Saturday, June 15, 2013

মমতা-ফ্রন্ট আটকাতে মরিয়া শঙ্কিত বামেরা

মমতা-ফ্রন্ট আটকাতে মরিয়া শঙ্কিত বামেরা

মমতা-ফ্রন্ট আটকাতে মরিয়া শঙ্কিত বামেরা
এই সময়, নয়াদিল্লি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্ট বানচাল করতে মাঠে নেমে পড়ল বামেরা৷ ফেডারেল ফ্রন্টের পাল্টা হিসাবে তাঁরা আবার তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনে উদ্যোগী হয়েছে৷ ফেডারেল ফ্রন্টের দুই সম্ভাব্য শরিক বিজু জনতা দল ও সংযুক্ত জনতা দলকে ভাঙিয়ে নিজেদের তৃতীয় ফ্রন্টে নিয়ে আসতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সিপিএম ও সিপিআই৷ তারা কথা শুরু করেছে নবীন পট্টনায়ক, শরদ যাদব ও সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে৷ দিনের শেষে বামেদের দাবি, তাদের উদ্যোগ অনেকটাই সফল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডারেল ফ্রন্টের ভবিষ্যত্‍ আদৌ আশাপ্রদ নয়৷ 

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা এবি বর্ধন শুক্রবার দীর্ঘ ক্ষণ সংযুক্ত জনতা দল নেতা শরদ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বর্ধন৷ এমনিতে ওডিশায় বামেরা বিজু জনতা দলের শরিক৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে তাদের আসন সমঝোতা হয়েছিল৷ সেই বোঝাপড়া থেকে নবীন সরে আসবেন না বলে বাম নেতারা জানিয়েছেন৷ বর্ধন দাবি করেছেন, দু-তরফ থেকেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গিয়েছে৷ বিকেলের দিকে বর্ধন আলোচনায় বসেন মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে৷ 

কয়েক দিন আগেও তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে বামেরা মোটেই আশাবাদী ছিল না৷ সীতারাম, প্রকাশ কারাটরা তৃতীয় বিকল্পের সম্ভাবনা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করছিলেন৷ তা হলে মত বদলে তাঁরা একদা জোট শরিকদের কাছে টানতে উদ্যোগী হল কেন? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ে মমতা সফল হলে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরায় বামেরা বাড়তি চাপে পড়বে৷ ফেডারেল ফ্রন্ট দিনের আলো দেখলে লোকসভা ভোটে তৃণমূল মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা তুলে ধরে বাঙালি ভাবাবেগকে উস্কে দিতে পারে, যেমনটা হয়েছিল ১৯৯৬-এর লোকসভা ভোটের আগে-পরে জ্যোতি বসুকে নিয়ে৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশ আবার বামেদের তত্‍পরতার পিছনে কংগ্রেসের হাত দেখতে পাচ্ছে৷ মমতার ফেডারেল ফ্রন্ট সফল হলে সবচেয়ে চাপে পড়বে কংগ্রেস৷ রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও কংগ্রেস ও বামেরা পরস্পরকে স্বাভাবিক মিত্র মনে করে৷ বিশেষ করে বামেদের কাছে মমতা কংগ্রেসের থেকে বড় বিপদ৷ তাই মমতাকে ঠেকানো তাদের আশু কর্তব্য৷ তাই অভিন্ন স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই বামেদের এই তত্‍পরতা৷ 

বামেরা তাই চাইছে মমতার কাছ থেকে নবীন ও নীতীশকে সরিয়ে আনা ও ভবিষ্যতে জাতীয় স্তরে কোনও ফ্রন্ট হলে তাতে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা৷ কংগ্রেস নিশ্চিত, ভোটের পর সরকার গড়তে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নে বামেদের উদ্যোগে গঠিত জোটকে তারা পাশে পাবে৷ 

সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, 'বামেদের ছাড়া তৃতীয় বা চতুর্থ কোনও ফ্রন্টই হবে না৷' আগামী ১ জুলাই দিল্লির মভলঙ্কার হলে চার বাম দলের বৈঠক হবে৷ সেখানে একটি ঘোষণাপত্র জারি করা হবে৷ তাতে আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে বামেদের মত ও কর্মসূচির কথা থাকবে৷ সেই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে সব ধর্মনিরপেক্ষ দলকে একজোট হওয়ার আবেদন জানানো হবে৷ সীতারাম বলেছেন, 'মানুষ ব্যক্তি নয়, নীতি চায়৷ আমরা বাম দলের বৈঠকে সেই নীতি ঠিক করব৷ তার পর সব ধর্মনিরপেক্ষ দলকে একজোট হতে বলব৷' যদিও সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট মনে করছেন, ভোটের পরেই ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনা বেশি৷ কারণ, সব দলই আগে ভোটে লড়ে নিজেদের শক্তিটা বাড়িয়ে নিতে চায়৷ 

কিন্তু তার পরেও বামেরা যে তত্‍পর হয়ে উঠেছেন, তার মূল কারণ হল, মমতার ফেডারেল ফ্রন্ট৷ বাম নেতাদের দাবি, নবীন ও শরদ দুজনেই নাকি তাঁদের বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর পুরোপুরি ভরসা রাখা নিয়ে তাঁদের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ তবে সংযুক্ত জনতা দলে শরদ নয়, নীতীশ কুমারের কথাই শেষ কথা৷ সেক্ষেত্রে নীতীশকে বাদ দিয়ে শরদ যাদবের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হল? বাম সূত্রের বক্তব্য, শরদের সঙ্গে কথা বলে ফেডারেল ফ্রন্ট সম্পর্কে তাঁদের মনোভাবটা জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির একজোট হওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷ নীতীশের সঙ্গে পরে কথা বলা হবে৷ মোট কথা কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধী কোনও জোট হলে তাতে যেন বামেরাও থাকে সেটাই নিশ্চিত করতে চেয়েছেন বর্ধন-সীতারামেরা৷ 

এমনিতে মুলায়ম সিং যাদব সম্পর্কে প্রচুর অভিযোগ আছে বামেদের৷ সবথেকে বড় অভিযোগ হল, মুলায়ম কখন কী করবেন, কার সঙ্গে যাবেন, তার ঠিক নেই৷ কিন্ত্ত সে সব ভুলে এখন সেই মুলায়মকে পাশে পেতেও ঝাঁপিয়েছেন বামেরা৷ আগামিকাল চিন সফরে যাচ্ছেন প্রকাশ কারাট৷ তাই অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বটা রয়েছে বর্ধন ও সীতারামের উপরে৷ 

আর বামেদের দুই ছোট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ও আরএসপি তাকিয়ে আছে ১ তারিখের বৈঠকের দিকে৷ ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস বলেছেন, '১ তারিখ আমরা আলোচনা করে আগে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করি৷ তার পর অন্য কথা৷' একটু ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে আরএসপি-র অবনী রায়ের বক্তব্যে৷ তিনি বলেন, 'তৃতীয় ফ্রন্ট যদি হয়ও তারা কি নিজেদের শক্তিতে সরকার গড়তে পারবে? তাদের তো হয় কংগ্রেস অথবা বিজেপি-র সমর্থনের উপরে নির্ভর করতে হবে৷ তা হলে পরিস্থিতিটা আলাদা হচ্ছে কী করে?' 

No comments:

Post a Comment