Sunday, January 6, 2013

পশ্চিমবঙ্গ উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পশ্চিমবঙ্গ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পশ্চিমবঙ্গ ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য। এই রাজ্য দেশের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য।[১] পশ্চিমবঙ্গ ভারতের মোট আভ্যন্তরিন উৎপাদনেতৃতীয় বৃহত্তম অবদানকারী।[২] এই রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে বাংলাদেশ; উত্তরপূর্বে অসম; উত্তরে ভুটান ও সিক্কিম; উত্তরপশ্চিমে নেপাল; পশ্চিমে বিহার ওঝাড়খণ্ড; এবং দক্ষিণপশ্চিমে ওড়িশা অবস্থিত।

অধুনা "পশ্চিমবঙ্গ" নামে পরিচিত ভূখণ্ডটি বিগত দুই হাজার বছর ধরে একাধিক রাজ্য ও সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলে নিজ আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এরপর সুদীর্ঘকাল কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানীর মর্যাদা ভোগ করে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যুক্ত বাংলা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক পীঠস্থানে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলে হিন্দুপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অধিভুক্ত হয়। এরপর কয়েক দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের আর্থ-রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে মার্ক্সবাদ ও ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের মতো বামপন্থী কার্যকলাপ।[৩][৪][৫][৬][৭]

বিগত কয়েক দশকে পশ্চিমবঙ্গ তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এর প্রধান কারণ এই রাজ্যের বিগত বামফ্রন্ট সরকারের রাজনৈতিক স্থিরতা, প্রশাসনিক সফলতা ও সরকারি নীতি।[৮][৯][১০][১১] হরতাল ও ধর্মঘট,[১২][১৩] মানব উন্নয়ন সূচকেরনিম্নহার,[১৪][১৫] স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসা পরিষেবার সুন্দর অবস্থা,[১৬][১৭] ব্যাপক সামাজিক উন্নয়ন,[১৮] সুন্দর পরিকাঠামো ব্যবস্থা,[১৯][২০]রাজনৈতিক সহাবস্থান[২১][২২] তবে কিছু অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের অন্যান্য শিল্পোন্নত রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ পশ্চাদপদ এবং এখনও একটি উন্নয়নশীল রাজ্যই রয়ে গেছে।[২৩][২৪][২৫]

পশ্চিমবঙ্গ একটি কৃষিনির্ভর রাজ্য। এই রাজ্য ভারতের মোট আয়তনের মাত্র ২.৭ শতাংশ হলেও, এর জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭.৮ শতাংশ। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্ববিশিষ্ট রাজ্য।[২৬] ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত। এই সরকার ছিল বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম মেয়াদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।[২৭][২৮][২৯] বর্তমানে তীব্র সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে বামফ্রন্টকে পরাজিত করে তীব্র দক্ষিণপন্থী আঞ্চলিক দল তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গে দু'টি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। যথা: দার্জিলিং হিমালয়ান রেল (ভারতীয় পার্বত্য রেলপথের অংশ হিসেবে) ও সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]ইতিহাস

চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত শুঙ্গ মূর্তিকলার নিদর্শন; খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয়-প্রথম শতাব্দী
মূল নিবন্ধ: বাংলার ইতিহাস এবং পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস

[সম্পাদনা]প্রাচীন যুগ

বৃহত্তর বঙ্গদেশে সভ্যতার সূচনা ঘটে আজ থেকে ৪,০০০ বছর আগে।[৩০][৩১] এই সময় দ্রাবিড়, তিব্বতি-বর্মি ও অস্ত্রো-এশীয় জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। বঙ্গ বা বাংলা শব্দের প্রকৃত উৎস অজ্ঞাত। তবে মনে করা হয়, ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ যে দ্রাবিড়-ভাষী বং জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল, তারই নামানুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ হয় বঙ্গ[৩২] খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে বাংলা ও বিহার অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে মগধ রাজ্য। একাধিক মহাজনপদের সমষ্টি এই মগধ রাজ্য ছিল মহাবীর ও গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের অন্যতম।[৩৩] মৌর্য রাজবংশের রাজত্বকালে প্রায় সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া মগধ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এই সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি মহামতি অশোকের রাজত্বকালে আফগানিস্তান ও পারস্যেরকিছু অংশও এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

গ্রিক সূত্র থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দ নাগাদ গঙ্গারিডাই নামক একটি অঞ্চলের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সম্ভবত এটি বৈদেশিক সাহিত্যে বাংলার প্রাচীনতম উল্লেখগুলির অন্যতম। মনে করা হয়, এই গঙ্গারিডাই শব্দটি গঙ্গাহৃদ (অর্থাৎ, গঙ্গা যে অঞ্চলের হৃদয়ে প্রবাহিত) শব্দের অপভ্রংশ।[৩৪] প্রাচীনকালে জাভা,সুমাত্রা ও শ্যামদেশের (অধুনা থাইল্যান্ড) সঙ্গে বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাবংশ অনুসারে, বিজয় সিংহ নামে বঙ্গ রাজ্যের এক রাজপুত্র লঙ্কা (অধুনা শ্রীলঙ্কা) জয় করেন এবং সেই দেশের নতুন নাম রাখেন সিংহল। প্রাচীন বাংলার অধিবাসীরা মালয় দ্বীপপুঞ্জ ও শ্যামদেশে গিয়ে সেখানে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন।

[সম্পাদনা]আদিমধ্য ও মধ্যযুগ

খ্রিষ্টীয় তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মগধ রাজ্য ছিল গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। বঙ্গের প্রথম সার্বভৌম রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর প্রথম ভাগে তিনি একাধিক ছোটো ছোটো রাজ্যে বিভক্ত সমগ্র বঙ্গ অঞ্চলটিকে একত্রিত করে একটি সুসংহত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।[৩৫] শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ (অধুনা মুর্শিদাবাদ জেলার রাঙামাটি অঞ্চল)। তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরে বঙ্গের ইতিহাসে এক নৈরাজ্যের অবস্থা সৃষ্টি। ইতিহাসে এই সময়টি "মাৎস্যন্যায়" নামে পরিচিত। এরপর চারশো বছর বৌদ্ধ পাল রাজবংশ এবং তারপর কিছুকাল হিন্দু সেন রাজবংশএই অঞ্চল শাসন করেন। এরপর ভারতে ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে বঙ্গ অঞ্চলেও ইসলাম ধর্মে প্রসার ঘটে।[৩৬] বকতিয়ার খলজি নামে দিল্লি সুলতানির দাস রাজবংশের এক তুর্কি সেনানায়ক সর্বশেষ সেন রাজা লক্ষ্মণসেনকে পরাস্ত করে বঙ্গের একটি বিরাট অঞ্চল অধিকার করে নেন। এরপর কয়েক শতাব্দী এই অঞ্চল দিল্লি সুলতানির অধীনস্থ সুলতান রাজবংশ অথবা সামন্ত প্রভুদের দ্বারা শাসিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সেনানায়কইসলাম খাঁ বঙ্গ অধিকার করেন। যদিও মুঘল সাম্রাজ্যের রাজদরবার সুবা বাংলার শাসকদের শাসনকার্যের ব্যাপারে আধা-স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন। এই অঞ্চলের শাসনভার ন্যস্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের হাতে। নবাবেরাও দিল্লির মুঘল সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ বিজয়ের পর

[সম্পাদনা]ব্রিটিশ শাসন

পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে বঙ্গ অঞ্চলে ইউরোপীয় বণিকদের আগমন ঘটে। এই সব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিজ নিজ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। অবশেষে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরাজিত করেন। এর পর সুবা বাংলার রাজস্ব আদায়ের অধিকার কোম্পানির হস্তগত হয়।[৩৭] ১৭৬৫ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি স্থাপিত হয়। ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল প্রভিন্সের (অধুনা মধ্যপ্রদেশ) উত্তরে অবস্থিতগঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের মোহনা থেকে হিমালয় ও পাঞ্জাব পর্যন্ত সকল ব্রিটিশ-অধিকৃত অঞ্চল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে লক্ষাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে।[৩৮] ১৭৭২ সালে কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ঘোষিত হয়।

বাংলার নবজাগরণ ও ব্রাহ্মসমাজ-কেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্কার আন্দোলন বাংলার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহেরসূচনা কলকাতার অদূরেই হয়েছিল। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তি স্বহস্তে গ্রহণ করে। ভারত শাসনের জন্য একটি ভাইসরয়ের পদ সৃষ্টি করা হয়।[৩৯] ১৯০৫ সালে ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে প্রথম পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) অঞ্চলটিকে পূর্ববঙ্গ থেকে পৃথক করা হয়। কিন্তু বঙ্গবিভাগের এই প্রয়াস শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং ১৯১১ সালে বঙ্গপ্রদেশকে পুনরায় একত্রিত করা হয়।[৪০] ১৯৪৩ সালে পঞ্চাশের মন্বন্তরে বাংলায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।[৪১]

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের মতো বিপ্লবী দলগুলি এখানে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলায় ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় যখন সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ১৯২০ সাল থেকে এই রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলন তীব্র আকার ধারন করে। সেই ধারা আজও অব্যাহত আছে। ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের চক্রান্তে ভারত স্বাধীনতা অর্জনধর্মের ভিত্তিতে বাংলা দ্বিধাবিভক্ত হয়। হিন্দুপ্রধান পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গ নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যোগ দেয় (এই অঞ্চলটি পরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয় এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে)।[৪২]

[সম্পাদনা]স্বাধীনোত্তর যুগ

দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ থেকে লক্ষ লক্ষ হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। এই ব্যাপক অভিবাসনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থানের সমস্যা দেখা দেয়। ১৯৫০ সালে দেশীয় রাজ্য কোচবিহারের রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভারত সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত হয়। ১৯৫৫ সালে ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিহারের কিছু বাংলা-ভাষী অঞ্চলও এই সময় পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়, ধর্মঘট ও সহিংস মার্ক্সবাদী-নকশালবাদী আন্দোলনের ফলে রাজ্যের শিল্প পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে। এর ফলে এক অর্থনৈতিক স্থবিরতার যুগের সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষাধিক শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়। সেই সময় নকশালবাদের সাথে কংগ্রেসের চক্রান্তের ফলে রাজ্যের পরিকাঠামোয় গভীর চাপ সৃষ্টি হয়।[৪৩] ১৯৭৪ সালের বসন্ত মহামারীতে রাজ্যে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে পরাজিত করে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এরপর তিন দশকেরও বেশি সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে শাসনভার পরিচালনা করে।[৪৪]

১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে ভারত সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং ২০০০ সালে সংস্কারপন্থী নতুন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্বাচনের পর রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছোটোবড়ো বেশ কয়েকটি সশস্ত্র জঙ্গিহানার ঘটনা ঘটেছে।[৪৫][৪৬] আবার শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।[৪৭][৪৮]

কিন্তু শিল্পবিরোধী তৃনমুল দল, মাওবাদী দলের চক্রান্তে ২০০৬ সালে হুগলির সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তীব্র গণ-অসন্তোষ দেখা যায়। জমি অধিগ্রহণ বিতর্কের প্রেক্ষিতে সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী কারখানা প্রত্যাহার করে নিলে, তা রাজ্য রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।[৪৯] ২০০৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে অশান্তির জেরে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন মারা গেলে রাজ্য রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১০ সালের পৌরনির্বাচনে শাসক বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। অবশেষে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে রাজ্যের ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের অবসান হয়।

[সম্পাদনা]ভূগোল ও জলবায়ু

মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল
বর্ষাকালে রাজ্যের বহু অংশই বন্যার কবলে পড়ে।

পূর্ব ভারতে হিমালয়ের দক্ষিণে ও বঙ্গোপসাগরের উত্তরে এক সংকীর্ণ অংশে পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। রাজ্যের মোট আয়তন ৮৮,৭৫২ বর্গকিলোমিটার (৩৪,২৬৭ বর্গমাইল)।[৫০] রাজ্যের সর্বোত্তরে অবস্থিত দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল পূর্ব হিমালয়ের একটি অংশ। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু(৩,৬৩৬ মিটার বা ১১,৯২৯ ফুট) এই অঞ্চলে অবস্থিত।[৫১] এই পার্বত্য অঞ্চলকে দক্ষিণে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সংকীর্ণ তরাই অঞ্চল। অন্যদিকে রাঢ় অঞ্চল গাঙ্গেয় বদ্বীপকে বিচ্ছিন্ন করেছে পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চলের থেকে। রাজ্যের সর্বদক্ষিণে একটি নাতিদীর্ঘ উপকূলীয় সমভূমিও বিদ্যমান। অন্যদিকে সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য গাঙ্গেয় বদ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য।

পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নদী গঙ্গা রাজ্যকে দ্বিধাবিভক্ত করেছে। এই নদীর একটি শাখা পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে; অপর শাখাটি ভাগীরথী ওহুগলি নামে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।তিস্তাতোর্ষাজলঢাকা ও মহানন্দা উত্তরবঙ্গের প্রধান নদনদী। পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন নদনদীগুলির মধ্যে প্রধান হল দামোদরঅজয় ও কংসাবতী। গাঙ্গেয় বদ্বীপ ও সুন্দরবন অঞ্চলে অজস্র নদনদী ও খাঁড়ি দেখা যায়। নদীতে বেপরোয়া বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে গঙ্গার দূষণ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান সমস্যা।[৫২] রাজ্যের অন্তত নয়টি জেলায় আর্সেনিক দূষিত ভৌমজলের সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত ১০ µg/লিটারের অধিক মাত্রার আর্সেনিক দূষিত জল পান করে ৮৭ লক্ষ মানুষ।[৫৩]

পশ্চিমবঙ্গ গ্রীষ্মপ্রধান উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত। রাজ্যের প্রধান ঋতু চারটি, যেমন: শুষ্ক গ্রীষ্মকাল, আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকাল, শরৎকাল ও শীতকাল। বদ্বীপ অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল আর্দ্র হলেও, পশ্চিমের উচ্চভূমি অঞ্চলে উত্তর ভারতের মতো শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাজ্যে গ্রীষ্মকালের গড় তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস (১০০° ফারেনহাইট) থেকে ৪৫° সেলসিয়াস (১১৩° ফারেনহাইট)।[৫৪] রাত্রিকালে বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল আর্দ্র দক্ষিণা বায়ু বয়। গ্রীষ্মের শুরুতে স্বল্পস্থায়ী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে যে প্রবল ঝড়, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হয় তা কালবৈশাখী নামে পরিচিত।[৫৫] বর্ষাকাল স্থায়ী হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। ভারত মহাসাগরীয় মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি উত্তরপশ্চিম অভিমুখে ধাবিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাত ঘটায়। রাজ্যে শীতকাল (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) আরামদায়ক। এই সময় রাজ্যের সমভূমি অঞ্চলের গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ১৫° সেলসিয়াস (৫৯° ফারেনহাইট)।[৫৪] শীতকালে শুষ্ক শীতল উত্তরে বাতাস বয়। এই বায়ু তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার মাত্রাও কমিয়ে দেয়। যদিও দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। এই সময়ে এই অঞ্চলের কোথাও কোথাও তুষারপাতও হয়।

[সম্পাদনা]জীবজগৎ

পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রীয় প্রতীক
পশুরয়্যাল বেঙ্গল টাইগার
পাখিশ্বেতকণ্ঠ মাছরাঙা White-throated Kingfisher (Shankar).jpg
বৃক্ষছাতিম Alstonia scholaris.jpg[৫৬]
ফুলশিউলি Flower & flower buds I IMG 2257.jpg[৫৬]
নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যানে সূর্যাস্ত

পশ্চিমবঙ্গের জৈব বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এর প্রধান কারণ হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে উপকূলীয় সমভূমি পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার তারতম্য। রাজ্যের ভৌগোলিক এলাকার মাত্র ১৪ শতাংশ বনভূমি; যা জাতীয় গড় ২৩ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই কম।[৫৭][৫৮] রাজ্যের আয়তনের ৪ শতাংশ সংরক্ষিত এলাকা[৫৯] বিশ্বের বৃহত্তমম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনের একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।[৬০]

উদ্ভিজ্জভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন: গাঙ্গেয় সমভূমি ও সুন্দরবনের লবনাক্ত ম্যানগ্রোভ অরণ্যভূমি।[৬১] গাঙ্গেয় সমভূমির পললমৃত্তিকা এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলকে বিশেষভাবে উর্বর করে তুলেছে।[৬১] রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমির উদ্ভিদপ্রকৃতির সমরূপ।[৬১] এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী বৃক্ষ হল শাল। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি উপকূলীয় ধরনের। এই অঞ্চলের প্রধান বৃক্ষ হল ঝাউ। সুন্দরবন অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান বৃক্ষ সুন্দরী গাছ। এই গাছ এই অঞ্চলের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় এবং সুন্দরবনের নামকরণও এই গাছের নামেই হয়েছে।[৬২] উত্তরবঙ্গের উদ্ভিদপ্রকৃতির প্রধান তারতম্যের কারণ এই অঞ্চলের উচ্চতা ও বৃষ্টিপাত। উদাহরণস্বরূপ, হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্স অঞ্চলে ঘন শাল ও অন্যান্য ক্রান্তীয় চিরহরিৎ বৃক্ষের বন দেখা যায়।[৬৩] আবার ১০০০ মিটার উচ্চতায় উদ্ভিদের প্রকৃতি উপক্রান্তীয়। ১,৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত দার্জিলিঙে ওককনিফাররডোডেনড্রন প্রভৃতি গাছের নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্য দেখা যায়।[৬৩]

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত। রাজ্যে মোট ছ-টি জাতীয় উদ্যান আছে[৬৪] — সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, গোরুমারা জাতীয় উদ্যান, নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান, সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। রাজ্যের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে ভারতীয় গণ্ডার, ভারতীয় হাতি, হরিণ, বাইসন, চিতাবাঘ, গৌর ও কুমির উল্লেখযোগ্য। রাজ্যের পক্ষীজগৎও বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। পরিযায়ী পাখিদের শীতকালে এ রাজ্যে আসতে দেখা যায়।[৫৯] সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের মতো উচ্চ পার্বত্য বনভূমি অঞ্চলে বার্কিং ডিয়ার, রেড পান্ডা, চিঙ্কারা, টাকিন, সেরো, প্যাঙ্গোলিন, মিনিভেট, কালিজ ফেজান্ট প্রভৃতি বন্যপ্রাণীর সন্ধান মেলে। বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলে গাঙ্গেয় ডলফিন, নদী কচ্ছপ, মিষ্টি ও লবনাক্ত জলের কুমির প্রভৃতি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির বন্যপ্রাণীও দেখা যায়।[৬৫] ম্যানগ্রোভ অরণ্য প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রের কাজও করে। এখানে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় মাছ দেখা যায়।[৬৫]

[সম্পাদনা]সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বিচারালয় কলকাতা হাইকোর্ট
মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গ সরকার

ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গওপ্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সংসদীয় পদ্ধতিতে শাসিত হয়। রাজ্যের সকল নাগরিকের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকারস্বীকৃত। পশ্চিমবঙ্গের আইনসভা বিধানসভা নামে পরিচিত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এই বিধানসভা গঠিত। বিধানসভার সদস্যরা একজন অধ্যক্ষ ও একজন উপাধ্যক্ষকে নির্বাচিত করেন। অধ্যক্ষ অথবা (অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে) উপাধ্যক্ষ বিধানসভা অধিবেশনে পৌরহিত্য করেন। কলকাতা হাইকোর্ট ও অন্যান্য নিম্ন আদালত নিয়ে রাজ্যের বিচারবিভাগ গঠিত। শাসনবিভাগের কর্তৃত্বভার ন্যস্ত রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার উপর।রাজ্যপাল রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রধান হলেও, প্রকৃত ক্ষমতা সরকারপ্রধান মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত থাকে। রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন; এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপালই অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন। মন্ত্রিসভা বিধানসভার নিকট দায়বদ্ধ থাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা এককক্ষীয়। এই সভার সদস্য সংখ্যা ২৯৫ জন; এঁদের মধ্যে ২৯৪ জন নির্বাচিত এবং একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে মনোনীত। বিধানসভার সদস্যদের বিধায়ক বলা হয়।[৬৬][৬৭] বিধানসভার স্বাভাবিক মেয়াদ পাঁচ বছর; তবে মেয়াদ শেষ হবার আগেও বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যায়। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন সংস্থাগুলি যথাক্রমে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নামে পরিচিত। এই সকল সংস্থাও নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) থেকে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ৪২ জন ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ১৬ জন সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন।[৬৮]

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ শক্তি হল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৫টি আসন দখল করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে। বিগত ৩৪ বছর এই বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছে। এই সরকার ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম মেয়াদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।[৪৪][৬৯][৭০]২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, ২২৬টি আসন দখল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস-জাতীয় কংগ্রেস জোট বামফ্রন্টকে পরাজিত করে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করছে।

[সম্পাদনা]প্রশাসনিক বিভাগ

মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গের জেলা

প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য পশ্চিমবঙ্গকে তিনটি বিভাগ ও ১৯টি জেলায় বিভক্ত করা হয়েছে।[৭১] এগুলি হল:

প্রেসিডেন্সি বিভাগ বর্ধমান বিভাগ জলপাইগুড়ি বিভাগ

01234567

01234567

পশ্চিমবঙ্গের জেলা-মানচিত্র

প্রতিটি জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসক বা জেলা কালেক্টরের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি "ভারতীয় প্রশাসনিক কৃত্যক" (আইএএস) বা "পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন কৃত্যক" (ডব্লিউবিসিএস) কর্তৃক নিযুক্ত হন।[৭২] প্রতিটি জেলা মহকুমার বিভক্ত। মহকুমার শাসনভার মহকুমা-শাসকের হাতে ন্যস্ত থাকে। মহকুমাগুলি আবার ব্লকে বিভক্ত। ব্লকগুলি গঠিত হয়েছে পঞ্চায়েত ও পুরসভা নিয়ে।[৭১]

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী তথা বৃহত্তম শহর। কলকাতা ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম মহানগর।[৭৩] আবার বৃহত্তর কলকাতা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরাঞ্চল।[৭৪] উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি রাজ্যের অপর এক অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন মহানগর। শিলিগুড়ি করিডোরে অবস্থিত এই শহর উত্তর-পূর্ব ভারতেরসঙ্গে অবশিষ্ট দেশের সংযোগ রক্ষা করছে। আসানসোল ও দুর্গাপুর রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের শিল্পতালুকে অবস্থিত অপর দুটি মহানগর।[৭৫] রাজ্যের অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাওড়ারাণীগঞ্জহলদিয়াজলপাইগুড়িখড়গপুরবর্ধমানদার্জিলিংমেদিনীপুরতমলুকইংরেজ বাজার ওকোচবিহার[৭৫]

[সম্পাদনা]অর্থনীতি

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান খাদ্য ও পণ্যফসল যথাক্রমে ধান ও পাট
মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি
মোট রাজ্য আভ্যন্তরীণ উৎপাদন, বর্তমান মূল্যে (৯৩-৯৪ ভিত্তি)[৭৬]

ভারতীয় টাকার কোটির অঙ্কে

বছর মোট রাজ্য আভ্যন্তরীণ উৎপাদন
১৯৯৯-২০০০১৩৫,১৮২
২০০০-২০০১১৪৩,৫৩২
২০০১-২০০২ ১৫৭,১৩৬
২০০২-২০০৩১৬৮,০৪৭
২০০৩-২০০৪১৮৯,০৯৯
২০০৪-২০০৫ ২০৮,৫৭৮
২০০৫-২০০৬২৩৬,০৪৪

পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। রাজ্যের প্রধান খাদ্যফসল হল ধান। অন্যান্য খাদ্যফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাল, তৈলবীজ, গমতামাকআখ ও আলু। এই অঞ্চলের প্রধান পণ্যফসল হল পাট। চাউৎপাদনও বাণিজ্যিকভাবে করা হয়ে থাকে; উত্তরবঙ্গ দার্জিলিং ও অন্যান্য উচ্চ মানের চায়ের জন্য বিখ্যাত।[৭৭] যদিও রাজ্যের মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদনে প্রধান অবদানকারী হল চাকুরিক্ষেত্র; এই ক্ষেত্র থেকে রাজ্যের মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদনের ৫১ শতাংশ আসে; অন্যদিকে কৃষিক্ষেত্র থেকে আসে ২৭ শতাংশ ও শিল্পক্ষেত্র থেকে আসে ২২ শতাংশ।[৭৮] রাজ্যের শিল্পকেন্দ্রগুলি কলকাতা ও পশ্চিমের খনিজসমৃদ্ধ উচ্চভূমি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত। দুর্গাপুর-আসানসোল কয়লাখনি অঞ্চলে রাজ্যের প্রধান প্রধান ইস্পাতকেন্দ্রগুলি অবস্থিত।[৭৭] ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্যাদি, ইলেকট্রনিকস, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কেবল, ইস্পাত, চামড়া, বস্ত্র, অলংকার, যুদ্ধজাহাজ, অটোমোবাইল, রেলওয়ে কোচ ও ওয়াগন প্রভৃতি নির্মাণশিল্প রাজ্যের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গের একটি বৃহৎ অংশ অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর। এই অংশের মধ্যে পড়ে উত্তরবঙ্গেরছয়টি জেলা (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ), পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলা (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বীরভূম) এবং সুন্দরবন অঞ্চল।[২৬] স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পরও খাদ্যের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী ছিল। ভারতের সবুজ বিপ্লব পশ্চিমবঙ্গে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় এই রাজ্যের খাদ্য উৎপাদন অপর্যাপ্তই রয়ে যায়। তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে রাজ্যে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।[২৬] ১৯৮০-৮১ সালে ভারতের সামগ্রিক শিল্প উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গের অংশ ছিল ৯.৮ শতাংশ; ১৯৯৭-৯৮ সালে এই অংশ কমে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। তবে চাকুরিক্ষেত্র জাতীয় হারের তুলনায় অধিক হারে প্রসারিত হয়েছে এই রাজ্যে।

২০০৩-২০০৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থব্যবস্থা। রাজ্যের নিট আভ্যন্তরীন উৎপাদন ২১.৫ মার্কিন ডলার[৭৮] ২০০১-২০০২ সালে রাজ্যের গড় রাজ্য আভ্যন্তরীন উৎপাদন ছিল ৭.৮ শতাংশেরও বেশি — যা জাতীয় জিডিপি বৃদ্ধির হারকেও ছাপিয়ে যায়।[৭৯] রাজ্য প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই বিনিয়োগ মূলত আসে সফটওয়্যার ও ইলেকট্রনিকস ক্ষেত্রে।[৭৮] কলকাতা বর্তমানেতথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের একটি অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। কলকাতা তথা রাজ্যের সামগ্রিক আর্থিক উন্নতির দৌলতে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) দেশের তৃতীয় দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থব্যবস্থা।[৮০] যদিও, এই কৃষিভিত্তিক রাজ্যে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে নানারকম বিতর্ক দানা বেঁধেছে।[৮১] ন্যাসকম-গার্টনার পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোকে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আখ্যা দিয়েছে।[৮২] পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য আভ্যন্তরিন উৎপাদন বেড়ে ২০০৪ সালে ১২.৭ শতাংশ এবং ২০০৫ সালে ১১.০ শতাংশ হয়।[৮৩] চীনের দৃষ্টান্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকমিউনিস্ট পদ্ধতির পরিবর্তে ধনতান্ত্রিক পন্থায় রাজ্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ গ্রহণ করেছিলেন।[৮৪]

[সম্পাদনা]পরিবহন ব্যবস্থা

মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গের বিমানবন্দরগুলির তালিকা

পশ্চিমবঙ্গে ভূতল সড়কপথের মোট দৈর্ঘ্য ৯২,০২৩ কিলোমিটার (৫৭,১৮০ মাইল)।[৮৫] এর মধ্যেজাতীয় সড়ক ২,৩৭৭ কিলোমিটার (১,৪৭৭ মাইল), [৮৬] এবং রাজ্য সড়ক ২,৩৯৩ কিলোমিটার (১,৪৮৭ মাইল)। রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ১০৩.৬৯ কিলোমিটার (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১৬৬.৯২ মাইল); যা জাতীয় ঘনত্ব প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে ৭৪.৭ কিলোমিটারের (প্রতি ১০০ বর্গমাইলে ১২০ মাইল) থেকে বেশি।[৮৭] রাজ্যের সড়কপথে যানবাহনের গড় গতিবেগ ৪০-৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টার (২৫-৩১ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে গতিবেগ ২০-২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টার (১২-১৬ মাইল/ঘণ্টা) মধ্যে থাকে। এই মূল কারণ রাস্তার নিম্নমান ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। রাজ্যে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৩,৮২৫ কিলোমিটার (২,৩৭৭ মাইল)।[৮৮]ভারতীয় রেলের পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল ক্ষেত্রদুটির সদর কলকাতায় অবস্থিত।[৮৯] রাজ্যের উত্তরভাগের রেলপথ উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অন্তর্গত। কলকাতা মেট্রো ভারতের প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল পরিষেবা।[৯০] উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের অংশ দার্জিলিং হিমালয়ান রেল একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।[৯১]

পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কলকাতার নিকটেই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলারদমদমে অবস্থিত। শিলিগুড়ির নিকটবর্তী বাগডোগরা বিমানবন্দর রাজ্যের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর; সাম্প্রতিককালে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্তরে উন্নীত করা হয়েছে। কলকাতা বন্দর পূর্ব ভারতের একটি প্রধান নদীবন্দর। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট কলকাতা ও হলদিয়া ডকের দায়িত্বপ্রাপ্ত।[৯২] কলকাতা বন্দর থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন পরিষেবা ও ভারত ও বহির্ভারতের বন্দরগুলিতে শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন পরিষেবা চালু আছে। রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চলে, নৌকাপরিবহনের প্রধান মাধ্যম। কলকাতা ভারতের একমাত্র শহর যেখানে আজও ট্রাম গণপরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। এই পরিষেবার দায়িত্বে রয়েছেক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি[৯৩]

পশ্চিমবঙ্গের বাস পরিষেবা অপর্যাপ্ত। কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাউত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থাদক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাপশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহন নিগম ও ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি এই পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়া বেসরকারি কোম্পানিগুলিও বাস চালিয়ে থাকে। শহরের বিশেষ বিশেষ রুটে মিটার ট্যাক্সি ও অটোরিকশা চলে। কম দুরত্বের যাত্রার জন্য রাজ্যের সর্বত্র সাইকেল রিকশা ও কলকাতাতে সাইকেল রিকশা ও হাতে-টানা রিকশা ব্যবহার করা হয়।

[সম্পাদনা]জনপরিসংখ্যান

মূল নিবন্ধ: বাঙালি জাতি
পশ্চিমবঙ্গের ধর্মবিশ্বাস[৯৫]
ধর্মশতকরা হার
হিন্দুধর্ম
  
72.5%
ইসলাম
  
25.2%
অন্যান্য
  
2.3%

পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৮০,২১২,১৭১।[৯৬] এই জনসংখ্যার সিংহভাগই বাঙালি[৯৭] সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীগুলির মধ্যেবিহারীদের রাজ্যের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। উত্তরে সিক্কিমের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শেরপাও তিব্বতিদের দেখা মেলে। দার্জিলিং জেলায় নেপালি গোর্খাদের একটি বড় অংশ বসবাস করে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে বাস করে সাঁওতালকোলকোচ-রাজবংশী, ও টোটো প্রভৃতি আদিবাসীরা

রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ইংরেজি[৯৮][৯৯] হিন্দি ভাষার ব্যবহারও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। দার্জিলিং জেলার একাংশের ভাষা হল নেপালি। রাজ্যের কোনো কোনো অংশে সাঁওতালি,রাজবংশী ও হো ভাষাও প্রচলিত। উর্দু ভাষা প্রধানত মধ্য কলকাতায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, হিন্দুধর্ম পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ধর্মবিশ্বাস। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ৭২.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাস এবং বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্ম। মুসলমানরা রাজ্যের জনসংখ্যার মোট ২৫.২ শতাংশ। শিখখ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা জনসংখ্যার অবশিষ্ট অংশ।[৯৫] পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৯০৪ জন। এই রাজ্য জনঘনত্বের বিচারে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী।[১০০] ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭.৮১ শতাংশ বাস করে পশ্চিমবঙ্গে।[১০১] ১৯৯১-২০০১ সময়কালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৭.৮৪ শতাংশ; যা জাতীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২১.৩৪ শতাংশের থেকে কম।[৯৬] রাজ্যে লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৩৪ জন মহিলা।[৯৬]

পশ্চিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার ৬৯.২২ শতাংশ।[৯৬] ১৯৯১-১৯৯৫ সালের তথ্য থেকে জানা যায়, এই রাজ্যের মানুষের গড় আয়ু ৬৩.৪ বছর, যা জাতীয় স্তরে গড় আয়ু ৬১.৭ বছরের থেকে কিছু বেশি।[১০২] রাজ্যের ৭২ শতাংশ মানুষ বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। ১৯৯৯-২০০০ সালের হিসেব অনুযায়ী, রাজ্যের ৩১.৮৫ শতাংশ মানুষ বাস করেন দারিদ্র্যসীমার নিচে।[২৬] তফসিলি জাতি ও উপজাতিগুলি গ্রামীণ জনসংখ্যার যথাক্রমে ২৮.৬ শতাংশ ও ৫.৮ শতাংশ এবং নগরাঞ্চলীয় জনসংখ্যার ১৯.৯ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ।[২৬]

রাজ্যে অপরাধের হার প্রতি এক লক্ষে ৮২.৬; যা জাতীয় হারের অর্ধেক।[১০৩] ভারতের ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এই হার চতুর্থ নিম্নতম।[১০৪] যদিও রাজ্যের বিশেষ ও স্থানীয় আইন সংক্রান্ত অপরাধের হার সর্বোচ্চ বলেই জানা যায়।[১০৫] রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের হার ৭.১; উল্লেখ্য এই ক্ষেত্রে জাতীয় হার ১৪.১।[১০৪] পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) ভারতের প্রথম রাজ্য যেটি নিজস্ব মানবাধিকার কমিশন গঠন করেছিল।[১০৪]

[সম্পাদনা]সংস্কৃতি

মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি এবং দার্জিলিঙের সংস্কৃতি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরএশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী এবং ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা।

বাংলা ভাষা এক সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্যের বাহক। এই ঐতিহ্য প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের লোকসাহিত্যের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। এই সাহিত্যের নিদর্শন চর্যাপদ,মঙ্গলকাব্যশ্রীকৃষ্ণকীর্তনঠাকুরমার ঝুলি, ও গোপাল ভাঁড়ের গল্পগুলি। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতেবাংলা সাহিত্যের আধুনিকীকরণ সম্পন্ন হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়মাইকেল মধুসূদন দত্তরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকাজী নজরুল ইসলামশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়জীবনানন্দ দাশমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়মহাশ্বেতা দেবীআশাপূর্ণা দেবী প্রমুখ সাহিত্যিকের হাত ধরে।

বাংলা সংগীতের এক স্বতন্ত্র ঐতিহ্যবাহী ধারা হল বাউল গান[১০৬] লোকসঙ্গীতের অন্যান্য বিশিষ্ট ধারাগুলি হল গম্ভীরা ও ভাওয়াইয়া। অন্যদিকে বাংলা ধর্মসঙ্গীতের দুটি জনপ্রিয় ধারা হল কীর্তন ওশ্যামাসংগীত। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহর হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বিষ্ণুপুরী ঘরানার প্রধান কেন্দ্র।রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতি অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি সঙ্গীত ধারা। অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ধারাগুলির মধ্যে অতুলপ্রসাদীদ্বিজেন্দ্রগীতিরজনীকান্তের গান ও বাংলা আধুনিক গান উল্লেখযোগ্য। ১৯৯০-এর দশকে বাংলা লোকসঙ্গীত ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সংমিশ্রণে বাংলা গানের এক নতুন যুগের সূত্রপাত ঘটে। এই গান জীবনমুখী গান নামে পরিচিত ছিল। বাংলার নৃত্যকলায় মিলন ঘটেছে আদিবাসী নৃত্য ও ভারতীয় ধ্রুপদি নৃত্যের। পুরুলিয়ার ছৌ নাচ একপ্রকার দুর্লভ মুখোশনৃত্যের উদাহরণ।[১০৭]

কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রধান কেন্দ্রটি অবস্থিত। এই কারণে এই কেন্দ্রটিহলিউডের অনুকরণে "টলিউড" নামে পরিচিত হয়ে থাকে। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প আর্ট ফিল্ম বা শিল্পগুণান্বিত চলচ্চিত্রে সুসমৃদ্ধ। সত্যজিৎ রায়মৃণাল সেনতপন সিনহাঋত্বিক ঘটক প্রমুখ বিশিষ্ট পরিচালকের চলচ্চিত্র বিশ্ববন্দিত। সমসাময়িককালের বিশিষ্ট পরিচালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনবুদ্ধদেব দাশগুপ্তগৌতম ঘোষঅপর্ণা সেন ও ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি এই রাজ্যে অবশ্য হিন্দি সিনেমাও অত্যন্ত জনপ্রিয়।

বাংলা ভারতীয় শিল্পকলার আধুনিকতার পথপ্রদর্শক। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বলা হয় আধুনিক ভারতীয় শিল্পকলার জনক। বঙ্গীয় শিল্প ঘরানা ইউরোপীয় রিয়্যালিস্ট ঐতিহ্যের বাইরে এমন একটি নিজস্ব ধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল যা ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার আর্ট কলেজগুলিতে শেখানো হত। এই ধারার অন্যান্য বিশিষ্ট চিত্রকরেরা হলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুররবীন্দ্রনাথ ঠাকুররামকিঙ্কর বেইজ ও যামিনী রায়। স্বাধীনতার পরেকলকাতা গোষ্ঠী ও সোসাইটি অফ কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর শিল্পীরা ভারতীয় শিল্পকলার জগতে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী হন।

[সম্পাদনা]উৎসব ও মেলা

দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম উৎসব।[১০৮] শরৎকালে আশ্বিন-কার্তিক মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) চারদিনব্যাপী এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অপর একটি বহুপ্রচলিত হিন্দু উৎসব হল কালীপূজা। এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় দুর্গাপূজার পরবর্তী অমাবস্যা তিথিতে। রাজ্যের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য হিন্দু উৎসবগুলি হল পয়লা বৈশাখঅক্ষয় তৃতীয়া, দশহরা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী, বিশ্বকর্মা পূজা, মহালয়া, কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা, ভ্রাতৃদ্বিতীয়ানবান্নজগদ্ধাত্রী পূজাসরস্বতী পূজাদোলযাত্রাশিবরাত্রি ও চড়ক-গাজন। রথযাত্রা উপলক্ষ্যে হুগলি জেলার মাহেশ ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে বিশেষ মেলা ও জনসমাগম হয়ে থাকে। হুগলি জেলার চন্দননগর ও নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা ও জগদ্ধাত্রী বিসর্জন শোভাযাত্রা বিখ্যাত। মকর সংক্রান্তির দিন বীরভূম জেলার কেন্দুলিতে জয়দেব মেলা উপলক্ষ্যে বাউল সমাগম ঘটে। পৌষ সংক্রান্তির দিন হুগলি নদীর মোহনার কাছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার গঙ্গাসাগরে আয়োজিত গঙ্গাসাগর মেলায় সারা ভারত থেকেই পুণ্যার্থী সমাগম হয়। শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির নিকটে প্রাচীন জল্পেশ্বর শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় বিখ্যাত জল্পেশ্বর মেলা। শ্রাবণ সংক্রান্তির সর্পদেবী মনসার পূজা উপলক্ষ্যে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে আয়োজিত হয় ঝাঁপান উৎসব। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের ঝাঁপান উৎসব সবচেয়ে বিখ্যাত।কোচবিহার শহরের মদনমোহন মন্দিরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত রাসমেলা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম মেলা।[১০৯]

ইসলামি উৎসব মধ্যে ঈদুজ্জোহাঈদুলফিতর, মিলাদ-উন-নবি, শবেবরাত ও মহরম বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়। খ্রিষ্টান উৎসববড়দিন ও গুড ফ্রাইডে; বৌদ্ধ উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা; জৈন উৎসব মহাবীর জয়ন্তী এবং শিখ উৎসব গুরু নানক জয়ন্তীও মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।

পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক উৎসবগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল স্বাধীনতা দিবসপ্রজাতন্ত্র দিবসপঁচিশে বৈশাখ, নেতাজি জয়ন্তী ইত্যাদি। প্রতি বছর পৌষ মাসে শান্তিনিকেতনে বিখ্যাত পৌষমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।[১০৯] বইমেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব আন্তর্জাতিক কলকাতা পুস্তকমেলা রাজ্যে একমাত্র তথা বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বইমেলা। আঞ্চলিক বইমেলাগুলি রাজ্যের সকল প্রান্তেই বছরের নানা সময়ে আয়োজিত হয়। এছাড়া সারা বছরই রাজ্য জুড়ে নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

माताको दुध शिक्षा मात्री भाषामा प्रभाव पर्छ श्रीष्टिलाई प्रकाशको गतिमा |

[সম্পাদনা]শিক্ষা

মূল নিবন্ধ: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পশ্চিমবঙ্গের কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়গুলি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অথবা বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়ে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনও বিদ্যালয় পরিচালনা করে। প্রধানত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমেই শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত; তবে সাঁওতালিনেপালিহিন্দি ওউর্দু ভাষাতেও পঠনপাঠন করার সুযোগ এরাজ্যে অপ্রতুল নয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ অথবা কেন্দ্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ (সিবিএসসি) অথবা কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট একজামিনেশন (আইসিএসই) দ্বারা অনুমোদিত। ১০+২+৩ পরিকল্পনায় মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ছাত্রছাত্রীদের দুই বছরের জন্য প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় জুনিয়র কলেজে পড়াশোনা করতে হয়। এছাড়াও তারা পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদঅথবা কোনো কেন্দ্রীয় বোর্ড অনুমোদিত উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করতে পারে। এই ব্যবস্থায় তাদের কলাবিভাগবাণিজ্যবিভাগ অথবাবিজ্ঞানবিভাগের যেকোনো একটি ধারা নির্বাচন করে নিতে হয়। এই পাঠ্যক্রম সম্পূর্ণ করার পরই তারা সাধারণ বা পেশাদার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করতে পারে।

২০০৬ সালের হিসেব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আঠারো।[১১০][১১১] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও অন্যতম বৃহৎ আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে প্রায় ২০০টি কলেজ।[১১২] বেঙ্গল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যের দুটি প্রসিদ্ধ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।[১১৩] শান্তিনিকেতনে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন এক প্রতিষ্ঠান।[১১৪]অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (কলকাতা), বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (বর্ধমান), বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়(মেদিনীপুর), উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (রাজা রামমোহনপুর, শিলিগুড়ি), বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় (কল্যাণীনদিয়া),পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় , পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় – আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিসম্পন্ন রাজ্যের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুরইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, কলকাতা, জাতীয় প্রযুক্তি সংস্থান, দুর্গাপুর (পূর্বতন আঞ্চলিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ), ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও অনুসন্ধান সংস্থান, কলকাতা; IISER-K) ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউশন

[সম্পাদনা]গণমাধ্যম

আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক

২০০৫ সালের হিসেব অনুসারে, পশ্চিমবঙ্গ (ভারতীয় বঙ্গ) থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সংখ্যা ৫০৫।[১১৫] এগুলির মধ্যে ৩৮৯টি বাংলা সংবাদপত্র।[১১৫] কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা ভারতে একক-সংস্করণে সর্বাধিক বিক্রিত বাংলা পত্রিকা। এই পত্রিকার দৈনিক গড় বিক্রির পরিমাণ ১,২৩৪,১২২টি কপি।[১১৫] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বাংলা সংবাদপত্রগুলি হল আজকালবর্তমান,সংবাদ প্রতিদিনউত্তরবঙ্গ সংবাদজাগো বাংলাদৈনিক স্টেটসম্যান ও গণশক্তি। দ্য টেলিগ্রাফদ্য স্টেটসম্যানএশিয়ান এজহিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি দৈনিকের নাম। এছাড়াও হিন্দিগুজরাটিওড়িয়াউর্দু ও নেপালি ভাষাতেও সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে থাকে।

দূরদর্শন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারক। এছাড়া কেবল টেলিভিশনের মাধ্যমে মাল্টিসিস্টেম অপারেটরগণ বাংলা, নেপালি, হিন্দি, ইংরেজি সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যানেল সম্প্রচার করে থাকেন। বাংলা ভাষায় সম্প্রচারিত ২৪ ঘণ্টার বাংলা টেলিভিশন সংবাদ-চ্যানেলগুলি হলস্টার আনন্দকলকাতা টিভি২৪ ঘণ্টাএনই বাংলানিউজ টাইম, চ্যানেল টেন, আর-প্লাস ও তারা নিউজ;[১১৬][১১৭] ২৪ ঘণ্টার টেলিভিশন বিনোদন-চ্যানেলগুলি হল স্টার জলসাইটিভি বাংলাজি বাংলাআকাশ বাংলা ইত্যাদি। এছাড়া চ্যানেল এইট টকিজ নামে একটি ২৪ ঘণ্টার চলচ্চিত্র-চ্যানেল এবং তারা মিউজিক ও সঙ্গীত বাংলা নামে দুটি উল্লেখনীয় ২৪ ঘণ্টার সংগীত-চ্যানেলও দৃষ্ট হয়।আকাশবাণী পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বেতার কেন্দ্র।[১১৭] বেসরকারি এফএম স্টেশন কেবলমাত্র কলকাতা, শিলিগুড়ি ও আসানসোল শহরেই দেখা যায়।[১১৭] বিএসএনএলইউনিনরটাটা ডোকোমোআইডিয়া সেলুলাররিলায়েন্স ইনফোকমটাটা ইন্ডিকমভোডাফোন এসারএয়ারসেল ওএয়ারটেল সেলুলার ফোন পরিষেবা দিয়ে থাকে। সরকারি সংস্থা বিএসএনএল ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ব্রডব্যান্ড ও ডায়াল-আপ অ্যাকসেসইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া যায়।

[সম্পাদনা]খেলাধূলা

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটবল স্টেডিয়ামবিধাননগরের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বায়ার্ন মিউনিখ-মোহনবাগান ফুটবল ম্যাচের একটি দৃশ্য। উল্লেখ্য, এই ম্যাচটি ছিল জার্মান গোলকিপার অলিভার কানের বিদায়ী ম্যাচ।

ক্রিকেট ও ফুটবল এই রাজ্যের দুটি জনপ্রিয় খেলা। কলকাতা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।[১১৮] মোহনবাগানইস্ট বেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মতো দেশের প্রথম সারির জাতীয় ক্লাবগুলি রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।[১১৯] খো খোকবাডি প্রভৃতি দেশীয় খেলাও এখানে খেলা হয়ে থাকে। ক্যালকাটা পোলো ক্লাব বিশ্বের প্রাচীনতম পোলো ক্লাব বলে পরিগণিত হয়।[১২০] অন্যদিকেরয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব গ্রেট ব্রিটেনের বাইরে এই ধরনের ক্লাবগুলির মধ্যে প্রথম।[১২১]

পশ্চিমবঙ্গে একাধিক সুবৃহৎ স্টেডিয়াম অবস্থিত। সারা বিশ্বে যে দুটি মাত্র লক্ষ-আসন বিশিষ্ট ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে কলকাতার ইডেন গার্ডেনস তার অন্যতম।[১২২] অন্যদিকে বিধাননগরের বহুমুখী স্টেডিয়াম যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তমফুটবল স্টেডিয়াম।[১২৩][১২৪] ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ফুটবল ক্লাব।[১২৫] জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় দুর্গাপুরশিলিগুড়ি ওখড়গপুর শহরেও।[১২৬] পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বেরা হলেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়অলিম্পিক টেনিস ব্রোঞ্জ পদকজয়ী লিয়েন্ডার পেজ, দাবা আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া প্রমুখ। আবার অতীতের খ্যাতমানা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফুটবলার চুনী গোস্বামীপি কে বন্দ্যোপাধ্যায়শৈলেন মান্না, সাঁতারু মিহির সেন, অ্যাথলেট জ্যোতির্ময়ী শিকদার প্রমুখ।[১২৭] পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে প্রচুর সাংস্কৃতিক সংস্থা। কলকাতার জোকায় রয়েছে বাংলার ব্রতচারী সমিতি। ব্রতচারী কেন্দ্রীয় নায়কমন্ডলী, কবি সুকান্তের কিশোর বাহিনী, সব পেয়েছির আসর, মনিমেলা মহাকেন্দ্র ইত্যাদি শিশু কিশোর সংস্থা।

[সম্পাদনা]আরও দেখুন

[সম্পাদনা]উৎসপঞ্জি

  1.  India: Administrative Divisions (population and area). প্রকাশক: Census of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2009-04-17.
  2.  Gross Domestic Product by prices as of 28 February, 2008.
  3.  Why India's Stalinists oppose the US nuclear deal (aspx). প্রকাশক: WSWS। সংগৃহীত হয়েছে: March 27, 2010.
  4.  Fresh gunfight between police, Naxals in West Bengal (aspx). প্রকাশক: DNA। সংগৃহীত হয়েছে: March 27, 2010.
  5.  A slaughter reveals the inadequacy of India's counterinsurgency effort (aspx). প্রকাশক: The Economist। সংগৃহীত হয়েছে: Apr 8th 2010.
  6.  While the debate goes on whether trade unions must be allowed in the IT sector, the CITU forms one in West Bengal. প্রকাশক: FrontLine। সংগৃহীত হয়েছে: Dec. 01, 2006.
  7.  Waking up too late. প্রকাশক: The Statesman। সংগৃহীত হয়েছে: 11 April 2010.
  8.  Political violence revisits Bengal (cms). প্রকাশক: Times of India। সংগৃহীত হয়েছে: Jun 10, 2009.
  9.  http://econ-www.mit.edu/files/2490 Strategy for Economic Reform in West Bengal.
  10.  http://www.telegraphindia.com/1100713/jsp/frontpage/story_12677609.jsp Minister's statement that schemes were not 'properly' implemented coincides with debate in CPM.
  11.  http://timesofindia.indiatimes.com/India/8-Indian-states-have-more-poor-than-26-poorest-African-nations/articleshow/6158960.cms 8 Indian states have more poor than 26 poorest African nations.
  12.  Opposition's bandh against price rise hits life in West Bengal, Kerala, UP (aspx). প্রকাশক: Hindustan Times। সংগৃহীত হয়েছে: 1 October 2005.
  13.  Business in West Bengal affected ahead of Tuesday strike. প্রকাশক: sify finance। সংগৃহীত হয়েছে: Jun 10, 2009.
  14.  West Bengal Human Development Index Report. প্রকাশক: The Telegraph। সংগৃহীত হয়েছে: October 5, 2008.
  15.  [http://www.igidr.ac.in/pdf/publication/PP-062-22.pdf Convergence of Human Development across Indian States]. প্রকাশক: Hiranmoy Roy and Kaushik Bhattacharjee। সংগৃহীত হয়েছে: October 5, 2008.
  16.  A Survey of Public Hospital in Kolkata, by Mansi Shah, June 2010.
  17.  [http://www.wbhealth.gov.in/Externally_Aided_Projects/HSDI-DFID%20Programme%20Memorandum.pdf West Bengal: Health Systems Development Initiative], by Government of West Bengal Government of India DFID, UK, 15 January 2005.
  18.  Impact of Social Sector Development in West Bengal - Midnapore and Birbhum districts. প্রকাশক: Planning Commission of India.
  19.  The people of Bengal created the darkness that envelops them. প্রকাশক: The Telegraph। সংগৃহীত হয়েছে: October 5, 2008.
  20.  Bengal will have to improve its infrastructure, policy reform and governance before the ADB considers extending any poverty alleviation loan, June 2010.
  21.  West Bengal political violence continues (aspx). প্রকাশক: Economic Times। সংগৃহীত হয়েছে: 1 October 2005.
  22.  Six killed as farmers and communists clash in West Bengal (aspx). প্রকাশক: Guardian। সংগৃহীত হয়েছে: 1 October 2005.
  23.  The Evolution of Industrial Relations in West Bengal (pdf). প্রকাশক: Dr. Ratna Sen। সংগৃহীত হয়েছে: 2009.
  24.  [http://econ.lse.ac.uk/staff/mghatak/westbeng2.pdf Beyond Nandigram: Industrialisation in West Bengal] (pdf). প্রকাশক: ABHIJIT VINAYAK BANERJEE, PRANAB BARDHAN, KAUSHIK BASU, MRINAL DATTA CHAUDHURY, MAITREESH GHATAK, ASHOK SANJAY, GUHA, MUKUL MAJUMDAR, DILIP MOOKHERJEE, DEBRAJ RAY। সংগৃহীত হয়েছে: 2009.
  25.  Issues Regarding Industrialisation in West Bengal (pdf)। সংগৃহীত হয়েছে: 2009.
  26. ↑ ২৬.০ ২৬.১ ২৬.২ ২৬.৩ ২৬.৪ Introduction and Human Development Indices for West Bengal (PDF). West Bengal Human Development Report 2004. প্রকাশক: Development and Planning Department, Government of West Bengal. May 2004. পৃষ্ঠাসমূহ- pp4–6. Archived from the original on 2006-11-08। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  27.  CPI(M) architect of misrule in BengalGovernment of India (2001). প্রকাশক: IBNLive। সংগৃহীত হয়েছে: April 15, 2009.
  28.  The question is not who will win but what lies behind the Left Front's impending electoral victory, its 15th in succession.Government of India (2001). প্রকাশক: The Hindu। সংগৃহীত হয়েছে: April 15, 2009.
  29.  CPI dominana in West Bengal. প্রকাশক: RUDRANGSHU MUKHERJEE। সংগৃহীত হয়েছে: Jun 10, 2009.
  30.  History of Bangladesh. প্রকাশক: Bangladesh Student Association। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  31.  4000-year old settlement unearthed in Bangladesh. প্রকাশক: Xinhua. 2006-March.
  32.  James Heitzman and Robert L. Worden, ed (1989). Early History, 1000 B.C.-A.D. 1202Bangladesh: A country study. প্রকাশক: Library of Congress.
  33.  Sultana, Sabiha. Settlement in Bengal (Early Period)Banglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-03-04.
  34.  Chowdhury, AM. GangaridaiBanglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-08.
  35.  ShashankaBanglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  36.  Islam (in Bengal)Banglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  37.  Chaudhury, S; Mohsin, KM. SirajuddaulaBanglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  38.  Fiske, John. The Famine of 1770 in BengalThe Unseen World, and other essays. প্রকাশক: University of Adelaide Library Electronic Texts Collection। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  39.  (Baxter 1997, pp. 30–32)
  40.  (Baxter 1997, pp. 39–40)
  41.  Sen, Amartya (1973). Poverty and Famines. প্রকাশক: Oxford University Press. আইএসবিএন 0-19-828463-2.
  42.  Harun-or-Rashid. Partition of Bengal, 1947Banglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  43.  (Bennett & Hindle 1996, pp. 63–70)
  44. ↑ ৪৪.০ ৪৪.১ Biswas, Soutik (2006-04-16). Calcutta's colourless campaign. প্রকাশক: BBC। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  45.  Ghosh Roy, Paramasish (2005-07-22). Maoist on Rise in West BengalVOA Bangla. প্রকাশক: Voice of America। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-11.
  46.  Maoist Communist Centre (MCC)Left-wing Extremist group. প্রকাশক: South Asia Terrorism Portal। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-11.
  47.  "Several hurt in Singur clash"rediff News (Rediff.com India Limited). 28 January 2007। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-03-15.
  48.  Red-hand Buddha: 14 killed in Nandigram re-entry bid. প্রকাশক: The Telegraph. 15 March 2007। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-03-15.
  49.  The Hindu Business Line, 26 November 2006
  50.  Statistical Facts about India. প্রকাশক: www.indianmirror.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  51.  National Himalayan Sandakphu-Gurdum Trekking Expedition: 2006. প্রকাশক: Youth Hostels Association of India: West Bengal State Branch। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  52.  Alarming rise in bacterial percentage in Ganga waters. প্রকাশক: The Hindu Business Line. 4 August 2006। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-29.
  53.  Groundwater Arsenic Contamination Status in West BengalGroundwater Arsenic Contamination in West Bengal – India (17 Years Study). প্রকাশক: School of Environmental Studies, Jadavpur University। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-29.
  54. ↑ ৫৪.০ ৫৪.১ ClimateWest Bengal: Land. প্রকাশক: Suni System (P) Ltd। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-05.
  55.  kal BaisakhiGlossary of Meteorology. প্রকাশক: American Meteorological Society। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-05.
  56. ↑ ৫৬.০ ৫৬.১ http://www.flowersofindia.net/misc/state_flora.html
  57.  Flora and Fauna. প্রকাশক: calcuttayellowpages.com (P) Ltd। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-25.
  58.  Environmental Issues (PDF). West Bengal Human Development Report 2004. প্রকাশক: Development and Planning Department, Government of West Bengal. May 2004 [2004]. পৃষ্ঠাসমূহ- 180–182. আইএসবিএন 81-7955-030-3। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  59. ↑ ৫৯.০ ৫৯.১ West Bengal: General InformationIndia in Business. প্রকাশক: Federation of Indian Chambers of Commerce and Industry। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-25.
  60.  Islam, Sadiq (29 June 2001). "World's largest mangrove forest under threat"CNN Student Bureau (Cable News Network)। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-31.
  61. ↑ ৬১.০ ৬১.১ ৬১.২ Mukherji, S.J. (2000). College Botany Vol. III: (chapter on Phytogeography). প্রকাশক: New Central Book Agency. (Calcutta). পৃষ্ঠাসমূহ- 345–365.
  62.  Snedaker, Samuel (2006-08-29). Notes on the Sundarbans। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-02..
  63. ↑ ৬৩.০ ৬৩.১ Natural vegetationWest Bengal. প্রকাশক: Suni System (P) Ltd। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-31.
  64.  West BengalDirectory of Wildlife Protected Areas in India. প্রকাশক: Wildlife Institute of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  65. ↑ ৬৫.০ ৬৫.১ Problems of Specific Regions (PDF). West Bengal Human Development Report 2004. প্রকাশক: Development and Planning Department, Government of West Bengal. May 2004 [2004]. পৃষ্ঠাসমূহ- 200–203. আইএসবিএন 81-7955-030-3। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  66.  West Bengal Legislative AssemblyLegislative Bodies in India. প্রকাশক: National Informatics Centre। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-28.
  67.  Election Database. প্রকাশক: Election Commission of India. Archived from the original on 2006-08-18। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  68.  West BengalIndia Together. প্রকাশক: Civil Society Information Exchange Pvt. Ltd। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  69.  The CPI(M) has always used violence to achieve its goalsIndia Together. প্রকাশক: The Telegraph। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  70.  West Bengal: Next time, the volcanoIndia Together. প্রকাশক: The Times of India। সংগৃহীত হয়েছে: Jun 21, 2009.
  71. ↑ ৭১.০ ৭১.১ Directory of District, Sub division, Panchayat Samiti/ Block and Gram Panchayats in West Bengal, March 2008West Bengal. প্রকাশক: National Informatics Centre, India. 2008-03-19। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-11-19.
  72.  Section 2 of West Bengal Panchayat Act, 1973. প্রকাশক: Department of Panchayat and Rural Department, West Bengal। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-12-09.
  73.  India: largest cities and towns and statistics of their population. প্রকাশক: World Gazetteer। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  74.  India: metropolitan areas. প্রকাশক: World Gazetteer। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  75. ↑ ৭৫.০ ৭৫.১ David Christiana (2007-09-01). Arsenic Mitigation in West Bengal, India: New Hope for Millions (PDF). প্রকাশক: Southwest Hydrology. পৃষ্ঠা- 32। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-12-20.
  76.  Gross State Domestic Product at Current PricesNational Accounts Division: Press release & Statements. প্রকাশক: Ministry of Statistics and Programme Implementation, Government of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-03-29.
  77. ↑ ৭৭.০ ৭৭.১ EconomyWest Bengal. প্রকাশক: Suni System (P) Ltd। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-07.
  78. ↑ ৭৮.০ ৭৮.১ ৭৮.২ The State Economy (PDF). Indian States Economy and Business: West Bengal. প্রকাশক: India Brand Equity FoundationConfederation of Indian Industry. পৃষ্ঠাসমূহ- 9। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-07.
  79.  Basic InformationAbout West Bengal. প্রকাশক: West Bengal Industrial Development Corporation. Archived from the originalon 2006-11-28। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-07.
  80.  Consul General Henry V. Jardine to The Indo-American Chamber of Commerce, 19 October 2005। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-04-11.
  81.  Ray Choudhury, R (27 October 2006). A new dawn beckons West Bengal. প্রকাশক: The Hindu Business Line। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-29.
  82.  West Bengal Industrial Development Corporation Ltd. (PDF). India @ Hannover Messe 2006. প্রকাশক: Engineering Export Promotion Council (EEPC), India. পৃষ্ঠাসমূহ- 303। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-07.
  83.  Statement: Gross state domestic product at current prices. প্রকাশক: Directorate of Economics & Statistics of respective State Governments, and for All-India। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-09-02.
  84.  http://www1.voanews.com/english/news/news-analysis/a-13-2006-08-30-voa29.html
  85.  West Bengal: InfrastructurePublic Private Partnerships in India. প্রকাশক: Dept of Economic Affairs, Ministry of Finance, Government of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-27.
  86.  List of State-wise National Hoghways in the CountryNational Highways. প্রকাশক: Department of Road Transport and Highways; Ministry of Shipping, Road Transport and Highways; Government of India. Archived from the original on 2007-01-20। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-27.
  87.  Chattopadhyay, Suhrid Sankar (January–February 2006). "Remarkable Growth"Frontline (Chennai, India: The Hindu) খণ্ড: 23(02)। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-03-31.
  88.  West BengalIndian States-A Profile. প্রকাশক: Indian Investment Centre, Government of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-01.
  89.  Geography : Railway ZonesIRFCA.org. প্রকাশক: Indian Railways Fan Club। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-08-31.
  90.  About Kolkata Metro. প্রকাশক: Kolkata Metro। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-09-01.
  91.  Mountain Railways of India. প্রকাশক: UNESCO World Heritage Centre। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-04-30.
  92.  Salient Physical FeaturesKolkata Port Trust. প্রকাশক: Kolkata Port Trust, India। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-09.
  93.  Intra-city train travelreaching India. প্রকাশক: Times Internet Limited। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-08-31.
  94.  Census Population (PDF). Census of India. প্রকাশক: Ministry of Finance India। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-12-18.
  95. ↑ ৯৫.০ ৯৫.১ Data on ReligionCensus of India (2001). প্রকাশক: Office of the Registrar General & Census Commissioner, India. Archived from the original on 2007-08-12। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  96. ↑ ৯৬.০ ৯৬.১ ৯৬.২ ৯৬.৩ Provisional Population Totals: West BengalCensus of India, 2001. প্রকাশক: Office of the Registrar General & Census Commissioner, India. Archived from the original on 2007-08-07। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  97.  West Bengal. প্রকাশক: Infobengal.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-09-13.
  98.  Languages of India। সংগৃহীত হয়েছে: 2009-09-02.
  99.  Languages in Descending Order of Strength - India, States and Union Territories - 1991 CensusCensus Data Online. প্রকাশক: Office of the Registrar General, India. পৃষ্ঠাসমূহ- 1. Archived from the original on 2007-06-14। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-11-19.
  100.  Press Release – Provisional Population Results – Census of India 2001. প্রকাশক: Office of the Registrar General & Census Commissioner, India. 26 March 2001. Archived from the original on 2007-08-08। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  101.  Population of West Bengal (80,221,171) is 7.81% of India's population (1,027,015,247)
  102.  An Indian life: Life expectancy in our nationIndia Together. প্রকাশক: Civil Society Information Exchange Pvt. Ltd। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  103.  National Crime Records Bureau (2004). Crimes in Mega Cities (PDF Format). Crime in India-2004. প্রকাশক: Ministry of Home Affairs. পৃষ্ঠা- 158। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  104. ↑ ১০৪.০ ১০৪.১ ১০৪.২ Human Security (PDF). West Bengal Human Development Report 2004. প্রকাশক: Development and Planning Department, Government of West Bengal. May 2004. পৃষ্ঠাসমূহ- pp167–172. Archived from the original on 2006-11-08। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-08-26.
  105.  National Crime Records Bureau (2004). General Crime Statistics Snapshots 2004 (PDF Format). Crime in India-2004. প্রকাশক: Ministry of Home Affairs. পৃষ্ঠা- 1। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-04-26.
  106.  The Bauls of BengalFolk Music. প্রকাশক: BengalOnline। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  107.  Chau: The Rare Mask DancesDances of India. প্রকাশক: Boloji.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-22.
  108.  Durga PujaFestivals of Bengal. প্রকাশক: West Bengal Tourism, Government of West Bengal। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-28.
  109. ↑ ১০৯.০ ১০৯.১ List of festivals of West Bengal. প্রকাশক: Festivalsofindia.in.
  110.  UGC recognised Universities in West Bengal with NAAC accreditation status. প্রকাশক: Education Observer। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  111.  West Bengal University of Health Sciences. প্রকাশক: West Bengal University of Health Sciences। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  112.  List of Affiliated Colleges. প্রকাশক: University of Calcutta। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-03-29.
  113.  Mitra, P (31 August 2005). "Waning interest"Careergraph (The Telegraph)। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  114.  Visva-Bharati: Facts and Figures at a Glance. প্রকাশক: Visva-Bharati Computer Centre। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-03-31.
  115. ↑ ১১৫.০ ১১৫.১ ১১৫.২ General Review. প্রকাশক: Registrar of Newspapers for India। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-03-29.
  116.  Bengali News Channel took 5 months to reach no.1 position. প্রকাশক: News Center। সংগৃহীত হয়েছে: Sep 07, 2006.
  117. ↑ ১১৭.০ ১১৭.১ ১১৭.২ CALCUTTA : Television, Radio Channels. প্রকাশক: Calcutta Web। সংগৃহীত হয়েছে: Sep 07, 2006.
  118.  Prabhakaran, Shaji (18 January 2003). Football in India – A Fact File. প্রকাশক: LongLiveSoccer.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  119.  Indian Football Clubs. প্রকাশক: Iloveindia.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  120.  History of Polo. প্রকাশক: Hurlingham Polo Association। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-08-30.
  121.  Royal Calcutta Golf Club. প্রকাশক: Encyclopaedia Britannica। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-08-30.
  122.  India – Eden Gardens (Kolkata). প্রকাশক: Cricket Web। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  123.  100 000+ Stadiums. প্রকাশক: World Stadiums। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  124.  The Asian Football Stadiums (30.000+ capacity). প্রকাশক: Gunther Lades। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  125.  Raju, Mukherji (14 March 2005). Seven Years? Head Start. প্রকাশক: The Telegraph। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.
  126.  Sports & Adventure. প্রকাশক: West Bengal Tourism। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-22.
  127.  Famous Indian Football Players. প্রকাশক: Iloveindia.com। সংগৃহীত হয়েছে: 2006-10-26.

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ

No comments:

Post a Comment