Monday, February 11, 2013

ফাঁসির ফাঁসে রাজনীতি

ফাঁসির ফাঁসে রাজনীতি

ফাঁসির ফাঁসে রাজনীতি
শ্রীনগর, নয়াদিল্লি: আফজল গুরুর ফাঁসি নিয়ে নতুন বিতর্কে কেন্দ্র৷ সোমবার সরব হয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা৷ অস্বস্তি বাড়িয়েছিলেন কেন্দ্রের৷ সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে ফাঁসির ৭২ ঘণ্টা পরে স্বামীর সরকারি মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেলেন তবস্সুম৷ সরকারি তরফে বিতর্ক নিরসনে এ দিন রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্ডে অবশ্য সাফাই দিয়েছেন, ৭ ফেব্রুয়ারি রাতেই সরকারি স্পিড পোস্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল চিঠিটি৷ কিন্তু পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টাতেও, ফাঁসির আগে আফজলের পরিবার কেন সেই গুরুত্বপূর্ণ চিঠিটি পেল না, সে উত্তর এড়িয়েই গিয়েছেন শিন্ডে৷ 

চিঠি দেরিতে পৌঁছনো নিয়ে বিতর্কে নিজেদের সামিল করেনি বিরোধী দল বিজেপি৷ উল্টে তাদের আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন ওমর আবদুল্লা৷ রবিবার ওমর বিজেপির সমালোচনা করে জানিয়েছিলেন, আফজলের ফাঁসি নিয়ে অনেক কথা বললেও রাজীব গান্ধী, বিয়ন্ত সিংয়ের হত্যাকারীদের নিয়ে নীরব কেন৷ এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নাইডু৷ তিনি জানিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়া মেনেই ফাঁসি হয়েছে আফজলের৷ তাঁর কথায়, 'আফজল গুরুর প্রতি এই সহানুভূতি কেন, আমি অন্তত বুঝতে পারছি না৷ জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী সাক্ষাত্‍কারে যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি কোনও ভাবেই একমত নই৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রই শরিক ন্যাশনাল কনফারেন্সকে বিষয়টি ভালো ভাবে বোঝাতে পারবে৷' দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাওড়েকরের বক্তব্য, তাঁরা চিন্তিত ওমর আবদুল্লার সাক্ষাত্‍কার নিয়ে, যেখানে ওমর বলেছেন, কাশ্মীরের যুবকরা আফজলের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম ভাবতে পারে৷ জাওড়েকরের পাল্টা প্রশ্ন, কাশ্মীরি যুবকদের দেশপ্রেম নিয়ে কেন এ ভাবে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷ তবে আফজলের ফাঁসি নিয়ে রাজনীতি না করার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী৷ 

যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সরকারি ভাবে স্বামীর মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পান তবস্সুম৷ উপত্যকায় পরোয়ানা-চিঠি পৌঁছল ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পর, শনিবার সন্ধেয়৷ পৌঁছনোর পর আফজল গুরুর পরিবার প্রশ্ন তুলেছে, আজ এই চিঠি পাওয়ার অর্থটা কী? আগে জানানোর অর্থটা এটা? অথচ জেলের নিয়ম বলছে, ফাঁসি দেওয়ার আগে পরিবারকে আগে তা জানাতে হবে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার জানান, ৭ ফেব্রুয়ারি রাতেই চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাকে ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ফাঁসির সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন৷ 

জম্মু-কাশ্মীরের চিফ পোস্টমাস্টার জন স্যামুয়েলসের আবার সাফাই, 'শনিবার সন্ধের পর চিঠিটি আসে৷ একে শনিবার৷ তার উপর তখন কার্ফু চলছে উপত্যকায়৷ তাই চিঠিটি পৌঁছে দেওয়া যায়নি৷ আজ সকালে দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছনো হয়েছে চিঠিটি৷' তিহার জেল থেকে পাঠানো চিঠিটি ছিল আফজল গুরুর স্ত্রী তবস্সুম গুরুর নামে৷ তিহার জেলের সুপারের যে চিঠি সোপরে আফজল গুরুর পরিবারের কাছে পৌঁছেছে, তাতে তারিখ রয়েছে ৬ ফেব্রুয়ারি৷ চিঠির বয়ানে লেখা হয়েছে, 'আফজল গুরুর প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি খারিজ করে দিয়েছেন৷ আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় ৩ নম্বর সেন্ট্রাল জেলে তার ফাঁসি হবে বলে ঠিক হয়েছে৷ এই তথ্য আপনাদের জানানো হল পরবর্তী প্রয়োজনীয় কাজের জন্য৷' 

সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ফাঁসির ব্যাপারে চরম গোপনীয়তা দরকার ছিল৷ আজমল কাসভের মতো এটাও অত্যন্ত স্পর্শকাতর ব্যাপার ও তাই সরকারকে খুব সতর্ক হয়ে কাজ করতে হয়েছে৷ ওমরের তোলা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'রাজীব গান্ধী এবং মুখ্যমন্ত্রী (বিয়ন্ত সিং)-এর মামলা দু'টি এখনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন৷ অভিযুক্তদের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ হওয়ার পর মাদ্রাজ হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে দু'টি মামলা দায়ের হয়েছে৷ তাই আফজলের বিষয়টি এর থেকে আলাদা৷' সেই গোপনীয়তার স্বার্থেই কী এমন ভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যাতে ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে গিয়ে পৌঁছয়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য সেই বিতর্কের মধ্যে ঢুকতে চাননি৷ তিনি জানিয়েছেন, এখন যদি আফজল গুরুর পরিবার তার কবর দেখতে চান, তা হলে তিনি সেই আবেদন অবশ্যই বিবেচনা করবেন৷ 

ওমর আবদুল্লার সুরে সুর মিলিয়েই এদিন কেন্দ্রকে তোপ দেগেছেন ফারুক আবদুল্লা৷ বলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে দেশ ও কাশ্মীরের বাসিন্দাদের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন আফজলের পরিবারের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হল? তবে যত ব্যথিতই হোন না কেন, ফারুক ইউপিএ সরকার বা মন্ত্রিত্ব কোনওটাই ছাড়ছেন না, পরিষ্কার করে দিয়েছেন তাও৷ তিনি বলেছেন, 'আমাদের অনেক বড় কাজ করার আছে৷ এর জন্য কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়তে যাব?' পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আফজলের আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলিও৷ আরও একটা প্রশ্ন উঠেছে, তিহার জেল যেহেতু দিল্লিতে, তাই দিল্লি সরকারেরও দায়িত্ব ছিল আফজলের পরিবারকে জানানো৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে তথা দিল্লির কংগ্রেস সাংসদ সন্দীপ দীক্ষিত অবশ্য এই বিষয়টি মানতে চাননি৷ তাঁর মতে, দিল্লি সরকারের এ ব্যাপারে কোনও দায়িত্বই ছিল না৷ এটা পুরোপুরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাপার৷ লোকসভা ভোটে ফায়দা তুলতেই বিজেপি আফজল ইস্যুকে কাজে লাগাচ্ছে বলে তাঁর মন্তব্য৷

No comments:

Post a Comment