নয়াদিল্লিঃ কয়েকদিন আগেই শহরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু৷ তিনি বলেছিলেন দলে শুধু ইয়েসম্যান-ই পছন্দ মমতার৷এবার কার্যত নজিরবিহীনভাবে একধাপ সুর চড়িয়ে মমতার কড়া সমালোচনা করে তাঁকে ই-মেল পাঠালেন তিনি৷ মমতা খামখেয়ালি আচরণ করছেন বলে অভিযোগ জানিয়ে অতীতে তাঁর প্রশংসায় সরব হওয়া কাটজু বলেছেন, সবাই আপনাকে ভয় পায়৷ খোলা মনে পরামর্শ দিতে পারছেন না মন্ত্রী-আমলারাও৷ আচরণ না বদলালে এবং আরও সহিষ্ণু না হলে মমতা  বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না বলেও তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই প্রাক্তন বিচারপতি৷ সাম্প্রতিক অতীতে যাঁরা নানা সময় প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর রোষে পড়ে তাঁর 'অসহিষ্ণুতার শিকার' হয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরি, তানিয়া ভরদ্বাজের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও অভিমত জানিয়েছেন কাটজু৷ এও বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভুল স্বীকার করে দময়ন্তী সেনকে আগের পদে ফেরানো উচিত বলেও ই মেল বার্তায় উল্লেখ করেছেন তিনি৷

ই মেলটি এইরকম,
প্রিয় মমতা, 
আপনি জানেন, বাল ঠাকরের শেষকৃত্যের দিনে গোটা মুম্বই যেভাবে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল, ফেসবুকে আপত্তি জানানোয় এক তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়৷ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী সেই পুলিশকর্তাকে সাসপেন্ডের নির্দেশ দিয়েছেন৷ 

যে পুলিশকর্তা যাদবপুরের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র এবং শিলাদিত্য চৌধুরীর গ্রেফতারের নির্দেশ দেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আপনাকে একই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব৷ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি আপনার ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত৷ দময়ন্তী সেনকে যেরকম অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে, সেজন্য তাঁর কাছেও আপনার প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত৷ মানুষমাত্রেই ভুল হয়৷ কিন্তু, যিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে নেন, তিনিই আসল ভদ্রলোক৷ একটি ইংরেজি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তানিয়া ভরদ্বাজকে আপনি যেভাবে অপমানিত করেছেন, তাঁর কাছেও আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত৷  

আমি বলতে পারি, ক্ষমা চেয়ে নিলে শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের মানুষের আপনার প্রতি সম্মান অনেক বেড়ে যাবে৷ 

কলকাতা সফরে গিয়ে দেখেছি, মন্ত্রী ও আমলারা আপনার সামনে খোলা মনে কথা বলতে ভয় পান৷ আপনার খামখেয়ালি আচরণে তাঁরা আতঙ্কিত৷ এককথায় বলতে পারি, রাজ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ আচরণ না বদলালে এবং আরও সহিষ্ণু না হলে আপনি বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না৷ 

অর্থশাস্ত্রে কৌটিল্য বলেছেন, সফল শাসক তিনিই, যিনি ভাল পরামর্শদাতা নিয়োগ করেন এবং তাঁদের পরামর্শ শোনেন৷ পরামর্শ শুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী নেবেন৷ তবে পরামর্শদাতাদের নির্ভয়ে মতপ্রকাশের পরিবেশ থাকা উচিত৷ এপ্রসঙ্গে আমি বলতে পারি, দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার পটেল তাঁর সচিবদের বলেছিলেন, তাঁরা যেন নির্ভয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেন৷ সেই মত, তাঁর মতামতের বিরোধী হলেও তাতে তিনি কিছু মনে করবেন না৷ কারণ মনের কথা না বললে, সেই পরামর্শ কাজে আসবে না৷ আপনারও এভাবেই চলা উচিত৷ 

এখনও দেরি হয়নি৷ আমার কথা শুনে আপনি আচরণ পাল্টান৷ আমি আপনার শুভাকাঙ্খী৷ আপনার মনে থাকবে, একসময় আমিও আপনার প্রশংসা করেছি৷ কিন্তু, সম্প্রতি আপনি ক্রমাগত অসিহষ্ণু ও খামখেয়ালি হয়ে উঠেছেন৷ এতে আপনিই বড়সড় সমস্যায় পড়বেন৷ 

                                                                                     জাস্টিস কাটজু

এদিকে নাম না করে কাটজুর সমালোচনার জবাবে পাল্টা কটাক্ষ-বিদ্রূপ করেছেন মমতাও৷ কাটজু প্রসঙ্গ এড়িয়ে তাঁর মন্তব্য, কারও কোনও চিঠি পাইনি৷ পাশাপাশি তিনি ফের আক্রমণ করেছেন এবিপি আনন্দকেও৷ নিন্দুকদের সমালোচনা করে তিনি এও বলেছেন, 'রাজা চলে বাজার, কুত্তা ভোকে হাজার', যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, রাজা যাচ্ছেন বাজার, পিছনে কুকুর ডাকছে হাজার! 
একদিকে ফের কাটজুর কড়া সমালোচনা, অন্যদিকে নানা প্রশ্নে বিরোধীদের মুখ খোলার জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর এহেন প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সব সমালোচককেই একসঙ্গে জবাব দিলেন তিনি? 
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, শুভাকাঙ্খীরাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন! রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরির প্রতিক্রিয়া, অসহিষ্ণু মমতা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সির কটাক্ষ, বেপরোয়া নীতিতে চলছে সরকার৷