Wednesday, June 19, 2013

মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তিতে মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছে কামদুনিতে!ঠিক করেছে টুম্পা,পাশে গ্রাম!ধর্ষণ সমাজের লজ্জা, ধর্ষিতার নয়: সুজেট,টুম্পা,মৌসুমিদের নিরাপত্তার নির্দেশ!

মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তিতে মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়েছে কামদুনিতে

কামদুনিতে মাওবাদীরা রয়েছে। নিশ্চিত মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনায় চাঁদপাড়ার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কামদুনিতে মাওবাদীরা রয়েছে। যদি ওখানে আমি না যেতাম, পুলিস জানতে পারত না। পুলিসকে বলেছি বিষয়টি দেখতে।" এমনকী সে দিন কামদুনির গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ চক্রান্ত করেই করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

`চক্রান্ত` তত্ত্বের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকেও দুষতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। সংবাদমাধ্যম মিথ্যা প্রচার করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু সে দিন কামদুনিতে ঝটিকা সফরে গিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে আঁচ পেলেন ওখানে মাওবাদীরা রয়েছে? রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের যুক্তি, "মাতঙ্গিনী মাওবাদীদের সিস্টার সংগঠন। তারাই ঢুকেছিল গ্রামে।" সোমবার গ্রামের মহিলাদের সহজ প্রশ্নের জবাব না থাকায়, তাঁদেরকে `সিপিআইএম` চিহ্নিত করাই শ্রেয় মনে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর আজকের সভামঞ্চেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে দেখা গেল না মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিনও তিনি বললেন, "ওখানে সিপিআইএমও ছিল।" 

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পর দিন ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল থমথমে কামদুনিতে তৃণমূলেরই রাজ। ক্যামেরার সামনে সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন গ্রামের মানুষরাই। রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাগানো দলীয় পতাকাও সেই কথাই জানান দিচ্ছিল। তবে আপাত শান্ত গ্রামে সিপিআইএম আর মাওবাদীরা কীভাবে ঢুকল? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, "জামাইষষ্টির নাম করে গ্রামে ঢুকেছিল ওরা।" 


কামদুনি গণধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে প্রতীকি অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। শহর কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবরোধ হয় দুপুর বারোটা থেকে। 

দশ মিনিটের প্রতীকী অবরোধ হয় শ্যামবাজার, রাসবিহারী মোড়, মৌলালি, বেহালা সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে। গতকালও কামদুনিকাণ্ডের প্রতিবাদে মহাকরণের ভিতরে মিছিল করেন মহিলা কর্মীরা। কামদুনিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে মেজাজ হারান তার তীব্র নিন্দা করলেন মহিলা সমিতির সদস্যরা। রাজ্যের সর্বত্র মহিলা সুরক্ষা বিপন্ন এই দাবিতে দশমিনিট মৌলালি মোড় অবরোধ করেন তাঁরা।  



উত্তর ২৪ পরগণা: গতকাল খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কামদুনিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গত সোমবারের বিক্ষোভের পিছনে যে মাওবাদী তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন, বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার চাঁদপাড়ায় প্রকাশ্য জনসভা থেকে তারই পুনরাবৃত্তি করলেন তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জ্যোতিপ্রিয়র দাবিতে সিলমোহর দিয়ে প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কামদুনিতে তাঁকে কেউ বিক্ষোভ দেখায়নি৷ বহিরাগতদের নিয়ে এসে তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল সিপিএম৷ তাদের সঙ্গে মাওবাদীরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল৷ 
সোমবার দুপুরে কামদুনির গণধর্ষিতা ও খুন হওয়া কলেজছাত্রীর বাড়ির লোকদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে স্থানীয় মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে মেজাজ হারিয়ে তাঁদের সিপিএমের লোকজন বলেছিলেন মমতা৷ সিপিএমের এসব নিয়ে রাজনীতি করতে লজ্জা করে না! এমন মন্তব্যও করেছিলেন।কেন  তাঁদের কাছে আসতে তাঁর এত দেরি হল, সরাসরি এই প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। চলে বিক্ষোভ, স্লোগানও। ক্ষিপ্ত মমতার সঙ্গে ঘটনাস্থলে টুম্পা ও মৌসুমী কয়াল সহ বেশ কয়েকজন মহিলার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। তবে তাঁদের গ্রামটি তৃণমূল প্রভাবিত হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, ন্যয়বিচারের দাবিকে স্রেফ সিপিএমের চক্রান্ত বলে দাগ মেরে দিলেন, এটা ভেবে কামদুনির মানুষ ব্যথিত হন। গতকাল এ ব্যাপারে তাঁরা ক্ষোভে এলাকায় মিছিলও করেন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগের জবাবেও তাঁরা বলেন, আমরা মাওবাদী নই। তাঁরা এজন্য আতঙ্কে আছেন বলেও জানান। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাতকারেও তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, তাঁরা সিপিএম করেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে দিদি বলে সম্বোধন করে তাঁরা বলেন, সেদিন তাঁকে নিজেদের লোক ভেবেই কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁদের কোনও সুযোগই দেননি।
কিন্তু এত কিছুর পরও মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান যে বদলায়নি, তা তাঁর আজকের প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। গতকাল মাওবাদী তত্ত্ব খাড়া করে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেন, তাঁরা এটাকে কোনও গুরুত্বই দিচ্ছেন না৷ আর আজ চাঁদপাড়ায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে মমতা দাবি করেন, সেদিন কামদুনিতে বহিরাগতদের আনা হয়েছিল৷ তাদের মধ্যে মাওবাদীরাও ছিল৷ তিনি জামাকাপড় দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন, কারা মাওবাদী৷তিনি বলেন, সিপিএমের কয়েকজন মহিলা আর মাওবাদী সংগঠনের দু-একজন সেখানে ছিল৷ দেখেই বুঝে গিয়েছি৷ আমি না গেলে জানাই যেত না, ওরা সেখানে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সিপিএম পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে৷ জামাইষষ্ঠীর দিন সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা গ্রামে ঢুকেছিল৷ তারাই অশান্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷ গ্রামবাসীরা কোনও বিক্ষোভ দেখাননি৷ মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, সিপিএম-মাওবাদী ও কংগ্রেস মিলিতভাবে তাঁকে খুন করার চক্রান্ত করেছিল৷মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই৷ ধৃতরা সকলেই সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টারের বাহিনীর লোক৷ 

অন্যদিকে, বারাসত থানাকে ভেঙে চারটি থানা করার বিষয়ে বুধবারই মহাকরণে জরুরি বৈঠক হয়৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি৷ ঠিক হয়েছে বারাসত ছাড়াও শীঘ্রই শাসন, কয়েরা-কদম্বগাছি ও আমতলায় আরও তিনটি থানা তৈরি করা হবে৷ থানাগুলিতে বাধ্যতামূলকভাবে রাখা হবে মহিলা পুলিশ৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/37820-2013-06-19-11-37-41

টুম্পা,মৌসুমিদের নিরাপত্তার নির্দেশ

বারাসতের কামদুনিতে ধর্ষণ ও খুন হওয়া ছাত্রীর বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার দিন যে মহিলারা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷
কারণ, কমিশন খবর পেয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী কামদুনি থেকে চলে আসার পরে যে সব মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন ক্ষমা চাওয়ার জন্য তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল৷ ওই মহিলাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানতে পেরেছে কমিশন৷ কমিশনের মতে, এই অভিযোগ যদি সত্যি হয় তাহলে তা নাগরিকের বাকস্বাধীনতা লঙ্ঘনেরই সামিল৷
যদিও, ঘটনার সময় উপস্থিত টুম্পা এবং মৌসুমী কয়ালের দাবি, কেউ হুমকি না দিলেও খোদ প্রশাসনের কাছ থেকেই মাওবাদী তকমা লাগায় কিছুটা আতঙ্কিত তাঁরা৷ 
সোমবারের কামদুনির ঘটনায় মাওবাদী তত্ত্ব খাড়া করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ অন্যদিকে, শাসকের অসহিষ্ণুতা এবং ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ময়দানে বিরোধীরা৷ রাজপথে নামার ডাক দিয়েছে নাগরিক সমাজও৷ এই পরিস্থিতিতে, বুধবার পদক্ষেপ করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন৷ গোটা ঘটনার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্য সরকারকে তদন্তের নির্দেশ দিল তারা৷ স্বরাষ্ট্রসচিবকে কমিশনের নির্দেশ, একজন দক্ষ ও প্রবীণ অফিসারকে দিয়ে সোমবারের ঘটনার অনুসন্ধান করতে হবে৷ রিপোর্ট দিতে হবে ৩ সপ্তাহের মধ্যে৷
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বচসায় জড়ানো মহিলাদের নিরাপত্তা দিতেও জেলা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন৷ উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে কমিশনের নির্দেশ, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ানো মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে৷ কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হল তা জানাতে হবে ২ সপ্তাহের মধ্যে৷ 
কামদুনির সরব প্রতিবাদ৷ বিরোধীদের আক্রমণ৷ নাগরিক সমাজের পথে নামা৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, এইঅস্বস্তি বেড়েছিল রাজ্য সরকারের৷ মানবাধিকার কমিশনের এই পদক্ষেপ সেই অস্বস্তি আরও কয়েকগুণ বাড়াল বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34/37824


কলকাতা: বারাসতের কামদুনি ও নদিয়ার গেদের কৃষ্ণগঞ্জের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা৷ সহমর্মিতা বিকৃত লালসার শিকার হওয়া দুই ছাত্রীর পরিবারের প্রতি৷ একইদিনে রাজপথে পা মেলাল শিক্ষা ও রাজনৈতিক জগত৷ মঞ্চ আলাদা হলেও প্রতিবাদের মূল সূর বাঁধা রইল একই সুতোয়৷ তা হল, অপরাধে রোধে কি ১০০ শতাংশ আন্তরিক রাজ্য প্রশাসন?  অভিযোগ উঠেছে, নারী নির্যাতনের ঘটনা রাজ্যে ক্রমাগত বাড়ছে৷ অপরাধ রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রশাসন৷ আইনশৃঙ্খলারও অবনতি হয়েছে৷ এই প্রেক্ষাপটে এদিন সকাল ১১.৪৫ নাগাদ বেলেঘাটা থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিল উত্তর কলকাতার কংগ্রেস কর্মীদের৷ ১৫ মিনিট রাজাবাজার মোড় অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা৷ এর জেরে এলাকায় কিছুক্ষণের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয়৷
বেলা ২.৩০ নাগাদ বারাসতকাণ্ড ও নদিয়াকাণ্ডের প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ওয়েবকুটার সদস্যরা মৌন মিছিল করেন৷ মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিলে পা মেলান অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা৷ ওয়েবকুটা তরফে অধ্যাপক অঞ্জন বেরা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার জন্যই মদত পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা৷ বেলা ২.৪৫ নাগাদ ওয়েবকুটার মিছিলের পরই কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল বের করে ডিএসও৷ নারী নির্যাতন রোধে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ কলেজ স্কোয়ারে পথ অবরোধ করে এসইউসিআইয়ের ছাত্র সংগঠন৷ কর্মসূচি ঘরে কিছুক্ষণের জন্য যানজটের সৃষ্টি হয় এলাকায়৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/37692-2013-06-15-11-47-24

ঠিক করেছে টুম্পা,পাশে গ্রাম


কামদুনিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে বিবাদে না জড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হলেও  টুম্পা কয়ালের পাশেই রয়েছেন সবাই৷ শ্বশুর-শাশুড়ি থেকে প্রতিবেশী, সবাই বলছেন টুম্পা ঠিক কাজই করেছেন৷
গ্রামের গরিব পরিবারের সাধারণ মেয়ে৷ সামান্য চাহিদা৷ নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে চলাফেরা৷ কিন্তু, বন্ধুর মর্মান্তিক পরিণতি হঠাত্‍ই ছোট্ট পৃথিবীটা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে৷ যাঁর সঙ্গে এক বেঞ্চে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা, টিউশনে যাওয়ার পথে গল্প, ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্ত ভাগ করে নেওয়া, তাঁকেই কি না এভাবে চলে যেতে হল! এই ভাবনাই পরিচিত গণ্ডী ছাড়তে বাধ্য করেছিল টুম্পা কয়ালকে৷ মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে এসেছেন শুনে একছুটে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর কাছে৷ একটু কথা বলবেন দিদির সঙ্গে৷ কথা হল না, হল উত্তপ্ত বাদানুবাদ৷ সুবিচার চাইতে গিয়ে শুনলেন 'চোপ'৷ কিন্তু যাঁর সামনে দাঁড়াতে অনেকেরই ভয়ে বুক কাঁপে  সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুদ্রমূর্তির সামনেই স্পষ্ট জবাব দিয়ে রাতারাতি টুম্পা হয়ে উঠলেন কামদুনির প্রতিবাদের মুখ৷ 
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা! তাঁর মুখের ওপর কথা বলা কি সাজে? কেউ কেউ এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন৷ কিন্তু, টুম্পা কী বলছেন? ভুল হয়ে গিয়েছিল? স্পষ্টবাদিতা অপরাধ? না, টুম্পা বলছেন, যা করেছি, ঠিক করেছি৷ 
টুম্পা অবশ্য বলছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে বিবাদে না জড়াতে বলেছেন৷ কিন্তু, বিবাদ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিলেও, গোটা ঘটনায় কিন্তু বউমার পাশেই রয়েছে টুম্পার শ্বশুরবাড়ি৷ নিউটাউন থানার আকন্দকেশরী গ্রামে টুম্পার শ্বশুরবাড়ি৷ এক বছর হল বিয়ে হয়েছে৷ শুধু শ্বশুরবাড়ির লোকজনই নয়, যেভাবে বন্ধুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইতে ছুটে গিয়েছিলেন টুম্পা তাতে গর্বিত গোটা গ্রাম৷ গ্রামবাসীরা মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর উচিত্‍ ছিল টুম্পার কথা শোনা৷
যদিও, সবাই টুম্পার পাশে দাঁড়ালেও এদিনও নাম না করে তাঁর দিকে তোপ দেগেছেন মমতা৷তাঁর অভিযোগ,জামাইষষ্ঠীর নাম করে এসেছিল বহিরাগতরা।তারাই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
অখ্যাত মেয়েটা আজ হঠাত্‍ই পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে৷ এতটাই পরিচিত যে বিখ্যাতদের তোপের মুখেও পড়তে হচ্ছে তাঁকে৷

http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/37825-2013-06-19-13-11-15


ধর্ষণ সমাজের লজ্জা, ধর্ষিতার নয়: সুজেট



যে পার্কস্ট্রিট চরম বিপর্য়ের দিকে তাঁকে ঠেলে দিয়েছিল, মঙ্গলবার সেই গ্রাউন্ড জিরো থেকেই শুরু হল নতুন আত্ম নির্মাণ। বলা ভাল, এক নতুন লড়াই। 
 
সাধারণ মানুষের অসাধারণ লড়াইয়ের কথা আমাদের প্রেরণা জোগায়। দুহাজার বারোর পাঁচই ফেব্রুয়ারি সুজেটকে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার পর তিনি এতটাই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, যে থানায় যাওয়ার কথাও ভাবেননি। আত্মীয়ের পরামর্শে অভিযোগ যখন জানাতে গেলেন, ততক্ষণে তিনদিন পেরিয়ে গিয়েছে। পানশালা থেকে বেরিয়ে গাড়ির ভিতর ধর্ষণ। তাই চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দুই পুলিস অফিসার। 

এরপর আরও বড় আঘাত। সবচেয়ে বড়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী পার্কস্ট্রিটের ঘটনাকে সাজানো ঘটনা বললেন। তারপর থেকে ধেয়ে এসেছে একের পর এক বাক্যবাণ। ধর্ষণ যে হয়েছে, তা বলেছিলেন একজন। এমনকি কারা এই কাজ করেছে তাও সামনে এনে দিয়েছিলেন তিনি।  
 
ব্যস। তারপরে ইনিও যুগ্ম কমিশনার অপরাধ থেকে বদলি হয়ে গেলেন বারাকপুরে ডিআইজি ট্রেনিং পদে। দময়ন্তী সেনের বদলির পর থেকেই অথৈ জলে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্ত। ঘটনার পর একবছর পেরিয়ে গেলেও মূল অভিযুক্ত এখনও ফেরার। 

মন্দ মেয়ের তকমা। আশপাশের লোকেদের ভুরু কোঁচকানো দৃষ্টি। লজ্জা, ভয়, আতঙ্ক আর সঙ্কোচ। সব মিলিয়ে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। চাকরি খুইয়ে আর্থিক অভাব সেই সঙ্কটকে আরও তীব্র করে। কিন্তু দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মা লড়াই ছাড়েনি। সম্প্রতি একটি চাকরিতেও যোগ দিয়েছেন সুজেট। তাও আবার নারী কল্যাণের কাজে। সুজেট জানিয়েছেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে অন্যান্য নির্যাতিতাদের সমস্যা উপলব্ধি করতে চান তিনি। 

তবু তাঁকে ঘিরে ঝাপসা চাদরটুকু ছিল। কিন্তু তা সরিয়ে দিল একটি মৃত্যু। কামদুনির পরিত্যক্ত জমি লাগোয়া খালের ধারে কুড়ি বছরের এক তরুণীর দেহ উথালপাথাল করে দিল সুজেটের দুনিয়া। 

কামদুনি,গাইঘাটা, গেদে, সব ক্ষোভে ফুটছে। আর পারলেন না সুজেট। গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন আত্মদীপ ভব। সুজেটও সেটাই করলেন। নিজেই নিজের প্রদীপ হলেন। 
 
 অন্তরালবর্তিনী থেকে আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠার কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পোড়া বাংলায় মেয়েদের সম্মান আজ ধুলোয়। তাই সুজেট নিজেই নিজের ঝাপসা বর্ম ছিন্ন করলেন। এখন তিনি এক অনির্বাণ দীপশিখা। 

http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/park-street-rape-victim-exclusive_14105.html



টুম্পার পরিবারকে শাসানি তৃণমূলের

মণিপুষ্পক সেনগুপ্ত
টুম্পার পরিবারকে শাসানি তৃণমূলের
কামদুনিতে টুম্পার বাড়ি।---অমর কর।

কামদুনি (বারাসত): 'টুম্পা কোথায়? ওকে ক্ষমা চাইতে হবে৷ না হলে মুশকিল আছে৷'

হিন্দি সিনেমার ভিলেনের সংলাপ নয়৷ কামদুনির তৃণমূলের গ্রাম সভাপতির হুমকি টুম্পা কয়ালের পরিবারকে৷

মঙ্গলবার সকালে টুম্পা কয়ালের বাড়িতে চড়াও হয়ে তৃণমূলের গ্রাম সভাপতি গৌতম নস্করের হুমকি, 'মিডিয়ার সামনে টুম্পা দিদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সঙ্গে তর্ক করেছে৷ তাই মিডিয়ার সামনেই টুম্পাকে ক্ষমা চাইতে হবে৷ দিদির মুখের উপর কথা!'

সোমবার কামদুনি গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূলের বিষনজরে পড়েছেন টুম্পা৷ অপরাজিতার স্কুলের বান্ধবী টুম্পার 'অপরাধ', তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন৷ জানতে চেয়েছিলেন, কেন মুখ্যমন্ত্রী কামদুনিতে এসেও গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন না৷ মুখ্যমন্ত্রীও টুম্পার 'ঔদ্ধত্যের' জবাবে বলেছিলেন, 'চোপ! নিলর্জ্জের মতো চিত্কার করবেন না৷ আপনারা সিপিএমের রাজনীতি করছেন৷' জবাবে টুম্পা বলেছিলেন, 'আমরা রাজনীতি করছি না৷ রাজনীতি আপনি করছেন৷ আপনি রাজনীতি করতেই এসেছেন৷' মুখ্যমন্ত্রীর মুখে-মুখে এ ভাবে তর্ক করার খেসারতই এখন দিতে হচ্ছে টুম্পা এবং তাঁর পরিবারকে৷

সোমবার কামদুনি মোড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ধমকেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকেনি৷ মঙ্গলবার সকালেই টুম্পা কয়ালের বাড়িতে সদলবলে চড়াও হন তৃণমূলের গ্রাম সভাপতি গৌতমবাবু৷ টুম্পা অবশ্য তখন কামদুনিতে তাঁর বাপের বাড়িতে ছিলেন না৷ টুম্পার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তন্ত বাক্যবিনিময় টিভির পর্দায় দেখার পরই তাঁর স্বামী সত্যজিত্ তড়িঘড়ি নিউটাউন থেকে বাইকে চেপে চলে আসেন কামদুনিতে৷ টুম্পার উপর হামলার আশঙ্কায় তিনি সোমবার রাতের অন্ধকারে টুম্পাকে নিয়ে নিউটাউন ফিরে যান৷

সত্যজিতের আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল!

কামদুনিতে টুম্পার বাপের বাড়ির বারান্দায় তখন হাজির জনা কয়েক সাংবাদিক৷ তাঁদের সঙ্গেই কথা বলছিলেন টুম্পার বাবা-মা৷ মা মালিনী কয়াল হাত জোড় করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'টুম্পা বাচ্চা মেয়ে৷ যদি কোনও অন্যায় কথা বলে থাকে, ক্ষমা করে দেবেন৷ কিন্ত্ত টুম্পা কোনও অন্যায় করেনি বলেই আমার মনে হয়৷ আমার মেয়ে শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এই গ্রামের সবাই সিপিএম৷ কিন্ত্ত আমাদের গ্রামে তো সবাই তৃণমূল৷' আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন মালিনীদেবী৷ কিন্ত্ত আচমকা বাড়ির সামনে সদলবলে হাজির তৃণমূলের কামদুনি গ্রাম সভাপতি গৌতমবাবু৷ চোখ রাঙিয়ে তিনি জানতে চান, টুম্পা কোথায়?

'মেয়ে বাড়িতে নেই৷ শ্বশুরবাড়ি চলে গিয়েছে৷' ঝটিতে জবাব টুম্পার বাবা প্রভাস কয়ালের৷

আরও গলা চড়িয়ে তৃণমূলের সহ-গ্রাম সভাপতি বাপি মণ্ডলের দাবি, 'শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আর সময় পেল না! তা হলে ফোন নম্বরটা দিন৷'
'ফোন নম্বর নেই৷' ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন মালিনীদেবী৷ ক্ষণিকের নীরবতা৷ তার পর গৌতমবাবুর হুঁশিয়ারি, মেয়ে-জামাই কারও ফোন নম্বর আপনাদের কাছে নেই! পাঁচ মিনিট পরে আসছি৷ ফোন নম্বরটা দিয়ে দেবেন৷ আপনার মেয়েকে ক্ষমা চাইতেই হবে৷ অধীর চৌধুরি এলে আপনারা হাতজোড় করে কথা বলবেন, আর দিদি এলে বিক্ষোভ দেখাবেন! এ জিনিস কামদুনিতে চলবে না৷'

তৃণমূল নেতারা চলে যাওয়ার পর টুম্পার বাবা-মা সাংবাদিকদের বলেন, 'আপনারা দয়া করে চলে যান৷ আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে৷ আর বিপদ বাড়াতে চাই না৷' তবে শুধু টুম্পার বাড়িতে নয়, সোমবার মমতার বিরুদ্ধে কামদুনির যে মহিলারা সামিল হয়েছিলেন তাঁদের সবার বাড়িতেই তৃণমূল যাবে বলে জানান গৌতম নস্কর এবং বাপি মণ্ডল৷ তাঁদের কথায়, 'রাজ্যের এক মন্ত্রী আমাদের কাছে টুম্পা-সহ আরও কয়েকজনের বায়োডেটা চেয়েছে৷' সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকেলে কামদুনির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে খড়িবাড়িতে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ কামদুনিতে দাঁড়িয়ে কথায় কথায় গৌতম নস্কর জানান, 'যারা মুখ্যমন্ত্রীকে সেদিন ধিক্কার জানিয়েছিল তাদের সবার বাড়িতেই যাব আমরা৷ সবাইকে ক্ষমা চাইতে হবে৷' তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, 'টুম্পা কয়ালের বাবা প্রভাত কয়াল সিপিএম নেতা৷ মা-ও ওই এলাকার সিপিএম নেত্রী৷'

অপরাজিতা আর টুম্পা ছোটবেলার বন্ধু৷ একসঙ্গে তাঁরা বড় হয়েছে কামদুনি গ্রামে৷ কীর্তিপুর নবীনচন্দ্র হাইস্কুলে দু'জন মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন৷ তার পর অর্থনৈতিক কারণে টুম্পা আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি৷ আট মাস আগে টুম্পার বিয়ে হয়ে হয় নিউটাউনের বাসিন্দা সত্যজিতের সঙ্গে৷ সত্যজিত্ মোজাইকের কাজ করেন৷ কিন্ত্ত বিয়ে হয়ে গেলেও টুম্পার সঙ্গে অপরাজিতার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল৷ কিন্ত্ত অপরাজিতার মৃত্যুর খবর টুম্পা জানতে পারেন খবরের কাগজে৷ মালিনীদেবীর কথায়, 'দুর্ঘটনার পরের দিন আমরা মিছিল করেছিলাম৷ খবরের কাগজে আমার ছবি দেখে টুম্পা ফোন করে আমাকে বলে, তোমরা গ্রামের জন্য লড়াই করছো৷ আমিও আসছি৷ তার পরই টুম্পা শ্বশুরবাড়ি থেকে কামদুনি চলে আসে৷'

কিন্ত্ত প্রিয় বন্ধুর হয়ে লড়াই করতে এসেও গ্রামে থাকতে পারলেন না টুম্পা৷ নিজের 'সম্মান' বাঁচাতে রাতের অন্ধকারেই তাঁকে কামদুনি ছাড়তে হল৷


কামদুনির মিছিলে স্কুলশিশু দেখে উদ্বেগ তৃণমূলে

কামদুনির মিছিলে স্কুলশিশু দেখে উদ্বেগ তৃণমূলে
এই সময়: রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে শাসক-বিরোধী গণ-প্রতিবাদ হলেই 'মাও' তত্ব খাড়া করা বঙ্গ রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নন্দীগ্রাম আন্দোলন পর্বে মাওবাদীদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের অভিযোগ করে এসেছেন আগাগোড়া৷ পূর্বতন শাসকের সেই ধারাকেই বহন করে চলেছেন বর্তমান শাসকরা৷ কামদুনিতে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেওয়া মহিলাদের কন্ঠস্বরেও মাওবাদীদের ইন্ধন দেখছে শাসকদল৷ ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন অপরাধী থেকে প্রতিবাদী সবাই কোনও না কোনও ভাবে সিপিএম৷ মঙ্গলবার তাঁর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় অভিযোগ করলেন, সোমবারের বিক্ষোভে উস্কানি দিয়েছে মাওবাদীরা৷ তবে গোয়েন্দা রিপোর্ট নয় মুকুলবাবুর এহেন অভিযোগ দলীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই৷ তিনি বলেন, আমি দলীয় সূত্রে জেনেছি ওখানে মাওবাদীরা ঢুকেছে মনে হচ্ছে৷' তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী এই একই অভিযোগ করেছেন আরও সুস্পষ্ট ভাবে৷ মঙ্গলবার তিনি বলেন, মাওবাদীদের দুজন মহিলা সদস্য কামদুনিতে ঢুকেছে৷' 

এদিকে কামদুনির ঘটনার প্রতিবাদ মিছিলে স্কুল-শিশুদের উপস্থিতি দেখে শাসকদলের ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে৷ রাজ্যে ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দল-মত-পক্ষ নির্বিশেষে জনতা রাস্তায় নামায় এমনিতেই খেই হারিয়ে ফেলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন৷ এবার বড়দের পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের স্কুল পড়ুয়াদেরও রাস্তায় নামতে দেখে শাসক দলের বিড়ম্বনার শেষ নেই৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার টিভিতে এই দৃশ্য দেখার সঙ্গে সঙ্গেই দলের এক শীর্ষ নেতা শিক্ষা সেলের নেতাদের এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন৷ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে নির্দেশ যায়, কোন কোন স্কুল থেকে শিশুদের 'সংগঠিত' উপায়ে মিছিলে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার খোঁজ নিতে৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই নির্দেশ পেয়ে নড়েচড়ে বসেন তৃণমূলের শিক্ষা সেলের নেতারাও৷ কারণ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কথায়, 'এটা খুব সিরিয়াস ঘটনা৷' 

এক্ষেত্রে 'নৈতিকতা' এবং কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশকে নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে তুলে ধরছেন শাসক দলের নেতারা৷ অতীতে এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, স্কুল চলাকালীন পড়ুয়াদের কোনও মিটিং-মিছিলে নিয়ে যাওয়া চলবে না৷ এমনকী শিক্ষক-শিক্ষিরাও যেতে পারবেন না৷ ঘটনা যেহেতু মঙ্গলবারের তাই স্কুল বন্ধ থাকার কথা নয়৷ ঠিক এই যুক্তিতেই দলের ওই শীর্ষ নেতা প্রশ্ন তোলেন, 'এ ক্ষেত্রে কি আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করা হয়নি? তাঁর অভিযোগ, এমনিতেই প্রাথমিক শ্রেণির স্কুল-পড়ুয়াদের এই ধরণের মিছিলে সামিল করা অনৈতিক৷ কারণ ওই বয়সে ধর্ষণ বা প্রতারণার মতো শব্দের মর্মার্থ অনুধাবন করাই সম্ভব নয়৷ সুতরাং এর পিছনে বড়দের সূক্ষ্ম মস্তিষ্ক কাজ করেছে৷ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রভাবিত করে এটা অর্গানাইজ করা হয়েছে৷' 

গেদের উত্তরপারাও চাইছে তাঁদের কাছে আসুন মুখ্যমন্ত্রী

No comments:

Post a Comment