ভারতীয় রাজনীতির বর্ণহিন্দু,কুলীন নেতৃত্ব ও নিয়ংন্ত্রন তাই নিজ শ্রেণী স্বার্থে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাগরিকত্বের বিরোধিতা করে নি৤ সেই অর্থে বৈশ্বায়ন ও আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে সংসদীয় কুনাট্যের তাত্পর্য্য বিবেটনা করা অবশ্যই সমীচীন৤

আমার যারা পাঠক বা শ্রোতা, তাঁদের বোধ করি মনে করিয়ে দেবার প্রয়োজন নেই যে আমি বার বার লিখে , বলে আসছি- ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ব গ্লোবীকরণ ও জনসংহারকল্পে একচেটিয়া আগ্রাসন রুপে সংস্থিত আর্থিক সংসকারের অন্যতম হাতিয়ার৤ বহিস্কৃত, অস্পশ্য বহুসংখ্যক জনগোষ্ঠীসমূহকে জল জন্গল জমি আজিবিকা নাগরিকত্ব মানব অধিকার থেকে বন্চিত, উত্খাত করার সর্বোত্কৃষ্ট ব্যবস্থাপনা৤ ক্রয় ক্ষমতার কুলীন আধিপাত্যের মনুস্মৃতি বিশ্ব ব্যবস্থায় অন্ত্যজদের, ব্রাত্দের, মূলনিবাসী আদিবাসীদের, উদ্বাস্তুদের চরম সর্বনাশের পাকা ইন্তজাম৤অথচ এই ইস্যুতে আজ অবধি রাজনৈতিক সচেতনাতর উন্মেষ ঘটেনি৤ বৈশ্বায়নের প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ব, অসংবিধানিক আধার যোজনার বিরোধিতা করতে হয়৤ ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাগরিকত্ব ও আধার যোজনা আসলে করপোরেট স্বার্থে নাগরিকত্ব বিসর্জন৤ নাগরিকত্বের সম্পভুত্ব, স্বাধীনতা, নিজত্ব ও গোপনীয়তা কর্তৃত্ব ও আগ্রাসী আধিপাত্যবাদী স্বার্থের পায়ে সমর্পণ৤ ভারতীয় রাজনীতির বর্ণহিন্দু,কুলীন নেতৃত্ব ও নিয়ংন্ত্রন তাই নিজ শ্রেণী স্বার্থে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক নাগরিকত্বের বিরোধিতা করে নি৤ সেই অর্থে বৈশ্বায়ন ও আর্থিক সংস্কারের বিরুদ্ধে সংসদীয় কুনাট্যের তাত্পর্য্য বিবেটনা করা অবশ্যই সমীচীন৤

ভর্তুকির টাকা সরাসরি আম-আদমির হাতে তুলে দেওয়ার প্রকল্প, জনগণের মৃত্যু পরোয়ানা৤ সেই পরোয়ানার খবরে রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবে সাধারণ মানুষ উল্লসিত হতেই পারে৤ মীডিয়া ইটিকে আবার সংস্কারের পক্ষে খেলা ঘুরিয়ে দেবার ও জনবিরোধী করপোরেট সরকারের পক্ষে জনাদেশ তৈরির জন্য মোক্ষম চাল প্রতিপন্ন করতে চলেছে৤ সারা ভারতে মাত্র 21 কোটি নাগরিকের হাতে আধার পরিচিতি, এঁদের মধ্যে বহুসংখ্যকদের ব্যান্ক একাউন্ট নেই অন্ত্যজ, ব্রাত্য, উপজাতি ও উদবাস্তুদের বেদখলীর এই ষড়যন্ত্রের নায়ক ইনফোসিস ম্যান নন্দন নিলেকানি আগেই বলে দিয়েছেন যে মাত্র ষাট কোটি মানুষই আধার ফরিটিতি পাবেন৤ ভারতবর্য়ের অর্ধেক জনসংখ্যা এই করপোরেট প্রকল্পের হিসাবে নেই৤ পশ্চিম বন্গে বিসেষকরে এনপিআরের কাঝে তেমন অগ্রগতি নেই৤ এদের সবাইকে ভর্তুকি ও পিডিএস থেকে বন্চিত করার এই ষড়যন্ত্রের মূলে নাগরিকত্ব আঈন সংশোধন, যার বাংলার রাজনীতি সর্বদলীয় সম্সতি সহকারে সমর্থন করেছিল ও অবশ্যই আধার যোজনা৤ অথচ সংস্কারবিরোধী জেহাদীরা একটি কথাও নাগরিকত্ব আইন ও আধার যোজনার বিরুদ্ধে বলছেন না৤ 

আধার কার্ডে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার দিক কিন্তু একেবারেই থাকছে না।

পৃথিবীর নানা উন্নত দেশে এই ধরণের কার্ড চালু করা যায় নি, জন প্রতিরোধের 

জন্য। ব্রিটেনে ২০০৪ সালে এইরকম একটা উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০০৬ 

সালে, একটা আইনও এসেছিল। জনপ্রতিরোধের মুখে পড়ে, এটা প্রথমে পিছু হটে 

আর পরে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে এই আইন বাতিল করা হয়।

একই ভাবে মার্কিন দেশেও বাতিল হয় এই ধরণের কার্ড। চীনও এই ধরণের কার্ড 

চালু করতে পারে নি। ভারতবর্ষে, এই কাজ প্রায় বিনা প্রতিরোধে শুরু হয়েছিল। 

পরে এই UIDAI বিলটি সংসদীয় কমিটি বাতিল করে দেওয়ার পরে, আপাতত এই 

কার্ডের কাজ থমকে থাকলেও, চালু করার চেষ্টা কিন্তু অব্যাহত আছে।

শুরুটা কি ভাবে হয়েছিল, একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক। 

১৯৩৩ সালে, নাগরিকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছিল- জার্মানীতে।

তখন আধুনিক কম্পিউটার যুগ শুরু হয় নি ঠিকই, তবে আদি কম্পিউটারের 

সাহায্য নিয়ে ইহুদিদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করার জন্য এগিয়ে 

এসেছিল,International Bussiness Machine বা পৃথিবী খ্যাত IBM কোম্পানী।

কিভাবে তারা প্রতিটি ইহুদি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করত, তা এখন বহু আলোচিত।

হিটলারের শাসন কালে, সমস্ত ইহুদিরা হয়ে উঠেছিল এক একটি নম্বর। তার পাশে লেখা থাকত নাম ঠিকানা।

দেখা গেছে, যে অঞ্চলে, এই কাজটা ভালো ভাবে করা হয়েছিল, সেখানেই ইহুদি নিধন বেশী হয়েছিল।

'আধার' নিয়ে বৈঠক সফল

ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া (ইউ.এ.আইডি.এ.আই) -এর অন্তর্গত আধার প্রকল্প নিয়ে বৈঠক সফল হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে আধার প্রকল্পের সর্বময় কর্তা নন্দন নিলেকানির বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী ও যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং অহলুওয়ালিয়ার উপস্থিতিতেই। সেখানে আরও ৪০ হাজার আধার কার্ড তৈরির সবুজ সংকেত দেন চিদম্বরম। প্রকল্পটি দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে আলোচনা হয়। চিদম্বরম জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ন্যাশনাল পপুলেশন রেকর্ড দপ্তর দেশের প্রতিটি বায়োমেট্রিক তথ্য রেকর্ডে রাখবে। সেই ডেটাবেস তৈরিতে সাহায্য করবে 'আধার' প্রকল্প। তবে কোনও নাগরিক যদি কাগজ বা রসিদ দেখিয়ে প্রমাণ দেন যে একবার তাঁর কাছে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছে আধার প্রকল্পের কর্মীরা, তাহলে দ্বিতীয়বার তাঁর কাছে আর কোনও তথ্য নেওয়া হবে না।

ভিডিও: এ এন আই , কলকাতা, ২৮ জানুয়ারি, ২০১২

http://my.anandabazar.com/content/%E0%A6%86%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%A0%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%AB%E0%A6%B2

সরকার থেকে নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য অভিন্ন পরিচয়পত্র বা ইউনিক আইডেনটিটি কার্ড (আধার) প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই অভিন্ন পরিচয়পত্রের বিরোধিতার স্বর ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে নাগরিক সমাজের মধ্যে। গত ২৪ আগস্ট কলকাতার স্টুডেন্টস হলে অভিন্ন পরিচয়পত্র বা আধারের বিরোধিতা করে 'একচেটিয়া আগ্রাসন বিরোধী মঞ্চ' (ফামা), 'অপউন্নয়নের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও ছাত্ররা' (টাসাম), 'জনস্বার্থ স্বাধিকার মঞ্চ' ও অন্যান্য গণ সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সভার আয়োজন করা হয়। বক্তব্য রাখেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়, দেবপ্রিয় মল্লিক, অভি দত্ত মজুমদার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও গবেষকরা। বক্তারা এই পরিচয়পত্রের জন্য নাগরিকদের হাতের আঙুলের ছাপ বা চোখের মণির ছাপ নেওয়ার বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, ২০০৬ সালে ব্রিটেনে এই পরিচয়পত্র চালু করার আইন নিয়ে আসা হলেও সেখানে প্রতিবাদের ফলে এগোনো যায়নি। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে সরকার ব্যর্থ হয়। বক্তারা জানান যে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে ইহুদিদের চিহ্নিত করার জন্য নাৎসি সরকার একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই প্রকল্পে সহায়তা দিয়েছিল আইবিএম-এর মতো কর্পোরেট সংস্থা।  
বক্তারা অভিযোগ করেন যে এল-১ আইডেনটিটি সলিউশন প্রভৃতির মতো কর্পোরেট সংস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এও অভিযোগ করেন, উক্ত সংস্থা সহ এই ধরনের মার্কিন সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত সিআইএ-র এক প্রাক্তন প্রধান। এছাড়াও জানা গেছে, যদিও বলা হচ্ছে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু একে জাতীয় জনগণনা রেজিস্ট্রার (এনপিআর)-এর সাথে যুক্ত করা হচ্ছে, যা বাধ্যতামূলক। উদ্যোক্তারা জানান যে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে, এই সভাটি আয়োজিত হয়েছে। আগামী দিনে তাঁরা আধার কার্ডের বিরোধিতা করে আরও কর্মসূচি নেবেন। 

https://sites.google.com/site/msamayiki/1september2011seventeen

সরাসরি অর্থ

সংবাদ সংস্থা

বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সরকারী প্রকল্পের উপভোক্তাদের সরাসরি অর্থ দেওয়ার জন্য জাতীয় স্তরের একটি কমিটি গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, উপভোক্তাদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ দিতে পারলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমানো যাবে। উচ্চপর্যায়ের এই ক‍‌মিটিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবকে আহ্বায়ক করে এই কমিটিতে রয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের ১৩জন মন্ত্রী, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, আধার কা‍‌র্ডের চেয়ারম্যান এবং ক্যাবিনেট সচিব। কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে গ্রাম উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, খাদ্য, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, আদিবাসী কল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিকাশ কর্মসংস্থান প্রভৃতি মন্ত্রকের বিভিন্ন জনকল্যাণ কর্মসূচী রয়েছে। এইসব প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ আসে সামাজিক আর্থিক দিক থেকে উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে। এ ব্যাপারে বি পি এল তালিকা অনুসরণ করা হয়। গ্রাম শহরের গরিব মানুষদের জন্যই এই কর্মসূচী রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা হলো, সরকারী অর্থ সরাসরি যাবে ঐ ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কিন্তু এদেশে কতজনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সরকারী হিসাব অনুসারে সারা দেশে সরকারী, বেসরকারী এবং বিদেশী ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ব্যাঙ্কের গ্রাহকের সংখ্যা ৪০ কোটি। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ। এই ব্যাঙ্ক গ্রহকদের অনেকেই অর্থবান অথবা সরকারী সুবিধা পাওয়ার ঊর্ধ্বে। ফলে প্রকৃত অর্থে যাঁরা সরকারী সুবিধা পেতে পারেন তাঁদের কতজনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে? সরকার আশা করছে আধার কার্ড তৈরি শেষ হলে দেশের অধিকাংশ মানুষ এই ব্যাঙ্কিং সুবিধার মধ্যে আসবেন। কিন্তু দেশের বাস্তব পরিস্থিতি কি সত্যিই মানুষকে এই সুবিধা দিতে পারবে? সরকার এই সরাসরি অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা যদি ২০১৪ সালেও চালু করে তাহলেই বা কতজন এই ব্যাঙ্কিং সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন? 

বর্তমানে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের সংখ্যার ভিত্তিতে বলা যায় এই প্রক্রিয়া বিরাটভাবে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সরকার কি আসলে চাইছে নতুন পদ্ধতির নামে কল্যাণমূলক কর্মসূচীর জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে দিতে? জাতীয় স্তরের এসব কমিটি গঠন আসলে খাজনার চাইতে বাজনা বেশির নমুনা। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর কোনো উন্নয়ন ঘটছে? দৈনিক ৩২ টাকারও কম আয় করেন এমন মানুষ দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৭ শতাংশ। তারা কীভাবে ব্যাঙ্ক গ্রাহক হবেন? এখনও দেশে ২৬ শতাংশ মানুষ অশিক্ষার অন্ধকারে। আধার কার্ড তাদের কী সাহায্য করবে? শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থানের মতো ন্যূনতম পরিকাঠমো সৃষ্টির পর আধার কার্ড অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই পরিকাঠামো সৃষ্টি না করে ব্যাঙ্ক ক্যাশ ট্রান্সফার অথবা আধার কার্ড অবাস্তব ভাবনা ছাড়া কিছু নয়। গত কয়েক মাস হলো দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার বেশ কোণঠাসা। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ানো, রান্নার গ্যাসে ভরতুকি কমানো, খুচরো ব্যবসায় বিদেশীদের দরজা খুলে দেওয়ার ফলে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। আম-আদমির সরকার প্রকৃতপক্ষে জনগণের শত্রুতায় নেমেছে। তাই মানুষের মন ঘোরাতে নতুন পথ নিয়েছে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার। মাঝে একটি বছর পেরোলেই ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। তাছাড়া আগামী এক বছরের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের কথা মাথায় রেখেই সস্তা চমকের রাজনীতিতে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব চমককে সামনে রেখে জনকল্যাণ খাতে সরকারী বরাদ্দ কমাতে চাইছে সরকার। মনমোহনী কমিটি বা ঘোষণার পরিণাম হলো দেশের গরিব মানুষের বঞ্চিত হওয়া। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তবেই এই ধরনের পরিকল্পনা কার্যকর করার দিকে যাওয়া উচিত।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=31639

ভারতে 'আধার' প্রকল্প শুরু কালের কণ্ঠ ডেস্ক

১০ আদিবাসীকে পরিচয়পত্র দেওয়ার মাধ্যমে গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্প শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিশেষ করে গরিব ও নিরক্ষরদের রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। 
ভারতের প্রায় ১১৬ কোটি লোকের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আঙুলের ছাপ, চোখের স্ক্যান, ছবি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তকারী ১২ ডিজিটের স্বতন্ত্র একটি নম্বর দেওয়া হবে প্রত্যেক নাগরিককে। বিশ্বে বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহার করে জাতীয় পর্যায়ে নাগরিকদের পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রথম পরিকল্পনা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে প্রকল্পটিকে। এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে 'আধার'। মুম্বাইয়ের প্রায় ৩২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে তেম্ভলি গ্রামে প্রথম দিন ১০ আদিবাসী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। মনমোহন সিং ছাড়াও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরিচয়পত্র দেওয়ার ঘটনাটিকে দেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীকে ক্ষমতায়নের 'বিশেষ মুহূর্ত' এবং ভারতের 'নবযাত্রা' বলে অভিহিত করেন মনমোহন। যথাযথ কাগজপত্রের অভাবে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মানুষই সরকারের খাদ্য ভর্তুতি কর্মসূচি থেকে বাদ পড়ে। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গরিবদের পরিচয় প্রমাণের কোনো সুযোগ ছিল না। স্বতন্ত্র পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তারা এখন রেশন কার্ড পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকে হিসাবও খুলতে পারবে। একজনের পরিচয় ব্যবহার করে আরেকজন সরকারি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিগুলোর সুবিধা ভোগ করতে পারবে না।' স্বতন্ত্র পরিচয়পত্রের মাধ্যমে 'ভুয়া পরিচয়পত্রের সমস্যা' দূর হবে বলে উল্লেখ করেন সোনিয়া। 'আধার' প্রকল্প শেষ করতে ৬০০ থেকে তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ভারতের স্বতন্ত্র পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

বাংলা দৈনিক এই সময় যথার্থই মন্তব্য করেছে যেআস্তিন থেকে তুরুপের তাস বের করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। 

বহু প্রতীক্ষিত 'ক্যাশ ট্রান্সফার' বা নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজের সূত্রপাত ঘটবে সম্ভবত সে দিনই। টু-জি, কয়লা কেলেঙ্কারি বা সংস্কারমূলক পদক্ষেপে বিরোধিতার চড়া সুরের সামনে ঘুরে দাঁড়াতে এই 'ক্যাশ ট্রান্সফার'কেই হাতিয়ার করতে চাইছে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। একাধিক সমস্যায় জর্জরিত প্রথম ইউপিএ-র কাছে আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এমজিএনআরইজিএ। ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্প ছিল 'মেগাহিট', যা মনমোহন সিংয়ের উপর্যুপরি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রিত্ব নিশ্চিত করতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল। কংগ্রেসের আশা, এবার সেই ভেল্কি দেখাবে 'ক্যাশ ট্রান্সফার', যা দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তথাকথিত 'ফ্ল্যাগশিপ' প্রকল্প। 

শনিবার অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদাম্বরম জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই সরকার এই প্রকল্প চালু করতে চলেছে। 'আধার'ভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের ৫১টি জেলায় এই প্রকল্প শুরু হবে। গোটা দেশে ২০১৩ সালের মধ্যে এই প্রকল্প চালু হয়ে যাবে বলে আশাবাদী কেন্দ্র। প্রকল্পের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে সোমবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন মনমোহন সিং। 

উপযুক্ত প্রাপকদের হাতে সরাসরি নগদ টাকা তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে কেন্দ্র। খাদ্যশস্য, সার বা জ্বালানিতে ভর্তুকির পরিবর্তে প্রাপকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে প্রাপ্য টাকা। সামগ্রিক ভাবে ভর্তুকি পদ্ধতিকে দুর্নীতিমুক্ত করা যেমন এই প্রকল্পের অন্যতম বড় উদ্দেশ্য, তেমনই সরকার মনে নগদ টাকা হাতে পাওয়ায় প্রাপকরা আরও বেশি লাভবান হবেন। কেননা, সে ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করতে পারবেন। গ্রামীণ অর্থনীতির পরিকাঠামো মজবুত করতে এমজিএনআরইজিএ যদি ভিত্তিপ্রস্তরের কাজ করে থাকে, তা হলে 'ক্যাশ ট্রান্সফার' তাতে ইমারত গড়ার কাজ শুরু করবে বলে দাবি কেন্দ্রের। 

টাকার অঙ্কের বিচারেও মহাত্মা গান্ধি জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের (চলতি কথায় এমজিনারেগা) চেয়ে এগিয়ে 'ক্যাশ ট্রান্সফার' প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় বছরে চার লক্ষ কোটি টাকারও বেশি নগদ অর্থ প্রাপকদের হাতে তুলে দিতে চায় সরকার। ফলে, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবার মাসে গড়ে তিন হাজার টাকারও কিছু বেশি নগদ হিসেবে পাবে। 

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকল্পকেই চাঁদমারি করেছে কেন্দ্র। কংগ্রেসেরও আশা, যে ভাবে এমজিনারেগা প্রথম ইউপিএ-র পায়ের তলার জমি মজবুত করেছিল, ঠিক সে ভাবেই এই প্রকল্পের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াবে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। কাগজে-কলমে এহেন প্রত্যাশা হয়তো ভ্রান্তও নয়। তবে, 'ক্যাশ ট্রান্সফার' আদৌ সনিয়া-মনমোহনদের ব্রহ্মাস্ত্র উঠবে কি না, তা নির্ভর করছে প্রকল্প কতটা এবং কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে, তার উপরই। এমজিনারেগা রূপায়ণের সাফল্য এতটাই যে রাষ্ট্রসংঘে গিয়ে লালকৃষ্ণ আডবানিও ভারতের অগ্রগতির খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে এই প্রকল্পের কথাই উল্লেখ করেছিলেন। 

প্রকল্প নিয়ে কংগ্রেস বা কেন্দ্র আশাবাদী হলেও, বিশেষজ্ঞরা কিন্তু প্রকল্পের গর্ভেই ব্যর্থতার বীজ দেখছেন। যুক্তি ত্রিমাত্রিক। প্রথম, দেশের ১২০ কোটি জনগণের মধ্যে মাত্র ২১ কোটির আধার কার্ড রয়েছে। দ্বিতীয়, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীদের বেশির ভাগেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। স্বভাবতই, তাঁদের টাকা কোথায় এবং কী ভাবে দেওয়া হবে, তা অনিশ্চিত। তৃতীয়ত, দেশের বেশির ভাগ গ্রামেই ব্যাংকের শাখা নেই। সে ক্ষেত্রেও নগদ প্রাপকদের কাছে কী ভাবে পৌঁছবে, সে প্রশ্ন রয়েছে। 

—''সংখ্যাটা বড় কথা নয়। কে পক্ষে বা কে বিপক্ষে, তাও বড় ব্যাপার নয়। আসল কথা হলো এফ ডি আই নিয়ে আলোচনার পর ভোটাভুটি। সরকারকে এব্যাপারে রাজি হতেই হবে। কেননা, এফ ডি আই নিয়ে ভোটাভুটি অপরিহার্য। সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছে তা অন্তঃসারশূন্য।'' মঙ্গলবার সংসদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন সি পি আই (এম) সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি স্পষ্টতই বলেন, ''ভোটাভুটি ছাড়া এফ ডি আই নিয়ে আলোচনা অর্থহীন।'' এরইসঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, ''সোমবার তৃণমূল কংগ্রেস ডিগবাজি দিয়ে সরকারের পক্ষেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এদিন আবার একই পথে হাঁটলো ডি এম কে। তারাও সরকারের সুরেই সুর মিলিয়ে জানিয়েছে যে, এফ ডি আই নিয়ে শুধুমাত্র আলোচনাই চায় ডি এম কে। অথচ এফ ডি আই নিয়ে দেশব্যাপী ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছিল ঐ দল। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার পিঠ বাঁচাতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে নানা ধরনের রফা চালাচ্ছে। তবে ভোট হোক, তখন দেখা যাবে কে কোনদিকে আছে। একটা বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদই এফ ডি আই-র বিরুদ্ধে।''

ভারতে পরিচালিত নতুন এক সমিক্ষার বিবরণী থেকে দেখা যাচ্ছে – ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ভারতীয় এখন দেশ কোন পথে চলেছে তা নিয়ে বেশ অখুশি । ভারতে এখন একদিকে অর্থনীতির গতিমন্থরতা আর অন্যদিকে মূল্যস্ফিতি বাড়ার প্রবনতা বেশ জোরে শোরে বেড়ে চলেছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের পীউ গবেষনা কেন্দ্র পরিচালিত সমিক্ষায় দেখা গিয়েছে ভারতে এখন সমিক্ষাধীন ৩৮ শতাংশ মানুষই দেশ যে পথে চলেছে তাতে সন্তোষ বোধ করেন – এক বছর আগে যে সংখ্যা ছিলো ৫১ শতাংশ । পীউ গবেষনায় বলা হচ্ছে – ভারতীয়রা এখন বহূলাংশেই অর্থনীতি নিয়ে বেশি চিন্তান্বিত - প্রতি দশজনের আটজনই বেকারত্ব এবং দ্রব্যমূল্যের উর্থগতিকে বড়ো সমস্যারূপে চিহ্নিত করছেন ।
ভারতের আর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি হার ২ হাজার ১২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক মেয়াদে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাঁড়িয়েছে বলে হিসেব কষা হয়েছে – ন' বছরের ভেতর এটাই সর্বনিম্ম প্রবৃদ্ধি হার ।

নগদ হস্তান্তরের ফায়দা নিতে আসরে কংগ্রেস

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

লোকসভার ভোট সময়ে হলেও হাতে রয়েছে মাত্র দেড় বছর। সেই ভোটকে পাখির চোখ করে আস্তিন থেকে আরও একটা অস্ত্র ছাড়ল কংগ্রেস! ভর্তুকির টাকা সরাসরি আম-আদমির হাতে তুলে দেওয়ার প্রকল্প।  নগদ হস্তান্তরের প্রকল্প বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে গত কালই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আর আজ কংগ্রেস সদর দফতর থেকে সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মোড়কে ঘোষণা করলেন কেন্দ্রের দুই শীর্ষ স্থানীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম ও জয়রাম রমেশ। এ দিন জয়রাম বললেন, "২০০৯ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে ভর্তুকির অর্থ নগদে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। তা এ বার রূপায়ণ করছে সরকার। এটা শুধু একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, কংগ্রেসের রাজনৈতিক অভিযান।" এমনকী এই প্রকল্পের স্লোগানেও কার্যত রাজনীতির ভাষা: 'আপকা প্যায়সা আপকে হাত'।  ২০১৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্রের ৪২টি প্রকল্পের অনুদান ও ভর্তুকি বাবদ প্রায় তিন লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকা সরাসরি 'আমআদমি'-র কাছে পৌঁছে দিয়ে আগামী লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি সেরে ফেলতে চাইছে কংগ্রেস। এবং দলীয় নেতাদের মতে, এটাই শেষ তাস নয়। এর পর রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো হবে। পরের বাজেট হবে জনমোহিনী। আর তার পর তুরুপের তাস করা হবে খাদ্য সুরক্ষা আইনকে। বস্তুত, নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে খাদ্য সুরক্ষা আইনের ভিতই প্রস্তুত করা হচ্ছে।  কংগ্রেসের এই চাল তাদের বিপদে ফেলতে পারে বুঝে আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরাও। বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, "এটা জনগণের মন ভোলানোর চেষ্টা ছাড়া এটা আর কিছুই নয়। ভোটের মুখে এসে সরকারের আমআদমির কথা মনে পড়ল!" দলের আর এক নেতা তো এ-ও বললেন যে, "ভোটের আগে মানুষকে ঘুষ দিতে চাইছে সরকার।" আর বাম নেতাদের বক্তব্য, সরকার আসলে নগদ হস্তান্তরের নামে ভর্তুকির বোঝা কমাতে চাইছে। লোককে বেকুব বানাচ্ছে কংগ্রেস।  বিরোধীদের এই সমালোচনার জবাব দেওয়ার রণকৌশলও কিন্তু কংগ্রেস ছকে ফেলেছে। ঠিক হয়েছে, এই নগদ হস্তান্তর প্রকল্প নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। সেই প্রচারের সুর কী হবে তার ইঙ্গিত দিয়ে চিদম্বরম আজ বলেন, "সামাজিক সুরক্ষার ছবিটাই পাল্টে দেবে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ।" আর জয়রামের দাবি, এটা শুধু নগদ হস্তান্তর নয়, বস্তুত আম-আদমির হাতে অধিকার হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি জানান, ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম দফায় যে ৫১টি জেলায় সরাসরি নগদ হস্তান্তর প্রকল্প চালু হবে, সেখানকার কংগ্রেস সভাপতিদের নিয়ে রাহুল গাঁধী শীঘ্রই একটি কর্মশালা করবেন। সরকারের এই পদক্ষেপ কংগ্রেস কী ভাবে তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে সেই দাওয়াই বাতলে দেবেন রাহুল।

হাতে ভর্তুকি • ৫১টি জেলায় ১ জানুয়ারি থেকে নগদ হস্তান্তর  • সারা দেশে ২০১৩-র মধ্যে • গ্রামে মিনি এটিএম হাতে যাবেন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি • আপাতত মিলবে বার্ধক্য ভাতা, ছাত্রবৃত্তি-সহ ১৪টি প্রকল্পের টাকা  • রান্নার গ্যাসে ভর্তুকিও নগদে কিছু দিনের মধ্যে • খাদ্য ও সারে ভর্তুকি নগদে দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা

পরে রাহুল-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, তথ্যের অধিকার আইন পাশ, একশো দিন কাজের প্রকল্প, শিক্ষার অধিকারের মতো ঐতিহাসিক সব আইন পাশ হয়েছে ইউপিএ জমানায়। কিন্তু খামতি থেকে গিয়েছে তা নিয়ে প্রচারে। সেই প্রচারটাই এ বার আগ্রাসী হয়ে করতে চাইছেন রাহুল।  তবে নগদ হস্তান্তর প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে যে বড় রকমের ঝুঁকিও রয়েছে, সে কথাও কবুল করছেন কংগ্রেস ও সরকারের শীর্ষ নেতারা। কারণ, যদি দেখা যায় যে কিছু পরিবার সুবিধা পেল না, তা হলে বৈষম্যের বাতাবরণ তৈরি হবে। এবং তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বস্তুত সে কথা মাথায় রেখে এখনই ৪২টি প্রকল্পের ভর্তুকি ও অনুদান সরাসরি হস্তান্তর করা হচ্ছে না।  চিদম্বরম আজ জানান, আপাতত ছাত্রবৃত্তি, বার্ধক্য ভাতা, স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ খাতে অর্থ নগদ হস্তান্তর করা হবে। পরে দেওয়া হবে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার বাবদ ভর্তুকির টাকা। খাদ্য বা সারে ভর্তুকির টাকা নিয়ে সরকার যে তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না, তা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভর্তুকির বিষয়টি জটিল, সারে ভর্তুকির বিষয়টি আরও জটিল। ওই দু'টি বিষয়ে নগদ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।  রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বাইরে অর্থনৈতিক দিক থেকেও কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, এতে সরবরাহ ব্যবস্থার ছিদ্র বন্ধ করে ভর্তুকির বোঝা কমানো সম্ভব হবে। যদিও বিজেপি-র অভিযোগ, এই প্রক্রিয়াতেও দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে।  সাধারণ মানুষের হাতে কী ভাবে ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে তা-ও আজ ব্যাখ্যা করেছেন চিদম্বরম। তিনি জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি 'ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট' নিয়োগ করবে। 'ব্যাঙ্কিং করেসপন্ডেন্ট' কোনও স্কুল শিক্ষক বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সমবায় সংস্থা হতে পারে। ওই করেসপন্ডেন্টের হাতে একটি মিনি এটিএম মেশিন থাকবে। যা থেকে মাসের গোড়ায় ভর্তুকির টাকা সরাসরি আম-আদমির হাতে তুলে দেওয়া হবে। http://www.anandabazar.com/28desh1.html ভর্তুকির টাকা ব্যাঙ্কে, জানালেন চিদম্বরম   inShare ব্যুরো রিপোর্ট, এবিপি আনন্দ Tuesday, 27 November 2012 21:36 নয়াদিল্লি: লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে জনমোহিনী পথে হাঁটছে কংগ্রেস৷ আধার কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকরা ভর্তুকির টাকা সরাসরি পাবেন বলে আজ ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম৷ এই নিয়মের ফলে এলপিজি, কেরোসিনে ভর্তুকি সমেত কেন্দ্রের বেশ কিছু প্রকল্পের আওতায় আসবেন গরিবরা৷  রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত থেকে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ইউপিএ-২ সরকার৷ গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো বিঁধছে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদ৷ এই অবস্থায় লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কোমর বেঁধে নামল কংগ্রেস৷  জনবিরোধী তকমা ঝেড়ে ফেলে জনমোহিনী হয়ে ওঠার কৌশল নিয়েছে মনমোহন সিংহ সরকার।খাদ্য, জ্বালানি, সারে ভর্তুকির নিয়ম বদলানোর পাশাপাশি নেওয়া হল গরিবদের হাতে সরাসরি ভর্তুকির অর্থ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত৷ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই এই ভর্তুকি আধার কার্ডের মাধ্যমে নগদে পাবেন সাধারণ মানুষ৷ চিদম্বরম জানিয়েছেন, আধার কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে টাকা৷ আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই ১৬টি রাজ্যে ৫১টি জেলায় ২৯টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চালু হচ্ছে এই ব্যবস্থা৷ নতুন এই পরিকল্পনায় সরকারের খরচ হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা৷   এদিন দিল্লির আকবর রোডে কংগ্রেস অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ জানান, খাদ্য, পেট্রোলিয়াম ও সার বাবদ ভর্তুকি সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে সরকারের ভর্তুকির বোঝা অনেকটাই কমানো যাবে৷ এভাবে সরকারের আর্থিক ঘাটতি কমানো সম্ভব বলে দাবি কেন্দ্রের৷ http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/30682-2012-11-27-16-07-04

 দেশ উজাড় করে আসা প্রকল্প কর্মীরা দিন-রাত এক করে বি‍‌ক্ষোভে অনড় থাকলেও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করার সময় হলো না প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-র। দু'দিনবাদে প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার সময় দিতে পারেন বলেই জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। সংসদে এখন সংখ্যা জোগাড়ে হিমশিম কেন্দ্রীয় সরকার। সংসদ চলছে। তার মধ্যে যন্ত্ররমন্তরে কনকনে ঠাণ্ডা দিন-রাত জুড়েই চলেছে বিক্ষোভ। দাবি ছিল ন্যূনতম মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষার। এই দাবিটুকু শোনার সময় নেই প্রধানমন্ত্রীর। আজ দাবি দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভের আগুন বুকে চেপেই কর্মীরা সব ফিরে গেলেন গ্রাম গ্রামাঞ্চলে। আরো বড় লড়াই সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা। বিকালের পরন্ত রোদ্দুরে লাল ঝাণ্ডা উঁচিয়ে ঐ শপথ নিয়ে ঘরমুখী সংগ্রামী শ্রমজীবী মহিলারা। ইতোমধ্যে তাঁদের শোষণ বঞ্চনার ছবিও পৌঁছে গেছে রাজধানীর সর্বত্র। বে আব্রু‍‌ কেন্দ্র। উন্নয়ন নামেই। হাহাকারের ছবি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। দিন-রাত বিক্ষোভ সভায় প্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতার কথায় তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

সকাল থেকে রাজপথ ছিল সরব। পথেই তো ছিলেন বিক্ষোভকারীর অনেকে কৌতূহলী হয়ে প্রত্যক্ষ করে গেলেন এই ঠাণ্ডায় খোলা আকাশের নিচে রাত কেমন করে কাটায় মানুষ। অভিজাত বিলাসী রাজপথ সেটা দেখলো। এদিকে সংসদে এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে সময় চাওয়া হয়। মেলেনি সময়। এনিয়ে সি পি আই (এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিলেন ভাষণে। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলার সময় হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করার সময় দিতে পারেন না। যাইহোক তার দপ্তর থেকে দু'দিন বাদে সময় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। দু'দিন বাদে আমরা আমাদের দাবির কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেবো। প্রধানমন্ত্রীর দেশের উপর নজর নেই। তিনি শুধু আমেরিকার ভজনাতে ব্যস্ত একথা ক্ষোভে জানান ইয়েচুরি। তিনি বলেন, দেশের প্রসূতি, শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে যুক্ত কর্মীদের কথা শোনেন না প্রধানমন্ত্রী। শোনেন শুধু বিদেশীদের কথাই। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে যেমন রয়েছে গ্রাম দেবতা। তাকে প্রণাম করেই যেমন তীর্থযাত্রা করেন অনেকে। তেমনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম দেবতা হলো আমেরিকা। তাই সরকারের নীতি বদল হলো জরুরী। ন্যূনতম মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে সরকারে নীতি বদলে সংগ্রাম আন্দোলন চালাতে হবে।

দেশের দরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ করেছে এটা বোঝাতে ইয়েচুরি বলেন, এবারে রেশনের ভরতুকি নগদে দেওয়ার নামে রেশন দোকানই বন্ধ করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। বলা হচ্ছে নগদে ভরতুকি ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্র। কিন্তু যেহারে প্রতিদিন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে তাতে নগদ ভরতুকিতে কোন লাভ নেই। আমাদের তাই দাবি ৩৫কেজি খাদ্যশস্য প্রতি পরিবারে ২টাকা দরে সরবরাহ করতে হবে। সম্প্রতি কেন্দ্রের অর্থ মণ্ত্রীর ঘোষণায় এই দাবিতে ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা পুরো রেশন দোকান বন্ধ করে দিতে চাইছে। এনিয়ে কেন্দ্রের আর্থিক নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন সি পি আই (এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত। তিনি বলেন, সবেতে ভরতুকি ছাঁটাই করছে কেন্দ্র। রান্নার গ্যাসেও ভরতুকি কমানো হচ্ছে। এতে সঙ্কটে পড়ে‍‌ছে মিড ডে মিল প্রকল্প। একেই প্রকল্পে বরাদ্দ কম। তার মধ্যে আবার এই সঙ্কট। চরম মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এভাবে গ্যাস ডিজেলে ভরতুকি কমানোয় দিশেহারা অবস্থা মানুষের। আজ দেশের খাজানা খুলে কর্পোরেটদের অর্থ বিলোচ্ছে সরকার, আর অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থার অবসান দরকার।

কেন্দ্রের নীতিটা আম আদমিদের প্রতি চরম ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয় তা স্পষ্ট করেই সভায় জানালেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক। তিনি বললেন, সরকারের ধোঁকাবাজি কেমন দেখুন, আপনাদের বলছে আপনারা মহান, আপনারা সেবা করছেন। আপনাদের যেন আর টাকার কি দরকার? আর আম্বানিদের কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে। যেন টাকা ঐ কোটিপতি কর্পোরেটদের দরকার, সাধারণ মানুষের এতে কোন দরকার নেই। একারণে প্রতি বছর ৫ লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড় দেওড়া হচ্ছে কর্পোরেটদের। এই সরকার র‍য়েছে পুঁজিপতিদের টাকা জোগাতে। এটাই ধোঁকাবাজি। এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ উৎসা পট্টনায়েক প্রকল্প কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকার দাবি সমর্থন করে তা প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে বৃদ্ধির কথা বলেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি বাঙ্গালোরে এক মিলে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি তাদের ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মেলে। কিন্তু একটি পরিবারে এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে টিকে থাকতে কম করে ১২ হাজার টাকা প্রয়োজন। ঐ মজুরি প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে আবার বাড়াতে হবে।

দরিদ্র ভারতের যে ছবি প্রত্যক্ষ করলো রাজপথ তার থেকে কোন ভিন্ন ছবি নেই পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের পালাবদলের পর যাবতীয় সামাজিক প্রকল্প একেবারে লাটে উঠেছে সেটাই শোনা গেলো রাজ্য থেকে আগত প্রতিনিধিদের কথায়। যেমন শিশু শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পের কর্মীরা জানালেন এই প্রকল্পে শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও পিয়ন যথাক্রমে ৪ হাজার, ৩ হাজার এবং ২ হাজার টাকা ভাতা পান। রাজ্যে সাড়ে ৪ হাজার কর্মী এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন। তারা আজ বঞ্চনার শিকার। এই প্রকল্প প্রায় মুখ থুবরে পড়ছে বলে জানালেন। স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার ওয়েলফেয়ার স্কুলের (পশ্চিমবঙ্গ) সাধারণ সম্পাদক শেখ ফিরোজ। তিনি বলেন, আজ রাজ্যের জেলায় জেলায় এই সামান্য ভাতায় নিয়মিত পাচ্ছেন না কর্মীরা। যেমন নদীয়ায় ২১ মাস ধরে ভাতা মেলে না, বীরভূমে ২৭ মাস ভাতা নেই, উত্তর ২৪ পরগনায় তা হবে ৯ মাস। অ্যাসোসিয়েশনের তরফে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। বলা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের সরকার বাড়তি ভাতা দিচ্ছে। অথচ আমাদের রাজ্যে নিয়মিত ভাতা মিলছে না। এসব অভিযোগে কোন আমল দেননি শ্রমমন্ত্রী। প্রতিকারের কোন আশা মেলেনি। তবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খুব সক্রিয় বলে জানান প্রতিনিধিরা। তাদের মাধ্যমে প্রকল্পে টাকা নয়ছয় হচ্ছে বলে মনে করেন প্রতিনিধিরা।

রাজ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ১লক্ষ ৬০ হাজার কর্মী। প্রতিটি প্রকল্প বেহাল অবস্থায়। বামফ্রন্টের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পে ভাতা বাড়ালেও পালাবদলের পর ভাতা বাড়ানো তো দূর অস্ত, ভাতাই মিলছে না নিয়মিত। আবার অনেক ক্ষেত্রে কর্মীরা প্রকল্পের কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। এই চরম অব্যবস্থার কথাই সভায় জানিয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি এবং সর্বশিক্ষা আন্দোলনের নেত্রী যথাক্রমে রত্না দত্ত ও মধুমিতা ব্যানার্জি। রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের আওতায় এনে সর্বশিক্ষার প্রকল্পকে আরো প্রসারিত করার পরিকল্পনা ছিল বামফ্রন্টের আমলে। এখন এসব শোনা যায় না। উলটে ঐ প্রকল্প এখন অনেক কাজে যোগ দিতে পারছেন না। শাসক দল এতে বাধা দিচ্ছে। শাসক দলের তরফে এতে প্রকল্প অর্থ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ। এসব সামাজিক প্রকল্পের এই বেহাল অবস্থায় একদিকে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ অন্যদিকে প্রকল্পের কর্মীদের জীবন জীবিকা চরম বিপন্ন।

বিকালের রোদ ছুঁয়ে যায় রাজপথ। যন্তরমন্তরে সব সমাপ্তি ঘোষণা হলো দু'দিনের লাগাতার বিক্ষোভের। একে একে দল বেঁধে মহিলারা ঘরে ফেরার পথ ধরেছেন। কোলের শিশু নিয়ে সারা রাত রাজপথে ছিলেন মা সন্তোষ। তার শিশুর পুষ্টি না মিললেও গ্রামের মিড ডে মিলের পুষ্টিকর রান্না খাবার তৈরি করাই তার কাজ। মাস গেলে মেলে ৯০০ টাকা। এতে আবার কমিশন দিতে হয় কাজ জুটিয়ে দেওয়ার ঠিকাদারকে। হতদরিদ্র প্রকল্প কর্মীদের সামান্য ভাতা তাতে আবার থাবা বসাচ্ছে অনেকে। রাত জুড়ে এরকমই গপ্পো করে কেটে গেছে সময়। এই সংগ্রামের পাওনা হলো এটাই সকলেই স্বীকার করেছেন এটাকায় দিন চলে না। মজুরি বাড়ানো দরকার। কিন্তু নিরুপায়। বাস্তবে এতেই দিন চালাচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষ। যা প্রথম ইউ পি এ সরকারের আমলে অর্জুন সেনগুপ্ত তাঁর রিপোর্টেই জানান। বলে যান, দেশের ৭৭ ভাগ মানুষের দৈনিক আয় ২০ টাকা। যা এই সমাবেশে জীবন যাপনে ছবিতে প্রত্যক্ষ করলো বিলাসী রাজধানী।

মনমোহন সিং সরকার যাবতীয় আইনকানুন, বিধি এড়িয়ে সিদ্ধান্তের বৈধতা দিতে চাইছে বলে। কিন্তু এফ ডি আই নিয়ে সিদ্ধান্ত সংসদে পাস করাতেই হবে বলে দাবি করেন ইয়েচুরি। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন পার্টির দুই সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এবং টি কে রঙ্গরাজন। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা পরিচালন আইন বা ফেমা নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক সংশোধনও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে যদি সময়মতো এফ ডি আই নিয়ে ভোটাভুটি না করা হয়। ঐ সংশোধনে স্পষ্টতই খুচরো ব্যবসায়ে এফ ডি আই ভোটাভুটির জন্য সংসদে পেশ করতেই হবে। এদিন ইয়েচুরি ৩০শে অক্টোবর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিজ্ঞপ্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ''ফেমা-র ৪৮নং ধারায় বলা আছে যে সংশোধন করা হলে তা সংসদের উভয় কক্ষে যত দ্রুত সম্ভব পেশ করতেই হবে। রীতি হলো, সংশোধন করা হলে সংসদ অধিবেশনের ১৫তম দিনের আগেই পেশ করতে হবে সংসদে। আবার সংশোধন পেশ করা হলে তা একমাসের মধ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে পাস করিয়ে নিতে হবে। ফলে এই ইস্যুতে ভোটাভুটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাচ্ছে।'' তিনি এদিন সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা জনৈক মনোহরলাল শর্মার একটি জনস্বার্থবাহী মামলা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কথা উল্লেখ করেন। ইয়েচুরি জানিয়ে দেন, এফ ডি আই-র বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে সি পি আই (এম)।

এদিকে, সরকারের নগদে ভরতুকি দেওয়ার নীতিরও এদিন কড়া সমালোচনা করেন ইয়েচুরি। তিনি অভিযোগ করেন, এর মাধ্যমে ভরতুকি ছাঁটাই এবং গণবণ্টন ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। নগদে ভরতুকি আসলে ভরতুকি ছাঁটাইকে আড়াল করারই উদ্যোগ। মুদ্রাস্ফীতি যত বাড়বে নগদে ভরতুকির পরিমাণও হ্রাস পাবে। এটা আসলে নিশ্চুপে ভরতুকি তুলে দেওয়ার পন্থা।

শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগের খরা, ক্যাম্পাসে বিদায় বাংলা গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা

তথ্য-প্রযুক্তির আকর্ষণে সামান্য হলেও ভাটার টান। তাই আবার সিভিল-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভিড় বাড়ছে। কিন্তু পাশ করে বেরিয়ে ওই সব শাখার নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকাংশকে চাকরির জন্য ছুটতে হচ্ছে ভিন রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে কাজের বিশেষ সুযোগ ওঁরা পাচ্ছেন না। যার অন্যতম কারণ হিসেবে এ রাজ্যে উৎপাদন-শিল্পে লগ্নির আকালকে দায়ী করছে শিল্প-বণিকমহলের একাংশ।  ২০০৮-এর সেই বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার পর থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাম্পাসে 'আইটি'-র ঔজ্জ্বল্য-কৌলীন্য যেন কিছুটা ম্লান। উল্টে মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল-সিভিল-কেমিক্যালের মতো 'কোর' শাখায় আসনের চাহিদা ফের ঊর্ধ্বমুখী। সিভিল-মেকানিক্যাল পাশ করে বেরিয়ে আসা ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছেন ঠিকই। তবে সরকারি-বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোয় 'প্লেসমেন্ট'-এর পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধিকাংশ নতুন স্নাতকের চাকরি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে।  এবং এর প্রেক্ষিতে শিল্পমহলের একাংশের বক্তব্য: নতুন প্রকল্প (গ্রিনফিল্ড প্রজেক্ট) না-হলে নতুন ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরি হওয়া কঠিন। অথচ এ রাজ্যে সিভিল-মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল ইত্যাদি শাখায় যত ইঞ্জিনিয়ার ফি বছর বেরোচ্ছেন, উৎপাদন-শিল্পে তাঁদের সকলকে নেওয়ার মতো নতুন প্রকল্পের সংখ্যা সে তুলনায় নগণ্য। "পাশাপাশি নতুন কারখানায় যে ধরনের নয়া প্রযুক্তির সুযোগ, পুরনো কারখানায় তা রাখা কঠিন। ফলে ইন্সট্রুমেন্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো শাখায় এ রাজ্যে নতুন কাজের সুযোগ নেই বললেই চলে।" মন্তব্য রাজ্যের এক শিল্প-কর্তার।

মগজ চালান কোন শাখা বাইরে চাকরি মেকানিক্যাল ৭০% সিভিল ৪০% ইনস্ট্রুমেন্টেশন প্রায় ১০০% ইলেকট্রিক্যাল ৭৫% ইলেকট্রনিক্স ৮০% * বিভিন্ন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সূত্রে পাওয়া এ বছরের তথ্য

পরিণামে 'ব্রেন ড্রেন' অব্যাহত। কর্পোরেট মহলের নিয়োগের ছবিতেও এই মগজ চালানের প্রবণতা স্পষ্ট। শিল্পম-সূত্রের খবর: ব্রিটিশ অক্সিজেন, গোদরেজ, ম্যাকনেলি ভারত, টেলকন, রিলায়্যান্সের মতো সংস্থা এ বছর পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজের ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে এসেছিল। ভিন রাজ্যের প্রকল্পের জন্যই অধিকাংশ ইঞ্জিনিয়ারকে নেওয়া হয়েছে। যেমন কলকাতার হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র মুখপাত্র জানাচ্ছেন, তাঁদের ক্যাম্পাসে ব্রিটিশ অক্সিজেন ও রিলায়্যান্স এসেছিল। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব স্নাতকের চাকরি হয়েছে রাজ্যের বাইরে। কলকাতার আর এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গোদরেজের মতো সংস্থার হাত ধরে তাঁদের কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বেশ কিছু স্নাতক মহারাষ্ট্রে চলে যাচ্ছেন।  রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পঠন-পাঠন বা গবেষণায় যে দুই প্রতিষ্ঠানের নাম সর্বাগ্রে আসে, সেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু) কী বলছে? বেসু-র উপাচার্য অজয় রায় বলেন, কোন পড়ুয়া কোথায় চাকরি পেলেন, তার বিস্তারিত তথ্য তাঁদের কাছে নেই। অজয়বাবুর মতে, উৎপাদন-শিল্পের কোন শাখায় ওঁরা কাজ করছেন, পোস্টিং তার উপরে নির্ভর করে। যেমন, কেউ গাড়ি শিল্পে থাকলে স্বভাবতই তাঁর কাজের জায়গা হবে পুণে বা চেন্নাই। "আবার কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনেক স্নাতক বহুজাতিকেও চাকরি পান। সে ক্ষেত্রে ওঁরা বিদেশেও পাড়ি দিতে পারেন।" মন্তব্য অজয়বাবুর। অন্য দিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর: পাশ করে বেরিয়ে বহু ইঞ্জিনিয়ারকে প্রথমে বাইরে যেতে হচ্ছে। কারণ, অধিকাংশ বড় সংস্থার কারখানা এখানে নেই। অথচ সদ্য ডিগ্রি পাওয়া ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশিক্ষণ নিতে হয় কারখানায়। যাদবপুরের প্লেসমেন্ট ও ট্রেনিং বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, "কারখানায় প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পরে ওঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজে লাগানো হয়। সে ক্ষেত্রে এ রাজ্যের কোনও প্রকল্প থাকলে এখানেও পোস্টিং হতে পারে।"  অর্থাৎ, অন্য রাজ্য দিয়ে চাকরিপর্ব শুরু করা ছাড়া অনেকেরই উপায় থাকছে না। রাজ্য কী ভাবছে? শিল্প-প্রশাসনের দাবি, মেধাসম্পদের ভিন রাজ্যে ও বিদেশে পাড়ি দেওয়াটা নতুন কিছু নয়। বরং পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার প্রবণতাটা রোখার চেষ্টা করছে। শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একাধিক সভায় বলেছেন, নিজভূমে ফিরতে ইচ্ছুক বঙ্গসন্তানদের সরকার যাবতীয় সহযোগিতা করবে। যদিও তেমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি বলে শিল্প-বাণিজ্যমহলের অনেকে মনে করছেন। কী বলছেন তাঁরা? বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্তের মতে, দেশ জুড়েই উৎপাদন ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৃদ্ধির অভাব স্পষ্ট। তার উপরে এ রাজ্যে শিল্পে লগ্নির অভাবে কর্মসংস্থানে টান পড়েছে। তিনি বলেন, "মন্দার পরে মেকানিক্যাল, সিভিল ইত্যাদির কদর ফিরছে। অথচ এখানে যাঁরা পাশ করে বেরোচ্ছেন, তাঁরা রাজ্যের বাইরে পা রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।" মানবসম্পদ-বিশেষজ্ঞ তুষার বসুর আক্ষেপ, "গত পনেরো বছর যাবৎ এ রাজ্য থেকে বাইরে চাকরি করতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যা, তাতে ভবিষ্যতেও এটা ঠেকানো মুশকিল।" অন্য দিকে বণিকসভা সিআইআইয়ের রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পে কর্মসংস্থানের যে ছবি মিলছে, তা-ও বিশেষ আশাপ্রদ কিছু নয়। দেখা যাচ্ছে, মোটামুটি সব রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে সর্বাধিক হারে কর্মসংস্থান হলেও পশ্চিমবঙ্গে সেই হার নগণ্য। এখানে জীবিকা জোগানোয় সবার আগে পরিষেবা ক্ষেত্র বা সার্ভিস সেক্টর (যার মধ্যে রেস্তোরাঁ-বিপণি, নিরাপত্তারক্ষীর কাজ থেকে শুরু করে কলসেন্টারের চাকরিও রয়েছে)। তথ্য বলছে, এরাজ্যে উৎপাদন-শিল্পে কর্মসংস্থানে বৃদ্ধির হার সাকুল্যে ১.২১%। খনিশিল্পে ২.৩৪%, নির্মাণে ৯.৭৩%। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে তা প্রায় ১০% নেমে গিয়েছে!  তথ্য-প্রযুক্তিতে অবশ্য একটু অন্য রকম। সফ্টওয়্যারসংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন 'ন্যাসকম'-এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সুপর্ণ মৈত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে আইটি'তে নিয়োগের ছবি যথেষ্ট উজ্জ্বল। "গত দু'বছরে এ রাজ্যে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে দশ হাজারের বেশি চাকরি হয়েছে।" বলছেন সুপর্ণবাবু। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের দাবি: চার বছর বা তার আগে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আইটি'র তুঙ্গ চাহিদা থাকাকালীন যাঁরা ওই শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে পাশ করে বেরিয়ে এ রাজ্যেই পছন্দের চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। এ হেন বৈপরীত্য কেন? ওই মহলের একাংশের ব্যাখ্যা: ইনফোসিস'কে বাদ দিলেও তথ্য-প্রযুক্তির বেশ কিছু তাবড় সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। গড়েছে বড় প্রকল্প। তালিকায় উইপ্রো, কগনিজ্যান্ট, টিসিএস, আইবিএমের মতো 'নক্ষত্র'রাও রয়েছে। তাই নতুন আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরি হয়েছে তুলনায় বেশি। কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক কোর ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের মতো বড় শিল্প-কারখানা সাম্প্রতিক কালের মধ্যে গড়ে ওঠেনি। উল্টে টাটার গাড়ি-প্রকল্প রাজ্য থেকে পাট গুটিয়েছে। এমনকী, এ প্রসঙ্গে হলদিয়া থেকে এবিজি-বিদায়ের ঘটনারও উল্লেখ করছেন শিল্প-কর্তাদের অনেকে। তাঁদের মতে, গাড়ি কারখানা তো বটেই, এবিজি-র মতো পণ্য খালাসকারী সংস্থাতেও কোর ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ ছিল অনেক বেশি। সে সুযোগ ফস্কেছে। অতএব, ঘরের ভাত খেয়ে চাকরি করতে হলে উৎপাদন-শিল্পেও 'নক্ষত্র সমাবেশের' অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় কী? http://www.anandabazar.com/28raj2.html এ বার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নজরদার কমিটি নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির ক্ষেত্রে খসড়া নীতি প্রকাশ করল সরকার। বিনিয়োগ বেসরকারি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরে নজরদারির ব্যবস্থা রাখবে রাজ্য সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশিকা মেনে রাজ্য তার নীতি প্রণয়ন করেছে।  ক্ষমতায় আসার পরে এ পর্যন্ত দু'টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। একটি টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যার বিল পাশ হয়ে গিয়েছে রাজ্য বিধানসভায়। দ্বিতীয়টি বারুইপুরে ইআইআইএলএম গোষ্ঠীর বিশ্ববিদ্যালয়, যার জন্য এখনও আইন পাশ হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, আরও কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে।  নীতি-নির্দেশে বলা হয়েছে, আবেদন জমা পড়লে তা খতিয়ে দেখবে একটি সরকারি কমিটি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার আবেদন করতে হলে জমি সংগ্রহ, ব্যাঙ্কে দশ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রাখা-সহ কী কী করণীয়, তা-ও নির্দেশিকায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবেদন খতিয়ে দেখতে কমিটিতে থাকবেন উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব বা তাঁর মনোনীত কেউ, রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বা তাঁর মনোনীত প্রার্থী, দু'জন শিক্ষাবিদ (এক জন হবেন অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য), স্থানীয় প্রশাসনের কেউ এবং এক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সরকার চাইলে তার পছন্দের অন্য কোনও ব্যক্তিকেও এই কমিটিতে রাখতে পারে। আবেদনের সঙ্গে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখে তার পরেই অনুমতি দেবে কমিটি। খসড়া-নীতির এক ডজন একক বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যপালই আচার্য। সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা পরিচালন সমিতি। সমিতির গড়া সার্চ কমিটির সুপারিশে উপাচার্য নিয়োগ করবেন আচার্য। উপাচার্যের কার্যকাল তিন বছর। তা আরও তিন বছর বাড়তে পারে। পরের উপাচার্য আসা পর্যন্ত আগের জনই দায়িত্বে। নাক-এর অনুমোদন বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার দশ বছরের মধ্যে বন্ধ করা যাবে না। বন্ধ করার জন্য লাগবে সরকারের অনুমতি। পড়ুয়াদের স্বাথের্ দেওয়া সরকারি নির্দেশ মানতে বাধ্য বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারি ব্যাঙ্কে অন্তত ১০ কোটির ফিক্সড ডিপোজিট রাখতে হবে। উচ্চশিক্ষা দফতরের নামে থাকবে ১ কোটি সিকিউরিটি ডিপোজিট। বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকঠাক চলছে কি না, তার দেখার জন্য থাকবে আরও একটি সরকারি কমিটি। ওই কমিটিতে থাকবেন উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব, উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান এবং রাজ্যপাল মনোনীত দু'জন শিক্ষাবিদ। এ ছাড়া, রাজ্য সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন উপাচার্য, আইন দফতরের এক জন আধিকারিক এবং অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দফতরের এক আধিকারিক এই তিন জনকে মনোনীত করবে সরকার। প্রত্যেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই কমিটির সুপারিশ মানতে বাধ্য থাকবে। কোনও অনিয়ম হলে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে আর্থিক দণ্ড দিতেও বাধ্য করতে পারে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, "অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ঠিকঠাক বজায় থাকে না। আমরা চাই, বেসরকারি বিনিয়োগ আসুক। কিন্তু পড়াশোনার মান খর্ব করে নয়। সেটা মাথায় রেখেই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।"  কিন্তু শিক্ষানুরাগীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার নিয়ে সরব, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা সমীচীন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, সরকারি নিয়ন্ত্রণ মানেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই তার প্রমাণ।  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তথা ইউজিসি-র প্রাক্তন সদস্য সুরঞ্জন দাস অবশ্য মনে করেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে দেওয়াই উচিত নয়। তাঁর কথায়, "এতে শিক্ষা বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইউজিসি-ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রাখারই পক্ষপাতী।" রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ বলেন, "এই নজরদারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা বজায় রেখেই। তা ছাড়া এর অর্থ কিন্তু প্রতি দিনের সব কাজে দখলদারি নয়।"  সরকারি নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে মেট্রোপলিটন শহরে পাঁচ একর, অন্যান্য শহরে সাত একর এবং গ্রামাঞ্চলে অন্তত দশ একর জমি লাগবে। আবেদনকারীর সদিচ্ছা ও প্রকল্প রিপোর্ট দেখে সরকার খুশি হলে ন্যূনতম জমির পরিমাণে ছাড় দেওয়া হতে পারে। ছাত্র ভর্তি, পঠনপাঠন, পরীক্ষা সব কিছুর জন্যই সরকারের লিখিত অনুমতি লাগবে। সরকার ফি-ও বেঁধে দেবে। বেসরকারি সংস্থা যদি হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে চায়? খসড়া নীতিতে জানানো হয়েছে, অন্তত দশ বছর চালু রাখার পরেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কথা ভাবতে পারে। তার জন্য সরকারের কাছে এক বছর আগে থেকে আর্জি জানাতে হবে। পড়ুয়ারা পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যাবে না। http://www.anandabazar.com/28raj3.html অনিশ্চয়তার মুখে ভারতীয় অর্থনীতি বিশাল ভূখণ্ডের অধিকারী ভারত অর্থনীতির দিক দিয়ে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশ। উৎপাদনমুখী শিল্প, সেবা খাত এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ অনেক ক্ষেত্রেই ভারত বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিচ্ছে। প্রতিবছরই দেখা যায় বিশ্বের দশ শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকায় ভারতের দু-তিনজন রয়েছে। ভারতের উৎপাদনশীল খাতে রয়েছে প্রচুর লোকবল যার ফলে দেশটির বার্ষিক উৎপাদনও প্রশংসার দাবিদার। বিশ্বের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বা বলীয়ান অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সর্বক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে ভারত। ভারত বিশ্বের অন্যতম একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকলেও দেশটিতে কিছু সমস্যা রয়েই গেছে। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দুর্নীতি। অভিযোগ উঠেছে কালো টাকারও। অনিয়মের কারণে দেশটির সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বা কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যা ভারতের সুনাম নষ্ট করছে। সম্প্রতি বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়্যান্ড ওয়াই প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়েছে, ভারত বিশ্বের কোম্পানিগুলোর জন্য এখনও বিনিয়োগের একটি ভালো বা পছন্দসই দেশ বা জায়গা হলেও বিনিয়োগ থেকে নগদ টাকা উঠানোর ঝামেলা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্নীতি ইত্যাদি বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় বাধা বা প্রতিবন্ধকতা। প্রতিষ্ঠানটি এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে উন্নত এবং উদীয়মান ৫৯টি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মোট ৯২১ জন প্রধান ফিন্যান্সিয়াল অফিসারের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে। ভারত সম্পর্কে তাঁদের অভিমত হলো যে, ভারতে বিনিয়োগ করে তা থেকে নগদ অর্থ পাওয়া একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির মন্তব্য হলো, অর্থের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যাচ্ছে যার ফলে হ্রাস পাচ্ছে মুদ্রার বিনিময় হার বা মূল্য। বর্তমানে এই সমস্যার কারণে ভারতের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি ভারতের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ঘুষ গ্রহণকে। ফিন্যান্সিয়াল অফিসাররা মনে করেন, দেশটির ঘুষ গ্রহণের অপবাদ অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে বড় বাধা। পাশাপাশি রয়েছে ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিও। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ হলো, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধাগুলো দূর করতে হলে আরও উদ্যোগী হতে হবে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই জানায়, বিদেশী ব্যাংকে প্রচুর কালো টাকা আছে ভারতীয়দের এবং সীমান্ত পথে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণও অনেক বেশি যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ ফেলছে। বিদেশী ব্যাংকে বেআইনী লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য জোগাড় করা যেমন কঠিন, তেমনি সময়সাপেক্ষ। কারণ, এ ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু আইনী জটিলতা। কয়েকজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ভারতে। তবে পদ্ধতিগতভাবে তা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিলে হয়ত ভালো ফল পাওয়া যাবে। দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনেও। তাঁদের মতে, দুর্নীতি হচ্ছে দেশটির অর্থনীতির ভ্রান্ত নীতির কারণেও। এ প্রসঙ্গে অনেকেই বলেছেন, স্বভাবগতভাবেই দুর্নীতিপরায়ণ নয় ভারতীয়রা। তাই দুর্নীতির কৌশলগুলো সম্বন্ধে সঠিক ধারণা নিয়ে তা রোধ করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে প্রযুক্তি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে ঘটা দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তাঁরা মনে করেন।  দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের প্রভাব পড়ছে ভারতের অর্থনীতিতে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ভারতের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদী ধীরগতির দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগ্যান স্ট্যানলি। তাদের মতে, দেশটিতে রাজস্ব ব্যয় বাড়ানোর ফলে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কমছে যা ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সরকারের চলতি অর্থবছরে (২০১১-১২) জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ছিল ৬ দশমিক ৯ শতাংশ প্রায়, যা আগের অর্থবছরের (২০১১-১০) চেয়ে যথেষ্ট কম। গত অর্থবছরে তা ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রায়। মূল্যস্ফীতি নিয়েও চিন্তিত দেশটির অর্থনীতিবিদরা। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের বেশি। গত এক বছরে বিনিয়োগকারীরা ছিলেন রীতিমতো দমবন্ধ অবস্থায়। এর প্রধান কারণ দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। জানা গেছে, এই বছর দেশটির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল ৯ থেকে ১০ শতাংশ। সম্ভাব্য এ প্রবৃদ্ধিকে অর্থনীতিবিদরা আখ্যা দিয়েছেন 'প্রবৃদ্ধির ফাঁদ' হিসেবে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশটির অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মূলধন বাজারকে যথেষ্ট উদার করার পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনতে হবে বাজেট ঘাটতি। ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে দেশটি অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছিল সুসময়। তখন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ শতাংশ। কিন্তু ইউরোপের আর্থিক মন্দা ও ঋণ সঙ্কট এবং ভারতের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও মুদ্রার মান কমে যাওয়া ভারতকে গভীর আর্থিক সঙ্কটের দিকে ক্রমশ ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে শক্তিশালী করতে হয় তবে অর্থনীতির উন্নতি বা অগ্রগতিতে প্রধান বাধাগুলো দূর করতে চালাতে হবে সঠিক পুনর্গঠন প্রচেষ্টা। বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে বিদ্যুত, কৃষি, শ্রমঘন শিল্প, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, সড়ক অবকাঠামো উন্নত করা, খাদ্যে ভর্তুকির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে। ভারতের অনেক স্থানের শিল্প উদ্যোক্তারা শঙ্কিত এ কারণে যে, তারা প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে কি না কারণ সামগ্রিকভাবে চীনের আর্থিক অবস্থা ভারতের তুলনায় অনেক ভালো। তাছাড়া চীনের বিনিয়োগ নীতি, অবকাঠামোগত দিক এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ভারতের তুলনায় অনেক কম। তবে সম্প্রতি চীনের শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। ফলে চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিযোগিতা করা কিছুটা সহজ হবে বলে মনে করছেন অনেক উদ্যোক্তা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে চীন তাদের পণ্য ভারতের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করছে। ফলে ব্যবসায়ীরা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে যা ভারতকে প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে দিচ্ছে। ভারতের জুয়েলারি বাজারসহ অন্যান্য পণ্যের রফতানির পরিমাণ কমছে যা দেশটির জন্য অশনিসঙ্কেত। ভারতের ছোট পরিসরের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো চায় সরকারের নীতি সহায়তা। পাশাপাশি এর শিল্পোদ্যোক্তারা অনুভব করছেন দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব। তাদের অভিযোগ, এখানেও মিলছে না সরকারি কাক্সিক্ষত সহায়তা। অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রাখছে দেশটির উৎপাদন খাতের ৩৫-৪০ শতাংশ অবদান। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে প্রায় ছয় কোটি মানুষ। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে চড়া সুদের বোঝা বা হার ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কার কারণ। উৎপাদিত পণ্য রফতানি বা সরবরাহের জন্য উন্নত যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরে ভারতে রাস্তা বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশের কিছু বেশি। উল্লিখিত সময়ে রাস্তার লক্ষ্যমাত্রা ছিল আড়াই হাজার কিলোমিটার। বিপরীতে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটারের সামান্য বেশি। অবশ্য সড়ক অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ২০১২-১৩ অর্থবছরে। ভারতের কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ সকল প্রকার শিল্পের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য অবকাঠামোগত দিকটির প্রতি ভারত সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। ২০১১ সালের শেষ তিন মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভারতে সুদের হার বাড়ানো হয় প্রায় ১৩ বার যার লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। কয়েকটি দিক থেকে দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলোÑ রুপীর মূল্য হ্রাস, সুদের হার বৃদ্ধি এবং বিশ্বমন্দা। এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে ভারতীয় মুদ্রার লেনদেনের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। চলতি বছরে রুপী মান হারিয়েছে প্রায় ২২ শতাংশ যা সমগ্র আমদানি-রফতানি তথা সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করছে। স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড পুওরস বা এসএ্যান্ডপি মন্তব্য করেছে, ভারতে বিনিয়োগের গতি কমে গেছে। পাশাপাশি কমেছে আর্থিক বৃদ্ধির হারও। গত আট বছরে লেনদেন খাতে ঘাটতি পৌঁছেছে সর্বোচ্চ অংকে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের সাপেক্ষে পড়তে থাকা রুপীর দাম। এসএ্যান্ডপিআরও বলেছে, রাজকোষ ঘাটতিও অনেক বেশি। এর মূল কারণ ঘাড়ে চেপে বসা বিপুল ভর্তুকি। এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য দেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন কিন্তু থমকে যাওয়া আর্থিক সংস্কারের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অতএব, সবদিক বিবেচনায় আগামী দিনে দেশটির অর্থনীতির যে আরও খারাপ হবে তা বোঝা যায়। এই যুক্তিতে এসএ্যান্ডপি দেশটির অর্থনীতি সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি 'স্থিতিশীল' থেকে নামিয়ে এনেছে 'নেতিবাচকে'। আরেক মার্কিন মূল্যায়ন সংস্থা 'মুডিজ এ্যানা লিটিকস' বলে, ভারতের অর্থনীতির দুরবস্থার জন্য অসুস্থ রাজনীতি দায়ী। তারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, নিজেদে দৃষ্টিভঙ্গি দ্রুত সংশোধন না হলে ভারতের ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দেয়া হবে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্যালাপের এক জরিপে বলা হয়েছে, আর্থিক দিক থেকে চরম দুঃখ-কষ্টের মধ্যে রয়েছে দেশটির প্রতি দশজনের তিনজন। খুব শীঘ্রই যদি সরকার অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নেয় তাহলে ভেঙ্গে পড়তে পারে সমগ্র ভারতের অর্থনীতি যা শুধু ভারতের বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপরেই প্রভাব ফেলবে না, এর প্রভাব পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর ওপরও।  মোঃ নিয়াজ মাহমুদ রনি roni_law.du@hotmail.com http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=41&dd=2012-06-10&ni=99303 খাদ্য নিরাপত্তার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত মানুষের বাস ভারতে। মনমোহনী অর্থনীতি রেশন ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করার নীতি নিচ্ছে। একাজে তাদের দোসর বি জে পি। এই ক্ষুধার্ত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আইন তৈরির দাবি জানিয়েছে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। কেন্দ্রও মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য একটি বহু চর্চিত খাদ্য নিরাপত্তা বিল পেশ করবে বলে জানিয়েছে। যোজনা কমিশনের মাপকাঠিতে ঠিক করা ঐ বিলের বিকল্প একটি প্রস্তাব মহিলা সমিতি দিয়েছে। এ সপ্তাহে তার প্রথম কিস্তি। খাদ্য নিরাপত্তা একটি সর্বজনীন অধিকার, আইন তৈরি করে সরকারকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই আইন কার্যকর করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পর্যাপ্ত সম্পদের সংস্থান করতে হবে। প্রতিমাসে প্রতি পরিবারকে ভরতুকিতে ৩৫কেজি খাদ্যশস্য সরবরাহ করতে হবে। এ পি এল-বি পি এল এর নামে গরিব মানুষকে ভাগ করা চলবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেনশন এবং অন্যান্য সমস্ত দারিদ্র্যবিরোধী সরকারী প্রকল্পকে বি পি এল তালিকার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। গরিব মানুষের স্বার্থে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই সব কর্মসূচী রূপায়ণের দাবিতে গত মঙ্গলবার সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ডাকে নয়াদিল্লিতে তুমুল বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।  দিল্লি ছাড়াও হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ এবং বিহার থেকে মহিলারা এসেছিলেন সমাবেশে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সহ সভানেত্রী সুভাষিণী আলি সমাবেশ পরিচালনা করেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ বলেন বর্তমান খাদ্য সুরক্ষা বিলের যে খসড়া হয়েছে তা বহুজাতিকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করবে আর গরিবদের সুরক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কীভাবে কংগ্রেস এবং বি জে পি ঐক্যবধ্যভাবে নয়া উদারনীতি রূপায়ণ করছে এবং কর্পোরেটরদের স্বার্থে কাজ করছে তা তুলে ধরেন সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য, সাংসদ বৃন্দা কারাত। তিনি বলেন, একই নীতি রূপায়ণ করছে দুই দল আর নিজেদের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ করছে। ডিজেল এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। অবিলম্বে খাদ্য সুরক্ষা বিল সুনিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। এরজন্য দেশজুড়ে জঙ্গী আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন বৃন্দা কারাত।  দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবং সকলের জন্য খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার দাবিতে সমাবেশে প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদিকা সুধা সুন্দররমণ। তিনি বলেন, কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার রেশন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে। কিন্তু কৃষিপণ্যের আগাম বাণিজ্য বন্ধ করছে না। মজুতদার এবং কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে কোনো কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রস্তাবে বর্তমান খাদ্য সুরক্ষা বিলের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বর্তমান বিলটি সর্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করতে পারবে না, বর্তমান বিলটিতেও একইভাবে গরিব মানুষকে এ পি এল এবং বি পি এল-এর নামে ভাগ করা হয়েছে। যোজনা কমিশনের মাপকাঠিতে স্থির করা এই পদ্ধতিতে গরিব মানুষের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে গেলে আসলে বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতার বাইরে থেকে যাবেন। প্রস্তাবে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি বলেছে- খাদ্য অনিশ্চিয়তার লজ্জাজনক বাস্তবতা খাদ্য নিরাপত্তা এখন আমাদের দেশের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আই এফ পি আর আই)-এর হিসেব অনুযায়ী বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) বিশ্বের ৮৮টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ৬৬তম। ঐ হিসেব জানাচ্ছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যার হিসেবে আমাদের দেশে অবস্থা 'উদ্বেগজনক'। দেশের জনসংখ্যার ৭৬শতাংশ যে পরিমাণ ক্যালোরি এবং খাদ্য গ্রহণ করেন তা অপর্যাপ্ত। এরমধ্যে ৮০শতাংশ গ্রামীন মানুষ, ৬৪শতাংশ শহরের। দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত মানুষের বাস ভারতে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানাচ্ছে বিশ্বের ক্ষুধার্ত গরিব মানুষের ২৫শতাংশই থাকে ভারতে। জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের অর্ধেকের বেশি মহিলা এবং চারভাগের তিনভাগ শিশু অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত। দেশের মানুষের যখন এই পরিস্থিতি, তখন সরকারী গুদামে মজুত রয়েছে সাড়ে ছ' কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য। এরমধ্যে অন্তত দেড় কোটি টন খোলা আকাশের নিচে পচে যাচ্ছে।  নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির জেরে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়ে চলেছে। পরপর পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়েই চলেছে। ব্যাপক ক্ষুধা এবং অপুষ্টির মোকাবিলা করতে হলে সরকারকে সকলের জন্য সস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে। গণবন্টন ব্যবস্থাকে সর্বজনীন এবং শক্তিশালী করেই এই কাজ করা সম্ভব। যদিও সরকার মানুষকে রিলিফ দিতে চাইছে না। সরকারের যুক্তি ভরতুকি দিয়ে সুরষা প্রকল্পগুলি চালানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নেই সরকারের হাতে।  অভাব অর্থের নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার কর্পোরেট-রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের যোগসাজশে বড় বড় কেলেঙ্কারিতে যেভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুঠ হয়েছে তাতে গোটা দেশ হতভম্ব। সি এ জি রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতেই ১লক্ষ ৭৬হাজার ৬৪৫কোটি টাকা লুঠ হয়েছে। কমনওয়েলথ গেমস, কে জি গ্যাস, বেলারি খনি, আদর্শ আবাসন এবং অন্যান্য জমি কেলেঙ্কারির আর্থিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। শুধুমাত্র দুই ব্যবসায়ী হাসান আলি এবং কাশীনাথ তাপুরিয়া ৭০হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে ভারত থেকে ২০লক্ষ কোটি টাকা অবৈধ ভাবে বেরিয়ে যাচ্ছে। এর ওপর সরকার গত আর্থিক বছরে কর্পোরেটর এবং ধনীদের জন্য ৫লক্ষ কোটি টাকা কর ছাড় দিয়েছে।  পাশাপাশি সরকারকে বছরে খাদ্য, কেরোসিনসহ রেশনের জন্য সর্বমোট ৬০হাজার কোটি টাকা ভরতুকি দিতে হয়। সর্বজনীন গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সকলের জন্য খাদ্য সুরক্ষার দিতে অতিরিক্ত আরও ৬০হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু যেই এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রশ্ন ওঠে তখনই সরকারের অর্থের অভাব দেখা দেয়। এটা অজুহাত ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মাত্র দেড় শতাংশ গণবন্টনের জন্য বরাদ্দ করলে সকলের জন্য খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা যায়। সরকার যদি তার ধনী তোষণ নীতি বন্ধ করে আর দুর্নীতি বন্ধ করে তাহলে খুব সহজে এই কাজ করা যায়।  প্রস্তাবিত খাদ্য সুরক্ষা বিল: একটি ধাপ্পা অনেক আলোচনার পর মন্ত্রীগোষ্ঠী প্রস্তাবিত খাদ্য সুরক্ষা বিলের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। তাতে সর্বজনীন গণবন্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথা না বলে ফের কাটছাঁটের বিষয়টি চাপিয়ে দিচ্ছে এই বিল। এই বিল নতুন করে বাদ দেওয়ার তালিকা বানাবে। এরফলে দেশের গ্রামীণ জনগণের ২৫শতাংশ এবং শহরের জনসংখ্যার ৫০শতাংশের রেশনের থেকে খাদ্য সংগ্রহের কোনো সুযোগ থাকবে না। চলতি এ পি এল এবং বি পি এল তালিকার মতো 'অগ্রাধিকার' এবং 'সাধারণ' তালিকা বানাবে। এর ফলে আসলে দুটি ক্ষেত্রেই ভরতুকিতে খাদ্যশস্য পাওয়ার প্রকৃত মানুষের সংখ্যা আসলে কমে যাবে। দেশে বর্তমানে ৫৬শতাংশ পরিবার আসলে বি পি এল তালিকাভুক্ত। প্রস্তাবিত খসড়ায় 'অগ্রাধিকার' তালিকায় গ্রামীণ জনগণের ৪৬শতাংশ এবং শহরের মানুষের মাত্র ২৮শতাংশকে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বি পি এল এবং এ পি এল মিলিয়ে সর্বমোট ৮২শতাংশ পরিবার রেশনের আওতায় আছে। তাই সরকারের এই খাদ্য সুরক্ষা বিল আসলে কাটছাঁট করা এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করা রেশন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে।  মানুষের আয় দিনে গ্রাম ভারতে ১৫টাকা এবং শহরে ২০টাকা হলে আর তিনি বি পি এল তালিকাভুক্ত হবেন না। এইরকম জঘন্য সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই দারিদ্র্যসীমা স্থির করা হচ্ছে। স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গীতে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে দারিদ্র্যের পরিমাপ করা হয়েছে। আগে রাজ্যওয়াড়ি দারিদ্র্যের কোটা স্থির করে দেওয়া হচ্ছে, তারপর বি পি এল তালিকা তৈরি করতে বলা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতি পরিবারকে মাসে ৩৫কেজি খাদ্যশস্য দেওয়ার বদলে এই বিলে প্রস্তাব করা হয়েছে বি পি এল পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু মাসে ৭কেজি এবং এ পি এল পরিবারগুলির সদস্যদের মাথাপিছু ৩কেজি খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব করা হয়েছে ছোট পরিবারের ধারনা মাথায় রেখেই। জাতীয় নমুণা সমীক্ষার ৬১তম (২০০৪-০৫) হিসেব অনুযায়ী ভারতে পরিবারগুলির গড় আয়তন সাড়ে চার জন। অর্থাৎ পরিবার পিছু মাসে যে ৩৫কেজি খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল, তার থেকে কম পরিমাণ খাদ্যশস্য দিতেই নতুন এই প্রস্তাব করা হয়েছে।  খসড়া বিলে খাদ্যশস্যের দাম পরিবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বি পি এল বা অগ্রাধিকার অংশের জন্য প্রতি কেজি চাল ৩টাকা, গম ২টাকা এবং দানাশস্যের জন্য ১টাকা মূল্য স্থির করা হয়েছে। এরফলে অন্তত দশটি রাজ্যে রেশনে চালের দাম বাড়বে। এখনই দশটি রাজ্যে (তামিলনাডুতে ১টাকা কেজি) ২টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হয় রেশনে। এ পি এল বা জেনারেল অংশের জন, যে সুপারিশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে কৃষককে যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয় তার অন্তত ৫০শতাংশ দিতে হবে। অর্থাৎ যেমন যেমন সহায়ক মূল্য বাড়বে, তেমন তেমন এ পি এল বা জেনারেল তালিকাভুক্তদের জন্য রেশনে বরাদ্দ চাল-গমের দাম বাড়বে। কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির দাবি ন্যায্য, তা বাড়ানোই উচিৎ। কিন্তু সরকারের এই নীতিতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেই এ পি এল তালিকাভুক্তদের রেশনের চাল, গমের দাম বাড়বে তা সাধরণ মানুষ এবং কৃষকদের মধ্যে বিভাজন এবং বিরোধ তৈরি করবে।  এর ওপর বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী খাদ্যশস্যের বদলে বাধ্যতামূলকভাবে হাতে নগদ অর্থ ধরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন ভিত্তিক আধার বা ইউ আই ডি কার্ডের সঙ্গে একে যুক্ত করার সুপারিশও রয়েছে। ভুয়ো রেশন কার্ড মূল সমস্যা নয়। আসলে গণবন্টনের জন্য সরকার যে খাদ্যশস্য বরাদ্দ করছে তার ৫৮শতাংশের বেশিই চলে যাচ্ছে বেসরকারী ব্যবসায়ীদের হাতে। উই আই ডি-র মাধ্যমে এই চোরা চালান আটকানোর ক্ষমতা নেই। সংসদে আধার বা ইউ আই ডি নিয়ে এখনো কোনো আলোচনাই হয়নি। অথচ গণবন্টনের মাধ্যমে খাদ্যশস্য পাওয়ার শর্ত করা হচ্ছে ইউ আই ডি-কে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনী। বায়োমেট্রিক ডাটার যথার্থতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে এখনও। এই বিলের সমস্ত প্রস্তাব রাজ্য সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রই সংখ্যা, মাপকাঠি, খরচের আইনগত বাধ্যবাধকতা সব ঠিক করে দিচ্ছে। রাজ্যগুলি তা মানতে বাধ্য হবে। এই বিল যদি পাশ হয়ে যায় তাহলে রাজ্য সরকারগুলি বিকল্প কোনো নীতি নিতে পারবে না, যাতে সেই রাজ্যের মানুষের খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে পারে। বেশ কিছু সদর্থক প্রকল্পের দায়ভার এই বিলের মাধ্যমে রাজ্যগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে কেন্দ্র। যেমন মিড–ডে মিল, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ছ'মাস রান্না করা খাবার, দুঃস্থ মানুষদের জন্য লঙ্গরখানা, অভিভাসী শ্রমিক এবং অনাহারে থাকা মানুষদের জন্য যেসব প্রকল্প চলছে তার দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে কেন্দ্র।  তাই প্রস্তাবিত খাদ্য নিরাপত্তা বিল আসলে চলতি গণবন্টন ব্যবস্থাকেই আরো কাটছাঁট করবে। এটা একটা ধাপ্পা ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের খাদ্যের অনিশ্চয়তা আরো বাড়ানো ছাড়া এই বিল আর কিছুই করবে না। http://ganashakti.com/bengali/features_details.php?featuresid=533 দরিদ্র কে? তার সংজ্ঞাই বা কী? আনন্দবাজার – বৃহস্পতি, ২৯ মার্চ, ২০১২ Email Print ফটো দেখুন দরিদ্র কে? তার সংজ্ঞাই বা কী? গরিবকে নিয়ে ইয়ার্কি করলে নেতারাও রেগে যান। ক'দিন আগে সংসদে রাগ দেখালেন তাঁরা। মাথাপিছু দৈনিক শহরে ২৮ টাকা, আর গ্রামে ২২ টাকার বেশি রোজগার করলে সে গরিব নয়, যোজনা কমিশনের এই হিসেব শুনে জনতা দলের শরদ যাদব বলেছেন, এমন করে গরিব কমানোর চাইতে গুলি করে, বিষ দিয়ে গরিবকে মেরে দেওয়া ভাল। সমাজবাদী পার্টি, ডি এম কে এবং তৃণমূল কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিরাও আপত্তি করেছেন চড়া গলায়। যোজনা কমিশনের কর্তারা ভারতকে বোঝেন না, গরিবকে বোঝেন না, তাই দারিদ্রের এমন অসম্ভব সংজ্ঞা তৈরি করেছেন, এই হল নেতাদের অভিযোগ। চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী দারিদ্রসীমা আবার বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু দারিদ্রসীমা নিয়ে দরাদরির জন্যই কি এত চেঁচামেচি? নেতারা হয়তো টের পাচ্ছেন যে, এটা কেন্দ্রকে চাপ দিয়ে নিজের রাজ্য বা নির্বাচন ক্ষেত্রের জন্য দু'চার পয়সা বেশি আদায় করার ব্যাপার নয়। আসলে গরিব মানুষের যা বোধ-অনুভব, তার সঙ্গে প্রশাসনের বিচার-বিবেচনার একটা মস্ত ফারাক তৈরি হয়ে যাচ্ছে। অনেক বেশি মানুষ আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে, এ কথাটা যোজনা কমিশনের মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া যত জোর দিয়েই বলুন না কেন, ঘর-গেরস্তালিতে তার ছাপ কোথায়? পুকুরের বদলে টিউবওয়েল, খড়ের জায়গায় টিনের চাল, মাঠে না গিয়ে শৌচাগার, গোটা দেশে এই সবের হিসেব নিয়ে শতাংশে আনলে মনে হতে পারে, 'বাঃ, দেশ এগোচ্ছে।' কিন্তু ওই পরিবারগুলোর কাছে তা হয়তো অতি সামান্য প্রাপ্তি। বিদ্যুৎহীন রান্নাঘরে যে মেয়েটি সন্ধ্যায় কেরোসিনের কুপি জ্বেলে কুড়িয়ে-আনা কাঠ বা নিজে-হাতে তৈরি ঘুঁটে দিয়ে উনুন জ্বালে (যেমন জ্বালে এ দেশের গ্রামের ৮০ শতাংশ মেয়ে) তাকে শৌচাগার-সাইকেল দেখিয়ে 'ওই তো উন্নয়ন হয়েছে' বোঝাতে গেলে চ্যালাকাঠ নিয়ে সে তাড়া করবে। নেতারা তাই ভয় পাচ্ছেন। নিজেদের মাইনে পাঁচ গুণ বাড়াতে তাঁরা গত বছর সংসদ অচল করেছিলেন তিন দিন। কিন্তু পাঁচটা বাড়তি মানুষকে গরিবের সুযোগ-সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের হাতে আর নেই। গরিবের সংজ্ঞা যত সংকুচিত হচ্ছে, নেতাদের অক্ষমতা আরও মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। বি পি এল-কেন্দ্রিক উন্নয়ন নতুন নয়। কিন্তু নতুন বি পি এল তালিকা হবে, নাম ঢুকবে, এমন একটা আশা জিইয়ে রাখা হত। ইন্দিরা আবাসের টাকা থেকে বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা চারপাশে প্রত্যাশার বাতাবরণ গড়ে রাখা যেত, যা গরিবের কুঁড়ে থেকে নেতার দফতর পর্যন্ত একটা রাস্তা তৈরি করত। এখন যে নিয়ম হচ্ছে, তাতে আধার কার্ড কিছু মানুষকে 'গরিব' বলে বৈধতা দেবে, তাদের অ্যাকাউন্ট হবে ব্যাঙ্কে, টাকা আসবে সরাসরি। নেতা দরজা খুলতেও পারবেন না, বন্ধ করতেও পারবেন না। গরিবের কাছে তাঁর দরকার কী তবে? অনেকে বলবেন, ভালই তো, নেতারা গরিবের নাম করে কোটি টাকা পকেটে পুরবে, তার চেয়ে গরিবের টাকা গরিবের কাছে যাক। কথাটা ভুল নয়, কিন্তু সবটা ঠিকও নয়। রাজনীতি কেবল টাকার জোর, পেশির জোরে হয় না, কোথাও একটা নৈতিক ক্ষমতাও থাকা দরকার। 'এটাই ঠিক, এটাই ন্যায্য', এই বিচারগুলো রাজনীতির গোড়ায়, এগুলোকে বাদ দেওয়া যায় না। তাই নেতারা যতই অন্যায় করুন, রাজনীতিতে সামাজিক ন্যায়ের একটা জায়গা থাকে। আর সেখানেই এতদিন গরিবের জোর খাটানোর জায়গা ছিল। সরকারি নির্দেশের পরেও নেতাদের মধ্যস্থতায় গ্রামে-গ্রামে, পাড়ায়-পাড়ায় কিছু একটা রফা হত। বহু গ্রামে বি পি এল তালিকার বাইরে-পড়া গরিবদের জন্য কিছু কিছু সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা হয়েছে সর্বসম্মতিতে, বিধির বাইরে গিয়ে। পুজো, বা গরিব পরিবারে মেয়ের বিয়ে, বা পার্টি মিটিং-এ রেশন দোকানের চাল বিনা পয়সায় দেওয়াও এর উদাহরণ। নানা মানুষের দাবি ব্যালান্স করার একটা খেলা রাজনৈতিক কর্মীদের বরাবর খেলতে হয়েছে। সেটাই তাঁদের কারও কারওকে নেতা করেছে। নেতার বিড়ম্বনা এখন সরকারি সুবিধে পাওয়ার প্রশ্নে গরিবেরও দাবি জানানোর জায়গা নেই, নেতারও দরদস্তুর করার জায়গা নেই। গরিবের উন্নয়ন সম্পূর্ণ প্রকল্প-ভিত্তিক, আর সেই প্রকল্পের শর্ত-পদ্ধতি-গ্রাহক কোনও কিছুই গরিবের গ্রাম-জেলা-রাজ্য স্তরের প্রতিনিধি স্থির করতে পারছেন না। সমাজ উন্নয়নের প্রকল্পগুলি আরও কেন্দ্র-মুখী হচ্ছে। প্রায় সবার অলক্ষ্যে ২০০৫-০৬ সাল থেকে রাজ্য সরকারগুলির প্রাপ্য করের টাকার অঙ্ককে ছাড়িয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় অনুদানে উন্নয়ন প্রকল্পগুলির ('সেন্ট্রালি স্পনসর্ড স্কিম') টাকা। রাজ্য সরকারগুলো যখন টাকার অভাবে প্রশাসন চালাতে হিমসিম খাচ্ছে, সেই সময়ে সর্বশিক্ষা অভিযান, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা কিংবা জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের মতো একশোরও বেশি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা ক্রমাগত বেড়েছে। পরিকল্পনার ব্যাপারেও তাই। এক দিকে যোজনা কমিশন, অন্য দিকে জাতীয় উপদেষ্টা পর্ষদ, এই দুই হল এখন ভারতের উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরির দুই ইঞ্জিন, দুটোই অ-নির্বাচিত সংস্থা। রাজনীতির জমি দখল করছে 'টেকনোক্র্যাট' আমলা-অর্থনীতিবিদরা। কোণঠাসা নেতারা। গরিবের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলেই শুনতে হচ্ছে, 'ওই তো এতগুলো স্কিমে এত এত টাকা দিয়েছি, আপনারাই তো খরচ করতে পারছেন না।' কে বলেছিল ওই স্কিম বানাতে, অত টাকা ঢালতে, সে প্রশ্ন কেউ করে উঠতে পারছে না। নেতাকে কমিশন না দিতে হলে গরিবের খানিক লাভ হয় বটে, কিন্তু উন্নয়ন কেমন করে হবে, তার বিচারে নেতার কথা বলার সুযোগ কমে আসা মানে গরিবের কথার দাম কমে যাওয়া। ভোটের দাম কমে যাওয়া। তাতে গরিবের আরও বড় ক্ষতি। নেতাদের দুর্নীতি গরিবকে বিপাকে ফেলে ঠিকই। তবু তাঁরা ঘুষখোর-লম্পট নেতাকেও ভোট দিয়ে ফিরিয়ে আনেন, যদি মনে করেন তাঁর মাধ্যমে নিজের মতামত, চাহিদা উপরে পৌঁছে দেওয়া যাবে। নেতা যদি এলেবেলে হয়ে যান, গরিবের সে বিপদের কোনও তুলনা নেই। দেখা যাচ্ছে, এই সংকট থেকে রাজনীতি দু'দিকে মোড় নিচ্ছে। এক, উন্নয়নের প্রত্যাশা তৈরির কারখানা চালু রাখতে নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধের ঘোষণা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাষিদের জন্য 'কিসান ক্রেডিট কার্ড' কিংবা অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য 'সামাজিক মুক্তি কার্ড' ঘোষণা করলেন। এগুলো প্রচলিত প্রকল্পের সঙ্গে ঠিক কী যোগ করবে, ঋণ পেতে বা অনুদান পেতে গরিবের কী ভাবে, কতটা সুবিধে হবে, তা এখনও মিডিয়ার কাছে, গ্রামের মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু যাকে মানুষ ভোট দিয়েছে তার যে মানুষকে কিছু দেওয়ার রয়েছে, সেই দেনা-পাওনার হিসেবটা বজায় রাখতে এগুলো জরুরি। এ খেলায় গরিব জিতবে এমন নয় যা তার পাওয়ার কথা সে হয়তো শেষ পর্যন্ত পাবে না কিন্তু অন্তত খেলার মাঠের বাইরে পড়ে যাবে না। 'আমার জন্য কী করলে?' প্রশ্ন করলে তাকে একটা চটজলদি উত্তর দেওয়া যাবে। অন্য দিকটি আরও ভয়ঙ্কর মোড় ঘুরছে হিংসার দিকে। 'আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই থাকব?' এই ক্ষোভ থেকে কখনও ধর্ম, কখনও জাতপাত, কখনও অঞ্চল বা ভাষা, কোনও একটাকে বঞ্চনার কারণ খাড়া করে রাস্তায় নামেন গরিব মানুষ। রাগের কারণের থেকে রাগ প্রকাশের বহর যে অনেকগুণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তার উৎস অন্য খানে। 'আমার দেশে আমি-ই নেই?' এই হল তাদের রাগের মূল। মুলায়ম, সুষমা, শরদ যাদব যখন দাবি করেন যে মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া দেশকে চেনেন না, তাঁরা এই কথাটাই হয়তো বলতে চান। প্রথম ইউ পি এ সরকার এই দেশকে চিনতে পারার দাবি থেকে তার নৈতিক মান্যতা পেয়েছিল। দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার দেশকে চিনতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠল সংসদে, সনিয়া গাঁধীর সামনেই। যোজনা কমিশনের আট শতাংশ দারিদ্র হ্রাসের দাবিতে যেন 'ইন্ডিয়া শাইনিং' স্লোগানের প্রতিধ্বনি। 'তুমি দেশকে যেমন ভাবছ দেশ তেমন নয়,' ঘুরে-ফিরে আসতে হল সেই পুরনো সতর্কবাণীতে। আর কতবার ভোট দিয়ে গরিবরা নেতাদের দেশ চেনাবেন? কংগ্রেস নেতারা হয়তো বলতে পারতেন, দারিদ্রসীমা একটা পরিসংখ্যান। এর দরকার উন্নয়নের পরিকল্পনার জন্য, প্রশাসনের মূল্যায়নের জন্য। দারিদ্রমুক্তি নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আলাদা, কংগ্রেস দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম আলাদা। কিন্তু তেমন কোনও কণ্ঠ শোনা গেল না। মনমোহন সিংহ যতই দারিদ্রসীমা নিয়ে নতুন করে চিন্তার আশ্বাস দিন, তাঁর আর মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে তফাত কোথায়, স্পষ্ট হচ্ছে না। ফলে আজ রাজনীতি যেন ন্যায্যতার ভানটুকুও টিকিয়ে রাখতে পারছে না আর। যে দেশে ৭৭ শতাংশ মানুষ গরিব, তার সংসদে ৭৮০ সদস্যের চারশো জনেরও বেশি কোটিপতি সে সত্যটা তো নেতাদের পায়ের তলার মাটি কাটছেই। এখন যদি 'কে গরিব, কত গরিব' তা নিয়ে কথা তোলাই না চলে (মন্টেক বলেছেন, দারিদ্রসীমা যা-ই ধরো না কেন, গরিব কমেছে) তা হলে নেতার দাঁড়ানোর জায়গা কোথায়? শরিক হোক আর বিরোধী, সব নেতার নৈতিক জামানত বাজেয়াপ্ত হতে বসেছে। ভারতে রাজনীতির মূলধন যদি হয় গরিবের আস্থা, তবে নেতারা সবাই আজ বি পি এল।   আনন্দবাজার পত্রিকা http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%A6-%E0%A6%A6-%E0%A6%95-%E0%A6%A4-%E0%A6%B8-083838566.html ইকোনমিস্ট ও ইন্ডিয়া টুডে'র প্রতিবেদন : ভারতের অর্থনীতি গতি হারিয়ে ফাঁদে আটকে গেছে : দেশটির বড় শক্তি আইনের শাসনে ক্ষয় ধরেছে ইলিয়াস হোসেন       11 ভারতের অর্থনীতি ম্যাজিক হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে লন্ডনভিত্তিক খ্যাতনামা সাময়িকী ইকোনমিস্ট। ভারতের অর্থনীতি নিয়ে 'লুজিং ইটস ম্যাজিক' শিরোনামে ইকোনমিস্টের বর্তমান সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে আবার রিকশা গতির প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে। এর প্রধান কারণ দেশটির উন্মত্ত রাজনীতি। অনেকের আশঙ্কা, ভারতের বড় শক্তি আইনের শাসন ব্যবস্থায় ক্ষয় ধরেছে। রাজ্যসভা নির্বাচনে ছিল টাকার ছড়াছড়ি। ভারতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে অস্বস্তিতে অর্থনীতি। ঈষত্ সংক্ষেপিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো : বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারত। লোকসংখ্যা একশ' কোটির উপরে। দেশটিতে লাখ লাখ বার বিদ্রোহ হয়েছে এবং এর রয়েছে হাজারও ভাষা। তবে এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতে শুধু দুই ধরনের অর্থনীতিই দেখা গেছে।  প্রথমটিতে প্রবৃদ্ধি ছিল মন্থর, মনে বাসা বেঁধেছিল লালফিতার দৌরাত্ম্য এবং ছিল দম বন্ধ হওয়া আমলাতন্ত্র। দ্বিতীয়টিতে ১৯৯০ দশকের দিকে উদারীকরণের ফলে ক্রমান্বয়ে অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ২০০০ সালে এসে ভারত ছিল উদীয়মান আশাবাদের দেশ—উন্মুক্ত ও উদ্যোক্তায় পুরিপূর্ণ। এরা নাজুক সরকারি খাতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিল। জনতত্ত্ব, কলকারখানার বিকাশ, ধীর ধারাবাহিক সংস্কার এবং সঞ্চয় ও বিনিয়োগের আগ্রহের কারণে দেশটি দীর্ঘ সময় দু্রত প্রবৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে ছিল। মরতে একদমই নারাজ এমন একজন বলিউডের  ভিলেনের মতো করেই সম্প্রতি পুরনো দিনের ভারত আবার ভয়ঙ্কররূপে ফিরে এসেছে। এর প্রধান কারণ দেশটির উন্মত্ত রাজনীতি।  রিকশা গতির প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে : ভারতের প্রবৃদ্ধির ধারা ছিল পরিমিত। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে থেকে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। তা ধীরে ধীরে বেড়ে প্রায় ১০ শতাংশে পৌঁছায় (কেউ কেউ আশা করেছিল প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে)। গত কয়েক দশক ধরেই ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা ভারত ও এশিয়ার রূপান্তর করবেন। কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিক দরিদ্র্যের হাত থেকে দু্রত নিস্তার পাবে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি বিশালসংখ্যক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য ভারতে বিনিয়োগ করতে আসে। পেন্টাগণের নীতি প্রণেতারা ভারতকে বিবেচনা করতে থাকেন ভবিষ্যত্ পরাশক্তি এবং চীনের বিপরীতে একটি গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে।  সন্দেহ নেই যে, ভারতের অর্থনীতি বড় হতে থাকবে। তবে অর্থনীতির সেই চক্রাকার পথের কোণ বেঁকে গেছে। গত কোয়ার্টারে (চার মাসে) প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬.১ শতাংশে। যদিও সরকার আশা করছে যে, প্রৃবৃদ্ধির হার আবার দ্রুত বাড়বে তবে অনেক লোকই উদ্বিগ্ন যে, প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি হবে না।  সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে, সমস্যা মাথায় বা শীর্ষে। প্রথমত, সরকার ঘোষণা করে যে, অবশেষে ভারতের অদক্ষ খুচরা খাত (রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি) বিদেশি কোম্পানির জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের মাথায়ই সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলে। দেশীয় শিল্পকে রক্ষার অজুহাতে চলতি মাসে ভারতের তুলা রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় ভারতের কৃষকসমাজ ও ব্যবসায়িক অংশীদাররা। এর কিছুদিনের মাথায় আবার এই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলা হয়। সুপ্রিমকোর্টের আদেশ অগ্রাহ্য করে গত সপ্তাহে সরকার বিদেশি কোম্পানির ওপর করারোপের জন্য ট্যাক্স কোডে পরিবর্তন আনে। আইন পাসের আগে থেকেই কার্যকর হবে এই কর। অনেকের আশঙ্কা, ভারতের বড় শক্তি আইনের শাসন ব্যবস্থায় ক্ষয় ধরেছে।  অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, ব্যবসা মুখ গোমড়া করেছে এবং বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। সব সময়ই বিদ্যমান লালফিতার দৌরাত্ম্য এবং দুর্নীতি আরও বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সাম্প্রতিক রাজ্যসভা নির্বাচনে টাকার এতো ছড়াছড়ি হয়েছে যে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্য সঙ্কট দেখা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে থাকা সমস্যাগুলোর সুরাহা হয়নি। অংশত এর কারণে মূল্যস্ফীতি উচ্চ এবং একগুঁয়ে।  গত কয়েক বছর ধরে সরকারের ঋণগ্রহণ বেসরকারি খাতে সংকুচিত হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে সুদের হার কমানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। নতুন যেসব শিল্প যেমন, মোবাইল যোগাযোগ, এ ধরনের আমলাতন্ত্রের বাইরে যারা ছিল তারাও এখন মজা টের পাচ্ছে।  মূলত দুটো নৈরাশ্যজনক কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দলগুলোর বশ্যতা মেনে নেয়ার কারণে ভারতের সংসদীয় রাজনীতির হিসাব-নিকাশ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০০৪ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস দোদুল্যমান ও গণমুখী দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কংগ্রেস দলটি এখন নিজেই বেহাল অবস্থায় আছে। অনেক বৃদ্ধ মন্ত্রী পরিবারতন্ত্রের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর ছেলেকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা করেছিলেন। তার ফল খুবই খারাপ হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সরকার বড় ধরনের কোনো সংস্কার করেনি এবং মনে হচ্ছে, জোড়াতালি দেয়া কোয়ালিশনকে নিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত যেতে চায় কংগ্রেস।  দ্বিতীয় ধরনের রাজনৈতিক সমস্যা হলো প্রত্যাশার সীমাবদ্ধতা। ভারতের রাজনীতিবিদরা বলছেন, ৬%-৭% প্রবৃদ্ধি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ ভালো। এটা আত্মতুষ্টি বটে। সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য চীনের যেমন ৮% প্রবৃদ্ধি দরকার তেমনি ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা টিকিয়ে রাখতে হলে দরকার ৬% প্রবৃদ্ধি। প্রবৃদ্ধি এর চেয়ে কম হলে সরকারি ঋণের বোঝা বহন করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং বিদেশি কোম্পানি আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। এর ফলে চলতি হিসেবের ঘাটতি পূরণ এবং জ্বালানি আমদানির ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হবে না। ভারতের মতো দেশের জরুরি প্রয়োজন দরিদ্রদের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি।  তবে শেষ বিচারে আঞ্চলিক রাজনীতি ভারতের জন্য আশার উত্সও হতে পারে। স্থানীয় নির্বাচনে এ বছর যদিও দুর্নীতিবাজ ও পরিবারতন্ত্রের প্রাধান্য ছিল, তবে অনেক ভোটার প্রতিহিংসা, বর্ণ ও ধর্মীয় প্রভাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে। অকেজো রাজনীতিকদের ভোট দেয়নি। তারা ভোট দিয়েছে সম্ভাবনাময়ী নেতাদের। তবে বর্তমানে ভারতে যে বৃদ্ধদের শাসন চলছে তার পরিবর্তে জাতীয় পর্যায়ে নতুন প্রজন্মের আগমন ঘটতে অনেক বছর লেগে যাবে। এক্ষেত্রে কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপি কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। ভারতে যদি প্রবৃদ্ধি কমে যায় তবে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে, দরিদ্রদের সংখ্যা বাড়বে, তরুণদের মধ্যে হতাশা বৃদ্ধি পাবে এবং বাকি বিশ্ব ভারতকে তেমন পাত্তা দেবে না। তবে ভারতের রাজনৈতিক শ্রেণী এসবের কুফল ভোগ করবে না।  ইন্ডিয়া টুডের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন—ফাঁদে আটকে পড়েছে ভারতের অর্থনীতি : ভারতের অর্থনীতি ফাঁদে আটকে পড়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ইন্ডিয়া টুডের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে। মুম্বাইভিত্তিক ভারতের বহুল প্রচারিত সাময়িকীটির ১৯ মার্চ সংখ্যায় ভারতের সাম্প্রতিক বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, শুধু একটি বাজেট দিয়ে ভারতের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুতর সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব নয়। সরকারের নিজের হিসাবমতেই ২০১১-১২ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রৃবদ্ধি হবে নেহায়েতই ৬.৯ শতাংশ। এর আগের বছরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার অসহনীয় পর্যায়ে, ৭ শতাংশেরও বেশি। নীতি প্রতিবন্ধিতা ও দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। যুক্তিসঙ্গতভাবেই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬-৭ শতাংশের চক্রেই ঘুরপাক খাবে। অথচ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল ৯-১০ শতাংশ।  প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তণ হতে পারে; মুদ্রাবাজারকে উদারীকরণের পদক্ষেপ নেয়া এবং আর্থিক ঘাটতিকে বিশ্বাসযোগ্যহারে কমানো। ২০০০ সালের দিকে ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ। আগামী ৫ বছরে আর তেমন প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। ১৯৯১ সালের মতো বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া এই ফাঁদ থেকে বের হওয়া যাবে না। তবে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি নিজেই ফাঁদে পড়তে পারেন। রাজনৈতিক পরিবেশ এখন আর সংস্কারের অনুকূলে নেই। তৃণমূল কংগ্রেস সব ধরনের সংস্কারের বিরোধিতায় উচ্চকণ্ঠ। ইউপিএ সরকারের বাকি মেয়াদে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। http://www.amardeshonline.com/pages/details/2012/03/31/138817#.ULYjoOS-pA0 বিদেশের খবর - ১৪ জুন, ২০১২ ভারতের অর্থনীতি সঙ্কটজনক আল ইহসান ডেস্ক: ভারতের অর্থনীতিকে বিশ্বের উন্নত দুনিয়ার অন্য অনেক দেশের চেয়ে শক্তিশালী হিসেবে এতদিন বলা হলেও সেই ধারণা যে ঠিক নয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছে ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন কিছুদিন আগে একটি চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে স্পষ্টই জানিয়েছে, ভারতের অর্থনীতির অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর স্বার্থে অর্থনৈতিক সংস্কার দ্রুত শুরু করার জন্য সে সুপারিশ করেছে। এজন্য অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন ব্যাংকিং, বীমা, পেনশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রক্রিয়া চালু করে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। সে আরও বলেছে, পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ডিজেল ও রান্নার গ্যাসেরও দাম বাড়ানো দরকার। ভর্তুকির দিন শেষ বলে সে মন্তব্য করে। ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের মতে, এশিয়ার তৃতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতি গত কয়েক মাসে অত্যন্ত শ্লথ হয়ে পড়েছে।  উঁচুহারে সুদ প্রদান, মুদ্রাস্ফীতির দাপট এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতির দুর্বলতার মাশুল গুনতে হচ্ছে ভারতকে। সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা গেছে, ভারতের প্রবৃদ্ধির হার নেমে এসেছে জিডিপি'র ৫.৩ শতাংশে। সেই সঙ্গে গত এক বছরে একের পর এক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার ফলে জোট সরকারের পক্ষে বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচিতে হাত লাগানোর সাহস হয়নি।  শিল্পক্ষেত্রে মন্দা  বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভারতের শিল্পোৎপাদন প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের শিল্পোদৎপাদন প্রবৃদ্ধি গত এপ্রিলে লক্ষমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শিল্পোৎপাদন প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা ১.৭ শতাংশে নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয় মাত্র দশমিক ১শতাংশ।  এ ব্যাপারে ভারতের এইচডিএফসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অভিক বড়ুয়া জানায়, পরিসংখ্যানের তথ্যে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতের শিল্পোৎপাদন প্রবৃদ্ধি বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্রুত সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তরফে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে উল্লেখ করে সে। এদিকে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি শিল্পোৎপাদনের এই বেহাল অবস্থাকে হতাশাজনক বলে অভিহিত করে বলেছে, এ অবস্থা কাটিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভারতের অর্থনীতির ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি নির্দেশ করে সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যানের মধ্যে শিল্পোৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের বিষয়টি সর্বশেষ। গত মাসে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চলতি অর্থ বছরের প্রথম কোয়ার্টারে ভারতের মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ কমে যাওয়াই এই দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান কমে যাওয়ার কারণেও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। উল্লেখ্য,গত এক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দর প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করছে অর্থনৈতিক সংস্কারে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে রাজনৈতিক মতবিরোধ।  http://www.al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=6&textid=9246 আধার কার্ড কীভাবে প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের চাবিকাঠি হতে পারে   অরিন্দম চৌধুরী, প্রধান সম্পাদক, দ্য সান৲৲ডে ইন্ডিয়ান | Issue Dated: সেপ্টেম্বর 2, 2012     অনেকেই এখন মনে করে থাকেন খুব দ্রুত বিশ্বের সুপার পাওয়ারে পরিণত হতে চলা সেই সব উন্নয়নশীল দেশগুলির তালিকার মধ্যে আমরা অন্যতম৷ যাদের কাছে এখনও ভারতের উচচ বেকারত্বের হার, উচচ জন্ম হার, বিপুল আয় বৈষম্য এবং দারিদ্র্য সীমার প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে বাস্তব তথ্যহীনতা প্রভৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই তারাই এই আহাম্মকের স্বর্গে বাস করে৷ যে দেশ এখনও পর্যন্ত দেশের জনগণের সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে না সে কীভাবে তার জন সম্পদকে পাওয়ার হাউসের কাজে লাগাবে এটা বোঝা উচিত৷ সরকারি তথ্য থেকেই এই কথার স্পষ্ট প্রমাণ বের করে নেওয়া যায়৷ ভাবুন একবার, একই সরকারের বিভিন্ন কমিশন বিভিন্ন সময়ে নয় একই সময়ে দাঁড়িয়ে দারিদ্র্যসীমার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেশ করে৷ এটা কীভাবে সম্ভব৷ এমনকি বেকারত্বের পরিমাণ নির্ধারণ করতে গিয়ে যেভাবে বিভিন্ন এজেন্সি বিভিন্ন তথ্য তুলে আনে তাতে মনে হয় না সেগুলো একটা দেশের তথ্য, মনে হয় এক একটা তথ্য এক একটি দেশের৷ আমাদের এনএসএসএসও সমীক্ষা এই বিষয়ে সবথেকে এগিয়ে থাকে৷ এই তথ্য সংগ্রহ, তার সম্মিলিত করা এবং তার পর্যালোচনা করা সবই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার৷ দ্বিতীয়ত এই তথ্যের সত্যতা কতখানি সে নিয়েও সন্দেহ জাগে৷ এবং সবশেষে জনগণনা - সবথেকে জঘন্য ব্যাপার – যেখানে সব উন্নয়নশীল দেশ বছরে একবার করে জনগণনা করে সেখানে আমরা এক দশকে একবার করে জনগণনা করতেই হাপিয়ে যাই৷ দেশের জনগণনার মধ্যে দিয়েই ফুটে ওঠে দেশের মূল আর্থ-সামাজিক চিত্র৷ তাই এই বিষয়ে পরিকল্পনা করার জন্য সাম্প্রতিক ও একদম সঠিক তথ্য প্রয়োজন৷ আমরা সেখানে এক দশক আগের হিসাব ধরে নিয়ে তার ভিত্তিতে পরিকল্পনা করি,কাজেই কাগজের পরিকল্পনা বাস্তবের সঙ্গে কোনও মতেই মেলে না৷ এখনকার দিনে বিভিন্ন পরিকল্পনায় সঠিক তথ্যের প্রয়োজন কতখানি সেকথা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷ বর্তমান কোনও দেশই সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা ও অনুমানের উপর নির্ভর করে অর্থনীতি ও সমাজকে সঠিক পথে চালনা করতে পারে না৷ কোনও সরকার দেশের সঠিক তথ্য ছাড়াই তাদের পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ সফল করে তুলতেই পারবে না৷ ভাবুন একবার আমাদের দেশের যোজনা কমিশনে যারা বসে আছেন তারা অনুমানের উপর নির্ভর করে পরিকল্পনা করছেন, আর নেতারাও জনতার মর্জি না বুঝেই উন্নয়নের ধবজা তুলছেন৷ একদম হাতে গরম উদাহরণ দেওয়া যায় সাচার কমিটির কথা মাথায় রেখে৷ আজকে যে সাচার কমিটির কথা বাস্তবায়িত করার জন্য এত চেষ্টা চালানো হচেছ সেই সুপারিশ কিন্তু ইতিমধ্যেই ছয় বছরের পুরনো হয়ে গেছে৷ আর এই ছয় বছরের মধ্যে দেশের ডেমোগ্রাফিক চালচিত্র আর আগের মতো নেই৷ তাই কমিটির সুপারিশের সময় যা  অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক  ছিল তার অনেকটাই হারিয়েছে, কোনও কোনও অঞ্চলে আমূল পরিবর্তনও ঘটে গেছে৷ একইরকমভাবে এনআরইজিএ, এসএসএ এবং এই ধরণের আরও অনেক দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচির পরিকল্পনা যে তথ্যের ভিত্তিতে করা হচেছ বাস্তবে হয়ত তার কোনও অস্তিত্বই নেই৷ প্রায় এক দশকের প্রাচীন তথ্যের উপর ভিত্তি করে কখনোই উপযুত্তু পরিকল্পনা করা যায় না৷ তথ্যের ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা ও ক্রমাগত পরিকল্পনার ব্যর্থতার সামনে দাঁড়িয়ে সরকার গত 2009 সালে গোটা দেশ জুড়ে সমস্ত নাগরিকের জন্য ইউআইডিএআই-প্রকল্প ঘোষণা করে৷ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া যে প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে আধার প্রকল্প৷ এই প্রকল্পে অধীনে দেশের সব নাগরিকের হাতে বিশেষ বায়োমেট্রিক পরিচিতি পত্র তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচেছ৷ যেখানে প্রত্যেকের জন্য থাকবে একটি বিশেষ পরিচিতি সংখ্যা৷ যা প্রত্যেক কার্ডের ক্ষেত্রে পৃথক হবে৷ এছাড়া ধারকের বায়োমেট্রিক পরিচয় থাকবে৷ দেশের নাগরিকদের সমস্ত তথ্য একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে৷ অন্যদিকে, আমেরিকায় ব্যবহূত সোস্যাল সিকিউরিটি কার্ড ধারা 205 (সি) (2)-এর আওতায় সব ধরণের কাজের সঙ্গে যুত্তু৷ অর্থাৎ এই সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড ধারকের তথ্য রাখা থেকে শুরু করে তার নাগরিক পরিচিতি করণ ও অন্যান্য সমস্ত পরিষেবার একমাত্র কার্ড৷ একটি কার্ডের মধ্যমেই সব কাজ করা সম্ভব৷ এতে পরিচিতি করণ ও তথ্য সম্মেলন সব কাজই হচেছ৷ একইভাবে ইউনাইটেড কিংডমে ন্যাশনাল ইন্সিওরেন্স নাম্বার সব ধরণের সামাজিক অধিকার রক্ষা ও প্রয়োজনে ব্যবহার হয়, আবার পরিচয় পত্র ও তথ্য রক্ষার কাজও করা যায়৷ কাজের সুযোগ থেকে শুরু করে বিমা, চিকিৎসা পরিষেবা,শিক্ষা, কর প্রদান সব কাজই চলছে একই কার্ডের উপর ভিত্তি করে৷ এই কার্ডগুলি একদিকে পরিচয় দেয়,অন্যদিকে শিক্ষা, বিবাহ সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভ প্রভৃতিতে সাহায্য করে৷ আবার এই কার্ডই সমস্ত নাগরিকের তথ্যও বহন করছে৷ এমনকি, চিলিতে জাতীয় পরিচিতি নম্বরকে বলা হয়, আরইউএন (রান)৷ এই কার্ডের মাধ্যমেই সব কাজ চলে সেখানে৷ সেখানে এখন সদ্যোজাত শিশুকেও রান নাম্বারের অধীনে নিয়ে আসা হচেছ৷ ডেনমার্কে রয়েছে নিজস্ব সিপিআর নাম্বার ও কার্ড ব্যবস্থা৷ চিনের প্রত্যেক আঠারো বছরের উধের্ব থাকা নাগরিক নিজস্ব ইউনিক পরিচয় পত্র বহন করে৷ যা সব কাজের জন্য প্রয়োজনীয়৷ এই ব্যবস্থার ফলে ওই দেশগুলিতে নাগরিক পরিচয় করণ, সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভ,প্রকল্পের আওতায় আসা প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য পৃথক পৃথক কার্ড প্রয়োজন হচেছ না৷ আর তার থেকেও বড় সুবিধা হল একটি তথ্যের ভাণ্ডারের মধ্যে এক এক নাগরিকের সমস্ত ধরণের তথ্য সংরক্ষিত থাকছে৷ আমাদের দেশে এক এক কাজের জন্য এক এক কার্ডের প্রয়োজন৷ যেমন খাদ্য নিরাপত্তার জন্য রেশন কার্ড, নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগের জন্য ভোটার কার্ড, পরিবহনের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স,পরিচয়ের জন্য আধার কার্ড, কাজের অধিকারের জন্য পৃথক কার্ড, মৃতু্য হলে ডেথ সার্টিফিকেট, আয়কর দেবার জন্য প্যান কার্ড, বিবাহ প্রমাণের জন্য ম্যারেজ সার্টিফিকেট, এমন হাজারো প্রকল্পে হাজারো কার্ড৷ এর থেকেও বড় অসুবিধা একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় না৷ ফলে সঠিক তথ্যের অভাব৷ একটা জায়গায় সব তথ্য মিলবে না৷ এদিও এত ধরণের কার্ডের মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল ভাল, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা সে বেকার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবা৷ কিন্তু এর ফলে তথ্যের কেন্দ্রীয়করণ অসুবিধাজনক৷ বর্তমানে যে ধরণের বায়োমেট্রিক কার্ড দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা একশ চোদ্দ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রচলন করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপারে (তার উপর যেখানে আশি শতাংশ সরকারি কর্মচারীই দুর্নীতিগ্রস্ত)৷ যেখানে গোটা দেশের জনগণনা করাই একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাড়ায়, হাজারো ভুল-ত্রুটিতে ভরে থাকে৷ সেখানে এত বড় একটা প্রকল্প আগে কখনও নেওয়া হয়নি৷ ভোটার আই কার্ড দেওয়া হয়েছিল বিশেষ একটা বয়সের নাগরিকদের, আবার প্যান কার্ড দেওয়া হয় বিশেষ আয় গ্রুপের নাগরিকদের৷ আর সেখানে আধার কার্ড দেওয়া হবে দেশের সব নাগরিককে৷ তার উপর রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে স্থানান্তর, বিকল্প কার্ডের প্রয়োজন পূরণ প্রভৃতি একাধিক সমস্যা৷ তাই আধার কার্ড শুধু নতুন একটা সম্যারই সৃষ্টি করছে না সেই সঙ্গে বরাদ্দ অর্থেরও অপচয় হচেছ৷ এই তথ্য শুধু পরিচিতিকরণেই সীমাবদ্ধ না রেখে আরও প্রকল্পের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব৷ যেমন জন্মহার, মৃত্যুহার, প্রজনন ক্ষমতা, কর্মে নিয়োগ বা বেকারত্ব, শিক্ষা প্রভৃতি সহযোগী কাজে ব্যবহার করা যায়৷ তাতে আরও সহজে পরিকল্পনা নেওয়া সম্ভব হবে ও যোজনার গোটা ব্যবস্থা আরও স্বচছ হয়ে উঠবে৷ এই প্রকল্প প্রথম থেকে কাঁচির তলায় দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ গত বছরে ডিসেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বাধা দান করে৷ "... কমিটি বিশেষ ভাবে জানাচেছ 2010ন্যাশনাল আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বিলটিকে গ্রহণ করতে পারছে না... ক৲িমটি এই ভাবে সরকারের কাছে ইউআইডি প্রকল্প পুনর্বিবেচনার বিষয়টি ভেবে দেখার উৎসাহ দিচেছ...  "৷ বর্তমানে এই প্রকল্প শুধু ইউপিএ সরকারের একটা প্রকল্প হয়েই রয়ে গেছে৷ তাদের অন্যান্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও প্রকল্পের মতো আর একটি৷ যার একটাই অর্থ বহন করে, যে কোনও সময়ে এই প্রকল্প বাতিল করে দেওয়া হতে পারে৷ যদি অন্য কোনও দল সরকারের ক্ষমতায় আসে তাহলে এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে৷ এমন একটা উজ্জ্বল ও বহুমুখী হয়ে  ওঠার ক্ষমতা রাখা এই প্রকল্পের ভবিষ্যত এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে৷ দেশের সবোর্চচ আদালত একটি পৃথক স্বাধীন কমিটি গঠন করে এই কার্ডের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখবে৷ দরকার হলে তারা ভোটার আই কার্ড, প্যান কার্ড সবগুলোকে একত্রিত করা যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখবে৷ ছোট কথায়, যদি একটি ছোট কার্ড ভারতীয় জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় উপযুত্তু হয়ে উঠতে পারে৷ তাহলে সেই সরকার স্বচছ রিপোর্ট কার্ড গড়তে পারবে৷   http://www.thesundayindian.com/bn/story/%E0%A6%86%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%95-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A0%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-/16/1665/