Wednesday, January 2, 2013

বহিস্কৃত অপাংক্তেয় ব্রাত্য অন্ত্যজ ভুখা মানুষের বাঁচার শেষ রাস্তাও বন্ধ।অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বিপুল করের বোঝা থেকে বাঁচল না আমেরিকার আম আদমি। পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে `ফিস্কাল ক্লিফ`। বাজেটপলাশ বিশ্বাসপপ পলাশ বিশ্বাস

বহিস্কৃত অপাংক্তেয় ব্রাত্য অন্ত্যজ ভুখা মানুষের বাঁচার শেষ রাস্তাও বন্ধঅনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বিপুল করের বোঝা থেকে বাঁচল না আমেরিকার আম আদমি। পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে `ফিস্কাল ক্লিফ`। বাজেটপলাশ বিশ্বাসপপ

পলাশ বিশ্বাস

অশনিসংকেত বিশ্বায়িত তৃতীয় বিশ্বের জন্য
।মার্কিন সাদা  চামড়ার বর্ণবিদ্বেশী সাম্রাজ্যবাদী জায়নবাদী আধিপাত্যকে অতিক্রম করে যে বহুজন সমাজ অশ্বেত বারাক ওবামাকে পুনরায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত করল,তার স্বার্থরক্ষা করতে পারলেন না ওবামা।বলাই বাহুল্য ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের মত তৃতীয়বিশ্বের আধিপাত্যবাদী কর্তৃত্ব সংস্কার ও মন্দার অজুহাতে কি নির্মমভাবে করপোরেট গণসংহারনীতিতে পূঁজি ও বাজারের স্বার্থে সাধারণ মানূষকে বলির পাঁঠা করতে চলেছে।দিল্লীতে আন্না হাজারে , অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও ইদানীং গণধর্ষণবিরোধী বিশ্বায়িত নাগরিক বসন্তের গর্জন শোনা গেছে। নীতি নির্ধারণে এই ক্রয়শক্তিসম্পন্ন নবধনাঢ্য নবমধ্যমশ্রেণীর স্বার্থ সর্বোপরি। বহিস্কৃত অপাংক্তেয় ব্রাত্য অন্ত্যজ ভুখা মানুষের বাঁচার শেষ রাস্তাও বন্ধঅনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বিপুল করের বোঝা থেকে বাঁচল না আমেরিকার আম আদমি। পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে `ফিস্কাল ক্লিফ`। বাজেট ঘাটতি এবংএই ফিস্কাল ক্লিফের জেরে মোট ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যয়সংকোচ এবং করের বোঝা বইবে মার্কিন অর্থনীতি। ভারতে ধর্মরাষ্ট্রবাদের সর্বোচ্ছ ধর্মাধিকারি রাষ্ট্রপতি কীর্ণাহারের ব্রাঙ্মণসন্তান প্রণব মুখার্জী, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, প্রণবের করপোরেট সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির নয়া আক্রামক অবতার তামিল বেনিয়া চিদম্বরম,অসংবৈধানিক শাষক সম্প্রদায় মন্টেক বিশ্বব্যান্ক এজেন্ট ব্রিগেড, নাগরিকত্ব ধ্বংসের মহানায়ক নন্দন নিলেকণি প্রমুখ নিয়মিত পুঁজির অবাধ প্রবাহের যুক্তিতে সমরস সার্বজনিন বৃদ্ধির স্বপ্ন ফেরি করে সর্বদলীয় সম্মতিতে মনুস্মৃতি ব্যবস্থা কায়েম রাখতে একরটির পর একটি আইন প্রণয়ণ করে সংকেত দিয়ে চলেছেন, যে নবধণাঢ্য ধর্মোন্মাদী জাতীয়তাবাদে প্রবুদ্ধ ক্রয়শক্তিধারক নয়া ভারতউদয়েই অস্বমেধ নরসংহার অভিযান তীব্রতর হবে। দিল্লী গণধর্ষণের বিরুদ্ধে নারীর সামাজিক অবস্থানে কোনও পরিবর্তন না করে, নারী সশক্তীকরণের পথে যাবতীয় বাধা সৃষ্টি করে নারীকে বাজারে ক্রয়বিক্রয় যোগ্য পণ্য করে ধর্ষণরোধে মধ্যযুগীন মৃত্যুদন্ড ও রাসায়নিক ক্রিয়ায় বর্বর মনুস্মৃতিশাস্তি বিধান ধর্মজাতীয়তাবাদ অনুযায়ী শাস্ত্রসম্মত ফতোয়াধর্মী সংবিধানের ও সামপ্রদায়িক দন্ডবিধানের অভিমুখ নির্দেশিত করতে চলেছে কর্তৃত্ব বর্ণহিন্দু করপোরেট জায়নবাদী রাজনীতিক সমর্থনে। বিশ্বায়িত ভারতে একসুরে এক তালে সোনিয়া গান্ধী, মায়াবতী, মমতাব্যানার্জি,জয়ললিতা, সুষমাস্বরাজ  প্রমুখ মহিলানেত্রী সহ ভারতীয় রাজনীতি ধর্মজাতীয়তাবাদের ভাষায় কথা বলছেন। বিশ্ববাণিজ্য ও বিশ্বায়ণের আদর্শ পরিস্থিতি। আমেরিকা সারা পৃথীবীর এক চতুর্থ বোগের অধিকারী। আমেরিকান ফিস্কাল ক্লিফ তাই বাকী বিশ্বের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে।বাংলাদেশের জনগণও রেহাই পাবে না। আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপ স্থির হয় দিল্লীর ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের অঙ্গুলিহেলনে, বাংলাদেশে এ তথ্য নূতন করে প্রমাম করার প্রয়োজন নেই।কিন্তু শেখ হাসিনার পরিবর্তে বেগম খালেদা ক্ষমতায় এলেই যে পরিস্থতি পালটে যাবে, এমন প্রত্যাশা করা বাস্তববিরোধী। বিশ্বায়িত জায়নবাদী পৃথীবীতে সব দেশের সরকার ও অর্থব্যবস্থা জায়নবাদী হিল্দুত্বের সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যব্যবস্থার অন্তরগত। গণআন্দোলন ও গণতন্ত্রের যাবতীয় কাঠামো, মীডিয়া তারই নিয়ন্ত্রণে।বায়োমেট্রিক ডিজিটাল নাগরিকত্বের মহিমা নকদ ক্যাশ ভর্তুকি প্রকল্পে গৌরবান্বিত হচ্ছে আর আপামর বাঙ্গালি ভোগের মোচ্ছবে মৃত্যুর পদধ্বনিও শুনতে পাচ্ছে না।তৃণমুলী স্থাপণা উত্সবে বাঙালিয়ানার উত্কর্ষ দেখেও আম জনতার হুঁশ নেই।জয় মা কালী।কল্পতরু উত্সবেই ঠাকুর যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে দেবেন


প্রভূত ঋণের বোঝা লাঘব করতে সরকারি কোষাগারের ব্যয় সংকোচ ও ব্যাপক হারে কর বৃদ্ধি করার এই নীতির চালু হওয়ার কথা ছিল নতুন বছরের শুরুর দিন থেকেই। তবে দেশবাসীর উপর থেকে এই বিপুল করের বোঝা লাঘব করতে চেষ্টা চলেছে হোয়াইট হাইস থেকে হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভ, সর্বত্রই। কিন্তু বছরের শেষ দিনে, অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগে কোনও সমাধান সূত্র না মেলায় এক অর্থে কার্যকরী হয়ে গেল ফিস্কাল ক্লিফ। ফলে চূড়ান্ত চাপের মুখে মার্কিন করদাতারা।

সেনেট-নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে ভোটাভুটির দিকে এগোলেও রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভ মঙ্গলবার বেলার আগে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারবে না। তবে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আগেই বিল এনে বিষয়টি প্রতিরোধ করার ব্যাপারে আশাবাদী মার্কিন কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং হোয়াইট হাউস।

অনুমতি ছাড়াই পুলিশের নাকের ডগাতে চলল তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে উদ্দাম নাচ। উড়ল টাকাও। ঘটনার কেন্দ্রস্থল দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভাঙ্গরে। তৃণমূলের জেলা পরিষদ মীর তাহের আলির উদ্দ্যোগেই দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ভাঙ্গর থানার সামনে আয়োজন করা হয় নাচ-গানের আসর। শীতের ছুটির আমেজে, গভীর রাত পর্যন্ত থানার সামনেই চলল শালীনতার মাত্রাছাড়া উদ্দাম নাচের জলসা। সেই জলসাতে মেতেছিলেন তৃণমূলের বেশকয়েকজন নেতৃত্বরাও। সংস্কৃতিমনস্ক তৃণমূল নেত্রীর দলেই এ ভাবে প্রতিষ্ঠা দিবস পালনকে ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।পার্ক স্ট্রিটে নির্যাতিতা এবার তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে চলেছেন। কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করতে চলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাটিকে 'সাজানো ঘটনা' বললেও, কোনও দিন অসম্মানজনক কিছু বলেননি, যা কাকলি বলেছেন। 

দিন কয়েক আগে কাকলি পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাকে খদ্দেরের সঙ্গে অভিযোগকারিণীর পেশাগত গোলমালের পরিণতি আখ্যা দিয়েছিলেন। এর পরই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। যদিও কাকলি পরে দাবি করেন, তাঁর বক্তব্য বিকৃত করে সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। যদিও পার্ক স্ট্রিটে নির্যাতিতা তা মানছেন না।

 পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের মন্তব্যের জের৷ তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷ এছাড়াও পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে তদন্ত কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা জানতে পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন৷ ব্যঙ্গচিত্রকাণ্ডে যে সংঘাতের শুরু, রাজ্য সরকার ও মানবাধিকার কমিশনের সেই সংঘাতে এবার নয়া মাত্রা৷ 
পার্কস্ট্রিটকাণ্ড নিয়ে জোড়া অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। 
গত ২৮ ডিসেম্বর সিএনএন আইবিএন চ্যানেলে দেখানো হয়, তাঁদের টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেছেন, এটা আদৌ ধর্ষণের ঘটনা নয়৷ বরং মহিলা ও খদ্দেরদের মধ্যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির জের৷ 
অবশ্য, পরমুহূর্তে এবিপি আনন্দে খোদ কাকলি, ওই মন্তব্যের কথা কার্যত অস্বীকার করেন৷ অল্প কথা বলেই ফোন কেটে দেন৷
কাকলির মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন পার্কস্ট্রিটকাণ্ডের নির্যাতিতা৷ বলেন, একজন মহিলা হয়েও এমন মন্তব্য লজ্জাজনক৷ এবার তৃণমূলের মধ্যে কাকলি-কাঁটায় আরও চাপ বাড়াল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷ তৃণমূল সাংসদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে  স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷
প্রায় ১১ মাস হয়ে গেল৷ এখন পার্কস্ট্রিট কাণ্ডের নির্যাতিতা সুবিচার পাননি৷ অভিযুক্তরাও অধরা৷ চার্জও গঠন করতে পারেনি পুলিশ৷ প্রশ্নের মুখে প্রশাসন৷ কোথায় তদন্ত? কোথায় অভিযুক্তরা? এই প্রশ্নে বারবার সরব হচ্ছে বিভিন্ন মহল৷ 
পার্কস্ট্রিট কাণ্ডে তদন্ত কোন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তা জানতে চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই রিপোর্ট দিতে বলেছেন তিনি৷ মূল অভিযুক্তের অবস্থান কী তাও জানতে চেয়েছে কমিশন৷
এর আগেও পার্ক স্ট্রিটকাণ্ডের নাম না করে সরকারের বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের অভিযোগ তোলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়৷ এরপর এ দিন কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিরুদ্ধে তদন্ত ও পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট তলবে সরকারকে ফের অস্বস্তিতে  ফেলল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ 

কলকাতা: ধর্ষণ একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা, অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার৷ তবে তা চর্চার বিষয় হতে পারে না৷ ধর্ষণ নিয়ে মুখ খুলে এই প্রতিক্রিয়া জানালেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন৷ আজ রাজভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ধর্ষণ হওয়ার পরের পদক্ষেপের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ধর্ষণ রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া৷
পাকস্ট্রিটকাণ্ড থেকে দিল্লির গণধর্ষণ৷ একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনায় মাথা হেঁট হয়েছে গোটা দেশের৷ দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন৷ কিন্তু পাকস্ট্রিট কাণ্ডে? এখনও চার্জশিটই দাখিল করতে পারেনি পুলিশ৷ পাকস্ট্রিটকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল, এটি সাজানো ঘটনা৷ মমতাপন্থী নাট্যকার অর্পিতা ঘোষ কার্যত প্রশ্ন তুলেছেন পাকস্ট্রিটের অভিযোগকারিণীর চরিত্র নিয়ে৷ তবে ওই মর্মান্তিক ঘটনার এক বছরের মাথায় কার্যত সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার৷ সিএনএন আইবিএন চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, এটা আদৌ ধর্ষণের ঘটনাই নয়৷ বরং মহিলা ও খদ্দেরদের মধ্যে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির জের! সেই বিতর্কের মাঝেই বুধবার মুখ খুললেন রাজ্যপাল৷ বললেন, ধর্ষণ জঘন্য ঘটনা৷ এধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়৷ ধর্ষণের ঘটনা বন্ধ করার দায়িত্ব সরকার, প্রশাসন, রাজ্যপাল সকলের ওপর বর্তায়৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যপাল ধর্ষণ রোধে যেমন গোটা সমাজকে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন, তেমনই রাজ্য সরকার থেকে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকেও বার্তা দিতে চেয়েছেন৷ অভিযোগকারিণীর পাশে থাকার কথা বলে নাম না করে কাকলিকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন রাজ্যপাল৷ এমনকি সরকারের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনকেও৷ 

মাওয়ের জন্মদিনে পোস্টার ছিঁড়ল চিন

বেজিং:  চিনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। সূচনা করেছিলেন এক নয়া যুগের। সমাজতন্ত্রের পথ অনুসরণ করে চিনে কায়েম করেছিলেন কমিউনিস্ট শাসনের সুদৃঢ় ভিত্তিপ্রস্তর। জন্ম দিয়েছিলেন গণ প্রজাতন্ত্রী চিনের। দেশের কৃষি, ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, এক কথায় গোটা অর্থনীতিটাকেই সামাজিক মালিকানার আওতায় এনেছিলেন তিনি। কৃষি প্রধান চিনে প্রয়োগ করেছিলেন মার্ক্সবাদের তত্ত্ব। ১৯৪৯ সালে গণ প্রজাতন্ত্রী চিনের জন্মের কাল থেকে আমৃত্যু একার দায়িত্বে পরিচালনা করে গিয়েছেন গোটা দেশটাকে। সঙ্গে সঙ্গেই সামলে ছিলেন দলীয় প্রধান হওয়ার সমস্ত দায়িত্বও। তিনি আর কেউ নন। তিনিই 'চেয়ারম্যান মাও', মাও জে দং। বুধবারই ছিল তাঁর ১১৯তম জন্মদিন। কিন্তু কী ভাবে মাও-এর হাতে গড়া চিন পালন করল তাঁর জন্মদিনটি?
চিনেতে যখন এক দিকে চলছিল মাও জে দংয়ের জন্মদিন পালনের উৎসব। ঠিক তখনই হুনান প্রদেশের এক অনুষ্ঠানে জমায়েত হয়েছিলেন বুড়ো, আধ-বুড়ো, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। চলছিল 'চেয়ারম্যান মাও'য়ের স্মৃতি রোমন্থন। পরিবেশন করা হচ্ছিল একের পর এক গণ সঙ্গীত। মাও-এর যুগেই বেড়ে ওঠা এই সব ৬০ পেরোনো মানুষদের কাছ থেকে এইটাইতো আশা করা যায়। 
কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের উপর মাও এর কী প্রভাব রয়েছে ? হুনান প্রদেশে যখন চলছিল মাওকে সন্মান জানানোর পালা তখনই দেশের অন্য প্রান্তে চলছিল মাও এর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে তাঁর তত্ত্বকে পদদলিত করার অদম্য চেষ্টা। অর্থনৈতিক সংস্কারের স্রোতে ভাসমান বর্তমান প্রজন্ম সরাসরি পথে নেমে বিরোধিতা করছিলেন মাও-এর চরমপন্থী মতাদর্শের। জন্মদিনের দিনটায় তাঁদের কাছ থেকে বিন্দু মাত্রও শ্রদ্ধা পেলেন না মাও। বরং পেলেন তিরস্কার। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও দেশকে এক লাফে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কড়া নীতিগুলোর জন্য এ দিন তাঁকে যতপরনাস্তি দুষলেন বর্তমান প্রজন্ম।

: প্রশান্ত মহাসাগরে দ্বীপ বিতর্ক, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উত্‍‌ক্ষেপণ, চিনের ক্রমশ বাড়তে থাকা সামরিক ক্ষমতা -- নতুন বছরে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ে জোয়ার আনবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক স্তরের নামকরা অস্ত্র বিক্রেতারা৷ এই দলে সামিল লকহিড-মার্টিন কর্পোরেশন, বোইং কোম্পানি, নরথ্রপ-গ্রুমান কর্পোরেশনের মতো সংস্থাও৷

 বহু ব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসা, একক ব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসা, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ, পাওয়ার এক্সচেঞ্জ, সম্প্রচার, নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এবং সম্পদ পুনর্গঠন সংস্থা এই সাতটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্ত্ত দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমানের ওপর এর কোনও প্রভাব তেমনভাবে লক্ষ্য করা যায় না৷ 

লাইসেন্স বাতিল করা হল কিংফিশারের
এই সময়: শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হল কিংফিশারের লাইসেন্স। সংস্থা কী ভাবে চালু হবে সে ব্যাপারে আর্থিক পরিকল্পনা জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত লাইসেন্স বাতিলই হল বিজয় মালিয়ার কিংফিশার এয়ারলাইন্সের৷ ঋণে জর্জরিত সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন উড়ান সংস্থার সঙ্গে কথা বললেও বিনিয়োগ নিয়ে এখনও কোনও পরিকল্পনার কথাই তারা জানায়নি৷

কর্মীদের বেতন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ও একের পর এক উড়ান বাতিল হওয়ায় ২০ অক্টোবর কিংফিশারের উড়ানের অনুমতি প্রত্যাহার করে নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ৷ তার কিছুদিন পরে কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও মাত্র দু'মাসের বেতন দেওয়া হয়, যদিও মেয়াদ ছিল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত৷

লাইসেন্স রিনিউ করার জন্য অবশ্য এর পরেও হাতে দু'বছর সময় থাকবে কিংফিশারের৷ ওই সময়ের মধ্যে ব্যাঙ্ক, করদপ্তর, বিমানবন্দর সহ সবক'টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তাদের পরিকল্পনার কথা পরিস্কার ভাবে জানাতে হবে৷ তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে৷

কয়েকদিন আগেই তাদের পরিকল্পনার কথা ডিজিসিএকে জানিয়েছিল কিংফিশার৷ কিন্ত্ত ফের উড়ান চালু করতে হলে যে অর্থ দরকার তার সংস্থান কী ভাবে হবে সে কথা সংস্থাটি জানায়নি, বুধবার এ কথা বলেছেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী অজিত সিং৷

গতমাসে বিজয় মালিয়ার ইউবি গ্রুপেরই সংস্থা ইউনাইটেড স্পিরিটে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ব্রিটেনের সংস্থা ডিয়াজিও৷ কিন্ত্ত এখনও পর্যন্ত জানানো হয়নি ওই টাকার কোনও অংশ কিংফিশারের পুনরুজ্জীবনে ঢালা হবে কিনা৷

এক বছর ধরেই কিংফিশার জানাতে পারছে না তারা কী ভাবে টাকার সংস্থান করবে৷ তাদের আট হাজার কোটি টাকা দেনা রয়েছে ব্যাঙ্কে৷ রয়েছে সমপরিমাণ লোকসানের বোঝাও৷ ব্যাঙ্কগুলির কনসর্টিয়াম এ নিয়ে চিন্তিত৷ সবচেয়ে বেশি টাকা ঋণ দেওয়া স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াও জানিয়ে দিয়েছে কিংফিশারকে ওড়াতে তারা সব রকম সাহায্য করবে তবে আগে নতুন করে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আনতে হবে সংস্থাকে৷

ইতিমধ্যেই আবু ধাবির বিমান সংস্থা এতিহাদের সঙ্গে কথা বলেছে কিংফিশার৷ শোনা যাচ্ছে তারা বিনিয়োগ করবে৷ কিন্ত্ত এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি ইউবি গ্রুপ৷ এমনকি ডিসিসিএ-র কাছে তারা কোনও সময়ও চায়নি বলে জানা গিয়েছে৷

এ দিন বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে কিংফিশারের শেয়ারসূচক ২.৯৫ শতাংশ (১৪.৮৩ পয়েন্ট) পড়েছে৷

২০১২ সালের প্রথম দশ মাসে (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) দেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের পরিমান গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ সংকুচিত হয়ে ২ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার হয়েছে৷ ২০১১ সালে এই পরিমান ছিল ৩ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার৷ 

তবে সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ আগামী বছরে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমান বাড়াবে বলেই ধারনা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাদের৷ 

শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের এক কর্মীর মতে, '২০১৩ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমান বাড়বে বলেই আমাদের আশা৷' রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডি কে জোশীরও এক মত৷ তিনি বলেন, 'দেশে অতিরিক্ত বিনিয়োগের সংস্থান করার জন্য সরকারকে অর্থনীতি ক্ষেত্রে আরও সংস্কার করতে হবে৷ আন্তর্জাতিক এবং দেশের আভ্যন্তরীণ কারণে ২০১২ সাল ভালো না কাটলেও ২০১৩ সালে অবস্থার উন্নতি হতে পারে৷' 

সারা বিশ্বে আর্থিক অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এই দেশেই বিনিয়োগ করতে উত্সাহ প্রকাশ করে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের নিরাশার পরিবেশ কাটিয়ে আশার বাতাবরণ তৈরির উদ্দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং৷ 

তবে অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণে ধীর গতিতে চলায় সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে৷ এর পরেই বহু ব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ সহ অসামরিক বিমান পরিবহন ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সবুজ সংকেত দেয় সরকার৷ এছাড়াও সম্প্রচার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ৪৯ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশ করা হয়৷ বিদ্যুত্ ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগের পথ মসৃন করে সরকার৷ 

এর পাশাপাশি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে সরকারের আগাম সম্মতি ছাড়াই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়৷ সম্পদ পুনর্গঠনকারী সংস্থাগুলির দক্ষতা বাড়াতে এই ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এই মূহূর্তে দেশে মোট ১৪ টি অ্যাসেট রিস্ট্রাকচারিং সংস্থা আছে, যার মধ্যে দেশের ৬০ শতাংশই নিয়ন্ত্রন করে এআরসিআইএল (অ্যাসেট রিস্ট্রাকচারিং কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড)৷ অন্যদিকে আমদানি খাতে খরচ কমাতে খারাপ মানের যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেকেন্ড হ্যান্ড যন্ত্রাংশ আমদানি করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার দেওয়ার যে নীতি প্রচলিত ছিল তা বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার৷ 

কেন্দ্রের শিল্প নীতি ও উন্নয়ন দপ্তরও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তি বছরে দু'বারের বদলে একবার প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের হার আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চায় এই দপ্তর৷ 

মঙ্গলবার থেকে দেশের ২০টি জেলায় চালু হল ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার৷ সোমবার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ১ জানুয়ারি থেকে সরকারি ২৬টি সামাজিক প্রকল্পের টাকা সরাসরি নির্দিষ্ট প্রাপকদের কাছে পৌঁছে যাবে৷ যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাশ ট্রান্সফারের প্রথম পর্যায়ে খাদ্য, সার ও জ্বালানি ভতুর্কির নগদ টাকা ট্রান্সফার করা যাবে না৷ 

১ জানুয়ারি থেকে দেশের ৫১টি জেলায় নগদ ট্রান্সফারের ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছিল সরকার৷ কিন্তু 'লক্ষ্যমাত্রা' কমিয়ে এনেছে সরকার৷ আপাতত ২০টি জেলায় এই ব্যবস্থা চালু হবে৷ আগামী ১ মার্চের মধ্যে মোট ৪৩টি জেলাকে ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার প্রকল্পের আওতায় আনা হবে৷ কিন্ত্ত রান্নার গ্যাস, ডিজেল ও কেরোসিনে ভর্তুকির টাকা ট্রান্সফার এখনই হবে না৷ খাদ্য ও সারের ভর্তুকির টাকাও নগদে মিলবে না এখন৷ অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম বলেন, ক্যাশ ট্রান্সফারের আওতায় আপাতত এই তিন ভর্তুকির টাকা পড়ছে না৷ কারণ এসব ক্ষেত্রের ভর্তুকির টাকা সরাসরি প্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেলতে কিছু সমস্যা রয়েছে৷ পদ্ধতিও বেশ জটিল৷ তাই ক্যাশ ট্রান্সফার চালুর প্রথম পর্যায়ে এই টাকা থাকছে না৷ কিন্ত্ত কবে থেকে ক্যাশ ট্রান্সফারের আওতায় জ্বালানি-সার-খাদ্যে ভর্তুকির টাকা আসবে? এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, 'কবে থেকে এসব ক্ষেত্রে ভর্তুকির টাকা দেওয়া চালু হবে সেটা এখনও ঠিক হয়নি৷ তবে প্রথম পর্যায় দেওয়া হচ্ছে না৷' 

সরকারের লক্ষ্য ছিল ৩৪টি প্রকল্পের টাকা ৪৩টি জেলায় ক্যাশ ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়া৷ কিন্ত্ত অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম বলেছেন, ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে চায় সরকার৷ যাতে এই উদ্যোগে বেশি ত্রুটি বিচ্যুতি না থাকে৷ ১ জানুয়ারি থেকে ২০টি জেলা, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১টি জেলা ও ১ মার্চ থেকে ১২টি জেলা ক্যাশ ট্রান্সফারের আওতায় আসবে৷ প্রথম দফার ২০টি জেলায় ১ জানুয়ারি সাতটি প্রকল্পের টাকা- তফসিলি জাতি-উজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণিকে স্কলারশিপ, ইন্দিরা গান্ধী মাতৃত্ব সহায়তা যোজনা, ধনলক্ষ্মী প্রকল্প ও তফলিসি ও অনগ্রসরদের স্টাইপেন্ড প্রকল্পের টাকা প্রাপকদের হাতে পৌঁছবে৷ বাকি প্রকল্পের টাকা ধীরে ধীরে আসতে থাকবে৷ 

মূলত আধার কার্ডের মাধ্যমেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের টাকা পাবেন প্রাপকরা৷ আধার নম্বরের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট 'লিঙ্ক' করা রয়েছে৷ কিন্ত্ত যাদের আধার কার্ড নেই, তাদের টাকা নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে৷ যদিও অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস কিছুদিনের মধ্যেই ৪৩টি জেলাতেই ১০০ শতাংশ প্রাপকের হাতেই আধার কার্ড পৌঁছে যাবে৷ ওই বৈঠকেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি জানান, ক্যাশ ট্রান্সফার চালুর প্রথম পর্যায়ে দু'লক্ষ প্রাপক সরাসরি নগদ পাওয়ার সুবিধা পাবেন৷ 

নতুন বছরে যুদ্ধ যদি নাও হয় তবুও অস্ত্রাগার সাজাতে চেষ্টা ত্রুটি রাখবে না অনেক দেশই৷ ২০১২-কে অনেকেই বিদায় দিয়েছে দুরু-দুরু বুকে৷ যুদ্ধ হয়নি ঠিকই, কিন্ত্ত হব হব পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল একাধিক ক্ষেত্রে৷ নতুন বছরে যে সেই জায়গাগুলির পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না এমন নিশ্চয়তাও নেই৷ তাই আগাম সাবধানতা৷

কারোর সর্বনাশের সম্ভাবনা দেখা দিলে স্বাভাবিক ভাবেই অন্য কোরোর পৌষমাস হতে বাধ্য৷ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে যখন চিন-জাপানের সেনকাকু দ্বীপ বিতর্ক ক্রমশ দানা বেঁধে উঠেছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উনহা ৩-এর সফল উত্‍‌ক্ষেপণ ঘটিয়েছে, তখনই আমেরিকার থেকে নানা রকম প্রতিরক্ষামূলক হাতিয়ার, রাডার ফাঁকি দেওয়া যুদ্ধ বিমান ও বলাই বাহুল্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে৷ এই দলের মধ্যে সামিল অবশ্য ভারতও৷ প্রতিবেশী চিনের বাড়তে থাকা শক্তি ভারতের কাছেও বেশ চিন্তার বিষয়৷

২০১২-তে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ১৩৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র ব্যবসা আমেরিকা৷ ২০১১-র তুলনায় ৫.৪% বেশি৷ নতুন বছরে অস্ত্রের কারবার আরও অনেকটাই বাড়বে বলে অনুমান মার্কিন কংগ্রেসের৷ এদের মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক ও নজরদারির কাজে লাগা মানবহীন বিমান 'ড্রোন' বিক্রি করেই বহু লক্ষ ডলাতে কামাতে চলেছে আমেরিকা৷

অস্ত্র নির্মাতা নরথ্রপ গ্রুমানের কাছ থেকে আরকিউ-৪ 'গ্লোবাল হক' ড্রোন কেনার বরাত দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ উদ্দেশ্য স্পষ্ট, উত্তর কোরিয়ার ওপর নজর রাখা৷ শুধু সেনা ছাউনিগুলির ওপর নয়, অস্ত্র -- বিশেষ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষামূলক উত্‍‌ক্ষেপণ হয় যে কেন্দ্র থেকে তার ওপরে এ বার কড়া নজর রাখতে চায় সোল৷ কোরীয় উপদ্বীপের একেবারে উত্তরে চিন সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকার এই কেন্দ্রে নজর রাখতে এমন ড্রোনই ভরসা৷

'গ্লোবাল হক' ড্রোনে লাগানো রয়েছে 'রেথিওন সেনসর' নামে বিশেষ এক রকমের প্রযুক্তি৷ আকাশের বহু ওপরে থেকেও এর ফলে দিন বা রাত নির্বিশেষে মেঘ ভেদ করে মাটিতে শত্রুর ওপর নজর রাখা সম্ভব৷ এমনই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে নরথ্রপ গ্রুমানের পক্ষ থেকে৷ এমন ড্রোন তৈরি করা এই মার্কিন সংস্থার বিশেষত্ব ঠিকই কিন্ত্ত ওই 'রেথিওন সেনসর' তৈরি করতে পারে একমাত্র 'রেথিওন কর্পোরেশন'-ই৷

গত চার বছর ধরে এমন ড্রোন কিনতে আমেরিকার কাছে বায়না করে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া৷ কিন্ত্ত কিম জং-উনের উনহা-৩ ক্ষেপণাস্ত্র উত্‍‌ক্ষেপণের পর আর স্তোকবাক্যে ভোলানো যাচ্ছে না সোল সরকারকে৷ আগামী বছরে তাই স্রেফ ড্রোন বেচে বহু কোটি ডলার কামিয়ে নিতে চলেছে এই দুই মার্কিন সংস্থা৷

উত্তর কোরিয়ার এমন আচরণে শঙ্কিত জাপানও৷ পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র অনায়াসেই আঘাত হানতে পারে টোকিওতেও৷ তাই লকহিড-মার্টিনের তৈরি 'ইজিস' প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মোড়কে দেশকে ঢেকে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে জাপান৷ যে কোনও ধরনের নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রকে রুখে দিতে এই ব্যবস্থা নাকি একেবারে অব্যর্থ৷ অতএব ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের ডিল একেবারে পাকা৷

শুধু নজরদারি বা আত্মরক্ষা নয়, প্রয়োজনে আক্রমণের ব্যবস্থাও তৈরি থাকছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এমনকী সিঙ্গাপুরও৷ রাডারকে ফাঁকি দেওয়া যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ এর চাহিদাও বেড়েছে বিভিন্ন দেশে৷ দক্ষিণ কোরিয়া বা জাপান ইতিমধ্যেই তাদের বিমানবাহিনী থেকে এফ-৪ বিমানগুলি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

লকহিড-মার্টিনের এফ-৩৫ ছাড়াও একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারি বোইংয়ের তৈরি এফ-১৫ 'সাইলেন্ট ঈগল' বা ইউরোফাইটারের 'টাইফুন' বিমান কেনার কথাও ভেবে রেখেছে অনেকেই৷ এই দলে পড়ে তাইওয়ান৷ চিনের সঙ্গে যাদের তেতো সম্পর্ক কারোরই অজানা নেই৷

বেশ বড় বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন হিলারি ক্লিন্টন, বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সকদের তেমনই দাবি৷ মার্কিন বিদেশ সচিব আপাতত হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন৷ অসুখের নাম, 'সেরিব্রাল ভিনাস থ্রমবোসিস'- মাথার একদিকে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে৷ ডাক্তারদের অভিমত, এই অসুখ সচরাচর দেখা যায় না৷ এটা থেকে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷জেএফকে জনসন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ফর হেড ইনজুরিস-এর মেডিক্যাল ডিরেক্টর জানাচ্ছেন, ভাগ্যিস তিনি হিলারি ক্লিন্টন আর সময়মতো এমআরআইটা হয়েছিল, তাই এই ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন৷ না হলে এর থেকে বড় কিছু হতে পারত৷ কেন এই অসুখকে প্রাণঘাতী বলছেন চিকিত্‍সকরা?

হিলারির যে জায়গাতে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে, তা ঠিক ডান কানের উপরে৷ অর্থাত্‍ , মস্তিষ্ক ও খুলির মধ্যে যে শিরা রয়েছে, যা, ড্রেনেজ চ্যানেল নামে পরিচিত৷ এর ফলে ওই অংশে সেরিব্রাল ফ্লুইড সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার থেকে জীবন সংশয় দেখা যায়৷ সাধারণত মারাত্মক ডিহাইড্রেশন হয়ে গেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে৷ শরীরে জলের অভাব দেখা গেলে, রক্ত ক্রমশ ঘন হয়ে আসে৷ তার ফলে অনেক সময় তা মস্তিষ্কের ওই অঞ্চলে জমাট বেঁধে যায়৷

হিলারির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে৷ তাঁর কোনও স্ট্রোক বা স্নায়ুজনিত সমস্যা হয়নি৷
ফলে, ওই জমাট-বাঁধা রক্ত যাতে ওষুধে সরিয়ে দেওয় যায় অর্থাত্‍ রক্ত যাতে তরল হয়ে আসে, সে চেষ্টাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্‍সকরা৷ ওই জমাট-রক্ত সরে গেলে তবেই তাঁকে ছাড়া হবে বলে জানানো হয়েছে৷হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল বুলেটিনে জানানো হয়েছে, হিলারি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন৷ তিনি তাঁর চিকিত্‍সক, পরিবার ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন৷ মনের দিক থেকেও খুব শক্ত৷ তবে এর ফলে তাঁর মস্তিষ্কের অন্য কোনও অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম৷

প্রতিবাদ  
পরপর দুই মহিলা খুনের প্রতিবাদে ডায়মন্ডহারবার থানার সামনে বিক্ষোভ মহিলাদের। ছবি: অনিল কুণ্ডু

ওয়াল স্ট্রিটের সঙ্গে গত ত্রিশ বছর ধরে যুক্ত শ্যামল সেন'ও বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন৷

গত গ্রীষ্মে মার্কিন সরকার যখন রিপাবলিকানদের সাহায্য নিয়ে বাজেট ঘাটতির সর্বোচ্চ মাত্রা বাড়ান - নয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হতে চলেছিল! - তখন ওবামা ও তাঁর ডেমক্র্যাটদের তার দাম দিতে হয় একটি ''বাজেট কন্ট্রোল অ্যাক্ট'' বা বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে৷ এই আইন অনুযায়ী দশ বছর ধরে প্রতিবছর ১০৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়সংকোচ করা হবে, যদি না তার আগে কোনো উপযুক্ত আর্থিক পরিকল্পনা খাড়া করা সম্ভব হয়৷ নির্বাচনের তোড়ে রিপাবলিকান কি ডেমক্র্যাট, কোনো পক্ষই আপোশে রাজি না হওয়ায় এখন সেই শেষের সেদিন ভয়ঙ্কর প্রায় ঘাড়ে এসে পড়েছে৷ জানুয়ারিতেই ব্যয়সংকোচ শুরু হবে, এবং মার্কিন প্রবৃদ্ধি আধ শতাংশে নেমে যাবে, বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

শ্যামল সেন প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ওয়াল স্ট্রিটের সঙ্গে যুক্ত, তবে কম্পিউটার প্রযুক্তির দিক দিয়ে৷ বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের কম্পিউটার সায়েন্সেস কর্পোরেশনের চিফ টেকনোলজি অফিসার৷ তাঁকে 'ফিস্কাল ক্লিফ' নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন:

সাক্ষাৎকার শুনতে ক্লিক করুন এখানে

''এখানে তো দু'দলই এতো পরস্পরের বিপরীত অবস্থানে আছে যে, গত কয়েক বছর ধরে সমস্যাটা সম্পর্কে কিছু করা হয়নি৷ আমরা এখন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছি যে, সমস্যাটার অবিলম্বে মোকাবিলা করা দরকার৷ নির্বাচনের ফলাফল দু'টি দলের মনোভাব নিশ্চয় কিছুটা প্রভাবিত করবে৷ এবং যে বাইপার্টিজান বা উভয়দলীয় মনোভাবটার এতোদিন অভাব ছিল, এখন আমরা একটা সর্বনাশের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছি৷ সুতরাং বাইপার্টিজান মনোভাবটা আগের থেকে বেশি প্রত্যাশা করা যাবে৷''

যেমন করবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটা আপোশের প্রত্যাশা করছেন শ্যামল সেন৷ আবার মোটরগাড়ি শিল্পের বেলআউটের ক্ষেত্রে ওবামার সাফল্য রিপাবলিকানদের কাছ থেকে থেকে কিছুটা স্বীকৃতি পাবে, এ'আশাও আছে তাঁর৷

ওয়াল স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা নিজেরাই সাধারণত কিছুটা স্বল্পমেয়াদী মনোভাব প্রদর্শন করেন৷ শেয়ারবাজারের সূচক ওঠে-নামে সেদিনকার অবস্থা বুঝে৷ দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার ক্ষেত্রে ওয়াল স্ট্রিট এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, বললেন শ্যামল সেন৷

রিপাবলিকান-ডেমক্র্যাট কাজিয়া বা বাজেট ঘাটতি বাদ দিলেও, মার্কিন অর্থনীতির কিছু বাস্তব সমস্যা আছে৷ যার মধ্যে প্রথম হল যুদ্ধের খরচ, বললেন শ্যামল সেন৷ দ্বিতীয়ত, ওবামার প্রথম কর্মকালে চাকুরি সৃষ্টির বিষয়টি কিছুটা অবহেলিত হয়েছে, বলে তিনি মনে করেন৷ ওবামা বিশেষ করে হেল্থ কেয়ার বা স্বাস্থ্যবিমার উপর জোর দিয়েছিলেন৷ সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে কয়েকটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা, যেমন ম্যানুফাকচারিং শিল্পে চাকুরি চীনে চলে যাওয়ার প্রবণতা৷

সব মিলিয়ে, ওবামার প্রথম কর্মকালে যা কিছু উপেক্ষিত হয়েছিল, এবার তার মোকাবিলা করতেই হবে, কেননা আমরা ''সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি,'' বললেন নিউ ইয়র্কবাসী শ্যামল সেন৷


three_indians480_0

খাদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মার্কিন অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর পরামর্শ পেতে তিন অনাবাসী ভারতীয়কে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানালেন বারাক ওবামা। পেপসি-র চেয়ারম্যান এবং সিইও ইন্দ্রা নুয়ি ছাড়া এই তালিকায় রয়েছেন নীরা টন্ডন এবং দীপক ভার্গব। ওবামার দেশে তো বটেই। সারা বিশ্বের কর্পোরেট মহলেই পেপসি-র কর্ণধার ইন্দ্রা নুয়ি যথেষ্ট পরিচিত নাম। এর আগে ২০০৭ সালে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদের পরিচালন পর্ষদের সদস্য হিসেবেও মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। বরং সেই তুলনায় কিছুটা 'অচেনা' মুখ নীরা টন্ডন কিংবা দীপক ভার্গব। নীরা ওয়াশিংটন-কেন্দ্রিক উপদেষ্টা সংস্থা 'সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেস'-এর প্রেসিডেন্ট। দেশের উন্নয়নে সরকারের আর্থিক নীতি কেমন হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেয় তাঁর সংস্থা। পেশ করে তা নিয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট এবং সমীক্ষা। খবর; ইয়াহু

দীপক ভার্গবের 'সেন্টার ফর কমিউনিটি চেঞ্জ' আবার চেষ্টা করে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে যোগসূত্র তৈরির। যাতে তাঁদের নিজস্ব 'কমিউনিটি' গড়ে ওই সব গরীব মানুষকে উন্নয়নের স্রোতে সামিল করা সম্ভব হয়। চলতি বছরের শেষেই আমেরিকার অর্থনীতির সামনে হাজির হচ্ছে এক পাহাড়-প্রমাণ চ্যালেঞ্জ। যার পোশাকি নাম 'ফিস্কাল ক্লিফ'। সহজ কথায় এর মানে হল, এখন বিপুল ঋণের বোঝা চেপে রয়েছে মার্কিন মুলুকের ঘাড়ে। বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে ঘাটতিও। এই দুই সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যেই কড়া পদক্ষেপ করতে 'প্রতিশ্রুতিবদ্ধ' মার্কিন প্রশাসন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এ জন্য বিপুল অঙ্কের নতুন কর চাপাতে হবে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। ছাঁটাই করতে হবে সরকারি খরচও। দু'দিক মিলিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি ডলারের বোঝা চাপবে মার্কিন জনতার ঘাড়ে। অনেকেরই আশঙ্কা, এর ফলে ধাক্কা খাবেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ। সমস্যায় পড়বে শিল্প। বাড়বে বেকারত্বের হারও। তাই সব দিক বাঁচিয়ে কী ভাবে অর্থনীতির হাল ফেরানো যায়, তা নিয়ে শলা-পরামর্শের জন্যই রাজনীতির কারবারিদের পাশাপাশি কর্পোরেট কর্তা, শ্রমিক নেতা এবং সমাজ উন্নয়নের কাজে যুক্ত পরিচিত মুখদের সঙ্গে মঙ্গল এবং বুধবার আলোচনায় বসছেন ওবামা। সেখানেই শিল্পমহলের প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ালমার্ট, ফোর্ড, জেরক্স, আইবিএমের মতো মার্কিন বহুজাতিকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ডাক পেয়েছেন ইন্দ্রা নুয়ি। আর সমাজের অন্যান্য অংশের বক্তব্য তুলে ধরতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতরে যাচ্ছেন নীরা টন্ডন এবং দীপক ভার্গব।


নবধণাঢ্য ভোগবাদী সংস্কৃতির নিদর্শন রাজনীতি ও অর্থনীতির ধর্ষণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ আজ। প্রমাণঃ

তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন। ভাঙর থানার সামনে মঞ্চ বেঁধে বসল অশ্লীল নাচগানের জমজমাট আসর। উদ্যোগে তৃণমূলের এক জনপ্রতিনিধি, জেলা পরিষদ সদস্য মীর তাহের আলি। সেই আসরে চটুল গানের তালে উদ্দাম নৃত্য শালীনতার সীমা ছাড়াল। উড়ল টাকা। মঞ্চ থেকেই দর্শকদের আহ্বান জানানো হল, এই জলসা প্রাণভরে উপভোগ করতে। চব্বিশ ঘণ্টায় এই খবর সম্প্রচারের পরে অবশ্য অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় ভাঙর থানার পুলিস। জানা গেল, এতকিছু হচ্ছিল পুলিসের অনুমতি ছাড়াই।

পুলিসের গুলিতে প্রাণ হারানো ১৪ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর স্মৃতিতে প্রতিবছর শহিদ দিবস পালন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবাদ সেই শহিদ দিবস পালন করা হয়েছিল ব্রিগেডে। আর তাতেই বাণিজ্যিক বাংলা ছবির গান গেয়েছিলেন অভিনেতা দেব। এই সংস্কৃতির এখানেই শুরু। এরপর ভাঙর। মঙ্গলবার রাতে ভাঙর থানার সামনে এই বিচিত্রানুষ্ঠানই শালীনতার মাত্রা ছাড়াল। অশ্লীল গান-নাচের উদ্দাম নৃত্য পূর্ণতা পেল, টাকা ছড়ানোয়। উপলক্ষ্য তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন। উদ্যোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূল নেতা মীর তাহের আলি। ব্যানারে প্রতিষ্ঠা দিবসের বানান থেকে শুরু করে মঞ্চের অশালীন নৃত্য। সবকিছু থেকেই চুঁইয়ে পড়ছিল সংস্কৃতি। 

মঞ্চ থেকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধও করা হল। জানা গেল, দর্শকাসনে রয়েছেন বহু মহিলাও। আবার এই বিচিত্রানুষ্ঠান পুরোদমে উপভোগ করার আহ্বানও গেল সেই মঞ্চ থেকেই। 

চব্বিশ ঘণ্টায় এই খবর সম্প্রচারের পরেই এই জলসা বন্ধ করে দেয় ভাঙর থানার পুলিস। জানা গেল, অনুষ্ঠানের জন্য ভাঙর থানার অনুমতিও নেওয়া হয়নি। অশালীনতার পাশাপাশি তাই আইনভঙ্গেরও অভিযোগ উঠছে। উঠছে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন। দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনায় বর্ষবরণের যাবতীয় উত্সব বাতিল করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সাহসিনীর প্রয়াণে ফেসবুকে কবিতা লিখে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও। জায়গায় জায়গায় মহিলাদের সম্মান আর নিরাপত্তার দাবিতে মিছিল, বিক্ষোভ। সেই আবহে, এ কোন সংস্কৃতি? শাসকদলের অনুষ্ঠান মঞ্চেই কেন মহিলাদের এভাবে পন্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা? উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্ন।


সরকারি হোম থেকে ১১ আবাসিক
নীরব কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তায় প্রশ্ন। ছবি---মৃণাল বসু।
হুগলি: উত্তরপাড়ার একটি সরকারি হোম থেকে সোমবার ভোরে ১১জন মহিলা আবাসিক পালিয়ে যাওয়ায় হোমগুলির নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল৷ স্থানীয় সূত্রের খবর, হোমের পিছন দিকের গ্রিলের দরজা ভেঙে পাঁচিল টপকে ওই ১১জন মহিলা ভোরের আলো ফোটার আগেই পালায়৷ গত ২৩ নভেম্বর ১৮জন মহিলাকে পুলিশ মুম্বইয়ের এক যৌন পল্লি থেকে উদ্ধার করে আনে৷ তাদের বেশির ভাগেরই বাড়ি উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪পরগনায়৷ কয়েকজন আবার বাংলাদেশেরও বাসিন্দা বলে হোম সূত্রে জানা গিয়েছে৷ পলাতকাদের মধ্যে মুম্বই থেকে উদ্ধার করে আনা মহিলাই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে৷ আবাসিকরা পালানোর পর হোমে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷ সংবাদমাধ্যমকে হোমে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি৷ ঘটনা নিয়ে হোম কর্তৃপক্ষ কোনও কথাই বলতে চায়নি৷ এ দিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে৷ সকালেই হোমে আসেন উত্তরপাড়া থানার ওসি প্রিয়ব্রত বক্সি৷ দুপুরে আসেন হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ ভার্মা৷ রাত পর্যন্ত কোনও আবাসিকেরই খোঁজ মেলেনি৷ 

গত জুলাই মাসে হুগলি জেলারই গুড়াপে একটি দুলাল স্মৃতি সংসদ নামে একটি বেসরকারি হোমের এক মহিলা আবাসিকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে রাজ্য জুড়ে জল ঘোলা হয়৷ অভিযোগ, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মহিলাকে দিনের পর দিন হোমে ধর্ষণ করা হয়৷ তারপর তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলে কিছু যুবক৷ হোম কর্তৃপক্ষই তাদের নিয়োগ করেছিল৷ এখানেই শেষ নয়৷ ওই মৃতদেহ বেশ কয়েক দিন একটি বন্ধ ঘরে রেখে দেওয়া হয়েছিল৷ একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি প্রথম গোটা বিষয়টি জানতে পারেন৷ তার পরই প্রশাসনের টনক নড়ে৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ওই বেসরকারি হোমটিতে মূলত মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলাদেরই রাখা হত৷ গুড়িয়া নামে মৃত ওই আবাসিক ছাড়াও আরও অনেক আবাসিকের সঙ্গেও বহিরাগতরা নানা দুর্ব্যবহার করত বলেও অভিযোগ৷ পুলিশ ওই হোমের বিরুদ্ধে মামালাও করে৷ তার তদন্ত চলছে৷ এর মধ্যেই ফের হুগলি জেলারই সরকারি হোম থেকে আবাসিকরা পালিয়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকারও অস্বস্তিতে পড়েছে৷ 

রাজ্যের নারীকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র মালদহে নিজের জেলায় রয়েছেন৷ যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী বলেন, 'আমি সকালেই খবর পেয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলি৷ তিনি জানিয়েছেন, সর্বত্র নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে৷ রেল পুলিশকেও সতর্ক করা হয়েছে৷' মন্ত্রী জানান, দপ্তরের অধিকর্তা তদন্তে গিয়েছিলেন৷ এর থেকে বেশি তিনি কিছু বলতে পারবেন না৷ শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়শ্রী দাশগুপ্ত জানান, হোমের ওয়ার্ডাররা রাত ৩টের সময়ও ডিউটির সময় সকলকেই দেখেছেন৷ ঘটনাটি তার পর ঘটেছে৷ পুলিশ সুপার জানান, হোমের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ নদী পথেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে৷ 

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের যৌন পল্লি থেকে উদ্ধার করে ওই মহিলাদের প্রথমে হাওড়ার লিলুয়া সরকারি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে মাস খানেক আগে তাদের সাময়িক ভাবে উত্তরপাড়ার রাজ মোহন রোডের ডেস্টিটিউট হোম ফর ফিমেল নামে ওই সরকারি আবাসে রাখা হয়৷ দু'দিন বাদেই হোম থেকে এক মহিলা পালায়৷ তার পরও কেন হোম কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ হোমের তরফে মহিলাদের মেদিনীপুরের তমলুকে নিমতৌরি হোমে পাঠানোরও তোড়জোড় চলছিল৷ সেইমতো কাগজপত্রও তৈরি হচ্ছিল৷ মহিলাদের দাবি ছিল, তাদের সকলকে এক জায়গায় এক সঙ্গে রাখতে হবে৷ এখনও ওই হোমে মুম্বই থেকে উদ্ধার হওয়া দু'জন মহিলা রয়েছে৷ তারা অবশ্য সঙ্গীদের সম্পর্কে কিছু জানাতে চায়নি৷ 

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, হোমে মোট ৭০জন আবাসিক থাকে৷ তার মধ্যে প্রায় ৪০জন এলাকারই অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠে পড়ে৷ এলাকার বাসিন্দারা জানান, হোমের অবস্থা একেবারেই জীর্ণ৷ নিরাপত্তার হালও খুবই খারাপ৷ হোমের সামনেটা সব সময় অন্ধকার হয়ে থাকে৷ আল্পনা মণ্ডল নামে স্থানীয় এক মহিলা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে হোম চত্বরে কিছু অচেনা লোক ঘোরাঘুরি করছিল৷ আর এক বাসিন্দা শম্পা ভাদুড়ি জানান, আগেও ওই হোম থেকে আবাসিক পালানোর ঘটনা ঘটেছে৷ তবু হোমের টনক নড়েনি৷ তাঁর আরও অভিযোগ, মন্ত্রী বা আমলা এলে লোক দেখানো সব ব্যবস্থা করা হয়৷ হোমের ভারপ্রান্ত আধিকারিক জয়শ্রী মিশ্র জানান, তিনি কোনও কথা বলবেন না৷ যা বলার, প্রশাসন বলবে৷ 


ভাঙড় কাণ্ডে অস্বস্তিতে তৃণমূল। ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে প্রথমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরিস্থিতি সামলাতে যদিও তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয় ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে। মীর তাহের আলি সহ অন্য তৃণমূল নেতাদের সাসপেন্ড করে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। পাশাপাশি থানার অদূরে বিনা অনুমতিতে এমন একটি জলসা কী করে চলল। সেবিষয়ে ভাঙড় থানার কাছে জবাবদিহি চেয়েছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর।

মঙ্গলবার রাতেই ভাঙড়ে দলের প্রতিষ্ঠাদিবসে বিতর্কিত বিচিত্রানুষ্ঠানের বিষয়ে জেনেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেই বন্ধ হয়েছিল অনুষ্ঠান। ড্যামেজ কন্ট্রোলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন। শেষপর্যন্ত যদিও বুধবার টুইটে ডেরেক ওব্রায়েন জানান ভাঙড়ে জলসার উদ্যোক্তা মীর তাহের আলি সহ অন্য তৃণমূল নেতা-কর্মীকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে টুইটে জানান তিনি। অভিযুক্তদের বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও টুইটে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ওব্রায়েন। মীর তাহের আলির উদ্যোগেই ভাঙড় থানার সামনে বিনা অনুমতিতে জলসার আয়োজন করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই অনুষ্ঠানেই চলে উদ্দাম নাচ। এই ধরনের আচরণ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। টুইটে এমনই জানিয়েছেন ডেরেক ওব্রায়েন। 

ভাঙড় কাণ্ডে চাপের মুখে হলেও মীর তাহের আলি এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল তৃণমূল। কিন্তু প্রশ্ন হল পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্য করা সত্ত্বেও কেন এখনও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হল না কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিরুদ্ধে ?


ভাঙড়ে প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে অশালীন নাচ-গান এবং টাকা ছড়ানোর ঘটনায় ফের একবার দেশজোড়া সমালোচনার মুখে তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে তৃণমূলের থিঙ্কট্যাঙ্ক। আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও`ব্রায়ান। 

এই প্রসঙ্গে সাংসদ ডেরেক ও`ব্রায়ান পরপর তিনটে টুইট করেন। প্রথমটিতে তিনি বলেন, "১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্টা দিবস উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে অনেকগুলি অনুষ্ঠান হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একটিতেই এই ঘটনা ঘটছে।" দ্বিতীয় টুইটে তাঁর বক্তব্য, "এই ঘটনায় যদি কোনও দলীয় সদস্য যুক্ত থাকেন তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবে দল।" তৃতীয় টুইটে তিনি বলেন "সাংস্কৃতিক এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর দলের সংবেদনশীলতা প্রধানতম গুরুত্বের বিষয়। চৌত্রিশ বছরের উপহাসের পর আমরা এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করবই।"

তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনে ভাঙর থানার সামনে মঞ্চ বেঁধে বসে অশ্লীল নাচগানের জমজমাট আসর। উদ্যোগে তৃণমূলের এক জনপ্রতিনিধি। সেই আসরে চটুল গানের তালে উদ্দাম নৃত্য শালীনতার সীমা ছাড়ায়। ওড়ে টাকা। মঞ্চ থেকেই দর্শকদের আহ্বান জানানো হল, এই জলসা প্রাণভরে উপভোগ করতে। স্বভাবতই দলীয় জলসায় অশালীনতার ঘটনায় নিন্দায় সরব সমাজের বিভিন্ন বৃত্তের বিশিষ্টজনেরা। তবে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলেই আজ মন্তব্য করেন সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিম। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যুবসম্প্রদায়কে ভুল পথে চালনা করতেই এই সংস্কৃতির আমদানি বলেই মনে করেন তিনি। 

ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্য। পাশাপাশি তৃণমূলের নীচের তলার নেতাদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে ভাঙড়ে তৃণমূলের জলসায় অশালীনতার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে রাজ্যজুড়ে।  পুলিসের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের জলসা কী করে চলতে পারে তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেতা বাদশা মৈত্র। রাজ্যে এই অপসংস্কৃতি চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের জন্য তা রীতিমতো ক্ষতিকারক বলে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যাল। ঘটনার নিন্দায় জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন মমতা শর্মাও। 


এই ভোগ অন্তর্জালীয় নীল থ্রীজি ফোরজি টলিউডি ফাইভস্টার নির্লজ্জ সংস্কৃতিই আজ বঙ্গীয় ব্রঙ্মণ্য আধিপাত্যবাদী জাতীয়তাবাদের মুক্তধারা, যা সমাজবাস্তবকে প্রতিক্ষণ অস্বীকার করে,তারই পরিণামঃ


টানা ১৬ দিন ধরে ভিন রাজ্যের এক তরুণীকে ঘরে আটকে রেখে, তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠল।  শেষ পর্যন্ত নিজের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে এবং প্রতিবেশীদের উদ্যোগে প্রাণে বেঁচেছেন ওই তরুণী। এই ঘটনায় গড়ফার শহিদনগর থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। আজ তাকে আদালতে তোলা হবে। 

এই তরুণীর বাড়ি ভোপালের কলাকুঞ্জ্ কোলহার এলাকায়। বাবা পদস্থ সরকারি অফিসার। তরুণী নিজেও একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। ১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় আসেন তিনি। উঠেছিলেন গড়ফার শহিদনগরে স্বরূপ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। অভিযোগ, তারপর থেকেই স্বরূপ চৌধুরী তাঁকে ঘরে তালাবন্দি করে রাখেন। তিনি বাড়ি ফিরতে চাইলে, স্বরূপ চৌধুরী তাঁকে মারধর এবং গালিগালাজ করতেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন তরুণী। 
 
পনেরোই ডিসেম্বর থেকে এভাবেই কাটছিল দিন।  কিন্তু বছরের প্রথম দিন সন্ধেয় পালানোর সুযোগ পেয়ে যান তরুণী। দেখেন ঘরের দরজা খোলা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। অভিযোগ, পিছু ধাওয়া করেন স্বরূপ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী। তরুণীর চিত্কার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তাঁদের তত্পরতায় রক্ষা পান তিনি। 
 
দিল্লির বিজয়চকের লক্ষ্মীনগরে একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকার সময়, তরুণীর সঙ্গে স্বরূপ চৌধুরীর মেয়ে সংযমীর পরিচয় হয়েছিল। পরে তরুণীর ভোপালের বাড়িতে চলে যায় সংযমী। সতেরো বছরের সংযমী তরুণীকে জানায়, বাবা তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করায়, সে ঘর ছেড়ে চলে এসেছে। কয়েক দিনের মধ্যে স্বরূপ চৌধুরীও ভোপালে তরুণীর বাড়িতে হাজির হন। সংযমী জানায়, বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরতে রাজি নয় সে। স্বরূপ চৌধুরী তরুণীকে বলেন, মেয়ে তাঁর ওপর ভরসা করে। তাই তিনিই যেন সংযমীকে নিয়ে কলকাতায় আসেন। সেই অনুরোধ রেখেই ঘরের মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে দিতে এসেছিলেন এই তরুণী। কিন্তু তাঁকে যে এমন নির্মম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, তার বিন্দুমাত্র আঁচ আগে থাকতে তিনি পাননি। 
 
ভোপালের অপরিচিত তরুণীকে কেনই বা গড়ফার বাড়িতে ডেকে আনা হল, আর কেনই বা স্বরূপ চৌধুরী তাঁকে তালাবন্দি করে রাখতে গেলেন, তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে বাবার বিরুদ্ধে অপহরণের গল্প ফেঁদে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। পুলিসের অনুমান, সেই কাজে নিজের মেয়েকেই ব্যবহার করতেন স্বরূপ চৌধুরী। 

গড়ফার শহিদনগরের একটি বাড়িতেই স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে থাকেন স্বরূপ চৌধুরী। মেয়ে সংযমী দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলে ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রী। স্বরূপ চৌধুরী গত বছর গড়ফা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে বলা হয়, সংযমীকে অপহরণ করা হয়েছে। পুলিস সংযমীর মোবাইল ফোনের টাওয়ার ট্র্যাক করে শ্যামপুকুর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় বিকাশ সিং এবং কৌস্তুভ নিয়োগী নামে দু`জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিস। মামলাটি আদালতে গড়ায়। বিকাশ এবং কৌস্তুভ দু`জনেই আদালত থেকে জামিন পেয়ে যান। আইনজীবী মহলের খবর, অপহরণের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য কৌস্তুভ ও বিকাশের পরিবারের থেকে মোটা টাকা নিয়েছিলেন স্বরূপ চৌধুরী। পরে জানা যায়, দুই যুবকের সঙ্গে ফেসবুক মারফত আলাপ হয়েছিল সংযমীর। 

এই রকমই আরেকটি ঘটনা নিখিল নীরজ নামের দিল্লিবাসী এক যুবকের সঙ্গে। নিখিলের সঙ্গেও ফেসবুকে পরিচয় হয় সংযমীর। তারপরই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। গিয়ে ওঠে দিল্লির বিজয়চকের লক্ষ্মীনগর এলাকার একটি বাড়িতে। গড়ফা থানায় ফের অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন স্বরূপ চৌধুরী। এবারও পুলিস গিয়ে নীরজকে গ্রেফতার করে। পরে জামিনে ছাড়া পান নীরজ। পুলিস সূত্রে খবর, এক্ষেত্রেও নীরজের পরিবারের সঙ্গে স্বরূপ চৌধুরীর আর্থিক লেনদেন হয়েছিল। দিল্লির বিজয়চকে যে বাড়িতে সংযমী পেয়িংগেস্ট হিসেবে উঠেছিল, সেই বাড়িতেই ভোপালের বাসিন্দা এই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে ওঠে সংযমী। পুলিসের অনুমান, টাকা আদায়ের জন্য মেয়েকে কাজে লাগিয়ে অপহরণের গল্প ফাঁদতেন স্বরূপ চৌধুরী। মোটা টাকা আদায়ের লোভেই ভোপালের তরুণীকে কায়দা করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এমনটাই সন্দেহ করছে পুলিস। ঘটনার পর থেকে সংযমী পলাতক। তার সন্ধানে তল্লাসি চলছে।


 ইতিমধ্যে 

ঋত্বিক ঘটকের নাতনি অদিতির মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হল অন্যতম অভিযুক্ত জ্ঞানজিত্ পাতর। বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করেছে। এ দিনই তাঁকে বারুইপুর আদালতে তোলা হয়েছে। 

গত ২ ডিসেম্বর চৌবাগার খাল থেকে একটি গাড়ি উদ্ধার হয়েছিল। সেই গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অদিতিকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই সময়েই অদিতির পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অদিতির পরিবার এবং বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন অদিতি তাঁর বন্ধু জ্ঞানজিত্ পাতরের সঙ্গে বেরিয়েছিল। দুর্ঘটনায় তাঁদের গাড়ি খালে গিয়ে পড়ে এবং স্থানীয় মানুষের চেষ্টায় তাঁরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন বলে অদিতির বন্ধুরা জানায়। যদিও ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল জ্ঞানজিত্ পাতর।


ওসি না থাকায় ধর্ষিতা কিশোরীর  অভিযোগ নিতে অস্বীকার করল মহিলা থানা। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহরে। তাঁর বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে গত কয়েকদিন ধরে কাঁথি মহিলা থানায় ঘুরছিলেন ওই কিশোরীর। কিন্তু ওসি বাইরে গেছেন, এই অজুহাতে বারে বারেই ধর্ষিতাকে ফিরিয়ে দেন কর্তব্যরত মহিলা পুলিসকর্মীরা। এমনই অভিযোগ ওই কিশোরীর পরিবারের।

বাবা মত্‍সজীবী। অধিকাংশ সময় থাকেন বাইরে। সংসার চালাতে মাকেও কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। সেই সুযোগে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি থানার একটি গ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে সহবাস করছিল এলাকার তৃণমূল নেতা অজয় সাউ। কিশোরীর অভিযোগ, সেইসময় ওই তৃণমূল নেতা তাকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করে। ঘটনার কথা জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওই তৃণমূল নেতা। তার জন্যই সে এতদিন সে চুপ করে ছিল বলে দাবি তার পরিবারের। 

কিছুদিন আগে মেয়েটির পরিবার সব কথা জানতে পারে। জানা যায় সে পাঁচ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা। এরপরই মঙ্গলবার ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কাঁথি মহিলা থানায় অভিযোগ জানাতে যায় ওই কিশোরী ও তার পরিবার। কিন্তু ওসি না থাকার অজুহাতে কাঁথি মহিলা থানা ধর্ষণের অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে বলে অভিযোগ করেছে ওই কিশোরীর পরিবার।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে তৃণমূল নেতা অজয় সাউ। এদিকে পুলিসও অভিযোগ নিতে অস্বীকার করায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবার।


স্বাগত দুহাজার তেরো। মোমবাতি মিছিল, শোক, প্রতিবাদের মধ্যেই শহর মাতল হৈ-হুল্লোড়, নাচগান, পানভোজনে। নিরাপত্তা, সুশাসনের দাবি নিয়ে শহর ফিরল শারীরিকতার চেনা ছন্দে। দিল্লির নির্যাতিতা তরুণীর স্মৃতি তর্পণ সেখানে যেন শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের আতিশয্যই হয়ে গেল প্রধান। বর্ষবরণের সন্ধে থেকে রাত। 

মোমবাতির স্নিগ্ধ শিখাতেই আস্থা রেখেছিল পার্কস্ট্রিট। অসংখ্য মৌন দীপশিখায় বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল মহিলাদের সামাজিক নিরাপত্তার দাবি। অন্যান্য বছরের থেকে একেবারে আলাদা ছবি। অথচ উদযাপনের জন্য আয়োজনের খামতি নেই। এশিয়াটিক সোসাইটির মোড় থেকে মল্লিক বাজার ক্রসিং, পুরোটা জুড়েই আলোর শামিয়ানা। স্নিগ্ধ মোমের শিখা সন্ধে থেকে সেই রোশনাইকে যেন ম্লান করে দিয়েছিল। উত্‍‍‍সবের উষ্ণতাকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের উত্তাপ।

কিন্তু উল্টো ছবি শহরের অধিকাংশ হোটেল, রেঁস্তোরায়।  আনন্দ- বিষাদের মধ্যে হাজির হয় রাত বারোটা। 

স্বাগত দুহাজার তেরো, অচেনা পার্ক স্ট্রিট হঠাত্‍‍‍‍‍ই ফিরে আসে তার চেনা ছন্দে। নীরবতার পরেই ভোলবদল। শুরু হয় নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উচ্ছ্বাস। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে গিয়ে হয়ত পিছনে চলে গেল নির্যাতিতা তরুণীর স্মৃতি। মোমের আলোয় দীপ্ত মুখের বদলে শুধুই উচ্ছ্বাসের আতিশষ্য।

কিন্তু এরমধ্যেই ব্যতিক্রম। বর্ষবরণের উচ্ছ্বাস নয়। আপাতত মোমের শিখাতেই তাপ এবং সন্তাপ খুঁজে নিয়েছিলেন ধর্মতলায় জড়ো হওয়া প্রতিবাদী মুখগুলি। আসলে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, মোমবাতি মিছিল সবই হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। শেষ পর্ষন্ত সেগুলো হয়ে রইল কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সামিল হয়েছিল শহরের অল্প সংখ্যক মানুষ। অধিকাংশই মজে রইলেন বর্ষবরণের হইহল্লোর আর নাচ, গানে। নাহলে যে শহর মোমবাতি মিছিলে পা মেলায়, সেই শহরেই বর্ষবরণের রাতে উশৃঙ্খল আচরণের জন্য গ্রেফতার হতে হয় শতাধিককে। 


কল্পতরু উত্‍সবে জনজোয়ার

আজ কল্পতরু উত্‍সব। ১৮৮৬ পয়লা জানুয়ারি কাশীপুর উদ্যানবাটীতে কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। পূরণ করেছিলেন ভক্তদের মনোস্কামনা। সকাল থেকেই তাই ভক্তদের ঢল নামে কাশীপুর উদ্যানবাটি, দক্ষিণেশ্বর এবং কামারপুকুরে। ১৮৮৬-র পয়লা জানুয়ারি। বিকেল তিনটে। কাশীপুর উদ্যানবাটীতে ওই দিন গৃহী ভক্তদের কাছে কল্পতরু হয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।  বলেছিলেন তোমাদের চৈতন্য হোক...
  
সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতিবছর এইদিনে হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হন কাশীপুর উদ্যানবাটীতে।
 
বছরের এই একটি দিনে শ্রীরামকৃষ্ণের শয়নকক্ষে ঢুকে প্রণাম জানাতে পারেন ভক্তরা। কাশীপুর উদ্যানবাটীর মূল মন্দিরে ঢোকার জন্য লাইন শুরু হয়েছিল ৩১ডিসেম্বর সন্ধে সাতটা থেকে। তারপর সময় যত গড়িয়েছে লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে। দেশে ও রাজ্যে হিংসার ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই প্রবণতা থেকে যেন মুক্ত থাকে মানুষ। শ্রী রামকৃষ্ণের কাছে এই কামনা করলেন অনেকে। কল্পতরু উত্‍সবে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরেও।

সকাল থেকেই মন্দির চত্বরে ভক্তদের লম্বা লাইন। দূর-দূরান্ত থেকে পুজো দিতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। ভোর চারটেয় মঙ্গলারতি দিয়ে শুরু হয় ভবতারিণীর পুজো। এরপর দুপুরে দু ঘণ্টার জন্য মন্দির বন্ধ থাকার পর ফের  মন্দিরের দরজা খোলে বেলা তিনেটর সময়। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত যতক্ষণ না ভক্তদের পুজো না শেষ হয় ততক্ষণ খোলা থাকে মন্দির। ভক্তরা জ়ড়ো হন শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরের সামনেও। হুগলির কামারপুকুরেও সকাল থেকে শুরু হয় কল্পতরু উত্সব। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থানে সকাল থেকেই নামে ভক্তদের ঢল। দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে।  

http://zeenews.india.com/bengali/zila/heavy-crowd-in-kalpataru-festival_10356.html


দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে মৃতার নাম প্রকাশ করা উচিত। শশি থারুরের এই দাবির একদিনের মধ্যে নির্গৃহীতা তরুণীর পরিবার তাঁর নামে ধর্ষণ বিরোধী আইন আনায় সহমত জানিয়েছে। বুধবার পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, এবিষয়ে তাঁদের কোনও অপত্তি নেই। তরুণীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এটা যোগ্য সম্মাননা হবে বলে মত তাঁদের। 

এ দিন ২৩ বছরের ওই তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, "সরকার যদি ধর্ষণ বিরোধী আইন আনতে তাঁর নাম প্রকাশ্যে আনে তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।" গতকাল মানবসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর টুইটারে সওয়াল করেন, "দিল্লি গণধর্ষণে নিগৃহীতা তরুণীর নাম গোপন রেখে কী লাভ?" 

কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাব দেন, পরিবারের যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে দেশের কড়া ধর্ষণবিরোধী আইন তরুণীর নামেই নামকরণ করা উচিত। এ ভাবে তাঁর নাম প্রকাশ করলে মৃতার উদ্দেশ্যে যোগ্য সম্মান জানানো হবে বলে মনে করেন তিনি। 

গতকালেই তরুণীর উত্তর প্রদেশের গ্রামে একটি প্রথমিক বিদ্যালয় করা নিয়ে তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসে। সেখানে তাঁর নামে একটি নতুন স্কুল তৈরি করা হবে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়।


দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে বাস মালিককে গ্রেফতার করল পুলিস। যে বাসে ওই তরুণীর ওপর পাশবিক অত্যাচার চালানো হয়, সেই বাসটির অনুমোদন সংক্রান্ত গণ্ডগোল রয়েছে বলে আগেই জানানো হয়েছিল দিল্লি পুলিসের তরফে। বাসটি স্কুলের কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ হওয়ায় যাত্রী পরিবহণের নিষেধাজ্ঞা ছিল। অর্থাত্ স্কুলের কাজে ব্যবহারের অনুমোদন ছিল। তবে অনুমোদন ছাড়াই বাসটি যাত্রী পরিবহণের কাজে ব্যবহার করা হত। এর জেরে আগেই বাসমালিক দীনেশ যাদবের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে দিল্লি পুলিস। আজ দীনেশ যাদবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবির দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে ফাস্ট ট্রাক কোর্টের নির্মাণ করলেন। এই প্রসঙ্গে ভারতের প্রধান বিচারপতি জানান, "জেনে খুশি হলাম, ১৬ ডিসেম্বরের ঘটনার পর মানুষ নারীদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।" আগামিকাল থেকে সাকেতের আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হবে। 

গণধর্ষণের ঘটনায় আজ দিল্লি হাইকোর্টে চার্জশিটের একটি কপি জমা দেয় দিল্লি পুলিস। ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসার পরেই এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে দিল্লি পুলিসের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল হাইকোর্ট। সে কারণেই আজ হাইকোর্টে চার্জশিট পেশ। মামলার শুনানি যেখানে হবে সেই সাকেত কোর্টে আগামিকাল চার্জশিট পেশ করবে দিল্লি পুলিস।

গণধর্ষণে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই হাজার পাতার চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে। চার্জশিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, গণধর্ষণ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা সমেত একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধের বিস্তারিত বিবরণও চার্জশিটে রয়েছে বলে দিল্লি পুলিস সূত্রে খবর।

অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে অভিযুক্তদের কাছ থেকে নির্যাতিতা তরুণীর যে সমস্ত জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে তাও পেশ করবে পুলিস। পাশাপাশি, অভিযুক্তদের মধ্যে যে ব্যক্তি নিজেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে দাবি করেছে, তার প্রকৃত বয়স জানতে আজই বোনম্যারো পরীক্ষা করা হবে। 


দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একজোট গোটা দেশ। প্রতিবাদের ভাষা এক, দাবি এক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে সমাজের সব মহল থেকে। দিল্লির ঘটনাকে ধিক্কার জানাতে আজ কলকাতায় পথে নেমেছিলেন সঙ্গীতশিল্পীদের একাংশ। অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।       

দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এবার পথে এরাজ্যের শিল্পীরাও। প্রতিবাদ নারী নির্যাতনের। দিল্লিকাণ্ডে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব বিক্ষোভকারীরা। উঠে আসে পার্কস্ট্রিট প্রসঙ্গও।  উঠে এসেছে একরাশ ক্ষোভ...। ক্ষোভ প্রশাসনের ভূমিকায়। নানা সময়ে শাসক দলের একাধিক নেতানেত্রীর বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধেও। শুধু পথে নেমে একদিনের প্রতিবাদ নয়, লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এদিন প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন কলকাতা সিনে মিউজিশিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও।


পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে এবার থানার সামনেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। গত ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন মীর আমিনুল ইসলাম। আজ সল্টলেকের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় তাঁর।

রীতিমতো সুইসাইড নোট লিখে কড়েয়া খানার সামনে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে, আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা এই যুবক। নাম মীর আমিনুল ইসলাম ওরফে গুড্ডু। সুইসাইড নোটে লেখা ছিল।  কড়েয়ায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেনা পুলিস। অভিযুক্ত শাহজাদা পুলিসের ঘনিষ্ঠ। তাই নিষ্ক্রিয় পুলিস। বরং গুড্ডুর বিরুদ্ধেই পাল্টা হামলা, ভাঙচুর এবং লক্ষাধিক টাকা লুঠের অভিযোগ দায়ের করা হয়।
 
গুরুতর অগ্নিদ্বগ্ধ আমিনুলকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল, পরে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্যু 


গোটা রাজ্য এখন ক্রিকেট জ্বরে ভুগছে। কাল, বৃহস্পতিবার ইডেন উদ্যানে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে কলকাতা এখন সাজো সাজো রব। শহর জুড়ে টিকেটের হাহাকার। ইডেনে এটা ২৭ তম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। হিসাব অনুযায়ী একদিনের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। কিন্তু বৃহস্পতিবার ইডেনে ধোনি বনাম মিসবাদের লড়াইটাকে কিছুতেই শুধু একটা ওয়ানডে ম্যাচ হিসাবে বললে ভুল হবে। তাত্‍পর্যের দিক থেকে এই ম্যাচটা অনেকটা আলাদা। এত কিছুর পরেও যদি আপনার ক্রিকেট জ্বর না আসে, এখনও যদি ভাবেন, ধুত্‍ এটা তো সারা বছর ধরে চলা আরও একটা ক্রিকেট ম্যাচ। তাহলে একটু চোখ বুলিয়ে নিন কালকের ম্যাচটা কেন দেখবেন, আপডেট জানতে কেন ২৪ ঘণ্টা ডট কমে চোখ রাখবেন--- 

রজত জয়ন্তীতে ইডেনে ভারত-পাক ম্যাচ-- ১৯৮৭ সালে ইডেনে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। সেই হিসাবে ইডেনে ওয়ানডে ম্যাচের সিলভার জুবলি। ১৯৮৭, ১৮ ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচে একসঙ্গে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল। শ্রীকান্তের ১০৩ বলে ১২৩ রানের ঝড়, সেলিম মালিকের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন আর ভারতের জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়া সবই ছিল সেই ম্যাচে। ২৫ বছর পর আবার ইডেনে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি। ইতিহাস যদি আপনাকে ভালবাসতে শেখায়, ভাবতে শেখায়, তাহলে কাল ধোনি বনাম মিসবাদের ম্যাচ দেখার ভাল একটা কারণ থাকছে। 


মেকওভারের পর-- বিশ্বকাপের ম্যাচ হাতছাড়া করার পর মনটা বড্ড খারাপ ইডেনের। আসলে দারুণ নতুন বউ সাজার পরও ‍যদি কনে জানতে পারে বিয়েটা বাতিল হয়ে গেছে তাহলে যেমন হয়, ইডেনের এখন ঠিক সেই অবস্থা। মেকওভারের পর ইডেনে ভারত মাত্র একটাই ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে। অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিশ্বকাপের মত বড় মাপের প্রতিযোগিতায় ভারতের ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার মত দগদগে ঘায়ের জ্বালা মেটাতে ওই ম্যাচটা যথেষ্ট ছিল না। কালকের ম্যাচটা সেই ক্ষতে প্রলেপ দেবে। 

নতুন বছর নতুন শুরু-- ২০১২ সালটা একেবারে দুঃস্বপ্নের মত গেছে ভারতীয় ক্রিকেটের কাছে। নতুন বছরে ভারতের এটাই প্রথম ম্যাচ। কথায় বলে শুরুটাই নাকি বলে দেয় বাকি বছরটা কেমন যাবে। তাই ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যত জানতে চোখ রাখুন কালকের ম্যাচে। 

ইডেনে অপরাজিত পাকিস্তান-- বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচে ভারত হারে না, আর ইডেনে নাকি পাকিস্তান হারে না। এমন একটা মিথ চালু হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত ইডেনে একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচেও হারেনি পাকিস্তান। ওয়ানডেতে ইডেনে মোট তিনবার ভারতের বিরুদ্ধে খেলে পাকিস্তান। তিনবারই জেতে পাকিস্তান। শেষবার স্বর্গোদ্যানে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয় ২০০৪, নভেম্বরে। সেই ম্যাচে ভারতকে প্রায় একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন ওপেনার সলমন বাট। এমনকী একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলেও জয় পায় পড়শিরা। এবার সেই চাকা বদলাবে কি! তাহলে ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের আরও একটা কারণ থাকছে। ‍

দুই বাঙালি-- অশোক দিন্দা, সামি আমেদ। একসঙ্গে দুই বাঙালি ভারতীয় দলে আছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-এর অবসরের পর বাঙালি আবেগ বড্ড বেশি থাকায় ক্রিকেট নিয়ে যদি উত্‍সাহ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে ইডেনে কালকের ম্যাচ দেখার বড় একটা কারণ থাকছে।

ধোনির অগ্নিপরীক্ষা-- কাল ইডেনে মিসবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে হারলেই সিরিজ খোয়াবে ভারত। বিদেশের মাটিতে পরপর আট টেস্টে হার, ইংল্যান্ডের কাছে ঘরের মাটে টেস্ট সিরিজ হার, নিদেনপক্ষে টি টোয়েন্টি সিরিজেও জিততে না পারা। এমন একটা সময়ে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারটা অধিনায়ক ব্যর্থতার ঝুলিটা পূর্ণ করে দেবে। আমেদাবাদে যতই দুরন্ত শতরান করুন ইডেনে কাল হারলেই অধিনায়ক ধোনির সিংহাসনচুত্য হওয়ার পথটা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই ধোনির অগ্নপরীক্ষাটা কালকের ম্যাচের বড় ইউএসপি। 

সচিন অবসরের পর ইডেনে ওয়ানডে --- সচিনের ওয়ানডে অবসরের পর ইডেন এই প্রথম নামছে ভারত। ওয়ানডে-এর ইডেন আর সচিন এই দুটো কথা এই এতগুলো বছরে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে কোথাও একটা হাহাকার আছে। ইডেনে হিরো কাপের ফাইনালে সচিনের সেই উচ্ছ্বাসের ছবিটা তো আজও ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন।


সাতফুটিয়া আর পাক বোলিং-- শোয়েব আখতার নেই, তবু পাকিস্তানের পেস বোলারদের মধ্যে এমন একজন আছেন যিনি সবার আগে চোখ কাড়বেন। তিনি সাত ফুট এক ইঞ্চির মহম্মদ ইরফানকে নিয়ে আগ্রহের প্যারামিটারটা বেশ চড়া। আর ইরফান ভয় পাচ্ছেন দরজা দিয়ে ঢোকার সময়৷ ইডেনে ঢেকার মুখে বেশ উঁচু কাচের দরজাতেও তাঁর মাথা ঠুকে যাওয়ার উপক্রম ! সতর্ক হয়ে নীচু করে নিচ্ছেন৷ এখানে তাও বাঁচোয়া দরজা বেশ উঁচু৷ সমস্যা বেশি ড্রেসিংরুমের দরজা নিয়ে৷ সেটা আরও নীচু৷ তাই বেশ খানিকটা ঝুঁকে পেরোচ্ছেন সেই দরজা৷ সেই ইরফানই কাল ধোনিদের যমদূত। সঙ্গে থাকছেন উমর গুল আর গত বছরের সেরা স্পিনার সঈদ আজমল।


স্কুলছাত্রীদের স্কার্ট পরায় নিষেধাজ্ঞা আনার দাবি জানিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে আলোয়ারের বিজেপি বিধায়ক বানোয়ারি লাল সিঙ্ঘল। মেয়েদের সুরক্ষার নামে তাঁর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিজেপি বিধায়কের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন।

দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশ যখন উত্তাল, তখন মেয়েদের পোশাক নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন বিজেপি বিধায়ক। রাজস্থানের আলোয়ারের বিধায়কের বক্তব্য, স্কুলছাত্রীদের পোশাক হিসাবে নিষিদ্ধ হোক স্কার্ট। বাধ্যতামূলক করা হোক সালোয়ার-কামিজ। এই দাবি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।

যৌন নিগ্রহ, পুরুষের কটূক্তি - এ সবের জন্য পরোক্ষে মহিলাদেরই দায়ী করায় সমালোচনার মুখে আলোয়ারের বিজেপি বিধায়ক। বানোয়ারি লালের মন্তব্যের নিন্দা করেছে ডান-বাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিধায়কের মন্তব্যের বিরুদ্ধে আলোয়ারে মিছিল করে ছাত্রীরা। প্রতিবাদ হিসাবে বানোয়ারি লাল সিঙ্ঘলকে স্কার্ট উপহার দিয়েছে তারা।

চাপে পড়ে দলীয় বিধায়কের মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে বিজেপি। মহিলাদের সুরক্ষার নামে তাঁদের অনুশাসনে বাঁধতে চাওয়া, আর নিজেদের দায় এড়ানো। আলোয়ারের বিজেপি বিধায়কের বক্তব্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই মানসিকতারই প্রতিফলন
বলে মনে করছে সব মহল। 


মৃত্যু হলেও ছেলের মৃতদেহ তিন দিন সত্‍কার করতে পারলেন না এক আদিবাসী মহিলা। ডাইনি সন্দেহে ওই মহিলার ছেলের মৃতদেহ আটকে রাখে গ্রামবাসীদের একাংশ। পরে পুলিস গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার মৌপাল গ্রামে।

কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে এক আদিবাসী যুবকের মৃতদেহ তিনদিন আটকে রাখলেন গ্রামবাসীরা। গত রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী থানার মৌপাল গ্রামে মৃত্যু হয় খুদিরাম কিস্কুর। এরপরই গ্রামবাসীদের একাংশ অভিযোগ করে,  মৃত যুবকের মা স্বর্ণময়ী কিস্কু ডাইনি। তারা দাবি করে, আগে ডাইনির বিচার করতে হবে। এই দাবিতেই তিন দিন  আটকে রাখা হয় মৃতদেহ।
  
মঙ্গলবার শালবনি থানার পুলিস খবর পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সংস্কারের ব্যবস্থা করে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গ্রামে  পুলিস পিকেট বসানো হয়েছে। 


বারাসতের সোনাখড়কিতে মহিলা খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়।  মৃতার স্বামীকে জোর করে অ্যাসিড খাওয়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন চিকিত্‍সকরা। মহিলার স্বামী এই মুহূর্তে আরজি কর হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন। তাঁর ক্ষতচিহ্ন পরীক্ষা করে চিকিতসকরা জানিয়েছেন, কোনওভাবেই ওই ব্যক্তিকে জোর করে অ্যাসিড খাওয়ানো হয়নি। জোর করে অ্যাসিড খাওয়ানো হলে ওই ব্যক্তির ঠোঁটে বা শরীরের অন্যান্য অংশে ক্ষতের চিহ্ন থাকত। 

তাঁর শরীরে এমন কোনও ক্ষতচিহ্ন মেলেনি। একইসঙ্গে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, বারাসতের মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। পিছন দিক থেকে গামছা জাতীয় কোনও কিছু দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধ করা হয়, ফলে তাঁর ঘাড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। তার ফলেই ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। পরে  মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। চিকিত্সকরা আরও জানিয়েছেন, ওই মহিলার ব্যক্তিগত অঙ্গে আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি। অন্যদিকে, খুনের তদন্তভার আজ হাতে নিয়েছে সিআইডি।


বর্ষবরণে মাতল গোটা দেশ। তবে, দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের জেরে থমকে গেল উত্‍সবের উচ্ছ্বাস। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে মোমবাতি মিছিলে সামিল হল দিল্লি। বহু জায়গায় বাতিল হয়ে গেল একতিরিশে ডিসেম্বর রাতের অনুষ্ঠান। বর্ষবরণের রাতে বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়েও বারবার ফিরে এল দিল্লিকাণ্ডের স্মৃতি। 

পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়া। দুহাজার তেরোকে স্বাগত জানাল গোটা দেশ। তবে, বর্ষবরণের রাতে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে মিশে রইল বিষাদ। গণধর্ষণকাণ্ডে মৃত তরুণীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি হাতে পথ হাঁটল দিল্লি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্তর-মন্তর। বছরের শেষ রাতেও উঠল দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি। সরকার-বিরোধী স্লোগান।


'বোল মজুরা হল্লা বোল,' সফদারের 
শহীদ দিবসে ফের সেই ধ্বনিই

পার্থপ্রতিম নাগ

ঝাণ্ডাপুর (গাজিয়াবাদ), ১লা জানুয়ারি — 'লাল ঝাণ্ডা লে কর কমরেড আগে বড়তে জায়েগে' — এই গানের উদাত্ত আহ্বানেই ধ্বনিত হলো শহীদ সফদার হাসমির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। মঙ্গলবার, ঝাণ্ডাপুরের সেই জায়গাতেই, যেখানে ২৩ বছর আগে খুন হয়েছিলেন সফদার। ১৯৮৯ সালের পয়লা জানুয়ারি তারি‍‌খে দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে ঝাণ্ডাপুর গ্রামে সি আই টি ইউ-র এক সমাবেশে 'হল্লা বোল' পথনাটক চলাকালীন জননাট্য মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী কমরেড সফদার হাসমির ওপর নির্বিচার আক্রমণ সংগঠিত করেছিল কংগ্রেসের আশ্রিত দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত হন কমরেড সফদার হাসমিসহ বহু সাথী। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রামবাহাদুর সিং নামে সি আই টি ইউ-র লড়াকু কমরেড, রক্তাক্ত কমরেড হাসমি এক নির্মম আঘাতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দু'দিন পরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। মর্মান্তিক এ‍‌ই ঘটনার পর থেকে প্রতিবছরই এলাকার মানুষের সমাবেশে জননাট্য কমরেড সফদার হাসমি স্মরণ অনুষ্ঠান পালন করে আসছে।

মঙ্গলবারও সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল জননাট্য মঞ্চ এবং সি আই টি ইউ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জ্ঞানশঙ্কর মজুমদার। ছিলেন জননাট্য মঞ্চের সম্পাদিকা মালাশ্রী হাসমি। জ্ঞানশঙ্কর মজুমদার তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সি আই টি ইউ তথা দেশের শ্রমিক শ্রেণীর অকৃত্রিম বন্ধু 'জননাট্য মঞ্চ' এবং প্রয়াত কমরেড সফদার হাসমির নিরলস প্রয়াসের কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা কখনই কমরেড হাসমির সেই গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা ভুলতে পারি না। তাই আমাদের লক্ষ্য অভিমুখের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই প্রতিবছর সেই ইতিহাস ও কমরেড সফদারকে স্মরণ করে আসছি। মালাশ্রী হাসমি বলেন, সামনে চলার অঙ্গীকার ও দলের পক্ষে পরিকল্পনা প্রসঙ্গ নিয়ে।

এদিন ঝাণ্ডাপুর গ্রামে ড. আম্বেদকর উদ্যানে অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা বারোটায়। প্রথমে জননাট্য গোষ্ঠীর শিল্পীরা পরপর কয়েকটি চেতনাদীপ্ত গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। সারা মাঠ সাজানো হয়েছিল সি আই টি ইউ-র লালঝাণ্ডায়। মাঠের মধ্যে একটি অস্থায়ী মঞ্চ ঘিরেই হয় পরপর অনুষ্ঠান। জননাট্য মঞ্চের প্রয়াসে এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পথনাটকের যেসব কর্মশালাগুলি হয়েছে তারই মধ্যে ঝিলমিল অবিনাশচাঁদ চাড্ডা সর্বময় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মঞ্চস্থ করে নাটক 'তান্ত্রিক কি মুহ কালা।' এই নাটকের পরিবেশনায় মুগ্ধ হন হাজার জনতা। নাটকের বিষয়বস্তু হলো বিজ্ঞান চেতনা। রোগের চিকিৎসা বা নিরাময় করতে হলে একজন অনুমোদিত চিকিৎসদের কাছেই যেতে হবে কোন তান্ত্রিক নয়। বুজরুকির বিরুদ্ধে জনচেতনা গড়ার লক্ষ্য নিয়েই এই নাটকটি প্রস্তুত করা হয়েছে। শিশু ও কিশোর অভিনেতারা তাদের দক্ষতায় বিমুগ্ধ করে সকল দর্শক শ্রোতাকে।

এরপর জননাট্য মঞ্চের শিল্পীরা পরপর আরো কয়েকটি নির্বাচিত গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। জমাট ভারী কুয়াশা তখন কাটছে। রোদ ঝিলমিল পরিবেশে জননাট্য মঞ্চ মঞ্চস্থ করে এদেশের শাসকদল, তাদের রাজনীতির নিরিখে সমালোচনামূলক কথক নিয়ে, নির্মিত নতুন নাটক 'দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস'। এই নাটকের পরিচালক অনুপম ত্রিপাঠী। নাটক শুরুর আগে দলের পক্ষে অশোক তেওয়ারি বলেন, নাটকের সার-সংক্ষেপ। বলেন, কেন তারা এই আঙ্গিকের নাটক মঞ্চস্থ করেন।

দুপুর থেকে বিকালের এই অনুষ্ঠান ছাড়াও এদিন বেলা দু'টো থেকে নয়া দিল্লিতে মবলঙ্কার হল প্রাঙ্গণে 'সহমত' — গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতির পক্ষ থেকেও কমরেড সফদার হাসমি স্মরণ অনুষ্ঠান হয়। সেখানেও জমায়েত হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। তাঁরা সম্প্রতি দিল্লির ধর্ষণের ঘটনা ‍‌এবং ছাত্রীর বেদনাদায়ক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। এখানেও গণসঙ্গীত, স্মরণ কথা এবং প্রগতিশীল প্রতিবাদী নাটক মঞ্চস্থ হয়। সেই অনুষ্ঠান দেখতে মানুষের মধ্যে গভীর আবেগ লক্ষ্য করা গেছে। জনতার মধ্য থেকে ফের সেই আওয়াজ শোনা যায় বারবার যা সফদার কণ্ঠে স্লোগান হয়ে গিয়েছিল। মানুষ সোচ্চারে বারেবারে বলেছেন, 'বোল মজুরা হল্লা বোল।' এখানে একাধিক নবীন প্রতিভার গান, সঙ্গীত, কবিতা পাঠ এসবই ছিল আগুন ঝরা শব্দ সমাবেশ। রাত আটটা পেরিয়ে গেলেও সমান উৎসা‍‌হে সেই অনুষ্ঠান চলে। রোটকের শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান, ঢোলজুরি পরিবারের আলেখ্য, দিল্লির সেই ধর্ষিতা মহিলার স্মৃতির উদ্দেশ্যে সাথী মহম্মদের নিবেদন, ম্যান্টোমের সাংস্কৃতিক নিবেদনের ওপর নিতা মহেন্দ্রর উপস্থাপনা, হিন্দুস্থান উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত, নির্ভর তনভির আহমদ খান ও ইমরান আহমদ খানের অনুষ্ঠান ছিল উচ্চমানের। অশোক বাজপেয়ী প্রকাশ করেন 'মান্টো নামা' এবং ইপটা কি ইয়াঁদে বইগুলি।

পণ্ডিত রবিশঙ্করকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় এদিনের অনুষ্ঠানে। সোহেল হাসমি পাঠ করেন বলরাজ সাহানির — 'সুধার কি চোর'।

চেতনার গান শোনান হরপ্রীত, বিদ্যা সাহা ওয়াসজফুদ্দিন ডাগর, মদনগোপাল সিং, রবি সেগেল প্রমুখ। ডি ওয়াই এফ আই-র পক্ষে এখানে একটি সুসজ্জিত প্রদর্শনীও স্থান পায়।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=34175


কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে 
আজও চলে বিনিময় প্রথা

জয়ন্ত সাহা

‍কোচবিহার, ১লা জানুয়ারি— কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের জীবনে হাজারো সমস্যা। সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হয় নিজেদেরই। মুদ্রা চালুর আগে পৃথিবীতে বিনিময় প্রথা ছিলো একথা তো কারো অজানা নয়। মেখলিগঞ্জ মহকুমার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির যে অংশ কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে রয়েছে সেখানে চালু হয়েছে বিনিময় প্রথা। হেমকুমারী গোলাপাড়ার মতো গ্রামে ১০টা দেশী ডিমের বদলে মেলে ১লিটার দুধ, এক কেজি পাট দিলে ফিরিওয়ালা দেয় ২টো সাবান কিংবা ছোট রান্নার অ্যালুমিনিয়ামের কড়াই কিনতে দিতে হয় ৫ কিলো চাল। সমস্ত জিনিসের জন্য ঠিক করা আছে বিনিময় দ্রব্যের পরিমাণ। বাধ্য হয়েই প্রাচীন এই অর্থব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছেন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বসবাস করা মানুষেরা।

আন্তর্জাতিক আইন মেনে ‍‌জিরো পয়েন্ট থেকে দেড়শ মিটার দূরে কাঁটাতারের বেড়া দেবার কাজ শুরু করেছিলো ভারত সরকার। ভৌগোলিক কারণে কোথাও ৫০০ মিটার বা তার বেশি দূরে বেড়া বানায় কোথাও আস্ত গ্রাম আবার কোথাও বা খণ্ড গ্রাম রয়ে গেছে বেড়ার ওপারে। আর্থিক সঙ্গতিহীন পরিবারগুলি ভিটে মাটি ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতেও পারেনি। ওরা যেন 'স্থলদ্বীপের' বাসিন্দা।

এদেশের নাগরিক হলেও কোন নাগরিক পরিষেবাই বরাদ্দ হয় না এদের জন্য। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থেকে যাওয়া কৃষিজমি, বসতবাটি কিনবার খদ্দের নেই। চিকিৎসা বা মেয়ের বিয়ের জন্য নামমাত্র মূল্যে জমি হাত বদল হয়। রেজিস্ট্রি করানোর বিষয় নেই।

কাঁটাতারের বেড়া হয়ে যাবার পর সীমান্তের গেট পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে যেতে বি এস এফকে দিতে হয় হাজারো প্রশ্নের উত্তর। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে হয়রানির শিকার হতে হয়। দিনের বেলা ২ঘণ্টা অন্তর কিছুক্ষণের জন্য খোলা থাকে গেট। রাতের বেলা গেট পুরো বন্ধ।

ঝামেলা এড়াতে এই শতাব্দীতে বাধ্য হয়েই বিনিময় প্রথায় ফিরে এসেছে বেড়ার ওপারে থেকে যাওয়া গ্রামগুলি। নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই বেছে নিয়েছেন 'বিনিময় প্রথা'। ফেরিওয়ালা এলে যেমন চলছে বিনিময় প্রথা, তেমনি নি‍‌জেদের মধ্যেও সফিকুল মহম্মদ, প্রমিলা বর্মণরা এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই টিকে আছেন।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন মাঝে মাঝে বি এস এফের অনুমতি নিয়ে নুন, তেল, সাবানের মতো যে জিনিস গ্রামে মেলে না সেগুলি কিনে এনে মজুত করে রাখি। পরে প্রয়োজন মতো চলে বিনিময় প্রথা।

ফিরিওয়ালারা কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে 'স্থলদ্বীপে' গেলে বাসিন্দাদের প্রয়োজনের তালিকা তৈরি করে নিয়ে যান। পরে সেগুলি ক্রেতাদের দিয়ে নিয়ে যান দেশী ডিম, চাল, ধান পাট বা আলু।

কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে থাকা প্রায় ৭/৮টি গ্রামে বিনিময় প্রথায় জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন নাগরিকরা সেটা জানেন স্থানীয় প্রশাসনও। বাগডোকরা-ফুলচাড়াবরি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কিনুমোহন রায় বলেন, বেঁচে থাকার তাগিদেই ফিরে এসেছে বিনিময় প্রথা।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=34123


মালেগাঁও বিস্ফোরণে 
দায় কবুল মনোহরের

সংবাদ সংস্থা

মুম্বাই, ১লা জানুয়ারি— মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম মূল অভিযুক্ত মনোহর সিং জেরায় তার দায় স্বীকার করেছে। শনিবার মধ্য প্রদেশ থেকে তাকে ধরা হয়েছিল। রবিবার মুম্বাইয়ের এক বিশেষ আদালতে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (নিয়া) মনোহরকে পেশ করে এমনই দাবি করেছে। মালেগাঁও বিস্ফোরণে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নাম ফাঁস হওয়ার পর মনোহরকেই প্রথম গ্রেপ্তার করেছে নিয়া। ইন্দোর জেলার হাতোড় থেকে ধরা হয়েছিল মনোহরকে। পাশাপাশি এই মনোহরকে জেরা করে আরো কিছু পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০০৭সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণে মূল অভিযুক্ত রাজেন্দ্র সিংকে জেরা করেই মনোহরের নাম জানা গিয়েছিল। আদালত ইতোমধ্যেই রাজেন্দ্রর বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। সোমবার সম্ভবত তাকে মুম্বাইয়ের আদালতে পেশ করাও হতে পারে।

প্রসঙ্গত সাম্প্রদায়িকভাবে স্পর্শকাতর মালেগাঁওয়ে ২০০৬-এর ৮ই সেপ্টেম্বর একটা মসজিদের কাছে একাধিক বিস্ফোরণে ৩৭জনের মৃত্যু হয়েছিল। জখম হয়েছিলেন শতাধিক মানুষ। বিস্ফোরণের পর মহারাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ দমন শাখা (এ টি এস) একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ৯জনকে গ্রেপ্তার করে। ঐ বিস্ফোরণ নিয়ে নতুন তথ্য সামনে আসার আগে পর্যন্ত তারা জেলেই ছিলেন। গত বছরের ৫ই নভেম্বর তারা জামিনে ছাড়া পান। বিস্ফোরণের তদন্তে সি বি আই-ও এ টি এস-এর দাবিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তারপর অবশ্য তদন্তের ভার চলে যায় নিয়ার হাতে। নিয়া আদালতে জানিয়েছে, ২০০৭-এর হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃত স্বামী অসীমানন্দকে জেরা করেই মালেগাঁও বিস্ফোরণে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর যোগাযোগের কথা জানা যায়। এছাড়াও মালেগাঁওতে আরেকটি সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেই কাণ্ডেই ধরা পড়েছিল প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর ও প্রাক্তন সেনাকর্তা শ্রীকান্ত পুরোহিত।

দুষ্কৃতীকে ধরিয়ে দিলেন মহিলাই
খাস কলকাতায় দিনের বেলায় কটূক্তি করতে করতে এক যুবতীর পিছু নিয়েছে দুই মদ্যপ যুবক। দ্রুত পায়ে হাঁটছেন যুবতী। কিন্তু রক্ষা পেলেন না। ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর টি-শার্টের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিল ওই দুই যুবক। মহিলার চিৎকারে অনেকে ভিড় করলেও সাহায্য করতে কিন্তু এগিয়ে এলেন না কেউই! 
ঘটনাস্থল: কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা ও লালবাজারের মাঝখানে বৌবাজার ও হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে কয়েক হাত দূরের বো স্ট্রিট। সময়: মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে। 
এমন জায়গায়, এমন একটা ঘটনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে: দিনদুপুরে থানার কাছেই যদি এক জন মহিলাকে নিগ্রহ করার সাহস পায় দুষ্কৃতীরা, তা হলে রাতবিরেতে, নির্জন এলাকায় তাঁরা কতটা নিরাপদ। তা ছাড়া, দিল্লির গণধর্ষণের প্রতিবাদে গোটা দেশের সঙ্গে যখন গর্জে উঠেছে এই শহরও, তখন ওই মহিলার আর্ত চিৎকার শুনেও কেন কেউ সাড়া দিলেন না, সেটাও বড় বিস্ময়। 
কেউ এগিয়ে না এলেও ওই মহিলা অবশ্য নিজেই প্রতিরোধ করেছেন তাঁর নিগ্রহকারীদের। শুধু তা-ই নয়, ঘুরে দাঁড়িয়ে এক দুষ্কৃতীর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছেন থানায়। দুষ্কৃতীর নখের আঁচড়ে রক্তাক্ত হয়েছে তাঁর নিজের হাত। তবু ছাড়েননি। বৌবাজার থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন ওই দুষ্কৃতীকে। তত ক্ষণে চম্পট দিয়েছে অন্য দুষ্কৃতী। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের হাতে যে যুবককে তুলে দিয়েছিলেন ওই মহিলা, তার নাম ঘনশ্যাম থাপা। 
বৌবাজার থানার দাবি, মহিলা তাদের কাছে আসার পরেই তারা তৎপর হয়ে তদন্তে নেমেছে। ঘনশ্যামকে জেরা করে কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার পলাতক সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম সীতারাম থাপা। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, জ্যাকারিয়া স্ট্রিটের একটি অতিথিশালায় কাজ করে ওই দু'জন। বয়স বছর পঁচিশের মধ্যে। রাতে কলকাতার ডেপুটি কমিশনার (মধ্য) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, "ওই দু'জনের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বুধবার তাদের আদালতে পেশ করানো হবে।"
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডের পরে মহিলা নিগ্রহের প্রতিবাদে গোটা শহর এখন উত্তাল। মোমবাতি, পোস্টার হাতে পথে নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু কলকাতা রয়েছে কলকাতাতেই। নারী নিগ্রহে কোনও ইতি পড়েনি। রবিবার রাতেই একটি বেসরকারি বাসে মদ্যপ যুবকের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন বরাহনগরের বাসিন্দা এক মহিলা। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনিও। সঙ্গীর সাহায্যে দুষ্কৃতীকে তুলে দিয়েছিলেন কাশীপুর থানার পুলিশের হাতে। 
কী ঘটেছে এ দিন বো স্ট্রিটে? 
বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাসিন্দা বছর বাইশের ওই যুবতী জানান, বো স্ট্রিটে একটি জামাকাপড় তৈরির দোকানে তিনি প্রায়ই যাতায়াত করেন। এ দিনও তিনি একটি পোশাক তৈরি করাতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময়ে নেপালি ভাষায় তাঁকে উত্যক্ত করতে থাকে দুই মদ্যপ যুবক। 
মহিলা নিজেও নেপালি। ফলে ভাষা বুঝতে তাঁর অসুবিধা হয়নি। কিন্তু গুরুত্ব না-দিয়ে তিনি হাঁটতে থাকেন। কিন্তু দেখেন, অশালীন কথা বলতে বলতে যুবক দু'টি তাঁর পিছু নিয়েছে। রাস্তায় কেউ প্রতিবাদ করছে না দেখে তাদের সাহস বাড়ে। যুবতী জানান, পিছন থেকে তাঁর টি-শার্টের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে রাস্তার উপরেই তাঁর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে দু'জন। সেটা দেখেও কেউ বাঁচাতে আসেননি।
ওই বিপদের মধ্যেও ভয়ে উপস্থিতবুদ্ধি হারাননি মহিলা। ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই এক যুবককে ধরে ফেলেন। যুবতীর আক্ষেপ, যুবকটিকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য আশপাশের লোকের সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। তিনি বলেন, "পুলিশের কথা শুনেই সবাই দ্রুত সরে পড়েন। 
এর পর যুবকটির হাত ধরে টেনে থানার গেটের কাছাকাছি এসে চিৎকার করে পুলিশকে ডাকতে থাকি। তাই শুনে পুলিশ এসে ওকে ধরে।" মহিলা এর পরে ফোন করেন তাঁর স্বামীকে। কিছু ক্ষণ পরে তিনিও থানায় আসেন। মহিলা লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেন ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে। 
দিনের আলোয় এমন ঘটনার পাশাপাশি সাহায্য করতে কারও এগিয়ে না-আসাটা বিস্মিত করেছে ওই মহিলাকে। থানায় তিনি বলেন, "এ রকম একটা জায়গায় কেউ এ ভাবে অপমান করবে, তা ভাবতেও পারিনি। আরও অবাক হয়েছি, কেউ সাহায্য করতে আসেনি। কলকাতার রাস্তায় দিনের আলোয় এই ঘটনা দেখেও কেউ প্রতিবাদ করছেন না, তা ভাবতেও পারছি না!" 
বছরের প্রথম দিনের এই ঘটনাটি ছাড়াও বর্ষবরণের রাতে নিউ মার্কেট এলাকায় আরও দু'টি শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানায়, লিন্ডসে স্ট্রিটে এক মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে মুরলী পাসোয়ান নামে এক যুবক গ্রেফতার হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে বছর উনিশের ওই যুবক মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এখানে আশপাশের লোকেরাই অভিযুক্তকে ধরে পুলিশে তুলে দেন। 
সোমবার রাতেই কসবার রুবি মোড়ে দুই মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে মহিলাদের সঙ্গীদের সঙ্গে কয়েক যুবকের বচসা, হাতাহাতি হয়। দু'পক্ষের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। ওই রাতেই নিউ মার্কেট এলাকারই উমাদাস লেনে এক নাবালিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযুক্ত ধরা পড়েনি।
http://www.anandabazar.com/2cal1.html

অর্থনীতি পুনর্জীবনে বিশ্বজুড়ে মার্কিন সন্ত্রাস
সোমবার, 19 মার্চ 2012 09:40

মুহম্মদ আলতাফ হোসেন ::আফগানিস্তানে দখলদার মার্কিন সৈন্যদের একজনকে গত ১১ মার্চ উদ্ধত আগ্রাসী মানসিকতায় আবির্ভুত দেখা গেলো। মাধ্যরাতে নিরীহ বেসামরিক আফগানদের ঘরে ঢুকে নারী ও শিশুসহ মোট ১৬ ব্যক্তিকে হত্যা করলো ঐ মার্কিন সৈন্য। এলাকাটি যুদ্ধগ্রস্ত ছিল না। বিধায় শত্র"র মোকাবিলা করতে গিয়ে সৈন্যটি নৃশংস হত্যাকান্ডে মত্ত হয়েছিল- বাহানা তৈরির সুযোগ নেই।

এমন বর্বর হত্যাকান্ডকে মার্কিন সৈন্যের মানসিক বিকারগ্রস্ততার উৎকট প্রতিফলন বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। বিদেশের মাটিতে দৃশ্যমান লক্ষ্যহীন ও মেয়াদহীন যুদ্ধে জড়িত মার্কিন সৈন্যদের পক্ষে এমন পৈশাচিক অপরাধ সংঘঠনের ঘটনা যখন তখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দখলী দেশে নিজেদের জবর দখল অব্যাহত রাখতে তৎপর মার্কিন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হত্যাকান্ডগুলোর জন্য দায়ী করতে হবে। শুধুমাত্র হত্যাকারীকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।

নিহত তালিবান যোদ্ধার শরীরে মার্কিন সৈন্যদের পেসাব করতে দেখা গেছে। তারা পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছে। খেলাচ্ছলে বেসামরিক আফগানদের হত্যা করছে মার্কিনীরা। মধ্যরাতে ঘরে ঢুকে বেসামরিক আফগানের গৃহাভ্যন্তরীণ একান্ত জীবনের অবমাননা করে যাচ্ছে মার্কিনীরা। কাবুলে মোতায়েন মার্কিন সামরিক অধিনায়কেরা দুঃখ প্রকাশ করে এবং আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করে ওয়াশিংটনে আসীনের তাদের ইতিকর্তব্য সমাধা করে দিচ্ছেন। কিন্তু ঘটনা আবার ঘটছে।

আগ্রাসী মার্কিনীরা বৈদেশিক ভূখন্ডের স্বাতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব নস্যাত করছে। সেখানে দখলদারীত্ব কায়েম করছে এবং দখলী দেশের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বিনাশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশের মাটিতে পশ্চিমা অপপ্রকল্পের রূপায়ন চেষ্টা অত্যন্ত প্রকট হয়ে উঠেছে পেছনের এক দশকে। নষ্ট প্রকল্পের অসহায় ঘটকের ভূমিকায় বিদেশের মাটিতে পশ্চিম থেকে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে নব্য তরুণদের। অসহনীয় ঝুঁকিও শত্র"তার পরিবেশে সৈনিক হিসেবে নিক্ষিপ্ত তরুণের দল নরহত্যা সংগঠনে ও মনুষ্যের যৌন ব্যভিচারে লিপ্ত হচ্ছে দখলী দেশে যত্রতত্র ও যখন তখন। বিজাতীয় পরিবেশ প্রসূত মানসিক বিকার ও বিভ্রম হিসেবে পশ্চিমারা তরুণ মার্কিন সৈনিকদের অপরাধকর্মকে চিত্রিত করলেও বহু পর্যবেক্ষকের অভিমত হচ্ছে যে মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন সম্মতি ছাড়া এই সব পৈশাচারের পুনরাবৃত্তি সম্ভব ছিল না।

প্ররোচক উপাদান হয়ে থাকে রুগ্ন মানসিকতা ও সঙ্গে যুক্ত হয় উদ্দেশ্যবিহীন যে যুদ্ধ- সে যুদ্ধে জড়িত সৈনিকদের ভাবনায় এমন কদর্য ধর্মকামী শামিল হয়ে যাওয়া বিচিত্র কোনো ঘটনা হয়। ৪০ বছর আগে ভিয়েতনামে নিষ্ঠুর যুদ্ধে নিয়োজিত মার্কিন সৈনিকদের মধ্যে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের গুলী চালিয়ে হত্যা করার ঘটনার সংখ্যাবৃদ্ধির মুখে ভিয়েতনাম পরিত্যাগের পরিকল্পনা দ্রুত ক্রিয়ান¦য়নে তৎপর হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহু ভাষ্যকার এমন ধারণা উপস্থাপন করে থাকেন। কিন্তু অন্য ভাষ্যকারদের ব্যক্ত অভিমতে লক্ষ্য করা যায়, ভিয়েতনাম যুদ্ধকালীন মার্কিন অর্থনীতির সফলতার তুলনায় বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা নিতান্তই ভঙ্গুর ও হতাশানির্দেশক। যুদ্ধে প্রতিপক্ষের সামরিক শক্তিসামর্থ্যও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সেদিন উপেক্ষণীয় বিষয় ছিল না। ইরাকে ও আফগানিস্তানে ও অন্যত্র আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের সামনে সেদিনের অবস্থা ও সমস্যা আজ উপস্থিত নেই। পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আজ এক সেরা। কিন্তু সর্বগ্রাসী সামরিক সামর্থ্যরে অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের মতো হতদরিদ্র দেশেও নিজেদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ স্থাপিত করতে অনপনেয় প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। আফগানদের বিরুদ্ধে উগ্র ধর্মান্ধতার নিরলস অপপ্রচারের বদৌলতে ইরাকি তেল লুটের মতো অবাধ পরিস্থিতি আফগানিস্তানে সৃষ্টি করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আজো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অথচ ভূগর্ভে প্রোথিত অঢেল আফগান খনিজ উত্তোলনের গরজে চালিত আগ্রাসন মধ্যপথে ক্ষান্ত দিয়ে পলায়নপর হওয়াও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ইরাকের মতো দালাল সরকার আফগানিস্তানেও অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। তালিবানের উৎসস্রোত নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার জন্য অবিরাম ড্রোন-হামলা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিণাম এগোতে দেখাচ্ছে বিপরীত পথে। পাক-ইরান-আফগান জোট তৈরির পথ প্রশস্ত হয়েছে। দূরদর্শী ও সুস্থমস্তিষ্ক ভাষ্যকারেরা বহুবার ইতোপূর্বে আফগান যুদ্ধ সমাপ্ত করার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সৎ ও ন্যায়নির্ভর পরামর্শ শোনা মার্কিন প্রশাসনের অবস্থা নেই। সম্পদ লুটের দুরভিসন্ধি তাড়িত মার্কিন প্রশাসনকে তৃতীয় বিশ্বের নতুন নতুন ক্ষেত্রে আগ্রাসন রচনার তাড়নায় অস্থির দেখা যাচ্ছে। তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণ সুদান মূল সুদান থেকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে। সোমালিয়ায় প্রযিুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নাইজেরিয়ায় খনিজ সম্পদের ওপর নজর নিবদ্ধ রেখে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা তীব্রতর করেছে মার্কিন প্রশাসন।

পাকিস্তানী পারমাণবিক স্থাপনায় পাহারাদারীর দাযিত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে। অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান মুসলিম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মার্কিন স্বার্থের সংরক্ষণের ও বৃদ্ধির জন্য ঘাতক সিদ্ধ হতে পারে। তেল ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ ইরান মার্কিন হামলার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। সিরিয়ায় পৃথক তেল উৎপাদন অঞ্চল তৈরির চেষ্টা চলছে। ক্ষয়িষ্ণু মার্কিন অর্থনীতিতে পুনর্জীবন সঞ্চারের জন্য বিশ্বজুড়ে এমতর বহুবিধ মানববিধ্বংসী তৎপরতায় নিজের সামরিক শক্তি সম্প্রসারিত করে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই আফগানিস্তান পরিত্যাগের ঝুকি সামাল দিতে প্রস্তুত নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দখলী দেশে মার্কিন সৈন্যদের মধ্যরাতে নরসংহার বন্ধ হওয়ার নয় এবং ক্ষমা চাইতেও ক্ষান্ত থাকার কথা নয় মার্কিনীদের।


http://ukbdnews.com/opencomments/53843-2012-03-19-10-36-26.html


মার্কিন প্রতিনিধি সভায় পাশ হয়ে গেল ওবামার স্বাস্থ্যসেবা বিল

   

he_usমার্কিন প্রতিনিধি সভায় পাশ হয়ে গেল ওবামা সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিল। রোববার ৮ নভেম্বর প্রতিনিধি সভায় ২২০-২১৫ ভোটে পাশ হয় বিলটি। ওবামা সরকার স্বাস্থ্যসেবার সংস্কারের যে কাজ হাতে নিয়েছে তাতে খরচ হবে ১.১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিলটি বাস্তবায়ন হলে ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক স্বাস্থ্য সেবার মধ্যে চলে আসবে। ১০ বছর লাগবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে। বিলটি পাশ করাতে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে বহু সমালোচনাও । কংগ্রেসেরে নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি সভার ভোটাভুটিতে বিলটি পাশ হলেও ৩৯ জন ডেমোক্রেট ১৭৬ জন বিপাবলিকানদের সুরে সুর মিলিয়ে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এ বিলটির মাধ্যমে প্রতিটি মার্কিন নাগরিককে স্বাস্থ্য বীমার মধ্যে নিয়ে আসা হবে এবং স্বাস্থ্য বীমা শুরু করতে প্রতিটি মার্কিন নাগরিককে সরকার সাহায্যে করবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে মার্কিন স্বাস্থ্য নীতিতে একজন মার্কিন নাগরিকের স্বাস্থ্য বীমা করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। সবার পক্ষে এটি বহন করা সহজ নয় বিধায় এ নীতিতে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ওবামা সরকার। প্রস্তাবে বিপক্ষে যারা আছে তাদের যুক্তি এটি করতে গেলে ওবামা সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে মার্কিন অর্থব্যবস্থা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। প্রতিনিধি সভাতে পাশ হয়ে এখন বিলটিকে সিনেটের সমর্থন পেতে হবে। সিনেটে বিলটির ভাগ্যে কি ঘটবে তা এখনো অস্পষ্ট। সিনেটের অনুমোদন না পেলে বিলটি পাশ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।(সুত্র. আল-জাজিরা)


ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যেসব দেশের সঙ্গে ভারতের নিয়মতান্ত্রিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে
ভারতের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে, ২০০৮ সালে

██ India

██ Key strategic, military & economic partners

██ Major economic partners with strategic cooperation

██ Other economic partners

██ Countries which have territorial disputes

ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল নির্বাচিত গণতন্ত্র। এই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার অত্যন্ত দ্রুত। ২০০৭ সালে ৮.৯ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে এটি চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রধান অর্থব্যবস্থা।[১] ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম[২]। ক্রয়ক্ষমতা সমতায়ও চতুর্থ বৃহত্তম ভারত এই কারণে একটি আঞ্চলিক শক্তি[৩][৪] ও মধ্য শক্তি হিসেবে গণ্য হয়।[৫][৬][৭][৮] আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এই কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ভারতের কণ্ঠস্বরকে মজবুত করেছে।[৯][১০][১১][১২]

১৯৪৭ সালে যুক্তরাজ্যের অধীনতাপাশ থেকে মুক্ত হয়ে ভারত কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এ যোগ দেয় এবং ইন্দোনেশীয় জাতীয় বিপ্লব সহ বিভিন্ন উপনিবেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে জোরালো সমর্থন দান করে।[১৩] ভারত বিভাগ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রীয় বিবাদকে (বিশেষত কাশ্মীর বিবাদ) কেন্দ্র করে পরবর্তী বছরগুলিতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি করে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারত কোনো আন্তর্জাতিক শক্তিজোটকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারত ঘণিষ্ঠ সংযোগ গড়ে তোলে এবং উক্ত রাষ্ট্র থেকে বহুবিধ সামরিক সহায়তাও লাভ করে।

ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি সারা পৃথিবীর মতো ভারতের বিদেশনীতিতেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এই সময় ভারত যে সকল আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দেয়, সেগুলি হল: যুক্তরাষ্ট্র[১৪] গণপ্রজাতন্ত্রী চীন[১৫] ইউরোপীয় ইউনিয়ন[১৬] জাপান,[১৭] ইসরায়েল[১৮] মেক্সিকো[১৯] ও ব্রাজিল [২০]। অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস,[২১] আফ্রিকান ইউনিয়ন[২২] আরব লিগ[২৩] ও ইরানের [২৪] সঙ্গেও ভারত ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক বজায় রেখে চললেও, [২৫] ইসরায়েল ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে;[২২] এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভারত শক্তিশালী এক রণনীতিসংক্রান্ত সহযোগিতা গড়ে তোলে।[১৪][২৬] ২০০৮ সালে ভারত-মার্কিন অসামরিক চুক্তি সাক্ষরিত ও প্রযুক্ত হয়। এই ঘটনাকে দেখা হয় ভারত-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির একটি ধাপ হিসেবে।[২৭]

ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সহযোগিতার সম্পর্কের ইতিহাস বেশ পুরনো। ভারতকে মনে করা উন্নয়নশীল বিশ্বের এক নেতা।[২৮][২৯] ভারত একাধিক আন্তর্জাতিক সংঘের সদস্য, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রসংঘ,জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনএশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জি২০ ইন্ডাস্ট্রিয়াল নেশনস। এছাড়াও যে সব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, সেগুলি হল ইস্ট এশিয়া সামিট[৩০] বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা[৩১] আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার[৩২] জি৮+৫ [৩৩] ও আইবিএসএ ডায়ালগ ফোরাম [৩৪]। ভারত যেসব আঞ্চলিক সংঘের সদস্য সেগুলি হল সার্ক ও বিমস্টেক। ভারত বিভিন্ন শান্তিপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত অভিযানে অংশগ্রহণ করে এবং ২০০৭ সালে রাষ্ট্রসংঘের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনা সরবরাহকারী রাষ্ট্র ঘোষিত হয়।[৩৫] বর্তমানে ভারত রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও জি৪ নেশনস-এর স্থায়ী সদস্যপদ লাভের প্রত্যাশী।[৩৬]


[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  1.  Indian economic growth rate - BBC
  2.  World Almanac: Nation's with Largest Armed Forces
  3.  Indian Navy tsunami aid highlights country's role as 'super regional power
  4.  India As a Regional Power
  5.  India: Asia's Other Superpower Breaks Out
  6.  The Coverage of Three International Newspapers on India's Super Power Capabilities in the Region: A Content Analysis of The Times of India, New York Times and London Times
  7.  India: A Superpower in the making
  8.  India set to become an economic superpower: Chidambaram
  9.  US Today on NIC report
  10.  The New Great Game: Why the Bush administration has embraced India
  11.  E.U. India relations
  12.  US-India relations
  13.  http://old.thejakartapost.com/yesterdaydetail.asp?fileid=20080717.B08
  14. ↑ ১৪.০ ১৪.১ Fact Sheet: United States and India: Strategic Partnership
  15.  India and China
  16.  The EU's relations with India - Overview
  17.  India and Japan
  18.  India-Israel Partnership
  19.  Mexico » International Relations
  20.  India, Brazil ink nine agreements
  21.  India & Asean
  22. ↑ ২২.০ ২২.১ World Report: "India 2nd largest importer of conventional weapons," Business Standard, February 14, 2008
  23.  Indo-Arab relations; an account of India's relations with the Arab World from ancient up to modern times
  24.  [http://www.economist.com/specialreports/displaystory.cfm?story_id=12749743 A special report on India: India elsewhere: An awkward neighbour in a troublesome neighbourhood] December 11th 2008 The Economist
  25.  Prospects for India-Russia Security Relations - Carnegie Endowment for International Peace
  26.  http://www.assamtribune.com/scripts/details.asp?id=feb1507\edit1
  27.  US-India Nuclear Deal Goes Through
  28.  G8 SUMMIT: Developing Countries Stand Firm by Kyoto Protocol
  29.  [১]
  30.  http://goliath.ecnext.com/coms2/gi_0199-4519133/ANALYSTS-SAY-INDIA-S-POWER.html
  31.  http://www.pjstar.com/business/x1906041915/Guebert-WTO-talks-show-declining-U-S-clout
  32.  http://www.mmegi.bw/index.php?sid=4&aid=149&dir=2007/October/Friday26
  33.  http://www.theaustralian.news.com.au/story/0,25197,23978188-2703,00.html
  34.  http://www.bilaterals.org/article.php3?id_article=9969
  35.  http://www.indianembassy.org/policy/peace_keeping/history_india_UN_peace_keeping.htm
  36.  http://news.bbc.co.uk/2/hi/americas/3678736.stm

[সম্পাদনা]অন্যান্য সূত্র

টেমপ্লেট:Foreign relations of Asia

http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0_%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95_%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95


ভারসাম্যহীন অর্থব্যবস্থা : পোষা কুকুরের খরচ নিম্নবিত্তের আয়ের তিনগুণ!

২৯ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৫৯

আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার হাল হকিকাত দেখুন -০ দারিদ্র্য নির্মূলে আসে হাজার হাজার কোটি, সিংহভাগ যায় প্রভাবশালীর পকেটে
০ গরিবের ঋণে সুদ কয়েকগুণ বেশি
ঘটনাটি গত বছরের (২০১১) ২৫ নবেম্বরের। অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত রাজধানীর ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের। তখন পড়ন্ত বিকেল। ভয়াবহ যানজট। আবাসিক এলাকার প্রান্ত সড়কেই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আটকা পড়েছে আলিশান গাড়ির মালিকরা। একটির পর আরেকটির সারি। এরই একটিতে মাম্মীর (মা) সঙ্গে বিরক্তি নিয়ে বসা ছিল উচ্চবিত্তের টিনেজ দুটি মেয়ে। ওদের সঙ্গে ছিল টমিও। হাইব্রিড জাতীয় একটি কুকুরের আদুরে নাম হচ্ছে টমি। দেখতে সাদাটে ও নাদুস-নুদুস। স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী। জানা গেল, ওই পরিবারটি ওকে লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছে। টমির সঙ্গে ওদের খুব ভাব। দৃশ্যত যা দেখা গেল তাতে মনে হয়েছে ওই পরিবারের কারোরই ওর প্রতি যতœ-আত্তির কমতি নেই। 
ওদিকে সড়কের পাশ ঘেঁষেই দেখা গেল সিটি কর্পোরেশনের একটি ডাস্টবিন। ময়লা-আবর্জনা, পঁচাবাসি কিংবা ঝুটা ফেলা হয়েছে ওই ডাস্টবিনে। এ সবের ওপর ভনভন করছে পোকা-মাকড় ও মাছি। এখানেই বিষ্টা খাবারের ভাগাভাগি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে বেওয়ারিশ কয়েকটি কুকুর। কুকুরের খাবার কুকুরে খেলে দোষের কিছু হয় না। দোষ হয় ওই খাবারে কোন মানুষ ভাগ বসালে। 
এমন দৃশ্য দেখে জাত কুল মান যাওয়ার উপক্রম প্রত্যক্ষদর্শী ওই বিত্তবান পরিবারের। প্লাস্টিকে করে ডাস্টবিনে ফেলে যাওয়া পচাবাসি খাবার এক হতভাগ্যকে খেতে দেখে টিনেজ মেয়ে দুটি ও-য়া-ক্, ও-য়া-ক্ করে থুঁথু ছিটাল। ওদের একজনের মন্তব্য ছিল এমন 'ছিঃ এই আবর্জনা কিভাবে খাচ্ছে লোকটি। আমার তো বমি আসার অবস্থা।' অপর টিনেজ মেয়েটি আরও নির্মমভাবে বলল, 'তোমার খারাপ লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক। দেখ না আমাদের টমিও মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।'
দীর্ঘ জটে আটকে থাকা ওই গাড়ির চালক পাশেই একটি টং দোকানে প্রভুপতœীর জন্য পান নিতে এলে স্বল্প সময়ের জন্য কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শী এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, 'ভাই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সারাদিন গাড়ি চালিয়ে মাস শেষে পাই মাত্র সাত হাজার টাকা। এ টাকা দিয়ে আমি নিজে চলি, একই সঙ্গে পরিবারের অপর তিন সদস্যকেও চলতে হয়। অথচ ওই গাড়িতে যে কুকুরটিকে দেখছেন ওর পেছনে মালিক মাসে খরচ করেন কম করে হলেও বিশ হাজার টাকা। প্রতিদিন ওর গোসলে ব্যবহৃত শ্যাম্পুটিও বিশেষ বিবেচনায় কেনা হয়। রাখা হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। তার বেডরুম পরিষ্কারে প্রতিদিন একজনকে কাজ করতে হয়। খাওয়ানো হয় উচ্চমাত্রার প্রটিনসমৃদ্ধ খাবার!' 
প্রাণী প্রেমের প্রতি প্রভুর এই সখ্য প্রশংসাযোগ্য। প্রকৃতি প্রেমেও এটি অনন্য নজির। কবি লিখেছেন, 'জীবে দয়া করে যেই জন; সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।' বিত্তবানরা এই ভেবে তুষ্ট যে তারা একটি জীবের প্রতি প্রেম দেখাচ্ছেন। আর এ প্রেম দেখাতে লাখ টাকায় আমদানি করা কুকুর এখন বিত্তবানদের ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে। এতে সামাজিক মর্যাদাও নাকি বাড়ছে।
তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বিপরীত মেরুর এ নির্মম সত্যটিকে বিচার করতে চান ভারস্যাম্যহীন অর্থব্যবস্থাপনা দিয়ে। তাঁদের মতে, বহু বছরের কুক্ষিগত অর্থ ব্যবস্থার লাগামহীন দৌরাত্ম্যের কারণেই কিছু মানুষকে এখনও এ নিষ্ঠুর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে কখনও কখনও বেছে নিতে হচ্ছে ডাস্টবিনের পচাবাসি উচ্ছিষ্ট (অখাদ্য)। মানবিকতার বিচারে বিত্তবানরা এর দায়ভার কিছুতেই এড়াতে পারেন না।
আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দীর্ঘবছর ধরে চলতে থাকা ভারসাম্যহীন অর্থব্যবস্থা, শোষণ, শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থ'ান না থাকা, উত্তরাধিকারবঞ্চিত হওয়া কিংবা ভাগবাটোয়ারায় সম্পদের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস এবং পারিবারিক চাহিদা বৃদ্ধিতে অবশিষ্টটুকুও ধরে রাখতে না পারায় বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এ ধরনের হতদরিদ্রের দেখা মিলছে।
দারিদ্র্য বিষয়ে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় সমাজবিজ্ঞানীরা অর্থনৈতিক মানদ-ের বাইরে দারিদ্র্যের বহুবিধ কারণ খুঁজে পেয়েছেন। ওইসব গবেষণায় বলা হয়েছে, সমাজে বহু বিবাহ, একই পরিবারে অধিক সন্তান, সন্তানদের অপরিণত রেখে পিতামাতার মৃত্যু, অশিক্ষা, অনর্থক ভোগ-বিলাস, অপচয়, জুয়া, সামাজিক কলহ ও মামলাবাজি, পারিবারিক বিরোধ, সুদ প্রথার কু-প্রভাব, বিবাহবিচ্ছেদ, পেশা পরিবর্তন/ভুল পেশা গ্রহণ, দুর্ঘটনা/দুরারোগ্য ব্যাধি, বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত মানুষ এ জাতীয় দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা ভারসাম্যহীন অর্থব্যবস্থার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা থেকে উঠে আসতে পারেনি। এ ধরনের দেশে আর্থ-সামিজিক বৈষম্য খুবই প্রকট। বিশেষ করে সম্পদের মালিকানা ও আয়-ব্যয়ের ব্যবধান এবং সার্বিক বণ্টন ব্যবস্থা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। একদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আবার কর্মসংস্থান যাই-ই আছে তাতে দক্ষ শ্রমিক ও মজুরি মূল্য হতাশাজনক। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বাজার ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা। পণ্যের গায়ে আগুন। অথচ কৃষক তার ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। অন্যদিকে বাড়ছে কৃষি উপকরণের দামও। সে অনুযায়ী ফলন না মেলায় সারাদেশে চাষাবাদের পরিমাণও কমে আসছে। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বরাবরই দাবি করে আসছেন দেশে খাদ্যের কোন সঙ্কট নেই। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। অবশ্য বিগত কয়েক বছরের বাম্পার ফলন খাদ্যমন্ত্রীর এ দাবিকে অগ্রাহ্যও করা যায় না। 
তবে বাস্তবতা হচ্ছে ওই উদ্বৃত্ত খাদ্য সবার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। খাদ্যের যোগান, বণ্টন কিংবা সরবরাহ সর্বোপরি বিভিন্ন খাতে অর্থব্যবস্থাপনার চরম অনিয়ম দেশের চরম দরিদ্র শ্রেণীর প্রায় ৬ কোটি লোককে প্রতিনিয়ত অনিশ্চিয়তায় ফেলে দিচ্ছে। 
যদিও সরকারী হিসাবে দেশে দারিদ্র্যের হার সংখ্যানুপাতে কমে এসেছে। বিগত তিন বছরে সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকা-ে দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশে বেসরকারী ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও দরিদ্র কমে আসার প্রমাণ মিলেছে। 
তবে নানা কারণে সরকার অর্থব্যবস্থাপনায় উন্নতির ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না। দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার কমে আসলেও প্রতিবছরই চুইয়েপড়া অর্থনীতির নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় নতুন করে দারিদ্র্য সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী গত এক দশকে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। এসব কারণে দেশে এখনও ৫ কোটি ৭৫ লাখ লোক চরম দরিদ্র সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছে।
২০১২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় দেশের সার্বিক অর্থব্যবস্থাপনার বৈষম্য জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, দেশের অর্থব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে পরিচালিত হচ্ছে কেন্দ্রীয়ভাবে শহরকেন্দ্রিক। যে কারণে মানুষের শহরমুখী প্রবণতা বাড়ছে। ১৯৭১ সালে শহরকেন্দ্রিক জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২.৬৪ মিলিয়ন যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। কিন্তু সেটি ১৯৯১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ মিলিয়নে এবং বর্তমানে এ সংখ্যা ৫০ মিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। প্রসঙ্গত, ১৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা শুধু ঢাকাতেই বাস করছে।
ওই গবেষণায় অর্থনৈতিক জরিপ ২০০৩-এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, শহরমুখী এসব জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ মেট্রোপলিটন শহরে, ৪২ শতাংশ জেলা শহরে এবং ১৬ শতাংশ উপজেলা শহরে বসবাস করছে।
পিপিআরসির ওই গবেষণায় এটাই স্পষ্ট হয় যে, দেশের সিংহভাগ কর্মসংস্থানের উৎসই হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেই সুষম শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যবস্থা। এটিও দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে পিপিআরসির প্রধান নির্বাহী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'শহর ও গ্রামের সুষম উন্নয়ন ও সমবণ্টন নীতি না থাকায় বৈষম্য যেমন বাড়ছে, তেমনি দরিদ্রকেও উসকে দেয়া হচ্ছে। তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, সুষম উন্নয়ন ও বণ্টন না হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতানুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না। অভাব-অনটন এদের নিত্যসঙ্গী। শিক্ষা-চিকিৎসার মতো মৌল অধিকারগুলোর জন্যও এদেরকে শহরমুখী হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জীবন ও জীবিকার জন্য যারা শহরমুখী হচ্ছেন তারা গ্রামে থেকেও দারিদ্র্য মোকাবেলা করছেন, আবার স্বপ্ন নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পঙ্গপালের ঝাঁকের মতো শহরে এসেও দারিদ্র্যের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছেন। কাজ ও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় নতুন গন্তব্যও তাদের জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এদিকে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দারিদ্র্য বিমোচনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা প্রতিটি পরিবার থেকে একজনের চাকরিতে নিয়োগকে দারিদ্র্য নিরসনের কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু পাঁচ বছর মেয়াদি সরকারের চার বছর পার হতে চলেছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া এ প্রতিশ্রুতির ফলপ্রসূ বাস্তবায়ন নেই। দারিদ্র্য নিরসনে এ যাবত প্রতিটি সরকারেরই নানামুখী উদ্যোগ রয়েছে। বেসরকারীভাবেও বিভিন্ন এনজিও দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচী নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছে। কিন্তু দেশের দরিদ্রতার মূলোৎপাটন হয়নি। 
বরং এ সম্পর্কিত তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি শাসকগোষ্ঠী, রাজনৈতিক নেতা, ক্যাডার, সরকারী আমলা, এনজিও, বিদেশী দাতা সংস্থা কর্তৃক দারিদ্র্যকে লালন করা হচ্ছে। সরকার থেকে শুরু করে এনজিও পর্যন্ত সকলেরই কথার ফুলঝুরি হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। এজন্য প্রতিবছর 'দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের' (পিআরএসপি) আওতায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও ও অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে দেশে প্রতিবছর আসছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সরকারী বাজেটেরও এক বৃহদাংশ বরাদ্দ থাকছে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। ব্যাংকগুলোও যথেষ্ট না হলেও দরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করছে। সবারই লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন। তারপরও কেন দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে না এমন প্রশ্ন এখন ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর। 
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রাপ্ত অর্থের অধিকাংশই চলে যায় মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারী আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও মালিক-কর্মকর্তাদের পকেটে। অন্যদিকে ক্ষুদ্রঋণের বণ্টন ব্যবস্থায়ও ন্যক্কারজনক বৈষম্য চলে আসছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দেশে ক্ষুদ্রঋণ নিচ্ছেন ৪ কোটি দরিদ্র মানুষ। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে। এখানে বৈষম্যের লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে দরিদ্রদের যেখানে বিনা সুদে ঋণ দেয়া উচিত ছিল, সেখানে ক্ষুদ্রঋণের সুূদের হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আর রফতানি খাতে শিল্পপতিদের ঋণ দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ সুদে। শিল্পপতি কোটিপতিদের চেয়ে দরিদ্রদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৪ গুণ বেশি সুদ! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীন অর্থনীতির এটি একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। 
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এনজিও ঋণের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, 'চোরাবালিতে আটকা পড়েছে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা।' এত ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার পরও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত মনে করেন, দারিদ্র্য তাড়াতে হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনা সুদে কিংবা স্বল্পসুদে ঋণ দিতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে উন্নয়নশীল দেশে প্রতিদিন গড়ে ১ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলারের কম আয় করে এমন লোকজনই চরম দরিদ্র। আর মধ্য আয়ের দেশে ২ ডলারের কম আয় করে এমন লোক চরম দরিদ্র। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত (মার্চ-২০১২) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে এলেও বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা এখনও সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের ৩৬ শতাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমিত ভৌগলিক অবস্থানে বৃহদাংশ জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার এখনও শঙ্কিত পর্যায়ে। 
ব্র্যাকের উদ্যোগে পরিচালিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক গবেষণায়ও দেশে অতিদরিদ্রের হার ৪০ শতাংশ বা ৬ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের এক গবেষণায় দেশে দারিদ্র্যের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি তাঁর গবেষণা প্রবন্ধে বলেছেন, দেশে ৯ কোটি ৮৯ লাখ মানুষই দরিদ্র। তবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হবে আরও বেশি। কারণ বাজার অর্থনীতিতে যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান তদানুসারে বৃদ্ধি না পায় এবং প্রকৃত আয় হ্রাস পায় তখন নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও আসলে দরিদ্র শ্রেণীভুক্ত হিসেবে গণ্য হয়। সে হিসেবে তাঁর মতে দেশে ১২ কোটি ৪৩ লাখ মানুষই দরিদ্র।
অবশ্য সর্বশেষ প্রকাশিত জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে যেখানে অর্ধেক জনগোষ্ঠীই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান এক-চতুর্থাংশ। 
এ বিষয়ে বাংলাদেশে ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টেফান প্রিসনার বলেন, 'বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমে ৪৯ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশ এসে ঠেকেছে। তবে এই সাফল্য দেশের সব জায়গায় সমানভাবে আসেনি। এখানে সমতার আবহ দেখা যাচ্ছে না।
কিভাবে এই দেশে অর্থনৈতিক এই বৈষম্যের চিত্র কমানো যায় !!!!

http://www.somewhereinblog.net/blog/nastopathik/29568721


ওবামা-রমনি বিতর্কে অর্থব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা

ডেস্করিপোর্ট, ৪ অক্টোবর, রেডটাইমস বিডি ডটকম:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে মূলত কর, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বেকার সমস্যা এবং সরকারের ভূমিকা নিয়েই ওবামা-রমনি পরস্পরের সমালোচনা করেন।

কয়েক মাস পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচারণা শেষে বুধবার পিবিএস এর অ্যাঙ্কর জিম লেহরারের সঞ্চালনায় ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন নিলেন ডেমক্রেট প্রার্থী বারাক ওবামা ও রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি।

প্রথমবার মুখোমুখিতেই রমনি বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন। অন্যদিকে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ওবামা কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেই বিষয়টি সামলেছেন।

বিতর্কটি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

প্রচার ও জনমত জরিপে কিছু পিছিয়ে থাকায় রমনি বেশ আগ্রাসী ভঙ্গিতে ওবামা সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণার ভিত্তি জোরদার করা চেষ্টা করেন তিনি।

দৃশ্যত পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আসা রিপাবলিকান প্রার্থী রমনি বলেন, আমি এখন খুবই উদ্বিগ্ন, আমরা একটি অসফল পথ পেরিয়ে এসেছি। চার বছর আগে ক্ষমতা গ্রহণের সময় যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি হাজির হয়েছিলেন, এখনো প্রায় একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি এগোচ্ছেন। এতে ব্যয় বেড়েছে প্রচুর, কর বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। 

তিনি বলেন, আপনি মনে করতে পারেন যে, একটি অধোগামী সরকার দিয়েও কাজ চালানো যায়, তবে আমেরিকার জনগণের জন্য তা সঠিক উত্তর নয়।

ওবামা বলেন, রমনি সেই একই ধরনের কর ঘাটতি কমানোর প্রস্তাবকে উৎসাহিত করছেন, যা সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০১ ও ২০০৩ সালে কংগ্রেসে উপস্থাপন করেছিলেন।

তিনি বলেন, আমরা উদ্বৃত্ত থেকে ভর্তুকিতে আসা বন্ধ করেছি। আর এসবই হয়েছে বৈশ্বিক চরম মন্দার (অর্থনীতি) কঠিন সময়েই।

এই বিতর্কে রমনির জয়ী হওয়াটা খুব জরুরি। কেননা গত কয়েক সপ্তাহে নির্বাচনী প্রচারে তার সময়টা ভাল কাটেনি। এই বিতর্কে ওবামার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারলে তার নির্বাচনী প্রচারে পালে হয়তো কিছুটা হাওয়া লাগবে।

সম্প্রতি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, রমনি বলছেন, আমেরিকার ৪৭ শতাংশ মানুষ সরকারের ওপর নির্ভরশীল। আর তারাই ওবামাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

ওই ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর রমনির ভাবমূর্তিতে ধস নামে। জরিপে তিনি আরো পিছিয়ে পড়েন।

অন্যদিকে জনমত জরিপ ও নির্বাচনী ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকা ওবামা নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চাইছেন যে কোনো মূল্যে।

নির্বাচনের ৩৪ দিন আগে জাতীয় নীতি নিয়ে প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হলেন দুই মার্কিন নেতা। এরপর নির্বাচনের আগে বাকি চার সপ্তাহে আরো দুবার তারা বিতর্কে নামবেন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রকাশিত 'এনবিসি নিউজ' ও 'ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ওবামার পক্ষে ৪৯ শতাংশ এবং রমনির হয়ে ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক কথা বলেছেন। 
রেডটাইমস বিডি ডটকম/অনুবাদ/ই এইচ/আই এইচ/এস ডি


ধর্ষকের শাস্তি চাওয়ায় হেনস্থা, যুবক আত্মঘাতী
র্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি করেছিলেন তিনি। বিনিময়ে জোটে ডাকাতের তকমা। এই হেনস্থার প্রতিবাদে কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দেওয়া সেই যুবক মারাই গেলেন মঙ্গলবার। 
পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা মির আমিরুল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ ছিল, এক নাবালিকাকে এক বছর ধরে ধর্ষণ করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কড়েয়া থানার পুলিশ এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, তিনি বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পরেই পুলিশ ডাকাতির মামলা দায়ের করে তাঁকে হেনস্থা করছে। পুলিশের এই আচরণের প্রতিবাদে ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দেন আমিরুল। এ দিন দুপুরে সল্টলেকের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হল তাঁর। 
পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে আমিরুল জানিয়েছিলেন, কয়েক জন পুলিশ অফিসার ধর্ষণের মামলা তোলার জন্য নানা ভাবে চাপ দিচ্ছিলেন। জবানবন্দিতে তাঁদের নামও বলেছিলেন তিনি। লালবাজারের কর্তারা তবু ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি। মামলা তোলার জন্য চাপ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে গ্রেফতারও করতে চেয়েছিল পুলিশ। এই মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, অভিমানে থানার সামনে গায়ে আগুন দেন আমিরুল। 
এ দিন বিকেলে হাসপাতালে তাঁর মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে ভাই আনোয়ার জানান, শেখ শাহজাদা বক্স নামে স্থানীয় এক দুষ্কৃতী এক বছর ধরে ধর্ষণ করছে বলে অভিযোগ করেছিল এক নাবালিকা। ঘটনাটি যাতে জানাজানি না হয়, সে জন্য হুমকিও দিত সে। সন্ধ্যায় আমিরুলের বাড়িতে বসে ওই নাবালিকা নিজেও জানায়, তাদের বাড়ি শাহজাদার বাড়ির পাশেই। গত এক বছর ধরে প্রায় প্রতি দিন দুপুরে শাহজাদা তাকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিত এবং ধর্ষণ করত। প্রথমে ভয় পেয়ে সে কাউকে কিছু বলতে পারেনি। পরে মাকে ও পাড়ার লোকেদের সব জানায়। নাবালিকার কথায়, "কাউকে বললে বাড়ির সবাইকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে, আমার মুখে অ্যাসিড মারা হবে বলে ভয় দেখাত শাহজাদা।" 
আমিরুল ইসলাম
অভিযুক্ত শাহজাদা
পেশায় গৃহশিক্ষক আমিরুলের বাবা ইজহারুল ইসলাম বলেন, "ঘটনাটি জেনে আমার ছেলে পাড়ার আরও ক'জন যুবককে নিয়ে শাহজাদার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। মেয়েটি ইংরেজি লিখতে পারে না বলে আমিরুলই অভিযোগটি লিখে দেয়। অভিযোগ জানাতে থানাতেও যায়।" ওই লিখিত অভিযোগ পুলিশ প্রথমে নিতে চায়নি বলে অভিযোগ। পরে পাড়ার লোকের চাপে গত ৩১ অক্টোবর অভিযোগটি নেয় পুলিশ।
আনোয়ারের অভিযোগ, যে দিন শাহজাদার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ নেয়, শাহজাদার স্ত্রী নিলোফার বেগম সেই দিনই আমিরুল ও তাঁর চার বন্ধুর বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুর ও ডাকাতির অভিযোগ দায়ের করেন। ইজহারুল বলেন, "আমার ছেলে যখন থানায়
বসে অভিযোগ লিখছে, তখন আর এক টেবিলে বসে নিলোফারও অভিযোগ করছিল। ডাকাতি করলে কেউ থানায় গিয়ে বসে থাকে?" এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, শাহজাদার সঙ্গে পুলিশের একাংশের ওঠাবসা রয়েছে। তাই পুলিশ ওর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ও কোণঠাসা করেছে আমিরুলকে।
কী বলছেন লালবাজারের কর্তারা? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম দাবি করেছেন, "ওই নাবালিকার অভিযোগের ভিত্তিতে শাহজাদাকে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে। সে এখন জেল হেফাজতে আছে। আমিরুলের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুর এবং টাকা লুঠের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শাহজাদার স্ত্রী। কারও বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুর এবং টাকা লুঠের অভিযোগ থাকলে পুলিশ তো তদন্ত করবেই।" পুলিশ কর্তারা অভিযোগ করেন, গ্রেফতার এড়াতেই গায়ে আগুন দিয়ে ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘোরাতে চেয়েছিলেন আমিরুল।
কিন্তু আমিরুল যে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, "মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনও অভিযোগ এখনও দায়ের করা হয়নি বলেই জানি।" 
আমিরুলের আইনজীবী নৌসাদ হুসেন বলেছেন, "যে পুলিশ অফিসাররা ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ কড়েয়া থানায় জানানো হবে।" পুলিশি হেনস্থার কথা জানাতে গিয়ে ইজহারুল বলেন, "অন্য কারণে আত্মহত্যা করলে আমার ছেলে বাড়িতে বা অন্য জায়গায় গিয়ে, অন্য কোনও ভাবে তা করতে পারত। নিশ্চয়ই থানার সামনে গিয়ে গায়ে আগুন দিত না।"

http://www.anandabazar.com/2cal2.html

স্বাগত-বিদায়
আমেজি আমোদে বছর শুরু মহানগরে
থিকথিকে ভিড়ে সঙ্গীদের থেকে ছিটকে গিয়েছেন মহিলা। চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার আশপাশে ঝাড়া আধ ঘণ্টা চরকিপাক দিয়েই চলেছেন। শেষটায় কুমিরের ঘরের কাছে স্বামীকে খুঁজে পেয়ে যেন ধড়ে প্রাণ এল তাঁর। ''উফ্, কোথায় যে যাও" বলতে গিয়ে প্রায় কাঁদো-কাঁদো গড়িয়াহাটের ভাবনা মিত্র। 
তিনি একা নন। পয়লা জানুয়ারির চিড়িয়াখানায় যথারীতি অনেকেরই এমন নাজেহাল দশা। শুধু চিড়িয়াখানাই নয়। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাঠ, সাউথ সিটি মলের ফ্লোর থেকে রাজারহাটের আনকোরা ইকো ট্যুরিজম পার্ক সর্বত্র একই দৃশ্য। বর্ষবরণের রাতের রাজপথে কিছুটা তুরীয় মেজাজে ছিল কলকাতা। মঙ্গলবার পয়লা জানুয়ারির দুপুরের ছবিটা তার পাশে যেন নিখাদ পারিবারিক 'সোপ-অপেরা'। দাদু-দিদা-কাকু-কাকি-ভাগ্নে-ভাগ্নী-দাদা-বৌদিদের হট্টগোলেই সরগরম। 
এই ছুটির মেজাজের কল্যাণেই বহু বছর বাদে নিজের ব্যাডমিন্টন দক্ষতা খানিক ঝালিয়ে নিলেন শোভাবাজারের অরূপ রায়। তিনি হাসছিলেন, "ওহ, আজকাল দমে একটু টান পড়ে।" শুধু ছেলে-মেয়েই নয়, স্ত্রীর সঙ্গেও কিছুক্ষণ র্যাকেটে-র্যাকেটে টক্কর দিলেন অরূপ। শুধু খেলা বা বাঘ-ভালুক দেখার ভিড়ই নয়, নতুন বছরের প্রথম দিনে শহরের একটি প্রধান খাদ্যশালার নামও চিড়িয়াখানা। খোলা মাঠে টিফিন ক্যারিয়ার খুলে পাত পেড়ে লুচি-আলুরদম থেকে কেক-জয়নগরের মোয়ার সদ্ব্যবহার চলছে।
কলকাতার ময়দানও যেন একটা বড়সড় পিকনিকের মাঠ। কেউ ঘোড়া চাপছেন, কেউ আবার ব্যাট হাতে নেমে পড়েছেন। কেউ স্রেফ শতরঞ্চি পেতে ময়দানের মিঠে রোদ উপভোগ করতে করতে চিনেবাদাম খাচ্ছেন। গুছিয়ে বসে টিফিন বাক্স খুলতেই সে-দিকে জুলজুল চোখে তাকাল বাঁদরওয়ালার লাঠির মাথায় বন্দি একরত্তি বাঁদরছানা। 
গোটা রেড রোড জুড়েই গিজগিজে ট্রাফিক। ভিক্টোরিয়ায় ঢোকার মুখে লাইন এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে অনেক দূর। 
উৎসবের জোয়ারে ঝুঁকির বিনোদন। মঙ্গলবার, ময়দানে। —নিজস্ব চিত্র
শুধু পিকনিকই নয়, ভিক্টোরিয়ার মাঠে শতরঞ্চি পেতে ঘুমোতেও দেখা গেল অনেককে। সোনারপুরের রাহুল মজুমদার প্রতি বছর ভিক্টোরিয়ায় পিকনিক করতে আসেন। এ বারও তার নড়চড় হয়নি। তিনি বলছিলেন, "শীতের আমেজে বাগানটা কী যে সুন্দর লাগে!" এ বার মুম্বইয়ের ক'জন বন্ধুকে 'কলকাতার তাজমহল' দেখাতে নিয়ে এসেছেন তিনি। 
নিকো পার্কে শীতের কার্নিভ্যাল চলছে। দুপুরে বসেছে ড্রাগন ডান্স, ছৌ নাচের আসরও। ছোটদের মন ভরাতে কেউ বাঘ সেজেছেন, কেউ বা হাঁস! রকমারি রাইডের টানেও লম্বা লাইন। অন্তত আধ ঘণ্টা ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে তবে কপালে শিকে ছিঁড়ছে। 
ভিড় সামলাতে শীতেও ঘাম ছুটছে সাউথ সিটির কর্তা গৌতম মুখোপাধ্যায়ের। বলছিলেন, নজরদারি আঁটোসাঁটো করতে রক্ষী ও সিসিটিভি দু'টোই বাড়াতে হয়েছে। উত্তর কলকাতার সিঁথি ও হাওড়ার ডুমুরজলায় সার্কাস-তাঁবু ঘিরে উন্মাদনা দেখে কর্তাদের চওড়া হাসি। মরসুমের সব থেকে বেশি ভিড়টা ছিল এ দিনই। 
রাজারহাটের ইকো-ট্যুরিজম পার্কে ঢুকতে আধ কিলোমিটার লম্বা লাইন। দু'টো টিকিট কাউন্টারের সামনেই হামলে পড়া ভিড়। টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে প্রায় মারপিট লেগে যাওয়ার উপক্রম। নিউ টাউন থানার পুলিশ কাকুতি-মিনতি করে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাতেও তিলধারণের উপায় নেই। অনেকের অভিযোগ, মাত্র ৪০ থেকে ৫০টি গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে। অথচ, এ দিন ওই তল্লাটে ৩০০-৪০০ গাড়ির ভিড়। নিউ টাউনের সার্ভিস রোডের উপরেই তাদের ঠাঁই হয়েছে। 
পার্কে বেড়াতে এসেছিলেন মধুবন্তী দত্ত। বললেন, "সার্ভিস রোডে গাড়ি রাখায় ধুলোয় ভরে যায় পুরো এলাকা। যা লাইন! আধ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তবে সুযোগ পেলাম।" পুলিশ জানায়, ইকো পার্কে লক্ষাধিক লোকের ভিড়। হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, "পার্কে শুরু থেকেই এমন ভিড় হবে, বুঝতে পারিনি। কিছু সমস্যা হচ্ছে। সে-সব সামলাতে বুধবারই জরুরি বৈঠকে বসছি।"
http://www.anandabazar.com/2cal3.html


স্বাগত-বিদায়মধ্যরাতের হুল্লোড়ের মধ্যেই জন্মাল অচেনা এক কলকাতানিজস্ব সংবাদদাতার্জমান ট্রাফিক থমকে গেল এক্সাইড মোড়ে। ২০১৩-কে স্বাগত জানানোর মুহূর্তে তখন সোল্লাসে অজস্র হর্ন বাজছে। চক্রাকারে হাতে হাত মিলিয়ে এক মানব-বন্ধন তাদের পথ আটকে দিল। 
নামী-দামি ক্লাবে ডিজে-র কাউন্টডাউন বা মোবাইলের এসএমএসে নয়া ইংরেজি ক্যালেন্ডারের আবাহন এখন নেহাতই ক্লিশে। সোমবার মধ্যরাতে, ২০১২-র শেষ মুহূর্তে এক অন্য কলকাতার দেখা মিলল। পার্ক স্ট্রিট ফেরত ঈষৎ স্খলিত জনতা বা ফুরফুরে গাড়িচালকের সামনে যখন স্পর্ধিত পোস্টার মেলে ধরেছেন কলেজপড়ুয়া তরুণী। যার বয়ান, 'আমার শরীর কে ছোঁবে, সেটা আমিই ঠিক করব!' 
গড়িয়াহাটের মোড় বা কার্জন পার্কের ছবিটাও আলাদা নয়। বয়সের ফারাক ভুলে প্রতিবাদী মুখের মহাজোট। কে কোন রাজনৈতিক পতাকায় বিশ্বাসী, সেটাও অবান্তর। সমবেত স্বর গাইছে, 'বাঁধ ভেঙে দাও' বা 'উই শ্যাল ওভারকাম'। শুধু কি নয়াদিল্লির বাসে গণধর্ষণের জেরে তরুণী খুনের প্রতিবাদ? কলকাতার বর্ষবরণের রাত মানে তো বাপি সেনেরও রাত। সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে গানে-গানে কলকাতাকে দু'দশক আগের বানতলা-কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন কবীর সুমন। শহরে-গাঁয়ে ধর্ষণের শিকার আরও অনেকের ক্ষতই মিশে গেল উৎসবের রাতে। গভীর রাতে তুরীয় মেজাজের পার্ক স্ট্রিটকে ব্যঙ্গ করে তিরতিরে মোমের শিখা জ্বলতে থাকল। 
শুধু আনন্দ-উচ্ছ্বাস নয়, নতুন বছরকে এ ভাবেও স্বাগত জানাল মহানগর। সোমবার রাতে।এক্সাইড মোড় ও কার্জন পার্ক থেকে দু'টো মিছিলের গন্তব্যই পার্ক স্ট্রিট। ক্যাডারসুলভ শৃঙ্খলা নয়। মিছিলে অনভ্যস্ত পায়ে আনাড়ি পথ চলা। প্রধানত ফেসবুকের আহ্বানেই এই পথে নামা। কেন? জবাব দিতে স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগান,
'আমরা কী চাই
পথ নির্ভয়
কখন তা চাই
আজ এখনই।
'
দিল্লিতে রাজপথে নিরাপত্তার আর্জিতে রাত কে 'কব্জা' করার ডাক দিয়েছিল নাগরিক সমাজ। আর কলকাতার প্রতিবাদীরা জনে জনে 'টেক ব্যাক দ্য নাইট' লেখা ব্যাজ পরিয়ে দিয়েছেন।
শুধু দিল্লির ঘটনায় অভিযুক্তদের সাজার দাবি করেই এ মিছিল দায় সারেনি। তাই পোস্টার, 'লজ্জা ধর্ষকদের, ধর্ষিতাদের নয়'। এবং স্লোগান,
'এই মিছিল, সেই মিছিল
যেই মিছিল দিচ্ছে ডাক
পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক।
'
শীতের রাতে আপাদমস্তক জ্যাকেট-টুপিতে ঢাকা ছ'বছরের 'পুরুষ' আদিত্যও মিছিলে হাঁটছিল মায়ের হাত ধরে। ও কী বুঝছে, কেন হাঁটছে? আদিত্যের মা কাজরী দত্তের জবাব, ''এটুকু বুঝিয়েছি, একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হচ্ছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করাটা ছোট থেকেই শেখা উচিত।" 
আনাড়ি মিছিলের লেজ ও মাথার মধ্যে গতির ভারসাম্য রাখতে কিন্তু হিমশিম খেয়েছেন সংগঠকেরা। মিছিলের ফাঁকে কখনও ঢুকে পড়েছে মদির রাতের বেপরোয়া মোটরবাইক-বাহিনী। সেখানে তখন পুলিশের চিহ্নও নেই। গালিগালাজ-টিটকিরি শুনেও পিছু হটেননি পদাতিকেরা। মোহরকুঞ্জের সামনে একটি বড় গাড়ির আরোহীদের অভব্যতায় পথ আটকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা।বর্ষশেষের উন্মাদনা সামলাতে হিমশিম পুলিশ। পার্ক স্ট্রিটে।আবার হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে মাকে ধমকেছেন কোনও সদ্য-লায়েক কলেজছাত্রী। 'উফ্ মা, খেয়েছি...এখন কথা বলতে পারছি না। আমরা কী করছি, তা টিভিতে দেখে নিও!" পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের বিচার চেয়ে পোস্টার দেখা গিয়েছে ধর্মতলায়। পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড নিয়ে কটাক্ষের জেরে বিতর্কিত নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষকেও দেখা গিয়েছে গড়িয়াহাটের মোড়ে, অন্য একটি অবস্থান-বিক্ষোভে। 
সামগ্রিক ভাবে বর্ষবরণের মেজাজটা আলাদা কিছু নয়। রাত একটাতেও পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁ সরগরম। সান্তাক্লজ টুপি ও রঙিন শিংধারী জনতার উচ্ছ্বাস। চেনা-অচেনা না দেখে রাস্তায় জনে জনে হাত মিলিয়ে 'হ্যাপি নিউ ইয়ার' সম্ভাষণ। পানীয়ের প্রভাবে বাড়াবাড়ির অভিযোগও কিছু উঠেছে। অভব্য আচরণ ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট-সহ বিভিন্ন এলাকায় ২৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। 
শুধু গণহুল্লোড়ে গা না-ভাসিয়ে বিশেষ রাতে অন্য রকম সচেতনতার কথাও কিন্তু বলে গেল কলকাতা।
—নিজস্ব চিত্র

http://www.anandabazar.com/2cal4.html


বিজ্ঞান কংগ্রেস
শহরে বিরল 'সপ্তর্ষিমণ্ডল'
তুন বছরের দ্বিতীয় দিনেই শহরে বিরল নক্ষত্র সমাবেশ। একই দিনে শহরে আসছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। আসছেন পাঁচ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীও। উপলক্ষভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষের অধিবেশন।
১৯১৪ সালে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রথম বিজ্ঞান কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভাপতিত্ব করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই শতবর্ষের অধিবেশন কলকাতায় করার কথা ঠিক করেছেন বিজ্ঞান কংগ্রেসের কর্মকর্তারা। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার সল্টলেক স্টেডিয়ামে সেই অধিবেশনের উদ্বোধন করবেন দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মূল অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। হাজির থাকবেন নোবেলজয়ীরাও। অনেকেই বলছেন, একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শহরে হাজির থাকাটা বিরল ঘটনা। শেষ কবে এমন হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না পুলিশ-নিরাপত্তা অফিসারেরাও। তাঁরা বলছেন, বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষ উপলক্ষেই দেশের দুই শীর্ষ ব্যক্তিত্বের একসঙ্গে আগমন ঘটল।
বিজ্ঞান কংগ্রেস সূত্রের খবর, আজ, বুধবার শহরে পা রাখছেন পাঁচ নোবেলজয়ীও অর্থনীতিবিদ জেমস মিরলেস, রসায়নবিদ এল ইচি নেগেশি, পদার্থবিদ স্যামুয়েল সি সি টিং, রসায়নবিদ উয়ান টি লি, ও পরিবেশবিদ রাজেন্দ্র পচৌরি। এ ছাড়াও, এই অনুষ্ঠানে হাজির হতে এম এস স্বামীনাথন, গিরীশশরণ অগ্রবাল, রঘুনাথ মাসেলকর, আর চিদম্বরমের মতো বিজ্ঞানীরাও আসছেন কলকাতায়।
এমন সব তারকাদের শহরে আসা নিয়ে শহর জুড়ে চড়ছে উত্তেজনার পারদ। কড়াকড়ি হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। পুলিশ সূত্রের খবর, আজ, বুধবার শহরে হাজির হয়ে রাষ্ট্রপতি উঠবেন রাজভবনে। প্রধানমন্ত্রী থাকছেন সল্টলেকের একটি পাঁচ তারা হোটেলে। পাঁচ তারা হোটেলে থাকছেন নোবেলজয়ীরা-সহ বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরাও। সল্টলেক স্টেডিয়াম-সহ ওই এলাকার চারটি জায়গায় বিজ্ঞান কংগ্রেসের অনুষ্ঠান হবে। সেই এলাকাগুলিতে মঙ্গলবার থেকেই পুলিশি নজরদারি শুরু হয়ে গিয়েছে। মোতায়েন হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীরাও। 
বিজ্ঞান কংগ্রেসের কর্তারা জানিয়েছেন, বিজ্ঞান কংগ্রেস শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও কয়েক জন বিজ্ঞানী আসবেন। তাঁদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা রয়েছে। বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গবেষক-বিজ্ঞানীরাও আসতে শুরু করেছেন।
আর মাত্র দু'দিন বাকি। তাই শেষ মুহূর্তের ব্যবস্থাপনায় মেতে রয়েছেন আয়োজক কমিটির কর্তারাও। একটি সূত্রের খবর, মোটামুটি সব ব্যবস্থাই ঠিকঠাক হয়েছে। এখন শেষ লগ্নের প্রহর গোনা বাকি। বিজ্ঞান কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ, বুধবার বিজ্ঞান কংগ্রেসের শতবর্ষের উদ্বোধন নিয়ে রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠক করবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। 
http://www.anandabazar.com/2cal5.html

এই রাত হোক আমারও, 'নির্ভয়' শপথ দিল্লির
ল মেয়ে, তোকে আকাশ দেখাই। রাতের আকাশ।
চল, তোকে নিয়ে হাঁটি। রাত একটা, দু'টো, তিনটে।
চল, হেঁটে বেড়াই গোটা বছর। হিসেব নিই। আর ক'বার মরবি তুই?
ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। নতুন বছর আসছে। দিল্লি হাঁটতে বেরিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আম দিল্লিবাসী। 'নির্ভয়'কে অভয় দিতে। 
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাক কাটছে মুনিরকা বাস স্টপে। যেখান থেকে মেয়েটি বাসে উঠেছিল। সেখান থেকেই আওয়াজ উঠছে, 'হক কি দাবিদারি হ্যায়, সারি রাত হামারি হ্যায়।' রাতের দিল্লি কব্জা করার লড়াই। সেই বাহাদুর মেয়েটির লড়াই। যে দু'সপ্তাহ আগে বন্ধুর সঙ্গে এক মুঠো স্বপ্ন নিয়ে বাসে উঠেছিল। বিয়েও হত এই নতুন বছরটিতে। কিন্তু শিকার হল বারোটি নৃশংস চোখের। এই চোখ এই সমাজেরই। যার কবলে কখনও পড়ে 'নির্ভয়' বা 'দামিনী'। কখনও বা মনোরমা দেবী, নিলোফার, আশিয়া, সনি সুরিরা।
আর ভয় নয়। সেই বাসস্ট্যান্ডের পাশেই মধ্যরাতের দিল্লি। —নিজস্ব চিত্র
বর্ষবরণের রাতে যখন অনেক বাড়ির ছাদে আতসবাজির ফোয়ারা, দিল্লির হাজারো জনতা তখন আগামী সব রাতকে উজ্জ্বল করার ব্রতে সামিল হল। ঠিক যখন রাত বারোটা, নীরবতা পালন করা হল দু'মিনিট। সঙ্গে অঙ্গীকার। কোনও যৌন নিগ্রহ বা হিংসা ঘটাব না। এমন ঘটনা চোখে পড়লে চুপ করেও বসব না। 
এই রাত দখলের লড়াই নিছক প্রতীকী নয়। 'দামিনী'র মৃত্যুকে সামনে রেখে শহর চাইল, সমাজের বদল। চিন্তার বদল। দৃষ্টির বদল। শুধু ধর্ষণ বা যৌন হিংসা কেন! ঘরে-বাইরে, বাসে-মেট্রোয় রোজ মহিলাদের যে হেনস্থার শিকার হতে হয়, বদল হোক তার। তাই গান হল, কবিতা হল, পথনাটক হল। তুলে ধরা হল কিছু চেনা-পরিচিত নমুনাও। যখন রাস্তায় কোনও মেয়ের পথ আটকে ছেলেরা বলে, "তোমার পথই তো আটকিয়েছি, তুমি যে আমার শ্বাস আটকিয়েছ!" কিংবা ঘুরঘুরিয়ে দেখার জবাব আসে, "আমি তো শুধু মেপেইছি, অন্য কিছু তো করিনি!" কিংবা পরিবারেরই কোনও ভাই-বাবা-চাচা যখন স্নেহের মোড়কে বাড়িয়ে দেয় অসম্মানের হাত। 
মেয়েরা এ বার নিজেদের সম্মান ছিনিয়ে নেওয়ার ডাক দিচ্ছেন। প্রশ্ন তুলছেন, কেন ছোটবেলা থেকে মেয়েদেরই শেখানো হবে 'পোশাক এ ভাবে পোরো না!' 'রাতে একা বেরিও না', 'ছেলেদের সমঝে চলো'! কেন ছেলেদেরও শেখানো হবে না 'মেয়েদের সম্মান করো', 'বন্ধু হতে চাইলেও জিজ্ঞেস করো', 'যৌনসঙ্গ পেতে চাইলেও জিজ্ঞেস করো'! 
নেতাহীন লড়াইয়ের ক্ষোভ আছড়ে পড়ল নেতাদের উপরে। কেন একটা আইন মিলবে না, যাতে ভরসা থাকে? কেন একটা পুলিশ থাকবে না যাকে বিশ্বাস করা যায়? কেন এক জন সংবেদনশীল নেতা পাওয়া যাবে না? কেন নেতারা কেউ বলবেন, ছোট স্কার্ট পরলে তো ধর্ষণ হবেই! কেনই ধর্ষণ হলে বলবেন, তা খদ্দেরের সঙ্গে গোলমাল? কেন বলবেন, প্রতিবাদীরা মুখে রংচং মেখে আসেন? বর্ষশেষের রাত জেগে দিল্লির প্রশ্ন 'দামিনী'র মৃত্যুর জন্য দায়ী কি শুধু পুলিশ ও সরকার? না আমি আর আপনিও? 
রাত আড়াইটে। ভিড় পাতলা হয়ে এসেছে। মুনিরকা বাসস্ট্যান্ডে দু'টি পুলিশের পাহারা বসেছে। মোমের শিখা তবু জ্বলছে। কেউ না কেউ বুজে যাওয়া শিখা থেকে নতুন মোম জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। এই বাসস্টপই হোক 'দামিনী'র মেমোরিয়াল দাবি তুলেছে শহর। চোখের সামনে এ ভাবেই বেঁচে থাকুন অচেনা মেয়েটি। পথচলতি গাড়ি থমকে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই নামছেন। এক কিশোরীও এল। বাবার সঙ্গে। হাতে ফুল। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল অসংখ্য মোমবাতির দিকে। চোখ ফেটে জল। কান্নাভরা চোখে বাসস্টপে একটি কাগজে লিখে দিল, 'সরি'।
http://www.anandabazar.com/2desh1.html

চম্বলের দস্যু এখন 'অন্নত্যাগী মহারাজ'



চম্বলের দস্যু এখন 'অন্নত্যাগী মহারাজ'
সেই সাধু। - নিজস্ব চিত্র
লখনৌ: এ যেন দস্যু রত্নাকরের সাধু বাল্মীকি হওয়ার গল্প! কুম্ভমেলায় জগদীশানন্দ মহারাজের জীবনী সেই গল্পেরই প্রতিফলন৷ চম্বল উপত্যকার এক সময়ের ত্রাস এখন জুয়ানপুর ও সোনভদ্রা গ্রামের 'অন্নত্যাগী মহারাজ'৷ অহিংস এই মানুষটাই কিন্ত্ত এক সময় বন্দুক হাতে চম্বলের আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল৷ তাঁর বিরুদ্ধে এখনও ঝুলছে ছ'টি খুন-ধর্ষণের মামলা৷

তবে কার প্রভাব পাল্টে দিল তাঁর প্রতিবাদের ভাষা? সেই গল্প বলতেই এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলায় এসেছেন জগদীশানন্দ মহারাজ৷ ঘটনাচক্রে হাতে বন্দুক তুলে নিয়ে ১০ বছর তাঁর জীবন কেটেছে চম্বলের উপত্যকায়৷ ঝরিয়েছেন অনেক রক্ত, নষ্ট করেছেন অনেক নারীর সম্মান৷ কিন্ত্ত তার পর ভগবানের মতোই তাঁর জীবনে এলেন স্বামী রণবীরানন্দজি মহারাজ৷ ১৫ বছর আগের সেই দিনটির কথা এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে জগদীশানন্দের৷ বিনোভা ভাবের 'চম্বল ঘাটি শান্তি মিশন'-এর সদস্য ছিলেন রণবীরানন্দজি মহারাজ৷ তাঁর সংস্পর্শে প্রায় ছ'বছর থাকার পর, জগদীশানন্দের জীবনদর্শন পাল্টে যায়

হিংসাত্মক ঘটনায় যুক্ত মানুষেরা যাতে তাঁর জীবনের ঘটনা শুনে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অহিংসা ও শান্তির জীবনে ফিরে আসে, এটাই এখন লক্ষ্য বছর পঞ্চাশের এই মহারাজের৷
তাঁর মতে, জীবন বিবিধ ঘটনার সংমিশ্রণ৷ কিন্ত্ত কোনও পরিস্থিতিতেই নিজের বিচারবুদ্ধির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো উচিত নয়৷ মানুষ যদি উচ্চাশা ত্যাগ করে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে পারে, তবেই শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারবে৷

গুরুর সান্নিধ্যের পরই জগদীশানন্দ পরোপকারে নিজেকে নিয়োজিত করেন৷ বহু দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত ও শোষিত৷ সরকারের তরফে গণবন্টন ব্যবস্থা চালু করা হলেও, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আধিকারিকের লোভের কারণে বঞ্চিত হন দিন আনা,দিন খাওয়া মানুষগুলি৷ এর প্রতিবাদেই জগদীশানন্দ শুরু করেছিলেন আন্দোলন৷ প্রতিবাদের ভাষাও ছিল অভিনব৷ টানা ১২ বছর কোনও খাদ্যশস্য দাঁতে কাটেননি তিনি৷

দশ বছর আগে গুরুর দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেন তিনি৷ তার পর থেকে হাজারেরও বেশি মানুষকে হিংসার পথ থেকে ফিরিয়েছেন তিনি৷ তাঁরা সকলেই এখন সম্মানজনক পদে প্রতিষ্ঠিত৷ কেউ ব্যবসায়ী, কেউ বা চাকুরিজীবী৷

হাত থেকে বন্দুক ছাড়লেও লড়াই কিন্ত্ত ছাড়েননি৷ এখন তাঁর লড়াই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, যারা তাঁকে আশ্রম গড়ার জন্য জমি দেওয়ার প্রতিশ্রীতি দিয়েও এখনও তা পালন করেনি৷ লড়াইয়ের জেদ একই রকম রয়েছে, শুধু প্রতিবাদের হিংসার ভাষা হয়ে গিয়েছে অহিংস৷

খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানিতেই শুরু নতুন বছরের পথ চলা



খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানিতেই শুরু নতুন বছরের পথ চলা
বর্ষবরণকে ভুলে মোমের আলোয় বিচারের দাবি
নয়াদিল্লি: গণধর্ষণের ক্ষত এখনও টাটকা৷ তার মধ্যেই খুনের ঘটনা ঘটল রাজধানীতে৷ অকুস্থল পূর্ব দিল্লির ডাল্লুপুরা৷ সোমবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ খুন হন নেহা যাদব নামের বছর ২০-এর এক তরুণী৷ তিনি পেশায় নয়ডার একটি কল সেন্টার কর্মী ছিলেন৷ অভিযুক্ত দেবেন্দরকে গ্রেন্তার করেছে পুলিশ৷

সোমবার বিকেলে সহকর্মী গৌরবের গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন৷ ডাল্লুপুরা আসবাব বাজারের কাছে গাড়ি আটকায় দেবেন্দর৷ দু'জনের সঙ্গেই বাদানুবাদ শুরু হয় তার৷ তারপরই ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত হানে নেহার উপর৷ আহত হয় গৌরবও৷ তাও গাড়ি চালিয়ে স্থানীয় থানায় যান তিনি৷ পুলিশ নেহাকে লালবাহাদুর শাস্ত্রী হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ডাক্তাররা৷ ওই তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই দেবেন্দর তাঁর মেয়েকে উত্যক্ত করছিল৷ তিনি এ বিষয়ে প্রতিবেশীদেরও জানিয়েছিলেন৷ দেবেন্দরের বাবা-মাকে বিষয়টি জানানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা৷ তাতেও সমস্যা না মিটলে পুলিশে খবর দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছিল৷ তার মধ্যেই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা৷ 
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবেন্দর এবং নেহা একই পাড়াতে থাকত৷ বেশ কয়েক বার দেবেন্দর তাঁকে প্রেমের প্রস্তাবও দেয়৷ নেহা এতে বিশেষ গুরুত্ব দেননি৷ পরে গৌরবের সঙ্গে নেহার সম্পর্ক তৈরি হয়৷ এই বিষয়টি মানতে না পেরেই দেবেন্দর এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে৷ গ্রেন্তার করা হয়েছে অভিযুক্তকে৷
অন্যদিকে হায়দরাবাদে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর রহস্য মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে৷ বছর তেইশের স্নাতকোত্তরের ওই ছাত্রটির মৃতদেহ উদ্ধার হয় তাঁরই এক সহপাঠির বাড়ি থেকে৷ নিখোঁজ ওই সহপাঠিটি৷ যৌন নিগ্রহের পর ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷ অভিযুক্তের খোঁজে শুরু হয়েছে জোরদার তল্লাশি৷

দিল্লির গণধর্ষণ নিয়ে প্রতিবাদ চরমে উঠলেও ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির ঘটনায় লাগামা টানা যাচ্ছে না৷ সোমবারই একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেন্তার করা হয়েছে এক লরি চালককে৷ ওই দিন বেঙ্গালুরু গ্রামীণের মাচানাইয়াকানাহাল্লিতে প্রতিবেশী ওই নাবালিকাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত প্রকাশ৷ ডেপুটি পুলিশ সুপার আর মল্লেশ জানিয়েছেন, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ওই নাবালিকার আত্মীয়রা৷ গ্রেন্তার করা হয়েছে তাকে৷

গত কয়েক দিন ধরে কর্নাটকের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে৷ মহিলাদের সুরক্ষা দিতে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বেঙ্গালুরুতে৷ চালু হচ্ছে একটি হেল্পলাইন৷ দিল্লিতেও মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে এ ধরনের একটি হেল্প লাইন৷ বেঙ্গালুরু পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুর সিটি পুলিশ কমিশনারের অফিস থেকে পরিচালিত হবে হেল্পলাইনটি৷ যে কোনও দিন, যে কোনও সময় এই হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করতে পারবেন মহিলারা৷ অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে পুলিশের তরফে৷ এ ছাড়াও বেঙ্গালুরুতে মহিলাদের জন্য চালু হয়েছে বেশ কয়েকটি নির্দেশিকাও৷ এ প্রসঙ্গে বেঙ্গালুরু সিটির পুলিশ কমিশনার জ্যোতিপ্রকাশ মিরজি জানিয়েছেন, যে বাস বা অটোয় মহিলারা সফর করছেন, সেটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে রাখার জন্য তাঁদের অনুরোধ করা হয়েছে৷ পাশাপাশি নির্জন এলাকায় মহিলাদের একা না যাওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে৷ শহরজুড়ে পুলিশের টহল বাড়ানো এবং নির্জন এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলেও জানিয়েছেন বেঙ্গালুরু সিটির পুলিশ কমিশনার৷

মুম্বইয়েও বেড়েই চলেছে শ্লীলতাহানির ঘটনা৷ সোমবার বর্ষবরণের রাতে সান্তাক্রুজে এক মহিলার শ্লীলতাহানি করে এক যুবক৷ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় উপস্থিত জনতা৷

মাওবাদী দমনে নামানো হচ্ছে সিআইএসএফ



মাওবাদী দমনে নামানো হচ্ছে সিআইএসএফ
নয়াদিল্লি: মাওবাদী দমনে জোরদার পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র৷ বিশেষ প্রশিক্ষিত পুলিশ, বিএসএফ এবং সিআরপিএফ-এর পাশাপাশি মাওবাদী দমনে নামানো হবে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী, সিআরপিএফ-ও৷ ইতিমধ্যেই এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ এর জন্য আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করারও বিষয়টিও চড়ান্ত হয়েছে৷

সিআইএসএফ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ আধাসামরিক বাহিনীগুলির অন্যতম৷ বর্তমানে এই বাহিনীতে রয়েছেন ১ লক্ষ ৬৫ হাজার জওয়ান৷ আগামী দু'তিন বছরের মধ্যে সেই সংখ্যাটা ২ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে৷ ভারতের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি পরমাণুকেন্দ্র, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতর, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে ১৯৬৯ সালে তৈরি এই বাহিনী৷ মাওবাদী অধ্যুষিত তিন রাজ্য, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও ওডিশার খনি এবং খনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলের সুরক্ষার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে এই বাহিনীকে৷ তবে এখন বেশ কিছু কড়াকড়ির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে বাহিনীকে৷ বর্তমান আইন অনুযায়ী সিআইএসএফ ওই শিল্পাঞ্চলের সীমানার বাইরে যেতে পারে না৷ এমনকী বিশেষ প্রয়োজনেও এই বাহিনী এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে পারে না৷ কারখানা বা খনি চত্বরে বাহিনীর জওয়ানরা অপরাধীদের আটক বা গ্রেন্তার পরেন ঠিকই, কিন্ত্ত সীমানার বাইরে হলে এই কাজটাও বাহিনীর জওয়ানদের এক্তিয়ারভুক্ত থাকে না৷ আইন বদল করে সিআইএসএফের উপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি তুলে নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, মাওবাদী মোকাবিলায় সিআইএসএফের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হলেও আইনের কড়াকড়িতে এই বাহিনীকে সেই কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না৷ এমনকী শিল্পাঞ্চলের আশপাশে মাওবাদী হামলা হলেও বাহিনীর জওয়ানরা সেখানে যেতেই পারছেন না৷ মাওবাদীদের মোকাবিলা করা তো দূরস্থান৷ অথচ, এই বাহিনীতে বিপুল সংখ্যক জওয়ান রয়েছেন৷ তাঁরা মাওবাদী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকাতে কাজও করছেন৷ মাওবাদী দমনে বিশেষ দক্ষতাও রয়েছে জাওয়ানদের৷ তার পরও তাঁদের ব্যবহার করা যাচ্ছে না৷ মাওবাদী মোকাবিলায় বিএসএফ নামনোর আগে আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ আইনে পরিবর্তন এনেই ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়ে মাওবাদী মোকাবিলায় বিএসএফ জওয়ানদের নামানো হয়েছিল৷ একইরকম ভবে এবার সিআইএসএফকে নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র৷

সাধারণত, সেনা বাহিনীর বিশেষ অধিকার আইন (আফস্পা) চালু না হলে দেশের কোনও অংশেই সেনা নামানো যায় না৷ কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এই আইন বহাল আছে৷ তবে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলিতে এই আইন বলবত্ করা হয়নি৷ তাই ওই রাজ্যগুলিতে সেনা মোতায়েন সম্ভব নয়৷ চিদম্বরম যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় তিনি ছত্তিশগড়ে এই আইন চালু করার কথা ভেবেছিলেন৷ তখন কংগ্রেস এবং সরকারের মধ্যে এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছিল৷ তাই পর আইনে পরিবর্তন এনে সিআইএসএফকে মাওবাদী মোকাবিলায় কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷

মুম্বইয়ে আটক ১৬ প্রেমিক যুগল



মুম্বইয়ে আটক ১৬ প্রেমিক যুগল
মুম্বই: 'শিবঠাকুরের আপন দেশে' আইন কানুন সর্বনেশে হতেই পারে, কিন্ত্ত খাস মুম্বইয়ে সর্বনেশে আইন কানুন নতুন প্রজন্মের প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মুম্বইয়ের সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশানাল পার্কের লাগোয়া উদ্যান থেকে সম্প্রতি ১৬টি প্রেমিক যুগলকে পাকড়াও করেছে মুম্বই পুলিশ৷ জনসমক্ষে আপত্তিকর কার্যকলাপের অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয় তাঁদের৷ এক নাবালক-নাবালিকাকে রেহাই দেওয়া হলেও বাকি ৩০ জনের অভিভাবককে থানায় ডেকে পাঠানো হয়৷ তাঁদের বোঝানোর পাশাপাশি প্রত্যেকের থেকে ১,২০০ টাকা করে জরিমানাও আদায় করেছে মুম্বই পুলিশ৷ কিন্ত্ত তাঁদের এ হেন 'সমাজসংস্কামূলক' কাজের কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি৷

এর আগেও বহুবার এই ধরনের অভিযোগ বা জনসমক্ষে আপত্তিজনক কথা বলার অপরাধে অনেককে গ্রেন্তার করেছে মুম্বই পুলিশ৷ জরিমানা দিয়ে মুক্তিও পেয়েছেন তাঁরা৷ তবে আপত্তিজনক কাজ বা কথা বলতে কি বোঝায় তার কোনও সঠিক মাপকাঠি পুলিশের কাছে নেই৷

এ দিনের গ্রেফতার প্রসঙ্গে মুম্বই পুলিশ জানায়, বারংবার বারণ করা সত্ত্বেও ওই যুগলেরা অনেক বেশি রাত অবধি পার্কে সময় কাটান ও প্রকাশ্যে আপত্তিজনক কাজ করেন৷ টহলদারি পুলিশ সতর্ক করলেও তাঁরা শোনেননি৷ আপত্তিজনক কাজের সংজ্ঞা জানতে চাওয়া হলে অবশ্য পুলিশের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি৷ বন্যজন্ত্তদের আক্রমণের আশঙ্কাতেই নাকি পুলিশের এই সতর্কবাণী৷ কিন্ত্ত সেই আক্রমণের ভয় কি বয়স্ক নাগরিকদের নেই? তাহলে তাঁদের বেশি রাত অবধি পার্কে থাকায় ছাড় দেওয়া হল কেন? মেলেনি এর উত্তরও৷ নিজেদের কর্তব্য পালনেই পার্কে অতর্কিত হানা বলে দাবি পুলিশের৷ কিন্ত্ত সেই কর্তব্যের কাছে বিপর্যস্ত মুম্বইয়ের নতুন প্রজন্ম৷

সীমাবদ্ধতা জানি, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রসঙ্গে বললেন চিদম্বরম



সীমাবদ্ধতা জানি, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রসঙ্গে বললেন চিদম্বরম
সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরম। ছবি-- পিটিআই
নয়াদিল্লি: নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল তিনি। এটা যদি 'গম্ভীর' প্রত্যুত্তর হয়, তা হলে 'হালকা' চালে কথাও আছে। সব মিলিয়ে, তিনিই ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কি না, সে প্রশ্নের জবাবে একরাশ ধোঁয়াশা তৈরি হল পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমের কথায়। 

রবিবার ডিএমকে প্রধান এম করুণানিধি বলেছেন, চিদম্বরম হলেন অন্যতম শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। শুধু তা-ই নয়, মাস দুয়েক আগে একটি বিদেশি পত্রিকাতেও লেখা হয়েছিল, রাহুল গান্ধী নন, চিদম্বরমই কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন। লড়াই হবে নরেন্দ্র মোদি বনাম চিদম্বরমের। চিদম্বরম অবশ্য নিজে এ নিয়ে সাবধানী। করুণানিধির মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, 'আমি আমার সীমাবদ্ধতা জানি। সেই সীমাবদ্ধতা অনুযায়ীই আমি বাঁচি এবং নিজের কাজ ঠিক করে নিই।' 

এর পরই অবশ্য পরিবেশ হালকা করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, এটা ছিল 'গম্ভীর' উত্তর। সাংবাদিকরা যদি হালকা চালে কিছু আশা করে থাকেন, তা হলে তাঁর উত্তর হল, 'আমি আপনাদের এটা বলছি...আমি জানি আপনাদের কেউ কেউ আমাকে বোকা ভাবেন। কিন্তু যতটা বোকা আপনারা আমাকে ভাবেন, আমি ততটা বোকা নই।'


ধর্ষিতাকে গর্ভবতী বলা নিয়ে বিতর্ক


ধর্ষিতাকে গর্ভবতী বলা নিয়ে বিতর্ক
এই সময়, ডায়মন্ড হারবার: মরেও শান্তি পাচ্ছেন না ডায়মন্ড হারবারের মানসী৷ বিতর্ক শুরু হয়েছে তাঁর ময়নাতদন্ত নিয়ে৷ রিপোর্ট হাতে না পেয়েই, তিনি গর্ভবতী ছিলেন বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিল পুলিশ৷ অথচ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ ছাড়া পুলিশের হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যাওয়ারই কথা নয়৷ পুলিশের উদ্দেশ্য নিয়ে তাই সন্দেহ তৈরি হয়েছে৷ হাসপাতাল সুপার নিজেও প্রশ্ন তুলেছেন৷ ময়নাতদন্ত হওয়ার আগেই মেয়েটি গর্ভবতী ছিল বলে মন্তব্য করেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার৷ বিধায়ক এবং পুলিশকর্তারা, কেউই ঘটনাটিকে ধর্ষণ বলে মানতে রাজি না হওয়ায় আসল অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ তুলেছে মৃতার পরিবার৷ একই অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর৷ 

যে দু'জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন মানসীর পরিবার, তাঁরা কেউ ধরা না পড়লেও, পুলিশ তৃতীয় এক জনকে সোমবারই গ্রেন্তার করেছিলেন৷ পল্টু কাঞ্জি নামের সেই ব্যাক্তি আবার সম্পর্কে মৃতার জামাইবাবু৷ মানসীর মামাতো দিদির বর তিনি৷ মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালত তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, পল্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তিন জনের নাম জানা গিয়েছে৷ যারা মানসীকে খুনের সঙ্গে জড়িত বলে মন‌ে করা হচ্ছে৷ এদের মধ্যে পলাশ নামে এক জন অপরিচিতের নামও উঠে এসেছে৷ তবে বাকি দু'জনের নাম কিন্ত্ত জানাচ্ছে না পুলিশ৷ 

মূল অভিযুক্ত প্রিন্স ও তাঁর বন্ধু রাজা সম্পর্কে কিন্ত্ত একেবারেই নীরব পুলিশকর্তারা৷ ওই দু'জন এখনও ফেরার৷ তাঁরা মানসীকে খুনে জড়িত কি না, তা-ও স্পষ্ট করে পুলিশ বলছে না৷ ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও চন্দন নিয়োগী মঙ্গলবার বলেন, 'হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীটি গর্ভবতী ছিলেন বলে ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়েছে৷ তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পুলিশ হাতে পায়নি৷' কিন্ত্ত এ ভাবে পুলিশের পক্ষে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানা সম্ভব নয় বলে হাসপাতাল কর্তারা জানিয়েছেন৷ ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রান্ত সুপার শুভাশিস মণ্ডল পুলিশের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, 'পুলিশ কি ভাবে জানতে পারল, বুঝতে পারছি না৷ তাঁদের রিপোর্ট জানানোরই কথা নয়৷ এ ভাবে রিপোর্ট ফাঁস করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷' 

ইতিমধ্যে যে বাইকে চেপে মানসী মেলা দেখতে বেরিয়েছিলেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি, সেই বাইকটির নম্বর জানতে পেরেছে পুলিশ৷ বাইক ও তার মালিকের খোঁজে শুরু হয়েছে পুলিশের তল্লাশি৷ কিন্ত্ত পুলিশের মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর কর্মকর্তা আলতাফ আহমেদ বলেন, 'তৃণমূলের চাপে ময়নাতদন্তের রিপোর্টকে প্রভাবিত করতে পুলিশ আগাম এ সব বলছে৷ তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদার বলার পর এখন থানার আইসি থেকে এসডিপিও সবাই বলছেন, মেয়েটি ধর্ষিতা ছিল৷ এতে উদ্দেশ্য স্পষ্ট৷' এপিডিআর মেয়েটির পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে৷ 

গর্ভবতী হওয়ার সঙ্গে ধর্ষণ না হওয়ার কী সম্পর্ক প্রশ্ন তুলেছে মৃতার পরিবারও৷ মানসীর বাবা মন্টু পুরকাইত বলেন, 'আমরা গরিব বলে প্রশাসন আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে৷ অবিবাহিতা মেয়ে গর্ভবতী হয়ে থাকলে, তা কি ধর্ষণের ফল নয়? হয়তো বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল মেয়ে৷ তাই তাঁকে আবার ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে৷' মৃতার ভাই মানস বলেন, 'শাসকদলের চাপে পুলিশ মূল অভিযুক্তদের গ্রেন্তার করছে না৷' দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলেছেন, 'একজনকে ধরা হয়েছে৷ তাঁকে জেরা করে বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে৷' 

এই বিভাগের আরও খবর
 


মুত্যুর সঙ্গে তেরো দিনের অসম যুদ্ধে হেরে যাওয়া তরুণীর জন্য শোক ? নাকি, নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা ? বর্ষবরণের রাতে দিল্লির বহু রেস্তোরাঁই ছিল খালি। প্রায় জনশূন্য কনট প্লেস। একাধিক পাঁচতারা হোটেলে বাতিল করা হয় নিউ ইয়ার পার্টি।

মায়ানগরীতেও অচেনা ছবি। বার, নাইট ক্লাব, রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকলেও বর্ষবরণের রাতে রাস্তা ছিল প্রায় ফাঁকা। দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে তরুণীর মৃত্যুর পর আতঙ্কিত, ব্যথিত আমচি মুম্বই।


ওবামায় আস্থা শেয়ার বাজারের, তবু আশঙ্কা রয়েই গেল



0
ওবামায় আস্থা শেয়ার বাজারের, তবু আশঙ্কা রয়েই গেল
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 

সকাল দেখলেই যদি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে তাহলে বলতেই হয় নতুন বছর শেয়ার বাজারের পক্ষে বেশ ভালো যাবে৷ কিন্ত্ত, এমন কথা জোর দিয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না৷ বছর শুরুর দিনেই ১৫৪ পয়েন্ট লাফিয়ে ১৯৫৮০.৮১তে বন্ধ হল বম্বে শেয়ার বাজারের (বিএসই) সূচক সেনসেক্স৷ আর মাত্র ৮.৩ শতাংশ বাড়লেই ১০ জানুয়ারি ২০০৮ সালে পৌঁছান সর্বকালীন রেকর্ড ২১২০৬.৭৭ পয়েন্ট পেরিয়ে যাবে৷ অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, বিশেষ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি সুদের হার কমায়, এ মাসেই সেনসেক্স আরও ৪-৫ শতাংশ বাড়বে৷ 

এমন ভাবনার কারণ অবশ্য আছে৷ ২০১২ সালটা দেশের এবং বিশ্বের অর্থনীতির পক্ষে তো মোটেই অনুকূল ছিল না৷ ইউরো জোনে মন্দা, আমেরিকায় বৃদ্ধিও নামমাত্র, আমাদের দেশেও তার প্রভাব পড়েছিল যথেষ্ট - ভারতের মোট জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নীচে নেমে গেছে৷ তার ওপর চড়া সুদের হার আর মুদ্রাস্ফীতি - শেয়ার বাজারের পক্ষে মোটেই সুখকর ছিল না৷ তা সত্ত্বেও, ২০১২ সালে সেনসেক্স বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ৷ সোনা, রুপো, জমি-বাড়ি - বিনিয়োগের ওপর এই হারে প্রতিদান কোথাও পাওয়া যায়নি৷ 

শুধু সেনসেক্স বললে কম বলা হয়৷ সেনসেক্স তো দেশের ৩০টি সর্ববৃহত্ সংস্থার শেয়ার দরের সূচক৷ তুলনায় বিএসই ৫০০, বাজারমূল্যে (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) পরের ৫০০টি সংস্থার শেয়ার দরের সূচক গত বছর বেড়েছে ৩১.২ শতাংশ৷ আর, ছোট সংস্থাগুলির শেয়ার দরের সূচক, বিএসই স্মলক্যাপ, বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ৷ অর্থাত্, বড় সংস্থাগুলির চেয়ে ছোট সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগে অনেকটাই বেশি লাভ পাওয়া গেছে৷ 

কিন্ত্ত, লক্ষনীয় বিষয় হল, ২০০৯-১০ থেকে নভেম্বর ২০১২ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে মোট কেনা-বেচার পরিমাণ ৭৪ শতাংশ কমে গিয়েছে৷ ২০০৯-১০ সালে বম্বে শেয়ার বাজারে ২৪৪ দিনে মোট কেনা-বেচা হয়েছিল ১৩,৭৮,৮০৯ কোটি টাকার৷ গত বছর নভেম্বরের শেষ অবধি মোট ১৬৮ দিনে কেনা-বেচা হয়েছে মাত্র ৩,৫৯,৭১০ কোটি টাকার৷ 

এই পরিসংখ্যান থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার সাধারণ ছোট বিনিয়োগকারীরা সার দিয়ে শেয়ার বাজার পরিত্যাগ করেছেন৷ শেয়ার বাজারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমা সংস্থাগুলি) ২০১২ সালে যত টাকার শেয়ার কিনেছেন তার থেকে ৫৬,৯২৩.১৪ কোটি টাকার বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন৷ তবুও গত বছর শেয়ার বাজার ২৬ থেকে ৩৩ শতাংশ প্রতিদান দিয়েছে৷ এর কারণ, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ (এফআইআই)৷ ২০১২ সালে এফআইআই-রা যত টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে তার থেকে ১,৩৩,৬৫১ কোটি টাকার শেয়ার বেশি কিনেছে৷ 

নতুন বছরে শেয়ার বাজার কতটা বাড়বে তার অনেকটা নির্ভর করছে এফআইআই বিনিয়োগ কতটা আসবে তার ওপর৷ এফআইআই বিনিয়োগ আসাটা নির্ভর করবে আমেরিকার আর্থিক পরিস্থিতি আগামী দিনে কী ভাবে বদলায় তার ওপর৷ 

ইউরোপের অবস্থা এবছর বদলে যাবে এটা অলীক কল্পনা৷ বরং বলা যায়, এ বছর ইউরোপে সমস্যা আরও বাড়তে পারে৷ অন্যদিকে, আমেরিকার সামনে এখন দু'টো বড় আর্থিক সমস্যা: প্রথমত, পাহাড়ে মতো বিশাল বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে করের হার বাড়িয়ে সরকারের আয় বাড়নো এবং বিভিন্ন সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় কমিয়ে খরচ কমানো৷ দ্বিতীয়ত, বাজেট ঘাটতি মেটাতে বাজার থেকে সরকার কতটা ধার করতে পারবে তার ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো৷ 

পয়লা জানুয়ারি মার্কিন সেনেটে কর বাড়ানোর প্রশ্নে যুজুধান ডোমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে একটা সমঝোতা হয় এবং সেনেটে ওই চুক্তি অনুমোদনও পায়৷ এই খবরেই মঙ্গলবার সব শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে৷ সেনেটে পাশ হলেও, মার্কিন কংগ্রেসকে এবার ওই চুক্তিতে অনুমোদন দিতে হবে আইনি প্রণয়নের জন্য৷ মার্কিন কংগ্রেস রিপাবলিকানদের দখলে৷ তাই সংশয় থেকেই যায় কর বাড়ানোর সমঝোতা কংগ্রেসের অনুমোদন পাবে কি না৷ 

কর বাড়ানোর প্রস্তাব মাকিন কংগ্রেসের অনুমোদন না পেলে ওই প্রস্তাব আবার ফিরে আসবে সেনেটে নতুন করে আলোচনার জন্য৷ এই সমঝোতা না হলে, আমেরিকার সমস্ত শ্রেণির করদাতাদের করের হার অনেক বেড়ে যাবে৷ প্রেসিডেন্ট ওবামার পূর্বসুরী জর্জ বুশের আমলে করা এক আইন অনুযায়ী আয়করসহ বিভিন্ন কর ছাড়ের মেয়াদ শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর, ২০১২৷ বুধবারের মধ্যে কর সংক্রান্ত নতুন আইন পাশ না হলে, করের হার আপনা আপনি বেড়ে ২০০১ সালের আগের সীমায় পৌঁছবে৷ 

করের হার বাড়ানো নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে তাতে কোনও করদাতার ব্যক্তিগত আয় বছরে ৪ লক্ষ মার্কিন ডলারের বেশি অথবা কোনও পরিবারের আয় বছরে ৪.৫ লক্ষ ডলারের বেশি হলে ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩৯.৬ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে৷ এই শ্রেণির করদাতাদের ক্ষেত্রে মূলধনী লাভের ওপর কর (ক্যাপিটাল গেনস ট্যাক্স) এবং লভ্যাংশের ওপর কর (ডিভিডেন্ড ট্যাক্স) বর্তমান ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশ হবে৷ বিভিন্ন সংস্থায় কর্মীদের বেতন থেকে সরাসরি কেটে নেওয়া পে-রোল ট্যাক্সের হারও দু'শতাংশ বাড়ানো হবে৷ 

সব মিলিয়ে, আমেরিকার সাধারণ নাগরিকদের হাতে এখন কম আয় আসবে৷ ফলে, ব্যয় এবং সঞ্চয় দু'টোই কমবে৷ সামাজিক খাতে ব্যয় কমানো নিয়ে সমঝোতা হয় যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ব্যয় কম করা হবে না৷ অর্থাত্, সরকারি ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত ঝুলে রইল ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয় কমানো নিয়ে ওবামা সরকারের ওপর জোর চাপ দেবে রিপাবলিকানরা৷ 

এর মাঝে, আরেকটি সমস্যা তৈরি হয়েছে৷ বারাক ওবামা ২০০৯ সালে প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতি বছর আমেরিকার বাজেট ঘাটতি এক লক্ষ কোটি ডলারের বেশি হয়েছে৷ সেপ্টেম্বর ২০১২-এ শেষ হওয়া বাজেট বর্ষে আমেরিকার বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১,১০,০০০ কোটি ডলারে৷ 

মার্কিন সরকার এই বাজেট ঘাটতি পূরণ করেন বাজার থেকে টাকা ধার করে৷ সরকার কত টাকা ধার করতে পারেন তার সীমা নির্ধারণ করে দেয় মার্কিন সেনেট ও কংগ্রেস৷ মার্কিন সরকারি তহবিলের সচিব টিম গাইথনার সোমবার এক চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছেন যে সরকারের ঋণ নেওয়ার বর্তমান ঊর্ধ্বসীমায় (১৬,৪০,০০০ কোটি ডলার) ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে৷ ফলে, সরকারি খাজাঞ্চিখানা অনন্য সাধারণ ব্যবস্থা, যেমন বিনিয়োগ বিলগ্নিকরণ, নিতে শুরু করেছে যাতে সরকার আগের নেওয়া ঋণ ফেরত এবং অন্যান্য খরচ 'পেমেন্ট' করতে অপারগ না হয়৷ 

অর্থাত্, ওবামা সরকারকে এই ঋণ করার সীমা বাড়নো নিয়ে আবার রিপাবলিকানদের দ্বারস্থ হতে হবে৷ কারণ, চলতি বাজেট বর্ষ শেষ হবে সেপ্টেম্বর ২০১৩-য়৷ অথচ, বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য আর ধার করার উপায় নেই৷ মার্কিন ট্রেজারি ঋণপত্র বিক্রি অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করলেই সুদের হার বাড়বে৷ এবং সেটা মার্কিন অর্থনীতির ওপর আরও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে৷ এমনিতেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, করের হার বাড়ানো ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করলে আমেরিকার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশ থেকে কমে ১ শতাংশে ঠেকবে নতুন বছরে৷ বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়বে৷ 

সাধারণত দেখা যায়, যাঁদের আয় বেশি, তাঁরা সঞ্চয়ও (এবং বিনিয়োগ) করেন বেশি৷ ধনীদের জন্য করের হার বাড়ানোয় নতুন বছরের গোড়া থেকেই মার্কিন এফআইআইরা আমাদের দেশে তাদের বিনিয়োগ বিক্রি করতে শুরু করবেন৷ মার্কিন অর্থনীতির বৃদ্ধি কমে গেলে, ভারত, চিন ও জাপানের মতো দেশগুলির রন্তানি কমে যাবে অনেকটাই৷ ফলে, রন্তানির অন্য বাজার শীঘ্র তৈরি না করলে ভারতীয় রন্তানি সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়বে৷ এর প্রতিফলন দেখা যাবে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতেও৷ তাই, বছরের প্রথম দিন শেয়ার বাজারের উত্থান দেখে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই যে গোটা বছর বাজার ভালো যাবে৷ বরং বলা যায়, ফেব্রুয়ারি থেকেই বাজারে অস্থিরতা টের পাওয়া যাবে৷ 

খরচ ছাঁটাই ও কর বসানোয় রেহাই দিল মার্কিন সেনেট

আক্ষরিক অর্থেই খাদের কিনারায় দাঁড়ানো মার্কিন অর্থনীতিকে অন্তত এক পা পিছিয়ে আসার স্বস্তি দিল সেনেট। কথা হচ্ছিল, ঘাটতি আর ধারের বোঝা কমাতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই রাজস্ব আদায় বাড়াতে বাধ্য থাকবে মার্কিন সরকার (১০ বছরে ৬০ হাজার কোটি ডলার)। তার জন্য চড়া হারে কর বসাবে সাধারণ মানুষের উপর। বিপুল পরিমাণে ছাঁটাই করতে হবে সরকারি খরচও (১০ বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি ডলার)। সকলেরই আশঙ্কা ছিল, এই 'সাঁড়াশি আক্রমণে' শুধু আমেরিকায় কাজ হারাবেন ৩৪ লক্ষ মানুষ। মন্দার মুখে ঢলে পড়বে মার্কিন অর্থনীতি। সঙ্কট গভীর হবে বাকি বিশ্বে। এই আশঙ্কাকেই গত কয়েক মাস ধরে 'ফিস্কাল ক্লিফ' নামে ডেকেছে সারা পৃথিবী। বছরের প্রথম দিনে প্রথা-ভাঙা গভীর রাতের ভোটাভুটিতে আপাতত এই আতঙ্ক এড়ানোর পক্ষে (৮৯-৮) রায় দিল সেনেট।

ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকানদের প্রবল দর কষাকষির পর যে প্রস্তাব পাশ হল, তার সার কথা হল, এখনই বাধ্যতামূলক খরচ ছাঁটাইয়ের তেতো ওষুধ গিলতে হবে না। বদলে মানতে হবে কিছু শর্ত। এর মধ্যে রয়েছে

• ১০ বছরে ৬০ হাজার কোটি ডলার রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে ঠিকই। তবে তা আসবে মূলত ধনীদের উপর কর বসিয়ে।

• বছরে ব্যক্তিগত আয় ৪ লক্ষ ডলারের নীচে হলে, কর সংক্রান্ত সুবিধা চালু থাকবে। একই সুবিধা পারিবারিক আয় সাড়ে ৪ লক্ষ ডলারের কম হলেও। তবে রোজগার তার বেশি হলে, করের হার হবে এখনকার ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩৯.৬%। বাড়বে ডিভিডেন্ড ও মূলধনী-লাভ করও।

• করের হার বাড়বে ৫০ লক্ষ ডলারের বেশি দামের বাড়ির (এস্টেট) ক্ষেত্রেও।

• এক বছরের জন্য বেকারভাতা পাবেন ২০ লক্ষ মানুষ। ইত্যাদি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথায়, "ঘাটতি কমাতে চেষ্টা করব। তবে এই রফা দেখিয়ে দিল যে, খরচ কমানোর পাশাপাশি তা করতে হবে ধনীদের থেকে আরও বেশি কর আদায়ের মাধ্যমে।" তবে এই হাঁফ ছাড়া কতক্ষণ স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে মার্কিন কংগ্রেসের আর এক কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে (প্রতিনিধিসভা) বিল পাশ পাওয়ার উপর। মঙ্গলবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটায় এই বিতর্ক শুরু হয়েছে সেখানে। তার পর ভোট। সেখানেও ব্যালটের ফল প্রস্তাবের পক্ষে গেলে, তবেই সেনেটে 'জয়ের' সার্থকতা। কারণ সে ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়াতে কিছু দিন (বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস দু'য়েক) সময় পাবে মার্কিন অর্থনীতি। তাই আমেরিকা তো বটেই, মার্কিন প্রতিনিধিসভার দিকে চোখ এখন তামাম দুনিয়ারও।

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%96-%E0%A6%9A-%E0%A6%9B-%E0%A6%9F-%E0%A6%87-%E0%A6%93-%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A6%B8-100127500.html


SUNDAY, SEPTEMBER 2, 2012

বিশ্বব্যাপী পূঁজি বাজারের ধস, পূঁজিবাদের ব্যর্থতা এবং খিলাফতের সমাধান

বিশ্বঅর্থনীতি পতনের ঘটনা প্রবাহ : বর্তমান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সমস্যার কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হলো :

৪ এপ্রিল- ২০০৭      :   নিউসেঞ্চুরী লিমিডেট নামের মার্কিন সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষণা।
মে- ২০০৭                :   এক মাসের মধ্যে প্রায় ২৫টি সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
মে-২০০৭                 :  এর এক সপ্তাহের মাঝে আর্থিক বাজারের মোট ক্ষতির পরিমান দাড়ায় প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার।
জুন-২০০৭               :    শুরু হয় তারল্য সংকট এবং ঋণ প্রদান বন্ধ করে দেয় অনেক ব্যাংক। একেই বলা হয় credit crunch
ফেব্রুয়ারী-২০০৮    :    Citi Group Credit মার্কেটে loss করে প্রায় ৪০.৭ বিলিয়ন ডলার, HSBC ব্যাংক এর ক্ষতির পরিমান ১৫.৫ বিলিয়ন, Merrill Lynch এর ক্ষতির পরিমান দাড়ায় ৩১.৭ বিলিয়ন।
মার্চ- ২০০৮             :     বৃটেনের পঞ্চম বৃহত্তম ব্যাংক Northern Rock দেউলিয়া ঘোষিত হয়।
সেপ্টেম্বর-২০০৮      :    ১৮৪ বছরের পুরানো পঞ্চম বৃহত্তম মার্কিন ব্যাংক Lehman Brothers দেউলিয়া ঘোষিত হয়।
সেপ্টেম্বর-২০০৮   :    বিশ্বের সবচে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠা AIG Group দেউলিয়ার কবলে পড়ে এবং মার্কিন সরকার ৮০% মালিকানা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করন করে নেয়।
সেপ্টেম্বর-২০০৮     :     আইসল্যান্ডের/আয়ারল্যান্ডের প্রায় সমস্ত ব্যাংক জাতীয় করন করা হয়।
সেপ্টেম্বর-২০০৮     :    ৭৪০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন এবং ৫০০ বিলিয়ন পাউন্ডের বৃটিশ rescue plan অনুমোদন হয়।
সেপ্টেম্বর-২০০৮    :    শেয়ার বাজারের দর পতন অব্যাহত থাকে। ইউরোপ, এশিয়া ও মার্কিন শেয়ার বাজারগুলো এক বছরে প্রায় ৩০-৪০% সম্পত্তি হারিয়ে ফেলে।
সেপ্টেম্বর-২০০৮     :     সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী মহামন্দার সূচনা।


ভূমিকা :

বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েল ষ্টেট সেক্টরে যে সংকট দেখা দিয়েছে এবং এর পরবর্তীতে যেভাবে সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ছড়িয়ে পড়েছে তা উপরের ঘটনা প্রবাহ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান। এই প্রবন্ধে আমরা সমস্যার স্বরূপ ও প্রকৃত কারণ তুলে ধরার চেষ্টা করব এবং এই ধরণের সমস্যা, আশু খিলাফত কিভাবে সমাধান করবে তা বিস্তারিত উপস্থাপন করা হবে। এই প্রবন্ধের বেশ কিছু কন্‌সেপ্ট যেহেতু খুব বেশী টেকনিক্যাল তাই উপস্থাপনা এবং বুঝার সুবিধার জন্য পুরো প্রবনন্ধটিকে নিম্নোক্ত ভাবে সাজানো হলো।

- কিছু টেকনিক্যাল শব্দের সংজ্ঞা।
 
- আর্থিক সংকটের তৈরীর পেছনে কার্যক্রর প্রক্রিয়াটি এবং এতে জড়িত বিভিন্ন ধরণের বাজারের কার্যপ্রক্রিয়া বর্ণনা করা।

- পুঁজিবাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সংকটের কারণ এবং সংকট উত্তোরণে পুঁজিবাদী প্রেসক্রিপশন।

- সংকটের প্রকৃত কারণের বিবরণ।

- খিলাফতের সমাধান।

- বর্তমান সংকটে আমাদের ভূমিকা।

১ম ধাপ : কিছু টেকনিক্যাল শব্দের সংজ্ঞা

- বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial Bank) : যেসব ব্যাংক জনগণের সঞ্চয়কৃত অর্থ সুদের বিনিময়ে জমা নেয় এবং অধিক সুদের বিনিময়ে অন্যের কাছে তা ঋণ দেয় তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।
 
- পেনশন ফান্ড প্রতিষ্ঠান : যে সকল প্রতিষ্ঠান চাকুরীজীবিদের পেনশনের টাকা জমা নেয় এবং তা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে এবং চাকুরী শেষে তা ফেরৎ দেয়।

- মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোম্পানী : যে সকল প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির কাছ থেকে কাগজি সার্টিফিকেট বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে।

- বন্ড বাজার : যে বাজারে ঋণের দলিল ক্রয়-বিক্রয় হয়।

- ঝুঁকি : ঋণ দেয়ার পর ফেরৎ না পাবার সম্ভবনা কে ঝুঁকি বলে।

- সিকিউরিটি : এক ধরনের দলিল যার মাধ্যমে কোন কিছুর উপর আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন : শেয়ার।

- জামানাতযুক্ত গৃহঋণ (Home Loan Mortgage) : কোন ব্যক্তি যদি গৃহ নির্মানের জন্য গৃহিত ঋনের (Loan) এর বিপরীত জামানত হিসাবে ঋণ দাতাকে বা ঋণদাতার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট স্থাবর সম্পত্তি (যেমন বাড়ী, জমি ইত্যাদি) জামানত রেখে ঋণ গ্রহণ করে তাকে জামানতযুক্ত গৃহঋণ বলে।

- প্রাইম মর্গেজ বাজার (Prime-Mortgage Market) : জামানতযুক্ত গৃহঋণ গ্রহণের সময় ঋণ গ্রহীতার আর্থিক সামর্থ্য এবং ঋণ পরিশোধের সম্ভবনা ক্ষতিয়ে দেখা হয়। যেসব ঋণ গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাদেরকে বলা হয় প্রাইম কাষ্টমার (Prime Customer)। এই বাজারে যেসব গৃহঋণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দেয় তাদেরকে Prime-Mortgage Bankবলে। এক্ষেত্রে ঋনের জামানত হিসাবে ঐ বাড়ীটিই (যা এখনও তৈরী হয়নি) মর্গেজ ব্যাংক এর নিকট দায়বদ্ধ রাখা হয়।

- ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান : যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ ঝুঁকির পরিমান নির্ধারণ করে।

- সাব প্রাইম মর্গেজ (Subprime-Mortgage Market) : সারা বিশ্বব্যাপী আমেরিকান মর্গেজ বাজারের পতন যে ভয়বহ অর্থনৈতিক সংকট তৈরী করেছ তার মূলে রয়েছে সাব প্রাইম মর্গেজ বাজার (Subprime-Mortgage Market)।

খুব সহজ ভাষায়, যেহেতু ঋণ পাবার জন্য ঋণগ্রহীতার আর্থিক অবস্থার মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, তাই যখন কোন ব্যক্তির গ্রহণযোগ্য পরিমান আর্থিক অবস্থা না থাকে তখন সে ব্যক্তি প্রথম শ্রেণীর প্রাইম মর্গেজ ব্যাংক সমূহ হতে ঋণ পায় না। যখন মার্কিনীদের মাঝে সকল প্রাইম কাষ্টমাররা মর্গেজ ঋণ নিয়ে নিল তখন এ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্থবিরতা চলে আসল। সেই সময় কম অবস্থা সম্পন্নদের জন্য সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংক সমূহ ঋণ প্রদান শুরু করে। প্রায় ২৫% মার্কিন জনগণ এই ধরনের কম অবস্থা সম্পন্ন আয়ের মানুষ। এটি একটি বিশাল বাজার। ফলে বেশীর ভাগ সাব প্রাইম মর্গেজ ব্যাংক এ ধরনের লোকদের কাছে ঋণ দিতে থাকে। যার বিনিময়ে জামানত হলো ভবিষ্যতে তৈরী বাড়ীটি।
  
- নিলাম কৃত সম্পত্তি বাজার : যদিও এই ধরণের ঋণ খুব বেশী ঝুঁকিপূর্ণ, তারপরও এই ব্যাংকগুলো এই ধরনের ঋণ প্রদান অব্যাহত রাখল এই যুক্তিতে যে, যদি ঋণ গ্রহীতা ঋণ প্রদান ব্যর্থ হয়, তবে ব্যাংকগুলো জামানতকৃত বাড়ী বিক্রি করে এই ঋণ আদায় করবে। এই ধরণের বাড়ী বিক্রি করার জন্য আমেরিকায় রয়েছে নিলাম কৃত সম্পত্তি বাজার।

২০০৭ সালের দিকে এই ধরনের বাজারে প্রদান করা ঋণের পরিমান দাড়াল ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। যা মার্কিন জিডিপির (GDP) প্রায় এক-দশমাংশ। এভাবেই Subprime-Mortgage Bank গুলো আরো বেশী মুনাফা করার জন্য ঝুঁকির পরিমাণ চিন্তা না করে বিনিয়োগ করতে থাকলো।

- মর্গেজ বেকর্ড বন্ড (Mortgage Backed Bond) : পশ্চিমা অর্থব্যবস্থা বর্তমান সংকট যে কারণে এত প্রকট হয়েছে তার মূলে রয়েছে এই বন্ড। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একটি সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংক কয়েকজনকে গৃহঋণ দিয়েছে। যার বিপরীতে জামানত হল নির্মিতব্য গৃহটি এবং ধরা যাক সব মিলিয়ে ঋণ দিয়েছে ২ কোটি ডলার। এখন মরগেজ ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি এই ঋণের বিপরীতে মাসিক বা ত্রৈমাসিক বা অর্ধ-বাৎসরিক বা বাৎসরিক কিস্তি পাবে। যার মাধ্যমে ঋণ আদায় হবে। এখন প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশি অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য এই প্রাপ্য কিস্তির (ভবিষ্যতে পাবার) বিপরীতে অন্যের কাছ থেকে (যেমন: প্রাইম মর্জেগ ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক ব্যাংক ইত্যাদি) কাছ থেকে বিভিন্ন ঋণ দলিল বিক্রি করে আরো ঋণ গ্রহণ করল। আর এই নতুন ঋণপত্র ক্রেতাকে মর্গেজ লোন থেকে প্রাপ্ত কিস্তি হতে সুদ প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেয়।। এর ফলে ঋণ কিস্তি একটি ক্রয় বিক্রয়ের সামগ্রী হয়ে পড়ল। একেই বলা হয় মর্গেজ বেকর্ড বন্ড (Mortgage Backed Bond)।

২য় ধাপ : আর্থিক সংকটের তৈরীর পেছনে কার্যক্রয় প্রক্রিয়া এবং এতে জড়িত বিভিন্ন ধরণের বাজারের কার্যপ্রণালী   
                               
২.১ বুদ্ধিমান (?) মার্কিনীদের ঋণ বিক্রি :

আমরা হয়তো একটু আশ্বার্যই হব যে, বুদ্ধিহীন মার্কিনীরা বা সমগ্র পাশ্চাত্য সভ্যতা তাদের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক দর্শন, মুনাফা অর্জনের জন্য কি না করে থাকে। আশ্চর্য্য তাদের কৌশলসমূহ। তবে এখানে আমরা তাদের ঋণ বিক্রির (অপ) কৌশল দেখব।

সাব-প্রাইম মর্গেজ বাজার যেহেতু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং একই সাথে বেশি লাভজনক তাই, বড় বড় ব্যাংকগুলো (বলা হয় Wall Street Banks) এই জায়গায় বিনিয়োগ করার নানান রকম উপায় বের করল। যার মাধ্যমে তারা আরো বেশি অর্থায়ন এবং এর ফলে আরো বেশি মুনাফা করার সুযোগ পেল। এই উপায়গুলো হলো বিভিন্ন প্রকার মর্গেজ সিকিউরিটির উদ্ভাবন। বিভিন্ন ধরনের মর্গেজ সিকিউরিটির মাঝে Mortgage Backed Bond, Mortgage Pay-through Securities, Collateralized Mortgage Obligation Mortgage Backed Bond ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক ব্যাংক (মানুষের সঞ্চয় কৃত অর্থ) মিচুয়্যাল ফান্ড প্রতিষ্ঠান (সাধারণ মানুষের বিনিয়োগকৃত অর্থ), প্যানশান ফান্ড প্রতিষ্ঠান (চাকুরী জীবিদের প্যানশনের কিস্তির অর্থ), বীমা প্রতিষ্ঠান (সাধারণ মানুষের বীমা পলিসির কিস্তি হতে প্রাপ্ত অর্থ) এই মর্গেজ বেকর্ড বন্ড (Mortgage Backed Bond) ক্রয় করতে থাকে। এর মাধ্যমে এই বাজারে আরো বেশি অর্থায়নের সুযোগ তৈরী হলো।
 
শুধুমাত্র এই ধরণের মার্কিন প্রতিষ্ঠানই নয় বরং ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যে, প্রাচ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ধরণের ঋণপত্রে বিনিয়োগ শুরু করলো। লক্ষ্যনীয় যে, যে সকল প্রতিষ্ঠান এই মর্গেজ বন্ড কিনছে তারা মোটেও জানতে পারছে না যে, মার্কিন এই মর্গেজ ব্যাংকগুলো কোথায়, কি পরিমানে এবং কত ঝুঁকিতে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করছে। আর কতইবা এই মর্গেজ বাজারের প্রকৃত ঝুঁকির পরিমান। Credit Rating প্রতিষ্ঠান সমূহ মর্গেজ ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকদের যোগ সাজসে এই সেক্টরের বিনিয়োগ ঝুঁকির পরিমান প্রকৃত ঝুঁকির পরিমান থেকে কম বলে রির্পোট বের করতে থাকল।

সাধারণ মানুষ, যারা বীমা প্রতিষ্ঠানে টাকা দেয় বীমা পলিসীর জন্য, যারা পেনসন ফান্ড কোম্পানীতে মাসিক কিস্তি দেয় বৃদ্ধ অবস্থায় পেনসন পাবার জন্য, যারা ব্যাংকে টাকা জমা দেয় ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সমস্যা হতে মুক্ত থাকার জন্য, তাদের পক্ষে এই সব বিনিয়োগের ঝুঁকি জানা একদমই অসম্ভব।

২.২ Farnic Mae & Faddie Mac এর ভূমিকা (SWAP এর উদ্ভব):

যেহেতু সাব প্রাইম ব্যাংকের ইস্যুকৃত মর্গেজ বেকর্ড বন্ড ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, Federal National Mortgage Association বা সংক্ষেপেFannie Mac/FNMA এই ঝুঁকির পরিমান কমানোর জন্য এই সব ঋণ পত্রের বিনিময় গ্যারান্টি প্রদান করে নতুন ঋণপত্র বিক্রি শুরু করে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় Credit SWAP। যেহেতু Fannie Mac একটি মার্কিন সরকারী প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের House Building Finance Corporation (BITBFC) এর মত, তাই এই প্রতিষ্ঠানটির গ্যারান্টির বিপরীতে ইস্যুকৃত মর্গেজ বেকর্ড বন্ড আস্তে আস্তে বাজারে জনপ্রিয় হতে থাকলো। ২০০৭ সালে এই বাজারের মোট মূল্য দাড়ায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এখানে লক্ষ্যনীয়, যে প্রতিষ্ঠানটি এই গ্যারান্টি প্রদান করলো তার নিজের আর্থিক অবস্থাই নাজেহাল। ২০০৭ সালের মোট সম্পত্তির পরিমান ৮৮২.৫ বিলিয়ন ডলার অথচ নিজস্ব মুলধন হল মাত্র ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এইভাবে SWAP এর মাধ্যমে Fannie Mac প্রাইভেট মর্গেজ ব্যাংকগুলোকে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসা করার জন্য উৎসাহিত করলো।

তাছাড়াও শেয়ার বাজার, বন্ড বাজার, বিভিন্ন ধরণের ঋণপত্র, margin trading, ডোরভেটিবস ও হেজ্‌ফান্ড ইত্যাদি জটিল কাগুজে সম্পত্তির মাধ্যমে এই সেক্টরে প্রকৃত সম্পত্তির মূল্যের তুলনায় অধিক হারে ঋণ ক্রয়-বিক্রয় শুরু হলো। ২০০৭ সালে এ বাজারের পরিমাণ ছিল ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ এর বিপরীতে অধিক পরিমান ঋণ বিক্রির ফলে ঋণ বাজারের পরিমান দাঁড়ায় ৫১ ট্রিলিয়ন ডলার, শেয়ার বাজারের পরিমান দাড়ায় ৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং এসবের বিপরীতে ডেরিভেটিব্‌স বাজারের পরিমান ছিল ৫০০ ট্রিলিয়ন ডলার। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সেই একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের কোন ব্যক্তির একটি বাড়ী তৈরীর বিষয়কে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক ব্যাংক, মর্গেজ ব্যাংক, সাব-প্রাইজ মর্গেজ ব্যাংক নিলামে বাড়ী বিক্রির বাজার, পেনশন ফান্ড, মিউচুয়্যাল ফান্ড, লিজিং ফার্ম, বীমা প্রতিষ্ঠানসহ সবাই কিভাবে ব্যবসা করছে। আর সুদ হচ্ছে এই সমস্ত ব্যবসায়ের পণ্য।

২.৩ আর্থিক বাজারে ধসের প্রক্রিয়া ও প্রভাব:

এই ভাবে যখন বিভিন্ন ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সাব-প্রাইম মর্গেজ বন্ড ও এর বিপরীতে তৈরী হওয়া বিভিন্ন ডেরিবেটিবস-এ বিনিয়োগ শুরু করলো তখন মর্গেজ এবং সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার পরিমাণ বেড়ে গেল। যেসব মর্গেজ ব্যাংক গৃহঋণ দিল তারা ভবিষ্যতে এই বাড়ীর মূল্য কয়েকগুণ বাড়বে এই চিন্তায় ঐ পরিমান ঋণের দলিল ইস্যু করতে থাকলো। এই ভাবে বাজারে মর্গেজ বন্ড ও অন্যান্য ঋণপত্রের পরিমাণ বেড়ে গেল। অন্যদিকে জর্জ ডব্লিউ বুশের গত ৮ বছরের জঘণ্য অর্থনৈতিক ও বৈদিশিক নীতির কারণে সাধারণ মার্কিন জনগণের পক্ষে সময়মত গৃহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ল।

মার্কিন অর্থনীতি ধ্বংসের প্রথম লক্ষণ দেখা গেল যখন ২রা এপ্রিল ২০০৭ সালে নিউ সেঞ্চুরী লিমিটেড নামের সর্ববৃহৎ সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংকে দেউলিয়া ঘোষিত হল। এক মাসের মধ্যে প্রায় ২৫টি সাব-প্রাইম ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষিত হল। আর যখন এক সাথে অনেকগুলো মর্গেজ ব্যাংক দেউলিয়া হলো তখন নিলাম বাজারে বাড়ী বিক্রির পরিমান বেড়ে গেল। ফলে দ্রুত এসব বাড়ীর দাম কমতে শুরু করলো। অন্যদিকে যেহেতু আর্থিক অর্থনীতির সকল সেক্টরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই মর্গেজ বন্ড বাজারে বিনিয়োগ করেছিল তাই সাব-প্রাইম মর্গেজ ব্যাংকগুলোর দেউলিয়ার ফলে দ্রুত মর্গেজ বন্ডের দাম কমে গেল। শুরু হল বাজারে দরপতন। এতে করে সংকট চক্রবৃদ্ধি হারে প্রভাব ফেলতে শুরু করলো এবং যারাই এই বাজারে বিনিয়োগ করলো তারা সবাই একে একে ক্ষতির সম্মুখিন হতে শুরু করলো। একে একে ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, হেজ ফান্ড, পেনশন ফান্ড, মিউচুয়্যাল ফান্ড, বিনিয়োগ ব্যাংক, এরা সবাই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মাত্র ৭ দিনেই এই ক্ষতির পরিমাণ দাড়াল ৮০০ বিলিয়ন ডলার। এই বিক্রি বেড়ে যাবার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রাইম মর্গেজ ব্যাংকগুলোকেও ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিল। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অন্যান্য ব্যাংককেও ঋণ প্রদান বন্ধ করে দিল। তৈরী হলোCredit Crunch

অন্যান্য দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন বুঝতে পারে তারা ইউ,ইস-এর মর্গেজ বাজারে বিনিয়োগকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারবে না। তখন তারাও বন্ড বাজারে বিক্রি আরো বাড়িয়ে দিল। আস্তে আস্তে এর প্রভাব শেয়ার বাজারেও পড়তে থাকে। ব্যাপক হারে শেয়ার এবং Derivative securities বিক্রির ফলে একে একে বিভিন্ন বন্ড ও শেয়ার বাজারে দাম কমতে শুরু করে এবং বিভিন্ন বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাপক হারে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পশ্চিমা Central bank গুলো মাত্র ৪৮ ঘন্টা সময়ের মধ্যে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ আর্থিক বাজারে সরবরাহের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলো। যেহেতু মর্গেজ বন্ড বাজারের পরিমান ছিল ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, বন্ড বাজারের পরিমান ছিল ৫১ ট্রিলিয়ন ডলার, শেয়ার বাজারের পরিমান ছিল ৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং এসবের বিপরীতে ডেরিভেটিব্‌স বাজারের পরিমান ছিল ৫০০ ট্রিলিয়ন ডলার তাই শুরু হলো ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। অনেক ব্যাংক দেউলিয়ার দারপ্রান্তে পৌছে যায়। যাদের মাঝে রয়েছে বৃটেনের Northern Rock, সুইজারল্যান্ডের USB, ১৮৫ বছরের পুরাতন আমেরিকান ব্যাংক Lehman Brothers.

এই সমস্যার ফলে USA, Japan, UK, Germany, France, ইটালি, অষ্টেলিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশে প্রকৃত উৎপাদন কমে গেছে। মর্গেজ লোন নিয়ে করা বাড়িগুলো নিলামে উঠছে। টঝঅ-তে প্রত্যেক দশ সেকেন্ডে ১টি বাড়ী নিলামে বিক্রি হয়- যার দাম গত বছরের তুলনায় ১/৩ অংশ। বিলাস পণ্যের ভোগ কমে গেছে। USA-তে গাড়ি বিক্রি কমে গেছে প্রায় ৭৮%, দাম কমেছে প্রায় ৪০%। চীনে অনেক ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ আমেরিকানরা তাদের ক্রয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশেও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার গার্মেন্টেস বাজারের আশু পতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ স্টেপ্টম্বর ডিসেম্বর হল বিক্রির মৌসুম। প্রায় ৭০০ বড় বড় আমেরিকানরা নতুন অর্ডারতো দূরে থাক, পুরাতন অর্ডার গুলোও তুলে নিচ্ছেন।

৩য় ধাপ : পুঁজিবাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সংকটের কারণ এবং সংকট উত্তোরণে পুঁজিবাদী প্রেসক্রিপশন

৩.১ সংকট উত্তরণে পুঁজিবাদীদের ব্যবস্থা:

এই ঘটনার পরবর্তীতে অনেকেই এই সমস্যার কারন ও সমাধান খুঁজার চেষ্টা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণর, G8 সম্মেলনের বক্তারা কারণ হিসেবে আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, হিসাব রক্ষন ব্যবস্থা ও Regulation-কে দায়ী করেছেন। যা সত্যিকার অর্থে সমস্যার মূল কারণ নয়।

তাছাড়া এই অবস্থা হতে উদ্ধারের জন্য পশ্চিমা পুঁজিবাদী সরকারগুলো সাধারণ মানুষের টাকা এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি পূরণে ব্যায় করার মত সিদ্ধান্ত নেয়। Free market economy-তে আমরা এই সিদ্ধান্ত দেখে আশ্চার্য নই। এটি তাদের আর্থিক নয় বরং আদর্শিক দেউলিয়াত্বই প্রমাণ করে। ইউএসএ-তে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলারের উদ্ধার প্যাকেজ এবং ইউকে-তে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন পাউন্ড উদ্ধার প্ল্যান সরকার ভাবে গ্রহণ করা হয়। এর ফলে বৃটেনে জনপ্রতি প্রায় ২২০০ পাউন্ড পরিমান ঋণের বোঝা বাড়াবে। এসব উত্তরণ পরিকল্পনা সত্যিকারের কোন সমাধানতো দেয়ই নি বরং সমস্যা আরো ঘনীভূত করেছে। পরবর্তীতে আরো ৩৫০ বিলিয়ন ডলার উদ্ধার পরিকল্পনাও কোন সমাধান আনতে পারেনি। বিশ্বব্যাপী শেয়ার ও বন্ড বাজারের দরপতন আজঅব্দি অব্যহত আছে। গত ১ বছরে মার্কিনসহ সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারের দরপতন হয়েছে গড়ে ৩৫-৪৫%।

৩.২ সংকট উত্তরণে সত্যিকার পুঁজিবাদীদের ব্যবস্থা:

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের উপায় হিসাবে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা সভ্যতার মোড়ল আমেরিকার রয়েছে পুরাতন ফর্মূলা। তারা নিজেরাও জানে আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, হিসাব রক্ষণ ব্যবস্থা ও Regulation-ইত্যাদির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের ইতিহাস ভিন্ন কথা বলে। তাদের ১৯৩০ এর অর্থনৈতিক মহামন্দা কেটেছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা এবং পরবর্তীতে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে। ১৯৫০ এর অর্থনৈতিক সংকট কেটেছে কোরিয়ান যুদ্ধ দ্বারা। ১৯৬০ এর অর্থনৈতিক সংকট কেটেছে ভিয়েতনাম যুদ্ধ দ্বারা। ১৯৭০ সালের মন্দা কেটেছে সৌদি রাজা ফয়সালকে হত্যা করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমিয়ে। ১৯৮০-র দশকের অর্থনৈতিক মন্দা কেটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ঠান্ডা যুদ্ধ বিজয়ের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মাধ্যমে। ১৯৯০ এর সমস্যা কেটেছে সিনিয়র বুশের নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার প্রথম যুদ্ধ- মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রথম ইরাক যুদ্ধের মাধ্যমে এবং তারপর ২০০০ সালের সমস্যা কাটানোর চেষ্টায় রয়েছে ২য় ইরাক যুদ্ধ। পরবর্তীতে war on terror নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নব্য ক্রুসেড পরিচালনার মাধ্যমে। বর্তমান সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের লক্ষ্য আশু Pakistan আক্রমন, প্রক্সি-ওয়ারের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে arm race শুরু করে। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি প্রায় ৩০ বছর পুরনো ভারতের বিরুদ্ধের অবরোধ উত্তোলণের মাধ্যমে ভারতকে nuclear fuel সরবরাহ করার পরিকল্পনা। যা ভারত-পাকিস্তানের মাঝে প্রতিযোগীতা তৈরী করবে এবং USA এর অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমানো, যাতে করে আমেরিকানদের জীবন নির্বাহ ব্যয় হ্রাস পায়। বিষয়টি ইতিমধ্যেই ঘটতে শুরু করেছে। প্রায় ৭-৮ মাস আগে তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের মত, যা বর্তমানে মাত্র ৫০ ডলারে নেমে এসেছে। সর্বপরি রয়েছে আরো বেশি ডলার মুদ্রা ছাপানো কাজ। যা USA এর সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে এবং অন্যান্য দেশকে সমস্যায় ফেলবে। কারণ এতে করে অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ডলার রির্জার্ভের মূল্য কমে যাবে।

তবে লক্ষ্যনীয় যে, আজকের আমেরিকা সারা বিশ্বে সামরিক দিক থেকে একটি পরাজিত শক্তিতে পরিনত হয়েছে। পরিনত হয়েছে পরাজিত শক্তি হিসেবে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এবং সারা বিশ্বে তাদের ফেরী করা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন ভাবে অস্ত্র প্রচার হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে বর্তমান আমেরিকা আরেকটি উন্নত আদর্শিক রাষ্ট্রেও আগমনের জন্য পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

৩.৩ পুঁজিবাদী সভ্যতার আদর্শিক দেউলিয়াত্ব:

বিশ্বব্যাপী পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক এই সংকটের কারণে মানব সভ্যতার যে সংকট দেখা দিয়েছে তাতে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, হংকং, জাপান, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানী, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইটালী, ইউকে, আরব রাষ্ট্রসমূহ এবং ভারত সহ সারা বিশ্বে ব্যাপক ভাবে এ অর্থনৈতিক সংকট ছড়িয়ে পড়েছে। সকল দেশের সরকারই তাদের আর্থিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রানান্তরকর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেমন করে একজন জুয়ারী ক্যাসিনোতে বারবার ফিরে যায় তার ক্ষতি পুরণের জন্য। ইউএসএ-ইউকে সরকার তাদের সাধারণ মানুষের করের টাকা এই ধরণের জুয়ারী আর্থিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ঢেলে যাচ্ছেন। যদিও তাদের এ উদ্ধার পরিকল্পনা কাজ করবে কিনা এ নিয়ে বির্তক আছে, তবে পুঁজিবাদের আর্দশিক মৃত্যু নিয়ে আর কোন সন্দেহ বা বিতর্ক নেই। পশ্চিমা জাতি সমূহ দশকের পর দশক বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাজার অর্থনীতি, মালিকানার স্বাধীনতা, বাজার অর্থনীতি, ইত্যাদি বিষয়গুলো সারা বিশ্বে ফেরি করে আসছে। প্রচুর বেতনভূক্ত পরামর্শক (consultant) ও তাদের প্রতিষ্ঠান ও IMF, World Bank এর মাধ্যমে তারা বেসরকারীকরণ (Privatization), মুক্তবাজার নীতিমালা, যৌথমুলধনী পাবলিক কোম্পানী এবং শেয়ার ও বন্ড বাজারের প্রসারের কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশ কিভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন : সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণ করেছে। অথচ তারা যখন নিজেদের দেশে সমস্যায় পড়েছে তখন তারা তাদের মুক্তবাজার অর্থনীতির শ্লোগান, প্রাইভেটাইজেশনে বা প্রতিযোগিতামূলক প্রেশক্রিপশনকে নিজেদের জন্য গ্রহণ করছেনা।

- USA তাদের দেশের বিখ্যাত গৃহ ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান "Fannie Mae" এবং "Faddie Mac"-কে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করেছে। বিখ্যাত ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠান AIG গ্রুপকেও করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব। এমনিভাবে তারা প্রচুর আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করেছে, যার উদাহারণ ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, জার্মানী, ফ্রান্স-এ প্রচুর পাওয়া যায়।
- পশ্চিমা পুঁজিবাদী রাষট্রগুলো বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর কথা বলে, অথচ বর্তমান সমস্যা তারা তাদেররই তৈরী "Anti-competition" আইন পরিত্যাগ করে দু'টি প্রতিষ্ঠানকে একত্রে মার্জ হওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করছে। যা তাদের শিখানো "competition" আইন প্রতিযোগিতা আইন -এর সম্পূর্ণ পরিপন্থী। উদাহরণ হচ্ছে, যুক্তরাজ্যের Loyads & HBOS- আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মার্জার।
- তাদের সরকারী কোষাগারে বর্তমানে আর্থিক সংকট চলছে। এই সময় করের হার ও করের ধরণ বাড়ানোর কথা ছিল যা তারা সারা বিশ্বে ফেরি করে বেড়ায়। অথচ বর্তমান সময় তরা নিজেরা নিজেদের দেশে করের হার কমাচ্ছে। যা তাদের Frudent (কৃচ্ছতাসাধন) অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধ।

এইভাবেই তাদের শুধু অর্থনৈতিক নয়, আদর্শিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে যখন তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কাঠামোর দেউলিয়াত্ব বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ পাবে তখন জনগণ তা ছুঁড়ে ফেলে দিবে।

৪র্থ ধাপ : সংকটের প্রকৃত কারণের বিবরণ

পূঁজিবাদী অর্থনীতির ব্যর্থতার সত্যিকার কারণ : বর্তমান পুঁচিবাদী অর্থনীতির ব্যর্থতার কারণ আলোচনায় এই নিবন্ধে সমস্যার মূল কারণ হিসাবে ৪টি বিষয়কে চিহ্নিত করা হলো। সমস্যার ৪টি মূল কারণ হলো-

১। সুদ ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা
২। Complex Financial Product System & Practices
৩। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গঠন প্রক্রিয়া (Corporate Structure)
৪। Currency Standard

৪.১ সুদ ভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থা (Interest based economy & financial system):

পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো "সুদ"। পশ্চিমা অর্থনীতির বইগুলোতে বলা হয় সুদের কারণে মানুষ ব্যাংকে সঞ্চয় করে, যা মূলধন তৈরী করে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে ফলে অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। তাছাড়া বলা হয় যে ব্যাংক যেহেতু ব্যক্তি হতে বেশি তথ্যসমৃদ্ধ তারা বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পের মাঝে সবচেয়ে safe বা কম ঝুঁকি সম্পন্ন প্রকল্প খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারে এবং দেশের মূলধন সবচেয়ে বেশি কার্যকর খাতে খাটাতে পারে। অথচ তাদের সব দাবিই মিথ্যা-

ক.    বর্তমান সমস্যায় তারা কিভাবে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার মর্গেজ বাজারের বিপরীতে Complex financial products তৈরী এবং এসব Product এর বিপরীতে আবার Derivative তৈরী (অর্থাৎ ঋণের উপর ঋণ এবং তার উপর ঋণ থাকে ইংরেজীতে বলে turbo-debt তৈরী করে) কিভাবে এই ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৫০০ ট্রিলিয়ন ডলার বাজারে বিনিয়োগ করল? আর credit-rating প্রতিষ্ঠানগুলোও কি কারণে এই bubble investment এর ঝুঁকি সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে পারল না? তাহাল কিভাবে বলা যায় যে, সুদ ভিত্তিক ব্যাংক কম ঝুঁকিতে বিনিয়োগ করতে পারে? তাহলে কেন Northern Rock, Lehman brothers দেউলিয়া হলো। বাংলাদেশের ঋণ খেলাপীর ইতিহাস ও তাদের দাবির ভিত্তিহীনতার প্রমাণ। তাছাড়া সঠিক খাতে বিনিয়োগের অর্থ কি এই যে, আদমজীতে বিনিয়োগ না করে বসুন্ধরার মত শপিংমলে বিনিয়োগ করা?

খ.    তাদের আরো দাবি যে, সুদ ভিত্তিক ব্যবস্থার কারণে বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। এটিও পুরোপুরি মিথ্যা কথা। ধরুণ তাদের ব্যবস্থা মতে পূবালী ব্যাংক ঋণের উপর ১০% সুদ চার্জ করে, আর IFIC ব্যাংক চার্জ করে ১৫%। তাহলে অবশ্যই বর্তমান ব্যবস্থায় সবাই পূবালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিবে। কারণ এতে উৎপাদন খরচ কমবে। তাহলে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণের উপর ০% সুদ ধার্য করে, তবে! এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কি সম্ভব! প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

গ.    তাছাড়া বর্তমান ব্যবস্থায় আমানতকৃত অর্থের উপর প্রায় ২০% রিজার্ভ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। অন্যদিকে minimum deposit এর নামে কোটি কোটি টাকা অলস পড়ে থাকে। সুতরাং ব্যাংককে তার লাভ, আমানতকারীদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুদ ফেরৎ দেবার জন্য ঋণের উপর অধীক হারে সুদ চার্জ করে। তাছাড়া top management এর বোনাস ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যেহেতু বেশি বেশি মুনাফার সাথে জড়িত তাই তারা বেশি risky project এ বিনিয়োগ করার জন্য এবং আরো বেশি ঋণ বিক্রির জন্য নিচের কর্মচারীদের চাঁপ দেয়। ফলে প্রকৃত জমার বিপরীতে ঋণ আমানত সৃষ্টির মাধ্যমে ১ ডলার মূলধনের বিপরীতে কয়েকগুণ ঋণ প্রদান করা হয়। যেমন : আইন অনুযায়ী যেখানে ১ ডলার মূলধনের বিপরীতে ৩০ ডলার ঋণ প্রদান সম্ভব মার্কিন অর্থনীতিতে, তা বর্তমানে ৯৯ ডলার ঋণে এসে দাড়িয়েছে।

প্রকৃত অর্থে এটি হলো সাধারন মানুষ থেকে সুদের মূলা ঝুলিয়ে পূঁজিপতিদের টাকা হাতিয়ে নেবার উপকরণ।

৪.২  Complex Financial Products, system Practices:

বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ধ্বস একটি অনিবার্য বাস্তবাতা ছিল। কারণ লোভের বশবর্তী হওয়া এ পশ্চিমা সভ্যতা মূনাফার জন্য তাদের Financial System এ প্রচুর পরিমান Complex Financial Products, System ও Securities তৈরী করেছে যাতে বৈধ চুক্তির কোন শর্ত নেই।

- যেমন Margin Trading যেখানে মূলধনের কিছু অংশ ধার করে শেয়ার বা বন্ড ক্রয় করা যায়। শুধু পুঁজিপতিরাই Margin Trading এর সুযোগ পায়। ফলে শেয়ার বাজারে চাঙ্গা অবস্থায় তারা অধীকহারে মূনাফা অর্জন করতে পারে। আর দর পতন শুরু হলে তারা শেয়ার বা বন্ড বিক্রি বাড়িয়ে দেয় ফলে তাদের ক্ষতির পরিমান কমে যায় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

- Short Sale : যদি বাজারে দাম কমে তবে দাম কমার মূহুর্তে অন্যের কাছ থেকে শেয়ার ধার করে বিক্রি করে পরবর্তীতে দাম আরো কমলে তা আবার কিনে শেয়ারের মালিককে শেয়ার ফেরৎ দেয়া হবে। এর মাঝখানে এই কৌশলের মাধ্যম মূনাফা কিছু অর্জন সম্ভব। আশ্চর্য যা কোন ব্যক্তির নিজের নয় তা সে কিভাবে বিক্রি করে?

- Speculation & Hyping : কোন সাদা চামড়ার লোক এসে সংবাদ সম্মেলন করলো, যে তিনি অনেক পরিমান কোন বিশেষ বা একাধিক কোম্পানীর শেয়ার কিনবেন। পরের দিন media তা প্রচার করল। জনগণ মনে করল যেহেতু এই লোক এসব শেয়ার কিনছেন, তার মানে এসব শেয়ারের অবস্থা ভালো হবে, তারাও এই শেয়ার ক্রয় শুরু করেন ফলে বাজারে দাম বেড়ে যায়। পরবর্তীতে ঐলোক তার শেয়ারগুলী বিক্রি করে মুনাফা হাতিয়ে নেয় এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে সে বাজার ছাড়ে।

- Derivatives : এটি একটি জটিল ধরণের Financial Product যা ভবিষ্যত ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত। একটি উদাহরণের মাধ্যমে এর প্রভাব বুঝানো যেতে পারে। ২০০৭ এর শুরুতে তেলের উপর derivative সিকিউরিটির জন্য ব্যারেল প্রতি তেলের দাম বেড়ে দাড়ায় প্রায় ১৪৮ ডলার। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব ব্যবস্থা এর জন্য suffer করে। অথচ বর্তমান সংকটে এই বাজারের পতনের পর তেলের দাম ১/৩ ভাগে নেমে এসেছে।

৪.৩  Corporate Structure:

বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী অন্যতম আরেকটি কারণ হলো তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গঠণ প্রক্রিয়া। এই প্রতিষ্ঠান গঠণ হয় একটি চুক্তির মাঝে যাকে বলা হয় Article of Association Memorandum of Association বা কোম্পানী গঠণতন্ত্র। চুক্তি অনুযায়ী যারা শেয়ার কিনে তারা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং পরবর্তীতে তারা এ শেয়ার বাজারে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। এখানে শেয়ার ক্রেতা কোন ব্যক্তি হতে শেয়ার ক্রয়ের প্রস্তাব পাচ্ছে না, না শেয়ার বিক্রেতা শেয়ার ক্রেতা হতে বিক্রয়ের প্রস্তাব পাচ্ছে। কারণ এখানে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের লিখিত সংবিধান অনুযায়ী শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করছে কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব বা স্বীকৃতি এতে নেই। তাছাড়া আপনি যে কোম্পানীর শেয়ার কিনছেন হয়তবা একজন মদ্যপ, ব্যভিচারী ও সেই কোম্পানীর শেয়ার মালিক। এখানে এ বিষয়ে কোন বাচ বিচার নাই। তাছাড়া ক্রেতা বিক্রেতার সরাসরি চুক্তি অনুপস্থিত বলে যে কেউ যে কোন তথ্য দিয়ে বাজারের দামকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এক ধরণের জুয়াড়ি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দামের সাথে কোম্পানীর সত্যিকার উৎপাদন (Real Production) এর কোন সম্পর্ক নেই। যেমন- IPO ইস্যু করার পর বাজারে শেয়ারের দাম বাজারে যেভাবে একদিনেই ৮/১০ গুন বেড়ে যায়। সত্যিকার অর্থেই কোম্পানীর উৎপাদন ঐ পরিমান বাড়ে কি? বর্ধিত এই দামে শেয়ার ক্রেতারা যদি কোম্পানীর কাছে তাদের টাকা দাবী করে তাহলে কোম্পানী কি তা ফেরত দিবে পারবে?

তাছাড়া, কোম্পানীগুলোর দায় সীমাবদ্ধ অর্থাৎ কোম্পানীগুলো দেউলিয়া হলে ঋণদাতারা শুধু শেয়ার মূলধনের সমপরিমান অর্থ ফেরত পাবেন। আজ যদি একটি ব্যাংকের ঋণের পরিমান কয়েক হাজার কোটি টাকা হয় তারা দেউলিয়া হলে ঋণ দাতারা শুধু ঐ ব্যাংকের মূলধনের সমপরিমান (মাত্র ২৫০ কোটি টাকার মত) সর্বোচ্চ ফেরত পাবেন। অথচ তাদের নিয়মেই ক্ষুদ্র ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানের মালিক পুরো দায় বহন করবে। তাহলে এই বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কেন তাদের সমূদয় ঋণ বহন করবে না? আমরা দেখেছি Lehman Brothers দেউলিয়া হবার পর ৪৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিপরীতে মাত্র ২.৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

সত্যিকার অর্থে বড় বড় পূঁজিপতিদের রক্ষা করার জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের ঋণের টাকায় তারা ব্যবসা করবে অথচ ফেরত দেবার সময় পুরোটা ফেরত দিতে অস্বীকার করবে। এটিই হলো পশ্চিমা অর্থ ব্যবস্থার প্রতারণা।

৪.৪ Currency Standard:

বর্তমান সমস্যার সম্ভবত সবচে বড় কারণ হল বিশ্বব্যাপী ডলার ভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা। যার ফলে সারা বিশ্বের মুদ্রাস্ফিতি বেড়ে অসম্ভব হারে। ১৯৭১ সালে নিক্সন যখন স্বর্ণমান মুদ্রা ব্যবস্থা (Gold Standard) বাদ দেয় তখন এক আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ৩৫ ডলার যা বর্তমানে ৯৫০ ডলার।

স্বর্ণমান মুদ্রা ব্যবস্থা ব্যবস্থা বাদ দেবার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ভাবে ডলারকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন দেশ স্বর্ণের পরিবর্তে ডলার রিজার্ভ রেখে তাদের নিজস্ব মুদ্রা প্রচলন শুরু করে। ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিদ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করে। প্রতিবছর USA এর Federal Reserve System প্রায় ৮ থেকে ১২% হারে ডলার ছাপানো বৃদ্ধি করে। অথচ USA এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩-৪%। আর তাই বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। তাছাড়া এই ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেহেতু টাকার বিনিময়ে নোট, চেক, ড্রাফট, ইত্যাদি ইস্যু করে টাকার মত প্রচলনযোগ্য মুদ্রা বাজারে ছাড়তে পারে ফলে অর্থনৈতিক সংকট আরো মারাত্মক আকার ধারন করে। অথচ এই সব মুদ্রার বিপরীতে কোন প্রকৃত সম্পদ জমা নেই। আজ যদি সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মার্কিন যুক্টরাষ্ট্রের কাছে ডলার জমা দিয়ে দেয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এইসব দেশকে কিছুই ফেরত দিতে পারবে না।

এছাড়া পূঁজিবাদী এই সংকটের কারণগুলোর পেছনে কিছু আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে যা এই ব্যবস্থার পতন নিশ্চিত করছে, সেগুলি হল:

- আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যক্তিকে Economic Unit বা ব্যবসায়ের পণ্য হিসাবে গণ্য করা।
- অর্থনীতির মূল সমস্যা চিহ্নিত করণে ব্যর্থতা।
- Real Economy এর পাশাপাশি কৃতিম Financial Side of the Economy চালু করা।

ক. আদর্শিক দৃষ্টি : পূজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিটি ব্যক্তিকে Economic Unit বা অর্থনৈতিক একক হিসাবে বিবেচণা করে। আর তার সমস্ত প্রয়োজনকে ব্যবসায়ের পণ্য মনে করে। মুনাফা তাদের মূল লক্ষ্য। তথাকথিত ব্যবসায়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা তাদের মোহনীয় এক বুলিমাত্র। আর মুনাফা অর্জনের উপায় হিসাবে যে কোন প্রথাই সিদ্ধ যা বাজার ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবে। আর অর্থনীতির basic বইগুলোতে পড়ানো হয় অর্থনীতি নীতিস্বাশ্র নিয়ে আলোচনা করেনা, তা নীতিবিজ্ঞানের কাজ। তাই মানুষের দয়া, মায়া ভালভাসা, মৌলিক চাহিদা যেমন- বাসস্থান এসবই ব্যবসায়ের পণ্য। প্রয়োজন হলে নতুন চাহিদা তৈরী করে ব্যবসা করতে হবে (যেমন- আপনি যে কোন সময় মরতে পারেন, আপনার Family-র কি হবে ইত্যাদি বলে, আপনাকে চিন্তাগ্রস্ত করে বীমা করানো)।

খ. অর্থনীতির মূল সমস্যা চিহ্নিত করণের ব্যার্থতা : পশ্চিমা পুঁজিবাদী সভ্যতা অর্থনীতি সম্পদের সল্পতাকে সবচে বড় সমস্যা মনে করে। তারা মনে করে তাদের প্রভু পৃথিবীতে তাদের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কম সম্পদ রেখেছেন। আর মানুষদের কে দিয়েছেন অসীম অভাব এবং প্রতিটি অভাবই পূরণ করতে হবে। কারো যদি জুয়া খেলায় তাগিদ হয় তার জন্য Casino পর্যন্ত বানাতে হবে। আর বাজার ব্যবস্থা নির্ধারণ করবে কার প্রয়োজন পূরণ করার জন্য দেশের এই সীমিত সম্পদ ব্যয় করতে হবে। যে ব্যক্তি তার চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দিতে পারবেন তাই পূরণ করা হবে, চাহিদাটি যতই অদ্ভদ হউক না কেন। ধরুণ কেউ উস্কি কাটবে। তার জন্য সে যদি দাম দিতে পারে, তবে বাজার ব্যবস্থায় তাকে তা সরবরাহ নিশ্চিত করবে। মানুষের প্রয়োজনের কোন অগ্রাধিকার নেই। সাধারন মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এগুলো উৎপাদনের চাইতে যদি ফ্যাশন বা বিনোদনের জন্য সিনেমা তৈরী বেশি বেশি লাভজনক হয় তবে, তাই উৎপাদন করতে হবে। আর যেহেতু Service sector এর ক্ষেত্রে উৎপাদনের খরচ কম ও লাভ বেশি তাই আস্তে আস্তে পূঁজিবাদী অর্থনীতিগুলো Manufacturing থেকে service sector এ transform হতে শুরু করল। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৮০% service sector এবং service sector এর ক্ষেত্রে financial service industry হল সবচেয়ে বড়।

গ. Real economy এর পাশাপাশি কৃত্রিম financial side of the economy চালু করা : ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪% লোকের নিজস্ব বাড়ী ছিল, ১৯৬০ সালে তা হয়েছে ৬২% আর বর্তমানে প্রায় ৭০% এর বেশি লোক বাড়ীর মালিক। আর এই বাড়ীর মালিকানা পাবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণ নিয়ে। বর্তমানে প্রায় ২০% USA-র লোকের সম্পত্তি হতে দায় বেশি। আর অধিকাংশ দায়ই দীর্ঘমেয়াদী যা পরিশোধ করতে হয়ত অনেকেরই সারা জীবন পেরিয়ে যায়। আমরা যদি বৃটেনের দিকে তাকাই তবে দেখব বৃটেনের GDP হল ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার অথচ বৃটেনের জাতীয় ঋণ (National debt) হল ১১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, USA এর ক্ষেত্রে GDP ১৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার, National debt ১২.৮ ট্রিলিয়ন, Service based Industry এবং বিলাসজাত পণ্য ও সেবার ব্যবহারের কারণে তাদের এই অবস্থা। সম্পদ বৃদ্ধির জন্য তারা বিভিন্ন ধরণের পুঁজি বাজারের উদ্ভব ঘটালো। অথচ শুধু Real Sector এ আমরা যা সরাসরি ভোগ করতে পারি তা উৎপাদন ও বন্টন হয়, financial sector এ হয় জুয়াখেলা। এটি কখনোই real sector এর মত কোন ভোগ করার কিছু তৈরী করতে পারে না। অথচ পুরো বিশ্বে real sector এর তুলনায় financial sector কয়েকগুণ বড়। বিশ্বব্যাপী বন্ড মার্কেটের সাইজ হল ৪৫ ট্রিলিয়ন, Stock market এর মোট সাইজ হল ৫১ ট্রিলিয়ন এবং এইসব সিকিউরিটিজের উপর নির্ভর করে গঠিত ডেরিভেটিবস বাজারের সাইজ হল ৫০০ ট্রিলিয়ন, যা মার্কিন প্রকৃত অর্থনীতির ৩০ গুন আর বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ১২ গুণ। অর্থাৎ পুরো বিশ্বকে ১২ বার বিক্রয় করা হলেও এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়।

৫ম ধাপ : ইসলামি সমাধান

খিলাফতের সমাধান :

বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝিতে finance বা অর্থায়নের উদ্ভাবন পশ্চিমা পূঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার তথাকথিত লালসার অর্থনীতিকে তার অনিবার্য পরিণতির দিকে ধাবিত করেছে। আজ পশ্চিমা পূঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা মৃত্যুশয্যায় শায়িত। আর এই লোভ লালসার অর্থনীতির বিপক্ষে একমাত্র টেকসই সমাধার খিলাফতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যখন খিলাফত ব্যবস্থা ফিরে আসেব তখন খিলাফত অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাবে শরীয়াভিত্তিক নীতিমালা এবং এ নীতিমালার আঙ্গিকে প্রণীত বিভিন্ন শরীঈ নিয়ম কানুনের মাধ্যমে। আর এই শরীঈ নিয়মকানুনই পরবর্তীতে সমাজের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য পূর্ণাঙ্গ ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। বর্তমান পূঁজিবাদী সমাজের ভয়াবহ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব, ইসলামী অর্থনীতিতে পূরোপুরি অনুপস্থিত কারণ ইসলাম অর্থনৈতিক সমস্যাকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করে এবং সমাধাণের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী এবং একমাত্র টেকসই ব্যাপকতর ব্যবস্থা প্রণয়ন করে।

মূলনীতিমালা:

পূঁজিবাদ যেখানে অর্থনৈতিক সমস্যার মূল হিসাবে অসীম অভাব এর বিপরীতে সীমিত সম্পদ কে দায়ী করছে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের utility maximization কে ultimate লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারণ করছে; ইসলাম তা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূলে রয়েছে তিনটি নীতিমালা- ক. সম্পত্তির মালিকানা, খ. সম্পত্তি ব্যবহার, গ. সম্পত্তির বন্টন ব্যবস্থা।

এই তিনটি মূলনীতির ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের মধ্যে অর্থনীতিক লেনদেনের বিভিন্ন নিয়মকানুন নির্ধারণ করে দেয়। নিম্নে আমরা খিলাফতের অর্থব্যবস্থার কিছু উল্লেখযোগ্য নিয়মকানুন আলোচনা করব। এর মাধ্যমে খিলাফত পশ্চিমা অর্থব্যবস্থার মত সমস্যাগ্রস্ততা হতে নিজেকে রক্ষা করবে, উপরন্ত অর্থনেতিক কর্মকান্ডের মাঝে গতির সঞ্চার করবে, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

প্রথমত : ইসলাম মানুষকে অর্থনৈতিক একক বা ব্যবসায়ের নিষয় মনে করেনা

যেহেতু ইসলাম মানুষকে অর্থনৈতিক একক বা ব্যবসায়ের বিষয় মনে করেনা, তাই ইসলাম মানুষের সকল সমস্যাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করা বা সব কিছু লাভ ক্ষতির দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করা নিষেধ করে। পূঁজিবাদ যেমন মানুষের বাসস্থানের বিষয়কে নিয়ে ব্যবসা করে বর্তমান পরিস্থিতি ডেকে এনেছে, ইসলাম এর পরিবর্তে কিছু বিষয়কে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসাবে সুনির্ধারিত করেছে।

রাসুল (সা) বলেন- "আদম সন্তানের তিনটি অধিকার রয়েছে, বসবাসের জন্য একটি বাড়ী, পরিধানের জন্য এক টুকরা কাপড় এবং আহারের জন্য এক টুকরা রুটি" (তিরমিজী)।

খিলাফত ব্যবস্থার জন্য এটি বাধ্যতামূলক যে, খলীফা দেশের সমস্ত জনগনের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে। এটি খিলাফতের অর্থনীতির সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাছাড়া ইসলাম যেহেতু মানুষের জৈবিক চাহিদা ও প্রবৃত্তিকে বিবেচনা করে, তাই ইসলাম এসমস্ত জৈবিক চাহিদা ও প্রবৃত্তি পূরণের বিস্তারিত নীতিমালা প্রণয়ন করে। এরই অংশ হিসেবে ইসলাম মানুষকে সম্পত্তি অর্জনের বৈধ ও অবৈধ উপায় সুনির্ধারিত করে দেয়।

সম্পত্তির অর্জনের বৈধ ও অবৈধ উপায়সমূহ : ইসলাম কাজের মাধ্যমে সম্পত্তি উপার্জনের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মাঝে আছে : পতিত জমি চাষাবাদ, ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে থাকা সম্পদ আহরণ, শিকার, দালালী ও কমিশন এজেন্সি, বৈধ ব্যবসা, যৌথ চাষাবাদ (Shared Cropping) ও শ্রমের মাধ্যমে। তাছাড়াও উত্তারাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ, রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদ, বিনা শ্রমে অর্জিত সম্পদ উপার্জণের বৈধ উপায় হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতারমত সম্পদের লালসার জন্য যে কোন উপায়ে সম্পদ অর্জন ইসলাম নিষেধ করেছে।

ইসলাম শুধু সম্পত্তি উপার্জনের বৈধ উপায়ই বলে দেয়নি, পাশাপাশি ইসলাম সম্পত্তি অর্জনের অবৈধ উপায়ও বলে দিয়েছে। যেমন- জুয়া খেলা, সুদ, অপরাধ বা প্রতারণার মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জন, একচেটিয়া ব্যবসা ও মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া। এর মাঝে একচেটিয়া ব্যবসা ও মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়া এই দু'টি বিষয় সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করা হলো।

একচেটিয়া ব্যবসা : ইসলাম কোন ব্যাক্তিকে একটি ব্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনকে সম্পূর্ণ রূপে নিষেধ করেছে। সাদ ইবনে আল-মুসাঈব, মুয়াম্মার ইবনে আবদুল্লাহ আল-আদওয়াই হতে বর্ণনা করেন যে রাসুল (সা) বলেন "অপরাধী ছাড়া আর কেহই বাজারকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে আনেনা"। (বুখারী)

উল্লেখ্য যে, একচেটিয়া হিসাবে গণ্য হতে হলে শর্ত হল এই যে, ক্রেতারা ঐ প্রয়োজনীয় দ্রব্যটি অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রয় করতে পারছেনা। এখন সে এটি নিজে উৎপাদন করুক বা ক্রয় করে জমা করুক। একজন একচেটিয়া ব্যবসায়ী কোন পণ্য জমা করে তার ইচ্ছামাফিক পণ্যের দাম চার্জ করে এবং ক্রেতাকে বাধ্য করে ঐ দামে পণ্যটি ক্রয় করার কারণ ঐপণ্যটি অন্য কোথায়ও পওয়া যাবেনা। মাকাল ইবনে ইয়াছার হইতে বর্ণিত রাসুল (স) বলেন, যে ব্যক্তি মুসলামনদের কাছ থেকে ছড়ামূল্য আদায় করে আর এর ফলে তার সম্পত্তির পরিমান বেড়ে যায়, আল্লাহ তাকে বিচারের দিন জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলাকে সুনির্ধারিত করে রাখেন।

মূল্য নির্ধারন : আবু সাঈদ হতে বর্ণিত রাসুল (সা) বলেন লেনদেন হবে ক্রেতা বিক্রেতার সম্মতিতে (ইবনে মাজা) আর তাই ইসলাম ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ হারাম করেছেন। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত "রাসুল (সা) এর সময় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, সুতরাং সাহাবীরা মূল্য নির্ধারণের জন্য বললেন। রাসুল (সা) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি রিজিক দাতা আর তিনিই মূল্য নির্ধারক। তিনি আরো বললেন, আমি আশা করি, আমি আল্লাহ (সুত্তার) সম্মুখে দাড়াই এমতাবস্থায় যে, কেউই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না, যে আমি তাদের প্রতি অন্যায় করেছি না রক্তের বিষয়ে না সম্পত্তির বিষয়ে (ইমাম আহমদ)। এমনকি দুর্ভিক্ষের বছরও ওমর ইবনুল খাত্তাব হিজাজে মূল্য নির্ধারণ করেনি বরং মিশর ও সিরিয়া হতে পণ্য দ্রব্য হিজাজে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত : ইসলাম কাগজী মুদ্রা ব্যবস্থার পরিবর্তে দ্বি-ধাতু মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলন করে

ইসলামি খিলাফতের অর্থব্যবস্থা অর্থ প্রচলন করবে স্বর্ণ ও রোপ্য এই দ্বি-ধাতুকে বাইতুল মালে জমা রাখার মাধ্যমে। ইসলাম অর্থের একক হিসাবে স্বর্ণ ও রোপ্যকেই শুধু গ্রহণ করবে এবং বর্তমান কাগুজে মুদ্রা ডলারকে ভিত্তি করে অর্থ প্রচলণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করবে।

কারণ রাসুল (সা) যখন যাকাত সংগ্রহ করতেন বা কোন ট্যাক্স ধার্য্যকরতেন এবং কারোর উপর জরিমানা আরোপ করতেন, এসবই তিনি পরিমাপ করতেন স্বর্ণ ও রোপ্যের ভিত্তিতে। যার ফলে খিলাফত ইচ্ছামত কাগজ ছাপিয়ে দেশে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করবেনা বা করতে পারবেনা। কারণ যে কোন পরিমান মুদ্রা প্রচলন এর বিপরীতে বাইতুল মালকে স্বর্ণ বা রোপ্য জমা রাখতে হবে এবং জনগণ যদি চায় যে কোন সময় কাগুজে মুদ্রা জমা দিয়ে স্বর্ণ বা রৌপ্য উত্তোলণ করে নিতে পারবে। অর্থাৎ খিলাফত ব্যবস্থায় যে কোন পরিমান অর্থ সরবরাহ কোন প্রকৃত সম্পত্তির বিপরীত হতে হবে। বর্তমানে আমেরিকা যে ডলার ছাঁপছে তার বিপরীতে কোন প্রকৃত সম্পত্তিই জামানত নেই, এটি শুধুই ফাঁকা। জনগণের হাতে যে ডলার আছে, তা যদি তারা জমা দিতে চায় এই পূঁজিবাদী মার্কিন সরকার এর বিপরীতে কোন প্রকৃত সম্পত্তিই ফেরত দিতে পারবেনা।

তৃতীয়ত : ইসলামে কোম্পানী গঠন প্রক্রিয়া পূঁজিবাদী প্রক্রিয়া হতে সম্পুর্ণ ভিন্ন

ইসলাম বর্তমান পূঁজিবাদী কোম্পানী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। রাসুল (সা) বলেন, যে ব্যক্তি কারো থেকে ঋণ গ্রহণ করে এই উদ্দেশ্যে যে, সে তার সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে দিবেনা সে যেন জাহান্নামে তার জন্য স্থান নির্ধারণ করে নেয়।"

ইসলাম তাই বর্তমান পূঁজিবাদী কোম্পানী গঠন প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ ঘোষণা করবে। ইসলামে কোম্পানী ব্যবস্থা হল একটি চুক্তির ভিত্তিক বিষয় এবং এই চুক্তির জন্য আইনসিদ্ধ প্রস্তাব ও স্বীকৃতি থাকতে হবে। আর এই প্রস্তাব ও স্বীকৃতির ভিত্তি হবে হবে কোন সম্পদ বা এমন কিছু যা ব্যবহার করা যায়। তাছাড়াও তারা কি বিষয়ের ব্যবসা করবেন, কিভাবে লাভ-ক্ষতি বন্টন হবে এসব পূর্ণাঙ্গ লিপিবদ্ধ থাকবে। ইসলামে ৫ ধরণের কোম্পানী রয়েছে- যেমন : আল ইনাম (company of Equals), আল-আবদান (Company of Bodies), মুদারাবা (Company of body & capital), সুনামের ভিত্তিতে ব্যবসা (Company of Reputations) এবং মুফাওয়াদা।

আর তাই ইসলাম এ ধরণের কোম্পানী গঠণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূঁজিবাতিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার পরিবর্তে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। এই ধরণের ব্যবসা সরাসরি প্রকৃত অর্থনীতির সাথে জড়িত বলে বর্তমান পূঁজিবাদী লিমিটেড কোম্পানীর জুড়ার আসর শেয়ার বাজার বা বন্ড বাজার এর প্রয়োজনীয়তাকে খিলাফত পূরোপূরো বিলুপ্ত করবে। তাছাড়া এই সব ব্যবসার মাধ্যমে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয় বরং কোন ব্যাক্তি যিনি প্রতিষ্ঠানের মালিক সে (তারা) সরাসরি নিজের দায়ে পুরোপুরি পরিশোধের অঙ্গীকারসহ গ্রহণ করবে।

চতুর্থ : খিলাফত বর্তমান অর্থনীতির Financial Sector কে পুরোপুরি বিলুপ্ত করবে এবং অর্থনীতি হবে শুধু financial sector এর ভিত্তিতে

যখন খিলাফত আসবে তখন বর্তমান financial sector কে পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে। কারণ financial sector এর মাধ্যমে কোন সত্যিকার উৎপাদণ হয় না। যমুনা ওয়েল কোম্পানীর একটি শেয়ার ১০ টাকায় ইস্যু করলেও শেয়ার বাজারে প্রথম দিন এই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে ৭৮০ টাকায়। সত্যিকার অর্থে একদিনে প্রায় ৭৮ গুণ দাম বৃদ্ধি প্রকৃত অর্থনীতিতে কোন উৎপাদন বাড়ায়নি। বর্তমানে ব্যাংক ও শেয়ার বাজার ব্যবস্থার কারণে মানুষ শেয়ার অবস্থা ভালো থাকলে ব্যাংক হতে টাকা তুলে শেয়ার বাজারে অর্থ বিনিয়োগ করে আর শেয়ার বাজারের অবস্থা খারাপ থাকলে শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। ফলে প্রকৃত কোন উৎপাদন হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন ধরণের মুনাফা লোভী কৌশল যেমন : ধারের ক্রয়, ডেরিভেটিবিস এর মাধ্যমে অর্জিত মুনাফার পেছনে কোন প্রকার প্রকৃত উৎপাদন নাই। পুরোটাই লালসার জুড়াবাজি।

তাছাড়া এই financial sector এর সমস্ত প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, হেজফান্ড, লিজিং ফার্ম, বিনিয়োগ ব্যাংক, সিকিউরিটি হাউস, পেনশন ফান্ড কোম্পানী, মিউচুয়্যাল ফান্ড প্রতিষ্ঠান এরা সবাই সুদের বিনিময়ে জনগণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। আর তারা ঋণ বিক্রি করে অধিক মুনাফা ভোগ করে এবং উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়। যার জন্য সাধারণ মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। খিলাফত আসলে জনগণ বাইতুল মালে তাদের অর্থ জমাকরতে পারবে। কিন্তু এর জন্য সুদ দেয়াতো দুরে থাক বরং তাদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে চার্জ রাখা হবে। ফলে ১০০ টাকা জমা রাখলে আগামী বছর এটি হবে ধরুণ ৯৫ টাকা। আর তাই খিলাফতের অর্থনীতিতে জনগণের যেহেতু বাইতুলমালে জমা রাখার জন্য কোন প্রকার সুবিধা পাচ্ছে না। ফলে অতিরিক্ত অর্থের ব্যবহার তিনটি : ক. বেশি বেশি করে পণ্য দ্রব্য ক্রয় বা (consumption) বাড়ানো, খ. এই অর্থ real economy তে বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করা। যেমনঃ আল-ইনাম, আল-আবদান, মুদারাবা, ওযুহ বা মুফাওয়াদার মত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করা এবং গ. অথবা অন্যকে ব্যবসা করার জন্য ঋণ দেয়া। ফলে অর্থনীতিতে প্রচুর পরিমান উদ্যোক্ত তৈরী হবে এবং প্রকৃত উপাদন, বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে খলীফা যেহেতু জনগণকে তার জীবিকা নির্বাহের জন্য নুন্যতম ব্যবস্থা করতে বাধ্য, তাই জনগণ তার মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য কোন প্রকার ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন পড়বেনা। শেয়ার বাজার না থাকার কারণে ব্যবসায়ের জন্য অর্থ প্রয়োজন পড়লে তা নতুন অংশীদার এনে অর্থায়ন করতে পারবে। তাছাড়া বাইতুল মালের ফান্ড হতেও ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ গ্রহণ করা যাবে। আর এসব ঋণ গ্রহণের সময় সুদ থাকবেনা বলে, উৎপাদণ খরচ অনেক কমে যাবে।

এরই সাথে সাথে খিলাফত ব্যবস্থায় যেহেতু বর্তমান ব্যবস্থার মত বিভিন্ন প্রকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর থাকছেনা এর ফলে কোন ব্যাক্তি বা উপার্জন করবে তাইযে ব্যবহার, বিনিয়োগ বা ভোগ করতে পারে। পশ্চিমা দেশে, VAT, Federal tax, state tax, municipal tax এর সাথে সাথে বিভিন্ন ধরণের income tax দেবার ফলে একজন ব্যাক্তি ১০০ টাকা উপার্জন করলে প্রায় ৪০-৫০ টাকা এসব খাতে চলে যায় এবং তার কাছে বাকী থাকে মাত্র ৫৫-৬০ টাকা। ফলে পশ্চিমা অর্থনীতিতে একজন ব্যাক্তি যা উপার্জন করছে তার পুরোটাই অর্থনীতিতে ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। সে সমস্যা খিলাফত ব্যবস্থায় থাকছে না।

তাছাড়া পশ্চিমা বিশ্বে একজন ব্যাক্তি যেহেতু তার সমস্ত প্রকার অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ, সঞ্চয় এবং ভোগ সুদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, ফলে তাদের জীবন যাত্রার ব্যায় অসম্ভব হারে বেড়ে যায়। আর তাই আগামী খিলাফাত একদিকে সুদ ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থা বন্ধ করে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং অন্যদিকে মানুষের উপর বিভিন্ন নামে ট্যাক্স চার্জ না করে জনগণের consumptions এর সামর্থ্যকে বাড়াবে। ফলে খিলাফত অর্থনীতি হবে একমাত্র অর্থনীতি যা বিনিয়োগ উৎসায়িত করবে, উৎপাদন বাড়াবে, প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরী করবে, কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং সর্বোপুরি ভোগ (consumption) বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল রাখবে। আর এটিই হবে একমাত্র টেকসই ও সুপারপাওয়ার অর্থনীতি।

৬ষ্ঠ ধাপ : বর্তমান সংকটে আমাদের ভূমিকা- (আবার আসবে খিলাফত)

বিশ্বব্যাপী পূঁজিবাদী অর্থনীতির দেউলিয়াত্ব এর আদর্শিক দেউলিয়াত্বকে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করেছে, BBC-তে Washington Post এর Economic Editor-কে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছে Is the American Capitalism Dead? সে উত্তরে বলেছে, not really just tell me, what is the alternative we have? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সারকোজি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধানদের পূঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থাকে পাল্টাতে বলেছেন। বুশ ও ব্রাউনের শতশত বিলিয়ন ডলার উদ্ধার তৎপরতার পর, পূঁজি বাজার অব্যাহত পতন পশ্চিমা বিশ্বের সকল মানুষকে আক্রান্ত করেছে। রাশিয়ার একদিনে ৭০,০০০ শ্রমিক ছাঁটাই, শতশত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন, ইউরোপের ১২% এর মত বেকারত্বের হার, ১ বছরে মার্কিন অর্থনীতির একতৃতীয়াংশ পতন তাদের অবদা স্বাধীন অর্থব্যবস্থার প্রবর্তকদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিয়েছে।

পূঁজিবাদীরা তাদের অর্থ ব্যবস্থা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আর যে সভ্যতা তাদের বিশ্বাসের ব্যাপারে সন্দিহান তারা অবশ্যই অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পশ্চিমারা তাদের মুক্তবাজার অর্থনীতির উচিত জবাব পাচ্ছে।

আর তাই আমাদের উচিত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সুদ বিহীন, স্বর্ণমান মুদ্রা ব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরী করা। জনমত তৈরী করা সেই অর্থব্যবস্থার পক্ষে যে অর্থ ব্যবস্থা ১৩০০ বছরের অধিকাল কোন উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংকট ব্যাতিত বিশ্ব অর্থনীতেকে রাজত্ব করেছে। আজ সারা বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে আছে। আমরা যারা খিলাফত পুনঃ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আন্দোলনরত, তাদের জন্য সময় এসেছে বিশ্বের তাকিয়ে থাকা মানুষের কাছে পশ্চিমা অর্থব্যবস্থার ভন্ডামী ও লালসার আগ্রাসণকে উন্মোচন করা। যাতে মানুষ পশ্চিমাজীবন ব্যবস্থাকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে এবং খিলাফত ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে। খিলাফত ফিরিয়ে আনার জন্য আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কবুল করুন। আমিন।

"নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সমস্ত বিষয়ের উপর, যদিও বেশির ভাগ মানুষই এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।" [সুরা ইউসুফ : ২১]


প্রথম ড্রাফট
মোঃ আল মামুন।
৩০ শাওয়াল, ১৪২৯
৩১ অক্টোবর, ২০০৮ইং



No comments:

Post a Comment