দেশজুড়ে এই দিনটিকে 'যুব দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। বেলুড় মঠেও এদিন মহাসমারোহ। এখানেও অনুষ্ঠানের সূচনায় ছিল মঙ্গলারতি। তার পর চলে পূজাপর্ব। গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন আয়োজন করেছে বিশেষ শোভাযাত্রার। গোলপার্ক থেকে শোভাযাত্রা পৌঁছয় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। বিভিন্ন স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শোভাযাত্রায় অংশ নেন সাধারণ মানুষও। ছিল সুসজ্জিত ট্যাবলো।
নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে স্বামী বিবেকানন্দকে আজ দিনভর শ্রদ্ধা জানালেন মানুষ। সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজীর জন্মভিটেয় যায় প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। গোলপার্ক থেকে নরেন্দ্রপুর পর্যন্ত শোভাযাত্রায় পা মেলান অনেকেই। সিমলা স্ট্রিটের এই বাড়িতেই শৈশব কেটেছে নরেন্দ্রনাথ দত্তের। বাবা বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যুর পর মা এবং ছোট ভাইদের রক্ষা করার জন্য নরেন্দ্রনাথের লড়াই শুরু এ বাড়ি থেকেই। অনেকদিন পর এই বাড়ি থেকেই একদিন পৃথিবী জয়ের উদ্দেশ্যেই বেরিয়ে পড়েছিলেন বিশ্বপথিক স্বামী বিবেকানন্দ।
শনিবার সকাল থেকেই সিমলা স্ট্রিটের বাড়িতে ছিল ভিড়। প্রাক্তন রাজ্যপাল থেকে সাংসদ, স্কুল পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ, যুগনায়ককে শ্রদ্ধা জানান সকলেই। এরপর শোভাযাত্রা বের হয় সিমলা স্ট্রিটের বাড়ি থেকে। স্বামী বিবেকানন্দর জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সকাল সাতটায় গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন থেকেও এক বিশেষ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রা যায় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন পর্যন্ত।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব এবং সংগঠনের তরফে শনিবার সারাদিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। দক্ষিণ কলকাতার একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে শনিবার দিনভর বেশ কয়েকটি আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কেমন হল এই আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান?
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধ শতবর্ষের অনুষ্ঠানজুড়ে দেখা গেল টলিউডের তারকাদের। সবচেয়ে বড় ভূমিকায় ছিলেন অভিনেতা দেব। বিবেকানন্দের বেশে দেখা যায় তাঁকে। দেব ছাড়াও টলিউডের আরও বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী গোটা স্টেডিয়ামটি ঘোরেন।
হিরণ, রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, রাইমা সহ টলিউডের প্রথম সারির বহু মুখকেই এদিনের অনুষ্ঠানে দেখা যায়।
নাচগানের অনুষ্ঠানও ছিল চোখে পড়ার মতো। সরকারি সূত্রের খবর, শুধুমাত্র নাচের অনুষ্ঠানের জন্যই ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। আজকের গোটা অনুষ্ঠানটির জন্যই বড় টাকা খরচ করেছে সরকার।
দেখুন বিবেকানন্দের ভূমিকায় দেবকে
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে যুবভারতীতে বিশ্ব যুব উত্সব পালিত হল৷ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হল বিশ্ব যুব উত্সব৷ উত্সবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন টালিগঞ্জের অভিনেতা - অভিনেত্রীরাও৷
স্বামীজির সাজে অভিনেতা দেব থেকে শুরু করে গোটা টলিউডই নেমে এসেছিলেন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে৷ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও অংশ নিয়েছিলেন অনুষ্ঠানে৷ স্বামী বিবেকান্দের ১৫১ তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে এই যুব উত্সবের আয়োজন করে ছিলেন রাজ্য সরকারের৷
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/32407-2013-01-12-10-38-35
কে ছিলেন না?
বিবেকানন্দর চরিত্রে ও সজ্জায় বাংলার হালফিলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক দেবের নেতৃত্বে গেরুয়ায় মোড়া দেড়শ 'বিলে'৷ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে আজকের বিবেকানন্দকে চাক্ষুস করে করতালিতে ফেটে পড়া লক্ষাধিক মানুষজনের চক্ষুচড়ক গাছ৷ কারণ, শান্ত সমাহিত বিবেকানন্দর ভূমিকায় তাকে দেখে কে বলবে, এই সেই পাগলু সিরিজের অ্যাকশন হিরো৷
খরচ হয়েছে বিস্তর৷ সুব্রত মুখ্যোপাধ্যায় ছাড়া রাজ্য মন্ত্রিসভার সব সদস্যই মঞ্চে হাজির ছিলেন৷ ধূমধাম করে স্বামী বিবেকানন্দর ১৫১তম জন্মদিবস পালন করতে গিয়ে লক্ষাধিক মানুষকে বাসে করে আনা হয়েছে৷ ৪০ মিনিটের সাংস্কতিক অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা কার্যত এক ঘন্টা পেরিয়ে যায়৷ পাঁচ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ও সাংস্কৃতিক কর্মী এদিন মাঠে নেমেছিলেন৷ সেইসঙ্গে কয়েক হাজার পুলিশ৷ বাচ্চাদের সঙ্গে জঙ্গলমহল থেকে আনা পুলিশ কর্মীদের ভালো করে খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া ও পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্রকে মঞ্চেই নির্দেশ দেন৷ এমনকী অনুষ্ঠান শেষে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই অনুষ্ঠান সরাসরি চাক্ষুস করার জন্য জঙ্গলমহল থেকে ২৫ হাজার মানুষকে সরকারি উদ্যোগে আনা হয়েছে৷ এদিন দুপুর বারোটা থেকে বিকাল চারটে পর্যন্ত বাইপাশ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল৷ চিংড়িঘাটা থেকে দত্তাবাদ পর্যন্ত রাস্তায় সাড় সাড় দিয়ে সরকারি, বেসরকারি সাধারণ ও মিনিবাস দাঁড়িয়ে যায়৷
কিন্ত্ত তা নিয়ে যাবতীয় চাপানউতোর ছাপিয়ে মন কেড়েছে তারকাদের চাঁদের হাট৷ অনেকটা সাবেক বাঙালিনির গয়না ও শাড়ির সাজে মাঠ পরিক্রমা করেছেন রাইমা, শুভশ্রী, তনুশ্রী, রিমঝিম, চূর্ণী এবং সোনালিরা৷ আর সে সময় গোটা মাঠ উতরোল হয়েছে৷ তারকা জ্বরের তাড়নায়৷ একই প্রতিক্রিয়া দেবকে ঘিরে৷ মনোহরণের প্রতিযোগিতায় পাঞ্জাবি-ধুতির সাজে পিছিয়ে ছিলেন না ব্যোমকেশ বক্সির আবির, হিরণ, কাঞ্চন, রাজ ও রাজীব ও সাহেবরা চক্রবর্তীরা৷ আর মঞ্চে ছিলেন দীপঙ্কর দে, হরনাথ চক্রবর্তী, ইন্দ্রনীল সেন এবং অর্পিতা ঘোষরা৷
এক কথায় মা-মাটি-মানুষের সরকারের নেত্রী মমতা টলিউডকে কাজে লাগিয়েছেন পুরোদস্ত্তর৷ সেইসঙ্গে এদিনের অনুষ্ঠানে দর্শক গ্যালারি ভরাতে যে সব সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রান্ত স্কুল থেকে পড়ুয়াদের আনা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পরামর্শে মঞ্চ থেকেই শুধুমাত্র তাদের জন্যই সোমবার স্কুল ছুটির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, সবে একটা আন্তর্জাতিক উত্সবের সূচনা হল৷ আগামী বছর আরও বড় আকারে বিশ্ব যুব উত্সব করার প্রতিশ্রীতি দেন তিনি৷ এদিন অনুষ্ঠানের সূচনাতেই মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে ভালো হওয়ার ও ভালো থাকার শপথ বাক্য পাঠ করান৷ স্বয়ঁ রাজ্যপালরেও উঠে দাঁড়িয়ে সেই শপথ পাঠ করতে হয়৷ যদিও রাজ্যপাল অবশ্য তাঁর ভাষণ শেষে ইংরেজিতে আবার একই শপথ বাক্য সবাইকে পাঠ করান৷
আবার ওদিকে গণসংহার সংস্কৃতির বধ্যভূমেও হিন্দুত্বেরই জয়জয়কার !
গুজরাটের সাফল্য ভারতের সাফল্য। ভাইব্রান্ট গুজরাট সম্মেলনে এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিনিয়োগকারীদের স্বতস্ফূর্ত যোগদানে এবারও যথারীতি সফল গুজরাটের শিল্প সম্মেলন। দ্বিতীয় দিনেই ২৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব সহ ১২টির বেশি মউ স্বাক্ষর হয়েছে।
সম্মেলনের প্রথম দিনটা কেটেছিল শিল্পমহলের প্রশস্তি আর অভিনন্দন নিতেই। শনিবার থেকেই বিনিয়োগ টানতে পুরোদমে নেমে পড়ল টিম মোদি। এদিনই পেট্রোরসায়ন ও শক্তিক্ষেত্রে ছাব্বিশ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব সহ মোট বারোটি মউ স্বাক্ষর হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে মুকেশ অম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও টাটা গোষ্ঠীও। মোদির দাবি, এই সাফল্য শুধু গুজরাটের নয়, গোটা দেশের।
তবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গুজরাটের অগ্রগতির গতি কিছুটা কম। চিনা উত্পাদনকারীদের দাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্টই কোণঠাসা তারা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বৃদ্ধির চেনাছন্দে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে গুজরাট সরকার। শিল্পে অগ্রগতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মোদি, পরবর্তী সম্মেলনের জন্যও আগাম আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের।
ভারী শিল্প বিনিয়োগ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উন্নয়নের পরিকল্পনার পাশাপাশি, পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও কিছু এবার মউ স্বাক্ষর করেছে গুজরাট সরকার। ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয়েছে জল পরিশোধন সংক্রান্ত চুক্তি। বিশেষ বিমান পরিবহণের বিষয়ে গুজরাট সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে থাই এয়ারওয়েজ।
রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, তাতে কি যবনিকা পড়তে চলেছে? শনিবার স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠান সেই জল্পনাই উস্কে দিল। এক মঞ্চে পাশাপাশি দেখা গেল রাজ্যপাল আর মুখ্যমন্ত্রীকে।
দেখুন একমঞ্চে রাজ্যের দুই প্রধানকে
গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে দু'তরফ থেকে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি আসছিল। রাজ্যপাল রাজ্যে গুন্ডারাজ চলছে বলে মন্তব্য করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানোর কথা বলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই আজ একই মঞ্চে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে। প্রায় তিন ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে অনুষ্ঠান দেখেন রাজ্যপাল। দুজনকে বারবার কথা বলতেও দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় রাজ্যপালের প্রশংসাও। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে রাজ্যপালের সঙ্গে বিরোধ কমাতে স্বয়ং উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই সময় : চারদিক থেকে থেকে হাজার চুরাশির সমালোচনায় বিদ্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসুস্থ মহাশ্বেতা দেবিকে জন্মদিনের 'আগাম' শুভেচ্ছা জানিয়ে এলেন বাড়ি গিয়ে৷ শনিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বিবেক উত্সবের মঞ্চে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে সম্প্রীতির 'শপথে' আবদ্ধ হয়েই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি চলে যান মহাশ্বেতাদেবির বাড়ি৷ বাংলায় জমি আন্দোলনের ভিত গড়ার দিনগুলোয় মমতাকে যিনি সবচেয়ে বেশি প্রেরণা যুগিয়েছিলেন সেই অশাতিপর মহাশ্বেতা দেবি তৃণমূল সরকারের প্রতি বিরুপ হয়েছেন পরিবর্তনের কয়েকমাসের মাথায়৷ কলকাতার রাজপথে ঝোলানো, পরিবর্তনপন্থীদের সেই সুবিশাল কাটআউট থেকে সাম্প্রতিককালে চুপিসাড়ে খসে গিয়েছে অনেকগুলো মুখ৷ যে মুখগুলো মমতার বাম-খেদাও অভিযানে অনুঘটকের কাজ করেছিল বলে এখনও বিশ্বাস করে গোটা রাজ্য৷ বিধানসভা ভোটের আগে মহাশ্বেতাদেবির পথ অনুসরণ করে মমতার সঙ্গত দেওয়া কবীর সুমন, সমীর আইচ, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, বিভাস চক্রবর্তী, সুনন্দ সান্যালরা এখন নিয়ম করে প্রকাশ্যে আফশোস করছেন৷ নাগরিক অনুতাপের এমন এক আবহে মমতা- মহাশ্বেতা একান্তে কী কথা বলতে পারেন তা নিয়ে বাংলার কৌতুহল থাকাই স্বাভাবিক৷ শনিবার দু'জনের পঁচিশ মিনিটের কথোপকথনের শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিদায় নেওয়ার পর মহাশ্বেতাদেবি বলেন, 'দু'দিন পর ১৪ জানুয়ারি আমার জন্মদিন৷ মমতা সেদিন আসতে পারবে না বলে আজ আমায় শুচ্ছো জানাতে এসেছিল৷ এটা একেবারেই সৌজন্যের খাতিরে৷ অন্য কোনও ব্যাপারে কথা হয়নি৷'
এ তো গেল বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রসঙ্গ৷ ঘরেও কি সুখে আছে তৃণমূল পরিবার? একদিকে নানা ইস্যুতে তৃণমূল ভবনের ম্যানেজারদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্য৷ অন্যদিকে মন্ত্রিসভার ভিতরে বাইরে শাসকদলের হেভিওয়েট নেতাদের প্রকাশ্য মতানৈক্য৷ যে কোনও বিতর্কিত ইসুত্যে দলের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীরা যে যার মতো মুখ খুলে, সমালোচনার সিংহদুয়ার খুলে দিচ্ছেন৷ অবশেষে ড্যামেজ কন্ট্রোলে আসরে নামতে বাধ্য হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ ক্ষেত্রবিশেষে অন্তবর্তী সময়টুকুতে তিল সমান ঘটনাও হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাল৷ এর শেষতম উদাহরণ রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বেফাঁস মন্তব্য৷ হলুদ কার্ড লালকার্ডের অপপ্রয়োগ দেখে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনে তাঁর সবচেয়ে আস্থাভাজন মন্ত্রী সুব্রতবাবুকে পর্যন্ত সেন্সর করতে বাধ্য হয়েছেন৷ ক'দিন আগে বিধানসভায় বিধায়কদের মারপিট নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলে ফেলেছিলেন, 'আমাদের সংখ্যা এত বেশি যে ওদের মারলে কি হবে কল্পনা করা যায় না৷' ঠিক তার পরের দিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই পার্থবাবুকেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলতে হয়েছে, 'সংযম সংখ্যার উপর নির্ভর করে না৷' তারও আগে লোবাগ্রামে পুলিশের উপর গুলি চালানোর সব দায় চেপেছিল বীরভূমের এসপি এবং সংশ্লিষ্ট থানার ওসির ঘাড়ে৷ লোবার দলীয় মঞ্চ থেকেই ওসিকে বদলি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
বছর ঘোরার পর থেকেই শাসকদলকে কেমন ছন্নছাড়া দেখাতে শুরু করেছে৷ ১৭ মাসের মাথায় তৃণমূলকে রাস্তায় নেমে দলের জনভিত্তির প্রমাণ দিতে হচ্ছে কেন সে প্রশ্নও উঠছে৷ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথিতে কলকাতায় সংঠিত শক্তিপ্রদর্শন করেও ১৯ তারিখ ধর্মতলায় ফের বড়সড় জমায়েতের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ মাত্র ক'দিন আগে সিপিএমের চির-ব্রাত্য কৃষক নেতা রেজ্জাক মোল্লা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একাই নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন রাজপাটের কর্ণধারদের৷ ভাঙড়ে তৃণমূলের পোস্টার বয় আরাবুল ইসলামের 'অতিতত্পরতা' এবং তাতে দলের প্রকাশ্য শীলমোহর রাজ্যপাল এমকে নারায়ণনকে পর্যন্ত বিচলিত করেছে৷ উলটে এ যাবত্ পরস্পরের মুখ দর্শনে নারাজ বুদ্ধ-রেজ্জাক হাতে হাত মেলানোর সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় বহুদিন পর জনতা দেখেছে আলিমুদ্দিনের ঐক্যের ফ্রেম৷ সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে বিব্রত তৃণমূল মুখে বিরোধীদের দূর ছাই করলেও কোনও মহলের সমালোচনাই উপেক্ষা করতে পারছে না৷ ভাঙড়কে কেন্দ্র করে বামফ্রন্ট শহরে পর পর দু'দিন বড় মিছিল করার পর সরকারি দলেরও পথে নামার চার বেড়েছে বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের৷ এর উপর আবার অচিরেই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করছে শাসক শিবির৷ অবশ্য এর প্রতিক্রিয়ায় শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই সময়কে বলেছেন,'কেন্দ্রীয় সরকার আগে নিজেদের মেয়াদটা থাকাম শাসক বিরোধীর রক্তপাত দূর থেকে দেখেই প্রদেশ কংগ্রেস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে রাজ্যে বিশেষ পরিদর্শক দল পাঠানোর লিখিত আর্জি জানিয়ে বসে আছে৷ এহেন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও প্রতিনিধি যদি প্রশাসক মমতার বিন্দুমাত্র সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়ে ফেলেন তাহলে মহাকরণের অস্বস্তি বাড়তে পারে৷
ফের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। তাঁকে নজরে রাখা হচ্ছে। তাই তিনি নিরাপদে আছেন, বলে আনন্দ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। এবং নিজেকে `ভাগ্যবান` বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
ভাঙড়ের ঘটনার পর রাজ্যে `গুন্ডাগিরি` চলছে বলে সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপাল। তাঁর এই মন্তব্যের পর গত কাল রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্যপালকে নজরে রাখা হচ্ছে।" সেই প্রসঙ্গেই কলকাতায় আজ একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে ফের রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে কটাক্ষ করলেন নারায়ণন।
প্রসঙ্গত রাজ্যপাল নিয়ে মন্তব্যের জেরে এদিন ডানা ছাঁটা পড়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। সরকারের হয়ে বিবৃতি দিতে নিষেধ করা হল পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। সুব্রতর করা মন্তব্যের জেরে যেভাবে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে, তাতে বেশ খানিকটা কোন ঠাঁসা তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণেই সুব্রত মুখার্জির ওপর দলীয় কোপ পড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
কলকাতা: ভাঙড়কাণ্ডে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সংঘাতের পর যখন শনিবারের এক অনুষ্ঠানে কিছুটা সুর নরম করে নিজের অনড় অবস্থানকে সরে এলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী, ঠিক তখনই কি গোটা ইস্যুতে ইতি টানতে চাইলেন রাজ্যপালও?
রাজনৈতিক মহলে উঠে গেল এমনই প্রশ্ন৷ স্বামী বিবেকানন্দকে স্মরণ করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বেশি কথা বন্ধ হওয়াই ভাল৷স্বামী বিবেকানন্দের ১৫১তম জন্মদিনে বীর সন্ন্যাসীকে উদ্ধৃত করে রাজ্যপাল বলেন, কাজই আসল৷তিনি বলেছেন, ওঠ জাগো, ততক্ষণ পর্যন্ত থেমো না, যতক্ষণ না তুমি লক্ষ্যে পৌঁছও৷ স্বামী বিবেকানন্দের এই কথা উদ্ধৃত করে তিনি আরও বলেন, কথা বেশি বল না৷ এই মন্তব্য করে কি পুরো বিতর্কে ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যপাল ? রাজনৈতিক মহলে এখন এই প্রশ্নই উঠে গেছে।
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/32401-2013-01-12-07-47-25
'ভাইব্র্যান্ট গুজরাট' অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে মোদীর চুম্বকের মতো ক্ষমতার কথা বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন অনিল৷ একই সঙ্গেও এও জানালে ভোলেননি, রিলায়েন্সকে গুজরাটি সংস্থা বলে ডাকায় তিনি গর্ব বোধ করেন৷ গুজরাট থেকেই যাত্রা শুরু রিলায়েন্সের৷ ফের তাঁরা এই রাজ্যে বিনিয়োগ করতে এসেছেন৷ এই প্রতিশ্রীতিই ছিল অনিল আম্বানির বক্তব্যের মূল সুর৷
অনিল আম্বানি বলেন, 'আমি একটি ছবি আঁকার চেষ্টা করছি৷ ২ অক্টোবর ১৮৬৯, পোরবন্দর, গুজরাট৷ জন্ম হয়েছিল জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর৷ ৩১ অক্টোবর ১৮৭৫, নারিয়াল, গুজরাট৷ জন্ম হয়েছিল ভারতের লৌহমানব, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের৷ ২৮ ডিসেম্বর ১৯৩২ চোরওয়াদ, গুজরাট৷ ভারতের অন্যতম শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানির জন্ম৷ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০, ভাদনগর, গুজরাট৷ জন্ম হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর৷'
মোদীর ভূয়সী করেন রতন টাটাও৷ জানান, যখনই কোনও বিনিযোগকারী বিনিয়োগ করার কথা ভাবেন, তিনি এমন জায়গা খোঁজেন যেটি বিনিয়োগ-বান্ধব৷ গুজরাট সে দিক থেকে দেশের মধ্যে একেবারেই স্বতন্ত্র৷ এর পুরো কৃতিত্বটাই নরেন্দ্র মোদীর প্রাপ্য৷ অতীতের প্রসঙ্গ স্মরণ করে তিনি জানান, 'প্রথম বার গুজরাট সফরে এসে আমি বলেছিলাম যাঁরা এখানে বিনিয়োগ করবেন না, ভুল করবেন৷ দ্বিতীয় বারের সফরে আমিও ওই তালিকায় ছিলাম৷ কিন্ত্ত এখন আমরা এ রাজ্যে বিনিয়োগ এবং প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৪,০০০ কোটিতে নিয়ে গিয়েছি৷'
শিল্পোন্নত গুজরাতের শিল্পমেলা 'ভাইব্র্যান্ট গুজরাত'-এর প্রথমদিনই বিনিয়োগ মহল থেকে দারুণ সাড়া পেল মোদীর রাজ্য৷ সিঙ্গুর থেকে বিদায় নেওয়া টাটা গোষ্ঠী এই রাজ্যে ৩৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে এদিন৷ চেয়ারম্যান এমিরেটাস রতন টাটা এদিন বলেন, বিনিয়োগের পীঠস্থান গুজরাতে কোনও 'বোকাই' হয়তো বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকবে৷ শিল্প-বান্ধব পরিবেশ হিসেবে গুজরাত অনন্য৷
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুকেশ আম্বানি এদিন এ রাজ্যে এক লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রীতি দিয়েছেন৷ এর পাশাপাশি, পণ্ডিত দীনদয়ান উপাধ্যায় পেট্রোলিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণাও করেন মুকেশ৷
বাংলা থেকে সদ্য বিদায় নেওয়া জাহাজ প্রস্ত্ততকারী সংস্থা এবিজি এদিন গুজরাতে মোট সাত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করে৷ গুজরাত উপকূলে একটি নতুন ডক গড়ে তুলতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এবিজি৷ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সাড়ে চার হাজার কর্মসংস্থান হবে বলে উল্লেখ করেছে এবিজি৷ এ ছাড়া গুজরাতে এবিজির বর্তমান দু'টি ডকের ক্ষমতা বাড়াতে আরও দু'হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সংস্থা৷
গুজরাতের বন্দর ও জল সরবরাহ ক্ষেত্রে নতুন করে ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এসার গ্রুপ৷ সংস্থার চেয়ারম্যান শশী রুইয়া জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে এসার গোষ্ঠী ৮৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে৷ আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে৷ রুইয়া বলেন, জামনগরের হাজিরা ও সালায়াতে বন্দর উন্নয়নে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এসার৷ গোটা রাজ্যে জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ হবে আরও চার হাজার কোটি৷
এই প্রথম হরিয়ানা থেকে সরে দেশের অন্য কোনও রাজ্যে কারখানা খুলতে চলেছে দেশের এক নম্বর গাড়ি প্রস্ত্ততকারী সংস্থা মারুতি সুজুকি৷ উত্তর গুজরাতের মেহসানা জেলায় মারুতি কারখানার কাজ আগামী মার্চের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে৷ এদিন গুজরাত শিল্প সম্মেলনে এ কথা বলেন মারুতি সুজুকির আর সি ভার্গব৷ তিনি বলেন, গুজরাতে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে মারুতি৷ ২০১৫-১৬ বর্ষেই এই কারখানায় গাড়ি উত্পাদন শুরু হবে৷
এদিন ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে শিল্পপতিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আদিত্য পুরী এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের সিইও এবং এমডি চন্দা কোছার৷ আগামী তিন বছরে গুজরাতে ২৫০টিরও বেশি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শাখা খোলার ঘোষণা করেন পুরী৷ এই রাজ্যে এইচডিএফসি-র ক্রেডিট ডিপোজিট অনুপাত ১০৫ শতাংশ৷ ২০১৬-র মধ্যে এ রাজ্যে মোট ৪৬৫টি শাখা খুলতে চায় এইচডিএফসি৷ গুজরাতের এই বার্ষিক শিল্পমেলাকে একটি প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করে চন্দা কোছার বলেন, তড়িত্ গতিতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নজির রেখে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে গুজরাত৷
হিন্দুত্বের জয়জয়কার মাঝে ধর্মোন্মাদী জায়নবাদী জাতীয়তাবাদে এখন ধূপ ধুনোর বদলে সুধুই যুদ্ধ যুদ্ধ গন্ধ।
পাকিস্তানের তরফে অস্ত্রবিরতির চুক্তিভঙ্গ লাগাতার চলতে থাকলে ভারত কড়া পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়ে দিলেন বায়ু সেনার প্রধান মারশাল এনএকে ব্রাউন। পাকসেনার শান্তি চুক্তি ভঙ্গ নিয়ে গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন বায়ুসেনার প্রধান।
দু`দিন আগে ভারত-পাক সীমান্তে মেন্ধর সেক্টরে ঢুকে পড়ে পাক সেনা। দুই ভারতীয় জওয়ানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাঁরা। ফলে লঙ্ঘিত হয় অস্ত্রবিরতির চুক্তি। এই ঘটনার পর এশিয়া মহাদেশের চিরবিবাদমান দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উষ্ণার পারচ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মারশাল এনএকে ব্রাউন শনিবার বলেন, "দুটি দেশের সীমানা নির্দিষ্ট রয়েছে, শান্তি চুক্তি বহাল রয়েছে।" এই চুক্তি মেনে চলার বেশকিছু নিয়ম ও প্রক্রিয়া রয়েছে। যা লঙ্ঘন করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বায়ুসেনা প্রধান। তিনি আরও বলেন, "এই প্রক্তিয়া লঙ্ঘন করা কখনই মেনে নেওয়া হয়নি।" গত কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা শান্তি চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়টিকে যে বায়ুসেনা ভাল চোখে দেখছে না তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মারশাল।
শুক্রবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি জানিয়েছিলেন, ইতিমধ্যেই এলওসিতে সেনা মোতায়েন শুরু হয়েছে।
শুক্রবার নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় লাইন অফ কনট্রোলে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে পাক সেনাবাহিনী সীমান্তের এপার লক্ষ্য করে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। মোট আটটি জায়গা থেকে প্রায় ২০ মিনিট ধরে গুলি চালানোর খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারতের তরফে পাকিস্তানের কাছে ফ্ল্যাগ মিটিঙের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। ইসলামাবাদ এই অনুরোধ খারিজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, সীমান্তরেখায় আরও সেনা মোতায়েন করছে পাকিস্তান। পাক সেনাবাহিনীর সব রকম ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেনাবাহিনীকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানে তরফে সেনা তত্পরতা বৃদ্ধি পাওয়াকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না ভারতও। শনিবার প্রতিরক্ষা সচিব শশীকান্ত শর্মা মন্ত্রকের আরও তিন শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একে অ্যান্টনির সঙ্গে বৈঠক করেন এই বৈঠকে অ্যান্টনিকে লাইন- অফ-কনট্রোলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন শশীকান্ত শর্মা। সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে পুঞ্চ এবং রজৌরি সেক্টরে আর্মি ও বায়ুসেনা মোতায়েন করছে ভারতও। তলব করা হয়েছে অ্যাডিশনার বর্ডার অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের জওয়ানদেরও।
রাজ্যপাল নিয়ে মন্তব্যের জেরে ডানা ছাঁটা পড়ল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। সরকারের হয়ে বিবৃতি দিতে নিষেধ করা হল পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে। এরপর থেকে সরকারের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলীয় ও সরকারি বিবৃতি দিতে পারবেন রাজ্যের অন্য মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও।
রাজ্যে একের পর এক রাজনৈতিক সংঘর্ষের নিরিখে রাজ্যপাল বুধবার কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রাজ্যপাল সুলভ মন্তব্য নয়, রাজ্যপালের মন্তব্য রাজনৈতিক। শুক্রবার মহাকরণে রাজ্যপাল এমকে নারায়াণনকে ঠিক এই ভাষাতেই বিঁধেছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, "রাজ্যপালের বক্তব্য উসকানিমূলক।" গতপরশু রাজ্যপালের বক্তব্য নিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলার পর কাল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে।
সুব্রতর করা মন্তব্যের জেরে যেভাবে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে, তাতে বেশ খানিকটা কোন ঠাঁসা তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণেই সুব্রত মুখার্জির ওপর দলীয় কোপ পড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
চলতি আর্থিক বছরের শেষে চরম আর্থিক সঙ্কটের মুখে রাজ্য সরকার। কোন খাতে কিভাবে ব্যয় হবে, তা নিয়ে চিন্তায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবারও নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটেও ক্লাবগুলিকে দেদার অনুদান দিতে পিছপা হননি তিনি।
ক্রমাগত বেড়ে চলা নারী নির্যাতনের ঘটনায় সমালোচনার মুখে রাজ্য সরকার। প্রশ্ন উঠেছে পুলিসের ভূমিকা নিয়েও। এরইমধ্যে পাড়ার ক্লাবগুলিকেই নিরাপত্তার ভার নিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের কোষাগারে টাকা নেই। বারবার এই অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য যে কেন্দ্রের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত, সেকথাও একাধিকবার শোনা গেছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। ক্লাবগুলির অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একই বক্তব্য শোনা গেল। এদিনও তিনি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেন।
শুক্রবার, ষোলোশ চোদ্দটি ক্লাবকে দু লক্ষ টাকা করে অনুদান দেয় রাজ্য সরকার। গতবার অনুদান পেয়েছিল ৭৮১টি ক্লাব। তারাও এবার একলক্ষ টাকা করে অনুদান পেয়েছে। ক্লাবগুলি টানা পাঁচবছর অনুদান পাবে।
প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের এই চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটে কি কারণে এতগুলি ক্লাবকে অনুদান দিয়ে চল্লিশ কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পঞ্চায়েতের আগে যুব সম্প্রদায়ের মন পেতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই সময় : টাকার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে অহরহ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেখানে ২৫০০-এর বেশি ক্লাবকে সরকারি কোষাগার থেকে ৬ বছরে ১৮২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে৷ শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'সংশোধিত' ক্লাব 'স্কিম' দেখে অর্থ দফতরের কর্তাদের রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে৷ গত বছরই ৭৮১টি ক্লাবকে দু'লক্ষ টাকা করে দিতে গিয়ে ১৫ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা দিতে হয় সরকারকে৷ পঞ্চায়েতের ভেরি বাজিয়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী আরও ১৭৫০টি ক্লাবকে দু'লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া শুরু করলেন৷ এখানেই থামছেন না মমতা৷ পরিকল্পনা বদলে এই ২৫৩১টি ক্লাবকে আগামী পাঁচ বছর ধরে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রীতিও ঘোষণা করেছেন তিনি৷ জাতীয় স্তরে রাজীব খেলরত্ন সম্মান চালু করার কৃতিত্ব দাবি করে বাংলার কৃতী খেলোয়াড়দের জন্য বঙ্গ খেলরত্ন চালু করার সিদ্ধান্তও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ শুক্রবারই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব ঘোষণা করেছেন, এ বার উত্তরবঙ্গ উত্সবেও রাজ্য সরকার ১ হাজার ক্লাবকে পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫০ হাজার টাকা করে বিলি করবে৷ এই টাকা দেওয়া হবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের নামে৷
শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ক্রীড়া এবং যুব কল্যাণ দফতরের অনুষ্ঠানে যুব সমাজকে 'ক্লাব গড়ে দেশ গড়ার' ব্রত নেওয়ার মন্ত্র দিলেন মমতা৷ স্বামীজির আবির্ভাব তিথির এক দিন আগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ছিল বাংলার ক্রীড়া জগতের বিশিষ্ট মানুষদের৷ সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তাঁর সরকার ফি বছর রাজ্যের প্রতিটি সরকার-স্বীকৃত ক্লাবকে খেলাধুলোর পরিকাঠামো গড়তে রসদ জোগাবে৷ যাঁরা এখনও রেজিস্ট্রি করেনি তাদের তিন মাসের সময়ও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রেজিস্ট্রি করে আবেদন জানালে প্রথম ক্ষেপেই মিলবে দু'লক্ষ টাকার চেক৷ কিন্ত্ত নিয়মিত ব্যবধানে এত টাকা দেওয়া হবে কোন যুক্তিতে?
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'ক্লাবগুলো সব থেকে বেশি অবহেলিত৷ তাদের ক্ষমতা নেই৷ অথচ একটা ক্লাবের মধ্যে দিয়ে জগত্কে তৈরি করতে পারেন আপনারা৷ ক্লাবের মাধ্যমে উন্নত মানুষ তৈরির চেষ্টা করুন৷ খেলাধুলোর সরঞ্জাম আর পরিকাঠামো গড়ুন৷' তবে জনগণের করের টাকায় পাওয়া সরকারি অনুদান ক্লাবগুলো যদি সদ্ব্যবহার না-করে সেক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারবে না মমতার সরকারও৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীও আগেভাগে ক্লাবগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, 'টাকা খরচের হিসেবটা ঠিক মতো রাখবেন৷ যাতে কেউ আপনাদের চোর বদনাম দিতে না-পারে৷' ঘটনা হল, পর পর তিন বছরের বৈধ অডিট রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ক্লাবগুলোকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে৷ কিন্ত্ত সরকারি অনুদান পাওয়ার পর ক্লাবগুলো সেই টাকা কী ভাবে খরচ করবে, তার কিন্ত্ত কোনও সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই৷ উল্লেখ্য, শুক্রবার ইন্ডোরের মঞ্চেও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের অর্থসংকট নিয়ে একযোগে কেন্দ্র এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশকে কটাক্ষ করেছেন৷ বলেছেন, 'আমাদের না-জানিয়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতি মাসের পয়লা তারিখ সুদের টাকা কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ যা করতে যাচ্ছি, পিছন থেকে কাঁকড়ার মতো টেনে ধরছে৷ আর মিডিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা না-করে কেবল কুত্সা আর অপপ্রচার চালাচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে৷'
আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুদানের এই অনুদান ক্লাবগুলো পাচ্ছে সরাসরি ক্রীড়া দফতরের মাধ্যমে৷ কিন্ত্ত প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র একা নন, সম্প্রতি সেচমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ক্লাব বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় সামিল করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ গত বছর মুখ্যমন্ত্রী ক্লাবগুলিকে অর্থসাহায্য দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর থেকেই মহাকরণে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের ঘরে ক্লাব কর্তাদের ভিড় বেড়ে যায়৷ এলাকার বিধায়ক, সাংসদ এমনকী জেলাশাসকদেরও ক্লাব বাছাইয়ের এক্তিয়ার আছে৷ বিধায়ক, সাংসদদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁদের প্রস্তাবিত ক্লাবগুলির নাম বিধানসভায় সরকারপক্ষের মুখ্যসচেতক শোভনদেব চোপাধ্যায়ের কাছে জমা দিতে পারেন৷ ক্রীড়া দফতরের কাছে বাছাই করা ক্লাবগুলির চড়ান্ত তালিকা পাঠানোর আগে তাদের ঠিকুজির খোঁজ নিয়েছেন রাজীব৷ বাম আমলে তত্কালীন ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীও নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্লাবকে সরকারি টাকা সাহায্য করেছিলেন৷ কিন্ত্ত অর্থ ও ব্যান্তির নিরিখে মমতার পরিকল্পনার তুলনায় তা ছিল নেতাহই নগণ্য৷
অর্থসঙ্কটে নিমজ্জিত রাজ্য৷ নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা, বাড়ছে দেনার বোঝা৷ কেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন-হুঁশিয়ারি, কোনও কিছুতেই কাজ হয়নি৷ প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার সুর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়৷ কিন্তু, প্রবল অর্থ-সঙ্কটেও অনুদান-পর্ব অব্যাহত৷ এবার রাজ্যের ১৬৩৭টি ক্লাবের হাতে দু'লক্ষ টাকা করে অনুদান তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ গতবার যে ৭৮১টি ক্লাব অনুদান পেয়েছিল তারাও এবার পেল ১ লক্ষ টাকা করে৷ সবমিলিয়ে যার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বেরিয়ে গেল প্রায় ৪০ কোটি টাকা৷ গতবার খরচ হয়েছিল সাড়ে পনের কোটি টাকা৷ এবার অর্থ-সঙ্কট সত্ত্বেও তার পরিমাণ বাড়াতে দ্বিধা করল না রাজ্য সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সাহায্যপ্রাপ্ত ক্লাবগুলি খেলাধূলার মানোন্নয়নের পাশাপাশি উন্নততর ছাত্র-যুব গঠনে সাহায্য করবে৷
আর্থিক সাহায্য না মেলায় এদিন কেন্দ্রকে ফের আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর তোপের মুখের পড়ে সংবাদমাধ্যমও৷ খেলাধূলার স্বার্থে অনুদান প্রদানকে মুখ্যমন্ত্রী যুক্তিযুক্ত আখ্যা দিলেও, টানাটানির সংসারে ক্লাবগুলিকে অনুদান বাবদ ৪০ কোটি টাকা দেওয়া কি বিলাসিতা নয়? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিরোধীরা৷ ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগও তুলেছে তারা৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নিজের ভোটব্যাঙ্ককে আরও সুসংহত করতেই এই জনমুখী পদক্ষেপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ মূলত ক্লাবগুলিকে সাহায্য করে তাদের আনুগত্য আদায় করাই লক্ষ্য বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের৷
এদিকে, এদিনই রাজ্যের স্টেডিয়ামগুলির রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি নতুন খেলোয়াড় তুলে আনতে প্রাক্তন ও বর্তমান ফুটবলারদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের এবং আগামী বছর থেকে বঙ্গ খেলরত্ন পুরস্কার চালুর নির্দেশও দেন তিনি৷
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করল কংগ্রেস। একই সঙ্গে কংগ্রেসের হুমকি, রাজ্যপালকে হলুদ কার্ড দেখালে রাজ্য সরকারকে লাল কার্ড দেখতে হতে পারে। এই হুঁসিয়ারির অর্থ রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে সওয়াল কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা।
ভাঙড় ও বামনঘাটায় হামলার ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবারই পাল্টা কটাক্ষ করে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্যপালকে হলুদ কার্ড দেখানো হচ্ছে। প্রয়োজনে লাল কার্ড দেখানো হবে।" এবার রাজ্য সরকারকে পাল্টা লালকার্ড দেখানোর হুমকি দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভটাচার্য। কে দেখাবে লালকার্ড? তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তবে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্যের বিরুদ্ধে ফের সুর চড়িয়েছেন তিনি।
প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন কড়েয়ায় ধর্ষণের প্রতিবাদ করে হেনস্থার শিকার হওয়া আত্মঘাতী যুবক আমিনুলের ইসলামের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের পাশে বসিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন প্রদীপ বাবু। তিনি বলেন, "ধর্ষণের প্রতিবাদ করেছিল আমিনুল। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়।" আমিনুলকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রদেশ সভাপতির।
কলকাতা: ফের ভিন্ন সুর তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের গলায়৷ এবার তিনি নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন সংবাদমাধ্যম নিয়ে মন্তব্য করে৷ তাঁর দলের সর্বময় নেত্রী যখন ইদানিং সভা-সমিতিতে সংবাদমাধ্যমকে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কুতসা করার অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলছেন, তখন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অবাধে কাজ করতে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন সৌগত৷
সরকারি সাহায্যপুষ্ট গ্রন্থাগারগুলিতে কোন কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পরই সে সম্পর্কে প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকার৷নির্বাচিত তালিকা থেকে বিরোধী দলের মুখপত্র যেমন বাদ পড়ে, তেমনই রাজ্যে সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রেরও সেখানে ঠাঁই হয়নি৷ সরকারের বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের অভিযোগ ওঠে৷ বিভিন্ন মহল সমালোচনায় সরব হয়৷ এরপরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণের নিশানা করেন সংবাদমাধ্যমকে৷ তাঁর দাবি, সংবাদমাধ্যমের একাংশ সরকারের বিরুদ্ধে কুত্সা ছড়াচ্ছে৷ মহাকরণে দাঁড়িয়ে দুটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে পথে নামার ডাকও দেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায়৷ মদন মিত্র, ফিরহাদ হাকিম, মুকুল রায়, শুভেন্দু ও শিশির অধিকারীর মতো তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব টার্গেট করেছেন এবিপি আনন্দর অনুষ্ঠান 'প্রতি-পক্ষ'-কে৷ এই পরিস্থিতিতে একেবারে ভিন্ন সুরে সৌগত শনিবার বণিকসভার একটি অনুষ্ঠানে বলেন, সংবাদমাধ্যমকে তাঁদের কাজ করতে দেওয়া উচিত৷ তাঁর অভিমত, সংবাদমাধ্যমের উপর সরকারিভাবে কোনও আইনগত বিধিনিষেধ চাপানো উচিত নয়৷ রাজনৈতিক মদতে সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সরকারে পদক্ষেপ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন, সৌগতর এদিনের মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক তো উস্কে দিলই, তৃণমূলেরও অস্বস্তি বাড়াল৷ নাম না করে কখনও দলের 'তাজা' নেতা আরাবুল ইসলামের সমালোচনা, কখনও আবার নব্য ও আদি তৃণমূলে বিভাজন রেখা তৈরির কথা বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন সৌগত৷ শুক্রবারও রাজ্যপাল-সুব্রত বাগযুদ্ধের মাঝেই রাজ্যপালের সাংবিধানিক এক্তিয়ার নিয়ে নিজস্ব মত প্রকাশ করে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেন তৃণমূলের এই সাংসদ৷
সমিত সেনগুপ্ত, এবিপি আনন্দ, ভিন্ন সুর সৌগতর
http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32421-2013-01-12-15-21-10
হিংসায় উদ্বিগ্ন রাজ্যপালের রিপোর্ট দিল্লিকে |
রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও চলতি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট পাঠালেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। ভাঙড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে দু'দিন আগে রাজ্যপাল বলেছিলেন, "যা চলছে, তা হল গুন্ডারাজ।" কিন্তু প্রকাশ্যে সেই মত জানানোর আগেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে ওই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তিনি। ভাঙড়-কাণ্ডের আগেই কেন্দ্রকে পাঠানো ওই রিপোর্টে রাজ্যে 'সমাজবিরোধীদের দাপটের' জন্য নারায়ণন যেমন পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন, তেমনই সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসেরও। গত মাসেই দিল্লিকে এই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষের পাশাপাশি ইদানীং তৃণমূল কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ কলহও বাড়ছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষের অনেকটাই হচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণে। তৃণমূলের কিছু বিধায়কের নেতৃত্বে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। এই সব হিংসার ঘটনা হচ্ছে মূলত জমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে। রাজ্যের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সব রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়মমাফিক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট পাঠান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষস্তরের এক আমলা আজ জানান, পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নারায়ণন গোড়ায় যে সব রিপোর্ট পাঠাতেন, তাতে নেতিবাচক বিষয়বস্তু বিশেষ থাকত না। কিন্তু রাজ্যপালের সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের চলতি অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। তা ছাড়া সিপিএম, কংগ্রেস-সহ রাজ্যে বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরাও তাঁর সঙ্গে দেখা করে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে ধারাবাহিক অভিযোগ জানাচ্ছেন। এ সবেরই প্রতিফলন ঘটছে রিপোর্টে। কেন্দ্রের কাছে পাঠানো ওই রিপোর্টে রাজ্যপাল রাজ্যের সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ঘটনা ও হিংসার ঘটনা সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে সরকার বিরোধী মতপ্রকাশ, লোবা গ্রামের ঘটনা, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের ওপর তৃণমূলেরই একাংশের হামলা ইত্যাদি সবই তুলে ধরেছেন তিনি। রিপোর্টে তিনি বলেছেন, তৃণমূলের সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর বিদ্রোহ দেখে বোঝা যাচ্ছে, সিঙ্গুরের বহু মানুষ বর্তমান সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট। তা ছাড়া কিছুদিন আগে লোবা গ্রামে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় মানুষের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ চেক তুলে দিতে গেলেও সেই চেক নিতে কেউ আসেননি। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল সরকার সম্পর্কে মানুষের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে। পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তৃণমূল সরকার কাজ করছে না বলে মনে করছেন অনেকেই। তৃণমূল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রিপোর্টে রাজ্যপাল আরও বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই লাগামছাড়া। এখনই নিয়ন্ত্রণ কায়েম না করলে আরও নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে সরাসরি কোনও সমালোচনা করেননি রাজ্যপাল। বরং রিপোর্টে বলেছেন, চলতি পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। তিনি নিজেও পরিস্থিতি সম্পর্ক অবগত এবং উদ্বিগ্ন। রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার আগে কেন্দ্রে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন এম কে নারায়ণন। তার আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছিলেন এই প্রাক্তন আইপিএস। এখনও বর্তমান গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে যোগাযোগ রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই শীর্ষস্তরের আমলার কথায়, "রাজ্যপালের রিপোর্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট। রিপোর্ট পড়লে এ-ও বোঝা যাবে, প্রকারান্তরে পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাবের জন্য তিনি শুধু বর্তমান সরকারকে দায়ী করছেন তা নয়, বরং পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের দিকেও আঙুল তুলেছেন। বস্তুত অবক্ষয় শুরু হয়েছে তখন থেকেই।" রিপোর্টে রাজ্যপাল বলেছেন, "বহু বছর ধরে আইনশৃঙ্খলার সত্যিকারের সমস্যাগুলো হাতে-কলমে না সামলাতে সামলাতে রাজ্যের পুলিশি ব্যবস্থার মেরদণ্ডই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া নিচুস্তরের পুলিশের সদিচ্ছার অভাব ও ভীরুতার কারণেই সমাজবিরোধীরা এই ভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রিপোর্টে তিনি আরও বলেছেন, রাজ্যের জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যার অনুপাত গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে খারাপ। তার ওপর ৩০ শতাংশ পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। রাজ্যপালের এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল নেতৃত্ব অকারণেই নারায়ণনের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। রাজ্যে গুন্ডারাজ চলছে বলে রাজ্যপাল মন্তব্য করায় রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের অস্বস্তি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব তথা মুখ্যমন্ত্রী যদি নারায়ণনের পরামর্শ নিয়ে চলেন, তা হলে সরকারেরই উপকার হবে। কারণ, এক জন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা হিসাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শুধরোনো এবং পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নারায়ণন মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিবাচক পরামর্শ দিতে দিতে পারেন। কংগ্রেসের ওই শীর্ষ নেতা জানান, আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি কলকাতা সফরে যাচ্ছেন। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে তখন ফের রাষ্ট্রপতির কথা হবে। আবার মুখ্যমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যেও একটি নৈশভোজের বৈঠক হবে। তা ছাড়া রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনাও রয়েছে। সেই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে যেমন নারায়ণন-মমতা চলতি টানাপোড়েন কিছুটা কাটতে পারে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিবাচক পরামর্শ দিতে পারেন রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতি। http://www.anandabazar.com/12raj1.html |
চব্বিশ ঘণ্টা পরও রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ছাত্রীর শ্লীলতাহানিকাণ্ডে গ্রেফতার হয়নি একজনও। বৃহস্পতিবার কলেজ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে কয়েকজন মদ্যপ দুষ্কৃতী ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। আজ কলেজের গেটের বাইরে দুই পুলিসকর্মীকে মোতায়েন করা হলেও সন্তুষ্ট নন ছাত্রছাত্রীরা। এই ঘটনায় পুলিসের কোনও শীর্ষকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন।
বৃহস্পতিবার দিনেদুপুরে শিয়ালদার মতো জনবহুল এলাকায় চলন্ত বাসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে চলন্ত বাস থেকেই ঝাঁপ দেন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ওই ছাত্রী। কলেজের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু এফআইআর করা হয়নি মেয়েটির বা পরিবারের পক্ষ থেকে। তাঁদের এগিয়ে না আসার পিছনে সমাজব্যবস্থাকেই দূষছেন ছাত্রছাত্রীরা।
ঢিলেঢালা নিরাপত্তার অভিযোগ করা হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও। তবে কলেজের গেটে পুলিসকর্মী মোতায়েন কোনও নতুন পদক্ষেপ নয় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিল করে ডিএফও। কলেজ কর্তৃপক্ষর কাছে ডেপুটেশনও জমা দেওয়া হয়।
ইভিটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ফের হামলার ঘটনা ঘটল বারাসতে। মারধরে গুরুতর আহত এক যুবককে ভর্তি করাতে হল হাসপাতালে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিস।
আজ দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে বারাসত থানার বামুনগাছি এলাকায়। ওই এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার মহিলাকর্মীদের অভিযোগ, কাজে যাওয়ার পথে প্রায়ই তাঁদের উত্যক্ত করত এলাকার কয়েকজন যুবক। আজ সংস্থার এক মহিলাকর্মীকে লক্ষ্য করে কটূক্তি করে এক যুবক। এরপরেই তিনি সহকর্মীদের ডেকে এনে প্রতিবাদ জানান। তখনই ওই কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিযুক্ত যুবক এবং তার সঙ্গীরা।
মারধরে গুরুতর আহত হন কারখানার এক কর্মী। তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হন অভিযোগকারীণীও। প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জোড়া খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যের দুই মন্ত্রী গৌতম দেব ও সুব্রত সাহাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন রায়গঞ্জের নরম কলোনির স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল রায়গঞ্জের মারাইপুরা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের কাছে খুন হন স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা। চব্বিশ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিস যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি, এই অভিযোগে আজ পথ অবরোধ করেন কলোনীর বাসিন্দারা।
এদিকে আজই নিহতদের পরিবারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব ও সুব্রত সাহার। তাঁরা ওই এলাকায় পৌঁছলে পুলিস পথ অবরোধ তুলতে যায়। ওই সময় উত্তেজিত জনতা পুলিসের জিপ ভাঙচুর করে। পরে মন্ত্রীরা এলাকায় গেলে তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়।
পুলিস বলছে, গুলি চলেনি লোবায়। হাইকোর্টে একথা জানিয়ে রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিসের পক্ষ থেকে। অথচ স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বীরভূমের এসপির অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান লোবার বাসিন্দারা। অন্যদিকে, হাইকোর্টে এ দিন লোবা-মামলার শুনানি ছিল। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণসহ রাজ্য সরকারকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
লোবার বাসিন্দাদের এই বিক্ষোভ পুলিস-প্রশাসনের বিরুদ্ধে। লোবার ঘটনায় হাইকোর্টে পেশ হওয়া রিপোর্টে গুলি চলেনি বলে জানিয়েছেন বীরভূমের পুলিস সুপার। আর এতেই ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, আদালতে ভুল তথ্য দিয়েছে পুলিস।
বীরভূমের এসপির অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলে বেশ খানিকক্ষণ। ভবিষ্যতে আরও বড়সড় আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের এই বিক্ষোভকে অবশ্য আমল দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। এই বিক্ষোভকে নাটক বলে কটাক্ষ করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে আবেদনকারীদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য ছিল, ঘটনায় পাঁচ জনের দেহে গুলির চিহ্ন মিলেছে। যাতে গুলি চালনার ঘটনা সামনে না আসে সেজন্য হাসপাতালের চিকিত্সক ও নার্সদের শাসক দলের তরফে চাপ দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এরপরই লোবার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিয়ে রাজ্য সরকারকে পাল্টা হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে এই মর্মে হলফনাম জমা দিতে হবে।
কলকাতা: পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে হাতছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ! যে হোটেল থেকে অভিযোগকারিণী অভিযুক্ত যুবকদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন, তার সিসিটিভি ফুটেজ বেপাত্তা৷ হোটেলের সিসিটিভি-র হার্ড ডিস্ক থেকে ঘটনার রাতের সিসিটিভি ফুটেজ উধাও হয়ে যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তদন্তকারীরা৷ এর পিছনে গাফিলতি নাকি অন্য কোনও কারণ আছে, সেই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে৷
পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডে পুলিশি তদন্তে ওই ফুটেজই সবথেকে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারত। কিন্তু অযথা দেরির কারণে তা-ই হাতছাড়া৷ ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই চার্জশিট জমা দিয়েছে৷ সিসিটিভি ফুটেজ সংক্রান্ত তদন্তের জন্য হোটেলের চারটি সিসিটিভি হার্ড ডিস্ক পাঠানো হয় সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে৷ কিছুদিন আগে হাতে এসে পৌঁছেছে সেই রিপোর্ট৷ তাতেই বলা হয়েছে, ঘটনার রাত অর্থাত্ ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর চারটে পর্যন্ত ফুটেজ সেই হার্ড ডিস্কে নেই৷ অথচ পুলিশ চার্জশিটে তথ্য প্রমাণ হিসেবে যে স্টিল ছবিগুলি জমা দিয়েছে, সেগুলির মধ্যেও রয়েছে সেই রাতের হোটেলের বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজের স্টিল ছবি৷ তাহলে ফুটেজ উধাও কেন? সেই প্রশ্নই দানা বাঁধছে বিভিন্ন মহলে৷
অভিযোগকারিণীর দাবি, ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছিল৷ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল ৯ ফেব্রুয়ারি হোটেলের নিরাপত্তা আধিকারিকের দাবি, ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাত্ অভিযোগ দায়ের হওয়ার তিনদিন পর মণীশ সিংহ নামে পার্ক স্ট্রিট থানার এক সাব ইন্সপেক্টর হোটেলে যান৷ নিরাপত্তা আধিকারিকদের থেকে সেই রাতের বেশ কিছু ফুটেজ তিনি পেন ড্রাইভে নিয়ে আসেন৷ আইন মোতাবেক পুলিশি তদন্তে পেন ড্রাইভ কখনও সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হয় না৷ নিরাপত্তা আধিকারিকের দাবি, আরও তিনদিন পর অর্থাত্ ১৬ ফেব্রুয়ারি পার্ক স্ট্রিট থানারই আরেক এসআই ডি কে হালদার ফের সেই হোটেলে যান এবং সিসিটিভি ফুটেজের চারটি হার্ড ডিস্ক নিয়ে আসেন৷ তারপর সেগুলি সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়৷ কিন্তু ১৮ তারিখ ফরেনসিক ল্যাবের রিপোর্টে বলা হয়, চারটি ডিস্ক থেকে ৫ তারিখ রাত ৯টা থেকে ৬ তারিখ ভোর চারটে পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি৷ কোন ডিস্কে কত তারিখের ফুটেজ রয়েছে, সেই বিবরণও রয়েছে রিপোর্টে৷ প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, ফুটেজ তাহলে কোথায় গেল? নিরাপত্তা আধিকারিকের দাবি, সাধারণত ৭-১০ দিন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ মেমোরিতে থাকে৷ তারপর তা মুছে গিয়ে ফের নতুন করে রেকর্ডিং শুরু হয়৷ এখন প্রশ্ন উঠছে, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থানা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারে দূরের হোটেলের ফুটেজ আনতে তদন্তকারী অফিসারের চারদিন কেন লেগে গেল? আর তখনও তা পেন ড্রাইভে কেন আনা হল? তাহলে কি প্রথমে এই ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্বই দেওয়া হয়নি? ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই খবর ঘিরে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হয়৷ সেই কারণেই কি গোয়েন্দা দফতর তদন্তভার নেওয়ার পরও ১৬ তারিখ ফের এক পুলিশকর্মী গিয়ে হার্ড ডিস্ক নিয়ে এলেন? ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলছে, এই ঘটনা কি শুধুই গাফিলতি, নাকি ইচ্ছাকৃত? অভিযোগকারিণীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতাও একথা বলছেন।
কয়েকদিনের মধ্যেই বিচারপর্ব শুরু হবে৷ এখন সিসিটিভি ফুটেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলেও গোয়েন্দাদের দাবি, যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে৷ মামলা লড়ার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না৷
http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/32419-2013-01-12-13-52-44
দেরাদুন: মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে মন্তব্য করে এবার বিতর্কে জড়ালেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা৷ সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের ডিজিপি মন্তব্য করেন, নিরাপত্তার স্বার্থে, কাজের জন্য সন্ধে ৬টার পর মহিলাদের বাড়ির বাইরে থাকা উচিত নয়৷ আজ এই মন্তব্যকেই সমর্থন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা৷ এমনকি, তাঁর বক্তব্য, কাজ থেকে ফিরতে দেরি হলে, সেই মহিলাকে, নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি ফেরানোর দায়িত্ব, সংশ্লিষ্ট সংস্থারই৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য, আসলে দায় এড়ানোর কৌশল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ বিজয় বহুগুণার এহেন মন্তব্যে সমালোচনায় মুখর সবমহল৷ সম্প্রতি মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং বিজেপি বিধায়ক রমেশ বায়েসের মন্তব্য ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল৷
http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/32409-2013-01-12-10-55-58
সিমলার গলিতে অনুষ্ঠানে সামিল বিলের পড়শিরাও
বিবেকানন্দ রোড থেকে দু'পা দূরে স্বামীজির বসত ভিটের সামনেটা পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ৷ যে কোনও সময় এসে পড়বে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়৷ বিধান সরণীর উপর স্বামীজির বাড়ির গলিতে তুমুল ব্যস্ততা৷ শনিবার দেশ-বিদেশের অতিথিদের বরণ করে নিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্ত্ততি৷
উত্তর কলকাতার সিমলার এই গলিতেই জন্ম, বেড়ে ওঠা নরেন্দ্রনাথের৷ এই পাড়ার অলিগলি, ইটপাথরে ছড়িয়ে আছে বিলের দুরন্তপনার অজস্র কীর্তি৷ তাঁর বসত বাড়ির গায়েই চাচার হোটেল৷ ১৮৭৫ সালে এই হোটেল যখন তৈরি করেছিলেন গোঁসাইদাস পাত্র, তখন বিলের বয়স মোটে বারো৷ চার পুরুষ ধরে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত এই হোটেলের বর্তমান মালিক অনুজকুমার পাত্র ও গৌতম পাত্র৷ গোঁসাইদাসের সেই পুরনো চাচার হোটেল স্বামীজির বাড়ি সংস্কারের পর সরে এসেছে রাস্তার উল্টো পারে৷ পাত্রবাড়ির এত কালের পড়শির ১৫০ বছরের জন্মদিনে সারা দেশজুড়ে অনুষ্ঠান হলেও, চাচার হোটেল ব্যতিক্রম৷
কোনও অনুষ্ঠান করছেন না কেন? প্রশ্নটা শুনে লজ্জা পেলেন মধ্যবয়সী অনুজবাবু৷ 'আসলে একবার ভেবেছিলাম আমরাও একটা কোনও অনুষ্ঠানে স্বামীজির জন্মের ১৫০ বছরটা পালন করব৷ কিন্ত্ত এত বছর কখনও কিছু করিনি বলে কেমন একটা অস্বস্তি হল৷ তাই আর হয়ে উঠল না৷' তবে স্বামীজির জন্মভিটের সঙ্গে তাঁদের এই নৈকট্য নিয়ে গর্বের শেষ নেই চাচার হোটেলের বর্তমান মালিক ও কর্মীদের৷
হেদুয়ার মোড়ে ৫০ বছর ধরে ঘুগনি বিক্রি করছেন কালীপদ কর্মকার৷ স্বামীজির জন্মের ১৫০ বছর পূর্তির কথা জানেন তিনিও৷ গলির ভেতরে জরাজীর্ণ বসতবাড়ি সংস্কারের পর এখন ঝাঁ চকচকে৷ সেখানে আনাগোনা দেশবিদেশের গণ্যমান্য মানুষের৷ তবু 'পাড়ার ছেলের' জন্মসার্ধশতবর্ষে সামিল উত্তর কলকাতার এই পুরনো পাড়াও৷
কর্মযোগীর একমাত্র 'কর্মস্থল' নতুনের আশায়
'কর্মযোগ'-এর মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন নবীন সন্ন্যাসী৷ সেই 'কর্মযোগী' বিবেকানন্দের একমাত্র কর্মস্থল আজ এক 'নতুন' স্বপ্নে বিভোর৷
যে স্কুল নরেন্দ্রনাথ দত্তকে 'প্রথম' প্রধান শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিল, সেই মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (বৌবাজার শাখা) আগামী দিনে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হবে বলেই আশা বর্তমান প্রধানশিক্ষকের৷ বিবেকানন্দের জন্মদিনের আগের দিন, শুক্রবার স্কুলে নিজের ঘরে বসে সেই আশার কথাই বললেন সুন্দরগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর কথায়, 'স্কুল-পরিদর্শকরা ঘুরে গিয়েছেন৷ আগামী শিক্ষাবর্ষেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হব বলে আশা করছি৷'
১৮৮৪ সালে মধ্য কলকাতার চাঁপাতলার ১৫ নম্বর সিদ্ধেশর লেনে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন-এর প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর৷ শ্রীম-র সুপারিশে সদ্য পিতৃহারা, ২১ বছরের তরুণ নরেন্দ্রনাথ এলেন সেই স্কুলের 'প্রথম' প্রধান শিক্ষক হয়ে৷ তবে ওই স্কুলে মাত্র কয়েক মাসই শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি৷ ভবিষ্যতে সারা বিশ্বজুড়ে লোকশিক্ষার যে গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রিয় নরেন, তার সূচনা হয়েছিল এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই৷
সেই ১৫ নম্বর সিদ্ধেশ্বর লেন আজ ৩৯ ক্রিক রো৷ তিনতলা ওই স্কুলে অবশ্য শনিবার কোনও অনুষ্ঠান নেই৷ রামকৃষ্ণ মিশনের রীতি মেনে এখানে জন্মদিনের পরিবর্তে স্বামীজির জন্মতিথি পালন করা হয় ২রা ফেব্রুয়ারি৷ স্বামীজীর ১২৫ বছরের জন্মবার্ষিকীর সময়ও তাঁর জন্মতিথিতেই অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ৷ এ বছরও সেই প্রথা মেনেই আগামী ২ ফেব্রুয়ারি স্বামীজির জন্মতিথিতেই উদ্যাপনে মেতে উঠবে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন৷ সুন্দরগোপালবাবু বলেন, 'স্কুল থেকে মিছিল বের করব আমরা৷ স্বামীজির বিবিধ কীর্তির কথা সুসজ্জিত থাকবে মিছিল জুড়ে৷'
সরকারি সাহায্যপ্রান্ত ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এখন ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৩০০৷ এক সময় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলই ছিল মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন৷ ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ করা হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে৷ সুন্দরগোপালবাবু বললেন, 'রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী সুপর্ণানন্দের উদ্যোগেই ফের উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি আমরা৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনিই৷' এর পর সরকারি নিয়ম মেনেই কেন্দ্রের ৭৫% ও রাজ্যের ২৫% আর্থিক সাহায্যে এক কোটি টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ তবে ওই টাকা এখনও হাতে পাননি স্কুল-কর্তৃপক্ষ৷ সন্তাহ দু'য়েকের মধ্যেই সেই টাকা তাঁরা পাবেন, আত্মবিশ্বাসী প্রধান শিক্ষক৷
স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে দত্তদ্বারিয়াটন
কালনা: সার্ধশতবর্ষে জেলায় জেলায় বিবেক মেলা, যুব উত্সব, সংবাদপত্রে বিশেষ প্রতিবেদন, পূজার্চনা - স্বামীজি স্মরণে উপাচারের অভাব নেই৷
কিন্ত্ত উত্সবের দামামা এসে পৌঁছয় না কালনার দত্তদ্বারিয়াটনে৷ লোকচক্ষুর অন্তরালে দিনে দিনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক ভিটে৷ নানা জায়গায় সাহায্যের আবেদন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, যদি ঐতিহ্যরক্ষার ব্যবস্থা হয়৷ কিন্ত্ত কিছু কাজ হয়নি৷ তাই নিজস্ব উদ্যোগে প্রাচীন ভিটেতে স্কুল আর মন্দির বানিয়ে স্মৃতি আঁকড়ে রয়েছেন ওঁরা৷
স্বামীজির ছোট ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর 'প্রফেট অ্যান্ড পেট্রিয়ট' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন দত্তদ্বারিয়াটনের কথা৷ দত্ত পরিবারের নামেই জায়গার নাম দত্তদ্বারিয়াটন৷ কালনা মহকুমা ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি সিদ্ধেশ্বর আচার্য জানান, হাইকোর্টের অ্যাটর্নি হওয়ার আগেই এখান থেকে বাস উঠিয়ে কলকাতায় চলে যান দত্তরা৷ ফোর্ট উইলিয়াম তখনও হয়নি৷ সেই জমিতেই থাকতে শুরু করেন৷ পরে ফোর্ট উইলিয়াম প্রতিষ্ঠার পর চলে যান উত্তর কলকাতার সিমলায়৷ সেখানেই জন্ম হয় বিবেকানন্দের৷ তার পর থেকেই বিস্মৃতির অতলে ঢুকে পড়ে দত্তদ্বারিয়াটন৷
স্থানীয় প্রবীণদের মুখ থেকে জানা যায়, বছর ষাটেক আগে বৃদ্ধ ভূপেনবাবু সশরীরে এসে জমির সীমানা চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন৷ সে সময়েই স্কুল তৈরির অনুমতি দেন৷ ওই জমিতে গড়ে ওঠে দত্তদ্বারিয়াটন স্বামী বিবেকানন্দ উচ্চবিদ্যালয়৷ বছর ত্রিশেক আগে স্থানীয় বাসিন্দা বর্ষীয়ান ভবানী পাঠকের সভাপতিত্বে তৈরি হয় বিবেকানন্দ স্মৃতিরক্ষা কমিটি৷ মূলত তাঁরাই উদ্যোগী হন সংরক্ষণের দাবিতে৷ সরব হয় কালনা মহকুমা ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চা কেন্দ্রও৷ সিদ্ধেশ্বরবাবু বলেন, 'দত্তদ্বারিয়াটনের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা পূর্বতন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহকে জানিয়েছি৷ লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে হেরিটেজ কমিশনকেও৷ স্থানীয় দুই বিধায়ককেও আবেদন করা হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের কাছে তাঁরা যদি বিষয়টা উত্থাপন করেন, তা হলে এলাকাবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে৷'
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকার রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী হলে ভিটে ধ্বংসস্তপে পরিণত হত না৷ রামকৃষ্ণ মিশনেরও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেই বলে জানান বাসিন্দারা৷ ২০১২ ছিল স্বামীজির সার্ধশতজন্মবার্ষিকী৷ সে বছরেও দত্তদ্বারিয়াটনের ঐতিহ্যবাহী বাড়ি-জমি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি উপেক্ষিতই হয়েছে৷ কেবল বেসরকারি উদ্যোগে গ্রামে ঢোকার মুখে স্বামীজির মূর্তি বসানো হয়েছে৷ সেই অনুষ্ঠানে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিত্ কুণ্ডু জানিয়েছিলেন, বিধায়ক তহবিল থেকে দশ লক্ষ টাকা দেবেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য৷ এক টাকাও আসেনি৷ বিশ্বজিত্বাবু অবশ্য বলছেন, চার লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই দিয়েছেন, কাজ শুরু হবে৷ কথায় কথায় বিবেকানন্দের নাম-বক্তব্য উল্লেখ করেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী৷ তাই তাঁর কাছে প্রত্যাশাও বেশি দত্তদ্বারিয়াটনের৷ কর্মযোগী সাধকের স্মৃতিরক্ষার দিকে চোখ ফেরাতে তাঁর কতদিন লাগে, সেটাই এখন দেখার৷
দিল্লি গণধর্ষণকান্ডে অভিযুক্ত 'নৃশংস' নাবালকের ঘরে চূড়ান্ত অন্নাভাব
এক সংবাদসংস্থার সাংবাদিকের কাছে মনমোহন সিংহের নাম শোনামাত্রই অবাক চোখে দেখতে থাকেন রুগ্ন মহিলাটি। বোঝা যায়, দেশের প্রধানামন্ত্রীর নামটা তিনি শোনেননি কখনও। কাছেপিঠে একটা বাজারে চেয়েচিন্তে কাজ জোটে কখনও কখনও তাঁর। কোন সময় হয়তো কাজই পান না।পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে, ১১ বছর বয়সেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আর ফেরেনি কখনও। তারপর থেকে ধরেই নিয়েছিলেন, সেই ছেলে মারা গেছে। কিন্তু ছেলের খোঁজ নিতে যখন পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে তখন তাঁর মনের ভুল ভাঙে। জানতে পারেন, দিল্লির এক প্যারামেডিকেলের ছাত্রীর গণধর্ষণ কান্ডে অন্যতম অভিযুক্ত তাঁর সেই 'মৃত' ছেলেও। সেই নির্যাতিতা তরুণীর জন্য এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবী তুলে গোটা ভারতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
এতক্ষণ ধরে যাঁর সঙ্গে কথাবার্তা চলছিল, তিনি দিল্লিতে গণধর্ষণকান্ডে জড়িত ছয় অভিযুক্তের মধ্যে অন্যতম ও কনিষ্ঠজনের মা। মায়ের মন এতদিন স্বান্ত্বনা দিয়ে আসছিল, পাঁচ-ছয় বছর আগে পালিয়ে যাওয়া ছেলে অভাব থেকে অনেক দুরে রয়েছে। যেখানে রয়েছে ভালো রয়েছে। বাকি ছেলে মতো নিজের কাজ খুঁজে ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল হয়েছে এতদিনে। কিন্তু যে মুহুর্তে শুনলেন তাঁর ছেলে বেঁচে রয়েছেন আর ধর্ষণের মতো এক জঘন্যতম কাজে যুক্ত হয়ে পুলিশের হাতে বন্দি রয়েছে, সেই মুহুর্ত তাঁর চোখে-মুখে নেমে আসে স্তব্ধতা।
গত ১৬ ডিসেম্বর, রবিবার। উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ২৩ বছর বয়সী তরুণী তাঁর বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে সাকেত থেকে 'হোয়াইলাইন' বাসে ওঠেন। বাসটি দ্বারকা যাচ্ছিল। বাসে তখন পাঁচ-ছ'জন যাত্রী ছিলেন। মিনিট দশেক পরই দুষ্কৃতীরা উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে তরুণীটিকে। প্রতিবাদ করতে যান তাঁর বন্ধু। বেরিয়ে আসে দুষ্কৃতীদের হাতিয়ার। বেধড়ক প্রহারের পর তরুণীটিকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় কেবিনে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে নারকীয় অত্যাচার। এর পর দিল্লির বসন্ত বিহারের কাছে মহীপালপুর ফ্লাইওভারে দু'জনকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, ধর্ষণের আগে ওই তরুণীকে লোহার রড দিয়ে এমন ভাবে মারা হয়েছে যে, তাঁর শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলি বিকল হয়ে যায়। শরীর থেকে বের হয় প্রচুর রক্তও। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে চিকিত্সকদের তত্পরতায় অন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মারা যায় নির্যাতিতা তরুণী।
ঘটনায় ৬ অভিযুক্তের মধ্যে নাবালক অভিযুক্তকে আপাতত জুভেনাইল কোর্টে রাখা হলেও তাঁর বয়স নির্ধারণের জন্য অস্থি -পরীক্ষা করবে পুলিশ ।
মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয় দিল্লি
কোনও যানবাহন যদি 'মোটর ভেহিকেল্স অ্যাক্ট' মেনে না চলে, তা হলে তার পারমিট বাতিল করা হোক৷ এই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন নিপুন সাকসেনা নামে দিল্লির জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র৷ শুক্রবার সেই মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট বলে, 'দিল্লির রাস্তায় মহিলাদের কোনও নিরাপত্তাই নেই৷ মহিলাদের যোগ্য সম্মান এবং অধিকার দিতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি৷ তাঁরা যাতে নিরাপদ পরিবেশে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন সে বিষয়ে বিচারকরা চিন্তাভাবনা করছেন৷'
উল্লেখ্য, গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির যে বাসটির মধ্যে 'নির্ভয়া' গণধর্ষিতা হন, সেটির বিরুদ্ধে বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু ট্রাফিক আইন ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল৷ কিন্ত্ত পরিবহণ দপ্তরের তরফে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি৷ ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে বাসটির রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছিল৷ বাসটির জানালায় কালো কাঁচ ও পর্দা লাগানো ছিল, দিল্লিতে যা সম্পূর্ণ ভাবে বেআইনি৷ বাস-মালিককে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ধর্ষণের রাতেও অভিযুক্ত বাসচালক প্রথমে বাসটিকে অন্য রাস্তায় নিয়ে যায়, তার পরই আক্রান্ত হন প্যারা মেডিক্যালের সেই মেয়েটি৷ সেই রাতে ওই 'স্কুল বাস'টি বেশ কয়েকটি পুলিশ চেকপয়েন্ট পেরিয়ে গেলেও, সেখানে নিযুক্ত পুলিশকর্মীদের টনক নড়েনি৷
ওই গণধর্ষণের ফলে তীব্র জনরোষ তৈরি হওয়ার পর শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয় দিল্লি সরকার৷ মহিলাদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইনেরও ব্যবস্থা করা হয়৷ তবে সাধারণ অভিজ্ঞতা বলছে, ওই হেল্পলাইনে ফোন করে অভিযোগ নথিভুক্ত করতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে৷ অনেক সময় লাইনই পাওয়া যায় না৷
মহিলাদের 'কুমারিত্ব' পরীক্ষা করার প্রচলিত পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও তাঁর আবেদনে প্রশ্ন তুলেছেন নিপুন৷ এ ছাড়াও, তাঁর দাবি, অপরাধীদের হাতে কেউ আহত হলে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ 'ক্রিমিনাল কমপেনসেশন বোর্ড' গঠন করা হোক৷ নিপুন জানান, ১৬ বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট এই বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিলেও, এখনও তা বাস্তবায়িত করার কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি৷ নিপুনের আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার, জাতীয় মহিলা কমিশন এবং দিল্লির পরিবহণ দপ্তরের কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণ ও দীপক মিশ্রের একটি ডিভিশন বেঞ্চ৷ পাশাপাশি, 'কুমারিত্ব' পরীক্ষার বর্তমান পদ্ধতি মহিলাদের পক্ষে 'অবমাননাকর' বলেও মত প্রকাশ করে শীর্ষ আদালত৷
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
অন্যের সাফল্যে মনের মধ্যে এমন বেদনা এর আগে কখনও হয়নি। আজ গাঁধীমন্দিরের বিশাল প্রাঙ্গণে ষষ্ঠ 'ভাইব্র্যান্ট গুজরাত' (বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় 'চনমনে গুজরাত') শীর্ষক শিল্প সম্মেলনের বিশালতায় এক দিকে শিল্পপতি, অন্য দিকে বিদেশি প্রতিনিধিদের চাঁদের হাট দেখতে দেখতে বারবার মনে হচ্ছে, গুজরাত যা পারে, আমাদের পশ্চিমবঙ্গ তা পারে না কেন? মধ্যাহ্নভোজনে টোম্যাটো আর তুলসীপাতার শোরবা খেতে খেতে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "কোনও কিছু ভাবলে সব সময় বড় করে ভাববে। থিঙ্ক বিগ।" গুজরাতের ভাডনগর গ্রাম থেকে উঠে আসা নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই বিশ্ব সম্মেলন দেখে বোঝা যায়, লোকটা বৃহতেরই কারবারি। মনোভাবটা হল হাতি মেরে ভাণ্ডার লুঠের। মঞ্চে মুকেশ অম্বানী থেকে রতন টাটা, কান্নাকাটি করে, হাতেপায়ে ধরেও আজ যাঁদের পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে মুকেশ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, "নরেনভাই, আমি কিন্তু ছ'টা সম্মেলনেই হাজির থেকেছি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট অ্যাটেন্ডেন্স।" আর রতন টাটা বলছেন, "আমি আগে একবার এই সম্মেলনে এসে বলেছিলাম, গুজরাতে যে বিনিয়োগ করবে না, সে হল স্টুপিড। আমি নিজেও তো একদা এই মহামূর্খই ছিলাম।" আর তার পরই টাটা-সংস্থার এই সদ্য প্রাক্তন কর্ণধার, গুজরাতিভাষী পার্সি রতন টাটা ঘোষণা করলেন, "আমি কিন্তু এখন আর বোকা নই। তাই ঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করছি।" টাটা কেমিক্যালস ৩৪ হাজার কোটি টাকা গুজরাতে বিনিয়োগ করবে, এ কথা তিনি ঘোষণা করলেন। কিন্তু ঘুরেফিরে বারবার মনে প্রশ্নটা জাগছে। কেন পশ্চিমবঙ্গ পারে না? এই বৃহৎ রাজসূয় যজ্ঞটি সুচারু ভাবে সম্পাদিত। ছবির মতো নিবেদিত। সকলকে মুগ্ধ হতেই হবে। এমন নয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পের কথা বলছেন না। হলদিয়াতেও বেঙ্গল লিড্স হতে চলেছে ১৫ জানুয়ারি। দিল্লির পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে মুম্বই শহরে আবার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সাংবাদিক বৈঠক করে আর 'শিল্প শিল্প' করে চিৎকার জুড়লেই যে রাজ্যে শিল্প আসবে, এমন নয়। | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
'ভাইব্র্যান্ট গুজরাত'-এ আপ্লুত। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুকেশ অম্বানী, অনিল অম্বানী এবং রতন টাটা। শুক্রবার গাঁধীনগরে। ছবি: পিটিআই | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
চনমনে গুজরাতে উপস্থিত কূটনীতিক, আমলা এবং শিল্পপতিরা একমত, যে রাজ্যে আজও রাজনৈতিক হিংসা প্রধান উপজীব্য, খোদ রাজ্যপাল, দেশের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজ্যের গুন্ডারাজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সততার সঙ্গে ডাকলেও এই শিল্পপতিরাই কলকাতার নাম শুনে পালাবেন। শুধু তো টাটা-অম্বানী নন, কুমার মঙ্গলম বিড়লা থেকে চিন, জাপান, এমনকী ব্রিটেন, আমেরিকা পর্যন্ত গুজরাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী। ব্রিটিশ হাইকমিশনার জেম্স বিভান তো বলেই দিলেন, গুজরাতের আর্থিক বৃদ্ধির হার চিনের থেকেও বেশি। গত দশ বছর ধরে গোটা দেশের গড় বৃদ্ধির থেকে গুজরাত তাদের আর্থিক হার বেশি রেখে চলেছে। নরেন্দ্র মোদী বললেন, "গুজরাতের বৃদ্ধির হার শতকরা দশ ভাগের থেকে বেশি।" তবে পশ্চিমবঙ্গ চিরকাল এমন ছিল না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময়ে পশ্চিমবঙ্গ মাথাপিছু আয়ের হিসেবে ছিল শীর্ষে। ১৯৬৪-'৬৫ সালে পঞ্জাব আর গুজরাত পশ্চিমবঙ্গকে ছাপিয়ে যায়। তার পরে কর্নাটক, তামিলনাড়ুও এগিয়ে যায়। এই ভাবে পশ্চিমবঙ্গ নেমে আসে সপ্তম স্থানে। বন্দরের দিক থেকেও পিছিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাত, দু'টির সমুদ্র উপকূলবর্তী রাজ্য। গুজরাতে নতুন নতুন একের পর এক বন্দরের পত্তন হচ্ছে। তা নিয়ে এই সম্মেলনে প্রদর্শনী হচ্ছে। রাজ্যের মন্ত্রীরা তা নিয়ে প্রশ্নোত্তর করছেন। আর কলকাতা থেকে চলে যাচ্ছে এবিজি। সাতচল্লিশ সালের মোট বাণিজ্যের ৪৪ শতাংশ কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে হত। ষাটের দশকের শেষে সেটাই কমে দাঁড়ায় ৮ থেকে ১০ শতাংশে। পশ্চিমবঙ্গের এই পরিণতির জন্য কেন্দ্রের নীতিকে বামেরা একচেটিয়া ভাবে দায়ী করে গিয়েছেন। আর বামপন্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে, উগ্র শ্রমিক আন্দোলন, বন্ধ-ধর্মঘট প্রবণতা, কর্মবিমুখতার। তাই আজকের এই পরিণতির জন্য শুধুই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই দায়ী, এমন নয়। স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশই অবনতির পথেই গিয়েছে। সিপিএমের নেতিবাচক রাজনীতি রাজ্যকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময় যে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের একটা চেষ্টা হয়েছিল, তা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ থেকে নরেন্দ্র মোদী, কেউই অস্বীকার করেন না। কেন না তথ্য বলে, ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ হয়েছিল ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আর ২০১০ সালে বিনিয়োগ হয় ১০ হাজার কোটি টাকা। নন্দীগ্রামের গুলিচালনার প্রশাসনিক ব্যর্থতা পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে দিল বটে। কিন্তু বুদ্ধবাবুর শিল্পের অভিমুখ যে সঠিক ছিল, তা কিন্তু গুজরাতে উপস্থিত শিল্পপতিরা অনেকেই আজ স্বীকার করলেন। শিল্পপতিরা বলছেন, মমতা যতই শিল্পের কথা বলুন, বড় শিল্প ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে বেকারি দূর করা সম্ভব নয়। বড় শিল্প করতে গেলে বড় জমি অধিগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। ল্যান্ড ব্যাঙ্কে যে জমি রয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তা মূলত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের অধিগৃহীত জমি। কারণ, নতুন সরকার কোনও জমি অধিগ্রহণ করেনি। দ্বিতীয়ত, 'আরবান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট'-এর সংশোধন হলেও রাজ্য সরকার সেগুলি 'কেস টু কেস' অনুমোদন দেবে বলেছে। অধিকাংশ শিল্পপতি বলছেন, 'কেস টু কেস' মানেই দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়া। তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে নীতিগত ভাবে এসইজেড-এও সায় দেবে না মমতার সরকার। ফলে বহু এসইজেড সচল হতে পারছে না। রাজারহাটে সজ্জন অগ্রবালের ফিন্যান্সিয়াল হাবের শিলান্যাস করেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অথর্র্মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা তার অনুমোদন নাকচ করেছিলেন। বদলে যে হাব তিনি করবেন বলেছিলেন, সেটাও কিন্তু বাস্তবায়িত হওয়া সহজ নয়। অথচ নরেন্দ্র মোদী গত কাল উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রথম গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল হাবের, যার নাম 'গিফ্ট সিটি'। এটা রাজ্যের সর্বোচ্চ টাওয়ার। ২৮ তলা। ৮৮৬ একর জমিতে ৭৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এই ফিন্যান্সিয়াল হাবের মাধ্যমে আগামী দশ বছরে দশ লক্ষ চাকরি হবে। রাজ্যে শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তির উপদেষ্টা সৌগত রায় অবশ্য বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো রাজ্যে জনবসতির ঘনত্ব খুব বেশি। ছোট ছোট জমি নিয়ে ছোট ছোট শিল্পের কথা ভাবতে হবে। কিন্তু ছোট শিল্পই বা কী হচ্ছে? ছোট শিল্পের নামে ডোমজুড়ের জরি শিল্পে মাথা পিছু আয় কতটা বাড়বে, কী ভাবে বাড়বে, তার কি কোনও সমীক্ষা রাজ্য সরকার করেছে? নরেন্দ্রে মোদী আজ জানিয়েছেন, তিনি ছোট উৎপাদনকারীদেরও বিশেষ ভাবে মদত দিচ্ছেন এবং চিন ও জাপানের বিশেষ সহযোগিতা পাচ্ছেন। আসলে মূল সমস্যাটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির। মোদী আজ বললেন, "হিংসা ও সংঘাতের আবহ ছেড়ে সকলকে নিয়ে চলার মানসিকতা দরকার। কেউ আমার শত্রু নয়। ভাইব্র্যান্ট গুজরাত কোনও একটি সম্প্রদায়, কোনও একটি জাতির নয়। সব মানুষের।" মধ্যাহ্নভোজে নরেন্দ্র মোদীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বাঙালি কি বেশি শাক্ত ধর্মে দীক্ষিত? আর গুজরাতিরা কি একটু বেশি বৈষ্ণব? তাই কি ওখানে বেশি দলাদলি, বিনয়-বাদল-দীনেশ, নকশালবাড়ি থেকে আজকের রাজনৈতিক সংঘর্ষ? তার সঙ্গে শান্তশিষ্ট গুজরাত কি মেলে না? গাঁধী এবং সুভাষের সংঘাতের এই ভাবেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন নীরদ চৌধুরী। নরেন্দ্র মোদী হাসতে হাসতে বলেন, "এখানেও সোমনাথের শিবের মন্দির রয়েছে। তবে এখানে শিব শান্ত। তাণ্ডব নৃত্য করেন না।" মঞ্চে উপবিষ্ট শিল্পপতিদের মধ্যে বাঙালি ছিলেন এক জনই। যিনি কলকাতাতেও ব্যবসা করছেন। অনাবাসী শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। বিমানবন্দর থেকে পুলিশ এসকর্ট দিয়ে যে ভাবে তাঁকে মঞ্চে নিয়ে আসা হল, তা দেখে তিনি নিজেই বিস্মিত। মুখ্যমন্ত্রী এবং শিল্পমন্ত্রী আলাদা আলাদা ভাবে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে গুজরাতের বিদ্যুৎপ্রকল্প ও ফিন্যান্সিয়াল হাব তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কেন এমন হয়, সমাজতাত্ত্বিকরা বিশ্লেষণ করবেন। কিন্তু আপাতত ছবির মতো সাজানো সুশৃঙ্খল শিল্পোদ্যোগী একটা রাজ্যকে দেখে বাঙালি হিসেবে বিষাদগ্রস্ত হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনও বিকল্প নেই। http://www.anandabazar.com/12bus1.html
|
No comments:
Post a Comment