Thursday, May 2, 2013

শাসক তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী যখন আত্মরক্ষায় মরিয়া,অন্যদিকে চিটফান্ড কেলেন্কারির পাশাপাশি ছাত্রনেতা সুদীপ্থর মৃত্যু নিয়েও আন্দোলনে নামছে বামপন্থীরা। কি করবেন মমতা? সারদা: হাইকোর্ট চাইলে তদন্তে রাজি সিবিআই! পলাশ বিশ্বাস

শাসক তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী যখন আত্মরক্ষায় মরিয়া,অন্যদিকে চিটফান্ড কেলেন্কারির পাশাপাশি ছাত্রনেতা সুদীপ্থর মৃত্যু নিয়েও আন্দোলনে নামছে বামপন্থীরা। কি করবেন মমতা?

সারদা: হাইকোর্ট চাইলে তদন্তে রাজি সিবিআই
অর্থলগ্নি সংস্থার সভায় হাজির থেকে প্রশস্তি গেয়েছেন পার্থও

পলাশ বিশ্বাস

অর্থলগ্নি সংস্থার অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তাদের প্রশস্তি গেয়ে বিতর্কে জড়ালেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের সন্দেহের তালিকায় থাকালগ্নি সংস্থা প্রয়াগ গ্রুপের 'প্রোডাক্ট লঞ্চ' অনুষ্ঠানে একাধিকবার হাজির থেকেছেন পার্থবাবু৷ শুধু তাই নয়, শিল্পমন্ত্রীর মুখে সংস্থা সম্পর্কে ঢালাও প্রশস্তিও শোনা গিয়েছে৷

কলকাতা: সারদাকাণ্ডে ঘরে-বাইরে সিবিআই তদন্তের দাবি ক্রমশ জোরদার হলেও কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতাই করেছে রাজ্য সরকার৷ সিবিআই তদন্তের দাবিকে গতকাল শ্যামবাজারের সভা থেকে কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ এই প্রেক্ষাপটে আজ কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে সিবিআই জানিয়ে দিল, হাইকোর্ট চাইলে সারদাকাণ্ডে তদন্ত করতে তাদের আপত্তি নেই৷ তবে তারা এও জানিয়েছে, তদন্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মী বা পরিকাঠামো তাদের নেই৷ তাই হাইকোর্ট যদি সিবিআইকে সারদাকাণ্ডের তদন্ত করতে বলে, তাহলে রাজ্য সরকারকে যেন কর্মী ও পরিকাঠামোগত সহায়তা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়৷ যে রাজ্য সরকার সিবিআই তদন্তই চায় না, তাদের সেই তদন্তের জন্যই কর্মী ও পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে বলা হলে তারা কী প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটাই দেখার বিষয় হয়ে উঠবে।
এর আগে সারদাকাণ্ডে তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের মতামত জানতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট৷ পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয় অসমে সারদার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করছে কি না৷ তার উত্তরে জানানো হয়েছে, অসমে সিবিআই এখনও তদন্ত শুরু করেনি৷ তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে৷

প্রসঙ্গত, সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী৷ আবেদনকারীর তরফে তাঁর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে দাবি করেন, সারদা গোষ্ঠী কী করে বেআইনি আর্থিক প্রকল্প বছরের পর বছর চালিয়ে গেল, তা নিয়ে তদন্ত করুক সিবিআই৷ সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কারা জড়িত? কোন নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী বা সরকারি আমলা জড়িত, তাও তদন্ত করে দেখা হোক৷ আদালত রিসিভার নিয়োগ করুক৷ তিনিই সারদা গোষ্ঠীর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামের ব্যবস্থা করবেন৷ সেই নিলামের টাকা ফেরত দেওয়া হোক আমানতকারীদের৷ 
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান এবং তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে ২ মে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয় আদালত৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার হলফনামা পেশ করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব চন্দনচয়ণ গুহ৷ হলফনামায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার৷ তাদের বক্তব্য, সারদাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁকে জেরা করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, সুদীপ্ত ছাড়াও, সংস্থার আরও ৩ উচ্চপদস্থ আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্য পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি৷ শুধু তাই নয়, এধরনের লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে তত্পরতার সঙ্গে বিধানসভায় বিলও পাস করিয়েছে রাজ্য সরকার৷ 
মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের তরফে আরও বলা হয়েছে,  সারদাকাণ্ডের তদন্ত এখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে৷ ফলে এখনই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশের নেতৃত্বে যে তদন্ত চলছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কোনও অবকাশ নেই৷ 
সব মিলিয়ে রাজ্য সরকারের অনীহা এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার আজকের বক্তব্য সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবির ইস্যুতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ 



চিটফান্ড কাণ্ডে কোনঠাসা তৃণমূল কংগ্রেস। পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে সারা ভারত তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে জন প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হবেন তৃণমূল নেত্রী। 

বৈঠকে থাকবেন দলের ব্লক সভাপতিরাও। চিটফান্ড কাণ্ডে যেভাবে নিচুতলার কর্মীদের নাম জড়াচ্ছে তাতে অস্বস্তি বাড়ছে দলে। সেকারণে আজকের বৈঠক রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। 


শাসক তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী যখন আত্মরক্ষায় মরিয়া,অন্যদিকে চিটফান্ড কেলেন্কারির পাশাপাশি ছাত্রনেতা সুদীপ্থর মৃত্যু নিয়েও আন্দোলনে নামছে বামপন্থীরা। কি করবেন মমতা?


পুলিসি হেফাজতে ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে আজ দেশজুড়ে আন্দোলনে নামছে এসএফআই। একই দাবি তে রাজ্যে গণসাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। 

ইতিমধ্যেই ছেলের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সুদীপ্তর বাবা প্রণব গুপ্ত। আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে এসএফআইয়ের আইন অমান্য কর্মসূচিতে যোগ দান করতে দিয়েছিল ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্ত। পরে পুলিসি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। সুদীপ্ত বাড়ি গড়িয়া সি ফাইভ বাসস্ট্যান্ডের কাছে কথায়-কবিতায়-গানে সুদীপ্ত স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এসএফআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।


গোপন নথির খোঁজে দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে  মিডল্যান্ড পার্কে সারদার মূল অফিসে তল্লাসি চালাল পুলিস। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তল্লাসি চালিয়ে পুলিস প্রচুর রবার স্ট্যাম্প ও ফাইল বাজেয়াপ্ত করে। সারদার আয়- ব্যয় সংক্রান্ত বেশকিছু নথিপত্র উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। আয়কর সংক্রান্ত কিছু নথিও মেলে। বিষ্ণুপুর ও জাগুলিয়ায় সংস্থার সম্পত্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি উদ্ধার হয়। 

বেশ কয়েকটি কম্পিউটরের হার্ডডিস্ক ও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আজ মনোজ নাগেলকেও দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারদার মোট ৭৮ টি শাখার আমানতের বিষয়টি দেখতেন মনোজ নাগেল। আসানসোল, দুর্গাপুর শাখা প্রতি মাসে বারো কোটি টাকার ব্যবসা করত। 

যা ছিল বাকি শাখাগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। কীভাবে তা সম্ভব হত তা নিয়ে মনোজ নাগেলকে জেরা করেন গোয়েন্দারা।


হাত জোড় করে বিশ্বাস রাখার অনুরোধ... মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন চমকে দিলেন। বোঝালেন সারদা কাণ্ড তাঁকে কতটা অস্বস্তিতে রেখেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে হাত জোড় করতে দেখে অস্বস্তিতে পড়লেন দলের নেতারাই।
 
প্রকাশ্য সভায় দাঁড়িয়ে কেন এভাবে হাতজোড় করতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে? সারদা কাণ্ডে একের পর এক নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের একাধিক সাংসদ, নেতা, মন্ত্রীর। দলের ভাবমুর্তি ফেরাতেই তাই এপথে হাঁটতে হল মুখ্যমন্ত্রীকে? 

মুখ্যমন্ত্রীকে হাতজোড় করে দেখা গেল শ্যামবাজারের জনসভায় এদিনের মঞ্চে। বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো এবং যুবা কংগ্রেসের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

জনসভায় মঞ্চে বসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর সামনেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া মার মৃত্যুর পর থেকে তিনি একা। দলের সাংসদ থেকে  ঘরের ভাইপো, মুখ্যমন্ত্রীর সততার ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কী জবাব মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা বলেন সেই এক কথা। 

আইন আইনের পথে চলবে অথচ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদা করে একটি শব্দও কিন্তু উচ্চারণ করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তোপ দেগেছেন বামেদের বিরুদ্ধেও। শ্যামবাজারের জনসভায় এসে বেশ কিছুক্ষণ একেবারে একা বসেছিলেন। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বিশ্বাস অর্জনের আবেদন!


লগ্নি সংস্থা নিয়ে সিপিএমের সমালোচনার জবাবে পাল্টা তোপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ শ্যামবাজারের সভা থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ কয়েকজন সিপিএম নেতার সঙ্গে লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের ছবি তুলে ধরে জোরালো আক্রমণ করলেন সিপিএমকে৷ 


একদিকে লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে বিল পাশ, অন্যদিকে টাকা ফেরতের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন-এই দু'ই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে আমানতকারীদের মন জয়ের চেষ্টার পর এবার বিরোধীদের মোকাবিলায় রাজনৈতিক আক্রমণের পথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সারদা গোষ্ঠীর নানা অনুষ্ঠানে তৃণমূলের সাংসদ-মন্ত্রীদের একাংশের উপস্থিতির ছবিকে হাতিয়ার করে যখন পূর্ণোদ্যমে ময়দানে সিপিএম, তখন তাদের পথ ধরেই পাল্টা আক্রমণ শানালেন তৃণমূল নেত্রী৷ লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ একাধিক সিপিএম নেতার ছবি তুলে ধরে বিঁধলেন তাঁদের৷
দিন কয়েক আগেই পানিহাটির সভা থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দাবি করেছিলেন, তাঁর সময় তিনি লগ্নি সংস্থাদের কাছ ঘেঁষতে দেননি৷এদিন শ্যামবাজারের সভা থেকে পাল্টা কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷মহম্মদ সেলিম, বুদ্ধদেব,ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে লগ্নিকারী সংস্থার কর্ণধারদের ছবি তুলে তীব্র শ্লেষ ছুঁড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
লগ্নি কেলেঙ্কারিতে পাল্টা প্রচারে নেমে সিপিএমের দিকে ত্রিমুখী আক্রমণ ছুঁড়ে দেন মমতা৷ তাঁর প্রথম অভিযোগ, 'বাম জমানা ছিল লগ্নি সংস্থার আঁতুড়ঘর৷।'তাঁর দ্বিতীয় অভিযোগ, এধরনের বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে  'বামেরা ইচ্ছে করে আইন প্রণয়ন করেনি৷' লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত  দুর্নীতির ঘটনায় 'বামেদের দ্বিচারিতা'নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷
লগ্নি সংস্থা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের সাংসদ-মন্ত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে বিরোধীরা যখন আসরে, তখন এই ইস্যুতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তাদের বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিতে, তৃণমূল যে পাল্টা আক্রমণের রাস্তাতেই হাঁঠবে, মমতা তাই স্পষ্ট করে দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36264-2013-05-02-15-42-54

সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিকে শ্যামবাজারের সভা থেকে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সিবিআই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলে খোঁচা দিলেন কংগ্রেসকে৷ আর তৃণমূল নেত্রী যখন এই কথা বলছেন, তখন তাঁরই দলের সাংসদ সোমেন মিত্র সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন৷   


সারদা-কাণ্ড রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে৷ শাসক দলের একাধিক সাংসদ-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সারদা ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সরব বিরোধীরা৷ ইতিমধ্যেই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএম৷ এই প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের অন্দরেও সারদা-কাণ্ডের তদন্ত ভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে৷ যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমনের পর এবার সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করলেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র৷তিনি বলেছেন, এই কেলেঙ্কারির ঘটনা অন্যান্য রাজ্যেও ঘটেছে। তাই এক্ষেত্রে সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন।
যদিও, সিবিআই তদন্তের দাবি প্রসঙ্গে দলের দু'ই সাংসদের সঙ্গে যে তৃণমূল নেত্রী একমত নন, তা বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের সভা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ কংগ্রেসের সিবিআই তদন্তের দাবিকে কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছেন তিনি৷
সারদা কাণ্ডে শাসক দলের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় নিরপেক্ষতার স্বার্থে সিবিআই তদন্তের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে৷ কিন্তু, সারদাকাণ্ডে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে যে আগামী দিনে তৃণমূল প্রশ্ন তুলতে পারে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা থেকে তারই ইঙ্গিত মিলেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের৷ 

বিজেন্দ্র সিংহ ও আশাবুল হোসেন, এবিপি আনন্দ


সারদাকাণ্ডে ঘরে-বাইরে ক্রমে সিবিআই তদন্তের দাবি জোরালো হলেও, হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের বিরোধিতাই করল রাজ্য সরকার৷ সারদাকাণ্ডে সিবিআই তদন্ত দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী৷


আবেদনকারীর তরফে তাঁর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে দাবি করেন, সারদা গোষ্ঠী কী করে বেআইনি আর্থিক প্রকল্প বছরের পর বছর চালিয়ে গেল, তা নিয়ে তদন্ত করুক সিবিআই৷ সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে কারা জড়িত? কোন নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী বা সরকারি আমলা জড়িত, তাও তদন্ত করে দেখা হোক৷ আদালত রিসিভার নিয়োগ করুক৷ তিনিই সারদা গোষ্ঠীর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলামের ব্যবস্থা করবেন৷ সেই নিলামের টাকা ফেরত দেওয়া হোক আমানতকারীদের৷ 
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান এবং তদন্তের অগ্রগতি জানিয়ে রাজ্য সরকারকে ২ মে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয় আদালত৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার হলফনামা পেশ করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের যুগ্ম সচিব চন্দনচয়ণ গুহ৷ হলফনামায় সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার৷ তাদের যুক্তি, প্রথমত, সারদাকাণ্ডে ইতিমধ্যেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ তাঁকে জেরা করা হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, সুদীপ্ত ছাড়াও, সংস্থার আরও ৩ উচ্চপদস্থ আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ 
দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে রাজ্য সরকার৷ 
তৃতীয়ত, রাজ্য পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল বা এসআইটি৷ 
শুধু তাই নয়, এধরনের লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে, তত্পরতার সঙ্গে বিধানসভায় বিলও পাস করিয়েছে রাজ্য সরকার৷ 
মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের তরফে আরও বলা হয়েছে, সারদাকাণ্ডের তদন্ত এখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে৷ ফলে, এখনই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই৷ শুধু তাই নয়, রাজ্য পুলিশের নেতৃত্বে যে তদন্ত চলছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কোনও অবকাশ নেই৷ 
এদিকে, সম্প্রতি কয়লার ব্লক বণ্টন মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলার আবেদনে রদবদল করেন আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে অতিরিক্ত হলফনামা দিয়ে তিনি দাবি করেন, আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত হোক৷ এমনকী, সেবি এবং কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের অধীনস্থ বিশেষ টাস্ক ফোর্স-সহ যে সব সংস্থা তদন্ত করছে, তারাও রিপোর্ট জমা দিক কলকাতা হাইকোর্টে৷ শুক্রবার মামলার পরবর্তী শুনানি৷ 

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36265-2013-05-02-16-24-33


সেই তালিকায় নবতম সংযোজন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। সারদার ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রবল চাপে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। অস্বস্তি কাটাতে এবার বিরোধাদের পাল্টা আক্রমণের স্ট্রাটেজি নিল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথম টার্গেট প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

সারদা কেলেঙ্কারিতে পুলিসি তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সারদার কর্তাব্যক্তিদের যোগাসাজশের ছবিটা। প্রবল চাপ কাটাতে এবার বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণের পথে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রথমেই নিশানায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধেদেব ভট্টাচার্য।     

সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পরই তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়টি সামনে আসে। সিবিআইকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে নাম ছিল দুই তৃণমূল সাংসদের। পরে পুলিসি জেরায় আরও কয়েকজন নেতামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় জানান সারদা কর্তা। পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রের সারদার একাধিক অনুষ্ঠানে হাজির থাকার ফুটেজ হাতে আসে ২৪ ঘণ্টার। 
  
ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থার বাড়বাড়ন্তের জন্য সিপিআইএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। সারদা কেলেঙ্কারিতে ক্রমেই বাড়ছে জনরোষ। লক্ষ লক্ষ প্রতারিত আমনতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পাঁচশো কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা বললেও তার পুরো অর্থের সংস্থান কোথা থেকে তার জবাব নেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। 

চিটফান্ড মোকাবিলায় নয়া বিল বিধানসভায় পাশ হলেও, তার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে সংশয়ে সরকার। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে চরম অস্বস্তিতে রাজ্য। নজর ঘোরাতে এবার তাই বিরোধীদেরই পাল্টা আক্রমণের স্ট্রাটেজি নিয়েছে শাসকদল। এমনই মনে করেছে রাজনৈতিক মহল।


কি করবেন মমতা ! 
Saradindu Uddipan
  • কি করবেন মমতা ! 


    সারদা কান্ডের মতো এত বড় আর্থিক দুর্নীতি সমগ্র পূর্ব ভারতে বোধহয় এই প্রথম। এর আগে সঞ্চয়িতা বা ভেরনার মত চিট ফান্ডগুলি নিয়ে হৈ চৈ হলেও ব্যপকতার ক্ষেত্রে সারদা সকল কেই ছাপিয়ে গেছে। তাছাড়া পূর্বের চিটফান্ডগুলির আমানতকারীরা ছিলেন শহর বা আধা শহরের মধ্যবিত্ত মানুষ। শ্রমজীবী বা কৃষিজীবী মানুষকে তারা খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেনি। 
    অথবা এই মানুষগুলিও যে চিটফান্ডের আমানতকারী হতে পারে এ ধারণা ও বোধহয় চিটফান্ডের পরিকল্পকদের ছিলনা। অন্যদিকে ভয়ে হোক বা অজ্ঞতার কারণে হোক সরল গবাগুবো মানুষগুলি চিটফান্ডের ধারে বাড়ে যেতেন না। আশির দশক থেকেই কিছু রাষ্ট্রীয় প্রকল্প জনমানসের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। ধীরে ধীরে শ্রমজীবী বা কৃষিজীবী মানুষ ক্ষুদ্র সঞ্চয় বা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির আওতায় আসতে শুরু করে। 

    কি করতে চাইছেন মমতা ?
    সারদার ধাক্কা পশ্চিমবঙ্গকে একেবারে বেসামাল করে দিয়েছে। শাসক পক্ষ বা বিরোধী পক্ষ সবাই টলোমলো। বুক ঠুকে, শিরদাঁড়া খাড়া করে কেউই এগিয়ে আসতে পারছেনা।
    একটা অজানা আশঙ্কা গলার দৃঢ়তা ও চলনের ঋজুতা কে কেমন যেন শ্লথ করে দিয়েছে সব পক্ষকে। এতে অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে বই কমছে না। ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে আমানত ফেরতের প্রসঙ্গ। 
    তবুও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের উপর ভরসা রাখতে হয়। বিশ্বাস রাখতে হয় যেটা সঙ্গত সরকার সেটাই করবেন। কিন্তু আমরা যে ঘর পোড়া গরু। সিঁদুরে মেঘ দেখলেই বুক কেম্ন দূরদূর করে কাঁপে। 

    মমতা সরকার সারদার বিরুদ্ধে মামলা করলেন না কেন? 
    মমতার বক্তব্য ১লা বৈশাখের আগে তিনি কিছুই জানতেন না। যখন জানতে পেরেছেন তখন তাঁরা মিউজিকের কর্মী অর্পিতা ঘোষকে দিয়ে এফ আই আর করিয়েছেন বিধান নগর থানায়। 
    সুদীপ্ত সেন তৃণমূল সরকারের হয়ে প্রচার চালানোর জন্য যে মিডিয়াগুলো চলছে তার মাইনে দিচ্ছে না কেন এই নিয়ে মামলা? আমানতকারীদের টাকা লুন্ঠনের জন্য এখনো মামলা হয়নি।
    কেননা মমতা এখনো মনে করছেন সুদীপ্ত সেন জালিয়াত করেছেন এমন কোন প্রমান কারো হাতে নেই। অথবা সুদীপ্তের বিরুধে জনগণের টাকা জালিয়াতি করার মামলা করলে সে যদি সব ফাঁস করে দেয়! তাই কি এই প্রবল ঝড়ের মুখেও নিশ্চল থেকে তিনি সুদীপ্তকে আগলে রেখেছেন!তিনি কি তাই ভাবছেন যে, সুদীপ্ত মুখ খুললে তার নিজের পরিবারও আইলার কবলে পড়বে! কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসবে বিষধর কেউটে? 
    সুতরাং কমিশনই ঠিক করুক সুদীপ্ত সেন বা সারদার বিরুদ্ধে মামলা হবে কি না। তৃণমূল সরকার যে সারদা বা সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে মামলা করবেন না এটা নিশ্চিত। 

    কেন মমতা ২০০৯ সালের বিলটি তুলে নিলেন? 
    মমতা কি প্রায় নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি বাংলার মসনদে থাকতে সারদার গাঁয়ে কোন আঁচড় লাগবে না? কিন্তু গোঁয়ার্তুমি করলেন সুদীপ্ত নিজেই। মিডিয়া ব্যবসা যে তাকে পথে বসাতে যাচ্ছে এই নিয়ে কুনাল বা অর্পিতার সাথে তার তুমুল বিবাদ হল । মিডিয়াতে বিপুল পরিমাণ টাকা ধবংস হওয়ায় অসংখ্য আমানতকারী বা এজেন্টদের তিনি টাকা দিতে পারছিলেন না। জালিয়াতির উৎকেন্দ্র ক্রমশ শুঁকিয়ে আসছিল। মিডিয়াতে টাকা ঢালার ভুলের মাসুল হিসেবে আরো সহস্র ভুলে ভরে গেল অপারেশনাল ইনডেক্স!
    ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সরকার ও মিডিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে ভুলের পাহাড় জমে গেল!সেবি যখন তাকে চেতাবনী দিতে শুরু করলো ততক্ষন যা হবার তা হয়ে গেছে। এইবার জনগণ বা মিডিয়াগুলি যদি চেঁচাতে শুরু করে তবে জালিয়াতি রুখতে ২০০৯ সালের বিলটিকেই পাশ করে আনতে হবে।
    তবেতো সমূহ বিপদ!এই সময়ের মধ্যে সুদীপ্ত বা অন্য জালিয়াতরাও ওই আইনের আওতায় এসে যাবে!ফলে বিলটি তুলে আনতে পারলে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত একটি বিশাল গ্যাপ তৈরি হবে এবং এই আইনহীন গ্যাপের মধ্য দিয়ে নিশ্চিন্তে বেরিয়ে আসবে সুদীপ্ত বা অন্যান্য প্রিয়জন। 
    তারপর সরকার যে নতুন বিল আনছে তা দিয়ে আর পুরানো জালিয়াতির বিচার হবে না। অত্যন্ত্য দ্রুততার সাথে বিলটি তুলে নেবার সহযোগিতা করার জন্য তিনি রাষ্ট্র পতিকে ধন্যবাদও দিয়েছেন। 

    এবার কিন্তু মমতার আসল খেলা !
    রাজ্য বিধানসভাতেই মমতা তার নিজের স্টাইলে খেলতে শুরু করলেন। ভেবেছিলেন বাম-কংগ্রেস মিলিত ভাবে এই বিলের বিরোধিতা করবেন এবং রাজ্যবাসীকে বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু বামেরা চালাক। তারা এই বিলের বিরুদ্ধে খেলতে চাইলেন না। বরং বিলের পক্ষে স্ই ককরে তার প্রথম চালটি অকেজো করে দিলেন। সংখ্যা গরিষ্ঠের সমর্থন পেয়েই বিলটি পাস হয়ে গেল। যদিও কংগ্রেস বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করে। এবার বিলটিকে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। অর্থমন্ত্রক ও আইন বিষয়ক বিভাগ একে পুঙ্খানু পুঙ্খ অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন দেশ কাল ও সাংবিধানিক ত্রুটি না থাকলে রাষ্ট্র পতি বিলে স্বাক্ষর করবেন এবং বিলটি আইনে পরিণত হবে। এই বিরাট সময় টাই মমতা নিতে চাইছেন। 
    কেননা, বিল পাসে বিলম্ব হলে বা আইনি ত্রুটির জন্য বিল ফেরত এলে তিনি বর্তমান কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করবেন। দোষীদের আড়াল করার জন্য সময় পেয়ে যাবেন। তারস্বরে চেঁচিয়ে বলতে পারবেন কংগ্রেসের জন্যই দোষীদের শাস্তি দেওয়া গেল না। 
    সুদীপ্তর জালিয়াতির বিরুদ্ধে যে কমিশন তিনি গঠন করেছেন তাতো ঠুটো জগ্ননাথ। তাদের প্রথমদিনের ব্যবস্থাপনা থেকেই বোঝা গেছে ওখানে কি কাজ হবে। যে এজেন্টরা তাদের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেবার আবেদন করছেন তারা তৃণমূলের হুমকির শিকার হচ্ছেন। তাছাড়া এই কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়বে ৬ মাস পরে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
    ততদিন পর্যন্ত হুমকি, ধমকি চলতে থাকবে। মোদ্দা কথা,আইনি সংকট তৈরি করাই এখন মমতার এখন প্রধান লক্ষ্য। শেষ বাজি। এই চরম লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই কি মমতা তৃণমূল নামক রাজনৈতিক দলটি ও তার অন্তিসলিলা জালিয়াতির স্রোতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চান।
    Like ·  · 







    0
    সিবিআই তদন্তে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী

    রাজ্যের বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানা গিয়েছে, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সহ-সচিব চন্দনচয়ন গুহ শুক্রবারই
    আদালতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে হলফনামা পেশ করে বলবেন, এই মুহূর্তে সিবিআই তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই৷ রাজ্য পুলিশ সঠিক পথেই তদন্তর কাজ
    এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷

    সারদা কেলেঙ্কারির পর রাজ্যে এই ধরনের ভুয়ো আর্থিক সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই তিনটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের
    হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে৷ শুক্রবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাগুলির শুনানি হওয়ার কথা৷ সারদা
    কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর অসম ও ত্রিপুরা সরকার এই ধরনের সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করায় চাপ
    বেড়েছে মমতার সরকারের উপর৷ হাইকোর্টও সম্প্রতি বলেছে, সব রাজ্যই যখন সিবিআই তদন্তের পক্ষে, তখন স্বাভাবিক নিয়মে এ রাজ্যেও তা হতে পারে৷
    তবে দিন কয়েক আগেই কয়লা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ রাজনৈতিক প্রভাবে সিবিআইকে ব্যবহার করার
    বিরোধীদের অভিযোগও অনেকাংশে প্রমাণ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওই মন্তব্যে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে আগে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় অতিরিক্ত
    হলফনামা দিয়ে বৃহস্পতিবারই এক মামলাকারী বাসবী রায়চৌধুরী আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি পেশ করেছেন৷ প্রদেশ কংগ্রেস আইনজীবী সেলের
    পক্ষ থেকেও সিবিআই তদন্ত চেয়ে যে জনস্বার্থের মামলাটি দায়ের করা হয়েছে, সেটিও এ দিন শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আসে৷

    তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি এবং সিবিআই তদন্তের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানাতে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ কিন্তু শুক্রবার আদালতে সেই হলফনামা পেশ করবে সরকার৷ সরকারি সূত্রের খবর, সেই হলফনামায় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তে শ্যামল সেনের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করা ছাড়াও কী কী ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেছে তারও উল্লেখ করবে৷ সরকারের তরফে বলা হবে, আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বিচার বিভাগীয় কমিশন কাজ শুরু করেছে৷ রাজ্য পুলিশ ঠিক দিশাতেই তদন্ত করছে৷ কাশ্মীর থেকে সারদা সংস্থার মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, আরও অনেককে করা হবে৷ এ ছাড়া গজিয়ে ওঠা অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে আইন করতে রাজ্য সরকার ৩০ এপ্রিল বিধানসভায় একটি বিলও পাশ করিয়েছে৷ রাজ্য পুলিশের ডিজি'কে মাথায় রেখে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তদন্তকারী দল৷ গান ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করার কাজ চলছে পুরোদমে৷

    বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার আদালতে হলফনামা পেশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই মামলার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর মতে, এটি আদালত
    অবমাননার সমান৷ মামলায় দেরি করার কৌশল৷ সরকারি কৌঁসুলি অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আদালত অবমাননার
    কোনও ইচ্ছেই সরকারের নেই৷ হাইকোর্টের নির্দেশ মতোই কাজ করা হচ্ছে৷

    পুরনো মেজাজে মমতা

    সারদা কেলেঙ্কারির জেরে রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর সেই সংকট কাটাতে দীর্ঘদিন পর রাজপথে নেমে বিরোধী নেত্রীর পুরানো মেজাজে ফিরলেন তিনি৷ ভোটের আগে যে ভাষায় এবং ভঙ্গিতে তিনি সিপিএমকে তুলোধোনা করতেন, শুক্রবার শ্যামবাজারের দলীয়
    জনসভায় প্রায় সে ভাবেই অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারিতে বিরোধী দলকে কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মমতার ঝোড়ো আক্রমণ থেকে বাদ পড়েননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
    বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও৷ নিজের দলের উপর থেকে আক্রমণের মুখ ঘোরাতে রেয়াত করলেন না কেন্দ্রীয় সরকার আর কংগ্রেসকেও৷
    শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে ভিড়ে ঠাসা জনসভায় ঘণ্টা খানেকের বেশি বক্তৃতা করার পর মমতা সেই পুরনো ঢঙেই বাংলার মানুষকে তাঁর উপর ভরসা রাখার
    আবেদন জানালেন৷ বললেন, 'আমি আমাকে গ্যারান্টি দিয়ে গেলাম আপনাদের কাছে৷ আমি মানুষের পাহারাদার৷'

    রাজ্যের এই সব সংস্থার বাড়বাড়ন্তের দায় যে সংবাদমাধ্যমও এড়াতে পারে না সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা৷ তাঁর বক্তব্য, মানুষ মিডিয়াকে বিশ্বাস
    করে৷ তাই সেখানে কিছু প্রকাশিত হলে সেটাও বিশ্বস্ততা পায়৷

    সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর যোগাযোগ স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর চরম অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে৷ তারই জবাব দিতে এ
    দিন সিপিএমের একের পর এক নেতার সঙ্গে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার যোগাযোগের চিত্র তুলে ধরেন তিনি৷ সিপিএমের দলীয় মুখপত্র 'গণশক্তি' যে এপ্রিল
    মাসেও সারদা গোষ্ঠীর বিজ্ঞাপন ছেপেছে তা-ও দেখান৷ এমনকি তৃণমূলের বিতর্কিত রাজ্যসভা সাংসদ কে ডি সিংয়ের সঙ্গে সিপিএমের যোগাযোগ নিয়েও তীব্র
    আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অ্যালকেমিস্টের কর্ণধার কে ডি সিং-এর চার্টার্ড বিমানে নিখরচায় চাপার অভিযোগও নস্যাত্‍‌ করে দেন তিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'আমার
    দলের এমপি, এমএলএ'রা চাঁদা তুলে ওই বিমানের ভাড়া মিটিয়েছেন৷ সেই শর্তেই আমি চেপেছিলাম৷' এর পরই কে ডি সিং-এর সঙ্গে সিপিএমের পুরনো যোগাযোগ
    প্রমাণ করতে মমতা প্রশ্ন তোলেন, 'কে ডি সিং তো পরে এসেছে আমাদের কাছে৷ আকাশ বাংলা চ্যানেলটা কার পয়সায় তৈরি?'

    মমতার আক্রমণের জবাবে এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, 'গণশক্তি কখনও বেআইনি সংস্থার বিজ্ঞাপন ছাপেনি৷' দলের আর এক নেতা
    গৌতম দেব মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, 'বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও গণশক্তিতে ফাঁসানোর চেষ্টা হাতছাড়া করছেন কেন? সাহস থাকলে সিবিআই তদন্ত
    করান৷'

    সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থাকে রুখতে নতুন বিল পাশ করানোর পরই রাস্তায় নেমে বিরোধীদের সরাসরি আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু সারদার ঘটনা যে তাঁর
    এবং দলের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরাতে পারে সেই আশঙ্কা গোপন করতে পারেননি তিনি৷ এ দিন সভায় নিজেই স্বীকার করেছেন, 'আমার কোমরে ব্যথা, দাঁড়াতে
    পারছি না৷ থেরাপি চলছে৷ তা-ও এসেছি আপনাদের সামনে৷' এই সভাতেই মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের প্রতিও কঠোর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ দলের
    তিন নেতা আরাবুল ইসলাম, মহম্মদ ইকবাল এবং শম্ভুনাথ কাউকে জেলে পোরার প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, 'অন্যায় করলে দলের লোককেও ছেড়ে কথা বলি না৷'
    সেই সঙ্গেই বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, 'তদন্তে কেউ যদি ধরা পড়েন তা হলে আইন আইনের পথেই চলবে৷ আমি যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হতাম তা
    হলে সব ক'টা (সিপিএম নেতা) আজ জেলে থাকত৷'

    প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সিপিএম নেতা গৌতম দেব মমতার ভাইপো অভিষেকের সংস্থার প্রসঙ্গ তুলে আক্রমণ শুরু করেছেন৷ এ দিন তারও উত্তর
    দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, 'যাঁরা এসব বলছেন, তাঁদের ব্রেন-এ কৃমি হয়েছে৷ প্রথমে আমি কিন্তু বলতে আসিনি৷ তার পর দেখলাম আমার পরিবারকে
    নিয়েও টানাটানি শুরু হয়েছে৷ বুদ্ধবাবুরা আগ বাড়িয়ে বলতে গেলেন বলেই আমাকেও আপনাদের কাছে আসতে হল৷' তবে দোষ প্রমাণ হলে 'রাফ অ্যান্ড টাফ'
    মুখ্যমন্ত্রী যে নিজের পরিবারকেও ছেড়ে কথা বলবেন না সে কথাও ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি৷ 

    সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর প্রথম কয়েকটা দিন দলের নেতা মুকুল রায়কেই সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন মমতা৷ প্রথমে বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে
    তদন্ত কমিশন গঠন, তার পর ৫০০ কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা এবং পরিশেষে নতুন বিল বিধানসভায় পাশ করিয়ে নিজের খুঁটি শক্ত করার পরই পথে নামার
    সিদ্ধান্ত নেন তৃণমূলনেত্রী৷ তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে সারদা এবং অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থার যোগাযোগ প্রকাশ্যে আসায় মুখ্যমন্ত্রী ফাঁপরে পড়ে গিয়েছিলেন ঠিকই৷

    সেই অস্বস্তি কাটাতেই রাজ্যের পূর্বতন প্রধান শাসক দল সিপিএমের তাবড় নেতার সঙ্গে এ ধরনের সংস্থাগুলির কর্ণধারদের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ সংগ্রহ করেই আসরে
    নামেন মমতা৷ শ্যামবাজারের সভামঞ্চের উপর 'তথ্য-প্রমাণ'এর পাহাড় সাজিয়ে দলের শাপমোচনের চেষ্টা করেন তিনি৷ সিপিএমের দলীয় মুখপত্র 'গণশক্তি'র পাতায় পাতায় একাধিক আর্থিক সংস্থার বিজ্ঞাপন জনতার সামনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ২০১০, ১১, ১২, এবং ১৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকাশিত গণশক্তি ডায়াল-এও এই ধরনের সংস্থাগুলির বিজ্ঞাপন দেখিয়ে মানুষের ক্ষোভের অভিমুখ বিরোধী দলের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি৷ কয়েকটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত পুরোনো ছবি তুলে ধরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে কয়েকজন অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তার ঘনিষ্ঠতা প্রমাণের চেষ্টাও করেন মমতা৷ তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে এই সব সংস্থার কর্মকর্তাদের যে ছবিগুলো
    কাগজে-টিভিতে ঘন ঘন দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে অবশ্য উচ্চবাচ্য করেননি তৃণমূলনেত্রী৷


    সারদা কাণ্ডে এবার সি পি এমের অন্দরমহলে থাবা বসালেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা৷ বুধবার রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের আপ্ত সহায়ক গণেশ দে-কে দেড় ঘন্টা জেরা করা হয়৷ তার আগে প্রায় ৫ ঘণ্টা তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল কমিশনারেটের দপ্তরে৷ একই দিনে জেরা করা হয় প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ হিডকোর প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক অঞ্জন ভট্টাচার্যকেও৷ বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনারেটে ডেকে পাঠানো হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রধান কর্তা দেবব্রত সরকারকে (নিতু)৷ সিবিআইকে লেখা চিঠিতে এই দেবব্রতবাবুকেই ৪০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন সুদীপ্ত সেন৷ ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রতবাবুর সঙ্গে আসেন ক্লাবের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যও৷ নিতুকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়৷

    এদিকে, আইনি চিঠির পরোয়া না করে ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এদিন ফের তোপ দেগেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব৷ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোর বিরুদ্ধে আইন
    ভেঙে কোম্পানি চালিয়ে বাজার থেকে প্রায় তিনশো কোটি টাকার লগ্নি সংগ্রহ করার অভিযোগ এনেছেন সিপিএমের এই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য৷ গৌতম দেবের
    মতে যা সম্পূর্ণ 'জালিয়াতি' ও 'শাস্তিযোগ্য অপরাধ'৷ ওই কোম্পানির ঠিকানা হিসাবে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানার উল্লেখ আছে বলে গৌতমবাবুর দাবি৷
    সিপিএম নেতার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী কি তৃণমূল যুবার শীর্ষ নেতা তথা তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোম্পানির কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন?
    সেই সঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি৷ তাঁর বাড়ির ব্যাপার যদি তিনি না জানেন তা হলে দেশের খোঁজ রাখবেন কী করে?' যেহেতু তিনি
    অভিষেকের কোম্পানি নিয়ে সরব হয়েছেন তাই তাঁকে ও অসীম দাশগুপ্তকে জড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর৷

    বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ জানান, 'সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে আমরা জানতে পেরেছি, গণেশ ও অঞ্জন সারদা কর্তার কাছ থেতে
    আর্থিক সুবিধা নিতেন৷ দুজনকে জেরা করে আরও বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে৷ সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷' রাজনৈতিক মহলের মত, এদের দুজনকে জেরা
    করার উদ্দেশ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং আবাসনমন্ত্রীকে বার্তা পাঠানো যে ভবিষ্যতে তাঁদেরও ডাকা হতে পারে৷

    তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গণেশ দে প্রায় ১৫ বছর অর্থমন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক ছিলেন৷ বাম জমানার শেষ তিন বছরে তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি
    অভিযোগ ওঠে৷ এমনকী দলীয় নেতৃত্বের কাছেও গণেশ দের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল৷ গোয়েন্দারা জেনেছেন, অর্থমন্ত্রীর অফিসে থাকার সুবাদে গণেশবাবু
    সারদা গোষ্ঠীকে নানান সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন৷ সারদা ব্যবসা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যাতে মসৃণ গতিতে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেজন্য তিনি অর্থ দপ্তরের
    অফিসারদের দিয়ে অন্যান্য ভুঁইফোঁড় সংস্থাগুলিকে রীতিমত চাপে রাখতেন৷ বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা তাঁর কাছে পৌছে যেত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে৷ এই
    সব অভিযোগ এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ গণেশ দে'র আয় ব্যয়ের হিসেবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ তাঁর স্ত্রী'র ব্যবসা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছে
    পুলিশ৷ বুধবার রাতে প্রায় দেড়ঘণ্টা টানা জেরা করার পর গণেশকে ছাড়া হয়৷ বৃহস্পতিবার অবশ্য গণেশবাবুর মোবাইল ফোন বন্ধ করা ছিল৷ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী
    অসীম দাশগুপ্ত বৃহস্পতিবার বলেন, 'আমি এই নিয়ে এখনই কিছু বলছি না৷ দলের তরফে যদি আমাকে কিছু বলতে বলা হয়, আমি রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক
    সম্মেলন করে সব বলব৷' পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে প্রয়োজনে গণেশবাবুর বিরুদ্ধে দুনীতি দমন আইনে মামলা দায়ের করা হবে৷ কারণ অসীমবাবুর আপ্ত সহায়ক
    থাকার সময় তিনি সরকারি বেতন পেতেন৷

    গণেশ দের পরই বিধাননগরের গোয়েন্দারা জেরা করেন গৌতম দেবের ঘনিষ্ঠ হিডকোর প্রাক্তন জনসংযোগ আধিকারিক অঞ্জন ভট্টাচার্যকে৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় সারদার জমি কিনতে সাহায্য করেছেন অঞ্জনবাবু৷ যদিও তদন্তে উঠে এসেছে, গত বিধানসভা নির্বাচনের পরই সারদা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন অঞ্জন৷

    কয়েকমাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিতে প্রতারণার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ সেই মামলায় তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন৷ গৌতম দেব অবশ্য
    সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, নোবেল পুরস্কার জয়ী অমর্ত্য সেনের কথাতেই তিনি অঞ্জনকে কাজে নিয়েছিলেন৷ যদিও অমর্ত্যবাবু আগেই জানিয়েছেন, অঞ্জনবাবুকে
    তিনি চেনেন না৷

    এই দুজনের পর বৃহস্পতিবার গোয়েন্দারা জেরা করেন সারদা গোষ্ঠীর বোর্ড অফ ডিরেক্টরের সেক্রেটারি পৌলমী সেনকে৷ পৌলমী জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন৷ পৌলমীর কাছ থেকে অবশ্য পুলিশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পেয়েছে৷ এদিন পুলিশ বিষ্ণুপুরে সারদা
    গোষ্ঠীর জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র পেয়েছে৷

    এখনও পর্যন্ত পুলিশ যা কাগজপত্র পেয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে সংস্থার মোট ১৫৬ টি ব্যবসার মধ্যে ১৬ টি ব্যবসা লাভে চলত৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, শেষ
    দুবছরে সারদা গোষ্ঠীর প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা ফেরত দিতে হত, যা তাদের পক্ষে দেওয়া ছিল কার্যত অসম্ভব৷ জানা গিয়েছে, ১৭ থেকে ২৪ এপ্রিল মোট ১৩
    হাজার ভুয়ো পলিসি জমা করা হয়েছিল৷ আবার এপ্রিল মাসের প্রথম ১৫ দিনে জমা পড়েছিন ১৪ কোটি টাকার ভুয়ো ৩২ হাজার পলিশি৷ ফেব্রুয়ারি মাসে এক
    লক্ষ ৩০ হাজার পলিশি জমা পড়ে যার মূল্য ৬২ কোটি টাকা৷ রাজনৈতিক দলসহ প্রভাবশালীদের খুশি করতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে৷ পুলিশ
    জানিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ হিসেব নিকেশ দেখার জন্য সত্যম কাণ্ডে নিযুক্ত হিসাবরক্ষক সংস্থা প্রাইজ ওয়াটার কুপার্সকে দিয়ে অডিট করানো হবে৷

    গৌতম দেবের কথায়, 'সারদাকাণ্ড কেন কোনও কাণ্ডর গল্প শুনিয়ে কোনও লাভ হবে না৷ গত কয়েক দিনে যা মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন তার সবই সিবিআই তদন্ত
    আটকানোর জন্য৷ কিন্ত সিবিআই হবে৷ সিবিআই দেখবে কেন গৌতম, কে অসীম, কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷' অঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁর আপ্তসহায়ক নয় বলে দাবি
    করেছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, 'ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা৷ তবে ও আমরা আপ্ত সহায়ক হলে আমি পদত্যাগ করব দল থেকে৷ আমার
    আন্ডারে অনেক কর্মচারী ছিল৷ এর আগে ও ফোরটুয়েন্টি কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল৷' বিধাননগরের ডিসি-ডিডি অর্ণব ঘোষের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন
    গৌতম দেব৷ তাঁর হুঁশিয়ারি, 'ওরা তো আরও অনেক দিন চাকরি করবে৷ আমাদের আন্ডারেও চাকরি করতে হবে৷'


    অর্থলগ্নি সংস্থার সভায় হাজির থেকে প্রশস্তি গেয়েছেন পার্থও

    তাপস প্রামাণিক

    অর্থলগ্নি সংস্থার অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তাদের প্রশস্তি গেয়ে বিতর্কে জড়ালেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ কেন্দ্রের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের সন্দেহের তালিকায় থাকা
    লগ্নি সংস্থা প্রয়াগ গ্রুপের 'প্রোডাক্ট লঞ্চ' অনুষ্ঠানে একাধিকবার হাজির থেকেছেন পার্থবাবু৷ শুধু তাই নয়, শিল্পমন্ত্রীর মুখে সংস্থা সম্পর্কে ঢালাও প্রশস্তিও শোনা
    গিয়েছে৷

    প্রয়াগ কেমন সংস্থা? বোঝাতে একটি তথ্যই যথেষ্ট৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মঙ্গলবার রাতে বেহালায় প্রয়াগের দপ্তরে হানা দিয়ে বেশ কিছু
    মূল্যবান কাগজপত্র আটক করেছে পুলিশ৷ অফিসটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷

    সারদার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে৷ সারদার বার্ষিক সাধারণ সভায় সংস্থাকে দরাজ
    সার্টিফিকেট দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র৷ সারদার 'ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর' হিসেবে আর্থিক সংস্থার কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের৷ এরই মাঝে খোদ শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নতুন করে৷

    স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক যাদের কারবার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে, এ রকম একটি সংস্থার অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের সম্পর্কে প্রশস্তি
    গাওয়া শিল্পমন্ত্রীর পক্ষে আদৌ শোভা পায় কি? সারদার অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য যদি মদন মিত্রের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে, তা হলে পার্থবাবু বাদ যাবেন
    কেন, উঠছে এমন প্রশ্নও৷ পার্থবাবু অবশ্য 'এই সময়'কে জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবেই তিনি ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন৷ তাঁর কথায়, 'ওদের সম্পর্কে আমি
    কিছু জানতাম না৷ তা ছাড়া কে চোর আর কে সাধু, তা আমি জানব কী করে?' পাশাপাশি, এদিন এক শিলান্যাস অনুষ্ঠানে গিয়েও শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, এটাও
    আবার চিট ফান্ড নয় তো? আমার তো উভয় সঙ্কট৷ বেসরকারি সংস্থার অনুষ্ঠানে না-গেলে বলা হবে, আমি শিল্পে আগ্রহী নই৷ আবার গেলে ছবি দেখিয়ে চিট
    ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রচার করা হবে৷' 

    গত ১৬ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রয়াগের উত্পাদিত একটি খাদ্যপণ্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গে হাজির ছিলেন পার্থবাবু৷ ১ জুলাই উত্তর ২৪ পরগনায়
    নৈহাটিতে প্রয়াগের 'প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্ল্যান্ট'-এর উদ্বোধনেও উপস্থিত ছিলেন তিনি৷ ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই অর্নামেন্টাল অ্যান্ট ফ্রেশ ওয়াটার ফিশ ব্রিডিং
    অ্যান্ড হ্যাচিং ইউনিট (মাছ উত্‍পাদন) এবং বিলাসবহুল রিসর্ট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়৷ প্রয়াগের ভূয়সী প্রশংসা করে
    পার্থবাবু বলেন, 'আমার দেখে এটা ভীষণ ভালো লাগছে যে, প্রয়াগ এই অঞ্চলের উন্নতির লক্ষ্যে পরিকল্পনা মেনে কাজ করছে৷ এই ধরনের উদ্যোগ নিশ্চিত ভাবে
    গ্রাম-গঞ্জের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বেকারত্ব মোচনে প্রভূত সাহায্য করবে৷' সেই সঙ্গে পার্থবাবু জানান, 'রাজ্য সরকার হরিণঘাটায় একটি প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং
    ওয়াটার প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে৷ কিন্তু আমরা শুরু করার আগেই প্রয়াগ প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্ল্যান্ট চালু করে দিল৷ এর জন্য আমরা প্রয়াগ
    গ্রুপকে সাধুবাদ জানাচ্ছি৷' মঞ্চে আগাগোড়া হাজির ছিলেন প্রয়াগ গ্রুপের কর্ণধার বাসুদেব বাগচী৷

    সারদার মতোই কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তালিকায় সন্দেহজনক সংস্থার তালিকায় নাম রয়েছে প্রয়াগ গ্রুপের৷ মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে,
    বাজার থেকে টাকা তোলার জন্য যে সব নিয়মকানুন মানতে হয়, প্রয়াগ গ্রুপ তা ঠিকমতো মেনে চলছে না৷ এই ধরনের সংস্থাগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন
    করতে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক৷ তাতে পশ্চিমবঙ্গের মোট ৭৩টি অর্থ লগ্নি সংস্থার নাম রয়েছে৷ ৪৮ নম্বর নামটি হল প্রয়াগ
    অ্যাগ্রোটেক প্রাইভেট লিমিটেড৷ এর পরে যথাক্রমে প্রয়াগ ইনফোটেক প্রাইভেট লিমিটেড, প্রয়াগ ইনফ্রা রিয়েলটরস লিমিটেড এবং প্রয়াগ মাইক্রোফিনান্স৷ এগুলি সবই প্রয়াগ গ্রুপের শাখা সংস্থা।


    নিরপেক্ষ


    কোনও বিষয়েই নিরপেক্ষ তদন্ত কি ভারতে আদৌ সম্ভব? দেশের সাধারণ নাগরিকদের দীর্ঘদিনের এই প্রশ্নের প্রতি অবশেষে দৃষ্টি দিয়ে আলোড়ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে শীর্ষ আদালতের কাছে জমা দেওয়া সি বি আই-এর রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মন্ত্রী ও আধিকারিকদের দেখানো হয়েছিল জেনে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে কঠোর ভত্র্‌সনা করেছে আদালত৷ আদালতের মতে 'রাজনৈতিক নেতাদের শরণাপন্ন হওয়ার কোনও প্রয়োজন সি বি আই-এর নেই'৷ সি বি আই-এর অধিকর্তার অবশ্য বক্তব্য, সরকারেরই অংশ সি বি আই, তা কোনও স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা নয়৷ ক্ষমতাসীন দলের মর্জি মতো নিজের অবস্থান পরিবর্তন করা সি বি আইয়ের নতুন ব্যাধি নয়৷ কিন্ত্ত এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে এই বিশেষ ক্ষেত্রে একেবারে লক্ষ্মণ রেখা অতিক্রম করেছে সি বি আই৷ তার কারণ নিজস্ব রিপোর্ট তদন্তাধীন দপ্তরের মন্ত্রী ও আধিকারিকদের দেখানোর পরেও সি বি আই আদালতকে জানায় যে সে রিপোর্ট কাউকে দেখানো হয়নি৷ সঙ্গত ভাবেই শীর্ষ আদালত একে সি বি আইয়ের 'বিশ্বাসযোগ্যতার মারাত্মক অবক্ষয়' বলে বর্ণনা করেছে৷ তবে শুধু সি বি আই নয়, দেশের সর্বত্রই যে পুলিশবাহিনী স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথায় ওঠে-বসে এ কথা সর্বজনবিদিত৷ এ রাজ্যে ও দিল্লিতে ধর্ষণকাণ্ডে সে অভিযোগ আবারও উঠেছিল৷ কিন্ত্ত এখনও কোথাওই তা পরিবর্তনের কোনও আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা যায়নি৷ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কী ভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করে তোলা যায় তা নিয়ে অবিলম্বে আলোচনা শুরু হওয়া প্রয়োজন৷

    বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব এর মধ্যেই উঠে এসেছে৷ ২০০৬ সালেই সুপ্রিম কোর্ট তার একটি নির্দেশ জারি করার সময় পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত করতে কী কী করা যেতে পারে তা জানিয়েছিল৷ এরও আগে ১৯৯৭-এ প্রধান বিচারপতি জে এস বর্মা সি বি আইকে স্বাধীন করার বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন৷ কয়লা বণ্টন একটি স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে করার প্রস্তাবও সরকারের কাছে অনেক আগেই জমা পড়েছে৷ কিন্ত্ত এ সবকটি প্রস্তাবই রাজনৈতিক জাঁতাকলে আজও আটকে৷ সমস্যা হল, এগুলি কার্যকর করতে হলে গভীরে পরিবর্তন প্রয়োজন৷ কিন্ত্ত কেন্দ্রীয় বা রাজ্যস্তরে কোনও রাজনৈতিক দলই এই পরিবর্তন ঘটাতে উত্সুক নয়, কারণ প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে এ থেকে ফায়দা তুলতে আগ্রহী৷ সি বি আই বা পুলিশের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত করতে পারার রাজনৈতিক সুবিধা সম্পর্কে সব দলই বিলক্ষণ ওয়াকিবহাল৷

    যেহেতু ক্ষমতায় টিকে থাকাই এই সব দলের প্রধান উদ্দেশ্য, কোনও দলই এই সুযোগ নষ্ট হতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ নিতে চায় না৷ অথচ এর মূল্য দিতে হয় সামগ্রিক ভাবে সম্পূর্ণ সমাজকেই৷ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি ছাড়াও এর ফলে যে দেশের কী বিপুল আর্থিক ক্ষতি সাধিত হতে পারে তা টু-জি বা কয়লা কেলেঙ্কারিতেই পরিলক্ষিত হয়েছে৷ এই পরিস্থিতির যে কোনও ক্রমেই পরিবর্তন করা যায় না তা মোটেই নয়৷ তবে যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ কাজে উত্সাহী নয় নাগরিকদেরই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে দলগুলির উপর সামাজিক চাপ সৃষ্টি করার কথা ভাবতে হবে৷ কোনও বিষয়কে জনসমক্ষে তুলে এনে রাজনৈতিক দলগুলিকে সে বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করার একটি উপায় বিষয়টিকে নির্বাচনের ইস্যুতে পরিণত করা৷ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনে কী ভাবে এই বিষয়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে আনা যায় নাগরিক সমাজকে তাও ভেবে দেখতে হবে৷ এবং এই নাগরিক উদ্যোগ নিতে হবে অবিলম্বেই, নতুবা দেশের সামনে গভীর সঙ্কট৷

    http://eisamay.indiatimes.com/-/NUTRAL/articleshow/19857063.cms


    চিটফান্ড কাণ্ডে আরও একজন আত্মঘাতী হলেন। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে মুর্শিদাবাদে আত্মঘাতী হলেন একজন  এজেন্ট।  পশ্চিম মেদিনীপুরে টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন একজন আমানতকারী।  আজও জেলায় জেলায় বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারী ও এজেন্টরা। 

    বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেন মুর্শিদাবাদের সালার থানার প্রতিমা দাস। তিনি এটিএম কোম্পানির এজেন্ট। এটিএএম সংস্থার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তুলেছিলেন প্রচুর টাকা। টাকা ফেরত না পেয়ে প্রতিমা দাসের বাড়িতে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত পেতে কোম্পানির কাটোয়া অফিসে যোগাযাগ করেন প্রতিমা দাস। বুধবার অফিসে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবন্ধ। এরপরেই  হেনস্থার  ভয়ে রাতে ঘরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন প্রতিমা দাস।

     পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রোকোনা টাউন থানার জারা গ্রামের বাসিন্দা ভাগচাষী অঞ্জন দাস সারদা কোম্পানিতে চল্লিশ হাজার টাকা রেখেছিলেন। টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।  

    পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে এটিএম সংস্থার অফিসে টাকা ফেরতের দাবিতে আজ বিক্ষোভ দেখান কয়েকশ আমানতকারী। বিক্ষোভ দেখানো হয় রোজভ্যালি সমেত সানমার্গের ঝাড়গ্রাম অফিসে। 

    কোচবিহারে চিটফান্ড সংস্থা তোর্সার  অফিস সিল করে দিল পুলিস। আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে সংস্থার কোচবিহার জেলার ম্যানেজার দেবাশিস দাসকে। বৃহস্পতিবার জেলা সদরে তোর্সার অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্ট ও আমানতকারীরা। বিক্ষোভ দেখানো হয় জেলা শাসকের অফিসের সামনেও। 

    পশ্চিম মেদিনীপুরের রাধাকান্তপুরে রিয়েলবন্ড নামে একটি চিটফান্ড সংস্থার কর্মকর্তার বাড়িতে হামলা চালালেন আমানতকারী ও এজেন্টরা। লগ্নির টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে  বচসার মধ্যেই পালিয়ে যান রিয়েলবন্ড সংস্থার কর্মকর্তা প্রণব মাঝি ও তাঁর স্ত্রী সুচিত্রা মাঝি। সংস্থার কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের হাতাহাতিতে আহত হন প্রণব মাঝির বোন ও ভগ্নিপতি। আহত হন একজন এজেন্টও।  আটক করা হয়েছে চিটফান্ড সংস্থার কর্মকর্তার বোন ও ভগ্নিপতিকে।

    প্রতারণার অভিযোগে আরামবাগের গোঘাটে চিটফান্ড সংস্থার এক মালিককে গ্রেফতার করল পুলিস। ধৃতের নাম শ্যামসুন্দরদাস কর্মকার। সোনালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস নামে সংস্থার মালিক শ্যামসুন্দরদাস কর্মকারকে আরামবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হয়।  প্রতারণার অভিযোগে আরামবাগেই সিয়ারাম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস নামে আরও একটি ভুঁইফোঁড় সংস্থার মালিককেও গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। 


    সারদার পর আরও একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল শতাব্দী রায়ের। বোলপুরের একটি ভুঁইফোড় অর্থ লগ্নিকারী সংস্থার বিজ্ঞাপন করেছিলেন তিনি। এমনকী তৃণমূলের এই অভিনেত্রী সাংসদকে সামনে রেখেই অর্থলগ্নি সংস্থা স্কাইলার্ক দেদার টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ। সারদাকাণ্ডের পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সংস্থার কর্পোরেট অফিস। 

    সারদাকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক মন্ত্রী সাংসদের। সেই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ও। এবার চিটফান্ড ইস্যুতে আরও একটি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়াল তৃণমূলের এই অভিনেত্রী সাংসদের।

    দুবছর আগে বোলপুরের বাঁধগোড়া এলাকায় প্রথম অফিস খোলে স্কাইলার্ক গ্রুপ। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এবং ভিনরাজ্যেও দেদার টাকা তোলার পর বোলপুরের রামকৃষ্ণ রোডে সংস্থার কর্পোরেট অফিস খোলা হয়। স্কাইলার্কের সমস্ত বিজ্ঞাপনেই রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।  

     

    বিজ্ঞাপনে আকাশ ছোঁওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বীরভূমের সাংসদ। এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরতের আশা বিশ বাঁও জলে। কারণ, সারদাকাণ্ডের পর থেকেই বন্ধ সংস্থার অফিস। গা ঢাকা দিয়েছেন কর্ণধাররা।


    দক্ষিণবঙ্গে ব্যবসায় খুশি ছিলেন সুদীপ্ত সেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গের পারফরম্যান্সে তেমন সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই উত্তরবঙ্গে ছিল ডেয়ারি খোলার ছক। এক একটা কোম্পানি খুলে কুমির ছানার মতো তা দেখিয়ে ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা তোলার ছকটা অনেক জায়গাতেই কাজে লাগিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। তাতে চিট ফান্ডের ব্যবসাও বাড়ত। উত্তরবঙ্গে এই ডেয়ারি তৈরির ব্লু প্রিন্ট ২৪ ঘণ্টার হাতে। সিবিআই-কে লেখা চিঠিতে সারদা গোষ্ঠীর মালিক সুদীপ্ত সেন জানিয়েছিলেন তিনি ১৬০টি কোম্পানির মালিক। 

    সত্যিই কি এই সব কোম্পানিতে ব্যবসা হত?  তথ্য বলছে এই সব কোম্পানিকেই কুমিরছানার মত দেখিয়ে সারদা কর্ণধার বাজার থেকে টাকা তুলতেন। কখনও তাঁর টার্গেট ছিল গরিব সাধারণ মানুষ, কখনও ব্যাঙ্ক আবার কখনও বা ছোট-বড় কোনও শিল্পপতি। তেমনই একটি সংস্থা পোলবার গ্লোবাল অটোমোবাইলস। 

    সারদা গোষ্ঠীর চিট ফান্ডের জাল বিছানোর পরবর্তী টার্গেট ছিল উত্তরবঙ্গ। তাই সুদীপ্ত সেনের কুমিরছানা দেখানোর এই খেলায় নবতম  সংযোজন হতে চলেছিল বানারহাটে ডেয়ারি ব্যবসা। সংস্থার নাম দেওয়া হয়েছিল আম্মা ডেয়ারি। গত বছরের অগাস্টের শুরু হয় নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা। সিদ্ধান্ত হয়েছিল সারদা আম্মা ডেয়ারির নামে নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার। ঠিক হয়েছিল লোককে বোঝান হবে, গুজরাটের এক দুগ্ধ প্রকল্পের আদলে এই প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। আর তা দেখিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে সাধারণ মানুষের মধ্যে চিট ফান্ডের ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত ঘটানো হবে। ওই ডেয়ারি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল সারদা কর্ণধারের মাথায়।


    বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদা লাটে ওঠার পর  রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত৷ কোথাও টাকা ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ৷ কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যু৷ আবার কোথাও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার লগ্নি সংস্থার কর্ণধার৷


    দুর্গাপুরে রোজভ্যালির অফিসে এদিন বেধে যায় বচসা-গণ্ডগোল৷ অভিযোগ, আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইলেও তা দিচ্ছে না সংস্থা৷ তিন মাস পরে আসতে বলা হচ্ছে৷ সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিচ্ছেন এজেন্টরা৷ 
    টাকা তোলার জন্য লম্বা লাইন পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে রোজভ্যালির অফিসে৷ আমানতকারীদের সঙ্গে কর্মীদের ধ্বস্তাধস্তিও বেধে যায়৷ অন্যদিকে, টাকা ফেরতের দাবিতে লগ্নি সংস্থা এটিএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজের ঝাড়গ্রাম অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা৷  বিক্ষোভের পরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ লগ্নি সংস্থা আই কোরের ঝাড়গ্রাম অফিসও৷  
    পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় রোজভ্যালির অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসিআই-এর ছাত্র সংগঠন ডিএসও৷ অভিযোগ, টাকা তুলতে গেলে ২৫ শতাংশ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে৷ ডিএসও কর্মীদের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি হয় রোজভ্যালির এজেন্টদের৷ 
    পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষীরপাইয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা অরুণ দাস নামে এক প্রৌঢ়ের৷ পরিবারের দাবি, মেয়ের বিয়ের জন্য জমি বিক্রি করে সারদায় টাকা রাখেন৷ বিপর্যয়ের পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন৷ আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁর চিকিত্‍সা চলছে ক্ষীরপাই হাসপাতালে৷
    হুগলির আরামবাগে গ্রেফতার সোনালি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে লগ্নি সংস্থার কর্ণধার৷ ধৃতের নাম শ্যামসুন্দর দাস কর্মকার৷
    মুর্শিদাবাদের সালারে অস্বাভাবিক মৃত্যু গৃহবধূর৷ পরিবারের দাবি, প্রতিমা দাস এটিএম গ্রুপ নামে একটি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন৷ কয়েকদিন ধরে বাড়িতে টাকা ফেরতের দাবিতে চড়াও হচ্ছিলেন আমানতকারীরা৷ সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মঘাতী হন৷

    টাকা ফেরতের দাবিতে কোচবিহারে তোর্সা লগ্নি সংস্থার অফিসের সামনে বিক্ষোভ আমানতকারীদের৷ বিক্ষোভ জেলাশাসকের দফতরের সামনেও৷ অভিযোগ, টাকা তোলার সময় লিফলেটে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ও ছবি ব্যবহার করত সংস্থাটি৷ তোর্সার কোচবিহার শাখার ম্যানেজার দীপঙ্কর দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ 
    দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের সারদার অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত নথিপত্র ও কম্পিউটার৷ উদ্ধার প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা ও অ্যালবাম৷ 

    http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/36262-2013-05-02-14-20-33

    সারদার কলকাতা: লাভের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত কয়েক লাখ মানুষ৷ হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতির পাশাপাশি এই কেলেঙ্কারি আঘাত হেনেছে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসেও৷ সারদাকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে অন্যান্য ছোট-বড় লগ্নি সংস্থাগুলির ওপর৷ তার প্রমাণ গত কয়েকদিনের ছবি৷ রাজ্যজুড়ে কোথাও লগ্নি সংস্থার দফতরে বিক্ষোভ-ভাঙচুর, কোথাও বা মেয়াদ ফুরনোর আগেই টাকা ফেরত চাইতে ভিড়৷ প্রকাশ্যে আসছে একাধিক প্রতারণার অভিযোগও৷ 
    ২৫ এপ্রিল শ্যামনগরের রামকৃষ্ণ পল্লির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে সানমার্গ সংস্থার এক কর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পুলিশের দাবি, তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি বিস্কুটের পেটিতে রাখা ৭২ লক্ষ টাকা৷ ২৭ এপ্রিল টাকা ফেরতের দাবিতে মুর্শিদাবাদের রানিনগরের পীরতলাতে 'জেম ড্রিম অফ ইন্ডিয়া নামে' লগ্নি সংস্থার সামনে বিক্ষোভ দেখান এজেন্ট ও আমানতকারীরা৷ ভাঙচুর করা হয় সংস্থার কর্তার বাড়িতে৷ ২৯ এপ্রিল টাকা ফেরতের দাবিতে বেলেঘাটায় সানমার্গ সংস্থার দফতরের সামনে জড়ো হন এজেন্ট ও আমানতকারীরা৷ শুক্লা সাহা নামে এক এজেন্টের নেতৃত্বে প্রায় এক কোটি টাকা তোলা হয়েছিল বলে তাঁরা অভিযোগ করেন৷ ২৯ এপ্রিল হুগলির আরামবাগে ইউরো গ্রুপের অফিস সিল করে দেয় পুলিশ৷ আমানতকারীদের অভিযোগ, তাঁদের মেয়াদ উত্তীর্ণ টাকা ফেরত দেয়নি ওই সংস্থা৷ সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় অফিসটি৷ শুধু প্রতারণার অভিযোগই নয়, লগ্নি সংস্থার সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের যোগাযোগের অভিযোগেও সরব স্থানীয় বাসিন্দারা৷ ৩০ এপ্রিল
    দুর্গাপুরের বাসিন্দা অজিত দাস অভিযোগ করেন, ২০০৯ সাল থেকে কিস্তিতে টাকা জমা রাখেন তিনি৷ সংস্থার তরফে জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, হঠাত্‍ সংস্থাটি দফতরে তালা ঝুলিয়ে চম্পট দেয়৷ অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সংস্থার দফতরে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ 
    ৩০ এপ্রিল নদিয়ার কোতোয়ালিতে ডিওয়াইএফআই কৃষ্ণগর উত্তর লোকাল কমিটির সদ্যস সুজিত মিত্রর বিরুদ্ধেই লগ্নি সংস্থার নামে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে৷ দলীয় নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছে, প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ ৩০ এপ্রিল হুগলির গোল্ড মাইন লগ্নি সংস্থায় আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইতে গেলে কর্তারা তা দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ৷ এই ঘটনা গড়ায় বচসা, মারামারি পর্যন্ত৷ আজ লগ্নির নামে প্রতারণার অভিযোগে কলকাতায় গ্রেফতার করা হয় আস্থা ইনফ্রাকন নামে এক লগ্নি সংস্থার দুই অধিকর্তাকে৷ আজই হুগলির আরামবাগে একটি লগ্নি সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ৷ সংস্থার এক কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন৷ 

    সারদায় লাভের লোভে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ যার জেরে গত কয়েকদিনে কার্যত বিপর্যস্ত অন্য লগ্নি সংস্থাগুলিও৷ কমছে লগ্নি৷ ফেরত মিলবে তো টাকা? নাকি সারদার মতো সবই যাবে জলে? সারদাকাণ্ডের পর প্রতি মুহূর্তে মুখোমুখি হতে হচ্ছে অসংখ্য প্রশ্নের৷

    এবিপি আনন্দ


    অন্যায় করি না বলে আক্রমণ বিরোধীদের
    সারদা কাণ্ডে নিজের এবং দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি মেরামতে এ বার নিজেই মাঠে নামলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্যামবাজার মোড়ে জনসভা করে বার্তা দিলেন, তিনি নিজে কোনও অন্যায় করেন না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না। দলের কেউ অন্যায়ে জড়িত থাকলে তাঁকে তিনি আড়ালও করবেন না।
    সারদা কাণ্ডের পরে এই প্রথম জনতার দরবারে এসে নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়, সর্বভারতীয় তৃণমূলের সভানেত্রী হিসাবেই পেশ করেছেন মমতা। প্রায় সওয়া এক ঘণ্টা ধরে একাই বক্তৃতা দিয়েছেন। আর সেই বক্তৃতার পরতে পরতে বুঝিয়েছেন, বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস সারদা কাণ্ডের জন্য যতই তাঁর দল ও সরকারকে দায়ী করার চেষ্টা করুক, কালি তাদের গায়েও কিছু কম নেই।
    প্রায় ১৫ বছর আগে যে শ্যামবাজার মোড়ে জনসভা করে যাত্রা শুরু করেছিল তৃণমূল, সারদা কাণ্ডের জেরে কোণঠাসা পরিস্থিতিতে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করলেন তৃণমূল নেত্রী। সততাই তাঁর রাজনীতির মূলধন দাবি করে মমতা বলেন, "আমি টাকা রোজগারের জন্য, ধান্দাবাজির জন্য আসিনি। মানুষের কাজ করতে এসেছি। আমার দ্বারা কোনও অন্যায় হবে না। আমি আমাকে গ্যারান্টি দিয়ে গেলাম।" 
    পাশাপাশি, সারদার কাছ থেকে আর্থিক সুযোগসুবিধা যে সিপিএম-ও নিয়েছে, তা প্রমাণ করতে এ দিন আটঘাট বেঁধেই মঞ্চে উঠেছিলেন মমতা। সিপিএমের দলীয় মুখপত্র থেকে শুরু করে তাদের প্রকাশনার টেলিফোন-নির্দেশিকা তুলে ধরে সারদার বিজ্ঞাপন দেখান তিনি। অভিযোগ করেন, সিপিএমের আমলেই রাজ্যে বেআইনি লগ্নি সংস্থার রমরমা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি কংগ্রেসকে দুষে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার লগ্নি সংস্থাগুলিকে মদত দিয়েছে। এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিতর্কিত একটি আর্থিক সংস্থার কর্তার ছবি দেখিয়েও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, "তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!" 
    দলীয় মুখপত্রে সারদার বিজ্ঞাপন প্রকাশ নিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য বলেছেন, "মুখ্যমন্ত্রী যে সংস্থার বিজ্ঞাপন ছাপার কথা বলেছেন, তা সব সংবাদপত্রেই ছাপা হয়েছে। ওই সংস্থার আমানতকারীদের অর্থ সংগ্রহের বিজ্ঞাপন কখনওই আমরা ছাপিনি।" তুলনায় তাঁদের দলীয় মুখপত্রে ওই সংস্থার বিজ্ঞাপন কম ছাপা হয়েছে বলে বিমানবাবু দাবি করেছেন।
    আক্রমণাত্মক তৃণমূলনেত্রী। বৃহস্পতিবার শ্যামবাজারের জনসভায়। ছবি: দেবাশিস রায়।
    সিবিআই তদন্তের দাবি নিয়েও এ দিন বিরোধীদের এক হাত নিয়েছেন মমতা। সিবিআই-এর উপরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলবারই কড়া মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মন্তব্যকেই হাতিয়ার করে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন তৃণমূল নেত্রী। পাশাপাশি সিপিএম-কে কাঠগড়ায় তুলে বলেন, "এত দিন এ নিয়ে (বেআইনি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে) রাজ্যে কড়া আইন সিপিএমের সরকার করেনি কেন? আমরা এক দিনের মধ্যে বিশেষ অধিবেশন করিয়ে বিল পাশ করিয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছি।" তাঁর প্রশ্ন, "যাঁরা আজ সিবিআই, সিবিআই করে নৃত্য করছেন, তাঁরা কোনও ব্যবস্থা আগে নেননি কেন?" 
    ঘটনাচক্রে এ দিনই হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার বলেছে, সারদা কাণ্ডে তদন্ত যে ভাবে চলছে, তাতে সিবিআই-কে ডাকার কোনও প্রয়োজন নেই। লগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজ রুখতে রাজ্য সরকার যে আন্তরিক, তা বোঝাতে ইতিমধ্যেই তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে জেরা করেছে বিধাননগর পুলিশ। সারদার বিভিন্ন অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পাশাপাশি কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি লগ্নি সংস্থায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশেষ অধিবেশন ডেকে পাশ করা হয়েছে কড়া আইন। এই সব কাজে 'ব্যস্ত' ছিলেন বলেই এত দিন বিরোধীদের কুৎসার জবাব দেওয়ার সময় পাননি বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন মমতা। 
    বিরোধীদের হাজার আক্রমণ তৃণমূলের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না বলেই এ দিন দাবি করেছেন দলনেত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, "দল এমন ভাবে তৈরি করেছি যে, কোনও দিনই তা উঠবে না। সিপিএম আমাকে খুন করলেও দল উঠবে না। যত দিন বেঁচে থাকব আপনাদের (মানুষের) সঙ্গেই থাকব।" দলে গুঞ্জন, মমতার পরে তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা মহলে ইতিমধ্যেই যে প্রশ্ন উঠছে, এ দিন কৌশলে তারই জবাব দিয়ে রাখলেন নেত্রী। 
    সারদা কাণ্ডের পরে মমতার দল, পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে একের পর এক তোপ দেগেছেন সিপিএম নেতারা। এমনকী, এ দিন তৃণমূল নেত্রীর সভা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব লগ্নি সংস্থার বেআইনি কাজকর্ম নিয়ে ফের মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে অভিযোগ তুলেছেন।
    আমার দ্বারা কোনও
    অন্যায় হবে না। আমি
    আমাকে গ্যারান্টি
    দিয়ে গেলাম।
    দল এমন ভাবে
    তৈরি করেছি যে,
    কোনও দিনই
    তা উঠবে না।
    আমি মনে
    করি, চেয়ারটা
    অস্থায়ী। মানুষের
    বিশ্বাসটাই স্থায়ী।
    দলের কেউ অন্যায়
    করলে ছাড়ি না।
    বাড়ির কেউ অন্যায়
    করলেও ছাড় নেই।
    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
    যে আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেছেন, "আমাকে কেউ বোল্ড করতে এলে আমি ওভার বাউন্ডারি মারি।" তার পর সভামঞ্চে অভিষেকের উপস্থিতিতেই তিনি বলেন, "দলের কেউ অন্যায় করলেও আমি ছাড়ি না। বাড়ির কেউ অন্যায় করলেও ছাড় নেই।" এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি গার্ডেনরিচ কাণ্ডে কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল ও মাঠপুকুর কাণ্ডে শম্ভুনাথ কাওকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। এমনকী, মঞ্চের নীচে বসে থাকা ভাঙড় কাণ্ডে জড়িত আরাবুল ইসলামকে দেখিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, "ওই যে আরাবুল বসে আছে ওকেও ৪২ দিন জেল খাটতে হয়েছে।" তাঁর দলে যে অন্যায়কারীদের স্থান নেই, তা বোঝাতে মমতা বলেন, "ঝুড়িতে এক কেজি লঙ্কার মধ্যে একটি লঙ্কা খারাপ হলে তা বেছে ফেলে দেওয়াই উচিত। দলে সবাই তো খারাপ নয়। এক জন, দু'জন সিপিএম পার্টি থেকে এল বা কোথাও থেকে এল, তারা খারাপ হলে গোটা দলটাই খারাপ হয়ে গেল!" 
    তবে সারদা-কাণ্ডে, বিশেষত তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ-সহ কয়েক জনের নাম জড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দলের অনেকেই মনে করেন। এমনকী মমতার ভাবমূর্তিকেও আঘাত করেছে বলে দলের অন্দরেই কথা উঠেছে। (কুণালকে অবশ্য এ দিন সভার ধারেকাছে দেখা যায়নি।) 
    ভাবমূর্তির সেই ক্ষতি মেরামত করতে এ দিন শ্যামবাজার মোড়ের সভার পর শনিবার পানিহাটিতে সভা করবেন মমতা। বস্তুত পানিহাটিতে সিপিএমের সভা থেকেই তৃণমূল নেত্রীর ভাইপোর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছিলেন গৌতমবাবু। পানিহাটির সভার আগে আজ, শুক্রবার ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের সাধারণ পরিষদের সভা ডেকেছেন মমতা। সেখানে তিনি কী বলবেন তার আভাস এ দিন শ্যামবাজারের সভায় খানিকটা পাওয়া গিয়েছে। দলের নেতা-কমীদের 'আরও নম্র ও সুশৃঙ্খল' হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। আজকের দলীয় বৈঠকে নেত্রী আরও কড়া কোনও দাওয়াই দেন কি না, সেটাই দেখার।


    পুরনো খবর: 
    http://www.anandabazar.com/3raj1.html

    দাবি সঞ্চয়িতা-ওভারল্যান্ড কাণ্ডের গোয়েন্দাদের
    ফৌজদারি অস্ত্র ছিলই, নড়ে বসেনি রাজ্য
    সারদা-কাণ্ডে দোষীদের কড়া সাজা দেওয়ার আইনি অস্ত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার যথাসময়ে তা প্রয়োগ করেনি বলে মনে করছেন সঞ্চয়িতা-কাণ্ড এবং ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ। 
    ওই অফিসারদের দাবি, ভারতীয় দণ্ডবিধির যে সমস্ত আইন রয়েছে, তাতেই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যায়, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা যায়, বাজার থেকে তাদের টাকা উদ্ধারও করা যায়। এর জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন নেই। অফিসারেরা জানিয়েছেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করেই সঞ্চয়িতা কাণ্ডে বাজার থেকে ৪০ শতাংশ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে ক্রোক করা হয়েছিল অভিযুক্তদের দেড় হাজার বিঘার বেশি জমি। সঞ্চয়িতার মামলা এখনও চলছে। দীর্ঘ আইনি জটিলতার জেরে ধৃত ১৩০ জনের মধ্যে কারও এখনও সাজা হয়নি। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে ধৃত পাঁচ জনের কাউকেই কড়া শাস্তি দেওয়া যায়নি ঠিকই, কিন্তু সেটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে। অফিসাররা বলছেন, অভিযুক্তদের এখনও সাজা দেওয়া না গেলেও সঞ্চয়িতা এবং ওভারল্যান্ড-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে থানায় এফআইআর করেছিল। তার সুফলও মিলেছে এবং সেটা হয়েছে বর্তমান ফৌজদারি আইনের জেরেই। 
    ওই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সঞ্চয়িতার ক্ষেত্রে এফআইআর করেছিল অর্থ দফতরের 'ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন'। ওভারল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা করেছিল রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডি। অথচ সেবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেও রাজ্য সরকারের কোনও সংস্থাই সারদা-র বিরুদ্ধে এফআইআর করেনি। তারা অপেক্ষা করেছে একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বেতন না পাওয়া কর্মীদের দায়ের করা প্রতারণার অভিযোগের জন্য। এ ক্ষেত্রে অন্যের দায়ের করা অভিযোগের উপরেই রাজ্য সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে। ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারীরা জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৭ ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল সিআইডি। সেই ধারায় (নকল কাগজ বানিয়ে প্রতারণার অভিযোগ) দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। অথচ রাজ্য সরকার সারদা-কাণ্ডে এই আইনি অস্ত্রটাই প্রয়োগ করেনি বলে তাঁদের মত। প্রসঙ্গত, ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারী দলের প্রধান তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এখন রাজ্যের মন্ত্রী। 
    ওই মামলায় উপেনবাবুর এক সহকারীর কথায়, "আমরা ওভারল্যান্ডের মালিক, তাঁর স্ত্রী-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিলাম। কত জনকে সাজা দিতে পেরেছিলাম সেটা বড় কথা নয়। আমরা আমাদের বাহিনীর সাহায্যে গোটা প্রতারণা চক্রটাকে প্রকাশ্যে এনেছিলাম। ১ হাজার ৫৪৬ বিঘে জমি ক্রোক করেছিলাম।" 
    ওভারল্যান্ড-কাণ্ডের তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এক বিধবার গচ্ছিত টাকা একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ফেরত দিচ্ছে না বলে ভবানী ভবনে অভিযোগ আসে। বেশ কিছু মানুষ সোনারপুরে ওই সংস্থার অফিসে ভাঙচুর চালায়। তৎকালীন ডিআইজি (সিআইডি) দুই অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাঁরা ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলেন। কাগজপত্র দেখে স্থানীয় থানায় ডায়েরি করে ঘটনার তদন্তভার নিজের হাতে নিয়ে নেয় সিআইডি। ওই অর্থলগ্নি সংস্থাটি যে প্রতারণা করছে, তদন্তে তা বুঝতে পারেন গোয়েন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতার করা হয় ওভারল্যান্ড-সহ বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থার মালিককে। ওভারল্যান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে উদ্ধার হয় টাকা, সম্পত্তি। উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ এবং কত মানুষ টাকা ফেরত পেয়েছেন, সে বিষয়ে অবশ্য তদন্তকারীরা কিছু জানাতে পারেননি। এক অফিসার বলেন, "হাইকোর্ট রিসিভার বসিয়েছে। পুরো বিষয়টি রিসিভারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।"
    সঞ্চয়িতার তদন্ত কী ভাবে শুরু হয়েছিল? তদন্তকারী অফিসার তুষার ভট্টাচার্য জানান, রাজ্য সরকারের কাছে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকায় ১৯৭৯-তে সঞ্চয়িতার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র। তিনি তাঁর দফতরের অধীন 'ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন'-এর একটি দলকে তদন্তে নামান। গ্রেফতার করা হয় ১৩০ জনকে। তুষারবাবুর কথায়, "আমরা যেটুকু করেছিলাম, তা ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারার সাহায্যেই। নতুন আইনের দরকার হয়নি।" তাঁর বক্তব্য, বাজার থেকে সঞ্চয়িতা যে পরিমাণ অর্থ তুলেছিল, তার প্রায় ৪০ শতাংশ উদ্ধার করা গিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত অর্থ বিলি করা যায়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে রিসিভার বসানো হয়েছিল। রিসিভারই যা বলার বলবেন। 
    সারদা-কাণ্ডে কেন নিজে থেকে অভিযোগ দায়ের করল না রাজ্য? স্বরাষ্ট্র দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, "আগের দু'টি ঘটনার সঙ্গে সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতটা আলাদা। সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের কাছে আগে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। যে মুহূর্তে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্য ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকার সঠিক পথেই চলেছে।" 


    তিন কেলেঙ্কারি
     
    সঞ্চয়িতা-কাণ্ড অর্থ দফতরের ব্যুরো
    অফ ইনভেস্টিগেশন
    ১২০ (বি) (ষড়যন্ত্র),
    ৪০৬ (ষড়যন্ত্র করে প্রতারণা),
    ৪২০ (প্রতারণা)
    ওভারল্যান্ড-কাণ্ড সিআইডি ১২০ (বি) (ষড়যন্ত্র),
    ৪০৬ (ষড়যন্ত্র করে প্রতারণা),
    ৪২০ (প্রতারণা),
    ৪৬৭ (নকল কাগজ বানিয়ে 
    প্রতারণা),
    ৪৬৮ (জালিয়াতি করে প্রতারণা)
    সারদা-কাণ্ডএকটি চ্যানেলের
    সাংবাদিকেরা
    ৪০৬ (ষড়যন্ত্র করে প্রতারণা),
    ৪২০ (প্রতারণা)
    ৫০৬ (ভয় দেখানো)

    http://www.anandabazar.com/3raj2.html

No comments:

Post a Comment