মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত ও কুমারশঙ্কর রায়
নিজের ছবি ছাপা কাগজটা যেদিন লোকের বাড়ির বারান্দায় ছুড়ে দিয়েছিলেন, সেদিন শিহরিত হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ২৩ বছরের হকার এন শিবকুমার৷ ছবি ছাপার কারণ, দরিদ্র হকার পা রাখছেন আইআইএম জোকায়৷ পরের দিন আবার কাগজ দিতে গেলে বহু লোক তাঁকে ডেকে চা খাইয়েছিলেন৷
শনিবার বেঙ্গালুরু ছাড়ার আগেও বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিলি করলেন শিবকুমার! আইআইএম কলকাতায় পড়ার ছাড়পত্রও বদলাতে পারেনি তাঁর সহজ-সরল জীবনযাত্রা৷ শনিবার বিকেলে বিমানে চেপে প্রথমবার বেঙ্গালুরু ছাড়ার দিনও ভোর চারটের সময় খবরের কাগজের বান্ডিল নিয়ে ছুটলেন এই বাড়ি থেকে সেই বাড়ি৷ আর সন্ধ্যায় দমদম বিমানবন্দরে পা রেখে 'এই সময়'কে একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বললেন, 'নিজের জীবনই সব থেকে বড় শিক্ষক৷ অনেক কিছু শিখেছি জীবন থেকে৷'
কিন্ত্ত আপনি আজকেও খবরের কাগজ ফেরি করলেন?
'কেন করব না৷ শিকড়কে অস্বীকার করতে নেই কখনও৷ খবরের কাগজ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে৷ কাগজ বিলি করার আগেই পড়ে নিতাম সব কাগজ৷ পরে ক্যাট পরীক্ষায় সেটা আমার খুব কাজে দিয়েছিল৷ সেই দিনগুলি অস্বীকার করা অন্যায়৷' মুচকি হেসে বললেন শিবকুমার৷ তার পর 'এই সময়'-এর গাড়ি চেপে রওনা দিলেন হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশে৷ রাতেই হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে তিনি যাবেন ভাগলপুরে৷ সেখানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি শোনাবেন তাঁর জীবনের লড়াইয়ের কথা৷ কী ভাবে দারিদ্র উপেক্ষা করে তিনি নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন৷ কী ভাবে সকালে খবরের কাগজ বিক্রি করে রাত জেগে পড়াশুনা করতেন৷
রোগাপাতলা চেহারা৷ চুল ছোট ছোট করে কাটা৷ তবে চোখ দু'টি জ্বল জ্বল করছে৷ কথায় কথায় বললেন, 'ক্লাস ফোর থেকে খবরের কাগজ বিক্রি করি৷ সকাল চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে ছুটতাম৷ তার পর সেখান থেকে স্কুল৷ প্রতিদিন আমার স্কুল পৌঁছতে দেরি হয়ে যেত৷ লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসতাম৷' হেসে বললেন, 'আমি কিন্ত্ত ব্যাক বেঞ্চার্স! শুধু তাই নয়, লাস্ট বেঞ্চে বসে আমি নিয়মিত ঘুমিয়ে পড়তাম৷ মাস্টারমশাইয়ের কাছে বকাও খেতাম৷ তবে লাস্ট বেঞ্চের অন্য ছাত্রদের সঙ্গে আমার একটা ছোট্ট পার্থক্য ছিল৷ আমি সব পরীক্ষায় প্রথম হতাম৷ স্কুল জীবনে কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হইনি৷'
দমদম বিমানবন্দর থেকে গাড়ি উল্টোডাঙ্গার কাছাকাছি আসতেই কিছুটা উত্তেজিত দেখাল তাঁকে৷ বললেন, 'আমার একটা অনুরোধ আছে৷ হাওড়া ব্রিজ এলে আমাকে একটু বলবেন৷ ছোটবেলা থেকেই আমার হাওড়া ব্রিজ দেখার খুব ইচ্ছে৷ সিনেমায় দেখেছি৷ কিন্ত্ত নিজের চোখে কখনও দেখিনি৷ আমি তো কখনও বেঙ্গালুরুর বাইরে যাইনি৷'
আর কলকাতায় এসে কেমন লাগছে?
'খুব ব্যস্ত শহর মনে হচ্ছে৷ এত মানুষ চারদিকে৷ তবে কলকাতা বলতে আমার কাছে, হাওড়া ব্রিজ, কেকেআর এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ আর হ্যাঁ, আইআইএম জোকা৷' হাসতে হাসতে বললেন শিবকুমার৷
প্রিয় চরিত্র?
কিছুক্ষণ ভেবে তিনি বললেন, 'আমার মা-বাবা-কাকা এঁরা সবাই আমার খুব প্রিয় চরিত্র৷ তবে শাহরুখ আর সচিনও আমার খুব প্রিয় চরিত্র৷ তাঁরা ভালো অভিনেতা বা ক্রিকেটার বলেই শুধু নয়, দুজনের সঙ্গে আমি দেখা করেছি৷ জীবনে এত সফল হয়েও তাঁরা এত সাধারণ জীবন-যাপন করেন৷ এটাই আমাকে টানে৷ আসলে জীবনে সফল হওয়ার গুপ্তিমন্ত্রটা আমার মতে, মাটির কাছাকাছি থাকা৷ সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকা৷ এটা খুব জরুরি৷ এই যে, আজ আমাকে বেঙ্গলুরু বিমানবন্দরে ছাড়ার জন্য তিন গাড়ি মানুষ এসেছিল৷ এঁরা কেউ আমার আত্মীয়, কেউ আমার বন্ধু৷ এঁদের ভালোবাসা আমি উপেক্ষা করব কীভাবে?' তাঁর সাফ কথা, আইআইএম কলকাতায় পড়তে এসেছি শুধু মোটা বেতনের চাকরির জন্যই নয়৷ বেশি টাকা রোজগার করতে চাই এই কারণে, যাতে ভবিষ্যতে আমি সাহায্য করতে পারি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরও অনেক শিবকুমারকে৷
এটাই তো হাওড়া ব্রিজ৷ টিভিতে দেখেছি তো! আর কোনও প্রশ্ন নয়৷ হাওড়া ব্রিজের সামনে আমার একটা ছবি তুলে দেবেন প্লিজ!
নিজের ছবি ছাপা কাগজটা যেদিন লোকের বাড়ির বারান্দায় ছুড়ে দিয়েছিলেন, সেদিন শিহরিত হয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ২৩ বছরের হকার এন শিবকুমার৷ ছবি ছাপার কারণ, দরিদ্র হকার পা রাখছেন আইআইএম জোকায়৷ পরের দিন আবার কাগজ দিতে গেলে বহু লোক তাঁকে ডেকে চা খাইয়েছিলেন৷
শনিবার বেঙ্গালুরু ছাড়ার আগেও বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ বিলি করলেন শিবকুমার! আইআইএম কলকাতায় পড়ার ছাড়পত্রও বদলাতে পারেনি তাঁর সহজ-সরল জীবনযাত্রা৷ শনিবার বিকেলে বিমানে চেপে প্রথমবার বেঙ্গালুরু ছাড়ার দিনও ভোর চারটের সময় খবরের কাগজের বান্ডিল নিয়ে ছুটলেন এই বাড়ি থেকে সেই বাড়ি৷ আর সন্ধ্যায় দমদম বিমানবন্দরে পা রেখে 'এই সময়'কে একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি বললেন, 'নিজের জীবনই সব থেকে বড় শিক্ষক৷ অনেক কিছু শিখেছি জীবন থেকে৷'
কিন্ত্ত আপনি আজকেও খবরের কাগজ ফেরি করলেন?
'কেন করব না৷ শিকড়কে অস্বীকার করতে নেই কখনও৷ খবরের কাগজ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে৷ কাগজ বিলি করার আগেই পড়ে নিতাম সব কাগজ৷ পরে ক্যাট পরীক্ষায় সেটা আমার খুব কাজে দিয়েছিল৷ সেই দিনগুলি অস্বীকার করা অন্যায়৷' মুচকি হেসে বললেন শিবকুমার৷ তার পর 'এই সময়'-এর গাড়ি চেপে রওনা দিলেন হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশে৷ রাতেই হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে তিনি যাবেন ভাগলপুরে৷ সেখানে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি শোনাবেন তাঁর জীবনের লড়াইয়ের কথা৷ কী ভাবে দারিদ্র উপেক্ষা করে তিনি নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন৷ কী ভাবে সকালে খবরের কাগজ বিক্রি করে রাত জেগে পড়াশুনা করতেন৷
রোগাপাতলা চেহারা৷ চুল ছোট ছোট করে কাটা৷ তবে চোখ দু'টি জ্বল জ্বল করছে৷ কথায় কথায় বললেন, 'ক্লাস ফোর থেকে খবরের কাগজ বিক্রি করি৷ সকাল চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে ছুটতাম৷ তার পর সেখান থেকে স্কুল৷ প্রতিদিন আমার স্কুল পৌঁছতে দেরি হয়ে যেত৷ লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসতাম৷' হেসে বললেন, 'আমি কিন্ত্ত ব্যাক বেঞ্চার্স! শুধু তাই নয়, লাস্ট বেঞ্চে বসে আমি নিয়মিত ঘুমিয়ে পড়তাম৷ মাস্টারমশাইয়ের কাছে বকাও খেতাম৷ তবে লাস্ট বেঞ্চের অন্য ছাত্রদের সঙ্গে আমার একটা ছোট্ট পার্থক্য ছিল৷ আমি সব পরীক্ষায় প্রথম হতাম৷ স্কুল জীবনে কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হইনি৷'
দমদম বিমানবন্দর থেকে গাড়ি উল্টোডাঙ্গার কাছাকাছি আসতেই কিছুটা উত্তেজিত দেখাল তাঁকে৷ বললেন, 'আমার একটা অনুরোধ আছে৷ হাওড়া ব্রিজ এলে আমাকে একটু বলবেন৷ ছোটবেলা থেকেই আমার হাওড়া ব্রিজ দেখার খুব ইচ্ছে৷ সিনেমায় দেখেছি৷ কিন্ত্ত নিজের চোখে কখনও দেখিনি৷ আমি তো কখনও বেঙ্গালুরুর বাইরে যাইনি৷'
আর কলকাতায় এসে কেমন লাগছে?
'খুব ব্যস্ত শহর মনে হচ্ছে৷ এত মানুষ চারদিকে৷ তবে কলকাতা বলতে আমার কাছে, হাওড়া ব্রিজ, কেকেআর এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ আর হ্যাঁ, আইআইএম জোকা৷' হাসতে হাসতে বললেন শিবকুমার৷
প্রিয় চরিত্র?
কিছুক্ষণ ভেবে তিনি বললেন, 'আমার মা-বাবা-কাকা এঁরা সবাই আমার খুব প্রিয় চরিত্র৷ তবে শাহরুখ আর সচিনও আমার খুব প্রিয় চরিত্র৷ তাঁরা ভালো অভিনেতা বা ক্রিকেটার বলেই শুধু নয়, দুজনের সঙ্গে আমি দেখা করেছি৷ জীবনে এত সফল হয়েও তাঁরা এত সাধারণ জীবন-যাপন করেন৷ এটাই আমাকে টানে৷ আসলে জীবনে সফল হওয়ার গুপ্তিমন্ত্রটা আমার মতে, মাটির কাছাকাছি থাকা৷ সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকা৷ এটা খুব জরুরি৷ এই যে, আজ আমাকে বেঙ্গলুরু বিমানবন্দরে ছাড়ার জন্য তিন গাড়ি মানুষ এসেছিল৷ এঁরা কেউ আমার আত্মীয়, কেউ আমার বন্ধু৷ এঁদের ভালোবাসা আমি উপেক্ষা করব কীভাবে?' তাঁর সাফ কথা, আইআইএম কলকাতায় পড়তে এসেছি শুধু মোটা বেতনের চাকরির জন্যই নয়৷ বেশি টাকা রোজগার করতে চাই এই কারণে, যাতে ভবিষ্যতে আমি সাহায্য করতে পারি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরও অনেক শিবকুমারকে৷
এটাই তো হাওড়া ব্রিজ৷ টিভিতে দেখেছি তো! আর কোনও প্রশ্ন নয়৷ হাওড়া ব্রিজের সামনে আমার একটা ছবি তুলে দেবেন প্লিজ!
No comments:
Post a Comment