উচ্চ শিক্ষায় রিজার্ভেশন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ?!
| 1:22 PM (2 hours ago) | | ||
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নিতান্তই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ২২ মাসের শাসনে এর থেকে বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপ আর একটিও নেই৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট তো বটেই, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে ভবিষ্যত্ সব নির্বাচনের জন্যই তৃণমূলের যাত্রাপথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে৷ এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক সমীকরণ বদলে যাওয়াও অসম্ভব নয়৷ পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত ১৪৪টি আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণি ওবিসি তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ এর মধ্যে অতি অনগ্রসর ৬৬টি শ্রেণির সব ক'টিই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের৷ ১৭ শতাংশ সংরক্ষণের ১০ শতাংশই এই অংশের জন্য বরাদ্দ৷ বাকি ৭৮টি শ্রেণির মধ্যেও ২০টি শ্রেণি মুসলিম৷ এই অংশের জন্য বরাদ্দ বাকি ৭ শতাংশ৷ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে এ রাজ্যে প্রথম বার ওবিসি'দের জন্য আসন সংরক্ষণ হতে চলেছে৷ এ জন্য গত বছর রাজ্যের পঞ্চায়েত দন্তর পঞ্চায়েত এলাকায় ওবিসি সুমারি করে৷ তাতে জানা গিয়েছে, গ্রাম বাংলার ২৪ শতাংশ বা আড়াই কোটি মানুষ এই শ্রেণিভুক্ত, যার সিংহভাগই মুসলিম৷ ফলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত সিদ্ধান্তের সুবাদে এই প্রথম গরিব মুসলিমরা এ রাজ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার-সহ উচ্চ শিক্ষার যাবতীয় কোর্সে সংরক্ষণের সুবিধা পাবে৷ একই সুবিধা পাবে অন্যান্য ধর্মের পিছিয়ে থাকা অংশ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা৷ সিপিএম তো বটেই, একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেসের দুর্গ মালদহ, মুর্শিদাবাদেও সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত ভোটের ময়দানে বড় হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের৷ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয়ের আঁচ পেয়ে বামফ্রন্ট সরকার ওবিসি ভোটকে হাতিয়ার করতে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের মাত্রা ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছিল৷ কিন্ত্ত সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উচ্চ শিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ চালু করার ঘোর বিরোধী ছিলেন৷ তাঁর সময়ে অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী উপেন কিস্কু তিন বার মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পেশ করলেও বুদ্ধদেববাবুর আপত্তিতে তা খারিজ হয়ে যায়৷ আরও আগে, বামফ্রন্ট সরকারের জন্মলগ্নে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রের গঠিত কমিটির (বিন্দেশ্বরী প্রসাদ কমিটি) কাছে দাবি করা হয়েছিল, এ রাজ্যে ওবিসি বলে কিছু নেই৷
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এত কাল অনুপস্থিত ধর্ম এবং জাতের এই মিশেলকে অবশ্য শিক্ষাঙ্গনের সকলেই বাঁকা চোখে দেখতে নারাজ৷ যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মতে, 'পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষের সামাজিক ক্ষমতায়নের এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত কমই আছে৷' তিনি আরও বলেন, অনেক রাজ্য আগেই এই সুবিধা দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার বছর দুয়েক আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ওবিসি'দের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে আসন বৃদ্ধির একই পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল৷
সরকারি চাকরিতে ওবিসি'দের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ আগের সরকারই চালু করে গিয়েছে৷ যদিও বিগত কয়েক বছর যাবত্ সরকারি দপ্তরে নিয়োগ কার্যত বন্ধ৷ তবে চাকরিতে সংরক্ষণ কার্যকর করার চেয়ে শিক্ষায় তা বলবত্ করা অনেক কঠিন৷ উচ্চ শিক্ষায় সংরক্ষণ চালু করতে প্রায় ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আসন বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে ব্রাত্যবাবু জানিয়েছেন৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে অনুন্নত শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, সাধারণ ক্যাটিগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন অক্ষুণ্ণ রাখলেই শুধু হবে না, বর্ধিত আসনেরও তফসিলি এবং তফসিলি উপজাতি ভুক্তদের জন্য সাংবিধানিক বিধান মেনে যথাক্রমে ২২ ও ৬ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করতে হবে৷ স্বভাবতই শুধু ১৭ শতাংশ আসন বাড়িয়ে ওবিসি সংরক্ষণ কার্যকর করা সম্ভব নয়৷
রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে এখন ৬ লাখ ১০ হাজার আসন আছে৷ সংরক্ষণের সুবিধা দিতে তা ৪৫ শতাংশ বাড়িয়ে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার নতুন আসন সৃষ্টি করতে হবে৷ আর তার জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরবাড়ি-সহ নানা পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রয়োজন৷ স্বভাবতই এর সঙ্গে বিপুল আর্থিক দায় জড়িয়ে৷ বিরোধীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তকে একান্তে সরকারি কোষাগারের বিনিময়ে তৃণমূলের ভোট কেনার চেষ্টা বললেও প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি ভোট রাজনীতির কথা ভেবেই৷ আর্থিক বোঝার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীও এড়িয়ে যাননি৷ তিনি বলেন, 'আগামী আর্থিক বছরে এ জন্য এক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ থাকবে৷ পরের ৬ বছর ৬০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হবে পরিকাঠামো গড়তে৷' মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের শতাধিক প্রকল্প আছে যা থেকে শিক্ষার প্রসার-সহ সামাজিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়৷ দিল্লির এই ধরনের কোন প্রকল্প থেকে কত টাকা পাওয়া যেতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
সমালোচকরা বলছেন, সিনেমাটিতে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের তুলে ধরতে গিয়ে আপত্তিকর পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সমাজের বিতর্কিত বিষয় নিয়ে সিনেমা তৈরির জন্য বিখ্যাত পরিচালক প্রকাশ ঝা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উত্তর প্রদেশ সরকার সিনেমাটির ওপর দু`মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে পাঞ্জাব কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাজ্য সরকারের গঠিত একটি প্যানেল সিনেমাটি দেখার পর এটি মুক্তি দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
অরক্ষণ সিনেমাটি আজ মুক্তি পেলেও এর বিজ্ঞাপন প্রচার ও পোস্টার বিলি করা হচ্ছিল কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে। বিক্ষোভকারীরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ছবিটির পোস্টার ছিড়ে ফেলে। তাদের অভিযোগ সিনেমাটিতে নিম্ন-বর্ণের দলিত হিন্দু বা অচ্ছুৎদের সম্পর্কে অবমাননাকর কথাবার্তা রয়েছে। কোন কোন দলিত গ্রুপ মুসলিম জমিদার পরিবারের সন্তান- অভিনেতা সাইফ আলী খানকে নিম্ন-বর্ণের হিন্দু`র চরিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে।
কী রয়েছে ছবিটিতে
ভারতের তিন প্রদেশ অরক্ষণ`কে নিষিদ্ধ করলেও ভারতের সেন্সর বোর্ড এটি মুক্তির অনুমতি দিয়েছে এবং এর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বলছেন, সিনেমাটিতে আপত্তিকর কোন বিষয় নেই। অমিতাভ বচ্চন সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন তার ব্যক্তিগত ব্লগে। পরিচালক প্রকাশ ঝা গত সপ্তাহে তার এ ছবি সম্পর্কে বলেছেন, ভারতে এই কোটা ব্যবস্থায় কিছু লোক সুবিধা পাচ্ছে, আবার কিছু লোক সুবিধা পাওয়ার অধিকার থাকা সত্ত্বেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি তার এ ছবিতে এ চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছেন বলে জানান। মিস্টার ঝা বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেন, ভারত ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অরক্ষণ ছবিতে এই দুই পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভারতের কোটা ব্যবস্থায় কলেজ ও সরকারী চাকুরিতে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। এ পদ্ধতির সমর্থকরা বলছেন, সমাজের যে শ্রেণীর মানুষের পক্ষে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া কখনওই সম্ভব ছিল না, তাদের পক্ষে সে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, কোটা পদ্ধতির কারণে জাতপাত ও ধর্মের নামে ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে।
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, অরক্ষণ ছবির পরিচালক প্রকাশ ঝা তিনটি রাজ্যে তার সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার যে গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে তা লংঘিত হয়েছে।
ভোটের পালে বেকার টানতে নয়া ভাতা
আনন্দবাজার – মঙ্গল, ১২ মার্চ, ২০১৩যুব উৎসাহ প্রকল্প। এ বারের রাজ্য বাজেটে বেকার ভাতা দেওয়ার নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অথর্মন্ত্রী অমিত মিত্র। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি এবং অষ্টম মান পাশ করা বেকাররা রাজ্য সরকারের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম তোলালেই পাবেন মাসিক দেড় হাজার টাকা। তবে সকলেই নয়, রাজ্যের নথিভুক্ত এক কোটি বেকারের মধ্যে ১ লক্ষ জনকে বেছে নিয়ে এই প্রকল্প চলবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এর ফলে সরকারের মাসে ১৫ কোটি অর্থাৎ বছরে ১৮০ কোটি টাকা খরচ হবে। যা দান-খয়রাতির তালিকায় নবতম সংযোজন।
এই বেকার ভাতা প্রাপকের সংখ্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই এক লক্ষ বেকার বাছাইয়ের মাপকাঠি কী, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অর্থমমন্ত্রী অবশ্য কোনও ব্যাখ্যাই দেননি। আরও একটি প্রশ্ন থাকছে। তা হল, যে এক লক্ষ বেকার এই ভাতা পাবেন, ধরা যাক তাঁদের একটা অংশ চাকরি পেয়ে গেলেন। প্রশ্ন উঠছে, তখন কি ভাতা প্রাপকের সংখ্যা এক লক্ষের কম হবে? সরকারের একটি সূত্রের বক্তব্য, ভাতা প্রাপকের সংখ্যাটা এক লক্ষই থাকবে। যাঁরা চাকরি পেয়ে যাবেন, তাঁদের নাম ভাতা প্রাপকের তালিকা থেকে বাদ গিয়ে সেখানে নতুন বেকারের নাম ঢুকবে। এ ভাবেই চলবে পুরো প্রক্রিয়া। সরকারের এক কর্তার সরস মন্তব্য, "এ পুরো ওয়াটার অফ ইন্ডিয়া!"
চলতি আর্থিক বছরেই খয়রাতির একগুচ্ছ প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়ার যে নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে, তাতে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শিল্পী-গায়ক-গায়িকাদের নানাবিধ পুরস্কারে গলেছে কয়েক কোটি। বিধায়কদের সুপারিশ মেনে প্রায় ১৬০০ ক্লাবের জন্য সরকার পরিকল্পনা খাত থেকেই খরচ করেছে ৪০ কোটি টাকা। সম্প্রতি রাজ্যের সবক'টি ব্লকের অসংখ্য ক্লাবের ক্যারম বোর্ড, ক্রিকেট ব্যাট-সহ নানা ক্রীড়া সরঞ্জাম কেনার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া উৎসব অনুষ্ঠানের লাগামছাড়া খরচ তো রয়েইছে। তারই সূত্র ধরে পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে বেকারদের জন্য খয়রাতির নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অমিত মিত্র। এতেই স্পষ্ট, সরকারের আয় বাড়লেও স্থায়ী সম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর নেই মহাকরণের।
২০১২-১৩ সালের বাজেট প্রস্তাবে সরকার ১৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা মূলধন খাতে অর্থাৎ স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে বরাদ্দ করেছিল। পরবর্তী কালে সংশোধিত ব্যয় বরাদ্দে সেই টাকার পরিমাণ কমিয়ে ১৫ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা করা হয়। কারণ, এই খাতের খরচ কমিয়েই করা হয়েছে দান-খয়রাতি! ২০১৩-১৪ সালের বাজেটে সরকার মূলধন খাতে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এ বারেও বছর শেষে বরাদ্দ কমবে।
সরকারি কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। বাস্তবে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ! এ বারেও বাজেটে পরিকল্পনা খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ দফতরের কর্তারাই বলছেন, এটা আসলে লোক দেখানো বরাদ্দ। শেষ পর্যন্ত অনেক দফতরই অর্ধেক টাকাও খরচ করতে পারবে না। স্থায়ী সম্পদ তৈরির প্রশ্নে সরকারের যখন এমন মনোভাব, তখন পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে চলতি আর্থিক বছরে যে টাকা ধরা হয়েছিল, তার থেকে অন্তত ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সরকারের খরচের অভিমুখ দান-খয়রাতির দিকেই!
অর্থ দফতরের কর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এ বারও বাজেটে যে সব প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে, তাতে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে খরচ আরও বাড়বে। ফলে সরকারকে এক দিকে যেমন নিজস্ব কর আদায়ের উপর জোর দিতে হবে, তেমনই বাজার থেকে নেওয়া ঋণের উপরও ভরসা বাড়াতে হবে। সেই কারণেই বাজার থেকে ২১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ধার নেওয়ার কথাও এ বারের বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। এই পুরো অর্থ বাজার থেকে তোলা হলে রাজ্যের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
সীমাহীন খরচের কারণেই ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রোজগারের পরেও সরকারের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, "সে তো হবেই! মুখ্যমন্ত্রীর যা মনে হচ্ছে, খয়রাতির ঘোষণা করে দিচ্ছেন। তার পর অর্থমন্ত্রীর কাজ হচ্ছে টাকা জোটানো। ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।" অর্থনীতিবিদদের অভিযোগও একই।
আনন্দবাজার পত্রিকা
ধাঁধা |
ঘরের ভিতর ঘর, তাহার ভিতরে ঘর কেন্দ্রীয় সরকারও বুঝি এই ধাঁধাটির খোঁজ পাইয়াছে, এবং অনুপ্রাণিত হইয়া অন্য একটি ধাঁধা তৈরি করিয়াছে সংরক্ষণের ভিতর সংরক্ষণ, তাহার ভিতর সংরক্ষণ। এই ধাঁধাটির উত্তর, কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত ২৭ শতাংশ আসনের মধ্যে ৪.৫ শতাংশ আসন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের জন্য সংরক্ষণ করা। এই ধাঁধাটিও হয়তো পূর্বোক্ত ধাঁধাটির ন্যায় কালজয়ী হইতে পারিত, কিন্তু বাদ সাধিয়াছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিতে চাহিয়াছে, কীসের ভিত্তিতে এই সংরক্ষণ? কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট কি প্রয়োজনীয় তথ্য, নথিপত্র মজুত আছে? আপাতত নথির খোঁজ চলিতেছে বটে, কিন্তু সরকারের এই সংরক্ষণেচ্ছার কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মঙ্গলচিন্তা নহে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, তাহাতে সংশয় নাই। বস্তুত, সকল রাজনীতিকের তূণেই ব্রহ্মাস্ত্রটির নাম সংরক্ষণ রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা হইয়া পড়িলেই এই অস্ত্রটির প্রয়োগ জরুরি হইয়া পড়ে। তাহাকে সংখ্যালঘু উন্নয়নের মায়ামন্ত্রঃপূত করিতে পারিলে তো আর কথাই নাই। ভারতে কেন সংরক্ষণের ব্যবস্থা হইয়াছিল, কত দিনের জন্য হইয়াছিল, সবই বহুচর্চিত। স্বাধীনতা অর্জনের পরে দেশনেতারা যে ধারণাগুলিকে কেন্দ্রে রাখিয়া নূতন ভাবে দেশটিকে গড়িতে চাহিয়াছিলেন, রাজনীতির দশচক্রে সেই ধারণাগুলির সবই ধূলিসাৎ হইয়াছে। কিন্তু, সংরক্ষণের ব্যবস্থাটির ন্যায় এমন অপব্যবহার বুঝি আর কোনও ধারণার হয় নাই। যথেচ্ছ সংরক্ষণ হইয়াছে, কিন্তু তাহাতে ফল হয় নাই। হইলে, আজ আর নূতন করিয়া সংরক্ষণের প্রয়োজন হইত না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বিস্ময় প্রকাশ করিয়া জানিতে চাহিয়াছেন, কোন আইনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার এমন একটি সংরক্ষণের পথে হাঁটিল? আইন আছে কি না, সেই প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ ভারতীয় সংবিধানের দর্শনের, অন্তর্নিহিত ভাবাদর্শের বিরোধী। স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন নূতন ভাবে দেশ গড়িবার কাজ চলিতেছিল, তখন নেতারা সচেতন ভাবেই ধর্মকে ব্যক্তিগত পরিসরে আবদ্ধ রাখিবার কথা ভাবিয়াছিলেন। স্থির হইয়াছিল, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কাহারও সহিত কোনও বৈষম্য করা হইবে না, কোনও বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হইবে না। স্বীকার করা প্রয়োজন, পরবর্তী সময়ে রাজনীতি এই আদর্শ হইতে বিচ্যুত হইয়াছে। দেশের বহু রাজ্যে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হইয়াছে। কিন্তু, ভারতীয় সংবিধানে সেই বিচ্যুতিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনও নৈতিক যুক্তি নাই। যে সংখ্যালঘুদের চিন্তায় আজ নেতাদের রাতের ঘুম ছুটিয়া গিয়াছে, সংরক্ষণের মাধ্যমে যে তাঁহাদের উন্নয়ন সম্ভব নহে, এই কথাটি নেতারা বিলক্ষণ জানেন। তবুও তাঁহারা সেই চেষ্টা করিতেছেন। যেমন, ইমামদের জন্য বিনামূল্যে বাড়ির ব্যবস্থা করিলে মুসলমান সম্প্রদায়ের উন্নয়ন হয় না জানিয়াও তাহাই করা রাজনীতিকদের ধর্ম। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়ন অতি জরুরি। উচ্চ শিক্ষায়, চাকুরিতে তাঁহাদের আরও অনেক বেশি উপস্থিতি প্রয়োজন। কিন্তু, তাহা সংরক্ষণের মাধ্যমে হইবার নহে। তাহার জন্য রাজনীতির পাটিগণিত ভুলিয়া আন্তরিক চেষ্টা করিতে হইবে। শিক্ষা খাতে অধিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে শিক্ষার মূলধারায় লইয়া আসা প্রয়োজন। এবং, সম্প্রদায়গুলি যে কারণের জন্য পিছাইয়া থাকে, তাহাতে রাজনৈতিক মদত দেওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন। কিন্তু, এত ভাবিলে কি আর রাজনীতি হয়? ফলে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে, অনগ্রসর শ্রেণির মানুষকে বিভিন্ন ধাঁধায় ভুলাইয়া রাখাই ভারতীয় রাজনীতির দস্তুর। এই কু-অভ্যাসটি অবিলম্বে পরিত্যাজ্য। http://www.anandabazar.com/archive/1120615/15edit2.html |
রাজ্যে বেকার এক কোটি, স্বীকার মুখ্যমন্ত্রীর
আনন্দবাজার – শুক্র, ২১ ডিসেম্বর, ২০১২রাজ্যে 'এক কোটি বেকার' রয়েছে বলে জনসভায় মানলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে, ওই কর্মহীন যুবক-যুবতীর সরকারি চাকরির প্রত্যাশার চাপ কমাতে তাঁর দাওয়াই, বেসরকারি চাকরি। বৃহস্পতিবার নদিয়ার তেহট্টে তৃণমূলের দলীয় জনসভার মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা, "রাজ্যে এক কোটিরও বেশি বেকার আছেন।" তবে এ পরিসংখ্যানের প্রশ্নে কোনও সূত্র উল্লেখ করেননি তিনি।
এ দিন অবশ্য কর্মহীন ছেলেমেয়েদের আর সরকারি চাকরির 'স্বপ্ন' দেখাননি তিনি। মমতা বলেন, "শুধু সরকারি চাকরি নয়, বেসরকারি চাকরিরও খোঁজ করুন। এক বার দরখাস্ত করে চাকরি না পেলে ভেঙে পড়বেন না। যে যেখানে পারবেন, সরকারি-বেসরকারি, আবেদন করুন। তারপরে আমি দেখব।" কিন্তু বেসরকারি সংস্থায় কর্মী নিয়োগ মুখ্যমন্ত্রী কী করে দেখবেন? মুখ্যমন্ত্রীর ওই আশ্বাসের কথা শুনে রীতিমতো বিস্মিত রাজ্যের এক পরিচিত শিল্পোদ্যোগী। তাঁর প্রশ্ন, "এ বার কি বেসরকারি সংস্থায় চাকরির ক্ষেত্রেও সরকারি হস্তক্ষেপ দেখতে হবে?" আর, রাজ্যের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন বলছেন, "ইনফোসিস নেই, সিঙ্গুর নেই। ছেলেমেয়েরা দরখাস্ত করবে কার কাছে? শিল্প-কারখানা না-হলে চাকরির জায়গা কোথায়? সরকার যদি শিল্পের জন্য উদ্যোগী না হয়, তা হলে শুধু দরখাস্তই হবে। চাকরি হবে না!"
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ হলেও রাজ্যের শিল্পমহলের একাংশ এ ধরনের মন্তব্যের সারবত্তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, তা হলে কি সত্যিই রাজ্যে শিল্পায়নের অভাব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও পড়তে শুরু করেছে? লগ্নি না আসার জন্যই কি চাকরির সুযোগ কমছে? সব থেকে বড় কথা এই 'উপলব্ধি' কি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর? কারণ, তিনি তো এখনও শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে সরকারি ভাবে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্তেই অনড়? শিল্পোদ্যোগীদের একাংশের মতে, সরকারের দাবি অনুযায়ী রাজ্যের আর্থিক কর্মকাণ্ড যদি ঠিকঠাক চলে তা হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি না হওয়ার প্রশ্ন নেই। সে ক্ষেত্রে আবেদন করার পরে যদি কেউ যোগ্য বিবেচিত হন, তা হলে তিনি এমনিতেই চাকরি পাবেন। কিন্তু আর্থিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলে (শিল্পায়ন প্রক্রিয়া থমকে গেলে) চাকরির ক্ষেত্রও সঙ্কুচিত হবে। সে ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান হবে কী করে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জন্য কী করে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করবে, তা-ও তাঁরা বুঝতে পারছেন না। এক বণিকসভার কর্তা বলেন, "নিয়োগের প্রশ্নে বেসরকারি সংস্থায় প্রার্থীর যোগ্যতাই শেষ কথা। যদি বেসরকারি সংস্থার দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়, তা হলে যোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দিতে তারা কালবিলম্ব করবে না। এ জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনই নেই।" তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের এক চেনা মুখের মন্তব্য, "রাজ্যে ইনফোসিস এলে কয়েক হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি এমনিতেই হত। কিন্তু এখানে প্রকল্প না হলে সেই চাকরির সুযোগ কোথায়? বেকার ছেলেমেয়েরা দরখাস্তই বা দেবেন কোথায়?"
প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের মতে, পশ্চিমবঙ্গের সামনে এগোনোর একমাত্র পথ শিল্পায়ন। কিন্তু তেমন কোনও দিশা বর্তমান সরকার দেখাতে পারছে না বলেই তাঁর দাবি। শিল্পের দিশা ছাড়া চাকরির আবেদন বা দরখাস্তে কোনও কাজ হবে না বলেই মন্তব্য করেন তিনি। সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, "উনি (মুখ্যমন্ত্রী) তো নিজেই বলেছেন, নিলামে তুললেও এই সরকারকে কেউ কিনবে না! সেই সরকারের কাছে কেউ তা হলে আসবে কেন? সরকারের যেটুকু অর্থ আছে, উনি ক্লাবদের দিয়ে আর দানসত্র খুলে ব্যয় করছেন!"
প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার মতে, "দেশের মধ্যে নথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গে। এই সমস্যা দূর করতে হলে প্রধান কাজ শিল্প স্থাপন। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, কেন্দ্রের সঙ্গে সমঝোতা করে সেই পরিকল্পনা রূপায়ণের দিকে এগোন। নইলে শিল্প হবে না, বেকার আরও বাড়বে!"
ঘটনাচক্রে, এ দিনই গুজরাতে সানন্দ বিধানসভা কেন্দ্রে জিতেছে কংগ্রেস। সিঙ্গুর থেকে টাটার ন্যানো প্রকল্প যেখানে চলে গিয়েছিল। সানন্দ-প্রসঙ্গ টেনে মানসবাবুর মন্তব্য, "কংগ্রেসের শিল্প ও বাণিজ্য নীতিকে মানুষ গ্রহণ করেছে। সানন্দে রাহুল গাঁধীর উপস্থিতিও কাজে লেগেছে। সিঙ্গুরেই টাটার কারখানা হতে পারত। এখনও সুযোগ আছে। শিল্পায়নের স্বার্থেই টাটাদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজ্য সরকার সুষ্ঠু সমাধান করার চেষ্টা করুক।"
কিন্তু সরকারের অনড় জমি-নীতি, শাসক দলের গোষ্ঠী-বিবাদ কিংবা বিভিন্ন জেলায় উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জুলুমে অতিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গে বড় মাপের শিল্প প্রতিষ্ঠার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছে শিল্পমহল। আর ভারী শিল্প না হলে একলপ্তে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগও যে নেই তা-ও তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা
অনুমোদিত প্রায় ৫ হাজার গ্রুপ-ডি শূন্যপদ-সহ সরকারি কর্মচারীদের সব পদেই পিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০০৮ সালে৷ তার ভিত্তিতেই ২০০৯-এ ৩ হাজার গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের জন্য প্যানেল তৈরির দায়িত্ব পিএসসি-কে দেয় তত্কালীন বাম সরকার৷ আবেদন জানান প্রায় ১৩ লক্ষ কর্মপ্রার্থী৷ পরীক্ষায় বসেন প্রায় ১০ লক্ষ৷ তাঁদের মধ্যে থেকেই প্রায় ৫ হাজার জনের একটি প্যানেল তৈরি করে পিএসসি৷ সেই প্যানেল থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে নিয়োগ করা হলেও, বাকি রয়ে যান আরও হাজার তিনেক কর্মপ্রার্থী৷ যাঁদের একটি বড় অংশেরই নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দন্তরে৷ কিন্ত্ত নতুন সরকার আগের প্যানেল থেকে কাউকে নিয়োগ করতে রাজি হয়নি৷ নতুন করে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ শুরু হয়৷ পরিবর্তনের সরকারের এ হেন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সিপিএম প্রভাবিত সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটি এবং কংগ্রেস প্রভাবিত কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ৷ পাশাপাশি, নতুন ৩ হাজার জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্যাটে মামলা করেন পিএসসি-র প্যানেলে নাম থাকা প্রার্থীরা৷
শুক্রবার স্যাটের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিড়ম্বনায় পড়েও শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, 'এটা আমাদের কোনও বিষয় নয়৷ সিপিএমের আমলে বানানো প্যানেল৷ আমাদের কাজ চালাতে গিয়ে যে দন্তরে যত পরিমাণ কর্মচারী লাগবে, আমরা তাই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷' অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, 'গ্রুপ-ডিতে নিয়োগ নিয়ে সরকার যে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে, আদালতই তো বলে দিল৷ আমরা নতুন আর কী বলব?'
'মানবিক' দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাবা-বাছা করে বুঝিয়ে, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিয়ে যেখানে জমি নেওয়া সম্ভব, একমাত্র সেখানেই পা রাখবে সরকার৷ তিলমাত্র বিরোধিতার আঁচ পেলেও ভূমি দপ্তর সেই প্লটে আর ফিরে তাকাবে না৷ উদাহরণ স্বরূপ বাগডোগরা বিমানবন্দর সংলগ্ন ১১টি প্রতিবাদী পরিবারের প্রসঙ্গ টেনেছেন মমতা৷ এই ১১টি পরিবারের বাধাতেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে একটি প্রস্তাবিত নির্মাণ কাজের জমিই জোগাড় করতে পারছে না সরকার৷ এই 'সামান্য' বাধার মুখে দাঁড়িয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সওয়াল, 'কী করব, ওদের কি পিটিয়ে সরিয়ে দেব? ক্ষতিপূরণ রেডি৷ কিন্ত্ত তা-ও ওরা ওই জমি থেকে উঠতে রাজি নয়৷' এই প্রসঙ্গেই শুক্রবার ফের কেন্দ্রীয় সরকারের জমিনীতির খসড়ার (যা তাঁর বাধাতেই সংসদে পেশ করা করা যায়নি) বিরোধিতা করেন প্রাক্তন শরিক নেত্রী৷ বলেন, 'জাতীয় সড়কের জন্য জমি নিতে ১৯৫৬ সালের জাতীয় সড়ক আইনের কথা মাথায় রেখে কাজ করা উচিত৷ যেখানে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের কথা বলা আছে৷
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন ছিল, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কী হবে? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, ২৩৮০ একর জমি দরকার৷ রাজ্যের হাতে আছে ৪৬৫ একর৷ কোচবিহার, ফালাকাটা, উত্তর ২৪ পরগনায় ৫টি মৌজায় সমস্যা আছে৷' পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম প্রশ্নোত্তরপর্বে জবাব দিলেন৷ জাতীয় সড়ক, রেল, বিদ্যুত্ বিমান বন্দরের প্রয়োজনীয় জমির জন্য তত্পর হতে হবে সরকারকে৷ না-হলে পিছিয়ে পড়ব৷'
প্রথম ধাপ-সরকারের হাতে থাকা জমির বিবরণ দেখে আবেদন। আবেদনপত্র গ্রহণের পর কমপক্ষে একমাস তা শিল্পোন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটে থাকবে। দ্বিতীয় ধাপ-আবেদনপত্র মূল্যায়ণ করবে ট্রানজাকশন অ্যাডভাইজর। অর্থ দফতর নির্ধারিত ট্রানজাকশন অ্যাডভাইজরের তালিকা থেকে কোনও একটি সংস্থাকে সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ায় বেছে নেওয়া হবে। ট্রানজাকশন অ্যাডভাইজর কর্মসংস্থান, কর-রাজস্ব আদায়, অনুন্নত এলাকার উন্নয়নের মতো বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে ওই শিল্পায়ন প্রস্তাবের মূল্যায়ণ করবে।
তৃতীয় ধাপ-মূল্যায়ণ রিপোর্ট যাবে শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছে। নিগমের এগারো সদস্যের প্রত্যেকের উপস্থিতি ও সম্মতিতে সেই বিনিয়োগ প্রস্তাব পাস হতে হবে
চতুর্থ ধাপ-শিল্পোন্নয়ন নিগমে পাস হওয়া প্রস্তাব নিয়ে ক্যাবিনেটে আলোচনা হবে। একাধিক কোম্পানি আবেদন করে থাকলে যে সর্বোচ্চ দর দেবে তাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে
পঞ্চম ধাপ-আইন দফতরের সঙ্গে আলোচনার পর ওই জমিতে নির্দিষ্ট শিল্পায়ন সংক্রান্ত লেটার অফ ইনটেন্ট পেশ করা হবে
ষষ্ঠ ধাপ-শিল্পায়ন নিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, বন ও পরিবেশ দফতর, বিদ্যুত্ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মতো একাধিক দফতরের সবুজ সঙ্কেত লাগবে। খতিয়ে দেখা হবে জ্বালানি ও জলের সরবরাহের বিষয়টিও। শেষ ধাপে এসে স্বাক্ষরিত হবে জমি হস্তান্তর দলিল।
শিল্প দফতরের আধিকারিক এবং বণিক মহলের মতে এই গোটা প্রক্রিয়া মেনে নির্দিষ্ট একটি শিল্পপ্রস্তাবে জমির লিজ পেতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কমপক্ষে দেড়বছর লেগে যাবে। যেখানে গুজরাত, মহারাষ্ট্র এমনকি বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে মাত্র দু থেকে তিন মাস। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও কম। তাই প্রশ্ন উঠছে এই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ল্যান্ড অ্যালটমেন্ট পলিসির বাস্তব ভিত্তি নিয়ে।
সরকারের জমি নীতি এবং আকর্ষণীর ইনসেনটিভ স্কিমের অভাব ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে অনীহা দেখা দিয়েছে শিল্পমহলে। সেই অবস্থায়, কোন বাণিজ্যিক যুক্তিতে শিল্পপতিরা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন এখন প্রশ্ন তা নিয়েই।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যে শিল্পায়নের গতি কার্যত থমকে দাঁড়িয়েছে৷ শিল্পমহল, বণিকমহলের একটা বড় অংশ এর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি নীতিকেই দুষছে৷ তাদের মত,সরকার জমি অধিগ্রহণ না করলে শিল্পপতিদের পক্ষে চাষিদের থেকে জমি কিনে শিল্প করা কার্যত অসম্ভব৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জমি নীতিতে অনড়৷ এই পরিস্থিতিতে একাধিকবার সৌগত রায় বুঝিয়েছেন, রাজ্যের জমি নীতি মেনে রাজ্যে বড় শিল্পের সম্ভাবনা কম৷ শনিবার, বণিকসভা সিআইআইয়ের একটি অনুষ্ঠানেও নিজের সেই মতেই অনড় থাকলেন সৌগত৷ ঘুরিয়ে বললেন, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক ঘন বসতি পূর্ণ রাজ্য।।
বন্ধ কারখানা বা কারখানার অতিরিক্ত জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়ারও এদিনও বিরোধিতা করেন সৌগত রায়৷
মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প উপদেষ্টা পদ থেকে সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন সৌগত রায়৷ ইস্তফার কারণ নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে৷ রাজনৈতিক মহলের মত, জমি নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কার্যত সংঘাতের জেরেই সৌগতর এই সিদ্ধান্ত৷ যদিও, সৌগত নিজে এ ব্যাপারে তেমন ভাবে মুখ খোলেননি৷ এ দিনও তাঁর সেই একই সুর৷ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, আমি কী কিছু বলেছি?
একবারও ইস্তফার খবর সরাসরি খারিজ করার পথে হাঁটলেন না।
রাজ্যের জমি নীতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা৷ প্রশ্ন উঠেছে, সরকার জমি অধিগ্রহণ না করলে বড় শিল্প হবে কীভাবে? শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ভিত্তিতে কি রাজ্যের উন্নয়ন আদৌ সম্ভব? সৌগত রায় অবশ্য এ দিন দাবি করলেন, বড় শিল্পের থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেই বেশি কর্মসংস্থান হয়৷
দুদফায় পঞ্চায়েত ভোটেই অনড় রাজ্য সরকার৷ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানতে ডিএম-এসপিদের সঙ্গে মীরা পাণ্ডের বৈঠকের পরেই তাঁদের মহাকরণে তলব করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিকে, পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ফের জানিয়েছেন, দু'দফায় ভোট চেয়েই সোমবার কমিশনকে চিঠি পাঠানো হবে৷
ক'দফায় পঞ্চায়েত ভোট?
এখন এটাই রাজ্য-রাজনীতির লাখ টাকার প্রশ্ন৷
এই প্রশ্নেই ক্রমশ চড়া হচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের মধ্যে সংঘাতের সুর৷
পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানতে শনিবার রাজ্যের সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের ডেকে পাঠান রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে৷ বৈঠকে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জানিয়ে রিপোর্ট দেন এসপি-ডিএমরা৷ এরপরেই তাঁদের তলব করা হয় মহাকরণে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাঁরা পৃথক রিপোর্ট জমা দেন৷ বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি সহ রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা৷
মূলত জেলাওয়াড়ি রিপোর্টকে ভিত্তি করেই রাজ্যে তিনদফায় ভোট ও বুথওয়াড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন৷ কিন্তু, কমিশনের দাবি প্রথম থেকেই মানতে চায়নি রাজ্য সরকার৷ মহাকরণ সূত্রে খবর, এবার জেলার বাস্তব ছবি বুঝে নিতেই জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে সরাসরি বৈঠক সারলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অবশ্য, এই বৈঠককে রুটিন বৈঠক বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র৷
এদিকে, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে একই মনোভাব রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীর৷ অবস্থানে অনড় থেকে কমিশনের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে কমিশনকে চিঠি দিচ্ছেন তিনি৷
চিঠিতে সরকার জানিয়ে দিচ্ছে, দু'দফাতেই পঞ্চায়েত ভোট চায় তারা৷ ২৪ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট৷ দ্বিতীয় দফার ভোট ২৭ এপ্রিল৷ দ্বিতীয় দফায় মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরে ভোট হবে৷ বাকি সব জেলায় প্রথম দফায় ভোট হবে৷
সেইসঙ্গে পঞ্চায়েত মন্ত্রী এদিন ফের জানালেন, বাইরের রাজ্য থেকে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী এনেই ভোটের ব্যবস্থা করবে সরকার৷
কিন্তু রাজ্য সরকারের চতুর্থ চিঠির পর, দু'দফার ভোটের সিদ্ধান্ত কমিশন মেনে নেবে কি? না, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে এখনও সংশয় আছে৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/34688-2013-03-16-11-35-57
সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ জিটিএ বোর্ডে স্থায়ী প্রধানসচিব নিয়োগ সহ একাধিক দাবি নিয়ে হাইকোর্টে যাচ্ছে তারা৷
পাহাড়ে ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে অশান্তির কালো মেঘ৷ সেইসঙ্গে চওড়া হচ্ছে মমতা-মোর্চা সম্পর্কের ফাটল৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে এবার সরাসরি সংঘাতের পথে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ জিটিএ-কে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না৷ রাজ্য সরকার প্রতিদিনই হস্তক্ষেপ করছে৷ এই অভিযোগে কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নামে কেন্দ্রের কাছে নালিশ করে আসেন মোর্চা নেতারা৷ এবার নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় করতে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মোর্চার৷ শুক্রবার দার্জিলিংয়ের ভানু ভবনে জিটিএ-র বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা৷ তাদের দাবি, জিটিএ বোর্ডে স্থায়ী প্রধান সচিব নিয়োগ করা হোক৷ দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনই বর্তমানে সেই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন৷ কিন্তু, প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গে মোর্চা নেতাদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে৷ তাঁকে সরিয়ে স্থায়ী আইএএস অফিসার নিয়োদের দাবিতে রাজ্যের কাছেও বারবার দরবার করেছেন মোর্চা নেতারা৷ তাঁদের অভিযোগ, সেই দাবি মানছে না রাজ্য সরকার৷ তারই প্রতিবাদে কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মোর্চার৷
এছাড়াও মোর্চার দাবি, পাহাড়ের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য জিটিএর অধীনে পৃথক স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠন করা হোক৷ এছাড়াও জিটিএ-র দৈনন্দিন কাজে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপেরও প্রতিবাদে হাইকোর্টে যাচ্ছে মোর্চা৷
জিটিএ-র বোর্ডের বৈঠকে এদিন ছিলেন না বিমল গুরুঙ্গ৷ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে তিনি ডুয়ার্সে৷ মুখ্যমন্ত্রী ডুয়ার্স থেকে ফেরার পরই জনসমর্থন নিজেদের দিকে টানতেই এই কর্মসূচি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/state/34-more/34646-2013-03-15-16-26-03
একই দিনে জোড়া ধাক্কা খেল শাসকদল৷ পিএসসি-কে এড়িয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে গ্রুপ ডি অস্থায়ীপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ কল স্যাট৷ অন্যদিকে, নিয়োগ ঘিরে হাইকোর্টে বিড়ম্বনায় তৃণমূল পরিচালিত বিধাননগর পুরসভা৷
সুব্রত ঘোষ নামে এক ব্যক্তিকে 'অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি' পদে নিয়োগ করেন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী৷ বলা হয়, দৈনন্দিন কাজকর্মে চেয়ারপার্সনকে সাহায্য করবেন তিনি৷ প্রয়োজনে দেবেন আইনি পরামর্শও৷
চেয়ারপার্সনের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন অরুণাংশু চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি৷ তিনি অভিযোগ করেন, এই নিয়োগ বেআইনি এবং অবৈধ৷ কোনও রকম নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এই নিয়োগ করা হয়েছে৷
শুক্রবার মামলার শুনানি হয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে৷ চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চান,
কোন আইনের ভিত্তিতে অথবা রাজ্য সরকারের কোন নির্দেশের প্রেক্ষিতে এই নিয়োগ করা হয়?
উত্তরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে৷ সেই নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে৷
এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, বিধাননগর পুরসভাকে মুচলেকা দিয়ে বলতে হবে যে এই ব্যক্তিকে পুনরায় আর নিয়োগ করা হবে না৷ তারপরই রায় দেবে আদালত৷ যদিও, এরপরই রায় দেয় আদালত৷ এই নিয়োগ খারিজ করে আদালত জানায়, কোনও আইন বা সরকারি নির্দেশ মেনে এই নিয়োগ হয়নি৷ নিয়ম মাফিক আগে পদসৃষ্টি করতে হয়৷ তারপর স্বরাষ্ট্র দফতরের অনুমতি নিতে হয়৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে এর কোনওটিই করা হয়নি৷ তাই এই নিয়োগ অবৈধ৷
প্রথমে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল৷ তারপর হাইকোর্ট৷ একই দিনে দুই ধাক্কা সরকারের অস্বস্তি অনেকটাই বাড়াল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল৷
http://www.abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/34641-2013-03-15-14-57-20
দুদফায় পঞ্চায়েত ভোট করার সিদ্ধান্তে অনড় রাজ্য ফের এব্যাপারে চিঠি দিচ্ছে কমিশনকে। শুক্রবার বিধানসভায় একথা জানান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে ভিন রাজ্যের পুলিস এনে পঞ্চায়েত ভোট করার কথাও বলেন তিনি। অন্যদিকে কমিশনও তিন দফায় ভোট করার সিদ্ধান্তে অনড়। এই পরিস্থিতিতে সব জেলার জেলাশাসক ও পুলিস সুপারদের নিয়ে আজ বৈঠকে বসছে কমিশন।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের পথেই রাজ্য সরকার। দুদফায় পঞ্চায়েত ভোট চেয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিচ্ছে পঞ্চায়েত দফতর। শুক্রবার বিধানসভায় একথা জানান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, প্রতিবেশী রাজ্য থেকে পুলিসকর্মী এনে ভোট করা হোক। সূত্রের খবর এই পরিস্থিতিতে শনিবার ফের ১৭টি জেলার জেলাশাসক এবং পুলিস সুপারদের বৈঠকে ডেকেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
সকাল এগারোটা থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির ডিএম এবং এসপিদের সঙ্গে এবং বেলা একটা থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির ডিএম এবং এসপিদের বৈঠক হওযার কথা। এর আগে জানুয়ারি মাসে একইভাবে ১৭টি জেলার ডিএম এবং এসপিদের বৈঠকে ডেকেছিল কমিশন। বৈঠকে সব জেলার ডিএম এবং এসপিরা তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোট করার পক্ষে মত দেন। এমনকি অনেকে পাঁচ দফায় ভোটের কথাও বলেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, শাসক বা বিরোধী দল নয়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমস্যা হিসাবে দেখা দিতে পারে।
একই কারণে তাঁরা ভোটে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথাও বলেন। ওই আলোচনার ভিত্তিতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন আটশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে তিন দফায় পঞ্চায়েত ভোটের কথা বলে।
এরপর গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কদফায় ভোট এনিয়ে রাজ্য সরকার এবং কমিশনের সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। সূত্রের খবর রাজ্য সরকার যে দুদফায় ভোটের প্রস্তাবে অনড়, বিষয়টি অনুমান করেই শনিবার ফের ডিএম এসপিদের বৈঠকে ডেকেছে কমিশন। বিশেষ করে জঙ্গলমহলের তিন জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়ে বেশি উদ্বেগ রয়েছে কমিশনের। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রতিক কালে কী ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তারও খবর নিচ্ছেন কমিশনের আধিকারিকরা। এসবের জেরে শনিবার কমিশনের ডাকা বৈঠকে ডিএম, এসপিদের মতামত পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
চব্বিশ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে আসার জেরে হুমকি দেওয়া হল পাঁশকুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিআইএম নেতা অমিয় সাহুকে। গতকালই হলদিয়া নিয়ে অনুষ্ঠানে আসেন তিনি। আজ সকালে তাঁর বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূলকর্মী সমর্থকরা।
গতকাল রাতেই অমিয়বাবুর বাড়ির ল্যান্ডলাইনে হুমকি ফোন আসে। বাড়ি ভাঙচুর ও মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। রাতেই পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অমিয় সাহু। পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাহান্ন কোটি টাকার বাজেট পেশ হল হলদিয়া পুরসভায়। আয় কমল ১০ কোটি টাকা। পুরকর মেটাতে পারেনি বেশ কিছু ছোট-মাঝারি সংস্থা। এমনকি কর মেটায়নি হলদিয়া বন্দরও। রাজ্যের সামগ্রিক শিল্পমন্দার প্রতিফলন দেখা গেল হলদিয়া পুরসভার বাজটেও। বাজেট পেশ হওয়ার পরই সাংবাদিক সম্মেলন করলেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন তমালিকা পণ্ডা শেঠ। তিনি জানালেন এবছর হলদিয়া পুরসভার পক্ষ থেকে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অক্ষম ও বয়স্ক শিল্পীদের জন্য ভাতা চালু হচ্ছে হলদিয়া পুরসভার উদ্যোগে। সামাজিক উন্নয়নের খাতে ৮ কোটি টাকা ধার্য করা হচ্ছে। চালু হচ্ছে ``শিশু কন্যা কান্না নয়`` প্রকল্প। এই প্রকল্পে ৬মাস থেকে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কন্যাদের নাম নথিভুক্ত করা যাবে। আঠেরো বছর বয়স অবধি তারা পুরসভার কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পাবে বলেও জানিয়েছেন পুরসভার চেয়ারপার্সন।
অন্যদিকে অধিবেশনে যোগ দিলেও হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেননি তৃণমূল কাউন্সিলররা। বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে হলদিয়া পুরসভায়। ঢুকতে দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। প্রশাসনিক আধিকারিকদের বক্তব্যেও ছড়ায় বিভ্রান্তি।
অতিরিক্ত পুলিস সুপার দাবি করেন তাঁদের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না সংবাদমাধ্যমকে। সেই নির্দেশের কপি এসডিওর কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জেলাশাসক অশোক রক্ষিত দাবি করেন এমন কোনও নির্দেশ তাঁদের কাছে নেই।
গার্ডেনরিচের পর মহেশতলা। পুলিস খুনের পর বস্তিতে আগুন দেওয়া। ফের জড়িয়ে গেল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের আরেক চেয়ারম্যান। ষোলবিঘা বস্তির অগ্নিকাণ্ডে পুলিস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার মামলা দায়ের করেছে। সরাসরি নাম রয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলরের। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন ছোট ঘটনা। ফলে তদন্তের কাজ প্রভাবিত হতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। নুন আনতে পান্তা ফুরনো মানুষগুলির অবস্থা কার্যত সর্বসান্ত। আর সেই ঘটনা যেন একেবারেই গুরুত্বহীন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
অথচ এলাকাবাসীর বক্তব্যেই উঠে এসেছে কীভাবে ষড়যন্ত্র করে তাঁদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা। প্রমোটিং-এর জন্যই ভোররাতে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা বস্তিবাসীদের। সেই অভিযোগেই পুলিস জামিন অযোগ্য ধারায় এফআইআর করেছে ১১ জনের বিরুদ্ধে।
তাঁরা হলেন--আয়ুব আলি গাজি, মোমিনা বিবি, রেজ্জাক গাজি, সাহানারা বিবি, আইজুল মোল্লা, মোমেনা বিবি নাইয়া, হাসিনা বিবি, নিতাই হালদার, রফিক মোল্লা, দীপিকা দত্ত, আব্দুল রফিক মোল্লা। প্রথম পাঁচজন ইতিমধ্যে পুলিসের হাতে ধরা পড়েছে।
অভিযোগের একেবারে শেষে লেখা হয়েছে, ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছেন চেয়ারম্যান। পুলিসও সেই অনুসারে এফআইআরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু সরাসরি দুলাল দাসের নামে মামলা হয়নি। যদিও আইনি দিক থেকে তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ গার্ডেনরিচে পুলিস খুনের ঘটনাতেও চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান হিসাবে অভিযুক্ত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। এখানে চেয়ারম্যানের সঙ্গে সরাসরি এফআইআরে নাম রয়েছে কাউন্সিলর দীপিকা দত্তের।
শাসক দলের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর আগুন লাগিয়ে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে বহুতল বানানোর চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য অবিচল। দুলাল দাস সম্পর্কে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর। একদিকে নিজেদের প্রভাব, অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য। রাজনৈতিক প্রভাবে চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে? ষোল বিঘা বস্তির পোড়া বাতাসে এমনই আশঙ্কার ছাই উড়ে বেড়াচ্ছে।
ফের অস্বস্তিতে শাসক দল। মহেশতলার ষোলোবিঘা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িয়ে গেল মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় তৃণমূলের পুরমাতা দীপিকা দত্তর নাম। তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিস। এফআরআইয়ে নাম না করে ষড়যন্ত্রের মূল অভিযুক্ত বলা হয়েছে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাসকে। মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস সম্পর্কে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর। এই এফআরআইয়ের সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে স্থানীয় পুরমাতা দীপিকা দত্তের বিরুদ্ধে। এই দু'জনসহ মোট এফআইআর-এ নাম থাকা মোট ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিস।
আজ ভোররাতে হঠাত্ই আগুন লেগে যায় মহেশতলা থানার অন্তর্গত এই বসতি এলাকায়। আগুনের কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ হঠাত্ই আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান তাঁরা। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বস্তিউচ্ছেদ করে জমিদখলের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। তার জেরেই বস্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে প্রোমোটিং চক্র আছে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা।
এর আগে এই বস্তিতে আগুন লেগেছিল ২০১২-র ২০ নভেম্বর। মৃত্যু হয়েছিল এক শিশুর। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ফের আগুনে পুড়ে গেল ষোলো বিঘা বস্তি। ঘিঞ্জি এলাকায় মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আশপাশে প্রচুর দাহ্য বস্তু থাকায় দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা বস্তি। দমকলের ১৮টি ইঞ্জিন কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডে এখনও কোনও হাতহতের খবর নেই। তবে ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই গৃহহীন বস্তিবাসী প্রায় ৭০০ পরিবার।
অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্ত মেয়রের শ্বশুরের আর্থিক অবস্থার `পরিবর্তন`-এক্সক্লুসিভ
http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/corruption-of-mayaor-sovon-chatterjee_12079.html
মহেশতলার ষোলোবিঘা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য। ঘটনায় একদিকে জড়িয়েছে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান ও স্থানীয় তৃণমূলের পুরমাতা দীপিকা দত্তর নাম। আবার জ়ডিয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শ্বশুর দুলাল দাসের নাম। ঘটনার তদন্তে নেমে খানিকটা কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরিয়ে গেল। আগুনের তদন্তে নেমে দেখা গেল মেয়র আর শ্বশুর-শ্বাশুরি আর্থিকদিক থেকে ফুলে ফেঁপে ওঠার ঘটনা। কীভাবে এই কয়েক বছরের মধ্যে মেয়র আর তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুরি আর্থিক দিক থেকে এতটা `উন্নতি` করলেন তা নিয়ে প্রশ্নটা বরং তোলা থাক। তার আগে বরং দেখে নেওয়া যাক ঠিক কতটা আর্থিক পরিবর্তন হল মেয়র আর তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুরি আর্থিক অবস্থার।
২০০৬ সালে সম্পত্তির মোট পরিমাণ ২৬ হাজার টাকা। ২০১১ তাই বেড়ে সাত কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশনে দাখিল হলফনামা থেকে পরিষ্কার, পাঁচ বছরে বিস্ময়কর ভাবে বেড়েছে মহেশতলার পুরপ্রধান দুলাল দাস ও তাঁর স্ত্রী কস্তুরী দাসের সম্পত্তি। তিনি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। এঁদের জামাই ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তিও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন দুলাল দাস। সম্পত্তির হিসেব দাখিল করতে গিয়ে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছিলেন। ২০১১ ওই কেন্দ্রে প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী কস্তুরী দাস। তিনিও ব্যবসাকেই পেশা হিসেবে দেখান। এই পাঁচ বছরে তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে বেড়ে যায় ওই পরিবারের সম্পত্তির পরিমাণ।
২০০৬ সালে তাঁদের নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল আট হাজার টাকা, ২০১১ তা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। আর্থিক সংস্থায় আমানত ছিল, ১৮,৫০০ টাকার। যা বেড়ে হয়েছে ৫৭ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা।
২০০৬ সালে এলআইসি পলিসি ছিল ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকার। ২০১১ জীবনবীমার কোনও হিসাব দাখিল হয়নি। ২০০৬ সালে মিউচুয়াল ফান্ডে কোনও লগ্নি ছিল না, ২০১১ সালে ওই খাতে কুড়ি লাখ টাকার লগ্নি রয়েছে।
দুটি গাড়ির কথা বলা হলেও, ২০০৬ সালে তার কোনও মূল্যায়ণ দাখিল হয়নি। ২০১১ দুটি গাড়ির মোট মূল্য কুড়ি লাখ টাকার বেশি বলা হয়েছে।
২০০৬ সোনার গয়নার পরিমাণ ছিল ১৬৫ গ্রাম, মূল্যায়ণ প্রকাশ করা হয়নি। ২০১১ সোনার গয়নার মূল্যায়ণ দেখানো হয়েছে তিন লক্ষ ষাট হাজার টাকা
কৃষিজমি ২০০৬ সালে ছিল না, ২০১১ কৃষিজমির মূল্যায়ণ সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে।
কমার্শিয়াল বিল্ডিংও ২০০৬ সালে ছিল না। ২০১১ বলা হয়েছে পরিবারের হাতে দুটি কমার্শিয়াল বিল্ডিং রয়েছে, যার মোট মূল্য দু কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা।
২০০৬ বসতবাড়ির কোনও আর্থিক হিসাব দেওয়া হয়নি। ২০১১ বলা হয়েছে দুটি বসতবাড়ির কথা। যার মোট মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা।
দেখা যাচ্ছে পাঁচ বছরে সম্পত্তির মোট পরিমাণ ২৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত কোটি টাকায়।
এবার নজর দেওয়া যাক দুলাল দাসের জামাই ও কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সম্পত্তির দিকে।
২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার টাকা, ২০১১ তা ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
দুহাজার ছয়ে আর্থিক আমানত ছিল এক লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১১ তা ১৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
২০০৬ শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীর পিপিএফে ছিল একলক্ষ ৪০ হাজার টাকা। ২০১১ তা আট লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে।
২০০৬ সালে চার লক্ষ টাকার এলআইসি পলিসি ২০১১ সালে ২৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের কাছে সোনার গয়না ছিল ৫০ হাজার টাকার, যা ২০১১ বেড়ে হয়েছে ১০ লক্ষ ২৬ হাজার টাকার
দুহাজার ছয়ে গাড়ির কোনও হিসেব দাখিল হয়নি, দুহাজার এগারোয় দুটি গাড়ির মূল্যায়ণ করা হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা। ২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের হাতে চার লক্ষ টাকার কৃষিজমি ছিল যা ২০১১ হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার।
অকৃষিজমি যা ২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হেফাজতে ছিল না, ২০১১ দাখিল করা হিসাবে তার মূল্যায়ণ ৬২ লক্ষ টাকার বেশি।
২০০৬ বসতবাড়ির মূল্যায়ণ ছিল ১৫ লক্ষ টাকার, দুহাজার এগারোয় তার মূল্যায়ণ ৫০ লক্ষ টাকা। বাণিজ্যিক বাড়ির কোনও হিসেব দুহাজার ছয়ে দেওয়া হয়নি। দুহাজার এগারোয় দাখিল হিসেবে তার পরিমাণ তিন কোটি টাকার বেশি। ২০০৬ সালে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২২ লক্ষ টাকার। যা ২০১১ বেড়ে হয়েছে চার কোটিরও বেশি।
ঘোষিত সম্পত্তির হিসাব থেকেই পরিষ্কার, দুটি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে কলকাতা পুরপ্রধান অর্থাত্ মেয়রের সম্পত্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়ির ক্ষেত্রেও একই তথ্য প্রযোজ্য।
বরকত গনি খান চৌধুরীর নামাঙ্কিত গণিখান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ভবনের শিলান্যাস উপলক্ষ্যে আজ মালদায় আসছেন মনমোহন সিং ও সোনিয়া গান্ধী। আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনুষ্ঠানে থাকছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তুঙ্গে উঠেছে কংগ্রেস-তৃণমূলের চাপানউতোর।
সকাল দশটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে কোতায়ালি ভবনের পাশের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে ছোঁবে প্রধানমন্ত্রী এবং সোনিয়া গান্ধীর কপ্টার। তারপর কোতোয়ালি ভবন হয়ে গণিখান চৌধুরীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী ও সোনিয়া গান্ধী। এরপর রওনা হবেন নারায়ণপুরের উদ্দেশে। এই হেভিওয়েট সফর ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে মালদাকে।
কোতোয়ালি ভবন থেকে শুরু করে উত্তর মালদার নারায়ণপুরের অনুষ্ঠানস্থল, সর্বত্র নিশ্চিদ্র করা হয়েছে নিরাপত্তা। কোতোয়ালি ভবনের দিকে সব রাস্তায় রয়েছে কড়া পুলিস প্রহরা।
পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়বে না কংগ্রেস। মালদার সভায় সেকথাই স্পষ্ট করে দিলেন সোনিয়া গান্ধী। আজ নারায়ণপুরে বরকত গণি খান চৌধুরীর নামাঙ্কিত ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেস সভানেত্রী। আমন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও অনুষ্ঠান গরহাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উপলক্ষ্য বরকত খনি চৌধুরী ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু আমন্ত্রণ পেয়েও আসেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজিরা আর গরহাজিরার এই ছবিটাই যেন ছিল গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে। কংগ্রেস সভানেত্রী টার্গেট করলেন মুখ্যমন্ত্রীকেই। পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ সংরক্ষণ তাঁর সরকারের কৃতিত্ব বলে বিভিন্ন সভায় দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই দাবি উড়িয়ে দিলেন সোনিয়া গান্ধী।
গ্রামোন্নয়ন, নারী কল্যাণ, শিক্ষা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইউপিএ সরকারের সাফল্যের নানা খুঁটিনাটি তথ্যও তুলে ধরেন সোনিয়া গান্ধী।
প্রধানমন্ত্রীও তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরলেন রায়গঞ্জে এইমস, মুর্শিদাবাদে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা তৈরির কথা।
মালদার রাজনীতিতে শেষ কথা ছিলেন গনিখান চৌধুরী। তাঁর নামে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বুঝিয়ে দিল, গনিখান ছাড়া মালদা আর রাজনীতি ছাড়া গনিখান এখনও অসম্ভব। তাঁর নামাঙ্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানেই কার্যত পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়ে গেলেন সোনিয়া গান্ধী।
বিধাননগর স্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে এক যুবককে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তিন মহিলার বিরুদ্ধে। খড়দহ স্টেশনে ওই মহিলাদের মারধর করে জনতা।
শনিবার সন্ধেয় এই ঘটনা ঘটে। বিকেল পাঁচটা পঞ্চান্ন মিনিটে শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে মাতৃভূমি স্পেশাল। পুরো ট্রেনই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। অভিযোগ, বিধাননগর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর কামরায় উঠে পড়েন এক যুবক। বাগুইআটির বাসিন্দা ওই যুবকের নাম রিতেশ আগরওয়াল। তাঁকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেন তিন মহিলা। প্ল্যাটফর্মে পডে গিয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এখবর ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনের সব কামরায়।
খড়দহ স্টেশনে ট্রেন থেকে নামেন ওই তিন মহিলা। তখনই তাঁদের ঘিরে ধরে মারধর করে জনতা। মারধরে যোগ দেন মহিলারাও। ওই তিন মহিলা ঢুকে পড়েন স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে। জনতা তাঁদের ধাওয়া করে স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে ঢুকে পড়ে। ভাঙচুর করা হয় আসবাবপত্র।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিসবাহিনী। ছুটে আসে রেল পুলিস এবং জিআরপি। পরে পুলিসের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনজনকেই পুলিস গ্রেফতার করেছে। এঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্ল্যাটফর্মে পড়ে আহত যুবককেও ভর্তি করা হয়েছে আরজিকর হাসপাতালে।
এবার বেআইনি করাতকল ইস্যুতেও আদালতে ধাক্কা খেল রাজ্য। রাজ্যের সব বেআইনি করাতকল বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে দশ সপ্তাহের মধ্যে সব বেআইনি করাতকল বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বেআইনি করাতকলের বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলিকে সব বেআইনি করাতকলের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতে বলেছে আদালত।
এবিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেসম্পর্কে অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে বলা হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। বেআইনি করাতকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াকে কেন্দ্র করে এর আগে বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের সঙ্গে সংঘাতের পথে গিয়েছিলেন রাজ্যের তত্কালীন মুখ্য বনপাল এম এস সুলতান। এর জেরে সুলতানের ক্ষমতাও খর্ব করা হয়। বনমন্ত্রী সেসময় বলেছিলেন, বিভিন্ন বেআইনি করাতকলকে বৈধ করার প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু করবে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের এই রায় রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়াল। কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর এব্যাপারে বন দফতরের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ফের বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানালেন বাস মালিকরা। পাশাপাশি অবিলম্বে বাস ভাড়া না বাড়ালে বাস বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। বাস মালিকদের তরফে ইতিমধ্যেই একটি নতুন ভাড়ার তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। সোমবার যা পরিবহন মন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন মালিকরা।
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে রাস্তা থেকে উঠে যাচ্ছে একের পর এক বেসরকারি বাস। বাস মালিকদের সেই কথাতেই কার্যত সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। শুক্রবার বিধানসভায় তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের ৭০ শতাংশ বেসরকারি বাস বসে গেছে। ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই ফের ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে সরকারের উপর চাপ বাড়াতে চাইছে বেসরকারি বাস মালিকদের বৃহত্তম ২টি সংগঠন, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট। সোমবার মহাকরণে পরিবহণমন্ত্রীর কাছে নতুন ভাড়ার তালিকা সহ দাবিপত্র পেশ করবেন তাঁরা। তাঁদের প্রস্তাবিত তালিকা অনেকটাই মিলে যাচ্ছে ২০১২র ৩১শে অক্টোবর পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর তৈরি করা বাসভাড়ার সঙ্গে। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে ওই ভাড়া প্রত্যাহার করে নেয় পরিবহণ দফতর।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক এখন ভাড়া...
০-৪ কিলোমিটার ৫ টাকা
৪-১২ কিলোমিটার ৭ টাকা
১২-১৬ কিলোমিটার ৮ টাকা
১৬ কিলোমিটারের উর্ধ্বে ১০ টাকা
বাসমালিকরা যে প্রস্তাব পেশ করবেন, তা এরকম
০-৩ কিলোমিটার ৫ টাকা
৩-৬ কিলোমিটার ৬ টাকা
৬-৮ কিলোমিটার ৭ টাকা
৮-১০ কিলোমিটার ৮ টাকা
১০ কিলোমিটারের পর প্রতি ৩ কিলোমিটারে ১ টাকা করে বৃদ্ধি।
বাসমালিকদের মতে, লিটারপিছু ৫২ টাকা দিয়ে ডিজেল কিনে বর্তমান ভাড়ায় বাস চালানো তাঁদের পক্ষে অসম্ভব। রাজ্যে রোজ ৮৮ শতাংশ যাত্রী বহণ করে ৩৭ হাজার বেসরকারি বাস। যার মধ্যে এখন চলছে মাত্র ৯ হাজার। পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পরিবহণ সংস্থার পুরো শক্তি ব্যবহার করেও অবস্থা যে স্বাভাবিক করা যাবে না, তা বিলক্ষণ জানেন পরিবহণমন্ত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ভাড়া বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী যে রাজি হবেন না, সেটাও তিনি জানেন। মাঝামাঝি কোনও রাস্তা পরিবহণমন্ত্রী বের করতে পারেন কিনা, তার দিকেই অগত্যা তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। মালিকপক্ষ কিন্তু জানিয়ে দিয়েছে, ভাড়া না বাড়লে আরও বাস রাস্তা থেকে উঠে যাবে।
নারী পাচারকাণ্ডে এখনও অধরা মূল চক্রী বাপি সাহা। খোঁজ নেই অপর দুই অভিযুক্ত শিবা এবং সোমিয়ার। চব্বিশ ঘণ্টার খবরের জেরে ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে রেল পুলিসের এএসআই ধর্মেন্দ্র সিং সহ চার জন।
ধৃত দুই কনস্টেবল বিশ্বজিত্ দাস, আলতাফ হোসেন এবং সাফাইকর্মী সইদুল মোল্লাকে আজ শিয়ালদা আদালতে পেশ করা হয়। তাদের তিনদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩৬৬, ৩৭০, ৩৮৪ এবং ১২০ বি ধারায় অপহরণ, তরুণীকে বিক্রি এবং মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্তে ছত্তিসগড়ের রায়পুরে একটি দল রওনা হয়েছে বলে জিআরপি সূত্রে খবর। মূল চক্রী বাপি সাহার নির্দেশে শিবা এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে সোমিয়া নামে রায়পুরের বাসিন্দা এক মহিলার কাছে ওই তরুণীকে বিক্রি করেছিল বলে জেরায় জানিয়েছে ধৃতেরা।
রক্ষকই যে ভক্ষক, শিয়ালদার ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। জিআরপির কর্মীরাই জড়িয়ে গেছে নারীপাচার থেকে অপহরণ ও মুক্তিপণের ঘটনায়। শেষে চব্বিশ ঘণ্টার খবরের জেরে গ্রেফতার হয়েছে এএসআই ধর্মেন্দ্র সিং এবং ৩ কনস্টেবল। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ধর্মেন্দ্র সিং-এর নেতৃত্বেই তৈরি হওয়া এসওজি। বাধ্য হয়ে সাসপেন্ড করা হয়েছে দুই কনস্টেবলকে। অথচ এখন ঘটনার দায় পুরোপুরি অস্বীকার করছেন রেলপুলিসের কর্তারা।
গড়িয়া স্টেশন থেকে অজয়নগর। তারপর শিয়ালদা। রাতভর রেল পুলিসের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের ঘরে আটকে রাখা হয় মহিলার স্বামীকে। অথচ স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের ওসির দাবি, ঘটনার কথা কিছুই জানতেন না তিনি। ঘটনা জানাজানির পর এখন রেলপুলিসের সব বড়কর্তারাই গা বাঁচাচ্ছেন। তড়িঘড়ি দুই কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করে এবং পুরো এসওজি বা স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ ভেঙে দিয়ে দায় এড়াতে চাইছেন তাঁরা। প্রত্যেকেরই দাবি, তাঁরা ঘটনার কথা কিছুই জানতেন না। কিন্তু রাতভর এসওজির ঘরে যেভাবে একজনকে আটকে রাখা হল এবং মুক্তিপণের জন্য মহিলাকে তাগাদ দেওয়া হল, তাতে কর্তাদের এই দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, রেলপুলিসের কর্তারা যদি ঘটনার কথা না জানতেন তাহলে কি এতটা বেপরোয়া মনোভাব দেখাতে পারত অপরাধীরা
এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ মহাকরণ থেকে সটান এসএসকেএমে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সঙ্গে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বাস্থ্যসচিব সতীশ তিওয়ারি এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী৷ প্রথমেই তিনি যান ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে৷ সেখান থেকে বিভিন্ন চিকিত্সকদের ব্র্যান্ড নামে লেখা ওষুধের প্রেসক্রিপশনের প্রতিলিপি সংগ্রহ করেন৷ নিজের চোখেই দেখেন, চিকিত্সকদের একাংশ সরকারি নির্দেশ মানছে না৷
মুখ্যমন্ত্রী কোনও চিকিত্সকের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ নেবেন বলে না জানালেও ভবিষ্যতে হাসপাতালের এই অভ্যাস পাল্টাতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, অভ্যাস না-হওয়াতেই চিকিত্সকদের একাংশ এখনও জেনেরিক নামে ওষুধ লিখছেন না৷ এর পর হাসপাতাল চত্বরের বাইরেও চারটি ওষুধের দোকানে যান মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রতিটি দোকানে গিয়েই জিজ্ঞাসা করেন, কেন গরিব মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলা হচ্ছে৷ বেশ কিছু দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রেসক্রিপশনের সব ওষুধই তাঁরা কিনতে বাধ্য করেন সাধারণ মানুষকে৷
মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেক দোকানেই আলাদা করে গরিবদের প্রেসক্রিপশনের সমস্ত ওষুধ কিনতে বাধ্য করতে বারণ করেন৷ হুঁশিয়ারি দেন, দুর্ভোগে থাকা মানুষকে বিপাকে ফেলার সুযোগ নেওয়া ভালো চোখে দেখবে না সরকার৷
No comments:
Post a Comment