক্রমণের সামনে মাথা নত করিনি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সেটা দেখেছেন। 

সেই মহান খাদ্য আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি যে, কঠিন সময়ে সংগ্রামী মানুষই বামপন্থীদের ভরসা। আজও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস-মাওবাদীরা ও কোথাও বা কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে উন্নয়ন স্তব্ধ করতে চাইছে হিংসা ছড়িয়ে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ওরা আমাদের পার্টি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের নৃশংসভাবে হত্যা করছে। পার্টি অফিস ওরা আক্রমণ করছে, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। পার্টিকর্মী-দরদীদের বাড়ি লুঠ করা হচ্ছে। মানুষকে সমবেত করে এই আক্রমণের মোকাবিলা আমাদের করতে হবে। সেজন্য মানুষের কাছে আমাদের বারেবারে যেতে হবে, গরিব সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে, তাঁ দের ভালোবাসা আমাদের পেতে হবে। আমরা যেন মানুষের ওপরে বিশ্বাস না হারাই। গত নির্বাচনে অনেক মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছেন। তাঁদেরকে আবার আমাদের দিকে টেনে আনতে হবে। শুধু তাঁদেরকেই নয়, আরো নতুন নতুন মানুষকেও টেনে আনতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের যে ভুল আছে তাও আমাদের শুধরে নিতে হবে। আমার বিশ্বাস আছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কখনই কোনও সুবিধাবাদী জোট বা নীতি-নৈতিকতাহীন দলকে মেনে নেবেন না। এরাজ্যের মানুষের চেতনা আছে, তাঁরা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করেছেন কে শত্রু, কে মিত্র। নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজনীতির কাছে তাঁরা কখনই মাথা নত করবেন না।

যত বাধাই আসুক দে‍‌শের শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে বামপন্থীরা কাজ করে যাবে। সাম্রাজ্যবাদের কাছে কেন্দ্রের সরকারের আত্মসমর্পণ আমরা কখনই মেনে নেবো না। কেন্দ্রের নীতিতে নিত্যনতুন আক্রমণ নেমে আসছে গরিব মানুষের উপর। কৃষকরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশে খাদ্যসঙ্কটও বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বাড়ছে, মজুতদারি, কালোবাজারি বাড়ছে। সি পি আই (এম) ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলছে। গরিব মানুষকে ভাগ করার অপকৌশল আমরা মানবো না। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার ও বামপন্থীদের উপর আক্রমণের সঙ্গে চলছে ব্যাপক কুৎসা অভিযান। এভাবেই গরিব মানুষ শ্রমজীবী মানুষের অগ্রগতি ওরা ঠেকিয়ে রাখতে চায়। 

http://www.somewhereinblog.net/blog/ajoydasgupta/29008718

৩১শে আগস্টের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাই আমাদের শপথ নিতে হবে। আমরা শপথ নেবো, মাথা তুলে দাঁড়ানোর শপথ। নৈরাজ্য এবং হিংসা ঠেকানোর শপথ। 


৩১শেআগস্ট,২০০৯ 

 

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৫০ | বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...


বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড

সরকার-আয়োজিত নৈরাজ্যের দৃষ্টান্ত

মশিউল আলম | তারিখ: ২২-১২-২০১২


আক্রমণের শিকার বিশ্বজিত্ দাস

আক্রমণের শিকার বিশ্বজিত্ দাস

তরুণ বিশ্বজিৎ দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে এ মাসের ৯ তারিখে। তারপর দুই সপ্তাহ হতে চলল, সংবাদমাধ্যমে সমবেদনা ও ধিক্কার প্রকাশ অব্যাহত আছে। সংবাদপত্রে কেউ কেউ এ ঘটনায় পুরো মানবজাতির পরাজয় লক্ষ করে হতাশা, গ্লানি ও নিজের প্রতি ধিক্কার প্রকাশ করেছেন। হত্যাকারী তরুণদের মানসিক প্রবণতা নিয়ে নিজের প্রশ্ন ও ভাবনার কথাও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। বিশ্বজিতের হত্যাদৃশ্য এত বিভীষিকাপূর্ণ যে আসলেই তা মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে সব শুভবোধকে অসার করে দিয়ে গভীর নৈরাশ্য জাগায়।
আবার এ-ও সত্য, বিশ্বজিৎ দাসকে ভুলে যেতে আমাদের বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। সামনে রাজনীতির ময়দানে আরও অনেক কিছু ঘটবে, সহিংসতা ঘটবে আত্মঘাতী রাজনীতির অপরিহার্য অনুষঙ্গের মতো। আর, প্রায়-প্রাত্যহিক সহিংসতার মধ্যে হঠাৎ একদিন ঘটে যাবে স্তম্ভিত করে দেওয়ার মতো ব্যতিক্রমী কোনো নৃশংস ঘটনা। তখন আবারও একই রকম আহাজারিতে কেঁপে উঠবে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস। সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় বয়ে যাবে আবেগের প্লাবন। মানুষের হাতে সৃষ্ট ট্র্যাজিক ঘটনাকে নিয়তি-নির্ধারিত অমোঘ দুঃখ হিসেবে গ্রহণ করে আমরা কিছু সময় বিলাপ করব, তারপর ভুলে গিয়ে সংসারকর্মে আবার মগ্ন হব, যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকটি ট্র্যাজেডি না আসে।
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে আমরা নাড়া খেয়েছি, কারণ হত্যার দৃশ্যটি নৃশংস ও বিভীষিকাময়। আমাদের চোখে পড়েছে তাঁকে হত্যা করার দৃশ্যটি, তাঁর মৃত্যু নয়। সংবাদপত্রে প্রকাশিত স্থিরচিত্রে ও টেলিভিশনের পর্দায় প্রচারিত চলমান দৃশ্যে আমরা বিশ্বজিতের ওপর আক্রমণকারী তরুণদের যে তৎপরতা দেখেছি, তা যেন একটি হরর চলচ্চিত্রের দৃশ্য। এটাই আমাদের এত আহাজারির মূল কারণ: কী পাশবিক! কী নৃশংস!
কিন্তু বিশ্বজিতের হত্যাকাণ্ড এক বিশুদ্ধ ফৌজদারি অপরাধ, যে ধরনের অপরাধ দমনের কথা বলে হরতাল-অবরোধ এমনকি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও সরকার বিরোধী দলগুলোকে বাধা দেয়, দমন-পীড়ন চালায়, আটক-গ্রেপ্তারও করে। বিরোধী দল যেকোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ আরও জোর গলায় ঘোষণা করে: 'জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।' এই 'জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত' করতেই বিরোধীদলীয় কর্মী-সমর্থকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। জনগণের জানমালের কথা বলেই হরতাল-অবরোধের সময় বিরোধী দলের শত শত নেতা-কর্মীকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়। অতি উৎসাহে নাকি কোনো অনৈতিক মতলবে পুলিশ অনেক সাধারণ মানুষকেও আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশি কারবারের শব্দভান্ডারে 'গ্রেপ্তারবাণিজ্য' শব্দবন্ধটি যুক্ত হওয়ার সুযোগ ঘটেছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের সরকারি তৎপরতার সুযোগেই। 
৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধের সময় রাজধানী ঢাকায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে মোতায়েন করেছিল। কিন্তু তাঁরা বিশ্বজিৎ দাসের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি—বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এটিই গোড়ার কথা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই ব্যর্থতায় সরকারের মুশকিল হলো অন্য রকমের। অবরোধ কর্মসূচি বিরোধী দলের, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিপন্ন করবে তারাই, তাদের দমন করতেই ঢাকা শহরকে বানানো হয়েছে পুলিশ-র্যা বের শহর। কিন্তু বিশ্বজিতের প্রাণ গেল যাদের হাতে, তারা বিরোধী দলের কেউ নয়। তাহলে তারা কারা? হত্যাকাণ্ডের খবরের সঙ্গেই সংবাদমাধ্যম সেটা জানিয়ে দিয়েছে: তারা সরকারপন্থী ছাত্রলীগের কর্মী। সরকারের মন্ত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, হত্যাকারী ওই তরুণেরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। সরকারের ভাব এমন, বিশ্বজিৎকে সরকারপন্থী কেউ হত্যা করেনি—জনগণকে এটা বিশ্বাস করানো গেলেই যেন সরকারের দায়দায়িত্ব মিটে যায়। কিন্তু জনগণ সরকারের কথা বিশ্বাস করেনি।
বিশ্বাস না করার একটা কারণ, সরকারমাত্রই প্রকাশ্যে মিথ্যা কথা বলে। অন্য কারণগুলো হলো এই: প্রথমত, ওই তরুণেরা যদি ছাত্রলীগের কেউ না হতো, তাহলে তারা সম্ভবত বিশ্বজিতের ওপর এমনভাবে অত দীর্ঘ সময় ধরে আক্রমণ চালাতে সক্ষম হতো না। সেদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আচরণ ছিল অত্যন্ত কঠোর, ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরে তাঁরা ছিলেন। তাঁরা আক্রমণকারী তরুণদের দিকে অগ্রসর হননি, কারণ ওই তরুণেরা মাঠে নেমেছিল তাঁদেরই সহযোগী হিসেবে। বিরোধী দলের অবরোধকারীদের দমন করতে পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের বাহিনীকেও মাঠে নামানো হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা যদি ছাত্রলীগের কর্মী না হতো, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করতে সরকার গড়িমসি করত না; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করতে হতো না। ৯ ডিসেম্বর অবরোধের দিন সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৪৭ ব্যক্তিকে, তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ছিল না। কিন্তু বিশ্বজিৎকে যারা প্রকাশ্যে খুন করেছে, যাদের ছবি দেশের সব প্রধান সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বারবার প্রচারিত হয়েছে, যাদের চেহারা জনগণের মুখস্থ হয়ে গেছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে সরকার যারপরনাই টালবাহানা করে চলেছিল। সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে নাছোড়বান্দার মতো লেগে না থাকলে সম্ভবত তাদের গ্রেপ্তার করা হতো না। তারা ছাত্রলীগের কর্মী না হলে তাদের প্রতি সরকারের এত দরদ দেখানোর কিছু ছিল না।
হত্যাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী বটে এবং সরকার ভেবে থাকতে পারে, তারা বিশ্বজিৎকে খুন করেছে ভুলবশত। তারা ভেবেছিল বিশ্বজিৎ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী, সেদিন অবরোধের পক্ষে মাঠে নেমেছিল। তা যদি হয়, তাহলে সরকারের বিচারে ওই তরুণদের লক্ষ্য ছিল যথার্থই রাজনৈতিক। তারা তো দলের পক্ষেই মাঠে নেমেছিল। মন্ত্রীদের কেউ কেউ বিরোধী দলকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে যেমনটি বলে থাকেন যে ছাত্রলীগ-যুবলীগই বিরোধী দলকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট, ওই তরুণেরা তো সে রকম মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই চড়াও হয়েছিল বিশ্বজিতের ওপর। তাঁকে হত্যা করে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিল সরকারি দলের কত শক্তি! কিন্তু ভুল হয়ে গেছে, বিশ্বজিৎ শিবির কর্মী ছিলেন না; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁকে বিএনপির কর্মী বলে দাবি করলেও আসলে তিনি তা ছিলেন না। তিনি ছিলেন রাজনীতির সঙ্গে সংস্রবহীন নিরীহ এক দরজি। সরকার কি চেয়েছিল তাদের এই 'ভুল' ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে?
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভীষণ ভয়ংকর এক প্রবণতা আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। শক্তি প্রদর্শন ও শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন নয়। বরং সব রাজনৈতিক কর্মসূচির পেছনেই থাকে দৈহিক শক্তি প্রদর্শন বা ফিজিক্যাল শোডাউনের ঝোঁক। এটাকেই মনে করা হয় দলের শক্তি-সামর্থ্যের প্রমাণ; এজেন্ডা বা আদর্শের শক্তিকে গৌণ বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংস লোকজনের কদরের কারণ এটাই। এর চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীন হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের এই নেতা-কর্মীদের সহিংস আচরণ ও অপরাধবৃত্তি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগব্যবস্থাকে নিষ্ক্রিয়, অকার্যকর করে ফেলছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিতে ক্ষমতাসীন দলের সহিংস নেতা-কর্মীদের সহিংসতা চালানোর উন্মুক্ত ছাড়পত্র দিয়ে মাঠে নামানো, তাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা, অথবা তারা প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হলে তাদের সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা—এ রকম চর্চা গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনভিত্তিক রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলেই আঘাত করে।
সেদিন ছাত্রলীগের তরুণেরা যখন ধারালো চাপাতি ও লাঠির আঘাতে বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করছিল, তখন পুরান ঢাকার ওই অঞ্চলে কোনো রাষ্ট্র ছিল না, সরকার ছিল না, পুলিশ, আইন-আদালত, বিচার ইত্যাদি কিছুই ছিল না। ওইখানে তখন চলছিল পরিপূর্ণ নৈরাজ্য। এ রকম নৈরাজ্যকে বলতে হয় সরকার আয়োজিত পরিপূর্ণ নৈরাজ্য। এ রকম নৈরাজ্যে প্রাণ হারাতে পারে যেকোনো মানুষ। বিশ্বজিৎ দাস তেমনই হতভাগ্য এক তরুণ, যিনি 'ভুল সময়ে ভুল জায়গায়' দাঁড়িয়েছিলেন বলে প্রাণ হারিয়েছেন—এমন মন্তব্য করেছেন এক রিপোর্টার সহকর্মী। বিশ্বজিৎকে কোপানো হচ্ছে, লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে, লাথি, ঘুষি মারা হচ্ছে—এমন ছবি তুলেছেন যেসব ফটোসাংবাদিক, তাঁরা কেন বিশ্বজিৎকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে শুধু ছবি তুলেই দায়িত্ব শেষ করেছেন—সংবাদমাধ্যমে এমন প্রশ্ন উঠেছে। মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া যাদের পেশাগত দায়িত্ব, সেই সশস্ত্র পুলিশ-র্যা ব বাহিনীই যেখানে অনুপস্থিত, আর আক্রমণকারীদের হাতে যখন চাপাতির মতো ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, পিস্তলও সঙ্গে আছে কি না কে জানে, সেখানে নিরস্ত্র ফটোসাংবাদিক ওই হিংস্র আক্রমণকারীদের নিরস্ত করতে যাবেন কী করে? তবু একজন সহকর্মী এগিয়ে গিয়েছিল, তখন একজন আক্রমণকারী তাঁর গলায় চাপাতি ধরে বলেছিল, 'ওইদিকে যাইয়েন না, ভাইয়া!'
আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষার প্রধান ব্যবস্থা যখন ভেঙে পড়ে বা অকার্যকর হয়ে যায়, তখন এই ধরনের আক্ষেপ করা নিষ্ফল: বিশ্বজিৎকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে গেল না! বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন তোলা উচিত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন বিশ্বজিতের প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি? অবরোধের দিন পুরান ঢাকার ওই এলাকার জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছিল, তারা কী দায়িত্ব পালন করেছেন, সেই জবাবদিহি চাওয়া কি হয়েছে?
বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দিতে সরকারি দলের কর্মীদের মাঠে নামানোর এই চর্চা বন্ধ করা জরুরি। কারণ, বিরোধী দলগুলোর জ্বালাও-পোড়াও সামলাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো হিমশিম খেয়ে যায়, তার ওপর সরকারপন্থী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা মাঠে নামলে নৈরাজ্যের আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার চেয়ে বড় কোনো রাজনৈতিক লাভ সরকারের নেই। এ জন্য বিরোধী দলের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের রাস্তায় নামা নিষিদ্ধ করা উচিত। তাহলে অন্তত বিশ্বজিৎ হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা ঘটার সুযোগ থাকবে না।
 মশিউল আলম: সাংবাদিক
mashiul.alam@gmail.com

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-22/news/315057



No comments:

Post a Comment