Wednesday, June 19, 2013

প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারত, মৃত বেড়ে ১৩১

প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর ভারত, মৃত বেড়ে ১৩১ 

নয়াদিল্লি: প্রবল বর্ষণে উত্তর ভারতে মারা গেলেন আরও ৫৮ জন৷ সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ১৩১ ছুঁয়েছে৷ হাজার কুড়ি পর্যটক মিলিয়ে প্রায় ৭২ হাজার ব্যক্তি বিভিন্ন অঞ্চলে আটকে রয়েছেন৷ বন্যা-দুর্গত এলাকায় পর্যান্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য হিমাচলপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ দিলেন ইউপি সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী৷ উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণাকে ফোন করে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ যোশিমঠের একটি আইটিবিপি ক্যাম্পে আটকে রয়েছেন ক্রিকেটার হরভজন সিং৷ অন্যান্য পর্যটকদের মনোবল বাড়াতে কার্যত কাউন্সেলরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আইটিবিপি কর্মীদের সাহায্য করছেন তিনি৷

উত্তরাখণ্ড থেকে ৫৮টি মৃত্যুর খবর এসেছে৷ সেখানে বন্যার তোড়ে প্রায় ৭০টি বাড়ি ভেসে গিয়েছে৷ রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা নদীতে ৪০টি হোটেল-সহ মোট ৭৩টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে৷ চামোলি ও রুদ্রপ্রয়াগে ও উত্তরকাশীতে আটকে রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার তীর্থযাত্রী৷ ওই এলাকায় নিখোঁজ প্রায় ৫০০ জন৷ প্রবল বৃষ্টি ও কাদার স্রোতে ভেসে গিয়েছে কেদারনাথ মন্দিরের একাংশ৷ তবে মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন মূল মন্দির অক্ষত রয়েছে৷ কেদারনাথ থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রায় দু'শো পর্যটককে সরিয়ে আনা হয়েছে৷ কেদারনাথে উদ্ধারকার্য চালাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন জনা পঞ্চাশেক পুলিশকর্মী৷ পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আইটিবিপি-র তিন জওয়ান এবং দুই পুলিশ কনস্টেবলের দেহ উদ্ধার করা হয়৷ আলমোড়া জেলায় ধসে একটি বাস চাপা পড়ে মারা যান ৪ জন৷ বন্যাবিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে ধ্বংসস্তূপ সরালে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের৷

উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশের দুর্গম অঞ্চলে আকাশ থেকে খাদ্য, ওষুধ এবং গরম জামাকাপড় ফেলা হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিং মঙ্গলবার জানান, মোট ৭টি সরকারি হেলিকপ্টার উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে৷ উত্তরাখণ্ডের পুলনা ও বুন্দার জেলায় ত্রাণ পৌঁছে দিতে ৪টি বেসরকারি হেলিকপ্টারও ভাড়া করা হয়েছে৷' সোমবার কিন্নর জেলায় ভোটপ্রচারে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিং৷ প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকালে তাঁকে কংগ্রেসের ভাড়া করা হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়৷ ধস নেমে টাপরির পর থেকে ভারত-তিব্বত জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ৷

সোমবার হরিয়ানার হাথনিকুণ্ড বাঁধ থেকে ৮.০৬ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ায় দিল্লিতে যমুনার জলসীমা বিপদসীমা পার করেছে৷ যমুনা-তীরবর্তী নিচু অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরানোর কাজ শুরু করেছে দিল্লি সরকার৷ হরিয়ানার যমুনানগর জেলার একাধিক গ্রাম জলের তলায় রয়েছে৷ পঞ্জাবের ভাকরা বাঁধের জলসীমা ১৫৯৫ ফুট ছুঁয়েছে৷

আবহবিদরা জানিয়েছেন, মৌসুমি অক্ষরেখা ক্রমশ উত্তরে সরে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারত, সিকিম এবং বিহারে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ছে৷ অন্য দিকে, আন্দামানের কাছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত৷ সেখানে নিম্নচাপ ঘনীভূত হলে দেশের পূর্ব উপকূলে বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে৷

আকাশ ভাঙা বৃষ্টির পর আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি হয়েছে উত্তর ভারতে। উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশে উদ্ধারকার্যও চলছে জোরকদমে। এখনও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ। বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০২ জন। 

বুধবার বন্যা বিপর্যস্ত এলাকার হাওয়াই পর্যবেক্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। পরে প্রধানমন্ত্রী জানান, সেনার সাহায্য নিয়ে ১,০০০ মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। কেদারনাথ মন্দিরের কাছে এখনও আটকে রয়েছেন ১৫,০০০ তীর্থযাত্রী। 

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপয়াগ। সেখানে ৭৩ টিরও বেশি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। হড়কা বানে ক্ষতিগ্রস্ত কেদারনাথের মন্দির। কেদার নাথ থেকে পঞ্চাশটিরও বেশি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। এখনও ৫০০ জনের খোঁজ মেলেনি । উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনীর পাঁচ হাজার জওয়ান। নামানো হয়েছে বারোটি হেলিকপ্টার। মোট ৬০০০ মানুষ আঁটকে আছেন উত্তরাখণ্ডে। এঁদের মধ্যে ১৭০০ জন বাংলার। এখনও নিখোঁজ বহু মানুষ।

এঅবস্থায় সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুনার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। গতকাল বন্যাকবলিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীও। হিমাচলপ্রদেশেও ধসে আটকে পড়েছেন বহু পর্যটক। টানা বৃষ্টিতে উত্তরপ্রদেশেও বিভিন্ন নদীর জলও বাড়ছে। সেখানে কমপক্ষে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। গঙ্গা ও যমুনা নদীর জল বাড়ায় রাজ্যের বহু মানুষ ঘরছাড়া। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হরিয়ানার জনজীবন। যমুনানগর, কার্নাল, পানিপথের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। দিল্লিতে যমুনার জল বিপদসীমার উপরে বইছে। পূর্বদিল্লির নদীসংলগ্ন এলাকা ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। উত্তরাখাণ্ড এবং হিমাচলে আটকে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সতেরোশ পর্যটক। তাঁদের জন্য দিল্লির বঙ্গভবনে হেল্পলাইন খুলেছে রাজ্য সরকার। উত্তরখাণ্ডে গেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী।

No comments:

Post a Comment