Thursday, November 29, 2012

পুঁজিলগ্নির, শহরীকরণ ও শিল্পায়নের অন্ধ দৌড়ের বিরুদ্ধে সিঙ্গুরের গণবিদ্রোহ এখন গ্রীক ট্রাজেডির পথে।রাজনীতি তুন্গে,কিন্তু জমি ও আজীবিকা থেকে উত্খাত চাষিদের দুর্ভাগ্যের শরিক হতে রাজি নয় কেউ-ই, সেই সুশীল সমাজ, যা একদা সিংহভাগে দাঁড়িয়ে সিঙ্গুরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেটি এখন নিজেই প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সন্গে অন্গাগী জড়িত।রাজ্য রাজনীতিতে বাম জমানার অবসান হয়েছে, অথচ সিঙ্গুরের ভাগ্য পরিবর্তনের সংকেত নেই দুর দিগন্তেও।মা মাটি মানুষের সরকার জমিহারাদের জমি ফেরত দিতে ব্যর্থ।বিকল্প পথেরও সন্ধান নেই । পলাশ বিশ্বাস

পুঁজিলগ্নির, শহরীকরণ ও শিল্পায়নের অন্ধ দৌড়ের বিরুদ্ধে সিঙ্গুরের গণবিদ্রোহ এখন গ্রীক ট্রাজেডির পথে।রাজনীতি তুন্গে,কিন্তু জমি ও আজীবিকা থেকে উত্খাত চাষিদের দুর্ভাগ্যের শরিক হতে রাজি নয় কেউ-ই, সেই সুশীল সমাজ, যা একদা সিংহভাগে দাঁড়িয়ে  সিঙ্গুরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেটি এখন নিজেই প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সন্গে অন্গাগী জড়িত।রাজ্য রাজনীতিতে বাম জমানার অবসান হয়েছে, অথচ  সিঙ্গুরের ভাগ্য পরিবর্তনের সংকেত নেই দুর দিগন্তেও।মা মাটি মানুষের সরকার জমিহারাদের জমি ফেরত দিতে ব্যর্থ।বিকল্প পথেরও সন্ধান নেই 

পলাশ বিশ্বাস



পুঁজিলগ্নির, শহরীকরণ ও শিল্পায়নের অন্ধ দৌড়ের বিরুদ্ধে সিঙ্গুরের গণবিদ্রোহ এখন গ্রীক ট্রাজেডির পথে।রাজনীতি তুন্গে,কিন্তু জমি ও আজীবিকা থেকে উত্খাত চাষিদের দুর্ভাগ্যের শরিক হতে রাজি নয় কেউ-ই, সেই সুশীল সমাজ, যা একদা সিংহভাগে দাঁড়িয়ে  সিঙ্গুরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেটি এখন নিজেই প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সন্গে অন্গাগী জড়িত।রাজ্য রাজনীতিতে বাম জমানার অবসান হয়েছে, অথচ  সিঙ্গুরের ভাগ্য পরিবর্তনের সংকেত নেই দুর দিগন্তেও।মা মাটি মানুষের সরকার জমিহারাদের জমি ফেরত দিতে ব্যর্থমবিকল্প পথেরও সন্ধান নেই

 উল্লেখ্য টাটর অবস্থান আজও পালটায়নি  টাটা মোটরস পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রকল্প স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। সিঙ্গুরের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতির বিষয়টি রাজ্য সরকার পুরোপুরি না জানানোয় টাটা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি।

কৃষিমন্ত্রী পদথেকে অপসৃত জমি আন্দোলনের নেতা মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে মমতার সিঙ্গুর সফরের মধ্যেই রাজনীতি থেকে অবসর ঘো৤মা করেছেন

টাটার ন্যানো সিঙ্গুরের কারখানা থেকে বেরিয়ে সমস্ত উন্নয়নশীল দেশসমূহের বাজার দখল করবে, সিঙ্গুরের একাংশ মানুষ এই স্বপ্নে বিশ্বাস করেছিল কিন্তু বাকী জনতার আস্থা অর্জন না করেই জমি জবরদখল কারার অগণতান্ত্রিক পথে হেঁটেছিল  সর্বহারার সরকার।জনগণের রায়ই নীতি নির্ধারক, জনগণকে নিয়েই রাজনীতি, শাষন ক্ষমতা, এই বুনিয়াদী মার্ক্সবাদী দর্শনের সীমারেখা লঙঘন করেছিল বামপন্থীরা, তাঁদের মূল্য দিয়ে শিখতে হয়েছে।অথচ গণবিদ্রোহের ব্যাঘ্রপিঠে সওয়ার অগ্নিকন্যা ইতিহাসের পাঠ বেমালূম ভূলে একই পথে সিঙ্গুরের অনাস্থা হাসিল করেছেন ইতিমধ্যে।ইতিমধ্যে গন্গা দিয়ে বয়ে গেচে অনেক জল।ন্যানো এখন গুজরাতের গর্ব। উত্তরাখন্ড থেকেও বেরোচ্ছে ন্যানো।ইতিমধ্যে জমির চরিত্র বদলে গেছে।ঔ জমি ফেরত পেলেও চাষিরা কতটা উপকৃত হবেন, সংশয় তা নিয়েও।মুখ্যমন্ত্রী হয়েই দিদি আশ্বাস দিয়েছিলেন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেওয়া নাকি মা মাটি মানুষের সরকারের সর্বোচ্চ দায়বদ্ধতা।জমি আন্দোলনের নেতা মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে কৃষি মন্ত্রী করা হল।জমি ফেরত দিতে তড়ি ঘড়ি আইন হল।সেই আইন হাইকোর্টে খারিজ হল। সুপ্রীম কোর্ট আবার স্থগনাদেশ দিযে অস্বাকার করায় আইন বহাল হল। কিন্তু জমি আর ফেরত হল নাসিঙ্গুরের অভুক্ত অনিছ্ছুক চাষিদের দু টাকা কেজি চাল ও মাসোয়ারা দেওয়ার বিধান হল।সেটিও মিলছে নাসিঙ্গুরের সীমানা অতিক্রম করে সারা পশ্চিমবন্গে এখন জমি আন্দলন চলছে।উন্নয়নের কাজ আটকে যাচ্ছে। লগ্নি আসছে না। টাটাকে উপলক্ষ করে শিল্পপতিরা বাংলায় বাণিজ্যবিমুখ। সিঙ্গুরের জট তাই শুধু জমিহারাদের সমস্যায় সীমাবদ্ধ নয়।জমি আন্দোলনের জবাবে আজও মা মাটি মানুষের সরকারের বন্দুক গর্জে উঠছেদুবরাজপুরে যেমনটি হল অন্যত্রও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। রাজ্যে   সিঙ্গুরের ছায়ায আটকে যাচ্ছে যাবতীয় উন্নয়ন প্রকল্প ।জমির অভাবে লগ্নি ফেরত চলে যাচ্ছে। সিঙ্গুরে যারা জমি দিয়েছিল, তাদের স্বপ্ন ত পূরণ হলই না, আজিবিকার সন্ধানে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে রাজ্যের যুবাশক্তি।উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানে শাসক শ্রেণী, কর্তৃত্ব ও আধিপাত্যবাদের অনাস্থায় তাঁরা কিনা আবার বাংলাদেশী বলে লান্ছিত, বিপর্যস্ত

জয় গোস্বামীর একটি কবিতা

২৭ শে মে, ২০০৭ রাত ১১:৫২ |

সম্প্রতি পশ্চিম বাংলায় সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে শিল্পায়নের জন্যে চাষীদের জমি অধিগ্রহণের সরকারি তৎপরতা নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেই বিষয়ে জয় গোস্বামীর লেখা একটি কবিতা:


শাসকের প্রতি
জয় গোস্বামী


আপনি যা বলবেন আমি ঠিক তা-ই করব, তা-ই শুনব, তা-ই খাব,
তা-ই গায়ে পরে মাঠে চলে যাব।
আমি নিজের জমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাব
কথাটি না-বলে।
বলবেন গলায় দড়ি দিয়ে
ঝুলে থাকো সারারাত। তা-ই থাকব। শুধু
পরদিন যখন বলবেন, এইবার নেমে এসো
তখন কিন্তু লোক লাগবে আমাকে নামাতে
একা একা নামতে পারব না।
এটুকু পরিনি বলে অপরাধ নেবেন না যেন!

সিঙ্গুরে মমতার বৈঠকে আমন্ত্রণ না পেলে যাবেন না রবীন্দ্রনাথ!আজ সিঙ্গুরে যাচ্ছে মা মাটি মানুষের সরকার, যার বিরুদ্ধে ঘনিয়ে উঠেছে সুতীব্র ক্ষোভের অন্ধকার!

মমতা ব্যানার্জীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল অ্যামেরিকা

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস শীর্ষনেত্রী মমতা ব্যানার্জীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে যে বিধানসভা নির্বাচন চলছে তাতে বামফ্রন্ট নেতৃত্বের পরিবর্তে মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে গুরুত্ব দেবেন৷ সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস মার্কিন দূতাবাসের একটি গোপন তারবার্তা ফাঁস করে দিয়েছে যাতে ওয়াশিংটনের এই মনোভাব জানা গেছে৷ উইকিলিকসের নতুন ফাঁস হওয়া খবরটি জেনে ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজ্যের বাম নেতারা৷ তাঁরা মমতার কাছে উইকিলিকসের এই তথ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা চেয়েছেন৷ খবর সিএনএন-আইবিএনের৷ সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের শেষ অংশে কলকাতা কনস্যুলেট থেকে মার্কিন কুটনীতিকরা যে তারবার্তা প্রেরণ করেছিলেন তার মধ্যে একটি ফাঁস করেছে উইকিলিকস৷ ওই তারবার্তার শিরোনাম, 'তৃণমূলের মমতা ব্যানার্জী : রাজপথের যোদ্ধা থেকে পশ্চিমবঙ্গের হবু মুখ্যমন্ত্রী'৷ এই তারবার্তায় মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়, মমতাকে পশ্চিমবঙ্গের হবু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখন থেকেই সমীহ করা উচিত৷ মমতা বাইরের দেশের পরামর্শ গ্রহণ করবেন কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা হলেও এতে বলা হয়, 'তবুও পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের চেয়ে 'মমতা সরকার' যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশি বন্ধুসুলভ হবে'৷ এতে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলা হয়, মমতা সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলেছেন৷

সিঙ্গুরের শতকরা ৯০% জমি চাষাবাদে নিযুক্ত। এর মধ্যে ১0০০ একর জমি নিয়ে ২০০৬ সালে [৩]টাটা মোটর কোম্পানীর কে দেওয়া হয়। ২০০৭-০১এ এখানে টাটা ন্যানোর কারখানা নির্মাণ শুরু হয়। সেই সময়ে জানা যায় যে কিছু চাষীকে পুরো ক্ষতিপুরণ দেওয়া হয়নি, এবং জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোর্টে জানান যে প্রায় ৩০% চাষী ক্ষতিপূরনের চেক নিতে রাজী হন নি [৪]। এই নিয়ে ২০০৭ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসএর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর নেতৃত্বে প্রবল গণআন্দোলন আরম্ভ হয়।

আগস্ট ২০০৮এ এই ব্যাপক গণআন্দোলন এবং কোম্পানীতে চাকুরীজীবিদের ওপর হামলার মুখে টাটা মোটরস কারখানায় কাজ স্থগিত রাখেন এবং পরবর্তীকালে রতন টাটা তাঁর কারখানা গুজরাটে স্থানান্তরিত করেন।


দলের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তৃণমূলের বিদ্রোহী এই মাস্টারমশাই জানিয়ে দিলেন, আমন্ত্রণ না পেলে তিনি সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। এখনও মুখ্যমন্ত্রীর সভায় যাওয়ার আমন্ত্রণ তিনি পাননি বলেও তৃণমূলের বর্ষীয়াণ এই নেতা জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, কাল শুক্রবার হুগলি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে সিঙ্গুর যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার আগে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের এই বিস্ফোরক মন্তব্যে সমস্যায় তৃণমূল কংগ্রেস।

প্রসঙ্গত, গতকাল রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর মন্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হয়েছিল। সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী লড়াকু নেত্রী হতে পারেন, কিন্তু কখনই আদর্শ নন। তাই কৃষি দফতরে নিজের ঘরে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখার কোনও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। সোমবার এক সাক্ষাত্‍‍কারে এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সদ্য কৃষি দফতর হারানো মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। একইভাবে বলেছেন, ৩ ডিসেম্বর, সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় যাওয়া খুব প্রয়োজনীয় নয়। কারণ এইধরনের বৈঠকগুলিতে একতরফা সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া তাঁকে কী হিসাবে ডাকা হচ্ছে, তার ওপর যাওয়া- না যাওয়া নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।তোলাবাজিতে যুক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী সবই জানেন। সেকারণেই বারবার সতর্ক করছেন তিনি। সোমবার এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন কৃষি দফতর হারানো মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। চাকরি থেকে শুরু করে ঠিকাদারি, সব ক্ষেত্রেই দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মীরা টাকা আদায় করে। এব্যাপারে তাঁর কাছে বিশ্বস্তসূত্রে খবর রয়েছে বলেও জানান রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। 

দলে তোলাবাজি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলায় গতকাল রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর বিরদ্ধে মুখ খুলেছেন বেচারাম মান্না। বলেছেন, অনৈতিক কাজ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এবার সেই বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধেই পাল্টা অনৈতিক কাজের অভিযোগ আনলেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, সিঙ্গুর আন্দোলন চলাকালীনই টাটা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এলাকার এক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল বেচারাম মান্নার।

সিঙ্গুরের মাটিতেই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে কৃষিমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিলেন সিঙ্গুরের বাসিন্দারা। তাঁরা যে মাস্টারমশাইয়ের পাশেই আছেন তা আরও একবার জানিয়ে দিলেন তাঁরা। আজ নতুন কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে রাজ্য সরকার। জমি তো ফেরত মেলেই নি, উপরন্তু বরাদ্দ চাল ও টাকা কিছুই পাচ্ছেন না তাঁরা। বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধেও এদিন ক্ষোভ উগরে দেন সিঙ্গুরবাসী। 

অনিচ্ছুক কৃষকদের জন্য যে চাল ও টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা বেশ কয়েক মাস ধরেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিক্ষোভ দেখান অনিচ্ছুক কৃষকরা। অনেক দিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকেই বেচারামকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল বলে স্থানীয় মানুষরা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি দেখতে শুক্রবার সিঙ্গুরে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।



এদিনই সকালে আবার বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, সিঙ্গুর আন্দোলন চলাকালীনই টাটা ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এলাকার এক ধনী ব্যক্তির বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল বেচারাম মান্নার। 

রাজনৈতিক দ্বিচারিতায় দিদির জনদরদী ছবিও আজ বিপর্যস্ত রাজনৈতিক রুপে আজ তিনে বস্তুতঃ একঘরে এফডিআই ইস্যুতে নাটকীয় মোড়। কংগ্রেসকে স্বস্তি দিল তৃণমূল। অচলাবস্থা কাটাতে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে সংসদে এফডিআই নিয়ে আলোচনা চাইল তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটাভুটির কোনও দাবি তুলল না তারা। তৃণমূলের মত, কোন ধারায় এই আলোচনা হবে তা ঠিক করুন স্পিকারই। একই দাবি জানিয়েছে সমাজবাদী পার্টি ও আরেজডি। এফডিআই নিয়ে সর্বদল বৈঠক নিষ্ফলাই রইল। একশো চুরাশি ধারার বিপরীতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি সরকারকে স্বস্তি দিলেও, ভোটাভুটির দাবিতে অনড় বাম এবং বিজেপি। তারা যে কোনওমতেই ওই দাবি থেকে সরে আসবে না, তা স্পষ্ট করে দেন দুই দলের নেতারাই।  ফলে দিনের শেষে  অধরাই থেকে গেল রফাসূত্র। 

দিদির রাজনৈতিক সংকট বাড়িয়ে এবার সংসদের উভয় কক্ষে জটিলতা কাটল। যাবতীয় টালবাহানার পর লোকসভা ও রাজ্যসভায় এফডিআই নিয়ে আলোচনা প্রস্তাব গৃহীত হল। সেই সঙ্গে এফডিআই নিয়ে সংসদে ভোটাভুটির দাবি মেনে নিল কেন্দ্র। আজ দুপুর ১১টায় স্পিকার মীরা কুমার জানান এফডিআই নিয়ে ১৮৪ ধারায় আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে উভয় কক্ষেই ১৬৮ ধারায় ভোটাভুটি হবে বলেও জানান মীরা কুমার। এদিন অবশ্য, এফডিআই নিয়ে ফের বিরোধীদের হৈ হট্টগোলের জেরে দিনের শুরুতেই বেলা বারোটা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় রাজ্যসভা ৷

রুখতে হবে বিজেপিকে। কংগ্রেসের এই একটা টোটকাই সম্ভবত সারিয়ে তুলল এফডিআই নিয়ে তৈরি হওয়া অচলাবস্থার রোগটাকে। কারণ, শুধুমাত্র বিজেপিকে আটকাতেই এফডিআই নিয়ে ভোটাভুটি হলে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ডিএমকে। আর তাতেই সংখ্যা নিয়ে যাবতীয় দুশ্চিন্তা কেটে গিয়েছে কংগ্রেসের। তাই ১৮৪ ধারায় বিরোধীদের ভোটাভুটি সহ আলোচনাকে আর মোটেই ভয় পাচ্ছে না সরকার। তাই সিদ্ধান্তটা লোকসভার অধ্যক্ষের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে কংগ্রেস।

বুধবারই সংসদের দুই কক্ষের বিরোধী দলনেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন কমলনাথ। ১৮৪ ধারায় ভোটাভুটি সহ আলোচনার দাবি থেকে তারা যে সরছেন না, তা ফের স্পষ্ট করেন বিজেপির দুই শীর্ষনেতা। মনে করা হচ্ছে শুক্রবারের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন অধ্যক্ষ মীরা কুমার। সেক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহে ভোটাভুটির জন্য তৈরি থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে সরকার। ভোটাভুটি হলে এনডিএ, বামশিবিরের পাশাপাশি বিপক্ষে ভোট দেবে বিজেডি, এআইএডিএমকে এবং টিডিপি। 

রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে রাজ্য সরকারের সমস্যা চরমে। তার ওপর আবার নতুন বিতর্ক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। কৃষক পরিচিতি থাকলে তবেই সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। যে সমস্ত কৃষকের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, জমির দলিল বা পরচা নেই, তাঁদের কৃষক পরিচিতির ছাড়পত্র দেবেন বিডিও অথবা জেলার কৃষি আধিকারিক। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এই ফতোয়া ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশাসনিক আধিকারিকদের কৃষক পরিচিতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কৃষকসভা।

কৃষক পরিচিতি না থাকলে আদৌ সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয়ে কৃষকরা। বিতর্কের শুরু সোমবার বর্ধমানে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্যে। এবারও সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কথা বলে মন্ত্রী বলেন ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কৃষকদের পরিচিতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। 
 
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত কৃষকের কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, জমির দলিল বা পরচা নেই তাঁদের কৃষক পরিচিতি দেবেন এলাকার বিডিও অথবা কৃষি দফতরের আধিকারিকরা। আর এই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন জেলার কৃষক সভার সম্পাদক আব্দার রেজ্জাক মোল্লা। 
 
মন্ত্রীর এই বক্তব্যে ধন্দে রয়েছেন কৃষকরাও। কৃষক পরিচিতি না থাকার কারণে আদৌ সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা। গতবছর সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করে এখনও টাকা পাননি বর্ধমানের বহু কৃষকই। এবছরও সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কথা ঘোষণা করলেও  সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে কৃষক পরিচিতির শর্ত। সেই শর্তপূরণের ফাঁসে আদৌ ধান বিক্রি করতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্যের শস্যগোলার কৃষকদের মনে। 

ইতিমধ্যে, "রাজা চলে বাজার সে, কুত্তা ভৌকে হাজার সে..." আজ বেঙ্গল বিল্ডসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই ভাষাতেই প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজুর সমালোচনার জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী জানান প্রাক্তন বিচারপতির কোনও চিঠিই তিনি পাননি। 

এর আগে আজই কড়া সমালোচনা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠান কাটজু। চিঠিতে তিনি বলেন, রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে খোলামনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালি আচরণে তাঁরা ভীত-সন্ত্রস্ত। এই ধরণের আচরণ বদলে সহিষ্ণুতা না দেখাতে পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশি দিন মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলেও চিঠিতে সরাসরি লিখেছেন তিনি। 

প্রয়াত শিবসেনা নেতা বাল থ্যাকারের অন্তেষ্ট্যি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় দুই তরুণীকে গ্রেফতার করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিস। পরে, সংশ্লিষ্ট পুলিস আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের হেনস্থার সঙ্গে জড়িত পুলিস আধিকারিকদের বিরুদ্ধে একইরকম পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আহ্বান জানিয়েছেন মার্কণ্ডেয় কাটজু। অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন কাটজু। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দময়ন্তী সেনকে যেভাবে পদচ্যুত করেছিলেন তা ভুল ছিল বলে মনে করেন কাটজু। অবিলম্বে তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাঁর পদে (পুলিস কমিশনার ক্রাইম) ফিরিয়ে আনতেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন মার্কণ্ডেও। এমনকী একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান চলাকালীন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজকে মাওবাদী বলে অপমান করার জন্যও মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কাটজু। তিনি মনে করেন এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছেই শুধু নয় সারা দেশের কাছেই অন্তত কিছুটা হলেও তাঁর হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পাবেন মুখ্যামন্ত্রী। 

কাটজু লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তিনি যতবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন মন্ত্রী-আমলারাও তাঁর সামনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালি আচরণের ভয়ে তাঁরা সবসময় তটস্থ। মন্ত্রী, আমলারা ভিন্নমত পোষণ করলেও তাঁদের কথা বলার অধিকার থাকা উচিত বলে মনে করেন কাটজু। এই প্রসঙ্গে প্রথম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। উদাহরণ টেনেছেন কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্র থেকেও। 

চিঠির শেষে কাটজু লিখেছেন একসময় তিনিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করতেন। কিন্তু এখন তাঁর অসহিষ্ণু আচরণকে সমালোচনা না করে তিনি থাকতে পারছেন না। শুভাকাঙ্খী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর অনুরোধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন দেরি হওয়ার আগেই তাঁর ভুল শুধরে নেন। 

কাটজু লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তিনি যতবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন মন্ত্রী-আমলারাও তাঁর সামনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর খামখেয়ালি আচরণের ভয়ে তাঁরা সবসময় তটস্থ। মন্ত্রী, আমলারা ভিন্নমত পোষণ করলেও তাঁদের কথা বলার অধিকার থাকা উচিত বলে মনে করেন কাটজু। এই প্রসঙ্গে প্রথম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। উদাহরণ টেনেছেন কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্র থেকেও। চিঠির শেষে কাটজু লিখেছেন একসময় তিনিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করতেন। কিন্তু এখন তাঁর অসহিষ্ণু আচরণকে সমালোচনা না করে তিনি থাকতে পারছেন না। শুভাকাঙ্খী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর অনুরোধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন দেরি হওয়ার আগেই তাঁর ভুল শুধরে নেন। 


এই সময়ের রিপোর্টঃ
যাঁর হাত ধরে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের শুরু, তাঁকে ঘিরেই বিক্ষোভ দেখালেন সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষীরা। বুধবার সিঙ্গুরের বিডিও অফিসে এই ঘটনা ঘটে। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষীদের মধ্যে চাল ও ভাতা বণ্টন প্রক্রিয়াকে ঘিরে গোলমালের জেরে ক্ষোভের মুখে পড়েন বেচারাম মান্না। সিঙ্গুরের 'মাস্টারমশাই' রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে কৃষিমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ফলে সৃষ্টি হওয়া ক্ষোভই এদিন চাষীরা উগরে দেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিঙ্গুরের আন্দোলনকে ভিত্তি করেই এ রাজ্যে পা-এর নিচে জমি শক্ত করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৪ বছরের বাম শাসন সরিয়ে 'পরিবর্তনে'র জমানা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে ন্যানো গাড়ি কারখানা হটানোর আন্দোলনকে ঘিরেই। অনিচ্ছুক চাষীদের জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিই ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনীর অ্যাজেন্ডার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দেড় বছরের মধ্যে সেই অনিচ্ছুক চাষীদেরই বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের নতুন কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। তৃণমূল সরকার কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ করছে না বলে অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। পরিস্থিতি দেখতে শুক্রবার সিঙ্গুর যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিনের ঘটনার শুরু সিঙ্গুরে অনিচ্ছুক চাষীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ চাল ও ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়া ঘিরে। বুধবার সকাল থেকে চাল ও ভাতা নেওয়ার জন্য বিডিও অফিসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন প্রায় হাজার কয়েক অনিচ্ছুক চাষী। কিন্তু বিডিও অফিসের কর্মীরা চাষীদের প্রথমবার যে চাল ও ভাতা দেওয়া হয়েছিল, সেই কুপনের জেরক্স চাইলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ চাষীর কাছেই ওই কুপন বার জেরক্স কপি ছিল না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও চাল ও ভাতা না পেয়ে একসময় ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাষীরা। বিডিও অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। সদ্য কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত বেচারাম মান্না ঘটনাস্থলে এলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সরকার নির্দেশিত এই প্রকল্পে নিয়মিত চাল ও ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন তাঁরা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষকের বিক্ষোভের সামনে পড়েন বেচারাম মান্না। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। জমি ফেরত দেওয়ার কোনও উদ্যোগও নেয়নি বলে অভিযোগ কৃষকদের।

এদিকে এদিনই বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন কৃষি মন্ত্রক থেকে অপসারিত রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। সিঙ্গুর আন্দোলন চলাকালীনই বেচারাম মান্না টাটাদের অনুগত এলাকার এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে যেতেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের আরও দাবি এ বিষয়ে তিনি বেচারাম মান্নাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন যে ওই আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে নির্বাচনে লড়ার টিকিট পেতে সুবিধে হবে।

তেহট্ট, দুবরাজপুরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী


এই সময়: সরকারকে বিব্রত করতেই দুবরাজপুর ও তেহট্টে পরিকল্পিত ভাবে গোলমাল পাকানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মহাকরণে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রথম বার দুবরাজপুর ও তেহট্টের ঘটনা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তেহট্টের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চলছে। কিন্তু সরকার যে হাত-পা গুটিয়ে থাকেনি, এদিন তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এসডিপিও এবং ওসি-কে সরানো হয়েছে। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এড়াতেই যে এই পদক্ষেপ, সে কথাও বলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,তেহট্টের মামলা যাতে খুব শিগগিরই নিষ্পত্তি নয়, সে জন্য দিলীপ নায়েকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনায় মৃত পরিবারবর্গদের এককালীন আর্থিক সাহায্য ও চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, দুবরাজপুরে পুলিশের গুলি চালনার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় তেমন গুরত্ব না-দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সাংসদ মুকুল রায়কে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তবে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সরকারের হাতে এখনও আসেনি। এডিজি সুব্রত পুরকায়স্থ ঘটনার রিপোর্ট খুব তাড়াতাড়িই জমা দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুবরাজপুরে পুলিশের গুলিতে আহত পাঁচ পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে তিনি এদিন ঘোষণা করেন।

দু'টি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হবে বলে এদিন মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর দাবি, বাম জমানা থেকেই দুবরাজপুরে গোলমালের সূত্রপাত। তাই চাষীদের আগে সরকারকে জমি বিক্রির বিষয়ে হলফনামা জমা দিতে হবে। তারপরই সরকার জমি অধিগ্রহণের কাজে নামবে।

এদিন তিনি আরও বলেন, তেহট্ট ও দুবরাজপুরে না গেলেও হুগলি জেলার সিঙ্গুরের বিডিও অফিসে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন। বিধায়ক বেচারাম মান্নাকে ঘিরে সিঙ্গুরে বিক্ষোভে আদৌ গুরুত্ব দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৩ ডিসেম্বর মাসে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা সফরে যাবেন।

রবীন্দ্রনাথের পর দল ছাড়ার ইঙ্গিত ক্ষুব্ধ শোভনদেবেরও

কলকাতা ও হুগলি: পার্টি ও প্রশাসনে ক্রমশই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কৃষি দফতর হাতছাড়া হওয়ার পর সিঙ্গুরের প্রবীণ বিধায়ক এবং জমি আন্দোলনে দলের মুখ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন দফতরের দায়িত্ব তিনি নেবেন না৷ এ বার দলের আর এক প্রবীণ বিধায়ক এবং বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চ‌ট্টোপাধ্যায় দল ছাড়ারই ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ বুধবার তিনি বলেছেন, 'এই দলে সম্মান নিয়ে থাকা বড় কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তৃণমূলে আর থাকব কি না, সেই প্রশ্নই আমাকে এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷'

দশ দিন আগেই দেড় বছর পূর্ণ করেছে নতুন সরকার৷ মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটিয়ে এবং নতুন মুখ এনে নয়া উদ্যমে কাজে নামার প্রস্ত্ততিও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবারই তাঁর সিঙ্গুরে প্রশাসনিক বৈঠক করার কথা৷ তার আগে সিঙ্গুরের বিধায়ক এবং বিধানসভার মুখ্য সচেতকের বিদ্রোহ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে৷ বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এ নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রবীন্দ্রনাথবাবু এবং শোভনদেব চ‌ট্টোপাধ্যায় বিদ্রোহে অটল থেকে শেষ পর্যন্ত দল ছাড়লে তৃণমূলের সাংগঠনিক ক্ষতি খুব বেশি হবে না৷ কিন্ত্ত ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ এই দুই নেতারই পুঁজি দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি৷ মমতা যেখানে দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে আক্রমণ এবং 'কেন্দ্রের বন্ধু' বলে সিপিএমকে গালমন্দ করছেন, তখন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই দুই নেতাকে দল ছাড়তে হলে তৃণমূলের মুখ পুড়বে৷

মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের কর্মচারী ইউনিয়নের একাংশ শোভনদেববাবুকে হেনস্থা করে৷ তাঁকে গলা ধাক্কা দেওয়া হয়৷ তিনি বলেন, 'সিপিএম বা কংগ্রেস মারলে গর্ববোধ করতাম৷ কিন্ত্ত দলেরই কিছু লোক যে ভাবে আমাকে অপদস্থ করেছে তা মেনে নিতে পারছি না৷ আমি মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত৷'

দল ছাড়ার প্রসঙ্গে রাসবিহারী কেন্দ্রের এই বিধায়ক বলেন, 'মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর নাম করে জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি৷ দু'দিন দেখি পুলিশ কী করে, তার পর সিদ্ধান্ত নেব৷'

রবীন্দ্রনাথবাবুও থেমে নেই৷ কৃষি দফতর হাতছাড়া হওয়া নিয়ে এ দিন তিনি প্রকারান্তরে মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন৷ ক'দিন আগেই মমতা প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন, তিনি কাটমানি নিয়ে দল চালান না, প্রয়োজনে নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে দল চালাবেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বচ্ছতার দাবিকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ ঠুকে সিঙ্গুরের বিধায়ক বলেন, 'আমি কৃষিমন্ত্রী থাকাকালীন ধান-গমের বীজ কেনা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম৷ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়েছিলাম৷ তার পরও আমাকে কেন কৃষি দফতর থেকে সরানো হল বোঝা যাচ্ছে না৷' দু'দিন আগেই এই বিদ্রোহী বিধায়ক প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলেছিলেন, তৃণমূলের লোকজনই রাজ্যে তোলাবাজি চালাচ্ছে৷

বেশ কয়েক মাস আগেই এই অভিযোগ তুলেছিলেন শোভনদেববাবুও৷ এ দিন তিনি কাটমানি নিয়ে দলনেত্রীকে একহাত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী তো প্রকাশ্যেই কাটমানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন৷ নিশ্চই ওঁর কাছে খবর আছে দলের কারা তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত৷ তা হলে উনি তাঁদের দল থেকে বের করে দিচ্ছেন না কেন?' ক্ষোভ উগরে দিয়ে শোভনদেববাবু বলেন, 'আমি তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক৷ দল আমায় মন্ত্রী করেনি৷ সে জন্য কোনও দিন ক্ষোভ প্রকাশ করিনি৷ মন্ত্রিত্বের মোহ আমার নেই৷ আমি কোনও সিন্ডিকেটের নেতা নই৷ শুধু চেয়েছিলাম সম্মান নিয়ে রাজনীতি করতে৷ কিন্ত্ত সেটাই পারছি না৷'

দলীয় সূত্রে খবর, শোভনদেববাবুর বিদ্রোহের পিছনে শুধু মঙ্গলবারের ঘটনাই দায়ী নয়৷ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই মমতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে চিড় ধরে৷ এর পিছনে অন্যতম কারণ হল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে দখলদারি৷ শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং দোলা সেনকে দলের শ্রমিক সংগঠনের মাথায় বসাতেই প্রতিবাদ করেন শোভনদেববাবু৷ নেত্রীর আস্থা হারালেও এই প্রবীণ শ্রমিকনেতা কিন্ত্ত দমে যাননি।

চিঠি পাইনি, কাটজুর ই-মেল প্রসঙ্গে বললেন মুখ্যমন্ত্রী



এই সময়: কাটজুর চিঠি তিনি পাননি। বৃহস্পতিবার মহাকরণে এ কথাই জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ। আইন মেনে তাঁর সরকার কাজ করবে। কোথাও কোনও গাফিলতি ধরা পড়লে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এদিন বলেছেন, 'আমাদের চমকে, ধমকে কিছু করানো যাবে না। বাইরের কেউ আমাদের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।' 

এর আগে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় চিঠি পাঠান প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজু। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, রাজ্যের মন্ত্রী-আমলারা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে খোলা মনে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে তাঁরা সন্ত্রস্ত। এই মনোভাব রাজ্যের পক্ষে মঙ্গলজনক নয় বলে দাবি কাটজুর। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর পরামর্শ, সহিষ্ণুতা দেখাতে না-পারলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব বেশি দিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না। 

মহারাষ্ট্রের ফেসবুক-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে কাটজু বলেছেন, অম্বিকেশ মহাপাত্রকে হেনস্থা করার ঘটনায় জড়িত পুলিশকর্মীদেরও একই ভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত। অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিলাদিত্য চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা তুলে তাঁদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলা হয়েছে চিঠিতে। দময়ন্তী সেনকে যে ভাবে 'সরিয়ে দেওয়া' হয়েছে, তা-ও কাটজুর মতে অন্যায়। 

অবিলম্বে দময়ন্তী সেনকে তাঁর পুরনো পদে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। এমনকী একট বেসরকারি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজকে মাওবাদী বলে 'অপমান' করার জন্য তাঁর কাছেও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে কাটজু মনে করেন। কেননা, ক্ষমা চাইলে শুধু রাজ্যেরই নয়, গোটা দেশের কাছেই তাঁর সম্মান অনেক বেড়ে যাবে। 



পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে আগ্রহী টাটা

পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চায় টাটারা. বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের তরফে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখানো হলে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে রাজি বলে জানালেন টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটা. তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ. সেখানে ফেরার জন্য মুখিয়ে আছি. পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের একটি মেডিক্যাল সেন্টার রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি. 


উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমনে হুগলির সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল টাটা মোটর্স. কিন্তু জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত বিষয়ে তত্কালীন বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে  সিঙ্গুর থেকে চলে যেতে হয় টাটাদের. সেই তৃণমূল এখন রাজ্যে ক্ষমতায়. এর পরিপ্রেক্ষিতে টাটা গোষ্ঠীর প্রধানের পশ্চিমবঙ্গে ফেরার আগ্রহ যথেষ্ট তাত্পর্য্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে.
রতন টাটা আগেই অভিযোগ করেছিলেন যে, সিঙ্গুরে সমস্যার সৃষ্টিতে হাত রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলির. সেই একই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি আবার শোনা গেল তাঁর মুখে. বৃহস্পতিবার দিল্লির তাজ প্যালেসে এক বৈঠকে তাঁর অভিযোগ, সিঙ্গুরে যে সমস্যার মুখোমুখি তাঁদের হতে হয়েছে, তার পিছনে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলির হাত রয়েছে. তবে অভিযোগ তুললেও কারও নাম করতে চাননি রতন টাটা.তবে তিনি জানিয়েছেন, সময় এলেই ওই সংস্থাগুলির নাম তিনি প্রকাশ করবেন.
 পাশাপাশি ন্যানোর চাহিদা কম, এই তথ্য পুরোপুরি নস্যাত্‍ করে টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার বলেন, ইতিমধ্যেই প্রায় দেড় লক্ষ গাড়ি বিক্রি হয়েছে. তবে এক্ষেত্রে বিঞ্জাপন এবং ডিলার নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যার কথা তিনি স্বীকার করে জানিয়েছেন, কীভাবে আরও ভাল বিজ্ঞাপন করা যায়, সেদিকেও এবার তাঁরা নজর দেবেন . 
আপাতত আগামী এক বছরের মধ্যে ন্যানোর ডিজেল গাড়ি আসছে না বলে জানিয়েছেন সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান রবিকান্ত. শিল্পপতিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে যা বলেছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন. তিনি বলেছেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারকে পরিকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে. এতে আর্থিক বৃদ্ধি তরান্বিত হবে.
'ব্যাড এম' বদলে গেল 'গুড এম'-এ!
সিঙ্গুর থেকে ছোট গাড়ির কারখানা গুটিয়ে গুজরাতের সানন্দে চলে যাওয়ার সময় যাঁকে দুষে বিবৃতি দিয়েছিলেন, আমরি-কাণ্ডের পর গত ১১ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ভূমিকাকেই কুর্নিশ জানান রতন টাটা. 'ব্যাড এম' বলার সময় নাম করেননি. আমরি-কাণ্ডেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না-করেই টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার ট্যুইট করেন, মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রশংসনীয়. 
সিঙ্গুর-পর্বকে ঘিরে টাটা এবং মমতার সম্পর্ক এ রাজ্যের প্রেক্ষিতে এমনই চর্চার বিষয় যে, ওই ট্যুইট যথেষ্ট চাঞ্চল্য এবং জল্পনার কারণ হয়ে ওঠে. টাটার মন্তব্যে রাজনীতির কোনও লেশ ছিল না. মুখ্যমন্ত্রীর যে ভূমিকার তিনি প্রশংসা করেছেন, তা নিয়েও কোনও মহলে কোনও সংশয় দেখা দেয়নি. তবু প্রশংসা করছেন রতন টাটা, প্রাপক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই অনুষঙ্গই যথেষ্ট তাৎপর্য এবং জল্পনার বিষয় হয়ে ওঠে. বিশেষত, তা-ও এমন এক সময়ে, যখন সিঙ্গুরে টাটার কারখানার জমি মমতার সরকার অধিগ্রহণ করে নেওয়ায় আদালতে মামলা চলছে.
শিল্প মহল বলে, রতন টাটা শুধু ভারতেই নন, গোটা বিশ্বে এক জন প্রথম সারির শিল্পপতি হিসেবে স্বীকৃত. আর আমরি-র ঘটনার মতো নজির পৃথিবীর ইতিহাসেও বিশেষ নেই. স্বাভাবিক ভাবেই এক জন 'সংবেদনশীল নাগরিক' হিসেবে সেই বৃহত্তর ট্র্যাজেডির প্রেক্ষাপট থেকেই মত দিয়েছেন টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার. 

http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60/15559-%E0%A6%AA%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%87%20%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%20%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A7%80%20%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE


ন্যানো: কয়েকশো কোটি লগ্নি গুজরাতে

টাটা-র হাত ধরে ওরা পা রেখেছিল সানন্দে। ন্যানো-র যন্ত্রাংশ জোগাতে। এখন তাদের দরজায় আবার কড়া নাড়ছে ফোর্ড, মারুতি-র মতো অন্য গাড়ি সংস্থাও। আর সেই সূত্রেই সানন্দে নতুন লগ্নির পরিকল্পনা করছে ন্যানো-র সহযোগী (ভেন্ডার) যন্ত্রাংশ শিল্প। সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, নতুন গাড়ি সংস্থাগুলি এলে যন্ত্রাংশ শিল্পে আরও কয়েকশো কোটি টাকার নতুন লগ্নি পাবে গুজরাত।
নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে মেহসানার কাছে নতুন কারখানা তৈরির কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে মারুতি। গুজরাতে কারখানা গড়তে টাকা ঢালার কথা জানিয়েছে ফোর্ডও। সব মিলিয়ে গাড়ি সংস্থাগুলির প্রাথমিক লগ্নির অঙ্কই দাঁড়াচ্ছে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর সেই টানেই সেখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে চাইছে টাটা মোটরস-এর সহযোগী যন্ত্রাংশ সংস্থাগুলি।
সিঙ্গুরে লগ্নি এখনও আটকে থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ধরনের অধিকাংশ সংস্থাই। তবে নাম না জানানোর শর্তে বেশ কিছু সংস্থার কর্তাই জানিয়েছেন, অন্য গাড়ি সংস্থা গুজরাতে এলে তার সুযোগ নিতে সানন্দে নতুন লগ্নির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। যেমন, ঔরঙ্গাবাদের একটি যন্ত্রাংশ সংস্থা সিঙ্গুরে ১০ একর জমিতে কারখানা গড়তে ২৪.২ কোটি টাকা খরচ করেছিল। সানন্দে ২০ একরে তাদের লগ্নি প্রায় ৫৫ কোটি। সংস্থার এক কর্তা জানান, এ বার ফোর্ড, মারুতি থেকেও ডাক এসেছে। সব ঠিকঠাক চললে এ বছরের শেষেই চূড়ান্ত হবে। তখন লগ্নির অঙ্ক আরও বাড়বে।
ইতিমধ্যেই গুজরাতের হালোলে জেনারেল মোটরসের কারখানায় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করছে এ রাজ্যেরই এক সংস্থা। পুণের এক সংস্থাও ন্যানো কারখানার চত্বরের বাইরে আলাদা করে জমি কিনে বড়সড় কারখানা তৈরির কথা ভাবছে। ফোর্ডের তরফে প্রাথমিক বার্তা পেয়েছে উত্তর ভারতের এক সংস্থাও। এয়ারকন্ডিশনার প্রস্তুতকারী ভোল্টাস-ও তাদের সঙ্গে সেখানে গাঁটছড়া বাঁধতে আগ্রহী। সিঙ্গুর থেকে 'বিতাড়িত' উত্তর ভারতেরই আর একটি সংস্থা আপাতত ফরিদাবাদের কারখানা থেকে সানন্দে যন্ত্রাংশ পাঠায়। মারুতির সঙ্গেও তাদের জোট আছে। তাদের আশা, মারুতি গুজরাতে গেলে তাঁরাও ডাক পাবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতে লগ্নি করার সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরও।
সিঙ্গুরে টাটা মোটরস জানিয়েছিল, এই কারখানা থেকেই ভবিষ্যতে সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্প অন্য গাড়ি সংস্থাকেও যন্ত্রাংশ পাঠাতে পারবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতের এই লাভ সিঙ্গুর তথা এ রাজ্যই ঘরে তুলতে পারত বলে মনে করছে শিল্পমহল। উল্লেখ্য, সিঙ্গুরে ন্যানো-র সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্প প্রায় ২,২০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে বলে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল। একই ভাবে বাড়ত কর্মসংস্থানও। ঠিক যে ভাবে সহযোগী যন্ত্রাংশ শিল্পের লগ্নির টানে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নয়া কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা বাড়ছে গুজরাতে। সংস্থাগুলির দাবি, বেশিরভাগ সংস্থাই ছোট বা মাঝারি বলে সংলগ্ন এলাকা থেকেই কর্মী নিয়োগ তাদের পক্ষে লাভজনক। তাই কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় আইটিআই উত্তীর্ণ বা 'যোগ্য' জমিদাতাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।

http://www.abpananda.newsbullet.in/national/60-more/25586-2012-07-14-09-59-36


সিঙ্গুরে বিজয় মাটি মানুষ ও মমতার
 
রেটিং :
 
0.35%
 
গড় রেটিং:
সমকাল ডেস্ক
প্রায় ৫৭ মাস পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরের উর্বর কৃষি জমি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ১৩ কৃষকের কাছে জমির দলিল হস্তান্তর করেছে। যদিও টাটার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতের বৃহৎ শিল্প পরিবার টাটা মোটরসের সঙ্গে ৯৯৭ দশমিক ১৭ একর জমির লিজ বাতিল করেছে মমতা সরকার। লিজ বাতিলের বিরুদ্ধে টাটা শিল্প গ্রুপ আদালতে আবেদন জানালে তা বাতিল হয়ে যায়। ২০০৬ সালের ১৮ মে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান রতন টাটা এবং তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি নির্মাণের কারখানা তৈরির ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী ২০০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর টাটা মোটরসকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার উলি্লখিত পরিমাণ জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ জমি হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ২৫ দিনের অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২০০৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেই অনশন কর্মসূচি শেষ হয়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের অঙ্গীকার ছিল নির্বাচনে বিজয় হলে সিঙ্গুরের জমি প্রকৃত কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ ইস্যু নিয়ে কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির ময়দান বেশ গরম হয়ে ওঠে। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে মমতা তার নির্বাচনী অঙ্গীকার রেখেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র আন্দোলনের মুখে টাটা মোটরস সিঙ্গুর থেকে তাদের ন্যানো গাড়ি নির্মাণ প্রকল্প গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর রতন টাটা সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্প পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। গত ১৩ মে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় সিঙ্গুরের জমি লিজ বাতিল সংক্রান্ত 'সিঙ্গুর বিল' বিধানসভায় পাস হয় ১৩ জুন এবং ২০ জুন বিলে রাজ্য গভর্নর সই করলে জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি এক রকম নিশ্চিত হয়ে যায়। যদিও গত ২২ জুন টাটা মোটরস কলকাতা হাইকোর্টে সরকারি আদেশ স্থগিত রাখার আবেদন জানায়। কিন্তু ২৭ জুন আদালতে টাটার আবেদন নাকচ করা হয়। গত ২৮ জুন সিঙ্গুরে অধিগ্রহণকৃত জমি জরিপ করার পর ওইদিন সন্ধ্যায় কারখারার মূল এলাকার ভেতরের ১৩ জন জমি মালিককে জমি ফেরতদান সংক্রান্ত দলিল হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। এ নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা সিঙ্গুরের ইস্যুটি আপাতত একটি যৌক্তিক সমাধানে পেঁৗছাতে সক্ষম হয়। যদি দিলি্লর সুপ্রিম কোর্টও কলকাতার হাইকোর্টের রায় পুনর্বহাল রাখে, তাহলে ভারতের যে কোনো রাজ্য সরকারের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে। শিল্পায়নের যুগে একদিকে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের দাবি, অন্যদিকে কৃষকদের অধিকার রক্ষার সনাতন ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ মমতা সরকারের সামনে। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পেঁৗছতে পারেনি। কয়েক দশকের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে শহরে জনসংখ্যার অর্ধেক লোককে আবাসন সুবিধা দেওয়া। সে ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ দ্বিগুণ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। সে প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও সে পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দের ওপর মমতা সরকারকে অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে। বিনিয়োগের প্রশ্নে সরকার বেসরকারি খাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা কর সুবিধা বা জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার সরকারি আশ্বাসকে পর্যাপ্ত মনে করছে না। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলোর হাতে সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল সস্তায় শিল্প স্থাপনের জন্য সরকারি জমি বরাদ্দ দেওয়া। কিন্তু সিঙ্গুরের ঘটনা এ ক্ষেত্রে মমতার জন্য কিছুটা হতাশা সৃষ্টি করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, মমতার তৃণমূল-কংগ্রেস সরকার কতটা দক্ষতার সঙ্গে রাজ্যে উন্নয়নের ধারাকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারে। সূত্র : দ্য হিন্দুস্তান টাইমস।

পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর জমি আইন অবৈধ

singur

বামফ্রন্ট সরকারের আমলে সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ি তৈরির কারাখানার জন্য টাটা গোষ্ঠী জমি অধিগ্রহণ করে

ভারতে পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি কারখানার জমি পুনরায় অধিগ্রহণ করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে আইন করেছিল, তাকে কলকাতা হাইকোর্ট আজ (শুক্রবার) অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে রায় দিয়েছে৻

দুই সদস্যের ডিভিশন বেঞ্জ আইনটি খারিজ করে দেওয়ার কথা বললেও দুমাসের জন্য এতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে যাতে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা যেতে পারে৻

রায় ঘোষণার পরে সরকার বলেছে যে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে।

অন্যদিকে টাটা গোষ্ঠী আজকের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে৻

কলকাতা হাইকোর্টের দুই সদস্যবিশিষ্ট ডিভিশন বেঞ্চ তার রায়ে বলেছে যে সিঙ্গুরের টাটা কারখানার জমি পুনরায় অধিগ্রহন করে অনিচ্ছুক কৃষকদের মধ্যে তা বিলি করার জন্য তৈরি আইনটি অসাংবিধানিক৻

জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষকদের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা লড়াই চালিয়েছেন এখনও তাঁদের পাশেই থাকবেন তাঁরা৻

পার্থ চ্যাটার্জী, শিল্প মন্ত্রী

কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিচারপতিরা বলেছেন যে রাজ্য সরকারের তৈরি ওই আইনটির কয়েকটি ধারার সঙ্গে ১৮৯৪ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনের বিরোধ আছে৻ কোনও রাজ্য সরকার যদি কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনও আইন তৈরি করে, তাহলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন৻

এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেইসব অনুমোদন নেয় নি৻ তাই আইনটি অবৈধ বলে রায় দেয় পিনাকী চন্দ্র ঘোষ আর মৃণাল কান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ৻

রায়ের পরে সরকার পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ও তৃণমূল কংগ্রেস দলের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জী মন্তব্য করেন, "হাইকোর্টের এক সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চে আমরা আগে জিতেছি, ডিভিশন বেঞ্চের রায় টাটাদের পক্ষে গেছে৻ ফলাফল এক এক হয়েছে৻ এবার ফাইনাল বাকি রয়েছে৻"

রায় ঘোষণার পরে সরকার জানিয়েছে যে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে৻

শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী জানান, "জমি দিতে অনিচ্ছুক কৃষকদের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা লড়াই চালিয়েছেন এখনও তাঁদের পাশেই থাকবেন তাঁরা৻"

আমরা বার বার বলেছি যে ইচ্ছুক আর অনিচ্ছুক কৃষকদের মধ্যে ফারাক করা উচিত নয়৻ আরও বলেছিলাম, আইনত রাষ্ট্রপতির সম্মতি দরকার৻ তাও নেওয়া হয় নি৻

সূর্যকান্ত মিশ্র, বিরোধী দলনেতা

অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, "মানুষ তাঁদের পক্ষে রায় দিয়েছে৻ জমি ফেরত দিতেই পারেন – তাতে আমাদের আপত্তি ছিল না৻ কিন্তু আমরা বার বার বলেছি যে ইচ্ছুক আর অনিচ্ছুক কৃষকদের মধ্যে ফারাক করা উচিত নয়৻ আরও বলেছিলাম, আইনত রাষ্ট্রপতির সম্মতি দরকার৻ তাও নেওয়া হয় নি৻ আমরা জানতাম যে এই পদ্ধতিতে তৈরি আইন অসাংবিধানিক বলে প্রমাণিত হবে৻"

২০০৬ সালে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার সিঙ্গুরে প্রায় এক হাজার একর জমি টাটা গোষ্ঠীকে দিয়েছিল পৃথিবীর সব থেকে সস্তা গাড়ী ন্যানো-র কারখানা তৈরি করতে৻

জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে৻

শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে টাটা গোষ্ঠী কারখানাটি গুজরাতে সরিয়ে নিয়ে যান৻ কিন্তু কারখানার জন্য নেওয়া জমির স্বত্ত্ব তাঁরা ছাড়েন নি৻

মমতা ব্যানার্জীর দাবি ছিল যেসব কৃষকের জমি তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তাঁদের ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দিতে হবে৻

গতবছর ক্ষমতায় আসার পরেই তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার আইন করে ওই জমিটি টাটাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়৻

টাটা গোষ্ঠী ওই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করেছিল৻ আজ সেই মামলারই রায় ঘোষিত হল৻

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ আইনটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষিত হওয়ায় মমতা ব্যানার্জী এবং তাঁর সরকার এক বড়সড় ধাক্কা খেল কারণ গত কয়েক বছর ধরে তাঁর আন্দোলনগুলির কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের বিষয়টি ৻

Friday, December 23, 2011

বাংলার ঘাড়ে এখন 'ন্যানো'র ভূত

সিঙ্গুরের ভূত এবার মাঠে নামছে। 'জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা যাবেনা' এইরকম সুরে আন্দোলন করে সিঙ্গুরে 'ন্যানো' গাড়ি তৈরির কাজ মাঝমাঠেই মেরে ফেলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গের গরম মাথার উন্নয়নবিরোধী লোকেদের ঠান্ডা মাথার খুন। খুন হল সিঙ্গুরের ন্যানো। তাঁর সেই 'কৃষক দরদী' খুনের কিনারা আজ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। বাংলার মানুষ 'ন্যানো'খুনীকে পুরস্কৃত করে রাজসিংহাসনে চাপিয়ে দিয়েছেন। সিংহাসনের নিচেই লুকিয়ে রয়েছে 'ন্যানো'র ভূত। জ্বালাতন শুরু করেছে।

কাটোয়ায় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের (এনটিপিসিতাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্যে প্রাক্তন সরকারপ্রয়োজনীয় ১১০০ একর জমির মধ্যে ৫৫০ একরের দাম জমি মালিকদের মিটিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিলবাকি জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া একেবারে শেষের মুখে থাকলেও বিধানসভা নির্বাচন এসে পড়লে সেই কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে থাকল। এরপর হয়ে গেল পরিবর্তন। ক্ষমতায় এল নতুন সরকার। মমতার সরকার। 'নীতি' বানিয়ে বলে দেওয়া হল জমি অধিগ্রহণ আর সরকারের কাজ নয়। ওতে বর্তমান সরকারের 'কৃষক দরদী' ভাবমূর্তিতে কালি লেগে যাবে। তাই এখনকার নীতি অনুযায়ী, যে শিল্প করবে তাকেই কৃষকের কাছ থেকে জমি বাগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এসে শিল্পপতিরা জমি অধিগ্রহণ করতে চাইছেন না। 'ন্যানো'র ভূতওদের তাড়া করছে। 'শিল্পী'রা চাইছেন জমি আদায়ের ঝামেলা সরকার নিক।
এ রাজ্যে জমি বহু বিভক্ত। জমির মালিকও বহু। বেশির ভাগ রাজ্যে ভূবন্টণ হয়নি বলে শিল্পপতিরা সেখানে দালাল নামিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী জমি কিনতে সক্ষম। এরাজ্যে দালালরাও দু দশ কাঠা বা বিঘেটাক কিনতে তৈরি আছে। কিন্তু হাজার হাজার একর জমি কেনা দালালদের ক্ষমতার বাইরে। এর ফলে নতুন 'শিল্পী'রা তাদের শিল্প সম্ভার বাংলার মাঠে নামাচ্ছেনা। বলা হচ্ছে 'ন্যানো'র ভূত বাংলার মাঠে ঘাপটি মেরে বসে আছে বলেই এইরকম হচ্ছে। লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে রাজি। জমি আদায় করুক সরকার এরকমই তাঁরা দাবি করেছেন। অথচ নতুন সরকারের জমি অধিগ্রহণ নীতি বলছে জমি আদায় করবে 'শিল্পী'রা। কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘাড় মটকে দিয়েছে 'ন্যানো'র ভূত। এবার লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর ঘাড় মটকাবে বলে বসে আছে। সেই ভয়ে এই কোম্পানি মাঠে না নেমেই বলছে আগে ওঝা ডেকে 'ভূত ঝাড়ো'।
গেঁওখালিতে জাহাজ তৈরির কারখানা ঘাড়েও 'ন্যানো'র ভুত। জামুরিয়ায় ভূষণ স্টিলের ইস্পাত প্রকল্প ওরঘুনাথপুরের তিনটি ইস্পাত প্রকল্প জয় বালাজিআধুনিক  শ্যাম স্টিলটেক্সম্যাকো রেল  ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থারইস্পাত প্রকল্প, রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর সিমেন্ট প্রকল্পপানাগড়ে হিন্দুস্থান ন্যাশনাল গ্লাস সংস্থার প্রকল্পজোকায় টেকনোইন্ডিয়ার হাব তৈরির প্রকল্পের ঘাড়ে চেপেছে একই ভূত  বলা হচ্ছে, সব মিলিয়ে মমতার সরকারের কাছেবিনিয়োগের যে প্রস্তাবগুলি জমা পড়েছেতাদের অধিকাংশের জমি সংস্থানের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনিশিল্প দফতর। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতির ঘাড়েও চাপতে চাইছে 'ন্যানো'।
শিল্পে লগ্নির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জমি। বর্তমান সরকার 'ন্যানো' ভূতের ভয়ে জমি অধিগ্রহণ নীতির দোহাই দিয়ে 'লেজ' গুটিয়ে নিয়েছে আগেই। সমস্যার সমাধান দূর অস্ত। শিল্পের ভবিষ্যত অন্ধকার। চাকরির সু্যোগ করে দেওয়ার নামে চোখে সরষে ফুল দেখছে বর্তমান সরকার। 'কৃষক দরদী' বর্তমান সরকারকে শেষে না কৃষকরাই 'লেজে গোবরে' করে ফেলে! 'ন্যানো' এখন মেঠো ভূত।
এই ভূতের গল্পে আবার কিছু মাতাল নায়ক আছেন। তাঁরা বলছেন লগ্নিকারীরা যদি নিজের পছন্দের জায়গায় শিল্প করতে জমি চাইছেন তা তাঁরা দিতে পারবেন না। মাতালরা বলছেন যে তাঁরা যে জমিতে শিল্প করতে বলবেন সেই সব জমিতেই 'শিল্পী'রা এসে শিল্প করুন। 'শিল্পী'রা মনে মনে হয়ত বলছেন, একে তো 'ন্যানো'র ভূত, তার ওপর মাতালদের মামদোবাজি! মাতালরা এখন সব শিল্পপতিদের জঙ্গল দেখিয়ে বলছেন, জঙ্গলে চলে যান, বনে বাদাড়ে একেবারে নিরিবিলিতে শিল্প করুন। ওখানে জমি অনেক। 'শিল্পী'রা মাতলামি দেখে মনে মনে হাসছেন। বাংলার মাঠেই শুধু 'ন্যানো' ভূতের আড্ডা। তাই দূরে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করলে ক্ষতি নেই। মাঠে না নামলে 'ন্যানো' ভূতের তাড়া খাওয়ার ভয় নেই। আর বাংলায় বলে, মাতালদের আবার ভূতের ভয়! তাই বাংলার মাতালদের 'ন্যানো' ভূতের ভয় নেই। দিব্যি সকাল বিকেল সুগন্ধী সুস্বাদু পানীয় সহযোগে ফুর্তি করো আর পাঁকে বসে পাঁক ছিটিয়ে দোল খেলো। রাধা কৃষ্ণের লীলা চলুক। গোল্লায় যাক শিল্প। প্রতিশ্রুতিটুকু বেঁচে থাকলেই হল।

সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা দখলের চেষ্টা তৃণমুলের


রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার সিঙ্গুরে বহুল আলোচিত টাটার ন্যানোর কারখানার পরিত্যক্ত প্রকল্প অঞ্চলে রোববার দুপুরে প্রবেশ করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমুল নিয়ন্ত্রিত সংগঠন কৃষিজমি রক্ষা কমিটি।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা সরিয়ে নেওয়ার পরও এই প্রকল্প অঞ্চলটিতে সর্বক্ষণই পুলিশের নিরাপত্তা থাকে। দুপুরে সিঙ্গুরের জেলা বামফ্রন্টের একটি জনসভায় যখন মুখমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বক্তব্য রাখছিলেন। ঠিক তখনই এই প্রকল্পের খাসেরবেড়ি এলাকার গার্ড ওয়াল ভেঙে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির মিছিল ভিতরে ঢুকে পড়ে।

সুত্রটি আরও জানাচ্ছে, মিছিলটির নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় তৃণমুল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচর্য ও তৃণমুল নেতা বেচারাম মান্না। উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা তাদের বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ করে ব্যাপক পাথর ছুড়ে মারে। পুলিশ লাঠিপেটা করলেও বৃষ্টির মতো পুলিশের পাথর ওপর পড়তে থাকে। এতে দুজন পুলিশ কর্মী মারাত্মক আহত হন। চলে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এরপর পুলি কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে অবস্থা আয়ত্মে আনে।

এদিকে সিঙ্গুরে রাজ্য বামফ্রন্টের সভা ঘিরে বিশাল জনসমাগম হয়। সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের সন্ত্রাসের জন্য তৃণমুল ও মাওবাদীরা দায়ী। আমরা সিঙ্গুরে আবার মোটর গাড়ির কারখানা করব। ওরা মানুষকে ভুল বুঝিয়েছিল। এখন মানুষ তা বুঝতে পারছেন। জোর করে টাটাদের এখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে ওরা। লাভ কার হল? এখন গুজরাট থেকে তৈরি ন্যানো গাড়ি সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে। আসুন এবার আরা রুখে দাঁড়াই। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া চলবেই।'

ভারতীয় সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১১


পাল্টা অনশন মঞ্চে উন্নয়ন নিয়েই প্রশ্ন বাঘেলার

ন্যানো রোখার জন্য সাধুবাদ মমতাকে

নিজস্ব সংবাদদাতা 
নয়াদিল্লি, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১১

Shankar Sinh Baghela

অনশন মঞ্চে শঙ্করসিন বাঘেলা। ছবি- পিটিআই।

নরেন্দ্র মোদীর পাল্টা অনশনে নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরণ নিলেন শঙ্করসিন বাঘেলা। বললেন, পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে সঠিক আন্দোলনই করেছিলেন মমতা।

এত দিন মোদীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলত কংগ্রেস। যা তাঁর উন্নয়নের স্লোগানের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। এ বার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী যখন নিজেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে অনশনে বসছেন, তখন তাঁর 'সদ্ভাবনা'-কে কটাক্ষ করার পাশাপাশি উন্নয়নের সাফল্যকে আক্রমণ করলেন বাঘেলা। সেই সূত্রে ন্যানো কারখানার গুরুত্ব খাটো করতে গিয়ে খোলা গলায় সমর্থন করলেন মমতাকে। জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে যাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন আজ অনশনে বসলেন, তত ক্ষণে আট কিলোমিটার দূরে সাবরমতী আশ্রমের সামনের ফুটপাথে বসে ঘাম ঝরিয়ে ফেলেছেন শঙ্করসিন বাঘেলা। তাঁর অনশন শুরু হয়েছে মোদীর থেকে এক ঘণ্টা আগে। শেষ হবে মোদীর থেকে দু'ঘণ্টা পরে। এবং সেখানে বসে বাঘেলার মুখে এখন উন্নয়নের বিরোধিতা।
টাটা মোটরস ন্যানো কারখানা সিঙ্গুর থেকে তুলে সানন্দে নিয়ে আসার পর সেটি নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের মুকুটে অন্যতম পালক বলেই গণ্য হয়। বাঘেলা কিন্তু সেই ন্যানোকেই নিশানা করলেন। বললেন, "ন্যানো কারখানা করে এ রাজ্যের কোনও স্বার্থসিদ্ধি হয়নি। আমরা কি ১৫ হাজার টাকা কমে ন্যানো পাচ্ছি? আর সেই কারখানায়ও তো কাজের কাজ কিছু হয়নি।" অভিযোগ তুললেন, টাটাদের অনৈতিক ভাবে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন মোদী। এই সূত্রে সিঙ্গুরে মমতার আন্দোলনকে খোলা গলায় সমর্থন করে তাঁকে সাধুবাদ দেন বাঘেলা। বলেন, ওই আন্দোলন সঠিক ছিল। গোটা দেশকে পথ দেখিয়েছিল।

১২ বছর ধরে মোদী গুজরাতে রাজত্ব করছেন। ২০১২-র নভেম্বরে এই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। তার আগে মোদী যখন 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য অনশন'-এ বসে সংখ্যালঘুদের মন জয় করতে চাইছেন, তখন পাল্টা অনশনে বসতেই হয়েছে বাঘেলাদের। এই অবস্থায় মোদীর সংখ্যালঘু প্রীতি নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছেন বাঘেলা, জানতে চেয়েছেন, "মোদী এই সদ্ভাবনা ২০০২ সালে সংখ্যালঘুদের জন্য দেখাননি কেন?" তেমনই উন্নয়নের অন্যতম প্রতীক ন্যানো কারখানা নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি।

গুজরাতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, ন্যানোকে সানন্দে নিয়ে আসাটা মোদীর বড় সাফল্য বলেই ধরা হয়। কারণ, সেই সূত্র ধরে ওই রাজ্যে এখন অটো হাব গড়ে উঠতে চলেছে। সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা গড়ার সময় যে অটো হাব তৈরির কথা পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বহু বার বলেছেন। এই একই যুক্তি দেখিয়ে আজ বাঘেলার সমালোচনাকে খণ্ডন করেছেন বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেছেন, "গুজরাতে অটো হাব হচ্ছে। সেখানে শুধু টাটা বা ন্যানোই নয়, দেশবিদেশের অনেক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাই এসেছে এবং আসতে চাইছে। বাঘেলা উন্নয়ন দেখতে পান না। তাই এ কথা বলছেন।" প্রসঙ্গত, ন্যানো ছাড়াও গুজরাতে ইতিমধ্যেই মিৎসুবিশি পাজেরোর কারখানা হয়েছে, জেনারেল মোটরস এসেছে। আসতে চেয়ে চিন্তাভাবনা করছে ফোর্ড মোটরের মতো আরও বহুজাতিক সংস্থা।

বাঘেলা সেই উন্নয়ন প্রচেষ্টাকেই প্রশ্নের মুখে তো ফেলতে চাইলেনই, পাশাপাশি ন্যানোর বিরোধিতা করে মমতাকে সাধুবাদ জানিয়ে ইউপিএ-র গুরুত্বপূর্ণ শরিকের মন জয়ের চেষ্টা করলেন বলেও মনে করা হচ্ছে। দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অণ্ণার অনশন, মূল্যবৃদ্ধি, সব মিলিয়ে কেন্দ্রে এখন কংগ্রেস যথেষ্টই বিপাকে। সেখানে মমতা তথা তৃণমূলকে প্রয়োজন। এর আগে মমতার আপত্তি মেনে জমি বিলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বা বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার জলচুক্তি স্থগিত রেখে সে কথা বুঝিয়েছেন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আজ বাঘেলার বক্তব্যের মাধ্যমে আরও এক বার স্পষ্ট হল বলে মনে করা হচ্ছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে মোদীর অনশনকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বাঘেলা তথা রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। সাবরমতী আশ্রমের সামনের ফুটপাথে বসে ঘাম মুছতে মুছতে বাঘেলা প্রশ্ন তুলেছেন, "মোদীর অনশনের জন্য রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে কেন ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে? তিনি নিজের বাড়িতে অনশনে বসলেন না কেন?" আর কংগ্রেস নেতারা বলছেন, বাঘেলার অনশন মোদীর মতো 'পাঁচতারা' দেখনদারি বা বিপণনের অনশন নয়। এই অনশন সাধারণ মানুষের স্বার্থে।

বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ইতিমধ্যেই বাঘেলাকে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করে দিয়েছে এআইসিসি। কারণ, গুজরাত কংগ্রেসে তিনিই এখন একমাত্র নেতা, যাঁর গোটা রাজ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাঁকে সামনে রেখে রাজ্য কংগ্রেসের বিবদমান গোষ্ঠীগুলিও একজোট হয়েছে। বাঘেলার সঙ্গেই অনশনে বসেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অর্জুন মোধভাড়িয়া। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শক্তিসিন গোহিলও বাঘেলার মঞ্চে যোগ দিয়েছেন। মোদীর অনশনে বসার 'প্রকৃত উদ্দেশ্য' নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে এই সরকার। বাঘেলার দাবি, দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়েই লোকায়ুক্ত নিয়োগ নিয়ে ঢিলেমি দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে মোদীর মঞ্চে যেমন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব ভিড় জমিয়েছেন, বাঘেলার মঞ্চে কিন্তু তেমন কিছু দেখা যায়নি। কংগ্রেসের নেতাদের মতে, এমন কিছু করলে মোদীই বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে যাবেন। তাই এখন লড়াইটা রাজ্য রাজনীতিতেই আপাতত বাঁধা থাকুক।

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://my.anandabazar.com/content/%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%96%E0%A6%AC%E0%A6%B0-431?page=312


TeleTalk

সিঙ্গুরে জমি পুনর্বণ্টনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ

অমর সাহা, কলকাতা | তারিখ: ৩০-০৬-২০১১

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল বুধবার পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের মধ্যে পুনর্বণ্টনের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। টাটা মোটরসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট এ আদেশ জারি করেন।
সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আদেশে বলেছেন, কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন সিঙ্গুরের জমি ফেরত দিতে পারবে না রাজ্য সরকার। তবে জমির জরিপসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া চালাতে পারবে। আগামী এক মাসের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট মূল মামলার শুনানি শেষে টাটার জমি ফেরতের ওপর চূড়ান্ত নির্দেশ দিতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে টাটা মোটরস সিঙ্গুর মামলায় প্রাথমিক জয় পেল। 
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পাল সিঙ্গুরের জমি বণ্টনের ওপর টাটার চাওয়া অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের আবেদন সোমবার খারিজ করে দেন। এরপরই মঙ্গলবার টাটা মোটরস কলকাতা হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। গতকাল সকালে সেই আপিলের শুনানি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পি সত্যশিবম ও বিচারপতি এ কে পট্রনায়কের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণের জন্য সাবেক পশ্চিমবঙ্গ সরকার টাটা মোটরসকে ৯৯৭ দশমিক ১৭ একর জমি ইজারা দেয়। সেই জমি ফের যাতে কৃষকদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা না হয়, সেই আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ২২ জুন অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়েছিল টাটা। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট গত সোমবার সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে কলকাতা হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে টাটা মোটরস। এই আপিলে সিঙ্গুরের জমি পুনরায় বণ্টনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সিঙ্গুরের জমি দ্রুত কৃষকদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। সোমবার জমি জরিপের জন্য রাজ্য ৫০ জন সার্ভেয়ারকে সিঙ্গুরে পাঠানো হয়। 
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর আন্দোলনকে পুঁজি করে এবার পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় আসে। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিমতো মমতা অনিচ্ছুক কৃষকদের প্রায় ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। এই লক্ষ্যে সরকার ১৪ জুন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য 'সিঙ্গুর পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিল' নামে একটি আইন পাস করে। ওই আইনবলে ২১ জুন রাতেই সিঙ্গুরের সব জমির দখল নেয় রাজ্য সরকার। তারপর এই জমি অনিচ্ছুক কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে টাটা মোটরস।
এই রায় ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এতে করে নৈতিক বিজয় হয়েছে রাজ্য সরকারের। এই রায় সাধারণ মানুষের পক্ষে যাবে। সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুর নিয়ে বিধানসভায় পাস হওয়া আইনকে বৈধ নয় বলে ঘোষণা বা জমি বণ্টনের গোটা প্রক্রিয়ার ওপর যে কোনো নির্দেশ দেননি—এ জন্য মমতা স্বস্তি প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, সিঙ্গুরে জমি বণ্টন করা না হলেও এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া যথারীতি চলবে।



সিঙ্গুরে জমি নিয়ে মামলা টাটা মোটরসের কাছে আদালতে হেরে গেলেন মমতা
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ সিঙ্গুরে কারখানা করার জন্য টাটা মোটরসকে ইজারা দেয়া জমি পুনরুদ্ধারে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় পাস করা আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন সরকারের করা সিঙ্গুর ল্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১১ বাতিল করে শুক্রবার এই রায় দেয়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, এর আগে গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর এ আইনকে বৈধতা দিয়েছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ। ওই আদেশের বিরুদ্ধে টাটা মোটরস আপিল করলে বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও মৃণাল কান্তি চৌধুরীর বেঞ্চকে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেয়া হয়।
পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকাকালে বিশ্বের সবচেয়ে কম দামি গাড়ি 'ন্যানোর' কারখানা করার জন্য টাটা মোটরসকে সিঙ্গুরে ৯৯৭ একর জমি ইজারা দেয়া হয়। এজন্য ১৩ হাজার মালিকের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার।
তবে তাদের মধ্যে দুই হাজার কৃষক চারশ' একর জমি দিতে অস্বীকার করে।
সেই সময় বিরোধী দলে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন টাটা মোটরসকে ওই জমি ইজারা দেয়ার বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। দুই হাজার কৃষককে জমি ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
মমতার আন্দোলনের মুখে ২০০৮ সালের অক্টোবরে সিঙ্গুরে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে গুজরাটে ন্যানো প্রকল্প শুরু করে টাটা।
২০১১ সালের মে মাসের নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সিঙ্গুর ল্যান্ড রিহাবিলিটেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১১ পাস করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ আইনের আওতায় তিনি টাটার কাছ থেকে জমি ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষমতা লাভ করেন।
টাটা এর বিরুদ্ধে আদালতে গেলে গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায় মমতার করা আইনকে বৈধতা দেন। কিন্তু তাতে না দমে ফের আপিল করে টাটা মোটরস।
তাদের দাবি, সিঙ্গুরে কারখানা করার জন্য তারা দেড় হাজার কোটি রুপী বিনিয়োগ করেছে। এখন ওই অর্থ ফেরতও চাইছে তারা।

ইয়াহুর অপ্রিয় দশের সেরা মমতা ব্যানার্জী



দীপক রায়, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে
একদিকে বিখ্যাত টাইম পত্রিকা দুনিয়ার প্রভাবশালী প্রথম ১০০ জনের মধ্যে স্থান দিয়েছে তাকে। আরেকদিকে ওয়েব পোর্টাল ইয়াহু ভারতের প্রথম ১০ জন অপ্রিয় রাজনীতিকের তালিকাতে স্থান দিয়েছে তাকে। এবং সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল দলের প্রধান নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। কয়েকদিন আগেই টাইম পত্রিকা তাঁকে যখন দুনিয়ার সেরা ক্ষমতাবানদের তালিকায় স্থান দিয়েছিল, তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রচারমাধ্যমে বেশ আলোড়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ইয়াহু'র অপ্রিয় তালিকাতে এত তাড়াতাড়ি তার নাম এসে যাবে কেউ কলপনাও করতে পারেননি। অবশ্য ভারতের সেই অপ্রিয় তালিকায় আছেন তিনি সবার উপরে। অপ্রিয় রাজনীতিবিদের সেই তালিকায় মমতা ব্যানার্জির পরে যথাক্রমে আছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, বি জে পি নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দুর্নীতির দায়ে জেলে থাকা প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা, কানিমোঝি, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কুমারী মায়াবতী, কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ার এবং কমনওয়েলথ গেমসে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সুরেশ কালমাদি রয়েছেন।
প্রথম সেরা ১০০ তালিকাতে মমতা দেবীর নাম থাকায় যতটা খুশি হয়েছিলেন তৃনমুল পন্থীরা, প্রথম অপ্রিয় ১০ তালিকা প্রকাশের পরে ঠিক ততটাই অখুশি তারা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এটা তাকে বদনাম করার জন্য করা হয়েছে। আর বাঙ্গালীর চিরাচরিত আড্ডার ঠেকে এখন এই ১০০ আর ১০ নিয়ে চলছে জমিয়ে রসিকতা।
ইয়াহু জানিয়েছে, 'তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আশা করা হয়েছিল সিপিএম এর থেকে ভালো সরকার চালাবেন। কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনা ঘটতে থাকে। ধর্ষণের ঘটনাকে সাজানো বলে মন্তব্য করে তিনি জানিয়ে দেন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এই অভিযোগ। এক মহিলা অফিসার তদন্ত করে প্রমাণ করে দেন ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা নয়। মমতা তাঁকেই পদ থেকে সরিয়ে দেন। এরপর এক অধ্যাপক এবং বিজ্ঞানীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সিপিএম সমর্থকদের বিয়েও করা যাবে না'। আর সেই কারণে তিনি ইতিমধ্যেই ভারতের সবচেয়ে অপ্রিয় রাজনীতিকদের দলের সেরা হিসাবে মনোনীত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে মমতা বিরোধী অনশন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে গত কয়েক বছর ধরে সমর্থন জানিয়ে আসা কিছু বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছে রাজ্য সরকার আর ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের।

মমতা ব্যানার্জী

ভোটের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি মমতা ব্যানার্জী রাখছেন না বলে অভিযোগ

আজ (মঙ্গলবার) থেকে কয়েকটি মানবাধিকার ও গণসংগঠন বন্দীমুক্তি ও মাওবাদী বিরোধী অভিযান বন্ধের দাবিতে অনশন শুরু করেছে কলকাতায়।

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনের সময় থেকেই যেসব বুদ্ধিজীবী বা সংগঠন মমতা ব্যানার্জীর সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁদেরই একাংশের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধ বেঁধেছে ক্ষমতায় আসার ৬ মাসের মধ্যেই৻

নতুন সরকার যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষোভ দানা বাঁধলেও মানবাধিকার সংগঠন এ পি ডি আরের একটি অনশন কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে ওই ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে৻

এ পি ডি আরের বক্তব্য, শহরের কেন্দ্রস্থল ধর্মতলায় বন্দীমুক্তি ও মাওবাদী-বিরোধী অপারেশন বন্ধের দাবিতে তাঁদের ওই অনশনের অনুমতি দিয়েও পরে তা বাতিল করে পুলিশ৻

বিনা অনুমতিতেই আজ থেকে অনশন শুরু করেছি।

রাংতা মুন্সী, এপিডিআর নেত্রী

সংগঠনের নেত্রী রাংতা মুন্সী বলছিলেন, "আমাদের কাছে এসপ্ল্যানেডে সভা করার অনুমতি বাতিলের কথা পুলিশ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, কিন্তু বউবাজারে অনশনের জন্য অনুমতি চেয়েও আমরা তা পাই নি৻ বিনা অনুমতিতেই আজ থেকে অনশন শুরু করেছি৻"

অনশনের অংশগ্রহণকারী আরেকজন, দিলীপ চক্রবর্তী বলছিলেন যে মমতা ব্যানার্জী তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন আর দ্বিচারিতাও করছেন৻

"মমতা ব্যানার্জী ভোটের প্রচারে বলেছিলেন রাজনৈতিক বন্দীদের নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়া হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে, যৌথ বাহিনী সরিয়ে দেওয়া হবে৻ কোনওটাই তো হয় নি," অভিযোগ মি. চক্রবর্তীর৻

এই অনশন আন্দোলনের অনুমোদন বাতিলকে কেন্দ্র করে মমতা ব্যানার্জীর একসময়কার সমর্থক, যাঁদের সাধারণভাবে পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবী বলা হয়ে থাকে, তাঁরা তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন৻ প্রতিবাদ করার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলেও তাঁদের অভিযোগ৻

দিনকয়েক আগে তাঁদের ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাগসাইসাই পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখিকা ও সমাজসেবী মহাশ্বেতা দেবী মমতা ব্যানার্জীর সরকারকে ফ্যাসিস্ট বলে মন্তব্য করেন৻

মমতা ব্যানার্জী ভোটের প্রচারে বলেছিলেন রাজনৈতিক বন্দীদের নিঃশর্তে মুক্তি দেওয়া হবে, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে, যৌথ বাহিনী সরিয়ে দেওয়া হবে৻ কোনওটাই তো হয় নি।

দিলীপ চক্রবর্তী, অনশনে অংশগ্রহণকারী

কবি শঙ্খ ঘোষ, অভিনেত্রী অপর্ণা সেন বা নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনদের মতো লেখক-শিল্পীরাও প্রতিবাদ জানান ওই পুলিশী অনুমোদন বাতিলের৻

এ পি ডি আরের অনশন অনুমোদন না পেলেও ওই একই জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন বুধবার একটি সভা করে৻

পুলিশ অবশ্য বলছে যে এ পি ডি আরের অনেক আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের ট্রেড ইউনিয়ন ওই স্থানে সভার অনুমতি চেয়েছিল বলে তাদের আবেদনই গৃহীত হয়েছে৻

অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জীর ঘনিষ্ঠতম শিক্ষাবিদদের একজন, সুনন্দ সান্যাল শিক্ষাসংক্রান্ত পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিতে চেয়েছেন৻ সেই পদত্যাগপত্র অবশ্য এখনও গৃহীত হয় নি৻

মিঃ সান্যালের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সরকারের মতবিরোধ চলছে৻

বামফ্রন্ট তাদের আমলে শিক্ষায় দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে বলে ভোটের আগে যে অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা ব্যানার্জী, ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল কংগ্রেস একই কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিবর্তনপন্থী বুদ্ধিজীবীদেরই একাংশ৻ বিভিন্ন কলেজ পরিচালন সমিতির মাথায় তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের সাংসদ, বিধায়কদের বসিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করছেন৻

মমতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন সাবেক বিধায়ক
নতুন বই ঝড় তুলেছে রাজনৈতিক মহলে
সুপর্ণা চক্রবর্ত্তী, কলকাতা থেকে ॥ তৃণমূলের এখন 'গোদের উপর বিষফোঁড়া'। একে, চারদিকে এই সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে রাজনৈতিক মহল গরম হয়ে আছে, তার ওপর তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক দীপক ঘোষের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে লেখা বই ঝড় তুলল রাজনৈতিক মহলে। 
শুক্রবার কলকাতা প্রেসক্লাবে 'মমতা ব্যানার্জী এজ আই হ্যাভ নোন হার' নামে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন তিনি। এই বইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, তাঁর পরিবার এবং তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেছেন দীপক ঘোষ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী থেকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার। একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে লেখা বই 'মমতা ব্যানার্জী এজ আই হ্যাভ নোন হার'। লেখক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক দীপক ঘোষ। তার ওপর প্রাক্তন আইএএস অফিসারও তিনি। মমতা ব্যানার্জী, তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন দীপক ঘোষ। প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে। চিঠির সঙ্গে সদ্য প্রকাশিত বইয়ের প্রতিলিপিও পাঠিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার, পারিষদ এবং তৃণমূলের একাধিক গরমিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

কী রয়েছে দীপক ঘোষের লেখা বইতে? 
মোট ২১টি বিষয় রয়েছে 'মমতা ব্যানার্জী এজ আই হ্যাভ নোন হার' বইটিতে। অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন মমতা ব্যানার্জী। কিন্তু দীপক ঘোষের অভিযোগ, পার্টি সংবিধান অনুযায়ী এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। ২০০৬ সালে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানার বিরোধিতা করে দীর্ঘদিন অনশন করেছিলেন মমতা ব্যানার্জী। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা অভিযোগ এনেছেন, নৈশভোজে স্যান্ডউইচ এবং দিনভর চকোলেট সহযোগে অনশন করেছেন নেত্রী। মমতা ব্যানার্জীর নবরতœ সভার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করেন দীপক ঘোষ। 
'গ্রাসরুট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট' একটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। ২০০২ সালে তৃণমূলের নেতারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। দীপক ঘোষের অভিযোগ জনকল্যাণের বদলে আসলে মমতা ব্যানার্জীসহ অন্য তৃণমূল নেতাদের স্বার্থ চরিতার্থ করে ওই প্রতিষ্ঠান। দার্জিলিং থেকে গোর্খাল্যান্ড, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জীর পদক্ষেপকে তাঁর অন্যতম ভুল বলেই অভিযোগ করেছেন দীপক ঘোষ। তাঁর যুক্তি পাহাড়ে অশান্তি থামেনি। বরং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে। দার্জিলিংয়ে এখন পর্যটকরা যেতে পারছে না। মার খাচ্ছে পর্যটনশিল্প।এর জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা দীপক ঘোষের বইটিতে বিস্ফোরক তথ্য রয়েছে বলে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যাল। শুক্রবার কলকাতা প্রেসক্লাবে দীপক ঘোষের এই বইপ্রকাশ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। কার্যত কোন বক্তব্যই রাখতে পারেননি সুনন্দ সান্যাল। প্রশ্ন হলো, নেত্রী যদি প্রকৃতই ভাল মানুষ হন, তাহলে সবাই মিলে তাঁর পেছনে কেন লেগেছে?

সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম থেকে হরিপুর – যে আগুন জ্বলবেই

প্রস্তাবিত পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোসম্প্রতি হরিপুরে রাশিয়ার সহযোগিতায় একটি পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রস্তাবহয়েছে। আমি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় পড়লাম "From Russia with Love" শীর্ষক খবরে ভারতে পাঁচটি পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র বানাতে রাশিয়া সাহায্য করবে – যার মধ্যে হরিপুর একটি। পশ্চিমবঙ্গে যে কোনো অঞ্চলেই শিল্প স্থাপনের কথা হলেই প্রথম যে কথাটা উঠে আসছে আজকাল সেটা হল জমি কোথা থেকে আসবে? সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের অভিজ্ঞতার পর শিল্পের জন্য জমি দখলে সরকার বাহাদুর স্বাভাবিকভাবেই ব্যাকফুটে। আর তা যদি হয় পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জমি – তাহলে তো কথাই নেই।

পরমাণু বিদ্যুত ক্ষতিকর কি না সে বিতর্কে আমি যাচ্ছি না, কারণ আমি মনে করি এ ছাড়াও বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব কিন্তু তা-ও সহজ কিছু নয়। আমি মূলত সেই ইস্যুটা নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব যেটা বারেবারে ফিরে ফিরে আসছে। শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ – পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ।

উচ্ছেদ করা মানুষদের "ন্যায্য" পুনর্বাসন বলতে কি বোঝা যায় আমি জানি না, কিন্তু আমার কাছে এটাই সবথেকে disputed। ধরা যাক কোনো ১০০০ একর জমিতে কোনো শিল্প স্থাপন হবে। এখন আমার জমি হয়ত পড়বে তালুকের মধ্যে আর আমার প্রতিবেশীর জমি পড়বে বাইরে। তার মানে প্রতিবেশী তার জমি খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবে আর আমাকে বিক্রি করতে হবে সরকার নির্ধারিত রেটে।

ধরা যাক ওই জায়গায় স্বাভাবিক জমির দাম ১০,০০০ টাকা একর। ওই দামেই কেনাবেচা হচ্ছে জমি। এখন শিল্প হবে শুনেই জমির দাম ঊর্ধগতিতে ছুটে ১০০,০০০ টাকা একরে পৌঁছে যাবে। গুজব ছড়াবে অচিরেই জমির দাম ৫০০,০০০ তে পৌঁছে যাবে। এখন সরকার বাহাদুর যতই আমাকে বলুক আপনাকে ন্যায্য দামের দ্বিগুণ দিচ্ছি, আপনি খুশী হবেন না আর দাবী জানাবেন – শিল্প হোক, কিন্তু আমার জমি বাইরে রেখে হোক।

দ্বিতীয়ত, আপনার বাপ-ঠাকুর্দা থেকে সবাই এই জমির ওপর ভরসা করেই খেয়ে এসেছে। আপনি ততটা পড়াশোনাও করেননি যে এককালীন টাকা নিয়ে সম্পত্তি বেচে ব্যবসা করে খাওয়ার সুযোগ করে নেবেন। ধরে নিন, আপনার কাছে ১০ লাখ টাকা এককালীন দিয়েই দেওয়া হল, বাজার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে তা দিয়ে আপনি কি করে খেতে পারবেন? পারবেন না। শুধু না পারার জন্য নয়, তিনি evaluate ও করতে পারবেন না যে এককালীন টাকা ভাল না জমির ওপর নির্ভর করে থাকা ভাল। তাই ভয় পাবেন আর এর সাথে যোগ হবে মানবাধিকার কর্মী ও বিরোধী দলের বক্তব্য। জুজু কাজে আসবে। আপনি বলবেন শিল্প হচ্ছে হোক – কিন্তু আমার জমিটা বাইরে রেখে – যাতে আপনি দেখেশুনে পরে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে জমি আপনি রাখবেন না বেচবেন।

সুতরাং যথেষ্ট সংখ্যক লোকের ন্যায্য পুনর্বাসন হবে না।

সুতরাং মানবাধিকার কর্মী ও বিরোধী দল একটা ক্রিটিকাল পপুলাশন ঠিকই পেয়ে যাবেন যারা জমি দিতে ইচ্ছুক নন। ইতিমধ্যে খবরও চলে এসেছে তৃণমূল বিধায়ক বিরোধিতা করেছেন হরিপুরে পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের।

সুতরাং জমি দেওয়াকে নিয়ে আন্দোলন হবেই – সে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক।

সরকার বাহাদুর "ন্যায্য" পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তাহলে আন্দোলন হবেই। কারণটা Perception। জমির কোনো নির্ধারিত মূল্য হয় না – যে জমি থেকে মানুষ মনে করে এ থেকে বেশী আয় আসবে, সেই জমির দাম তত বেশী – বাজার এভাবেই দাম নির্ধারণ করে জমির। এখন শিল্পের/ব্যবসার তুলনায় কৃষির উৎপাদনশীলতা অনেক কম – তাই শিল্পের/ব্যবসার/রিয়েল এস্টেটের জন্য জমির দাম স্বাভাবিকভাবেই অনেকগুণ বেশী হবে। আর এখানেই সরকার বাহাদুর ধরা খেয়ে যাবেন বিরোধী আর মানবাধিকার কর্মীদের হাতে। এই একই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে ততটা সমস্যা হয় না, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে কোনো শিল্পতালুক স্বাভাবিকভাবে গড়ে ওঠে না যাতে আশেপাশের জমির দামও বেড়ে যায়।

এবার আরো প্রশ্ন আসতে পারে – তাহলে আর রাজ্যগুলো কি করেছে? তারা কি ভাবে শিল্প বানাচ্ছে? এটার বেশ কয়েকটা উত্তর আছে – যেগুলো স্থানভেদে ভিন্ন। প্রথমত, ভারতের সর্বত্র পশ্চিমবঙ্গের মত কৃষি-নির্ভর নয়। দক্ষিণ ভারতে অনেক জায়গাতেই কোনো চাষবাস হয় না(যারা বিজয়ওয়াড়া থেকে হায়দ্রাবাদ ট্রেনে গেছেন কখনো তারা দেখবেন বিস্তীর্ণ ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে)। দ্বিতীয়ত, ভারতের সর্বত্র ভূমিসংষ্কার ততটা হয় নি – অর্থাৎ জমির মালিক এখন বড়লোক ও শিক্ষিত হয়ে গেছে। তার কাছে জমিটা যতটা না Asset তার চেয়ে বেশী Burden। সে জমি বেচে দিলেই খুশী, আর সেখানে কিছু টাকা এলে ভাগচাষীরাও খুশী (কারণটা পরের পয়েন্টে)। তৃতীয় কারণ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, ভারতে অন্যান্য জায়গায় মানুষ বিদেশে মাইগ্রেট করে এককালীন টাকা হাতে এলে। যাদের কিছু শিক্ষা-যোগ্যতা আছে তারা উন্নত দেশগুলোতে, যাদের পড়াশোনা কম তারা যায় মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়াতে (পড়াশোনা করেও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকেই যায় অবশ্য)। একই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটে। বাংলাদেশ বা দক্ষিণ ভারতে এই কারণেই রেমিট্যান্সের প্রবাহ এত বেশী। এই ট্রেন্ডটা অবশ্য শুরুই হয়েছে জমির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য। সুতরাং, বাঙালী চাষী জানে না সে ১০ লাখ টাকা দিয়ে কি করবে – কিন্তু বিশেষত দক্ষিণ-ভারতে লোকজন ওই টাকা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাবে – তার আত্মীয়স্বজনের কাছে থাকবে আর কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত স্বাভাবিক জীবনযাপনও করবে। তাই তার জীবনে ওই টাকাটার মূল্য জমিটার থেকে হয়ত কিছুটা বেশীই হবে। চতুর্থত, অধিকাংশ অঞ্চলেই পাঁচ বছরে সরকার পরিবর্তন হয়, সেখানে বিরোধী দলের মাথায় এই ভয়টাও কাজ করে যে পরে তাদেরও একই রোষের আগুনে পড়তে হবে। পশ্চিমবঙ্গে সেই স্কোপ নেই (বা এতদিন ছিল না)।

তাহলে সমাধান কি? সমাধান দুরকম – স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় কোনো জীবিকার প্রচলন ঘটিয়ে জীবিকার জন্য কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। তাতে লোকের ভয় কমবে জমি বেচে দেওয়ার। আরেকটা স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে – সিঙ্গুরের মত আরো কিছু প্রকল্প burst হতে দেওয়া। সেক্ষেত্রে শিল্পপতিদের মত জমি-বাজারেও confidence কমবে। শিল্প হবেই শুনলে আর জমির দাম দশ হাজার থেকে লাফিয়ে এক লাখে যাবে না – সবাই এটাও ভাববে যে শিল্প পরে নাও হতে পারে – সেক্ষেত্রে তাদের জমির বিনিয়োগ মাঠে মারা যাবে। তাই দাম বাড়লেও কচ্ছপ-গতিতে বাড়বে – risk বুঝে অনেকেই নিজে থেকেই জমি দিয়ে দিতেও উদ্যোগী হবে। যেমন এখন হয়েছে সিঙ্গুরে – অনেকের জমির দামই আবার আগের লেভেলের কাছাকাছি ফিরে এসেছে। আর, জমি-বাজার তুঙ্গে ওঠার আগেই জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

যতদিন না পশ্চিমবঙ্গে কৃষির বাইরে অন্য কিছু জীবিকার চল হচ্ছে – ততদিন এই পুনর্বাসন "ন্যায্য"ভাবে করা সম্ভব হবে না। শুধু তাই নয়, ন্যায্য পুনর্বাসন ন্যায্য কিনা সেটা evaluate করাও সম্ভব হবে না। বিতর্ক থেকে ততদিন আমি দূরেই থাকছি।

আরো খবর

লেখা শেষ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু আরেকটা প্রশ্নে খচখচ করছিল, তাই ভাবলাম সেটাও লিখেই ফেলি। আচ্ছা, সরকার সরে দাঁড়ালে শুধু কর্পোরেট আর জমির মালিকের মধ্যের দরে কি এর থেকে ভাল সমাধান হত?

যেখানে জমির দাম ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে অপেক্ষাকৃত কম, সেখানে এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা উচিত কারণ এতে বাজার-নির্ধারিত মূল্য পাওয়া সম্ভব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে জমি অধিগ্রহণ খুবই মুশকিল। কিভাবে? ধরা যাক আপনার দুই একরের জমিটা পড়েছে প্রকল্পের নির্ধারিত এলাকার একদম মাঝামাঝি জায়গায়। আপনি নিশ্চয় চাইবেন আপনার Strategic অবস্থানের সুবিধা নিয়ে যত পারা যায় টাকা কামিয়ে নিতে। আর আপনি এও বুঝে ফেলবেন আপনার হাতে আছে de facto veto -  অর্থাৎ আপনি কিছু প্রতিবেশীর সাথে দল বেঁধে জমি বেচব না বলে হুলিয়া দিলে প্রকল্প হবে না। এই অবস্থায় আপনি সবার আগে চাইবেন waiting game খেলতে আর নিজের জমির বর্তমান আয় সম্পর্কে বাড়িয়ে বলতে। বাজারে দেখবেন কত টাকায় কোম্পানী জমি কিনছে – যে দামে বিক্রি হবে গুজবে তার দ্বিগুণ দাম শোনা যাবে। আপনি নিজের মত করে তারও দ্বিগুণ দাম হাঁকবেন।

যেখানে জমি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য, সেখানে কোম্পানীর হাতে বিকল্প অস্ত্র থাকে – মানে তারা ইচ্ছা করলে প্রকল্পের ম্যাপ কিছুটা পরিবর্তন এনে আপনাকে বাদ দিয়েই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে দরাদরি দুপক্ষেই হয়, আপনার হাতে veto থাকে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে – যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০০০ লোক বসবাস করেন, সেখানে এই প্রচেষ্টা করাও কষ্টকর।

উল্টোদিকে কোম্পানী চাইবে হয় সব জমি কিনতে, নাহলে কোনো জমিই না কিনতে – অর্থাৎ all or none (হয় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সব জমি কিনবেন, নাহলে জমি কিনবেন না – কারণ মাঝপথে জমি কাউকে বিক্রি করে দেওয়া কষ্টকর – তখন আবার কমে যাওয়া দামে বিক্রি করে দিতে হবে)। কিন্তু all or none বাস্তবে কোম্পানীর মত third party এর পক্ষে সম্ভব নয়। তারা কোনো লোকাল এজেন্ট ঠিক করবে – যাদের সাথে তারা ফিক্সড প্রাইস চুক্তি করবে এই all or none শর্তে। এতে কোম্পানীর risk কমবে, outsource করে দেওয়া হবে লোকাল স্পেশালিস্টদের কাছে। এবার প্রশ্ন হবে লোকাল স্পেশালিস্ট কারা? খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা হবে স্থানীয় মস্তান-সহ রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের একটি আঁতাত যারা প্রয়োজনে ভয় দেখিয়ে আপনাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পিছপা হবে না। আপনি এবার ভয় পাবেন, ভাববেন এখন জমিটা বেচে দিলে তাও কিছু টাকা পাব, পরে পাড়ার রাজু মস্তান এসে আমাকে গুলি করে মেরে দিলে সেটাও পাব না। তাই আপনিও ভালয় ভালয় জমি বেচে দেবেন – কিছু হয়ত দরাদরির পরে। টাকার ভাল অংশই চলে যাবে এই আঁতাতের পকেটে, জমির মালিকের পকেট যেমন ফাঁকা ছিল তার থেকে হয়ত একটু উন্নতি হবে। এর পরেও সমস্যার সমাধান হয় না। আপনার প্রতিবেশী – যার টাকার লোভটা হয়ত আরো একটু বেশী (অথবা বৃদ্ধ মানুষ, শেষ বয়সে ভিটা ছাড়তে চান না) – তিনি কেন ছেড়ে দেবেন? তিনি ডেকে আনবেন বিরোধী মাস্তান-পার্টির আঁতাতকে। সংঘাতের রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হয় ক্ষমতাসীন দলকেই – তাই all out attack -এ তারা যেতে চাইবে না, বরং দুটো গুলিতে দুয়েকটা বিরোধী মস্তানকে যদি ধরাশায়ী করে ফেলা যায় … সব মিলে deadlock – কাজ এগোবে না – উপরন্তু গুন্ডারাজ সৃষ্টি হবে, যার পরিণতি রাজনৈতিক আন্দোলনের থেকে কম কিছু না।

http://coffeehouseradda.in/diganta/771/


থমকে প্রকল্প, খোঁজ নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

গত দেড় বছরে জেলা সফরে গিয়ে যে সব প্রকল্প ঘোষণা বা শিলান্যাস করেছেন, সেগুলি কী অবস্থায় আছে, তার একটা স্পষ্ট ছবি পেতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র সম্প্রতি সমস্ত দফতরের সচিবদের চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কবে, কোথায়, কোন প্রকল্প ঘোষণা কিংবা শিলান্যাস করেছিলেন, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। সবিস্তার জানাতে বলেছেন ওই সব প্রকল্পের বর্তমান পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে ওই তালিকা ধরে ই-মেল মারফত রিপোর্ট জমা পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে। কেন এই উদ্যোগ? রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, ক'মাস পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরে বছর না ঘুরতেই লোকসভা ভোট। মূলত সে দিকে তাকিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পগুলির হাল যাচাই করে নিতে চাইছে রাজ্য সরকার। মহাকরণের এক কর্তা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে সমস্ত প্রকল্প দ্রুত শেষ করার কথা বলছেন। কোথাও সমস্যা হলে সে কথাও অকপটে জানাতে বলেছেন তিনি।"

কী সেই সমস্যা? রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, "জমি-নীতি চূড়ান্ত না হওয়ায় অধিগ্রহণে সংশয় তৈরি হচ্ছে। ওই সমস্যা এড়াতে বিভিন্ন দফতরের হাতে থাকা জমিতেই অধিকাংশ প্রকল্প গড়ে তুলতে চাইছে সরকার। কিন্তু তাতেও জট কাটছে না।" উদাহরণ হিসেবে ওই কর্তা বলেন, কোথাও পূর্ত দফতরের জমিতে আইটিআই তৈরি হবে, কোথাও কৃষি দফতরের খামারবাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দফতরগুলির মধ্যে জমি হস্তান্তরে দেরি হচ্ছে। সম্প্রতি টাউন হলের বৈঠকে এ নিয়ে অফিসারদের সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, সব প্রকল্পই যে সরকারি হেফাজতে থাকা জমিতে তৈরি হবে, তা-ও নয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে জমি নিতে হবে। আর সমস্যা সেখানেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, "ডায়মন্ড হারবারের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, বারুইপুর, মগরাহাট ও পাথরপ্রতিমায় আইটিআই হবে। ওই সব এলাকায় কিছু জমি সরকারের হাতে থাকলেও আরও জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কাজ থমকে আছে সেখানেই।" একই ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে স্টেডিয়াম তৈরির কাজও আটকে রয়েছে জমি-জটে।

কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে অর্থসঙ্কট। রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, নতুন সরকারে রাজস্ব আদায় বাড়লেও কমানো যায়নি পরিকল্পনা বর্হিভূত খরচ। প্রতি মাসেই আয়-ব্যয়ের ব্যবধান লাফিয়ে বাড়ছে। চলতি আর্থিক বছরে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ৩২২ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়ে গিয়েছে। আর তাতেই শঙ্কিত রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা অতিথি আপ্যায়নে যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে, তাতে উন্নয়নের বরাদ্দই কাটছাঁট হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন দফতরকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ টাকা খরচের আগাম অনুমতি দেওয়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের বেশি টাকা হাতে পায়নি তারা।

এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পগুলি কী ভাবে দ্রুত শুরু করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের ডেকে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মুখ্যসচিব। মহাকরণ সূত্রের খবর, পূর্ত, সেচ, নগরোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, স্বাস্থ্য এবং কারিগরি শিক্ষা দফতরের হাতে গড়ে ১৫-১৬টি প্রকল্প রয়েছে। গত দেড় বছরে নানা সময়ে জেলা সফরে গিয়ে সেগুলি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প ঘোষণার শেষ নেই। কিন্তু আর্থিক টানাটানির কারণে অর্থ দফতর টাকা না-ছাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকেরা। তাই এক রকম চাপ সৃষ্টি করতেই সংশ্লিষ্ট নথিতে 'মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্প' লিখে অর্থ দফতরে ফাইল পাঠাচ্ছেন সচিবদের একাংশ।"

কিন্তু তাতেও কতটা চিড়ে ভিজবে তা নিয়ে সংশয়ে সচিবেরাই। রাজ্য প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় এমন বেশ কিছু প্রকল্প রয়েছে যেগুলির অধিকাংশ টাকা কেন্দ্র দেবে। সেই খাতে যোজনা কমিশনের পাঠানো প্রথম দফার টাকা ক'মাস আগে মহাকরণে চলে এলেও তার পুরোটা এখনও হাতে পায়নি অনেক দফতর।" যেমন, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অধীন ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্র্যান্ট ফান্ডের (বিআরজিএফ) টাকায় জঙ্গলমহলে একাধিক কলেজ, আইটিআই ও স্টেডিয়াম তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিল রাজ্য। তার অধিকাংশই তৈরি করবে পূর্ত দফতর। কিন্তু প্রয়োজনমতো টাকা না পাওয়ায় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলছে বলে ওই দফতরের একাধিক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন।

বিআরজিএফ-এর পুরো টাকা হাতে পায়নি জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি (পিএইচই) দফতরও। প্রতি মাসেই বরাদ্দের টাকা চেয়ে বিভিন্ন দফতরের সচিবেরা চিঠি পাঠাচ্ছে অর্থ দফতরে। অর্থ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষে অনুমোদিত প্রকল্পের ১৬৬ কোটি টাকা এখনও হাতে পায়নি পূর্ত দফতর। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরেরও পাওনা ১৪৫ কোটি টাকার মতো। অনুদানের টাকাই শুধু নয়, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে (আরআইডিএফ) নাবার্ড থেকে যে ঋণ নেয় রাজ্য সরকার, অনেক দফতর সেই টাকাও পুরোপুরি পায়নি বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।

অর্থাভাবে কী ভাবে আটকে আছে ছোটখাটো কাজও?

নতুন সরকারের এক বছরের মাথায় 'প্রত্যাশা থেকে প্রাপ্তি' শীর্ষক পুস্তিকায় বলা হয়েছিল, জেলা হাসপাতালগুলিতে গরিব রোগীর আত্মীয়দের থাকার জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে আবাসন দফতর। কিন্তু জেলা তো দূরের কথা, কলকাতার মাত্র একটি হাসপাতালে রাতের আশ্রয় তৈরির কাজে সবে হাত দিয়েছে তারা। টাকার সংস্থান না-হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করা সত্ত্বেও রাজ্যের সব ব্লকে (৩৪১টি) কিষাণ বাজার তৈরি থেকে পিছিয়ে এসেছে কৃষি বিপণন দফতর। ঝাড়গ্রাম, বিষ্ণুপুর, আলিপুরদুয়ার ও পুরুলিয়ায় গ্রামীণ হাটের আয়োজন করার কথা বললেও জমি-ই চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর। ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাজ্যের সমস্ত মহকুমায় (৬৫টি) একটি করে মহিলা থানা হবে। প্রথম দফায় ২০টি এমন থানা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক টানাটানির কারণে ১০টি থানা তৈরি করেই থমকে গিয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, "হলদিয়ায় কমিশনারেট তৈরির যাবতীয় প্রকল্প রিপোর্ট মাস সাতেক আগে জমা পড়েছে অর্থ দফতরে। এখনও সেখানেই পড়ে রয়েছে ওই ফাইল।"

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%A5%E0%A6%AE%E0%A6%95-%E0%A6%AA-%E0%A6%95%E0%A6%B2-%E0%A6%AA-%E0%A6%96-%E0%A6%9C-%E0%A6%A8-%E0%A6%9A-044009803.html


অস্বস্তি কাটানোর অস্ত্র বেচারাম, সিঙ্গুর পাশে দাঁড়াচ্ছে রবীন্দ্রনাথের

দিনভর মুখে কুলুপ এঁটে থাকার পরে রাতে 'রবি-ক্ষত' সামাল দিতে নামল তৃণমূল। আর সেই কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে দিলেন বেচারাম মান্নাকেই। মন্ত্রিসভার কাজে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের পরিবর্তে যাঁর উপরে আস্থা রেখেছেন তিনি। সোমবার রাতে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু তৃণমূল নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে বলেন, "আমার নাকের ডগায় তোলাবাজি চলছে। দলের লোকেরাই করছে। এটা রাজা জানেন না, হতে পারে না।" গুরুত্বহীন দফতরে কোণঠাসা রবীন্দ্রনাথবাবুর এই বিস্ফোরক মন্তব্যে সাড়া পড়ে যায় তৃণমূলে। অস্বস্তিতে পড়েন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেটা এতটাই যে, সাধারণত সব বিষয়ে তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দিতে অভ্যস্ত তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা বিষয়টি নিয়ে রা কাড়েননি গোটা দিন। সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে এড়িয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত রাতে আসরে নামলেন বেচারাম।

সিঙ্গুর আন্দোলনে তাঁর নেতা তথা রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু রবীন্দ্রনাথবাবুকে কটাক্ষ করে নয়া কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম বলেন, "উনি অনৈতিক কাজ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করেছেন। আসলে কৃষি দফতরে যে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার কথা, তা উনি করতে পারছিলেন না।" এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার যে, রবীন্দ্রনাথবাবুর ক্ষোভকে দফতর খোয়ানো-জনিত হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই প্রচার করতে চাইছে তৃণমূল।

বেচারাম অবশ্য আরও একটা কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, "হয়তো সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষক, বর্গাদারদের দায়িত্ব এড়ানোর জন্যই রবীন্দ্রনাথবাবু এমন মন্তব্য করেছেন।" যে অভিযোগের পিছনে অন্য গভীর তাৎপর্যের ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা। তাঁদের মতে, ন্যানো-বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূলের পাশে থাকা সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক জমিদাতারা তৃণমূল ক্ষমতায় আসার দেড় বছর পরেও জমি ফিরে না-পেয়ে হতাশ। তাঁদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। বেচারামের এই মন্তব্য তারই ইঙ্গিত। তাঁরা আরও বলছেন, সেই ক্ষোভ সামাল দিতেই শুক্রবার সিঙ্গুরে আসছেন মমতা। তার আগে এই ঘটনা তৃণমূল নেত্রীর অস্বস্তি বাড়াল।

কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তৃণমূলের সামনে আরও বড় সঙ্কট হল তোলাবাজি। যা নিয়ে মুখ খুলেছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। দলীয় সূত্রই বলছে, জেলায় জেলায় নানা স্তরে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন তৃণমূল কর্মী-নেতারা। যার জেরে বাড়ছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সেই খবর দলনেত্রীর কাছেও আসছে। সেই কারণেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সম্প্রতি একাধিক বার তিনি বলেছেন, তৃণমূল তোলাবাজের দল নয়। দলের প্রয়োজন হলে তিনি নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে টাকা তুলবেন। গত শনিবারই মিলন মেলায় হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনে মমতা বলেছেন, "আমরা লোভীর দল নয়। একটা পয়সাও পার্টির নামে তুলি না।" তার আগে শিল্পপতিদের সঙ্গে বিজয়া সম্মেলনেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কাউকে টাকা দেবেন না, এমনকী তৃণমূলের নাম করে চাইলেও নয়।

এই জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়ে মঙ্গলবার বহরমপুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, "রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন তোলাবাজি হচ্ছে। উনি যখন বলছেন, তখন সে কথার সত্যতা আছে। মুখ্যমন্ত্রীও বলছেন তোলাবাজি চলবে না। এটাই আসলে প্রমাণ করে তোলাবাজি চলছে।" গত কয়েক মাসে বীরভূমের লোবা, লাভপুর, নানুর, নদিয়ার তেহট্ট-সহ নানা জায়গায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলের সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বিবদমান নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। শুক্রবার, সিঙ্গুরে যাওয়ার দিনেই সকালে তাঁর কালীঘাটের বাসভবনে উত্তর ২৪ পরগনার জনপ্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকেছেন মমতা। দলীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি পর্বে জেলায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং কিছু নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ওই সভা ডাকা হয়েছে।

প্রকাশ্যে অবশ্য সে কথা স্বীকার করা স্বাভাবিক কারণেই সম্ভব নয় তৃণমূলের পক্ষে। সেই কারণে, রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে বেচারাম এ দিন বলেছেন, "উনি নিজেই দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়ে গিয়েছেন। তোলাবাজির অভিযোগ উনি ভবিষ্যতে প্রমাণ করতে পারবেন কি?" বেচারামের আরও কটাক্ষ, "দুর্নীতির দায়েই কিছু দিন আগে আনন্দনগর পঞ্চায়েতের প্রধান এবং সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকেও সরিয়ে দিয়েছিল দল। এক সময় ওই দু'জন তো মাস্টারমশাইয়ের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন!"

বেচারাম তাঁর মাস্টারমশাইকে দুষলেও সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের একটা বড় অংশ কিন্তু রবীন্দ্রনাথবাবুর পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলেও তাঁদের অনেকেই বলছেন, "ঠিকই করেছেন মাস্টারমশাই। নানা ধরনের অপ্রিয় ঘটনা ঘটছে চার দিকে। অনেকেই অনেক কিছু জানে। উনি নেহাতই ভদ্র মানুষ বলে সব কথা খোলাখুলি বলতে পারছেন না।"

রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতি তৃণমূলের ব্যবহারেও মর্মাহত সিঙ্গুর। সুব্রত রায় নামে এক অনিচ্ছুক চাষির কথায়, "মাস্টারমশাইকে এক বার স্কুল দফতর দেওয়া হল। তার পর কৃষি। এ বার সেখান থেকেও সরানো হল। দল যা করছে, তাতে আমরা মর্মাহত।" অনিচ্ছুক চাষি শ্রীকান্ত পাত্র, মনোরঞ্জন পাত্রদের বক্তব্য, "আমাদেরই দল ওঁর সঙ্গে এই আচরণ করায় আমরা দুঃখিত। অসহায় বোধ করছি।" নতুন দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক রবীন্দ্রনাথবাবু ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রিসভায় তাঁর অনুপস্থিতি সিঙ্গুরের আন্দোলনকেও দুর্বল করতে পারে বলে মনে করেন অনেকে।

উনি নিজেই দুষ্টু লোকের খপ্পরে পড়ে গিয়েছেন।

—বেচারাম মান্না

এ সব তো শুধু আমার কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আগে বলেছেন

যে ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় করা যাবে না।

—রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য

এর উল্টো মতও অবশ্য শোনা গেল এ দিন সিঙ্গুরে। বেড়াবেড়ি বাজারের বাসিন্দা আর এক অনিচ্ছুক চাষি সুরজিৎ দাস বললেন, "মাস্টারমশাইয়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু এটাও তো ঠিক, সিঙ্গুর আন্দোলনের মুখ বলতে শুধু দিদিই (মমতা)।" তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর বক্তব্য, দলের প্রবীণ সদস্য হয়েও এ ভাবে বিরোধীদের হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দিয়ে ঠিক করলেন না রবীন্দ্রনাথবাবু। তৃণমূলের এই অস্বস্তির পুরো ফায়দা তুলেছেন বিরোধী নেতারা। প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী আনিসুর রহমান এ দিন ফোন করেন রবীন্দ্রনাথবাবুকে। বাস্তব প্রকাশ্যে আনায় তাঁকে অভিনন্দন জানান আনিসুর।

পিছিয়ে নেই বিজেপি-ও। রবীন্দ্রনাথবাবুর মতো 'সৎ ও নীতিপরায়ণ' ব্যক্তিকে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিন্হা। তাঁর অভিযোগ, "সিপিএমের লুঠেরা ও গুন্ডারা জার্সি বদল করে তৃণমূল দল ভরিয়ে তুলেছে।" সিঙ্গুরে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোদ্ধা ছিলেন পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ড। রবীন্দ্রনাথবাবু প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, "এলাকায় ওঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল। কঠিন সময়ে সিঙ্গুর থেকে বিধানসভায় জিতে এসেছিলেন। মন্ত্রিসভায় তাঁকে ঠিক মতো মর্যাদা দেওয়া উচিত ছিল। তিনি যখন এই রকম অভিযোগ করছেন, বুঝতে হবে সরকার এবং দলে কিছু গোলমাল আছে!"

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, "রবীন্দ্রনাথবাবু ঠিকই বলেছেন। তৃণমূলে অনেক তোলাবাজ আছে। আগেও এমন অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ওদের শাস্তি হয় না।"

মাস্টারমশাই নিজে এ দিন কী বলছেন? "এ সব তো শুধু আমার কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আগে বলেছেন যে ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় করা যাবে না," বলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। দলনেত্রীর উপরে তাঁর 'পূর্ণ আস্থা' বলে জানিয়েছেন, আবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু ক্ষোভ দলের অন্দরে জানালেন না কেন? রবীন্দ্রনাথবাবুর সাফাই, "কিছু কথা কানে এসেছিল। সে জন্যই বলেছি। তবে কিছুই প্রমাণিত নয়। সে সব খামোখা দলকে বলতে যাব কেন?" তাঁর বক্তব্যে আখেরে দলের মঙ্গল হবে বলেই মনে করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। আপাতত এই আশার সুতোতেই ঝুলছে তৃণমূলের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি।

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%85%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%B8-%E0%A6%A4-%E0%A6%95-%E0%A6%9F-%E0%A6%A8-%E0%A6%85%E0%A6%B8-%E0%A6%A4-103126818.html


সিঙ্গুরের হতাশা পিছনে ফেলে ন্যানো বেরলো বাজারে। স্বদর্পে রতন টাটার ঘোষনা- টাটা ন্যানো, নাউ ইউ ক্যান।


মুম্বাইয়ের পাঁচ তারা হোটেলে যখন ন্যানো উদ্বোধন হচ্ছে তখন সিঙ্গুরের ন্যানো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা জমিতে চড়ে বেরাচ্ছে গরু-ছাগোল। সিঙ্গুর এখন 'না ঘরকা না ঘটকা'।

সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানা এখন ধ্বংসস্তুপ। চার দিকে সারি সারি ট্রাক। একদিকে খুলেফেলা হচ্ছে কারখানার মেশিনপত্র। ট্রাকে সেই মালপত্র লোডিং করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র।

সিঙ্গুর বাসি হতাশ। যারা জমি দিয়েছেন তারা যেমন হতাশ যারা জমি দেননি তাদের মনের ভিতরেও জমা হতাশার কাল মেঘ।
অন্যিকে মুম্বাইয়ের পাঁচ তারা হোটেলে জমকালো অনুষ্টানে রতন টাটা উদ্বোধন করলেন ন্যানো।
কড়া নিরাপত্তা, ব্যাপক সাইকেডেলিক শো। রাজনীতি থেকে ফিল্মজগতের তারোকা যাবতীয় ভি ভি আই পি-দের উপস্থিতিতে ধুমধাম সহকারে বাজারে চলে এল টাটার তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি ন্যানো৷

বিশ্বজোড়া আর্থিক মন্দায় জর্জরিত ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদ, সিডনি থেকে সাংহাই৷ গাড়ি শিল্পে জোরদার কোপ পড়েছে৷ বড় বড় গাড়িনির্মাতা সংস্থাগুলি রীতিমত বেকায়দায়, গাড়ির দামও ক্রমশ আকাশচুম্বী৷ এই সংকটে ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠী বাজারে নিয়ে এল মাত্র আড়াই হাজার ডলারের নতুন গাড়ি ন্যানো৷ বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা এই গাড়ির জন্য মুখিয়ে ছিল অনেকেই৷ যে কারণে মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভের ওপর ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে নীচের তাজ হোটেল পযর্ন্ত ন্যানো লঞ্চিং অনুষ্ঠানে দেখা গেছে বিপুল রঙচঙ, উত্সাহ উদ্দীপনা এবং অবশ্যই সেলিব্রিটির ভিড়ে ছয়লাপ এক সাফল্যের
সাফল্য তো বটেই৷ ন্যানোর পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন, এই পথটা কিন্তু খুব সহজ বা কুসমাস্তীর্ণ ছিল না রতন টাটার জন্য৷ পশ্চিমবঙ্গেই ন্যনোর কারখানা তৈরি হয়েছিল প্রথমে, বহুদূর এগিয়েও তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্য কিছু আন্দোলনের চাপে পড়ে সেই কারখানা রাতারাতি তুলে নিয়ে যেতে হয় গুজরাটে৷ জেদী শিল্পপতি রতন টাটা এরপরেও হাল ছাড়েন নি৷ গোটা বিশ্বের সামনে নেওয়া চ্যালেঞ্জ শেষ পর্যন্ত সফল করেই ছাড়লেন তিনি৷ ভারতীয় মুদ্রায় একলক্ষ রুপি দাম হবে ন্যানোর, সেই প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে, জোরগলায় ন্যানোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেকথাই বলেছেন ৭১ বছরের রতন টাটা৷ অ্যালয় স্টিলের বিশাল এক শো উইন্ডোতে মোট সাতরঙের সাতটি নতুন গাড়ির আবরণ উন্মোচন করেছেন টাটা সোমবার মুম্বইতে৷ মেটালিক রঙে উজ্জ্বল দুই সিলিন্ডারের ন্যানোর ফ্যাক্টরি মূল্য ঠিক একলক্ষ টাকা, কর সমেত নতুন গাড়ির বাজার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১১২,৭৩৫ রুপি৷ আপাতত ন্যানোর আগ্রহী ক্রেতারা গাড়ির জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন এপ্রিলের ৯ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে৷ এরপর হবে লটারি এবং প্রথম দশ হাজার লটারিজয়ী ন্যানো মালিক তাঁদের নতুন ন্যানোর চাবি হাতে পাবেন আগামী জুলাইয়ের গোড়াতেই৷
সাধারণ ভারতীয়রা অনেক আশা নিয়ে ন্যানোর আবির্ভাবের দিকে তাকিয়ে ছিলেন দীর্ঘদিন৷ কারণ রতন টাটা মধ্যবিত্তের স্বপ্নের গাড়ি নিয়ে আসবেন বলেছিলেন, সেই স্বপ্ন এবার সত্যিই বাস্তব৷পাশাপাশি বাণিজ্যদুনিয়ায় আবার এক নতুন মাইলফলক তৈরির লক্ষ্যেও টাটা সফল৷ন্যানো বাজারে আসতে না আসতেই টাটার শেয়ার একলাফে ২.৮ সূচক চড়েছে৷ টাটা নিজেও জানেন এই উর্দ্ধগতি শুধুই ভারতের বাজারের জন্য নয়, কারণ পৃথিবীর সস্তাতম নতুন গাড়ি ন্যানোর দিকে তাকিয়ে আছে প্রায় গোটা দুনিয়ার মানুষ৷ ফলে ন্যানোর চাহিদা ক্রমশ বাড়বে, আরও বাড়বে, বেড়েই চলবে৷


No comments:

Post a Comment