Saturday, May 14, 2011

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান, মমতার জোট বিজয়ী পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান, মমতার জোট বিজয়ী

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান, মমতার জোট বিজয়ী 
পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান, মমতার জোট বিজয়ী 

 
প্রথম আলো, Sat 14 May 2011
পশ্চিমবঙ্গে অবসান হলো বাম শাসনের। বলা ভালো, বিধ্বস্ত। আপাতভাবে মনে হচ্ছে, মমতা-সুনামিতে ভেসে গেল ৩৪ বছরের লাল দুর্গ। কিন্তু ভোটের ফলাফল এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভেতরে ভেতরে এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। তারই ফল এ রায়। 

প্রকৃতপক্ষে তৃণমূল থেকে নিজ মহিমায় উঠে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমাণ করেছেন, তিনি একাই এক শ। ১৯৮৪ সালে একেবারে অচেনা প্রার্থী হিসেবে জয় দিয়ে শুরু করা মমতার সংসদীয় রাজনীতি ২৭ বছর পর চূড়ান্ত পরিণতি পেতে চলেছে। খুব শিগগির রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বামবিরোধী রাজনীতির আইকন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভেদ্য লাল দুর্গটি ধসিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব অনেকটা তাঁরই। 

মাসব্যাপী ছয় পর্যায়ে নেওয়া ভোট গতকাল শুক্রবার সকালে গণনা শুরু হয়। সময় কিছুটা যেতেই এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ (বামদের) প্রত্যাবর্তন নয়, (বামবিরোধী) পরিবর্তনের পক্ষেই রায় দিয়েছে। জয়ের পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মমতা বলেছেন, �এই জয় মা-মাটি-মানুষের, এই জয় গণতন্ত্রের। এই রায় শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে। আজ বাংলার মাটিতে নতুন করে স্বাধীনতা এসেছে, বাংলা আজ মুক্ত।� গতকাল বিকেলে কালীঘাটে নিজ বাসভবনে জনগণকে অভিবাদন জানিয়ে এ কথা বলেন �অগ্নিকন্যা� মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল জয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে নতুন সরকার গঠনের আরজি জানান। এখন রাজ্যপাল আনুষ্ঠানিকভাবে মমতাকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন। শপথের দিনক্ষণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত না হলেও গতকাল সন্ধ্যায় তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, সম্ভবত আগামী ১৮ জুন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ হতে পারে। তখন মমতাই হবেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ইতিমধ্যে রাজ্যপালের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন। রাজ্যপাল তাঁকে পরবর্তী মন্ত্রিসভা না আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলেন। 

২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস জোট পেয়েছে ২২৮। অর্থাৎ তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন পেয়েছে এই জোট। এর মধ্যে তৃণমূল একাই পেয়েছে ১৮৫। ফলে সরকার গঠন বা চালানোর ব্যাপারে শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে না তৃণমূল কংগ্রেসকে। কংগ্রেস ৬৫ আসনে প্রার্থী দিয়ে ৪২টিতে জিতেছে। অন্যদিকে বাম জোট পেয়েছে ৬১টি আসন; এর মধ্যে সিপিআই(এম) ৩৯, সিপিআই ২, ফরোয়ার্ড ব্লক ১১, আরএসপি ৭ ও অন্য শরিকেরা ২। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ তাঁর মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য হেরে গেছেন। তবে বিজেপির প্রতি রাজ্যবাসীর অনাস্থা অব্যাহত রয়েছে। তারা একটি আসনও পায়নি। 
ফল প্রকাশের পর বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু গতকাল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, �গণরায় আমরা মাথা পেতে গ্রহণ করছি। বিরোধীদের পরিবর্তনের স্লোগান জনগণ গ্রহণ করেছে। সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। এটা আমরা অকপটে স্বীকার করছি। দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকব।� এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, �শুধু সরকারে থাকার জন্য বামফ্রন্টের জন্ম হয়নি। সরকারে না থাকলেও আমরা জনগণের জন্য কাজ করব।� 
কালীঘাটের সেই বাড়িটি 
উত্তেজনায় কম্পমান কলকাতায় ভোরের আলো তখনো ফোটেনি। ভিড় বাড়তে থাকে কালীঘাটের দারিদ্র্যের ছোপছাপ লাগানো ৩০বি হরিশ্চন্দ্র স্ট্রিটে। কুচকুচে কালো পানি বয়ে চলা কাটিগঙ্গা খালের তীর ঘেঁষে মমতার বাড়ি। অতি সাধারণ। অপরিসর একতলা টিনশেডের বাড়িটিতে তৃণমূলের দপ্তর। লাগোয়া দ্বিতল বাড়িটিও একইভাবে জৌলুশহীন। এমনকি দুখানা ঘরের রংও বেমানান। বোঝাই যায়, এই বাড়ির জননন্দিত নেত্রীর আটপৌরে জীবনযাপন, তাঁর পরনের চিরচেনা সাধারণ শাড়ির মতোই। পূর্বাভাস ছিল, বামদের বারোটা বাজার চিত্রটা ১২টার পর স্পষ্ট হবে। কিন্তু আসলে সকাল আটটায় পোস্টাল ব্যালট গণনার ফল থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনোই বামদের আসনসংখ্যা দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করেনি। সে কারণে দেখতে না-দেখতে হরিশ্চন্দ্র স্ট্রিটে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। চারদিকে শঙ্খধ্বনি, বাদ্যবাদন। অনেকেই কালীঘাটে পূজা দিয়ে নেত্রীকে দেখতে আসেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মেতে ওঠেন সবুজ আবির নিয়ে; আর একটিবার নেত্রীকে দেখার জন্য। তাঁদের কণ্ঠে ছড়া-স্লোগান, মুখে বিজয়ের খিলখিলিয়ে হাসি। কারও চোখে আনন্দাশ্রু। তৃণমূলের যুব মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পম্পা দত্ত একাই জমিয়ে দিলেন। তিনি সুর করে বলেন�দিদি, তুমি করলে কী। অন্যেরা কোরাস ধরে, সিপিএম খাবে কী। গেল গেল বুদ্ধ গেল/ এবার বাংলা শুদ্ধ হলো ইত্যাদি। সকাল ১০টায়ই এসবের লাইভ সম্প্রচার চলে। 
এ রকম পরিবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভক্তদের সামনে আসেন অল্প সময়ের জন্য। এ সময় তিনি এই অভূতপূর্ব রায়ের জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এটা মা-মাটি-মানুষের জয়। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় মন্ত্রিসভার শপথ নিয়ে কথা বলতে মমতা রাজভবনের (রাজ্যপালের কাছে) উদ্দেশে বের হন। ততক্ষণে নেত্রীর যাত্রাপথ লোকে লোকারণ্য। আশপাশের বাড়ির ছাদেও মানুষ ঠাঁই নেয়। একনজর দেখার জন্য অপেক্ষমাণ জনতার করতালির মধ্যে, ভিড় ঠেলে তাঁকে রাজভবনে প্রবেশ করতে হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল রায়। 
আজ শনিবার থেকে মহাকরণ (পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয়) মমতার। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর পদ ছেড়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নেবেন। এর পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে বিধানসভার কোনো একটি আসনে নির্বাচিত হতে হবে। মমতা এর আগে কখনো বিধানসভা নির্বাচন করেননি। 
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীতে মনীষী ও বাংলার মানুষের উদ্দেশে বিজয় উৎসর্গ করেন। গতকাল দুপুরের দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী মমতাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। 
বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে পরাজয় মেনে নিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, বিরোধী দলে থেকে তাঁরা গঠনমূলক সহযোগিতা দেবেন। সরকারি দলকে সহযোগিতা কিংবা বনেধর মতো কর্মসূচি নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, মমতাকে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে দিন। আগামী ৩৪ দিনের মধ্যে রাজ্যবাসী বিরোধী দলের ভূমিকা দেখবে। তবে নতুন সরকারকে অবশ্যই হানিমুন পিরিয়ড দিতে হবে। গৌতম দেব দমদম আসনে নাট্যকার ব্রাত্য বসুর কাছে হেরে গেছেন। বামদের অনেক তারকা-প্রার্থীই কুপোকাত। শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন ও অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসামন্ত্রী আবদুস সাত্তার হেরে গেছেন। 

মমতাকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন 
পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হওয়ার আগেই মমতাকে ফোন করে অভিনন্দন জানান। 
জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুর ১২টা নাগাদ মমতার কালীঘাটের বাড়িতে ফোন করে শুভেচ্ছা জানালে মমতা প্রত্যুত্তরে তাঁকে শোনান রবীন্দ্রনাথের গান, �আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি�। তিনি হাসিনাকে বলেন, �বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য একসঙ্গে কাজ করব। পরে বাড়ির সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের শেখ হাসিনার ফোন করার কথা জানিয়ে মমতা বলেন, �বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই বাংলা একসঙ্গে কাজ করবে। আমি আশা করি, আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উভয় দেশেরই সমৃদ্ধি ঘটবে।� তিনি আরও বলেন, �আমি বাংলাদেশের মানুষকেও আমার ভালোবাসা, শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই।� 

ফলাফল 
মোট আসন ২৯৪ 
তৃণমূল কংগ্রেস ১৮৫ 
কংগ্রেস ৪২ 
এসইউসিআই ০১ 
সিপিআইএম ৩৭ 
সিপিআই ০২ 
ফরোয়ার্ড ব্লক ১১ 
আরএসপি ০৭ 
সমাজবাদী পার্টি ০১ 
বিএসপি ০১ 
অন্যান্য ০৫ 
http://www.sonarbangladesh.com/newsdetails.php?ID=12970

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অবসানমমতার নেতৃত্বে তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের ঐতিহাসিক ভূমিধস জয়পার্থ মুখোপাধ্যায় কলকাতা 

তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম দুর্গের পতন হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাম সরকার বিধানসভার নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস ও জাতীয় কংগ্রেস জোট ভূমিধস বিজয় পেয়েছে। শুক্রবার এই রায় ঘোষণা করা হয়।
জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দলকে কার্যত গো-হারান হারিয়ে ২৭ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে চূড়ান্ত সাফল্য পেলেন দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের টালির চালের ঘরের বাসিন্দা মমতা বন্দ্যোপাধ্যার রাজ্যের মানুষের কাছে যার পরিচিতি শুধুই 'দিদি'। আর সেই মমতার পরিবর্তনের ডাকে কার্যত ভেসে গেল টানা অষ্টমবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার গঠনের স্বপ্নও। 
এবারের ছয় দফার নির্বাচনের শেষ দিনে বুথফেরত এক্সিটপোল সমীক্ষায় স্পষ্ট হয়েছিল ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের চেয়েও খারাপ ফল যাচ্ছে বামপন্থীদের। কিন্তু তা মানতে চাননি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। আর শুক্রবার সকাল থেকে ভোট 
গণনা পর্বে স্পষ্ট গত দু'বছরে আরো জনসমর্থন হারিয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। ২৯৪ আসনের রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস জোট দখল করেছে ২১৮টি আসন, যার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একাই পেয়েছে ১৮২টি। অর্থাৎ সংখ্যার বিচারে তৃণমূল কংগ্রেস একাই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। জোট হিসেবে জিতেছে বিধানসভার দুই-তৃতীয়াংশ আসন।
সে তুলনায় ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে জেতা ৯৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের দখলও ধরে রাখতে পারেনি শাসক জোট_ বামফ্রন্ট। বামফ্রন্ট জিতছে ৬৮টি আসনে। একক দল হিসেবে সিপিএম জিতছে মাত্র ৪৯টি আসনে। ২০০৬ বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা জিতেছিল ২৩৫টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস মাত্র ৩০টি। সংখ্যার বিচারে সিপিএমের প্রধান দুই শরিক দল_ ফরওয়ার্ড বস্নক ও আরএসপি জিতেছে ১২ এবং ৬টি আসনে। কার্যত মুছে গেছে সিপিআইসহ বামফ্রন্টের অন্য শরিক দলগুলো।
ইন্দ্রপতন বললেও কম বলা হয়, যা হয়েছে এবারের নির্বাচনে। ১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন যিনি, তিনি নির্বাচনে হেরেছেন। যাদবপুরে হেরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। হেরেছেন তার মন্ত্রিসভার ১৭ জন মন্ত্রী। যার মধ্যে অন্যতম শিল্পমন্ত্রী নিরূপম সেন, অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী দেবেশ দাস, শ্রমমন্ত্রী অনাদি সাহু, সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী আবদুস সাত্তার, পরিষদীয়মন্ত্রী শৈলেন দাশগুপ্ত, বনমন্ত্রী অনন্ত রায়, আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব। কলকাতার ১১টি আসনের সবকটিতেই জিতেছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা।
এছাড়া আগামী দিনে সরকার গঠনে যাদের প্রয়োজন মনে করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনয়ন দিয়েছিলেন, তারা সবাই জিতেছেন। জিতেছেন বণিকসভার সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল অমিত মিত্র। সাবেক মুখ্যসচিব মনীষ গুপ্ত, সাবেক প্রধান বিচারপতি নুরে আলম চৌধুরী থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির পুত্র অভিজিৎ মুখার্জি। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বেহলার দুই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন বিপুল ভোটে। তাপস রায়, সুব্রত বক্সি, মদন মিত্র, সুজিৎ বসুর মতো তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ ব্রিগেডের সঙ্গে জিতেছেন কলকাতার সাবেক মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়, রবি হাকিমের মতো নেত্রী ঘনিষ্ঠরাও।
ঐতিহাসিক এই জয়ে স্বভাবতই উল্লসিত তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো। রাজ্যের মানুষ তাকে মুখ্যমন্ত্রী নয়, তাদের নেত্রী, তাদের লোক হিসেবে মনে রাখবেন_ এমনটাই আশা করছেন তিনি। বিপুল ও নজিরবিহীন এ জয়ের জন্য মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং থেকে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। জয়ের পর এক সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ জয়কে মা-মাটি-মানুষের জয় আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ইতিহাস তৈরি করেছেন মানুষই। তিনি তাদের প্রণাম জানাচ্ছেন। তার কথায় 'এই জয় গণতন্ত্রের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের জয়। কারণ, ৩৪ বছর বাদে বাংলার মাটিতে মানুষ নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছেন।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে গণতন্ত্রের এ জয়কে মমতা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকেও উৎসর্গ করেছেন। তার আশ্বাস, 'রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করব। দলতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করব।'
পাশাপাশি পরাজিত মুখ্যমন্ত্রী এবং বামদের তরফে প্রচারের কা-ারি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখিই হননি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, এ ফলাফল অপ্রত্যাশিত। বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের নির্বাচকম-লীর রায় মাথা পেতে নিচ্ছে এবং বিধানসভায় দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক বিরোধী পক্ষের ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পরাজয়ের কারণগুলো চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট সংশোধনাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য ধারাবাহিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট, রাজ্যবাসীর কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।'
কিন্তু মুখে এ কথা বললেও ভোটের ফলে পরিষ্কার রাজ্যের মানুষ তা বিশ্বাস করেননি। উত্তরবঙ্গে মুখরক্ষা হলেও রাজ্যের অন্যত্র প্রায় ভরাডুবি হয়েছে বামফ্রন্টের। উত্তরবঙ্গে ৬৫টি আসনের মধ্যে বামেদের (২৪) চেয়ে বেশি আসন জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস (২৬)। মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলে এতদিন সিপিএমের একচেটিয়া প্রভাব ছিল। সেখানেও ১৪টি আসনে বামদের (৮) সঙ্গে টক্কর দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস (৬)। সংখ্যার বিচারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্য ভোট প্রায় ৪৯ শতাংশ, এতদিন যা ছিল বামফ্রন্টের। এবার বামফ্রন্টের প্রাপ্ত ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশে। জেলাওয়ারিতেও বামদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বামদুর্গ, বর্ধমানের ২৫টি আসনের মধ্যে সিপিএম জিতেছে মাত্র ১০টিতে, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে ১২টি আসন। কলকাতা লাগোয়ায় আরেক বামদুর্গ সীমান্তবর্তী উত্তর চবি্বশ পরগনাতেও এবার তৃণমূলের রমরমা। ৩০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ২৮টি, সিপিএম মাত্র ২টি। দক্ষিণ চবি্বশ পরগনার ৩১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ২৬টিতে, সিপিএম মাত্র ৩টিতে।
এই অবস্থায় 'আক্রান্ত' হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'কোনো রকম প্ররোচনার ফাঁছে পা না দিয়ে প্রতিটি এলাকায় দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে গ্রাম-মহল্লাতে সংগঠিত পরিবারের মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।' প্ররোচনায় পা না দিতে আবেদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সবমিলিয়ে নির্বাচনে অভূতপূর্ব ফলের পর এবার রাজনৈতিক সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে দু'পক্ষই।
 
( লেখাটি পড়েছেন ১২০০ জন )

÷÷î± ¿ß à Îå±é Ã÷¥aÏüö± áëÿËõò·
ýÒɱ
ò±
汿ò ò±

 


মমতার পরে কে
http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy?p=14desh2.htm

পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ

অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি

র্নিং শোজ দ্য ডে।

উদ্বেগের প্রথম একটি ঘণ্টা স্রেফ পার হওয়ার অপেক্ষা। তার পর ওই আপ্তবাক্যে ভরসা রেখেই মেজাজ শরিফ রেল মন্ত্রকের।

আটটায় গণনা শুরু। সাড়ে আটটাতেই মন্ত্রকে পৌঁছে যান অধিকাংশ বাঙালি আমলারা। একতরফা লড়াইয়ের প্রথম প্রহরের টেনশন কেটে যেতেই রেলমন্ত্রীর দফতরে আসতে শুরু করে অভিনন্দন বার্তা। শুরু হয় মুখমিষ্টি।

রেল মন্ত্রকের করিডরে রাখা ফ্রেমে বাঁধানো মহাকরণের ছবিকে পাখির চোখ বানিয়ে দ্বিতীয় বার রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মমতা। আজ 'দিদি'র সেই স্বপ্নপূরণের আনন্দে যেন শরিক হলেন লিফ্‌টমম্যান থেকে পদস্থ রেল অফিসারেরা। রীতিমতো উৎসবে মাতলেন।

আজকের এই সাফল্যের পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ নেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাই রেলমন্ত্রকের অলিন্দেও একটাই গুঞ্জন— এর পর কে? কে বসতে চলেছেন রেলমন্ত্রীর তখ্‌তে?

তালিকার প্রথমেই রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, নেত্রীর অত্যন্ত 'কাছের', 'ভরসার' ওই সাংসদই আগামী রেলমন্ত্রী হতে চলেছেন। দৌড়ে রয়েছেন তৃণমূলের আর এক সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, রেলমন্ত্রী হওয়ার দৌড় একসঙ্গে শুরু করেও শেষ রাউণ্ডে মুকুলের থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ।

তবে মমতা আজ যতই কলকাতায় 'রেলমন্ত্রক তৃণমূলের হাতে থাকবে' বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিন, পরের রেলমন্ত্রী তৃণমূল থেকেই হবে কি না তা নিয়ে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে সংশয়ের মেঘ জমেছে। একাংশের ধারণা, মমতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পরে রেল মন্ত্রক নিজেদের হাতে নেওয়ার জন্য ঝাঁপাতে পারে কংগ্রেস।

কিন্তু কেন?

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে রেলমন্ত্রকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকটি দলের হাতে নেই। কেন্দ্রে শাসক দলের অন্যতম হাতিয়ার রেল মন্ত্রক গত সাত বছর ধরে শরিক দলের হাতে থাকায় কংগ্রেসের একাংশ বেশ ক্ষুব্ধ। মন্ত্রক জানিয়েছে, সুরেশ কলমডী (১৯৯৬-৯৭) হলেন শেষ ব্যক্তি, যিনি কংগ্রেস নেতা হিসেবে রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পর থেকে এনডিএ বা ইউপি-এ সরকারে যেই থাকুক, রেল মন্ত্রকের মতো জনপ্রিয় মন্ত্রকটি লালুপ্রসাদ-নীতীশকুমার-রামবিলাস পাসোয়ানের মতো শরিকদের হাত ঘুরে এখন এসেছে আর এক শরিক দল তৃণমূলের হাতে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রকটি এখন নিজের হাতে নিতে মরিয়া কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ।

কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন। তাই কংগ্রেস শিবিরের একটি বড় অংশ চাইছে উত্তরপ্রদেশের বড়মাপের কোনও সংখ্যালঘু নেতাকে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে সে রাজ্যের মানুষের কাছে বার্তা দিতে। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে উত্তরপ্রদেশের জমি ধরতে এই পদক্ষেপ কংগ্রেস করতে পারে বলে মনে করছে রেল মন্ত্রক। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক অতীতে দাক্ষিণাত্য থেকে কোনও রেলমন্ত্রী না হওয়ায় নাম উঠে এসেছে দক্ষিণের বেশ কিছু কংগ্রেস নেতারও।

কংগ্রেস যদি সত্যিই রেলমন্ত্রক নিজেদের হাতে নেয়, তা হলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে ঘিরে যে প্রবল অনিশ্চিয়তা তৈরি হবে এ বিষয়ে মন্ত্রকের বাঙালি আমলাদের সন্দেহ নেই। মমতা দ্বিতীয় বার রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় পরে রাজ্যের ভাণ্ডারে এসেছে একের পর এক রেলপ্রকল্প। ১৬টি কারখানা, দিল্লির ধাঁচে গোটা কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে মেট্রোর জাল বিছিয়ে দেওয়ার মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। চলতি বাজেটে শুধু মেট্রোর প্রকল্পগুলোর জন্যই মমতা প্রায় ছ'হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন।

তাই এখন যদি মমতা রেল মন্ত্রক কংগ্রেসকে ফিরিয়ে দেন, তা হলে রাজ্যের প্রকল্পগুলির কাজ বাধাপ্রাপ্ত হবে বলেই মনে করছে মন্ত্রক। পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তে যদি অন্য রাজ্য থেকে কেউ রেলমন্ত্রী হন, সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবে তাঁর সমস্ত মনোযোগ থাকবে নিজের রাজ্যের উপর। রেলমন্ত্রীর 'নেকনজর' থেকে বঞ্চিত হবে পশ্চিমবঙ্গ। সে ক্ষেত্রে মমতার ঘোষিত প্রকল্পগুলির রূপায়ণের গতি শ্লথ হয়ে পড়বে, আশঙ্কা রেল মন্ত্রকের। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য বিষয়টি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল। তাই শেষ পর্যন্ত মমতা রেল মন্ত্রক ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেন কি না, তা দেখার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করছে রাজনৈতিক মহল।

তবে আজ পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু এই দুই রাজ্যে ভোটের ফলের পরে দর কষাকষিতে অনেক ভাল জায়গায় চলে গিয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে আগামী সপ্তাহে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য মমতা দিল্লি আসবেন বলে জানিয়েছে তৃণমূল শিবির। সে সময়ে রেল মন্ত্রক ছেড়ে দেওয়ার জন্য সনিয়া-মনমোহন চাপ দেবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কংগ্রেসের একটি বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। রেলমন্ত্রিত্ব যদি মমতা ছেড়ে দিতে রাজি হন, সে ক্ষেত্রে রেলেই প্রতিমন্ত্রীর একটি পদ এবং সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভায় একটি বা দু'টি পূর্ণমন্ত্রীর পদ তৃণমূলের জন্য ছাড়তে পারে কংগ্রেস। বর্তমানে তৃণমূলের ছ'জন সাংসদ মনমোহনের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু পূর্ণমন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁদের কাজ করার অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল নয়। বিষয়টি জানেন মমতাও।

তাই কংগ্রেস যদি শুধু পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির তদ্বির করার জন্য রেলে একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ দিতে চায়— সে ক্ষেত্রে কী করবেন মমতা? তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, রাজ্যের জন্য ঘোষিত প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে কিন্তু পূর্ণমন্ত্রীই প্রয়োজন।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, দশ থেকে বারো দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটাতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। রেল মন্ত্রকের দোতলার ২৩৯ নম্বর ঘরে শেষ পর্যন্ত কার অভিষেক হবে, তা জানা যাবে তখনই।

প্রণবের সঙ্গে বৈঠকে আজ মমতা

সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা

শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি

রাজ্যে 'চমকপ্রদ' সাফল্যের পরে কংগ্রেসের সামনে প্রশ্ন একটাই। তারা কি যোগ দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারে?

বিষয়টি নিয়ে আজ, শনিবার মমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বৈঠক হবে কলকাতায়। প্রণববাবুই এ কথা জানিয়েছেন। ভোটের ফল প্রকাশ চলার মধ্যেই শুক্রবার দুপুরে প্রণববাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয় তৃণমূল নেত্রীর। তখনই মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে মমতা প্রণববাবুর সঙ্গে কথা বলতে চান। প্রণববাবু তখনই মমতাকে জানান, কলকাতায় গিয়ে এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করবেন। পরে এ দিন সন্ধ্যায় সনিয়া-মনমোহনের উপস্থিতিতে কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন প্রণববাবু। মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "আগামিকাল কলকাতায় যাচ্ছি। মমতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব। কংগ্রেস বিধায়কদের মতও জানব। তার পর সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

শনিবার মমতার সঙ্গে বৈঠকের আগে রাজ্যে নির্বাচিত দলীয় বিধায়ক এবং প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে তাদের মত জানতে চাওয়া হবে। তার পরে মমতার সঙ্গে কথা বলার পরই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বিষয়টি যে হাইকম্যাণ্ডই চূড়ান্ত করবে, তা প্রণববাবুর পাশাপাশি জানিয়েছেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং দলে পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদও। শনিবার প্রণববাবুর সঙ্গে তিনিও কলকাতায় আসছেন। শাকিল এ দিন বলেন, "আমরা জয়ী কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করে হাইকম্যাণ্ডকে জানাব। কারণ, সরকারে যোগ দেওয়া, না-দেওয়া হাইকম্যাণ্ডই চূড়ান্ত করবে।"

রাজ্য নেতৃত্ব কী ভাবছে? প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, "তৃণমূলের সঙ্গে ইতিবাচক জোটপ্রক্রিয়ায় কংগ্রেস সর্বতো ভাবে সামিল। আমরা রাজ্যের মানুষের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে ও রাজ্যবাসীর কল্যাণের জন্যই তো জোট করেছি। তবে মমতার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের যোগ দেওয়ার বিষয়টি অনেক বেশি করে নির্ভর করছে তৃণমূলের উপর। আর এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ড।"

কংগ্রেসের সদ্য বিজয়ীদের অনেকেই কিন্তু মনে করেন, মমতার মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া উচিত। দলের এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, "একে তো তৃণমূলের বিপুল জনপ্রিয়তার পাশে রাজ্যে আমাদের দলের ধার-ভার কম। তার উপর মন্ত্রিসভার বাইরে থাকাটা দলের অনেক কর্মী-সমর্থক মেনে নেবে না। ৩৫ বছর ধরে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা ক্ষমতা থেকে দূরে। আজ সিপিএমের সরকারকে হটানোর পরে কে আর নিজেকে বঞ্চিত রাখতে চায়! কারণ, সরকারে থাকলে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের কাজেও তিনি (মমতা) সহযোগিতা করতে পারেন।"

জয়ী বিধায়কদের কয়েক জনের বক্তব্য, "কেন্দ্রে যদি কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল সরকারে থাকতে পারে, এখানে মমতার নেতৃত্বে নতুন সরকারে আমাদের থাকতে বাধা কোথায়?"

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ কিন্তু এখনও মনে করেন, সরকারে যোগ না দিলে সেটা আখেরে দলের পক্ষে ভালই হবে। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমত, তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। কংগ্রেসের সমর্থনের ওপর তাঁর সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল নয়। ফলে তিনি কংগ্রেসকে ভাল মন্ত্রক দিতে রাজি হবেন, এমন আশা প্রায় নেই। বরং সে দিক থেকে তামিলনাড়ু মডেল অনুসরণ করা ভাল। সেখানে গত পাঁচ বছর ধরে বাইরে থেকে ডিএমকে সরকারকে সমর্থন জুগিয়েছে কংগ্রেস। এই অংশের আরও যুক্তি, সরকারে সামিল না হলে তার ব্যর্থতার দায় নিতে হয় না। বরং ভবিষ্যতে তৃণমূল সরকার জনপ্রিয়তা হারালে বাম-বিরোধী ভোটের বড় অংশ ফিরে পেতে পারে কংগ্রেস।

নেতৃত্বের অন্য অংশ অবশ্য মমতার প্রস্তাব দেখে নিতে চাইছেন। জেনে নিতে চাইছেন রাজ্য নেতাদের মতও। তবে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যে বড় 'সমস্যা' হবে না, সেটা বোঝাতে গিয়ে শাকিল বলেছেন, "কংগ্রেসের এই বিপুল জয় (৬৭ আসনের মধ্যে ৪২টিতে জয়) যেমন তৃণমূলের জয়, তৃণমূলের বিপুল আসন লাভও তেমনি কংগ্রেসের জয়। এটাই জোটের রসায়ন। তাই মন্ত্রিসভায় যোগদান নিয়ে ফয়সালা করতে সমস্যা হবে না।"


কেরল

চার আসন বাদ সাধল ভি এসের 'ইতিহাসে'

সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা

মাত্র চারটে আসন! তা-ও সেই চারটের ব্যবধান ১৭৩, ৪০৫, ৬৪৩ আর ৬৭৬! ইতিহাস থেকে এ টুকু দূরত্বে থেমে গেলেন ভেলিক্কাকাথু শঙ্করন অচ্যুতানন্দন!

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই কেরলেও ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হল বামেদের। কিন্তু বঙ্গ ব্রিগেডের মতো পর্যুদস্ত হয়ে নয়। মাথা উঁচু করে! রাজ্যে ১৪০ আসনের বিধানসভায় ৭২টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় এল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোট। যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা 'ম্যাজিক ফিগার' ৭১-এর চেয়ে মাত্র একটি বেশি! কেরলে চার দশকের ইতিহাসে এমন সুতোয় ঝুলে কোনও সরকারের অধিষ্ঠান হয়নি! সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের দখলে ৬৮টি আসন। তা-ও যে চারটি আসনের জন্য পরাজয়, প্রত্যেকটিতেই হার এক হাজারেরও কম ভোটে! পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের পরম্পরাকে প্রায় ঠেকিয়ে দিয়ে ইতিহাস গড়ার মুখ থেকে ফিরে আসার পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এ বিজয়রাঘবন আনন্দবাজারকে বলছেন, "এটা হার নয়! টাই!"

লোকসভা ভোটে রাজ্যে ২০টির মধ্যে মাত্র ৪টি আসন পাওয়া এলডিএফ প্রকৃত অর্থেই এই দক্ষিণী রাজ্যে 'ঘুরে দাঁড়াতে' পেরেছে। সিপিএম একক ভাবে রাজ্যে বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা পেয়েছে। ৯৩টি আসনে লড়াই করে তারা জিতেছে ৪৫টি, যেখানে ইউডিএফের হয়ে ৮২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস পেয়েছে ৩৮টি আসন। মুখ্যমন্ত্রী ভি এস মাল্লমপুঝা আসন থেকে ২৩ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গের সতীর্থের মতো অমর্যাদার বিদায় তাঁকে নিতে হয়নি। দক্ষিণী রাজনীতির পরিচিত প্রথা মেনে বিরোধী শিবির থেকে শরিক ভাঙিয়ে সরকার গড়ার চেষ্টা করা হবে না বলে শুক্রবারই পরিষ্কার করে দিয়েছে সিপিএম। ভি এস আজ বলেছেন, "এলডিএফ সরকার যে সত্যিই সাধারণ ও গরিব মানুষের জন্য কাজ করেছিল, মানুষের রায়ই তার স্বীকৃতি দিয়েছে! এটাই আমাদের জয়!" দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভি এসের 'আপসহীন' লড়াই-ই যে এলডিএফকে 'ঘুরে দাঁড়াতে' সাহায্য করল, তা নিয়ে সিপিএমে সংশয় নেই। ভি এস মন্ত্রিসভার সব নামী মন্ত্র কংগ্রেসের কাজ এখন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করা। দৌড়ে আছেন তিন জন— উম্মেন চাণ্ডি, রমেশ চেন্নিথালা ও করুণাকরন-পুত্র মুরলীধরন। এআইসিসি-র তরফে কেরলের ভারপ্রাপ্ত নেতা মধুসূদন মিস্ত্রিকে বলতে হয়েছে, "কেন এমন হল, পর্যালোচনা হবে।" যা সচরাচর পরাজিত শিবির বলে! কেরল সিপিএমের অভ্যন্তরীণ হিসাব ছিল ৭৫টি আসন জয়ের। থামতে হয়েছে ৬৮টিতে। পরাজয়ে এক বন্ধনীতে থেকেও এ কে জি সেন্টার দেখিয়েছে, এই প্রশ্নেও তারা আলিমুদ্দিনের চেয়ে এগিয়ে!

উন্নয়ন আর সুশাসনই মন্ত্র মমতার

অনিন্দ্য জানা • কলকাতা

সুশাসন-গণতন্ত্র-উন্নয়ন। এই হতে চলেছে 'মুখ্যমন্ত্রী' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের নতুন সরকারের মূল সুর।

শুক্রবার 'ঐতিহাসিক' জয়ের পর আনন্দবাজারকে মমতা আরও জানিয়েছেন, নয়া জমি-নীতি তৈরি করবেন তিনি। এবং সেই ব্যাপারে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকেও অনুরোধ করবেন এখনও দেশের রেলমন্ত্রী মমতা। তাঁর কথায়, "কেন্দ্রীয় সরকারকে আমি অনুরোধ করব, যাতে একটি সুসংহত জমি-নীতি তৈরি হয়।" মমতার আরও বক্তব্য, "উন্নয়নের মাধ্যমে এ রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান করতে চাই আমি। আমি চাই, কৃষি এবং শিল্প পাশাপাশি থাকুক।"

জানিয়েছেন, তিনি গুরুত্ব দেবেন তরুণ প্রজন্মকে। বলেছেন, "নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দেব। গবেষণা হোক বা চাকরি। আমরা কর্মসংস্থান তৈরি করব। নতুন চাকরি সৃষ্টি করব। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েদের রাজ্য ছেড়ে কোথাও চলে না-যেতে হয়।"

কে কোথায় দাঁড়িয়ে

মোট আসন ২৯৪

তৃণমূল জোট ২২৭
তৃণমূল 
১৮৪
কংগ্রেস 
৪২
এসইউসি 

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা 
নির্দল 

বামফ্রন্ট ৬২
সিপিএম 
৪০
ফব 
১১
আরএসপি 

সিপিআই 

সমাজবাদী পার্টি 
ডিএসপি 

বাংলার ভাবী মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানিয়ে রাখছেন যে, তিনি বিরোধীদের তরফে 'সহযোগিতা' আশা করেন। জানাচ্ছেন, সরকারে যোগ দিতে তিনি আহ্বান করছেন জোটসঙ্গী কংগ্রেস এবং এসইউসিআই-কেও। তাঁর কথায়, "এটা তো একটা যৌথ পরিবারের মতো। আমরা সকলকে নিয়ে কাজ করব। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।" আগেই বলেছিলেন, নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবে ১৮ তারিখ। এদিন নির্দিষ্ট করে দিনক্ষণ না-বললেও মমতা জানিয়েছেন, আর পাঁচ-ছ'দিন পরই শপথ নেওয়া হবে।

তার মধ্যেই অবশ্য তিনি একবার দিল্লি যাবেন। যাবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং ইউপিএ চেয়ারপাসর্ন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে। এবং রেলমন্ত্রিত্ব থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিতে। আশা করা যায়, সেই সময়েই রেল দফতর নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হবে মমতার। আজ, শনিবার দিনভর অবশ্য কালীঘাটের বাড়িতেই থাকছেন বিজয়িনী। মানুষের সঙ্গে দফায় দফায় দেখা করতে। যেমনটা চলেছে এদিন রাত পর্যন্ত। কালীঘাটের বাড়িতে কার্যত দুর্গাপুজোর ভিড়। রবিবার দলের নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন মমতা। সেখানেই তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিষদীয় দলনেত্রী নির্বাচিত করার কথা। যা তাঁকে আরও একধাপ এগিয়ে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দিকে।

বাংলার ভাবী মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য জানাচ্ছেন, রেল দফতর তৃণমূল নিজেদের হাতেই রাখতে চায়। "ওই দফতরটা আমরা রাখতে চাই। সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হবে। আমাদের মধ্যে থেকে কে রেলমন্ত্রী হবেন, সেটা আমরা নিজেরা বসে ঠিক করে নেব। কিন্তু আমরা তো ইউপিএ সরকারে ওই একটাই ক্যাবিনেট মন্ত্রিত্ব নিয়েছিলাম। সেটাই রাখতে চাই", বিশাল জয়ের পরেও যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই বলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম জোটসঙ্গী তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। পাশাপাশিই বলেছেন, "আমরা কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে সর্বতো ভাবে সমর্থন করব। বরাবর যেমন করে এসেছি।"

এই সমস্ত কথাই নিজের প্রচারে টুকরো-টুকরো বলেছেন মমতা। কিন্তু এদিন বিশাল জয়ের পর তাঁর কথাগুলো আর নিছক 'প্রচার' নয়। 'ঘোষণা'।

যে 'ঘোষণা'য় মমতা যথেষ্ট প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি 'প্রতিহিংসাপরায়ণ' নন। তাঁর কথায়, "যিনি ভাল কাজ করবেন, আমি কখনও তাঁকে বলির পাঁঠা করব না। আমি ওই রকম নই। তবে যদি কেউ বাধা দেয় ঘুঘুর বাসা করে রাখে, তাকে তো পাল্টাতেই হবে! কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে!'' যাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, "সরকারি কর্মচারীরা আমায় চোখ বুজে সাহায্য করবেন। কাজটা বুঝতে আমার বড়জোর সাতদিন সময় লাগবে। একবার বুঝে নিতে দিন। কোথাও কোনও অসুবিধা হবে না। মনে রাখবেন, আমি ১৪ লক্ষ কর্মীর পরিবার নিয়ে রেল দফতর চালিয়ে এসেছি। এখনও চালাচ্ছি।"

বস্তুত, 'প্রশাসক' হিসেবে তাঁর গত দেড় বছরের রেলমন্ত্রিত্বকেই সামনে রেখেছেন মমতা। বলেছেন, "রেলকে হাতিয়ার করে আমি বাংলায় গত দেড় বছরে যা উন্নয়ন করেছি, তা সিপিএম ৩৪ বছরেও করতে পারেনি। স্বাধীনতার পর এই প্রথম লাভ করেছে রেল। গোটা দেশে রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়েছে। আমি রেলে যা করে দিয়ে যাচ্ছি, তাতে আগামী ২০ বছর পরেও ভারতীয় রেল হাসবে।" এই 'যাচ্ছি' শব্দতেই সম্ভবত শুরু হয়ে গিয়েছে মমতার মহাকরণের দিকে যাত্রা। যদিও তিনি বলছেন, আন্তরিক ভাবেই বলছেন, "এখনও 'রেলমন্ত্রী' সম্বোধনের চেয়ে 'মমতা' সম্বোধনেই আমি অনেক বেশি খুশি হই। আমার চেয়ারের প্রতি কোনও মোহ নেই। মানুষের প্রতি মোহ আছে অবশ্য। রাজ্যের মানুষের ইচ্ছায় আমায় ওই চেয়ারটা নিতে হবে। কারণ, মানুষের ইচ্ছাকে সবসময় মর্যাদা দিতে হয়।"

তবে একইসঙ্গে তিনি জানেন, রাজ্য চালানোর কাজটা কঠিন। চ্যালেঞ্জেরও। ফলে বলছেন, "আমি জানি চ্যালেঞ্জটা টাফ! কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আছে, মানুষের আশীর্বাদ-দোয়া নিয়ে চলতে পারব। কোনও অসুবিধা হবে না।" বস্তুত, সরকারে আসার পর মমতার কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে রাজ্যের কোষাগার। যে কারণে তাঁকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের উপর খানিকটা নির্ভর করতে হবে। রাজ্য কোষাগারের দারিদ্রের কথা বলতে বলতেই মমতা বলেছেন, "আমি কিন্তু প্রথম দিনই আমার ছবি এঁকে পাওয়া টাকা থেকে এক কোটি এক টাকা রাজ্য সরকারের কোষাগারে জমা দেব। সকলে মিলে তো চালাতে হবে!"

বস্তুত, রাজ্যের 'প্রশাসক' হওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন মমতা। বৃহস্পতিবারই তিনি প্রারক্তন ভূমি-আমলা দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে এনে প্রায় একঘণ্টা তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিরোধী দলনেতা (এখন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে বিধানসভার নথিপত্র চেয়ে এনে খুঁটিয়ে পড়তে শুরু করেছেন। কারণ, তাঁর কথায়, "আমায় তো দেখতে হবে, বিধানসভাটা কী করে চলে! আমি তো বরাবর লোকসভা করে এসেছি। এবারই প্রথম বিধানসভায় যাব। সংসদের ব্যাপারটা অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ। এখানে যে ওরা (সিসিএম) এতদিনে কী করে রেখেছে কে জানে! সেগুলো সব ভাল করে দেখতে হবে।"

মুখ্যমন্ত্রী মমতা কি মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন শান্তির লক্ষ্যে?

জবাব, "আমার ধারণা, ভোটে অংশ নিয়ে জঙ্গলমহলের মানুষ তাদের একটা বার্তা দিয়েছেন। আমি চাই, ওরা রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরে আসুক। অস্ত্র ছাড়ুক। হিংসা ছাড়ুক। ওরা তো এবার ভোটেও দাঁড়িয়েছিল (মমতার ইঙ্গিত অবশ্যই জনসাধারণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতর ভোট লড়ার দিকে)। এটা তো ভাল লক্ষ্মণ! আমি লালগড়ে যাব। আগেও গিয়েছিলাম। আবার যাব। জঙ্গলমহলের মানুষের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাতে। পাহাড়েও যাব। আমি তো বলেইছিলাম, পাহাড় থেকে জঙ্গলমহলের সমস্যার সমাধান ইচ্ছে থাকলেই করা যায়। আমাদের সরকারও করবে।" একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে মাওবাদী-সমস্যা মোকাবিলা নিয়ে কথা বলবেন।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর জঙ্গলমহলে যৌথবাহিনী থাকবে কি না, স্বভাবতই সেই প্রশ্ন করা গেল। মমতা বললেন, "আমি চিদম্বরম'জির সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা শান্তির মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করব। কারণ আমি কোথাও কোনও রক্তপাত চাই না।"

দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশক পর ক্ষমতায় এসেছে বিরোধীরা। 'প্রতিহিংসার রাজনীতি' শুরু হবে না তো? বিশেষত, যে ভয়টা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছেন সিপিএমের একাংশ?

মমতার নিশ্চিন্ত জবাব, "তৃণমূলকে আমি নিয়ন্ত্রণ করে নেব। ওটা নিয়ে আমার কোনও চিন্তা নেই। কিন্তু সিপিএমের ভিতরেও তো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে! ওরা তো এ বার হতাশ হয়ে নিজেদের মধ্যে মারপিট করতে শুরু করবে। এখন অবশ্য সেটাও আমাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে (হাসি)।"

বদলের ঝড়ে ভাঙল তিন দশকের দুর্গ

অনিন্দ্য জানা • কলকাতা

ল অবশেষে!

টানা চৌত্রিশ বছরের কমিউনিস্ট-অচলায়তনের অবসান ঘটল পশ্চিমবঙ্গে।

তিন বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজ্যে যে 'পরিবর্তনের' ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভা-পুরসভা-বিধানসভা উপনির্বাচন পেরিয়ে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হল শুক্রবার। যে মহিলাকে একদা মহাকরণ থেকে চুলের মুঠি ধরে বার করেছিল পুলিশ, তাঁর হাতেই এল মহাকরণের অধিকার।

এবং এল কী ভাবে!

সাংগঠনিক দিক দিয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএমকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে! রাজ্য বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল-কংগ্রেসের বিরোধী জোট (এসইউসিআই-সহ) পেয়েছে ২২৭টি আসন। সিপিএম-সহ বামফ্রন্ট টিমটিম করছে ৬২টি আসনে!

কার্যত অবিসংবাদী কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যের এই 'পতনকে' পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যম তুলনা করেছে ২২ বছর আগের বার্লিন দেওয়ালের পতনের সঙ্গে। আর এ রাজ্যের মানুষ বর্ণনা করেছেন 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' বলে! রাজ্যের রং যেখানে বদলে গিয়েছে সবুজে। হারিয়ে গিয়েছে সাড়ে তিন দশকের লাল রং। এবং সেই 'বদলের' সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন রাজ্যের সিংহভাগ মানুষ।

আসলে তাঁরা একাত্ম হয়ে গিয়েছেন মমতার সঙ্গে। একলা এক নারী এক বিপুলায়তন জরদ্গবের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন— এই আপাত-অবিশ্বাস্য ঘটনাকে মর্যাদা দিতে চেয়েছে জনতা। নইলে এমন এমন 'অভাবনীয়' আসনে তৃণমূল তথা জোটপ্রার্থীরা জিতেছেন, যা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য। তবুও তাঁরা জিতেছেন। কারণ, জনতা কোনও ব্যক্তিবিশেষকে দেখেনি। তারা প্রতীক দেখেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, মমতাকে দেখেছে। ফলে সরাসরি ভোটে না-দাঁড়ালেও ফলিত স্তরে বিরোধীদের তরফে ২৯৪টি আসনে প্রার্থী ছিলেন মমতাই!

এই পরিবর্তন সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করে ছেড়েছে, রাজ্যের ধনী এবং দরিদ্র, নগর এবং গ্রাম— উভয় অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মমতার হাতেই রাজ্যের শাসনভার দিতে চেয়েছেন। মমতাকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়ে শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে যে 'নেতিবাচক' রায়দানের ধারা পঞ্চায়েত ভোটে শুরু হয়েছিল, তা চূড়ান্ত হল মমতার এই বিপুল জয়ে (মমতা নিজে অবশ্য একে 'ইতিবাচক' রায় বলেই দেখতে চান)। যে ফলাফলে সিপিএম একক শক্তি হিসেবে নেমে গিয়েছে কংগ্রেসেরও নীচে! তৃতীয় স্থানে!

গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে মাত্রই ৯৯টি আসনে এগিয়েছিল বামেরা। তারপর গত দু'বছরে এমনকিছু ঘটেনি, যার ফলে তারা সেখান থেকে কোনও 'উন্নতি' করতে পারে। বরং ঘটেছে নেতাইয়ের মতো ঘটনা। দ্বিতীয়ত, এবার নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারিতে নিজের ভোট নিজেরা দিতে পেরেছেন সাধারণ মানুষ। বিস্ফোরণ ঘটেছে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রে!

বস্তুত, এই বিধানসভা ভোটে রাজ্যে শাসনক্ষমতার যে পরিবর্তন হল, তা যেমন 'ঐতিহাসিক', তেমনই নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হল যে, রাজ্যে বিরোধী শক্তির মূল চালিকাশক্তি ছিলেন মমতাই। এবং এই জায়গাটাতেই মমতা পিছনে ফেলে দিয়েছেন অতীতে কংগ্রেস-ত্যাগী নেতা জি কে মুপানর, শরদরাও পওয়ার, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এমনকী, প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও! যাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে সাফল্য পাননি। সেখানে মমতা মাত্র ১৩ বছরের মাথায় তাঁর সমর্থনে কংগ্রেসের সিংহভাগ ভোট 'সুইং' করিয়ে নিয়েছেন। তাঁর উপর ভর করেই লোকসভায় সাফল্য পেয়েছিল কংগ্রেস এবং এসইউসিআই। যে সাফল্য কংগ্রেস পেল বিধানসভা ভোটেও (এসইউসিআইয়ের আসন অবশ্য একটি কমে গেল)। যার ফলে প্রমাণিত হল যে, দলের একাংশের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েও মমতার শর্ত নিঃশর্ত ভাবে মেনে নিয়ে তাঁর সঙ্গে জোট গড়ে ভুল করেননি বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রণববাবু। তিনি 'বাস্তবতাকে' গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যেমন দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীও। যে কারণে এ দিনও প্রণববাবু বলেছেন, "অবশেষে এটা প্রমাণ হল যে, জোট গড়ার সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিল!"

কয়েকটি জেলায় কংগ্রেস 'সঠিক' জোট না-গড়ায় তিনি যে সামান্য 'ক্ষুণ্ণ', তা গোপন করেননি মমতা। তাঁর কথায়, "আমরা কোথাও কোনও জোট-বিরোধী কাজ করিনি। ওদের আসন আরও বাড়ত। সে ক্ষেত্রে আমি খুশি হতাম।"

কংগ্রেস তো ভাল ফল করেছেই, নজিরবিহীন ফলাফল করেছে তৃণমূলও (মমতা নিজে যাকে আগাগোড়া বলছিলেন 'সুনামি')। বিধানসভা ভোটে প্রধান দুই যুযুধান তৃণমূল এবং সিপিএমের মধ্যে আসনের ফারাক আসমান-জমিন। মমতার তৃণমূল একাই পেয়েছে ১৮৪টি আসন। আর মমতার সঙ্গে জোট বেঁধে রাজ্যে নজিরবিহীন সাফল্য পেয়েছে কংগ্রেস। তারা পেয়েছে ৪২টি আসন। সেখানে সিপিএম পেয়েছে মাত্র ৪০টি আসন! কংগ্রেসের চেয়েও দু'টি আসন কম! তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে তৃতীয় স্থানে! পাঁচবছর আগের বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ২৩৫টি আসন। সিপিএম একাই ছিল ১৭৬। ভূমিশয্যা নিয়েছিল তৃণমূল। সে বার অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট ছিল না। বিপুল জয় পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, "আমরা ২৩৫। ওরা ৩০। আমাদের কে রুখবে?"

সম্ভবত তখন থেকেই সিপিএম তথা মুখ্যমন্ত্রীর অধোগমন শুরু। যার বৃত্ত সম্পূর্ণ হল এ দিন, যখন যাদবপুরে নিজের কেন্দ্রে রাজনীতির ময়দানে একেবারে আনকোরা মুখ, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব মণীশ গুপ্তের কাছে প্রায় ১৭ হাজার ভোটে হারতে হল তাঁকে! পরাজিত সেনাপতি বিরোধী নেত্রী সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি। হেরে গিয়ে তিনি যথেষ্ট 'বিহ্বল'। বলেছেন, "বুঝতে পারিনি!" আর তাঁর দল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মমতাকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানানোর প্রশ্নে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছেন, "যাঁরা হেরে গিয়েছেন, তাঁদের যেমন সমবেদনা জানানোর নেই, তেমনই যাঁরা জিতেছেন, তাঁদের নিয়ে উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করারও কিছু নেই!"

জয়ী মমতা অবশ্য যথেষ্ট পরিশীলিত ভাবে বলেছেন, তিনি শুধু মানুষের শুভেচ্ছা কামনা করেন। অন্য কারও নয়। আর আপাতত 'তদারকি' মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, "উনি এবং ওঁর পরিবারের প্রতি আমার শুভকামনা রইল। ওঁরা দীর্ঘজীবী হোন। আমি ওঁদের সমর্থন এবং সহযোগিতা কামনা করি।" এর মধ্যেই মমতাকে একের পর এক ফোন করেছেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। কিন্তু পাম অ্যাভিনিউ থেকে কালীঘাটে অভিনন্দন সূচক ফোন যাওয়ার কোনও খবর নেই।

সম্পূর্ণ ফল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা না-করেই এ দিন দুপুরে রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে আসেন বুদ্ধবাবু। বেলা ১টা নাগাদ রাজভবনে প্রবেশ করে তাঁর কনভয়। পিছনের গাড়িতে আপ্ত-সহায়ক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। তবে অতীতের মতো এ দিন বুদ্ধবাবুর আগমনকে ঘিরে পুলিশ এবং সংবাদ-মাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়া পথচারীদের মধ্যে কোনও উৎসাহ দেখা যায়নি। দুপুর ১টার কিছু পরে রাজভবন ছেড়ে যান বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধবাবুর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে সাংবিধানিক প্রথা মেনে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী শপথ নেওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁকেই কাজ চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।

তার প্রায় ছ'ঘন্টা পর রাজভবনে আসেন ভাবী মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রধান ফটকের বাইরেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি। সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় ও বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উৎসুক পথচারীদের জোড়হাতে নমস্কার করে, ড্রাইভওয়ের নুড়িপাথর হেঁটে পেরিয়েই মমতা ঢোকেন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে। পরে তিনি বলেন, "এটা একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎকার। উনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। জেতার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।" শপথ নেওয়া ইত্যাদি কোনও বিষয়ে কথা হয়নি বলেই জানিয়েছেন মমতা।

এর আগেও মমতা বহুবার রাজভবনে এসেছেন। বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আলোচনা করতেও তিনি এসেছিলেন একবার। সিঙ্গুর-সমস্যার সমাধানে সেই আলোচনা অবশ্য শেষপর্যন্ত কার্যকরী হয়নি। তবে মমতাকে মহাকরণের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে সেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি-আন্দোলনই। সেই পঞ্চায়েত ভোট থেকেই জমি-আন্দোলন মমতাকে তাঁর ঈপ্সিত ফল দিতে শুরু করেছিল। বিধানসভা ভোটে গিয়ে যা পূর্ণতা পেল।

মমতা-ঝড়ে উড়ে গিয়েছেন বুদ্ধবাবু তো বটেই, নিরুপম সেন, অসীম দাশগুপ্ত, গৌতম দেব, অশোক ভট্টাচার্য, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, সুদর্শন রায়চৌধুরীর মতো মন্ত্রীরাও। জিতেছেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, সুশান্ত ঘোষ, সূর্যকান্ত মিশ্র, আনুসুর রহমানের মতো কতিপয় মন্ত্রী। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, বিরোধী দলনেতা কে হবেন, তা নিয়েও বিপাকে সিপিএম। এমন বিপর্যয়ের পর শাসক শিবিরে অবশ্যম্ভাবী ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। যার ফলে শুরু হয়েছে দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালা। সরাসরি বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন সিপিএমের ডাকাবুকো নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। শরিকরাও তাদের ক্ষোভ জানাতে শুরু করেছে।

আর মমতা প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাঁর জেলা-সফরের। প্রচারে সময়েই তিনি বলেছিলেন, জিতলে আবার আসবেন। এ দিনও বলেছেন, "আমি ঝড়কে লড়ে বেঁচে থাকতে চাই। দুর্গম পথ অতিক্রম করে এসেছি। আরও দুর্গম পথ অতিক্রম করে দুর্দান্ত পথে পৌঁছোব।"

নব্য বঙ্গে আসলে মমতা-ঝড় শেষ নয়, এই শুরু হল!

কী করবেন এ বার?

গৌতম দেব 
আরও পড়াশোনা করব।
পার্টির কাজ তো আছেই।

অশোক ভট্টাচার্য 
আরও পড়াশোনা, লেখালেখি।
মানুষের পাশে তো থাকবই।

অসীম দাশগুপ্ত
দল যা সিদ্ধান্ত

নেবে তা-ই করব।

কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় 
মানুষের সমস্যায় যেমন
ঝাঁপাতাম, তেমনই ঝাঁপাব।

আব্দুস সাত্তার
শিক্ষক হিসেবে ১৭ মে ফের
কলেজে যোগ দেব। বেশি করে

দলের কাজ করতে পারব।

মোর্তজা হোসেন 
সপ্তাহে তিন দিন রোগী দেখতে
হয়। পাশাপাশি দলের জন্য

আরও কাজ করতে পারব।

সুদর্শন রায়চৌধুরী 
দলের কাজ ও পড়াশোনা—
দু'টোতেই বেশি সময় দেওয়া যাবে।

নিরুপম সেন 
আমি সর্বক্ষণের পার্টিকর্মী।
জেলায় বেশি সময় দিতে হবে।

previous story

rajya


মমতার সরকারে কংগ্রেস থাকলে আপত্তি নেই সনিয়ার

জয়ন্ত ঘোষাল 
নয়া দিল্লী, মে ০৯, ২০১১

নিজস্ব চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার গঠনে সক্ষম | ছবি- নিজস্ব চিত্র

পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সরকার গঠনে সক্ষম হন, তা হলে কংগ্রেস সেই মন্ত্রিসভায় সামিল হতে পারে। মমতার নেতৃত্বাধীন সেই সরকারে কংগ্রেস থাকবে না এবং বাইরে থেকে সমর্থন দেবে, এমন ধরনের কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নেননি সনিয়া গাঁধী। বরং মনমোহন সিংহ-সনিয়া গাঁধী মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে ১৩ মে-র পরে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে হবে। তবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, "তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে সেই সরকারে কংগ্রেস যোগ দেবে কি না, সেটা কিন্তু শুধু মাত্র দলের হাইকম্যাণ্ডের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে না। গোটা ব্যাপারটাই অনেকাংশে নির্ভর করবে ফলাফলের প্রকৃতির উপর। যদি তৃণমূলকে কংগ্রেসের উপর নির্ভর করতে হয়, তা হলে এক রকম পরিস্থিতি। আর যদি তৃণমূল একাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, তা হলে মমতা কী চাইছেন, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।" এখন প্রশ্ন, মমতা কি কংগ্রেসকে মন্ত্রিসভায় সামিল করতে রাজি হবেন?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ নেতত্বকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করা সম্ভব হলে সেখানে তিনি রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের মন্ত্রিসভায় সামিল করতে চাইবেন। ১৩ মে ভোটের ফলপ্রকাশের পরে সনিয়া-মমতা ফোনে কথা হবে বলে আশা করছেন অনেকেই। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং আহমেদ পটেল এক দিকে মমতা, অন্য দিকে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ-আলোচনাও করবেন।

জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সনিয়া গাঁধী এবং মনমোহন সিংহ তথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, বিধানসভা নির্বাচনের পরে মমতা এবং কংগ্রেসের সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুবই জরুরি। কারণ কেন্দ্রেও ইউপিএ-র গুরুত্বপূর্ণ শরিক তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের ১৯ জন সাংসদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে সরকার চলছে। এমনকী, রাজ্যস্তরে মমতার জোটের শরিক এসইউসিআই-রও এক জন সাংসদ আছেন, যিনি প্রয়োজনে অনুপস্থিত বা ভোটদানে বিরত থেকে সরকারকে সঙ্কট থেকে বাঁচাতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, তামিলনাড়ুর নির্বাচনের ফল কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জয়ললিতার এডিএমকে যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে সরকারের শরিক হলেও ডিএমকে-র কংগ্রেস বিরোধিতা বাড়বে। তখন ডিএমকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় কি না, সেটাও দেখার। অন্য দিকে, এডিএমকে-র লোকসভার সদস্য সংখ্যা ডিএমকে-র তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে তাদের সমর্থন পেলেও ঘাটতি মেটানো যে কঠিন হবে, তা বিলক্ষণ জানেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আবার ডিএমকে যদি রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে আসে, তা হলেও সমস্যা যে পুরোপুরি মিটছে, তা নয়। স্পেকট্রাম-কাণ্ডে রাজা এবং করুণানিধি-কন্যা কানিমোঝিকে নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবং সে রকম ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে মমতার প্রাসঙ্গিকতা কমবে না, বরং অনেকই বাড়বে।

জুন মাসে সংসদের বাদল অধিবেশনের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে। তৃণমূল কংগ্রেস যদি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে, তা হলেও রেল মন্ত্রকটি কিন্তু মমতা নিজেদের হাতেই রাখতে চান। কংগ্রেস থেকে কেউ কেউ এমন একটি প্রস্তাব তোলার চেষ্টা করতে পারেন যে, মমতা ইচ্ছে করলে রেল মন্ত্রক ছেড়ে দিয়ে অন্য দু'তিনটি পূর্ণ মন্ত্রী পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রকল্পগুলির রূপায়ণ দেখার জন্য তিনি রেলে এক জন প্রতিমন্ত্রী রাখতে পারেন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব এই প্রস্তাব মানবেন না। এবং কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতা যদি রাজি না হন, তা হলে কংগ্রেস এই প্রস্তাব নিয়ে কোনও জোরাজুরিও করবে না। তা ছাড়া, ভোটের পর সিপিএম এবং বিজেপি একজোট হয়ে সরকারের উপর চাপ আরও বাড়াবে বলে মনে করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। লোকসভা নির্বাচন ২০১৪-এ। তার আগে দুর্নীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে বাম-বিজেপি কংগ্রেস বিরোধিতার সুর আরও চড়াবে। অন্য দিকে কংগ্রেসের এই আশঙ্কাও আছে যে, মমতা ২০১৩ সালে গিয়ে ইউপিএ সরকারের কাজকর্মের পর্যালোচনা করে ইউপিএ-তে থাকা না থাকার ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এই সব কারণে মমতার সঙ্গে এখনই সংঘাতের রাস্তায় যাওয়াটা অযৌক্তিক।

মমতার কথায়, "জোট করে ভোট লড়েছি। চাইব, কংগ্রেস রাজ্যে আমাদের পাশে থাকুক। এবং দিল্লিতেও কোনও ভাবেই আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। যখন জোটের শরিক হয়েছি, তখন জোটধর্ম পালন করব। তবে জোটে থেকেই চাইব, মূল্যবৃদ্ধি বা দুর্নীতির মতো বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিক। সে ব্যাপারে সব রকম সাহায্য করব।"

তৃণমূল সূত্র বলছে, মমতা যদি ক্ষমতায় আসেন, তা হলে আর্থিক সঙ্কটই হোক আর মাওবাদী সমস্যা— প্রতিটি বিষয়েই তাঁকে কেন্দ্রের উপর নির্ভর করতে হবে। তিনি মনমোহন-সনিয়া-প্রণব-চিদম্বরমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই এগোবেন।

শুধু একটাই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, রাজ্যে মমতার নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হলে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের অবস্থান কী হবে? রাজ্য নেতৃত্ব মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি হতে পারেন, কিন্তু কতগুলি দফতর তাঁদের দেওয়া হবে এবং কোন কোন দফতর দেওয়া হবে, সেগুলি নিয়ে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে টানাপোড়েনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

তবে এই সবটাই নির্ভর করছে ১৩ মে ভোটের ফলাফলের উপর। এখন সম্ভাবনার ভিত্তিতে কংগ্রেস-তৃণমূল দুই শিবিরে চলছে গভীর ও অনুচ্চারিত আলোচনা।

http://my.anandabazar.com/node/1131

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়


ভারতীয় সাংসদ (লোকসভা )
প্রতিষ্ঠাতা-সভানেত্রী,
সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস
রেলমন্ত্রী (ভারত)
দপ্তরের কার্যকাল
২২ মে২০০৯ – বর্তমান
পূর্বসূরীলালু প্রসাদ যাদব
সংসদীয় এলাকাদক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র
(১৯৯১১৯৯৬১৯৯৮২০০৪,২০০৯)

দপ্তরের কার্যকাল
২২ মে১৯৯৮ – ২০০১
উত্তরসূরীরামবিলাস পাসোয়ান
সংসদীয় এলাকাদক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র

জন্ম৫ জানুয়ারি ১৯৫৫ (বয়স ৫৬)
কলকাতাপশ্চিমবঙ্গভারত
রাজনৈতিক দলসর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীঅবিবাহিত
সন্তাননেই
বাসস্থানসি-৪, এম. এস. ফ্ল্যাটস, বাবা খড়্গ সিংহ মার্গ,নতুন দিল্লি, ভারত (সরকারি)
৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা,পশ্চিমবঙ্গ (ব্যক্তিগত)
Alma mater যোগমায়া দেবী কলেজ(বি.এ.)
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়(এম.এ.)
শ্রী শিক্ষায়তন কলেজ(বি.এড.)
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ল কলেজ(এলএল.বি.)
জীবিকারাজনীতি
ধর্মহিন্দু
ওয়েব সাইটমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম ৫ জানুয়ারি১৯৫৫) একজন ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভানেত্রী। তিনিভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বর্তমান রেলমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় "দিদি" নামে সর্বাধিক পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম)-নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের কঠোর বিরোধিতা তাঁকে জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ আসন প্রদান করে। সাম্প্রতিককালে তিনি রাজ্যে কৃষি ও কৃষক স্বার্থবিরোধী শিল্পায়ন ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল(সেজ) গঠনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবতীর্ণ হন।

সূচিপত্র

 [আড়ালে রাখো]

[সম্পাদনা]জীবন

[সম্পাদনা]প্রারম্ভিক জীবন

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার হাজরা অঞ্চলে এক দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রমীলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, মা গায়ত্রী দেবী ছিলেন গৃহবধূ। কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ থেকে বি.এড. ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেএম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ অফ ল থেকে এলএল.বি. ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনীতিতে প্রবেশ ছাত্রাবস্থাতেই। শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর সংসার চালনার জন্য কিছুকাল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবাহ করেননি।

[সম্পাদনা]জাতীয় কংগ্রেসে রাজনৈতিক জীবন

১৯৭০-এর দশকে অত্যন্ত অল্প বয়সে কংগ্রেস (আই) দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কর্মজীবনের সূচনা হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি স্থানীয় কংগ্রেস নেত্রী রূপে পরিচিত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কংগ্রেস (আই)-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[১] ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। সেই সময় তিনি ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদের অন্যতম। এই সময় তিনি সারা ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালের কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়ায় তিনি তাঁর কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন। কিন্তু ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র থেকে পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬১৯৯৮১৯৯৯২০০৪ ও ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও উক্ত কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

১৯৯১ সালে নরসিমা রাও মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানব সম্পদ উন্নয়নক্রীড়া ও যুবকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী মনোনীত হন। পরে ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে খেলাধূলার প্রতি সরকারি ঔদাসিন্যের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।[২] ১৯৯৩ সালে তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি তাঁর দলের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম)-কে সহায়তা করার অভিযোগ আনেন। নিজেকে দলের একমাত্র প্রতিবাদী কণ্ঠ বলে উল্লেখ করে তিনি এক "পরিচ্ছন্ন কংগ্রেস"-এর দাবি জানান। কলকাতার আলিপুরে একটি জনসভায় গলায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।[৩] ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে লোকসভার ওয়েলে বসে পড়েন তিনি। এই সময়ই সমাজবাদী পার্টি সাংসদ অমর সিংহের জামার কলার ধরে তাঁর সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন মমতা। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লোকসভায় রেল বাজেট পেশের দিন পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদে রেল বাজেট পেশ চলাকালীনই তদনীন্তন রেলমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের দিকে নিজের শাল নিক্ষেপ করেন তিনি। পরে তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফাও দেন। কিন্তু লোকসভার তদনীন্তন অধ্যক্ষ পি. এ. সাংমা তাঁর পদত্যাগপত্র প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে সন্তোষমোহন দেবের মধ্যস্থতায় তিনি ফিরে আসেন।

[সম্পাদনা]তৃণমূল কংগ্রেস

মূল নিবন্ধ: সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস
তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা, মধ্যে মমতার হস্তাঙ্কিত দলীয় প্রতীক

১৯৯৭ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস স্থাপন করেন। অনতিকাল পরেই তাঁর দল দীর্ঘকাল বামফ্রন্ট-শাসিত পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধীশক্তিতে পরিণত হয়। ১৯৯৮ সালের ১১ ডিসেম্বর সমাজবাদী পার্টি সাংসদ দারোগা প্রসাদ সরোজ "মহিলা সংরক্ষণ বিলের" বিরোধিতায় লোকসভার ওয়ালে নেমে গেলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জামার কলার ধরে টানতে টানতে তাঁকে ওয়েলের বাইরে বের করে দেন।[৪]এই ঘটনায় কিছু বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়।

১৯৯৯ সালে মমতা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে সামিল হন। এই জোট সরকার গঠন করলে তিনি রেলমন্ত্রী মনোনীত হন।

[সম্পাদনা]রেল মন্ত্রকে প্রথম কার্যকাল

২০০০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রথম রেল বাজেট পেশ করেন। এই বাজেটে তিনি তাঁর নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছিলেন।[৫]দ্বি-সাপ্তাহিক নতুন দিল্লি-শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস চালুর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসাধনের লক্ষ্যে তিনি চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুরপাল্লার ট্রেন চালু করেন। এগুলি হল হাওড়া-পুরুলিয়া এক্সপ্রেস,শিয়ালদহ-নিউ জলপাইগুড়ি এক্সপ্রেস, শালিমার-বাঁকুড়া এক্সপ্রেস ও শিয়ালদহ-অমৃতসর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (সাপ্তাহিক)।[৫] এছাড়া তিনি পুনে-হাওড়া আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসের দিনসংখ্যা বৃদ্ধি করেন এবং তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেনের পরিষেবার প্রসার ঘটান। তাঁর ক্ষুদ্র মন্ত্রিত্বকালে হাওড়া-দিঘা রেল প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল।[৬]

এই সময় তিনি পর্যটন উন্নয়নের দিকেও মনোনিবেশ করেছিলেন। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েতে তিনি দুটি নতুন ইঞ্জিন চালু করেন এবং ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। এছাড়া ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নির্মাণের ব্যাপারে ভারতের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাংলাদেশ ও নেপাল রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া লাইনগুলি আবার চালু করার কথাও বলেন। ২০০০-২০০১ আর্থিক বছরে তিনি মোট ১৯টি নতুন ট্রেন চালু করেছিলেন।[৬]

[সম্পাদনা]এনডিএ ত্যাগের পর

"উন্নত মানবিক পৃথিবী", মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক পরিকল্পিত ভাস্কর্য, বকুলবাগান সার্বজনীন, দক্ষিণ কলকাতা, ২০১০।

২০০১ সালের প্রথম দিকে একটি রাজনৈতিক মতবিরোধের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক সাময়িকভাবে ত্যাগ করেন। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দল জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। তবে সেবার এই জোট বামফ্রন্টকে পরাজিত করতে অসমর্থ হয়েছিল। ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি আবার এনডিএ-তে ফিরে আসেন এবং কয়লা ও খনি মন্ত্রকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত একমাত্র তৃণমূল সাংসদ।

২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের শিল্পনীতির বিরোধিতা করেন মমতা। ইন্দোনেশিয়া-ভিত্তিক সালিম গোষ্ঠীর মালিক বেনি সান্তোসো পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে এলে সরকার তাঁকে হাওড়ার একটি কৃষিজমি কারখানা স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রদান করে। এর পরই রাজ্যে বিক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়। প্রবল বর্ষণের মধ্যেই সান্তোসোর আগমনের প্রতিবাদ জানাতে মমতা ও তাঁর সমর্থকেরা তাজ হোটেলের সামনে জড়ো হন। পুলিশ তাঁদের হটিয়ে দিলে তাঁরা পরে সান্তোসোর কনভয় ধাওয়াও করেন। উল্লেখ্য, কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি এড়াবার জন্য সরকার সান্তোসোদের কর্মসূচি তিন ঘণ্টা এগিয়ে এনেছিল।[৭][৮]

২০০৫ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েন। এই বছর পৌরনির্বাচনে তাঁর দল কলকাতা পৌরসংস্থার ক্ষমতা হারায়। কলকাতার তদনীন্তন মহানাগরিক সুব্রত মুখোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০০৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস বড়োসড়ো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এই নির্বাচনে পূর্বের বিজিত আসনগুলির অর্ধেকেই দল পরাজিত হয়েছিল।

২০০৬ সালের ৪ অগস্ট লোকসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর আনা একটি মুলতুবি প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়ার পর মমতা লোকসভার উপাধ্যক্ষ চরণজিৎ সিংহ অটওয়ালের কাছে তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠান। পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে এই মুলতুবি প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপনের সঠিক নিয়মাবলি না মানায় অধ্যক্ষ এটি বাতিল করে দিয়েছিলেন।[৯][১০]

২০০৬ সালের নভেম্বর মাসে সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে একটি জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে তাঁকে জোর করে বাধা দেওয়া হয়। মমতা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিধানসভাতেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তিনি ১২ ঘণ্টা বাংলা বনধও ঘোষণা করেন।[১১] তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়করা বিধানসভায় ভাঙচুর চালান[১২], পথ অবরোধ করেন এবং অনেক জায়গায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগও করা হয়।[১১] এরপর ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর একটি বড়োসড়ো ধর্মঘট পালিত হয়েছিল।

[সম্পাদনা]নন্দীগ্রাম গণহত্যা

মূল নিবন্ধ: নন্দীগ্রাম গণহত্যা

পশ্চিমবঙ্গ সরকার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটি কেমিক্যাল হাব স্থাপন করতে চাইলে তমলুকের সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বাধীন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ এই অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করেন।[১৩][১৪] তৃণমূল কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে। মুখ্যমন্ত্রী নোটিশটি বাতিল ঘোষণা করেন।[১৫] ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ কৃষকদের ছয়মাসব্যাপী অবরোধ তুলতে পুলিশ তাদের উপর গুলিচালনা করলে চোদ্দো জনের মৃত্যু ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করে।[১৬] এরপর রাজনৈতিক সংঘর্ষে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।[১৭] নন্দীগ্রাম গণহত্যার প্রতিবাদে কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন।[১৮][১৯][২০] প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও তদনীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে লেখা চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ আনেন।[২১][২২] আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নন্দীগ্রামের কেমিক্যাল হাব প্রকল্পটি স্থগিত করতে বাধ্য হন। কিন্তু কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে মমতা প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন। উর্বর কৃষিজমিতে শিল্পের বিরোধিতা ও পরিবেশ রক্ষার যে বার্তা নন্দীগ্রামের আন্দোলন প্রদান করে তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র দেশে।

[সম্পাদনা]২০০৯ সালের নির্বাচনী সাফল্য

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস অত্যন্ত ভাল ফল করে। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একাই ১৯টি আসনে জয়লাভ করে। তৃণমূলের জোটসঙ্গী জাতীয় কংগ্রেস ৬টি আসনে ওএসইউসিআই(সি) একটি আসনে জয়লাভ করে। তৃণমূল কংগ্রেস জোট মোট ২৬টি আসনে জয়লাভ করে।[২৩] অন্যদিকে বামফ্রন্ট ১৫টি ও বিজেপি একটি আসন পায়। তৃণমূল কংগ্রেসের ১৯ জন সাংসদের মধ্যে মহিলা সাংসদের সংখ্যা পাঁচ। উল্লেখ্য, তৃণমূল কংগ্রেস ভারতে মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রবল সমর্থক। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা রাজ্যের ৩৩ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের ইতিহাসে প্রথম শাসকদলকে লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত করে। এর আগে ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর রাজ্যের বিরোধী দল সবচেয়ে ভাল ফল করেছিল। কিন্তু সেবারও তাদের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪।

[সম্পাদনা]রেল মন্ত্রকে দ্বিতীয় কার্যকাল

হজরত নিজামুদ্দিন-পুনে দুরন্ত এক্সপ্রেস; ট্রেনের গায়ের অলংকরণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকল্পিত

২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার রেলমন্ত্রী হন। এই বছরের রেল বাজেটে তিনি রেল মন্ত্রকের বিভিন্ন নতুন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন। দেশের ৫০টি স্টেশনকে তিনি আন্তর্জাতিক সুযোগসুবিধা সম্পন্ন বিশ্বমানের স্টেশনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেন। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে এই উন্নয়নের কাজ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এছাড়াও ৩৭৫টি স্টেশনকে তিনি আদর্শ স্টেশন ঘোষণা করেন। গুরুত্বপূর্ণ যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য বাজার, ফুড স্টল ও রেস্তোরাঁ, বইয়ের স্টল, পিসিও/এসটিডি/আইএসডি/ফ্যাক্স বুথ, ওষুধের দোকান ও স্টেশনারি দোকান, স্বল্পব্যয়ের হোটেল এবং ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা সহ মাল্টি-ফাংশনাল কমপ্লেক্স স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কমপ্লেক্সগুলিও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে গঠিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রেলের গ্রুপ ডি কর্মচারীদের কন্যাসন্তানদের আত্মস্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে তাদের উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের জমিতে সাতটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দেন।[২৪] এছাড়া যুব এক্সপ্রেস ও দুরন্ত এক্সপ্রেস নামে দুই প্রকার নতুন ট্রেনও চালু করেন তিনি। দুরন্ত বর্তমানে ভারতের দ্রুততম রেল পরিষেবা।[২৫]

মহিলা নিত্যযাত্রীদের সুবিধার্থে ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই মমতা হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখায় একটি লেডিজ স্পেশাল ট্রেন চালু করেন।[২৬] পরেশিয়ালদহ-কল্যাণীপানভেল-মুম্বই সিএসটি ইত্যাদি সারা দেশের একাধিক শাখায় মহিলা স্পেশাল ট্রেন চালু হয়।[২৭] ১৮ সেপ্টেম্বরশিয়ালদহ ও নতুন দিল্লির মধ্যে প্রথম দুরন্ত এক্সপ্রেস চালু হয়।[২৮] ২১ সেপ্টেম্বর চেন্নাই ও নতুন দিল্লির মধ্যে দ্বিতীয় দুরন্ত এক্সপ্রেসটি চালু হয়। মমতা সন্ত্রাসবিধ্বস্ত কাশ্মীরেও রেলপথের প্রসারে মনোযোগী হন। অক্টোবর মাসে অনন্তনাগ-কাদিগন্দ রেলওয়ে চালু হয়।[২৯]২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মমতা নতুন উনিশটি রেল পরিষেবা চালু করেন।[৩০]

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  1.  Mamta Banerjee Profile। ।
  2.  Mamata mum on relations with BJP। January 6, 2003। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  3.  Ashis Chakrabarti (November 8, 1998)। Theatrics of a Bengal tigress। প্রকাশক: The Indian Express। সংগৃহীত হয়েছে: November 12, 2007
  4.  National Events in December 1998। প্রকাশক: The Hindu। সংগৃহীত হয়েছে: November 12, 2007
  5. ↑ ৫.০ ৫.১ New trains for West Bengal। প্রকাশক: The Tribune। February 26, 2000। সংগৃহীত হয়েছে: November 12, 2007
  6. ↑ ৬.০ ৬.১ Railways to focus on tourism, trans-Asian role, hardselling freight services। প্রকাশক: Rediff.com। February 25, 2000। সংগৃহীত হয়েছে: November 12, 2007
  7.  Weather plays spoilsport for TMC। October 21, 2005। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  8.  Missing on bandh day: its champions -- Mamata stays indoors, Cong scarce। October 10, 2006। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  9.  Mamata Banerjee's unending tantrums। August 8, 2005। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  10.  Mamata casts shame at House Paper throw at Speaker। August 4, 2005। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  11. ↑ ১১.০ ১১.১ Trinamool unleashes violence in W Bengal। November 30, 2006। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  12.  Heritage vandalised in Bengal House। December 2, 2006। সংগৃহীত হয়েছে: December 2, 2006
  13.  "False alarm sparks clash"। The Telegraph। January 4, 2007।
  14.  "Haldia authority's notification created confusion: Buddhadeb"। The Hindu। January 10, 2007।
  15.  "Sub-Inspector killed in Nandigram"। The Hindu। February 8, 2007।
  16.  "Stockpile squad trail heads towards party - Phone records spill Nandigram secret"। The Telegraph। March 19, 2007।
  17.  "Red-hand Buddha: 14 killed in Nandigram re-entry bid"। The Telegraph। March 15, 2007। সংগৃহীত হয়েছে: March 15, 2007
  18.  "Nandigram people's struggle "heroic": Clark"। One India
  19.  Kirschbaum, Stevan। "Nandigram says 'No!' to Dow's chemical hub"। International Action Center
  20.  "The Great Left Debate: Chomsky to Saddam, Iraq to Nandigram"। Indian Express। December 5, 2007।
  21.  Mitra, Ashok (November 15, 2007)। "You are not what you were - Ashok Mitra after 14th November, 2007"। Sanhati
  22.  "'Go back Medha' posters in Kolkata"। India eNews.com। December 7, 2006।
  23.  [১]
  24.  Railway Budget 2009-2010। প্রকাশক: Indian Railways। সংগৃহীত হয়েছে: October 16, 2009
  25.  train travel just got better for women youth। । সংগৃহীত হয়েছে: October 16, 2009
  26.  Ladies Special Rolls Out। । সংগৃহীত হয়েছে: October 16, 2009
  27.  New CST Panvel Ladies Special। । সংগৃহীত হয়েছে: October 16, 2009
  28.  mamata-flags-off-sealdah-new-delhi-duronto-express। প্রকাশক: Armoks News। সংগৃহীত হয়েছে: October 16, 2009
  29.  PM to inaugurate new Railway line in Kashmir today। । সংগৃহীত হয়েছে: November 13, 2009
  30.  Mamata Banerjee to start 19 new trains on February 7। । সংগৃহীত হয়েছে: February 4, 2010

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ


 
     
     • 

   ' '   ,        ,     ,                ,                   '   '—                          '                          

Google
  
 











    
   
 ,    

  • 

'         ,          , ,   ,                ,           ' -                     ,              ,        ,                                       

   
   
 

  • 

                    -                 -   ,  ,   ,       ?    ?                   -   ,   --      -      (  )             -  ,                     —', , , /       /    ?'

    
   

 

                   ,        ,                                         ,  ,       ,        - ,          ,         ,                          

      
   , 
     
  • 

 ,                                 ,                     ,                       ,     ,         

  
   

 , :            , ,                ,                  '                              '            , '          '      ,               

 ,
   
 

 , :            ,                                                         ,           ,                                               



 
   

                                                            

(  )

 







.

.



 .

.



 .

 .

* :      

 ( )

, 

 ( )

, 

 ( ) 

, 

 ( )

, 

*     

 

 

No comments:

Post a Comment